হানাফী ফিকহ (Hanafi Fiqh) @hanafifiqhbd Channel on Telegram

হানাফী ফিকহ (Hanafi Fiqh)

@hanafifiqhbd


হানাফী ফিকহ ফেসবুক গ্রুপের টেলিগ্রাম ভার্সনে আপনাকে স্বাগতম। দৈনন্দিন জীবনের প্রয়োজনীয় মাসআলার নির্ভরযোগ্য প্ল্যাটফর্ম।

হানাফী ফিকহ (Hanafi Fiqh) (Bengali)

হানাফী ফিকহ টেলিগ্রাম চ্যানেলে আপনাকে স্বাগতম! এটি হানাফী ফিকাহের বিষয়ে আলোচনা করার জন্য একটি জনপ্রিয় প্ল্যাটফর্ম। এই চ্যানেলে আপনি হানাফী ফিকাহের মূল ধারণা, সূত্র, আদর্শ, এবং আরবী ভাষায় মাসআলা সম্পর্কিত গভীর জ্ঞান অর্জন করতে পারবেন। এই চ্যানেলটি উপকারী হতে পারে কারণ এটি দৈনন্দিক জীবনে একটি প্রয়োজনীয় মাধ্যম যা আপনাকে আলোচনা করার জন্য সঠিক সেটিং সরানোর সুযোগ দেয়।

হানাফী ফিকহ (Hanafi Fiqh)

18 Dec, 04:00


সালাফী ৩প্রকার :

এক. সালাফী হাম্বালী। ইমাম আহমাদ বিন হাম্বাল রহ. এর অনুসারী সাল‌াফী। এরা মধ‌্যপন্থার সালাফী। এদের‌কে আসারীও বলা হয়। আশআরী ও মাতু‌রিদী‌দের এরা পথভ্রষ্ট ব‌লে না, যেভা‌বে আশআরী-মাতু‌রিদীরাও এদের‌কে পথভ্রষ্ট ব‌লে না। এরা নিঃসন্দে‌হে আহলুস সুন্নাহ’র অন্তর্ভূক্ত।
দুই. সালাফী খা‌রে‌জি। এরা সালা‌ফিয়া‌তের দা‌বি ক‌রে ঠিক, আকিদা ও মানহা‌জে সালা‌ফের ধা‌রে কা‌ছেও নেই। তাকফীর ও কতল-কিতা‌লের ক্ষে‌ত্রে এরা চরম উগ্রবাদী। আবুবকর বাগদাদী ও দায়েস এর গোত্রভুক্ত। এরা আহলুস সুন্নাহর অন্তর্ভূক্ত নয়।
তিন. সালাফী মাদখালী। ‌শাইখ রাবী আলমাদখালীর অন‌ুসারী এবং সৌদী রাজত‌ন্ত্রের ঘোর সমর্থক এরা। এরা আকিদায় সালা‌ফিয়া‌তের দাবী কর‌লেও শাস‌কের সম্মু‌খে সত‌্যবচ‌নে সালা‌ফের অনুসর‌ণের ধার ধা‌রে না। ‌বরং এরা ম‌নে ক‌রে সর্বাবস্থায় শাস‌কের আনুগত‌্য করা ফরজ। পান থে‌কে চুন খস‌লেও এরা প্রতিপক্ষ আশআরী মাত‌ুরি‌দি‌দের তাকফীর তাদলীল কর‌লেও শাস‌কের ম‌ধ্যে ‘কুফ‌রে বাওয়াহ’ তথা সুস্পষ্ট কুফর দেখ‌লে টু শব্দ ক‌রে না। বাংলা‌দে‌শের বে‌শিরভাগ আহ‌লে হাদীস মতবা‌দের অনুসারী শাইখেরা এর গোত্রভুক্ত।

এই তিনপ্রকা‌রের বাইরে আরেকপ্রকার সালাফী দেখ‌তে পাওয়া যায়। বাহ‌্যত এরা আসারী সালাফী, কিংবা আশআরী মাতু‌রি‌দি; কিন্তু ভেত‌রে ভেত‌রে এরা খা‌রেজী। অর্থাৎ এরা চুপা খা‌রেজী। মনমান‌সিকতা ও আচার-আচরণে কট্টর দা‌য়েশীদের মত। এরা খা‌রি‌জিয়া‌তের বিপদ‌রেখার কা‌ছে অবস্থান ক‌রে। কখ‌নো রেখার ভেত‌রে ঢু‌কে প‌ড়ে, আবার কখ‌নো বাইরে আসে। এদের আচরণ রহস‌্যজনক, যা স্ব‌গোত্রীয়‌দের বিভ্রা‌ন্তির কারণ হয়।

মাওলানা সাইফুদ্দীন গাযী হাফিঃ
১১।১২।২৪

হানাফী ফিকহ (Hanafi Fiqh)

07 Dec, 01:43


প্রধান উপদেষ্টার সামনে যা বললেন...
শায়খ আব্দুল মালেক হাফিঃ

সর্বপ্রথম আল্লাহ রব্বুল আলামিনের শোকর আদায় করছি। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় নিয়ে ফিকির করবার তৌফিক দিয়েছেন। এরপর মাননীয় প্রধান উপদেষ্টাসহ বাকি সকলের শোকর আদায় করছি।

আমি সংক্ষেপে যে-কথাটা বলতে চাই।

আচ্ছা, আমার নাম আব্দুল মালেক, বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের খতিব এবং দেশের একটি প্রতিষ্ঠান মারকাযুদ দাওয়াহ আল ইসলামিয়া, ঢাকা; এই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষা বিভাগীয় প্রধান।

যে-কথাটি আমি বলতে চাচ্ছি, সেটা হলো, সম্প্রীতি যদি আমরা চাই, আছে আল-হামদু লিল্লাহ, এটাকে যদি বাকি রাখতে চাই, তাহলে সম্প্রীতি যারা নষ্ট করে, তাদের বিষয়ে আমাদেরকে নমনীয়তার অনমনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

এখন যে সংখ্যালঘুর কথা আমরা বারবার বলছি না, ইসলামের শিক্ষা কী সে-বিষয়ে? ইসলাম বলে, যা আবু বকর রা., প্রথম খলিফা নবি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের, তিনি বলেছিলেন, তোমাদের মাঝে সে সবচে’ বেশি শক্তিশালী সে-আমার কাছে দুর্বল, যদি সে জালেম হয়। আর যে সবচে’ দুর্বল সে আমার কাছে শক্তিশালী, যদি সে মজলুম হয়।

এটাই হলো শিক্ষা। জালেম এবং মজলুম, এদের মধ্যে মজলুম যে-ই হোক, তার পক্ষে আমাদের থাকতে হবে। আর জালেম, সে যত বড় হোক, যত সংখ্যাগরিষ্ঠ আরও যা যা তার থাকুক, তাকে তার জুলুম থেকে বিরত থাকা, এটাই দায়িত্ব।

তথ্যসন্ত্রাস, এটাকে যদি নিয়ন্ত্রণ করা না হয়, তাহলে সম্প্রীতি ঠিক রাখব কী ভাবে? সম্প্রীতি যতটুকু আছে, তা-ও এখানে তথ্যসন্ত্রাস করে পেরেশানী করা হয়। এটার ব্যাপারে, তথ্যসন্ত্রাসের বিষয়ে অনমনীয় হতে হবে।

আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বলতে চাচ্ছিলাম, তাহ হলো, আমাদের ধর্মীয় সম্প্রীতির কথা। ধর্মকে গুলিয়ে ফেলা, এটা কিন্তু ধর্মীয় সম্প্রীতি না। ধর্মের অপব্যাখ্যা, একটা ধর্মের একটা বিষয় নাই, সেটাকে সেই ধর্মের উপরে চাপিয়ে দেওয়া হলো, অন্যদের খুশি করার জন্য নিজের ধর্মের মধ্যে বাড়ানো-কমানো হলো, এটার নাম কখনও ধর্মীয় সম্প্রীতি হতে পারে না।

প্রত্যেকটি বিষয়কে স্ব স্ব জায়গায় রাখতে হবে, স্ব স্ব জায়গায় রাখলেই তার ফায়দা আমরা পাব।

আল্লাহ আমাদের তৌফিক দান করুন। ওয়া আখিরু দাওয়ানা আনিল হামদু লিল্লাহি রব্বিল আলামীন।

(গতকাল, ৫ ডিসেম্বর, প্রধান উপদেষ্টার সাথে ধর্মীয় নেতাদের বৈঠকে মাওলানা আবদুল মালেক সাহেবের ২ মিনিট ২৯ সেকেন্ডের বক্তব্য)

অনুলিখন- মাওলানা Manzurul Haque

হানাফী ফিকহ (Hanafi Fiqh)

20 Nov, 12:33


মোবাইলে বা টেলিফোনে নির্দিষ্ট পদ্দতী ছাড়া শুধু মাত্র একপাশ থেকে প্রস্তাব আর অন্য পাশ থেকে ছেলে কবুল বলার দ্বারা বিবাহ হয় না৷ ৷

বিবাহ সহীহ হওয়ার জন্য শর্ত হল দু’জন আযাদ প্রাপ্ত বয়স্ক বিবেকবান দুই জন মুসলিম স্বাক্ষের সামনে পাত্র/পাত্রি প্রস্তাব দিবে আর অপরপক্ষে পাত্র/পাত্রি তা কবুল করবে। আর সাক্ষিগণ উভয়ের কথা সুষ্পষ্টভাবে শুনবে। আর শরয়ী এ শর্তাবলী পরিপূর্ণভাবে টেলিফোনে পাওয়া সম্ভব নয়। তাই টেলিফোন বা মোবাইলে বিবাহ করা জায়েজ নয়। {ফাতওয়ায় উসমানী-২/৩০৪,৩০৫}

টেলিফোন বা মোবাইলে বিবাহ করার পদ্ধতি হল-উভয় পক্ষ থেকে এক পক্ষ অপরপক্ষ যেখানে থাকে সেখানের কোন ব্যক্তিকে ওকীল বানাবে। তারপর সে অকীল দু’জন সাক্ষীর সামনে বিবাহ করিয়ে দিবে। তাহলে বিবাহ শুদ্ধ হয়ে যাবে। এছাড়া সরাসরি মোবাইলে বা টেলিফোনে প্রস্তাব ও কবুল করার দ্বারা বিবাহ সহীহ হবে না।

فى الدر المختار- ( و ) شرط ( حضور ) شاهدين ( حرين ) أو حر وحرتين ( مكلفين سامعين قولهما معا ) (الدر المختار ، كتاب النكاح،-3/9)

অনুবাদ-বিবাহ সহীহ হওয়ার শর্ত হল শরীয়তের মুকাল্লাফ [যাদের উপর শরীয়তের বিধান আরোপিত হয়] এমন দুইজন আযাদ পুরুষ সাক্ষি বা একজন আযাদ পুরুষ ও দুইজন মহিলা সাক্ষি হতে হবে, যারা প্রস্তাবনা ও কবুল বলার উভয় বক্তব্য স্বকর্ণে উপস্থিত থেকে শুনতে পায়। {আদ দুররুল মুখতার-৩/৯, ফাতওয়ায়ে হিন্দিয়া-১/২৬৮}

হানাফী ফিকহ (Hanafi Fiqh)

16 Nov, 06:21


সুতরাং শরীয়তের বিধান ঠিক থাকে—এমন শিক্ষাব্যবস্থা, এমন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আমাদেরকে দিন, আমরা আমাদের ভাই-বোনদের, আমাদের সন্তানদেরকে সেখানে নিজ হাতে ভর্তি করাব। তাদেরকেও প্রয়োজনে ডাক্তারীসহ অন্যান্য শিক্ষায় শিক্ষিত করব।
🖋️ মাওলানা তানযীল আরেফিন আদনান

হানাফী ফিকহ (Hanafi Fiqh)

16 Nov, 06:21


নারীশিক্ষা নিয়ে শরীয়তের অবস্থান:

জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত সবক্ষেত্রে, সব কাজে মানুষ শুধু একটি উসুলকেই সামনে রাখবে, একটি বস্তুকেই অনুসরণ করবে, সেটা হলো, শরীয়ত। আরও সহজ ভাষায় বললে, কুরআন-সুন্নাহের বিধান।

মানুষ শরীয়তের বিধানের মুকাল্লাফ হওয়ার পর থেকে কোনো কাজই শরীয়তের বাইরে করতে পারবে না। শরীয়তের বাইরে কিছু চিন্তা করারও অনুমতি তার নেই। এমনকি হাসি-ঠাট্টারও শরয়ী সীমা রয়েছে।

এই মূলনীতির আলোকে নারী শিক্ষা নিয়ে আমাদের বক্তব্য হলো, শরীয়তের বিধান ঠিক রেখে কেউ যদি জেনারেল লাইনে সর্বোচ্চ ডিগ্রিও অর্জন করে, তাতে কোনো আপত্তি নেই। এখন দেখতে হবে, এসব ক্ষেত্রে শরীয়তের বিধান কী কী? মৌলিকভাবে কয়েকটি বিষয়ই সামনে আসে: পর্দার বিধান ঠিক রাখা, শরীয়তের বিপরীত কোনো কিছু না শেখা। সুতরাং কোথাও যদি এমন কোনো প্রতিষ্ঠান থাকে, যেখানে পর্দার বিধান ঠিক থাকে, শরীয়তের খেলাফ কিছুই করা হয় না, তাহলে সেসব প্রতিষ্টানে নারীদের উচ্চশিক্ষাকে শরীয়ত সমর্থন করে। তবে, প্রথমত মাথায় রাখতে হবে, ফরজ পরিমাণ শিক্ষাটা তিনি পাচ্ছেন কি না?

