“... তারা (‘আদ) পৃথিবীতে অযথা অহংকার করল এবং বলল, আমাদের অপেক্ষা অধিক শক্তিধর কে?”[ফুসিলাত ১৫]
আল্লাহ-র আযাবের আগমনের নিদর্শন দেখেও তারা নিশ্চিন্ত হয়ে বলেছিল -
“(অতঃপর) তারা যখন শাস্তিকে মেঘরূপে তাদের উপত্যকা অভিমুখী দেখল, তখন বলল, এ তো মেঘ, আমাদেরকে বৃষ্টি দেবে। বরং এটা সেই বস্তু, যা তোমরা তাড়াতাড়ি চেয়েছিলে। এটা বায়ু এতে রয়েছে মর্মন্তুদ শাস্তি।[আল আহকাফ, ২৪-২৫]”
.
.
সা’মূদকে তিন দিন সময়ের কথা জানিয়ে দিয়েছিলেন সালিহ আলাইহিস সালাতু ওয়াসসালাম, কিন্তু তারা তাঁকে এবং বিশ্বাসীদেরকে বিদ্রূপ করেছিল। তৃতীয় দিনে রাস্তায় নেমে এসেছিল উৎসব করতে, মেতে ঊঠেছিল নাচে গানে উচ্ছ্বাসে, আর বাড়ি ফিরতে ফিরতে নিজেরা বলাবলি করছিল কোথায় সেই শাস্তি? কোথায় গেল সালিহ [আঃ] আর তাঁর রাব্ব-এর প্রতিশ্রুতি ! আর তারপর সালিহ [আঃ]-এর রাব্ব এবং তাঁদের রাব্ব, এবং সমগ্র সৃষ্টির রাব্ব – মালিকুল মূলক’ আল্লাহ্ আযযাওয়াজাল তাদের প্রতি প্রেরণ করেছিলেন সেই জিনিষ যার ব্যাপারে তারা প্রশ্ন করেছিল। সেই প্রতিশ্রুতি যা নিয়ে তারা সন্দেহ পোষণ করেছিল। সেই শাস্তি যা তারা সহস্র সতর্কবাণীর পরও উপেক্ষা করেছিল –
.
.
“আর ভয়ঙ্কর গর্জন পাপিষ্ঠদের পাকড়াও করল, ফলে ভোর হতে না হতেই তারা নিজ নিজ গৃহসমূহে উপুর হয়ে পড়ে রইল।যেন তাঁরা কোনদিনই সেখানে ছিল না। জেনে রাখ, নিশ্চয় সামুদ জাতি তাদের পালনকর্তার প্রতি অস্বীকার করেছিল...[হুদ ৬৭-৬৮]
.
.
আর রাহমাতুললীল আলামীন মুহাম্মাদ ﷺ তাঁর উম্মাহকে জানিয়েছিলেন তাঁর ﷺ রাব্ব যা নাযিল করেছিলেন তাঁর প্রতি। তিনি ﷺ জানিয়েছিলেন কি ঘটেছিল পূর্ববর্তী জাতিদের। ঘন মেঘ দেখে তিনি ﷺ আল্লাহ-র আযাবের ভয়ে শঙ্কিত হয়ে পড়তেন, কারণ পূর্ববর্তী জাতির প্রতি আল্লাহ্ আযযাওয়াজাল মেঘের মাধ্যমে আযাব প্রেরণ করেছিলেন। তিনি সতর্ক করেছিলেন, তিনি জানিয়েছিলেন কি ঘটবে যখন পূর্ববর্তী এই জাতিদের অনুসরণ শুরু করবে। আর আজ উম্মাতে মুহাম্মাদী নামধারীরা আল্লাহ্ আযযা ওয়াজালের নিদর্শন দেখেও নির্বিকার থাকে। ফেইসবুকে চেক ইন মারে আর সেলফি আপলোড করে। আল্লাহ-র আযাবের ব্যাপারে গাফেল হয়ে তাঁর নিদর্শন নিয়ে রসিকতা করে।
.
