রৌদ্রময়ী @roudromoyee Channel on Telegram

রৌদ্রময়ী

@roudromoyee


|| দাওয়াহ || শুদ্ধতা || সাহিত্য ||

রৌদ্রময়ী (Bengali)

রৌদ্রময়ী নামক টেলিগ্রাম চ্যানেলটি আপনাকে একটি নতুন পর্বের সাহিত্যিক প্রপ্রারণায় নিয়ে যাবে। এই চ্যানেলে 'দাওয়াহ', 'শুদ্ধতা', এবং 'সাহিত্য' এই তিনটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের উপর চর্চা হবে। বাংলা ভাষার সাহিত্য ও ভাষাবিজ্ঞানে আগ্রহী মানুষদের জন্য এই চ্যানেলটি একটি অত্যন্ত মানুষিক ও জ্ঞানময় স্থান। রৌদ্রময়ী চ্যানেলে পোস্ট করা সকল লেখা, কবিতা, উদ্ধৃতি সমূহ এবং অন্যান্য সাহিত্যিক উপাদান যথাসম্ভব মানসম্মত এবং বুদ্ধিমত্ত উপাদানে ঘরে ঘরে সম্প্রকাশ করা হবে। যদি আপনি হতাশ হন বা দুর্বাধ্যন্দিত মানেন, তাহলে রৌদ্রময়ী চ্যানেলে এসে নতুন আলোর প্রকাশ দেখতে পারেন। সম্প্রতি চ্যানেলে যোগ দেয়া হয়েছে অনেক প্রস্তাবনা, লেখা, এবং অন্যান্য নিয়মিত পোস্ট যা আপনার মন নিয়ে যত্ন করে সাজো করা হচ্ছে। তাহলে আর দেরী না করে যেতে পারেন এই অদ্ভুত ভাষায় বলা গল্পের বুকে জড়িয়ে। তাই ফাঁকা করে দিন নি আপনার মনের এই অভিযানে।

রৌদ্রময়ী

22 Jan, 13:57


ছোট ছোট বাচ্চাদেরকে পরিবারের বড়রা বেধড়ক পিটিয়ে যাচ্ছে,‌ ঠাস ঠাস থাপ্পড় চড়ের বাড়ি পড়ছে, মুখ থেকে কিছু বের হওয়ার আগেই— এর চেয়ে বীভৎস দৃশ্য মনে হয় আর হয় না।

হ্যাঁ অবশ্যই এটা সত্য যে, কোনো স্বাভাবিক মস্তিষ্কের মা-বাবা নিজেদের ছোট বাচ্চাকে শুধু শুধু মারবে না। বাচ্চারাও হয়তো দুষ্টামি করে মা-বাবাদের মাথা খারাপ করে দেয়।

শুধু শুধু না মারলেও এমন এমন কারণে অনেক পরিবারেই বাচ্চাদের মারা হয়, যেটাকে "ক্রিমিনাল" পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, অথচ সেগুলো বাচ্চা সুলভ আচরণ/দুষ্টামি।

৪-৫ বছরের বাচ্চাদের তো এখনো মস্তিষ্কই গড়ে ওঠেনি পুরোপুরি। ওরা বুঝবে না কোন জিনিসটা ফেলে দিলে ভেঙে যায়, এবং কোন কাজটা করলে মায়ের কষ্ট হয়, কেন "চাই চাই" এর উর্ধ্বে গিয়ে ধৈর্য ধরতে হয় —এগুলো একটা ছোট বাচ্চা কীভাবে বুঝবে? আমরা বড়রাই তো বুঝিনা অনেক সময়।

এবং তার মানে এই না যে বাচ্চাকে একেবারে শাসন না করে মাথায় লাই দিয়ে রাখবো। অবশ্যই এগুলো হ্যান্ডেল করার সুন্নত সম্মত পদ্ধতি আছে, ঠাস ঠাস মেরে দেওয়াটাই সমাধান নয়।

বাচ্চাদের শাসনের ব্যাপারে ইসলামের সুনির্দিষ্ট গাইডলাইন আছে। একেবারে না পারতে যখন মারতে হয় সেই মারটা খুব মৃদু হতে হবে, মারলেও খুব খেয়াল রাখতে হবে যেন এই মার থেকে বাচ্চার কোনো ক্ষতি না হয়, অতিরিক্ত রাগের অবস্থায় যেন ইসলামে মারা যাবে না, মারার পরে বাচ্চার গায়ে যেন দাগ না পরে এটা খেয়াল রাখতে হবে, এত জোরে মারা যাবে না যে যেই ব্যক্তি মারছে, তার বগল দেখা যায় ইত্যাদি ইত্যাদি এই ইসলামিক গাইডলাইনগুলো বেশিরভাগ মানুষ জানেই না। এবং সেইসাথে বাচ্চার মুখে আঘাত করা কিন্তু হারাম। মুখের উপর আঘাত করা একেবারে নিষেধ।

এ সমস্ত বিষয় নিয়ে অবশ্যই মা-বাবাকে সচেতন হতেই হবে। এত বড় আমানত আল্লাহ দিয়েছেন, বিষয়টা ফেলনা নয়। বাচ্চার ডেভেলপমেন্ট এবং প্যারেন্টিং নিয়ে পর্যাপ্ত পড়াশোনায় এবং ইসলামিক জ্ঞান অর্জনের মধ্যে থাকতে হবে আমাদের মা-বাবাদের। আমাদের হাত ধরেই তো উম্মতের পরবর্তী প্রজন্ম বড় হবে।

সবচেয়ে জঘন্য বিষয় হয় যখন কোনো অভিভাবক তার নিজের জীবনের হতাশা এবং রাগগুলো আর কারো ওপর ঝারতে না পেরে ছোট বাচ্চাদের মেরে সেই ঝাল মেটান।

দয়া করে আল্লাহকে ভয় করুন। মাসুম বাচ্চাগুলোর হয়তো এখন নিজেদের কোনো ভয়েস নেই। তারা ছোট, তারা কারো কাছে গিয়ে কোনো অভিযোগ করতে পারছে না হয়তো।

কিন্তু আপনি যদি জিনিসটা জুলুমের পর্যায়ে নিয়ে যান, অবশ্যই আল্লাহর কাছে জবাবদিহিতার ভয় করবেন। অবশ্যই এই বাচ্চার মনে বিরূপ একটা দাগ ফেলার দায়বদ্ধতা আপনার কাছে রয়ে যাবে। আল্লাহ যেন আমাদের বুঝ দেন।

মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করতে করতে জীবনে অনেক মানুষের সাথে পরিচিত হয়েছি, যারা ছোটবেলার ভয়ংকর শাসনের দুঃস্বপ্নগুলো আজও বয়ে বেড়াচ্ছে!

বিশেষ করে অমানবিকভাবে তাদেরকে মারা এবং পেটানোর বিষয়গুলো তারা অনেকেই ভুলতে পারেন না এবং এগুলো (অনেক বেশি খারাপ পর্যায়ের মারার কথা আমি বলছি) সেসমস্ত ভুলতে না পেরে তারা এখনো ট্রমার মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন।

এবং তাদের অনেকেরই মানসিক বিকাশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, ক্ষেত্রবিশেষে তাদের সাথে আল্লাহর সম্পর্কও দুর্বল হয়ে গিয়েছে, যখন মা-বাবা অন্যান্য পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে এই ধরনের অমানবিক আচরণ কেউ পায়, তারা ভাবে, "আমি যদি অল্প কারণেই এতটাই খারাপ হই আমার মা-বাবার কাছে, তাহলে আল্লাহর কাছে কীভাবে ভালো হবো?"।

তাহলে এক্ষেত্রে কী সমাধান?

ধৈর্য ধারণ ও বাচ্চার বিভিন্ন পর্যায় নিয়ে ভালোভাবে জ্ঞান অর্জন করুন এবং সুন্নত পদ্ধতিতে তারবিয়াত করুন।

এবং এ রামাদানে নিজের আত্মনিয়ন্ত্রণের একটা পরিকল্পনা করতে পারেন বাচ্চাদের গায়ে অল্পতেই হাত তোলা থেকে নিজেকে বিরত রাখার মাধ্যমে। যাদের কথায় কথায় বাচ্চাকে কারণ ছাড়া মারার অভ্যাস থাকে, এই রামাদানের চেষ্টা করুন সেটা নিয়ন্ত্রণ করে কমিয়ে আনতে।

শাসন নাকি জুলুম!
শারিন সফি অদ্রিতা

রৌদ্রময়ী

রৌদ্রময়ী

21 Jan, 12:47


বয়স বাড়ার সাথে অনেক বিষয়ে আম্মা-খালাদের সাথে একমত হলেও যে বিষয়ে একমত হতে পারি নাই, সেটা হচ্ছে—

দুনিয়ার তাবত জিনিস ফ্রিজে মজুদ করা for no reason and without any deadline.

জ্বি না, গ্রীষ্মের আম ডিপ ফ্রিজে রেখে দিলে শীতকালে সেই আম একই স্বাদ লাগে না।

শীতের ধনেপাতা ডিপ ফ্রিজে রেখে দিলে গ্রীষ্মে সেই ধনে পাতা থেকে ভালো ঘ্রাণ আসে না।

মাছ বা মাংস ফ্রিজে ৬ মাস রেখে দিলে সেটা খাওয়া আর ইরেজার/রাবার চিবিয়ে খাওয়া একই কথা- সেম টেস্ট!

যে সীজনে যে সবজি বা ফল হয় না, সেই সীজনে সেটাই কেন খেতে হবে?

Why we don’t learn to align ourself with mother nature?

আমাদের আগের জেনারেশন আমাদেরকে না শেখালেও সময় এসেছে আমাদের নিজেদের শিখে নেয়া—

You should not work for your money,
Your money should work for you.

ফ্রিজে মাসের পর মাসে আটকে থাকা শাক, সবজি, মাছ ইজ ইয়োর মানি। কিছু টাকা সেভ করতে আপনি সেটা খেয়ে আপনার হেলথ কম্প্রোমাইজ করছেন- that means you are working for your money.

আপনি ফ্রিজে সর্বোচ্চ ১০/১৫ দিনের বাজার রাখছেন, যতটুকু সম্ভব বাজার থেকে তাজা শাক সবজি, মাছ খাচ্ছেন। স্বাদ এবং স্বাস্থ্য দুটোর নাগাল পাচ্ছেন- that means your money is working for you.

ফ্রিজে মজুদ
হাবিবা আক্তার সুরভী

রৌদ্রময়ী

রৌদ্রময়ী

20 Jan, 12:32


আমার আম্মু ডাক্তার ছিলেন। কিন্তু আম্মু যখন পাশ করে তখনো আমার মামা-খালারা ছোট, তাই family এর financial responsibility এর বড় একটা অংশ নিতে গিয়ে post graduation করতে পারেনি।

যেখানে তার batchmate রা অনেক বড় বড় জায়গায় পৌঁছে গেছে। তাই আমি MBBS পাশ করার পর কখনো চাকরি করার কথা বলেনি। বলেছে পড়তে, যাতে আমি Post grad করতে পারি।

আমার আব্বু phd এর সুযোগ পেয়েছিল, কিন্তু সেই যুগে 40 হাজার টাকা দরকার হতো। সেটা afford করতে পারেন নি উনি।

তাই আমাদের বই কেনা, পরীক্ষা দেয়া, এসব ব্যাপারে টাকা চাইলে কোনোদিন আব্বু না করে নি। বরং প্রয়োজনের অতিরিক্ত দিয়েছে। (এমনিতে আব্বু অনেক হিসাবি, বাজে খরচ অপছন্দ করে)

কথায় কথায় বাবা-মাকে toxic বলা এখন আমাদের একটা বদঅভ্যাস হয়ে গেছে, as if আমরা নিজেরা perfect!

কিছু বাবা-মা আসলেই toxic হয়, কিন্তু অধিকাংশ মানুষ বাবা-মা হিসাবে নিজের role এ তাদের best effort দেয়। সবচেয়ে বেশি কষ্ট, সবচেয়ে বেশি sacrifice করে বাচ্চার জন্য।

আপনার বাবা-মা হয়তো আপনাকে সেটা দেয়ার চেষ্টা করেছে যা সে নিজের বাবা-মা এর থেকে পায়নি।

তারা আমার আপনার মতোই imperfect human Being, তাদের অনেক ভুল ছিল। কিন্তু কোটি কোটি sacrifice, সঠিক সিদ্ধান্তও ছিল। সেটাকে উপেক্ষা করা কি অকৃতজ্ঞতা হবে না?

আমার বাবা-মা কিন্তু আমার মতো আদর পায়নি।তাদের যুগে সবাই অনেক ভাই বোন ছিল, বাবা-মা এরকম ধরে ধরে এত আদর করেনি, তাও তারা তাদের বাবা-মা এর প্রতি কত সম্মান দেখাতো, dedicated ছিল।

আমাদের বাবা-মা না চাইতেই বেশি ভালবাসা দিয়েছে।এটাই তাদের ভুল, তাই আমরা ধরেই নিয়েছি পৃথিবী আমাদের ঘিরে ঘুরে। আমাদের ইচ্ছার বাইরে কিছু হলেই আমরা শুরু করি বলা “আমার parents toxic”।

বাবা-মা আল্লাহর পক্ষ থেকে gift, don't take it for granted, no one will love u or care for u as much as ur parents! Let's be grateful!

P.s.: This post is not applicable for actual toxic parents

টক্সিক বাবা-মা
আনিকা ফেরদৌস

রৌদ্রময়ী

রৌদ্রময়ী

19 Jan, 12:42


শীতকালে একটা বিষয় হয়তো কমবেশি সবাইকে যন্ত্রণা দেয়। সেটা হলো রাস্তাঘাটে কফ-থুথু ইত্যাদির আধিক্য!

হাঁটতে গেলে গা ঘিনঘিন করে, রাস্তার ভেতরই ফেলতে হবে একদম? বিষয়টা সব সময়ই অস্বস্তিকর।

ঠিক এইসব কারনে আমাদের সকলের উচিত রাস্তার হক্ব সম্পর্কে অবগত হওয়া।

- রাস্তারও হক্ব আছে?
- জ্বি আছে, চলুন দেখে আসা যাক।

আবু সাঈদ খুদরী রা. হতে বর্ণিত, রসূলুল্লাহ ﷺ বলেন,

إِيَّاكُمْ وَالجُلُوسَ عَلَى الطُّرُقَاتِ، فَقَالُوا: مَا لَنَا بُدٌّ، إِنَّمَا هِيَ مَجَالِسُنَا نَتَحَدَّثُ فِيهَا، قَالَ: فَإِذَا أَبَيْتُمْ إِلَّا المَجَالِسَ، فَأَعْطُوا الطَّرِيقَ حَقَّهَا، قَالُوا: وَمَا حَقُّ الطَّرِيقِ؟. قَال: غَضُّ البَصَرِ، وَكَفُّ الأَذَى، وَرَدُّ السَّلاَمِ، وَالأَمْرُ بِالْمَعْرُوفِ، وَالنَّهْيُ عَنِ المُنْكَرِ.

তোমরা রাস্তার পার্শে বসে থেকো না। সাহাবায়ে কেরাম বললেন, আল্লাহর রাসূল! আমাদের তো এর প্রয়োজন হয়। পরস্পরের সাথে প্রয়োজনীয় কথা বলতে হয়। রসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, বসতেই যদি হয় তবে রাস্তার হক্ব আদায় করে বস। সাহাবীগণ বললেন, আল্লাহর রাসূল! রাস্তার হক্ব কী?

রসূলুল্লাহ ﷺ বললেন,

১. দৃষ্টিকে অবনত রাখা।
২. কাউকে কষ্ট না দেওয়া।
৩. সালামের জবাব দেওয়া।
৪. সৎ কাজের আদেশ করা এবং অসৎ কাজ হতে বিরত রাখা। [১]

অন্যান্য বর্ণনায় আরও এসেছে,

৫. পথহারাকে পথ দেখিয়ে দেওয়া।
৬. মযলুম ও বিপদগ্রস্তের সাহায্য করা।
৭. বোঝা বহনকারীকে (বোঝা উঠানো বা নামানোর ক্ষেত্রে) সহযোগিতা করা।
৮. ভালো কথা বলা।
৯. হাঁচির জবাব দেয়া। [২]

১০. দম্ভভরে না চলা (বিনয় অবলম্বন করা)। [৩]

এখানে ২ নং পয়েন্ট টার দিকে লক্ষ্য করলে বুঝতে পারবো যে রাস্তায় কফ-থুথু ফেলা হতে শুরু করে যাবতীয় যত জিনিস আমরা রাস্তায় ফেলি যা পথিককে কষ্ট দেয় সেগুলো সবই রাস্তার হক্ব নষ্ট করে। এটা মেনে চললে আমাদের রাস্তাগুলোয় আবর্জনা পরে থাকতো না, যাত্রাপথে ময়লা পলিথিন রাস্তায় ফেলে দেওয়া হতো না।

এই হাদিস হতে আরেকটা শিক্ষনীয় বিষয় হলো, রসূলুল্লাহ ﷺ সাহাবাদের রাস্তার পাশে জড়ো হয়ে বসে থাকতে / কথা বলতে নিষেধ করেছেন। কারণ এতে করে রাস্তায় অপর মানুষদের হাঁটাচলার ক্ষেত্রে সমস্যা হয়, বিরক্তিভাব চলে আসে।

অথচ অধিকাংশ সময় বিশেষ করে পরীক্ষার হল হতে বেরিয়ে বা বিনা কারণে বন্ধুদের সাথে আমরা রাস্তার মাঝে দাঁড়িয়ে গল্প জুড়ে দেই। এটা অনুচিত, হাদিসে যার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।

প্রয়োজনীয় কথা বলতে হলে সেটারও আদব রয়েছে, কিন্তু চলার রাস্তায় জ্যাম বাঁধিয়ে গল্প করা! Nope, it's not acceptable in Islam.

এছাড়াও অন্যান্য পয়েন্টগুলোর গুরুত্ব লিখতে গেলে শেষ হবেনা, কত সুন্দর হতো সবগুলোই যদি আমরা আমলে রাখতাম।

হ্যাঁ, ইসলাম এরকম উত্তম কিছুই আমাদের শিক্ষা দেয়। খাবার মুখে দেওয়ার তরিকা হতে শেষ কাজ অবধি আমাদের রসূল ﷺ শিখিয়ে দিয়েছেন উত্তম পন্থা, যার চর্চা করলে আজ হয়তো আমাদের সমাজ সুন্দর হতো, মানুষ স্বস্তি পেতো।

রেফারেন্স:
১. সহিহ্ বুখারী, হাদিস নং- ৬২২৯
২. সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৪৮১৯; মুসনাদে বাযযার, হাদীস ৫২৩২; সহীহ মুসলিম, হাদীস ২১৬১; মুসনাদে আবি ইয়ালা, হাদীস ৬৬০৩
৩. সূরা বনী ইসরাঈল আয়াতঃ ৩৭

রাস্তারও হক আছে
তাসনুভা বিনতে হোসাইন

রৌদ্রময়ী

রৌদ্রময়ী

17 Jan, 12:36


ছেলেটাকে নিয়ে বই পড়া দিনকে দিন কঠিন হয়ে যাচ্ছে আমার জন্য। এইতো মাস দু’য়েক আগেই ওর প্রথম বছর পেরোলো। এখন তো আর ওর সামনে বই নিয়ে বসাই যায় না।

হাতে বই দেখলেই হলো, এসে টানাটানি শুরু করবে। কলম নিয়ে নেবে, বইয়ের মধ্যে হাবিজাবি দাগাতে থাকবে; এবং এই পুরোটা সময় আমার মনোযোগ থাকতে হবে ওর দিকে। ওর সামনে ওকে ছাড়া অন্যকিছুতে বেশি মনোযোগ? উঁহু, সেটা চলবে না আর এখন।

কাল রাতে শোয়ার প্রস্তুতি হিসেবে বই হাতে নিয়েছি মাত্র। মুহূর্তেই সে তা সব ব্যস্ততা ছেড়ে আমার কাছে হাজির। তার আম্মুর মনোযোগ লাগবেই লাগবে। নিজের সাধ্যানুযায়ী কিছুই করতে বাদ রাখলো না। অবশেষে সব চেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার পর যখন হাতপা ছুঁড়ে কান্নাকাটি শুরু করলো তখনই সে সফল হলো।

লাইট অফ করে ওকে নিয়ে শুয়ে পড়ার সিদ্ধান্ত নিলাম। বিছানা থেকে নেমে সুইচবোর্ডের দিকে গিয়ে পেছন ফিরে তাকাতেই বুকের বাম পাশটায় মোচড় দিয়ে উঠলো। কিছু এলোমেলো ভাবনা মাথায় ঘুরপাক খেলে লাগলো।

একটা জান, একটা নিষ্পাপ ছোট্ট জান, শুধু মাত্র আমাকে কাছে পাওয়ার জন্য বিছানায় ছটফট করছে। আমার মনোযোগ পেতে তার কতশত চেষ্টা। তার পৃথিবী জুড়ে আমি, শুধুই আমি। হাজার ভিড়েও তার চোখ দু'টো আমাকেই খুঁজে ফিরে। তার সমস্ত ব্যাকুলতা আমাকে ঘিরেই।

আচ্ছা, কখনো কি আর কেউ এতোটা ব্যাকুলতার সাথে আমার মনোযোগ আকর্ষণের চেষ্টা করেছে? এই দুনিয়ায় আর কি কেউ আছে যার জীবনে আমার কোনো বিকল্প নেই?

আমি আমার মায়ের একমাত্র সন্তান নই, স্ত্রী হিসেবেও আমার স্থানটা এবসুলেট নয়, আমার কাছের বান্ধবীরও আরো কাছের বান্ধবী আছে, কিন্তু এই দুনিয়ার আর কারো পক্ষে কি কখনো সম্ভব আমার ছেলের মা হওয়া? ওর হৃদয়ে আমার জায়গাটা দখল করা?

না, কক্ষনো সম্ভব নয়। এই জায়গাটা শুধুই আমার। আমার অবর্তমানে জায়গাটা ফাঁকা থাকবে ভাবতেই ভেতরটা এক অন্যরকম পরিপূর্ণতায় ছেয়ে গেলো।

মানুষের মন, আকাশের রং। পরক্ষণেই আবার ভাবতে লাগলাম, কিন্তু এই নির্ভরশীলতা আর কতোদিন থাকবে?

কিছুদিন পরেই তো ও দুধ ছেড়ে দেবে, একটা সময় আমাদের বিছানাও আলাদা হয়ে যাবে। ওকে জড়িয়ে ধরে আমি আর ঘুমোতে পারবো না, শীতের মাঝরাতে হাতড়ে হাতড়ে ওকে বার বার কম্বলের ভেতরে আনতে পারবো না, মন চাইলেই চুমু খেতে খেতে গাল লাল করে দিতে পারবো না, ওর নিঃশ্বাসের ঘ্রাণ নিতে পারবো না। ওকে ছুঁয়ে দেখতেও হয়তো আমার অজুহাতের প্রয়োজন পড়বে!

ফিঙ্গার ফুড ট্রাই করার সময় যখন ও মোটামুটি ভালোভাবেই খেতে পারছিল, আমার আনন্দের থেকে বেশি কষ্ট হয়েছিল। ছেলেটা বড্ড দ্রুত বড় হয়ে যাচ্ছে।

এইতো সেদিনও ও ওর আঙ্গুলগুলো ঠিকঠাক নিয়ন্ত্রণ করতে পারছিল না, বার বার নিজের গালে-মুখে নিজেই আঁচড় কাটছিল।

আর আজ সেই আঙ্গুলগুলো কতোটা সুনিয়ন্ত্রিত, কতোটা পারদর্শী! এভাবেই বড় হচ্ছে যাচ্ছে সে, আর মনে হচ্ছে আমার থেকে ক্রমেই দূরে সরে যাচ্ছে। কমছে নির্ভরশীলতা, বাড়ছে দূরত্ব।

তারপরও আমি চাই ও বড় হোক। আত্মনির্ভরশীল এক আল্লাহর বান্দা হোক। মুসলিম উম্মাহর দায়িত্ব কাঁধে নিক। জামানার ঈমাম হোক। মায়ের থেকে হাজার মাইল দূরে থেকেও যেন আল্লাহর নৈকট্যে থাকে। এই ছোট্ট ছোট্ট হাত দিয়ে একসময় উম্মাহর জন্য বড় বড় কাজের আঞ্জাম দিক।

আমাদের অফুরন্ত সময় কাটানোর পর্বটা নাহয় জান্নাতের জন্যই তোলা থাকুক। সমবয়সী মা-ছেলের ঢের আড্ডা হবে তখন।

আল্লাহ কবুল করুক। আমিন।

আমার ছোট্ট বাবা
রেজওয়ানা রাজ্জাক

রৌদ্রময়ী

রৌদ্রময়ী

16 Jan, 12:55


মানুষের হাঁটা পথে যেসব মানুষ অনায়াসে মলমূত্র ত্যাগ করতে পারেন, তাদের অন্তকরণ কী দিয়ে তৈরি জানি না। কত মানুষের কষ্টের কারণ হচ্ছে তারা প্রতিনিয়ত।

আপনি আইন করে এই কাজ বন্ধ করতে পারবেন?
পাহারা দিতে পারবেন সব পথ ঘাট? সড়ক আর ফুটপাতের কথা বাদ দিলাম, সরকারি কোয়ার্টারে বসবাস করার সুবাদে নিজেদের সিঁড়ি ঘরেও এ ধরনের কাজ করতে দেখেছি।

নৈতিকতা বোধ না থাকলে এসব কাজ বন্ধ করা অসম্ভব। এদেশের মানুষ পাবলিক প্লেসে নাক ঝাড়ে, থুথু ফেলে, পানের পিক ফেলে, জ্বলন্ত সিগারেট ছুঁড়ে মারে, আবর্জনা ছুঁড়ে মারে, তারা এটাকে কোন অন্যায় বলে মনেই করে না।

অথচ তারা, ওই পথ দিয়ে যত লোক যাওয়া আসা করছে প্রত্যেকের হক নষ্ট করছে, কষ্ট দিচ্ছে। মুসলিম হয়ে থাকলে বান্দার হক তো আল্লাহ মাফ করবেন না।

জার্মানিতে দেখতাম প্রত্যেক বাড়ির বাসিন্দা প্রবল ঠান্ডার ভেতরে কাঁপতে কাঁপতে বের হয়ে নিজের বাসার সামনের রাস্তা থেকে তুষার আর বরফ সরিয়ে পরিষ্কার করে যেতেন কিছুক্ষণ পর পর। কারণ আপনার চৌহদ্দিতে জমে যাওয়া বরফে পিছলে পড়ে কেউ ইনজুরড হলে আপনাকে আদালতে নেওয়া হবে।

আমরা যে বারান্দা দিয়ে স্যানিটারি ন্যাপকিন বা ইউজড ডায়াপার ছুঁড়ে ফেলে দিচ্ছি, সেটা কোথায় গিয়ে পড়ছে, কে নোংরা হচ্ছে, কে অসুস্থ হচ্ছে তাতে, আমরা খবরও রাখি না। তবে আল্লাহপাকের আদালতে প্রত্যক্ষদর্শীর প্রয়োজন নেই। আপনার হাত পা, আকাশ বাতাস, মাটি, প্রাণি সবাই সেদিন আপনার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেবে।

যদি খাঁটি মুসলিম হতে চান, নাজাত পেতে চান, তবে কেবল আল্লাহর ইবাদাতে একনিষ্ঠ হওযাই যথেষ্ট নয়।

ভালো মুসলিম হতে হলে ভালো স্বামী বা স্ত্রী হোন, উত্তম পিতা বা মাতা হোন, সৎ নাগরিক হোন, আইন মেনে চলুন, কেউ তা দেখুক বা না দেখুক, ভালো প্রতিবেশি ও সহকর্মী হোন, সহনশীল হোন আপনার অধীনস্ত ও পোষ্যদের প্রতি।

ভালো মুসলিম হতে হলে
হোসনে আরা হাসি

রৌদ্রময়ী

রৌদ্রময়ী

14 Jan, 13:36


[১] সিরিয়াল নাম্বার ৩৭।

মধ্যবয়সী একজন মহিলা আর সাথে একটা ফুটফুটে বাচ্চা মেয়ে রুমে ঢুকলেন। ধীরস্থির ভাবে আমার টেবিলের সামনে রাখা দুটো চেয়ারে দু’জন বসলেন। রোলিং চেয়ারে হেলান দেয়া থেকে সোজা হয়ে বসলাম।
বলতে পারেন, পিচ্চি মেয়েটার রিনরিনে সালাম শুনে আনমনে হাসলাম, ক্লান্তি খানিকটা কেটে গেলো।

মেয়েটার নাম রুফাইদা। বয়স ৮ বছর ৩ মাস ২২ দিন।
বয়সের এতো বিস্তারিত হিসেব যদিও আমার প্রয়োজন নেই কিন্তু বাচ্চা মেয়েটা শখ করে যেহেতু হিসেব দিয়েছে, তাই প্রেসক্রিপশনে লিখে নিলাম।

তবে মনের ভেতর খানিকটা খচখচানি করা শুরু হলো। তার কারণ হলো, ঠিক আঁচ করতে পারছিলাম না যে এই মা-মেয়ে দু’জনের মধ্যে মানসিক বিপর্যস্ত অবস্থার ভেতর দিয়ে ঠিক কে যাচ্ছেন।

যদিও আমি চাইল্ড সাইক্রিয়াটিস্ট। তবু এই পিচ্চি ফুটফুটে মেয়েকে দেখে মানসিক অসুস্থতার কোনো আঁচ পরিলক্ষিত হলো না। তাই এতো কনফিউশন।
যার যা ধান্দা আরকি।

যে যাক, বেশিক্ষণ ভাবতে হলো না। মধ্যবয়স্ক মা কিছুক্ষণ পর বিস্তারিত আলাপ শুরু করলেন।

সমস্যার সূত্রপাত হয়েছে গত মাসের তৃতীয় শুক্রবারে।
উনারা তিন বোন। তিনজনের মধ্যে উনি আর উনার ছোট বোন ঢাকাতেই থাকেন। একজন ধানমন্ডিতে আরেকজন মতিঝিলে। আর বড় বোন থাকেন রাজশাহীতে। সেই শুক্রবারে উনাদের ছোট বোনের বাসায় গেট টুগেদার ছিলো।

দীর্ঘ এগারো বছর অপেক্ষার পর মধ্যবয়স্ক মা যিনি, তিনি তার সন্তান তথা রুফাইদার জন্ম দিয়েছেন। বলাই বাহুল্য, রুফাইদা তাই তার কাছে অসম্ভব আদরের।

সেদিনের গেট টুগেদারের জন্য রুফাইদার আর নিজেরা স্বামী-স্ত্রীর জন্য ম্যাচিং করে কমলা আর সাদার কম্বিনেশনের স্কার্ট, শাড়ি আর পাঞ্জাবি কিনেছিলেন।

সেদিন সকালবেলা যখন উনি রুফাইদাকে রেডি করতে গিয়েছেন তখনই বাধে বিপত্তি। রুফাইদা কিছুতেই ছোট খাম্মির বাসায় যাবে না। প্রথমে শান্তভাবে যাবে না বললেও উনি যখন জোরাজুরি শুরু করেন তখন রুফাইদা হাত-পা ছুঁড়ে চিৎকার শুরু করে, সে কিছুতেই ওই বাসায় যাবে না।

যে রুফাইদা কখনো তেমন দুষ্টুমি পর্যন্ত করে না, সে সেদিন বাবা-মাকে খামচি দিতে দিতে চিৎকার করতে থাকে।

অবশেষে সেদিনের গেট টুগেদারে তাদের যাওয়া হয়নি।
এ পর্যন্ত ছোট বোনের বাসায় আর কোনোদিনই রুফাইদাকে নিয়ে যেতে পারেননি তিনি।

কেন রুফাইদা ছোট খাম্মির বাসায় যাবে না, এ সম্পর্কে শত চেষ্টা করেও রুফাইদার মুখ থেকে কোনো উত্তর বের করা যায়নি। অবশেষে বাধ্য হয়েছেন চাইল্ড সাইক্রিয়াটিস্টের কাছে আসতে।

ভদ্রমহিলা যখন কথা বলছিলেন আমি তখন তাকাচ্ছিলাম ফুটফুটে পিচ্চি রুফাইদার দিকে।
চেহারা জুড়ে অসম্ভব রকমের মমতা জড়ানোর ফাঁকে বিরাজ করছে বিস্তীর্ণ পৃথিবীতে বিশাল অসহায়ত্বের আর্তনাদ।

[২]
— “মা, আপনার মেয়েটাকে আপনি একজন গাইনিকোলজিস্ট এর কাছে নিয়ে যান। আমি রেফার করে দিচ্ছি।”

আমার কথার উত্তর না দিয়ে মধ্যবয়সী মা অবিরাম কেঁদেই চলেছেন।

রুফাইদা আস্তে আস্তে আমাকে বললো,
—“আন্টি, আমি কি তোমাকে বলে ভুল করেছি? তুমি না আমাকে বললে ওই চাচ্চুটা মনস্টার। আর আমি কোনো দোষ করিনি, আমি মুনের(Moon) মতো নাইস। তাহলে মা কাঁদছে কেনো আন্টি?”

