যদি প্রশ্ন করা হয়, আমার প্রিয় কাজ কী? তাহলে আমি একশবার বলব, হাজার বার বলব, বাচ্চাদের সাথে সময় কাটানো। বাচ্চাদেরকে গল্প শোনানো। ওদের সাথে খেলা। মা/-র্শা/-ল আর্ট প্র্যাকটিস করা। ওদের নিয়ে ক্র্যাফট মেকিং। ওদের সূরা পড়ানো। ইসলামের কথা বলা। মুস/লিম/দের কথা বলা।
.
এসব কাজ করে আমি কখনো বোরড হই না। হ্যাঁ, ক্লান্ত হই। সারাদিন সাংসারিক কাজ সামলানোর পর আমার অসম্ভব টায়ার্ড লাগে। তবু যখন রাত হয়ে গেলে বাচ্চারা বলে, এবার আমাদের সাথে শোও, আমাদের সাথে ঘুমাও। আমি কথাটা ভীষণ এনজয় করি। মুখে কপট বি_র_ক্তি দেখিয়ে বলি, তোমাদেরকে দেখলে মনে হয় মা যেন সারাদিন তোমাদের সাথে ছিলাম না! শুধুমাত্র আরেকটা দুধের শিশু ও আছে, তাই বড়গুলোর সাথে ঘুমানোটা আর হয় না। কিন্তু আমার ইচ্ছা করে ওদের কথা মেনে নিই। আমার ইচ্ছা করে হ্যা-রি পটার বইয়ের টাইম ট্রাভেলের মতো একই সময়ে বড়গুলোর সাথে গুটুরগুটুর গল্প করি আর অন্যপাশে পিচ্চিটার ফোকলা হাসি দেখে ছড়া কাটি। আমার ইচ্ছে করে দিনে-রাতে চব্বিশ ঘণ্টাই জেগে থেকে ওদের সঙ্গ উপভোগ করি৷
.
এই যে বাচ্চাদের সাথে সারাটাদিন কাটিয়ে দিচ্ছি৷ আমার অলমোস্ট ফুল এনার্জি ওদের পিছে দিয়ে দিচ্ছি, এজন্য আমার একটুও খারাপ লাগে না। বরং যেই দিনগুলোতে আমি অসুস্থ হয়ে পড়ি, বাসার কাজগুলো ঠিকভাবে গোছাতে পারি না, বাচ্চাদেরকে বেশি সময় দিতে পারিনা সেদিন আমার খারাপ লাগে। যখন ওদের জন্য পরিকল্পনা মাফিক মোটামুটি সব কাজ করতে পারি, সে দিনগুলোই আমার কাছে সেরা। অন্তর থেকে কেমন একটা শান্তি অনুভব করি। খুব স্যাটিসফাইড লাগে।
.
আমি ছোটবেলা থেকে মোটামুটি ভালো রেজাল্ট করেছি৷ ভালো ভালো প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করেছি। আমার মা-বাবা এবং শিক্ষক-শিক্ষিকারা আমার উপর অনেক আশা রেখেছেন, আমাকে নিয়ে বড় বড় স্বপ্ন দেখেছেন। তাদের অনেকেই হয়তো আমাকে এখন একজন ব্য/র্থ মানুষ ভাবেন। আমার কাজগুলোকে নী-চু নজরে দেখেন। তাদের অভিব্যক্তিতে ফুটে ওঠে, তুবা মেয়েটা জীবনে কিছুই করতে পারল না।
.
কিন্তু আমি যখন থেকে বুঝতে শিখেছি, ইসলাম আমাকে নারী হিসেবে কী দায়িত্ব দিয়েছে, তখন থেকে আমার বিন্দুমাত্রও ইচ্ছা হয়নি চাকরি করবার বা নিজের ক্যারিয়ার সাজানোর। সমাজ হয়তো আমাদের এই চিন্তাটা বুঝতে পারে না। তাদের কাছে অনেক চটকদার অপশন আছে। ক্যারিয়ার, প্রোমোশন, হাই-স্যালারি ইত্যাদি। এগুলোই এখন মানুষের স্ট্যাটাস মাপার মাপকাঠি। এগুলো ছাড়া কেউই আপনাকে ঠিক সমীহ করতে চাইবে না। কিন্তু এসব নিয়ে আমি বিন্দুমাত্র চিন্তিত নই। আমার মূল ফোকাসই হয়ে গেছে আমার পরিবার, আমার সন্তান-সন্ততি, আমাদের দ্বীন-ঈমান-আমল।
.