ফরজ পরিমাণ শিক্ষা কী?

মানুষ যখন যে কাজ করবে, সেই কাজে শরীয়তের বিধান কী, সেটা জানা তার জন্য ফরজ। পাশাপাশি নারীদের জন্য সংসার-পরিচালনা বিষয়ক কিতাবী-বাস্তবিক জ্ঞান অর্জন করাও ফরজ। এখন দেখার বিষয় হলো, আমাদের নারীরা কি ফরজ পরিমাণ ইলম শিখেছেন? আমাদের যেসব বোন উচ্চশিক্ষা অর্জন করছেন, তারা কি নামাজ বিশুদ্ধ হওয়ার জন্য আবশ্যকীয় পরিমাণ ইলম শিখেছেন? আবশ্যকীয় পরিমাণ মাসআলা তারা শিখেছেন? এগুলো তো তাদের জন্য ফরজ ছিল। এখন যেসব ভাই তাবিয়ী ও তাবে-তাবিয়ীদের যুগে নারীদের উচ্চশিক্ষার হাওয়ালা দিচ্ছেন, তখনো তো কুরআন-হাদীসই ছিল মূল শিক্ষা। এখন কি কুরআন-হাদীসকে মূল শিক্ষা হিসেবে দেখা হচ্ছে? উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত কত পার্সেন্ট নারী ফরজ পরিমাণ ইলম অর্জন করেছেন? এই হিসাবটা আমাদের সামনে রাখা দরকার।

উচ্চশিক্ষা কি ফরজ আইন?

না, জেনারেল লাইনে উচ্চশিক্ষা অর্জন করা ফরজে আইন নয়, বরং ক্ষেত্রবিশেষ ডাক্তার হওয়া, শিক্ষিকা হওয়া ইত্যাদি কিছু পেশা নারীদের জন্যও ফরজে কেফায়া। কারণ আমাদের মা-বোনদের চিকিৎসা, শিক্ষা ইত্যাদি কিছু কাজের জন্য সেসব সেক্টরে নারীদের প্রয়োজন অবশ্যই রয়েছে। তবে এখনকার সময়ে ফরজে কেফায়া পরিমাণ পূর্ণ হয়ে গিয়েছে কি না এটাও আমাদের হিসাব করতে হবে। প্রত্যেক পরিবার থেকে একজন করে ডাক্তার হওয়া ফরজে কেফায়া নয়; বরং একটি এলাকার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ নারী চিকিৎসক থাকা আবশ্যক। প্রত্যেক পরিবার থেকে একজন শিক্ষিকা হওয়া আবশ্যক না; বরং একটি এলাকার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ থাকাই আবশ্যক।

এ ছাড়া নারীদের জন্য অন্যান্য পেশা যেমন পাইলট হওয়া, ম্যানেজার হওয়া, ব্যাংকার হওয়া ইত্যাদি যেসব পেশা নারীদের সাথে সংশ্লিষ্ট নয়, সেসব শিক্ষা অর্জন করা, সেসব পেশা গ্রহণ করা আবশ্যক তো দূরের কথা, মুস্তাহাবও নয়।

আমাদের মূল বক্তব্য:

শুরুর কথাটি শেষেও উল্লেখ করছি, আমাদের কাছে শরীয়তই অগ্রগণ্য। শরীয়তের সাথে আমরা অন্য কিছুকে তুলনা করতে চাই না, শরীয়তকে বাদ দিয়ে পুরো দুনিয়াও আমরা পায়ে মাড়াতে চাই না।

আর এ যুগের স্কুল, কলেজ-ভার্সিটির ভেতরগত দৈনদশা দেখে নারীদের তো পরের কথা, আমাদের ভাইদের সেখানে পড়া নিয়েও আমরা শঙ্কিত। তাদের দ্বীন-ঈমান নিয়ে আমরা আতঙ্কিত। সেখানে বোনদের নিয়ে শঙ্কা তো আরও বহুগুণে বেশি।

আমাদের ভাই-বোনেরা দ্বীন-ঈমানকে বিকিয়ে দিয়ে উচ্চশিক্ষা অর্জন করার চেয়ে ফরজ পরিমাণ ইলম শিখে দ্বীন-ঈমান ঠিক রাখাই আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। এতে যদি স্কুল-কলেজের বারান্দাতেও না যেতে হয়, তাতেও আমরা রাজি আছি।

আমরা চাই না আমাদের বোনেরা দুনিয়া কামানোর জন্য উচ্চশিক্ষা অর্জন করুক। আমরা তাদেরকে দুনিয়ার এই কঠিন ময়দানে নামাতে চাই না। তারা আমাদের কাছে প্রস্ফুটিত ফুলের মতো। তারা আমাদের ঘরে রানীর মতো থাকুক, পুরুষের সাথে গা মিলিয়ে, নিজের সতীত্ব, পর্দা, স্বকীয়তা সব কিছু বিলীন করে তারাও আয়-রােজগার করুক, এটা আমরা কখনোই চাই না। এই দায়িত্ব পুরুষদের। আমরা এটা সিদ্ধান্ত নিইনি যে, স্বামীর অবর্তমানে সে কী করে খাবে! তাই তাকে সার্টিফিকেট অর্জন করতে হবে। বরং প্রয়োজনের মুহূর্তে সে যেন প্রয়োজন পরিমাণ আয় করতে পারে, এর জন্য প্রয়োজনীয় হস্তশিল্প, কুটিরশিল্প, বা যেই কাজ তার স্বকীয়তা, তার পর্দাকে ঠিক রাখে, এমন কাজ শেখার ব্যাপারে তাকে উদ্বুদ্ধ করি। যেন স্বামীর বর্তমানেও সে প্রয়োজনে স্বামীকে আয়-রোজগারে সাহায্য করতে পারে।

শেষ কথা:

আমরা শরীয়তের বিপরীত কোনো কথা তো দূরের কথা, কোনো শব্দও শুনতে ও মানতে রাজি নই। কলেজ-ভার্সিটি কেন, শরীয়তের খেলাফ কাজ যদি কোনো দ্বীনী প্রতিষ্ঠানেও হয়, তাহলে সেখানেও আমাদের ভাই-বোনদের পড়া জায়েয নয়।

হানাফী ফিকহ (Hanafi Fiqh)

04 Nov, 16:13


প্রশ্নোত্তর পর্ব-১

শনিবার (৮-১২-২০১৮) তাবলীগের কিছু সাথী তাদের হালকার এতাআতী ভাইদের কিছু প্রশ্ন নিয়ে এসেছিলেন। কিছু প্রশ্ন তাদের নিজেদেরও ছিল। প্রশ্নের ব্যাপারটা তো এমন যে, যার কাছে যে বিষয়টি বেশি মুশকিল বা বেশি গুরুত্বপূর্ণ, সে সেই প্রশ্নই পেশ করে। তাদের মত আরো অনেকেরও এধরনের প্রশ্ন থাকতে পারে।

প্রশ্ন : মাওলানা সা‘দ সাহেব কি কাফের বা গোমরাহ? এই বিষয়ে দেওবন্দ কী বলে? দেওবন্দ থেকে সারাসরি বলেনি যে, নিযামুদ্দিন বা সা‘দ সাহেবের এতাআত নিষিদ্ধ। তাহলে বাংলাদেশের উলামায়ে কেরাম এত কঠোর হচ্ছেন কেন? মাওলানা সা‘দ সাহেবের এতাআত বৈধ নয় কেন?

উত্তর : মাওলানা সা‘দ সাহেব কাফের কি না এই প্রশ্ন কেন আসল? নাউযুবিল্লাহ, কেউ কাফের বলেছে? না উনাদের সন্দেহ হচ্ছে এ বিষয়ে? (নাউযুবিল্লাহ)। একজন সাধারণ মুসলমানের ব্যাপারেও তো এ প্রশ্ন মানুষ উঠাতে পারে না যে, উনি কি কাফের? সা‘দ সাহেবের ব্যাপারে এ প্রশ্ন কেন?

(*হুযুর এই বিষয়টা আসছে এজন্য যে, ঐ যে এতাআত করা নিষেধ, কেন নিষেধ, উনি কি কাফের যে, এতাআত নিষিদ্ধ?)

তাহলে তো প্রথমে এই প্রশ্ন করবেন যে, শরীয়তে কার এতাআত বৈধ? কোনো ব্যক্তি কাফের না হলেই কি তার এতাআত বৈধ হবে? এরকম কোনো মাসআলা কি আছে যে, কাফের না হলেই তার এতাআত বৈধ? একজন লোক মুসলিম কিন্তু বেদআতী, তার এতাআত বৈধ নয়। মুসলিম, কিন্তু গোমরাহ, তার এতাআত বৈধ নয়। মুসলিম, তাকে সরাসরি গোমরাহ বলা হয়নি, কিন্তু তার অনেক কথায় গোমরাহী, এই লোকেরও এতাআত করা জায়েয নয়। তো এটা তো কোনো কথা না যে, তিনি কি কাফের? এই প্রশ্ন উঠবে কেন ভাই?

প্রশ্ন : তাহলে কি মাওলানা সা‘দ সাহেবের এতাআত এজন্য অবৈধ যে, তিনি গোমরাহ? আমাদের দেশের আলেমরা কেউ তো উনাকে সরাসরি গোমরাহ বলেন, আবার কেউ স্পষ্টভাবে এটা বলেন না; বরং শুধু এতটুকু বলেন যে, উনার বক্তব্যের মধ্যে অনেক গোমরাহীর কথা আছে এবং আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের ইজমা পরিপন্থী কথা আছে। বিষয়টা তাহলে কী?

উত্তর : ফলাফলের বিচারে এই দুই বক্তব্যে কোনো পার্থক্য নেই। কারণ যার বক্তব্যে অনেক গোমরাহী থাকে এবং আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের ইজমা পরিপন্থী বিষয় থাকে সে তো গোমরাহ (বিপথগামী) বটেই। এমন ব্যক্তিকে সরাসরি গোমরাহ নাম দেওয়া না হলেও তার এতাআত করা বৈধ হবে না। এমন ব্যক্তি কোনো দ্বীনী জামাতের দ্বীনী যিম্মাদারও হতে পারে না।

আল কাউসার
সংখ্যা- জানুয়ারি-২০১৯
মাওলানা মুহাম্মদ আব্দুল মালেক
খতীব জাতীয় মসজিদ বাইতুল মোকাররম

হানাফী ফিকহ (Hanafi Fiqh)

01 Nov, 14:55


হাদিয়ার একটি আদব হল, সব ধরনের বিনিময় ও উদ্দেশ্য থেকে মুক্ত হওয়া। তা হবে শুধু মহব্বত ও ইকরাম হিসেবে একমাত্র আল্লাহকে রাজি-খুশি করার জন্য। হাদিয়া প্রদান করে দুআ চাওয়ার প্রচলনটি আসলেই সংশোধনযোগ্য। তবে হাদিয়া প্রদান করে দুআ চাইলে এর অর্থ হয় না যে, হাদিয়াটি দুআর বিনিময় হিসেবে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এক্ষেত্রে কারো নিয়ত যদি বাস্তবেই এমন হয়ে থাকে তাহলে তা খুবই আপত্তিকর। কারণ, দুআর কোনো বিনিময় হয় না। দুআ খালেছ ইবাদত। তা দুনিয়ার জন্য হোক বা আখেরাতের জন্য- সেটি ইবাদত। তাই দুআর বিনিময় হিসেবে কোনো কিছু নেওয়া যাবে না।

আর দুনিয়াবী বৈধ উদ্দেশ্যে খতম ইত্যাদি পড়ে পারিশ্রমিক নেওয়া জায়েয হওয়ার কথা ফিকহের কিতাবে উল্লেখ রয়েছে। সেটির সাথে দুআর বিনিময়কে তুলনা করা ঠিক নয়। দুআ করে পারিশ্রমিক নেওয়া বৈধ হওয়ার কথা কেউ বলেননি।

দুআ মুসলমানগণ একে অপরের জন্য বিনিময়হীনভাবেই করে থাকে এবং তাই করা উচিত।

-জামে তিরমিযী, হাদীস ৩৩৭২; বাযলুল মাজহুদ ৭/৩২৪; মাজমুউ রাসাইলি ইবনি আবিদীন ১/১৫৪; রদ্দুল মুহতার ২/৫৯৫; ইমদাদুল ফাতাওয়া ৩/৩৩৪

মাসিক আল কাউসার

হানাফী ফিকহ (Hanafi Fiqh)

29 Oct, 16:21


জুমুআর খুতবা বিষয়ক ফাতাওয়া

হানাফী ফিকহ (Hanafi Fiqh)

27 Oct, 17:04


বিয়ের পর দেখতে আসার হিড়িক
.
বিয়ের পর প্রথম কিছুদিন বিভিন্ন আত্মীয়স্বজনসহ এলাকার পাড়া-প্রতিবেশীরাও বর-কনেকে দলবেঁধে দেখতে আসে। চাচি শাশুড়ি, নামি শাশুড়ি, খালা শাশুড়ি, দূর সম্পর্কের চাচি, ভাবি ইত্যাদি বিভিন্ন গাইরে মাহরাম আসে বরকে দেখতে। অপরদিকে কনেকে দেখতেও এমন গাইরে মাহরাম আত্মীয়স্বজন আসে। এমনকি যারা পর্দা মেনে চলেন তাদের অনেকেই পর্দার ফাঁক দিয়ে বর-কনেকে 'এক নজর' দেখে যান। 'এক নজর দেখলে তো সমস্যা নেই', হাদীসের এমন অপব্যাখ্যাও করেন কেউ কেউ। অথচ শরীয়তে সবগুলো কাজই নাজায়েয। এই এক নজর দেখা যেন আপনার জাহান্নামে যাওয়ার কারণ না হয়। এখানে এক নজর দেখা তো দেখার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে না। পরবর্তী সময়ে এটা নিয়ে গবেষণা করা হয়, অমুকের বর দেখতে এমন, অমুকের বিবি দেখতে এমন। দৈহিক অবয়ব নিয়ে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে বর্ণনা করা হয়।

তাই উচিত হলো, বিয়ের আগেই সব জেনে নেয়া যে, পরিবারের সবাই পরিপূর্ণ পর্দা করে, নাকি কোনো রকম পর্দার বিধান মানে। প্রয়োজনে সব ব্যাপারেই বিস্তারিত আলাপ করে নেয়া যে, বিয়ের পর পর্দার বিধান লঙ্ঘন করে এসব রুসম পালন করা যাবে না কোনোভাবেই। এরপরও যদি এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়, তাহলে পর্দার ক্ষেত্রে কোনো ছাড় না দেয়া; বরং বুঝিয়ে বলা যে, এভাবে গাইরে মাহরামের সামনে যাওয়া সম্পূর্ণ নাজায়েয। শুধু আজকের দিন কেন, যেকোনো দিনই এক মুহূর্তের জন্য পর্দার বিধান লঙ্ঘন করার অনুমতি শরীয়ত দেয় না কোনোভাবেই।
.
বই : পর্দা গাইডলাইন
লেখক : তানজীল আরেফীন আদনান

হানাফী ফিকহ (Hanafi Fiqh)

23 Oct, 11:26


প্রশ্ন : বিনা অযুতে আযান দেওয়া কি অশুদ্ধ? আযানের জন্য অযু কি শর্ত?