.
"(৯৭) এখনও কি এই জনপদের অধিবাসীরা এ ব্যাপারে নিশ্চিন্ত যে, আমার আযাব তাদের উপর রাতের বেলায় এসে পড়বে অথচ তখন তারা থাকবে ঘুমে অচেতন।
(৯৮) আর এই জনপদের অধিবাসীরা কি নিশ্চিন্ত হয়ে পড়েছে যে, তাদের উপর আমার আযাব দিনের বেলাতে এসে পড়বে অথচ তারা তখন থাকবে খেলা-ধুলায় মত্ত।
(৯৯) তারা কি আল্লাহর পাকড়াওয়ের ব্যাপারে নিশ্চিন্ত হয়ে গেছে? বস্তুতঃ আল্লাহর পাকড়াও থেকে তারাই নিশ্চিন্ত হতে পারে, যাদের ধ্বংস ঘনিয়ে আসে।"[সুরা আল 'আরাফ]
.
.
-----
মাঝে মাঝে চোখ বন্ধ করে আর রাহমান – এর রাহমাতের ব্যপ্তি চিন্তা করার ব্যর্থ চেস্টা করি। মাতৃগর্ভ থেকে কবর পর্যন্ত যতো নিয়্যামাত ভোগ করি সেগুলো না, আমাকে সব চাইতে অবাক করে এই সত্যটা যে এই সেলফি তোলা, রসিকতা করা, চেক-ইন মারা, যিনা থেকে শুরু করে সমকামীতাকে মেনে নেওয়া, আল্লাহ-র কালামকে শ্রাগ করে ঝেড়ে ফেলে দেয়ার চেস্টা করা, ঐতিহ্য আর সংস্কৃতির নামে পৌত্তলিকতায় মেতে ওঠা, "চেতনা" আর প্রজন্মের" এই পশুর চাইতেও নিকৃষ্ট বান্দাগুলোর জন্যও আল্লাহ্ আর রাযযাক, রিযক দেন। গাফুরুর রাহীম ক্ষমা করেন।
.
সাদূম, গোমোরাহ, পম্পেই এর অধিবাসীরা ভুলে ছিল। 'আদ, সামূদ উপহাস করেছিল। এই ভুলে থাকা এই উপহাস, হাসিঠাট্টা, অন্ধ বিশ্বাস যে সাজানো গোছানো চেনা জীবনটা এক মুহূর্তের মধ্যে উল্টে যাবে না - আল্লাহ-র আযাব, আল্লাহ-র পাকড়াও এর ব্যাপারে এই নিশ্চিন্ত হয়ে যাওয়া কারো কোন কাজে আসে নি। আমাদের ও আসবে না।
“তারা কি আল্লাহর পাকড়াওয়ের ব্যাপারে নিশ্চিন্ত হয়ে গেছে? বস্তুতঃ আল্লাহর পাকড়াও থেকে তারাই নিশ্চিন্ত হতে পারে, যাদের ধ্বংস ঘনিয়ে আসে।"
.
.
“তারা জোর শপথ করে বলত, তাদের কাছে কোন সতর্ককারী আগমন করলে তারা অন্য যে কোন সম্প্রদায় অপেক্ষা অধিকতর সৎপথে চলবে। অতঃপর যখন তাদের কাছে সতর্ককারী আগমন করল, তখন ঔদ্ধত্যের কারণে এবং কুচক্রের কারণে তাদের ঘৃণাই কেবল বেড়ে গেল।পৃথিবীতে কুচক্র কুচক্রীদেরকেই ঘিরে ধরে। তবে তারা [কি] পূর্ববর্তীদের দশা ছাড়া আর কোন পরিণাম আশা করছে? অতএব আপনি আল্লাহর বিধানে পরিবর্তন পাবেন না এবং আল্লাহর রীতি-নীতিতে কোন রকম বিচ্যুতিও পাবেন না। [ফাতির ৪২-৪৩]
আসিফ আদনান