Iftekhar Jamil @iftekharjamil Channel on Telegram

Iftekhar Jamil

@iftekharjamil


ইলমি আলোচনা : মুজাকারা ও মুনাকাশা

ইলমি আলোচনা : মুজাকারা ও মুনাকাশা (Bengali)

ইলমি আলোচনা : মুজাকারা ও মুনাকাশা একটি টেলিগ্রাম চ্যানেল যা বিভিন্ন ইসলামিক বিষয়ে মুজাকারা এবং মুনাকাশা করে। এই চ্যানেলে ইসলামি জ্ঞান, ইতিহাস, কুরআন, হাদিস ইত্যাদি বিষয়ে আলোচনা করা হয়। ইসলামের বিভিন্ন বিষয়ে মন্তব্য ও পরামর্শ পেতে এই চ্যানেলে যোগ দিন। এই চ্যানেলে আপনি ইসলামের সামাজিক, সাংস্কৃতিক এবং ধর্মীয় বিষয়ে সঠিক জ্ঞান অর্জন করতে পারবেন। ইসলামের সঠিক বিষয়ে সঠিক ধারণা ও সঠিক পরামর্শ পেতে এই চ্যানেলে মুজাকারা করুন। চ্যানেলে সদস্যদের মধ্যে আলোচনা করা হয় এবং সঠিক জ্ঞান অর্জনে সাহায্য করা হয়। তাহলে যারা ইসলামের বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করতে পারতে চান এবং সঠিক জ্ঞান অর্জন করতে চান, তাদের জন্য ইলমি আলোচনা : মুজাকারা ও মুনাকাশা একটি অত্যন্ত উপকারী চ্যানেল। এখনই চ্যানেলে যোগ দিন এবং ইসলামের বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করুন এবং সঠিক জ্ঞান অর্জন করুন।

Iftekhar Jamil

04 Feb, 05:46


ইজতেমাকথন

ইজতেমায় যারা যায়, তারা সবাই তাবলীগের অনুসারী—এমন বিশ্বাস রাখাটা খানিকটা কঠিন। বাঙালি প্রধানত খুবই উৎসবপ্রিয় জাতি। ভাটিঅঞ্চলে বসবাস বলে বছরের একটা দীর্ঘসময় তাদের কাটাতে হত পানিবন্দি অবস্থায় : অলস সময়ে উৎসবের নানাফন্দি আটতো বাঙালিরা। দূরের আত্মীয়দের জন্য মনখারাপ হলে লেখত গান ও গীতিকবিতা। উজানে হয়তো পীরের দরবার, সে জন্যও বাঙালির বেদনার সীমা ছিল না। এই বিরহের দিকটা না বুঝলে আপনি কখনোই বাংলাদেশী সংস্কৃতি পাঠ করতে পারবেন না।

ইজতেমা মূলত এসব উৎসবকেন্দ্রিকতার ধারাবাহিকতা। বাঙালিকে আপনি শিন্নি-জেয়াফতের দাওয়াত দেন, সে কখনো মিস করবে না। এক হাজার টাকা খরচ করে পাঁচশো টাকার খানা খেতেও সে প্রতিযোগিতা লাগিয়ে বসবে। ইজতেমা অনেকের কাছেই এখন অনেকটা পিকনিকের মত : গেলাম, থাকলাম ও খেলাম—বাঙালি পূর্বপুরুষদের আদত কাটাতে নারাজ।

ইজতেমা মূলত গড়ে ওঠেছে ওরস-মাহফিল-মজমা মডেলকে সামনে রেখেই—মানে ও পরিমাণে তুলনীয় না হলেও ইজতেমার মত মজমা বসে দেশের অনেক জায়গাতেই। মাইজভাণ্ডার-চরমোনাই-আটরশির মজমা তো খুবই বিখ্যাত। বাঙালিকে আপনি একটা খোলা মাঠে দাওয়াত দেন, থাকাখানার কষ্ট সত্ত্বেও সে এসবের লোভ ছাড়তে পারবে না। ঠিক এ কারণেই কোথাও তাবলীগের ইজতেমা বাংলাদেশের মত এতটা সফল হয় না, হবে না।

আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশকে ব্র্যান্ডিং করার ক্ষেত্রে তাবলীগের গুরুত্ব অপরিসীম। প্রায় সবদেশেই প্রবাসী বাঙালিরা তাবলীগে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাদের দেখে শিখে লোকালরাও। মালয়েশিয়ায় যারা গুরুত্ব দিয়ে তাবলীগ করে, তাদের অনেকেই ভাঙা ভাঙা বাংলায় কথা বলতে পারে, পাঞ্জাবি- টুপি পরে বাঙালিদের মতই। বাচ্চাদের পড়তে পাঠায় বাঙালিদের তাহফিজগুলোতে।

অবশ্য তাবলীগে উর্দুর প্রভাব বাংলার চেয়েও বেশী, তবে সাংস্কৃতিক দিক থেকে বাঙালিরা কি পাকিস্তানিদের থেকেও বেশী গুরুত্বপূর্ণ? বাঙালিদের নিয়ে আপনি যতই ঠাট্টা করেন, এরা খুবই আন্তরিক। মালয়েশিয়ায় তাবলীগের ভাঙনের পরে বাঙালিরাই আলেমদের অনুসরণ করছে সবচেয়ে বেশী, পাকিস্তানিদের ভূমিকা খুবই গৌণ। এসবের প্রভাব পড়ছে প্রবাসী সমাজেও।

তাবলীগকে অনেকে ধর্মীয় অনুষঙ্গ মনে করলেও এর সামাজিক-সাংস্কৃতিক প্রভাবটা অনেক বড়। তাবলীগ প্রবাসীদেরকে লোকাল সমাজে প্রবেশ করতে সাহায্য করছে, পাশাপাশি লোকালদের মধ্যে ছড়িয়ে দিচ্ছে বাংলাদেশী ধর্মীয় সংস্কৃতি। আমার মতে তাবলীগ বাংলাদেশের সবচেয়ে শক্তিশালী কালচারাল সফট পাওয়ার। এই প্রতিষ্ঠানটি রাষ্ট্রীয় ও বুদ্ধিবৃত্তিক পৃষ্ঠপোষকতা পেলে বাংলাদেশ আরও বেশী আন্তর্জাতিক প্রভাব অর্জন করবে বলে আমার বিশ্বাস।

Iftekhar Jamil

03 Feb, 14:23


ইজতিমার ময়দানে কোন একটা কাজে বিদেশি কামরার ভেতরে যাওয়া সুযোগ হয়েছিল। আরব খিমার ভেতরে খানিকটা চোখু বুলাতেই মুসলিম উম্মাহর বর্তমান চিত্র চমৎকারভাবে ফুটে উঠল, বিশাল বিশাল বপু, দৌড়ঝাপ তো দূরে থাক, ঠিক মত হাঁটাচলা করাও এদের পক্ষে সম্ভব না। রীতিমত অসুস্থ্য শরীর একেকজনের, গাদা গাদা মাংস শরীরে। বোঝাই যায়, ভোগী জীবন। আরব রাষ্ট্রগুলো মার্কিনিদের হাতে সব দায়দায়িত্ব সঁপে দিয়ে যেভাবে ‘খাওয়া দাওয়ায়’ লেগে গেছে, তার একটা চমৎকার চিত্র এখানে দৃশ্যমান। আমি মনে প্রাণে চাই, দ্রুতই আরব বিশ্বের অঢেল সম্পদ ফুরিয়ে যাক, ওরা গরিব হয়ে যাক যেমন ছিল সত্তর বছর আগে। তাহলে হয়ত এদের হাতে আবারও মুসলিম উম্মাহর নিয়ন্ত্রণ আসতে পারে।
মজার ব্যাপার হচ্ছে ইজতিমায় একসাথে এতগুলো অসুস্থ্য মানুষ আরেক জায়গায় দেখা যায়, শনিবার সকাল দশটায় আলেমদের বয়ানের মজমাতে।

Iftekhar Jamil

02 Feb, 18:09


দূর্বল জায়গায় আঘাত করবেন না

আমি আমেরিকান সিলেবাসে দুটি পরীক্ষা দিয়েছিলাম—জিইডি ও স্যাট। প্রথমটি উন্মুক্ত এইচএসসি, দ্বিতীয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা। পরীক্ষার ধরণগুলো প্রধানত আইএলসের মত। তবে আইএলস থেকে খানিকটা কঠিন। কেননা এসব পরীক্ষায় আমেরিকান সংবিধান-সংবিধান বিতর্ক ( The Federalist Papers), আলোচিত ভাষণ-কবিতা-উপন্যাসের পাশাপাশি নিউইয়র্ক টাইমস-সাইন্টিফিক আমেরিকানের রচনা—এসব লেখা তুলে দেওয়া হয়, এসবের ভিত্তিতে প্রশ্নের উত্তর দিতে হয়। এসব কারণে আমি আমেরিকান রাজনৈতিক প্রসেসটার মোটামুটি হদিস রাখি।

যেমন, লোকজন এখন দ্বিকক্ষ-ইলেক্টোরাল কলেজের কথা বলছেন। এসবের সূচনা কম জানার প্রেক্ষিতে কপি-পেস্ট করলেই যে কাজ হবে না, অনেকে এটা ধরতে পারছেন না। আদিবাসী-কালো-এশিয়ান অভিবাসীদের কথা বাদ দিতে হবে—তবে আমেরিকানরা গৃহযুদ্ধের পরে যেভাবে সমাজে ঐক্য ফিরিয়ে এনেছিল, সেটা আমার কাছে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ মনে হয়। আমেরিকায় যেভাবে উত্তর-দক্ষিণের রাজ্যগুলো সম্পর্ক স্থাপন করেছিল, আপনাদের মনে করিয়ে দেই, সাউথের লোকজন পরাজিত হলেও নিজেদের আহত-নিহতদের এখনো সম্মানের সাথে স্মরণ করে। তারা এখনো সাউথের পতাকা উড়ায়, পৌনে দুইশো বছরেও তারা এখনো ক্ষতের কথা ভুলতে পারেনি।

প্রশ্ন হল, আপনারা কি ধরতে পারেন, জামাত কেন এখনো মুক্তিযুদ্ধের ভূমিকার কথা ভুলতে পারে না, অপরাধ স্বীকার করতে চায় না? ভাই, এটা সম্ভব নয়। আমার লেখা যারা পড়েন, তাদের জানার কথা আমি জামাত মডেলের প্রতি খুব একটা আগ্রহী না। তবে বাংলাদেশি হিসেবে আমি তাদের মুক্তিযুদ্ধ-ট্রাবলটা রিলেট করতে পারি। জামাতের পক্ষে একশো বছর পরেও ‘রাজাকার’ ঐতিহ্যকে ভুলে যাওয়া সম্ভব নয়। মানুষ একবার রক্ত দিয়ে ফেললে সেটা অস্বীকার করতে পারে না। ধরা যাক, আপনি একজন ফাঁসির আসামীর মেয়ে। আপনার বাবার যতই অপরাধ থাকুক, আপনি তাকে অস্বীকার করতে পারবেন? অপরাধের বিচার হোক, তবে সন্তানের আবেগটা নিষ্পাপ। এরশাদ শিকদারের স্ত্রী-মেয়েদের আবেগের কথা মনে আছে? তারাও কিন্তু ভুলতে পারেননি।

প্রশ্ন হল, আমাদের জনগণের মধ্যে এসব বোঝাপড়া গ্রো করলো না কেন? আমার মতে এর কারণ আমাদের দেশের রাজনীতিবিদদের মধ্যে অসততার পরিমাণ অনেক বেশী। আমরা ফেয়ার লড়াইয়ে অংশ নিতে চাই না। জামাতের ত্রুটিও কম নয়। জামাত ইসলামের একটা নতুন মডেল প্রচার করতে চেয়েছে। যেটা জনগণের অনেকেই হজম করতে পারেনি। সাংস্কৃতিক বিভক্তির কারণে তিক্ততা তৈরি হয়েছে। কওমি হুজুররা কেন কোন তবে-কিন্তু ছাড়াই জামাতকে পছন্দ করে না? আপনি ব্যাখ্যা দিতে চাইলে তারা ঠিকমত জবাবও দিতে পারবে না। কিন্তু আপনাকে তিক্ততার গোঁড়াটা ধরতে জানতে হবে। গ্রামের ইমামকে, হুজুরকে আপনি বলে বসবেন, আপনার ইসলাম তো ‘আধুনিক’ না, এই যুগের উপযুক্ত না—তারা এই আঘাতটা সহ্য করতে পারবে না। সে দশ হাজার টাকা বেতনে যে অতীতটা নিয়ে বসে আছে, যে স্বপ্নটা সে প্রতিদিন দেখতে চেষ্টা করে। ছাত্রদের আগলে রাখে সাত রাজার ধনের মত। আপনি এই আবেগ নিয়ে প্রশ্ন করতে পারেন না।

আমরা কেউই ফেরেশতা না, আমরা দোষে-গুণে মানুষ—কখনোই কারো দুর্বল জায়গায় আঘাত করবেন না

Iftekhar Jamil

02 Feb, 07:26


অশুভ চক্র

কয়েক মাস আগে একটা সেমিনারে অংশ নিয়েছিলাম। টপিক ছিল আলজেরিয়া-মালয়েশিয়ায় মুসলিম পারিবারিক আইনের চর্চায় নারীদের প্রসঙ্গ। আমার কাঁধে ছিল ইন্টারপ্রিটেশনের দায়িত্ব—আরবি থেকে ইংরেজি/ইংরেজি থেকে আরবিতে অনুবাদ করছিলাম। এই দুই দেশেই পারিবারিক আইন নিয়ে ভালো পরিমাণ কাজ হয়েছে, নতুন নতুন সংস্কার-পলিসি যুক্ত হয়েছে। বাংলাদেশে এই কাজের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে এনজিও-নারীবাদীদের কাঁধে। আলেম/আলেমা দূরে থাকুক, বিশ্ববিদ্যালয় থেকেও বলয়ের বাইরের কাউকে রাখা হয়নি। কী পরিমাণ হাস্যকর কল্পনা করা যায়? যা হবার তাই হয়েছে, নারী অধিকার বিষয়টাই একটা ধর্ম-অধর্ম তর্কে রুপান্তরিত হয়েছে।

Iftekhar Jamil

02 Feb, 07:25


ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া

অন্তর্বর্তী সরকারের নারী কমিশন মুসলিম উত্তরাধিকার আইন বাতিলের সুপারিশ করেছে। এই ঘটনা কীভাবে ঘটতে পারলো? নারী কমিশনে সব পক্ষের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা যায়নি, তাই এমনটা ঘটতে পারলো। আপনার মতামত যাই থাকুক, এটা যে একটা স্টুপিডিটি, সেটা কি আপনারা ধরতে পারেন? বাংলাদেশের কোন মুসলিম পক্ষ ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাইকে এক উত্তরাধিকার আইন মানানোর সুপারিশ জীবনেও করবে না।

প্রশ্ন হল, নারীদের ফুটবল খেলা বন্ধ করতে লোকজন উদ্যোগ নেয় কেন, সেটা কি আপনারা এখন ধরতে পারছেন? আপনাদের মধ্যে কোন রাজনৈতিক বোঝাপড়া নাই-সম্পর্ক নাই-সমঝোতা নাই, আন্তর্জাতিক চাপের কথা বলে আপনারা সমাজের একাংশকে পলিটিকাল সিস্টেম থেকে বের করে দিতে পারবেন। যাদেরকে বের করে দিয়েছেন, তারা যে প্রতিক্রিয়া দেখাবে, সেটা নিশ্চিত করেই বলা যায়। মহামতি নিউটন বলেছিলেন, প্রত্যেক ক্রিয়ারই সমান ও বিপরীত প্রতিক্রিয়া থাকে।

বাইদাওয়ে, গতকাল ছিল আন্তর্জাতিক হিজাব দিবস। ভালো থাকুক আমাদের নারীরা

Iftekhar Jamil

02 Feb, 07:20


কমিশন পুনর্গঠিত হোক

মুসলিম উত্তরাধিকার আইন বাতিল করতে সুপারিশ করা নারী কমিশনে একজনও হিজাবি বা নিকাবি নেই। তাহলে এটা ইনক্লুসিভ হল কীভাবে? তারা পাহাড়ি নারীকে রেখেছেন, বাম নেত্রীদেরকেও রেখেছেন। শুধু তাই নয়, মামলা খাওয়া হাসিনার ঘনিষ্ঠ আমলার বউকেও রেখেছেন। তারা ভাবছেন, তারা দেশের সব ক্যাটাগরির উপস্থিতি নিশ্চিত করে ফেলেছেন : এনজিও + পাহাড়ি + শ্রমিক + আওয়ামীলীগ। বাংলাদেশের টিপিকাল নারীবাদীরা দেশকে কীভাবে কল্পনা করে, সেটা সহজেই ধরা যায়। এই ইস্যুতে সরকার বিব্রত হোক, সেটা আমরা কোনভাবেই চাই না। এই কমিশককে অবশ্যই পুনর্গঠন করতে হবে।

Iftekhar Jamil

01 Feb, 06:19


ইজতেমায় কেন যাবেন?

সময় করতে পারলে একবেলা টঙ্গি ইজতেমা থেকে ঘুরে আসতে পারেন। মানসিক-আধ্যাত্মিক মনোভাব পরিবর্তনে পরিবেশের ভূমিকা অনেক বড়—সাগর-নদী-পাহাড় দেখলে আপনার মন খুশিতে ভরে ওঠে, মসজিদে গুনাহের চিন্তা আসে না, অন্ধকার ঘরে বসে থাকলে মনে ছড়িয়ে যায় অবসাদ। যদি দলবদ্ধভাবে যেতে পারেন, তবে সবচেয়ে ভালো হয়। একসাথে খাওয়া-ঘুরার আনন্দের তুলনা হয় না।

তাবলিগ নিয়ে অনেকের মনেই অনেক রকমের প্রশ্ন আছে।

ক) তাবলিগ কোন ধর্মীয় বিবাদকে 'প্রমোট' করে না, আপনি যে চিন্তারই হোন, তাবলিগ আপনাকে 'জাজ' করবে না।

আপনি কওমি মাদরাসার ভেতরে গেলে আহলে হাদিস-জামাতের সমালোচনা-পর্যালোচনা আকছার পাবেন, তবে তাবলিগকে এসব বিতর্ক থেকে দূরে রাখা হয়। মতাদর্শিক পরিচয় নিয়ে মাদরাসার সাথে সম্পর্ক রাখা সহজ নয়, তবে তাবলিগে এসব কিছুই গুরুত্বহীন, আপনি মুসলমান এটাই সবচেয়ে বড় কথা। তাই মালয়েশিয়ান তাবলিগে শাফেয়ী নিয়মে মাসায়েল বলা হয়, সৌদিতে সালাফি ধারায় মৌলিক 'আকিদা-মাসায়েল' আলোচনা করা হয়।

খ) তবে আধুনিক মানুষের জন্য তাবলিগকে 'হজম' করা অনেকক্ষেত্রে সহজ নয়।

তাবলিগে যারা যান, তারা অধিকাংশই সাধারণ মানুষ। খুবই সাধারণ তাদের কথাবার্তা। তাবলিগের ওয়াজ-কিতাবের ভাষা-কল্পনা প্রাচীনপন্থী—কারামাত-অলৌকিকতার গল্প ছড়িয়ে থাকে তাবলিগের পদে পদে। যারা দুনিয়াকে নিছক কজ এন্ড এফেক্টে ভাবতে অভ্যস্ত, যাদের মনে বসে আছে বৈজ্ঞানিক ভাষা-যুক্তি, তাদের অনেকের কাছে তাবলিগের অলৌকিক ভাষা-গল্পে অস্বস্তি লাগবে, এটা সত্য। তবে আপনি যদি আরও গভীরভাবে ভাবতে শিখেন, বৈজ্ঞানিক দর্শনের সাথে পরিচিত হন, তবে ধরতে পারবেন, আমাদের প্রতিদিনের জীবনের অনেককিছুই 'লৌকিক' নয়। আমাদের ভাব-ভালোবাসা-ধর্ম কোনকিছুই নিছক বৈজ্ঞানিক যুক্তিতে আবদ্ধ নয়, ফজরের নামাজ কেন দুই রাকআত, এর কি কোন যৌক্তিক উত্তর আছে?

তবে ইসলাম ধর্মে কুরআন-হাদিসের বাইরে অলৌকিকতার ভিত্তিতে কোন হুকুম-বিধান গ্রহণের সুযোগ নেই। বিধান গ্রহণ না করলেও আমাদের প্রতিদিনের জীবনে কি অলৌকিকতা নেই? সৌন্দর্য-নৈতিকতা-ইতিহাসের গভীরে গেথে আছে অলৌকিকতা। ঘুম কেন জরুরী, সেই আলোচনা আপনি করতেই পারেন, একে নাম দিতে পারেন বৈজ্ঞানিক চিন্তা। তবে আপনি তো আলোচনা করে ঘুমকে বেছে নেননি। চিন্তা করার আগেই আপনি ঘুমাতে শিখে যান। এটা কি অলৌকিকতা নয়?

ইজতেমা আমাদেরকে অলৌকিক জগতের কাছাকাছি নিয়ে যাক

Iftekhar Jamil

01 Feb, 05:48


কেন শাপলা-শাহাবাগ বিকল্প রাজনীতি নয়?

শাপলা-শাহাবাগ আন্দোলনকে বিকল্প রাজনীতি হিসেবে না দেখে রাজনৈতিক মুহূর্ত হিসেবেই দেখাই ভালো। নির্দিষ্ট প্রেক্ষাপটে রাজনৈতিক মুহূর্তগুলো তৈরি হয়, প্রেক্ষাপট ফুরালে মুহূর্তগুলোর কার্যকারিতা কমে যায়। বিষয়গুলো আরেকটু ব্যাখ্যা করে যাক।

ক) বাংলাদেশে বাহাত্তর (মুজিববাদ), বিরানব্বই-চুরানব্বই (ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি), দুই হাজার (ফতোয়া নিষিদ্ধের রায়), দুই হাজার তেরো (যুদ্ধাপরাধ-ধর্মীয় রাজনীতি নিষিদ্ধ)—এই চার পর্বকে শাহবাগি মুহূর্ত হিসেবে আখ্যা দেওয়া যায়। বিরানব্বই-চুরানব্বই (বাবরি মসজিদ-তসলিমা), দুই হাজার (ফতোয়া আন্দোলন), দুই হাজার তেরো (শাপলা চত্বর), দুই হাজার একুশ (ভাস্কর্য-ভারত খেদাও) কে আখ্যা দেওয়া যায় শাপলা মুহূর্ত হিসেবে। প্রশ্ন হল, কেন প্রেক্ষাপট পাল্টে গেলে এসব মুহূর্তের কার্যকারিতা কমে যায়?

খ) শাপলা/হেফাজতকে নিছক কওমি আন্দোলন হিসেবে দেখা যাবে না। জামায়াত তো ছিলই, পাশাপাশি ইসলামি আন্দোলন ও আহলে হাদিসরাও শাপলা চত্বরে অংশ নিয়েছিল। জেনারেল শিক্ষিতরা যোগ দিয়েছিল হুজুরদের সাথে। প্রেক্ষাপট পাল্টে গেলে আপনি এদেরকে কোনভাবেই এক করতে পারবেন না। এদের স্বপ্ন-পরিকল্পনাও আলাদা। স্বপ্ন-পরিকল্পনা ভিন্ন হলে জোর করে সবাইকে এক করাও কঠিন। কাজেই, প্রেক্ষাপট পাল্টে গেলে রাজনৈতিক মুহূর্তগুলোর গুরুত্ব/কার্যকারিতা কমে যায়।

গ) শাহাবাগিদের সাথে আওয়ামীলীগের মিল-অমিল দুটোই রয়েছে। ধর্মীয় শক্তিগুলোকে যদি বিপদে ফেলা যায়, রাজনীতি থেকে সরিয়ে রাখা যায়, বিএনপিকে বিব্রত করা যায়, তবে বৈদেশিক শক্তিগুলোর পাশাপাশি সুশীল সমাজ-দূতাবাসকেও খুশি রাখা সম্ভব—তাতে আওয়ামীলীগের জন্য ক্ষমতার রাজনীতিটা সহজ হয়ে যায়। সম্পর্ক থাকলেও শাহাবাগিরা প্রধানত পেইড এজেন্টস/ইসলাম বিদ্বেষী শক্তি, আওয়ামীলীগের মধ্যে এসব বৈশিষ্ট্য থাকলেও তারা প্রধানত একটা দুর্নীতিবাজ-অপরাধী চক্র অর্থাৎ শাহাবাগিদের মধ্যে আদর্শের দিকটা বেশী, আওয়ামীলীগের মধ্যে বেশী দুর্নীতি-অপরাধ। আদর্শ-অপরাধের মিলনের মাধ্যমেই আওয়ামী ফ্যাসিবাদ/জাহেলিয়াত কায়েম হয়েছিল।

ঘ) শাহাবাগি আদর্শ কি শেষ, দুর্নীতি-অপরাধও কি বিদায় নিয়েছে? অবশ্যই না। তবে মাত্রা কমে যাবার প্রেক্ষিতে ধর্মীয় গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে প্রতিরোধ আন্দোলনের আকাঙ্ক্ষাটা কমে গেছে। শাহাবাগ-আওয়ামীলীগ ব্যস্ত নতুন ষড়যন্ত্র নিয়ে, ধর্মীয় শক্তিগুলো ব্যস্ত নতুন পরিকল্পনায়। পরবর্তী লেখায় আমি ষড়যন্ত্র-পরিকল্পনা বিষয়ে আলোকপাত করবো।

Iftekhar Jamil

31 Jan, 16:28


ষড়যন্ত্র থামে নাই

Iftekhar Jamil

31 Jan, 04:48


বিজ্ঞানের রাজনৈতিক ব্যবহার

রেড মিট খাওয়া স্বাস্থ্যের পক্ষে খুবই ক্ষতিকর, এটাই তো আমরা জানি, তাইনা? হিন্দুত্ববাদী পক্ষগুলো বলার চেষ্টা করে, ধর্ম মানার দরকার নেই, বৈজ্ঞানিকভাবেও গরুর গোশত খাওয়া ভালো নয়। তবে সম্প্রতি এক গবেষণায় দেখা গেছে, রেড মিট স্বাস্থ্যের পক্ষে খারাপ, এই তত্ত্বটি অত শক্তিশালী কিছু নয়। কয়েকদিন আগে বলেছিলাম, আমাদের মধ্যে বৈজ্ঞানিক লিটারেসি বাড়ানো দরকার।

কেননা বিজ্ঞানের নাম করে এখন অনেকেই নিজেদের মতামত চাপিয়ে দেবার চেষ্টা করেন। দ্বিমত করলে বা না মানতে চাইলে হাসিঠাট্টা থেকে শুরু করে আইনি চাপও প্রয়োগ করার চেষ্টা করা হয়। এর ভালো দৃষ্টান্ত হচ্ছে, জন্মনিয়ন্ত্রণ তত্ত্ব। এমন একটা বর্ণবাদী ও অবৈজ্ঞানিক তত্ত্ব গেলানো হয়েছে রাজনৈতিক স্বার্থে, আমাদের কমিউনিটি স্বাস্থ্যব্যবস্থার অনেক রিসোর্স এর পেছনে চলে গেছে। প্রশ্ন হচ্ছে, এসব জালিয়াতির ক্ষেত্রে ধর্ম হলে ঠিকই গালিগালাজ করতেন, বিজ্ঞান গ্রহণে কেন আরও সতর্ক হবেন না?

সতর্ক হওয়া বা বৈজ্ঞানিক লিটারেসির মানে কেউ বৈজ্ঞানিক গবেষণার যুক্তি দিলে সেটা যাচাইয়ের ক্ষমতা। তত্ত্বটি রাজনৈতিক ও মতাদর্শিক স্বার্থে ব্যবহার করা হচ্ছে কিনা, কোন মেথডে প্রমাণ করা হয়েছে, সেটা অনুসন্ধানের চেষ্টা। এটা না হলে আগামীদিনে আমাদের বিপদ বাড়বে। কারণ অনেকেই দেখি আজকাল বিজ্ঞানের দোহাই দিয়ে আমাদের আচার-ব্যবহার-আমল-আখলাক পরিবর্তন করতে চান। আপনি নিশ্চয় একমত হবেন, রেড মিট খাওয়া খারাপ, এটা সম্ভবত ধর্মীয় অনেক মাসায়েলের চেয়েও বেশীবার শুনেছেন।

Iftekhar Jamil

31 Jan, 01:51


জনসংখ্যা ষড়যন্ত্র

আগামী একশো বছরের জনসংখ্যার পর্যালোচনা দেখলে বুঝবেন, বাংলাদেশের জনসংখ্যা আর বিশেষ বাড়বে না, বরং ধীরে ধীরে কমবে। একটা মুসলিম প্রধান দেশে কীভাবে কত দ্রুত জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ প্রজেক্ট সফল হয়ে গেল ভাবাও যায় না।

বিবেচনাহীন সন্তানগ্রহণের সমালোচনা আপনি করতেই পারেন, সংখ্যার চেয়ে গুণগত উন্নয়নের কথাও আনতে পারেন, তবে মনে রাখতে হবে, জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ প্রকল্পটা ইটসেলফ তবে কিন্তু ছাড়া একটা ইসলামবিদ্বেষী, বর্ণবাদী প্রজেক্ট : ‘গরীবদের সন্তান বাড়লে ধনীদের খাবার যদি খেয়ে ফেলে, ‘কুকুর-বিড়াল’দের সংখ্যা কম থাকাই ভালো, তারা কি খাওয়াতে-শিখাতে পারবে? সুতরাং জনসংখ্যা কমানো জরুরী।'

ভারতের জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার বাংলাদেশের চাইতে বেশ খানিকটা বেশি। যার প্রেক্ষিতে বাংলাদেশে একসময় বৃহত্তর বয়স্ক জনগোষ্ঠীকে পালতে হবে। গড় আয়ু বৃদ্ধির ফলে এটা আরও অনেক কঠিন হয়ে উঠবে। সরকারের মধ্যে টনক নড়লেও গণসচেতনতা ছাড়া এর সমাধান সম্ভব নয়। ভারতে বাড়বে জনসংখ্যা, তারা পরিণত হবে বিশ্বের সবচেয়ে সংখ্যাগুরু দেশে। রাজনৈতিকভাবে বাংলাদেশকেও এর চাপ বহন করতে হবে।

Iftekhar Jamil

30 Jan, 17:44


শাপলা-শাহাবাগের রাজনীতি

চব্বিশের পরে অবশ্যই শাপলা-শাহাবাগের রাজনীতি অপ্রাসঙ্গিক হয়ে গেছে—তবে ভিন্ন দুটো কারণে।

আপনাদের মনে করিয়ে দেই, শাহাবাগ কেবল যুদ্ধাপরাধের বিচার চায়নি, জামায়াতের প্রতিষ্ঠানগুলো দখলের আহবান জানিয়েছিল। মনে রাখা ভালো, এসব প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠেছিল একাত্তরের অনেক পরে, এসবের সাথে একাত্তরের কোন সম্পর্ক ছিলো না। পাশাপাশি, শাহাবাগ থেকে ধর্মীয় রাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবী জানানো হয়। বাংলাদেশে কোন দলই শরিয়া প্রতিষ্ঠার রাজনীতি করে না, কাজেই, ধর্মীয় রাজনীতি নিষিদ্ধের মানে একটাই : ধর্মীয় জনগোষ্ঠীর ভোটাধিকার প্রত্যাহার। এখানেই শেষ নয়, জামায়াতের সহযোগীদেরকেও বিচারের আওতায় আনার দাবী জানানো হয়। এখানে তারা বিএনপিকে মিন করে। হিসাব করলে দেখা যাবে, শাহাবাগ দেশের দুই তৃতীয়াংশ মানুষের অধিকারকে হুমকির মুখে ফেলে দেয়।  

শাপলার দাবীগুলো প্রধানত আত্মরক্ষামূলক : তারা তাচ্ছিল্য-মামলা-হামলা থেকে মুক্তি চায়। শাপলার চরিত্র প্রধানত অরাজনৈতিক : বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ মুসলমান, হেফাজত আওয়ামীলীগকে কেবল এটাই মনে করিয়ে দিতে চায়। ধর্মপালন করার অধিকারই যথেষ্ট, আওয়ামীলীগ শুধু বলুক, ‘আমরাও মুসলমান’, হেফাজতের দাবী কেবল এতটুকুই। দেশের দুই তৃতীয়াংশ মানুষ যখন হুমকির মুখে, তখন হেফাজতের দাবীগুলো ছিল বৈপ্লবিক। শাহাবাগকে ঠেকিয়ে দিতে এমন কৌশলের কোন বিকল্প ছিলো না—যদি আপনি ঊনমানুষ হয়ে যান, তবে রাজনীতি করবেন কীভাবে? মনে রাখা ভালো, বিএনপিও শেষমুহুর্তে হেফাজতের পাশ থেকে সরে দাড়ায়।এত কৌশল সত্ত্বেও হেফাজতকে দাবী আদায় করতে হয় রক্তের চড়া মূল্য দিয়েই। 

চব্বিশের পরে প্রতিরোধের প্রয়োজন ফুরিয়েছে। বিএনপি এখন প্রধান রাজনৈতিক দল। জামায়াত প্রতিষ্ঠানগুলো ফিরে পেয়েছে। ধর্মীয় রাজনীতি নিষিদ্ধ দূরে থাকুক, বিএনপি এখন ইসলামি মূল্যবোধ রক্ষা করবে বলে অঙ্গীকার করেছে। ধর্মীয় পরিচয়ের ভিত্তিতে বৈষম্যের দিন শেষ। শাহাবাগ আপাতত পরাজিত, ঠিক এ কারণেই শাপলার প্রাসঙ্গিকতাও ফুরিয়েছে। শরীফ মুহাম্মদ তেরোতে বলেছিলেন, শাপলা কোন উৎসবের বিষয় নয়, অনেক কান্না-বেদনার সম্মিলিত বহিঃপ্রকাশ। কাজেই, এখন শাপলার যুগে পড়ে থাকাটাও অর্থহীন।আপনার কি মনে হয়, শাপলার রাজনীতি কি খুব আনন্দদায়ক অভিজ্ঞতা? আপনি পূর্ণ মানুষ হলে ঊনমানুষের রাজনীতিটাও অর্থহীন। 

তবে শাপলা-শাহাবাগের পর্ব শেষ হলেও এখনো ষড়যন্ত্র থেমে নেই। বীজ রয়ে গেছে সবখানেই। ডানপন্থী মহলগুলোও এখন নতুন পরিকল্পনায় ব্যস্ত। যদি তারা রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা আনতে ব্যর্থ হয়, তবে শাহাবাগ আবার ফিরে আসবে। ফিরে আসবে মৃত্যুদন্ড, প্রতিষ্ঠান দখল, গুম-গ্রেফতারের রাজনীতিও। এগেইন, সেটাই শাহাবাগের সফলতা। 

Iftekhar Jamil

25 Jan, 19:20


গাজার এক কিশোর। মাথা চুইয়ে রক্ত পড়ছে, অথচ দেখেন, মুখ কতটা নির্ভার।

Iftekhar Jamil

25 Jan, 19:19


আল জাজিরা আরবি ও ইংরেজি গতকাল দুটি গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্টরি প্রকাশ করেছে। গাজা ও আফগানিস্থান নিয়ে। ওদের কুরবানি দেখে নিজের জীবনকে খুবই তুচ্ছ মনে হল।

Iftekhar Jamil

23 Jan, 10:05


Life isn't fair sometimes, okay?

