রেভেঞ্জ পর্ন প্যারাডক্স
> পাড়ার একটা মেয়ের ন্যুড লিক হয়েছে। ফ্যামিলির কাছেও পৌছেছে। বাবার কলিগ, বাসায় আসা আত্মীয়, যে যেভাবে পারছে কথা শুনিয়ে দিচ্ছে।
ফ্যামিলি একরকম একঘরে। ছোটভাই স্কুলে গেলে টিটকারী শোনে, বাবা বাজারে যেতে পারে না। সেই মেয়েকে রাস্তায় দেখলে লোকে বলে 'ঢেকে কী হবে, দেখে ফেলেছি' ইত্যাদি ইত্যাদি।
এই ধরণের ঘটনার পর আত্মহত্যার ঘটনাও ঘটে। ইভেন মা-বাবা পর্যন্ত সুইসাইড করার খবর পাওয়া যায়।
এখানে দুটো ব্যাপার -
* এই ন্যুড লিক বা রেভেঞ্জ পর্ন, এর ভয়াবহ পরিণতি দেখেই বহু মেয়ে পাপ থেকে বেঁচে থাকছে। ভেবে দেখুন, কারো ন্যুড লিক হবার পর উপরের একটা ঘটনাও ঘটছে না। তাহলে অশ্লীলতা কোন পর্যায়ে ছড়িয়ে পড়বে? এই যে রিঅ্যাকশন, এটা কিছুটা হলেও ডিসিপ্লিন আনছে।
* এবার অপরপক্ষের দিকটা। যে ভয়টা ডিসিপ্লিন আনছে, সেটা আসলে কিসের ভয়? সেটা লোকে দেখে ফেলবে - এই ভয়। কিন্তু আপনি যদি এই লোক বা দর্শকের দিকটা ভাবেন, তারাও কিন্তু ভালো কিছু করছে না। পর্ন ছড়িয়ে দেওয়া বা দর্শক হওয়া দুটোই বড় ধরণের পাপ।
অর্থাৎ, এটা একটা প্যারাডক্স। আপনি কোনো পক্ষই নিতে পারছেন না। থামিয়ে দিলে সমাজ ধ্বংস হবে, আবার চলতে দেওয়াও পাপ।
> আপনাদের সদ্য সমাপ্ত জুলাই বিপ্লবের একটা ঘটনার কথা মনে আছে নিশ্চয়। সাংবাদিক ইলিয়াস ডিবি হারুনের ভিডিও ফাঁস করে দিয়েছিলো। এই একটা ঘটনা পুরো বিপ্লবে বিশাল একটা মোমেন্টাম এনে দিয়েছিলো। পরে জানতে পেরেছি, প্রশাসনের উচ্চপর্যায়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছিলো।
ওই ঘটনার পর ডিবি হারুনের মত লয়াল লাঠিয়ালকেও সরিয়ে দেওয়া হয়, কিছু কর্মকর্তা কেবল এই ভিডিও ফাঁসের ভয়ে ছাত্রদের বিরুদ্ধে নামতে চায় নি। অর্থাৎ পুরো ঘটনা আন্দোলনের বিশাল উপকার করেছিলো।
আসলে ওই লেভেলের কর্মকর্তারা তো পাবলিকের ব্যপারে কেয়ার করে না, তাদের ভয় ছিলো এইসব ভিডিও তাদের কলিগরাই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করতো। কারণ যেসব বড় পদ, এক পদের জন্য বহু লোক মূখিয়ে থাকে। ইমেজকে ব্লাকমেইল করে তাদের ক্যারিয়ারের বারোটা বাজিয়ে দিতো।
তাছাড়া এসব অফিসারদের সন্তানদেরও বাপের এসব কীর্তি অস্বস্তিতে ফেলতো।
মোটকথা, জনগণের উপকারই হয়েছে।