রুফাইদার কোমল হাত আমার হাতের মুঠোয় পুরে নিলাম।
ফিসফিস করে বললাম, “মামনি, তোমার মা কান্না করছেন কারণ তিনি তোমার থেকে মনস্টার সরিয়ে রাখতে পারেননি তাই। একদিন যখন তুমি অনেক বড় হয়ে পৃথিবীর সব মনস্টারদের সরিয়ে সব মুনদের নিয়ে প্রজাপতির মতো উড়ে বেড়াবে তখন আর তোমার মা কান্না করবে না। তুমি মন খারাপ করো না বাবা।”

সেদিন রুফাইদাদের বিদায় দেয়ার পর আমার প্রচন্ড কান্না পাচ্ছিলো।

মূল ঘটনা হলো, রুফাইদার ছোট খাম্মির বাসায় তার একমাত্র দেবর থাকেন, যিনি একটা প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্স ফোর্থ ইয়ারে পড়েন।

ছোট খাম্মির বাসায় যতবারই রুফাইদারা যেতো, রুফাইদাকে ওই চাচ্চু খুব আদর করতেন। আর দশটা বাচ্চার মতো রুফাইদারও চকোলেট খুব পছন্দ। তাই সেই চাচ্চু রুফাইদাকে চকোলেট দেয়ার কথা বলে নিজের রুমে খেলতে নিয়ে যেতেন।

ঘরের মানুষ তাই রুফাইদার মা কিংবা খালারও বাচ্চা মেয়েটা কার সাথে কী খেলছে সেসব খেয়াল রাখার প্রয়োজন মনে করতেন না কখনোই। বরং দুই বোন জমিয়ে রাখা রাজ্যের আলাপে মেতে উঠতেন।

রুফাইদার ভাষ্যমতে সেই চাচ্চু সবসময় তার শরীরে ইচ্ছেমতো হাত দিতেন, তাকে দিয়ে চাচ্চুর শরীরে হাত দেয়াতেন। চাচ্চু বলতেন এগুলো খেলা। কিন্তু এটা একটা সিক্রেট গেইম।

আর সিক্রেট গেইম কখনো রুফাইদা তার মা-বাবা কিংবা খাম্মিকে বলতে পারবে না। তাই রুফাইদার গেইমটা পছন্দ না হলেও কাউকে কিছু বলতে পারতো না সে।

কিন্তু, শেষ যেবার সে ছোট খাম্মির বাসায় গিয়েছিলো সেদিন মা আর খাম্মি যখন ছাদে গেলেন, চাচ্চু রুফাইদাকে খুব ব্যাথা দিয়েছিলো। খুব ব্যাথা।

রুফাইদা আর কখনো ওই বাসায় যেতে চায়না। রুফাইদা ওই বাসাটা খুব ভয় পায়। সে কিছুতেই সেখানে আর কোনোদিন যাবে না।

[৩]
সিরিয়াল নাম্বার ৩৮ এর নাম প্রেসক্রিপশনে লিখতে গিয়ে আমার কানে ভেসে আসলো একটু আগে রুফাইদার বলা কথা;
—“আন্টি আমার পিপি করতে খুব কষ্ট হয়। অনেক ব্যাথা পাই আমি আন্টি।”

রৌদ্রময়ী

14 Jan, 13:36


কলম কেনো জানি থমকে গেলো। অবচেতন মনে বাচ্চা মেয়েটার কান্নাভেজা কন্ঠের পুনরাবৃত্তির সাথে চোখে ভেসে উঠলো বাসায় রেখে আসা আমার টুইন দুই মেয়ের চেহারা। রুফাইদার ধারে-কাছেই বয়স তাদের। আমি জানি না আমার মেয়েদের আমি মনস্টারদের হাত থেকে বাচাঁতে পারবো কি না।

বুকের ভেতর মনে হলো কিছু যেন ওলট-পালট হয়ে যাচ্ছে। চোখে ভেসে উঠেছে শৈশবের কিছু স্মৃতি, কিছু অনুভূতি।

আমরা পারিনি আমাদের সন্তানদের মনস্টারমুক্ত পৃথিবী এনে দিতে। পারিনি অন্ধকারে ঢাকা সিক্রেট গেইম থেকে তাদের বাচাঁতে। জানি না আর কতো রুফাইদার শৈশবে এমন মনস্টারদের আগমন কবে বন্ধ হবে।

কানে বাজতে লাগলো,
“আন্টি তুমি না বললে, আমি মুনের মতো নাইস!”

মনস্টার
তাহসিন মাহমুদ মিলা

রৌদ্রময়ী

রৌদ্রময়ী

13 Jan, 12:44


বাচ্চাকে বয়স কমিয়ে বলা শেখাচ্ছেন?

একটা বিষয় মাঝে মাঝেই বাচ্চাদের মাঝে, কখনো বা বাচ্চার মায়েদের মাঝেও খেয়াল করি। সেটা হচ্ছে, বাচ্চাদের বয়স কমিয়ে বলা।

খুব ভদ্র পরিবারের, এমনকি অনেক ভালো দ্বীনি পরিবারের বাচ্চাদেরও দেখেছি, তারা নিজেদের বয়স কমিয়ে বলে। কখনো তারা বুঝেশুনেই কমায়, কখনো না জেনে বাবা-মায়ের শেখানো কথা অনুযায়ী বলে।

খুব অবাক লাগে, এই বাচ্চারাই কিন্তু সচরাচর মিথ্যা বলেনা। অথচ জ্ঞানত বা অজ্ঞানত তারা নিজের বয়স নিয়ে ক্রমাগত মিথ্যাচার করে চলে, যেটাকে তারা আদতে মিথ্যাই মনে করেনা। চিন্তা করে দেখলাম, দোষটা আসলে তাদের না, তাদের অভিভাবকদের।

যাক, এবার আসল কথায় আসি। 'বয়স কমিয়ে বলা'র এই ট্রাডিশন আমরা ছোটো থেকেই কমবেশি আশেপাশে দেখে আসছি।

ইন ফ্যাক্ট, মেয়েরা নাকি বয়স আসল বয়সের চেয়ে কমিয়েই বলে, এটা নাকি সমাজেরই প্রচলন! হতে পারে, এই প্রচলনের কারণেই বিষয়টা আমাদের কাছে আদৌ মিথ্যাচার বা নেগেটিভ কিছু মনে হয়না।

কিন্তু একজন মুসলিম কি সমাজ দিয়ে বিচার করবেন? অবশ্যই না। মিথ্যা কথা বলা ইসলামে কবীরা গুনাহ। মিথ্যাচার, মিথ্যা সাক্ষ্য এসবের বিরুদ্ধে কঠোর হুশিয়ারি দিয়ে অনেক অনেক হাদীস এসেছে। এমনকি কথায় কথায় মিথ্যা বলাকে মুনাফিকের বৈশিষ্ট্যও বলা হয়েছে।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহিস ওয়াসাল্লাম এমনকি মজার ছলে মিথ্যা বলতেও নিরুৎসাহিত করেছেন, বিনিময়ে জান্নাতে একটি ঘরের ওয়াদা। সেই মিথ্যাচার আমাদের কাছে এত হাল্কা হয়ে গেলো?

.

বাচ্চাকে বয়স কমিয়ে বলতে বলা কি খুব সামান্য কিছু? দেখুন তবে—

- আপনি যখন বাচ্চাকে মিথ্যা বলা শেখাচ্ছেন, প্রথমত সে যতবার মিথ্যা বলবে, প্রত্যেকবার সে নিজে কবীরা গুনাহ করবে, সেই সাথে আপনিও শিক্ষক হিসেবে গুনাহটা ফ্রি পাবেন। নাবালেগ হিসেবে তার গুনাহ কাউন্ট না হলেও বালেগ হিসেবে আপনার গুনাহ তো অবশ্যই কাউন্ট হচ্ছে।

- আপনি যখন অভিভাবক হিসেবে বাচ্চাকে একটা প্রকৃত সত্য গোপন করে মিথ্যা বলা শেখাচ্ছেন, আপনার বাচ্চা শিখে গেলো যে সামান্য দুনিয়াবি তুচ্ছ কারণে বড় একটা মিথ্যা বলা যায়।

তার নিজের জীবনে এটা একটা ডিজনেস্টির শিক্ষা তো বটেই, সেই সাথে আপনার ব্যাপারেও তার একটা নেগেটিভ ধারণা হয়ে গেলো- মুখে মুখে আপনি অনেস্ট হলেও বাস্তব জীবনে ডিজনেস্ট।

তুচ্ছ কারণে যে মিথ্যা বলতে পারে, বড় কোন স্বার্থের প্রয়োজনে সে পুকুরচুরিও করতে পারবে, হিসেব টা কি খুব কঠিন?

- আপনার বাচ্চা যখন বয়স কমিয়ে বলছে, সেটাকে সত্যায়ন করার জন্য আপনাকেও একই কাজ করতে হবে। এই এক মিথ্যাকে জাস্টিফাই করার জন্য আরও ১০০ মিথ্যা বলতে হবে, মিথ্যার প্রকৃতিই এটা।

বয়স কমাবেন, তার জন্মসাল বানিয়ে বলতে হবে, সেটার জন্য আরও মিথ্যা..... চেইন আকারে বাড়তে থাকবে। একটা ছোট্ট মিথ্যার জন্য কতগুলো ছোট বড় মিথ্যা বলতে হবে, হিসাব করলে নিজেই অবাক হবেন।

- সবচে গুরুত্বপূর্ণ যে বিষয়টা, বয়স কেবল স্কুল কলেজ সার্টিফিকেটে লিখিত একটা তথ্যই না। ইসলামী শরিয়তের গুরুত্বপূর্ণ সব ফরজ বিধানসহ অনেক অনেক বিধান বয়সের সাথে সংশ্লিষ্ট:

* ৭ বছর বয়সে বাচ্চাকে নামাযের আদেশ দিতে হবে।
* ১০ বছর বয়সেও নামায না পড়লে তাকে প্রয়োজনে প্রহার করতে হবে।
* ৯-১০ বছর থেকে বাচ্চাদের পর্দা প্র‍্যাক্টিস করার ব্যাপারে বলেছেন উলামায়ে কেরামগণ।
* ১০ বছর বয়সে বাচ্চার বিছানা আলাদা করতে হবে।
* বালেগ হয়ে গেলে (১১-১২) বছর বয়সে একটা বাচ্চার উপর প্রত্যেকটা ফরজ বিধান (নামাজ, রোযা, যাকাত, হজ, পর্দা) ফরজ বলে গণ্য হবে, তা তরক করলে ফরজ তরক করার গুনাহ হবে। একইসাথে প্রত্যেকটা ছোটবড় অপরাধের জন্য তার আমলনামায় গুনাহ লেখা হবে।

তাহলে ভেবে দেখেন তো, আপনার বাচ্চার বয়স যখন ৮, আপনি তাকে শিখিয়েছেন ৬, তাহলে ৭ বছর বয়স থেকে যে তাকে নামায পড়ার আদেশ দেয়া হয়েছে, সেটা সে জানবে কিভাবে? ইসলামের বিধানগুলো মানার প্রস্তুতি সে নেবে কিভাবে, যে নিজেকে তার আসল বয়সের চেয়ে ছোট ভাবে? এই গুনাহ কার? তার না আপনার?

- একইরকমভাবে, জন্ম নিবন্ধন বা স্কুল সার্টিফিকেটে ১/২/৩ বছর কমিয়ে দেয়া হয়, এটাও অভিভাবকরাই বাচ্চাদের শিখিয়ে দেন।

কেন এটা করা হয়? যেন তার চাকরির বয়স বা সরকারি চাকরির বয়স শেষ হয়ে গেলেও তার কাছে কয়েক বছর এক্সট্রা জমা থাকে।

এবার ভাবেন তো, যখন তার চাকরির বয়স আসলেই শেষ, বা সরকারি চাকরির বয়স শেষ, তখন সে একটা মিথ্যা বয়স দেখিয়ে যদি চাকরি নেয়, এই চাকরি কি তার জন্য জায়েয হয়? তার আসল বয়স অনুযায়ী সে তো ঐ চাকরির যোগ্য না! এটা কি প্রতারণা না? এই সুস্পষ্ট প্রতারণাটিকেও আমরা কিভাবে জায়েয বানিয়ে নিয়েছি!

যেসব প্রজন্ম না জেনেই এসব মিথ্যা বা প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছে, তাদের হিসাব তো তাদেরই। আমরা এখন তো অনেক জানি, অনেক বুঝি। বুঝেশুনেও নিজেরা মিথ্যাচার বা প্রতারণা করলে, বাচ্চাকে নিজে শিখিয়ে দিলে গুনাহগুলো কার?

গুনাহ্গুলো কার?
নিশাত তাম্মিম

রৌদ্রময়ী

রৌদ্রময়ী

11 Jan, 12:34


আশ্চর্য একটা ঘটনা ঘটে গেল!

কিছু একটা নিয়ে কোথাও কাদা ছোঁড়াছুড়ি চলছিল, যেগুলো আমাকে বরাবরই খুব খুব কষ্ট দেয়। একদম লিখিত ভাষায় 'কিংকর্তব্যবিমূঢ়' হয়ে যাই মাঝে মাঝে।

কীভাবে কী রিঅ্যাক্ট করা উচিত বুঝিনা।‌ তখনি মনে হল এত চিন্তার কী আছে? আমি ডিরেক্টলি আল্লাহর কাছে গাইডেন্স চাইলেই পারি ...

ওজু অবস্থাতেই ছিলাম। জাস্ট কুরআন টা হাতে নিয়ে বললাম, “হে আল্লাহ! আমার বর্তমান পরিস্থিতি আপনি সবই জানেন, সবই বুঝেন, নতুন করে বলার কিছুই নেই, আপনি সর্বজ্ঞানী! এবার আপনি আমাকে এমন একটি আয়াতের সংস্পর্শে নিয়ে আসুন, যেটা এই মুহূর্তে আমার কী করা উচিত সেই ব্যাপারে আমাকে গাইড করবে, প্লিজ ইয়া রব! আপনি আমাকে সাহায্য করুন! ইয়া আল্লাহ, আপনি নিজ অনুগ্রহ আমার অন্তরকে গাইড করুন.....”

সুবহানআল্লাহ! আপনি বিশ্বাস করবেন?
আমি আউজুবিল্লাহ--বিসমিল্লাহ বলে কুরআন খুললাম এবং মুখোমুখি হলাম এই আয়াতের:

“তুমি যখন দেখো তারা আমার আয়াত সম্পর্কে নিরর্থক আলোচনায় মগ্ন, তখন তুমি দূরে সরে যাবে, যে পর্যন্ত না তারা অন্য প্রসঙ্গে প্রবৃত হয় এবং শয়তান যদি তোমাকে বিভ্রান্তে ফেলে, তবে স্মরণ হওয়ার পর অত্যাচারী সম্প্রদায়ের সাথে বসবে না!”
(সূরা আন'আম: আয়াত ৬৮)

আমি হতবাক হয়ে আয়াতটা পর পর তিনবার পড়লাম!
একদম স্পষ্ট কমিউনিকেশন হলো আমার আল্লাহর সাথে আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহ আমাকেই পরম মমতায় জানিয়ে দিচ্ছেন কী করণীয়— এই অনুভূতির সাথে কোনো কিছুর তুলনা হয় না। এত ক্রিস্টাল ক্লিয়ার পরিষ্কার ইন্সট্রাকশন আমার মতো অধমের জন্য সাত আসমানের উপর থেকে এসেছে,  আলহামদুলিল্লাহ।

This can not be a coincidence!
This is a miracle!

প্রতিদিনই মিরাকেলের সাক্ষী আমরা। কুরআন নিজেই একটা মিরাকল আমাদের ঘরে ঘরে। এরপরও কেন যে গাফেল হয়ে যাই.. আল্লাহ মাফ করে দিক আমাকে, আমাদের সবাইকে। আমিন।

আবারো উপলব্ধি করলাম জীবনের প্রত্যেকটা বাঁকে বাঁকে কুরআন খুলে আল্লাহর শরণাপন্ন হওয়া কতটা জরুরী!

এবং সেটা সততার সাথে অন্তরের ভেতর থেকে আসা কতটা জরুরী! পাশাপাশি আন্তরিক চেষ্টা করাটা জরুরী! শুধু চাইবার পরে শুয়ে বসে না থেকে কুরআনের সাথে এংগেজ হওয়াটা কতটা জরুরী!

আল্লাহ তো আল মুজিব, তিনি অবশ্যই সাড়া দানকারী!

আয়াতে সুকূন
শারিন সফি অদ্রিতা

রৌদ্রময়ী

রৌদ্রময়ী

08 Jan, 12:41


Human Metapneumovirus: সতর্কতা ও সচেতনতার বার্তা— সম্প্রতি চীনে মানুষের মেটানিউমোভাইরাস (Human Metapneumovirus) এর প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে এবং এখন এটি ভারতের বিভিন্ন জায়গায় সনাক্ত হয়েছে।

এটি এক ধরণের সাধারণ সর্দি-কাশির ভাইরাসের মতো ছড়ায় এবং সংক্রমণের উপায়গুলো নিম্নরূপ:

আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি-কাশির মাধ্যমে।

ভাইরাসযুক্ত পৃষ্ঠ বা বস্তু স্পর্শ করার পর মুখ, চোখ বা নাক স্পর্শ করলে।

লক্ষণগুলো কী কী?

এই ভাইরাসে সংক্রমিত হলে সাধারণ সর্দি-কাশি, গলা ব্যথা, জ্বর, ক্লান্তি, শ্বাসকষ্ট এবং শিশুদের ক্ষেত্রে ব্রংকিওলাইটিস হতে পারে।

এটি নতুন নয়।

মানুষের মেটানিউমোভাইরাস প্রায় ৬০ বছর ধরে বিদ্যমান এবং ২০০১ সালে প্রথম এটি সনাক্ত করা হয়। এখন পর্যন্ত পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, এটি একই মানব স্ট্রেইন যা আগে থেকেও ছিল এবং নতুন কোনো প্রজাতি ছড়াচ্ছে না।

তবে সতর্ক থাকা জরুরি।

যদিও এটি COVID-19 এর মতো মারাত্মক নয়, কোনো মহামারী সম্পর্কে আগাম অনুমান করা বোকামি হবে।

আমি ব্যক্তিগতভাবে এই ভাইরাসের সংস্পর্শে কিছু রোগী পেয়েছি COVID-19 এর আগেও। বেশিরভাগ সময় এটি সর্দি-কাশির মতোই মনে হয় এবং বিশেষভাবে পরীক্ষা করা হয় না। তবে যখন কেউ গুরুতর অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন, তখনই সাধারণত এটি ধরা পড়ে।

আমি বিশেষভাবে মনে করি ২০২২ সালের শুরুর দিকে একজন ১৯ বছরের গুরুতর অসুস্থ রোগীকে, যিনি বেশ দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠেন। কোন স্পেসিরিক চিকিৎসা লাগেনা।

বাংলাদেশের জন্য চ্যালেঞ্জ

আমাদের মতো দেশের দুর্বল স্বাস্থ্য ব্যবস্থার জন্য এটি বিশেষ চিন্তার কারণ। যথেষ্ট পরীক্ষা, হাসপাতালের শয্যা এবং আইসিইউ সুবিধা নেই। যদিও এটি এখনও COVID-19 এর মতো ভয়াবহ চাপ তৈরি করেনি, আমাদের সচেতন থাকা জরুরি।

কী করতে হবে?

ঢাকার মতো দূষিত এলাকায় মাস্ক পরা অভ্যাস করা উচিত, বিশেষ করে বয়স্ক ও শিশুদের, যারা হাঁপানি বা অন্যান্য শ্বাসজনিত সমস্যায় ভুগছেন। মেটানিউমোভাইরাসের চেয়েও বেশি ভয়াবহ ডেঙ্গু। জ্বর হলে ডেঙ্গু টেস্ট করাবেন অবশ্যই।

আতঙ্কিত হওয়ার প্রয়োজন নেই।

এটি COVID-19 নয়, বরং ইনফ্লুয়েঞ্জার মতো। এটি একটি পরিচিত ভাইরাস, যা দ্রুত ছড়াচ্ছে কিন্তু এখনো উল্লেখযোগ্য মৃত্যুর হার সৃষ্টি করেনি। তবে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার ফলে এটি মিউটেট করতে পারে, যা এটি আরও বিপজ্জনক করে তুলতে পারে। এটা আনলাইকলি হলেও উড়িয়ে দেয়া যায় না।

পরিশেষে

সতর্ক থাকুন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন এবং গুজবে কান দেবেন না। আপনার পরিবার এবং চারপাশের মানুষকে সচেতন করুন। আমরা সবাই মিলে যদি দায়িত্বশীল হই, তবে এই ভাইরাসকেও নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হবে।

নতুন মহামারী, লক্ষণ ও সচেতনতা
রাইক রিদওয়ান

রৌদ্রময়ী

রৌদ্রময়ী

07 Jan, 13:30


যারা মেজর ডালিমের বয়সের সাথে তাঁর বডি ফিটনেস মেলাতে পারছেন না, তাকে আসল মেজর ডালিম হিসেবে মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছে। তাদেরকে বলি, ডিফেন্সে চাকরি করা অধিকাংশ মানুষ জীবনের স্বর্ণ সময়ে ডিসিপ্লিন মেইনটেইন করে চলে থাকেন বলে তারা বডি ফিটনেস এর দিক থেকে অনেকদিন পর্যন্ত ইয়াং থাকেন।

আমার আব্বুর কথা ই বলি, আমার বিয়ের সময় আব্বু তখনও বিডিআরে চাকরিরত। দেখতে একদম ইয়াং ছিলেন, লম্বা-চওড়া, স্ট্রং একজন মানুষ মাশাআল্লাহ।

অথচ উনি তখন মেয়ে বিয়ে দিচ্ছেন, ছেলে অলরেডি বিয়ে দিয়েছেন আরো ছয় বছর আগে। দুই নাতীর দাদা, কিন্তু আব্বুকে দেখতে তখন বেশি বয়স মনে হতো না।
অথচ আব্বুর বয়স তখন অলরেডি ৫৫+।

তাই বাহ্যিক ফিটনেস দিয়ে কারো আসল বয়স নির্ধারণ করা যায় না। এমন অনেক হয়, দেখতে অনেককেই বয়সে ছোট মনে হয় অথচ সে ধারণার চেয়েও অনেক বড়। আবার দেখতে বড়সড় লাগে, বয়স বেশি মনে হয় কিন্তু আসলে অত বয়স নয়।

মেজর ডালিমের চেহারায় তার বয়স অনুযায়ী বার্ধক্যের ছাপ অতটা না পড়লেও তার কণ্ঠে বার্ধক্যের ছাপ একেবারে স্পষ্ট।

উনার কথাগুলো একটু খেয়াল করে শুনলেই দেখবেন, কথাগুলো মাঝে মাঝে কেমন জড়িয়ে জড়িয়ে যাচ্ছিল।এ জড়তা বার্ধ্ক্যজনিত কারণে জিহ্বায় চলে আসা জড়তা।

সেই সাথে বয়সের কারণে উনার স্মৃতিভ্রমও হয়েছে কিছুটা যা খুবই স্বাভাবিক।

তবে এটা শতভাগ সত্য, উনিই সেই বহুল আলোচিত মেজর ডালিম।

ডিফেন্স ও ডিসিপ্লিন
শামছুন্নাহার রুমি

রৌদ্রময়ী

রৌদ্রময়ী

06 Jan, 12:47


আমাদের জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত আল্লাহর দেওয়া একটি বড় নিয়ামত। আর সময় হলো উত্তম আমানত। কিন্তু আমরা কি এই সময়কে সঠিকভাবে ব্যবহার করছি?

রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন:

"দুইটি নেয়ামত রয়েছে যা অনেক মানুষ সঠিকভাবে কাজে লাগায় না: সময় এবং স্বাস্থ্য।" (সহীহ বুখারি)

আজ আমরা জানব কীভাবে সময় ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে একজন প্রোডাক্টিভ মুসলিম হওয়া যায়।

১। সকালকে কাজে লাগান:
ফজরের নামাজের পর দিন শুরু করুন। সকালে আমাদের মন এবং শরীর সবচেয়ে সক্রিয় থাকে। এই সময়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ শুরু করলে সেগুলো দ্রুত শেষ করা যায়।

২। সময়কে ভাগ করুন:
ইমাম গাজ্জালীর উপদেশ অনুযায়ী, আমাদের দিনটিকে তিন ভাগে ভাগ করা উচিত:

ইবাদত ও কুরআন তিলাওয়াত
কাজ এবং পরিবার
বিশ্রাম ও ব্যক্তিগত সময়

৩। নিয়মিত হিসাব নিন:
উমর (রাঃ) বলেছেনঃ “(আল্লাহ) তোমাদের হিসাব নেয়ার আগেই তোমরা তোমাদের নিজেদের হিসাব নাও। এবং কিয়ামতের দিনের মহা প্রদর্শনীর পূর্বে নেক আমল দ্বারা নিজেদেরকে সুসজ্জিত কর।

প্রতিদিন দিনের শেষে চিন্তা করুন:
আজ আমি কী শিখলাম?
কোন কাজটি আরও ভালোভাবে করতে পারতাম?