পাকিস্তান আন্দোলনে প্রধানত নেতৃত্ব দিয়েছেন কারা? বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রাজুয়েটরা। বুদ্ধিজীবী হিসেবেও প্রধানত ভূমিকা রাখেন আলিয়া–আলীগড়ের আলেমরাই। উভয়ক্ষেত্রেই দেওবন্দি আলেমদের ভূমিকা ছিল ‘গৌণ’। এখানে আশরাফ আলী থানবিদের কথা আনলে হবে না, আপনাকে গ্রাম-গঞ্জ-টাউনশহরের কথা ভাবতে হবে। ময়মনসিংহ বা লক্ষ্মীপুরে কারা মুসলিম লীগ করতেন, নেতৃত্ব দিতেন কারা?

সেক্ষেত্রে দেওবন্দি আলেমদের তুলনায় আলিয়া-বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রাজুয়েটদের সংখ্যা ছিল অনেক বেশী।

আলেমরা দেড়শ বছর টানা সংগ্রাম করেছেন, তবে সংগ্রামের ফসল ঘরে তুলতে পারেননি। কুরবানি দিয়েছেন সবচেয়ে বেশী, তবে কুরবানির দামটুকু পাননি। আমাদেরকে মাদরাসায় শুনানো হত আলেমরা আজাদি এনেছেন, পরে ইতিহাসের বইপত্রে দেখি আলিয়া-আলীগড়ের গ্রাজুয়েটদের আলোচনাই বেশী। আমি প্রশ্ন করি, কোনটি প্রকৃত সত্য? আদতে, এখন মনে হয়, উভয়টিই আদতে অর্ধসত্য।

আলেমরা কেন সংগ্রামের ফসল ঘরে তুলতে পারলেন না?

এর কারণ প্রধানত দু’টি। দীর্ঘ লড়াইয়ে আলেম সমাজ ক্লান্ত হয়ে পড়েছিল, পিছিয়ে পড়েছিল অর্থনৈতিকভাবেও। কাজেই, তারা সমাজের মূল স্রোত থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এক্ষেত্রে জনতার সংখ্যা মাপলে হবে না, প্রভাবশালীদের কথা মাথায় আনতে হবে সবার আগে। থানবিও এই সীমাবদ্ধতার কথা স্বীকার করেন। তার ভাষায় অর্থনৈতিক স্বাচ্ছন্দ্য ও সামাজিক পদমর্যাদা হারানোর প্রেক্ষিতে আলেমরা সামাজিক নেতৃত্ব খুইয়ে বসেন।

পাশাপাশি, আরেকটি কারণ এখানে উল্লেখ করা জরুরী। আলেমরা নতুন ‘লিবারেল ব্যবস্থা’ মানতে রাজি ছিলেন না। যদি ব্রিটিশ শিক্ষাব্যবস্থা-প্রশাসন-প্রভাবই নতুন রাষ্ট্রের প্রধান নিয়ন্ত্রক হয়ে ওঠে, তবে একসময় ইসলাম অপ্রাসঙ্গিক হয়ে যাবে। হয়েছেও তাই, সেই আলিয়া-আলীগড়ের বুদ্ধিজীবীদের সিলসিলা এখন নাই বললেই চলে। মুসলিম জাতীয়তাবাদীরাও আওয়ামীলীগ-বিএনপিতে যোগ দেন। সিস্টেমে ঢুকে সিস্টেম পরিবর্তনের ফলাফলটা তারা পেয়ে যান হাতেনাতে। বদরুদ্দিন ওমর বা মাহফুজ আনামরা এই পরিবর্তনের ফসল।

তাহলে, আপনি ঠিক কোন পথটা বেছে নিবেন? নিজেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলবেন সবকিছু থেকে, নাকি ঢুকে যাবেন সিস্টেমের ভেতরেই? এই প্রশ্নের কোন একক উত্তর নেই।

দেখুন, সিস্টেমে না ঢুকে আলেমরা সামাজিক প্রভাব ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি হারিয়েছেন, এটা যেমন সত্য। একইভাবে এটাও সত্য যে, মুসলিম জাতীয়তাবাদীরা হারিয়েছেন সবকিছু : তাদের উত্তরসুরীরা এখন আর মুসলমানিত্বে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন না।

মডারেট বনাম মানহাজি তর্কটা আসলে এতটা সরল না। সবার জন্য সমান উত্তর প্রযোজ্য নয়। আমাদেরকে অবশ্যই দুনিয়াকে বুঝতে হবে কমপ্লেক্স ওয়েতেই। ‘লিবারেলাইজেশন’টা সমাধান না, মুসলিম জাতীয়তাবাদীদের পরিণতির কথা মাথায় রাখবেন সবসময়। ছাত্রভাইদের বিজয়ের কথাই ভাবুন, একই সময়ে মরক্কো-তিউনিসিয়ায় ইসলামপন্থীদের পতন ঘটে : শহুরে শিক্ষিত মধ্যবিত্ত শ্রেণী কখনোই বিপ্লব করতে পারবে না। হেকমতিয়ার-ইখওয়ানের অস্তিত্বই এখন হুমকির মুখ।

লিবারেল প্রসেসে সফলতার কিছু লিমিটেশন আছে, আপনি সেই লিমিটটা কখনোই অতিক্রম করতে পারবেন না। পাশাপাশি, সিস্টেম ছেড়ে দেবার ফলাফলটাও কি সবসময় ভালো হয়? সেই আগের কথায় ফিরে যাই। ধরেন, আগামীকাল ময়মনসিংহ বা লক্ষ্মীপুরে বড় আন্দোলন হবে, তবে সেখানে কওমি আলেমদের ভূমিকা থাকবে খুবই গৌণ। কারণ সিস্টেমের বাইরের লোকেরা কখনো সিস্টেমের নেতৃত্ব দিতে পারে না।

আবারও বলি,

Life isn't fair sometimes, okay?

Iftekhar Jamil

16 Jan, 00:46


মোরাল প্যানিক

গতকাল কয়েকজন ’রাজারবাগী’ আন্দোলনরত ‘পাহাড়ি ছাত্র’দের ওপর আক্রমণ করেছেন। এই ঘটনাকে কোনভাবেই জাস্টিফাই করার সুযোগ নেই, তবে কয়েকটি বিষয় খুবই গুরুত্বপূর্ণ : এই ঘটনায় এক্টিভিস্ট-মিডিয়ামহলে ‘মোরাল প্যানিকের’ সৃষ্টি হয়েছে, প্রথমআলো গতকাল থেকে এ নিয়ে প্রায় সাত-আটটি নিউজ করেছে, সরকারের দুইজন উপদেষ্টা মধ্যরাতে এ নিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন, বা বলা ভালো, স্ট্যাটাস দিতে বাধ্য হয়েছেন। প্রশ্ন হল, মোরাল ‘প্যানিক‘টা কেন সৃষ্টি হল? 

আক্রান্তরা অনেকেই বামধারার শিল্প-সাহিত্যের সাথে জড়িত, কয়েকজন জড়িত উদিচীর সাথে, কাজেই ‘মোরাল প্যানিক’ ঘটাটাই বরং স্বাভাবিক। ঠিক এ কারণেই আন্দোলনকারীদের পাহাড়ি পরিচয়টা নয়, বাম-উদিচীর পরিচয়টাই বরং বেশী গুরুত্বপূর্ণ। প্রশ্ন হল, কেন প্রথমআলো ঘেরাও কর্মসূচী পুলিশি লাঠিচার্জের মুখে পড়লো, কেন ‘পাহাড়ি’রা ‘বিনাবাঁধা’য় সরকারি অফিস ঘেরাও করতে পারলো—দ্বিতীয় কর্মসুচীতে কেন পুলিশ অনুপস্থিত? এটাও বোধগম্য বিষয় : লেজিটেমেসির অভাব। 

প্রথমআলো চেক করতে গিয়ে আরও একটি বিষয় চোখে পড়লো,  প্রথমআলো সাদপন্থীদের দাবীর বিষয়ে গতকাল দুটি নিউজ প্রকাশ করেছে। নিউজগুলোতে কোন কনটেক্সট নেই, রাজারবাগীদের মতোই সাদপন্থীরা টঙ্গিতে আক্রমণ চালিয়েছিল, এই তথ্যটি অনুপস্থিত। ইউ সি—‘মোরাল প্যানিক’ সাধারণত খুবই সাবজেক্টিভ বিষয়, ডবল স্টান্ডার্ড সবখানেই আছে, তবে ‘মোরাল প্যানিক’ কি সবখানে উপস্থিত? 

Iftekhar Jamil

14 Jan, 10:04


মদিনা হুজুর

গ্রামের একটা ছোট মাদরাসায় পড়াতেন আব্দুর রব মদিনা হুজুর। কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলায়, দুর্গম পাহাড়পুর এলাকায়। কোন রাস্তা নেই, তিন চার কিলোমিটার নৌকা/পায়ে হাটার পথ। পাহাড়পুরে তিনি আব্দুল হাই পাহাড়পুরীকে দীক্ষা দেন। মদিনা হুজুর বলতেন, দুনিয়াতে কী করেছি জিজ্ঞাসা করলে আমি বলবো, পাহাড়পুরীকে শিক্ষাদান করেছি। প্রভাবশালী আলেম আব্দুল মালেক ও আবু তাহের মিসবাহ পাহাড়পুরীর দুই প্রধান ছাত্র।

আমি যদি জিজ্ঞাসা করি, আপনি কি মদিনা হুজুরকে চিনেন? আপনি নিশ্চয় বলবেন, আমি চিনি না। গতকিছুদিন আগে মদিনা হুজুরের ছেলেকে জিজ্ঞাসা করলাম, হুজুরের কোন লেখাজোখা আছে? তিনি উত্তর দিলেন, মদিনা হুজুর কখনো আনুষ্ঠানিকভাবে লেখালেখি করেননি। আপনাদের চোখে নিশ্চয় মদিনা হুজুরের কোন ‘নলেজ প্রডাকশন’ নেই, ‘জ্ঞানতাত্ত্বিক উৎপাদন’ নেই, ইতিহাসে মদিনা হুজুরের নাম দ্রুতই মুছে যাবে। বাকি আমরা জানি, মদিনা হুজুরের মানের আলেম বাংলাদেশে এখন আর নেই। হয়তো অনেক লেখা আছে, অহংকার আছে, অনর্থক ‘তাহকিক’ আছে—রুহটাই নেই।

আমরা যেভাবে ইলম ও আলেম সমাজকে কল্পনা করি, তাদের যেমন পরিগঠন কামনা করি, তার সীমাবদ্ধতা অনেক বেশী। হয়তো বাংলাদেশের ধর্মীয় সমাজ একসময় সামাজিক চাপে ‘উৎপাদনমুখী ব্যবস্থায়’ রুপান্তরিত হতে বাধ্য হবে। বাস্তবতা হচ্ছে, এতে ক্ষতির আশঙ্কা অনেকবেশী। আপনি অনেক ‘উদার’ ব্যাখ্যা পাবেন, কঠোর ‘তাফসীর’ পাবেন, সিলসিলা ও সোহবত পাবেন না। অনেক ‘ইজতিহাদ’ পাবেন, 'তাকলিদ ও আকওয়াল' পাবেন না। আত্মিক প্রশান্তি ও ইতমিনান পাবেন না।

হুজুর মদিনার কথা শুনলে কান্না শুরু করতেন, এভাবে তার নাম হয়ে যায় মদিনা হুজুর। দরসে প্রথমে তিনি ফুঁপানো শুরু করতেন, পরে কান্না ছড়িয়ে যেত সব ছাত্রদের মধ্যে। তিন চার মিনিট টানা সবাই রসূলের ভালোবাসায় কান্না করতে থাকতো । তিনি স্বপ্নের নিখুত ব্যাখ্যা বলতেন। আমাদের এক শিক্ষক বলছিলেন, কখনো মনে ক্লান্তি আসলে হুজুরের সামনে গিয়ে বসতাম, বলতাম হুজুর দোয়া করে দেন। হজুর মৃদু হেসে অজিফা পড়তেন, মনে ইতমিনান ফিরে আসত।

দুই হাজার একুশের সাতই জানুয়ারি মদিনা হুজুর ইন্তিকাল করেন

Iftekhar Jamil

14 Jan, 05:35


থামতে যাচ্ছে গাজায় ইজরাইলি আগ্রাসন, খবর আল জাজিরার।

Iftekhar Jamil

13 Jan, 17:22


ধর্ম এক, ধার্মিকতা অনেক

ধার্মিকতার অনেক ধরণ আছে। রুচির পার্থক্যে ধার্মিকতাতেও পার্থক্য হয়ে যায়। কারো কাছে বুদ্ধিবৃত্তিক ধার্মিকতা ভালো লাগে, কারো কাছে ধর্মের মানে সমাজসংস্কার, আবার কারো কাছে ধার্মিকতার মানে আল্লাহর সাথে একান্ত সম্পর্ক। মৌলিক আরকানে আমল করলে এই রুচিগত পার্থক্যে বিশেষ অসুবিধা নাই। যারা বুদ্ধিবৃত্তিক দিকে গুরুত্ব দেন, ধর্মের তাত্ত্বিক ও প্রজ্ঞাগত দিকে জোর দেন বেশী, তাদের কাছে হয়তো সমাজসংস্কার ও আধ্যাত্মিক ধার্মিকতাকে ততটা আকর্ষণীয় মনে হবে না, তবে রুচিগত পার্থক্যের ভিত্তিতে একে সামাজিক বৈচিত্র্য হিসেবে মেনে নিতে হবে।

সাহাবায়ে কেরামের মধ্যেও সবাই সমান ছিলেন না, সবাই এক কাজে ব্যস্ত ছিলেন না। অনেক সাহাবি নবীজির দৈনিক বয়ানেও শরীক হতেন না। সালাফের মধ্যেও ধর্মচর্চার রুচিতে পার্থক্য ছিল। আলেমদের মধ্যেও একেকজনের কর্মপন্থা একেকরকম ছিল। কেউ মনে করেছেন, যুক্তিতে প্রতিপক্ষকে ধরাশায়ী করলেই ইসলাম বিজয়ী হয়ে যাবে, কেউ জিহাদ ও আমর বিল মারুফে গুরুত্ব দিয়েছেন আর কেউ মনে করেছেন, আল্লাহর সাথে ব্যক্তিগত সম্পর্ক দরকার, তারা তাসাউফে গুরুত্ব দিয়েছেন। আবু জর রাঃ এর মা বলেছেন, চিন্তায় ডুবে থাকা আমার ছেলের ইবাদতের অংশ ছিল।

ইসলামে সমন্বয়ের কিছু নীতি আছে, আইন ও কেফায়ার মধ্যে দায়িত্ব ভাগ করার ব্যবস্থা আছে, তবে মূল কথা হচ্ছে, তবুও রুচিগত পার্থক্য থাকবেই। যারা তাবলীগে বেশী সময় লাগায়, তাদেরকে আপনার মনে হতে পারে, অল্পকিছু কাজ ও ইলমের সংকীর্ণ জগত নিয়ে ব্যস্ত থাকার তো কোন অর্থ নেই, নিজের দিকে তাকিয়ে দেখবেন, আপনিও আসলে বেশী কিছু করছেন না। পড়াশোনার তাত্ত্বিকতা ও মিছিল-মিটিংয়ের সামাজিকতায় অনেক কাজ হচ্ছে, সেটাও বলা যাচ্ছে না। তাই অন্যকে বিচার করার আগে বিনয়ী হওয়া উচিত, কে কোন মাপের, কার রুচি কোন ধাঁচের, আগে তার খোঁজ নেওয়া রাখা উচিত।

Iftekhar Jamil

13 Jan, 15:03


ইজতেমায় কেন যাবেন?

সময় করতে পারলে একবেলা টঙ্গি ইজতেমা থেকে ঘুরে আসতে পারেন। মানসিক-আধ্যাত্মিক মনোভাব পরিবর্তনে পরিবেশের ভূমিকা অনেক বড়—সাগর-নদী-পাহাড় দেখলে আপনার মন খুশিতে ভরে ওঠে, মসজিদে গুনাহের চিন্তা আসে না, অন্ধকার ঘরে বসে থাকলে মনে ছড়িয়ে যায় অবসাদ। যদি দলবদ্ধভাবে যেতে পারেন, তবে সবচেয়ে ভালো হয়। একসাথে খাওয়া-ঘুরার আনন্দের তুলনা হয় না।

তাবলিগ নিয়ে অনেকের মনেই অনেক রকমের প্রশ্ন আছে।

ক) তাবলিগ কোন ধর্মীয় বিবাদকে 'প্রমোট' করে না, আপনি যে চিন্তারই হোন, তাবলিগ আপনাকে 'জাজ' করবে না।

আপনি কওমি মাদরাসার ভেতরে গেলে আহলে হাদিস-জামাতের সমালোচনা-পর্যালোচনা আকছার পাবেন, তবে তাবলিগকে এসব বিতর্ক থেকে দূরে রাখা হয়। মতাদর্শিক পরিচয় নিয়ে মাদরাসার সাথে সম্পর্ক রাখা সহজ নয়, তবে তাবলিগে এসব কিছুই গুরুত্বহীন, আপনি মুসলমান এটাই সবচেয়ে বড় কথা। তাই মালয়েশিয়ান তাবলিগে শাফেয়ী নিয়মে মাসায়েল বলা হয়, সৌদিতে সালাফি ধারায় মৌলিক 'আকিদা-মাসায়েল' আলোচনা করা হয়।

খ) তবে আধুনিক মানুষের জন্য তাবলিগকে 'হজম' করা অনেকক্ষেত্রে সহজ নয়।

তাবলিগে যারা যান, তারা অধিকাংশই সাধারণ মানুষ। খুবই সাধারণ তাদের কথাবার্তা। তাবলিগের ওয়াজ-কিতাবের ভাষা-কল্পনা প্রাচীনপন্থী—কারামাত-অলৌকিকতার গল্প ছড়িয়ে থাকে তাবলিগের পদে পদে। যারা দুনিয়াকে নিছক কজ এন্ড এফেক্টে ভাবতে অভ্যস্ত, যাদের মনে বসে আছে বৈজ্ঞানিক ভাষা-যুক্তি, তাদের অনেকের কাছে তাবলিগের অলৌকিক ভাষা-গল্পে অস্বস্তি লাগবে, এটা সত্য। তবে আপনি যদি আরও গভীরভাবে ভাবতে শিখেন, বৈজ্ঞানিক দর্শনের সাথে পরিচিত হন, তবে ধরতে পারবেন, আমাদের প্রতিদিনের জীবনের অনেককিছুই 'লৌকিক' নয়। আমাদের ভাব-ভালোবাসা-ধর্ম কোনকিছুই নিছক বৈজ্ঞানিক যুক্তিতে আবদ্ধ নয়, ফজরের নামাজ কেন দুই রাকআত, এর কি কোন যৌক্তিক উত্তর আছে?

তবে ইসলাম ধর্মে কুরআন-হাদিসের বাইরে অলৌকিকতার ভিত্তিতে কোন হুকুম-বিধান গ্রহণের সুযোগ নেই। বিধান গ্রহণ না করলেও আমাদের প্রতিদিনের জীবনে কি অলৌকিকতা নেই? সৌন্দর্য-নৈতিকতা-ইতিহাসের গভীরে গেথে আছে অলৌকিকতা। ঘুম কেন জরুরী, সেই আলোচনা আপনি করতেই পারেন, একে নাম দিতে পারেন বৈজ্ঞানিক চিন্তা। তবে আপনি তো আলোচনা করে ঘুমকে বেছে নেননি। চিন্তা করার আগেই আপনি ঘুমাতে শিখে যান।

এটা কি অলৌকিকতা নয়?

Iftekhar Jamil

11 Jan, 04:13


দোয়ার গুরুত্ব

দোয়া ইসলামের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অংশ। মানুষ আল্লাহকে ডাকতে ভুলে গেছিল। মুশরিকরা চাইতো মাখলুকের কাছে, মূর্তি-প্রতিকৃতির কাছে। গ্রীকরা আল্লাহর গুণকে অস্বীকার করতো, গুণকে শিরিকি বলত : রহীম-রহমানের কাছে চাইবার সুযোগ ছিলো না। ইসলাম মানুষকে এসব জড়তা থেকে মুক্তি দিয়েছে, মানুষকে মুনাজাত ও দোয়া করতে শিখিয়েছে, আল্লাহর সাথে একান্ত হতে শিখিয়েছে।

وَإِذَا سَأَلَكَ عِبَادِي عَنِّي فَإِنِّي قَرِيبٌۖ أُجِيبُ دَعۡوَةَ ٱلدَّاعِ إِذَا دَعَانِۖ فَلۡيَسۡتَجِيبُواْ لِي وَلۡيُؤۡمِنُواْ بِي لَعَلَّهُمۡ يَرۡشُدُونَ

And when My servants ask you, [O Muhammad], concerning Me - indeed I am near. I respond to the invocation of the supplicant when he calls upon Me. So let them respond to Me [by obedience] and believe in Me that they may be [rightly] guided.

Al-Baqarah: 186

Iftekhar Jamil

10 Jan, 23:05


জরুরি দোয়া

Iftekhar Jamil

10 Jan, 12:59


সম্পর্ক নাকি গোলামি?

নবীজি সবসময় অমুসলিমদের সাথে সাধারণ-স্বাভাবিক সম্পর্ক বজায় রেখেছেন। আবিসিনিয়া-রাজের সাহায্যগ্রহণ থেকে শুরু করে মক্কায় আবু তালিবের নেতৃত্বে যারা নবীজিকে আশ্রয় দিয়েছেন, তারা অনেকেই মুসলমান ছিলেন না। মদিনায় অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলার উদ্দেশ্যে ইহুদীদের সাথে রাজনৈতিক চুক্তি করেন, নবীজির সেবকদের একজন ছিল ইহুদী বালক, শেষবয়সে এক ইহুদীর থেকে তিনি ঋণ গ্রহণ করেন।

তবে সেই একই নবী মক্কার 'ভালো' কাফেরদের কথায় নিজের আদর্শ থেকে সরেননি, আত্মীয়তা-সম্পর্কের মোহে নীতিতে আপোষ করেননি। 'ভালো' কাফের-ইহুদীদের সাথে মিলে 'ইনসাফবাদী ও ননবাইনারী' রাজনীতি করতে চাননি। ইহুদীদের বিশ্বাসঘাতকতার শক্ত শাস্তি দিয়েছেন। যারা অমুসলিমদের সাথে 'বসবাস করবে', তাদেরকে শক্ত ধমকি দিয়েছেন। বদরের কঠিন মুহুর্তেও কাফের যোদ্ধাদের সাহায্য প্রত্যাখ্যান করেছেন।

বিষয়গুলো কি অনেক অস্পষ্ট?

অমুসলিম-সেকুলারদের সাথে যোগাযোগে কোন আপত্তি নেই, থাকা উচিতও নয়। অবশ্য পাওয়ার ডাইনামিক্সে সম্পর্কের প্রকৃতি নির্ধারিত হয়ে যায়। আপনি কাকে কতটুকু গুরুত্ব দেন, কাকে নিয়ে আপনি ট্রল করেন, আপনি কোথায় 'সংস্কারে' আগ্রহ রাখেন, কাকে 'গরীব' মনে করেন, কাকে 'এলিট' ভাবেন, কাকে ভাবেন সার্বজনীন-সাম্প্রদায়িক, এগুলোতে অনেককিছু পরিষ্কার হয়ে যায়। আপনি সে অনুযায়ী কিছু বিষয় চেপে যান, কিছু বিষয় হাইলাইট করেন, প্রায়োরিটি দেন।

এগুলো বুঝা যায়, কখনোই ঢেকে রাখা যায় না

Iftekhar Jamil

10 Jan, 07:51


নিরাপদ দূরত্ব

মাওলানা কাসিম নানুতুবিকে আলীগড় প্রতিষ্ঠাতা সৈয়দ আহমদ খান বিতর্কের আহ্বান জানান। উত্তরে নানুতুবি লেখেন, বিতর্কে সময় ও মনোযোগ নষ্ট করার মত অবকাশ নেই, তিনি কাজ নিয়ে প্রচণ্ড ব্যস্ত। পাশাপাশি, 'খান সাহেবের মত রাষ্ট্রীয় মর্যাদাবান ব্যক্তি আমার মত নাদানের কথা শুনবে, এটা আমি কোনভাবেই মনে করি না। কাজেই তার সামনে উপস্থিত হয়ে বিতর্ক করার কোন ইচ্ছেই নেই।'

এখানে দুটো বিষয় খুবই গুরুত্বপূর্ণ : ক) বিতর্কে নিরাসক্তি, খ) প্রতিষ্ঠিত কারো সাথে বিতর্কে নামলে বিশেষ কোন ফায়দা হয় না। প্রতিষ্ঠিতরা অহংকারবশত সত্যকে গ্রহণ করতে প্রস্তুত থাকেন না। অবশ্য নানুতুবির এই উত্তরে সৈয়দ আহমদ খান ব্যাপকভাবে প্রভাবিত হন, কিছুদিন পরেই মারা যান মাওলানা। খান সাহেব পত্রিকায় আবেগঘন মূল্যায়ন পেশ করেন, প্রতিবাক্যে ফুটে উঠে ভালোবাসা ও আবেগ।

সম্মান ও সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখার বিকল্প নেই, চোখের সামনে থাকলে অনেক সৌন্দর্যই ধরা পড়ে না, যেমন সূর্যের দিকে সরাসরি তাকানো যায় না, সহস্র আলোয় ঝলসে যায় চোখ।

Iftekhar Jamil

05 Jan, 17:37


শহীদ শব্দটা সহ্য করতে পারলো না ফেসবুক। টেলিগ্রামে এক্টিভিটি বাড়ানোটা এসব কারণেই জরুরি।

Iftekhar Jamil

03 Jan, 08:18


কওমি সিলেবাসে হস্তক্ষেপ?

বর্তমান সরকারের একাংশের মধ্যেও কওমি সিলেবাস সংস্কারের ভূত ঢুকতে যাচ্ছে বলে শুনছি। হাসিনা পালিয়ে গেল, কিন্তু আবুল বারাকাতের ভূতগুলো এখনো পালালো না।

দরসে নেজামির নিজস্ব একটা ইকোসিস্টেম আছে। এই ইকোসিস্টেমের কথা মাথায় না রেখে সিলেবাসে পরিবর্তন-পরিবর্ধনের কোন সুযোগ নেই। যেমন, অনেকেই মাদরাসায় গণিত ও বিজ্ঞান অন্তর্ভুক্ত করতে বলেন। আদতে দরসে নেজামিতে গণিত ও বিজ্ঞান ভালোভাবেই অন্তর্ভুক্ত ছিল।

আপনারা হয়ত জানেন না, বীজগণিতের উৎপত্তি মিরাছ-ফারায়েজকে কেন্দ্র করে, ত্রিকোণমিতির বিকাশ নামাজ-রোজার সময় গণনার অংশ হিসেবে। মালয় দ্বীপপুঞ্জের অনেক আলেম এখনো আধুনিক গণিত ব্যবহার করতে নারাজ। আমাদের শিক্ষক আইমান আল আকিতি এই তত্ত্বের শক্তিশালী প্রবক্তাদের একজন, তিনি গতমাসে রাষ্ট্রীয় সম্মাননা পেয়েছেন।

আকিতির মতে আপনি পশ্চিমা জ্যোতির্বিদ্যার মাধ্যমে শতভাগ নির্ভুল হিসাব বের করতে পারবেন না। সর্বোপরি, ইসলামি ট্র্যাডিশনে বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে গণিতের তুলনায় লজিকের ব্যবহার অনেক বেশী। পাশাপাশি, দরসে নেজামির দর্শন অংশের প্রায় চল্লিশ শতাংশ মূলত বিজ্ঞান কেন্দ্রিক আলোচনা। ক্লাসিক্যাল দর্শনের একটা বৃহত্তর অংশ যে বিজ্ঞান এই খোঁজ এখনো অনেকেই রাখেন না।

প্রশ্ন হল, কওমি সিলেবাস থেকে এসব বিষয় বাদ পড়লো কেন? মাদরাসার ভেতর ও বাহিরের মানুষরা কখনোই এই জরুরী প্রশ্নটা ভাবতে চেষ্টা করেননি। কওমি শিক্ষাক্রমের লোকেরা ট্র্যাডিশন বলতে সিলেবাসের একটা বিশেষ অংশকেই কল্পনা করেন। বাহিরের লোকেরা মনে করেন, দরসে নেজামি আসলে আউটডেটেড—আমি এদেরকে ইবরাহিম মুসার What is a Madrasa? বইটা পড়তে বলবো।

একইদেশে থাকেন, একইসমাজে বাস করেন, অথচ কেউ কাউকে ঠিকমত জানেন না

Iftekhar Jamil

03 Jan, 02:21


আল জাজিরা ডটনেট পঁচিশতম বছরে

আল জাজিরা ডটনেটের চব্বিশ বছর পূর্ণ হচ্ছে। তাদের প্রতি শুভকামনা ও কৃতজ্ঞতা। আমার আরবি শেখার পেছনে আলজাজিরার একটা বিশেষ ভূমিকা আছে। কাফিয়া পড়াকালীন সময় থেকেই আমি নিয়মিত আলজাজিরা পড়ি। তথ্য, মতামত, চিন্তা ও ভাষা-- সর্বক্ষেত্রেই আমি আলজাজিরার কাছে কৃতজ্ঞ।

আমাদের শিক্ষক মরহুম শহীদুল্লাহ ফজলুল বারী আমাদেরকে হাতে-কলমে আরবি পত্রিকা পড়তে উৎসাহিত করেছেন ও শিখিয়েছেন। হুজুর বলতেন, আমরা যখন ছোট ছিলাম, দারুল উলূম করাচিতে তকি উসমানি সাহেবের তত্ত্বাবধায়নে আমরা পত্রিকা পড়তাম, পত্রিকা পড়তেও হাতেকলমে শেখার ব্যাপার আছে। মানুষ চলে যায়, বেঁচে থাকে স্মৃতি ও সিলসিলা।

Iftekhar Jamil

03 Jan, 00:00


দোয়া

রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তোমাদের কারো দুআ তখনই গৃহীত হয় যখন সে তাড়াহুড়া না করে। ‘আমি আমার প্রভুকে আহবান করলাম আর তিনি আমার আহবানে সাড়া দিলেন না'—এমন তাড়াহুড়ো না করলে প্রত্যেকের দোয়া কবুল হয়।

বুখারী, ৬৩৪০

Iftekhar Jamil

02 Jan, 23:15


কুরআন-হাদিস চর্চা ইসলামি জাগরণের গুরুত্বপূর্ণ শর্ত


দক্ষিণ এশিয়ায় ইসলামি জাগরণের সাথে সরাসরি কুরআন-সুনান পাঠের বিশেষ সম্পর্ক আছে। শাহ ওয়ালি উল্লাহ মুহাদ্দিসে দেহলবি দেখলেন, মুসলমানরা হিন্দুদের মাধ্যমে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত, পাশাপাশি আলেমরা যুক্তিবিদ্যা-ধর্মতত্ত্ব নিয়ে ব্যস্ত। মুসলমানরা কুরআন-সুনান থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। যুক্তিবিদ্যা-ধর্মতত্ত্ব ওষুধের মতো, অতিরিক্ত ওষুধ খেলে মনে বক্রতা তৈরি হয়, রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। ওয়াজ-নসিহত-গল্পে মুসলিম ভাবালোক বুঝতে সহজ হয়, তবে এতে কুরআন-সুনান জানার প্রয়োজনীয়তা কমে না। আল্লাহ-রসূলের কালামের কোন বিকল্প হতে পারে না।

শাহ ওয়ালি উল্লাহ ফার্সিতে কুরআন অনুবাদ করেন। শাহ আবদুল আযিয ফার্সিতে কুরআনের তাফসীর লেখেন। উর্দুতে সর্বপ্রথম কুরআন অনুবাদও সম্পাদিত হয় শাহ ওয়ালি উল্লাহ পরিবারে। শাহ ওয়ালি উল্লাহের সন্তান শাহ আবদুল কাদির উর্দু ভাষায় সর্বপ্রথম কুরআনের অনুবাদ করেন। সাধারণ জনতা যাতে সরাসরি কুরআন-হাদিস পড়তে পারে, নিছক আলেমদের ব্যাখ্যার ওপর নির্ভর না করতে হয়, সরাসরি আল্লাহ-রসূলের কালাম জানতে পারে, এই উদ্দেশ্যেই উর্দু-ফার্সিতে কুরআন তরজমা-তাফসীর। শাহ ওয়ালি উল্লাহ সর্বশেষ অসিয়তে লেখেন, প্রতিদিন কুরআন-হাদিস পড়তে হবে। সরাসরি পড়তে না জানলে এক পৃষ্ঠা করে অনুবাদ পড়ে নিবে।

মোটকথা জনগণকে সরাসরি কুরআন-হাদিসের অনুবাদ পড়ার পরামর্শ দেওয়া আমাদের মানহাজের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। যারা নিয়মিত কুরআন-হাদিস পড়েন না, তারা এই প্রক্রিয়াটা অনুসরণ করতে পারেন।

ক) কুরআনের সার-সংক্ষেপ। ইয়াসির কাজীর ত্রিশ পর্বের আলোচনা, The Message of The Quran। নাশাত প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত আসলাম শেখপুরী রচিত খোলাসাতুল কুরআন বইটিও পড়তে পারেন।

খ) কুরআনের সংক্ষিপ্ত অনুবাদ ও ব্যাখ্যা। তকি উসমানী রচিত তাফসীরে তাওজিহুল কুরআন ও মুহাম্মদ শফি রচিত মাআরেফুল কুরআন অত্যন্ত সহজবোধ্য, সবার জন্য উপকারী।

গ) হাদিস ও হাদিসের ব্যাখ্যা। ইমাম নববি রচিত রিয়াজুস সালেহিন। মনজুর নোমানি রচিত মাআরেফুল হাদিস ও আলফিয়াতুল হাদিস।

ঘ) মাঝে মাঝে ইউটিউব ঘেঁটে তিলাওয়াত শুনবেন। আমি সা’দ গামেদির তিলাওয়াত পছন্দ করি। আপনি আপনার রুচিমত একটু দ্রুত পড়েন, এমন কারো তিলাওয়াত শুনবেন।

আলেমরা কেন সরাসরি কুরআন-হাদিস পড়তে বাঁধা দেন? আসলে তারা মৌলিকভাবে বাঁধা দেন না। আগেই বলেছি, সরাসরি কুরআন-হাদিসের অনুবাদ পড়তে বলা আমাদের মানহাজের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তবে ভাষাগত ও তাত্ত্বিক দক্ষতা না থাকলে সিদ্ধান্তমূলক চিন্তা গ্রহণ করা যাবে না, আকিদা ও ফিকাহের ক্ষেত্রে প্রচলিত মতামতই মানতে হবে, আলেমদের কথা এতটুকুই।

Iftekhar Jamil

02 Jan, 16:08


আল্লাহর অসীম নেয়ামত

ঠিকমতো খানা না খেলে আমরা সুস্থভাবে বেঁচে থাকতে পারবো না, তাই আল্লাহ আমাদের মুখে স্বাদ তৈরি করে দিয়েছেন। কখনো ভেবেছেন, যদি মুখে স্বাদ না থাকতো, খাবার যদি তিতা-কষ্টকর হতো, তবে আমাদের বেঁচে থাকা কতটা কঠিন হয়ে যেত? এভাবে বেঁচে থাকার সব উপকরণই আল্লাহ সহজ করে দিয়েছেন। চারদিকে তাকান, প্রতিটা বস্তু আল্লাহর নেয়ামতের সাক্ষ্য দান করবে। বান্দা হিসেবে আমরা বড়ই অকৃতজ্ঞ।

Iftekhar Jamil

02 Jan, 14:45


নারীরা কি পুরুষদের থেকে কম বুদ্ধিমান?

