কন্সপেরিসে থিউরী কিভাবে বাস্তবে ঘটলো !
জুলাইয়ের শেষের দিকে , আন্দোলন তুঙ্গে আছে।
হাসিনা তার সর্বশেষ অস্ত্র ব্যবহার করছে , হেলিকপ্টার থেকে গুলি করছে, ভিনদেশী স্নাইপার দিয়ে রাস্তার পথচারীকে নির্বিচারে হত্যা করছে।
তখন সাধারণ মানুষ দিশেহারা , একটু দ্বিধাগ্রস্থ , হাসিনা কি আন্দোলন নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নিলো !
তখন আমার বন্ধু মহলে " আজরাইরা পেচাল " নামে যেমন হোয়াটস্যাপ গ্রূপ আছে, তেমনি নানা বোদ্ধাদের নিয়ে নানান গ্রূপও আছে।
সেরকম দুয়েকটি গ্রূপে আমাকে যারা কাছ থেকে চিনে যে, আমি "ডার্ট পলিটিক্স " ভালা পাই , তারা জিগেস করেছিল - কি বুঝতাছোস , হাসিনা কি টিকে গেলো ?!
তখন আমি বলেছিলাম ,
- হাসিনার টেকা নিয়ে প্রশ্ন নয় , প্রশ্ন হলো ইন্ডিয়া কিভাবে এখন থেকে উদ্ধার পাবে !
আন্দোলন নিয়ন্ত্রণে আন্তে পারলেও হাসিনাকে ক্ষমতায় রাখা ইন্ডিয়ার জন্য সম্ভব হবে না।
কারণ, সারা দুনিয়া দেখছে হাসিনা কিভাবে নির্বিচারে মানুষ মারছে।
অতএব হাসিনাকে সরাতেই হবে ভারতের।
তবে ভারত একটি চাল দিয়ে আন্দোলের গরম কয়লায় ঠান্ডা পানি ঢেলে সব আগুন নিভিয়ে দিতে পারে।
কারণ, হিন্দুস্থান হাসিনার পতন মেনে নিবে কিন্তু বাংলাদেশকে কক্ষনোই ভারতের থাবা থেকে বের হতে দেয়া যাবে না।
গত ১৫ বছরে তিলে তিলে সারা বিশ্ব থেকে বাংলাদেশকে বিচ্ছিন্ন করে দেশের দুটি সমুদ্রবন্দর হাতিয়ে নিয়েছে।
বেনাপোল আগরতলা ট্রেন লাইন বাংলাদেশের পয়সায় তৈরী করে নিয়েছে।
এবং সর্বোপরি আগামী ২৫ বছরের জন্য বিজেপী সরকারেকে বাংলাদেশ কোন প্রকার বিদ্যুৎ সরবরাহ না করেও স্রেফ যৌতুক হিসেবে প্রতি বছর ৪ হাজার কোটি টাকা দিতে বাধ্য করেছে।
অখন্ড ভারতের স্বপ্ন পূরণে আর মাত্র ৫টি বছর দরকার ছিল ভারতের, ব্যাস তাদের উগ্রবাদী হিন্দুত্ববার অন্তিম খায়েশ পূরণ করে দিতো বাংলাদেশ।
*অতএব ভারত আন্দোলনের ফসল তাদের ঘরে তুলে নেয়ার জন্য , ডঃ ইউনুসকে একটি টোপ দিতে পারে।
কারণ, ডঃ ইউনুস আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত একজন ব্যক্তি।
ভারতেও কয়েকজন নোবেল প্রাইজ উইনার আছে , কিন্তু ডঃ ইউনুসের মতো সারা পৃথিবী চিনে এমন কেউ নেই।
অতএব তাকে যদি রাজি করাতে পারে তবে ভারত বাংলাদেশ হারাবে না !
-- হাল তুই এইডা কি কস ?!
ডঃ ইউনুস কোনভাবেই ভারতের লোক না , সে কোনদিন হাসিনার মতো ভারতের পক্ষে কাজ করবে না !