প্রোডাক্টিভ মুসলিম হওয়ার ৩টি কৌশল

১. ‘টু-ডু লিস্ট’ তৈরি করুন:
সকালে বসে তিনটি প্রধান কাজ লিখুন, যেগুলো আজ করতেই হবে। উদাহরণ:

কুরআনের একটি নতুন সুরা মুখস্থ করা।
সন্তানের সাথে একটি ইসলামিক গল্প শোনা।
পরিবারের জন্য বিশেষ কিছু রান্না করা।

২. একসাথে ইবাদত করুন:
আপনার সন্তান এবং পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ৫ মিনিট একসাথে তিলাওয়াত করুন। এটি শুধু সময় ব্যবস্থাপনাই নয়, বরং সম্পর্ক মজবুত করার একটি চমৎকার উপায়।

৩. ডিজিটাল ডিটক্স:
অপ্রয়োজনীয় সোশ্যাল মিডিয়া থেকে সময় বাঁচান। এক ঘন্টার জন্য ফোন রেখে দিন এবং আপনার সন্তান বা পরিবারের সাথে মানসম্মত সময় কাটান।

উত্তম আমানত
তাসনিম সুশান আজাদ

রৌদ্রময়ী

রৌদ্রময়ী

05 Jan, 12:33


বাসায় এক কেজি মিষ্টি এলে, প্রতিবেশীদের ঘরে অন্তত দুই পিস হলেও দিয়ে খাওয়ার রেওয়াজ ছিলো একসময়। তরকারী রান্না করলে ঝোলটাও ভাগ করে খেতো পাশের দুয়েকঘরে। গাছের নতুন কচি লেবুও আধখানা হলেও খেতে দিতো প্রতিবেশীকে।

কালের বিবর্তনে এখন হাত ভরে নিয়ে গেলেও কোন দোকান থেকে নেয়া বা কত দামী ছিলো, দিলে কতটুকু দিলো এসবের আলোচনা-সমালোচনা সরাসরি কিংবা ব্যক্তির আড়ালে চলতেই থাকে।

এক রমাদনের কথা, বেশ ছোট বয়স।

ঘরে মানুষ আটজন, পাঁচটা পেঁয়াজু কেন দেয়া হলো, পেঁয়াজুর স্বাদ কেমন— তা নিয়ে সরাসরি মন্তব্য করে বসলে, মন খারাপ হয়ে গিয়েছিলো। আম্মু তো রোজা রেখে এতো মেহনত করেই বানিয়েছেন। নিজেদের জন্য বানানো থেকেই শেয়ার করেছেন সওয়াবের নিয়্যাতে।


এরকম পরিস্থিতি আর সমালোচনার ভয় আজকাল আমাদের ভীত রাখে। দিতে হলে ভালোটাই দিতে হবে, দামীটাই দেয়া লাগবে।

পেলেও কৃতজ্ঞতা ভুলে কী দিলো কেমন দিলো, কী দেওয়া উচিত ছিলো, জাজমেন্টের আসর খুলে বসি নয়তো অন্তত মনে মনে ভাবি।

এজন্য খেয়াল করে দেখুন, আগের মতো আন্তরিকতা নেই প্রতিবেশীদের মাঝেও। সেই দেওয়া-নেওয়ার প্রচলন উঠে যাচ্ছে।

অথচ রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘হে মুসলিম নারীগণ, কোনো মহিলা প্রতিবেশী যেন অপর মহিলা প্রতিবেশীর হাদিয়া তুচ্ছ মনে না করে, এমনকি তা ছাগলের সামান্য খুর হলেও।’ (বুখারি)

‘যখন তুমি তরকারি রান্না করবে, তখন তাতে বেশি করে ঝোল দেবে। তারপর তোমার প্রতিবেশীর পরিজনের খেয়াল রাখবে। এরপর তা থেকে তাদের কিছু সৌজন্য হিসেবে পৌঁছে দেবে।’ (মুসলিম)

দেওয়া- নেওয়ার প্রচলন
সানজিদা যাইনাব

রৌদ্রময়ী

রৌদ্রময়ী

04 Jan, 12:32


আমি একজন শিশু ডাক্তার। অটিজম এবং এডিএইডডি (ADHD) শিশুদের সেনসরি ইস্যুসের জন্য কিছু পরামর্শ নিচে লিখছি আশা করি আপনাদের কাজে আসবে।

১) বাচ্চাকে স্ক্রিন টাইম (টিভি/ মোবাইল/ট্যাব) দিবেন না। দিলেও সারাদিনে ৩০ মিনিটের বেশী নয়।

২) বাচ্চাকে প্রতিদিন দোলনায় চড়াবেন। অন্তত ৩০ মিনিট।

৩) বাচ্চাকে বাইরে নিয়ে যাবেন। গাছপালা আছে, মাঠ আছে এমন জায়গায়।

৪) বাচ্চাকে স্লাইম, প্লেডো এসব দিয়ে খেলতে দিবেন।

৫) খালিপায়ে ঘাস, বালু, কাদামাটি, শুকনো পাতা এসবের উপর হাঁটতে দিবেন।

৬) চাল, ডাল এসব ধরতে দিবেন।

৭) ব্যাটারী চালিত খেলনা যেগুলো একই রকম করে বারবার ঘুরতে থাকে/ একই সাউন্ড বারবার হতে থাকে এসব না দিয়ে পাজল টাইপ খেলনা দিবেন।

৮) বাচ্চা টিপ টো করে হাঁটলে পায়ের জয়েন্ট গুলোতে আপনার হাতের মাঝে নিয়ে চাপ দিবেন। সারাদিনে এটা বারবার করে করবেন। অনেক বাচ্চা হাতেরও অস্বাভাবিক মুভমেন্ট করে সেক্ষেত্রেও বাচ্চার হাত আপনার দুই হাতের মাঝে নিয়ে চাপ দিবেন (যেটুকু বাচ্চার জন্য সহনীয়)।

৯) বাচ্চাকে সুঁড়সুড়ি দিবেন।

১০) বিভিন্ন ধরনের গোসলের মাজনি শুকনো অবস্থায়/ সেনসরি ব্রাশ দিয়ে বাচ্চার হাত, পা এবং পিঠে ঘষবেন।

১১) বাচ্চার সাথে লুকোচুরি, ছোঁয়াছুয়ি, মিছেমিছি খেলা খেলবেন।

১২) অন্ধকার ঘরে টর্চ লাইট দেয়ালে ফেলবেন/ বিভিন্ন কালারের ছোট ল্যাম্প জ্বালাবেন (যেমন মরিচ বাতি)।

১৩) বাচ্চাকে মিষ্টি খাবার এবং বেশী লবনাক্ত খাবার দিবেন না। যেমন, চকলেট চিপস, নুডুলসের মশলা।

১৪) বাচ্চার যদি বিভিন্ন জিনিস কামড়ানোর প্রবণতা থাকে তাহলে ইলেকট্রিক টুথব্রাশ ব্যবহার করবেন।

১৫) শিশুকে বেশী বেশী জড়িয়ে ধরবেন। আদর করবেন

অটিজম, এডিএইচডি শিশুর জন্য পরামর্শ
ডা: গুলশানা
MBBS BCS, FCPS (paediatrics) final, MD (Paediatrics) phase B
Bangladesh Shishu Hospital & Institute

রৌদ্রময়ী

রৌদ্রময়ী

03 Jan, 12:41


আমাদের ঘরের দেয়ালে অনেকগুলো দাগ বসে গিয়েছিল। ভাবছিলাম কিছু একটা দেয়ালে টানিয়ে দাগগুলো ঢাকা দরকার। আবার এর পিছনে বেশি সময় ব্যয় করা মোটামুটি বিলাসিতা মনে হয়, সেজন্য দেয়ালটা এভাবেই পড়েছিল।

কী মনে করে আমার এক ছোট বোন আমাকে তিনটা ক্যানভাস গিফট করল। দেয়ালের তিনটা বড় বড় ছাল উঠে যাওয়া দাগ ঢেকে দিলাম। এই তিন‌ ক্যানভাস দিয়ে আলহামদুলিল্লাহ। কেউ দেখলে বুঝতেই পারবে না যে পিছনের অংশটা কেমন বীভৎস।

দেয়ালের দিকে তাকিয়ে ভাবছি, মুসলিম ভাই বোনদেরও তো এরকমই হওয়ার কথা, তাই না?

একজন আরেকজনের জন্য নিরাপদ একটা সিন্দুক হওয়ার কথা। একজন আরেকজনের দোষ ত্রুটি ঢেকে রাখার কথা, এবং অন্তর থেকে দরদ দিয়ে নিজের এবং অন্যের সংশোধনের ইচ্ছা আসার কথা...

নেই! প্র্যাকটিসিংদের মধ্যেও সেই দরদ নেই। সেখানে শয়তানের চালে ইগো এসে বাসা বাঁধে মনের অজান্তে। কিছু সচেতন মানুষ অবশ্য মনে মনে এটা ফাইট করার চেষ্টা করে। সেটা এপ্রিসিয়েট করার মত।

আর একে অন্যের প্রাইভেসি রক্ষা করা?
প্রাইভেসি রক্ষা করে মুসলিম ভাই বোনের দোষ ত্রুটি ঢেকে রেখে সংশোধনের সুযোগ দেওয়া? সেটা চাওয়াটাও হয়তো এই গীবতের‌ কালচারে আরেক বিলাসিতা।

অথচ জিহ্বার ফসল সম্পর্কে আল্লাহ এবং তাঁর রসূল ﷺ আমাদেরকে বারবার সতর্ক করেছেন। বারবার সাবধান করেছেন।

এই ছোট্ট জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে একটা জিনিস যদি বুঝি, সেটা হচ্ছে, জিহ্বা নাড়িয়ে একবার বলা কথা কখনো ফেরত নেওয়া যায় না। বলা কথার প্রভাব সবাই সব সময় ভুলতে পারে না। সেটা ভালো এবং মন্দ দুই দিকেই সত্য।

তাই মুখ খোলার আগে একটু চিন্তা করে মুখ খুললে জীবনে শান্তি থাকে। এই কথাটা নিজেকেই বারবার রিমাইন্ডার দেই। শয়তান বারবার ভুলিয়ে দেয়, আবার মনে করিয়ে দেই। সারা জীবন মনে করিয়ে যাব ইন শা আল্লাহ।

কারণ জিহবার ফসল ছাড়া আর কি আছে যা মানুষকে মুখ থুবড়ে জাহান্নামের দিকে নিয়ে যাবে?

জিহ্বার ফসল
শারিন সফি অদ্রিতা

রৌদ্রময়ী

রৌদ্রময়ী

02 Jan, 13:38


ছাত্ররা যখনই কোনো নতুন স্টেপ নেয়, সাথে সাথে মির্জা ফখরুল গিয়ে প্রধান উপদেষ্টার সাথে দেখা করে।

এরপর প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং একটা ব্রিফিং করে, বলে সরকার সব রাজনৈতিক দলের ঐক্যমতের ভিত্তিতে সমাধান করবে—এই বলে সময় চায়। এরপর সেই সময় আর আসে না।

নতুন কোনো ইস্যু সামনে আসে, পুরানো ইস্যু চাপা পড়ে যায়।

রাষ্ট্রপতিকে সরানো থেকে শুরু করে সংবিধান পরিবর্তন, আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা— প্রতিটি ক্ষেত্রেই একই ব্যাপার ঘটেছে। সর্বশেষ জুলাই ঘোষণাপত্র নিয়েও এমন ঘটবে এই আশংকা করছি।

বি.এন. পি আসলে ছাত্রদের ভয় পায়। ওরা একটা কথা বুঝতেছে না যে, ওরা ১৬ বছর ধরে আন্দোলন করেও জনগণকে কানেক্ট করতে পারে নাই , যেটা ছাত্ররা পারছে।

হয়তো ছাত্ররা শুরুতে সরকার পতনের জন্য আন্দোলন করে নাই ঠিক, কিন্তু একটা সাধারণ দাবীকে যে ওরা জনগণের সাথে কানেক্ট করতে পারছে, শ্রেণী, পেশা নির্বিশেষে সবাইকে রাজপথে নামাতে পারছে– এটা অবশ্যই ওদের ক্রেডিট।

ওদের আন্দোলনের প্রতিটি স্টেপ, নামকরণ , শ্লোগান সবকিছু ছিল ইউনিক।

আর বি. এন. পি সেই গৎবাধা, বস্তপঁচা রাজনীতি করতেছে। ক্ষমতায় না গিয়েই দখলদারি, চাঁদাবাজি করতেছে , রাস্তাঘাট পোস্টারে ছেঁয়ে ফেলছে। এমনকি নিজেদের গ্রুপের মধ্যে মারামারি করতেছে। ওদের ইমেজ আরও নষ্ট হচ্ছে।

নতুন প্রজন্ম তো বটেই আমাদের মতো মধ্যবয়সী প্রজন্মও ওদের প্রতি বিরক্ত।

ছাত্রদের সমালোচনা না করে নিজেদের সংশোধনের চেষ্টা না করলে ওদের ভবিষ্যত খারাপ।

বস্তাপঁচা রাজনীতি
হাবিবা মোবাশ্বেরা

রৌদ্রময়ী

রৌদ্রময়ী

01 Jan, 13:26


গতরাতের আতশবাজি, ফানুশ উড়ানোর সাথে যারা সম্পৃক্ত ছিল সবাই নিশ্চই ইয়াংস্টার। কারও না কারও সন্তান।

যদি ধরে নিই বাবা মার নিষেধ তারা শোনেনি তবে বলব, যে সন্তান বাবা মার নিষেধ উপেক্ষা করে যা খুশি তাই করতে পারে সে সন্তান মানুষের মত দেখতে হলেও মানুষ হয় নি।

কন্সিকোয়েন্সেস বোঝার মত জ্ঞান বিবেক অপরাধবোধ কিছুই তার ডেভেলপ করে নি।

আজ সে কয়েক ঘন্টার ফূর্তির জন্য পশুপাখি মারছে, অন্য বাড়ির ছোট বাচ্চা, অসুস্থ সদস্যকে মারছে, মানুষের ঘর জ্বালিয়ে দেবার পরও কোনো অনুশোচনা হচ্ছে না। কাল সে সজ্ঞানেই মানুষ মারবে।

একই ভুল প্রতিবছর রিপিট হলে সেটা আর ভুল থাকে না, সেটাকে বলে ক্রাইম!

এই সন্তান কাল নিজের উচ্ছৃঙ্খলতা দিয়ে নিজের বাবাকেই মেরে ফেলবে। মা-কে মৃত্যুশয্যায় দেখেও তার অন্তরে বিন্দুমাত্র কোনো প্রভাব পড়বে না।

সে বেরিয়ে যাবে তার ফূর্তির সন্ধানে। যে জীবটার ভেতরে কোনো এম্প্যাথি তৈরি হয় নাই সে মানুষের পর্যায়েই পড়ে না। পশুর পর্যায়েও পড়ে না। আরও নীচ। এমন সন্তান আল্লাহ তা'লা কাউকে না দিন।

আর যদি বাবা-মায়ের যেকোন একজনও হয় উচ্ছৃঙ্খল, যাকে দেখেই সন্তান এমন লাগামহীন ফূর্তি করতে শিখেছে, শেষ বয়সে সেই সন্তানের কাছ থেকে অসম্মান, অমর্যাদা তার প্রাপ্য!

যে মা বাচ্চাকে অন্যের কষ্ট উপলব্ধি করতে শেখায় না, বাচ্চা মানুষ করার পরিবর্তে উলটো তাকে নিজের স্বার্থে অমানুষ বানায়, সে মা করুণ পরিণতিই ডিজার্ভ করে।

এই ইয়াং স্টাররাও একদিন বাবা মা হবে, এদের পরিণতিও সেইম। আল্লাহ তা'লার বিচার সূক্ষ্ম।

ভুল না ক্রাইম
তানজিনা রহমান

রৌদ্রময়ী

রৌদ্রময়ী

31 Dec, 15:01


আমার বন্ধু এখন শুধুই ছবি! তাকে আর কোনোদিন দেখা যাবে না!

আমার এক শ্রদ্ধেয় শিক্ষক আরেকজন শিক্ষকের ছবি দিয়ে এই কথাগুলো লিখেছেন। প্রথমে বুঝতে পারছিলাম না কী হয়েছে? ডিপার্টমেন্টের পেজের একটা পোস্ট দেখে ঘটনাটা বুঝতে পারলাম।

গতকাল রাতে আমাদের একজন শ্রদ্ধেয় শিক্ষক মৃত্যুবরণ করেছেন। বয়স খুব বেশি ছিল না। রাতে ব্যাডমিন্টন খেলার সময় হার্ট অ্যাটাকে মৃত্যু হয়েছে!
আল্লাহ তার কোনো একটা উত্তম কাজের উসিলায় তাকে ক্ষমা করুন আমিন।

প্রায় প্রতিদিনই কাছের, দূরের এমন অসংখ্য মানুষের মৃত্যু সংবাদ শুনতে শুনতে আমাদের কাছে মৃত্যুর সংবাদ যেন সাধারণ খবর হয়ে গিয়েছে! অথচ মৃত্যু সংবাদ শুনে আমাদের ভয় লাগার কথা, নিজেকে শোধরানোর কথা, নিজেদের আমলের ব্যাপারে সচেতন হওয়ার কথা!

এই যে মৃত্যুর মিছিল চলছে, এই মিছিলে তো আমিও আছি। কবে, কখন, কোথায় মৃত্যু হবে আমরা কেউ কি জানি? অথচ এমনভাবে দিনানিপাত করছি যেন আমরা জানি আমরা ৬০/৭০ বছর পর মারা যাব। ধর্ম কর্ম আর একটু বয়স হলে করব! এখন না হয় একটু পার্টি সার্টি করে নেই!

আজকে ২০২৪ সালের শেষ দিন। মনে হচ্ছে না, বছরটা চোখের পলকেই শেষ হয়ে গেল! এভাবেই বছর ঘুরে বছর আসবে, দিন, মাস, ক্ষন যাবে, আর আমরা একটু একটু করে মৃত্যুর মিছিলে এগিয়ে যাব।

একটু চিন্তা করে দেখলে মাথা নষ্ট হয়ে যায়। জীবনের আড়াই যুগ পার করে ফেলেছি। বাংলাদেশের গড় আয়ুর হিসাবে ধরলে হয়তো আর আড়াই যুগ পেতে পারি ইনশাআল্লাহ। কিন্তু এই মুহূর্তে যদি মৃত্যু এসে যায়, হিসাবটা কেমন হবে?

খুব কঠিন। জান্নাতের আশা সবাই করি। কিন্তু জান্নাত পাওয়ার জন্য কতটুকু কাজ করি? একজন সচেতন মুসলিম হিসেবে নিজের জন্য পুরো একটা বছরের প্ল্যান থাকা জরুরি নয় কি?

রসুলুল্লাহ সা. বলেছেন, ‘বুদ্ধিমান ঐ ব্যক্তি, যে নিজের পর্যালোচনা করে এবং মৃত্যু-পরবর্তী জীবনের জন্য প্রস্তুতি নেয়। আর নির্বোধ ও অক্ষম সেই ব্যক্তি, যে মনোবৃত্তির অনুসরণ করে এবং অলীক কল্পনায় ডুবে থাকে।’
-(তিরমিজি ২৪৫৯)

টু ডু লিস্টের কথা বলছি না। যেমন: নিজের যত্ন নেব, নিয়মিত হাটব, নিয়মিত রোদে যাব, স্বাস্থ্যকর খাবার খাব।

আমরা কি নতুন বছরে নিয়মিত করা হবে এমন কয়েকটা কাজ নির্দিষ্ট করে নিতে পারি না, যাতে বছর ঘুরে নিজের আমল আখলাকের দিকে তাকালে অন্তত কিছু পরিবর্তন দেখতে পাব। হতে পারে তিনটা, পাঁচটা অথবা সাতটা।

নিজের জন্য ৫ টা কাজ ইনশাআল্লাহ...

১। পাঁচ ওয়াক্ত সালাত সময়মত আদায় করা,
২। কোরআন থেকে প্রতিদিন অন্তত এক রুকু তেলাওয়াত,
৩। নিজের উপর অর্পিত সকল দায়িত্ব উত্তমভাবে পালন,
৪। প্রতিদিন সকাল সন্ধ্যার জিকির,
৫। সকল পাপ কাজ থেকে বিরত থাকা।

আর নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে হারাম কিছু করব না। বরং অনেক অনেক দুয়া করব।

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে হিশাম বলেন, আল্লাহর রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবিরা নতুন বছরের আগমনে কিংবা নতুন মাসের শুরুতে এই দুয়া পড়তে অভ্যস্ত ছিলেন।

দুয়াটি হলো- اللَّهُمَّ أَدْخِلْهُ عَلَيْنَا بِالْأَمْنِ، وَالْإِيمَانِ، وَالسَّلَامَةِ، وَالْإِسْلَامِ، وَرِضْوَانٍ مِنَ الرَّحْمَنِ، وَجَوَار مِنَ الشَّيْطَانِ

উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা আদখিলহু আলাইনা বিল-আমনি, ওয়াল ইমানি, ওয়াস সালামাতি, ওয়াল ইসলামি, ওয়া রিদওয়ানিম মিনার রাহমানি, ওয়া ঝাওয়ারিম মিনাশ শায়ত্বানি।

অর্থ : হে আল্লাহ! আমাদের ঈমান ও ইসলামকে নিরাপদ করুন। আমাদের সুরক্ষা দিন। দয়াময় রহমানের কল্যাণ দান করুন। শয়তানের কুমন্ত্রণার মোকাবেলায় আমাদের সাহায্য করুন।
(আল-মুজাম আল-আওসাত, হাদিস ০৬/২২১)

বছর ঘুরে
শেফাত-ই-সুলতানা মেঘলা

রৌদ্রময়ী

রৌদ্রময়ী

31 Dec, 09:30


বেশিদূর যাইতে হবে না। নিজের কথা বলি.....আমার হার্টের অসুখ আছে, সাউন্ড সেনসিটিভিটি আছে।

শুধু আতশবাজির আওয়াজ কেন, কোনো জোরে আওয়াজই আমি সহ্য করতে পারি না। টেলিভিশনেরও না। আওয়াজ জোরে হলে বুক ধড়ফড় করে, এংজাইটি হয়, শ্বাসকষ্ট শুরু হয়।

এমনকি বাড়াবাড়ি হয়ে গেলে হসপিটালেও নিতে হয়। প্রতিবছর থার্টি ফার্স্ট এলেই মনে হয় এমন কোনো রাতেই আমি টুক করে মরে যাব।

খুব বেশি দূর যাইতে হবে না, গত বছর থার্টি ফার্স্টের কথাই বলি।

আমার মহল্লায় চার চারটা বাচ্চা কুকুর মারা গেলো আপনাদের আতশবাজির শব্দে। কেউ শব্দে দিশাহারা হয়ে দৌড়াতে গিয়ে মাতালদের গাড়ি চাপা পড়লো, কেউ রাত থেকে ছটফট করতে করতে পরদিন টুপ করে মরে গেলো।

শব্দের প্রচন্ড আতঙ্কে দ্বিগবিদিক শূন্য হয়ে দৌড়ে কই যেন চলে গেলো আরো কয়েকটা কুকুর। আর ফিরে পাইনি ওদের। বেঁচে থাকলে নিশ্চয়ই ফিরে আসতো!

কোথা থেকে যেন একটা কম বয়সী মেয়ে কুকুর দৌড়ে এসে ঢুকে গেল আমাদের আন্ডারগ্রাউন্ড গ্যারেজে। চোখ গুলো ঠিকড়ে বের হয়ে আসছে, জিভ বেরিয়ে গেছে, ঠকঠক করে কাঁপছে আর চিৎকার দিয়ে কাঁদছে।

গত বছর থার্টি ফার্স্টের রাত আমি পুরোটা কাটিয়েছি গ্যারেজে আর রাস্তায়। একবার উপরে উঠে নিজের বাচ্চাদেরকে জড়ায় ধরি, আবার নিচে যাই।

একবার গ্যারেজে যাই, একবার রাস্তায় আমার মনা-বিন্দুদের জড়ায়ে ধরি। ভোরবেলা রবি এসে মেয়েটাকে গ্যারেজ থেকে বের করল। মেয়েটা অসাড় হয়ে পড়ে থাকলো রাস্তায়। দুপুর ১১ টা পর্যন্ত আমি ওর সাথে।

এই ছিল আমার থার্টি ফার্স্ট।

এই বছর আমি কী করবো জানিনা। পেটের এই মাথা থেকে ওই মাথা পর্যন্ত সেলাই করা, নিজেই হাঁটতে পারি না। নিজের বাচ্চাগুলোকে অভয় দিব নাকি রাস্তার বাচ্চাগুলোকে অভয় দিব, একা মানুষ কী করবো কই যাব কিছুই মাথায় আসতেছে না।

মাতাল হোন, কোনো অসুবিধা নাই। নিজের বাসায় হোন, মাতাল হয়ে রাস্তায় অবলা কুকুর আর অসহায় মানুষদেরকে চাপা দিয়েন না।

পার্টি করেন, ডিজে করেন, নাচানাচি করেন। নগ্ন নৃত্য করে ফেসবুকে লাইভ করেন। কোনোঅসুবিধা নাই।

আর হ্যাঁ, আতশবাজিও পোড়ান। তবে সেইটা নিজের বেডরুমে, নিজের বৃদ্ধ বাপ, মা আর ছোট সন্তানদের কানের কাছে। যদি নিজের পরিবারের কানের কাছে আতশবাজি পোড়াতে না পারেন, তাহলে অন্যের মা-বাবা-সন্তানদেরকে কষ্ট দেবার কোনো অধিকার আপনার নাই।

একটি বিশেষ অনুরোধ—
আমার ফ্রেন্ডলিস্টে যারা সচেতন মানুষ আছেন, আসুন আজকে সারাদিন এই আতশবাজি অসভ্যতার বিরুদ্ধে বারবার পোস্ট করি। করতেই থাকি।

ভাবছেন ফেসবুকে লিখে কী হয়? অনেক কিছু হয়। অনেক কিছু।

আমাদের ছোট্ট ছোট্ট পদক্ষেপ গুলো দিনশেষে অনেক বড় ইম্প্যাক্ট ফেলতে পারে। যদি একটা মানুষও বিরত হয়, একটা মানুষ সচেতন হয়, একটা জানও বাঁচে, তাহলেই বা ক্ষতি কী!

অন্তত, যারা আতশবাজি পুড়ায় কেবলই ফেসবুকে শো অফ করার জন্য কিংবা ভিডিও দেওয়ার জন্য। তারা অন্তত পিছিয়ে যাবে সবার ঘৃণা দেখে।

আতঙ্কের রাত
রুমানা বৈশাখী

রৌদ্রময়ী

রৌদ্রময়ী

30 Dec, 12:47


যতটা অপরিষ্কার বাসা পেয়েছিলাম, তার বিপরীতে ততটাই পরিষ্কার করে বাসাটা ছাড়লাম।

আমার এই পরিষ্কার করা দেখে শিফটিং এজেন্সির একজন আরেকজনকে বলছে “আপা তো বাড়ি একেবারে চকচক করে দিয়েছে!”

আরেকজন আবার বলে “আমি যখন ভিজিটে আসছিলাম তখনো বাড়িঘর চকচক করছিলো।” (ভিজিট বলতে শিফটিং এর আগে বাসার ফার্নিচার/ জিনিসপত্র দেখতে আসে, সে অনুযায়ী টাকা নিবে তাই।)

এমন মন্তব্য এবারই প্রথম না!

এর আগে যখন ঢাকা থেকে রাজশাহী শিফট করি তখনও যারা শিফট করছিলো তারা শেষ সময়ে যখন দেখলো আমি বাসা ঝাড়ু দিচ্ছি, মোছামুছি করছি তখন বলছিলো, “ম্যাডাম এসব আপনি কেন করছেন? যারা বাসা নিবে তারা করবে!”

বেশিরভাগ মানুষ এটাই ভাবে...

বাসা ছাড়ার পর সে বাসা পরিষ্কার করে দেয়া তো দূরের কথা, পারলে আরও কয়দিন আগে থেকে ময়লা করা শুরু করে আর বলে, “ছেড়েই তো দিবো, পরিষ্কার করবো কেন!”

আমিও চাইলে এমন করতে পারতাম। আজ তো আরও সুযোগ ছিল, বাড়িওয়ালা ছিল না বাসায়। বাসা কেমন করে রেখে যাচ্ছি, দেখার কেউ নাই!

কিন্তু এমন অপরিষ্কার তো আমি না।

আমি মনে করি যে বাসায় থেকেছি, থাকার কারণে ময়লা হয়েছে, সে বাসাটা পরিষ্কার করে যাওয়া আমার দায়িত্ব।

তাছাড়া, আমি যেমন কোনো ভাড়া বাসায় উঠলে আশা করি বাসাটা যেন পরিষ্কার পাই, যেন পরিষ্কার করতে করতে জানের অবস্থা নাজেহাল না হয়, তেমনি তো অন্য কেউও আশা করে।

যদিওবা আমার এই আশা কখনোই পূরণ হয়না! বেশিরভাগ সময়েই বাসা নেয়ার পর পরিষ্কার করতে করতে কয়েকটা দিন চলে যায়...অবস্থা নাজেহাল হয়ে যায়।

হয়তোবা নিজে যা আশা করেও পাইনা, অন্যের জন্য তা করে ফেলি নিজ ইচ্ছেতেই।

অন্তত কেউ তো ভাড়া বাসায় উঠে খুশি হোক এই দেখে যে বাসাটা কী সুন্দর পরিষ্কার করা!
অন্তত কেউ তো বলবে, “যে এই বাসায় থাকতো, নিশ্চয়ই খুব পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন মানুষ ছিল!”

পরিষ্কার করব কেন?
সুমাইয়া সারাহ

রৌদ্রময়ী

রৌদ্রময়ী

29 Dec, 12:25


হলিক্রসে ভর্তির পর প্রথম যেদিন সাদা ফ্রক আর সাথে ঢিলা সালোয়ার পরে আয়নার সামনে দাঁড়িয়েছিলাম, নিজের কাছে নিজেকে খুবই হাস্যকর আর বোকার মতো লাগছিলো! যদি মন থেকে আসলে পরার অপশন থাকতো এই ড্রেস পরার জন্য আমার মন হয়তো কোনোদিনই সায় দিতো না।

প্রচন্ড গরমে ট্রাফিক পুলিশরা যে ইউনিফর্ম পরে রোদে দাঁড়িয়ে থাকে, আমি নিশ্চিত মন থেকে আসলে পরবো, এই সুযোগ থাকলে তারাও আর এই ইউনিফর্ম বাকি জীবনে পরতো না। শিক্ষা জীবন থেকে কর্মজীবনে এমন অসংখ্যবার আপনি, আমি এমন অনেক কিছু করেছি বা পরেছি যা আমাদের মন থেকে আসে নি, কিন্তু আমরা করতে বাধ্য তাই করতে হয়েছে এবং একসময় এতেই অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছি।

পর্দার বেলায় 'মন থেকে আসলে করব' বহুল প্রচলিত একটি অজুহাত এবং একে শয়তানের ধোঁকা বললেও ভুল বলা হবে না। এই ধোঁকায় আমি নিজেই ছিলাম একসময়।

কিছু বিষয়ে মন থেকে আসলে করব এই বিষয়টা খুব একটা ভাবায় না কিন্তু পর্দার ব্যাপার আসলেই বিষয়টা এতটা ফ্লেক্সিবল হয়ে যায় কি করে? পর্দা কি ফরজ বিধান না? পর্দাহীনভাবে চললে কি আমার গুনাহ লিখা হচ্ছে না?

সবই হচ্ছে এরপরও পর্দার ব্যাপার আসলেই আমরা মনের উপর ছেড়ে দেই। আমার মন থেকে যদি কোনোদিনই পর্দার ইচ্ছা না জাগে? হোয়াট ইফ মন থেকে আসার আগেই যদি আমি মারা যাই? আমার প্রথম পর্দাই যদি হয় আমার কাফনের কাপড়?

আমি জানি এখন আপনি ভাবছেন মন থেকে না আসলে জোর করে পর্দা করলে আমি আজকে করব, কালকে ছাড়ব এমন করলেই কি পর্দা হবে? না, অবশ্যই আমি আপনার সাথে একমত যে, পর্দা করলে সঠিকভাবে করা উচিত।

পর্দার উদ্দেশ্য একটুকরা হিজাব মাথায় জড়ানো না, পর্দার উদ্দেশ্য নিজের সৌন্দর্য ঢেকে রাখা।

কিন্তু আপনার কাছে আমার প্রশ্ন...আপনি মন থেকে আসার জন্য অপেক্ষা করছেন ভালো কথা কিন্তু মন থেকে আনার জন্য আপনি কি পদক্ষেপ নিয়েছেন? আপনার দিক থেকে আপনি কি কি করছেন যেন আপনার মনে পর্দার প্রতি ভালোবাসা আর আগ্রহ তৈরি হয়?

যে ব্যক্তি আল্লাহর দিকে এক হাত পরিমাণ অগ্রসর হয়, আল্লাহ তার দিকে দুই হাত পরিমাণ অগ্রসর হন। আর সে যখন আল্লাহর দিকে হেঁটে অগ্রসর হয়, আল্লাহ তখন তার দিকে দৌঁড়ে অগ্রসর হন।

আপনি আল্লাহর প্রতি ভালোবাসা বৃদ্ধি করে এমন পড়াশোনা করেছেন? আল্লাহকে যত ভালোবাসবেন তত তার বিধানগুলোর প্রতি ভালোবাসা বাড়বে। আপনি কাউকে মুখে বলেন ভালোবাসেন কিন্তু তার কোনো কথাই শুনবেন না তবে কি এটা সত্যিকারের ভালোবাসা?