মুসলিম সমাজে অনেকেই এমন বিশ্বাস পোষণ করেন। তবে এই ধারণাটি মোটাদাগে ভুল। অনেকে এক্ষেত্রে নবীজির একটি হাদিসের কথা উল্লেখ করেন।

وَمَا رَأَيْتُ مِنْ نَاقِصَاتِ عَقْلٍ وَدِينٍ أَغْلَبَ لِذِي لُبٍّ مِنْكُنَّ

I have seen none lacking in Intelligence and religiosity but (at the same time) robbing the wisdom of the wise, besides you. Sahih al-Bukhari (304 and 1462), Sahih Muslim (79), Jami` at-Tirmidhi (2613), Sunan Ibn Majah (4003 and 3250), Sunan Abu Dawood (4679).

এই হাদিসে মূলত নারীদের মধ্যে বুদ্ধিবৃত্তিকতার তুলনায় তাদের আবেগের দিকটা বেশী থাকে, এটি বলা হয়েছে। পুরুষের চেয়ে নারীদের বুদ্ধি কম এটি কোনভাবেই এই হাদিস থেকে উদ্ধার করা যাবে না। নারীদের আবেগের দিক বেশী, এখন তাদের বুদ্ধি একেকজনের একেকরকম। কেউ হয়তো সমপর্যায়ের পুরুষদের থেকে বেশী বুদ্ধিমান, কেউ সমসাময়িক, কারো বুদ্ধি হয়তো কম। হাদিসে পুরুষের বুদ্ধির সাথে নারীর বুদ্ধির তুলনা নয়, বরং নারীর বুদ্ধির সাথে আবেগের দিকটাকে তুলনা করা হয়েছে : নারীদের মধ্যে বুদ্ধির চেয়ে আবেগের দিকটা প্রবল থাকে।

ধরা যাক, আপনি বললেন, খালেদ ডানহাতি, তার ডান হাতে শক্তি বেশী ; রাশেদ বামহাতি, তার বাম হাতে শক্তি বেশী। এই দৃষ্টান্তে আমরা প্রত্যেকের ডান হাতের তুলনায় বাম হাত/ বাম হাতের তুলনায় ডান হাতে শক্তি কেমন, সেটি জানলাম। খালেদের ডানহাতে রাশেদের ডান হাত থেকে বেশী শক্তি আছে, এটি উল্লেখিত দৃষ্টান্ত থেকে প্রমাণ করা কঠিন।

এবার আবার হাদিসটা পড়ুন, I have seen none lacking in Intelligence and religiosity but (at the same time) robbing the wisdom of the wise, besides you. নারীরা আবেগের বলে বুদ্ধিমানদের পরাভূত করতে পারে, তাদের এই সক্ষমতা আছে। এখানে পুরুষের চেয়ে তাদের বুদ্ধি কম, এটি মোটেই বলা হয়নি।

আয়েশা (রাঃ) এর কথাই ভাবুন। হাদিসের পাতায় পাতায় তার আবেগের কথা বর্ণিত হয়েছে। নবীজির সাথে তার খুনসুটিতে ওঠে এসেছে আবেগের গল্প। তবে এই আবেগি আয়েশাই কি সাহাবিদের মধ্যে সবচেয়ে বুদ্ধিমানদের একজন ছিলেন না? শুধু আয়েশাই নয়—রাদিয়াল্লাহু তাআলা আনহু—আপনাদের আশেপাশে এর অসংখ্য দৃষ্টান্ত পাবেন।

কাজেই, মেয়েদের আবেগ বেশী বলে তাদের বুদ্ধি কম, এটি কখনোই বলা যাবে না। তবে যেহেতু বুদ্ধির তুলনায় আবেগ বেশী, তাই কিছুক্ষেত্রে ইসলাম নারীদের তুলনায় পুরুষকে প্রাধান্য দিয়েছে। রাষ্ট্রপরিচালনা থেকে শুরু করে সংসার, অনেককিছুতেই এটি স্পষ্ট। তবে এই প্রাধান্যও বিনিময়হীন নয়, যতটুকু প্রাধান্য ততটুকু অতিরিক্ত দায়িত্ব পুরুষকে বহন করতে হবে।
আল্লাহ তাআলা বলেন,

وَلَهُنَّ مِثْلُ ٱلَّذِى عَلَيْهِنَّ بِٱلْمَعْرُوفِ ۚ وَلِلرِّجَالِ عَلَيْهِنَّ دَرَجَةٌۭ ۗ وَٱللَّهُ عَزِيزٌ حَكِيمٌ

Women have rights similar to those of men equitably, although men have a degree ˹of responsibility˺ above them. And Allah is Almighty, All-Wise. (2:228)

কারো যদি এই কথায় খারাপ লাগে, তবে নীচের আয়াতটিও পড়া যেতে পারে,

وَلَا تَتَمَنَّوْا۟ مَا فَضَّلَ ٱللَّهُ بِهِۦ بَعْضَكُمْ عَلَىٰ بَعْضٍۢ ۚ لِّلرِّجَالِ نَصِيبٌۭ مِّمَّا ٱكْتَسَبُوا۟ ۖ وَلِلنِّسَآءِ نَصِيبٌۭ مِّمَّا ٱكْتَسَبْنَ ۚ وَسْـَٔلُوا۟ ٱللَّهَ مِن فَضْلِهِۦٓ ۗ إِنَّ ٱللَّهَ كَانَ بِكُلِّ شَىْءٍ عَلِيمًۭا

And do not crave what Allah has given some of you over others. Men will be rewarded according to their deeds and women ˹equally˺ according to theirs. Rather, ask Allah for His bounties. Surely Allah has ˹perfect˺ knowledge of all things. (4:32)

আল্লাহ নারী-পুরুষকে স্বতন্ত্রভাবে সৃষ্টি করেছেন। এটি আমাদের প্রতি রহমত। এই স্বতন্ত্রতার প্রতি যত্নবান হওয়া জরুরী। একে এককথায় জেন্ডার ইন্টালিজেন্স বলে।

Iftekhar Jamil

30 Dec, 05:54


জরুরি দোয়া

Iftekhar Jamil

27 Dec, 11:02


সামন্ততন্ত্র

সামন্ততন্ত্র কখনোই সিন্ডিকেট ছাড়া চলে না। কেননা সামন্ততন্ত্র যোগ্যতা বা নীতির তুলনায় পেশিশক্তি, আত্মীয়তা-আনুগত্য ও চাটুকারিতায় বেশী নির্ভর করে। খালদুনের আসাবিয়াত তত্ত্ব সামন্ততন্ত্রের সাথে সাদৃশ্য রাখে। যারা সিন্ডিকেট ছাড়া বা দূর্বল সিন্ডিকেটে সামন্ততন্ত্র চালান, তারা বিদ্রোহ বা অনৈক্যে দ্রুত ক্ষমতা হারান।

আবার সিন্ডিকেটে যোগ্য বা নীতিবান লোকেরা সাধারণত স্থান পান না বা পেলেও যথাযথ মর্যাদা পান না। কেননা সিন্ডিকেট চলে শক্তি-সম্পর্কে, যোগ্যতা-নীতিতে না। যেহেতু সিন্ডিকেটে যোগ্য ও নীতিবান লোকেদের নিয়ন্ত্রণ কম থাকে, তাই সিন্ডিকেট দ্রুতই অজনপ্রিয় ও কতৃত্বপরায়ন হয়ে ওঠে।

মৌলিকভাবে এগুলোই সামন্ততন্ত্রের রাজনৈতিক বৈশিষ্ট্য। অনেক তাকওয়া ছাড়া এতে কোন পরিবর্তন আসে না, তাকওয়া সাধারণত দ্বিতীয় প্রজন্মে আর থাকে না। তাই স্থায়ী পরিবর্তনের জন্য দরকার প্রাতিষ্ঠানিক-স্বৈরাচারী কাঠামোর পরিবর্তন। তবে যাদের রক্তে ঢুকে আছে হাজার বছরের একনায়কতান্ত্রিক শাসন, তারা কীভাবে সহজে এর থেকে মুক্তি পাবেন?

Iftekhar Jamil

27 Dec, 07:51


কুরআন পাঠের প্রস্তুতি

১) কেন আবার কুরআনে ফিরতে হবে?

https://t.me/iftekharjamil/940

২) কুরআন পাঠের গুরুত্ব


https://t.me/iftekharjamil/947

৩) কেন কুরআন পাঠের প্রস্তুতি নিতে হবে?

https://t.me/iftekharjamil/1007

৪) কুরআন পাঠের প্রস্তুতি : একাল-সেকাল

https://t.me/iftekharjamil/1031

Iftekhar Jamil

24 Dec, 06:46


আবু হানিফা (রাঃ) কি হাদিস জানতেন না?

ইমাম আবু হানিফা টানা অন্তত ছয়-সাত বছরের মত মক্কায় অবস্থান করেছেন, বাইতুল্লায় ইলমচর্চা-গবেষণার কাজ করেছেন, হজ্ব করেছেন অন্তত পঞ্চাশবারের মতো। সুতরাং আবু হানিফা কুফায় বসবাসের প্রেক্ষিতে হাদিস জানার সুযোগ পাননি, এমন কথা বলাটা স্রেফ মূর্খতা। হানাফি মাজহাব বিকশিত হয়েছে ইবনে মাসউদ-আলকামা-ইবরাহিম নাখাঈর সিলসিলা ধরে। আমি একটা ছোট গবেষণা প্রস্তুত করেছি। তাতে দেখিয়েছি, ইবনে মাসউদ-আলকামা-নাখাঈর মতের সাথে হানাফি মাজহাবের সত্তর থেকে নব্বই শতাংশের মতো মিল আছে। তাহলে আবু হানিফার নামাজ হাদিস সমর্থিত নয়, এই কথা বলার অর্থ ইবনে মাসউদ-আলকামা-নাখাঈরা হাদিস জানতেন না। এমন কথা বলাটা কি বেয়াদবি নয়?

Iftekhar Jamil

23 Dec, 22:45


অতিরিক্ত রিক্রুটমেন্ট ক্ষতিকর

বাংলাদেশে দল-মতের অভাব নেই। এরা প্রধানত কর্মী রিক্রুটমেন্টে অনেকবেশী মনোযোগী। আমি ব্যক্তিগতভাবে ব্যাপক রিক্রুটমেন্টকে ক্ষতিকর মনে করি। দলীয় নেতৃত্ব, প্রকল্প ও প্রতিষ্ঠান না থাকলে ব্যাপক রিক্রুটমেন্ট বরং বড়রকমের ক্ষতির দরজা খুলে দিতে পারে।

দেখুন, সাধারণ মুসলমানদেরকে কেন আপনার বয়ান ও রুটিনের অধীনস্থ হতে হবে, তাদের নিজেদের ব্যস্ততা কি কোন অংশে কম? পাশাপাশি, সাধারণদের সংখ্যা অনেকবেশী হয়ে গেলে আপনি কখনোই সংগঠন-প্রতিষ্ঠানে মান বজায় রাখতে পারবেন না, ব্যক্তিত্ব ধরে রাখতে পারবেন না। এই সাধারণরা একসময় রুটিন ধারাবাহিকতায় উচ্চপদ লাভ করবে, তবে এদের পক্ষে কি কখনোই পরিবর্তন আনা সম্ভব?

ছাত্রভাইদের সফলতার একটা বড় কারণ নেতৃত্বের প্রতি বিশেষ মনোযোগ। আপনি যদি এই সংশ্লিষ্ট গবেষণা-স্মৃতিকথাগুলো পড়েন, তবে দেখবেন কখনো ছাত্রভাইরা অর্ধেক বাহিনী আত্মত্যাগ দিয়েছে নেতাকে বাঁচানোর জন্য। নেতৃত্ব পানির মত, পানি থাকলে মাছ আসবেই। যদি পানি না থাকে/কম থাকে, আপনি অল্প জায়গায় অনেক বেশী মাছ ছেড়ে দেন, তবে বিপর্যয় ঘটতে বাধ্য।

বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া সাধারণ মুসলমানদের মতাদর্শিক/রাজনৈতিক জটিলতায় ফেলে দিবেন না : এটা অনেকক্ষেত্রে ভয়াবহ অন্যায়। সাধারণ মুসলমানরা সাধারণ জীবনেই ব্যস্ত থাকুক, তাদের পড়াশোনা-পরিবার-দক্ষতা-চাকরী, এসব চলতে থাকুক আগের মতই। যেমন ধরুন, আমি ব্যাপকভাবে ইসলামি স্কুল করার বিপক্ষে। আপনার স্কুল কি রেসিডেনশিয়াল/ভিকারুন নিসার বিকল্প মান প্রোভাইড করতে পারবে? না পারলে স্কুল না করে আপনি বরং রেসিডেনশিয়াল/ভিকারুন নিসার ছাত্রদের নিয়ে কাজ করুন, যাতে তারা ঈমান-আমলটা ধরে রাখতে পারে।

আপনার দক্ষ শিক্ষক-নেতা লাগবে আগে, জনতা আপনার রিক্রুট করা লাগবে না। প্রয়োজনীয় মুহূর্তে তারা নিজেরাই আপনার পেছনে এসে দাঁড়াবে। নেতা পানির মত, পানি থাকলে মাছ আসবেই।

Iftekhar Jamil

22 Dec, 22:50


তাযকিয়া

প্রতি নামাজের শেষ আমরা সুবহানাল্লাহ-আলহামদুলিল্লাহ-আল্লাহু আকবার----এই কয়েকটা জিকির একশোবার পড়তে পারি। এই জিকিরগুলো কেন আল্লাহর সবচেয়ে প্রিয়?

ক) সুবহানাল্লাহ মানে আপনি আল্লাহর পবিত্রতা বর্ণনা করছেন, আল্লাহর কোন শরিক নেই----আল্লাহ সকল প্রকারের ত্রুটি থেকে মুক্ত।

খ) আলহামদুলিল্লাহ মানে আপনি শোকরিয়া আদায় করছেন, তাকদির মেনে নিয়ে সবকিছু আল্লাহর কাছে সোপর্দ করছেন।

গ) আল্লাহু আকবারের অর্থ আল্লাহই সর্বশক্তিমান, তিনিই সকল গুণের আধার। আপনি আপনার মন থেকে আসবাব-অসায়েলের প্রাধান্যকে বের করতে চাচ্ছেন।

Iftekhar Jamil

22 Dec, 15:57


বিপ্লব

পরিবর্তন একদিনে আসে না। প্রথম প্রজন্ম সচেতনতা সৃষ্টি করে, পরের প্রজন্ম কাজ করতে গিয়ে ভুল করে আর তৃতীয় প্রজন্ম সৃষ্টি করে ইতিহাস। পূর্ববর্তীদের আল্লাহ প্রতিদান দিন, বর্তমানে বরকত ও মাগফেরাত দান করুন আর ভবিষ্যতে দান করুন নেয়ামত।

Iftekhar Jamil

22 Dec, 14:27


বর্তমান বিশ্বে সবচেয়ে শক্তিশালী ধর্মীয় ধারা হল সুন্নি ইসলাম এবং খুব দ্রুত সুন্নি ইসলামের প্রভাব কমবে না। এর কারণ কী?

আপনি যদি খৃস্টান-শিয়া ধর্মীয় ধারার সাথে পরিচিত হন, তবে ধরতে পারবেন, এই দুই ধর্মীয় ধারাতেই 'ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব'রা রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক সুবিধা ভোগ করেন। আপনি যদি শিয়া 'ধর্মীয় নেতা' হন, তবে আপনার অনুসারীরা আপনাকে তাদের উপার্জনের একটা অংশ 'চাঁদা' দিতে বাধ্য থাকবে, পাশাপাশি আপনাকে 'রাজনৈতিক নেতা' হিসেবে মানতে বাধ্য থাকবে। একইভাবে খ্রিস্টান ক্যাথলিক চার্চেও আপনাকে 'ভর্তি' হতে হবে, ধর্মীয় নেতাদের সাংগঠনিক নেতৃত্ব মেনে নিতে হবে।

এই সাংগঠনিকতাকেই এককথায় সাংগঠনিক ধার্মিকতা বলে। সেকুলারিজম মূলত এই সংগঠন ও সাংগঠনিকতাকেই ভাঙতে চেষ্টা করে। কাজেই সুন্নি ইসলামে 'সেকুলারিজমের' কোন প্রাসঙ্গিকতা নেই, কেননা এখানে ধর্মীয় সাংগঠনিকতা নেই। আপনাকে কি কোন মসজিদে সদস্য হতে হয়, মসজিদের ইমামকে 'বাধ্যতামূলক' 'চাঁদা' দিতে হয়, রাজনৈতিকভাবে 'অনুসরণ' করতে হয়? করতে হয় না। কাজেই সুন্নি সমাজকে 'সেকুলারাইজেশন' করা অসম্ভব। আপনি কোন আলেম/ইমামের অনুসরণ করলে সেটা আসলে আপনি ব্যক্তিগত পছন্দ থেকেই মানেন, এটা কোনভাবেই সাংগঠনিক অনুসরণ নয়।

দেখেন, আমি অনেক বছর ধরে ধর্মীয় পড়াশোনা করছি, বাকি পদাধিকার বলে আমি/আমরা আপনার থেকে কোনভাবেই বেশী 'গুরুত্বপূর্ণ' নই। আমি বা আমরা ধর্মীয় ব্যাখ্যার ক্ষেত্রে বিশেষ কোন 'পদ' হোল্ড করি না, ধর্মীয় রাজনীতি বা অর্থনৈতিক সুবিধা ভোগ করি না। প্রতিজন তালিবে ইলম-আলেমকে একটা সামাজিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে ধর্মপ্রচার করতে হয়। আপনি যদি সুন্নি আলেম সমাজের সাথে প্রতিযোগিতা করতে চান, তবে আপনাকে অবশ্যই জ্ঞান-তথ্য-যুক্তি-প্রযুক্তি দিয়েই মোকাবেলা করতে হবে।

ক্যাথলিক বা শিয়াদের থেকে সুন্নি সমাজে তালিবে ইলমদের অনেক বেশী পরিশ্রম করতে হয়, তবে এর সুবিধাটাও অনেকবেশী। কারণ আপনি চাইলেই তাদেরকে 'সাংগঠনিক'ভাবে পরাস্ত করতে পারবেন না। কারণ তারা কোন সংগঠনে 'আত্মপ্রকাশ' করেন না। ঠিক এ কারণেই সুন্নি দেশগুলোতে সেকুলাররা 'ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্র'কে সমর্থন করে, 'রাষ্ট্রীয় দমনের' পক্ষে থাকে। কারণ সুন্নি সমাজে ধর্ম-ধর্মীয় প্রতিনিধিকে 'চিহ্নিত' করা যায় না। কাজেই বিরোধিতা করাও অনেক কঠিন। তবে এই অসম প্রতিযোগিতার কারণে সুন্নি সমাজে আলেম-তালিবে ইলমরা সাধারণত গরীব হন, তারা খৃস্টান যাজক-ঠাকুর-শিয়া ফকিহের মতো ধনী বা ক্ষমতার অধিকারী হন না।

আপনি হয়তো তাদেরকে 'গরীব/ক্ষমতাহীন' মনে করেন। বাকি এর পেছনের দার্শনিক তাৎপর্যটা কখনোই লক্ষ করেন না। এটা আল্লাহর পরিকল্পনার অংশ, এবং এটাই ধর্ম-ধর্মীয় ব্যাখ্যা-নেতৃত্ব-সামাজিক ভারসাম্যের সবচেয়ে টেকসই মডেল। আপনি গলা টিপে না ধরলে, বিনোদনে আচ্ছন্ন না করলে খুব সহজে কখনোই সুন্নি ধার্মিকতাকে 'নিয়ন্ত্রণ' করতে পারবেন না। আগামীকাল যদি সব মাদরাসা বন্ধ করে দেন, সব আলেমকে জেলে নিয়ে যান, বিশ্ববিদ্যালয়ের নামাজি ছাত্রটা ধর্মীয় নেতৃত্ব গ্রহণ করবে।

যতক্ষণ সমাজে মুসলিম আছে, ততোক্ষণ কিছুতেই ধর্মীয় ব্যাখ্যা-নেতৃত্বের সঙ্কট হবে না। আপনি কীভাবে-কতদূর সেকুলারাইজেশন করবেন বস, কতদূর গলা টিপে ধরতে পারবেন?

Iftekhar Jamil

22 Dec, 10:17


সময়ের ধারাক্রম

পাকিস্তান ভেঙে যাওয়াটা অনিবার্যই ছিল। ঘটনাটা কি একাত্তরে ঘটবে নাকি সাতাত্তরে ঘটবে, অনিশ্চয়তাটা ছিল শুধু এতটুকুই। ঠিক এ কারণেই আমি পাকিস্তানমুখী শোক/বেদনাবোধ পছন্দ করি না। বাংলাদেশ স্বাধীন না হলে জাসদ বনাম মুজিবলীগের বিবাদটা বাঁধতো না। বাংলাদেশের মুসলমানদের পক্ষে ঐক্যবদ্ধ জাসদ-মুজিবলীগের মোকাবেলা করাটা মোটেই সহজ ছিল না।

আমরা অনেকেই ভুলে যাই, আইয়ুব আমলে ঢাকাকেন্দ্রিক সেকুলার সংস্কৃতি/সেকুলার মধ্যবিত্ত সমাজের বিপুল উত্থান ঘটেছিল। পাকিস্তান আমলে মুসলিম জনগোষ্ঠী পৃষ্ঠপোষকতা পেয়েছে সামান্যই, অথচ তাদেরকে 'পাকিস্তানপন্থী' হবার অভিযোগটা মাথা পেতে মেনে নিতে হয়েছে। আইয়ুব মোটেই 'মুসলমানদের' পক্ষে ছিল না, অথচ 'মুসলমানদেরকে' আইয়ুবের অপরাধের দায়টা বহন করতে হচ্ছে—পরিস্থিতির ভয়াবহতাটা কল্পনা করতে পারছেন?

একাত্তরের পরে জাসদ-মুজিবলীগের রাজনীতি, উদীচী-রাবীন্দ্রিক সংস্কৃতি ভয়াবহ হুমকির মুখে পড়ে। আইয়ুব যদি কোনমতে আরও দশটা বছর টিকে যেতে পারত, তবে বাংলাদেশের সেকুলারপক্ষ অপ্রতিরোধ্য হয়ে ওঠত। জিয়াউর রহমানকে আপনারা ব্যতিক্রম হিসেবে দেখতে পারেন, তাকে ভাবতে পারেন বাংলাদেশে নতুন মুসলিম যুগের সূচনা হিসেবেও। আশি-নব্বইয়ের দশকে বাংলাদেশে বিপুল পরিমাণ মাদরাসা প্রতিষ্ঠিত হয়, 'প্রবাসী মুসলমানরা' মধ্যবিত্ত সমাজের মানচিত্রটাই পাল্টে দেন।

নব্বই ও প্রথম দশকে অব্যাহত বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চায় ইসলাম গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে আবির্ভূত হয়, রাজনৈতিক ইসলামের আবেদন বাড়তে থাকে। দ্বিতীয় দশকে এই সবগুলো পক্ষ নতুন ভাঙা-গড়ার মধ্য দিয়ে যায়, শেখ হাসিনার 'সেকুলার-জাতীয়তাবাদ' রাজনীতিতে আবেদন হারিয়ে ফেলে, সংস্কৃতিতেও এসবের গুরুত্ব কমে যায়। তবে হাসিনা-পরবর্তী নতুন প্রেক্ষাপটে আমাদেরকে নতুন দুটি চ্যালেঞ্জের মোকাবেলা করতে হবে। একদিকে আমেরিকান নিউলিবারেলিজম, অন্যদিকে ঢাকাকেন্দ্রিক এলিট সমাজের নতুন প্রজন্মের প্রতিনিধিরাও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠছেন। এদের অনেকেই পশ্চিমা প্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষিত, নেটওয়ার্ক-একসেসের দিকগুলোতেও এরা যথেষ্টই এগিয়ে।

সমাজ থেমে থাকে না, সময় এগিয়ে যায়

Iftekhar Jamil

18 Dec, 04:41


আরবি ভাষা শিখুন

আজ আন্তর্জাতিক আরবি ভাষা দিবস। আরবি ভাষা আমাদের ধর্ম-রাজনীতি-সংস্কৃতির গুরুত্বপূর্ণ অংশ। রিচার্ড ইটন দেখান, দক্ষিণ এশিয়ায় মুসলমানরা আরবি ভাষাকে মাতৃভাষা হিসেবে গ্রহণ করেনি-স্থানীয় ভাষায় কুরআন/হাদিস অনুবাদ করেনি, এটা অর্ধসত্য। মুসলমানরা স্থানীয় ভাষায় আরবি শব্দ-মূল্যবোধ-গল্প-দর্শন ঢুকিয়ে দিয়েছেন।

কাজেই উর্দু-বাংলা আর স্থানীয় ভাষায় সীমিত থাকেনি, মুসলমানদের ধর্মীয়-রাজনৈতিক-সংস্কৃতিক ভাষায় পরিণত হয়েছে ; আরবির প্রভাবে স্থানীয় ভাষায় কুরআনের রুপকল্প-গল্প-পরিভাষা স্থায়ীভাবে বসতি গড়েছে। এটা নিছক বই অনুবাদের চেয়েও অনেকবেশি শক্তিশালী। আপনি প্রতিদিনের আবেগ, অনুভূতি, চিন্তা প্রকাশ করছেন একটি বিশেষায়িত ভাষায়, যেখানে মুসলিম সভ্যতা-দর্শন গভীরভাবে প্রোথিত।

কাজেই আরবিভাষা আমাদের মাতৃভাষা নয়, এটা অর্ধসত্য। আমরা যেসব আরবি শব্দ, মূল্যবোধ, রুপকল্প ও গল্প ব্যবহার করে থাকি, সেগুলো আমাদের দেশে যুগ যুগ ধরে চলে এসেছে। আমরা সেসব শব্দ, মূল্যবোধ, রুপকল্প ও গল্প মা-বাবা-চাচা-ফুফুদের থেকে শুনে এসেছি। এই সেন্সে আরবিভাষাও আংশিকভাবে আমাদের মাতৃভাষা।

যদি আমরা জ্ঞান-বিজ্ঞান-দর্শনে ইসলামের অনুসরণ করতে চাই, তবে আরবিভাষা শেখার কোন বিকল্প নেই। একেকজন না হয় একেকভাবে শিখুক, আপনি না হয় সর্বাধিক প্রচলিত একশো/পাঁচশো শব্দ শিখলেন, হাসাদ-সাবার-গাইরাত-গিবতার মতো পরিভাষা-দর্শনের সাথে পরিচিত হলেন, সেটাও কম কিসে?

দেখুন, ইউরোপিয়ান রেনেসাঁ দাড়িয়ে আছে ল্যাটিন-গ্রীকভাষার বেদীতে, যদি তারা প্রাচীনভাষার আনুকূল্যে তাদের চিন্তা-দর্শন খুঁজে নিতে পারে, আপনি কেন আরবিভাষার সাহায্যে নিজের রাজনীতি-ধর্ম খুঁজে নিতে পারবেন না?

Iftekhar Jamil

17 Dec, 23:45


জিহাদের গুরুত্ব

একটি লোক বলল, ’হে আল্লাহর রাসূল, আমাকে এমন একটি আমল বাতলে দিন, যা জিহাদের সমতুল্য হবে।’ তিনি বললেন, “আমি এ ধরনের আমল তো পাচ্ছি না।”

তারপর তিনি বললেন, “তুমি কি এমনটা করতে পারবে যে, মুজাহিদ যখন বের হয়ে যাবে, তখন থেকে তুমি মসজিদে ঢুকে অ-ক্লান্তভাবে নামাযে নিমগ্ন হবে এবং অবিরাম রোযা রাখবে।” সে বলল, ’ও কাজ কে করতে পারবে?’ (সহিহ বুখারী, ২৮৯২)

Iftekhar Jamil

12 Dec, 16:16


নারীবাদের চোখে ফিকাহ?

ইসলামি ইতিহাসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী নিজামুল মুলক তুসি নারীদের থেকে পরামর্শ গ্রহণ করতে নিষেধ করতেন। এক নারীবাদী ফেসবুকার এ নিয়ে বেশ শোরগোল বাঁধিয়ে দিয়েছিলেন। দিনকয়েক আগে এক কিতাবে দেখলাম, নিজামুল মুলক সেলজুক সুলতানাদের প্রতি অতিশয় বিরক্ত ছিলেন।

তিনি বাতেনিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছেন, মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করছেন, ইমাম গাজালির মত ব্যক্তিদের পৃষ্ঠপোষকতা করছেন—সুলতানাদের এসব নিয়ে ক্ষোভের অন্ত ছিল না, 'এত টাকা কেন পানিতে ফেলা হচ্ছে?' ব্যক্তিগত জীবনের এমন অভিজ্ঞতা থেকে নিজামুল মুলক লেখেন, রাজা-বাদশাহরা যেন স্ত্রীর কথায় পরিচালিত না হন। গাজালিও কাছাকাছি কথা লেখেছিলেন।

আপনি যদি এই কনটেক্সটের কথা মাথায় না রাখেন, তবে নিজামুল মুলককে কখনোই বুঝতে পারবেন না। আপনার সমস্ত রাজনীতি প্রাসাদ ষড়যন্ত্রে ভেঙে পড়ছে, এমন প্রেক্ষাপটে নারীদের বিষয়ে আপনার মূল্যায়ন কঠোর হবে, সেটাই স্বাভাবিক। অনেকে এমন কনটেক্সট-প্রেক্ষাপট বিবেচনায় না নিয়ে ফিকাহ-ইতিহাসের বই থেকে খণ্ডিত বাক্য তুলে আনেন। এগুলো অনৈতিহাসিক চর্চা, ইতিহাসের এক যুগকে আরেক যুগের আলোকে বুঝতে চেষ্টা।

নারীদের বিষয়ে ইসলামি ফিকাহে যেসব শব্দ-পরিভাষা-মূল্যায়ন প্রকাশ করা হয়েছে, সেগুলো কিছুক্ষেত্রে এমন ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটের ফসল। আপনি প্রশ্ন করুন, তৎকালীন যুগের নারীরা কি তাদের স্বামীদের নিয়ে বিস্তর অভিযোগ করত, তারা কি 'মুক্তি' চাইত, নিজেদেরকে 'বন্দী' মনে করত? যদি এমনটা না হয়, তাহলে তারা ভালোই ছিলেন বলা যায়। এখন, পাঁচ-সাতশো বছর পরে প্রেক্ষাপট-পরিস্থিতি বিচার-বিশ্লেষণ না করেই আপনি বড় বড় ফকিহ-আলেমদের কাঠগড়ায় ওঠানো শুরু করলেন, এরচেয়ে বড় অবিচার আর কী হতে পারে?

আপনাদের একটা ছোট দৃষ্টান্ত দেই। অটোমানরা নারীদেরকে 'পুরুষকেন্দ্রিক' দৃষ্টিতেই দেখতেন। তবু, দেশে দেশে অটোমান সিরিয়ালগুলো এত জনপ্রিয় কেন, অটোমান নায়করা এতটা সমাদৃত কেন? জীবন আপনাদের কল্পনায় আঁকা খণ্ডিত 'নারীবাদে' আটকে থাকে না।

Iftekhar Jamil

12 Dec, 12:27


জুলাই-বিপ্লবে কারা সবচেয়ে বেশী আক্রান্ত হয়েছে, ভূমিকা রেখেছে?

জুলাই-বিপ্লবে মাঠের রাজনীতিতে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছে নিন্মবিত্ত স্কুল-কলেজের ছাত্ররা। এখানে ধর্মীয় ও শ্রেণীকেন্দ্রিক উপাদানগুলো জোরালোভাবে সক্রিয় ছিল। খেয়াল করলে দেখবেন, আন্দোলনে ঢাকার এলিট পাবলিক বা প্রাইভেট স্কুল-ইউনিগুলোর প্রায় কেউই মারা যায় নাই। মাদরাসার ছাত্রদের অংশগ্রহণকেও নিছক ধর্মীয় জায়গা থেকে না দেখে শ্রেণীর জায়গা থেকে দেখাও জরুরী। তাহলে একটা পূর্ণ চিত্র পাওয়া যেতে পারে।

মুগ্ধ ও মুগ্ধের বাবা কিন্তু ক্যাটাগরিকালি মাদরাসা সমাজের অংশ। আবার মুগ্ধকে কি মাদরাসার বলা যায়? বলা কঠিনও বটে। আদতে মুগ্ধকেও মিশ্র ধরলেই ভালো। আবার ঠিক সাঈদকে কোনভাগে ফেলবেন, সে তো মধ্যবিত্ত না। এই আন্দোলনেও কি মধ্যবিত্ত আসলে সেভাবে মারা গেছে?ঢাকার কোন এলিট বিশ্ববিদ্যালয় বা প্রাইভেটের ছেলেরা মারা গেছে? পুলিশ ব্র্যাকে গুলি করে নাই, নর্দানে করছে। এখানেও কি শ্রেণীর ব্যাপার নাই?

যাত্রাবাড়ীতে যারা মারা গেছে, মধ্য জুলাইয়ে, তারা অধিকাংশই কিন্তু মধ্যবিত্ত না। এদেরকে ক্যাটাগরি করাও কঠিন। আমি পাচজন শহীদ পরিবারের সাথে দেখা করছি : এরা কেউই মধ্যবিত্ত ছিলো না। এদেরকে নিন্মবিত্ত/ধর্মীয় শ্রেণীতে রাখা যায়। মধ্যবিত্ত নেমে আসছে, এটা যেমন সত্য, কিন্তু মাঠের লড়াইটা প্রধানত মধ্যবিত্ত করে নাই। করছে অপেক্ষাকৃত গরীব স্কুল-কলেজ-মাদরাসার ছেলেরা। যাদেরকে আপনি প্রচলিত কোন ক্যাটাগরিতে ফেলতে পারবেন না।

আমি চকবাজার-লালবাগের বাসিন্দা। এই এলাকায় আন্দোলনের বিশেষ কোন প্রভাবই পড়েনি। প্রভাব পড়েছে/মারা গেছে/গ্রেফতার হয়েছে, পার্শ্ববর্তী কামরাঙ্গিরচর, ইসলামবাগ ও আমলিগোলায়—পার্থক্যটা নিশ্চয় ধরতে পারছেন। লালবাগ প্রধানত মধ্যবিত্তপ্রবণ এরিয়া, বাকিগুলো নিন্মবিত্ত।

আমি ইলিয়াস হোসাইনের কাজের মোটেই ভক্ত নই, তবে অস্বস্তিকর সত্য হল, সমাজের যে অংশ আন্দোলনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছে, তাদের মধ্যে ইলিয়াসের জনপ্রিয়তা অনেক বেশী। এই জটিলতার উত্তর কি আপনাদের কাছে আছে?

Iftekhar Jamil

02 Dec, 08:09


সিরিয়া যুদ্ধ

কাতার ও তুরস্ক ছাড়া বাকি আরব রাষ্ট্রগুলো বাশার আল আসাদের প্রতি মৌন/প্রত্যক্ষ সমর্থন জানিয়েছে। কাজেই, সিরিয়ান যুদ্ধকে সৌদি বনাম ইরানের প্রক্সি যুদ্ধ মনে করার কোন কারণ নেই। ইরান আরব রাষ্ট্রগুলোকে আসাদের সাহায্যে এগিয়ে আসতে আহ্বান জানিয়েছে।

বিরোধী গোষ্ঠীগুলোর মধ্যেও তাৎপর্যপূর্ণ পরিবর্তন এসেছে।

ক)একদিকে জিহাদি গ্রুপগুলো 'জনযুদ্ধে' বেশী মনোযোগী হয়েছে, আল কায়দার মত সংগঠনগুলোর সাথে সম্পর্ক ত্যাগ করেছে।

খ) সকল গ্রুপের সাথে কৌশলগত ঐক্যের সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যাদের একাংশ সেকুলার-গণতন্ত্রী বলে পরিচিত। গণতন্ত্রীরাও সাবেক জিহাদিদের সাথে কাজ করছে।

গ) পাশাপাশি তুরস্কের সাথে সমন্বয়ের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।

ঘ) সর্বোপরি, হাইয়াত তাহরিরুশ শামের নেতা জোলানি পশ্চিমাদের সাথে সম্পর্ক করতে আগ্রহ দেখিয়েছেন। তারা ভাবছেন, নিজের টার্গেটের চেয়ে বড় কথা বলে আসলে বিশেষ লাভ নেই।

শিয়া-সুন্নি-জিহাদি-গণতন্ত্রী ক্যাটাগরিগুলো নতুন করে ভাবার সময় এসেছে। এই ভাবান্তরটাই কি সিরিয়া যুদ্ধের প্রকৃত শিক্ষা?