উত্তর : আযানের জন্য অযু শর্ত নয়। অযু অবস্থায় আযান দেওয়া সুন্নত। বিভিন্ন হাদীসে অযু অবস্থায় আযান দেওয়ার প্রতি তাগিদ করা হয়েছে। তাই অযুর সাথে আযান দেওয়ার ব্যাপারে যত্নবান হতে হবে। বিনা অযুতে আযান দেওয়া অনুত্তম। তবে বিনা অযুতে আযান দিলে আযান সহীহ হয়ে যাবে।

আবু হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেন, অযু অবস্থাতেই যেন আযান দেওয়া হয়।-জামে তিরমিযী, হাদীস : ২০১

অবশ্য সময় কম থাকলে বা কোনো অসুবিধা হলে বিনা অযুতেও আযান দেওয়া যাবে। ইবরাহীম নাখায়ী, কাতাদা, হাসান বসরী, আতা রহিমাহুমুল্লাহ প্রমুখ তাবেয়ীন থেকে বিনা অযুতেও আযান দেওয়ার অনুমতি বর্ণিত আছে।

— সহীহ বুখারী ১/৮৮; জামে তিরমিযী ১/২৮; মুসান্নাফ ইবনে আবী শায়বা ২/৩৩৬; ইলাউস সুনান ২/১৪২; আলমুহীতুল বুরহানী ২/৯৩; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/৪৮; বাদায়েউস সানায়ে ১/৩৭৪; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৫৪; আদ্দুররুল মুখতার ১/৩৯২; আলবাহরুর রায়েক ১/২৬৩; কিতাবুল মাবসূত, সারাখসী ১/১৩১

[সূত্র : মাসিক আল কাউসার
যিলক্বদ ১৪৩০ নভেম্বর ২০০৯, জুমাদাল উখরাাহ ১৪৩৪ এপ্রিল ২০১৩]

হানাফী ফিকহ (Hanafi Fiqh)

23 Oct, 09:25


https://youtu.be/14JWfkMle1k

হানাফী ফিকহ (Hanafi Fiqh)

19 Oct, 16:21


https://youtu.be/hp0uSPbep-E

হানাফী ফিকহ (Hanafi Fiqh)

17 Oct, 04:59


গোঁফ কেমন রাখা উত্তম?

গোঁফ কাটা বা মুন্ডন করা নিয়ে কারো কারো মাঝে বাড়াবাড়ি লক্ষ্য করা যায়।
এমনো আলেম আছে, যারা গোঁফ হলক তথা মুন্ডন করাকে বিদআত ও মাকরূহ পর্যন্ত বলে থাকেন। আবার কেউ কেউ সর্বদা মুন্ডন করে ফেলাকেই প্রাধান্য দিয়ে থাকেন।

আসল মাসআলা হলো:
গোঁফ চেঁছে ফেলা এবং ছোট করে রাখা উভয়ই জায়েজ। উভয় সুরতই সুন্নতে রাসূল বলে প্রমাণিত। তাই একবার চেঁছে একবার ছোট করে উভয় সুন্নতের উপর আমল করা যায়।
তবে কোনটি উত্তম এ ব্যপারে মতবিরোধ আছে।
এক্ষেত্রে সঠিক ফায়সালা হলো-যে ব্যক্তির গোঁফ যেভাবে ছোট রাখলে সুন্দর দেখায় সেভাবে কেটে রাখা উত্তম।

তবে চল্লিশ দিনের বেশি সময় গোঁফ না কাটা মাকরূহ। যারা গোঁফ চেঁছে ফেলাকে মাকরূহ বা বেদআ’দ বলেন তাদের বক্তব্যটি বিশুদ্ধ নয়। [সুনানে আবূ দাউদ, হিন্দুস্তানী ছাপার টিকা-১/৮, শরহু মাআনিল আছার-২/৩৩২-৩৩৩, ফাতাওয়া শামী, জাকারিয়া-৮/৪১১, রদ্দুল মুহতার-৯/৫৮৩]

বিস্তারিত: https://ahlehaqmedia.com/1067-2/

হানাফী ফিকহ (Hanafi Fiqh)

15 Oct, 05:49


এক বিধর্মী আমার কাছে জানতে চেয়েছে এই প্রশ্নের উত্তর সম্মানিত কোনো আলেম যদি জানেন আমাকে সাহায্য করেন।সে বারবার এক কথাই বলছে এর উত্তর দিতে।দিতে পারলে সে ইসলাম গ্রহণ করবে।

উত্তরঃ উল্লেখিত মাসআলাটির ক্ষেত্রে :

কন্যা অর্ধেক পাবে, অর্থাৎ ৫৫৩৮৪৬.১৫ টাকা।
দলিল : ( যদি একটি কন্যা সন্তান থাকে তাহলে অর্ধেক পাবে, সুরা নিসা: আয়াত : ১১)

বাবা পাবে এক ষষ্ঠাংশ অর্থাৎ ১৮৪৬১৫.৩৮ টাকা। এবং মা পাবে এক ষষ্ঠাংশ অর্থাৎ ১৮৪৬১৫.৩৮ টাকা।
দলিল:( যদি সন্তান থাকে তাহলে পিতা-মাতা উভয়ের জন্য এক ষষ্ঠাংশ : সুরা নিসা: আয়াত : ১১)
স্বামী পাবে ২৭৬৯২৩.০৭ টাকা।
দলিল : ( যদি তাদের (স্ত্রীদের) সন্তান থাকে তাহলে তোমাদের জন্য এক চতুর্থাংশ ওসিয়ত এবং ঋণ আদায়ের পর, সুরা নিসা: আয়াত : ১২)

বিঃদ্রঃ যখন অংশীদারদের অংশ আসল মাসআলার চেয়ে বেশি হয়ে যায়, তখন তাদের অংশ অনুযায়ী মিরাছ বন্টন করা হয় এটা ইজমা দ্বারা প্রমাণিত।

হানাফী ফিকহ (Hanafi Fiqh)

14 Oct, 15:02


সুন্নাহসম্মত বিবাহ করার পদ্ধতি কী?
প্রশ্ন
আস্সালামু আলাইকুম,
হুজুর আমি ইন্টারনেটে বিবাহ সম্পর্কিত বিভিন্ন তথ্য অনুসন্ধান করতে গিয়ে আপনার মেইল এড্রেসটি পেয়েছি।
আমার বর্তমান বয়স ২৯+। কিছু দিনের মধ্যে বিবাহ করার ইচ্ছে পোষণ করছি। ইতিমধ্যেই আমি সিদ্ধান্তে উপনিত হয়েছি যে বিবাহ করতে গিয়ে আমি কোনো প্রকার যৌতুক নিবনা। এতদিন আমি জানতাম যে এটা একটা সামাজিক ব্যাধি, কিন্তু আজ জানলাম ইসলাম ও যৌতুকের বিপক্ষে।
বর্তমানে আমাদের সমাজে বিবাহের ক্ষেত্রে যে সকল নিয়ম কানুন মানা হয় (কনে দেখা থেকে শুরু করে কনে ফিরাফিরী যাওয়া পর্যন্ত) মেহেদী অনুষ্ঠান, ক্লাব এ বিবাহ অনুষ্ঠান, এগুলো অত্যন্ত বাড়াবাড়ি পর্যায়ের বলেই আমার মনে হয়। আমার নিজের বিবাহতে আমি এসব লৌকিকতা বর্জন করার চিন্তায় আছি। আবার এটা ভেবেও চিন্তিত যে সমাজ ব্যপারটা কিভাবে নিবে।
তাই হুজুরের পরামর্শের প্রয়োজন অনুভব করছি। দয়া করে আমাকে বিবাহের নিয়ম কানুন, আদব, কর্তব্য, করণীয় এবং বর্জনীয় বিষয় সমূহ কুরান, সুন্নাহ, ইজমা ও কিয়াসের আলোকে জানিয়ে বাধিত করবেন।


উত্তর
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
১ দ্বীনদার পরিবারের দ্বীনদার পাত্রী খুঁজে বের করা।
২ বিয়ের আগে শুধুমাত্র বর পাত্রীকে দেখবে।অন্য পুরুষ আত্মীয়দের দেখা নিষেধ।
৩ উভয় পরিবারে মুরব্বী শ্রেণীর আত্মীয়গণ মাশওয়ারা করে বিয়ের দিন তারিখ ঠিক করা।
৪ সামাজিক প্রথা ও রুসুম পরিহার করে সাধাসিধাভাবে সম্ভব বলে মসজিদে বিয়ে সম্পন্ন করা।
৫ কনে পরিবারকে বেশি পরিমাণ ব্যক্তিদের দাওয়াত খাওয়ানোর জন্য জবরদস্তি করা যাবে না।
৬ নিজের সামর্থ অনুপাতে মোহর নির্ধারণ করবে।
৭ সম্ভব হলে জুমআর দিন বিয়ে করা।
৮ নেককার কোন ব্যক্তির মাধ্যমে বিয়ে পড়ানো।
১০ বিয়ের আগে খুতবা পড়া।
১১ ন্যায়পরায়ন উত্তম ব্যক্তিদের সাক্ষী বানিয়ে বিয়ে করা।
১২ কনে বয়সে, বংশ মর্যাদায় ও সম্পদে কম হওয়া উত্তম।
১৩ সকলকে জানিয়ে বিয়ে করা।
১৪ কম খরচে বিয়ে করা।
১৫ বিয়ের পর বাসর হয়ে যাবার পর কনেপক্ষের আত্মীয়দের দাওয়াত দিয়ে ওলীমা করা।
এছাড়া সামাজিক যেসব রুসুম রেওয়াজ আছে যেমন হলুদের অনুষ্ঠান, নারীপুরুষের বেপর্দা অনুষ্ঠান, গানবাদ্য এসব কিছুই বর্জন করা আবশ্যক।
عن ابى هريرة رضى الله عنه عن النبى صلى الله عليه وسلم قال: تنكح المرأة لأربع: لمالها، ولحسابها، ولجمالها، ولدينها، فاظفر بذات الدين تربت يداك (صحيح البخارى، النسخة الهندية-2\762، رقم-4899، ف: 5090، صحيح مسلم، النسخة الهندية-1\474، رقم-1466)
عن عائشة رضى الله عنها قال النبى صلى الله عليه وسلم: إن اعظم النكاح بركة أيسره مؤنة (شعب الإيمان للبيهقى-5\245، رقم-6566)
وَيُنْدَبُ إعْلَانُهُ وَتَقْدِيمُ خُطْبَةٍ وَكَوْنُهُ فِي مَسْجِدِ يَوْمِ جُمُعَةٍ بِعَاقِدٍ رَشِيدٍ وَشُهُودٍ عُدُولٍ، وَالِاسْتِدَانَةُ لَهُ وَالنَّظَرُ إلَيْهَا قَبْلَهُ، وَكَوْنُهَا دُونَهُ سِنًّا وَحَسَبًا وَعِزًّا، وَمَالًا وَفَوْقَهُ خُلُقًا وَأَدَبًا وَوَرَعًا وَجَمَالًا (رد المحتار-4\66-67، كرتاشى-3\78)
والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী
পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।

হানাফী ফিকহ (Hanafi Fiqh)

14 Oct, 12:54


হারাম কাজে লিপ্ত ব্যক্তিকে সালাম দেওয়াতে কোনো অসুবিধা আছে কি-না? দলিলের আলোকে জানতে চাই।

উত্তর : যে সব লোক প্রকাশ্যে কবীরা গোনাহে লিপ্ত তাকে আগে আগে সালাম দোওয়া মাকরূহ। তবে সে আগে সালাম দিলে জওয়াব দিতে সমস্যা নেই। তবে কারো ব্যাপারে প্রকাশ্যে গোনাহের কথা না জানা গেলে তাকে সালাম দিতে ও নিতে সমস্যা নেই। অনুরূপ কাউকে ইসলাহ করার জন্যে আগে আগে সালাম দিতে সমস্যা নেই। এসব বিধান আত্মীয় ও অনাত্মীয় সবার ব্যাপারে।

