সিজদায় দু‘আ!
-
আল্লাহ তা‘আলা বান্দার সন্নিকটেই থাকেন। বান্দার দায়িত্ব তার দিক থেকেও আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া। নৈকট্য বৃদ্ধির মেহনত করে যাওয়া। নৈকট্য ধরে রাখার মুজাহাদা করে যাওয়া। রাব্বে কারীম তার নৈকট্যের কথা ঘোষণা দিয়ে রেখেছেন,
وَإِذَا سَأَلَكَ عِبَادِي عَنِّي فَإِنِّي قَرِيبٌ ۖ أُجِيبُ دَعْوَةَ الدَّاعِ إِذَا دَعَانِ ۖ
(হে নবী!) আমার বান্দাগণ যখন আপনার কাছে আমার সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে, তখন (আপনি তাদেরকে বলুন যে,) আমি এত নিকটবর্তী যে, কেউ যখন আমাকে ডাকে আমি তার ডাক শুনি!
.
এখন আমার দিক থেকে করণীয় কি? রাব্বে কারীম এর পরেই বলে দিয়েছেন,
فَلْيَسْتَجِيبُوا لِي وَلْيُؤْمِنُوا بِي لَعَلَّهُمْ يَرْشُدُونَ
সুতরাং তারাও আমার কথা অন্তর দিয়ে গ্রহণ করুক এবং আমার প্রতি ঈমান আনুক, যাতে তারা সঠিক পথে এসে যায় (বাকারা ১৮৬)।
.
আল্লাহ তা‘আলা আমার কতটুকু নিকটে থাকেন?
وَلَقَدْ خَلَقْنَا الْإِنسَانَ وَنَعْلَمُ مَا تُوَسْوِسُ بِهِ نَفْسُهُ ۖ وَنَحْنُ أَقْرَبُ إِلَيْهِ مِنْ حَبْلِ الْوَرِيدِ
প্রকৃতপক্ষে আমিই মানুষকে সৃষ্টি করেছি এবং তার অন্তরে যেসব ভাবনা-কল্পনা দেখা দেয়, সে সম্পর্কে আমি পরিপূর্ণরূপে অবগত এবং আমি তার গলদেশের শিরা অপেক্ষাও তার বেশি নিকটবর্তী (কাফ ১৬)।
.
বান্দার জন্যে এ এক অকল্পনীয় নেয়ামত। এক অপরিমেয় অনুগ্রহ। এ নেয়ামতের শুকরিয়াস্বরূপ বান্দার কর্তব্য, এই নৈকট্যের সম্মানহানি ঘটে, এমন কোনও কাজ না করা। কিভাবে দিন দিন আরও বেশি নৈকট্য অর্জন করা যায়, সে ফিকিরে থাকা! বান্দা কখন আল্লাহর বেশি নিকটে থাকে? উত্তরটা নবীজি সা.-এর কাছে শুনি,
أَقْرَبُ مَا يَكُونُ الْعَبْدُ مِنْ رَبِّهِ، وَهُوَ سَاجِدٌ، فَأَكْثِرُوا الدُّعَاءَ
বান্দা সিজদাবস্থায় তার রবের বেশি নিকটে থাকে, তাই তোমরা সিজদাবস্থায় বেশি বেশি দু‘আ করো (আবু হুরায়রা রা. মুসলিম)।
.