আপনি কি পর্দার ব্যাপারে পড়াশোনা করছেন যে কেন আল্লাহ পর্দাকে ফরজ করেছেন? পর্দার ব্যাপারে কুরআন ও সুন্নাহ কি বলে, পর্দা না করলে কোন শাস্তির উল্লেখ আছে? পর্দা না করার কারণে আপনার ভাই, স্বামী ও পিতাকে কেমন শাস্তি পেতে হবে আখিরাতে?
সবচেয়ে বড়কথা, মন থেকে আসার জন্য দুআ করেছেন আপনি আল্লাহর কাছে?

যদি এগুলোর কোনোটাই না করেন তবে "মন থেকে আসলে করব" এই টার্ম দিয়ে শয়তান আপনাকে প্রতারিত করছে, শয়তান চায় মন থেকে আনানোর চক্করেই যেন আপনার দুনিয়ার দিনগুলো শেষ হয়ে যায়, জাহান্নামের লোকবল ভারি করাই তো শয়তানের লক্ষ্য। কিন্তু আপনি জেনে বুঝে কেনো শয়তানের লক্ষ্য বাস্তবায়ন করছেন?

মন থেকে আসলে
আনিকা আনজুম

রৌদ্রময়ী

রৌদ্রময়ী

27 Dec, 12:30


দশ বছর বয়সী ছোট্ট রাফির স্বপ্ন ছিলো পাইলট হওয়ার। গর্জন তুলে যখন কোনো বিমান তাদের বাড়ির উপর দিয়ে উড়ে যায়, তখন সে যেখানেই থাকুক সেখান থেকে দৌঁড়ে উঠানে চলে আসে।

বিমানের পিছু পিছু দু'হাত মেলে ছুটে চলে যতক্ষণ বিমানটি চোখের আড়াল না হয়। ছুটে চলার সময় চোখ বন্ধ করে কল্পনায় চলে যায় মেঘের উপরে ভেসে চলা বিশাল সাদা বিমানের ককপিটে, পাইলটের আসনে। সামনে অসংখ্য সুইচ আর বাটন, যেন আকাশের বুকে অসংখ্য তারার মতো জ্বলছে নিভছে।

তার সবচেয়ে প্রিয় খেলা ছিলো কাগজের প্লেন বানিয়ে বন্ধুদের সাথে আকাশে উড়ানো। কার বিমান কতদূর উড়ে যায় তারই প্রতিযোগিতা চলতো সেখানে।

রাফির বাবা আজ তাকে রিমোট কন্ট্রোল বিমান কিনে দিবে। পরীক্ষায় ভালো করলে কিনে দেওয়া হবে বলার পর এই বিমানটাকে পাওয়ার জন্য রাতদিন এক করে পড়াশোনা করেছে।

আল্লাহ তাকে নিরাশ করেননি। বার্ষিক পরীক্ষায় রাফির রোল হয়েছে দুই। তারই পুরস্কারের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে আজ সে। বারবার ঘরের দরজা পর্যন্ত গিয়ে দেখে আসে বাবা এলো কিনা।

"আসসালামু আলাইকুম। রাফি কোথায়? তোমার জন্য বিমান এনেছি আব্বু!"

রাফির বাবা বাড়িতে ঢুকতে ঢুকতে ডেকে বলছেন রাফিকে। রাফি এইমাত্র খেতে বসেছিলো। দ্রুত কোনোমতে হাত ধুয়েই সে ছুটলো উঠানে। ছুটতে ছুটতে তার কানে ভেসে আসলো বিমানের শব্দ। এই শব্দটা একটু আলাদা। অনেক জোরালো আওয়াজ।

কিছুক্ষণ পর। বোমার শব্দ মিলিয়ে যাওয়ার পর আশেপাশের মানুষ এক এক করে ধ্বংসস্তুপে পরিণত হওয়া বাড়িটার দিকে এগুচ্ছে। ইট-পাথরের স্তুপের কিছুটা দূরে একটা হাত নজরে পড়লো। কনুইয়ের কাছ থেকে বাকীটা নেই। সেই হাতে ধরা একটা খেলনা বিমান।

হ্যা, হাতটা রাফির। গাজা উপত্যকার দশ বছর বয়সী ছেলে রাফি, যে খুব করে চাইতো পাইলট হতে। হয়তো তাই তার মৃত্যুটাও একজন পাইলটের হাতেই হলো। বোমারু বিমানের পাইলট!

পাইলট
হাবিবুন নাহার মিমি

রৌদ্রময়ী

রৌদ্রময়ী

26 Dec, 12:31


দু গালে চড় মেরে তওবা তওবা বললেই তওবা হয়ে যায় না।

তওবার পাঁচটি শর্ত আছে। এ শর্তগুলো পূর্ণ করতে হবে।

১.ইখলাস (অকপটতা)
২.কৃতপাপের জন্য অনুতপ্ত হওয়া
৩.অনতিবিলম্বে পাপ ছেড়ে দেওয়া
৪.ভবিষ্যতে পুনরায় গুনাহ না-করার দৃঢ় সংকল্প করা
৫.তওবা কবুল হওয়ার সময়সীমার মধ্যে তওবা করা।

অর্থাৎ তওবা করতে হবে মৃত্যু শুরু হওয়ার পূর্বে এবং পশ্চিম দিক থেকে সূর্যোদয় শুরু হওয়ার আগে।

মৃত্যুর গড়গড়া শুরু হওয়া অর্থাৎ মালাকুল মওত দেখা এবং আত্মা কন্ঠনালীতে পৌঁছে যাবার আগ পর্যন্ত আল্লাহ তা'লা তওবা কবুল করেন।

“আর এমন লোকদের জন্য তওবা নেই, যারা মন্দ কাজ করতেই থাকে, এমন কি যখন তাদের কারো মৃত্যু উপস্থিত হয়, তখন বলতে থাকে আমি এখন তওবা করছি।” [সূরা নিসা, আয়াত ১৮]

অর্থাৎ আত্মা দেহ থেকে বেরিয়ে কন্ঠনালীতে পৌঁছে গেলে আর তওবা গ্রহন করা হয় না।

“তারা যখন আমার শাস্তি দেখল তাদের ঈমান তাদের কোন উপকারে এলো না।” [ সূরা মুমিন আয়াত ৮৫]

ফিরাউন সমুদ্রে নিমজ্জিত হবার সময় বলেছিল,
“আমি ঈমান আনলাম যে, তিনি ছাড়া কোন মাবুদ নেই যার উপর বানু ইসরাঈল ঈমান এনেছে এবং আমি মুসলমানদের অন্তর্ভুক্ত হলাম।”
[সূরা ইউনূস আয়াত ৯০]

তখন আল্লাহ তা'লা বলেন,
“এখন? অথচ ইতিপূর্বে তুমি অবাধ্যচরণ করে এসেছ এবং তুমি বিপর্যয় সৃষ্টিকারীদের অন্তর্ভুক্ত ছিলে।”
[সূরা ইউনূস আয়াত ৯১]

অর্থাৎ আল্লাহ তা'আলা তার ঈমান কবুল করলেন না। [তাফসীর ইবনে কাসীর]

কাজেই আভি তো ম্যায় জাওয়ান হু একটু মৌজ ফূর্তি করে নিই, মৃত্যুর সময় তওবা করে নিব নে এই দুই নাম্বারি চিন্তা ভাবনা থাকলে ধরা খাওয়ার সমূহ সম্ভাবনা!

মৃত্যুর এক বছর, এক মাস, এক সপ্তাহ, এমনকি আধা ঘন্টা আগেও তওবা করলে তওবা কবুল হয় ঠিক আছে, কিন্তু ট্র‍্যাজিক ব্যাপার হল মালাকুল মওত এপয়েন্টমেন্ট নিয়ে আসবে না।

তাওবার ৫ টি শর্ত
তানজিনা রহমান

রৌদ্রময়ী

রৌদ্রময়ী

25 Dec, 12:34


হাজার এডিশন আছে বাইবেলের এবং তারা নিজেরাও স্বীকার করে যে সবচেয়ে পুরানো গসপেল লেখা হয়েছিল ঈসা (আ) কে তুলে নেবার একশ বছর পর।

ক্রিসমাস ইস্টার সানডে থ্যাংক্সগিভিং ইত্যাদি পালনকারীরা কেবল ট্র‍্যাডিশনের জোরে এসব পালন করে যাচ্ছে।

এমনকি ক্রিসমাস, যা কিনা তাদের ভাষ্যমতে ঈসা (আ) এর জন্মদিন, তাও একটা ভুল ডেট। এই ডেটে ঈসা (আ) এর জন্ম হয়েছে এরকম কোনো ভ্যালিড তথ্য নেই।

এখন মেইনস্ট্রিম উম্মাহ, অর্থাৎ মুসলিমরা ( ইহুদি ও ক্রিশ্চানরা যারা একচুয়াল বনী ইসরাইল ছিল এবং মূসা (আ) ও ঈসা (আ) কে অনুসরণ করতো তারা ছিল তখনকার মুসলিম) কি এই বিভাজন থেকে মুক্ত?

আমাদের মাঝেও কি শিয়া সুন্নী কনফ্লিক্ট নেই? সাদপন্থী কাদিয়ানী অমুক তমুক হাজারটা ভাগ। বিশুদ্ধ আক্বীদার জ্ঞান যার নাই তার পথভ্রষ্ট হবার সমূহ সম্ভাবনা।

এর সাথে তো সাদা চামড়াদের জাতে উঠার জন্য ক্রিসমাস, হ্যালোউইন, থ্যাংকসগিভিং এসব পালন আছেই।

আবার এই দেশে নিজেকে সংস্কৃতমনা ও সেকুলার প্রমাণ করতে 'ধর্ম যার যার, উৎসব সবার' এই পন্থা পালনও আছে। সব মিলিয়ে শয়তান আমাদেরকে এমনভাবে বেদিশা করে দিয়েছে যে আমরা সত্যকে ভুলতে বসেছি, সত্য জেনেও তা মানতে আমরা নারাজ।

৩.

কয়েকদিন আগে সিরিয়ার একটা ছবি খুব শেয়ার হচ্ছিলো। দামেশকের সেই বিখ্যাত মসজিদ যেখানে ঈসা (আ) অবতারণ করবেন। সেই সাদা মিনার যেখানে ঈসা (আ) দুইজন ফেরেশতার কাধে ভর দিয়ে আসমান থেকে নেমে আসবেন। তখন মসজিদে মুসল্লীরা জামাতে সালাত আদায়ের জন্য সমবেত হচ্ছেন কেবল।

কেমন লাগবে তাদের, অন্তর কেমন শিহরিত হবে ঈসা (আ) কে দেখে? ঈসা (আ) তাদের সাথে সালাত আদায় করবেন ইমাম মাহদীর ইমামতিতে।

কোথায় থাকবে তখন এত বিভাজন? সম্ভবত এত বিভাজন করনেওয়ালারা ততদিনে বেঁচে থাকবেনা। দাজ্জালকে মোকাবিলা করে কেবলমাত্র প্রকৃত ঈমানদাররাই থাকবেন ঈসা (আ) এর সাথে থাকার জন্য।

কেমন অবস্থা হবে তখন খ্রিস্টানদের? যখন দেখবে এতদিনের এত উৎসব পালন, ট্রিনিটিকে বিশ্বাস করা, নিজেদের সুপিরিয়র ও আরব কিংবা ব্রাউন মুসলিমদের থার্ড ক্লাস অসভ্য জাতি ভাবা মানুষেরা দেখবে ঈসা (আ) এসে তাদেরকে পেরিয়ে সেই তুচ্ছতাচ্ছিল্য করা মানুষদের কাতারে সামিল হচ্ছেন।

আর দাজ্জালের অনুসারী ইহুদিরা দেখবে কিভাবে ঈসা (আ) কে দেখে দাজ্জাল দৌড়ে পালাবে, কিভাবে ঈসা (আ) তাকে চেইজ করবেন।

এতদিনের বিশ্বাস ভেংগে গুড়িয়ে যাবে তখন।

দ্রুতই নিজেদের আক্বীদা সংশোধন করে নেয়া জরুরি। কোনো দলকে অনুসরণ করে নয়, নিজের আক্বীদা নিজেকেই পড়াশুনা করে ঠিক করে নিতে হবে।

নয়তো আখিরাতে আমরা অবাক হয়ে দেখব আমাদের আমলনামা বাম হাতে দেয়া হচ্ছে। দেখব জান্নাতীরা হাসতে হাসতে আমাদের ফেলে জান্নাতের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। আল্লাহুম্মাগফিরলী।

ইহদিনাস সীরাতাল মুস্তাক্বিম।

যখন ঈসা (আ) আসবেন
ডা: সাদিয়া হোসেইন

রৌদ্রময়ী

রৌদ্রময়ী

25 Dec, 12:34


১. ঈসা (আ) কে আল্লাহ দুনিয়া থেকে নিয়ে যাওয়ার পর তাঁর কিছু উত্তরসূরী রয়ে যায় যাদেরকে কুরআনে উল্লেখ করা হয়েছে 'হাওয়ারী' নামে। তারা ঈসা (আ) কে রাসূল হিসেবে মানতো ও এক আল্লাহর ইবাদাত করতো।

এই ঘটনার কিছুদিন পর পল (Paul) নামে এক লোক দাবি করে যে সে ঈসা (আ) কে দেখেছে। জীবদ্দশায় সে কোনোদিন ঈসা (আ) কে দেখেনি বটে, এমনকি বলতে গেলে ঈসা (আ) ও তাঁর অনুসারীদের বিরোধিতা করতো।

হঠাৎ একদিন সে দাবি করলো রাস্তায় হাঁটার সময় ঈসা (আ) নাকি তার সামনে এসে দাঁড়িয়েছেন, চারিদিক আলোয় উদ্ভাসিত হয়ে গেছে, এত আলো যে আসলে সে চোখই খুলতে পারছিলো না। এই ঘটনাকে ক্রিশ্চানরা ইস্টার সানডে নামে উদযাপন করে৷

পল প্রচার করা শুরু করে ঈসা (আ) আসলে আল্লাহর ছেলে ছিলেন (আস্তাগফিরুল্লাহ)। তিনি ক্রুশবিদ্ধ হয়ে মারা যান এবং আবার বেঁচে উঠেছেন। এবং এই মৃত্যুর মধ্য দিয়ে সাধারণ মানুষের পাপের প্রায়শ্চিত্ত করেছেন।

তারপরও বেশ কিছু আসল অনুসারী বেঁচে ছিল, তারা চেষ্টা করতো মানুষকে সঠিক মতবাদ জানানোর। কিন্তু সমস্যা হয়ে দাড়ালো সম্রাট কনস্ট্যানটাইন।

ঈসা (আ) এর চলে যাবার প্রায় সাড়ে তিনশ বছর পর এই ভদ্রলোক সম্পূর্ণ রোমান সাম্রাজ্য জয় করেন ও খ্রিস্টান ধর্ম গ্রহণ করেন।

খ্রিস্টান হবার পেছনে কারণটি ছিল মূলত রাজনৈতিক কিন্তু কনস্ট্যানটাইন বিপদে পড়ে গেল৷ পল মারা গেছে আরো প্রায় দুইশ বছর আগে অথচ তার প্রচারিত বিশ্বাস রোমের জনসাধারণের ধর্ম পালন নষ্ট করে দিয়ে গেছে।

খ্রিস্টান ধর্মের একাধিক শাখা প্রশাখা বের হয়েছে, একেকজন একেক জিনিস বিশ্বাস করে৷ কয়েকদিন পর পর এই বিশ্বাসের ভিত্তিতে বিরোধ সৃষ্টি হয়ে রাজ্যে অরাজকতা ছড়িয়ে পড়ে।

রাজ্যে শান্তি আনতে কনস্ট্যানটাইন কয়েকজন প্রিস্টকে একটি আলোচনা সভার জন্য নির্দেশ দেন। এই আলোচনা সভায় নির্ধারিত হবে যে সবাই আসলে কোন মতবাদ গ্রহণ করবে, বাকি সব মতবাদ সমেত বাকি বাইবেলগুলো নষ্ট করে ফেলা হবে৷

আলোচনা সভায় প্রায় ৩২০ জন পাদ্রী অংশ নেন। এই বিখ্যাত সভার নাম নাইসিয়া কাউন্সিল। একমাত্র আরিয়াস নামে এক পাদ্রী জোর গলায় ঈসা (আ) কে আল্লাহর নবী হিসেবে প্রমাণ করার চেষ্টা করেন। বাকিরা সবাই ঈসা (আ) কে আল্লাহর ছেলে, গড কিংবা গডের অংশ হিসেবে প্রমাণ করতে উঠে পড়ে লাগেন।

শেষপর্যন্ত কনস্ট্যানটাইন ট্রিনিটি মতবাদকে মেনে নেন। এই মতবাদ অনুসারে গড, সন অফ গড এবং হোলি স্পিরিট - তিন সত্ত্বা মিলে গড।

খ্রিস্টান ধর্মের সংস্কার করা হলো প্যাগান আদলে। আরিয়াসকে নির্বাসিত করা হলো, যারা ঈসা (আ) এর সত্য অনুসারী ও সত্য মতবাদ প্রচার করতো তাদের খুঁজে বের করে করে হত্যা করা হলো, এই মতবাদ সম্বলিত বাইবেলের কপিগুলো পুড়িয়ে ফেলা হলো।

অল্প কয়েকজন প্রাণে বেঁচে গেলে তারা লুকিয়ে গেলো। সেই থেকে শুরু করে আজো এই এবসার্ড মতবাদটাই খ্রিস্টান ধর্মের মেইনস্ট্রিম বিলিফ।

২.

আমাদের এক উম্মাহ দুই ভাগে ভাগ হয়ে গেল। একপক্ষ জিউইশ, যারা কিনা ঈসা (আ) কে নবী বলে মানতেই নারাজ৷ তারা তাঁকে একজন ভন্ড নবী হিসেবে প্রচার করে।

আমাদের রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেমন মৃত্যুর আগ মুহুর্তেও 'ইয়া উম্মাতি ইয়া উম্মাতি' করে গেছেন, ঈসা (আ) এর বলা শেষ যে কথাটা কুরআনে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে তা হলো -

"‘হে বনী ইসরাঈল, নিশ্চয় আমি তোমাদের নিকট আল্লাহর রাসূল। আমার পূর্ববর্তী তাওরাতের সত্যায়নকারী এবং একজন রাসূলের সুসংবাদদাতা যিনি আমার পরে আসবেন, যার নাম আহমদ’।"
সূরা সফ, আয়াত ৬।

যেতে যেতেও তিনি সত্যটা জানিয়ে গেছেন। কিন্তু তা যেমন জিউইশরা বিকৃত করেছে, তেমন করেছে ক্রিশ্চানরাও। জিউইশরা এখনো এক মাসীহর অপেক্ষায়।

তাদের দুইপক্ষকেই আল্লাহ একটা সুযোগ দেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মাধ্যমে। তাঁকে দেখা প্রতিটি ইহুদি জানতো তিনি সত্য নবী। তারা তাঁকে চিনতো যেমন তারা চিনতো তাদের সন্তানকে। অথচ কী করলো তারা? ঈসা (আ) এর মতো তাঁকেও অস্বীকার করলো। আল্লাহ বললেন -

"আর তোমরা হককে বাতিলের সাথে মিশ্রিত করো না এবং জেনে-বুঝে হককে গোপন করো না।"
সূরা বাকারাহ, আয়াত ৪২।

আল্লাহর কথা তারা আমলেই নিলো না। তাই তো তারা হলো অভিশপ্ত। শেষ পর্যন্ত ভন্ড মাসীহ বা দাজ্জালের অনুসারী হবে তারাই।

আশ্চর্যের বিষয় হলো এখন যারা খ্রিস্টান ও ইহুদি ধর্মকে রিপ্রেজেন্ট করে তাদের কেউই জন্মগত ভাবে ওই গোত্রের না।

এখনকার যেসব ইহুদিরা ফালিস্তিনকে গ্রেট স্টেট অফ ইজ্রাইল বানাতে চায় তাদের পূর্বপুরুষরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামেরও পরে ইহুদি ধর্ম গ্রহণ করেছিলো।

অথচ এরপরই ইহুদি ধর্মকে তারা একটা এথনিক রিলিজিয়ন বানিয়ে ফেলে। কেউ চাইলেই ইহুদি হতে পারবেনা আবার কেউ এই ধর্ম ত্যাগ করলেও সে ইহুদি থেকে যাবে।

'গড'স চোজেন পিপল' নামক গালভরা বিশেষণ যারা নিজেদের সাথে যুক্ত করে একটা ভিনদেশে নিজেদের আবাস গড়ে তুলতে তৎপর, তাদের অধিকাংশই স্রেফ ইমপোস্টার ছাড়া আর কিছুই না।

আবার যারা ঘটা করে ক্রিসমাস পালন করছে নিজেদের ক্রিশ্চান দাবি করে, তাদের নিজেদের ধর্মগ্রন্থের ঠিক নাই।

রৌদ্রময়ী

07 Dec, 12:51


মেজো ভাইয়ার রুমে একটা বুকশেলফ আছে। অনেক রকমের বই ওইটাতে। তো যখন নাইন বা টেনে পড়ি, তখন প্রায়ই সেটার ধুলাবালি ঝেড়ে পরিষ্কার করতাম। শুধু কোণার একটি সবুজ মলাট দেওয়া বই কখনো ধরতাম না। ভাবতাম ওটা আল-কুরঅান। তাই অজু ছাড়া ধরতে ভয় লাগতো। একদিন ভাবলাম আজকে এই বইটা পরিষ্কার করবই। তো অজু করে মাথায় ওড়না পড়ে খুব শান্তভাবে বইটার দিকে এগিয়ে গেলাম। বইটা হাতে নিলাম। নাম দেখে পিলে চমকে গেল।
বইয়ের নাম “প্রেম চিরন্তন -আশুতোষ মুখোপাধ্যায়”।

একলা রুমে জীবনে ওই একবারই ভয়াবহ হাসি হেসেছিলাম সেদিন। কী পূঃপবিত্র অন্তর নিয়ে হাজির হয়ে আমি কী হাতে নিলাম!

সবুজ মলাট
জান্নবী মৌ

রৌদ্রময়ী_রম্য

রৌদ্রময়ী

06 Dec, 12:37


আজকে মেট্রো রেল দিয়ে বাসায় আসার সময় আমি একটা জিনিস লক্ষ্য করলাম যে বাংলাদেশের মানুষ আসলেই নারী পুরুষ সমান অধিকারের দর্শনে বিশ্বাসী।

বেশিরভাগ সুস্থ পুরুষই নারীর জন্য সিট ছাড়ে না। নারীদের জন্য আলাদা সিট রাখা হবে এই দর্শনে আমরা বিশ্বাসী না। নারীদের জন্য কোনো সিট বরাদ্দ রাখার পলিসির সাথে আমি একমত নই।

আমি মনে করি ১০০% সিটই নারীদের জন্য বরাদ্দ থাকবে, যদি কোন নারী কোনো পাবলিক ট্রান্সপোর্টে উঠে। যদি সুস্থ পুরুষ হয়ে থাকেন তাহলে আমি মনে করি আপনাদের নারীদের জন্য উঠে সিট ছেড়ে দেয়া উচিত।

একজন মুসলমান হিসাবে কখনোই আমরা চাইবো না যে, আমাদের বোনরা পাবলিক ট্রান্সপোর্টে পুরুষ মানুষের সাথে ধাক্কাধাক্কি করে যাতায়াত করবে।

এটা দীর্ঘ সময়ে সমান অধিকার নামক বিকৃত দর্শন দিয়ে জনগণকে মগজ ধোলাই করার ফলাফল। এসব দর্শন থেকে আমাদের বের হয়ে আসতে হবে। কাজেই আপনারা যারা সুস্থ পুরুষ মানুষ আছেন তারা দয়া করে একজন নারী যদি দাঁড়িয়ে থাকে তাকে উঠে সিট দিবেন।

যখন সুস্থ ছিলাম তখন আমি এই চর্চা করে এসেছি। আল্লাহ যদি আমাকে সামনে সুস্থ করে তোলেন তাহলে আমি তখনও এটাই করব, ইনশাআল্লাহ।

নারীদের সিট দিন
আসিফ মাহতাব উৎস

রৌদ্রময়ী

রৌদ্রময়ী

06 Dec, 00:33


দুই হারামেই জুম্মাহর দিন প্রচুর মানুষের সমাগম হয়, তাই যেতে হয় একটু আগে। একটু আগে না, আসলে অনেক আগে। আমরা মক্কায় থাকতে গিয়েছিলাম সকাল ১০:৩০ এ, তাতেও মসজিদের ভেতর জায়গা পেতে একটু বেগ পেতে হয়েছিল। তাই মসজিদুন নববিতে যাই ৯:৩০ এর ভেতর।

মসজিদে আমরা জায়গা পেলেও কার্পেট পাইনি, পিলারের বামে বসেছিলাম। কার্পেট না পাওয়ায় আমাদের কোনো দুঃখ ছিল না, কিন্তু একটু পরই ঠাণ্ডা লাগতে থাকে। পরে বুঝতে পারি পিলারের গোড়া থেকেই এসির বাতাস আসছে।

শ্বাশুড়ি এমনিতেই ভীষণ কাশিতে ভুগছিলেন, আমারও কয়দিন ধরে ঠাণ্ডার ভাব। এজন্য ঠাণ্ডা আরো অসহনীয় লাগছিলো। কিন্তু তখন স্থান পরিবর্তনের আর সুযোগ ছিল না আমাদের পক্ষে।

মসজিদে বসে দুখুলুন মসজিদের সালাত আদায় করে আমরা সূরা কাহফ পড়লাম। পুরোটা শেষ করার পর দেখি অনেক সময় বাকি।

আমি দুহার সালাত পড়লাম। তারপরও হাতে অনেক সময় থাকলো! সূরা জুমুআহ্ পড়তে ইচ্ছা করলো, পড়ে শেষ করলাম। এরপর খুতবাহ শুরুর আগ পর্যন্ত বসে বসে দুরূদ আর যিকর পড়তে থাকলাম।

মসজিদের ভেতর ওই প্রথম ঢোকা আমাদের। মসজিদের সৌন্দর্য দেখে আমার শ্বাশুড়ি বললেন, তার নাকি বিশ্বাস হয়না এগুলো মানুষের তৈরি! আমি শুনে হাসলাম আর মুগ্ধতা নিয়ে চারপাশ দেখতে থাকলাম।

হঠাৎ মনে হলো, আমার রাসূল (সা:) এসব দেখলে কি বলতেন? এইযে উনার মসজিদের ভেতর এত চাকচিক্য, শত শত ঝাড়বাতি, প্রয়োজনের অধিক শীতল বাতাস... এসব দেখলে কি উনি খুশি হতেন?

আমি আমার চোখ নামিয়ে নিলাম। রাসূলের চোখ দিয়ে দেখার পর আমার সব মুগ্ধতা একরকম অস্বস্তিতে পরিণত হলো। কনকনে ঠান্ডায় কাঁপতে কাঁপতে আমার মনে হলো, এর থেকে মসজিদ প্রাঙ্গণেই বেশি শান্তি। মসজিদে নববীর বিশেষ ছাতা গুলোর তলে বসলে মনে হয় যেন খেজুর গাছের ছায়াতেই বসে আছি!

জুম্মাহর সালাত পড়ে খুব ভালো লাগলো। ইমাম সুরা আলা এবং গাশিয়াহ দিয়ে সালাত পড়লেন, যেগুলো আমার অর্থসহ মুখস্ত ছিল। আসলে অর্থ বুঝলে সালাতে মনোযোগ ভালো থাকে।

একটা জিনিস খেয়াল করেছি, মক্কা এবং মদীনায় শেষ দুই পারা থেকে অধিকাংশ সময় তিলাওয়াত করা হতো। এই দুই পারা পরিচিত হওয়ায় আমার সুবিধাই হতো, আলহামদুলিল্লাহ।

আমরা মক্কায় কোনো কেনাকাটা করিনি, সব মদীনা থেকে করবো বলে। আমরা শুনেছিলাম যে মদীনায় জিনিসের দাম তুলনামূলক কম, তাছাড়া এখান থেকে কেনাকাটা করা সুন্নাহ। কিন্তু আমাদের হোটেল একটু দূরে হওয়ায় মার্কেটে যাতায়াত করা কষ্ট হয়ে গিয়েছিল।

যাওয়ার আগে থেকেই কিছু জিনিস ঠিক করা হয়েছিল যেগুলো হাদীয়ার জন্য কেনা হবে। কিন্তু ঠিক কী পরিমাণে কেনা দরকার তা না ঠিক থাকায় ওখানে গিয়ে বেশ সময় নষ্ট হয়ে যায়।

তাছাড়া কোন মার্কেটে গেলে সেগুলো ভালো পাবো, তাও জানতাম না। একটু সস্তায় পাবো ভেবে ট্যাক্সিতে চড়ে দূরের ৫ রিয়ালের দোকানে গিয়ে মসজিদুন নববীতে আমাদের দুই ওয়াক্তের সালাত মিস হয়ে যায়। এরপর ডিসিশন নেই কাছের তাইবাহ মার্কেটেই যা কেনার কিনে ফেলবো, টাকা একটু বেশি লাগলেও।

পরবর্তীতে আমরা অন্যদের থেকে কুবা স্ট্রিটের কথা জানতে পারি, যেখানে কম দামে ভালো জিনিস পাওয়া যায়। বিলাল মার্কেটের কথা আমরা আগেই জানতাম, একদিন গিয়েছিলাম। কিন্তু আন্ডারগ্রাউন্ডের বাঙালি দোকানগুলো বন্ধ ছিল আর উপরের দোকানগুলোয় দাম বেশি চাচ্ছিল।

এখানে কিছু পরামর্শ দিয়ে রাখি। যদি কেউ হাদীয়া কিনতে চান তাহলে জায়নামাজ, খেজুর, বাদাম, জয়তুনের তেল, খেজুর চকলেট, মামুল, সুগন্ধি ইত্যাদি যেসব ওখানকার স্পেশাল আইটেম, সেসব একবারে বেশি করে কিনে ফেলবেন, আর দেশে গিয়ে ভাগ বাটোয়ারা করবেন। এতে সময় বাঁচবে।

আর অবশ্যই দেশীয় কায়দায় দামাদামি করবেন, কারণ ওখানকার দোকানদার বেশিরভাগই বাংলাদেশী আর নাহয় পাকিস্তানি।

বোরকা, হিজাব ইত্যাদি যেগুলোয় সাইজ বা ডিজাইনের ব্যাপার আছে, এগুলো হাতে সময় থাকলেই কেবল কিনবেন আর সাইজ একটু বড়ই নিবেন যেন প্রয়োজন হলে পরে ছোট করা যায়।

আমাদের এক পিচ্চি আত্মীয়র চাহিদা অনুযায়ী বোরকা কিনতে আমাদের অনেক সময় লেগেছিল। আরেকজনের আবদার অনুযায়ী মোবাইল কিনতে গিয়ে আমরা দেখি সেখানে মোবাইলের দাম বাংলাদেশের থেকে অনেক বেশি। আর ভালো মোবাইলের দোকান গুলোও মসজিদের কাছে না।

এসব কেনাকাটার চক্করে পড়ায় মসজিদে সালাত যেমন মিস হয়, আবার মনোযোগও ব্যহত হয়। আমি মক্কার সালাত পড়ে যেই প্রশান্তি পেয়েছিলাম, মদীনায় সেটা হারিয়ে ফেলি এই কারণে। আসলে দুনিয়াবি চিন্তা ও আল্লাহর স্মরণ একসাথে এক হৃদয়ে থাকতে পারে না।

মসজিদুন নববীতে একটা ভালো জিনিস দেখেছি আমরা, তা হলো হেল্প ডেস্ক। বিভিন্ন ভাষায় পারদর্শী কিছু মানুষ সেখানে সর্বদা হাজির থাকেন আর হাজ্বীদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন।

আমরা মসজিদ সংলগ্ন সীরাহ মিউজিয়ামের শিডিউল আর টিকেটের প্রাইস নিয়ে কিছু প্রশ্ন করি। তখন এক বাঙালি ভদ্রলোক নিজে থেকেই বললেন, "এর থেকে মসজিদের লাইব্রেরিতে চলে যান, আরো অনেক কিছু শিখবেন। অথবা বাক্বী কবরস্থানে সময় কাটান, অন্তর নরম হবে।"

রৌদ্রময়ী

06 Dec, 00:33


শুনে লজ্জাই লাগলো। পৃথিবীর অন্যতম পবিত্র জায়গায় আসার আল্লাহ সুযোগ দিয়েছেন, আর আমরা কিনা তার পরিবর্তে পৃথিবীর অন্যতম নিকৃষ্ট স্থান মার্কেটে বেশি সময় পার করছি।

দুনিয়া বনাম আখিরাত
বিনতে আবদুল্লাহ

#বাইতুল্লাহর_মেহমান পর্ব ১১
রৌদ্রময়ী

রৌদ্রময়ী

05 Dec, 12:25


সন্তান ঠিক কদিন আর বুকে থাকে? এই তো হাটা শিখে যাবে, স্কুলে চলে যাবে এরপর তো আর আগের মত কোলের ভেতর গুটি মেরে শুবে না, বিছানাটাও আলাদা হয়ে যাবে।

মা হিসেবে ওর জামা জুতো পরিয়ে দিই,চুল আচড়ে দিই,হাতে তুলে খাইয়ে দিই হোক না সে ৭ কি ৮ বছর। আমার কাছে তো সে সেই ছোট্ট বাবুটাই৷

আমার মাতৃত্ব আমি পুরোদস্তুর এনজয় করি।

সব কিছুতে সে মা মা বলে ডাকে, আমি উপভোগ করি।

এমন ই তো করি আমরা মায়েরা, না??