الدر المختار وحاشية ابن عابدين (رد المحتار) (6/ 415)

ويكره السلام على الفاسق لو معلنا وإلا لا

(قوله لو معلنا) تخصيص لما قدمه عن العيني؛ وفي فصول العلامي: ولا يسلم على الشيخ المازح الكذاب واللاغي؛ ولا على من يسب الناس أو ينظر وجوه الأجنبيات، ولا على الفاسق المعلن، ولا على من يغني أو يطير الحمام ما لم تعرف توبتهم ويسلم على قوم في معصية وعلى من يلعب بالشطرنج ناويا أن يشغلهم عما هم فيه عند أبي حنيفة وكره عندهما تحقيرا لهم
🖋️ মাওলানা রবিউল হাসান হাফিঃ

হানাফী ফিকহ (Hanafi Fiqh)

12 Oct, 15:16


মনে রাখা উচিত, আল্লাহ তাআলার নিকট শিরক সবচে বড় কবীরা গুনাহ। অন্যান্য গুনাহ তো আল্লাহ যাকে ইচ্ছা মাফ করে দেন, তবে শিরকের ব্যাপারে তিনি ঘোষণা করেছেন, এই গুনাহ তিনি মাফ করবেনই না, যতক্ষণ না শিরককারী ব্যক্তি খাঁটি অন্তরে তওবা করে সব ধরনের শিরক থেকে ফিরে আসে এবং তাওহীদের দ্বীন ইসলাম কবুল করে মনে-প্রাণে শুধু এবং শুধু তাওহীদের উপর অবিচল থাকে।

ইরশাদ হয়েছে-
اِنَّ اللهَ لَا یَغْفِرُ اَنْ یُّشْرَكَ بِهٖ وَ یَغْفِرُ مَا دُوْنَ ذٰلِكَ لِمَنْ یَّشَآءُ وَ مَنْ یُّشْرِكْ بِاللهِ فَقَدْ ضَلَّ ضَلٰلًۢا بَعِیْدًا.
নিশ্চয়ই আল্লাহ তাঁর সঙ্গে শরীক করাকে ক্ষমা করেন না। এর নিচের যে কোনো গুনাহ যার ক্ষেত্রে চান ক্ষমা করে দেন। যে ব্যক্তি আল্লাহর সঙ্গে (কাউকে) শরীক করে, সে (সঠিক পথ থেকে) বহু দূরে সরে যায়। -সূরা নিসা (৪) : ১১৬

আরো ইরশাদ হয়েছে-
اِنَّهٗ مَنْ یُّشْرِكْ بِاللهِ فَقَدْ حَرَّمَ اللهُ عَلَیْهِ الْجَنَّةَ وَ مَاْوٰىهُ النَّارُ وَ مَا لِلظّٰلِمِیْنَ مِنْ اَنْصَار.
নিশ্চয়ই যে ব্যক্তি আল্লাহর সঙ্গে (কাউকে) শরীক করে, আল্লাহ তার জন্য জান্নাত হারাম করে দিয়েছেন। তার ঠিকানা জাহান্নাম। আর জালিমদের কোনো সাহায্যকারী নেই। -সূরা মায়িদা (৫) : ৭২

মোটকথা, দ্বীনে তাওহীদের অনুসারী এবং কালিমায়ে তাওহীদের সাক্ষ্যদানকারী মুমিন-মুসলিমকে সতর্ক থাকতে হবে। এমন যেন না হয় যে, উদারতার নামে স্পষ্ট শিরকী কর্মকা-গুলোকে ভুল ব্যাখ্যা করতে শুরু করল, নিছক উৎসব নাম দিয়ে সেগুলোর পক্ষে সাফাই এবং সেগুলোতে অংশগ্রহণ করতে লাগল। এমনটা করলে এর চেয়ে বড় অকৃতজ্ঞতা ও অবাধ্যতা আল্লাহর সঙ্গে আর কী হতে পারে? এবং ঈমান ও তাওহীদের নিআমত থেকে বঞ্চিত হওয়ার এর চেয়ে বড় কারণ আর কী হতে পারে?

অমুসলিমদের উৎসবে মুসলমানদের অংশগ্রহণের বিধান:

বর্তমানে কিছু মানুষ কেবল অজ্ঞতার কারণে এমন মনে করছে যে, মুসলমানদের জন্য যেন অমুসলিমদের ধর্মীয় উৎসবে অংশগ্রহণ করা বৈধ! এই ভাইদের খুব ভালো করে বোঝা উচিত, এমন ধারণা একেবারে ভুল।
ইসলাম ও ইসলামী শরীয়ত এসব বিষয়ে অত্যন্ত সংবেদনশীল। ইসলাম তার অনুসারীদের জীবনের কোনো অঙ্গনকে ‘ফকির’ ছেড়ে দেয়নি; বরং জীবনের প্রতিটি অধ্যায় ও ক্ষেত্রে তাদেরকে বিধান দান করেছে এবং তাদেরকে আত্মমর্যাদাবোধসম্পন্ন স্বয়ংসম্পূর্ণ একটি জাতি হিসাবে পুরো পৃথিবীর জন্য আদর্শ বানিয়েছে।

মুমিনদের লক্ষ করে ইরশাদ হয়েছে-
یٰۤاَیُّهَا الَّذِیْنَ اٰمَنُوا ادْخُلُوْا فِی السِّلْمِ كَآفَّةً وَّ لَا تَتَّبِعُوْا خُطُوٰتِ الشَّیْطٰنِ اِنَّهٗ لَكُمْ عَدُوّ مُّبِیْنٌ.
হে মুমিনগণ! ইসলামে সম্পূর্ণরূপে প্রবেশ কর এবং শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না। নিশ্চয়ই সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু। -সূরা বাকারা (২) : ২০৮

আর পুরো দুনিয়ার প্রতি ইসলামের ঘোষণা-
اٰمِنُوْا كَمَاۤ اٰمَنَ النَّاسُ.

যেসকল লোক ঈমান এনেছে তোমরাও তাদের মত ঈমান আন। -সূরা বাকারা (২) : ১৩
এবং
فَاِنْ اٰمَنُوْا بِمِثْلِ مَاۤ اٰمَنْتُمْ بِهٖ فَقَدِ اهْتَدَوْا.

তারা যদি সেরকম ঈমান আনে, যেমন তোমরা ঈমান এনেছ, তবে তারা সঠিক পথ পেয়ে যাবে।- সূরা বাকারা (২) : ১৩৭

জীবনের অন্যসব বিষয়ের মত উৎসবের ক্ষেত্রেও মুসলিম উম্মাহকে স্বতন্ত্র বিধি-বিধান দান করা হয়েছে। তাদেরকে ঈদের বিধান দেয়াই হয়েছে এ কথা বলে-
“প্রত্যেক জাতির নিজস্ব উৎসব থাকে। হে মুসলিম জাতি! তোমাদের উৎসব হল ‘ঈদ’।” অর্থাৎ সব জাহেলী উৎসব থেকে অমুখাপেক্ষী করে মুসলিম উম্মাহকে ‘ঈদ’ দান করা হয়েছে। তাই তাদের জন্য এটা বৈধই নয় যে, তারা নিজেরা কোনো জাহেলী উৎসব উদ্যাপন করবে বা তাতে অংশগ্রহণ করবে।
হাদীস শরীফে আছে, মদীনায় আগমনের পর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দেখেন, এখানকার অধিবাসীরা বছরে দু’দিন উৎসব পালন করে।

তখন আল্লাহর রাসূল তাদের বললেন-
إِنّ اللهَ قَدْ أَبْدَلَكُمْ بِهِمَا خَيْرًا مِنْهُمَا: يَوْمَ الْأَضْحَى، وَيَوْمَ الْفِطْرِ.
নিঃসন্দেহে আল্লাহ তাআলা তোমাদেরকে সেসবের পরিবর্তে দুটি উত্তম দিন দান করেছেন- আযহা এবং ফিতর। - সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ১১৩৪

এছাড়া একাধিক হাদীসে বলা হয়েছে-
إِنّ لِكُلِّ قَوْمٍ عِيدًا، وَهَذَا عِيدُنَا.
অর্থাৎ নিশ্চয়ই প্রত্যেক কওমের আপন আপন উৎসব আছে। আমাদের (অর্থাৎ মুসলিম উম্মাহর) উৎসব হচ্ছে ঈদুল ফিতর এবং ঈদুল আযহা। - সহীহ বুখারী, হাদীস ৯৫২; সহীহ মুসলিম, হাদীস ৮৯২

এজন্য কুরআনে কারীমে [সূরা ফুরকান (২৫) : ৭২] আল্লাহর নেক বান্দাদের বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করতে গিয়ে এ কথাও বলা হয়েছে-
وَ الَّذِیْنَ لَا یَشْهَدُوْنَ الزُّوْر.
অর্থাৎ তারা এমন মানুষ, যারা মিথ্যা ধ্যান-ধারণার ভিত্তিতে উদ্যাপিত কাফের-মুশরিকদের উৎসবে অংশগ্রহণ করে না।

হানাফী ফিকহ (Hanafi Fiqh)

12 Oct, 15:16


উল্লেখিত আয়াতাংশের তাফসীর জানার জন্য দেখুন তাফসীরে ইবনে কাসীর খ. ৬ পৃ. ১৪০ ও আদ্দুররুল মানসূর খ. ৫ পৃ. ৮০-৮১ এবং ইমাম ইবনে তাইমিয়া রাহ.-এর কিতাব ‘ইকতিযাউস সিরাতিল মুসতাকীম মুখালাফাতা আসহাবিল জাহীম’ খ. ১ পৃ. ৪২৭-৪৩২)
আরেক হাদীসে এই ঘটনা বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবদ্দশায় একজন মান্নত করল, অমুক জায়গায় সে উট জবাই করবে। সে আল্লাহর রাসূলের নিকট মাসআলা জানতে চাইলে

আল্লাহর রাসূল জিজ্ঞেস করলেন-
هَلْ كَانَ فِيهَا وَثَنٌ مِنْ أَوْثَانِ الْجَاهِلِيّةِ يُعْبَدُ؟
সেখানে কি জাহেলী যুগের কোনো মূর্তি ছিল, যার পূজা করা হত? লোকেরা বলল, না। পুনরায় জিজ্ঞেস করলেন-
هَلْ كَانَ فِيهَا عِيدٌ مِنْ أَعْيَادِهِمْ؟
সেখানে কি অমুসলিমদের কোনো উৎসব হত? লোকেরা বলল, না।

তখন আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন-
أَوْفِ بِنَذْرِكَ، فَإِنّهُ لَا وَفَاءَ لِنَذْرٍ فِي مَعْصِيَةِ اللهِ...
তুমি তোমার মান্নত পুরা কর। (এরপর বললেন, এসব প্রশ্ন এজন্য করা হয়েছে) কারণ, আল্লাহর নাফরমানিতে কোনো মান্নত গ্রহণযোগ্য নয়; এ ধরনের মান্নত পূরণ করা জায়েয নয়। - সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৩৩১৩, অধ্যায় : মা ইয়ু’মারু বিওয়াফাইহী মিনান নাযরি

সাহাবায়ে কেরাম কুরআন-হাদীসের হেদায়েত ও নির্দেশনাসমূহ যথাযথভাবে হৃদয়ঙ্গম করেছিলেন। এজন্য তাঁরা মানুষকে অমুসলিমদের উৎসবে যেতে অত্যন্ত কঠোরভাবে নিষেধ করতেন। হযরত উমর রা. বলেন-
اجْتَنِبُوا أَعْدَاءَ اللهِ فِي عِيدِهِمْ.
তোমরা আল্লাহর শত্রুদের উৎসব থেকে দূরে থাক।- আসসুনানুল কুবরা লিলবাইহাকী, বর্ণনা ১৮৮৬২; ইকতিযাউস সিরাতিল মুসতাকীম, খ. ১ পৃ. ৪৫৬-৪৫৭
অবশেষে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দুটি মৌলিক হেদায়েত স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি।

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
مَنْ تَشَبّهَ بِقَوْمٍ فَهُوَ مِنْهُمْ.
যে যে জাতির সাদৃশ্য গ্রহণ করবে সে তাদেরই বলে গণ্য হবে। -সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৪০৩১
কোনো জাতির উৎসব হচ্ছে সে জাতির শিআর বা নিদর্শন। অতএব বিজাতির নিদর্শনাবলীর ক্ষেত্রে যে তাদের সাদৃশ্য গ্রহণ করে, সে যে হাদীসে উল্লেখিত ধমকির অন্তর্ভুক্ত- এ বিষয়ে কি কোনো সন্দেহ আছে?

