এক যাহেদ (সংসার বিরাগী) কে জিজ্ঞাসা করা হল যে, সবচেয়ে ফলপ্রসূ ওয়ায ও উপদেশ কিসে লাভ হয়?
উত্তরে তিনি বললেন, “মৃতব্যক্তির প্রতি দৃষ্টিপাতে।”
হাসান বাসরী রাহিঃ বলেন, “হে আদম সন্তান! মুমিন ব্যক্তি সর্বদা ভীত অবস্থায় সকাল করে, যদিও সে সৎকর্মশীল হয়।
কেননা সে সর্বদা দু’টি ভয়ের মধ্যে থাকে। (ক) বিগত পাপ সমূহের ব্যাপারে। সে জানেনা আল্লাহ সেগুলির বিষয়ে কি করবেন। (খ) মৃত্যুর ভয়, যা এখনো সামনে আছে। সে জানেনা আল্লাহ তাকে তখন কোন পরীক্ষায় ফেলবেন। অতএব আল্লাহ রহম করুন ঐ ব্যক্তির উপরে, যে এগুলি বিষয়ে গভীরভাবে চিন্তা করে ও জ্ঞান হাছিল করে। দূরদর্শিতা লাভ করে এবং নিজেকে প্রবৃত্তি পরায়ণতা থেকে বিরত রাখে’।” [১]
তিনি বলতেন, “দুনিয়া তিনদিনের জন্য। গতকাল, যে তার আমল নিয়ে চলে গেছে। আগামীকাল, সেটা তুমি নাও পেতে পার। আজকের দিন, এটি তোমার জন্য। অতএব তুমি এর মধ্যে আমল কর।” [২]
জনৈক ব্যক্তি তাকে কুশল জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, “ঐ ব্যক্তির অবস্থা কেমন থাকবে, যে সকাল-সন্ধ্যা মৃত্যুর প্রতীক্ষা করে? সে জানেনা আল্লাহ তার সাথে কি ব্যবহার করবেন।” [৩]
তিনি যখন কোন জানাযা পড়াতেন, তখন কবরের মধ্যে উঁকি মেরে জোরে জোরে বলতেন, কত বড়ই না উপদেশদাতা সে। যদি জীবিত অন্তরগুলি তার অনুগামী হ’ত! [৪]
তাঁকে একদিন জনৈক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করল, আপনি কেমন আছেন? জবাবে তিনি বলেন, তুমি আমাকে আমার অবস্থা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করছ? আচ্ছা ঐ ব্যক্তিদের সম্পর্কে তোমার কি ধারণা যারা একটি নৌকায় চড়ে সাগরে গেছে। অতঃপর মাঝ দরিয়ায় গিয়ে তাদের নৌকা ভেঙ্গে গেছে। তখন তারা যে যা পেয়েছে কাঠের টুকরা নিয়ে বাঁচার চেষ্টা করছে। লোকটি বলল, সেটা তো বড় ভয়ংকর অবস্থা। হাসান বাছরী বললেন, আমার অবস্থা তার চাইতে কঠিন’।[৫]
এতবড় একজন বিখ্যাত তাবেঈ, আবেদ, যাহেদ, দুনিয়াত্যাগী ব্যক্তির যদি এই অবস্থা হয়, তাহ’লে আমাদের অবস্থা কেমন হওয়া উচিৎ ভেবে দেখা কর্তব্য।
[১]. ইবনুল জাওযী, আদাবুল হাসান বাছরী, ১২৩ পৃ.।
[২]. ইবনু আবিদ্দুনিয়া, আয-যুহদ, ১৯৭ পৃ.।
[৩]. ইবনু হিববান, রওযাতুল উকালা, ৩২ পৃ.।
[৪]. ইবনু আবিদ্দুনিয়া, ক্বাছরুল আমাল, ১৪৫ পৃ.।
[৫]. আবুবকর আল-মারূযী, আখবারুশ শুয়ূখ ওয়া আখলাক্বিহিম ১৮৩ পৃ.।