এ বিগ নো টু দিস থিংকিং৷

বাচ্চাকে বয়সের সাথে বয়স অনুযায়ী ইন্ডিপেন্ডেন্ট করে গড়ে তুলতে হবে।

একটা ৪+ বাচ্চা তার ময়লা কাপড় জায়গামত রাখবে, খেলা শেষ করে খেলনা বক্সে রাখবে।

একটা ৫+ বাচ্চা বেশিরভাগ খাবার সে নিজের হাতে খাবে,প্রায়ই নিযে গোসল করবে,জামা কাপড় পরবে নিজে।

৬+/৭+ বাচ্চা মা কে কাজে সাহায্য করবে, ঘরে পানি বা ময়লা ফেললে একটা কাপড় এনে দিবে, নিজের পড়ার টেবিল মুছবে, বই গোছাবে রুটিন অনুযায়ী, গাছের যত্ন নিবে,খাবার শেষে এটো প্লেট প্লাস জায়গা মত রেখে আসবে ইত্যাদি।

৭+/৮+ বাচ্চা নিজের প্লেট, গ্লাস,চামচ ধুবে, ভাত তরকারি নিজের হাতে বেড়ে নিবে,স্কুলের জামা বা অন্তত মোজা টা নিজে ধুবে ইত্যাদি।

এগুলো খুব ই স্বাভাবিক কাজ! কিন্তু আমরা মা রা প্রথমের মত ভাবি, সারাজীবন ই তো করবে।।ছেলে হলে ভাবি ছেলেদের ওত কি শিখতে হয়, মেয়ে হলে ভাবি বিয়ের পর করতে হবে, মায়ের কাছে করুক আরাম, এগুলো এমনিই শিখে যায়৷

যায় শিখে কিন্তু হঠাৎ করে নতুন দায়িত্ব নিতে হিমশিম খেয়ে ভুল করলে পাশে মা বা শাশুড়ি কে পায় এমন কজন আছে?

আর সব কিছুর হিসাব কেন বিয়েতে গিয়ে ঠেকে? এই সন্তান দের কি একটা হল লাইফ হতে পারে না? তারা কি একটা প্রবাস লাইফে যেতে পারে না?

যাই হোক, বহুদূরের চিন্তা সেসব। আপাতত কিছু বেনিফিট বলি যা এখন ই কাজে আসবে "কাজ" করতে দিলে ---

১। বাচ্চা কনফিডেন্ট বা আত্মবিশ্বাসী হয় যে হ্যা আমি তো সব পারি।

২। তার ভেতর একটা রেসপনসিবিলিটি সেন্স তৈরি হয়। সে বাবা কে দেখে, মা কে দেখে, তার ভেতর গ্রো করে সে তাদের মত দায়িত্বশীল। যে এক দায়িত্ব বুঝে তার পক্ষে বাকি দায়িত্ব নেওয়া সহজ হয়। অলসতা দূর হয়। জীবন রুটিনে থাকে। সুসন্তান এর বৈশিষ্ট্য কি এগুলো নয়?

৩। মোস্ট ইম্পর্ট্যান্ট বলব এটা, হাত দিয়ে যত কাজ বেশি হবে ছোট বয়সে, তত বেশি ব্রেইন এক্সারসাইজ হবে, হাতের মোটর স্কিল ডেভেলপ করবে।

হাতের মোটর স্কিল কি কি কাজে দরকার?

অনেএএক কাজে। সব বলব না শুধু বলব তার লেখা, পেন্সিল কলম ধরা, পরবর্তীতে সার্জন হলে তার হাতে সূক্ষ্ণ কাজ করার দক্ষতা বাড়বে।

৪। একটা ৬-৭ বছরের বাচ্চা নিজের কিছু কাজ করতে পারলে মা ছোট বাচ্চাদের দিকে মনোযোগ দিতে পারবেন। মা আগের মত আমার সব করে দেয় না বলে আক্ষেপ করবে না বড়জন।

মায়ের পক্ষে একাধিক সন্তান পালন সহজ হবে।

৫। মায়ের সময় বাচবে, সেই সময়ে মা "মি টাইম" পাবে,রুচিশীল কাজ, বই পড়া যা ইচ্ছে করার সুযোগ হবে। মানসিক সুস্থতা বাড়বে৷

এত এত বেনিফিট রেখে মানুষ কিনা সেই কবে বিয়ে করবে সেসব ভাবতে থাকে। দুনিয়ার আর কোথাও বোধহয় এত বিয়ে কেন্দ্রিক চিন্তাভাবনা নাই যতটা আমাদের বাংগালী দের আছে।

সন্তান কে দুধে ভাতে রাখার চিন্তা ঠিক আছে কিন্তু "দুধভাত" বানিয়ে রাখার চিন্তা কি আদৌ যৌক্তিক?

কাজ করাকে কেন যেন সন্তানের উপর জুলুমের মত ভাবেন মায়েরা৷ সবসময়ই সে করবে এমনও না। বাচ্চা অসুস্থ হলে, ক্লান্ত হলে মা করে দিবেন। কিন্তু রেগুলার করার দায়িত্ব টা সন্তানকে দিতে হবে।

ভালো মা এর সংজ্ঞা আমার কাছে সন্তানকে আরাম দেওয়া না কেবল। আমার কাছে তাকে জীবনের সব গুলো ধাপ, চ্যালেঞ্জ, প্রতিকূলতার মুখোমুখি হবার জন্য শারীরিক ও মানসিক ভাবে প্রস্তুত করা৷

বাচ্চাকে কাজ শেখানো
নুসরাত জাহান প্রমা

রৌদ্রময়ী

রৌদ্রময়ী

04 Dec, 12:33


দৃশ্যপট-১

১. ঢাকায় অফিস খুলে ভিসা প্রসেসিং শুরু করেছে ক্রোয়েশিয়া, অস্ট্রিয়া, ডেনমার্ক, জার্মানি, সুইডেনসহ ২৭ টি ইউরোপীয় দেশ।

এখন আর এসব দেশে যাওয়ার জন্য দিল্লীর দ্বারস্থ হতে হবে না বাংলাদেশীদের।

২. আদানীর সঙ্গে বিদ্যুত চুক্তি নিয়ে নতুন করে আলোচনা করবে বাংলাদেশ।

৩. ভারত বাংলাদেশের ওপর দিয়ে উত্তর- পূর্বাঞ্চলীয় সাত রাজ্যে ব্যান্ডউইথ নেয়ার প্রস্তাব দিয়েছিল।
তবে বি.টি.আরসি এই প্রস্তাব প্রত্যাখান করেছে।

দৃশ্যপট-২

১. ভারতের আগরতলাস্থ বাংলাদেশ উপ-হাইকমিশনে হামলা।

২. বাংলাদেশে শান্তিরক্ষী বাহিনী পাঠাতে ব্যবস্থা নিতে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতি অনুরোধ মমতা ব্যানার্জীর।

৩. সিলেটের সীমান্ত দিয়ে ভারতীয় উগ্রবাদীদের বাংলাদেশে প্রবেশের চেষ্টা।

সারমর্ম :

বাংলাদেশ যেখানে বিভিন্ন ক্ষেত্রে কৌশল প্রয়োগ করে ভারতের উপর নির্ভরশীলতা কমানোর চেষ্টা করছে, ভারত সেখানে একমাত্র সংখ্যালঘু ইস্যু নিয়ে সহিংসতা করে এর প্রতিশোধ নেয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছে।

এই মূহূর্তে আমাদের করণীয়:

ভারতের কোনো রকম উস্কানিতে উত্তেজিত না হওয়া। বিশেষ করে ওদের দেশের পতাকা অবমাননা করা খুবই বোকামী হচ্ছে। এর চেয়ে বরং ওদের মিডিয়ার ছড়ানো মিথ্যা প্রপোগান্ডার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা বাস্তবসম্পন্ন কাজ।

বিশেষ অনুরোধ:

ডিসেম্বর মাস মানেই ক্লাস পার্টি, পিকনিক, গায়ে হলুদ, গেট টুগেদার এর মৌসুম। এইসব অনুষ্ঠানগুলোতে হিন্দি গান বাজানো, শোনা বন্ধ করুন। তাহলেই বুঝবো আপনি আসলেই দেশপ্রেমিক হতে পেরেছেন।

অনেকই হয়তো বলবেন, সংস্কৃতি আর রাজনীতি এক না। এটা সর্ম্পূণ ভুল ধারণা।

পশ্চিমবঙ্গের কবি শ্রীজাত এর কবিতাটা পড়েছেন ?

পড়লেই বুঝবেন, আদতে ওরা আমাদের কোন দৃষ্টিতে দেখে!

ভারত নীতি
হাবিবা মোবাশ্বেরা

রৌদ্রময়ী

রৌদ্রময়ী

02 Dec, 13:16


‘No voice is better than love speech..’ (Poem by Hafez)

নিউজফিড স্ক্রল করতেই লেখাটা পড়ল প্রথমে। এরপর পোস্টদাতার নাম দেখল নাজনীন। তার বান্ধবী সাদিকা। মনটা একটু কেমন যেন করে উঠল, পরে নিজেই নিজেকে ধমক দিলো এই বলে– ‘নতুন বিয়ে হয়েছে, রোমান্টিকতা থাকবে এটাই স্বাভাবিক..’

নাজনীন একটু খেয়াল করে দেখল, তার আশেপাশের বান্ধবী, বোন, পরিচিতদের মধ্যে বেশিরভাগেরই বিয়ের ফুল ফুটে গেছে। নাজনীনের বিয়ের ফুল ফোটার বাকি এখন।

সন্ধ্যায় আরেকবার ফেসবুকে ঢুঁ মারতেই সাদিকার আরও একটি পোস্ট সামনে এলো। কদমফুল হাতে একটা ছবি, দুইজোড়া হাত আর কদম ফুল। ক্যাপশনে লেখা– ‘বাদল দিনের প্রথম কদম ফুল করেছ দান, আমি দিতে এসেছি শ্রাবণের গান।’

নাজনীন দেখে মুচকি হাসল, দু'আও করল বান্ধবীর দাম্পত্য জীবনের জন্য।

নাজনীনের বিয়ের কলি বোধহয় পাপড়ি মেলতে চাচ্ছে। আজকে পাত্র দেখতে আসবে। নাজনীনের ভেতর সকাল থেকেই ছোটখাট একটা ভূমিকম্প চলছে। পাত্রী দেখাদেখি এ নিয়ে অনেকবারই হলো, কিন্তু আসল বিষয়টাই অপূর্ণ থেকে গেল। এইবারে পূর্ণতা কী আসবে? কী জানি!
.
.
পাত্র দেখে গেল তিনদিন। ইতিবাচক-নেতিবাচক কোনো উত্তর আসেনি। এখন পর্যন্ত প্রতিবারই এই মুহুর্তটা নাজনীনের কাছে মরণযন্ত্রণার মতো লাগে।

বিয়ে তাকদিরের বিষয়, নাজনীন জানে। যন্ত্রণাদায়ক বিষয় পাড়া-প্রতিবেশীদের নানা কথা। কথাগুলো সাপের ফণার মতো হিসহিস করে কানে বাজতে থাকে আর ভেতরটা পুড়তে থাকে।

অত্যন্ত মন খারাপ নিয়ে ফেসবুক অন করল নাজনীন। সাদিকার পোস্ট বরাবরই প্রথমেই চলে আসে।

আজকের পোস্ট– ‘Love is easy at first, but the problem appear later.’ (Poem by Hafez) —-আমাদের এখনকার সমস্যা মশারি টানানো নিয়ে। কারণ সপ্তাহে ৭দিন..সপ্তাহে একটা দিন কম বা বেশি হলেই ভালো হতো..তাহলে মশারি টানানোর দিন ইকুয়ালি ভাগ করা যেত…হি হি..

কেন জানি নাজনীন আজকে ইগনোর করল পোস্টটা। সাদিকার রোমান্টিক মুড কবে শেষ হবে কে জানে! বিয়ের তিনমাস হলো..এই তিনমাসের প্রতিদিনই তার টাইমলাইন জুড়ে ছিল দাম্পত্যের খোশগল্প। এই যেমন:

‘জ্বরের নিয়ামতে ভুগছি। ভাগ্যিস মাথায় পানি দেয়ার মানুষ ছিল…’’

‘শাড়ী-চুড়ির ছবি দিয়ে ক্যাপশন– তুমি ছাড়া এসবের কোনো মানেই নেই…’

‘আজকে উনি গোলাপ এনেছেন, কিন্তু সংখ্যাটা বেজোড়..’

‘'সবাই বলে পুরুষ কীসে আটকায়? দিনশেষে আমার পুরুষ মোবাইলে আটকায়..হা হা’

.
.
সময় গড়াল তার মতো করে। সাদিকার বিয়ের একবছর হলো। ওইদিকে নাজনীনের বিয়ের ফুল এখনো ফুটল না।

নিয়ম করে নাজনীনের নিউজফিডে সাদিকার দাম্পত্যের পোস্ট এখনও আসে। বিয়ের প্রথম কয়েকমাস রোমান্টিক পোস্ট স্বাভাবিকভাবে নিলেও ইদানিং নাজনীনের ভেতরে কেমন হাহাকার শুরু হয়।

ব্যাপারটা ইচ্ছাকৃত না। নাজনীন মোটেও ঈর্ষাকাতর না। কিন্তু মানুষের সবকিছু নিয়ন্ত্রণের মধ্যে থাকে না। নাজনীন দিনদিন তাদের যুগলজীবনের বিজ্ঞাপনের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়ছে।

একগুচ্ছ গোলাপ, অসুস্থতায় শুশ্রূষা, দাম্পত্যের মিষ্টি তর্কের বাসনা মনে প্রায়ই জাগে এখন। কিন্তু এসব আবদার পূরণের মানুষকেই যখন হাজার খুঁজে পাওয়া যায় না তখন হতাশা বাড়ে তাকদিরের প্রতি।

দাম্পত্যের খোশগল্প
তামিস্রা মেহনাজ

রৌদ্রময়ী

রৌদ্রময়ী

02 Dec, 00:33


আমাদের বাস যখন মক্কা ছেড়ে যাচ্ছিল, তখন মনটা খুব খারাপ লাগছিল। মনে পড়ছিল রাসূল (সা:) হিজরতের সময়ে মক্কার দিকে শেষবারের মত তাকিয়ে যা বলেছিলেন- 'প্রিয় মক্কা! নিশ্চয়ই তুমি আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয়। যদি তোমার অধিবাসীরা আমাকে বের না করে দিত আমি কখনো তোমাকে ছেড়ে যেতাম না।'

মক্কা আমার জন্মভুমি না, না এখানে আমার কোনো আত্মীয় আছে। তবু আটদিনের মত ক্ষুদ্র সময়ে যে পরিমাণ মায়া এ শহরের জন্য জন্মেছে, তা বলে বোঝানো সম্ভব না।

মদীনায় পৌঁছাতে আমাদের সময় লেগেছিল প্রায় সাড়ে ছয় ঘণ্টা। পথে অবশ্য দুটো জায়গায় বাস থেমেছিল সালাতের জন্য। মদীনার কাছাকাছি পৌঁছানোর পর আমরা জানতে পারি যে আমাদের যেই হোটেলে ওঠার কথা ছিল তাতে কোন এক কারণে উঠতে পারছি না। অন্য এক হোটেলে তাই এক রাত আমাদের কাটাতে হবে।

এরকম ঘটনা আসলে হজ্ব বা উমরাহর সফরের অহরহ ঘটে। আমরা সেই হোটেলে ওঠার পর সামান্যই মালপত্র বের করি, যেটুকু না করলেই না।

পরদিন ফজরের ওয়াক্তে আমি আর আমার হাসবেন্ড যাই মসজিদুন নববীতে। আমার শ্বশুড় আর শ্বাশুড়ি খুব ক্লান্ত ছিলেন বিধায় আমরা আর ডাকিনি।

হোটেল থেকে বের হয়ে বুঝলাম কেন পরিচিতরা শীতের কাপড় বেশি করে নিতে বলেছিল। মক্কায় সেগুলোর একটিও না লাগলেও, মদীনায় সব কটি লাগবে মনে হচ্ছে।

এখানে শেষ রাতে ভালই ঠাণ্ডা পড়ে। ঠাণ্ডা-গরম আবহাওয়ায় সর্দি-কাশি বেশি হয়, তাই যারা যাবেন সাবধানে থাকবেন।

মদীনায় সালাত পড়ে মক্কার দুঃখ ভুলতে পারলাম। এখানকার পরিবেশ অন্য রকম; স্নিগ্ধ আর প্রশান্তিদায়ক।

পুলিশ আর ব্যারিকেড এখানেও আছে, কিন্তু তবু কোনো ঝামেলা বা হৈচৈ নেই। মক্কার মত ভিড় না হলেও এখানেও প্রচুর মানুষ, তবু সালাত শেষে বের হওয়ার পথে সেই হুড়োহুড়ি দেখলাম না।

দুপুরে শ্বশুড়-শ্বাশুড়ীকেও নিয়ে গিয়েছিলাম মসজিদে। আসার সময় এক বুথে টকটাইম রিচার্জ করতে গিয়ে একটু দেরি হয়েছিল।

এখানকার স্থানীয়রা আবার ইংরেজি বুঝে না, আমার হাসবেন্ড টকিং ট্রান্সলেশন এপ দিয়ে কোনমতে টকটাইম এর কথা বুঝিয়ে বলে। হোটেলে ফিরে দেখি গ্রুপের বাকি সবাই লাগেজ নিয়ে লবিতে বসে আছে, অর্থাৎ চেক আউটের সময় হয়ে গেছে।

আমরা দ্রুতই মালপত্র গুছিয়ে রুম ছেড়ে দিলাম। দুপুরের খাবার না খেয়ে প্যাকেট হাতে নিয়ে নিলাম। এরপর রওনা দিলাম আমাদের মূল হোটেলের দিকে।

কিন্তু গিয়ে দেখি আমাদের দেয়া আইডি কার্ডে যেই হোটেলের নাম দেয়া, এটা সেটা না। বুঝলাম, সেই হোটেল কোন এক কারণে নেয়া সম্ভব হয়নি। কিন্তু যেই হোটেলে আমরা গিয়ে বসলাম, সেটা দেখে আমি হতাশ।

হোটেলের লোকেশন ভালো হলেও একেবারে মানসম্মত না। বেশিরভাগই এখানে আফ্রিকান। এই প্রথম এতজন আফ্রিকান হাজ্বী দেখলাম। মক্কায় কয়জনকে দেখেছিলাম যারা ফুটপাথে হকারি করতো আর সময় সময় পুলিশ দেখলেই গাট্টি বেঁধে দৌড় দিত!

কেন যেন আমাদের রুম দিতে অনেক দেরি হচ্ছিল। তাই আমরা হোটেলের রেস্টুরেন্ট সেকশনে গেলাম সেই ফাঁকে দুপুরের খাবারটি খাওয়ার জন্য। সেখানে যদিও একজন স্টাফ বসে ছিল, তবু আমরা লাইটের সুইচ খোঁজার সময় এসে সাহায্য করলো না। অনেকক্ষণ পর সে উঠে এলেও টিপ্পনী কেটে গেলো। আমরা চুপচাপ হজম করলাম। তারপর সেই জীর্ণশীর্ণ রেস্টুরেন্ট সেকশানেই কোন মতে বসে খাবার খেলাম আমরা।

কিন্তু এরপর যা ঘটলো, তা আর মেনে নেয়ার না। খাওয়া শেষে হাত ধুতে গিয়ে দেখি এক বিশালাকার আফ্রিকান বেসিনেই টয়লেট কর্ম সারছে! আমি বিপরীত দিক থেকে দৃশ্যটা দেখামাত্রই হাত না ধুয়ে উল্টো দৌড় দেই! পরে অবশ্য আমার মনে হয়েছে, আমি ভুলও বুঝে থাকতে পারি। আল্লাহই ভালো জানেন।

এরপর হোটেলের লবিতে গিয়ে শুনি আমাদের রুম তখনও বুঝিয়ে দেয়নি। একজন বললো, রুম রেডি আছে, কিন্তু হোটেল কর্তৃপক্ষ নাকি এখন বেশি টাকা দাবি করছে!

কথাটা কতটুকু সত্য জানি না, কিন্তু এই কথা শুনে সেই হোটেলের প্রতি মনটা আরো বিষিয়ে উঠলো। আমাদের গাইড আমাদের রেখে অন্য হোটেলের সন্ধানে বেরিয়ে গেলো।

গাইড যাওয়ার পর শুরু হলো গীবতের আসর। নিঃসন্দেহে আমাদের এজেন্সির তরফ থেকে কোনো একটা ভুল হওয়ার কারণেই কাঙ্খিত হোটেলটির বুকিং কনফার্ম হয়নি।

তবু কিছু মানুষের অসহিষ্ণু আর কটু কথা শুনে আমার খারাপ লাগলো। আমি সেখান থেকে সরে আসলাম, আর দুরূদ পড়তে থাকলাম। বিপদে দুরূদ পড়ে প্রতিবার ভালো ফল পেয়েছি।

অবশেষে অনেকক্ষণ পর গাইড এসে আমাদের নতুন আরেকটি হোটেলে নিয়ে গেলো। এই হোটেলটি মানের দিক থেকে তেমন খারাপ না হলেও আমাদের চারজনের রুমটি ছিল অত্যধিক ছোট।

কোনো মতে তিনটি বেডকে জোড়া লাগিয়ে আর চতুর্থ বেডের উপর লাগেজ উঠিয়ে আমরা একটু চলাচলের জায়গা করলাম। তবে রুমে সালাত পড়ার মত কোনো জায়গা নেই বললেই চলে।

আরেকটি সমস্যা ছিল, সেটি হলো- হোটেলটি মসজিদে নববী থেকে বেশ দূরে এবং মসজিদের সামনের দিকে অবস্থিত। তাই ইমামের পিছে সালাতের জন্য দাঁড়াতে হলে গেইট দিয়ে ঢোকার পরও অনেকটা পথে হাঁটতে হবে। মার্কেট বা ট্যাক্সিও এদিকে একদম নেই।

রৌদ্রময়ী

02 Dec, 00:33


সব মিলিয়ে আমার হাসবেন্ড খুব মন খারাপ করে। আমি বুঝানোর চেষ্টা করি- আমাদের তকদীরে যা আছে, তাতেই সন্তুষ্ট থাকতে হবে আমাদের। আলহামদুলিল্লাহ আলা কুল্লি হাল।

রাতে ঘুমানোর সময় আবার একটু বিপাকে পড়তে হয়। দুটো বেড জোড়া লাগানোর পর মাঝে ফাঁকা যে জায়গা ছিল, তাতে একটি ব্ল্যাংকেট গুঁজে দিয়ে তার উপর শুই আমি। কিন্তু স্প্রিং এর ম্যাট্রেস হওয়ায় শোয়ার পর একেবারে গর্তে ঢুকে যাচ্ছিলাম, কোনোভাবেই কাত হওয়া যাচ্ছিলো না। কি আর করা, ঐভাবেই ঠায় শুয়ে থেকে ঘুমানোর চেষ্টা করলাম।

আমরা যেই রাসূলের উম্মাহ, তাঁর ঘর ছিল এর থেকেও ছোট, এবং এতটাই নিচু যে হাত দিয়ে ছাদ ধরা যেত! আর তাঁর বিছানা ছিল চামড়া ও খেজুর গাছের ছাল দিয়ে তৈরি, যাতে শোয়ার পর পিঠে দাগ পড়ে যেত। তাহলে তুচ্ছ সব দুনিয়াবি ব্যাপার নিয়ে এত অভিযোগ করা কি আমাদের সাজে?

প্রিয় মদীনায়
বিনতে আবদুল্লাহ

#বাইতুল্লাহর_মেহমান পর্ব ১০
রৌদ্রময়ী

রৌদ্রময়ী

01 Dec, 12:32


একদিন একটা গ্রুপের হেল্প সিকিং একটা পোস্টে দেখলাম একজন আপু কমেন্ট করেছে। আপুটা নন প্র্যাক্টিসিং এবং পোস্ট সম্পর্কিত কমেন্টই করেছেন।

তার কমেন্টের রিপ্লাইয়ে একজন প্র্যাকটিসিং আপু বলছেন, "আপু আপনার প্রোফাইল এমন কেনো?" যেটা সম্পূর্ন অপ্রাসঙ্গিক এবং ব্যক্তিগত।

এই আপুটার রিপ্লাইয়ে আরেকজন প্র্যাকটিসিং আপু কমেন্ট করেছেন, "উনি হিন্দু"।

ব্যাপারটা আমার কাছে অত্যন্ত অভদ্রতা এবং অনধিকার চর্চা লেগেছে। নন প্র্যাকটিসিং আপু টা মুসলিম যা উনার নাম দেখেই বুঝা যাচ্ছিলো, এবং পরে উনি অফেন্ডেড হয়ে যান।

এইযে একজন আপু অভদ্রতার পরিচয় দিলেন, এবং আরেকজন তাকে না জেনে হুট করে হিন্দু বলে ক্লারিফাই করলেন কোন অধিকারে? এ কেমন ব্যবহার? তাহলে তারা প্র্যাকটিসিং দের থেকে কি ম্যাসেজ পাচ্ছে? আদবের অভাব?

অন্তত এখন আমাদের বাউন্ডারিস আমাদের জানা উচিত। আমরা নাসিহা করতে পারি, কিন্তু ট্রিগার করতে পারিনা।

মেয়েটাকে বলা যেত পার্সোনালি, কিন্তু একটা পাবলিক প্লেসে আপনার প্রোফাইল এমন কেনো জিজ্ঞাসা করা এবং তাকে হিন্দু বলা কেমন আদবের পরিচয় দেয়?

আজকাল মানুষ খুব বেশি অন্যের ব্যাপারে নাক গলায়। আমি দেখেছি, একজন মানুষ বার বার নিজের পার্সোনাল ব্যাপারে সীমারেখা টেনে দেবার পরও আমরা তার ব্যাপারে অনধিকার চর্চা করছি।

অ্যানোনিমাসলি তাকে প্রশ্নবিদ্ধ করছি, অথচ আমার কোনো অধিকার নেই তাকে প্রশ্ন করার!

আপনি আপনার প্রয়োজনকে যেভাবে ডিফাইন করছেন, আরেকজনের কাছে প্রয়োজনের সংজ্ঞা সেটা হবে না অবশ্যই।

কিন্তু আপনি আপনার তৈরিকৃত সংজ্ঞা দিয়ে অন্যকে জাজ করছেন, এবং তাকে নিয়ে চর্চা করছেন তার অনুমতি না থাকা সত্ত্বেও!

একটা মানুষ ট্রমা কাটিয়ে উঠে পারছে না আমরা তাকে জাজ করে আবার ট্রমায় ফেলছি। আপনি কি অনুভব করতে পারেন একটা মানুষ আপনার আমার অহেতুক জাজমেন্টের ভয়ে সামান্য খুশি প্রকাশ করতে পারছে না, ব্যাপারটা কত ভয়ানক? আমরা তাহলে ঠিক কতটা টক্সিক?

আপনার যদি ভালো না লাগে আপনি সর্বোচ্চ নাসিহা করতে পারেন, কিন্তু তাকে ট্রিগার করে প্রশ্নবিদ্ধ করে কষ্ট দেওয়ার অধিকার আপনি রাখেন না।

সে যদি নিজের ব্যাপারে ক্লারিফাই করে দেয় তখন তো আরো কোনো অধিকার নেই আপনার। আপনি এভয়েড করতে পারেন, আপনাকে কেউ এ্যাসাইনমেন্ট দেয়নি তার জীবন নিয়ে গবেষণা করার জন্য।

আমাদের মনে রাখা উচিত, নিতান্ত একেবারে ক্লোজ কেউ না হলে আমরা তাকে শাসন করার অধিকার রাখিনা।

কারোর ব্যাপারে একটা প্রশ্নও তোলার আগে নিজের কোথায় কমতি আছে, আমার অধিকার আছে কিনা তা নিয়ে দশবার ভাবা উচিত।

কিছু দেখার সাথে আমরা নেগেটিভ কমেন্ট করতে ছাড়িনা, অথচ মানুষটার প্রতি সুধারণা রেখে ব্যাপারটা নিয়ে দ্বিতীয়বার ভাববার অবকাশ আমাদের হয়না, ততটুকু সবর আমাদের নেই।

এই কমিউনিটিতে আসার পর থেকে দেখছি, কিছু মানুষ কিছু মানুষকে আদব জিনিসটাই শেখানোর চেষ্টা করে যাচ্ছেন। কিন্তু বেশিরভাগই অ্যারোগেন্ট, নরম গলায় নাসিহা করলেও তারা ভুল স্বীকার না করে নিজেকে জাস্টিফাই করতে শুরু করে!