আরেক হাদীসে এসেছে-
مَنْ كَثّرَ سَوَادَ قَوْمٍ فَهُوَ مِنْهُمْ وَمَنْ رَضِيَ عَمَلَ قَوْمٍ كَانَ شَرِيكًا لِمَنْ عَمِلَهُ.
যে ব্যক্তি কোনো কওমের দল ভারী করবে সে তাদের মধ্যে গণ্য হবে। আর যে কোনো সম্প্রদায়ের কাজের প্রতি সন্তুষ্টি প্রকাশ করবে সে সে কাজের অংশীদার বলে ধতর্ব্য হবে। - (মুসনাদে আবু ইয়ালা)

আলমাতালিবুল ‘আলিয়া খ. ৪ পৃ. ৩১৫; কিতাবুয যুহদি ওর্য়ারাকাইক, ইবনুল মুবারক পৃ. ৪৪৭, অধ্যায় : বাবু ইসতিমায়িল লাহ্বি; নাসবুর রায়াহ, খ. ৪ পৃ. ৩৪৬-৩৪৭; আদ্দিরায়াহ ফী তাখরীজি আহাদিসিল হিদায়া (দ্র. হিদায়া খ. ৪ পৃ. ৫৬৭, হিন্দুস্তানী সংস্করণ) ফাতহুল বারী, ইবনে হাজার খ. ১৩, পৃষ্ঠা ৩৭-৩৮, হাদীস ৭০৮৫ باب من كره أن يكثر سواد الفتن والظلم; আলমাকাসিদুল হাসানা খ. ৫ পৃ. ১৮১

আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে ঈমানী গায়রত দান করুন। সকল শিরক থেকে রক্ষা করুন এবং বিজাতীয় সকল আচার-অনুষ্ঠান ও পর্ব-উৎসব থেকে দূরে থাকার তাওফীক দান করুন। আমীন।
মাসিক আলকাউসার এর সৌজন্যে

হানাফী ফিকহ (Hanafi Fiqh)

12 Oct, 15:16


যারা আল্লাহর প্রতি ঈমান রাখে না ও যারা আখেরাতে অবিশ্বাসী, আমি তাদের দ্বীন পরিত্যাগ করেছি। আমি আমার বাপ-দাদা ইবরাহীম, ইসহাক ও ইয়াকুবের দ্বীন অনুসরণ করেছি। আমাদের এ অধিকার নেই যে, আল্লাহর সঙ্গে কোনও জিনিসকে শরীক করব। এটা (অর্থাৎ তাওহীদের আকীদা) আমাদের প্রতি ও সমস্ত মানুষের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহেরই অংশ। কিন্তু অধিকাংশ লোক (এ নিআমতের) শোকর আদায় করে না। হে আমার কারা-সংগীদ্বয়! ভিন্ন-ভিন্ন বহু প্রতিপালক শ্রেয়, না সেই এক আল্লাহ, যাঁর ক্ষমতা সর্বব্যাপী? তাঁকে ছেড়ে তোমরা কেবল কতগুলো নামেরই ইবাদত করছ, যে নামগুলো তোমরা ও তোমাদের পিতৃপুরুষরা রেখেছে। আল্লাহ তার পক্ষে কোনও দলীল নাযিল করেননি। হুকুম দানের ক্ষমতা আল্লাহ ছাড়া অন্য কারও নেই। তিনিই এ হুকুম দিয়েছেন যে, তোমরা তাঁর ভিন্ন অন্য কারও ইবাদত করো না। এটাই সরল-সোজা পথ। কিন্তু অধিকাংশ লোক জানে না। -সূরা ইউসুফ (১২) : ৩৭-৪০
মুশরিকদের সকল কাল্পনিক মাবুদের ব্যাপারে

তাওহীদে বিশ্বাসী একজন মুমিন কুরআনের ভাষায় বলে-
اِنْ هِیَ اِلَّاۤ اَسْمَآءٌ سَمَّیْتُمُوْهَاۤ اَنْتُمْ وَ اٰبَآؤُكُمْ مَّاۤ اَنْزَلَ اللهُ بِهَا مِنْ سُلْطٰنٍ اِنْ یَّتَّبِعُوْنَ اِلَّا الظَّنَّ وَ مَا تَهْوَی الْاَنْفُسُ وَ لَقَدْ جَآءَهُمْ مِّنْ رَّبِّهِمُ الْهُدٰی.
(এদের স্বরূপ এর বেশি কিছু নয় যে,) এগুলি কতক নাম মাত্র, যা তোমরা এবং তোমাদের বাপ-দাদাগণ রেখেছ। আল্লাহ এর স্বপক্ষে কোনো প্রমাণ নাযিল করেননি। প্রকৃতপক্ষে তারা (অর্থাৎ কাফেরগণ) কেবল ধারণা এবং মনের খেয়াল-খুশীর অনুসরণ করে। অথচ তাদের প্রতিপালকের পক্ষ হতে তাদের কাছে এসে গেছে পথনির্দেশ। -সূরা নাজ্ম (৫৩) : ২৩
মুশরিকদের খুব ভালোভাবে বোঝা উচিত,
তাদের কাল্পনিক উপাস্যদের কাছে কিছুই নেই যে,
দুনিয়া-আখেরাতে তারা তাদের কোনো সাহায্য করবে।

ইরশাদ হয়েছে-
قُلِ ادْعُوا الَّذِیْنَ زَعَمْتُمْ مِّنْ دُوْنِ الله لَا یَمْلِكُوْنَ مِثْقَالَ ذَرَّةٍ فِی السَّمٰوٰتِ وَ لَا فِی الْاَرْضِ وَ مَا لَهُمْ فِیْهِمَا مِنْ شِرْكٍ وَّ مَا لَهٗ مِنْهُمْ مِّنْ ظَهِیْر.
(হে রাসূল! ওই কাফেরদেরকে) বলে দাও, তোমরা যাদেরকে আল্লাহর পরিবর্তে উপাস্য মনে করতে তাদেরকে ডাক। আকাশম-লী ও পৃথিবীতে তারা অণু পরিমাণ কিছুরও মালিক নয় এবং আকাশম-লী ও পৃথিবীতে (কোনও বিষয়ে আল্লাহর সাথে) তাদের কোনো অংশীদারিত্ব নেই এবং তাদের মধ্যে কেউ তাঁর সাহায্যকারীও নয়। -সূরা সাবা (৩৪) : ২২

অন্যত্র আল্লাহ তাআলার কুদরত ও নিআমতরাজির আলোচনা প্রসঙ্গে বলা হয়েছে-
ذٰلِكُمُ اللهُ رَبُّكُمْ لَهُ الْمُلْكُ وَ الَّذِیْنَ تَدْعُوْنَ مِنْ دُوْنِهٖ مَا یَمْلِكُوْنَ مِنْ قِطْمِیْرٍؕ، اِنْ تَدْعُوْهُمْ لَا یَسْمَعُوْا دُعَآءَكُمْ وَ لَوْ سَمِعُوْا مَا اسْتَجَابُوْا لَكُمْ وَ یَوْمَ الْقِیٰمَةِ یَكْفُرُوْنَ بِشِرْكِكُمْ وَ لَا یُنَبِّئُكَ مِثْلُ خَبِیْرٍ.
তিনি আল্লাহ- তোমাদের প্রতিপালক। সকল রাজত্ব তাঁরই। তাঁকে ছেড়ে যাদেরকে (অর্থাৎ যেসব অলীক প্রভুকে) তোমরা ডাক, তারা খেজুর বীচির আবরণের সমানও কিছুর অধিকার রাখে না। তোমরা তাদেরকে ডাকলে তারা তেমাদের ডাক শুনবেই না আর শুনলেও তোমাদেরকে কোনো সাড়া দিতে পারবে না। কিয়ামতের দিন তারা নিজেরাই তোমাদের শিরককে অস্বীকার করবে। যাবতীয় বিষয় সম্পর্কে অবগত সত্তার মত সঠিক সংবাদ তোমাকে আর কেউ দিতে পারবে না। -সূরা ফাতির (৩৫) : ১৩-১৪

এজন্য রিযিকের প্রার্থনা হোক বা নিরাপত্তার, রহমতের প্রার্থনা হোক বা যুলুম থেকে নিষ্কৃতিরÑ সর্বাবস্থায় সেই একমাত্র মাবুদের নিকটই ফিরে আসতে হবে এবং তাঁর কাছেই সকল আশা-প্রত্যাশা নিবেদন করতে হবে। শান্তি ও নিরাপত্তার একমাত্র মালিক তো তিনিই। এজন্য শুধু তাঁরই ইবাদত করতে হবে। ইরশাদ হয়েছে-
فَلْیَعْبُدُوْا رَبَّ هٰذَا الْبَیْتِ الَّذِیْۤ اَطْعَمَهُمْ مِّنْ جُوْعٍ، وَّ اٰمَنَهُمْ مِّنْ خَوْفٍ.

তারা যেন এই ঘরের মালিকের ইবাদত করে, যিনি তাদেরকে ক্ষুধার্ত অবস্থায় খাদ্য দান করেছেন এবং ভয়-ভীতি থেকে তাদেরকে নিরাপদ রেখেছেন। -সূরা কুরাইশ (১০৬) : ৩-৪)

তাছাড়া শিরকের মাধ্যমে কীভাবে যুলুম-ফাসাদ দূর হয়ে শান্তি ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠিত হবে? শিরক তো নিজেই অনেক বড় যুলুম-
اِنَّ الشِّرْكَ لَظُلْمٌ عَظِیْمٌ.
নিশ্চয়ই শিরক চরম যুলুম। -সূরা লুকমান (৩১) : ১৩
শান্তি ও নিরাপত্তা তো সেই যুলুম থেকে বেঁচে থাকার মধ্যেই। আপন যুগের তাওহীদী মিল্লাতের ইমাম

আল্লাহর রাসূল হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালামের বক্তব্য কুরআন মাজীদে বিবৃত হয়েছে-
وَ كَیْفَ اَخَافُ مَاۤ اَشْرَكْتُمْ وَ لَا تَخَافُوْنَ اَنَّكُمْ اَشْرَكْتُمْ بِاللهِ مَا لَمْ یُنَزِّلْ بِهٖ عَلَیْكُمْ سُلْطٰنًا فَاَیُّ الْفَرِیْقَیْنِ اَحَقُّ بِالْاَمْنِ اِنْ كُنْتُمْ تَعْلَمُوْنَۘ اَلَّذِیْنَ اٰمَنُوْا وَ لَمْ یَلْبِسُوْۤا اِیْمَانَهُمْ بِظُلْمٍ اُولٰٓىِٕكَ لَهُمُ الْاَمْنُ وَ هُمْ مُّهْتَدُوْنَ۠.

হানাফী ফিকহ (Hanafi Fiqh)

12 Oct, 15:16


তোমরা যেসকল জিনিসকে (আল্লাহর) শরীক বানিয়েছ, আমি কীভাবেইবা তাদেরকে ভয় করতে পারি, যখন তোমরা ওইসকল জিনিসকে আল্লাহর শরীক বানাতে ভয় করছ না, যাদের বিষয়ে তিনি তোমাদের প্রতি কোনো প্রমাণ অবতীর্ণ করেননি? সুতরাং তোমাদের কাছে যদি কিছু জ্ঞান থাকে, তবে (বল) দুই দলের মধ্যে কোন্ দল নির্ভয়ে থাকার বেশি উপযুক্ত? (প্রকৃতপক্ষে) যারা ঈমান এনেছে এবং নিজেদের ঈমানকে যুলুমের সাথে মিশ্রিত করেনি, নিরাপত্তা ও স্বস্তি তো কেবল তাদেরই অধিকার এবং তারাই সঠিক পথে পৌঁছে গেছে। -সূরা আনআম (৬) : ৮১-৮২

দুআ ও প্রার্থনার একমাত্র হকদার তিনিই, যিনি সবকিছুর খালিক ও মালিক। আর কেবল সে দুআই যথার্থ ও কার্যকর হবে, যা শুধু তাঁরই দরবারে পেশ করা হবে। এর বাইরে সকল প্রার্থনা বেকার ও অর্থহীন। কারণ সেগুলো করা হয়েছে ভুল স্থানে। ইরশাদ হয়েছে-
لَهٗ دَعْوَةُ الْحَقِّ وَ الَّذِیْنَ یَدْعُوْنَ مِنْ دُوْنِهٖ لَا یَسْتَجِیْبُوْنَ لَهُمْ بِشَیْءٍ اِلَّا كَبَاسِطِ كَفَّیْهِ اِلَی الْمَآءِ لِیَبْلُغَ فَاهُ وَ مَا هُوَ بِبَالِغِهٖ وَ مَا دُعَآءُ الْكٰفِرِیْنَ اِلَّا فِیْ ضَلٰلٍ.
তিনিই সেই সত্তা, যার কাছে দুআ করা সঠিক। তারা তাঁকে ছেড়ে যাদেরকে (অর্থাৎ যেই দেব-দেবীদেরকে) ডাকে তারা তাদের দুআর কোনো জবাব দেয় না। তাদের দৃষ্টান্ত সেই ব্যক্তির মত, যে পানির দিকে দু’হাত বাড়িয়ে আশা করে তা আপনিই তার মুখে পৌঁছে যাবে, অথচ তা কখনো নিজে নিজে তার মুখে পৌঁছাতে পারে না। আর (দেব-দেবীদের কাছে) কাফেরদের দুআ করার ফল এছাড়া আর কিছুই নয় যে, তা শুধু বৃথাই যাবে। -সূরা রাআদ (১৩) : ১৪

এককথায়-
ذٰلِكَ بِاَنَّ اللهَ هُوَ الْحَقُّ وَ اَنَّ مَا یَدْعُوْنَ مِنْ دُوْنِهٖ هُوَ الْبَاطِلُ وَ اَنَّ اللهَ هُوَ الْعَلِیُّ الْكَبِیْرُ.
অর্থাৎ, আল্লাহই সত্য। আর তারা তাঁকে ছেড়ে যেসব জিনিসের ইবাদত করে তা সবই মিথ্যা। আর আল্লাহই সেই সত্তা, যার মহিমা সমুচ্চ, মর্যাদা বিপুল। -সূরা হাজ্জ (২২) : ৬২