Iftekhar Jamil

02 Dec, 04:42


সাদাকা করুন

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ প্রত্যেক মুসলিমের উপর সাদাকা করা ওয়াজিব। প্রশ্ন করা হল, যদি সাদাকা করার জন্য কিছু না পায়? তিনি বললেন, তবে সে নিজ হাতে উপার্জন করবে এবং নিজে উপকৃত হবে ও সাদাকা করবে। পুনরায় জিজ্ঞেস করা হল, যদি সে এতেও সক্ষম না হয় তবে কী হবে? তিনি বললেন, তাহলে সে অসহায় আর্ত মানুষের সাহায্য করবে। রাবী বলেন, আবার জিজ্ঞেস করা হল, যদি সে এতেও সক্ষম না হয়? তিনি বললেন, তাহলে সৎ কাজের কিংবা কল্যাণের আদেশ করবে। আবারো জিজ্ঞেস করা হল, যদি সে তাও না করে? তিনি বললেন, তবে মন্দ কাজ থেকে বিরত থাকবে। কেননা এটাও সাদাকা্।

Iftekhar Jamil

01 Dec, 04:24


দানের গুরুত্ব

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি বৈধ উপায়ে উপার্জিত অর্থ থেকে একটি খেজুর পরিমাণও কিছু দান করে- আর আল্লাহ তো বৈধ অর্থ ছাড়া অন্য কিছু গ্রহণই করেন না- সে ব্যক্তির ঐ দানকে আল্লাহ ডান হাতে গ্রহণ করেন। তারপর দানকৃত বস্তুকে ঐ ব্যক্তির জন্য লালন-পালন করেন; যেমন তোমাদের কেউ তার অশ্ব-শাবককে লালন-পালন করে থাকে। পরিশেষে তা পাহাড়ের মত হয়ে যায়।

Iftekhar Jamil

01 Dec, 02:15


সিরিয়া যুদ্ধ

ইরানের সর্বাত্মক সাহায্যের পাশাপাশি মিসর-সৌদি-ইমারতও আসাদের প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করেছে। ইরাক বলেছে, সিরিয়ার নিরাপত্তাকে তারা নিজের নিরাপত্তা হিসেবেই দেখে। আমেরিকা বিরোধীদেরকে ‘সন্ত্রাসী’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছে, আসাদকে সমর্থন করতে আরব রাষ্ট্রগুলোকে চাপ দিচ্ছে। হয়তো শুধু তুরস্ক ও কাতার এই হামলাকে সমর্থন করছে। আসাদ বাহিনী শেষ পর্যন্ত হামাতে প্রতিরোধ গড়তে সক্ষম হয়েছে।

Iftekhar Jamil

30 Nov, 19:14


সিরিয়া যুদ্ধ

সিরিয়ার ঘটনা পরিক্রমা এতটাই ড্রামাটিক যে, আল জাজিরা এই প্রথম গাজাকে ব্রেকিং নিউজের স্থান থেকে সরিয়ে সিরিয়াকে প্রধান খবর হিসেবে দেখাচ্ছে।

Iftekhar Jamil

30 Nov, 19:08


সিরিয়া যুদ্ধ

বিদ্রোহীরা যেভাবে আগাচ্ছে, তাতে আসাদের পতনকেও এখন আর অসম্ভব মনে হচ্ছে না। বাস্তবকে মনে হচ্ছে, কল্পনার চেয়েও বেশী কাল্পনিক।

Iftekhar Jamil

30 Nov, 12:20


সিরিয়ার আশ্চর্য যুদ্ধ

সিরিয়ায় এক আশ্চর্য যুদ্ধ চলছে। আসাদকে সাহায্য করছে ইরান, রাশিয়াও আছে সাথে। আজ আমেরিকা সমর্থিত কুর্দিরা আসাদের হয়ে লড়াই শুরু করেছে। অর্থাৎ সিরিয়ায় আসাদ + ইরান + রাশিয়া + আমেরিকান প্রক্সি এক হয়ে বিরোধীদের বিরুদ্ধে লড়ছে। আলজাজিরা জানাচ্ছে, বিরোধীরাও আমেরিকান কিছু সাহায্য পাচ্ছে বলে মনে করা হচ্ছে। অর্থাৎ আমেরিকান প্রক্সি আসাদের সাথে হাত মেলালেও আমেরিকা বিপক্ষ দলকেও সীমিত আকারে সাহায্য করছে। তারা চায়, মুসলমানরা নিজেরা নিজেরা মারামারি করুক, নিজেরা নিজেরা মরুক।

Iftekhar Jamil

30 Nov, 04:21


হিন্দুধর্ম কোন একক ধর্ম নয়

মুসলিম তাত্ত্বিকরা সাধারণত 'হিন্দু ধর্ম' হিসেবে কোন ধর্মের কথা স্বীকার করতেন না। 'হিন্দু ধর্ম' মূলত একটা জাতীয়তা, আসমানি ধর্মের বিকল্প পরিচয়। মুশকিল হল, 'হিন্দু ধর্ম'কে যদি জাতীয়তা হিসেবে ধরে নেই, তবে বাংলাদেশিরা সবাই বাংলাদেশি ধর্মের অনুসারী, যেটি কোন মর্ম বহন করে না, পাশাপাশি বাংলাদেশি 'হিন্দুদের' জাতীয়তা 'ভারতীয়' না হওয়া সত্ত্বেও তারা কেন হিন্দু, এর উত্তর প্রদান করে না।

তাই 'হিন্দু'দেরকে 'হিন্দু' হিসেবে না দেখে প্রত্যেক সম্প্রদায়কে স্বতন্ত্র পরিচয়-নামে ডাকলেই সেটা যথার্থ পরিচয় হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। তাদের সমাজ-রাজনীতি-সংস্কৃতি ধরতেও সুবিধা হতে পারে। ভারতে হিন্দুত্ববাদের উত্থানের পেছনে মুসলমানদের দায়টা হল, তারা বিপরীতধর্মী সকল পরিচয়-বিশ্বাসকে 'হিন্দু' হিসেবে ট্রিট করে জাতীয়তাবাদকে উস্কে দিয়েছে। বলাই বাহুল্য, হিন্দু একটা জাতীয়তাবাদী পরিচয়, তাই ব্রাহ্মণ-দলিত-বৌদ্ধদের আলাদা ধর্ম হিসেবে দেখাই ভালো ও জরুরী।

এখন, বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ায় হিন্দু ধর্মের শিরোনামে উত্তরভারতীয় 'ব্রাহ্মণ্যবাদ' জনপ্রিয় হচ্ছে। যেটি দীর্ঘমেয়াদে বাংলাদেশসহ উত্তরভারতের বাইরের অঞ্চলগুলোকে সাংস্কৃতিক-রাজনৈতিক ঝুঁকিতে ফেলতে পারে। কাজেই উত্তর ভারতীয় হিন্দুত্ববাদ থেকে বাঁচতে চাইলে 'হিন্দুদের'কে কোন জাতীয়তাবাদী পরিচয়ে সীমিত করা যাবে না।

Iftekhar Jamil

29 Nov, 23:20


ধর্মীয় লোকজন কেন এত তর্ক করেন?

অনেকে মনে করেন, ইসলামি রাষ্ট্র আসলে তারা মানুষের ওপর তাদের মতামত চাপিয়ে দিবেন। বিপক্ষের লোকেরা নিজেদের ধর্মীয় বিশ্বাস পালন করতে পারবেন না। এখানে একটা মজার তথ্য দেই—ইসলামি আদালতে ইবাদত নিয়ে কোন মামলা চলে না। অর্থাৎ আপনি মনে করেন, আমিন জোরে বলতে হবে, অথবা রফয়ে ইদাইন করা যাবে না, দিলেন আদালতে মামলা ঠুকে। আদালতে এই মামলা চলবে না।

আপনি মনে করলেন সবাইকে নিকাব পরতে বাধ্য করবেন—ধর্মীয়ভাবে এই কাজও করতে পারবেন না অর্থাৎ আমার মতটাই একমাত্র সহি তরিকা, তাই তুমি আমার কথা মানতে বাধ্য, ইবাদতের ক্ষেত্রে এমন যুক্তি চলবে না, তবে 'রাজনৈতিক-কৌশলগত-জনস্বার্থগত' যুক্তি খাটানো যেতে পারে, মূলত এভাবেই এবিউজের সূচনা ঘটে।

ইসলামি লোকজন রাষ্ট্রীয় ও রাজনৈতিক কাজে আরও ভালোভাবে জড়ালে মতাদর্শিক তর্ক কমিয়ে দিবে। দেখেন, আপনার সাথে যদি আমার পলিসি-ইকনমি-বাজেট নিয়ে তর্ক করার সুযোগ থাকে, তাহলে কেন আমিন জোরে নাকি আস্তে বলব, সে নিয়ে তর্ক হবে? যদি আমার পররাষ্ট্রনীতি-শিক্ষানীতিতেই সময় কেটে যায়, তাহলে আমি কখনোই গৌণ তর্কে ঢুকবো না—সেই সময়টাই থাকবে না আমার কাছে।

সেকুলারাইজেশনের মাধ্যমে ধর্মীয় লোকজনকে আপনারা ঘরের ভেতরে ঢুকিয়ে দিয়েছেন, তার হাতে এখন অফুরন্ত সময়। ভূতের কথা বলে বাড়ির লোকদের সাথে ঝগড়া করা ছাড়া তার সময় কাটবে কীভাবে? যদি যুবক জীবনযুদ্ধে না যায়, তবে বউ পেটানো ছাড়া সে কীভাবে বীরত্ব দেখাবে? বাসা-পরিবার নিয়ে আমরা যতই আবেগ দেখাই, কোভিড আমাদেরকে বুঝিয়ে দিয়েছে, বাসায় আটকে থাকার মত নির্যাতনও আর কিছু হতে পারে না।

Iftekhar Jamil

29 Nov, 15:46


সিরিয়া যুদ্ধে নতুন মোড়, হালাব পুনরুদ্ধারের পথে বিরোধী যোদ্ধারা। বিরোধী অংশে যেমন জিহাদি দলগুলো আছে, একইসাথে আছে আপাত গণতন্ত্রবাদী ধারাগুলোও। খবর আল জাজিরার।

Iftekhar Jamil

28 Nov, 16:37


আধুনিকতার আফিম

মার্কস একদা বলেছিলেন, ধর্ম আফিমের মতো রাজনৈতিক যন্ত্রণা ভুলিয়ে দিতে পারে, মানুষকে ‘নিষ্ক্রিয়প্রাণীতে’ পরিণত করতে পারে। মার্কসের মতো এতটা নেতিবাচক না হলেও অনেক মুসলিম তাত্ত্বিক তাসাউফপন্থীদের একই অভিযোগে অভিযুক্ত করেছেন। ‘কেয়ামত তো চলেই এসেছে, আল্লাহর কাছে বিচার দিলাম, বিচার তো হবে আখেরাতে, মুমিনরা তো কষ্টে থাকবেই, কষ্টে থাকাই মূল সফলতা, জুলুমটা আল্লাহরই ইচ্ছা, চুপ থাকলেও জালেমের পক্ষে তো নই’ : এসব কথা বলে তাসাউফপন্থীদের অনেকে নিজেদের নিষ্ক্রিয়সত্ত্বায় পরিণত করেছেন।

আধুনিক সমাজে ধর্ম রাষ্ট্রের কেন্দ্রে অবস্থান করে না বলে তাসাউফের রাজনৈতিক ব্যবহার অনেকটাই কমে এসেছে। শিল্প-সাহিত্য-বুদ্ধিবৃত্তিকতা-বিনোদন হল আধুনিক মানুষের আফিম। আধুনিক সমাজে পীর-পুরোহিত নেই, আছে কবি-কথাশিল্পী, বুদ্ধিজীবী-সাংবাদিক, নায়ক-নায়িকা-খেলোয়াড়। বিশ্বকাপসহ খেলাধুলাকে অতিরিক্ত নেতিবাচকভাবে দেখতে নারাজ আমি, হুকুম যদি লাগাতেই হয়, তবে ভাগ ভাগ করে লাগাতে হবে, বিশ্বকাপ সংশ্লিষ্ট সবকিছুকে একইভাবে দেখার সুযোগ নেই। সে যাই হোক, আধুনিক সমাজে বিনোদন-খেলাধুলা যে আফিমে পরিণত হতে পারে, সে নিয়ে আমার কোন সন্দেহ নেই।

আপনি বলতে পারেন, আমি রাজনৈতিকভাবে সতর্ক, বিনোদন-খেলাধুলার আফিম আমাকে ছুঁতে পারবে না। বাস্তবতা হচ্ছে, মানুষের ধারাবাহিক আবেগ-ইমোশন-অভ্যাস চিন্তার চেয়েও বেশী শক্তিশালী। আপনি প্রতিমুহূর্তে ক্রিটিকালি ভাবতে পারবেন না, আপনার হরমোন-ক্যামিকেল রিএকশন আপনাকে বন্দি করে রাখবে ইমোশনের জগতে, আগে থেকেই আপনার অবস্থান স্থির করে ফেলবে, আপনি একটা রোবটে পরিণত হবেন। আপনাকে একটা কাল্পনিক এক্সপেরিমেন্ট করতে দেই, আপনি যদি টানা পাঁচ বছর রাবিন্দ্রিক গান-সাহিত্য-বিনোদন-বুদ্ধিবৃত্তিকতায় জড়িয়ে থাকেন, তবে আমি আপনাকে গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারি, আপনি একসময় আর ক্রিটিকাল রাজনৈতিক চিন্তা করতে প্রাবেন না, আপনি হুজুর দেখলে ঘৃণা করবেন, রাবিন্দ্রিক কাউকে দেখলে মনে করবেন অতিআপন কেউ। বাংলাদেশের বামপন্থীরা উদীচী-রাবিন্দ্রিক ইমোশনের ধাক্কায় সমস্ত রাজনৈতিক সম্ভাবনা খুইয়ে বসেছে।

ছাত্রভাইদের নেতা মোল্লা সাহেব একদা বলেছিলেন, পশ্চিমারা কখনোই আমাদের জীবনব্যবস্থা মেনে নিতে পারবে না। আমাদের জীবনব্যবস্থা-বিশ্বাসই আমাদের রাজনৈতিক সফলতার প্রধান অস্ত্র। আমাদের থেকে ছাত্রভাইরা অনেকবেশী সফল, অথচ আমরা হয়তো তাদের থেকে বেশী ‘আধুনিক’, ‘বুদ্ধিবৃত্তিকতায়’ এগিয়ে, আমাদের প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা অনেক বেশী। বাকি আমরা তাদের তুলনায় অনেক বেশী ‘করাপ্টেড’। আমাদের ইমোশন-ক্যামিকেল রিএকশন অনেকবেশী দূষিত। যদি মানুষ নিছক ‘ক্রিটিকাল চিন্তা’ করেই সবকিছুর সমাধান করে ফেলতে পারত, তবে কখনোই ইবাদত-শরীয়ত-নবুওয়তের প্রয়োজন হত না। আমি-আপনি অনেক দুর্বল, আমরা যদি ইবাদত-আখলাক-শরিয়ত থেকে দূরে সরে যাই, তবে আমাদের ইমোশন-ক্যামিকেল রিএকশন দূষিত হয়ে যাবে, আমরা চাইলেও আর সিরাতে মুসতাকিমের পথে থাকতে পারবো না।

সূরা আলে ইমরানের একশো পয়ত্রিশতম আয়াতে আল্লাহ বলেন,

˹They are˺ those who, upon committing an evil deed or wronging themselves, remember Allah and seek forgiveness and do not knowingly persist in sin—and who forgives sins except Allah?

Iftekhar Jamil

26 Nov, 05:24


জরুরি দোয়া

Iftekhar Jamil

24 Nov, 16:04


সাধারণ-অসাধারণ

হাইস্কুল-কলেজে (১২-১৮ বছর) যাদের বন্ধুর সংখ্যা অনেক বেশী থাকে, যারা সবার সাথে তাল মিলিয়ে চলতে পারে, তারা বিশ্ববিদ্যালয়ে (১৯-২৫ বছর) এসে বিপদে পড়ে যায়।

আপনি যদি মোটামুটি মেধাবী হন, সব বিষয়ে আপনার তীব্র মতামত থাকে, তবে আপনি কিশোর বয়সে সমবয়সীদের সাথে সবসময় তালমিলিয়ে চলতে পারবেন না। বন্ধুত্ব থাকবে, আড্ডাও চলবে, তবে আপনার মনে হবে, তারা আপনার কথা ধরতে পারছে না—আপনার কথা শুনে হাসি দিচ্ছে ঠিকই, তবে ভঙ্গিটাই বলে দিচ্ছে তারা এসবে আগ্রহী নয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ে সমীকরণটা পুরোপুরি বদলে যায় : এখানে সবাই আপনার স্বতন্ত্র মতামতটাই শুনতে আগ্রহী, সর্বক্ষেত্রে একমত পোষণ করলে অনেকেই কিছুটা বিরক্তি প্রকাশ করবে ; নানারকমের ছেলেপেলেদের সাথে আপনার বন্ধুত্ব হবে, নানাকাজে আপনাকে জড়াতে হবে। স্কুল-কলেজ লাইফের মত আর 'সার্কেল' বানাতে পারবেন না। 'সার্কেলে' ঢুকে গেলে বাবলে আটকে যাবেন।

তবে আমার মনে হয়, কিশোরবয়সে বন্ধুমহল না থাকাটা খারাপ লক্ষণ। মেধাবী-তর্কপ্রিয় ছেলেরা সাধারণত অভিযোগ করে, সমবয়সীরা কেউই আমার মত 'চিন্তা' করতে জানে না, তারা বই পড়ে না—এমন ভাবনা অনেকক্ষেত্রে আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত। ক্রিটিকাল থিঙ্কিং ও লিডারশীপ অল্পকিছু মানুষের কাজ—সামাজিকতা-গ্রুপওয়ার্ক প্রতিদিনের প্রয়োজন। যে মেধাবীদের বন্ধুমহল নেই, তারা কর্মজীবনের সাথে খাপখাওয়াতে পারে না—কাজেই এদেরকে প্রচুর বুলিং এর শিকার হতে হয়, মনোকষ্টে ভুগতে হয়।

শেষ করার আগে তিনটা উক্তি বর্ণনা করি,

ক) মুসলিম সমাজতাত্ত্বিক ইবনে খালদুন প্রশ্ন করেছিলেন আলেম-দার্শনিকদের দিয়ে কেন রাজনীতি চলে না? খালদুনের মতে এরা প্রায়শই নীতি-তত্ত্বের মধ্যে হারিয়ে যায়—বাস্তবজীবনে অবতরণ করতে পারে না।

খ) মুসলিম সভ্যতার অন্যতম প্রধান কালচারাল ক্রিটিক আব্দুল কাহের জুরজানির মতে শ্রেষ্ঠ কন্টেন্ট অবশ্যই সহজ হবে, কমপ্লেক্স ও কমপ্রেহেন্সিভ হবে। সহজ না হলে, কমপ্লেক্সিটি না থাকলে সৌন্দর্যের জন্ম হয় না।

গ) মাকাসিদ ব্যাখ্যাকার ইমাম শাতেবির মতে মুহাম্মদ (সাঃ) এর বক্তব্য ও ব্যাখ্যা ছিল অত্যন্ত সহজ—কুরআন আরবদের ভাষা-সংস্কৃতি-কল্পনার চাদরে অবতীর্ণ হয়েছে, কাজেই কুরআনের অনুবাদ অসম্ভব। যারা আরব ভাষা-সংস্কৃতি-কল্পনা জানে না, তারা কীভাবে অসম্পূর্ণ আরবি অনুবাদে প্রভাবিত হবে?

আমাদের প্রতিদিনের জীবন যাতে বর্তমানের মধ্যে গেঁথে যায়—আমাদের কথা যেন চলমান ভাষা-সংস্কৃতি-কল্পনায় মেখে থাকে। আমাদের বক্তব্য যাতে হয় সহজ ও ব্যাপক; আমরা যাতে সাধারণদের মত হতে পারি। অসাধারণ হবার চেষ্টা জীবনে বিপদ ডেকে আনে, সম্পর্ক-আবেগকে হুমকির মুখে ফেলে দেয়।

Iftekhar Jamil

24 Nov, 04:41


মিডিয়ায় ইসলাম ও মুসলমান

বাংলাদেশে টিভি ও পত্রিকায় ধর্মীয় আয়োজনে যেসব টপিক ভিত্তিক কাজ করা হয়, সেসব দেখলে খুব বিরক্ত লাগে। তাদের মূল ফোকাস থাকে ফাজায়েল ও মাসায়েল কেন্দ্রিক। ফাজায়েল ও মাসায়েল প্রচার ও চর্চার জন্য তো মসজিদ-মাদরাসা-ওয়াজ মাহফিল আছেই। এবং আমার অভিজ্ঞতা মোতাবেক মসজিদ-মাদরাসা-ওয়াজে যে মনোযোগ ও পরিবেশ নিয়ে ফাজায়েল ও মাসায়েল বর্ণনা করা যায়, টিভি বা পত্রিকায় সে মনোযোগ ও পরিবেশ পাওয়া যায় না।

টিভি ও পত্রিকায় বরং সামাজিক ও রাজনৈতিক ঘটনায় মনোযোগ বাড়ানো উচিত, যেখানে ধর্মীয় মূল্যবোধ, নেতৃত্ব ও পক্ষের বক্তব্য নেওয়া হবে। ধর্ম সেকুলার অর্থের ধর্মীয় পাতায় আটকে না থেকে ছড়িয়ে যাবে সব পাতা ও অনুষ্ঠানে। অনেকদিন আগে শরীফ মুহাম্মদ সাহেবকে এই প্রশ্ন করলে তিনি বলেছিলেন, একদিকে মিডিয়ার কর্তাব্যক্তিরা ধর্মপাতাতেই ইসলামকে সীমিত রাখতে চান, আবার ইসলামপন্থীদের মধ্যে যারা মিডিয়ার সাথে সংশ্লিষ্ট, তাদের একটা বড় অংশ সামাজিক ও রাজনৈতিক ঘটনায় ইসলামী ব্যাখ্যা প্রয়োগের ক্ষমতা রাখেন না।

Iftekhar Jamil

23 Nov, 22:40


রেগে গেলে কেমন আচরণ করে, সেটা না দেখে কারো ওপর চূড়ান্ত আস্থা রাখবেন না।

—ওমর ইবনুল খাত্তাব ( রাঃ)

( ইমাম কারাফি কৃত জাখিরা )

Iftekhar Jamil

23 Nov, 16:36


বয়স ও বন্ধুত্ব

অনেকেই অসমবয়সীদের সাথে বন্ধুত্ব-সম্পর্ক রক্ষা করে। পরিমিতমাত্রায় হলে এতে মোটেই অসুবিধা নেই। বাকি আপনি যদি শুধু কমবয়সীদের সাথেই সম্পর্ক রক্ষা করেন, তবে আপনার গ্রোথ বন্ধ হয়ে যাবে, আপনি খুব সহজেই বাহাদুরি দেখাতে পারবেন, অজান্তেই আপনার মধ্যে তৈরি হবে শিশুসুলভ আচরণ।

আপনি যদি বেশী বয়সীদের সাথে বেশী সময় কাটান, তবে আপনার মধ্যে মানসিক জটিলতা-কঠোরতা তৈরি হবে। যে বয়সে আপনার খেলা-গল্পে কাটানো দরকার ছিল, সেই বয়সে আপনার মধ্যে ঢুকে যাবে ভারিক্কি। আপনি হারাবেন সমবয়সীদের বন্ধুত্ব, বড়দের সাথেও তাল মেলাতে পারবেন না, কেননা আপনার শরীর-আবেগ এখনো শিশু-কিশোর বয়স অতিক্রম করেনি।

বয়স ত্রিশ-পয়ত্রিশে পৌঁছে গেলে এগুলো আর অতটা গুরুত্বপূর্ণ থাকে না। কিশোর ও যুবা বয়সে এই বিষয়গুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শুধু শুধু স্বেচ্ছায় নিজের ক্ষতি করবেন না। আপনার সমবয়সীদের মধ্যেই বন্ধু-সমমনা পেয়ে যাবেন।

কম-বেশী বয়সীদের সাথে আপনার একদমই সম্পর্ক থাকবে না—এটা আমি মোটেই বলছি না, প্রয়োজন তো বটেই ; প্রয়োজন ছাড়াও মাঝেমাঝে বড়-ছোটবয়সীদের সাথে মেশার বিকল্প নেই, তবে তারা যাতে আপনার জীবনের প্রধান সঙ্গ-অনুষঙ্গে পরিণত না হয়।

Iftekhar Jamil

23 Nov, 11:51


‘মুসলমানের জীবনে আনন্দ কোথায়?’

শীতকালে ঠাণ্ডা পানিতে গোসল করা কষ্টকর। গরম পানির লোভনীয় ডাক উপেক্ষা করা অনেক কঠিন। অথবা ধরুন, প্রচণ্ড গরমে দীর্ঘক্ষণ হাটছেন, পাশে দোকান পেলে আপনার আইসক্রিম খেতে মনে চাইবেই।

একটু ভাবলে দেখবেন, আমাদের প্রত্যেকের জীবনে এমন অনেক অনুষঙ্গ আছে। যারা এসব ক্ষেত্রে ধৈর্য ধরতে পারেন, তারা ধর্মীয় ও পার্থিব জীবনে সহজেই সফলতা পান। বিপদ-বিপর্যয়ে পড়লেও সহজেই কুলিয়ে উঠতে পারেন। মৌলিক প্রত্যেক ইবাদতের মধ্যে ধৈর্যের শিক্ষাদান করা হয়। রোজায় বিরত থাকার ধৈর্য, বাকিগুলোতে ধারাবাহিকতা ও পালনের ধৈর্য। তাসাউফের মূল মর্মও কিন্তু এটাই—রিয়াজত ; নফসকে কষ্ট সহ্য করতে ও ধৈর্য ধরতে শেখানো।

নবীজি মুমিনদেরকে ভোগ-বিলাসে মত্ত হতে নিষেধ করেছেন। কেননা ভোগ-বিলাস মানুষের ধৈর্য শক্তি নষ্ট করে দেয়, আনন্দ কমিয়ে দেয়। Marshmallow Experiment নামে বিখ্যাত একটা গবেষণা আছে। এতে ছোট শিশুদের সামনে চকলেটের মতো লোভনীয় কিছু দিয়ে বলা হয়, যদি পনের মিনিটের মধ্যে না খাও, তবে তোমাদেরকে দুইটি চকলেট দেওয়া হবে। অধিকাংশ শিশুই লোভ সামলাতে পারে না। গবেষণায় দেখা যায়, যারা ধৈর্য ধরতে পারে, তারা পরবর্তী জীবনে শিক্ষা ও শৃঙ্খলায় অনেক অগ্রগামী থাকে।

এই গবেষণার অনেক সমালোচনা আছে—তবে তাতে মূল কথা তথা ধৈর্যের গুরুত্ব কমে না। পাশাপাশি ভোগ-বিলাসে লিপ্ত থাকলে আনন্দের মান ও পরিমাণ কমে যায়। অর্থনীতির ভাষায় একে বলা হয় Marginal Utility—আপনি যদি পাঁচটা কোক নিয়ে বসেন, তবে প্রথমটায় যে স্বাদ পাবেন, দ্বিতীয়টায় পাবেন আরও কম, তৃতীয়টায় আরও কম—এভাবে কমতে থাকে আনন্দের মান ও পরিমাণ। আপনার ভোগ-বিলাস বেশী, তাই আনন্দ বেশী, এমনটা মোটেই ভাববেন না। ইসলাম মানেন বলে আপনার আনন্দ কম, এমন হতাশায় যারা ভুগেন, তারা আনন্দের মর্মই জানেন না।

নামাজ-রোজাসহ ইসলামের মৌলিক ইবাদতে কখনোই অবহেলা করা যাবে না—ইবাদত না করলে মানুষ হিসেবেও আপনি অযোগ্য হয়ে যাবেন। এক বুদ্ধিজীবী মাদরাসার ছাত্রদের সামনে ইসলামি চিন্তা নিয়ে আলোচনা করতে আসেন। নামাজ ছেড়ে দিতে দেখে ছাত্ররা প্রশ্ন করে বসে, এত ইসলামি চিন্তা দিয়ে কি করবেন যদি নামাজের মতো মৌলিক ইবাদত ছেড়ে দেন? এগুলো বলার অর্থ মোটেই এটা নয় যে, আমি অনেক নেককার বান্দা, মোটেই না। চেষ্টা করি এতটুকুই—আল্লাহ আমাদের দোষ-ত্রুটি ক্ষমা করুন। সবর-ধৈর্য শেখার তৌফিক দান করুন।

Iftekhar Jamil

23 Nov, 04:45


অ্যান্ড্রু টেট ও টক্সিক মাসকুলিনিটি

অ্যান্ড্রু টেটের কয়েকটা আলোচনা শুনেছি, এবং ভালোই বিরক্ত হয়েছি। পশ্চিমা দেশগুলো নারীদের জীবনকে অত্যন্ত জটিল বানিয়ে তুলেছে, প্রতিযোগিতার নামে নারীদেরকে অসম লড়াইয়ে নামিয়ে দিয়েছে—এটা সত্য, তবে নারীদের মুক্ত করতে কেন 'তাচ্ছিল্য' করতে হবে? বৈষয়িক সফলতা অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ, তবে একে জীবনের কেন্দ্র বানিয়ে ফেলার বিপদও তো কম নয়।

যে লোকটা কর্মজীবনে সফল হতে পারল না, সে কি কোন অংশে 'ঊনমানুষ'?

সর্বোপরি, পুরুষ নারীকে 'খাওয়াবে', নারীরা 'পুরুষদের' জন্য নিজেদের 'উৎসর্গ/বরাদ্দ' করবে—এই এক্সপ্রেশনগুলো যথেষ্ট আপত্তিজনক। পুরুষ তো অসিলা মাত্র, রিজিক তো আল্লাহর কাছ থেকেই আসবে। পাশাপাশি, 'উৎসর্গ'/ 'বরাদ্দের' মত শব্দগুলো যথেষ্ট আপত্তিজনক। যেসব শব্দ স্লেভের জন্য ইউজড হয়, সেগুলো দিয়ে কীভাবে পারিবারিক সম্পর্ককে ডিফাইন করেন?

পরিবারে পুরুষের ওপরেই অর্থনৈতিক দায়িত্ব অর্পিত, পাশাপাশি ঘর গুছানোর কাজটা প্রধানত নারীদের ওপরেই বর্তাবে—মুশকিল হল, অ্যান্ড্রু টেট বিষয়গুলোকে যেভাবে উপস্থাপন করছেন, সেটা কতটা ইসলামসম্মত? আমরা তো সবাই সমানভাবে আল্লাহর বান্দা, পাশাপাশি নারীসহ সবার সাথে সম্মানজনক আচরণ করাটা অত্যন্ত জরুরী—আদব ইসলামের প্রধান কেন্দ্রবিন্দু।

মাওলানা মহিউদ্দিন খানের বাবা তার স্ত্রীকে সারাজীবন আপনি করে ডেকেছেন—স্ত্রীর জানাশোনা ভালো ছিল, তাই কখনো তুমি করে ডাকতেন না। আল মাহমুদের দাদা দুই বিয়ে করেছিলেন, বড় বউ ছিল অপেক্ষাকৃত বেশী মেধাবী। তাই দাদা তার স্ত্রীর পরামর্শ গ্রহণ করতেন, অত্যন্ত সম্মানের সাথে।

আমাদের ঐতিহ্যবাহী পরিবারগুলোতে নারীদের গুরুত্ব-সম্মান ছিল অনেক বেশী—এই গুরুত্ব-সম্মানকে আপনি এককথায় 'আদব' হিসেবে দেখতে পারেন। ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতি আবর্তিত হত 'আদব'কে কেন্দ্র করে। মূলত 'আদব'টাই ইসলামের সারকথা, সৌন্দর্যের মূলমর্ম।

যারা অ্যান্ড্রু টেটকে ফলো করেন, আইডল হিসেবে গ্রহণ করেন—তারা ইসলামের সৌন্দর্য-আদবের দিকগুলো কতটা জানেন, কতটা মানেন?

Iftekhar Jamil

21 Nov, 11:47


ওরা দুনিয়াটা ভোগ করুক

নবীজি একদিন চাটাইয়ের বিছানায় শুয়ে ছিলেন। শক্ত চাটাই। নবীজির একপার্শ্বে দাগ বসে গিয়েছিল। উমর রাজিঃ দেখেই কান্না করে দিলেন। নবীজি বললেন। কান্না করছো কেন? উমর বললেন, কায়সার ও কিসরা কি আরামে থাকে আর আপনি কত কষ্টে থাকছেন। নবীজি উত্তরে বললেন, উমর, আমাদের জন্য তো আখেরাত আছেই, তারা দুনিয়াটা ভোগ করুক!

Iftekhar Jamil

21 Nov, 08:32


বাংলাদেশিরা কেন ভারতকে অপছন্দ করে?

কেবল রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের কারণে বাঙালি মুসলমানরা ভারতকে দেখতে পারে না, এটা বেঠিক অনুমান। ভারত যদি রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ বন্ধও করে দেয়, তবু বাঙালি মুসলমানরা ভারতকে ‘আপন’ ভাবতে পারবে না। এখানে বলে রাখা ভালো, বাঙালি মুসলমানদের সাথে পাকিস্তান বা আফ/ গানদের মিলও সামান্য। তাদের চাইতে ভারতীয়দের সাথেই আমাদের ঘনিষ্ঠতা আরও বেশী। বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রচুর আফগান-পাকিস্তানি ছাত্র আছে, তবে তাদের সাথে আমাদের কথা হয় সামান্যই। পাশাপাশি থাকলে পার্থক্যগুলো আরও পষ্টভাবে ধরা পড়ে।

তাহলে প্রশ্ন হল, আপেক্ষাকৃত মিল সত্ত্বেও বাঙালি মুসলমানরা ‘ভারতীয়’দের দেখতে পারে না কেন?

