নারীশিক্ষা নিয়ে শরীয়তের অবস্থান :
জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত সবক্ষেত্রে, সব কাজে মানুষ শুধু একটি উসুলকেই সামনে রাখবে, একটি বস্তুকেই অনুসরণ করবে, সেটা হলো, শরীয়ত। আরও সহজ ভাষায় বললে, কুরআন-সুন্নাহের বিধান।
মানুষ শরীয়তের বিধানের মুকাল্লাফ হওয়ার পর থেকে কোনো কাজই শরীয়তের বাইরে করতে পারবে না। শরীয়তের বাইরে কিছু চিন্তা করারও অনুমতি তার নেই। এমনকি হাসি-ঠাট্টারও শরয়ী সীমা রয়েছে।
এই মূলনীতির আলোকে নারী শিক্ষা নিয়ে আমাদের বক্তব্য হলো, শরীয়তের বিধান ঠিক রেখে কেউ যদি জেনারেল লাইনে সর্বোচ্চ ডিগ্রিও অর্জন করে, তাতে কোনো আপত্তি নেই। এখন দেখতে হবে, এসব ক্ষেত্রে শরীয়তের বিধান কী কী? মৌলিকভাবে কয়েকটি বিষয়ই সামনে আসে: পর্দার বিধান ঠিক রাখা, শরীয়তের বিপরীত কোনো কিছু না শেখা। সুতরাং কোথাও যদি এমন কোনো প্রতিষ্ঠান থাকে, যেখানে পর্দার বিধান ঠিক থাকে, শরীয়তের খেলাফ কিছুই করা হয় না, তাহলে সেসব প্রতিষ্টানে নারীদের উচ্চশিক্ষাকে শরীয়ত সমর্থন করে। তবে, প্রথমত মাথায় রাখতে হবে, ফরজ পরিমাণ শিক্ষাটা তিনি পাচ্ছেন কি না?
ফরজ পরিমাণ শিক্ষা কী?
মানুষ যখন যে কাজ করবে, সেই কাজে শরীয়তের বিধান কী, সেটা জানা তার জন্য ফরজ। পাশাপাশি নারীদের জন্য সংসার-পরিচালনা বিষয়ক কিতাবী-বাস্তবিক জ্ঞান অর্জন করাও ফরজ। এখন দেখার বিষয় হলো, আমাদের নারীরা কি ফরজ পরিমাণ ইলম শিখেছেন? আমাদের যেসব বোন উচ্চশিক্ষা অর্জন করছেন, তারা কি নামাজ বিশুদ্ধ হওয়ার জন্য আবশ্যকীয় পরিমাণ ইলম শিখেছেন? আবশ্যকীয় পরিমাণ মাসআলা তারা শিখেছেন? এগুলো তো তাদের জন্য ফরজ ছিল। এখন যেসব ভাই তাবিয়ী ও তাবে-তাবিয়ীদের যুগে নারীদের উচ্চশিক্ষার হাওয়ালা দিচ্ছেন, তখনো তো কুরআন-হাদীসই ছিল মূল শিক্ষা। এখন কি কুরআন-হাদীসকে মূল শিক্ষা হিসেবে দেখা হচ্ছে? উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত কত পার্সেন্ট নারী ফরজ পরিমাণ ইলম অর্জন করেছেন? এই হিসাবটা আমাদের সামনে রাখা দরকার।
উচ্চশিক্ষা কি ফরজ আইন?