নবীজি একটা তথ্য দিয়েছেন, পাশাপাশি একটা পরামর্শও দিয়েছেন। পরামর্শের ধরন অনেকটা এমন,
তুমি এখন রবের সবচেয়ে বেশি নিকটে আছো। তাই যা চাওয়ার এখুনি চেয়ে নাও। চাইলেই পাবে। এত কাছে থেকে চাইলে রব তোমার হাতকে ফিরিয়ে দিবেন না। এত কাছে এসে চুপচাপ থেকো না, দু‘আয় মশগুল হয়ে, নৈকট্যকে সর্বোচ্চ কাজে লাগাও। দু‘আ করলে নৈকট্য আরও বাড়বে। সম্পর্ক আরও গাঢ় হবে। পোক্ত হবে। এ প্রসঙ্গে ইবনে আব্বাস রা. বলেছেন,
كَشَفَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم السِّتَارَةَ وَالنَّاسُ صُفُوفٌ خَلْفَ أَبِي بَكْرٍ
নবীজি পর্দা উঠিয়ে দেখলেন, সাহাবায়ে কেরাম আবু বকরের পেছনে সালাতের জন্যে সফবন্দী হয়ে দাঁড়িয়েছে। নবীজি (সুসংবাদ দিয়ে) বললেন,
أَيُّهَا النَّاسُ، إِنَّهُ لَمْ يَبْقَ مِنْ مُبَشِّرَاتِ النُّبُوَّةِ إِلاَّ الرُّؤْيَا الصَّالِحَةُ، يَرَاهَا الْمُسْلِمُ، أَوْ تُرَى لَهُ، أَلاَ وَإِنِّي نُهِيتُ أَنْ أَقْرَأَ الْقُرْآنَ رَاكِعًا أَوْ سَاجِدًا، فَأَمَّا الرُّكُوعُ فَعَظِّمُوا فِيهِ الرَّبَّ عَزَّ وَجَلَّ، وَأَمَّا السُّجُودُ فَاجْتَهِدُوا فِي الدُّعَاءِ، فَقَمِنٌ أَنْ يُسْتَجَابَ لَكُمْ
হে লোকসকল! নবুওয়াতের সুসংবাদ থেকে শুধু বিশুদ্ধ স্বপ্ন অবশিষ্ট থাকবে। মুসলিম এই সত্যস্বপ্ন দেখবে অথবা তাকে (আল্লাহর পক্ষ থেকে) দেখানো হবে। জেনে রাখো, আমাকে রুকু ও সিজদাবস্থায় কুরআন তিলাওয়াত করতে নিষেধ করা হয়েছে। রুকুতে তোমরা আল্লাহ তা‘আলার তা‘যীম (বড়ত্ব বর্ণনা) করো। সিজদায় গিয়ে জানপ্রাণ দিয়ে দু‘আ করো। খুব সম্ভব কবুল করা হবে (মুসলিম)।
.
নবীজির পরে আর কোনও নবী আসবে না। ওহী আসবে না। তবে নবুওয়াতের ছিঁটেফোটা একটা অংশ থেকে যাবে। অর্থাৎ নবীজিকে ওহীর মাধ্যমে, সত্যস্বপ্নের মাধ্যমে, গাইবের সংবাদ আগাম জানিয়ে দেয়া হত, নবীজির পর ওহী থাকবে না, তবে সত্যস্বপ্নের মাধ্যমে মুমিন বান্দাকে কিছু বিষয় সম্পর্কে আগাম জানানো হবে। শেষ যমানায় এই স্বপ্নগুলোর গুরুত্ব হবে অপরিসীম। আল্লাহর অনেক বান্দা স্বপ্ন দেখে এসেছেন, এখনো দেখছেন।
.
এই গুরুত্বপূর্ণ সুন্নাতটা পালন করার চেষ্টা করতে পারি। সিজদার তাসবীহ পড়ার পর কুরআন কারীমের দু‘আগুলো পড়তে পারি! সুন্নাতে সুন্নাত আদায় হলো, আল্লাহর কাছে দু‘আও করা হল। আল্লাহ তা‘আলার একান্ত নৈকট্যে আরো কিছুটা সময় বেশি কাটানো হল। এমনতো নয়, আমার দু‘আটা বৃথা যাবে, রাব্বে কারীম দৃঢ় আশ^াস দিয়েই রেখেছেন,
ادْعُونِي أَسْتَجِبْ لَكُمْ
তোমরা আমাকে ডাকো (আমার কাছে চাও), আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দেবো (গাফির ৬০)।
.
আমি কি কখনো এই সুন্নতটা আদায় করেছি? না করে থাকলে, আজই কি একবার চেষ্টা করে দেখতে পারি না? রাব্বে কারীমের এতটা কাছে, এতটা সান্নিধ্যে গিয়েও কিছু না চেয়ে ফিরে আসতে কেমন লাগে না? আমার কত কিছুর প্রয়োজন! তবে যা চাইব, রাব্বে কারীমের ভাষাতেই চাইব! নিজের ভাষায় নয়। আমার সব চাওয়াই আল্লাহর কালামের দু‘আগুলোতে আছে। অন্তত এই দু‘আটাতো মুখস্থ করে নিয়েই পারি,