কিন্তু উল্টোভাবে, লাখ লাখ মানুষ যে সেই অশ্লীলতার সাক্ষী হলো? সেটাও তো ভালো নয়।
আবারও, সেই একই প্যারাডক্স।
> বাংলাদেশের প্রায় সব জায়গাতেই পরকীয়া কাপোল, ইভেন সিঙ্গেল কাপল ধরা পড়লেও সাধারণতঃ মারধর করা হয়, সম্মানহানি করা হয়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে তো লিমিটই ক্রস ফেলে জনতা।
কিন্তু ভেবে দেখুন, বিবাহবহির্ভুত ব্যাভিচার চলছে, কিন্তু সামাজিক রিঅ্যাকশনটা আর নেই। কী অবস্থা হবে তখন? সমাজে বৈধভাবে জন্ম নেওয়া মানুষ খুঁজে পাওয়া যাবে না।
> বাংলাদেশের বিয়েগুলোতে বিয়ের আগে, বিয়ের দিন বা বিয়ের পরে বয়ফ্রেন্ড কর্তৃক হবু স্বামীকে ভিডিও বা ছবি পাঠিয়ে দেওয়ার চল আছে।
বয়ফ্রেন্ডের দিক থেকে, সে অন্যায় করেছে একটা পবিত্র সম্বন্ধ ভেঙ্গে, প্রাইভেসী লঙ্ঘন করে, গোপন পাপ প্রকাশ করে।
কিন্তু ভাবুন তো, সে যদি এটা না করতো? এখানে একমাত্র লুজার হতো সেই নির্দোষ স্বামী যে এত ইফোর্ট দিয়ে বিয়ে করে পাচ্ছে এক চরিত্রহীনা অমানুষকে, যে আগেই সব বিলিয়ে দিয়ে এসেছে। আবার এই ভয় যদি না থাকতো, অলরেডি পচে যাওয়া সমাজে মেয়েগুলো আরো বেশী ব্যাভিচারে জড়িয়ে পড়তো, যেহেতু কোনো কনসিকোয়েন্স পোহানো লাগছে না।
> বলা হয়, মেয়েদের জন্য ন্যুড লিক হলে তার ফল নেওয়া লাগে দুইবার। একবার তো ইমিডিয়েটলি। দ্বিতীয়বার তার সন্তান হবার পর।
এমনিতে মা-বাবা অল্পবয়েসী সন্তানের খুব কাছের হয়ে থাকে। তাদের নিয়ে মশকরা বা বুলি করা সন্তানেরা সহজে মানতে পারে না। ইভেন মায়ের নাম বিকৃত করে বললে পর্যন্ত বাচ্চারা মারামারি করতে লেগে যায়।
সেখানে ভেবে দেখুন, ওইটুকু বাচ্চা স্কুলে গেলে তার সহপাঠি কিংবা বুলিরা তাকে তার মায়ের নগ্ন ভিডিও দেখাচ্ছে, সেক্স ভিডিও দেখাচ্ছে। তার চাইল্ডহুড ওইখানেই শেষ, সম্পুর্ন তার মায়ের দোষে। ওই মা তার সন্তানকে কী জবাব দেবে?
আমেরিকাতে মায়ের নগ্ন ভিডিওকে কেন্দ্র করে স্কুলগামী বাচ্চাদের আত্মহত্যার ঘটনা খুবই কমন। ওই বয়সে আসলে এসব অনেক বড় আঘাত।
একদিকে এই নির্দোষ বাচ্চাকে বুলি যেমন জঘন্য কাজ, তেমনি এটা যদি না থাকতো তাহলে মায়েরা তো কেয়ারই করতো না। অশ্লীলতা আরো ছড়াতো।
*******
আমরা আসলে সেই সমাজ চাচ্ছি, যেখানে এই দুই পক্ষেরই অস্তিত্ব থাকবে না। অশ্লীলতা যেমন প্রমোট করার কেউ থাকবে না, তেমনি কোনো ব্যাভিচারিও পার পেয়ে যাবে না।