দু'আ কবুলের যে অদ্ভুত সুন্দর গল্পটি এতোবার পড়ার পর-ও কক্ষনো পুরোনো হয় না!
আমি তখন আল-খানসা হিফজোখানায় পড়ি, বয়স ১৫/১৬ হবে,আমাদের হালাকায় এক মাঝ বয়সী মহিলা ছিলেন,আফ্রিকান মহিলা,একদিন দুয়া কবুলের তালীম চলছিল,তখন সেই মহিলা কান্না করতে করতে বলেন- “ আমার মেয়ে অনেক জিদ্দি,সে এমন কিছুর আবদার করছিল যা আমরা সবাই বুঝতাম যে বিষয়টা অসম্ভব। তার বয়স হচ্ছিল,তার জন্য আমাদের গোত্রীয় ছেলেদের কত প্রস্তাব আসে কিন্তু সে রাজি হয়না, সে কালো চামড়ার,সে অনেক লম্বা আর অনেক স্বাস্থ্যবতী,আমাদের গোত্রে এমন মেয়ে মানে অনেক সুন্দরী, কিন্তু এই আরবে তো কালো স্বাস্থ্যবতী মেয়েরা সুন্দরী না,আরবরা সাদা চামড়ার পাতলা ফিনফিনা মেয়ে পছন্দ করে। তো আমার মেয়ের ইচ্ছে সে আরবের সুন্দর ফর্সা চামড়ার ছেলের বউ হবে।আমরা তাকে অনেক বকা দিতাম,বুঝাতাম, যে এমন আশা করলে জীবনেও বিয়ে হবে না,মেয়ে বলতো আমার বিয়ে তোমরা দিবা নাকি আমার আল্লাহ দিবেন? কদিন পর আমার বড় ছেলে এক আরবের পক্ষ থেকে প্রস্তাব আনলো,আমরা সবাই খুশি হয়েছি অনেক, কিন্তু আমার মেয়ে না করে দিলো,কারণ সেই আরব লোকটা বৃদ্ধ ছিল আর তার আগের ৩ বউ ছিল। আমার মেয়ে খুব রাগ হলো আর আমাদেরকে সাফ জানিয়ে দিলো সে দ্বীনদার,আরব, নীল চোখ ওয়ালা সুন্দর যুবক চায় আল্লাহর কাছে। তার জন্য যেন আমরা কেউ পেরেশান না হই। আল্লাহই এনে দিবে তার এই স্বপ্নের রাজপুত্র।
আমরা বুঝেছিলাম ওর আর বিয়েই হবেনা,একে তো ও কালো চামড়া, চেয়ে বসছে সুন্দর সাদা চামড়ার আরব,আমরা নিচু বংশীয় গরিব মানুষ, আর আরবরা সেই ধনী আর উঁচু বংশীয়, সব নাহয় মানলাম,কিন্তু নীল চোখ? এ আবার কোন পাগলামি? আরবদের বেশি থেকে বেশি খয়েরি চোখ হয়,কালো আর খয়েরি,নীল তো ইংলিশদের হয়!আমাদের তখন মনে হচ্ছিল ও আসলে বিয়েই করতে চায়না তাই এমন সব আবদার করে। একদিন ওকে অনেক বকা দিয়েছি,গায়েও হাত তুলেছি। আমার মেয়ে কান্না করতে করতে বলছে এক সপ্তাহের ভিতরেই সে এই বাড়ি ছেড়ে চলে যাবে তার নীল চোখা আরব জামাইর সাথে।
আমরা খুব রাগ হলাম, মেয়ে পাগল হয়ে গেছে,মেয়ে বেয়াদব হয়ে গেছে এসব বলে বলে ওকে বকা দিচ্ছিলাম।
সেই এক সপ্তাহ আমার মেয়ে অনেক কান্না করেছে জায়নামাজ বিছিয়ে,সারাক্ষণ সারা রাত সে কান্না করে করে তার রবের নিকট দুয়া করেছে। ঠিক ৭ দিনের দিন তার জন্য এক নীল চোখ ওয়ালা সুদর্শন আরব যুবকের পক্ষ থেকে বিয়ের প্রস্তাব এসেছে। আমরা সবাই এতো বেশি খুশি হয়েছিলাম ভাষায় প্রকাশ করার মত না। ওয়াল্লাহি যদি মানুষকে সিজদা করা জায়িজ থাকতো,শিরক না হতো সেদিন আমরা সবাই আমার সেই আল্লাহওয়ালা মেয়েকে সিজদা করতাম। আমি অবাক হয়েছি আমার মেয়ের ইয়াকিন দেখে,ওর তাওয়াক্কুল দেখে আর ওর দুয়ার ক্ষমতা দেখে।
আমি বিয়ের দিন আমার মেয়েকে বলছিলাম কী বলে সে আল্লাহর কাছে দুয়া করতো? মেয়ে বললো আমি সারাদিন ইস্তেগফার করতাম আর সারারাত আমার পছন্দ ব্যক্ত করে দুয়া করতাম।আর আমার ইয়াকিন ছিল আল্লাহর কাছে সবই সম্ভব।
আজ ৮/১০ বছর আমার মেয়ে অনেক সুখেই সংসার করছে। ওদের বাচ্চা গুলাও অনেক সুন্দর সুন্দর। কেউ সাদা কেউ কালো কেউ মাঝামাঝি। কিন্তু মজার বিষয় ওদের সবার চোখের রঙ নীল।”
আমরা সবাই একটা ঘোরের মাঝে চলে গিয়েছিলাম এই গল্প শুনে। মহিলা প্রচুর কান্না করতে করতে বলছিলেন,আর আমরা মারাত্মক রকমের ইমোশনাল হয়ে পড়েছিলাম।
এই গল্প সেইদিন ঐ মজলিশের সবাইকেই এমন নাছোড়বান্দা বানিয়ে ছাড়ছিল। রাতের তাহাজ্জুদ আর ইসতেগফারের কি ক্ষমতা তা এই দুইটা না করে বোঝা যাবেনা !
- উস্তাযাহ যাইনাব আল গাজী হাফিযাহাল্লাহ