কথা সত্যি বন্ধু। ডঃ ইউনুস ভারতের লোক না।
কিন্তু মনে রাখিস উনি দেশ চালাবে না।
উনি ম্যাগাজিনের মাত্র কভার-পেইজ থাকবেন।
সরকার চালাবে ভারতের পছন্দের উপদেষ্টা দ্বারা।
আর সব সচিবরা তো আছেই, তাদের চেয়ার বদল হতে পারে কিন্তু তাদের লয়ালিটি বা কেবলা দিল্লিই থাকবে।
হাসিনার সরকারের সব কাজ কিভাবে হতো সে কি জানতো,
দেশ চাইলাইতো তার অফিস।
বড় প্রজেক্ট ১০/১২ কোটির উপরে না হলে হাসিনা জানতই না কে কত টাকা নিচ্ছে এক বালিশের জন্য।
তেমনি ডঃ ইউনুস রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সবার সাথে মিটিং করবেন , বিভিন্ন দেশের সাথে যোগাযোগ থাকবে।
কিন্তু দেশ চালাবে গত ১৫ বছরে যত আজিজ- বেনজির -মার্কা লম্পট দুই নম্বর সচিবদের তৈরী করেছে তাদের দ্বারা।
কিছু অথর্ব, কিন্তু দেখতে নিপাট ভদ্রলোক মনে হয় , এমন কিছু পরিচিত/অপরিচিত মুখ নেয়া হবে, যারা মন্ত্রণালয়ে গিয়ে সচিবদের সাথে চা বিস্কুট খেয়ে বাসায় চলে যাবে।
আর মন্ত্রালয় চলবে , আগের দাদা পছন্দের তৈরী "হোয়াটস্যাপ গ্রূপের" সচিবদের দ্বারা।
উপরের "ডার্টি গেইম প্ল্যানটা" আমি তখন দিয়েছিলাম আমার বন্ধুদের।
কিন্তু এটা যে সত্যি হবে সেটা কোনদিন ভাবিনি, বিশেষ করে যখন দেখলাম আসিফ নজরুল নিয়োগ পেয়েছে !
কারণ , শাহবাগের সময় থেকে একমাত্র আসিফ নজরুলই স্রোতের টানে গা ভাসিয়ে দিয়ে সরকারের তাবেদারী কখনো করেনি।
সে সরকার বিরোধী নানাভাবে সেই ইমেজ তৈরী করেছিল।
তাকে মনে হয়েছিল সৎ পলিটিশিয়ান , এবং ক্লিন ব্যাকগ্রাউডের মানুষ (যদিও তার মেয়ের বয়সী শিলাকে বিয়ে করে) ।
কিন্তু পিনাকী দাদাকে যেমন শাহবাগের সিপাহসালার হওয়ার কারণে ঠিক ১০০% এখনো মেনে নিতে পারিনা।
যদিও তিনি অনেক অনেক কাফ্ফারা দিয়েছেন গত ৭/৮ বছরে (কারণ , শাহবাগই ছিল একটি ফ্যাসিস্ট সরকার তৈরীর প্রথম সোপান , যেখানে বাংলাদশের নাগরিকরা তাদের সকল স্বাধীনতা হারাতে শুরু করে )।
তেমনি আসিফ নজরুলের উপদেষ্টা হওয়ার পর আমি আমার কন্সপিরেসি থিউরি ভুলে গেলেও, ফারুকীকে নিয়োগ দেয়ার পর থেকেই মনে হয়েছে - উ,হু, আমার "ডার্টি গেইম থিউরি" নিয়ে একটু ভাবা দরকার।
গত তিন মাসের কর্মকান্ড দেখে মনে হচ্ছে , কেটলির ঢাকানাতে যেমন একটি ফুটো রাখতে হয় স্টিম বেরিয়ে যাওয়ার জন্য , নইলে বিস্ফোরণ ঘটবে।
তেমনি আসিফ নজরুল ছিল গত সরকারের আমলে জনগণের জন্য "একটি ফুটা ", যেটা দিয়ে জনগণের মনের কথা বের করতে দিতো, যাতে মানুষ শান্তি পায়।
তা না হলে মানুষের ভিতর জমে থাকা বাস্প বিস্ফোরণ ঘটাতে পারতো।
এখন কেন মনে করি দাদারাই এখনো ক্ষমতার চাবিকাঠি নাড়ছে !
~মুহাম্মদ সজল