মোটকথা, তাওহীদের অনুসারী মুমিনের ঘোষণাই এটা-
এক.
اَغَیْرَ اللهِ اَتَّخِذُ وَلِیًّا فَاطِرِ السَّمٰوٰتِ وَ الْاَرْضِ وَ هُوَ یُطْعِمُ وَ لَا یُطْعَم.
আমি কি আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে অভিভাবকরূপে গ্রহণ করব? যিনি আকাশম-লী ও পৃথিবীর ¯্রষ্টা এবং যিনি (সকলকে) খাদ্য দান করেন, কারো থেকে খাদ্য গ্রহণ করেন না? -সূরা আনআম (৬) : ১৪

দুই.
یٰقَوْمِ اِنِّیْ بَرِیْٓء مِّمَّا تُشْرِكُوْنَ، اِنِّیْ وَجَّهْتُ وَجْهِیَ لِلَّذِیْ فَطَرَ السَّمٰوٰتِ وَ الْاَرْضَ حَنِیْفًا وَّ مَاۤ اَنَا مِنَ الْمُشْرِكِیْنَ.
হে আমার কওম! তোমরা যেসকল জিনিসকে (আল্লাহর সঙ্গে) শরীক কর, তাদের সাথে আমার কোনো সম্পর্ক নেই। আমি সম্পূর্ণ একনিষ্ঠভাবে সেই সত্তার দিকে নিজের মুখ ফেরালাম, যিনি আকাশম-লী ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন এবং আমি শিরককারীদের অন্তর্ভুক্ত নই।-সূরা আনআম (৬) : ৭৮-৭৯

তিন.
اِنَّ صَلَاتِیْ وَ نُسُكِیْ وَ مَحْیَایَ وَ مَمَاتِیْ لِلهِ رَبِّ الْعٰلَمِیْنَ لَا شَرِیْكَ لَهٗ وَ بِذٰلِكَ اُمِرْتُ وَ اَنَا اَوَّلُ الْمُسْلِمِیْن ، ...اَغَیْرَ اللهِ اَبْغِیْ رَبًّا وَّ هُوَ رَبُّ كُلِّ شَیْءٍ وَ لَا تَكْسِبُ كُلُّ نَفْسٍ اِلَّا عَلَیْهَا وَ لَا تَزِرُ وَازِرَةٌ وِّزْرَ اُخْرٰی ثُمَّ اِلٰی رَبِّكُمْ مَّرْجِعُكُمْ فَیُنَبِّئُكُمْ بِمَا كُنْتُمْ فِیْهِ تَخْتَلِفُوْن.
নিশ্চয়ই আমার নামায, আমার ইবাদত ও আমার জীবন-মরণ সবই আল্লাহর জন্য, যিনি জগৎসমূহের প্রতিপালক। তাঁর কোনও শরীক নেই। আমাকে এরই হুকুম দেওয়া হয়েছে। এবং আনুগত্য স্বীকারকারীদের মধ্যে আমিই প্রথম।

আমি কি আল্লাহ ছাড়া অন্য কোনও প্রতিপালক সন্ধান করব, অথচ তিনি প্রতিটি জিনিসের মালিক? প্রত্যেক ব্যক্তি যা-কিছু করে, তার লাভ-ক্ষতি অন্য কারও উপর নয়, স্বয়ং তার উপরই বর্তায় এবং কোনও ভার-বহনকারী অন্য কারও ভার বহন করবে না। পরিশেষে তোমাদের প্রতিপালকের কাছেই তোমাদের সকলকে ফিরে যেতে হবে। তোমরা যেসব বিষয়ে মতভেদ করতে, তখন তিনি সে সম্পর্কে তোমাদের অবহিত করবেন।-সূরা আনআম (৬) : ১৬২-১৬৪
তাওহীদের অনুসারী মুমিন সর্বদা এই প্রার্থনা করেÑ
رَبَّنَا لَا تُزِغْ قُلُوْبَنَا بَعْدَ اِذْ هَدَیْتَنَا وَ هَبْ لَنَا مِنْ لَّدُنْكَ رَحْمَة اِنَّكَ اَنْتَ الْوَهَّاب.
হে আমাদের প্রতিপালক! তুমি আমাদেরকে যখন হেদায়েত দান করেছ তারপর আর আমাদের অন্তরে বক্রতা সৃষ্টি করো না এবং একান্তভাবে নিজের পক্ষ থেকে আমাদেরকে রহমত দান কর। নিশ্চয়ই তুমিই মহা দাতা। -সূরা আলে ইমরান (৩) : ৮
رَبِّ اجْعَلْ هٰذَا الْبَلَدَ اٰمِنًا وَّ اجْنُبْنِیْ وَ بَنِیَّ اَنْ نَّعْبُدَ الْاَصْنَامَ.
হে আমার প্রতিপালক! এ নগরকে শান্তিপূর্ণ বানিয়ে দিন এবং আমাকে ও আমার সন্তানদেরকে প্রতিমা পূজা করা হতে রক্ষা করুন। -সূরা ইবরাহীম (১৪) : ৩৫

হানাফী ফিকহ (Hanafi Fiqh)

12 Oct, 15:16


সূরা ইউনুসের শেষে বর্ণিত হয়েছে-
قُلْ یٰۤاَیُّهَا النَّاسُ اِنْ كُنْتُمْ فِیْ شَكٍّ مِّنْ دِیْنِیْ فَلَاۤ اَعْبُدُ الَّذِیْنَ تَعْبُدُوْنَ مِنْ دُوْنِ اللهِ وَ لٰكِنْ اَعْبُدُ اللهَ الَّذِیْ یَتَوَفّٰىكُمْ، وَ اُمِرْتُ اَنْ اَكُوْنَ مِنَ الْمُؤْمِنِیْنَ، وَ اَنْ اَقِمْ وَجْهَكَ لِلدِّیْنِ حَنِیْفًا، وَ لَا تَكُوْنَنَّ مِنَ الْمُشْرِكِیْنَ، وَ لَا تَدْعُ مِنْ دُوْنِ اللهِ مَا لَا یَنْفَعُكَ وَ لَا یَضُرُّكَ، فَاِنْ فَعَلْتَ فَاِنَّكَ اِذًا مِّنَ الظّٰلِمِیْنَ، وَ اِنْ یَّمْسَسْكَ اللهُ بِضُرٍّ فَلَا كَاشِفَ لَهٗۤ اِلَّا هُوَ، وَ اِنْ یُّرِدْكَ بِخَیْرٍ فَلَا رَآدَّ لِفَضْلِهٖ، یُصِیْبُ بِهٖ مَنْ یَّشَآءُ مِنْ عِبَادِهٖ، وَ هُوَ الْغَفُوْرُ الرَّحِیْمُ، قُلْ یٰۤاَیُّهَا النَّاسُ قَدْ جَآءَكُمُ الْحَقُّ مِنْ رَّبِّكُمْ، فَمَنِ اهْتَدٰی فَاِنَّمَا یَهْتَدِیْ لِنَفْسِهٖ، وَ مَنْ ضَلَّ فَاِنَّمَا یَضِلُّ عَلَیْهَا، وَ مَاۤ اَنَا عَلَیْكُمْ بِوَكِیْلٍ.

(হে নবী) তাদেরকে বল, হে মানুষ! তোমরা যদি আমার দ্বীন সম্পর্কে কোনও সন্দেহে থাক, তবে (শুনে রাখ) তোমরা আল্লাহ ছাড়া যাদের ইবাদত কর আমি তাদের ইবাদত করি না; বরং আমি সেই আল্লাহর ইবাদত করি, যিনি তোমাদের প্রাণ সংহার করেন। আর আমাকে হুকুম দেওয়া হয়েছে, আমি যেন মুমিনদের অন্তর্ভুক্ত থাকি। এবং (আমাকে) এই (বলা হয়েছে) যে, তুমি একনিষ্ঠভাবে নিজ চেহারাকে এই দ্বীনের দিকেই কায়েম রাখবে এবং কিছুতেই নিজেকে সেইসকল লোকের অন্তর্ভুক্ত করবে না, যারা আল্লাহর সঙ্গে কাউকে শরীক মানে। আল্লাহকে ছেড়ে এমন কাউকে (অর্থাৎ মনগড়া মাবুদকে) ডাকবে না, যা তোমার কোনও উপকারও করতে পারে না এবং ক্ষতিও করতে পারে না। তারপরও যদি তুমি এরূপ কর (যদিও তোমার পক্ষে তা করা অসম্ভব), তবে তুমি জালেমদের মধ্যে গণ্য হবে। আল্লাহ যদি তোমাকে কোনও কষ্ট দান করেন, তবে তিনি ছাড়া এমন কেউ নেই, যে তা দূর করবে এবং তিনি যদি তোমার কোনও মঙ্গল করার ইচ্ছা করেন, তবে এমন কেউ নেই, যে তার অনুগ্রহ রদ করবে। তিনি নিজ বান্দাদের মধ্যে যাকে ইচ্ছা অনুগ্রহ দান করেন। তিনি অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। (হে নবী!) বলে দাও, হে লোকসকল! তোমাদের কাছে তোমাদের প্রতিপালকের পক্ষ থেকে সত্য এসে গেছে। সুতরাং যে ব্যক্তি হেদায়েতের পথ অবলম্বন করবে, সে তা অবলম্বন করবে নিজেরই মঙ্গলের জন্য আর যে ব্যক্তি পথভ্রষ্টতা অবলম্বন করবে, তার পথভ্রষ্টতার ক্ষতি তার নিজেরই ভোগ করতে হবে। আমি তোমাদের কার্যাবলীর যিম্মাদার নই। -সূরা ইউনুস (১০) : ১০৪-১০৮

কুরআনে কারীম ও হাদীস শরীফে এই বাস্তবতা দিবালোকের ন্যায় স্পষ্ট যে, আসল দ্বীন হল তাওহীদের দ্বীন। প্রথমে সব মানুষ এই দ্বীনের অনুসারীই ছিল। সবাই দ্বীনে তাওহীদের উম্মত ছিল। পরবর্তীতে শয়তানের প্ররোচনায় মানুষ শিরকে লিপ্ত হয়ে পড়ে। তাই আল্লাহ তাআলা নবী-রাসূলগণকে আদেশ করেন, তাঁরা যেন মানুষকে শিরক ছেড়ে তাওহীদের দিকে ফিরে আসার দাওয়াত দেন। এজন্য প্রাচীন দ্বীন হল তাওহীদের দ্বীন। আর প্রাচীন উম্মত হল তাওহীদের উম্মত । দেখুন, সূরা আম্বিয়া (২১) : ৯২, সূরা মুমিনূন (২৩) : ৫২, সূরা ইউনুস (১০) : ১৯।

আর প্রসিদ্ধ হাদীসে কুদসীতে আছে-
وَإِنِّي خَلَقْتُ عِبَادِي حُنَفَاءَ كُلّهُمْ، وَإِنّهُمْ أَتَتْهُمُ الشّيَاطِينُ فَاجْتَالَتْهُمْ عَنْ دِينِهِمْ، وَحَرّمَتْ عَلَيْهِمْ مَا أَحْلَلْتُ لَهُمْ، وَأَمَرَتْهُمْ أَنْ يُشْرِكُوا بِي مَا لَمْ أُنْزِلْ بِهِ سُلْطَانًا.
আমি আমার সকল বান্দাকে সৃষ্টি করেছি দ্বীনে হানীফের (তাওহীদের) উপর। শয়তান এসে তাদেরকে তাদের দ্বীন থেকে সরিয়ে দিয়েছে। আর তাদের জন্য আমি যা হালাল করেছি সে তা হারাম করেছে এবং তাদেরকে আমার সঙ্গে এমন সব জিনিস শরীক করার আদেশ করেছে, যার স্বপক্ষে আমি কোনো প্রমাণ অবতীর্ণ করিনি। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ২৮৬৫
আরব মুশরিক হোক বা অনারব, অতীতের মুশরিক হোক বা বর্তমানের- সবার সব ধরনের শিরকী ধ্যান-ধারণার ব্যাপারে তাওহীদের অনুসারী একজন মুমিনের বক্তব্য সেটাই, যা কুরআন মাজীদে হযরত

ইউসুফ আলাইহিস সালামের যবানীতে বিবৃত হয়েছে-
اِنِّیْ تَرَكْتُ مِلَّةَ قَوْمٍ لَّا یُؤْمِنُوْنَ بِاللهِ وَ هُمْ بِالْاٰخِرَةِ هُمْ كٰفِرُوْنَ، وَ اتَّبَعْتُ مِلَّةَ اٰبَآءِیْۤ اِبْرٰهِیْمَ وَ اِسْحٰقَ وَ یَعْقُوْبَ مَا كَانَ لَنَاۤ اَنْ نُّشْرِكَ بِاللهِ مِنْ شَیْء ذٰلِكَ مِنْ فَضْلِ اللهِ عَلَیْنَا وَ عَلَی النَّاسِ وَ لٰكِنَّ اَكْثَرَ النَّاسِ لَا یَشْكُرُوْنَ، یٰصَاحِبَیِ السِّجْنِ ءَاَرْبَابٌ مُّتَفَرِّقُوْنَ خَیْرٌ اَمِ اللهُ الْوَاحِدُ الْقَهَّارُ، ماَ تَعْبُدُوْنَ مِنْ دُوْنِهٖۤ اِلَّاۤ اَسْمَآءً سَمَّیْتُمُوْهَاۤ اَنْتُمْ وَ اٰبَآؤُكُمْ مَّاۤ اَنْزَلَ اللهُ بِهَا مِنْ سُلْطٰنٍ اِنِ الْحُكْمُ اِلَّا لِله اَمَرَ اَلَّا تَعْبُدُوْۤا اِلَّاۤ اِیَّاه ذٰلِكَ الدِّیْنُ الْقَیِّمُ وَ لٰكِنَّ اَكْثَرَ النَّاسِ لَا یَعْلَمُوْن.

