"পুত্রবধু তার শশুর শাশুড়ির দেখাশুনা করতে বাধ্য নাকি বাধ্য না?" এই প্রসঙ্গে বেশ কিছু লেখা পড়েছি, ডজনের উপরে হবে। সবার লেখাই আংশিক, এক পাক্ষিক এবং এক দিকের সমস্যা নিয়ে আলোচনা করে। কিন্তু শুধুমাত্র কন্যা সন্তানদের পিতা-মাতাকে তাদের জামাই দেখা শুনা করতে বাধ্য কিনা, এই কথার আলোচনা হয় না। প্রশ্নটাই কেউ তুলে না!
কারণ, সম্ভবত শুধুমাত্র কন্যা সন্তানদের মা-বাবারা কখনই বৃদ্ধ হন না, অসহায় হন না, বিপদে পড়েন না, তাদের জীবনে কোনো প্রয়োজন নাই। শুধুমাত্র পুত্র সন্তানদের মা-বাবারাই বৃদ্ধ হন, অসহায় অবস্থায় পড়ে যান, তাদের জীবনে ছেলের বউদের সেবা যত্ন খুব দরকার।
(সম্ভবত এটাও যে, বাবা-মায়েরা মাথার ঘাম পায়ে ফেলে শুধু ছেলে সন্তানকেই মানুষ করেন, মেয়ে সন্তানকে কেউ কষ্ট করে মানুষ করে না, তারা বিনাক্লেশেই বড় হয়ে যায়।)
যাই হোক, এবার যদি প্রশ্ন করি যে, "একজন কি তার স্ত্রীর মা-বাবাকে দেখা শুনা করতে বাধ্য, তাদের জন্য খরচ করতে বাধ্য (ধরে নিচ্ছি তার স্ত্রীর মা-বাবার শুধু কন্যা সন্তান আছে এবং সবার বিয়ে হয়েছে)?" আমার জানা, ইসলামে এর উত্তর হলো "না, তিনি বাধ্য নন। ইসলাম তাকে এই দায়িত্ব দেয়নি।" একই ভাবে যদি প্রশ্ন করা হয় "একজন মহিলা তার হাজবেন্ডের মা-বাবাকে দেখা শুনা করতে কি বাধ্য?" এরও উত্তর হলো "না, তিনিও বাধ্য নন।"
এখন প্রশ্ন হলো, "তাদের উভয়ের জন্যই কি উভয়ের মা-বাবার দেখা শুনা করা উত্তম?" এই প্রশ্নের উত্তর হলো "জ্বী, উত্তম। এবং যদি উভয়ে উভয়ের মা-বাবার প্রতি খেয়াল রাখে, যোগাযোগ রাখে, সামর্থানুসারে খরচ করে - তাহলে তাদের উভয়ের সম্পর্ক আরো মধুর হবে। এবং প্রত্যেকের মা-বাবার সেবার মাধ্যমে তাদের জান্নাতে যাবার সুযোগ বাড়বে ইনশাআল্লহ। পরের প্রজন্ম তাদের নানা-নানী, দাদা-দাদী পাবে। তারা যখন দেখবে তাদের মা-বাবা তাদের দাদা-দাদী, নানা-নানীদের সাথে উত্তম আচরণ করে - তখন তারাও তাদের নিজের মা-বাবাকে সর্বোত্তম আচরণ দিবে ইনশাআল্লহ।"
সুতরাং যখন বলা হয় "পুত্রবধু শশুর শাশুড়িকে দেখা শুনা করতে বাধ্য নয়।" তখন প্রকৃতপক্ষে ইসলামের বিধানটা বলা হয় (ইসলামের বিধান লুকাবার দরকার তো নাই)।
"দেখাশুনা করা উত্তম নাকি উত্তম না?" এ প্রশ্নের উত্তর "অবশ্যই উত্তম"। যদি প্রশ্ন করা হয়, "দেখাশুনা করা কি উচিত?" - সেটা নির্ভর করবে ঐ পরিবারের সকলের উপর। হতেও তো পারে, বউ সেবা করতে চায় কিন্তু শাশুড়ি চরম শুচিবাই, তাদের মিল মহব্বত হচ্ছে না।
বিষয়টা অনেকটা এমন যদি প্রশ্ন করা হয় "আমরা কি তাহাজ্জুদ পড়তে বাধ্য?" উত্তর "না।" যদি প্রশ্ন করা হয় "তাহাজ্জুদ পড়া কি উত্তম/উচিত?" তাহলে উত্তর "সর্বোত্তম এবং উচিতও।"
লেখা : Shiblee Mehdi
এডমিন কমেন্ট:
আমি রুকাইয়াহ ও মানসিক কনসালটেন্সির সাথে জড়িত। আমাদের কাছে যখন স্বামীর আয় উন্নতি নেই এমন বিষয়ে পরামর্শ চাইতে আসেন বোনরা; আমরা বলি স্বামীর মা বাবার প্রতির দায়িত্বে স্বামীকে সাহায্য করুন। সহজ করুন। আপনার স্বামী আপনার জীবন সহজ করলে আপনিও তার জীবন সহজ করুন। মা বাবার দায়িত্ব পূরণ না করলে সন্তানের ভাগ্য ভালো হবে না,আখিরাত ও দুনিয়া কষ্টকর হবে। তাই স্বামীর দায়িত্বটা সহজ করুন, সাহায্য করুন।
এছাড়া সন্তানরা যখন এসব দেখে বড় হবে, একদিন আপনি যখন শ্বাশুড়ি হবেন তখন তারাও মায়ের সেবার বিষয়গুলোতে তাদের স্ত্রীদের বুঝাবে। বৈবাহিক জীবন সেক্রিফাইসের। সাথের মানুষটা জীবন সহজ করার একটা চেষ্টা। যত বেশি স্বামী/স্ত্রীর জীবন সহজ করবেন সে তত বেশি নিজেদের সম্পর্ক ভালো হবে(তবে জীবনসঙ্গীকেও এসব বুঝতে হবে; এসব নিয়ে বিস্তারিত কথা অন্যদিন ইন শা আল্লাহ)
আর এতকিছুর পর ও অশান্তি হলে?
দুআ, সবর ও দুআ।