এর মাঝে যে আমি কখনোই কোনো ‘জব’ করিনি, তা না। টুকটাক করেছি। তবে পায়ের নি-চে মাটি হিসেবে আমার নিজস্ব কিছু আর্নিং থাকা দরকার এমন মানসিকতা থেকে করিনি। কিংবা আমার নিজের একটা আলাদা পরিচয় থাকা চাই — এই মনোভাবও রাখিনি। বরং আমি যে বিষয়গুলোকে গুরুত্ব দিয়েছি শুধুমাত্র সেই বিষয়গুলো নিয়েই ইনভলভ হওয়ার চেষ্টা করেছি। মানুষের মধ্যে ইসলামী জ্ঞানের প্রচার-প্রসারের তাগিদ থেকে মাদ্রাসা বা ইসলামিক প্রতিষ্ঠানে পড়িয়েছি। বাচ্চাদের জন্য গল্পের বই লিখেছি। আমার সব কর্মকাণ্ড কমবেশি এগুলো ঘিরেই। এর কোনোটাই দুনিয়াবি নজরে খুব বড় কিছু না। এরপরেও যদি কোনোকিছুর জন্য এতটা বেশি সময় দেয়া লাগে, যার কারণে আমার সংসার জীবনে সময় দিতে অসুবিধা হবে, আমি নির্দ্বিধায় সেগুলো করার চিন্তা বাদ দিয়েছি। কেননা এর কোনোটাই আমার মেইন ফোকাস ছিল না।
.
আমার ফার্স্ট প্রায়োরিটি আমার সংসার এবং সন্তানদের আপব্রিঙিং। তাদের তরবিয়ত। আলহামদুলিল্লাহ — এই দুই জিনিস যদি ঠিক থাকে, তাহলে আমি সফল আলহামদুলিল্লাহ। সংসার এবং সন্তানদের পিছে যে সময় যাচ্ছে, সেটা মোটেও সময় নষ্ট নয়। এই টাইমটা আমার ইনভেস্টমেন্ট। অনেকে মনে করে ক্যারিয়ারে সময় দিলাম না, বাচ্চাদের পিছে সংসারের পিছে খেটে খেটে ম/রে গেলাম, এতে আমার কী লাভ হলো? আমি কী পেলাম? নিজের কোনো ক্যারিয়ার নিজের কোনো পরিচয় না থাকা মানে আমার জীবনটাই বৃথা। আমরা মুসলিমরা ভাবি, আলহামদুলিল্লাহ, আমি সংসারের পিছে সময় ইনভেস্ট করে নতুন প্রজন্ম গড়ে তুলছি। আমার সমস্ত সময়, মেধা, শ্রম, প্রচেষ্টা সবকিছু ঢেলে দিয়ে একটু একটু করে আমার সন্তানদেরকে তৈরি করছি। এরচেয়ে বড় প্রজেক্ট আর কী হতে পারে?
.
আমার সন্তানরা যদি আলেম হয়, হাফেজ হয়, মুস-লিম উম্মাহর জন্য বেনেফিশিয়াল কিছু করতে পারে তাহলেই আমাদের এই পরিশ্রম সফল। তাদেরকে আল্লাহর পথে গড়ে তোলার বিনিময়ে আমিও জান্নাতের হক্বদার হয়ে যাব ইন শা আল্লাহ। এখন কবুল করার মালিক আল্লাহ। আমরা তো খালি চেষ্টা করতে পারি।
.
মানুষ হিসেবে আমরা খুবই সীমিত সময় হাতে করে দুনিয়ায় এসেছি। এই সময়টুকু আমি আমার পরিবারে দিব নাকি মানুষের বিজনেসে দিব, এই হিসাব তো আমাকেই করতে হবে। আমি আমার পথ বেছে নিয়েছি। আমাকে কেউ যদি বলে তুমি একজন মা হতে চাও নাকি একজন ইঞ্জিনিয়ার? মা হতে চাও নাকি একজন লেখিকা? মা হতে চাও নাকি একজন সাকসেসফুল ক্যারিয়ার উইম্যান? তাহলে হাজারবার বলব,