এর প্রধান কারণ সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক।

ভারতীয়রা যেসব বিষয়কে সুন্দর বলে ধরে নেয়, আমাদের কাছে এগুলো চূড়ান্ত হ্যাংলামি। আপনি একটা রাবীন্দ্রিক পরিবারের কথা ভাবুন, তাদের ভাবভঙ্গি-রুচি-শিল্প হজম করা বেশ কঠিন। তারা যেসব পাঞ্জাবি-ধূতি পড়ে, সেগুলো আমাদেরকে টানে না, টিপ-খোঁপা-কাজল কয়টা বাঙালি ছেলেকে প্রভাবিত করে, এ নিয়ে আমার ঘোরতর সন্দেহ আছে। রাবীন্দ্রিক ছেলেদের মধ্যে যোদ্ধা মনোভাব থাকে না, এদের অনেকেই কিছুটা কিছুটা মেয়েলি ধরণের। আপনি চারুকলার দিকে তাকালে এসবের পষ্ট দৃষ্টান্ত ধরতে পারবেন।

অর্থাৎ আমাদের সৌন্দর্য-শিল্পবোধ-আভিজাত্য ভারতীয়দের সাথে মেলে না। প্রবাসী বাংলাদেশীদের মাধ্যমে এসব বিরোধ আরও প্রবল আকার ধারণ করেছে।

পহেলা বৈশাখের বিরোধিতা কেবল ধর্মীয় বিষয় নয়, বাঙালি মুসলমানদের পক্ষে এসব চর্চা হজম করা যথেষ্ট কঠিন। ভারতীয় ভাববাদ আমাদের ঐতিহাসিক ধারাবাহিকতার সাথে যায় না। দেখুন, লালনফকিররা কেন বাংলাদেশে প্রভাব বিস্তার করতে পারল না, উত্তর ভারতের কারামত আলী জৌনপুরীর স্পর্শ ছুঁয়ে গেল প্রতিটা গ্রামে। ফকির মজনু শাহও কিন্তু উত্তর ভারতের মানুষ ছিলেন এবং আপনাদের মনে থাকার কথা, বালাকোট আন্দোলন বাংলাদেশের কন্ট্রিবিউশন ছিল সিগনিফিকান্ট। দারুল উলুম দেওবন্দ প্রতিষ্ঠার পরে বাংলার ছাত্রদের সংখ্যাই ছিল সবচেয়ে বেশী।

আমাদের মধ্যে কিছু স্পেশাল দিক আছে, সেটা মানতেই হবে।

আপনি প্রশ্ন করতে পারেন, বাংলাদেশীরা এত ভারতে যায় কেন, অন্য দেশে যেতে পারে না? পাশাপাশি, মুক্তিযুদ্ধের প্রসঙ্গটাও অনেকে সামনে আনেন। দেখুন, একদিকে মিয়ানমার আর অপরদিকে সাগর, বিকল্প নাই দেখেই বাংলাদেশীরা ভারতে যায়। মালয়েশিয়ার সাথে বাংলাদেশের সরাসরি যোগাযোগ চালু থাকলে কয়জন ভারতে যেতে চাইত, সে নিয়ে আমার ঘোরতর সন্দেহ আছে। মুক্তিযুদ্ধের সময়েও ভারতের সাথে মনস্তাত্ত্বিক দ্বন্ধটা অজানা ছিল না। একাত্তরে সেনাবাহিনী ছিল প্রধানত ভারতবিরোধী।

যারা ভারতবিরোধিতাকে পাকিস্তানে নিয়ে ফেলতে চান, তারা হয়ত জানেন না বাঙালিরা পাকিস্তানিদের খুব একটা পছন্দ করে না—দুই পাকিস্তান ভেঙে যাবার প্রধান কারণ এটাই। পাকিস্তান আসলে বাংলাদেশকে ডিজারভ করে না, একাত্তরে না হলেও, আগে বা পরে বাংলাদেশ কখনোই পাকিস্তানের সাথে থাকতে পারত না। আবেগ দিয়ে ইতিহাস বা রাজনীতি চলে না। কাজেই যারা বাংলাদেশীদের স্বতন্ত্রতাকে পাকিস্তানভক্তি বা ভারতবিরোধিতা দিয়ে বুঝতে চান, তারা প্রতারক বা মূর্খ।

আমাদের এখানে ইসলাম কেবল স্থলযোগেই আসেনি, সমুদ্র এই অঞ্চলে ইসলাম আগমনের গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম, পাশাপাশি আদি যুগ থেকেই এই অঞ্চলের মানুষরা কিছুটা স্বতন্ত্রতাপ্রিয়, আর্যসভ্যতা এদেরকে পরাভূত করতে পারেনি। বাংলাদেশের নদী ও কৃষিভিত্তিক সমাজের সাথে গাঙ্গেয় সমভূমির পার্থক্য অনেক। এশিয়াকে ইউরোপিয়ান চোখে দেখা যেমন বিপদজনক, বাংলাদেশকে ভারতীয় চোখে দেখার ঝুঁকিটাও কম নয়।

Iftekhar Jamil

20 Nov, 23:52


প্রিয়জনের মৃত্যুতে ধৈর্যধারণ

আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেন, আমি যখন আমার মুমিন বান্দার কোন প্রিয়তম কিছু দুনিয়া থেকে তুলে নেই আর সে ধৈর্য ধারণ করে, আমার কাছে তার জন্য জান্নাত ব্যতীত অন্য কোন প্রতিদান নেই।

(বুখারি, ৫৯৮১)

Iftekhar Jamil

19 Nov, 23:48


সফরের দোয়া

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোথাও সফরের উদ্দেশ্যে তাঁর উটে আরোহণের সময় তিনবার "আল্লাহু আকবার" বলতেন, এরপর যে দুআ পাঠ করতেন,

سُبْحَانَ الَّذِي سَخَّرَ لَنَا هَذَا وَمَا كُنَّا لَهُ مُقْرِنِينَ وَإِنَّا إِلَى رَبِّنَا لَمُنْقَلِبُونَ اللَّهُمَّ إِنَّا نَسْأَلُكَ فِي سَفَرِنَا هَذَا الْبِرَّ وَالتَّقْوَى وَمِنَ الْعَمَلِ مَا تَرْضَى اللَّهُمَّ هَوِّنْ عَلَيْنَا سَفَرَنَا هَذَا وَاطْوِ عَنَّا بُعْدَهُ اللَّهُمَّ أَنْتَ الصَّاحِبُ فِي السَّفَرِ وَالْخَلِيفَةُ فِي الأَهْلِ اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ وَعْثَاءِ السَّفَرِ وَكَآبَةِ الْمَنْظَرِ وَسُوءِ الْمُنْقَلَبِ فِي الْمَالِ وَالأَهْلِ ‏"‏

মর্ম :

"পবিত্র মহান সেই সত্তা- যিনি একে আমাদের বশীভূত করে দিয়েছেন, যদিও আমরা একে বশীভূত করতে সক্ষম ছিলাম না। আমাদেরকে অবশ্যই আমাদের প্রতিপালকের নিকট ফিরে যেতে হবে। হে আল্লাহ! আমাদের এই সফরে আমরা তোমার নিকট কল্যাণ, তাকওয়া এবং তোমার সন্তুষ্টি বিধানকারী কাজের তৌফিক চাই। হে আল্লাহ! আমাদের এই সফর আমাদের জন্য সহজ করে দাও এবং এর দুরত্ব কমিয়ে দাও। হে আল্লাহ! তুমিই (আমাদের) সফরসঙ্গী এবং পরিবারের তত্ত্বাবধানকারী। হে আল্লাহ! তোমার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করি সফরের কষ্ট, দুঃখজনক দৃশ্য এবং ফিরে এসে সস্পদ ও পরিবারের ক্ষতিকর পরিবর্তন থেকে।"

(মুসলিম, ৩১৪৫)

Iftekhar Jamil

19 Nov, 23:44


গোপনে দোষ অনুসন্ধান করবেন না

রাতের বেলা অতর্কিতে ঘরে ফিরে স্ত্রীর প্রতি সন্দেহ পোষণ করে গোপনে দোষ-ক্রটি অনুসন্ধান করতে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিষেধ করেছেন। (মুসলিম, ৪৮১৬)

Iftekhar Jamil

19 Nov, 03:06


যৌথ পরিবার

আমাদের যৌথ পরিবারগুলো ভেঙে যাওয়াতে সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সমাজের দুর্বল-পিছিয়ে পড়া মানুষগুলো। আয়-ইনকামহীন বৃদ্ধ-বৃদ্ধারা কোথায় যাবে, সবার তো সন্তান থাকে না ; যে মহিলাদের অকালে স্বামী মারা গেল/স্বামী যাদেরকে পরিত্যাগ করলো/ যে নারী-পুরুষরা মানসিক ভারসাম্য হারাল, তাদেরকে দেখার কেউ নেই ; প্রতিবন্ধী সন্তানদের এখন সবাই 'আজাব' মনে করে। এতিমরা অবস্থাসম্পন্ন আত্মীয়ের বাড়িতে থেকে পড়ালেখা করার সুযোগ পেত, এখন কেউ এগুলো মনে রেখেছে?

যৌথ পরিবারকে নিছক প্রথা মনে হলেও এরসাথে অনেক ইসলামি ভেলুজ যুক্ত ছিল, যৌথপরিবারগুলো ইসলামি ওয়ার্ল্ডভিউয়ের আলোকে গড়ে ওঠেছিল। দেখুন, আমি কাউকে দোষ দিচ্ছি না। শহুরে সমাজে সবাই নিজেদের টানতে টানতেই ক্লান্ত, পিছিয়ে পড়া কাউকে সাথে রাখার সুযোগ নেই। আমাদের রাজনীতিবিদ-নগরনির্মাতারা যে শহর তৈরি করেছেন, সে শহরে পিছিয়ে লোকদের কোন জায়গা নেই। তাই ভাসমান ভিক্ষুক, পথশিশুর সংখ্যা অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। রাস্তার পাশে পড়ে আছে মানসিক ভারসাম্যহীন-প্রতিবন্ধী লোকজন ; সন্ধ্যায় প্রচণ্ড বৃষ্টি বা ঠাণ্ডায় বাসায় ফিরতে ফিরতে দেখবেন, ফুটপাতে ভিজছে গৃহহীন অনেক পরিবার।

আমাদের সিভিল ইঞ্জিনিয়াররা ধর্মীয় ভেলুজের কথা ভাবেননি, অর্থনীতিবিদরা এফোরডেবল বাসস্থানের কোন পরিকল্পনা গ্রহণ করেননি, আলেমরা পেশাজীবীদের ধর্মীয় ভেলুজের কথা স্মরণ করিয়ে দেননি। ধর্ম তাই কিতাবের মধ্যে আটকে গেছে, সমাজে 'অবতীর্ণ' হয়নি। আমরা যে শহর-নগর-গঞ্জ তৈরি করেছি, সেটি মোটেই ধর্মীয় বিধান পালনের উপযোগী নয়। ধর্ম মানে নিছক ব্যক্তি আপনি নন, ধর্ম মানে আপনি-আপনার পরিবার-আত্মীয়-স্বজন-শিক্ষা-পেশা সবই। আমাদের দেশে কেবল শিক্ষার সেকুলারিকরণই ঘটেনি, একইসাথে অনেক ভেলুজ হারিয়ে গেছে। আমরা সবাই মিলে দুর্বলদের ওপর জুলুম করছি, তাদেরকে নিয়মিত অধিকার থেকে বঞ্চিত করছি।

আপনারা যারা মেডিকেলে পড়েন বা মেডিকেল পেশার সাথে জড়িত, তারা কতটা ইসলামি 'ভেলুজ' জানেন? একটা মানবদেহের সাথে কি কি করা যাবে, কীভাবে তার সম্মান-ডিগনিটি রক্ষা করবেন, কীভাবে ময়নাতদন্ত করবেন, কীভাবে সমাজে চিকিৎসা সরবরাহ করবেন, কীভাবে ওয়াকফ-মুশারাকা-জাকাতে দরিদ্ররা চিকিৎসা পাবে, সেগুলো আপনি কীভাবে জানবেন? আপনি যদি মেডিকেলের সাথে জড়িত না হন/ আপনার কোন নিকটাত্মীয় জটিল রোগে সরকারি হাসপাতালে ভর্তি না হয়, তবে আপনি কখনোই হাসপাতালের ভেতরের আত্মচিৎকারটা বুঝবেন না।

একদিন, কোন অবসরে সরকারি কোন হাসপাতালে সময় কাটিয়ে আসুন। আপনি ধরতে পারবেন, আমরা কীভাবে গরীব-অসহায় মানুষদের ঠকিয়ে যাচ্ছি, বঞ্চিত করে যাচ্ছি। যে শহরে মানুষ দশ হাজার টাকা খরচ করে বাইজি নাচ দেখছে, সেই একই শহরে পাঁচ হাজার টাকার অভাবে হাজার হাজার মানুষ চিকিৎসা করতে পারছে না। এটাই আমাদের ধার্মিকতা, এটাই আমাদের সভ্যতা-ভদ্রতার প্রকৃতচিত্র। আমাকে আপনার থেকে ভালো মনে করার প্রয়োজন নেই, আমার-আপনার সামাজিক পাপে বিশেষ কোন পার্থক্য থাকার কথা না।

Iftekhar Jamil

18 Nov, 16:59


টক্সিক উদারতা

যাদের কাছে ভাসানি গুরুত্বপূর্ণ, তারা শাব্বির আহমদ উসমানি বা হাফেজ্জি হুজুরকে গুরুত্বহীন মনে করে কেন? অবশ্যই কিছু কারণ আছে, সেটা আমরা সবাই জানি। ইসলামপন্থীদের অনেককে দেখবেন, মরিস বুকাইলির কুরআন-বিজ্ঞানের তুলনাতত্ত্ব দিয়ে ইসলামের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করতে চান, ভাসানিও বামপন্থীদের মরিস বুকাইলি। তারা সারাজীবন রাবিন্দ্রিক বামপন্থাগিরি করে শেষে সন্ধ্যাবেলা ভাসানির পাঞ্জাবি ধরে উদারতা দেখাতে চান, এতই যখন উদার, তবে উসমানি-হাফেজ্জিকে নিতে পারেন না কেন? এগুলোর নাম টক্সিক উদারতা, টক্সিক পজিটিভিটির মতো টক্সিক উদারতাও ভালো জিনিস না।

Iftekhar Jamil

18 Nov, 12:24


মানদন্ড

জুলাই বিপ্লবে শ হীদ হয়েছেন পনেরশো থেকে দুই হাজারের মত মানুষ—আহত হয়েছেন অসংখ্য। এদের সবার প্রোফাইলিং করা জরুরী। আক্রান্তদের বয়স-শিক্ষা-পেশা-ধর্ম-শ্রেণী-অর্থনীতি-রাজনীতি বের করা জরুরী। প্রোফাইলিং করলে ধরতে পারবেন, শেখ হাসিনা কাদেরকে সবচেয়ে বেশী আক্রমণযোগ্য মনে করত, কারা ছিল সবচেয়ে ভালনারেবল শ্রেণী, কারা সবচেয়ে বেশী ঝুঁকি নিয়েছিল—আপনারা যদি এই কাজটা না করতে পারেন, তবে জুলাই বিপ্লব কখনোই যথাযোগ্য মর্যাদা পাবে না। বিপ্লব সাধারণত প্রতিশোধপরায়ণ হয়, যথাযোগ্য মর্যাদা না পেলে সে সাধারণত প্রতিশোধ নিতে দেরী করে না।

Iftekhar Jamil

18 Nov, 00:29


এতিম-বিধবাদের অভিভাবকত্ব

নবীজি জুম্মার খুতবায় বলতেন, কেউ এতিম-বিধবা রেখে মারা গেলে, ঋণ রেখে গেলে তার দিকটা আমি দেখবো। রাষ্ট্র দেখবে। ইসলাম কেবল আমল-আখলাকের জন্য আসেনি, মানুষের কষ্ট লাঘবের জন্যও এসেছে। আপনি কল্পনা করতে পারেন, আপনার নেতা আপনাকে নিয়মিত স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে, আপনার অবর্তমানে আপনার বিধবা স্ত্রী-এতিমদের দায়িত্ব তার কাধে অর্পিত? মধ্যযুগে দূরে থাকুক, এই যুগেও এগুলো কল্পনা করা যায় না।

Iftekhar Jamil

17 Nov, 22:49


কওমি মাদরাসা : স্থবিরতা-জড়তা

সত্তরের দশকে দেশে কওমি মাদরাসা ছিল হাতেগোনা কয়েকটা। আশির দশক থেকে বাংলাদেশে কওমি মাদরাসার ব্যাপক উত্থান শুরু হয়। এর কারণ কী, সে নিয়ে অনেক আলোচনা হতে পারে। একদিকে জনসংখ্যা বৃদ্ধি, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, কাউন্টারট্রেডিশনালিজম, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পাশাপাশি একদল তরুণ শিক্ষাউদ্যোক্তার হাত ধরে এই উত্থান সম্ভব হয়। সঠিক পরিসংখ্যান থাকলে দেখানো যেত, এই প্রবৃদ্ধির হারটা হয়তো একশো গুণের কাছাকাছি হবে।

তবে গত নয়-দশ বছরে প্রবৃদ্ধিটা ধীরে ধীরে কমছে : নিকটতম সময়ে উল্লেখযোগ্যহারে বড় মাদরাসা গড়ে ওঠেছে, ছাত্রসংখ্যা জ্যামিতিক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে, অর্থনৈতিক নতুন সংস্থান এসেছে, এগুলো প্রমাণ করা যাবে না। কাজেই মোটাদাগে বলা যায়, কওমি মাদরাসার স্বর্ণযুগ প্রায় সমাপ্তির পথে। এখন, নিয়মিত দুর্নীতি-অধঃপতনের গল্পগুলোই শুনতে হবে।

শুধু নৈতিক কারণেই নয়, আমাদের বর্তমান অর্থনীতি-সমাজব্যবস্থায় প্রচলিত মডেলের মাদরাসার সংখ্যা চাহিদার তুলনায় বেশ খানিকটা বেশী। চাহিদার তুলনায় যোগান বাড়লে বিপর্যয় ঘটবেই। কাজেই প্রবৃদ্ধি তো নয়ই, এখন সবগুলো সূচকই নিন্মগামী হবে। যারা তরুণ, যারা কওমি মাদরাসাকে ভালবাসেন, তাদেরকে অবশ্যই এসব সত্য বুঝতে হবে, ব্যক্তিউদ্যোগে নতুন দিনের চাহিদা তৈরি করতে হবে, নতুনভাবে বিদ্যমান চাহিদার যোগান দিতে হবে। এর জন্য দরকার হবে সাহস, মেধা ও পরিশ্রম।

আমাদের প্রজন্ম কি এতে সফল হবে, নাকি পূর্বসূরিদের তৈরি করা প্রতিষ্ঠানে ভোগবিলাস-অলসতায় ভুগবে?

Iftekhar Jamil

17 Nov, 16:17


তালিবান ও নাইন ইলেভেন

মোল্লা আব্দুস সালাম জাইফ নয় এগারোর কথা শুনে টিভির সামনে গিয়ে বসেন। টুইন টাওয়ারের পতন দেখে দর্শক-শ্রোতারা উল্লাসে ফেটে পড়ছিল, মোল্লা জাইফ ভেঙে পড়েছিলেন কান্নায়। লোকজন অবাক, 'মোল্লা ভাই কান্না করছেন কেন, এখন তো উল্লাসের সময়।' মোল্লা জাইফ চোখ মুছলেন, 'তোমরা এই দিনটির কথা মনে রাখবে যুগ যুগ ধরে, মনে রাখবে আমার কান্নার স্মৃতিও।' রাত একটার দিকে ফোন পেলেন কেন্দ্রীয় অফিস থেকে। মোল্লা জাইফ মোল্লা সাহেবের কাছে সব খুলে বললেন, কী ঘটেছে, কীভাবে কী হয়েছে—সারারাত মোল্লা জাইফ আর চোখের পাতা এক করতে পারলেন না।

Iftekhar Jamil

17 Nov, 15:07


জরুরি দোয়া

Iftekhar Jamil

17 Nov, 05:25


বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ সংবিধান কেমন হবে—এর সহজ উত্তর একটাই। বাহাত্তরের সংবিধান কতটা বিলুপ্ত হল, জিয়ার সংবিধান কতটা ফিরে আসলো? এই এক প্রশ্নের উত্তরে সংস্কারের অভিমুখ বের করে ফেলতে পারবেন।

Iftekhar Jamil

16 Nov, 13:02


আমাদের আকিদা

ইসলামের প্রথম যুগে শিয়া-সুন্নি উভয় দিকের আলেমরাই শাসকদের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নেমেছিলেন। উভয় তরফের কেউই সুবিধা করতে পারেনি—সেই সময়গুলো কতটা ট্রমামূলক ছিল, সেটা আপনারা কল্পনাও করতে পারবেন না। রাজনৈতিক সমাধান অর্জন করতে না পারলেও শিয়া-সুন্নি আলেমরা ভিন্ন ভিন্ন দুটি পথ গ্রহণ করে নেন।

শিয়ারা রাষ্ট্র থেকে, সমাজ থেকে আলাদা হয়ে যান—শোক-তাজিয়া-মুরছিয়ায় ডুবে যান। অন্যদিকে, সুন্নি ওলামারা রাষ্ট্র ও সমাজের সাথে আলোচনা জারি রাখেন। কখনো সমালোচনা, কখনো সম্পর্ক, কখনো মৃদু সংঘর্ষ—তবে তারা কখনোই রাষ্ট্র থেকে প্রস্থান করেননি। আশরাফ আলি থানবি কেন জোরালোভাবে জিন্নাহ-মুসলিম লীগকে সমর্থন করলেন—একে আহলে সুন্নাহর দীর্ঘ ইতিহাস থেকেই বুঝতে হবে।

গণতন্ত্রের প্রতি, পশ্চিমা পুঁজিবাদের প্রতি আমাদের আপত্তিও কম নয়। তবে আমরা রাষ্ট্র-সমাজের সাথে সম্পর্কচ্ছেদকে সমর্থন করি না। সম্পর্ক সবসময় সমান থাকবে না, কখনো সমালোচনা, কখনো সম্পর্ক, কখনো মৃদু সংঘর্ষ—যতদিন ক্ষমতাসীনদের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ মুসলমান থাকবে, ততদিন তাদের ফাসেকির কারণে, জুলুমের কারণে সম্পর্কচ্ছেদ করা যাবে না। এখানেই আসিম আল-বারকাওয়ি/মাক দিসিদের সাথে আমাদের দ্বিমত।

জালেম-ফাসেক শাসক-ব্যবস্থার সাথে মোকাবেলা করতে হবে রাজনৈতিকভাবেই—একে আকিদা বা যুদ্ধের পর্যায়ে নামিয়ে আনা যাবে না। রাজনৈতিক মোকাবেলায় সক্ষমতার বিকল্প নেই। আপনি যদি অক্ষম হন/দুর্বল হন, তবে রাজনৈতিক বিতর্ককে আকিদার স্তরে নিয়ে গেলে কি বিশেষ লাভ হবে? ইমাম গাজালি লেখেন, শিয়ারা রাজনীতিকে আকিদায় রুপান্তরিত করে, এখানেই তাদের সাথে আমাদের 'আকিদাগত' বিরোধ। মাকদিসিদের প্রতি আমাদের আপত্তিটা এখানেই। রাজনীতিকে আকিদায় রুপান্তরিত করার ক্ষেত্রে মাক দিসিরা শিয়াদের থেকে আলাদা নয়।

Iftekhar Jamil

15 Nov, 10:32


বাঙালি ও মুসলমান

গ্রামীণ বাংলা ও প্রকৃতির কথাশিল্পী বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়। বিশ শতকের বাঙালি হিন্দু ঔপন্যাসিকদের মধ্যে তাকে মেধাবীদের একজন বলতেই হবে, তবে তিনি গ্রামবাংলা ও বাঙালিত্বকে যেভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন, সেখানে ওঠে এসেছে হিন্দু শ্রেষ্ঠত্ববাদের গল্প।

আপনার কাছে আপনার নিজস্ব সংস্কৃতিকে শ্রেষ্ঠ মনে হতেই পারে, এতে অসুবিধার কিছুই নেই, মুশকিল হল, বিভূতিভূষণ অন্য দশজন হিন্দু লেখকদের মতোই বাঙালি সংস্কৃতিকে হিন্দু সংস্কৃতির প্রতিশব্দ হিসেবে তুলে ধরেছেন : বাঙালি = হিন্দু। এতে হিন্দু শ্রেষ্ঠত্ববাদের পাশাপাশি মুসলমানদের অপরীকরণের জুলুমটাও ঘটেছে, লেখকের ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায়। যেনবা মুসলমানরা বাঙালি নয়, যেনবা মুসলমানদের সাংস্কৃতিক রুচি বলতে কিছুই নেই।

সুন্দরবনে সাতবছর উপন্যাসে বিভূতিভূষণ দেখান, মগদের হাতে এক সম্ভ্রান্ত হিন্দু বাঙালি বালক অপহরণের শিকার হন। সুন্দরবনের প্রকৃতির ভয়াবহ সৌন্দর্যের পাশাপাশি লেখক দেখান, 'বাঙালির নীতিকথা, চেতনা ও শিক্ষায়' মগ বালক ও তার পরিবার ডাকাতি ছেড়ে দেয়, তারা বাঙালি (হিন্দু) আদর্শ-সৌন্দর্যের প্রতি আগ্রহী হয়ে ওঠে। ডাকাত পরিবার মগজীবন ছেড়ে সভ্যজীবনে ফিরে আসার প্রতিজ্ঞা করে। আপনাদের মনে করিয়ে দেই, বিভূতিভূষণ এই হিন্দু শ্রেষ্ঠত্ববাদের গল্প বলছেন জমিদার শাসন-নির্যাতনের যুগে।

সুন্দরবনে সাতবছর উপন্যাসের শেষপর্বে হিন্দুবালকের সাথে মুসলিম জেলেদের সাথে দেখা হয়। নায়ক জেলেদের মহানূভবতায় মুগ্ধ হন, তবে কিছুদিনের মধ্যেই ধরতে পারেন, 'মুসলিম জেলেরাও' শিক্ষিত না। মুসলিম জেলেদের মধ্যেও 'বাঙালি'দের মতো সৌন্দর্য উপভোগের ক্ষমতা নেই । উপন্যাসের শেষে নায়কের দেখা হয় এক হিন্দু মহাপুরুষের সাথে, যিনি বালককে ইতিহাস-সভ্যতার গল্প শোনান, নীতিবোধ ও উপভোগের সুখে মুগ্ধ করেন। শুধু সুন্দরবনে সাতবছর উপন্যাসেই নয়, চাঁদের পাহাড়-পথের পাঁচালীতেও এই প্রবণতা লক্ষ করার মতো।

মার্কিন ইতিহাসবিদ বারবারা মিটকেফ এই প্রবণতার নাম দিয়েছেন : 'টু লিটল'/ 'টু মাচ' :

- 'বাংলা সাহিত্যে' মুসলমানদের কথা অনেক কম। - হিন্দুরা 'আদর্শ বাঙালি'। বাঙালি মানেই দেহে আর্য সৌন্দর্য, হিন্দু ভদ্রতা ও মন। - 'মুসলমান শুধু মুসলমান, তার ইতিহাস-ঐতিহ্য-সৌন্দর্য বলে কিছু নেই। তারা 'ধর্মান্ধ' জেলে-মাঝি-চাষা।'

পুনশ্চ : বিভূতিভূষণ জমিদারের সহযোগী হিসেবে চাকরী করেন, গরুরক্ষা সমিতির প্রচারক হিসেবে দেশব্যাপী ভ্রমণ করেন। তবু বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে কোথাও বিভূতিভৃষণকে 'হিন্দুত্ববাদী লেখক' হিসেবে দেখানো হয়নি। এই ট্যাগ নজরুল-ফররুখ-আল মাহমুদদেরই কেবল জুটবে।

Iftekhar Jamil

15 Nov, 08:11


ভারত বাংলাদেশের বন্দরের নিয়ন্ত্রণ নিতে চায়, অথচ পাকিস্তানের জাহাজকেও সহ্য করতে চায় না।

Iftekhar Jamil

15 Nov, 04:17


তাবলিগ : বিভক্তি, কার্যকারিতা

তাবলিগের বিভক্তিতে অনেক ক্ষতি হলেও আমি একে আল্লাহর পক্ষ থেকে রহমত মনে করি। মুসলমানদের মধ্যে দ্বীনের বেসিক প্রচার—এটাই তাবলিগের প্রকৃত উদ্দেশ্য। সবাইকে মাদরাসায় ভর্তি করানো সম্ভব নয়, সবাই খানকাতেও যেতে চাইবে না, কাজেই একটা 'মোবাইল মাদরাসা-খানকা' বানানো দরকার।

এই চিন্তা থেকেই তাবলিগের সূচনা ঘটেছে। একটা পর্যায়ে তাবলিগের লোকজন মনে করতে শুরু করল, মাদরাসা-খানকার দরকার নেই, রাজনৈতিক-বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চাগুলোও অর্থহীন। এসব কারণেই আল্লাহ তাদেরকে 'রাজনৈতিক-বুদ্ধিবৃত্তিক' পরীক্ষায় ফেলে দিলেন।

অবশ্য এখনো তাবলিগের কার্যকারিতা অনেক। এই যুগে আমরা সবাই মোটামুটি ঈমান-আমলের দুর্বলতায় ভুগি—মাঝেমাঝে তাবলিগে সময় লাগালে ঈমান তাজা হবে, আমল সুন্দর হবে। আধুনিক যুগে দেখবেন, বিভিন্ন বিষয়ে ক্যাম্প/ওয়ার্কশপ হয়—তাবলিগকেও ভাবতে পারেন ঈমান-আমলের ক্যাম্প-ওয়ার্কশপ হিসেবে।

Iftekhar Jamil

14 Nov, 16:53


বইটা সংগ্রহ করতে পারেন। হাইলি রেকমেন্ডেড।

Iftekhar Jamil

14 Nov, 11:42


রাজনৈতিক বন্দোবস্ত

লোকজন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সেপারেশন অফ পাওয়ারের মডেলকে খুবই গুরুত্ব দিয়ে দেখে। লোকজন ভাবে, নিছক সেপারেশন অফ পাওয়ারের মাধ্যমে বাংলাদেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরে আসবে। তারা ভুলে যায়, সেপারেশন অফ পাওয়ার রেড ইন্ডিয়ানদের বাঁচাতে পারেনি, আফ্রিকান আমেরিকানদেরকে প্রায় একশো বছরের মত সেগ্রিগেশন ফেইস করতে হয়েছে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জাপানিজ আমেরিকানদেরকে স্পেশাল ক্যাম্পে আটকে রাখা হয়। হোয়াইট ইউরোপিয়ানদের জন্য সেপারেশন অফ পাওয়ার খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে, বাকিদের জন্য কি তাই?

আগামীদিনের রাজনৈতিক বন্দোবস্তের জন্য তিনটি বিষয় অত্যন্ত জরুরী। ক) রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে হবে। দ্বিদলীয় জোটব্যবস্থা দাড় করাতে হবে, এবং আওয়ামীলীগ কোনভাবেই দুইজোটের একটি হতে পারবে না—আওয়ামীলীগকে শরিক দল হিসেবে ফিরতে হবে। খ) রাষ্ট্রীয়ভাবে একটা 'অরাজনৈতিক ইসলামের' জন্য স্পেস তৈরি করতে হবে, বেশকিছু প্রতিষ্ঠান দাড় করানো হবে/পুনর্গঠন করা হবে। এতে করে একদিকে 'ধর্মের অতিরাজনৈতিকিকরণ' বন্ধ হবে, অন্যদিকে বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা যাবে। গ) একটা উচ্চকক্ষ বানাতে হবে, যেখানে পাহাড়ি-হিন্দু-মুসলিম-পেশাজীবী-বাম সংগঠনগুলোর জন্য সিট বরাদ্দ থাকবে, তবে তাদের হাতে অর্থনৈতিক বরাদ্দ থাকবে না।

মুসলিম দেশের লোকজন অনেক্ষেত্রে গণতন্ত্রের মর্মই বুঝেনি। পশ্চিমাদেশগুলোতেও কিন্তু গণতন্ত্রের অনেকগুলো ফর্ম আছে। যেমন, আমেরিকা কেন সিনেট করল, কেন ব্রিটেনে ধর্মীয় নেতারা পদাধিকার বলে সরাসরি সংসদ সদস্য বলে বিবেচিত হন, কেন ব্রিটেন এখনো রাজতন্ত্র ধরে রেখেছে? লোকজন পাইছে এক সেপারেশন অফ পাওয়ার—যে কোন রাজনৈতিক ব্যবস্থাই অত্যন্ত কমপ্লেক্স বিষয়, নিছক নকল করে এসবের সমাধান করা সম্ভব নয়।

Iftekhar Jamil

14 Nov, 09:53


ইলমি চর্চা

আশরাফ আলি থানবি রাহিমাহুল্লাহ সবাইকেই ইলমচর্চা করতে বলতেন। যারা নিতান্তই আওয়াম, তাদের কথা আলাদা। যারা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েন, যাদেরকে মেথড-মেথডলজি-থিউরেটিকাল ফ্রেমওয়ার্ক নিয়ে নাড়াচাড়া করতে হয়, তাদের সবার জন্য ইলমি ট্র্যাডিশন জানা জরুরী। ইলমি ট্র্যাডিশন বলতে মৌলিক মুতুনগুলোর চর্চা, গুরুত্বপূর্ণ সবগুলো ফনের এক বা একাধিক কিতাব পড়ে ফেলা জরুরী।

উলুমুল হাদিসের ক্ষেত্রে নুখবাতুল ফিকার পড়তে পারেন, উসুলে ফিকাহের জন্য মুখতাসারুল মানার, নাহুর জন্য আজরুমিয়াহ, আকিদার জন্য তহাবি-খারিদা-নাসাফিয়াহ। মৌলিক কিতাবগুলো পড়া না থাকলে মানুষের চিন্তার ভাষা-পরিভাষা-ফ্রেমওয়ার্কটা গড়ে ওঠে না। পারিভাষিক জটিলতায় আলোচনা আটকে যায়, ভাষার পার্থক্য নিয়ে লোকজন লড়তে থাকেন অথবা একই শব্দের দুইজন দুইরকমের অর্থ বের করেন। আলোচনা আর আগায় না।

Iftekhar Jamil

13 Nov, 12:06


গল্প বলুন, শুনুন

হুমায়ূন আহমেদের উপন্যাসগুলো তার নিজের জীবনের মাধ্যমে ভীষণভাবে প্রভাবিত। তিনি যখন যে পরিস্থিতিতে ছিলেন, তার গল্পগুলো গড়ে ওঠেছে সে আলোকেই—তার পরকীয়া যুগের স্বামীরা কী ভীষণ অসুখী, কিছুটা অনুতপ্ত, কেমন খাপছাড়া জীবন। মানুষ যতই বানিয়ে গল্প বলুক, নিজেকে কখনোই লুকাতে পারে না। সে যাই হোক, যত পারেন গল্প লেখেন, গল্প বলেন, গল্প শুনেন। মানবজীবনটা দাড়িয়ে আছে গল্পের ওপরেই।

আমার জীবনের একটা বড় আফসোস হচ্ছে, মানুষের গল্পের প্রতি-উৎকন্ঠার প্রতি-ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার প্রতি যতটা মনোযোগ দেবার কথা ছিল, সেটা আমি দিতে পারিনি। একজন গার্মেন্ট শ্রমিকের একটা নিজস্ব জীবন আছে, যে হিন্দু মুচিকে চিনি সেই ছোটবেলা থেকে, যে খাদেমকে মসজিদ থেকে অকারণে বাদ দেওয়া হয়েছিল, যে বেকার যুবক সারাদিন বসে চাকরির পড়া পড়েন, বৃদ্ধ দাড়োয়ান সারাদিন কী ভাবেন একা একা? খারাপ ছাত্র বলে যে সহপাঠী আমাদেরকে দেখলেই লুকিয়ে যেত। যতটা শোনার দরকার ছিল, তারচেয়ে অনেকবেশী আমরা কথা বলেছি।

কেমন জানি ঋণী লাগে নিজেকে—কিন্তু আমাদেরও বা দোষ কি, চারদিকে এত তথ্য-এত নয়েজ, মনোযোগী হওয়াই অনেক কঠিন।

Iftekhar Jamil

12 Nov, 23:49


সহজ আমল

রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন—যে ব্যক্তি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের পরে ৩৩ বার সুবহানাল্লাহ, ৩৩ বার আলহামদুলিল্লাহ ও ৩৩ বার আল্লাহু আকবার বলবে-এটা মোট ৯৯ বার হলে একশো পূরণ করার জন্য বলবে—’লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারীকা লাহু, লাহুল মুলুকু ওয়া লাহুল হামদু ওয়া হুয়া আলা কুল্লি শাইয়্যিন ক্বাদীর। যে ব্যক্তি পাঠ করবে, তার পাপরাশি ক্ষমা করা হবে। যদিও তা সমুদ্রের ফেনার সমান হয়ে থাকে।

(মুসলিম ৫৯৭)

Iftekhar Jamil

12 Nov, 16:05


পনের শতকের সুফি খানকা

ব্রিটিশ আগ্রাসনের আগে বাংলাদেশ ছিল পৃথিবীর সবচেয়ে ‘ধনী-সুখী’ অঞ্চলের একটি। এক্ষেত্রে সূফীদের ভূমিকাটা ছিল অনেক বড়। পনের শতকের একজন সূফীর কথা কল্পনা করুন। তার মৌলিক কাজগুলো ঠিক কী ছিল?