হানাফী ফিকহ (Hanafi Fiqh)

12 Oct, 15:16


একমাত্র মাধ্যম।

কুরআনে কারীমে বারবার উল্লেখিত হয়েছে, প্রত্যেক নবী-রাসূলের দাওয়াত এটাই ছিল যে, তোমরা আল্লাহর ইবাদত কর; তিনি এক, তাঁর কোনো অংশীদার নেই, তিনি ছাড়া কোনো মাবুদ নেই।

ইরশাদ হয়েছে-
وَ مَاۤ اَرْسَلْنَا مِنْ قَبْلِكَ مِنْ رَّسُوْلٍ اِلَّا نُوْحِیْۤ اِلَیْهِ اَنَّهٗ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّاۤ اَنَا فَاعْبُدُوْن.
আমি তোমার পূর্বে এমন কোনো রাসূল পাঠাইনি, যার প্রতি আমি এই ওহী নাযিল করিনি যে, ‘আমি ছাড়া অন্য কোনো মাবুদ নেই। সুতরাং আমারই ইবাদত করা।’ Ñসূরা আম্বিয়া (২১) : ২৫
وَ لَقَدْ بَعَثْنَا فِیْ كُلِّ اُمَّةٍ رَّسُوْلًا اَنِ اعْبُدُوا اللهَ وَ اجْتَنِبُوا الطَّاغُوْتَ، فَمِنْهُمْ مَّنْ هَدَی اللهُ وَ مِنْهُمْ مَّنْ حَقَّتْ عَلَیْهِ الضَّلٰلَةُ.
নিশ্চয়ই আমি প্রত্যেক উম্মতের মাঝে কোনো না কোনো রাসূল পাঠিয়েছি এই পথ নির্দেশ দিয়ে যে, তোমরা আল্লাহর ইবাদত কর এবং তাগূতকে১ পরিহার কর। তারপর তাদের মধ্যে কতক তো এমন ছিল, যাদেরকে আল্লাহ হেদায়েত দান করেছেন আর কতক ছিল এমন, যাদের উপর বিপথগামিতা অবধারিত হয়ে গেছে। সূরা নাহল (১৬) : ৩৬

কুরআনে কারীমের বিভিন্ন সূরায় অনেক নবী-রাসূলের দাওয়াতের বিস্তারিত বর্ণনা আছে। বিশেষত সূরা হূদ (সূরা নং ১১) এবং সূরা শুআরায় (সূরা নং ২৬)

একেকজন রাসূলের নাম নিয়ে নিয়ে তাঁদের দাওয়াতের বর্ণনা বিবৃত হয়েছে। তাঁদের সবার দাওয়াত একই ছিল-
قَالَ یٰقَوْمِ اعْبُدُوا اللهَ مَا لَكُمْ مِّنْ اِلٰهٍ غَیْرُهٗ.
হে আমার কওম! আল্লাহর ইবাদত কর। তিনি ছাড়া তোমাদের অন্য কোনো মাবুদ নেই। -সূরা হূদ (১১) : ৫০, ৬১, ৮৪
اَنْ لَّا تَعْبُدُوْۤا اِلَّا اللهَ.

তোমরা আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো ইবাদত করো না। -সূরা হূদ (১১) : ২৬
فَاتَّقُوا اللهَ وَ اَطِیْعُوْنِ.

সুতরাং তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং আমার আনুগত্য কর। -সূরা শুআরা (২৬) : ১০৮, ১২৬, ১৩১, ১৪৪, ১৫০, ১৬৩, ১৭৯

সূরা আনকাবূতে আছে-
وَ اِبْرٰهِیْمَ اِذْ قَالَ لِقَوْمِهِ اعْبُدُوا اللهَ وَ اتَّقُوْهُ، ذٰلِكُمْ خَیْرٌ لَّكُمْ اِنْ كُنْتُمْ تَعْلَمُوْنَ، اِنَّمَا تَعْبُدُوْنَ مِنْ دُوْنِ اللهِ اَوْثَانًا وَّ تَخْلُقُوْنَ اِفْكًا، اِنَّ الَّذِیْنَ تَعْبُدُوْنَ مِنْ دُوْنِ اللهِ لَا یَمْلِكُوْنَ لَكُمْ رِزْقًا فَابْتَغُوْا عِنْدَ اللهِ الرِّزْقَ وَ اعْبُدُوْهُ وَ اشْكُرُوْا لَهٗ، اِلَیْهِ تُرْجَعُوْنَ.
এবং আমি ইবরাহীমকে পাঠালাম, যখন সে তার সম্প্রদায়কে বলেছিল, আল্লাহর ইবাদত কর এবং তাঁকে ভয় কর। এটাই তোমাদের পক্ষে শ্রেয়, যদি তোমরা জ্ঞান রাখ। তোমরা তো আল্লাহর পরিবর্তে কেবল প্রতিমাদেরই পূজা করছ এবং রচনা করছ মিথ্যা। তোমরা আল্লাহ ছাড়া যাদের ইবাদত কর, তারা তোমাদেরকে রিযিক দেওয়ার ক্ষমতা রাখে না। সুতরাং আল্লাহর কাছে রিযিক সন্ধান কর। তাঁর ইবাদত কর এবং তাঁর কৃতজ্ঞতা আদায় কর। তাঁরই কাছে তোমাদের ফিরিয়ে নেওয়া হবে। -সূরা আনকাবূত (২৯) : ১৬-১৭

আর সূরা শুআরায় আছে-
وَ اتْلُ عَلَیْهِمْ نَبَاَ اِبْرٰهِیْمَ، اِذْ قَالَ لِاَبِیْهِ وَ قَوْمِهٖ مَا تَعْبُدُوْنَ، قَالُوْا نَعْبُدُ اَصْنَامًا فَنَظَلُّ لَهَا عٰكِفِیْنَ، قَالَ هَلْ یَسْمَعُوْنَكُمْ اِذْ تَدْعُوْنَ، اَوْ یَنْفَعُوْنَكُمْ اَوْ یَضُرُّوْنَ، قَالُوْا بَلْ وَجَدْنَاۤ اٰبَآءَنَا كَذٰلِكَ یَفْعَلُوْنَ، قَالَ اَفَرَءَیْتُمْ مَّا كُنْتُمْ تَعْبُدُوْنَ، اَنْتُمْ وَ اٰبَآؤُكُمُ الْاَقْدَمُوْنَ، فَاِنَّهُمْ عَدُوّ لِّیْۤ اِلَّا رَبَّ الْعٰلَمِیْنَ، الَّذِیْ خَلَقَنِیْ فَهُوَ یَهْدِیْنِ، وَ الَّذِیْ هُوَ یُطْعِمُنِیْ وَ یَسْقِیْنِ، وَ اِذَا مَرِضْتُ فَهُوَ یَشْفِیْنِ، وَ الَّذِیْ یُمِیْتُنِیْ ثُمَّ یُحْیِیْنِ، وَ الَّذِیْۤ اَطْمَعُ اَنْ یَّغْفِرَ لِیْ خَطِیْٓـَٔتِیْ یَوْمَ الدِّیْنِ.

(হে নবী!) তাদেরকে শোনাও ইবরাহীমের বৃত্তান্ত। যখন সে তার পিতা ও সম্প্রদায়কে বলল, তোমরা কিসের ইবাদত কর। তারা বলল, আমরা প্রতিমাদের পূজা করি এবং তাদেরই সামনে ধরনা দিয়ে থাকি। ইবরাহীম বলল, তোমরা যখন তাদেরকে ডাক, তখন তারা কি তোমাদের কথা শোনে? কিংবা তারা কি তোমাদের কোনো উপকার বা ক্ষতি করতে পারে? তারা বলল, আসল কথা হল, আমরা আমাদের বাপ-দাদাদেরকে এমনই করতে দেখেছি। ইবরাহীম বলল, তোমরা কি কখনও গভীরভাবে লক্ষ করে দেখেছ তোমরা কিসের পূজা করছ? তোমরা এবং তোমাদের বাপ-দাদাগণ? এরা সব আমার শত্রু এক রাব্বুল আলামীন ছাড়া, যিনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন। তারপর তিনিই আমার পথপ্রদর্শন করেন। এবং আমাকে খাওয়ান ও পান করান। এবং আমি যখন পীড়িত হই, আমাকে শেফা দান করেন। এবং যিনি আমার মৃত্যু ঘটাবেন, ফের আমাকে জীবিত করবেন। এবং যাঁর কাছে আমি আশা রাখি, হিসাব-নিকাশের দিন তিনি আমার অপরাধসমূহ ক্ষমা করবেন।-সূরা শুআরা (২৬) : ৬৯-৮২

হানাফী ফিকহ (Hanafi Fiqh)

12 Oct, 15:16


এমনটা করা স্পষ্ট হারাম এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে তা কুফর পর্যন্ত পৌঁছে যায়। ইসলাম তার অনুসারীদের উপর এ ধরনের শৈথিল্যকে হারাম করেছে,
আর দ্বীন-ঈমানের ক্ষেত্রে শৈথিল্যকে হারাম করার একমাত্র অধিকার সত্য ধর্ম ইসলামেরই আছে। সেজন্য যাদেরকে আল্লাহ তাআলা এই দ্বীন গ্রহণের তাওফীক দিয়েছেন তাদের জন্য এটা অকৃতজ্ঞতা ও অবাধ্যতার বিষয় যে, তারা চিন্তা-চেতনা, দৃষ্টিভঙ্গি ও ঈমান-আমলের বিষয়ে শৈথিল্যে লিপ্ত হবে।

আর এটাও বাস্তবতা ও ইসলামী শিক্ষা সম্পর্কে অজ্ঞতা ও উদাসীনতার ফল যে, কেউ কেউ এই নাজায়েয কাজের পক্ষে এই বলে সাফাই দেওয়ার চেষ্টা করছে যে, ‘এটা তো ধর্মীয় বিষয় নয়; বরং সংস্কৃতির বিষয়’ এবং ‘ধর্ম যার যার উৎসব সবার’!!

প্রথমত এই কথাই তো ঠিক নয় যে, সংস্কৃতি দ্বীন, দ্বীনের আকীদা-বিশ্বাস, বিধি-বিধান ও চিন্তা-চেতনা থেকে বিচ্ছিন্ন বিষয়। আর একথাও ঠিক নয় যে, কোনো জাতির ধর্মীয় উৎসব অপরাপর সব জাতির জন্যই উৎসব। এটা না সে জাতির ধর্মে গ্রহণযোগ্য হবে, না অন্যান্য জাতির ধর্মে। এটা তো না জেনে বলা সম্পূর্ণ অবাস্তব কথা।

দ্বিতীয়ত এই কথা মুসলিম উম্মাহর ক্ষেত্রে সঠিক হওয়ার কোনো সুযোগই নেই। কারণ এই উম্মত একমাত্র সত্য ধর্মের অনুসারী, যা পূর্ণাঙ্গ দ্বীন এবং যার রয়েছে নিজস্ব আকীদা-বিশ্বাস ও শরীয়ত এবং স্বতন্ত্র সংস্কৃতি। এ দ্বীনের শরীয়তে পানাহার থেকে নিয়ে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে বৈধ-অবৈধের নিজস্ব বিধি-বিধান রয়েছে।

এটা তো একমাত্র দ্বীন, যার যাবতীয় প্রমাণ ও উৎস হুবহু সংরক্ষিত আছে এবং যার প্রথম যুগের মহামনীষীদের আমল ও কর্মপদ্ধতি সূত্রসহ বিদ্যমান রয়েছে। এই ধর্মে ঈদ ও উৎসবের বিষয়টি অনেক নাযুক। এ ধর্মে কঠিনভাবে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, তার অনুসারীরা যেন নিজেদের সংস্কৃতি সংরক্ষণ করে এবং নিজেদের ঈদ-উৎসবের প্রতি গুরুত্বারোপ করে আর বিধর্মীদের সংস্কৃতি ও উৎসব-পার্বণ থেকে দূরে থাকে।
তৃতীয়ত যে উৎসবের নামই হল ‘দুর্গাপূজা’ সেটা ধর্ম ও বিশ্বাস থেকে বিচ্ছিন্ন নিছক উৎসব হয় কীভাবে?
আর ‘পূজা’-ই যদি তাদের ধর্মের অংশ না হয়, তাহলে তাদের ধর্ম আর কোন্ জিনিসের নাম?!