এই কমিউনিটিতে জাজমেন্ট ব্যাপারটা চোখে পড়ার মতো। এটা উল্লেখযোগ্য ভাবে বাড়ছে।

ভুল আমিও কম করিনা। কিন্তু এতটুকু আদব আশা করি আমি রাখি যে, কেউ ভুল ধরিয়ে দিলে দ্বিতীয় বার সে বিষয়ে চিন্তা করা। ভালো না লাগলেও অন্তত চুপ করে থাকি।

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা আমায় আগে সে বিষয়ে আমল করার তাওফিক দিন যে বিষয়ে আমি মানুষকে সতর্ক করে থাকি।

আদবের অভাব
তাহসিন

রৌদ্রময়ী

রৌদ্রময়ী

01 Dec, 00:33


মূলত এর কারণ- দোতলায় সালাতের জন্য বেশ খানিকটা জায়গা ছেড়ে তারপর মাতাফের জায়গা, কিন্তু ছাদে এরকম না। কেবল ওয়াক্ত হলে মানুষ এসে শুরুর দিকে সালাতের জন্য বসে, এছাড়া বাইতুল্লাহকে ঘিরে থাকা পুরো বৃত্তাকার পথটি তাওয়াফের জন্যই উন্মুক্ত থাকে। এজন্য দোতলার তুলনায় এখানে মাতাফ এর পরিধি কম।

ইহরাম ছাড়া ছেলেরা যেহেতু নিচ তলায় বাইতুল্লাহর কাছে তাওয়াফ করতে পারে না, তাই তাদের জন্য সেকেন্ড বেস্ট অপশন ছাদ। তারপর দোতলা। টয়লেট না থাকলেও ওযুর অপশন সব তলাতেই আছে। আমরা ইশার সালাত শেষে দ্রুত নিচে নেমে যাই, যেহেতু একজনের টয়লেটে যাওয়ার দরকার ছিল।

এটিই মক্কায় আমাদের শেষ রাত, এরপর গন্তব্য মদীনা। এখন যদি প্রশ্ন করেন, মক্কায় গত ৮ দিন কাটানোর পর আর কিছু কি আফসোস আছে? আছে বৈকি! একদিনও তো কাবার কাছে যেতে পারলাম না, হাজরে আসওয়াদ স্পর্শ করতে পারলাম না, হাতিমের ভেতর সালাত পড়তে পারলাম না...

একটু কষ্ট করলে হয়তো সবই পারতাম। যাওয়ার আগেই জেনে নিয়েছিলাম- কোন সময়ে গেলে মেয়েরা হাতিমে সালাত পড়তে পারে, হাজরে আসওয়াদ ধরতে পারে।

আমি একটি ইউটিউব ভিডিও থেকে জেনেছিলাম, আপনারা হারামাইনের পেইজ বা কারো থেকে সর্বশেষ দেয়া শিডিউল জেনে নিবেন, যেহেতু এটা প্রায় পরিবর্তন করা হয়।

আমরা যেসময় গিয়েছি, সেসময় মেয়েদের হাতিমের শিডিউল ছিল রাত ১০:০০-১২:৩০ এর ভেতর, আর হাজরে আসওয়াদ এর জন্য শেষ রাতে। লম্বা লাইন দিয়েও অনেক সময় নাকি এসব নসিবে জোটে না। যেহেতু ইশার সালাত পড়ে ফিরে আসতে হতো, ওই সময় একা আবার যেতে বা কাউকে পেরেশানি দিতে ইচ্ছা করেনি।

হাজরে আসওয়াদে একটা চুমু দিতে পারলে একটা সুন্নাহ আদায় হয়তো হতো। বাইতুল্লাহ ছুঁতে পারলে হয়তো অন্যরকম একটা শিহরণ বোধ হতো।

কিন্তু এগুলো এই সফরের মূল উদ্দেশ্য না। মূল উদ্দেশ্য হলো- এগুলোর রবের সাথে সম্পর্ক দৃঢ় করা, তাঁর কাছে চাইতে চাইতে দুআ মঞ্জুর করিয়ে নেয়া। আর সেইসাথে পবিত্র স্থানে এসে নিজেকেও যথাসম্ভব পবিত্র নিয়ত করা।

কখনো কখনো স্থান ও কাল বড় উসীলা হতে পারে, তবে সেসব থেকেও বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলো আমাদের বিশুদ্ধ নিয়ত ও কঠোর প্রচেষ্টা।

আল্লাহ চাইলে আমাদের নিয়তের কারণে যেকোনো ভালো কাজের বিনিময়ে অপরিসীম সওয়াব দিতে পারেন। আল্লাহ চাইলে আমাদের প্রচেষ্টার কারণে যেকোনো সময় আমাদের প্রয়োজনগুলো মিটিয়ে দিতে পারেন। তিনি কেবল বলবেন, 'হও', আর সব হয়ে যাবে।

এই কয়দিনে যে পথে হেঁটেছি, সে পথে হয়তো রাসূল (সা:) ও একদিন হেঁটেছেন; যেখানে সিজদা করেছি, সেখানে হয়তো তিনিও সিজদা করেছেন।

এরকম আরো কত নিয়ামত যে আল্লাহ আমাকে দিয়েছে; আফসোস করার আগে তো সেগুলোর জন্য শুকরিয়া আদায় করা দরকার! হয়তো এতে তিনি দুনিয়াতে আবারও একটি সুযোগ দিবেন; কিংবা নিয়তের কারণেই আখিরাতে পুরুষ্কৃত করবেন...

‘যদি তোমরা শুকরিয়া আদায় কর, তবে আমি অবশ্যই তোমাদের বাড়িয়ে দেব, আর যদি তোমরা অকৃতজ্ঞ হও, নিশ্চয় আমার শাস্তি বড় কঠিন।’ (সুরা ইব্রাহিম: ০৭)

আরেকটি সুযোগ
বিনতে আবদুল্লাহ

#বাইতুল্লাহর_মেহমান পর্ব ০৯
রৌদ্রময়ী

রৌদ্রময়ী

01 Dec, 00:33


আমরা তায়েফে যাই নিজেরা একটা ট্যাক্সি ভাড়া করে। আমাদের গাইড এক পরিচিত বাঙালি ড্রাইভারের নাম্বার দেন, তার সাথেই কথা বলে দিন-ক্ষণ ঠিক করা হয়।

যদিও কেবল নিজেরা যাওয়ায় এবং আগে থেকে ট্যাক্সি বুক করায় একটু খরচ বেশি লেগেছে, কিন্তু এতে নির্ঝঞ্জাট থাকা যায়। তাছাড়া গ্রুপের অন্যরা তায়েফে যাওয়ার ব্যাপারে তেমন আগ্রহীও ছিল না।

আমরা তায়েফে পৌঁছানোর আগেই সবাই একমত হই, আমাদের আসার সিদ্ধান্তটা ঠিক ছিল। কারণ তায়েফে যাওয়ার পথটাই অনেক সুন্দর।

পথের দুই দিকে উচু উচু পাহাড়; কাছের গুলো খয়েরী, আর দূরের গুলো নীল। আমি বাংলাদেশের পাহাড়ও দেখেছি, তার থেকেও এগুলো অনেক বড় ও সুন্দর।

তায়েফ শহরটা ছোট্ট। ঐতিহ্যবাহী স্থান গুলো দেখতে খুব একটা সময় লাগেনি। ইসলামিক স্পট গুলো অল্প সময়ই দেখে ফেলেছি আমরা।

তারপর শ্বশুরকে অনেক কষ্টে রাজি করিয়ে দুপুরে বাঙালি খাবারের বদলে ঐতিহ্যবাহী 'মাবশুর' খেয়েছি সবাই মিলে এক থালায়। আরেকটি মজার অভিজ্ঞতা হয় শেষে স্ট্রবেরি ফার্মে গিয়ে এবং নিজ হাতে স্ট্রবেরি সংগ্রহ করে।

সব দেখা শেষ করে মীকাত মসজিদে আসর সালাত পড়ে ও ইহরাম বেঁধে আমরা রওনা দেই বিকালে। মাঝে আমাদের ট্যাক্সির একটা ছোট এক্সিডেন্ট না হলে হয়তো মাগরিবের আগেই মক্কা ফিরতে পারতাম।

তবে একটু দেরি হওয়ার কারণেই আমরা পাহাড়ের আড়ালে সূর্য অস্ত যাওয়ার অপার্থিব সুন্দর দৃশ্য দেখতে পাই, আলহামদুলিল্লাহ।

হারামে ইশার সালাত পড়ে উমরাহ না করেই হোটেলে আবার ফিরে আসি আমরা। গতবার থেকে শিক্ষা নিয়েছি, তাড়াহুড়ো আর করা যাবে না।

ঠিক করি, প্রথমবারের মত একই সময়ে উমরাহ করবো আমরা, তবে একটু ঘুমিয়ে নিয়ে তারপর যাবো। দ্রুত রাতের খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ি আমরা।

রাত একটার দিকে সবাই ঘুম থেকে উঠে পড়ি ও প্রস্তুত হয়ে নেই। এবার যতটা সম্ভব হালকা থাকার চেষ্টা করি। আমি বেশির ভাগ আবায়া আর খিমার এনেছিলাম বিএমডব্লিউ কাপড়ের, কিন্তু এই কয়দিনে বুঝেছি এগুলো এখানকার উপযোগী না, কেননা অত্যন্ত ভারী এবং গরম। তাই চেরি কাপড়ের একটি সেট পরে নিলাম।

হজ্ব ক্যাপের বদলে এবার পাতলা একটি ওড়না বড় করে খিমারের ওপরে নববধূর ঘোমটার মত ঝুলিয়ে দিয়ে পিনাপ করে নিলাম। ব্যাগও একদম হালকা রাখলাম। পায়ে মোজার উপর আরেকটি পুরু কাপড়ের শু-টাইপ মোজা পরে নিলাম, মক্কার একটি দোকান থেকে ৩ রিয়াল দিয়ে কিনে রেখেছিলাম।

মুখে তালবিয়া জপতে জপতে আমরা রওনা দিয়ে দিলাম। যেহেতু ঘুম পূর্ণ হয়নি, এবারও তাই সামান্য মাথা ব্যথা ছিল। মুখে চট করে একটা সিভিট দিয়ে দিলাম। দ্রুতই মাথা ঝরঝরা হয়ে গেলো। কারণ ক্যাফেইনের মত ভিটামিন-সিও একটি এন্টিঅক্সিডেন্ট, যা স্ট্রেস কমাতে সহায়ক।

এতদিনে পথ ঘাট আমাদের সবারই পরিচিত হয়ে গেছে, কখন কি করতে হবে বা বলতে হবে সবই এবার নখদর্পণে। দুআ গুলোও রিভিশন দিয়ে এসেছি। শুরু থেকেই তাই মনে জোড় ছিল, আলহামদুলিল্লাহ।

শ্বাশুড়িকে বলে দিলাম, 'আম্মা, আপনি পেছন থেকে আমার হিজাব ধরে আমাকে অনুসরণ করবেন; আব্বা বা আপনার ছেলেকেও খুঁজতে যাবেন না। আর নিজের মতো দুআ করতে থাকবেন।'

ব্যস, এরপর আমি আর কোনোদিকে না তাকিয়ে নিজের মত তাওয়াফ করেছি ও দুআ করেছি। খুব বেশি দুআ করিনি, কিন্তু যেটুকু করেছি অন্তর থেকে করেছি, আল্লাহ সবগুলো কবুল করে নিন।

তাওয়াফ শেষে শান্তিমত দু’রাকাত সালাত পড়ে যমযমের পানি খেয়েছি। এরপর একটু রেস্ট নিয়ে সবাই আবার সাঈর উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছি।

তাওয়াফের মত সাঈও ধীরস্থিরভাবে করেছি। এবার সাফা-মারওয়াতেও থেমে দুআ করে নিয়েছি। প্রথমবারের উমরাহ নিয়ে যেসব আফসোস ছিল মনে, এবার সেগুলো সবই করতে পেরেছি, আলহামদুলিল্লাহ। বাকিদের দিকে তাকিয়ে বুঝলাম তারাও সন্তুষ্ট।

বের হয়ে ওয়াশরুমের কাজ সেরে আমরা তাহাজ্জুদ সালাত আদায় করে নিলাম। ফজরের পরও মাতাফ খালি থাকে, কিন্তু তাহাজ্জুদের সময় আল্লাহ সর্বনিম্ন আসমানে নেমে আসেন, এই ভেবে আবারও উমরাহর জন্য শেষ রাত বেছে নিয়েছিলাম।

ফজর পড়ে এক রাশ প্রশান্তি মনে নিয়ে আমরা হোটেলে আবার ফিরে গেলাম। মাথা মুন্ডন ও চুল কাটার পর আমাদের দ্বিতীয় উমরাহ শেষ হলো, আলহামদুলিল্লাহ।

দ্বিতীয় উমরাহ ছাড়াও আরেকটি শখ ছিল আমার মসজিদুল হারামের ছাদে সালাত পড়া। ছাদে মাগরিব আর ইশার সালাত পড়ে নাকি অন্যরকম প্রশান্তি পাওয়া যায়- এই কথা শুনে অনেক বারই সবাইকে ছাদে যাওয়ার প্রস্তাব দিয়েছি।

কিন্তু সাথে থাকা মুরুব্বিদের এক্সিলেটরে চড়ার আর হুটহাট টয়লেট লাগার ভয় থাকায় আর যাওয়া হচ্ছিল না। তাও শেষের আগের দিন সবাইকে নিয়ে ইশার ওয়াক্তে ছাদে যাই।

যাই হোক, ছাদে গিয়ে হাসবেন্ড অনেক আফসোস করলো- আগে জানলে এখানে সহজেই একটা নফল তাওয়াফ করতে পারতো। দোতলার থেকে ছাদে অনেক কম সময় লাগছিল আর ভিড়ও অনেক কম ছিল।

রৌদ্রময়ী

24 Nov, 00:03


আমাদের সাঈ করা যখন শেষ হয় তখনও ফজরের খানিকটা সময় বাকি। অর্থাৎ হারামে তাহাজ্জুদ আদায় করার সুযোগ আছে আলহামদুলিল্লাহ।

সাঈ শেষে সকলে আগে ওয়াশরুমের কাজ সেরে নিলো। হারামের ভেতরে কোনো ওয়াশরুম নেই, আছে সব বাইরে। ছোট ছোট বিল্ডিং এর উপর WC লেখা থাকে আর মেইল/ফিমেইল ছবি দেয়া থাকে, এই দেখেই চিনে নিতে হয়।

আমি পরবর্তীতে বুঝেছি, হারামের কাছের ওয়াশরুম গুলোয় একটু ভিড় বেশি, অবস্থাও খারাপ। তাই সময় থাকলে আমি একটু দূরের ওয়াশরুমে যেতাম।

ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে দেখি বাইরে খালি মানুষের স্রোত, কে বলবে তখন শেষ রাত! আমরা দ্রুত একটি জায়গায় তাহাজ্জুদ সালাত আদায় করে নিলাম।

বর্তমানে পুরুষদের ইহরাম ছাড়া নিচ তলার মাতাফে (মানে বাইতুল্লাহর চারপাশে) যেতে দেয়না, এমনকি নিচ তলায় সালাত পড়তেও দেয় না। তাই সবাই ইহরাম পরা থাকায় গাইড ফজরের সালাতের জন্য আমাদের ভিতরে নিয়ে যেতে চেয়েছিল। কিন্তু সকলে খুবই ক্লান্ত থাকায় অত দূর আর যাওয়া হয়নি, চত্বরেই সালাত পড়ে নিয়েছি।

আমি দুটো ব্যাপার আগে জানতাম না, সেদিন জানলাম। একটি হলো: মেয়েদের সালাতের জন্য আলাদা জায়গা সব সময় পাওয়া যায়না হারামে গিয়ে। তাই মেয়েরা যেখানে বেশি, সেখানেই দাড়িয়ে যেতে হয়।

আরেকটি হলো: সালাতের সামনে দিয়ে হেঁটে যাওয়া কেবল দুই হারাম এর জন্য নাকি জায়েজ। এজন্যই অনেককে দেখলাম আমাদের জায়নামাজের উপর দিয়ে সুন্দর হেঁটে গেলো। তবে কেউ কেউ আছে জুতা সহও পাড়িয়ে যায়। এটা জায়েজ কিনা জানিনা, কিন্তু আমার একদম অপছন্দ।

যাই হোক, ফজর সালাত শেষে আমরা হোটেলে ফিরলাম। পুরুষ দুজন হোটেলের নিচে থাকা সেলুন থেকে পাঁচ রিয়াল দিয়ে মাথা মুন্ডন করে আসে। অনেক পুরুষ মাথার চুল পুরো ফেলার বদলে ছোট করে ছাঁটে, এটিও জায়েজ কিন্তু সওয়াব কম।

আমার হাসবেন্ড আমার চুল কেটে দিলো ও তারপর আমি আমার শ্বাশুড়িরটা। আর এর সাথে সাথেই শেষ হয়ে গেলো আমাদের উমরাহ, আলহামদুলিল্লাহ।

যেহেতু প্রচন্ড ক্লান্তি নিয়ে উমরাহ করেছিলাম, তাই হাসবেন্ডকে অনুরোধ করি আরেকটি উমরাহর ব্যবস্থা করার জন্য। সবাই এতে একমত হয়। আমরা ঠিক করি তায়েফে গিয়ে ইহরাম বেঁধে আবার উমরাহর নিয়ত করবো।

যেহেতু এটি আমাদের প্যাকেজের অন্তর্ভুক্ত ছিল না তাই খরচ আলাদা পড়বে, প্রতিজনের জন্য ৫০-১০০ রিয়াল মত; বেশি মানুষ একসাথে গেলে খরচ কম আর নাহয় বেশি।

আরো অনেক কম খরচে আরেকটি অপশন আছে- আয়েশা মসজিদ। কিন্তু এটি নিয়ে আবার আলেমদের মধ্যে দুটি মত আছে। অনেকে এক সফরেই বারবার আয়েশা মসজিদে গিয়ে ইহরাম বেঁধে অনেক গুলো উমরাহ পালন করে থাকে, কিন্তু রাসূল (সা:) বা সাহাবারা কেউ এমনটা করেছেন বলে জানা যায়নি। তবে নফল তাওয়াফ বেশি বেশি করার ব্যাপারে সকলকে উৎসাহ দেয়া হয়েছে।

শুধু তাওয়াফ না, মসজিদুল হারামে সব ইবাদতেরই সওয়াব অনেক বৃদ্ধি পায়। বিশেষ করে এক রাকাত সালাতের সওয়াব ১,০০,০০০ গুণ বেশি, সুবহানাল্লাহ! তাই আমরা চেষ্টা করেছি সব ওয়াক্ত সালাত মসজিদে গিয়ে পড়ার জন্য, যদিও সব সময় পারিনি।

আমাদের হোটেল ছিল ৭০০ মিটার দূরে, আজিয়াদ রোডে। বেশির ভাগ বাঙালি থাকে পাশের ইব্রাহিম খলিল রোডে। আমাদের গাইড বলেছে আজিয়াদ রোডের দুটো সুবিধা: এক, সরাসরি মসজিদের দোতলায় উঠে যাওয়ার একটা ব্রিজ আছে; দুই, তুলনামূলক মানুষের চাপ নাকি এদিকে কম। অবশ্য হারামের নতুন এক্সটেনশান ইব্রাহিম খলিল রোড থেকেই কাছে হয়।

অন্যান্য সময় কষ্ট না হলেও যুহরের তীব্র রোদের ভেতর হেঁটে হারামে আসতে আমাদের খুব কষ্ট হতো। বিশেষ করে, তিন দিন আইয়ামে বীদের সিয়াম রেখে যখন বের হতাম, তৃষ্ণায় ছাতি ফাটার মত অবস্থা হতো। দুপুরে বের হলে সাথে সবাই অবশ্যই ছাতা ও সানগ্লাস রাখবেন, মোটা জায়নামাজ মাথায় দিলেও লাভ হয়।

আসরের সময়েও রোদ থাকতো, তবে তীব্রতা কিছুটা কম। আমরা আসর এর আগে বের হয়ে একবারে ইশা পড়ে ফিরতাম।

আমরা মসজিদের ভেতর কমই ঢুকেছি সালাতের জন্য। ওয়াশরুম থাকার কারণে বয়স্কদের নিয়ে বাইরে বসাই সুবিধাজনক ছিল। তাছাড়া মসজিদের ভিতরে খাবার নিয়ে ঢোকা মানা ছিল আর ফিমেইল সেকশান না পেলে সালাতের পরেই উঠে যেতে হতো।

আমাদের পছন্দের জায়গা ছিল আজিয়াদ রোডে সাফা টাওয়ারের বিপরীতে। বিশেষ করে ওই জায়গায় আসরের সালাতের পর কি যে বাতাস শুরু হয়, একদম আত্মা জুড়িয়ে যায়!

আমার শ্বশুড় শ্বাশুড়ির এসিতে কষ্ট হয়, তাই তাদের তো বটেই, আমারও এই প্রাকৃতিক বাতাস খুব পছন্দের ছিল। তাছাড়া ওই জায়গাতে সারাক্ষণ কেউ না কেউ খাবার হাদীয়া দিত। ফ্রিতে চা, কফি তো ছিলই; খেজুর, পাউরুটি, কেক ইত্যাদিও অনেক পেয়েছি।

প্রথম সিয়ামের দিন দেখি আমার হাসব্যান্ড আর শ্বশুড় কোন এক ব্যক্তির থেকে ইফতারের আতিথেয়তা পেয়েছে। সুন্দর করে সুফ্রাহ বিছিয়ে তাতে দিয়েছে টক দই, খেজুর আর রুটি; ঠিক যেন রামাদানের মত! দেখে খুব ভালো লাগলো। রামাদানে উমরাহ করতে আসতে না পেরে যেই আফসোস ছিল সেটা কিছুটা মিটলো।

রৌদ্রময়ী

24 Nov, 00:03


আমি মনে মনে আশা করছিলাম একটু ইফতারের ভাগ পাবো, হাসবেন্ড ঠিকই একজনের খাবার আমার কাছে দিয়ে গেলো আর সেটা দিয়েই আমি ইফতার করলাম।

আমি অবশ্য কিছু শুকনা খাবার, বাদাম, জুস ব্যাগে করে এনেছিলাম। বাদাম গুলো আশপাশে বিলিয়ে দিলাম।

আমার ডান পাশে এক বয়স্ক আরব মহিলা বসেছিলেন, আমার কেনো জানি মনে হচ্ছিল উনি ক্ষুধার্ত। দই, রুটি খেয়ে যেহেতু আমার পেট অনেকটাই ভরে গিয়েছিল তাই জুসের একটি বোতল উনার দিকে এগিয়ে দিলাম। উনি সঙ্গে সঙ্গেই হাত বাড়িয়ে নিলেন এবং খুব খুশি হলেন। কিন্তু তিনি সেটা না খেয়ে সাথে নিয়ে চলে গেলেন।

আল্লাহই জানেন, হয়তো ওই মহিলার রিযিকে জুস ছিল বলেই আমরা তার পাশে বসেছিলাম, আর ঠিক পিছনে সারিতে বসে আমার হাসবেন্ড ও শ্বশুড় ইফতারের ভাগ পেয়েছিল।

"আর তিনি তাকে রিযক দিবেন এমন উৎস থেকে যা সে ধারণাও করতে পারে না। যে কেউ আল্লাহর উপর ভরসা করে, তবে তার জন্য তিনিই যথেষ্ট।" (সুরা তালাক: ৩)

রিযিকের ধারণাতীত উৎস
বিনতে আব্দুল্লাহ

#বাইতুল্লাহর_মেহমান পর্ব: ০৫
রৌদ্রময়ী

রৌদ্রময়ী

23 Nov, 12:32


কখনও লক্ষ্য করে দেখেছেন কেন বাচ্চাদেরকে কোকোমেলন বা নার্সারি রাইম ছেড়ে দিলে তারা সাথে সাথে জম্বি হয়ে যায়? একবার দেখা শুরু করলে আর চোখ ফেরাতে পারে না? আর কোনোদিকে খেয়াল থাকে না? বন্ধ করে দিলে শুরু হয় কান্নাকাটি, ভাঙচুর?

ইউটিউবে, টিকটকে বাচ্চাদের ভিডিওগুলো উজ্জ্বল রঙ, মিউজিক ও কথার পুনরাবৃত্তি দিয়ে এমনভাবে বানানো হয় যেন বাচ্চারা একবার দেখা শুরু করলে আর থামতে না পারে।

এই ভিডিওগুলো তৈরি করা হয় মানুষের মানসিকতার বিভিন্ন দুর্বলতাকে কাজে লাগিয়ে। এই চ্যানেলগুলো চায় যেভাবেই হোক, আপনার বাচ্চাকে যেন তারা তাদের ভিডিওতে আটকে রাখতে পারে। যতক্ষণ আটকে রাখতে পারবে, তত তাদের আয়। এজন্য তারা যত রকমের অসুস্থ পন্থা নেওয়া সম্ভব, তা নেবে।

আজকাল এমন সব কার্টুন বাচ্চারা দেখছে, যেগুলোতে মারামারি, খুনোখুনি, রক্তের ছড়াছড়ি অহরহ দেখানো হচ্ছে।

এরকম চরম বিকৃত কার্টুনগুলো, যা ১৮ বছরের নিচে কারও দেখার কথা নয়, দেখছে ৮ বছরের বাচ্চারা। বাবা-মায়ের ধারণাই নেই কার্টুনের নামে বাচ্চাদেরকে কী দেখানো হচ্ছে।

এছাড়াও আছে কার্টুনের নামে এমন সব ভিডিও, যেখানে প্রথমে কিছুক্ষণ কার্টুন থাকে, তারপরে থাকে নোংরা ক্লিপ, আবার কার্টুন, আবার নোংরা ক্লিপ। এগুলো বাচ্চারা দেখে বিকৃত মানসিকতা নিয়ে বড় হচ্ছে।

শিশু-কিশোররা দিনে গড়ে ৪.৫ ঘণ্টা সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে। এর বেশিরভাগই হচ্ছে ভিডিও দেখা। এভাবে বছরে ১৬০০ ঘণ্টার বেশি সময় তারা ভিডিও দেখে পার করছে।

এই সময়ে তারা ২০০টি বই পড়তে পারে। একটি ভাষায় দক্ষ হতে লাগে প্রায় ৮০০ ঘণ্টা। একবছরেই তারা আরবি বা ইংরেজিতে দক্ষ হতে পারে। জুডো বা কারাতে প্রতিযোগিতায় যাওয়ার মতো দক্ষ হতে পারে।
একটি প্রোগ্রামিং ভাষায় কাজের সফটওয়্যার তৈরি শিখে ফেলতে পারে।

কিন্তু এগুলোর কোনোটাই না করে বাচ্চারা তাদের জীবনের একটি বড় অংশ পার করছে হাঁ করে স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে।

কাহফ থেকে আমরা উদ্যোগ নিয়েছি একটি অ্যাপ বানানোর, যেখানে বাচ্চাদের জন্য শুধু ভালো ভিডিও থাকবে। ইসলাম, বিজ্ঞান, সাহিত্য, ইতিহাস—এমন বহু ক্যাটাগরির ভিডিও আমরা ইন্টারনেট থেকে নিজেরা দেখে সংকলন করেছি।

আপনার বাচ্চার বয়স, আপনার রুচি, মিউজিক সম্পর্কে আপনার অবস্থান ইত্যাদি অনুসারে কোন ধরনের ভিডিও আপনি বাচ্চাকে দেখাতে চান, তা নির্ধারণ করে দিতে পারবেন। সম্ভব হলে ইউটিউব আনইন্সটল করে শুধু এটা রেখে দিন বাচ্চাদের ডিভাইসে।

দুআ করবেন যেন এই অ্যাপটি অনেক দূর যেতে পারে। আপনার জানা ভালো ইউটিউব চ্যানেল থাকলে তা অ্যাপে গিয়ে জানাতে পারেন। আমরা যাচাই করে যোগ করে দেব। (অ্যাপ লিংক কমেন্টে)

কাহাফ কিডস
ওমর আল জাবির

রৌদ্রময়ী

রৌদ্রময়ী

22 Nov, 13:42


গত পর্বগুলোতে আমরা মোটাদাগে দুআ নিয়েই কথা বলেছি, আজকের পর্বটাও তাই। তবে আশা করছি আগামী পর্বে অন্য বিষয়ে কথা বলতে পারবো ইনশাআল্লাহ। কিন্তু দুআ নিয়েই কেন এত কথা?

কারণ হচ্ছে বেদ্বীন পরিবারে সবকিছুই অনিশ্চিত। নিশ্চয়তা আছে একমাত্র দুআর আর আপনার রবের রহমতের। যদি দুআ করেন তাহলে পরিস্থিতি সহনীয় থাকবে আর না করলে টের পাবেন দুআ না করে কী ঘাপলাটাই না করছেন।

মাঝে মাঝে মনে হয় না সব ঠিক হয়ে গেছে? বাসায় ঝামেলা করছে না আর পর্দা নিয়ে? বা এমনিতেই সব শান্তিপূর্ণ? ব্যস তারপরে হুট করেই আবার ঝামেলা শুরু?

কারণ কী বলেন তো বোনেরা? কারণ হচ্ছে পরিবার কখনোই ঠিক হয় নাই। দুআ, দুরুদ যতদিন জারি রাখছেন ততদিন আল্লাহ তাআলার অশেষ রহমতে সব সহনীয় ছিল। আর সেই অবস্থা দেখে ভাবছেন সব ঠিক হয়ে গেছে। ফলশ্রুতিতে দুআ, দুরুদ কমিয়ে দিয়েছেন। ব্যস, তখনই টের পাবেন কিছুই পাল্টায় নাই। যেই লাউ সেই কদুই রয়ে গেছে।

যদি পাল্টাতোই পরিবার তাহলে কি একেক সময় একেক আচরণ করতো? তাহলে কি তারা পরিপূর্ণ দ্বীন পালন করা শুরু করতো না? করতো তো। বাস্তবতা হলো দুআ পরিস্থিতি সহনীয় করে আলহামদুলিল্লাহ আর দুআর অভাবে অসহনীয়।

এজন্য দুআ করুন। গায়রে মাহরামের সামনে যেতে বাধ্য করবে বলে মনে করছেন? দুআ করুন! পাত্রপক্ষকে ছবি দেওয়া নিয়ে ঝামেলা করছে? দুরুদ পড়ুন! নামাজ পড়া নিয়ে গালিগালাজ করছে? দ্বীনি বই ছিঁড়ে ফেলেছে? দুআ করুন, দুরুদ পড়ুন, দুআ ইউনুস পড়ুন!