ক) তিনি হয়তো ময়মনসিংহের শহরতলীতে একটা খানকাহ-মাদরাসা নির্মাণ করতেন। মানুষকে শেখাতেন তাওহীদ-ইবাদাত-রিয়াজাত। সহজভাষায় মানুষের আত্মিক-দার্শনিক প্রশ্নের সমাধান দিতেন। মানুষ বুঝতে পারত তাদের জীবনের একটা বিশেষ মর্ম আছে, একটা বিশেষ লক্ষ্য আছে। অনেকের কাছে এই দিককে গুরুত্বহীন মনে হলেও এর তাৎপর্য অপরিসীম। আপনার যদি মনে হয়, জীবনের কোন মর্ম নেই, ইচ্ছা-চেষ্টা-পরিশ্রমের কোন লক্ষ্য নেই, তবে একটা জীব-জানোয়ারের সাথে আপনার পার্থক্য কোথায়?

খ) খানকার পাশাপাশি তারা খুলতেন লঙ্গরখানা। গরীব-বিধবা-মুসাফির-বিপদে পড়া মানুষদের খাবারের চিন্তা দূর করতেন তারা। কিছু নথিতে দেখা যায়, একেকটা লঙ্গরখানায় প্রতিবেলা হাজারখানেক মানুষ খাবার খেতে পারত। তৎকালীন জনসংখ্যা-জনমিতির হিসাব ধরলে বর্তমানের বিচারে সংখ্যাটা গিয়ে দাঁড়াবে পঞ্চাশ হাজার মানুষের মতো। অর্থাৎ বর্তমানে একহাজারজন মানুষকে আপনার খুব বড় সংখ্যা মনে না হলেও তৎকালীন প্রেক্ষাপটে এটি বর্তমানের বিচারে অন্তত পঞ্চাশ হাজার মানুষের পর্যায়ে পড়বে। সংখ্যাটা কত বিপুল ধরতে পারছেন?

আপনি যদি সমাজের সবচেয়ে দুর্বল শ্রেণীর রুটি-রুজির চিন্তা দূর করতে পারেন, তাহলে একটা রাষ্ট্রের উন্নতি কীভাবে ঠেকিয়ে রাখা যাবে? আজকে আপনি যাদেরকে খাওয়াচ্ছেন, আগামীকাল তার অবস্থা ভালো হবে। সে আপনার লঙ্গরখানায় দান করবে। মনে রাখবেন, একজন মানুষ যতটুকু খেতে পারে, তারচেয়ে অনেকবেশি উৎপাদন করতে পারে। এখানে একটি বিষয় বলে রাখা জরুরী। তৎকালীন সূফীরা লঙ্গরখানায় হিন্দু-মুসলিমের মধ্যে ভেদ করতেন না। হিন্দু মানুষটাও কিন্তু আল্লাহর বান্দা ; যদি কুকুর-বিড়ালকে অভুক্ত রাখলে গুনাহ হতে পারে, তবে হিন্দুকে ‘বঞ্চিত’ করলে কেন গুনাহ হবে না?

গ) প্রতিটা দরবারে লঙ্গরখানার পাশাপাশি শিল্প-সাহিত্য-বিনোদনের ব্যবস্থা ছিল। অনেক সূফীসাধক দরবারের পাশে উদ্যান-বাগান নির্মাণ করতেন। আপনার কাছে উদ্যান-বাগানকে তাৎপর্যহীন মনে হলেও সূফী-দরবেশরা জানতেন, জীবনে সৌন্দর্যের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। আল্লাহ মানুষকে শুধু ধৈর্য ধরতেই নির্দেশ দেননি, ‘সুন্দরভাবে’ ধৈর্য ধরতে নির্দেশ দিয়েছেন। ইসলামে সৌন্দর্যের স্থান অনেক ব্যাপক : ব্যবস্থাপনা-আদব-আখলাক-হেকমত-স্থাপত্য এসবই সৌন্দর্যের অংশ।

খানকার পাশে উদ্যান-বাগান থাকলে হয়তো বিকেলে আশেপাশের গ্রামগঞ্জ থেকে লোকজন এখানে বেড়াতে আসবে। উদ্যান-বাগান মানে কিন্তু শুধু ফুল-ফল-লতাপাতা নয়, আপনি এমন ফল-ফুল দেখছেন, যেগুলো আপনাদের গ্রামে সহজে দেখা যায় না। আপনাদের গ্রামে শুধু বনজ আম-জাম পাওয়া যায়, সূফী-উদ্যানে এসে পেলেন ‘হাড়িভাঙ্গা’ আমের স্বাদ। সন্ধ্যায় বাগানে বসলো কবিতা-সাহিত্যের আসর। আপনি যদি সূফীদের খানকা-দরবার কল্পনার সময় এসব সৌন্দর্যের ভাবতে না পারেন, তবে কখনোই তাদের প্রভাবের রহস্য উদ্ধার করতে পারবেন না।

ঘ) প্রতিজন সূফীই ছিলেন সামরিক সক্ষমতার অধিকারী। খানকা-লঙ্গরখানা-বাগান কি সমাজের সবাই 'প্রশ্ন' ছাড়া মেনে নিত? বণিক-মহাজনদের স্বার্থে আঘাত লাগা সত্ত্বেও তারা সবকিছু চুপচাপ মেনে নিত ভাবলে অনেক বড় ভুল হবে। প্রত্যেক সূফীর থাকতো ‘পার্সোনাল মিলিশিয়া।’ তারা সবসময় ছোটখাটো বিবাদ-যুদ্ধের জন্য প্রস্তত থাকতেন। মুরিদ-ভক্তদের জালেমদের থেকে রক্ষা করতেন। অনেক পীরের নামেই দেখবেন, শহীদ-গাজী প্রযুক্ত। এর থেকে সামরিক প্রস্তুতির বিষয়টি খুবই পরিষ্কারভাবে ধরা যায়।

পুনশ্চ :

ক) বর্তমানে বাঙালি সূফীদের প্রভাব ব্যাখ্যা করতে বলা হয়, তারা ‘লিবারেল’ ছিলেন। মূলত ধর্মকে ব্যক্তির মধ্যে আটকে রেখে পুঁজিবাদী-জালেমি ব্যবস্থাকে প্রশ্নহীন রাখতেই এমন অপচেষ্টা চালানো হয়। সূফীরা মোটেই ‘নিরীহ-নির্বিরোধী’ ছিলেন না। তারা যে কোন সামরিক-রাজনৈতিক হুমকি মোকাবেলার জন্য প্রস্তুত থাকতেন। সাহিত্য-অর্থনীতি-দর্শন-রাজনীতিতে ব্যাপক ইন্টারভেনশন করতে সক্ষম ছিলেন।

খ) পাশাপাশি ‘সালাফি’ ধারার অনেকে সূফীদেরকে ‘ভ্রান্ত-অশিক্ষিত’ হিসেবে দেখেন, এটিও অনেক বিপদজনক। মনে রাখবেন, সূফীরা বৃহত্তর সিলসিলা-নসবের সাথে সংযুক্ত থাকতেন। বাংলা অঞ্চলের সূফীদের অনেক পীর ভাই হয়তো উত্তর ভারত-লাহোর-বুখারা-বাগদাদে বাস করতেন। বাংলা অঞ্চলের কোন সূফী বিভ্রান্তি ছড়ালে বাগদাদ-উত্তর ভারতের সূফীরা তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদের মধ্যে রাখতেন। অর্থাৎ সূফীদেরকে ‘স্বাধীন-প্রশ্নহীন’ মনে করার কোন সুযোগ নেই।

গ) সব সূফী-দরবেশের মধ্যে উল্লেখিত চার বৈশিষ্ট্য সমানভাবে পাওয়া যেত, এটা বলার সুযোগ নেই। তবে সবার মধ্যেই কমবেশী হারে এসব বৈশিষ্ট্যগুলো থাকতো। কারো মধ্যে কোন অংশ বেশী থাকবে, কারো মধ্যে কম ; এটা যে কোন ব্যবস্থার ক্ষেত্রেই সত্য। সূফীদেরকে নির্দোষ-নিষ্পাপ মনে করারও কোন সুযোগ নেই, প্রয়োজনও নেই। একমাত্র নবী-রসূলরাই নির্দোষ হতে পারেন।

Iftekhar Jamil

12 Nov, 10:52


যদি মসজিদের ইমাম/মাদরাসার শিক্ষক/ইসলামি লেখকদের জন্য বেতন নির্ধারণ করা যায়, তবে বক্তাদের জন্য কেন সম্মানী নির্ধারণ করা যাবে না? কিছু ফতোয়া আছে, সেটা আমিও জানি, তবে যেমন কুরআন শিক্ষার ক্ষেত্রে ফতোয়াকে এডজাস্ট করা হয়েছে, ওয়াজের ক্ষেত্রেও একইভাবে 'এডজাস্ট' করা জরুরী—কারণ দিনশেষে সব বক্তাই প্রত্যক্ষ বা অপ্রত্যক্ষভাবে সম্মানী গ্রহণ করেন এবং এতে বড় আপত্তির কিছু নেই। লোকজন কেন আরও জরুরী কাজে অর্থ ব্যয় করে না? এটা সাংস্কৃতিক সমস্যা, বক্তাদেরকে এজন্য দোষী করা যাবে না।

অবশ্য যারা সম্মানীর বিনিময়ে ধর্মপ্রচার করেন, তারা কখনোই সমাজে ব্যাপকভাবে প্রভাব বিস্তার করতে পারবেন না। আলেমরা যখন থেকে নিজেদেরকে 'পেশাজীবী' হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছেন, সম্মানী নিয়ে ধর্মপ্রচার শুরু করেছেন, তখন থেকেই সামাজিকভাবে তাদের প্রভাব কমতে শুরু করেছে। আলিয়ার তুলনায় কওমি আলেমদের প্রভাব বেশী—কারণ কওমি আলেমরা সরকার থেকে ভাতাগ্রহণ করেন না। অবশ্য ভাতাগ্রহণকে খারাপ চোখে দেখার সুযোগ নেই—পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়া ব্যাপক ইলমি চর্চা কখনোই সম্ভব না।

সাধারণ আলেমরা অবশ্যই সামাজিক-রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা গ্রহণ করবেন। তবে যারা নিজেদেরকে গড়ে তুলবেন নেতা হিসেবে, যারা রাজনীতিতে প্রভাব রাখতে চাইবেন, তারা পৃষ্ঠপোষকতা গ্রহণ করতে পারবেন না। ঠিক একই কারণে বক্তাদের পক্ষে সাধারণত বড় আলেম হওয়া-বড় রাজনীতিবিদ হওয়া সম্ভব নয়।

Iftekhar Jamil

11 Nov, 11:33


তাবলিগের জোড়

গতকাল-পরশু মালয়েশিয়ায় বাঙালিদের জন্য তাবলিগের জোড় ছিল। মসজিদে জায়গা দেওয়া যায়নি—এতই মানুষ হয়েছে। একশো বছর আগে ইলিয়াস রাহঃ এর পরিবারে অভাবের শেষ ছিলো না, পারিবারিক ব্যবসাটাও ঠিকমত চলতো না, পিতা মাদরাসা থেকে বেতন নিতে চাইতেন না। এর মধ্যে ইলিয়াস রাহঃ দাওয়াতের কাজে এগিয়ে আসলেন—আল্লাহ ইখলাস ও চেষ্টাটাই দেখেন, বাকি সবকিছুই আনুষাঙ্গিক।

Iftekhar Jamil

10 Nov, 00:47


মাদরাসা নিয়ন্ত্রিত ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল

দারুল উলুম করাচির নিয়ন্ত্রণে করাচিতে প্রায় পনেরোটির মত ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল পরিচালিত হয়—সূত্র দারুল উলুম করাচির একজন ফাজেল। অথচ ঢাকার মত মেগাসিটিতে মাদরাসা নিয়ন্ত্রিত কোন স্কুল নেই। সাধারণ মানুষ জেনারেল শিক্ষাকেই প্রেফার করে, তারা শুধু চায় শিক্ষার নামে তাদের সন্তানরা বিক্রি না হয়ে যাক।

Iftekhar Jamil

09 Nov, 12:58


জরুরি দোয়া

Iftekhar Jamil

09 Nov, 04:35


আল্লামা ইকবাল

আজ আল্লামা ইকবালের জন্মবার্ষিকী। পশ্চিমা সভ্যতার বিপুল বিকাশে প্রাচ্যের ধর্ম, ধর্মতত্ত্ব ও সংস্কৃতি একদম খেয়ে গেছে। প্রাচ্যের শিরোনামে বর্তমানে আমরা যেসব দর্শন ও চর্চা দেখি, তার অধিকাংশই পশ্চিমা সভ্যতার মাধ্যমে প্রভাবিত। বাংলা সাহিত্যের রবীন্দ্রনাথ বা জীবনানন্দ দাশের কথাই ধরুন, তাদের মধ্যে উপনিবেশের সমালোচনা থাকলেও ভেতরটা পশ্চিমা সংস্কৃতির মাধ্যমে প্রভাবিত। রবি ঠাকুরের নান্দনিক জগত বা জীবনানন্দ দাশের সংশয়-বিস্ময়ে অভিভূত হবার মতো অনেক কিছু আছে—নিঃসঙ্কোচে স্বীকার করতে দ্বিধা নেই যে, তাদের শিল্পকর্ম আমারও ভালো লাগে।

তবে তারা কেউ সমকালীন সভ্যতার সঙ্কট, সংশয় ও সংঘর্ষ নিয়ে কাজ করেননি। ফলে জীবন ও রাজনীতির বাইরে শিল্প বলে আলাদা এলাকা তৈরি হয়েছে। একজন সুদী ব্যাংকের কর্মকর্তা বা ঘুষখোরের জন্যেও রাবিন্দ্রিক বা জীবনানন্দের সাহিত্যের চর্চায় কোন বিরোধ তৈরি হয় না—অনুতাপ ও প্রশ্ন জন্ম নেয় না। সমকালীন সাহিত্য অনেকটা তাসাউফ চর্চার মতো ; ব্যক্তিগত অভিঘাত ও সংঘাতের বিচ্ছিন্নতাবাদী সুলুক সন্ধান। এই বিচ্ছিন্নতাবাদে পুঁজিবাদ ও উপনিবেশের বেশ লাভ হয়েছে , যেভাবে বিচ্ছিন্নতাবাদী তাসাউফে লাভ হয় মুসলিম স্বৈরাচারীদের। এই ধারার সাহিত্যের সমালোচনা আছে বামপন্থীদের মধ্যেও। আবুল কাসেম ফজলুল হকের বেশ শক্তিশালী সমালোচনা আছে এই ধারার সাহিত্য নিয়ে।

আল্লামা ইকবাল এখানেই স্বতন্ত্র। তার কবিতা ও চিন্তায় সভ্যতার সঙ্কট, সংঘাত ও অভিঘাতের আলোচনা খুবই স্পষ্ট। ব্যক্তিগত বিচ্ছিন্নতাবাদী আবেগের পরিবর্তে ইকবালের সাহিত্যে মানুষের সামাজিক ও রাজনৈতিক বৃত্তির আলোচনা ছিল বেশ প্রবলভাবে। ইকবালের চিন্তার গুরুত্বপূর্ণ অংশে ছিল ইজ্জুল উবুদিয়াহ বা বাকা ফিল ফানা, অর্থাৎ কামেল ইনসান হয়ে উঠার চেষ্টায় মানুষের মধ্যে পরস্পরবিরোধী দুটি চিন্তা প্রবলভাবে কাজ করে। একদিকে মানুষ অহংকার থেকে মুক্ত হয়ে বিনয়ী হতে চায়। তবে এর বিপদ হচ্ছে, মানুষ নিজের আমিত্বকে দূর করতে গিয়ে অনেক ক্ষেত্রে নীচতায় পৌঁছে যায়। সামাজিক দায় ও দায়িত্ব থেকে মুক্তি পেতে চায়। নীচতায় আক্রান্ত ব্যক্তি খালেকের ইবাদতের চেয়ে মাখলুকের কাছেই বেশী নত হতে চেষ্টা করে। ফলে তার ইবাদত ও সমাজকর্মের মধ্যেও থেকে যায় শেরেকির গন্ধ।

অন্যদিকে পরিবর্তনের আন্দোলনে জড়িতদের মধ্যে অহংকার দানা বাঁধতে থাকে। একপর্যায়ে মানুষের মধ্যে খোদায়ী মনোভাব কাজ করতে শুরু করে। মানুষ হিসেবে সবাই সমান, তাওহীদের এই গুরুত্বপূর্ণ ধারণা থেকে সে দূরে সরে যায়। এই দ্বৈত বিপদ থেকে মুক্তি দিতেই ইকবালের বাকা ফিল ফানার ধারণা। অর্থাৎ ইবাদত ও খেলাফতের মধ্যে সমন্বয়। বাকা ও ফানার মধ্যে যোগাযোগ ; ইজ্জুল উবুদিয়াহ , একদিকে উলুহিয়াতের সামনে নত ও রুবুবিয়াতের দায়িত্বে সচেতন ; এই হচ্ছে ইকবালের ইনসান ও ঈমানে কামেলের ইশতেহার।

Iftekhar Jamil

08 Nov, 16:37


পরিবার ও প্রবাস

কবে আবার হিজাযে যেতে পারবো, সে অপেক্ষায় থাকি। দুই হাজার উনিশে আমাদের পরিবারের সবাই আমরা ওমরার সফরে গেছিলাম। মা-বাবা-বোন-বোনজামাই-বাচ্চারা, ভাই তখন মদিনাতেই পড়তেন। দিনগুলো ছিল আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ সময়ের মধ্যে একটি। ছেলেবেলায় দেখতাম বোন মাদরাসায় থাকে, সপ্তাহে শুধু একদিন বাসায় আসে, পড়াশোনা শেষ করতেই ওর বিয়ে হয়ে গেল। কিশোর হতেই ভাই চলে গেলেন বিদেশে, এখন তো আমিও দেশে নাই বছর দুয়েকের মত। স্থায়ীভাবে পরিবারের সবাই একসাথে হওয়ার সুযোগ প্রায় নাই বললেই চলে।

“I’ve wondered where home is, and I realized, it’s not Mars or some place like that, it’s … when I was nine years old. I had a brother and a sister, a cat and a dog, and a mother and father and uncles and aunts. And there’s no way I can get there again.”

Kurt Vonnegut

আমার বাবা-মা কখনোই আমাদেরকে ছাড়তে চাননি—কোন এক অদ্ভুত কারণে তারা আমাদেরকে বড়কিছু হতেও উৎসাহিত করেননি—আমরা যাতে ঠিকমতো খাই-ঘুমাই-পাশে থাকি, এগুলোই ছিল তাদের প্রধান ইচ্ছা, চাকরি নিয়েও পেরেশানির কিছু নেই, তারা ভাত-কাপড়ের ব্যবস্থা করতেও রাজি।

আমি ঢালকানগরে ভর্তি হয়েছিলাম, প্রতি সপ্তাহেই বাসায় আসতাম। আমার বাবাও মাঝেমাঝে সপ্তাহের মাঝে মাদরাসায় যেতেন। ঢালকানগর থেকে আমাদের বাসার দূরত্ব চার-পাঁচ কিলোমিটারের মত, রিকশায় পৌনে একঘণ্টা। কয়েকমাস যেতেই বাবা বললেন, তিনি আমাকে এত দূরে পড়তে দিবেন না, আবার বাসার পাশে নিয়ে আসলেন।

‘মাদরাসায়ে ইউসুফে’ থাকার দিনগুলোতেও তারা নিয়মিত আসতেন, কান্নার দমকে কথা বলতে পারতেন না, শুধু তাকিয়ে থাকতেন। এখন, যদিও আমি নিয়মিতই দেশে যাই, মাসখানিকের মত থাকি প্রতিবার, তবু ফিরে আসার সময় বাবা কান্না করেন-মা জড়িয়ে ধরেন, তার শরীরটা কেমন দুলুনি দিয়ে ওঠে। তারা বারবার জানতে চান, ঠিক কতদিন পরে আমি আবার ছুটি পাব।

এখন, পথের দূরত্বটা অনেক বেশী, আড়াই-তিন হাজার কিলোমিটারের মত।

গেল বছর আমাদের পরিবার নতুন বাসায় ওঠলো। উদ্দেশ্য একটাই, সবাই একসাথে থাকবো। ভাই-ভাইয়ের সন্তানরা থাকবে, বোন আসবে নিয়মিত- ওর রুমটা ওর মত গুছানো থাকবে, আমি আবার স্থায়ীভাবে ফিরবো—অবশ্য সেটা মোটেই সহজ নয়। একবার বাসার বাইরে বের হলে সহজে ঘরে ফেরা যায় না। আপনি নতুন নতুন স্বপ্ন দেখবেন, নতুন জায়গায় যেতে চাইবেন, বিকেলে ঝিরির পাশে বসে আপনার মনে হবে মেঘমালা নেমে আসছে মাটিতে—আপনি ভাববেন, আপনার মোটেই খারাপ লাগছে না। আপনি বরং পাহাড়ের ওপারে যাবার প্রস্তুতি নিতে চাইবেন—ওপারের রুপকথার জগত আপনাকে পুলকিত করবে।

সন্ধ্যা নামবে দ্রুত, মেঘমালা অদৃশ্য হবে । ফিরতে ফিরতে মনে হবে আরও অনেক দূরে আপনার বাবা-মা আপনার অপেক্ষায় বসে আছেন।

Iftekhar Jamil

08 Nov, 13:55


সিনওয়ারের শেষ অসিয়ত। শুনেন একটু মন দিয়ে। বাংলায় রুপান্তর করেছেন, রুম্মানা জান্নাত, আবৃত্তি হাসান রোবায়েতের।

Iftekhar Jamil

08 Nov, 06:41


তাবলিগ

তাবলিগের সাপ্তাহিক মাশওয়ারাতে আজকে ওমান থেকে একজন এসেছিলেন। তিনি ইবাদি, কাজেই, আকিদায় তিনি প্রায় মু’তাজিলাদের অনুসারী। কিন্তু তাবলিগে এসব ভেদাভেদ করা হয় না। ঈমানের দাওয়াতে কোন ভেদ নেই। তবে ইলমি আলোচনায় মু’তাজিলাদের শক্ত সমালোচনা করা হয়। আমাদের জীবন যে নানা লেয়ারে বিভক্ত, এটা আমরা মাঝেমাঝেই ভুলে যাই।

Iftekhar Jamil

07 Nov, 23:20


বিদায় হজ্বের ভাষণ থেকে

'হে লোকসকল, তোমাদের পালনকর্তা এক, তোমাদের পিতা এক, তোমরা সকলেই এক আদমের সন্তান; আর আদম-মাটি হতে সৃষ্ট। তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তি সর্বাপেক্ষা অধিক সম্মানিত, যে সর্বাপেক্ষা অধিক মুত্তাকি বা আল্লাহভীরু। কোনো আরবের জন্য কোনো অনারবের উপর তাকওয়া ব্যতীত মর্যাদার মাপক আর অন্য কিছু হতে পারে না।'

'মনে রেখো, আমি মহান আল্লাহর বাণী তোমাদের নিকট পৌঁছে দিয়েছি। হে আল্লাহ, আপনি সাক্ষী থাকুন, আমি যথাযথভাবে আপনার পয়গাম পৌঁছে দিয়েছি। উপস্থিত লোকদের কর্তব্য হলো, তারা যেন অনুপস্থিতদের কাছে পৌঁছে দেয়।'

Iftekhar Jamil

07 Nov, 16:45


হিন্দু ও হিন্দুত্ববাদ

মোকাবেলা করতে করতে হলে আগে অবশ্যই জানতে হবে। বাংলাভাষায় এসব বিষয়ে লেখালেখি খুবই কম। আবেগ দিয়ে কী করবেন যদি প্রস্তুতিই না থাকে? সময় শেষ হয়নি। আজকেই প্রস্তুতি শুরু হোক।

Iftekhar Jamil

07 Nov, 16:15


মার্কসবাদ ও ধর্ম

মার্কসবাদীরা ধর্ম-ধর্মীয় ব্যাখ্যাকে আর্থ-সামাজিক প্রভাবের ফলাফল হিসেবে দেখে থাকে। তারা মনে করে, ধর্মের মধ্যে ‘সত্য’ বা ‘নৈতিকতা’ বলে কিছু নেই। নবীজি যত বিধান দান করেছেন, সেগুলো মূলত তৎকালীন আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটের ‘ফলাফল’। আজকে ইউসুফ কারজাবি বা তকি উসমানি ইসলামের যেসব ব্যাখ্যা দিচ্ছেন, সেগুলো ‘রাজনৈতিক প্রভাব’ ; তারা ‘বৈশ্বিক পুঁজিবাদের’ প্রভাবে ধর্মের নির্দিষ্ট ব্যাখ্যা দান করছেন।


মার্কসের ভাষায় :

“The religious world is but the reflex of the real world.”

অর্থাৎ

Understanding religion is dependent upon what social purpose religion itself serves, not the content of its beliefs.

মার্কসের ব্যাখ্যায় ধর্ম ও ধর্মীয় ব্যাখ্যার কোন ‘নৈতিক’, ‘বাস্তবিক’, ‘বস্তুনিষ্ঠ’ ও ‘নৈর্ব্যক্তিক’ মূল্য নেই। মার্কসবাদীরা সত্যতা-নৈতিকতা-বস্তুনিষ্ঠতার স্থানে ‘রাজনীতি-অর্থনীতিকে’ বসিয়ে দিয়েছে। আমরা যদি বলি, মার্কসবাদ মূলত তৎকালীন অর্থনীতি-রাজনীতির প্রভাব, মার্কসবাদের কন্টেন্টগত কোন মূল্য নেই, তাহলে কি মার্কসবাদীরা মেনে নিবেন?

আল্লাহ তাআলা বলেন,

إِنَّ ٱللَّهَ لَا يَهْدِى مَنْ هُوَ كَـٰذِبٌۭ كَفَّارٌۭ

Allah certainly does not guide whoever persists in lying and disbelief.

39:3

আপনি যদি আগেই ধরে নেন, ইসলাম ও ইসলামি ব্যাখ্যার কোন কন্টেন্টগত মূল্য নেই, তবে আল্লাহ কখনোই আপনাকে হেদায়েতের দিশা দিবেন না।

Iftekhar Jamil

07 Nov, 04:42


নিয়ত

সকালে মুসলিম শরীফ পড়ছিলাম। মদিনার বিবরণ পড়ে মনে হল, দ্রুত ওমরা করতে যাওয়া দরকার। আল্লাহ যাতে দ্রুত কবুল করেন। হাদিসের প্রভাবও অনেক—হাদিসের মাধ্যমেই নবীজির যুগের সাথে ঘনিষ্ঠতা সম্ভব। আমাদের আকাবিররা হাদিসের জন্য একবছর বরাদ্দ রেখেছেন—উদ্দেশ্য, ছাত্ররা মানসিকভাবে একবছর ‘স্বপ্নের মদিনায়’ থাকবে। আমার নিয়ত আছে, আমি দারুল উলুম দেওবন্দে সিহাহ সিত্তাহ সেমাআত করবো—যেখানে একসময় আশি-নব্বই বছর আগে আমার দাদা ও নানা হাদিস পড়েছিলেন।

Iftekhar Jamil

06 Nov, 23:32


সজল রোশন

সজল রোশনের একটা আলোচনা শুনলাম। কমেন্টে দেখলাম, প্রচুর মানুষ প্রভাবিত হচ্ছেন। খারাপ লাগলো—বিষয়গুলো একটু সূক্ষ—অনেকেই প্রতারিত হবেন। ইনশাআল্লাহ, তার চিন্তা নিয়ে বিশদে লেখবো।

Iftekhar Jamil

06 Nov, 10:42


কীভাবে ধর্মীয় শিক্ষা অর্জন করবেন?

অনেকেই এখন ধর্মীয় শিক্ষাগ্রহণে আগ্রহী হচ্ছেন। জানতে চাচ্ছেন, ঠিক কী নিয়ে ও কীভাবে পড়া শুরু করবেন।

* প্রথমেই ফরজে আইন বিষয়দি জানতে হবে, যতটুকু তথ্য জানলে আপনার জীবন চলে যাবে, ততটুকু শিখতে হবে সবার আগে।

* তারপর শিখতে হবে আরবি। এখানে একটু সময় দিতে হবে, এক-দুই মাসে আরবি শেখা যায় না, শব্দ-ব্যাকরণ-ব্যবহার সবকিছুই ভালোভাবে ধরে নিতে হবে। আরবি ভাষা শেখা শেষে মৌলিক মুতুনগুলো পড়তে হবে।

* মৌলিক মুতুন মানে মৌলিক আকর গ্রন্থ, যেগুলো ইমামগণ রচনা করেছেন। আপনি চাইলে আধুনিক বইগুলোও পড়তে পারেন, তবে তাতে ইলমি সিলসিলা সম্পর্কে ধারণা তৈরি হবে না। এতে অনেক সীমাবদ্ধতা তৈরি হয়ে যায়।

মনে রাখতে হবে, ইলমি শিক্ষা অর্জনের প্রধান উদ্দেশ্য মূলত তিনটি। তাকওয়া অর্জন, সিলসিলা-সনদে অন্তর্ভুক্তি ও মৌলিক মতন পড়া। এই তিনটি বিষয়ে যোগ্যতা অর্জিত হলে এবার স্বাধীনভাবে পড়তে পারবেন। বুদ্ধিবৃত্তিক তর্ক-বিতর্ক-বিবাদে অংশগ্রহণ করতে পারবেন। শানিয়ে নিতে পারবেন দক্ষতা, বিমূর্তায়ন, অর্জন করতে পারবেন সফিস্টিকেশন।

আমাদের সমাজে দুটি প্রান্তিকতা আছে।

কেউ কেউ মৌলিক শিক্ষাঅর্জন করা ছাড়াই তর্ক-বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন। মূল ছেড়ে শাখা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে যান। নিজেরাও বিভ্রান্ত হন, অন্যদেরকেও বিভ্রান্ত করেন। আরেকদল আছে যারা তর্ক-বিতর্ক দেখতেই পারেন না, বিধর্মী-বিপক্ষ মতের সাথে তর্ক করতে নারাজ। ওয়েস্টার্ন-সেকুলারদের বই পড়তে বাঁধা দেন। অথচ একটা পর্যায়ের পরে অবশ্যই ওয়েস্টার্ন-সেকুলারদের বই পড়তে হবে। জাহেলিয়াত জানতে জাহেলিয়াতকে অবশ্যই পড়তে হবে। অবশ্য মৌলিক তাকওয়া, সিলসিলা ও মুতুন জানার আগে শাখায় ব্যস্ত হওয়া যাবে না।

মোটকথা উভয় প্রান্তিকতা থেকে বেঁচে থাকতে হবে।

Iftekhar Jamil

06 Nov, 09:59


জনমত

বাংলাদেশে মসজিদের সংখ্যা প্রায় চার লাখের মত। প্রতি জুম্মায় গড়ে দুইশ করে মুসল্লি হয় ধরলেও সংখ্যাটা অনেক বড়—আট-নয় কোটির মত। এত বড় অডিয়েন্স নিয়েও যদি আপনি সবসময় ভীতির মধ্যে থাকেন, তাহলে বলতে হবে আপনারও দোষ কম নয়। দেখেন, আগামী পনের-বিশ বছরের মধ্যে বাংলাদেশি কোন পত্রিকার পক্ষে আমাদের চেয়ে বেশী জনমত গঠন করা সম্ভব নয়। কিন্তু জনমত আপনার পক্ষে হলে কী হবে, এলিটরা আপনার হাতে নেই। ঢাকার অবস্থা মোটামুটি ভালো হলেও গ্রামের অবস্থা ভালো নয়, আমি দেখেছি অনেক খতিব জাল হাদিস বলেন, খুতবাটাও ঠিকমত দিতে পারেন না।

এমন খতিবদের পক্ষে কি এলিটদেরকে প্রভাবিত করা সম্ভব? একটা সমাজের এলিট অংশ যদি আপনার হাতছাড়া হয়ে যায়, তবে নিছক সংখ্যাগরিষ্ঠতা দিয়ে আপনি টিকতে পারবেন না। হুনাইন যুদ্ধে মুসলমানরা সংখ্যাধিক্যে আত্মমুগ্ধ হয়ে গেল, আল্লাহ তাদেরকে বিপদে ফেলে সতর্ক করলেন। মনে রাখবেন, দুই হাজার বারো থেকে চব্বিশ পর্যন্ত প্রধান সব আন্দোলনের আইডিয়া বড়জোর নয়-দশজনের মাথা থেকে এসেছে—পেছনের কর্মকর্তা তারাই। যদি এরা বামপন্থী-রামপন্থী হতেন, তবে কী বিপদ হত, সেটা আপনারা কল্পনাও করতে পারছেন না।

ইমাম গাজালির গল্প বলি শুনেন। তিনি হানাফি-মুতাজিলাপন্থী সমাজে বেড়ে ওঠেছেন, গুপ্ত সংগঠন বাতেনিদের ভয় ছিল পদে পদে। যুবক বয়সে ইমাম আবু হানিফার শক্ত সমালোচনা করলে লোকজন গাজালির বাড়ি ঘেরাও করে, কথিত আছে হতাহতের ঘটনাও ঘটে। এসব ঘটনার প্রেক্ষিতে নিজামুল মুলক তাকে ডেকে পাঠান, বাতেনিদের বিষয়ে মনোনিবেশ করতে বলেন, শিক্ষাব্যবস্থায় হাত দিতে বলেন। বাকিটা ইতিহাস—বাতেনিদের হাতেই মারা যান নিজামুল মুলক, গাজালি বেশ কয়েক বছর অধ্যাপনা করেন।

একসময় গাজালির মনে হয়, কিছুতেই কিছু হচ্ছে না—তিনি খে লাফতের সর্বোচ্চ অধ্যাপনার পদ ছেড়ে দেন, পালিয়ে যান। নিজামুল মুলকের অসমাপ্ত কাজেই মনোনিবেশ করেন, লেখে ফেলেন ইহইয়াউ উলুমিদ দ্বীন। এই কিতাবের আলোকে গড়ে ওঠে শত শত মাদরাসা। নারীরাও ভর্তি হন প্রতিষ্ঠানগুলোতে—শুধু শাম অঞ্চলেই পাঁচশোর বেশী নারী মুফতি ছিলেন। ফারেগিনরা ছড়িয়ে পড়েন দেশে দেশে—একসময় এদের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠেন খাজা আব্দুল কাদের জিলানি।

গাজালি-জিলানির শাগরিদ-মুরিদরাই সালাহুদ্দিন আইয়ুবির নেতৃত্বে পশ্চিমা ক্রুসেডারদের হারিয়ে দেন

Iftekhar Jamil

06 Nov, 04:07


আমার নবী

নবীজি তার শহরে অবরোধের শিকার হয়েছেন, বহিষ্কৃতের মতো হয়ে তায়েফে গেছেন ও আক্রান্ত হয়েছেন। হজ্জের মৌসুমে প্রকাশ্যে দাওয়াত দেন এবং গোপনে মদিনার একদলকে তার অনুসারী ও আশ্রয়স্থল বানিয়ে ফেলেন। বদর যুদ্ধে দুর্বল সৈন্যদল নিয়ে তিনি অসহায় বোধ করতে থাকেন ; আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনায় কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। এভাবে ধীরে পৃথিবীতে ইসলামের দাওয়াত প্রচারিত হয়। এই স্ট্রাগলগুলো আপনাকে বুঝতে হবে।

সামাজিক ও রাজনৈতিক জীবনের মতো ব্যক্তিগত জীবনেও তিনি অনন্য ছিলেন। অর্থনৈতিক সচ্ছলতার সবরকম সুযোগ থাকলেও তিনি দরিদ্রতার জীবনকে গ্রহণ করে নিয়েছেন। মৃত্যুর কিছুদিন আগেও এক ইহুদী থেকে তাঁর ঋণ নিতে হয়েছিল। মৃত স্ত্রীর বান্ধবীদের বাড়িতে উপহার পাঠাতেন। প্রতিদিন স্ত্রীদের আলাদা করে সময় দিতেন। এমনকি ইতিকাফে বসলেও স্ত্রীরা তাঁর কাছে গিয়ে কথা বলে আসতো। পঞ্চাশোর্ধ বয়সেও স্ত্রীদের সাথে যেমন মার্জিত ও ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল, সেটা এককথায় তুলনাহীন।

সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম

Iftekhar Jamil

05 Nov, 22:50


ফিতরত

নিজের 'ফিতরত'কে ধরে রাখা অনেক জরুরি বিষয়। ফিতরত মানে স্বভাবজাত কল্যাণের প্রতি আকর্ষণ, গুনাহের প্রতি ঘৃণা। আপনার যদি গোলাপের দিকে তাকালে ঘৃণা লাগে, ডাস্টবিনের প্রতি আকর্ষণ তৈরি হয়, তবে এটা অনেক বড় সমস্যা।

দেখুন, আমরা কেউই নিষ্পাপ নই, তবে নেক কাজের প্রতি ঘৃণা ও পাপকাজের প্রতি আকর্ষণ তৈরি হলে এর থেকে বের হয়ে আসাটা অনেক কঠিন : এটাই আধুনিকতা-সেকুলারিজমের মূল কথা। সেকুলারিজম আপনার ভেদবুদ্ধিকে নষ্ট করে দিতে চায়, ভালো-খারাপের পার্থক্য ভুলিয়ে দিতে চায়; সংশয়-ভীতি তৈরি করতে চায়। আপনি ধর্মকে ঘরের মধ্যে-ব্যক্তির মধ্যে আটকে রাখতে চান, আপনার মধ্যে ভয় তৈরি হয় : যদি সবাই জেনে যায়, আমি ইসলাম পালন করি, তবে লোকে কী ভাববে?

