একবার মক্কায় একজন ভাইয়ের সাথে সাক্ষাৎ হলো যিনি বেশ শখ করে বাচ্চার নাম রেখেছেন ‘আবরাহা’।
নামটা শুনে আমার তো আসমান থেকে পড়বার জোগাড়। আমি চোখমুখ কপালে তুলে জিগ্যেস করলাম, ‘ভাইজান, ছেলের নাম কী বললেন?’
তিনি তখনও খুব স্বাভাবিক ভঙ্গিতে পুনরায় বললেন, ‘আবরাহা’।
‘আবরাহা’ নামটা শুনতে একটু স্মার্ট স্মার্ট শোনায়৷ অনেকটা ইংরেজির ‘আলেকজান্ডার’ টাইপ নাম। সম্ভবত নামের মধ্যে থাকা স্মার্টনেসের কারণেই তিনি নামটাকে নিজের বাচ্চার জন্য পছন্দ করে ফেলেছিলেন।
আসল কথা হলো, আবরাহা নামের নেপথ্য ঘটনা তিনি জানতেন না। সারাটা জীবন সূরা ফীল পড়েছেন বটে, কিন্তু সেই সূরার প্রেক্ষাপট কোনোদিন জানার সুযোগ তার হয়ে উঠেনি।
আমি সময় নিয়ে তাকে সমস্ত ঘটনা খুলে বললাম। এই নাম যে কতো বিধ্বংসী এক অত্যাচারীর নাম যাকে ধ্বংসের কথা সরাসরি কুরআনেও এসেছে—সেসব বুঝিয়ে বলার পর তিনি বুঝতে পারলেন।
বাচ্চার নাম নির্বাচনে আমরা অনেকেই এই ভুলটা করে থাকি। নামের অর্থের দিকে না তাকিয়ে আমরা স্মার্টনেস, খানিকটা আধুনিক ভাব আর বৈশিষ্ট্যের কথা ভাবতে গিয়ে মাঝেমধ্যে এমন নাম বাছাই করে ফেলি যে—নামটার ভালো কোনো অর্থ আর অটুট থাকে না৷
বাচ্চার সুন্দর, অর্থপূর্ণ নাম রাখতে ইসলাম বেশ গুরুত্ব দেয়৷ কিয়ামতের দিন প্রত্যেককে তাদের নিজ নিজ নাম ধরেই ডাকা হবে। সুতরাং, একটা সুন্দর আর অর্থপূর্ণ নাম পাওয়াটা বাবা-মা’র ওপরে বাচ্চার একেবারে প্রথম অধিকার।
আমাদের দেশের বাবা মায়েরা বাচ্চাদের এমন নামও রাখেন যেসব নাম অনেকসময় শিরক আর কুফরের দিকেও নির্দেশ করে ফেলে৷ অনেকে তো আল্লাহর জন্য নির্দিষ্ট করা নামগুলোই বাচ্চার নাম হিশেবে রেখে দেন। একটু খেয়াল করলে দেখবেন, আমাদের চারপাশে ‘রাব্বী’ নামের অনেক মানুষ আছে। অথচ, রাব্বী বলে আমরা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলাকেই ডাকি।
নামের প্রভাব ব্যক্তিজীবনে ভালোভাবেই পড়ে বলে হাদিস থেকে জানা যায়। একবার আল্লাহর রাসুল সাল্লাললাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একজন লোকের কাছে নাম জিগ্যেস করলে, তিনি যে নাম বললেন তার অর্থ হলো—রাগান্বিত৷ নবিজি তার নাম বদলে এমন একটা নাম বললেন যার অর্থ দাঁড়ায় প্রশান্তি। কিন্তু সে সেটা মানলো না। আগের নামে বহাল থাকলো। জানা যায়, জীবনের শেষদিন পর্যন্ত সে ওইরকম রাগের মেজাজে ছিল।
আমাদের দেশের বাবা মায়েদের আরেকটা বাতিক হলো, বাচ্চার নাম রাখার জন্য তারা এমন নাম রাখতে চান যা তাদের বংশে আর কেউ ব্যবহার করেনি ইতোপূর্বে।
যেমন, যদি আপনি বলেন—‘বাচ্চার নাম ইবরাহিম রাখতে পারেন।’
তারা বলবে, ‘এটা তো আমার বড় জেঠার মেয়ে তার ছেলের জন্য রেখে দিয়েছে’
অথবা, যদি বলেন—‘বাচ্চার নাম খালিদ রাখতে পারেন বা ইসমাইল অথবা ইয়াহইয়া। মেয়ের নাম আয়িশা বা মারইয়াম রাখতে পারেন।’
তাদের জবাব হবে, ‘খালিদ তো আমার খালাতো ভাইয়ের ছেলের নাম। ইসমাইল আমার ছোট বোনের ছেলের নাম৷ ইয়াহইয়া নামের এক ছেলে আমাদের পাশের বাড়িতেই আছে। আয়িশা তো আমাদের প্রতিবেশির মেয়ের নাম৷ মারইয়াম নামের দুইজন তো আমাদের বংশেই আছে’।
মোদ্দাকথা, তাদের এমন নাম চাই যে নাম গোটা বংশ বা আশেপাশের দশগ্রামে আর কেউ তাদের বাচ্চাদের জন্য রাখেনি।
কিন্তু, আল্লাহর রাসুলের সময়ে ব্যাপারটা এরকম ছিল না। এমনকি, আরবে এখনো এধরণের চর্চা নেই৷ সেখানে ঘরে ঘরে আপনি আবদুল্লাহ, মুহাম্মাদ, আলি, খালিদ, মুসা, মুয়াজ, আয়িশা, মারইয়াম, ফাতিমা, আছিয়া, খাদিজা—এই নামগুলো দেখতে পাবেন।
বাচ্চার সুন্দর নামকরণ করুন৷ সেটা তার হক আপনাদের ওপরে। আর, সেই নামটা ধরেই তাদেরকে কিয়ামতে ডাকা হবে৷ তাই, আধুনিকতার চেয়ে অর্থপূর্ণ নাম যেন হয়—সেদিকেই আমাদের নজর দেওয়া উচিত।
- আরিফ আজাদ