বিপদে পড়লে চিন্তায় চিন্তায় কেঁদে কেঁদে চোখ ফুলিয়ে মাথা ব্যথা করে লাভটা কী আপনার, বোন? নাই তো কোনো লাভ। ফাঁকতালে মাথা ব্যথার চোটে দুআটুকুও করতে পারবেন না। এজন্য দুআ করুন। বিশ্বাস করুন আপনার রব সহজ করে দিবেন আপনার জন্য। বিপদে পড়লেই দৃঢ় বিশ্বাসে দুআ করুন, দুরূদ, দুআ ইউনুস পড়ুন। কোনো বাস্তবতা ভাববেন না, এটা ভাববেন না কীভাবে কী হবে। কীভাবে ভাবার দায়িত্ব আপনার রবের, আপনার দায়িত্ব স্রেফ দৃঢ় নিয়ত রাখা, দুআ ও চেষ্টা করা।

আর এই চেয়ে অসীম বিপদের মুখে আপনার রব যখন আপনার দুআগুলো কবুল করবেন, সেগুলো কোনো গোপন খাতায় টুকে রাখবেন। ভবিষ্যতে যখন দুআর উপর ভরসা করতে পারবেন না তখন এই খাতা আপনার কাজে আসবে। আপনাকে মনে করিয়ে দিবে, জীবন মরণ পরিস্থিতি আপনার আগেও হয়েছিল। তখন আপনার রব রক্ষা করেছিলেন আপনাকে।

খাতায় আরেক জায়গায় টুকে রাখবেন সম্ভাব্য সমস্যার জন্য দুআ। ভবিষ্যতের জন্য দুআ। যেমন; কখনো যেন আপনার এমন কোনো রোগ না হয় যাতে গায়রে মাহরামের সামনে সতর উন্মুক্ত হয়, কখনো যেন গায়রে মাহরাম আপনাকে না দেখে, কখনো যেন কেউ ধর্ষণ না করে, পরিবার যেন পরিপূর্ণ হিদায়াত পায়, যেন আপনাকে দ্বীন পালনে বাধা না দেয়, যেন রিজিকের চিন্তা আপনার কখনো না করতে হয়, যেন উত্তম একজন মাহরাম আপনার সব দুশ্চিন্তা নিয়ে নেন, যেন আপনি অন্যের হক্ব আদায় করতে পারেন ইত্যাদি।

পরিশেষে দুআ করুন। বিপদে পড়লেও দুআ করুন, বিপদে না পড়লেও দুআ করুন। নিজের জন্যও দুআ করুন, অন্যের জন্যও দুআ করুন। যখন শুনবেন অন্য কোনো বোন/ ভাই পেরেশানিতে আছে অবশ্যই তার জন্য দুআ করুন। দেখবেন আল্লাহ তাআলাই আপনার জন্যও সহজ করে দিবেন ইনশাআল্লাহ।

দুশ্চিন্তা নয়, দুআ করুন
জিলফাত ফারহা

#বেদ্বীন_পরিবারে_দ্বীন_পালন
পর্ব ৪
রৌদ্রময়ী

রৌদ্রময়ী

21 Nov, 12:32


আমাদের অনেক সময় ধারণা হতে পারে, ইসলাম প্রাকটিস করা শুরু করেছি দেখে আমার জীবনে "ফান" কমে গেছে।

মিউজিক নেই, নাটক/সিনেমা নেই, বয়ফ্রেন্ড গার্লফ্রেন্ড নেই, ফ্রি মিক্সিং নেই, গায়ে হলুদ/ নাচানাচি নেই — যে কেউ বলে ফেললো, "তোমার তো জীবনে আনন্দই নাই!"

এটা ভীষণ একটা ভুল কথা!

ইসলাম আমাদের জীবন থেকে আনন্দ "ডিলিট" করে না। বরং "এডিট" করে এমন একটা উত্তম ভার্সান উপভোগের সুযোগ দেয় —যেটা সুস্থ, কল্যাণকর এবং চূড়ান্ত সাফল্যের কাছাকাছি!

ইসলাম ক্ষণিকের "আনন্দ(!)" থেকে আমাদের সাবধান করে যেন, বিনোদন করতে গিয়ে আল্টিমেটলি আমরা দুনিয়া এবং আখিরাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হই।

হ্যাঁ যে জিনিসগুলো নাফস এবং শয়তানের গোলামির মাধ্যমে ক্ষণিকের আনন্দ দেয়, সেটা ইসলামে নেই।

ইসলামে প্রশান্তি আছে। ইসলামে সত্য ওয়াদা আছে। সুস্থ ধারার বিনোদন আছে, হালাল মিউজিক বিহীন নাশিদ আছে। প্রতি শুক্রবার ঈদ আছে। প্রকৃতির কাছাকাছি যাওয়া, গাছ লাগানোর আনন্দ আছে। কুরআন পড়ার মাধ্যমে আছে দুনিয়ার সমস্ত আনন্দ, প্রশান্তি এবং ভালোলাগা। ইসলামে কষ্টগুলোর সাথেই স্বস্তি আছে। অবশ্যই কষ্টের সাথেই স্বস্তি আছে ....

ইসলামে আনন্দ গুলো অনেক মিনিংফুল। যে এর মধ্য দিয়ে যায় সেই বুঝে।

আপনার ইসলামের আনন্দ গুলোকে হাইলাইট করুন। অল্পদিনের এই দুনিয়া। পজিটিভ ভাবে গ্রহণ করুন। আল্লাহর রহম করে তো আখিরাতে গিয়ে আর হাতড়ে হাতড়ে আনন্দ খুঁজে বেড়াতে হবে না, তখন চাওয়ার আগেই আনন্দ হাজির হবে ইনশাআল্লাহ।

মিনিংফুল আনন্দ
শারিন সফি অদ্রিতা

রৌদ্রময়ী

রৌদ্রময়ী

21 Nov, 00:02


বাইতুল্লাহ বা কাবা প্রথম দেখার পর আমার অনুভূতি কেমন ছিল, এটা আমি ঠিক ভাষায় প্রকাশ করতে পারবো না। তবে, আমি যেমনটা ভেবেছিলাম সেরকম আবেগের বন্যা আমার অন্তরে অনুভব করতে পারছি না।

আমি নিজের ঈমান নিয়ে একটু চিন্তায় পড়ে গেলাম। আশেপাশের মানুষ হাউমাউ করে কাঁদছে, আর আমার চোখ কিনা হালকা আর্দ্র। এর কারণ কী?

বাইতুল্লাহর প্রথম দর্শনে দুআ পড়লে তা কবুল হয়, এরকম একটা কথা আমাদের সমাজে প্রচলিত আছে। অনেক রকম দুআও বিভিন্ন বইতে পাওয়া যায়। এগুলো সুন্নাহ কিনা আমি নিশ্চিত জানি না, তবে উমর (রা:) একটি দুআ পড়তেন এটুকু জেনেছি। দুআটা মুখস্ত ছিল না, তাই নিজের মতোই দুআ করেছি।

এরপর আমরা আমাদের দাঈর পিছে পিছে মাতাফ (তাওয়াফের স্থান) এর দিকে এগিয়ে গেলাম। তিনি বেশ ধীরস্থির মানুষ। আমি হজ্ব ক্যাপ পরে অন্ধের মতো হাঁটার পরেও উনাকে অনুসরণ করতে সমস্যা হয়নি।

আমরা আগেই কিছু উমরাহর ভিডিও দেখায় আমাদের জন্য বিষয়গুলো মোটামুটি সহজ। তারপরও থিওরি আর প্র্যাকটিকাল এর মাঝে আসলে বহুত তফাৎ থাকে।

যেমন, ওই সময়ে ভিড়ের কারণে আমি একবারও হাজরে আসওয়াদ দেখতে পারিনি, যেটা তাওয়াফ শুরুর জন্য দেখা দরকার। তবে ডানদিকে সবুজ বাতি থাকায় ইশারা কোথায় করতে হবে বুঝে গিয়েছি।

তাওয়াফের সময় দেখি, ধাক্কাধাক্কির ঠেলায় মুখে ঠিকমত কোন দুআ আসছে না। তাছাড়া প্রচন্ড গরম আর মোটা ক্যাপ থাকায় মাথা যন্ত্রণা আবার শুরু হয়ে গেলো। আর একটু পর পর বিভিন্ন মানুষ আমাদের দলের মধ্যে ঢুকে বের হয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছিল, এতে আমরা বিচ্ছিন্ন হয়ে যাই।

এভাবে ভিড় সামলিয়ে শান্তিমত ইবাদত করা সম্ভব না আমার পক্ষে। বিশেষ করে যখন বার বার গ্রুপের বয়স্ক মহিলাদের দিকে আমাকে খেয়াল রাখতে হচ্ছে। তবে আমার দুআ করায় সবচেয়ে বড় যেই প্রতিবন্ধকতা ছিল তা হলো- আশেপাশের মানুষদের উচ্চস্বরে করা দুআ।

কিছু মানুষ এত জোড়ে দুআ পড়ছিল যে আমি আমার নিজের দুআগুলো বলা শুরু করেও শেষ করতে পারছিলাম না, শেষ করলেও মনোযোগ দিতে পারছিলাম না।

আমাদের ট্রেনিং সেশনের দিন বলা হয়েছিল- সম্মিলিত ভাবে বা একাকী জোড়ে দুআ করা উচিত না। নিজে দুআ করতে গিয়ে বাকিদের দুআ ব্যহত করা কি ঠিক?

আমার ইচ্ছা ছিল শুরুতে আল্লাহর প্রশংসা করে, কুরআনের কিছু দুআ ও মাসনূন যিকর করে, তারপর নিজের দুআ গুলো বাংলায় করা। কিন্তু কয়েক তাওয়াফ শেষ হওয়ার পর দেখি কিছুই পরিকল্পনা মাফিক হচ্ছে না, আরবী দুআ তো পড়তেই পারছি না ঠিকমত।

আর ক্যাপের কারণে ততক্ষণে আমার খারাপ অবস্থা। আমি আর না পেরে ক্যাপ খুলে নেই আর হিজাবের সাথে থাকা এটাচড নিকাব হাত দিয়ে উঁচিয়ে ধরে মুখ খানিকটা আড়াল করে রাখি।

আল্লাহর প্রজ্ঞা কী জিনিস আমি আবার উপলব্ধি করলাম। মুখের সামনে থেকে কাপড় সরাতেই মাথা যন্ত্রণা চলে গেলো ও শরীর হালকা লাগলো, আলহামদুলিল্লাহ।

আল্লাহ ভালো করেই জানেন, এরকম সময়ে একজন নারীর নিকাব পরা অবস্থায় কী কষ্ট হবে, তাই তিনি ইহরামের মধ্যে নিকাব না পড়ার বিশেষ বিধান রেখেছেন। তাছাড়া সেই সময়ে আসলে কেউ কারো চেহারার দিকে তাকানোরও ফুরসৎ পায়না।

আশপাশের মানুষ জোড়ে দুআ করায় অবশ্য একটা সুবিধা হয়েছে- যখনই রুকনে ইয়ামানি এসেছে তখন টের পেয়েছি। রুকনে ইয়ামানি নামক কর্নার থেকে হাজরে আসওয়াদের কর্নার পর্যন্ত একটি নির্দিষ্ট দুআই বার বার পড়তে হয় আর সেটা হলো: 'রাব্বানা আতিনা ফিদ্দুনিয়া হাসানাহ...'। পরে অবশ্য জানতে পেরেছি ইয়ামানি কর্ণারের গিলাফে চিকন করে সোনালী সুতার বর্ডার আছে।

শেষ তিন তাওয়াফ মোটামুটি বাংলায় দুআ করে কাটিয়েছি, কিন্তু যেভাবে চোখের পানি ফেলে কাটানোর দরকার ছিল সেভাবে পারিনি।

মনে অতৃপ্তি থাকায় শেষের দিকে এসে খালি বার বার দুআ করেছি, 'হে আল্লাহ, আমি ঠিকমত আপনার ইবাদত করতে পারিনি, আমাকে ক্ষমা করে দিন। আমাকে সুন্দরমত আরেকটা উমরাহ করার তৌফিক দিন।'

আরেকটা সমস্যার কথা প্রথমে টের না পেলেও পরে বুঝতে পেরেছি, সেটা হলো আমার আসলে খালি পায়ে মাতাফে হাঁটতে কষ্ট হচ্ছিল। এটা অবশ্য আমার বিশেষ সমস্যা। আমার পায়ের নিচের ত্বকে খুব অল্পতেই ফোস্কা পড়ে যায়। এজন্য মোটা মোজা পরেই এসেছিলাম, কিন্তু সেটা যথেষ্ট ছিল না।

আমাদের তাওয়াফ যখন প্রায় শেষ হয়ে এল, তখন আমরা ধীরে ধীরে বৃত্তের বাইরের দিকে যাওয়া শুরু করলাম।

অনেকেই এই জায়গাটায় ভুল করে- শুরুতেই অন্যান্য মানুষকে ডিঙ্গিয়ে সোজাসুজি বৃত্তের ভিতরে অর্থাৎ বাইতুল্লাহর কাছে যেতে চায়, আবার শেষ হলেও সোজাসুজি বের হতে চায়। অথচ নিয়ম হলো ধীরে ধীরে নিজের তাওয়াফের পরিধি ছোট আর বড় করা।

আমরা বাইতুল্লাহর কাছে যাইনি, যাওয়ার চেষ্টাও করিনি। যদিও তাওয়াফ শেষে মুলতাজাম (হাজরে আসওয়াদ থেকে দরজা পর্যন্ত সরু চৌকাঠ) ধরে দুআ করা সুন্নাহ, কিন্তু সুন্নাহ পালন করতে গিয়ে ধাক্কাধাক্কি করে নিজেকে ও মানুষদেরকে কষ্ট দেয়ার তো দরকার নেই।

রৌদ্রময়ী

21 Nov, 00:02


তাওয়াফ শেষে আমরা মাকামে ইব্রাহিমের পিছে দুই রাকাত সালাত পরে নেই। এই সালাতটিও খুব মনোযোগ দিয়ে পড়তে পারিনা, যদিও এখানে ভিড় বা অন্যান্য সমস্যা ছিল না।

আমি তখন উপলব্ধি করতে পারি কী কারণে আমি ঠিকমত কিছু করতে পারছি না, আর সেটা হলো- আমার শরীর অত্যধিক ক্লান্ত। রওনা দেয়ার আগের দিন থেকে ঘুমের ঘাটতি হচ্ছিল, প্লেনে বা হোটেলেও ঘুম হয়নি। তার উপর এয়ারপোর্টে ভারী লাগেজ ঠেলা আমার জন্য একটু কষ্টকর ছিল।

আসার আগ দিয়ে হোটেলে ভাত, ডাল, সবজি আর গরুর মাংস খেয়েছি, এসব ভারী খাবার হজম করে শক্তি আহরণের মতো পর্যাপ্ত সময় পাইনি। সব মিলিয়ে শরীর এত কাহিল যে আমার মস্তিষ্ককে নিয়ন্ত্রণে রাখতে আমার বেগ পেতে হচ্ছিল।

আমি মনে মনে নিয়ত করি, আরেকবার উমরাহ করলে ঠিকমত বিশ্রাম নিয়েই তওয়াফ করতে আসবো, ইন শা আল্লাহ। যদি ইহরাম অবস্থায় বেশিক্ষণ থাকা লাগে তো তাই থাকবো।

সালাত শেষ করে আমরা সবাই দুআ পড়ে, কিবলামুখী হয়ে দাড়িয়ে, যমযমের পানি খেলাম। এখানে বলে রাখি, কেউ গেলে অবশ্যই 'not cold' লেখা ব্যারেল থেকে পানি নিয়ে খাবেন, নাহলে ঠাণ্ডা লেখে যাবে। মাতাফে না পেলে সাঈ করতে যাওয়ার সময়ও অনেক অপশন পাবেন। একটা ছোট বোতলে কিছুটা ভরে নিলে ভালো হবে, কারণ সাঈর সময় আবার ঠাণ্ডা ছাড়া কোন পানি পাওয়া যায় না।

সাঈর সময় প্রচুর হাঁটতে হয়, আমরা শ্বশুরকে জিজ্ঞেস করলাম এবার হুইলচেয়ার লাগবে কিনা। তিনি নিজ পায়ে হেঁটেই করতে চাইলেন। যেহেতু সাফা-মারওয়া পাহাড় মসজিদের বাইরের অংশ (যদিও বর্তমানে দেখে বুঝার উপায় নেই), আমরা জুতা পরেই সাঈ করার প্রস্তুতি নিলাম।

সাফা পাহাড়ে যাওয়ার পথে কুরআনের একটি আয়াত পড়তে হয়, সকলে পড়ে নিলাম। সাথে আল্লাহর কাছে সহজতার দুআ করলাম:

"আল্লাহুম্মা লা সাহলা, ইল্লা মা জাআলতাহু সাহলা, ওয়া আনতা তাজআলুল হাঝনা, ইযা শি-তা সাহলা।"
(হে আল্লাহ, আপনি যা সহজ করেছেন তা ছাড়া কোনো কিছুই সহজ নয়। আর যখন আপনি ইচ্ছা করেন তখন কঠিনকেও সহজ করে দেন।)

আমাদের দাঈ নিচ তলায় ভিড় দেখে আমাদের দোতলায় নিয়ে গেলেন। সেখানে মোটামুটি ফাঁকা ছিল, তার থেকে বড় কথা নিচে তলার মত উচু নিচু পথ না, একদম সমতল। আমাদের খুব সুবিধা হলো এতে।

সাফা আর মারওয়াতে পৌঁছে প্রতিবার রাসূল (সা:) কিবলামুখী হয়ে দাড়িয়ে, হাত তুলে তিনবার একটি নির্দিষ্ট দুআ ও সাথে আরেকটি ইচ্ছামত দুআ করতেন। কিন্তু আমাদের সেখানে থামার সময় দেয়া হলো না। কি আর করা, আমি হাঁটতে হাঁটতেই দুআ করে নিলাম।

সাঈর সময় আল্লাহর রহমতে ভালো মতোই দুআ করতে পারলাম। এখানেও কেউ কেউ জোড়ে দুআ করে, কিন্তু তুলনামূলক তাদের সংখ্যা অনেক কম। আর এখানে হারিয়ে যাওয়ার কোনো ভয় নেই তাই কোনোদিকে না তাকিয়ে আমি একমনে দুআ করে যেতে থাকি, আলহামদুলিল্লাহ।

অনেকক্ষণ সময় পাওয়ার পরও মনে হচ্ছিল আরো কিছুক্ষণ সময় পেলে আরো ভালো হতো! যমযমের কারণে কিনা জানিনা, শরীর তখন মনে হচ্ছিল কোনো ক্লান্তি ছাড়া নিজে নিজেই চলছে!

সবাই যখন একটা জায়গায় কিছুক্ষণের জন্য বসে বিশ্রাম নিচ্ছিল, আমি তখন দাড়িয়েই ছিলাম। একমাত্র তখনই পিছন ফিরে একটু তাকানোর সুযোগ পেয়েছিলাম। যতদূর চোখ যায় কেবল মানুষ আর মানুষ। সবাই একই দিকে হাঁটছে। দেখে মনে হলো যেন হাশরের ময়দান...

আমি দুআ করলাম, "হে আল্লাহ, আপনি আজকে যেমন আমার জন্য সব সহজ করে দিয়েছেন, তেমনি হাশরের দিনও সব সহজ করে দিয়েন।"

কাবা দেখার অনুভূতি
বিনতে আবদুল্লাহ

(বাইতুল্লাহর মেহমান, পর্ব: ০৪)
রৌদ্রময়ী

রৌদ্রময়ী

20 Nov, 14:17


খুব কম মানুষই নিজের জীবনে আল্লাহর পরীক্ষাকে আইডেন্টিফাই করতে পারে। আমরা মনে করি জীবনে বিপদ আসলেই সেটা পরীক্ষা। কিন্তু আসলেই কি তাই?

জীবনে আপাতদৃষ্টিতে কোনো সমস্যা না থাকলেও আমরা পরীক্ষার মাঝে থাকি। আল্লাহ তো বলেছেন যে জীবন মৃত্যুর সৃষ্টিই পরীক্ষা করার জন্য যে কে কত ভালো ভাবে পরীক্ষায় উতরে যেতে পারে।

যখন আমাদের জীবন নিয়ামতে ভরপুর থাকে তখন আমরা ভাবি আল্লাহ আমাকে নিশ্চিতভাবেই অনেক ভালোবাসেন বা আমাকে আমার কাজের জন্য বা ধৈর্যের জন্য পুরস্কৃত করেছেন।

কিন্তু নিয়ামতও একটা পরীক্ষা - এই নিয়ামত পেয়ে আমরা শুকরিয়া আদায় করছি কিনা, বিনয়ী আছি নাকি অহংকারী আছি, মানুষকে সাহায্য করার জন্য তা কাজে লাগাচ্ছি কিনা, নিয়ামত কি বিনষ্ট করছি না যত্ন করে রাখছি? এগুলোও পরীক্ষা।


বেসিক্যালি যখন আমরা একটা নিয়ামত পাই অনেক অনেক দুয়া প্রতীক্ষার পর, এটা গেমসের জাস্ট একটা লেভেল আপ হবার মত। নতুন উপাদান, নতুন লাইফলাইন, নতুন স্ট্রেংথ নিয়ে ভিন্ন সিনারিওতে গেমস যেভাবে চলতে থাকে আর লেভেল আপ হতে থাকে - তেমনি মৃত্যুর আগ পর্যন্ত আমাদের এভাবেই লেভেল চেঞ্জ হতে থাকবে।

তাহলে আল্লাহ আমাদেরকে কি কি বিষয়ে পরীক্ষা করবেন?

- ভয়, অনাহার, প্রাণ ও সম্পদের ক্ষতির মাধ্যমে। ( সূরা বাক্বারাহ, আয়াত ১৫৫)

- উপার্জন ও আমদানী হ্রাস করে ( ঐ)

- আহলে কিতাব ও মুশরিকদের কাছ থেকে কষ্টদায়ক কথা শোনার মাধ্যমে। ( সূরা আলে ইমরান, ১৮৬)

- একজনকে আরেকজনের চেয়ে অধিক মর্যাদা দান করার মাধ্যমে। ( সূরা আল আনআম, ১৬৫)

- কাফিরদের সাথে যুদ্ধের মাধ্যমে ( সূরা মুহাম্মদ, আয়াত ৪)

- জীবনে ভালো মন্দ অবস্থার মাধ্যমে ( সূরা আম্বিয়া, আয়াত ৩৫)

- শ্রবণ ও দৃষ্টিশক্তি দান করার মাধ্যমে ( সূরা দাহর, আয়াত ২)

আমরা কি নিজেদের জীবনে পরীক্ষাগুলো আইডেনটিফাই করতে পারছি?

বিপদই কি পরীক্ষা
ডা:
সাদিয়া হোসেইন

রৌদ্রময়ী

রৌদ্রময়ী

20 Nov, 00:02


"লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক"
(আমি হাজির, হে আল্লাহ, আমি হাজির...)

এই কথাটা জীবনে কত শুনেছি, নিজ মুখে কত গুনগুন করেছি, আমার স্টুডেন্টদের কত শিখিয়েছি... কিন্তু রাসূলের দেশে নেমে এই কথাটা মুখে আনার সাথে সাথে পুরো শরীরের কেমন শিহরণ খেলে গেল! মনে মনে বললাম-

"আসলেই এবার আমি হাজির, হে আল্লাহ! আপনি আমাদের কবুল করে নিন।"

প্লেনের ভেতর নিয়ত করার আগেই নিজের নিকাব খুলে হজ্ব ক্যাপ পরে নিয়েছিলাম, যেহেতু ইহরাম অবস্থায় নিকাব নিষিদ্ধ। অনেকে এটিকে সান ক্যাপ বলেন, বিভিন্ন অনলাইন বা অফলাইন শপে পাবেন। এই ক্যাপের উপর দিকে পাতলা নেটের অংশ থাকে দেখার সুবিধার্থে, আর নিচে কালো কাপড় যাতে চেহারা ঢেকে থাকে।

এখানে বলে রাখি, এই ক্যাপ নিয়ে অনেকের অনেক মত আছে। ক্যাপের বদলে অনেকে হিজাবের উপর ওড়না বড় করে ঝুলিয়ে দিতে বলেন। আমি নিজেও অনেক কনফিউজড ছিলাম, কিন্তু যেহেতু আমাকে আমার শ্বাশুড়ীকে দেখে রাখতে হবে তাই হজ্ব ক্যাপ সুবিধাজনক হবে ভেবেছি। পাতলা ওরনাও সাথে রেখেছিলাম, কিন্তু শেষমেশ হজ্ব ক্যাপই পরেছি।

জেদ্দা এয়ারপোর্টে নামার পর আমরা হ্যান্ডব্যাগ নিয়ে হাটা শুরু করলাম। হাঁটতে হাঁটতে পথ আর ফুরায় না। একটু পর পর একটা arrow চিহ্ন দিয়ে লেখা এদিকে luggage claim। আগেকার দিনে গাধার পিঠে মূলা ঝুলিয়ে হাঁটিয়ে নেয়ার একটা সিস্টেম ছিল, সেটা মনে পড়ে গেলো!

দীর্ঘ পথ হাঁটার পর যখন শেষ পর্যন্ত আমরা আমাদের লাগেজের কাউন্টারে পৌঁছালাম তখন শুনতে পেলাম যে আমাদের লাগেজ পেতে অনেক দেরি হবে। আমরা অপেক্ষা করতে থাকলাম।

সালাতের জায়গা মনে হয় অনেক দূরে ছিল, অনেক পুরুষ সেখানেই জায়নামাজ বিছিয়ে মাগরিব আর ইশা পড়ে নিলো। আমরা বাকিরা হোটেলে পড়ার আশায় বসে রইলাম।

অবশেষে লাগেজ হাতে পেলাম দুই ঘণ্টা পর। ক্ষুধায় সবার অবস্থা খারাপ। প্লেনে দেয়া কিছু শুকনা খাবার ব্যাগে রেখেছিলাম সেটা সবাই ভাগ করে খেলাম। বুঝলাম, ব্যাগে সবসময় খেজুর, চকলেট টাইপ খাবার রাখতে হবে। আমাদের গাইড জানালেন, এত দেরি নাকি কোনোদিন হয়নি। কী আর করা, এটাই আমাদের ভাগ্য ছিল।

"কদারুল্লাহু ওয়া মা শা ফা'আলা"
(এটা আল্লাহর ফয়সালা, আর তিনি যা ইচ্ছা করেন।)

লাগেজ সব নিয়ে বাসে উঠতে উঠতে গেলো আরো আধ ঘণ্টা। বাসে সময় লাগলো দেড় ঘণ্টা। হোটেলে গিয়ে পৌঁছুলাম রাত ১১টার দিকে।

আমাদের এজেন্সির প্ল্যান ছিল কিছুটা সময় বিশ্রাম নিয়ে, শেষ রাতে উমরাহ সম্পন্ন করে, একবারে ফজর পড়ে হোটেলে ফেরার। কিন্তু লাগেজ পেতে দেরি হওয়ায় বিশ্রামের টাইম একদম কমে গেলো সবার। গাইড বার বার বলে দিয়েছে যেন ফ্রেশ হয়ে রাতের খাবার খেয়েই আমরা প্রস্তুত হয়ে যাই। কিন্তু বিপত্তি ঘটলো যখন আমার শ্বশুড় হাত মুখ ধুয়ে খাবার না খেয়েই ঘুমিয়ে গেলেন।

আমার শ্বশুড় হাই প্রেশারের রোগী, একটু ঘুমের ব্যাঘাত হলেই অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাই ভয়ে আমরা কেউ তাকে ডাকতে পারলাম না। আমরা বাকি তিনজন খেয়ে নিলাম। হাসবেন্ডকে বললাম গাইডকে রিকুয়েস্ট করতে, যেন একটু পরে রওনা দেয়া হয়। কিন্তু ও লবিতে গিয়ে দেখে গ্রুপের প্রায় সবাই ইতিমধ্যে রেডি। কেউ দেরি করার পক্ষে ছিল না।

আর উপায় না দেখে আরেকটি প্রস্তাব দেয়া হলো- আমরা পরে আলাদা উমরাহ করবো। গাইড এতে নমনীয় হলেন। তবু উনি আমার হ্যাসবেন্ডকে অভয় দিয়ে বললেন, "ওখানে গেলে আল্লাহর বিশেষ রহমতে সবাই পেরে যায়, আপনার আব্বাও পারবেন। আপনি খালি একবার উনাকে ডাক দিয়ে জিজ্ঞেস করুন উনি এখন যেতে রাজি আছেন কিনা।"

এরপর আমার শ্বশুরকে ডাক দিলে তিনি ঘুম থেকে উঠে একবারেই রাজি হয়ে যান। এতক্ষণ উনার জন্য চিন্তা করায় খেয়াল করিনি আমার নিজের শরীরও ভালো না, মাথাটা যেন ছিঁড়ে পড়ে যাবে। কোনো রকমে একটু গরম পানি করে কফি বানিয়ে
বিসমিল্লাহ বলে দুই চুমুক খেলাম। আল্লাহর অশেষ রহমতে শরীর অনেকটাই চাঙ্গা হয়ে গেল। বাকি কফি সবাইকে একটু করে খাইয়ে আমরা রওনা দিলাম উমরাহর উদ্দেশ্যে। হোটেল থেকে বের হওয়ার পর মাথার উপর সুবিশাল ক্লক টাওয়ারের দিকে তাকিয়ে দেখলাম, সময় দেখাচ্ছে ১:০০।

আমাদের গ্রুপে কয়জন বয়স্ক ব্যক্তি আছেন, যারা এতটাই সাধাসিধে যে তাদের সাথে কোনো ফোন পর্যন্ত নেই! অবশ্য আমাদের সাথে ফোন থেকেও লাভ ছিল না, যেহেতু তখনও সৌদি সিম কেনা হয়নি। তাই গাইড বারবার আমাদের রিকুয়েস্ট করলেন যেন আমরা এক সাথে সবাই থাকি। গ্রুপের পুরুষরা নারীদের ঘিরে থাকার চেষ্টা করবে, যেন কেউ বিচ্ছিন্ন না হয়ে যায়।

হজ্ব ক্যাপের কারণে আমি পথ ঘাট কিছুই দেখছিলাম না, একরকম অন্ধের মতোই হাঁটছিলাম। বানানোর ত্রুটি কিনা জানি না, চোখ বরাবর নেটের অংশটা ক্যাপের খুবই কম ছিল, আর রাতের বেলা হওয়ায় দেখতে আরো কষ্ট হচ্ছিল। একটু নামিয়েও পরতে পারছিলাম না যেহেতু ইহরাম অবস্থায় কপাল ঢাকা যাবেনা। জীবনে এই প্রথম স্বাভাবিক দৃষ্টিশক্তির কদর উপলব্ধি করতে পারলাম ও আল্লাহর কাছে শুকরিয়া জানালাম।

রৌদ্রময়ী

20 Nov, 00:02


পথ ঘাট চেনাতে চেনাতে গাইড ও দাঈ আমাদের নিয়ে যাচ্ছিলেন। আমি যেহেতু কিছু দেখতে পাচ্ছিলাম না, তাই মনোযোগ দিয়ে শোনার বিশেষ চেষ্টাও করলাম না। মনে মনে উমরাহর ধাপ আর দুআ গুলোই আওড়াচ্ছিলাম।

কিছুক্ষণ পর আমরা মসজিদে প্রবেশ করি। জুতা খুলে মসজিদে প্রবেশের দুআ পড়ে নেই। এর পর এক্সিলেটর দিয়ে নেমে কাবার দিকে এগিয়ে যেতে থাকি। টের পাই, আমার হার্টবিট বেড়ে যাচ্ছে।

লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক
বিনতে আবদুল্লাহ

রৌদ্রময়ী

রৌদ্রময়ী

19 Nov, 12:20


লং খিমার পরে বের হয়েছিলাম। সবসময় প্লেইন বোরকায় দেখে তাই চোখ চেনা চেনা লাগছে কিন্তু আবার খিমার পরা। দ্বিধান্বিত হয়েই মেঘের ফ্রেন্ড বলল, "আসসালামু আলাইকুম, মেঘের আম্মু আন্টি না?"। হেসে বললাম, হ্যা।

বাসার আশেপাশে সব দোকানদার, দারোয়ান, প্রতিবেশী ভাইরা ঐ বোরকা দেখে চিনে, চোখ দেখে চিনে।

প্রসঙ্গ এটা নয় যে চেনা জরুরী কি জরুরী না।

এমনকি সৌন্দর্য প্রকাশ হওয়া না হওয়ার আলোচনা নয়, ভিন্ন কিছু কথা বলতে চাইছি।

.