না, জেনারেল লাইনে উচ্চশিক্ষা অর্জন করা ফরজে আইন নয়, বরং ক্ষেত্রবিশেষ ডাক্তার হওয়া, শিক্ষিকা হওয়া ইত্যাদি কিছু পেশা নারীদের জন্যও ফরজে কেফায়া। কারণ আমাদের মা-বোনদের চিকিৎসা, শিক্ষা ইত্যাদি কিছু কাজের জন্য সেসব সেক্টরে নারীদের প্রয়োজন অবশ্যই রয়েছে। তবে এখনকার সময়ে ফরজে কেফায়া পরিমাণ পূর্ণ হয়ে গিয়েছে কি না এটাও আমাদের হিসাব করতে হবে। প্রত্যেক পরিবার থেকে একজন করে ডাক্তার হওয়া ফরজে কেফায়া নয়; বরং একটি এলাকার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ নারী চিকিৎসক থাকা আবশ্যক। প্রত্যেক পরিবার থেকে একজন শিক্ষিকা হওয়া আবশ্যক না; বরং একটি এলাকার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ থাকাই আবশ্যক।
এ ছাড়া নারীদের জন্য অন্যান্য পেশা যেমন পাইলট হওয়া, ম্যানেজার হওয়া, ব্যাংকার হওয়া ইত্যাদি যেসব পেশা নারীদের সাথে সংশ্লিষ্ট নয়, সেসব শিক্ষা অর্জন করা, সেসব পেশা গ্রহণ করা আবশ্যক তো দূরের কথা, মুস্তাহাবও নয়।
আমাদের মূল বক্তব্য :
শুরুর কথাটি শেষেও উল্লেখ করছি, আমাদের কাছে শরীয়তই অগ্রগণ্য। শরীয়তের সাথে আমরা অন্য কিছুকে তুলনা করতে চাই না, শরীয়তকে বাদ দিয়ে পুরো দুনিয়াও আমরা পায়ে মাড়াতে চাই না।
আর এ যুগের স্কুল, কলেজ-ভার্সিটির ভেতরগত দৈনদশা দেখে নারীদের তো পরের কথা, আমাদের ভাইদের সেখানে পড়া নিয়েও আমরা শঙ্কিত। তাদের দ্বীন-ঈমান নিয়ে আমরা আতঙ্কিত। সেখানে বোনদের নিয়ে শঙ্কা তো আরও বহুগুণে বেশি।
আমাদের ভাই-বোনেরা দ্বীন-ঈমানকে বিকিয়ে দিয়ে উচ্চশিক্ষা অর্জন করার চেয়ে ফরজ পরিমাণ ইলম শিখে দ্বীন-ঈমান ঠিক রাখাই আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। এতে যদি স্কুল-কলেজের বারান্দাতেও না যেতে হয়, তাতেও আমরা রাজি আছি।
আমরা চাই না আমাদের বোনেরা দুনিয়া কামানোর জন্য উচ্চশিক্ষা অর্জন করুক। আমরা তাদেরকে দুনিয়ার এই কঠিন ময়দানে নামাতে চাই না। তারা আমাদের কাছে প্রস্ফুটিত ফুলের মতো। তারা আমাদের ঘরে রানীর মতো থাকুক, পুরুষের সাথে গা মিলিয়ে, নিজের সতীত্ব, পর্দা, স্বকীয়তা সব কিছু বিলীন করে তারাও আয়-রােজগার করুক, এটা আমরা কখনোই চাই না। এই দায়িত্ব পুরুষদের। আমরা এটা সিদ্ধান্ত নিইনি যে, স্বামীর অবর্তমানে সে কী করে খাবে! তাই তাকে সার্টিফিকেট অর্জন করতে হবে। বরং প্রয়োজনের মুহূর্তে সে যেন প্রয়োজন পরিমাণ আয় করতে পারে, এর জন্য প্রয়োজনীয় হস্তশিল্প, কুটিরশিল্প, বা যেই কাজ তার স্বকীয়তা, তার পর্দাকে ঠিক রাখে, এমন কাজ শেখার ব্যাপারে তাকে উদ্বুদ্ধ করি। যেন স্বামীর বর্তমানেও সে প্রয়োজনে স্বামীকে আয়-রোজগারে সাহায্য করতে পারে।
শেষ কথা :
আমরা শরীয়তের বিপরীত কোনো কথা তো দূরের কথা, কোনো শব্দও শুনতে ও মানতে রাজি নই। কলেজ-ভার্সিটি কেন, শরীয়তের খেলাফ কাজ যদি কোনো দ্বীনী প্রতিষ্ঠানেও হয়, তাহলে সেখানেও আমাদের ভাই-বোনদের পড়া জায়েয নয়।
© উস্তাদ তানজীল আরেফীন আদনান (হাফি.)