জাহেলি যুগে যারা ফিতরতের ওপর প্রতিষ্ঠিত ছিল, তারা খুব সহজেই ইসলামকে মেনে নিতে পেরেছে। একইভাবে বর্তমানেও যারা ফিতরতকে রক্ষা করতে পেরেছে, তারা ব্যক্তিগত জীবনে গুনাহ করলেও ইসলামি বিধিবিধান নিয়ে কোন সন্দেহ-ভীতি পোষণ করে না। খুব সহজেই তাওবা করতে পারে।

ফিতরত নষ্ট হলে অনেক কিছু জেনে-পড়েও কোন লাভ হয় না : আপনি জেনে কী করবেন যদি মানার গুণ নষ্ট হয়ে যায়, কীভাবে বুকে বপন করবেন গোলাপের বীজ, যদি বুকের গভীরে ছড়িয়ে যায় সংশয়ের বিষ? পৃথিবীর ইতিহাসে অনেক ওলি-আওলিয়া-ওলামা ফিতরতে বক্রতার কারণে পথ হারিয়েছেন। আবু তালিবের মতো ভালো মানুষ কীভাবে ইসলাম আনতে পারলো না, কল্পনা করতে পারেন?

কুরআন এই অবস্থাকে বর্ণনা করতে গিয়ে বলেছে :

{ وَجَحَدُواْ بِهَا وَٱسۡتَيۡقَنَتۡهَآ أَنفُسُهُمۡ ظُلۡمٗا وَعُلُوّٗاۚ فَٱنظُرۡ كَيۡفَ كَانَ عَٰقِبَةُ ٱلۡمُفۡسِدِينَ }

'And they denied them out of sheer injustice and arrogance, though their hearts believed them (to be true). See, then, how was the fate of the mischief-makers.'

[Surah An-Naml: 14]

এখন, ফিতরতে বক্রতা তৈরি হলে কী করবেন? আশরাফ আলী থানবী বলেন, এ নিয়ে সারাদিন দুশ্চিন্তা করতে থাকলে ক্ষতির পরিমাণটাই বৃদ্ধি পাবে। স্বাভাবিক আমল-আখলাক ধরে রাখলে, তাওবা-ইসতেগফার করতে থাকলে আল্লাহ একসময় সবকিছু সহজ করে দিবেন। সারাদিন সেই বক্রতার দুশ্চিন্তা নিয়ে পড়ে থাকলে মানসিক-ধর্মীয় বড় ক্ষতি হয়ে যাবে। ইসলাম অত্যন্ত সহজ ধর্ম, সাধু-সন্যাসবাদের মতো নৈতিক সাধনা সবার জন্য জরুরি নয়, বরং অধিকাংশ মানুষের ক্ষেত্রে কঠিন সাধনায় নামাটা ক্ষতিকর। আপনার প্রতিদিনের জীবনে নিয়মিত চেষ্টা, অনুশোচনা, স্বাভাবিক সুখ-শান্তিতে থাকাটাই ইসলাম।

পুনশ্চ : শেষ অংশটুকু আশরাফ আলী থানবীর তারবিয়াতুস সালিকীন থেকে সংগৃহিত। প্রথম অংশটির মূলভাব কুর্দিশ উস্তাজ আরিফ আলী আরিফের একটা প্রবন্ধ থেকে নেওয়া।

Iftekhar Jamil

05 Nov, 16:29


তাবলিগ ও মাদরাসা

মালয়েশিয়ায় তাবলিগে ভাঙনের পরে আলমিশুরাপন্থীরা এখনো আমলকে বড় আকারে ছড়িয়ে দিতে পারেননি। আমাদের জিম্মাদার আলেম মাহমুদ ভাই বারবার মুরুব্বিদেরকে মাদরাসা স্থাপনের কথা বলছেন—তবে কাজটা আগাচ্ছে না। তাবলিগকে মাদরাসা থেকে আলাদা রাখতে হবে, এটা যেমন সত্য। একইভাবে মাদরাসার সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক না থাকলে তাবলিগ পথ হারাবে।

কেন?

দেখেন, তাবলিগে সাধারণ মানুষের হাতে দ্বীনপ্রচারের কাজটা তুলে দেওয়া হয়। ঐক্যের স্বার্থে আকিদা-মাজহাবের বিতর্ককেও এড়িয়ে যেতে হয়। তবে সাধারণ মানুষের হাতে আপনি ধর্মের মত একটা কমপ্লেক্স বিষয় তুলে দিবেন আর তারা ভুল করবে না—এটা অসম্ভব। কাজেই ছাকনির কাজটা করবে মাদরাসা, স্টান্ডার্ড রক্ষার দিকটা তারাই খেয়াল রাখবে। এটাকে ভাবতে পারেন অডিটিং এর মত—সাধারণ মানুষ প্রচারের কাজটা করুক, তবে লিমিটটা ধরে রাখতে হবে আলেমদেরকেই।

যদি তারা লিমিটের দিকটা না ধরে রাখেন, তবে আগামীকাল কেউ তাবলিগে এসে নিজের মত ফতোয়া-আকিদা বলতে থাকলে তার দায় কে নিবে? একটা ভুল ফতোয়া-আকিদায় কত ভয়ংকর পরিস্থিতি হতে পারে, সেটা আপনারা কল্পনাও করতে পারছেন না।

Iftekhar Jamil

05 Nov, 15:53


মাকতাবায়ে শামেলা

সহজের জন্য আমরা অনেক সময় মাকতাবায়ে শামেলা ব্যবহার করি। এখানে প্রায় কোটি পৃষ্ঠার সংকলন আছে। তবে এতে অনেক কিতাবে ভুল আছে। শব্দ বাদ পড়েছে এমন দৃষ্টান্ত অনেক। কাজেই, শামেলা ব্যবহারে সতর্কতার বিকল্প নেই।

Iftekhar Jamil

05 Nov, 13:27


জরুরি দোয়া

Iftekhar Jamil

05 Nov, 09:03


‘হিজরাহ’

মালয়েশিয়ায় কেউ যদি নতুন করে দ্বীনে ফিরতে চায়, তাহলে একজন আলেমকে দাওয়াত দেওয়া হয়। আলেম দোয়া করে দেন, কিছু এসাইনমেন্টও দিয়ে দেন। যাতে দ্বীনে ফেরার প্রসেসটা সুন্দরভাবে পূর্ণ হয়। সম্প্রতি আমাদের এক শিক্ষকের কাছে এমন একজন এসেছেন। শিক্ষক তাকে প্রতিদিন দুইবার করে কবরস্থানে যেতে বলেছেন, প্রতিবার একঘন্টা করে কবর জেয়ারত করতে বলেছেন—মন তাতেও নরম না হলে মাইয়েতকে গোসল দিতে বলেছেন। দ্বীনে ফেরার কাজটাও একজন আলেমের নির্দেশনায় হোক—আপনি যে আলেমকে পছন্দ করেন, তিনিই আপনাকে পথনির্দেশ করুক। (ঘটনাটা আজকের ক্লাস থেকে সংগৃহিত)।

Iftekhar Jamil

05 Nov, 06:27


মাজহাব-মাসলাক বিরোধ

আইআইইউএমের প্রতিষ্ঠাতাদের বেশ কয়েকজন ছিলেন সালাফি ধারার অনুসারী/ সালাফি ধারায় প্রভাবিত। তবে যেহেতু মালয়েশিয়ার অধিকাংশ মানুষ শাফেয়ি-আশায়েরি, তাই তারা আইআইইউএমের শিক্ষাব্যবস্থায় সালাফিচিন্তা চাপিয়ে দেননি ; সালাফি-আশায়েরি চিন্তার মধ্যে সমন্বয়ের চেষ্টাও চালাননি। তারা ছড়িয়ে দিয়েছেন মুসলিম ভ্রাতৃত্ব। এখন, আইআইইউএমে যেমন সালাফিদের কোন অসুবিধা হয় না, সংখ্যাগরিষ্ঠ শাফেয়ি-আশায়েরিদেরও কোন অসুবিধা হয় না। আমার মালয় বন্ধুদের মধ্যে যেমন আশায়েরিরা আছে, সালাফিরাও আছে।

অনেকের মধ্যে সালাফি-আশায়েরি ধারায় সমন্বয়ের ভূত চেপেছে। এটা মৌলিকভাবে ভুল কাজ। দেখেন, সর্বধর্ম সমন্বয়ের নামে যে ইন্টাফেইথ ডায়লগগুলো হয় সেগুলোর ফলাফল কী, সেটা সবাই জানেন। শিয়া-সুন্নি সমন্বয়ের চেষ্টার ফলাফলও ভালো হয়নি, ইউসুফ কারজাবি নিজে স্বীকার করেছেন। সিফাত ব্যাখ্যার মতো গৌণ ইস্যু নিয়ে বিতর্ক করার কোন অর্থ নেই, তবে বিতর্কটা রিয়েল। গৌণতা ঢাকতে বিতর্ক অস্বীকার করার চেষ্টাটা অপ্রয়োজনীয় কাজ। অনেকে অস্বীকার করতে গিয়ে সালাফি ব্যাখ্যাকেই আমদানি করছেন।

মুসলিম ভাইকে ভাই হিসেবে দেখলেই সব সমস্যার সমাধান হয়ে যায়। সমন্বয়ের চেষ্টাগুলো সাধারণত দুর্বলদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়। সৌদি বা মালয়েশিয়ায় সাধারণত কেউই সমন্বয়ের চেষ্টা চালায় না। কেননা সৌদি বা মালয়েশিয়ায় সংখ্যাগরিষ্ঠ মতামত রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রতিষ্ঠিত। সৌদি বা মালয়েশিয়ায় চাইলেও আপনি মসজিদে গিয়ে/ প্রকাশ্যে সমন্বয় চেষ্টা/ বাতিল আখ্যা দেবার সাহস করতে পারবেন না। বাংলাদেশে সেকুলার ক্ষমতার প্রেক্ষিতে ‘ধর্মীয় নৈরাজ্য’ তৈরি করা যায় খুব সহজেই। এটা মূলত রাষ্ট্রীয় রাজনীতির প্রতিফল। অনেকে বুঝে/ না বুঝে এই ফাঁদে পা দিয়ে বসেন।

Iftekhar Jamil

26 Oct, 07:27


আমরা সবাই নবীর ওয়ারিছ

মুফতি তকি উসমানী একটা দীর্ঘসময় রাষ্ট্রীয় বিচারপতি হিসেবে কাজ করেছেন। দায়িত্ব পালনকালে তিনি প্রধানত রাষ্ট্রীয় আইনের ইসলামি দৃষ্টিকোণ ব্যাখ্যা করতেন। পাকিস্তানের প্রধান বিচারপতিসহ আইন বিশেষজ্ঞদের সাথে তার নিয়মিত বসতে হত। এক বৈঠকে প্রধান বিচারপতি বলে বসেন, আপনি আমাদের থেকেও আইন বেশী বুঝেন, বৈচিত্র্যপূর্ণ ব্যাখ্যা দান করেন, এটা কীভাবে সম্ভব?

তকি উসমানী উত্তরে বলেন, 'আমাকে একটা দীর্ঘসময় ধরে ফিকাহ-উসুলে ফিকাহ পড়তে হয়েছে, পরবর্তীতে ইউরোপিয়ান আইন বিষয়েও পড়াশোনা করেছি, আমি গভীরভাবে বিশ্বাস করি, ইসলামি ফিকাহ-উসুলে ফিকাহের ভিত্তি অনেক শক্তিশালী।' আপনারা যারা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েন, তাদের একটি মৌলিক দায়িত্ব হচ্ছে, আপনাদেরকে অবশ্যই সংশ্লিষ্ট ধর্মীয় ইলমের দীক্ষা নিতে হবে। আপনাকে সমাজে ইসলামের প্রতিনিধিত্ব করতে হবে, এখন আপনি যদি নিজেই ইসলাম না জানেন, তবে মানুষ আপনার থেকে ভুল মেসেজ নিয়ে যাবে।

ইসলামে পাদ্রী-পুরোহিতের কোন পদ নেই। সবাইকেই সমানভাবে ধর্মীয় দায়িত্বগ্রহণ করতে হবে। আপনি যে বিষয়ে পড়ছেন, বিশেষজ্ঞ হচ্ছেন, সে বিষয়ে আপনার ওপর বিশেষ দায়িত্ব বর্তাবে। আপনি স্থাপত্যবিদ্যা নিয়ে পড়লে আপনাকে ইসলামি স্থাপত্য-দর্শন সম্পর্কে জানতে হবে ; অর্থনীতি নিয়ে পড়লে ইসলামি অর্থনীতি শিখতে হবে ; মনোবিজ্ঞানে জানতে হবে তাসাউফ ও উলুমুল কুলুব। ইসলামের আনুষ্ঠানিক কোন প্রতিনিধি নেই, আমরা প্রত্যেকেই খালিফাতুল্লাহ, ওয়ারিছে নবী।

Iftekhar Jamil

26 Oct, 04:22


কুরবানি

গতবছর ফেলাস্তিনি এক আলেমের সাক্ষাৎকার নিয়েছি। তাকে জিজ্ঞাসা করলাম, হামাসের কারণেই এত বিপদ, লোকজন হামাসকে কি দোষী মনে করে? তিনি বললেন, আক্রান্তরা হাজার হাজার ভিডিও পোস্ট করেছে, একজনও তাদেরকে দোষী বলেনি। সবাই বলেছে, হামাসের জন্য তারা গর্বিত। 'বিপক্ষের প্রতি যত নমনীয়তা দেখানো হয়েছে, ততই তারা পেয়ে বসেছে। কাজেই আজকে যে কুরবানি দিতে হচ্ছে সম্মানের সাথে, রুখে না দাঁড়ালে একদিন দিগুণ কুরবানি দিতে হবে, তবু কপাল থেকে অপমান সরানো যাবে না।'

Iftekhar Jamil

25 Oct, 13:50


বিপ্লব দীর্ঘজীবী হোক

Iftekhar Jamil

25 Oct, 12:12


ধর্ম ও মনস্তত্ত্ব

ধার্মিকতা মানুষের মনস্তাত্ত্বিক জটিলতা হ্রাস করে, মানসিক শক্তি দান করে। এর প্রেক্ষিতেই মুসলিম দেশগুলোতে আত্মহত্যার হার অনেক কম। তবে অনেকেই কয়েকটি বিষয় গুলিয়ে ফেলেন। ধর্ম ও ধার্মিকতা এক নয়।

ধর্মীয় বিশ্বাস থাকলেই মানসিক জটিলতা কমবে না, ইবাদাত-মুয়ামালাতে ধর্মের চর্চা থাকতে হবে। চর্চা না থাকলে অনেকক্ষেত্রে মানসিক জটিলতা বৃদ্ধি পায়। অপরাধবোধ থেকে মানুষের মন সংকীর্ণ হয়ে যায়, তাই জটিলতা বৃদ্ধি পায়।

মনে রাখবেন, আপনি যতই গুনাহ করেন, সবসময় আপনি তাওবা করার সুযোগ রাখেন। একাগ্রতার সাথে তাওবা করলে আল্লাহ আপনাকে সাধারণ মুসলমানদের চাইতেও বেশী প্রিয় বানিয়ে নিতে পারেন। আল্লাহর রহমত-দয়ার কোন সীমা নেই।

অনেকে ধার্মিকতার চাইতে 'রুহানিয়াতে' বেশী গুরুত্ব দেন। সন্ন্যাসী-ফকির-সেকুলারদের মধ্যে ধ্যান-যোগের চর্চা আছে। তবে গবেষণা বলে, মানবিক আধ্যাত্মিকতা মানসিক জটিলতা আরও বৃদ্ধি করে। তাই সেকুলার আধ্যাত্মিকতা অনেকবেশী ঝুঁকিপূর্ণ।

ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ وَتَطۡمَئِنُّ قُلُوبُهُم بِذِكۡرِ ٱللَّهِۗ أَلَا بِذِكۡرِ ٱللَّهِ تَطۡمَئِنُّ ٱلۡقُلُوبُ

the ones who believe and their hearts are peaceful with the remembrance of Allah. Listen, the hearts find peace only in the remembrance of Allah.”

-Surah Ar-Ra'd, Ayah 28

Iftekhar Jamil

25 Oct, 12:11


লেবাননে একদিনে দশ ইজরাইলি সেনা নিহত : খবর আল জাজিরার।

Iftekhar Jamil

25 Oct, 09:17


ইসতিহসান ও প্যারাডাইম শিফট

বিজ্ঞানী ও দার্শনিক টমাস কুনের একটা তত্ত্ব আছে প্যারাডাইম শিফট নামে। এর মানে হচ্ছে, আমরা নির্দিষ্ট প্যারাডাইমের যুক্তিতে অন্য প্যারাডাইমকে বাতিল করতে পারি না। টমাস কুন তখন পিএইচডি করছেন হার্ভার্ডে—তিনি পড়াশোনায় অবাক হয়ে দেখেন, এরিস্টটল পদার্থ বিজ্ঞানে অনেক বড় বড় ভুল বলে গেছেন। কুন ভাবনায় পড়ে যান, এরিস্টটলের মতো ব্যক্তি এত বড় ভুল করবেন—এটা কীভাবে সম্ভব?

কুন পর্যবেক্ষণ করে ধরতে পারেন, এরিস্টটলকে নিউটনীয় পদার্থবিদ্যার চোখে দেখে এই সমস্যা তৈরি হচ্ছে—শব্দ এক হলেও মর্মার্থ অনেক ভিন্ন। টমাস কুনের ভাষায় "Whenever you get two people interpreting the same data in different ways, that's metaphysics." অর্থাৎ শুধু ধর্মতত্ত্বে ম্যাটাফিজিক্স থাকে যারা মনে করেন, তারা ভুল করেন—ম্যাটাফিজিক্স থাকে সবখানেই—ফিজিক্সেও থাকে ম্যাটাফিজিক্স।

উসুলে ফিকাহের মধ্যে কাছাকাছি একটা পরিভাষা আছে—তাকে বলে ইসতেহসান। আমরা যখন সাধারণ ধর্মীয় নির্দেশনা থেকে স্বতন্ত্র নির্দেশনায় শিফট করি—কিয়াসে জলি থেকে কিয়াসে খফির দিকে, তখন বিধান ভিন্ন হয়ে যায়। আপনার জগতদৃষ্টি কেমন—আপনি কীভাবে দেখেন আপনার সমাজ, রাজনীতি ও রাষ্ট্রব্যবস্থা, তার ওপর ভিত্তি করে অনেক বিধিবিধান পরিবর্তন হয়ে যাবে—আপনি যেভাবে প্রশ্ন সাজাবেন, উত্তর আসবে সেভাবেই।

মুসলিম সমাজে এখন অনেক মতানৈক্য—হাত দিতে হবে গোঁড়ায়। সমাজ, রাজনীতি ও রাষ্ট্রব্যবস্থাকে ঠিক কীভাবে দেখা হচ্ছে, তার ওপর নির্ভর করে পাল্টে যাবে বিধিবিধান। এই কাজগুলো করতে হবে দক্ষ মানুষদের। দক্ষ হাতে এই কাজগুলো না হলে আমরা ধরতে পারবো না ইসতেহসান—প্যারাডাইম শিফট। আমরা একেকজন একেকটা চক্রে থেকে তর্ক করবো, অথচ জানবো না—আমাদের অবস্থান ছিল কাছাকাছি, হয়তো চক্রটাই ছিল ভিন্ন।

Iftekhar Jamil

24 Oct, 22:55


কুরাইশদের চোখে আল কুরআন

ওলিদ বিন মুগিরা ছিলেন কুরাইশের অত্যন্ত ধনী ও প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব। তিনি কুরআন তিলাওয়াত শুনে বললেন, মুহাম্মদের কথায় তো বিশেষ সৌন্দর্য ও মাধুর্য আছে—এ তো মানুষের কথা নয়। ওলিদের এমন মন্তব্যে কুরাইশের নেতারা চিন্তায় পড়ে গেল—‘ওলিদ যদি ধর্মত্যাগ করে, তবে আর কাউকেই ঠেকানো যাবে না’।

আবু জাহেল কৌশলে তাকে ক্ষেপিয়ে তুলে—‘আপনি নাকি মুহাম্মদদের থেকে সাহায্য-অর্থ গ্রহণ করছেন?’ এই মন্তব্যে ওলিদ অত্যন্ত বিব্রত-রাগান্বিত হয়ে গেল—‘আমি কুরাইশের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তিত্ব, মুহাম্মদরা তো খেতেই পারে না, তারা কীভাবে আমাকে সাহায্য করবে?’

ওলিদ আবু জাহেলের সাথে কুরাইশ নেতাদের বৈঠকে আসলেন—মুহাম্মদ ঠিক কী বলছে ও প্রচার করছে, সে নিয়ে বৈঠক চলছিল। ওলিদ বললেন, দ্যাখো মুহাম্মদ কিন্তু পাগল নয়, তাকে কখনো পাগলামি করতে দেখেছ? দেখো নাই।

সে কিন্তু গণকও নয়, সে ভাগ্যগণনা করে না। মিথ্যাবাদীও নয়, আমরা তাকে কখনোই অসত্য বলতে দেখিনি। কবিও নয়, আমি কবিতার সবধারা জানি—তার কথা কবিতা নয় । আমার কাছে মনে হয়, সে জাদুকর—সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করাই তার একমাত্র উদ্দেশ্য।

ওহি—ইলমে নববি অবতীর্ণ হবার চৌদ্দশো বছরের মতো হয়েছে। এখনো চলছে হক-বাতিলের লড়াই—প্রতিক্রিয়া-পাল্টা প্রতিক্রিয়া।

সূত্র : তাফসীরে তাবারি ( সূরা মুদ্দাচ্ছির, ১৮-২৫) ; তাফসীরে বাগাভি ( সূরা মুদ্দাচ্ছির, ১৮-২৫)

Iftekhar Jamil

24 Oct, 16:06


পরিবারে ইসলামের চর্চা

মাওলানা আতীক উল্লাহ

১: অভিজ্ঞ একজন আলিম (মুফতি)-এর সাথে পারিবারিকভাবে যুক্ত থাকা আবশ্যক। যাকে মাঝেমধ্যে দাওয়াত দিয়ে বাড়িতে আনা যাবে। প্রয়োজনে যার কাছে গিয়ে মাসয়ালা চাওয়া যাবে। পরামর্শ করা যাবে। সময়সুযোগ মতো হুজুর বাড়িতে এসে অল্পসময় দ্বীনি কথা শোনাবেন। কোনও অসঙ্গতি চোখে পড়লে, হেকমতের সাথে ধরিয়ে দেবেন।

২: আলিমকে দাওয়াত দেয়ার সময় তার আহলিয়াকেও দাওয়াত দেয়া জরুরী। তাহলে বাড়ির মহিলাগন হুজুরের আহলিয়ার সাথে পরিচিত হবেন। প্রয়োজনে তাঁর মাধ্যমে হুজুরের কাছ থেকে মাসয়ালা জেনে নেবেন। আমি এই কাজের মাধ্যমে শুধু নিজেই লাভবান হচ্ছি তা নয়, একটি দাঈ পরিবার গড়ে উঠতেও সাহায্য করছি।

৩: সবজান্তা নিষ্পাপ হুজুর খুঁজলে, জীবনেও মিলবে না। সাধ্যানুযায়ী চেষ্টা ও দোয়া করার পর, আল্লাহ যাকে মিলিয়ে দেন, ভাল। নিজের অবস্থানের আশপাশের হুজুর হওয়া জরুরী। যখন তখন তাকে পাওয়া যাবে। কাছেপিঠে অভিজ্ঞ কাউকে পাওয়া না গেলে, দূরের কারো শরণাপন্ন হতে হবে। কয়েকবাড়ি মিলে। কয়েকমহল্লা মিলে হুজুরকে সসম্মানে আনতে হবে। ব্যাপক আয়োজনের তো দরকার নেই। এলাকার যুবকশ্রেণী চাইলে, অতি অনায়াসে এই ব্যবস্থা করা সম্ভব।

৪: সচেতন (প্র্যাকটিসিং) মুসলিম হয়েও একজন আলিমের সাথে ব্যক্তিগত যোগাযোগ না থাকাটা খুবই দুঃখজনক। আমাদের উপন্যাস ‘ইশকুল অব লাভে’ বিষয়টি বলার চেষ্টা করেছিলাম। হয়তো ওভাবে বলতে পারিনি। প্রকাশিতব্য উপন্যাস ‘দোস্ত, জানেমানেও’ এ-বিষয়টা তুলে আনার চেষ্টা করেছি। এই উদ্দেশ্য সামনে রেখে ঘরোয়া মাহফিল নামে আমরা একটি গ্রুফও খুলেছিলাম। বেশিদূর অগ্রসর হতে পারিনি। ইন শা আল্লাহ শিঘ্রি সচল হবে।

৫: ইসলামচর্চার এটাই আবহমান ধারা। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাল থেকেই এই ধারা চলে আসছে। বর্তমানে সমাজে হুজুরদের দাওয়াত করে খাওয়ানোর যে ধারা প্রচলিত আছে, এটা কিন্তু সেই নববী ধারারই পরিবর্তিত রূপ। শুধু খাওয়া-দাওয়াটুকু বাকি আছে, বাকি মূল উদ্দেশ্য অন্তর্হিত হয়ে গেছে।

৬: একজন হুজুরের সাথে কীভাবে সম্পর্ক গড়ে উঠবে? হুট করে গিয়েই বলব, হুজুর আপনাকে আমাদের পারিবারিক হুজুর হতে হবে, এভাবে? উঁহু! হুজুরের সাথে প্রথমে কিছুদিন এমনি সৌজন্য সাক্ষাত করতে হবে। সম্ভব হলে তাওফীক অনুযায়ী হাদিয়া প্রদানও হতে পারে। ধীরে ধীরে সম্পর্কটা পাকা করে তুলতে হবে। তারপর বাড়িতে আনার উদ্যোগ নিতে হবে।

৭: সম্ভব হলে, পুরো পাড়া বা মহল্লার সবাই একজোট হয়ে একজন হুজুরের সাথে সম্পর্ক গড়ে তুলতে পারি। মাসে অন্তত একবার হলেও হুজুরকে ঘরে বা মহল্লায় আনা জরুরী। হাজারো পরিবার আছে, তিনপুরুষ মিলেও একবার কোনও হুজুরকে বাড়িতে আনার সৌভাগ্য হয়নি। না না, খাবার-দাবারের ‘মোল্লাপ্রথার’ কথা বলছি না, হুজুরের কাছ থেকে নসীহত শোনার উদ্দেশ্যে দাওয়াতের কথা বলছি।

৮: আমরা বিখ্যাত, তুমুল ব্যস্ত শিডিউলড, পেশাদার বক্তা হুজুরের কথাও বলছি না। ব্যস্ততার কারণে তাদেরকে সবসময় মনের মতো করে পাওয়া যায় না। হুজুর বাছাই করতে হবে, অনলাইন-মিডিয়ার প্রভাব ও মোহমুক্ত হয়ে।

৯: আর হাঁ, এই ব্যবস্থা শুধু আওয়াম মানে জেনারেল শিক্ষিত পরিবারের জন্যই নয়, আলিম পরিবারের জন্যও জরুরী। ঘরের মানুষকে সবসময় সব কথা বলা যায় না। ঘরের মানুষ সবসময় কাছের মানুষের নসীহত গুরুত্বও দিতে চায় না। বাইরের কেউ এসে নসীহত করলে, বাড়তি গুরুত্ব থাকে।

১০: মানছি, পরিবারের সবাই অনলাইনে বিখ্যাত ব্যক্তিগনের বয়ান শোনেন। তারপরও বলব, অফলাইনে একান্ত ঘরোয়া আয়োজন দরকার। হাতের কাছে পাওয়া হুজুরদের হয়তো অনলাইনের মতো তেজালো ওজস্বী চৌকস স্টাইল নেই, হয়তো গুছিয়ে কথাও বলতে পারেন না, এতসব সত্ত্বেও ঘরোয়া আয়োজন দরকার।

১১: বেশিরভাগ অভিজ্ঞ আলিম কিন্তু এভাবে ঘরে ঘরে যেতে রাজি হবেন না। এই সমস্যা বা অচলাবস্থা অবসানের একটাই উপায়, হুজুরের সাথে প্রথমে ব্যক্তিগত ঘরোয়া সম্পর্ক গড়ে তোলা। হুজুরের জড়তা সংকোচ ভাঙানো। তারপর ঘরে তোলা। ইস্তেখারা ও হেকমতের সাথে অগ্রসর হলে, কোনও কাজই অধরা থাকে না।

১২: যাদের কথা বলার কিছুটা হলেও যোগ্যতা আছে, তাদের উচিত উম্মতের ডাকে সাড়া দেয়া। বড় দুর্দিন যাচ্ছে। উম্মাহর বৃহত্তর স্বার্থের দিকে তাকিয়ে হলেও গণমানুষের কাছাকাছি নিয়ে যাওয়া উচিত।

১৩: বিশুদ্ধ নববীধারায় হুজুর দাওয়াত দিয়ে ঘরে আনার সুন্নতী রেওয়াজ কিন্তু এখনো নির্দিষ্ট মহলে সীমিত পরিসরে হলেও বিদ্যমান আছে। এখন প্রয়োজন এর ব্যাপক প্রচলন।

রাব্বে কারীম আসান করুন। কবুল করুন।

Iftekhar Jamil

24 Oct, 14:56


'এবার সরকারি খরচে হজে না পাঠানোর সিদ্ধান্ত'

সরকারি টাকায় লোকজনকে হজ্বে পাঠানো নিয়ে অনেক প্রশ্ন থাকলেও একে বাতিল করা যাবে না। সংস্কার করতে হবে—রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি/আলেম/ইসলামি ব্যক্তিত্বরা এর আওতায় পবিত্রভূমি থেকে ঘুরে আসবেন। উপযুক্ত ব্যক্তিরা যাচ্ছেন কিনা, সেটাই আমাদের মূল প্রশ্ন হওয়া উচিত। রাষ্ট্র 'ধর্ম' করবে কিনা—এটা খুবই বাজে দৃষ্টিভঙ্গি।

অনেকে প্রশ্ন করতে পারেন, সরকারি টাকায় কেন ইবাদত/ধর্ম করতে হবে? আমরাও প্রশ্ন করতে পারি, সরকারি টাকায় কেন শিল্প-সাহিত্য করতে হবে—সরকারকে কেন বাংলা একাডেমি-শিল্পকলা পালতে হবে? সরকারি কর্মকর্তারা মাঝেমাঝেই বিদেশ সফরে যান—সফরে না গিয়ে গুগলমিট-বই দিয়েই তো অনেককিছু সেরে ফেলা যায়, সশরীরে যেতে হবে কেন?

সশরীরে যাওয়া ছাড়া অনেক কাজই সম্পাদন করা যায় না।

হজ্বকেও কেবল ইবাদত হিসেবে দেখা যাবে না। সেকুলার রাষ্ট্র যখন কোনকিছুকে 'ধর্ম' হিসেবে চিহ্নিত করে, তখন বুঝবেন তাদের মতলবটা ভালো নয়। তারা ফান্ডিং বন্ধ করতে চাচ্ছে, রেপ্রেজেন্টেশনে হাত দিচ্ছে। সরকারি কর্মকর্তা-একাডেমিকদের বিদেশ সফর যেমন গুরুত্বপূর্ণ, হজ্বের সফরও সমানভাবে তাৎপর্যপূর্ণ। হজ্ব কেবল ইবাদত নয়, হজ্ব সাংস্কৃতিক লেনদেন-আন্তর্জাতিক সম্পর্কের গুরুত্বপূর্ণ অসিলা। নবীর রওজাপাক-মসজিদে হারাম-আরাফাত মানুষের মধ্যে যে পরিমাণ পরিবর্তন করতে সক্ষম, সেটা আর কোথাও সম্ভব নয়।

এখন বলেন, হজ্বের সফরকে কি আপনাদের নিছক সেকুলার সেন্সে 'রিলিজিয়াস' মনে হয়, নাকি 'কূটনৈতিক-সাংস্কৃতিক' বিচারেও হজ্বের গুরুত্ব অপরিসীম? যদি রাষ্ট্রে অর্থের এতই সঙ্কট হয়, তবে শিল্পকলার বরাদ্দও বন্ধ করেন। একটাকে বানাবেন প্রাইভেট, আরেকটাকে বানাবেন পাবলিক—এসব দু'নম্বরি বন্ধ করেন।

Iftekhar Jamil

24 Oct, 10:24


দারুল উলূম দেওবন্দ : ফিরে দেখা

১) সামাজিক পৃষ্ঠপোষকতা ও অর্থায়ন

দারুল উলূম দেওবন্দের সমৃদ্ধির পেছনে ইখলাস-মুজাহাদার পাশাপাশি দুটি বৈষয়িক অনুষঙ্গ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল। বালাকোটের শাহ ইসমাইল শহীদের অনুসারীরা দেওবন্দের প্রতি নিঃশর্ত সমর্থন প্রকাশ করেন, পৃষ্ঠপোষকতা-প্রচারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন, পাশাপাশি ব্রিটিশ চাকুরেজীবী এলিটদের রক্ষণশীল অংশ মাদরাসার অর্থায়নে ব্যাপক ভূমিকা পালন করেন। একইসঙ্গে বিপরীতমুখী দুই অনুষঙ্গের প্রেক্ষিতে দারুল দেওবন্দ ব্যাপক জনসমর্থন ও অর্থায়ন লাভ করে।

দেওবন্দে কোন কোন শ্রেণীর মানুষ বেশি অর্থায়ন করেছেন, এলাকা ভিত্তিক পৃষ্ঠপোষকতাগুলো কারা করেছেন, কোন কোন এলাকা থেকে ছাত্র এসেছে বেশী, আপনি যদি এগুলো অনুসন্ধান করেন, সালতামামি রিপোর্টগুলো দেখেন, তবে আমার কথার সত্যতা ধরতে পারবেন। বালাকোটের সিলসিলা ধরে দক্ষিণ এশিয়ায় দেওবন্দের প্রভাব ছড়িয়ে পড়ে। প্রতিষ্ঠার বিশ-ত্রিশ বছরে পূর্ববাংলা থেকেই কয়েক হাজার ছাত্র দেওবন্দে যায়, বাংলাদেশে বেশকিছু মাদরাসাও প্রতিষ্ঠিত হয়। আমার দাদার দাদা বালাকোট আন্দোলনে প্রভাবিত হন, ছেলে ও নাতিকে দেওবন্দে পাঠান।

২) সামাজিক পৃষ্ঠপোষকতা-অর্থায়ন কেন গুরুত্বপূর্ণ?