মুসলিম উম্মাহর প্রত্যেক সদস্যের জানা থাকা উচিত, আমাদের ধর্ম -
১. পূর্ণাঙ্গ।
২. জীবনের প্রতিটি অঙ্গনে তার বিধি-বিধান ও দিকনিদের্শনা বিদ্যমান।
৩. এর দাওয়াত সবার জন্য বিস্তৃত। বংশ, বর্ণ, অঞ্চল ও ভাষা নির্বিশেষে সবধরনের মানুষের জন্য এর দাওয়াত সুবিস্তৃত।

যে-ই তা কবুল করবে, সফলতা লাভ করবে এবং আখেরাতে মুক্তি পাবে। আর কবুল না করলে শুধু ক্ষতি আর ক্ষতি। তবে বিধর্মীদের প্রতি সদ্ভাব বজায় রাখার নির্দেশের কারণে ইসলাম কাউকে (আল্লাহ তাআলার নিকট তা একমাত্র সত্য ধর্ম হওয়া সত্ত্বেও) তা গ্রহণে বাধ্য করে না। অবশ্য তা যে একমাত্র সত্য ধর্ম আর অন্যসব যে বাতিল ও মিথ্যা ধর্ম সে সম্পর্কে ওহীর মাধ্যমে সুস্পষ্ট প্রমাণাদি পেশ করে ‘হুজ্জত তাম’ করে দেওয়া হয়েছে এবং অজুহাত দাঁড় করানোর সকল পথ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

৪. চিরস্থায়ী ও চিরকালীন ধর্ম। এই ধর্ম রহিত হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। এই ধর্মের শরীয়ত ও হেদায়েতগ্রন্থ তো নাযিলই হয়েছে সর্বশেষ নবী ও রাসূল হযরত মুহাম্মাদ মুস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর।

৫. এর যাবতীয় শিক্ষা ও বিধি-বিধান এবং সেগুলোর সকল উৎস ও প্রমাণ হুবহু সংরক্ষিত আছে এবং কিয়ামত পর্যন্ত সংরক্ষিত থাকবে। এই দ্বীনের মাঝে সামান্যতম বিকৃতি বা পরিবর্তন ঘটিয়ে কেউ পার পেয়ে যাবে এবং তা দ্বীন হিসাবে চালিয়ে দেবে- এটা সম্ভবই নয়।

দ্বীন ও শরীয়ত সম্পর্কে অবগত এমন যে কারো জানা আছে, এই দ্বীনের মূল ভিত্তি দুটি জিনিসের উপর-
ক. তাওহীদের আকীদা এবং একমাত্র আল্লাহ তাআলার ইবাদত।
খ. আল্লাহপ্রদত্ত শরীয়তের অনুসরণ এবং তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নত ও উত্তম আদর্শের অনুকরণ।

তাওহীদ তখনই সাব্যস্ত হবে, যখন মানুষ সব ধরনের শিরক থেকে বেঁচে থাকবে। শরীয়তের অনুসরণ তখনই বোঝা যাবে, যখন শরীয়ত পরিপন্থী সবধরনের নিয়ম-নীতি ও আইন-কানুন থেকে বেঁচে থাকবে। আর সুন্নাহর অনুসরণ তখনই সাব্যস্ত হবে, যখন সবধরনের বিদআত ও নতুন-পুরাতন জাহেলী রীতি-নীতি ও সংস্কৃতি থেকে বিরত থাকবে।

আল্লাহ তাআলা যত নবী-রাসূল পাঠিয়েছেন সকলের মৌলিক দাওয়াত এটাই ছিল যে, আল্লাহ তাআলার ইবাদত করা, যিনি এক, যার কোনো শরীক নেই। পাশাপাশি সব ধরনের শিরক থেকে বেঁচে থাকা এবং আল্লাহকে ভয় করা। আর রাসূলের আনুগত্য করা, রাসূলের মাধ্যমে প্রদত্ত শরীয়তকে নিজের উপর অত্যাবশ্যকীয় মেনে নেয়া এবং তাঁর উত্তম আদর্শের অনুসরণ করা।

সর্বশেষ নবী ও রাসূল হযরত মুহাম্মাদ মুস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর আল্লাহ তাআলা সর্বশেষ হেদায়েতগ্রন্থ কুরআন মাজীদ নাযিল করেছেন, তাঁকে সর্বশেষ শরীয়ত দান করেছেন এবং তাঁর উম্মতকে সর্বশেষ উম্মত বানিয়েছেন। আর ঘোষণা করেছেন, দ্বীনে তাওহীদ (যা চিরকালীন দ্বীন) আর শরীয়তে মুহাম্মাদী (যা কুরআন নাযিলের সময় থেকে নিয়ে কিয়ামত পর্যন্ত পুরো মানবজাতির জন্য একমাত্র শরীয়ত ও জীবনবিধান) হল এখন মুক্তি ও সফলতার

হানাফী ফিকহ (Hanafi Fiqh)

12 Oct, 15:16


সবরের_সাথে_পড়ি!

উদারতা অর্থ আকীদা ও আদর্শের বিসর্জন নয়।
মাওলানা মুহাম্মাদ আব্দুল মালেক (দা:বা)

এক হল মুদারাত তথা উদারতা, যার অর্থ হল, নিজের প্রতিপক্ষের সঙ্গে উত্তম আচরণ ও কোমল ব্যবহার করা এবং তার কোনো হক নষ্ট না করা; বরং তার সবধরনের হক ও অধিকার যথাযথভাবে আদায় করা। উদারতা ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা এবং অনেক বড় ঈমানী বৈশিষ্ট্য।

আরেক হল মুদাহানাত তথা শৈথিল্য প্রদর্শন। অর্থাৎ আকীদা-বিশ্বাস ও আদর্শিক বিষয়গুলোকে হালকা মনে করা। অন্যদের খুশি করতে গিয়ে তাদের ত্রুটি-বিচ্যুতি, ভ্রান্তি ও গোমরাহীগুলোকে সঠিক বা গ্রহণযোগ্য বলা। ইসলামের দৃষ্টিতে এটা নিষিদ্ধ এবং এটা মুনাফেকির অনেক ভয়াবহ প্রকার।

ইসলামী শিক্ষার অভাবে এবং অনেক সময় ঈমানী দুর্বলতার কারণে আজকাল অনেকেই উদারতার নামে শৈথিল্যে লিপ্ত হচ্ছেন। এজন্য জরুরি হল, এই দুইয়ের সঠিক পরিচয় ও বাস্তবতা ব্যাপকভাবে চর্চা করা ।

ইসলাম তার অনুসারীদের নির্দেশ দেয়, তারা যেন সত্যের উপর অবিচল থাকে এবং সত্যকে সত্য আর মিথ্যাকে মিথ্যা বলে অভিহিত করে। পাশাপাশি এই আদেশও করে, তারা যেন প্রতিপক্ষের সঙ্গে উত্তম ও কোমল আচরণ করে; এমনকি ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহর সবচেয়ে বড় বিরোধী বরং শত্রু অমুসলিমদের প্রতিও যেন তারা কোমল ও সৌহার্দপূর্ণ আচরণ করে এবং তাদের যাবতীয় হক ও অধিকার আদায় নিশ্চিত করে।

খুলাফায়ে রাশেদীন, ন্যায়পরায়ণ খলীফা ও বাদশাগণ এবং প্রত্যেক যুগের দ্বীনদার রাষ্ট্রপ্রধানগণ অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে ইসলামের এই হুকুম পালন করেছেন। কোনো কোনো ইতিহাসবিদ অমুসলিমদের সঙ্গে মুসলমানদের ধর্মীয় সৌহার্দপূর্ণ ও উদার আচরণের নির্বাচিত কিছু ঘটনা সংকলন করেছেন; আর তাতেই বড় বড় কয়েক খণ্ডের কিতাব তৈরি হয়ে গেছে।

এই উদারতার বাস্তবতা হল, সকল অমুসলিম আল্লাহ তাআলার বিদ্রোহী হওয়া সত্ত্বেও শুধু আল্লাহর সৃষ্টি মানুষ হওয়ার কারণে আল্লাহ তাআলা তাদের জন্য যেসব হক নির্ধারণ করে দিয়েছেন সেসব হকের প্রতি যথাযথ লক্ষ্য রাখা। এদিকে মুসলমানগণ আল্লাহর ওয়াফাদার বান্দা হওয়ার কারণে তারা এ বিষয়ের আরো বেশি উপযুক্ত যে, তারা পক্ষের-বিপক্ষের সবার সঙ্গে ইনসাফপূর্ণ, উত্তম ও সুন্দর আচরণ করবে। এর একটি বড় হেকমত এটাও যে, উত্তম আচরণের ফলে হতে পারে তাদের অন্তরে সত্য ধর্মের প্রতি ভালবাসা সৃষ্টি হবে। অতপর তা তাদের হেদায়েত ও নাজাতের মাধ্যম হয়ে যাবে। এজন্য সৌহার্দপূর্ণ উদার আচরণ মূলত দ্বীনের প্রতি নীরব দাওয়াত। ইতিহাস সাক্ষী, ইসলামের প্রচার-প্রসার ও ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা আসলে ইনসাফ ও উত্তম আচরণেরই ফল।

আমাদের পূর্বসূরীদের মাঝে উদারতা তো পূর্ণ মাত্রায় ছিল; কিন্তু শৈথিল্য তাঁদের মধ্যে একদম ছিল না। ঈমান-আকীদার বিষয়ে তাঁরা অত্যন্ত মজবুত ছিলেন। চিন্তা-চেতনা ও আদর্শ-ঐতিহ্যের ক্ষেত্রে তাঁরা পাহাড়ের মতো অটল-অবিচল ছিলেন। শুধু শিরক নয়; বরং শিরকের সামান্য মিশ্রণ বা সন্দেহ আছে এমন সব বিষয় থেকে তাঁরা অত্যন্ত সতর্কতার সাথে বেঁচে থাকতেন। বিধর্মীদের বেশ-ভূষা, চাল-চলন এবং তাদের উৎসব-পার্বণ থেকে অনেক দূরে থাকতেন।

কারণ তাঁরা জানতেন, ইসলাম যেভাবে বিরোধীদের সঙ্গে উত্তম আচরণ ও সদ্ভাব বজায় রাখাকে ফরয করেছে, তার চেয়ে আরো গুরুত্বের সঙ্গে ফরয করেছে ঈমান-ইসলাম, আকীদা-বিশ্বাস ও আদর্শ-ঐতিহ্য হেফাযত করাকে। যেভাবে উদারতার ইসলামী বিধান উপেক্ষা করে কোনো অমুসলিমের উপর যুলুম করাকে ইসলাম হারাম করেছে, তার চেয়ে আরো গুরুত্বের সঙ্গে হারাম করেছে সত্য ও বাস্তবতার উপর যুলুম করাকে ।

এজন্য আমাদের অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে বুঝতে হবে, মন্দ পরিবেশ বা ভুল প্রচারণায় প্রভাবিত হয়ে ঈমান-ইসলামের মৌলিক দাবিগুলো খুইয়ে বসা, আকীদা-বিশ্বাস ও আদর্শ-ঐতিহ্যকে বিসর্জন দেয়া এবং সত্যকে সত্য ও মিথ্যাকে মিথ্যা না বলা এগুলো কখনো উদারতা নয়। এগুলো তো পরিষ্কার শৈথিল্য, যা একেবারে হারাম। আর সত্য কথা হল, ইসলামের দৃষ্টিতে এটা মুনাফেকির একটা শাখা।

যেমনটি আগে বলা হয়েছে, মুসলিম দেশে অমুসলিম নাগরিকদের মানুষ হিসাবে প্রাপ্য সব ধরনের অধিকার সুসংরক্ষিত। নিজ নিজ ধর্ম পালন করা এবং আপন আপন গণ্ডিতে শান্তিপূর্ণভাবে নিজ নিজ ধর্মীয় উৎসব পালন করার পূর্ণ অধিকার তাদের রয়েছে। রাষ্ট্রের দায়িত্ব হল, সে নিজে তাতে বাধা দেবে না এবং অন্য কাউকে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির সুযোগ দেবে না। কিন্তু তার অর্থ কখনো এই নয় যে, তাদের ধর্মীয় আচার ও অনুষঙ্গগুলো (যেগুলোর ভিত্তি স্পষ্টত তাদের ধর্মীয় ধ্যান-ধারণা ও বিশ্বাসের উপর) কোনো মুসলমান পালন করা শুরু করবে অথবা আগে বেড়ে তাদের ধর্মীয় আচারানুষ্ঠানে যোগ দিয়ে কিংবা তাদের ধর্মীয় নিদর্শনগুলো নিজের মধ্যে ধারণ করে তাদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করবে।

হানাফী ফিকহ (Hanafi Fiqh)

11 Oct, 16:18


ইউটিউব থেকে উপার্জিত অর্থের বিধান

নিজের তৈরিকৃত ভিডিও-এর সাথে বিভিন্ন কোম্পানির বিজ্ঞাপন যুক্ত করার বিনিময়ে ইউটিউব থেকে অর্থ উপার্জনের বিষয়টি নিরাপদ নয়। কারণ ইউটিউব কখন কোন ধরনের এবং কোন কোম্পানির বিজ্ঞাপন দেবে তাতে ভিডিওদাতার এখতিয়ার থাকে না বরং এসব কিছু ইউটিউব নিয়ন্ত্রণ করে। সে তার ইচ্ছা মত যে কোনো বিজ্ঞাপন দিতে পারে। অথচ বাছ-বিচার ছাড়া যে কোনো বিজ্ঞাপন যুক্ত করেই অর্থ-উপার্জন বৈধ নয়। বরং অর্থ-উপার্জন বৈধ হওয়ার বিষয়টি নির্ভর করে কিছু শর্তাবলীর উপর যার কয়েকটি নিম্নরূপ :

১. যে বিষয়ের বিজ্ঞাপন দেওয়া হচ্ছে সেটি বৈধ হওয়া।

২. বিজ্ঞাপনের চিত্র শরীয়ত পরিপন্থী না হওয়া।

৩. বিজ্ঞাপন ও এর ভাষা এবং উপস্থাপনের মধ্যে কোনো ধরনের ধোঁকা বা প্রতারণার আশ্রয় না নেয়া ইত্যাদি।

আর সাধারণত যেহেতু এসব শর্তাবলী রক্ষা করা ভিডিওদাতার পক্ষে সম্ভব হয় না, তাই এ ধরনের উপার্জন থেকে বিরত থাকা উচিত।

-কিতাবুল আছল ৪/২০; বাদায়েউস সানায়ে ৪৪৬; ফিকহুন নাওয়াযিল ৩/২৮৪

মাসিক আল কাউসার