আমরা প্রথমে ক্যারিয়ার প্ল্যান ঠিক করি। বিসিএস ক্যাডার বা সিক্স ডিজিট স্যালারির জব বা ইউরোপ আমেরিকার কোনো নামি ভার্সিটির স্কলারশিপ, দামি ফোন, বাড়ি, গাড়ি, সুন্দরী বউ, সমাজের মানুষদের কাছে সম্মান।
এই লক্ষ্য সামনে রেখে আমরা আমাদের জীবনের রুটিন সাজাই। এরপর যদি ফাঁকে-ফোকরে কোনো সময় থাকে, অসীম বিনোদন নিতে নিতে ক্লান্ত হয়ে যাবার পরে যদি আমাদের একটু মন চায়, সেই সময়ে আমরা দ্বীনের কাজ করার জন্য বরাদ্দ রাখি। . দ্বীন আমাদের কাছে পার্টটাইমের কোনো কাজ বা অবসর সময়ে করলেই হবে এমন কিছু একটা। অথচ হওয়া উচিত ছিল উল্টোটা।
আমরা দ্বীনকে ১ নম্বরে রাখবো। এরপর সেই আলোকেই আমাদের ক্যারিয়ার সাজিয়ে নেবো। এই উম্মাহর মেম্বারশিপ কতো সস্তা বানিয়ে ফেলেছি আমরা! অবসর সময়ে ফেইসবুকে ২/১ টা পোস্ট দিয়ে, শুক্রবারের মসজিদে ১০/২০ টাকা দান করেই বিশাল দ্বীনদার সেজে ফেলি।
দুনিয়া নিয়ে ব্যস্ত হয়ে যাবার ফলাফল তো আমরা চোখের সামনেই দেখতে পাচ্ছি। আমাদের অন্তর অশান্ত, অস্থির, ঘরে ঘরে সমস্যা, বিভিন্ন ঝুটঝামেলা, অসুখ-বিসুখ। টাকা-পয়সার অভাব না থাকলেও অন্তরে অসীম অভাব। . আমরা আল্লাহর জন্য কাজ করার সময় পাই না। অথচ অন্য সবকিছু করার সময় পাই। সপ্তাহে কয় ঘণ্টা আল্লাহর কাজে দেই? আর কয় ঘণ্টা টাকার পেছনে, বিনোদনের পেছনে দেই? . ড.ইয়াদ কুনাইবী তাঁর বিখ্যাত হুসনুয যন বিল্লাহ গ্রন্থে (বাংলা অনুবাদের নাম - আল্লাহর প্রতি সুধারণা, শব্দতরু প্রকাশনী, অ্যাক্টিভিস্টদের জন্য পড়া আবশ্যক) লিখেছেন, ‘ইবনুল কাইয়িম রহিমাহুল্লাহ বলেন, যে কর্মচারী বাদশাহর কাছে নিজের অবস্থান কতোটুকু তা জানতে চায়, সে যেন দেখে বাদশাহ তার উপর কী ধরনের কাজের দায়িত্ব অর্পণ করেন। কী রকম কাজে তাকে নিয়োগ দেন।’
সুতরাং আপনারও উচিত নিজের দিকে মনোযোগ দেওয়া যে, আল্লাহ তা'আলা আপনাকে কী কাজে নিয়োজিত করছেন, আপনার দ্বারা কী কাজ নিচ্ছেন? যেন আপনি বুঝতে পারেন তাঁর কাছে আপনার অবস্থান কতোখানি।’
আমরা যদি দ্বীনের খেদমতের কাজকে জীবনের প্রধান বিষয় বানাতাম, আমাদের জন্য দুনিয়া অনেক সহজ হয়ে যেতো, ঝুট ঝামেলা কম থাকতো, দুনিয়াবি কাজের ব্যস্ততা থাকতো না। আয়-রোজগারে বরকত থাকতো, একটু চেষ্টা করলেই দেখতেন আয়-রোজগারের ব্যবস্থা হয়ে যাচ্ছে। . বাকী সময় দ্বীনের খেদমত করার সুযোগ হচ্ছে। বা যে আয়-রোজগার হচ্ছে তাতেই আপনি আপনার পরিবার সন্তুষ্ট থাকতো। আরামসে সংসারের খরচ চলে যেতো।
এক ভাইয়ের কথা জানি। অ্যাক্টিভিজমে ব্যস্ত থাকতেন অনেক। এরমধ্যেই যতোটুকু পড়ার পড়তেন, ঐ সময়ে ফাঁকিবাজি করতেন না। এবং তিনি যাই পড়তেন তাই পরীক্ষায় আসতো। অন্যরা দ্বীনের কাজকে অবহেলা করে সারাবছর পড়ে যে ফলাফল করতো, উনি অল্প মেহনতেই তা পেতেন। . আবার এক ভাই ছিলেন উনার লক্ষ্য ছিল এমন চাকরিতে যাওয়া, যেখানে গেলে আরও ভালোভাবে অ্যাক্টিভিজম করা যাবে। এজন্য উনি নতুন চাকরি পাবার আগেই চাকরি ছেড়ে দেন। পরে আল্লাহ উনাকে এমন চাকরি মিলিয়ে দিয়েছেন, যেখানে অ্যাক্টিভিজম করার ভালো সুযোগ আছে।
আমাদের শুধু অন্তর থেকে চাইতে হবে - আল্লাহ, আমি চাই তোমার দ্বীনের খেদমত করতে, তুমি ব্যবস্থা করে দাও। এরপর সাধ্যমতো মেহনত করতে হবে, খুঁজতে হবে… দেখবেন আল্লাহ আপনার জন্য খুবই চমৎকার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। আল্লাহর কসম! আল্লাহর কসম! এমন হবেই হবে। .
আপনার জীবনে আল্লাহ কি এক নাম্বার? নাকি ক্যারিয়ার, সম্মান, প্রভাব-প্রতিপত্তি, সুন্দরী নারী, দুনিয়া এক নাম্বার? কোনো ফাঁকিবাজি না করে, নিজের কাছে সৎ থেকে আপনার জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের উত্তর খুঁজুন।
. - "৪০ হাদীস : সামাজিক শক্তি অর্জন" বইয়ের টীকা থেকে।