ইসমাইল শহীদের সিলসিলা ও চাকুরেজীবী এলিটদের সাথে সম্পর্কের বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আপনি যদি জনসমাজের রাজনৈতিক চাহিদা ধরতে ব্যর্থ হন, সমাজের এলিট অংশকে প্রভাবিত না করতে পারেন, তবে বুদ্ধিবৃত্তিক আন্দোলন হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারবেন না। সরকার ও সশস্ত্র ধারাগুলোর সাথে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখলেও আপনাকে সমাজেই থাকতে হবে-এলিটদেরকেও হাতে রাখতে হবে, এটাই ছিল দেওবন্দি মাদরাসাগুলোর প্রধান শক্তি।

৩) দেওবন্দ ও ইসমাইল শহীদ

এখানে বলে রাখা ভালো, ইসমাইল শহীদের শাগরেদ ও সিলসিলার লোকেরা দেওবন্দের প্রতি নিঃশর্ত সমর্থন জানালেও আকাবিররা ইসমাঈল শহীদকে প্রধানত চেতনা হিসেবে গ্রহণ করেছেন, অনেকক্ষেত্রেই আক্ষরিকভাবে গ্রহণ করেননি।

রশিদ আহমদ গাঙ্গুহির ভাষায়, 'জনতা তাসাউফের কোন প্রচলিত আমলে বিদআত শুরু করলে ইসমাইল শহীদ শক্তভাষায় এর প্রতিবাদ করতেন, নরম ভাষায় বললে জনতার মনজয় করা যায়, তবে সংস্কার করা যায় না।' ঠিক একই প্রেক্ষিতে তাসাউফের উচ্চতর ভাষা-চর্চাকে কীভাবে দেখা হবে, সেই প্রশ্ন সামনে চলে আসে।

মনে রাখা ভালো, ইসমাইল শহীদের চেতনায় গুরুত্ব দিলেও আকাবিররা একইসাথে হাজি ইমদাদুল্লাহ মুহাজিরে মাক্কির খলিফা-মুরিদ ছিলেন। হাজি সাহেবের তাসাউফ-চিন্তা প্রচলিত ধারাকে কেন্দ্র করেই আবর্তিত হয়েছে। ঠিক এ কারণেই আশরাফ আলী থানবি দেখান, প্রেক্ষাপটের প্রক্ষিতে ইসমাইল শহীদের ভাষায় কিছু কঠোরতা এসেছিল, ভাষাগত জটিলতার কথাও থানবী মেনে নেন। তার মতে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ইসমাইল শহীদের কঠোর ভাষা-প্রক্রিয়া বর্জন করাই উত্তম। ঠিক এ কারণেই ইসমাইল শহীদকে আকাবিররা চেতনাগতভাবে গ্রহণ করলেও সর্বক্ষেত্রে ভাষা-প্রক্রিয়াগতভাবে অন্ধঅনুসরণ করেননি।

৪) আকল-নকল

গত দেড়শো বছরে কওমি মাদরাসার সিলেবাস থেকে কোন কোন কিতাব বাদ পড়েছে, সেটা নিয়ে কখনো চিন্তা করেছেন? একটু ভাবলেই দেখবেন, ক্রমশ উসূলে ফিকাহ, কালাম ও ফালসাফার কিতাবগুলো বাদ পড়েছে। দেওবন্দের সফলতার আরেকটি বড় কারণ ছিল ফিরিঙ্গি মহল ও মাদরাসায়ে রহিমিয়ার মধ্যে সমন্বয়। মূল সিলেবাস দরসে নেজামি ফিরিঙ্গি মহল থেকেই গৃহীত। আকল-নকলের সমন্বয়ের প্রতিশ্রুতিতেই শতাব্দী পুরনো দুই মাদরাসাধারাকে ছাপিয়ে দেওবন্দ দক্ষিণ এশিয়ায় প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম হয়েছিল।

উসূলে ফিকাহ, কালাম ও ফালসাফার চর্চা কমে যাওয়ায় এখন অনেকেই আকাবিরদের ভাষা-চিন্তা ধরতে ব্যর্থ হচ্ছেন। তাসাউফের অনেক অনুষঙ্গ-প্রসঙ্গ, উসুলী গভীর আলোচনাগুলোতে সাধারণ ছাত্ররা স্বস্থি বোধ করছে না। আমাদের ইতিহাস-ঐতিহ্যের সাথে যোগাযোগে ব্যাঘাত ঘটছে। আমরা ভুলে যাচ্ছি, নুসুসকে কখনোই তুরাছের মোকাবেলায় দাড় করানো যাবে না। ইসমাইল শহীদের চেতনা আমাদের গর্বের বিষয়, যেভাবে আমাদের গর্বের বিষয় কালাম-ফালসাফা-উসূল চর্চাও।

Iftekhar Jamil

23 Oct, 04:37


মনখারাপ হলে এদের কথা ভাবতে পারেন। সিরিয়ান পিতা-পুত্র।

Iftekhar Jamil

22 Oct, 23:30


আদর্শের পেছনে থাকে সেনাবাহিনী

সোভিয়েত ইউনিয়ন আফ/ গানিস্থান দখল করার আগে আফ/ গান সেনাবাহিনী ও বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রভাব বিস্তার করা শুরু করে। সেনাবাহিনীর সদস্য ও ছাত্রদের নিয়ে যাওয়া হয় রাশিয়ায়—তাদেরকে দীক্ষিত করা হয় উগ্র বামপন্থায়। উগ্র বামপন্থায় দীক্ষিত লোকগুলোই পরে আফ/ গানিস্থানে রাশিয়াকে ডেকে নিয়ে আসে ও প্রধান সমর্থক হিসেবে দখলদার বাহিনীর পক্ষে থাকে।

আগে দেশ দখল করার পূর্বে ও পরে ধর্মপ্রচার করে জনসমর্থন আদায় করা হত—এখন জনসমর্থন আদায় করা হয় আদর্শ ও বিনোদনের নামে। আপনার রাষ্ট্রীয় এলিট ও যুবা শ্রেণীতে ভিনদেশি সংস্কৃতি প্রবল হয়ে উঠছে কিনা, সেটা চোখে চোখে রাখুন। কেননা ভিনদেশি সংস্কৃতির আড়ালে লুকিয়ে থাকে দখলদার বাহিনী। আপনি যেসব ভিনদেশি কন্টেন্ট গিলছেন, প্রভাবিত হয়ে উঠছেন যার কথায়, সে অপেক্ষায় থাকে আপনার দেশদখলের।

( তথ্যসূত্র : আল জাজিরার তথ্যছবি—আফ/ গানিস্থান, আল আরদুল জারিহাহ)

Iftekhar Jamil

22 Oct, 04:32


হাকিমুল উম্মত মাওলানা ও সাইয়েদেনা আশরাফ আলী থানবী রাহিমাহুল্লাহ

Iftekhar Jamil

21 Oct, 23:25


ওয়াজ মাহফিল আমাদের ঐতিহ্য, সংগ্রাম

ওয়াজ মাহফিল আবহমান বাঙালি সংস্কৃতির গুরুত্বপূর্ণ অংশ। পুথি-পাচালির কাহীনি সাহিত্যের ঐতিহাসিক ধারাবাহিকতা। বাংলা অঞ্চলে শত শত বছর ধরে পীর-দরবেশরা বছর বা মাসের নির্দিষ্ট দিনে খানকাহ/দরবারে আয়োজন করতেন ওয়াজ মাহফিল।

বিশেষত ব্রিটিশ আমলে জৌনপুরী ও মুহাম্মদী ধারার বক্তারা এই অঞ্চলে চষে বেড়িয়েছেন, সংগ্রহ করেছেন আন্দোলনের সমর্থন, অর্থ ও সদস্য। এই দীর্ঘ ইতিহাস ভুলে আপনারা বলতে শুরু করেছেন, ওয়াজ মাহফিল আমাদের সংস্কৃতির অংশ নয়। অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরাও এতে সমর্থন জানাচ্ছেন।

বলে রাখা ভালো, ঐতিহাসিকদের মতে দূর্গা পূজা ও ওয়াজ মাহফিল প্রায় একইসময়ে জনপ্রিয় হয়েছে। ব্রিটিশদের বিজয়ে উল্লাস প্রকাশ করতে প্রবর্তিত হয় দূর্গা পূজা, ব্রিটিশ বিরোধী ধর্মীয় আন্দোলনে জনপ্রিয় হয় ওয়াজ মাহফিল। এভাবে ভাবলে দেখবেন, ওয়াজ মাহফিল আমাদের স্বাধীনতা আন্দোলনের গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

আরব-আফ্রিকায় ওয়াজ মাহফিলের প্রচলন নেই। যেহেতু সবাই আরবি পারে, সরাসরি ধর্মীয় ব্যাখ্যা বুঝতে সক্ষম, তাই আরব-আফ্রিকায় ওয়াজ মাহফিলের পরিবর্তে মসজিদ ভিত্তিক হালাকার মাধ্যমে ধর্মীয় শিক্ষা-প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়। মালয় দ্বীপপুঞ্জ ও দক্ষিণ এশিয়ার মুসলমানরা আরবি জানেন না, তাই সেখানেও ধর্মীয় শিক্ষা-প্রশিক্ষণের প্রয়োজনে প্রবর্তিত হয় ওয়াজ মাহফিল।

Iftekhar Jamil

21 Oct, 14:12


গ্রামীণ মাদরাসা

আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে একজন মুরুব্বি পিএইচডি করছেন—তিনি আমাদের গ্রামের আলিয়া মাদরাসায় পড়েছিলেন। তিনি বলছিলেন, তোমাদের এলাকার মানুষরা অধিকাংশই ‘গরীব’ ছিল। রান্না হত দুইবেলা—সকাল-বিকাল। সকালের খাবার বাঁচলে দুপুরের খাবার হিসেবে খেতেন কেউ কেউ। এখনো আমাদের গ্রামে দুপুরে রান্না হয় না। তবে এই অভাবের মধ্যেই, মুরুব্বি বলছিলেন, পাড়ার প্রতিটা ঘরে অন্তত একজন করে ছাত্রের খানার ব্যবস্থা করতো।

আমাদের বাড়িতে ছাত্র-মেহমানদের জন্য আলাদা ঘর ছিল—নিয়ম ছিল, আমাদের পরিবার সবচেয়ে ভালো দুইতিনজন ছাত্রের দায়িত্বগ্রহণ করবে—অবশ্য পুরো বিষয়টি অবৈতনিক ছিলো না। ছাত্ররা পরিবারের শিশুদেরকে পড়াবে, তারা নিজেরাও আমার দাদা ও চাচার কাছে পড়া ধরে নিবে।

মাদরাসার সরকারীকরণ ঘটলো, প্রথমে ঢুকলো নকল, সাথেসাথেই ঢুকলো ইসলামি রাজনীতির নামে তীব্র দলবাজি—বিদেশ থেকেও ‘সালাফি’ অর্থ আসলো। আমার বাপ-চাচারা সবাই গ্রাম ছেড়ে দিলেন, সরকারি চাকরিতে ঢুকলেন। সমাজের সাথে মাদরাসার সম্পর্কটা ভেঙে গেলো।এখন বড় বড় ভবন আছে। নতুন নতুন ভবন যুক্ত হচ্ছে। তবে আমার মনে হয়, মাদরাসাটাই আর বেঁচে নেই।

Iftekhar Jamil

21 Oct, 12:35


শরিয়া গভর্নেন্স

গতসপ্তাহে আমাদের ডিপার্টমেন্টের উদ্যোগে দিনব্যাপী শরিয়া গভর্নেন্সের বিষয়ে ওয়ার্কশপের আয়োজন করা হয়। ডিপার্টমেন্ট মনে করছে ইসলামি আইনের কেবল তাত্ত্বিক দিক জানাই যথেষ্ট নয়, এর কাঠামো ও প্রয়োগের দিকগুলো জানাও জরুরী। এর অংশ হিসেবে সিলেবাসেও ব্যাপক পরিবর্তনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। মৌলিক তাত্ত্বিক দিকের পাশাপাশি শরিয়া গভর্নেন্সকেও নতুন সিলেবাসে বিশেষভাবে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। একইসাথে ফিকাহের সঙ্গে পলিটিকাল সাইন্স/সোশিওলজি/সাইকোলজির সিলেবাসকে দিগুণেরও বেশী বৃদ্ধি করা হয়েছে শরিয়া গভর্নেন্সের সহযোগী হিসেবে।

আগামী বিশ বছরে বাংলাদেশের মাদরাসা-বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও কি শরিয়া গভর্নেন্স-ইসলামভিত্তিক হিউম্যান সাইন্সকে এত গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় নিয়ে যাওয়া সম্ভব?

Iftekhar Jamil

21 Oct, 04:56


সালামের গুরুত্ব

সালাম ভালোবাসা প্রচারের মাধ্যম। নবীজি বলেন, ঈমান না আনলে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। পারস্পরিক ভালোবাসা না থাকলে পূর্ণ ঈমানদার হতে পারবে না। আমি তোমাদেরকে ভালোবাসা তৈরির সর্বোত্তম মাধ্যম বলবো? তোমরা নিজেদের মধ্যে সালামের প্রসার ঘটাও। অন্য হাদিসে নবীজি ভালোবাসার ব্যাখ্যায় বলেন, ভালোবাসা না থাকলে তুমি অপরের দিকটা বুঝবে না—নিজেকে অপরের জায়গায় রেখে চিন্তা করতে পারবে না। মূলত এখান থেকেই জুলুমের শুরু।

ইবনে ওমর (রাঃ) নিয়মিত বাজারে যেতেন—মনে রাখবেন, তিনি ওমর (রাঃ) এর সন্তান। তবে বাজারে গিয়েও কোনকিছু কিনতেন না। লোকেরা জিজ্ঞাসা করলো, কিছু কিনেন না, দামদর পর্যন্ত করেন না। বাজারে আসেন কেন? ইবনে ওমর বলেন, সালাম দেওয়ার জন্য আমি বাজারে আসি।

সালাম স্পষ্ট করে দেওয়া নবীজির আদর্শ। নবীজি বৈঠকে তিনবার সালাম দিতেন। স্পষ্টতার জন্য এককথা তিনবার করে বলতেন।

সালামে বিকৃতি করা ইহুদীদের অভ্যাস। ইহুদীরা বলতো, 'সামুলাইকুম।' একবার আয়েশা (রাঃ) ছিলেন নবীজির সাথে। তিনি এমন ডাক শুনে ক্ষেপে গেলেন। নবীজি সাথেসাথে থামিয়ে দিয়ে বললেন, আয়েশা এমন শক্ত কথা বলবা না। আল্লাহ অশ্লীল কথা ও গালিগালাজ পছন্দ করেন না। (*আয়েশার কথা শক্ত ছিলো, অশ্লীল ছিলো না। তবুও নবীজি তাকে থামিয়ে দেন।)

Iftekhar Jamil

20 Oct, 23:50


নির্জনতার গুরুত্ব

নবুওয়ত-প্রাপ্তির আগে নবীজি ঘন ঘন নির্জনতার মধ্যে মুরাকাবায় মগ্ন হতেন। নাগরিক কোলাহল-উল্লাস থেকে অনেক দূরে গিয়ে ইবাদতে মনোযোগী হতেন। আমাদের জীবন এখন অনেক কোলাহলময়। কোলাহলে আমাদের সাথে আল্লাহর সম্পর্কে ব্যাঘাত ঘটছে।

ওহি বন্ধ হলেও ইলহামের দরজা বন্ধ হয়নি, ভালো কাজের অনুপ্রেরণা-প্রণোদনার ধারা চালু থাকবে কেয়ামত পর্যন্ত। আল্লাহ যার ভালো চান, তাকে ভালো কাজের তাওফিক দান করেন, ভালো কাজের পথ দেখিয়ে দেন। এটাই খোদায়ী বরকত, তাওয়াজ্জুহ।

Iftekhar Jamil

20 Oct, 07:40


মাওলানা রফিকুল ইসলাম : ‘জীবন মানে কি নদী নাকি বৃক্ষমালা?’

আমাদের প্রবীণ শিক্ষক মাওলানা রফিকুল ইসলাম সাহেব ইন্তেকাল করলেন। আল্লাহ তাকে ‘গারিকে রহমত’ করুন। দরসে আমরা তার কাছে মিরকাত-হেদায়া-সুনানে নাসাঈ। তবে দরসের বাইরেও আমি তার কাছে ব্যক্তিগতভাবে কালাম-ফালসাফা-মানতিক বিষয়ে ‘ইসতিফাদা’ করেছি, তার কাছে কুতবি-হেদায়াতুল হিকমতের মত কিতাবগুলো পড়েছি। রফিক সাহেব ছিলেন চট্টগ্রাম-ট্র্যাডিশনের অংশ—সেখানেই তিনি পড়াশোনা করেছেন।

বাংলাদেশের মাদরাসাগুলোর একটা বড় দুর্বলতা হল, ছাত্ররাই পরবর্তীতে একই মাদরাসার শিক্ষক হন, কাজেই শিক্ষকরা ট্র্যাডিশনের বাঁধাধরা গল্পটাই বলে যান—যেখানে মাদরাসার বড়হুজুর-তাদের কর্মকাণ্ডই একমাত্র ইতিহাস বলে বিবেচিত হয়। বলে রাখা ভালো, চট্টগ্রামকেন্দ্রিক ট্র্যাডিশনাল ভেরিয়েশনও এর ব্যতিক্রম নয়। তারা মনে করেন, ‘ইলোম’ শুধু চট্টগ্রামেই সম্ভব। সবাই এসব বিষয়কে হেসে উড়িয়ে দিলেও আমার কাছে এসব আলোচনাকে খুবই গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়—ঠিক কী কারণে চট্টগ্রামের মাদরাসাগুলো এমনটা মনে করে ও দাবী করে? এটা ছিল আমার খুবই আগ্রহের বিষয়।

মাওলানা রফিকুল ইসলাম সাহেব আমাকে আংশিকভাবে এই প্রশ্নের উত্তর দিতে চেষ্টা করেছেন, আমাকে কালাম-ফালসাফা-মানতিক বিষয়ে আগ্রহী করে তুলেছেন। আমি এখন কালাম-ফালসাফা-মানতিক বিষয়ে যা কিছু লেখি, তার পেছনে একজন রফিকুল ইসলাম সাহেবের বড় অবদান আছে, সেটা হয়ত কেউ জানবেও না। অবশ্য আমার আগ্রহ এখানেই সীমাবদ্ধ নয়—চট্টগ্রামকেন্দ্রিক ট্র্যাডিশনাল ভেরিয়েশনের ভাষা-সংস্কৃতি-জীবনযাপন নিয়েও আমার অনেক আগ্রহ আছে। আগে একবার চট্টগ্রামের মাদরাসাগুলোতে যাবার সুযোগ হয়েছিল। ভবিষ্যতে আরও বড় সময় নিয়ে মাদরাসাগুলোতে ‘জিয়ারত’ ও ‘ইতিকাফ’ করতে চাই। এসব আগ্রহের পেছনে একজন মানুষের অত্যন্ত বড় অবদান ছিল—তিনি মাওলানা রফিকুল ইসলাম সাহেব।

তাকে হয়ত আলেম হিসেবে বাংলাদেশের খুব বেশী চেনেন না—তার বিশেষ কোন লেখাজোখাও নেই। অবশ্য না চিনলে কী এসে যায়? আমার মত তালিবে ইলমরা পৃথিবীর যেখানেই যাবে, সেখানেই মাওলানা রফিকুল ইসলাম সাহেবরা উপস্থিত থাকবেন—হয়ত স্বনামে নয়, তবে তাদের চিন্তা-রুচি-স্মৃতিগুলো আমাদের সাথেই থাকবে। জীবন এমনই এক নদী—উৎসের পরিচয় বিলীন করে সাগরের দিকে ছুটে চলাই জীবনের ধর্ম। অথবা জীবন মানে কি চক্রাকার ঋতুচক্র? বর্ষার ছোঁয়া পেলে গাছগুলো কি আশ্চর্যভাবেই না জেগে ওঠে—একদিন বর্ষা ফুরায়, জীবনে আসে হেমন্ত, পর্যায়ক্রমে শীত আসে, পাতাগুলো ঝড়ে পড়ে যায়—কি অদ্ভুত নিষ্প্রাণ লাগে গাছগুলোকে !

Know that this worldly life is no more than play, amusement, luxury, mutual boasting, and competition in wealth and children. This is like rain that causes plants to grow, to the delight of the planters. But later the plants dry up and you see them wither, then they are reduced to chaff. And in the Hereafter there will be either severe punishment or forgiveness and pleasure of Allah, whereas the life of this world is no more than the delusion of enjoyment. (57:20)

Iftekhar Jamil

20 Oct, 07:08


আমাদের প্রবীণ শিক্ষক মাওলানা রফিকুল ইসলাম সাহেব ইন্তেকাল করলেন। আল্লাহ তাকে মারহুম ও মাগফুর করুন।

Iftekhar Jamil

20 Oct, 03:44


শেষ সঙ্গী

শাহাদাতের সময় সিনওয়ারের সাথে ছিল : দুইটা দোয়ার বই, চকলেট, তসবীহ, আতরসহ খুবই মামুলি কয়েকটা জিনিস।

Iftekhar Jamil

19 Oct, 23:05


তওবার দরজা খোলা সবার জন্যই

আশির দশকের কথা। আফগান নারীবাদী নেত্রীর স্বামীকে ধরে নিয়ে গেছে বামপন্থীরা। কিছুদিন পর রাজনৈতিক বন্দীদের সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করা হয়। নারীবাদী কারাগার ফটকে গিয়ে জানতে পারেন তার স্বামীকে হত্যা করা হয়েছে। নারীবাদী আকাশের দিকে তাকিয়ে আল্লাহ আল্লাহ বলে চিৎকার দিতে থাকেন—আল জাজিরা সম্প্রতি এই ফুটেজটি প্রচার করেছে।

ফুটেজটি দেখে আমি আবেগপ্রবণ হয়ে গেলাম—আপনি কখনো ইসলাম মানেননি, সারাজীবন করে গেছেন আল্লাহর নাফরমানী—তবু, বিপদের মুহূর্তে, যখন আপনি চূড়ান্ত অসহায়, তখনো আল্লাহ আপনার একমাত্র আশ্রয়। আল্লাহর রহমতের কোন সীমা-শর্ত নই। যে মুহূর্তে আপনার মনে হল, আপনি অনুতপ্ত—আপনি তাওবা করতে পারেন, ফিরে আসতে পারেন আল্লাহর আশ্রয়ে। শতবার তাওবা ভঙ্গ করেছেন, তবুও ফেরার পথ বন্ধ নয়।

'বায আ, বায আ, হারুচে হাস্তি, বায আ / গার কাফিরু কিবরু বুত পুরুস্তি, বায আ / ইয়ে দারগাহে মা দারগাহে না উমিদিয়ে নিস্ত / সদবার গার তাওবা শিকাস্তি বায আ'

(Turn to your Lord, no matter how much you have transgressed, turn to Him/If you have become a kafir, or you have started worshipping idols, just turn to Him/You wouldn’t be helpless or sad here/If you have failed to remain away from sins 100 times, turn to Him and you will find Him with you)

Iftekhar Jamil

19 Oct, 13:06


শরিয়া কেন জরুরি?

বাংলাদেশে এতগুলো ইসলামি ব্যাংকে অর্থতসরুফ হল—এর দায় কি শরিয়া বোর্ডগুলোকে নিতে হবে না? আমি তাদেরকে দায়মুক্তি দিতে রাজি না হলেও এখানে জটিলতাগুলোও বুঝতে হবে। বাংলাদেশে শরিয়া বোর্ডগুলোর আসলে কোন আইনি ভিত্তি নাই। কিছু হুজুর ডেকে মাঝে মাঝে ব্যাংকে খাওয়া দাওয়া হয়, মাঝে মাঝে কিছু মাসআলা-মাসায়েল নিয়েও আলোচনা হয়—তবে এসবের কোনকিছুই ব্যাংকগুলো মানতে বাধ্য না।

যদি ইসলামি ব্যাংকগুলোর কোন ধর্মীয় বাধ্যবাধকতা নাই থাকে, তাহলে শরিয়া বোর্ডগুলোর পক্ষে আসলে বিশেষ কোন ভূমিকা রাখা সম্ভব নয়। যদি দায়-দায়িত্ব ছাড়াই কিছু খুচরা টাকা ও পরিচয় পাওয়া যায়, তাহলে কয়জন হুজুর এই লোভ সামলাতে পারবে, সেটা একটা বড় প্রশ্ন। অবশ্য এখানে হুজুর বলতে মাদরাসার লোকজনের সংখ্যা কম, ‘জেনারেল স্কলারের’ সংখ্যাই বেশী।  

আমরা আসলে শরিয়া চাই কেন? আপনারা যতই ভয় পান, তবু আমরা বারবার শরিয়ার কথা বলি। কারণ আইনি কাঠামো ছাড়া আপনারা কখনোই রাষ্ট্রীয়ভাবে ধর্মীয় বিষয় পরিচালনা করতে পারবেন না। যে যার মত ধর্মীয় টাইটেল ব্যবহার করবে—তবে দায়দায়িত্ব নিতে চাইবে না। ফতোয়া-শিক্ষা-অর্থনীতি-হালাল প্রোডাক্টস—কোনকিছুই শরিয়া রেগুলেশন ছাড়া প্রয়োগ করা সম্ভব নয়। আবার রেগুলেশনের নামে যদি হস্তক্ষেপের দরজা খুলে দেন, সে সুযোগও আছে—তবে সেটা জনতা মানবে না। 

Iftekhar Jamil

19 Oct, 10:50


সিনওয়ারের দৈনিক অজিফা

‘ইয়াহইয়া সিনওয়ার প্রতিদিন নির্দিষ্ট জিকির করতেন। প্রতিদিনের অজিফা পূর্ণ করতেন। যত গুরুত্বপূর্ণ কাজই থাকুক, তিনি কখনো অজিফা ছাড়েননি।’

ইবরাহিম দুআইরির ভাষ্যে ইয়াহইয়া সিনওয়ারের জীবনী

Iftekhar Jamil

19 Oct, 07:17


সালাহুদ্দিনের প্রজন্ম বিষয়ক লেখাটা আবার দেখতে পারেন

মুসলমানরা যেভাবে আকসা পুনরুদ্ধার করেছিল

Iftekhar Jamil

19 Oct, 07:15


সিলেবাস-সংস্কৃতি-প্রশিক্ষণ

তালিবান-হামাসের সিলেবাসের মধ্যে বিশেষ মিল আছে। উভয় দলই মসজিদ ও কুরআনকে সকল কার্যক্রমের কেন্দ্র হিসেবে গ্রহণ করে। মসজিদ ভিত্তিক হালাকাগুলোর ভূমিকাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শিক্ষাক্রমকেও সেভাবে ঢেলে সাজানো হয়েছে। আবার দুই দলের সাথেই সালাহুদ্দিনের প্রজন্মের বিশেষ মিল আছে। এসব বিষয়ে বিশদে আলোচনা করা জরুরী।

আমি একা মানুষ, কিছুটা অলসও কিনা জানি না—এত এত কাজ করা বাকি। কিছু মানুষকে সাথে পেলে এসব কাজ করিয়ে নেওয়া যেত। আমাদেরকে ইসলাম পালন করতে হবে নিজেদের মত করেই, তবে তালিব-হা মাসের অভিজ্ঞতা থেকে শেখার আছে অনেককিছুই।

Iftekhar Jamil

19 Oct, 04:11


জালেম-মজলুম তত্ত্ব

সবকিছুকে ‘জালেম- মজলুম’ তত্ত্ব দিয়ে বুঝলে শিরিকি যে সবচেয়ে বড় জুলুম, সেটা আপনি কখনোই বুঝবেন না। আবু তালেব নবীজির সবচেয়ে বড় সাহায্যকারী ছিলেন, তবু নবিজি তাকে ‘শিরিকি’ ইস্যুতে কোন ছাড় দেননি। দেখুন, আমেরিকায় কালোরা নাগরিক অধিকার আন্দোলনের শুরু করেছিল, সত্তর বছর পরেও এখনো কালোরা দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক। অথচ এখন সেই একই নাগরিক অধিকার তত্ত্ব ও আন্দোলন এল / জি বি/ টির পক্ষে ব্যবহার হচ্ছে। সমস্যাটা কোথায়, একটু মাথা খাটান তো?

খেয়াল করেন, ‘নাগরিক অধিকার’, ‘জালেম-মজলুম’ সবই আছে : শিরিকি উধাও। শুধু তাই না, এখন জালেমের বিপক্ষে সাহায্য করার লোভ দেখিয়ে আপনাকে তাদের অনুষ্ঠানে যাবারও দাওয়াত দিতেছে। আপনাকে শিরিকি-গুনাহের পক্ষে দাঁড়াইতে হইতেছে। দুইদিন পরে আপনার মেয়েকে হিজাব পড়তে বললে সে এসে হুমকি দিতেছে, আপনি নিজেই তো বড় জালেম। কোথা থেকে কোথায় চইলা আসলেন, খেয়াল আছে?

জুলুমের বিরোধিতা করতে গিয়ে শিরিকির পক্ষে দাঁড়ানো যাবে না ব্রাদারগণ ; এটা খুবই সিম্পল কথা। একইভাবে, শিরিকির বিরোধিতা করতে গিয়ে যদি জুলুমের পক্ষে দাঁড়াতে হয়, তবে সেটাও অন্যায় কাজ। দুইপক্ষই আপনাকে বারবার লোভ ও ভয় দেখাবে, আপনি শিরিকি বনাম জুলুমের সংশয়ে পড়ে গেলে সব হারাইছেন। আপনি নিজের সিদ্ধান্ত নিজে নিবেন, ইসলামের উসুলের আলোকে নিবেন।

Iftekhar Jamil

18 Oct, 15:12


ইমাম গাজালী ছিলেন একজন বিপ্লবী আলেম

মুসলিম সভ্যতার পতনে ইমাম গাজালির বিশেষ ভূমিকা ছিল, এমন বয়ান পশ্চিমা পরিসরে ব্যাপকভাবে জনপ্রিয়। তাদের যুক্তি গাজালি বিজ্ঞানের 'বিরোধিতা' করেছেন। মুশকিল হচ্ছে, অনেকে মূল ব্যাপারটা বুঝে ওঠতে পারেন না। আগে অধিবিদ্যা ও বিজ্ঞান দর্শনের ভেতরে অন্তর্ভুক্ত ছিল, গাজালি দর্শনের অধিবিদ্যা শাখার বিরোধিতা করলেও বিজ্ঞান শাখার বিরোধিতা করেননি।

ইমাম গাজালি বরং বলেছেন, অধিবিদ্যার প্রভাব না থাকলে শুধু শুধু বিজ্ঞানের বিরোধিতা করার কোন অর্থ নেই। যারা শুধু শুধু বিজ্ঞানের বিরোধিতা করে, তাদেরকে ইসলামের নাদান বন্ধু আখ্যা দিয়েছেন। গাজালি বরং অধিবিদ্যা থেকে বিজ্ঞানকে পৃথক করার ক্ষেত্রে ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করেন। 'আমরা চারপাশে যা দেখি, সেগুলো নিছক জড়তাগ্রস্থ বুদ্ধি দিয়ে যাচাই করলেই হবে না, দেখতে হবে অভিজ্ঞতা-পরীক্ষার দৃষ্টিকোণ থেকে।'

গাজালি ছিলেন একজন বিপ্লবী আলেম। প্রচলিত কোনকিছুকেই তিনি মেনে নেননি। নিজের অভিজ্ঞতা নিয়ে তিনি একটা স্বতন্ত্র বই লেখেছেন। আল মুনকিজ মিনাদ দালাল নামে। শেষপর্যন্ত একসময় তৎকালীন বাগদাদের প্রধান শিক্ষালয়ের অধ্যাপনা ছেড়ে দেশ-বিদেশ ঘুরতে বেরিয়ে পড়েন। সত্য, জ্ঞান ও ন্যায়ের অনুসন্ধানে তিনি ত্যাগ করেন সম্মান, পদ, বিলাসিতা, নিশ্চয়তা ও রাজনৈতিক ক্ষমতা।

বর্তমান কালেও এর তুলনা পাওয়া খুবই দুষ্কর। এমন একজন বিপ্লবী মানুষকে আপনি যখন 'প্রতিক্রিয়াশীল' ও 'জড়বাদী' হিসেবে চিত্রায়িত করেন, তখন সেটা অনেক বেদনাদায়ক বিষয় হয়ে উঠে।

Iftekhar Jamil

18 Oct, 13:41


ইয়াহইয়া সিনওয়ারের শাহাদাতের সংবাদ প্রকাশ করলো হামাস। খবর আল জাজিরার।

Iftekhar Jamil

18 Oct, 13:33


শেখ মুজিবের পতন

বাংলাদেশের মূলধারায় শেখ মুজিবকে ঘিরে সর্বদাই একটা সংকোচ কাজ করত। অনেকেই সমালোচনা করতে চাইতেন, তবে সাহস করে ওঠতে পারতেন না—যারা সাহস করতেন, তাদের আবার সমালোচনার সক্ষমতা ছিলো না। আমার মনে হয়, এক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন ফাহাম আবদুস সালাম—শেখ মুজিবকেও সমালোচনা করা যায়, এটা শিক্ষিত বাঙালিরা কখনো কল্পনা করতে পারেনি। ফাহাম নিজেও কি এই কল্পনা করতে পারতেন?

মনে রাখা ভালো, ফাহাম বিডিনিউজের মত চেতনাপন্থী ব্লগে লেখালেখি করতেন—যদিও এটা এখন হজম করা বেশ কঠিন। কাজেই, ফাহামদের শ্রেণীর মধ্যেও একটা চিন্তাগত পালাবদল ঘটেছে, গত পাঁচ-সাত বছরে: বিএনপিপন্থী বুদ্ধিজীবীরা ধরতে শিখেছেন, আওয়ামী রাজনীতির যে ধর্মতাত্ত্বিক প্রকাশ ঘটেছে, তাকে অতিক্রম করতে না পারলে বাংলাদেশে গণতন্ত্র অসম্ভব।

ফাহামের চিন্তা-রাজনীতির সাথে আমার দ্বিমত অনেক, তবে একা একটা লোক যেভাবে মুজিবের মত একটা বড় ফিগারকে মাটিতে নামিয়ে আনলো, সেটা খুবই বিষ্ময়কর।