সর্বোচ্চ পর্দা করেও আসলে কতটুকু সৌন্দর্য নিজের গোপন করা যায়?

নারীর আপাদমস্তক দেখে শ্রদ্ধায় মাথা নুইয়ে আসে, চরম লম্পট পুরুষটাও থতমত খেয়ে যায় এরকম সৌন্দর্যের পোশাকও নারী পরে। এরকম নারী ব্যক্তিত্ব দেখলে মনে হয় পর্দা ইজ মোর দেন এ ফুল কভার ক্লোথ।

মনে হয় এখানে হাঁটা চলা, কথা বলা, অঙ্গভঙ্গি, শিক্ষা, পারিবারিক পরিচিতি সমস্ত কিছুুর একটা কম্বিনেশন আছে। এবং অবশ্যই নারী হিসেবে কোথায় যাচ্ছি কী করছি, কাদের সাথে কথা বলছি সেসব পরিস্থিতিতেও পর্দার ধরন গড়ন উপস্হাপনের কিছু বিষয় আছে।

যেমন গায়ে হাত দিয়ে ঠেলে গাড়িতে তুলবে এরকম বাস কনট্রাকটরও আছে আবার আপনাকে আরামে উঠতে জায়গা করে দিবে, নামার সময় বাকিদের বলবে মহিলা নামবে জায়গা দেন, এরকমও আছে।

সৌন্দর্য সেই একই নারীদেরই, আপাদমস্তক পুরো আবৃত, অর্ধ আবৃত, হয়তো স্বল্প বসনা, প্রচন্ড ভদ্র সুশীল নারী পুরুষদেরও কেমন অশ্লীল, অভক্তি, রুচিসম্মত নয়, খ্যাত, আঁতেল, ফ্যাশন সেন্স নেই কত কী মাথায় আসে।

যেমন, আপনি সহসা কাউকে জাজ করেন না, কিন্তু বোরকা হিজাব করা একজন নারী পায়ে তার নুপুর রিনিঝিনি সুর তুলছে, মুখে মেকআপ, আর ঠোঁটে ভারী লিপস্টিক! আপনমনে বিড়বিড় করে ননজাজমেন্টাল আপনার মনেও দুটো খারাপ কথা আসবে।

প্রশ্ন আসতে পারে মানুষ কী বলল তাতে কি আসে যায়? পর্দা কি মানুষের জন্য?
অবশ্যই না।

যার যার সাধ্যমত অশ্লীলতা থেকে দূরে থাকতে হবে। তখন মানুষ সমালোচনা করলেই বা কী আসে যায়। যদি এটা মাথায় থাকে যে অন্তরের খবর নিয়ত আল্লাহ জানেন। 

.

আপাদমস্তক পর্দা আবৃত নারীটাকে যখন দেখলাম চোখে পড়ার মত স্পর্শকাতর জায়গাগুলো ঢাকার পরেও স্থুলকায় শারীরিক গড়নের কারণে বক্ষদেশের উচ্চতা লুকাতে পারে নি। রাস্তাঘাটে প্রতিনিয়ত দেখা এ দৃশ্য ভীষণ ভাবায়?

সিরিয়াসলি ভাবায়?
তাহলে কি আপাদমস্তক কালো পর্দার পোশাক পরার পরও তার পর্দা হয়নি?

বক্ষদেশ ঢাকা তো পর্দা বা শরীর আবৃত করার ফরজ পালনের ক্ষেত্রে একজন মুসলিম নারীর জন্য অবশ্য কর্তব্য। তাহলে ভদ্রমহিলা কি সে শর্ত পূরণ করতে পেরেছে?


চোখ দুটোও ঠিকমতো দেখা যায় না কিন্তু স্হুুলকায় শরীরে মাথা থেকে ছেড়ে দেওয়া খিমার তার আকৃতি শরীরের আকর্ষণীয় জায়গার রুপ লুকাতে পারছে না।
সরাসরি কিছু দেখা যাচ্ছে না কিন্তু সহসাই বোঝা যাচ্ছে।

পর্দার সবক শিখতে শিখতে কোথায় যেন নারী শরীর বলতে বুক, কোমর, হিপ, ঠোঁট, চোখ এ কয়টা জায়গাই মনে হয়। এজন্যই পুরুষ নয় নারীদেরও চোখ একজন নারী শরীরের এ কয়টা জায়গায় পড়ে।

.

যদি আমরা পর্দা শেখার আগে আখলাক শিখতাম, রাস্তায় কিভাবে কোন এঙ্গেলে তাকিয়ে হাঁটতে হয়, কথা বলার সময় কিভাবে তাকাতে হয়,  রাস্তায় অচেনা পুরুষ দেখলে চোখ নামিয়ে নেওয়া আর নারী দেখলে সালাম দেওয়া। এটা না করে ঠোঁট বুকের দিকে কেন তাকাতে হবে মানুষ দেখলেই, এসব যদি শিখতাম তাহলে হয়তো পোশাক বিতর্ক একটা সঠিক দিক নির্দেশনা পেত।

একজন মুসলিম মানুষ দেখলেই সালাম দিবে। আর আমরা আগে দেখি নারী হলে বুকে কাপড় আছে কি নাই, পেছনের দিক বোঝা যায় কি না। ব্রেইন অটো কানেক্ট হয়ে যায় এ ভাবনাগুলোতে কেমন যেন!

মানুষ ভালো কিন্তু পোশাকের পর্দা যে করে না।
ভাইরে সালোয়ার কামিজ তো পরছে, না ফতুয়া বা শার্ট পরছে? বলেন তো আপনি তার পোশাকহীন শরীরকে দেখতে পাচ্ছেন আপনার শার্লক হোমস চোখ দিয়ে?

যদি তাই দেখতে পান তাহলে নেকাব বা মাস্কের নিচে আমি বা আমরা যারা আছি সবাইকে একদম মাপমত দেখার এলেমও আপনার আছে!

সালোয়ার কামিজ পরে মানে বেপর্দা।

জিন্স শার্ট হিজাব সহ পরে মানে ল্যাংটা মাথায় ঘোমটা।

রঙিন বোরকা পরে মানে পর্দা একটা ফ্যাশন।

আপাদমস্তক পরিপূর্ণ পর্দা করে তো তার আচরণ হতে হবে ফেরেস্তার মত। আর লবন বেশি হলে স্বাদ নষ্ট হত এই মন্তব্যের স্টাইলে বলতেই পারেন, কালোই পইরো, জাস্ট হিজাব এরকম দিও না, কেমন যেন পর্দা কমপ্লিট হয় না, এই কোম্পানির মোজা পইরো না, ঐ দেশের হিজাব পইরো না।

মিলায়ে দেখেন এটা মুসলিম সমাজের চিত্র কি না?

বিদ্র: মুসলিম ভাববে সঠিকটা জানার ও মানার জন্য। কাউকে ছোট করার জন্যও না, কোনো মানুষের বা আল্লাহর বিধানের ভুল ধরার জন্যও না। চিন্তাশীল মানুষকে আল্লাহ পছন্দ করেন।

যে দৃশ্য ভীষণ ভাবায়
কাজী দিশা

রৌদ্রময়ী

রৌদ্রময়ী

18 Nov, 14:33


বড় ভাই বোনের জামাকাপড় ছোট ভাইবোনরা পরার যে বিষয়টা এটা আমার জোস লাগে।

এটায় একটা আত্মিক ব্যাপার থাকে।

আমরা পাঁচ ভাই বোন, ভাইয়ার ছোটকালের একটা দুইটা খেলনা অক্ষত অবস্থায় আমরা পেয়েছিলাম।

আমি সারাজীবন আমার বড় বোনের জামা, কামিজ পরেছি।

আমার বড় বাচ্চা তার কাজিনের কিছু জামা পরেছে। আমার মেয়ে তার ভাই এর ইউনিসেক্স প্যান্টগুলো পরে, যেগুলো ছেলেমেয়ে আলাদা নাই৷

আর ওরা এটায় মজাও পায়।

তবে এর মানে এই না যে ছোট ভাই বোনরা সবকিছু বড়দের পুরনো গুলোই পরে যাবে, তাদের কেও নতুন দিতে হবে।

আমি বোনের কাপড় পরতাম আবার আম্মু নতুন জামাও দিতেন। বরং নতুনই বেশি পরতাম, আপুরগুলো ছিল পাশাপাশি। আপুর সুন্দর জামা পেয়ে নিজেকে ধন্য মনে হত৷

ভাইবোনদের ভেতর আবেগ থাকা জরুরি। কারণ বড় হওয়ার পর মেয়েরা শশুরবাড়ি যাওয়ার পর আগের মতো থাকে না সবকিছু।

ভাই বিয়ের পর নিজের ফ্যামিলি গড়তে, রিযিকের জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়ে৷

এটাই স্বাভাবিক, এটাই নিয়ম।

তখন পুরনো আবেগ আর স্মৃতি গুলোই সম্পর্ক কে গ্লু এর মত ধরে রাখে৷ যাদের শৈশব যত রঙ্গিন, যত আনন্দ আর আবেগে মাখা তাদের বড়কালের সম্পর্ক ততটাই মজবুত। সাথে দ্বীনের বুঝ থাকলে, আর্থিক অবস্থা ভালো থাকলে সোনায় সোহাগা৷

জিনিস, কাপড় যা লাগবে না তা জমিয়ে রাখা আমার ভীষণ অপছন্দ। নিয়ম করে প্রতি ৪-৫ মাসে ডিক্লাটার করি আমি।

অতিরিক্ত বা প্রয়োজন শেষ হলে ডিক্লাটার অবশ্যই করব আমরা৷

তবুও কেউ আমাকে জিজ্ঞেস করে— বলব, কিছু দামি, দাগহীন সুন্দর জামা বা শীতের কোটটা আমি রেখে দিয়েছি, আমার বাচ্চাদের ছোটরা পরবে বলে।

আমাদের পুরনো জামা
নুসরাত জাহান

রৌদ্রময়ী

রৌদ্রময়ী

18 Nov, 00:02


দ্বিতীয় বারের মত এজেন্সি পরিবর্তনের সময়ে আসলে নতুন এজেন্সি পাওয়ার থেকেও বেশি চিন্তার বিষয় ছিল- বুকিং মানি ফেরত পাওয়া।

হাসবেন্ড সেদিন বিকালে বাসায় ফেরার পর পরিকল্পনা করতে থাকে কি করে টাকা তুলে আনবে, কাকে সাথে নিয়ে যাবে ইত্যাদি। ওই মুহূর্তে আসলে উমরাহর আশা একরকম বাদই দিয়েছিলাম। তারপরও পরিচিত সেই আপুকে নক দিলাম, যদি উনার এজেন্সির সাথে যাওয়ার এখনো সুযোগ থাকে...

এদিকে হাসবেন্ড এর পেরেশানি দেখে বললাম, টাকা তুলতে না গিয়ে আগে এজেন্সিকে বলো অনলাইনে ব্যাঙ্ক ট্রান্সফার করতে, সেটাই বেশি সুবিধাজনক। রাতে এজেন্সিতে ফোন দিয়ে সেও একই কথা জানালো। উনারা একবারেই রাজি হয়ে গেলেন আর ব্যাংক একাউন্ট দেয়ার কিছুক্ষণের মাঝেই টাকা ফেরত পাঠিয়ে দিলেন, আলহামদুলিল্লাহ।

একটা চিন্তা শেষ হলো। কিন্তু সেই আপুর হাসবেন্ডের এজেন্সির পক্ষ থেকে কোন সিদ্ধান্ত আমরা জানতে পারছিলাম না, উনারা ব্যস্ত থাকায়। মন বলছিলো, হয়তো এখানেই আমাদের রিযিক আছে। কিন্তু না! রাত ১২টায় আপু তাদের অপারগতার কথা জানিয়ে দিলেন।

আমরা উমরাহ নিয়ে আর কোন কথা বললাম না নিজেদের মাঝে, এত কিছুর পর দুজনেই খুব ক্লান্ত হয়ে গিয়েছিলাম। আমি শুয়ে ঘুমের প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। কিন্তু আমার হাসবেন্ড আবার ইন্টারনেট ঘেঁটে আরেকটি নতুন এজেন্সির ব্যাপারে খোঁজ নিচ্ছিল।

আমি হেসে বললাম, ‘এত পরিচিত এজেন্সি থাকার পরেও যখন লাভ হলোনা, তখন একেবারে অপরিচিত এজেন্সি দেখে এই শেষ মুহূর্তে কি লাভ হবে?’ ও তখন ওদের সম্পর্কে দেয়া রিভিউ গুলো দেখালো। দেখে আমারও ভালই মনে হলো। কিন্তু এসব রিভিউ কতটা সত্য?

হঠাৎ একটা রিভিউ দেখে ও লাফিয়ে উঠলো! ওর ডিপার্টমেন্টের বড় ভাই, পরিচিত। সাথে সাথে তাকে ওই এজেন্সির ব্যাপারে জিজ্ঞেস করে উনাকে মেসেজ দিলো। আমিও বসে না থেকে এজেন্সির ওয়াটসএপ নাম্বারে মেসেজ দিয়ে জানতে চাইলাম অক্টোবরের ১৬ এর প্যাকেজে সিট ফাঁকা আছে কিনা। দুই পক্ষ থেকেই পজিটিভ রিপ্লাই আসলো, আলহামদুলিল্লাহ। ব্যস, আমরা দ্রুতই ডিসিশন নিয়ে নিলাম- এদের সাথেই যাবো, ইন শা আল্লাহ। রাত তখন ১:৩০।

পরদিন সকালে এজেন্সির সাথে ফোনে কথা বলে সব কিছু কনফার্ম করে ফেলা হয়। বুকিং মানি অনলাইনেই ট্রান্সফার করে দেই আমরা। প্রস্তুতির জন্য আমাদের হাতে থাকে মাত্র ছয়দিন।

এর পরের দিনগুলো খুব দ্রুত ব্যস্ততার সাথে পার হয়ে যায়। বিভিন্ন জনের কাছ থেকে শুনে নিয়ে প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো জড়ো করতে থাকি। একটা জিনিস খেয়াল করি, উমরাহর বিষয়ে যত জনের কাছে পরামর্শ চাই, সকলে খুব খুশির সাথে এগিয়ে আসেন।

গোছগাছের পাশাপাশি একটু একটু করে উমরাহর পড়াশোনাও করতে থাকি আমরা। বই পড়ি ও কিছু লেকচার শুনি। এছাড়া কিছু স্টেপ বাই স্টেপ ভিডিও দেখে আরো কনফিডেন্স পাই।

কিছুদিন পর শ্বশুড়-শাশুড়ি চলে আসেন আমাদের বাসায়, এক এক করে বিভিন্ন আত্মীয়রাও দেখা করতে আসেন। এতসবের ভেতর আমার হাসবেন্ডের সেই পরীক্ষার প্রস্তুতি নেয়াটাই কষ্টকর হয়ে যায়। পরীক্ষায় ভালো করার আশা ও ছেড়েই দিয়েছিল। তবু পরীক্ষা দেয়ার পর দেখা যায় ভালই রেজাল্ট করেছে, আলহামদুলিল্লাহ।

পরীক্ষার একদিন পরই ছিল আমাদের ফ্লাইট। খুব দ্রুত সময়ে আমরা লাগেজ গুছিয়ে ফেলি। পরদিন সকালে উঠে সকলে এক এক করে গোসল করে শেষ প্রস্তুতি নিয়ে নেই। আমার হাসবেন্ডের প্ল্যান ছিল এয়ারপোর্টে আগে ভাগে পৌঁছে ব্রেকফাস্ট করা। তাই সকালে তেমন কিছু না খেয়েই আমরা জলদি বের হয়ে যাই এবং অল্প সময়েই পৌঁছে যাই।

আমরা জলদি পৌঁছালেও গ্রুপের বাকি মেম্বারদের কারণে আমরা বাইরের ওয়েটিং লাউঞ্জে অপেক্ষা করতে থাকি। আমরা চাইলে সবার আগে ইমিগ্রেশন সম্পন্ন করে ফ্রি হয়ে ব্রেকফাস্ট করতে পারতাম, কিন্তু আমাদের জানা ছিল না বোর্ডিং পাস নিতে এত সময় লাগবে।

গ্রুপের সবাই আসার পর আমরা ইমিগ্রেশনের লাইনে দাঁড়াই এবং নানা কারণে আমরা সবার পিছনে পড়ে যাই। আমাদের সব ফর্মালিটি শেষ করতে এতটাই দেরি হয় যে ব্রেকফাস্ট তো দূরে থাক, ফ্লাইটের আগে আমাদের কোন কিছুই চেক না করে সোজা প্লেইনে উঠে যেতে বলা হয়। আর প্লেইন এ বসার একটু পরই প্লেন ছেড়ে দেয়!

ঘড়িতে তখন বাজে ২টা। ব্রেকফাস্ট না করে আমাদের তখন সবারই কাহিল অবস্থা, তবে সবচেয়ে কাহিল ছিল আমার হাসবেন্ড। কারণ ওর অনেক শখ ছিল বাবা মাকে এয়ারপোর্টে নিয়ে ব্রেকফাস্ট করাবে, এর জন্য ও অনেক দৌড় ঝাপও করেছিল। আমি ওকে বুঝালাম, ‘হয়তো ইবাদতের থেকে দুনিয়াবি কিছু নিয়ে বেশি আকাঙ্ক্ষা করা আল্লাহর পছন্দনীয় না। নিশ্চয়ই এতে আমাদের জন্য কল্যাণ আছে।’

আমার হাসবেন্ড সব শুনে একমত হলো। হ্যান্ডব্যাগ এ থাকা সামান্য ফল দিয়ে আমরা ক্ষুধা নিবারণ করলাম। কতক্ষন পর সৌদি এয়ারলাইনের পক্ষ থেকে খাবার পরিবেশন করা হলো, আমরা তৃপ্তি ভরে খেলাম। আমার শ্বশুড় আবার ইহরামের কাপড় না পরেই বের হয়েছিল। তবে প্লেনেই ইহরাম পড়ার চমৎকার ব্যবস্থা ছিল বলে রক্ষা, আলহামদুলিল্লাহ।

রৌদ্রময়ী

18 Nov, 00:02


প্লেনের সিটের সাথে থাকা মনিটরে আমরা ফ্লাইটের লাইভ গতিবিধি দেখতে পারছিলাম। সফরের দুআর পাশাপাশি নতুন শহরে প্রবেশের দুআ পড়তে বলে দিয়েছিল আমার বোন। সব শহরে সম্ভব না হলেও নতুন দেশে ঢুকলে আমি পড়ে নিচ্ছিলাম। ফাঁকে ফাঁকে উমরাহ বিষয়ক পড়াশোনা আর কিছু প্রাসঙ্গিক দুআ মুখস্ত করছিলাম আমরা।

ব্যস্ততার কারণে নতুন কোন দুআর লিস্ট তৈরি করতে আর পারিনি। রামাদান উপলক্ষে তৈরি করা দুআর লিস্টের ছবি তুলে নিয়েছিলাম। আরো কিছু পেইজের দুআ লিস্টও ফোনে সেইভ করে নিয়েছিলাম। হ্যান্ডব্যাগে দুটো দুআর বই ও নিয়েছিলাম। যেহেতু সফরে দুআ কবুল হয় তাই সেগুলো প্লেনে পড়ছিলাম, আবার উমরাহর সময়কার জন্য রিভিশন দিচ্ছিলাম।

দেখতে দেখতেই মীকাতের কাছে পৌঁছে যাই আমরা। নিয়ত করে ফেলি উমরাহর আর তালবিয়াহ্ পাঠ করতে থাকি। কিছুক্ষণের মধ্যেই জেদ্দা বিমানবন্দরে অবতরণের ঘোষণা আসে।

প্লেনের জানালা দিয়ে দূরের পাহাড়গুলো যখন দেখছিলাম, তখনও বিশ্বাস হচ্ছিল না যে আমরা সত্যি সত্যিই এসে গিয়েছি রাসূলের দেশে, সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।

বাইতুল্লাহর পথে
বিনতে আবদুল্লাহ

রৌদ্রময়ী

রৌদ্রময়ী

16 Nov, 12:31


নিয়মিত নিজের মৃত্যুর স্মরণ আত্মহত্যার প্রবনতা কমাতে সহায়তা করতে পারে, ইন শা আল্লাহ। আমি একে বলি 'Mindful Recalling of Death'।

জীবনের কষ্ট- দুঃখ, দুনিয়াবি না পাওয়া গুলোর যন্ত্রণা থেকে মুক্তির জন্য কোনো একদিন আল্লাহ আমার মনে এই মৃত্যু চিন্তা এনে দিয়েছিলেন।


মনে নেই সেই কবেকার কথা। হঠাৎ করে এমনটা মনে হল— আমি যদি এখন মারা যাই, তাহলে পৃথিবীর কিছু তো আর আমার কোনো কাজে আসবে না, আজকে যা পাওয়ার জন্য এতো মরিয়া হচ্ছি, যা চাওয়ার জন্য এতো অপমানিত হচ্ছি, আজকে মরে গেলে এসব কি কাজে আসবে?

না পেলেও বা কী হবে? সকলের ভাগ্যে সব থাকবেই এমন তো আল্লাহর সিস্টেম না, আমার পৃথিবীতে আসার লক্ষ্য তো এটা নয় যে আমি যা চাবো তাই পাবো।

আল্লাহর অশেষ রহমত যে আমি মুক্তি পেলাম, এতো হালকা লাগলো আমার, ঝগড়া, ক্ষোভ, অভিযোগ, অপমান যা কিছু আমাকে ভারাক্রান্ত করে রেখেছিল, আল্লাহ আমাকে তা থেকে মুক্তি দিলেন এই মৃত্যুর চিন্তার মাধ্যমে। আল্লাহু আকবর।


এরপর থেকে আমি নিয়মিত মৃত্যুর চিন্তা করি, প্রতিদিন কোনো একটা সময় নিজেকে প্রশ্ন করি “এখনই মারা গেলে আমার কী হবে?”

কখনো অটোতে বসে, কখনো বাসায়, কোনো সময় ঝগড়া হলে, নিজে ভুল করলে, রোজ চিন্তা করার চেষ্টা করি সচেতন ভাবে।


আল্লাহর রহমতে এটা আমাকে অনেক হেল্প করেছে বিপদে শান্ত থাকতে। ঝগড়া হলে, কেউ কষ্ট দিলে, মিথ্যা বললে ভাবি— এখনই যদি মারা যাই, তাহলে এদের সাথে তো আর কোনো দিন দেখাই হবে না আমার, অযথা এদের কথা, আচরণে এতো কষ্ট পাচ্ছি।

তখন আর ঝগড়ার টপিক গুলো অতোটা গুরুত্বপূর্ণ মনে হয় না, মাফ করে মিলে যাই।


মূল পয়েন্ট ছিল আত্মহত্যার ইচ্ছা দূর করতে মৃত্যু নিয়ে চিন্তা ভাবনা। আচ্ছা, একজন ব্যক্তি কেন আত্মহত্যা করতে চায়?

অধিকাংশ ক্ষেত্রে— দুনিয়াবী কষ্ট, ব্যর্থতা, একাকীত্ব, প্রিয়জনের অভাব, বিরাগ, অভাব, পারিপার্শ্বিক, অর্থনৈতিক চাপ থেকে মানুষের আর বাঁচতে ইচ্ছা করে না, মনে হয় মরে গেলেই বাঁচি।

আনন্দে, ইবাদত করতে করতে, ভাল কাজ করার খুশিতে কারো মরতে ইচ্ছা করে না। মরতে ইচ্ছা হয় কষ্ট, অধিকাংশ ক্ষেত্রে মানুষের উপর রাগ, অভিমান থেকে।

আজ মারা গেলে এসব মানুষের সাথে আর কোনো দিন দেখা হবে? অথচ জীবনের দিনগুলো শেষ হয়ে গেলে আর কোনো দিনই আমরা আসবো না, এখনই সময় আল্লাহকে খুশি করে নিজের ভালোর চিন্তা করা।


জীবন আসলেই দুই দিনের। আজকে আছি, কালকে এ সময়ে দাফন শেষ হয়ে যেতে পারে। যতো সমস্যায় আছি, টাকার অভাব, অসুখ, ঝগড়া, আত্মীয়দের সাথে রাগ, গীবত, মানুষের দোষ ধরা— এসব কিছুই থাকবে না কালকে আর, কী থাকবে তখন?

নামাজ ঠিক ছিল?
খাবার হালাল ছিল?
কুরআন পড়েছি তো?
গান- সিনেমা শুনি নি তো?
রাগ- ঝগড়ার উপর মরি নি তো?
মানুষকে কথা দিয়ে কষ্ট দেই নি তো?
এই সব কয়েকটা জিনিস, এগুলোই যা গুরুত্ব বহন করে।

সব কষ্ট এবং হতাশা একদিকে আর আজ যদি আমার আল্লাহর সাথে মুলাকাত হয়ে যায়, আমার মৃত্যু হয়ে যায়, আমি কি তৈরী আছি আমার রবকে ফেস করার জন্য এই দুশ্চিন্তা আরেক দিকে।

এই চিন্তা করলে দুনিয়ার সব রাগ, অভিযোগ অর্থহীন মনে হয়, নিজেকে অপ্রস্তুত মনে হয়। আবার আমার রবের দয়া, ভালোবাসার কথা চিন্তা করলে আনন্দে তখনই আল্লাহর কাছে চলে যেতে মনে চায়।

মৃত্যু,
আহা, মৃত্যু! আমার প্রিয়,
আমার বেঁচে থাকার প্রেরণা,
মৃত্যু হবে জেনেই বেঁচার আগ্রহ পাই,
সুন্দর মৃত্যুর আকাঙ্খায় ক্ষমা করতে পারি বারবার।


আল্লাহ যা চান, তাই আমার জীবনে আসুক, তিনি যা অপছন্দ করেন, তা জীবন থেকে চলে যাক। একটা জীবন, মৃত্যু হয়ে গেলে শেষ, আর তো কাজ করার, তওবা করার সুযোগ হবে না, এই জীবনে আমি ব্যর্থ হতে চাই না।

মৃত্যুই আমার প্রিয়
খাদিজাতুল কোবরা

রৌদ্রময়ী

রৌদ্রময়ী

16 Nov, 02:13


আমরা সর্বপ্রথম উমরাহর নিয়ত করি ২০২৪ এর শুরুর দিকে। আমরা বলতে আমি, আমার হাসব্যান্ড এবং আমার শ্বশুর-শাশুড়ি।

আমরা কেউই আগে উমরাহ বা হজ্ব করিনি। যদিও সামর্থ্য ছিল আগে থেকেই, কিন্তু নানা কারণে আর কারোরই যাওয়া হয়নি।

মূলত আমার শ্বশুর একদিন ইচ্ছা প্রকাশ করার পর আমার হাসবেন্ড বিষয়টাকে গুরুত্ব সহকারে নেয় ও খোঁজ-খবর নেয়া শুরু করে।

আমাদের টার্গেট ছিল রামাদানে উমরাহ করার। সব রকম খোঁজ নিয়ে প্রস্তুতি নেয়া শুরু করেছিলাম। কিন্তু হাসবেন্ডের একটা গুরুত্বপূর্ণ ভাইভার ডেইট রামাদান মাসে পড়ার সম্ভাবনা থাকায় আমরা দোটানায় পড়ে যাই।

অনেকে পরামর্শ দেয় এত দুশ্চিন্তা নিয়ে উমরাহ করতে না যেতে। আমরা সেটাই মেনে নেই। ফলে তখনকার জন্য আমাদের উমরাহ মুলতবি রয়ে যায়।

সেই ভাইভাটা অবশ্য হয়েছিল অনেক মাস পর। এর আরো কিছুদিন পর হাসবেন্ডের প্রমোশন হয়, আলহামদুলিল্লাহ। উমরাহর বিষয়টা সবাই প্রায় ভুলতেই বসেছিল। কিন্তু আমি তো নাছোড়বান্দা! আমি একটু একটু করে সবাইকে তাড়া দিতে থাকি।

একদিকে আমার শ্বশুড় খুব দ্রুতই বার্ধক্যের কারণে শারীরিক শক্তি হারিয়ে ফেলছেন। অন্যদিকে আবার আমার হাসবেন্ডের কাজের চাপ বেড়ে যাচ্ছে।

সব মিলিয়ে সবাই অক্টোবর মাসে উমরাহর জন্য রাজি হয়ে যায়, যেহেতু ওই সময়ে হাসবেন্ডের ছুটি ম্যানেজ করা সহজ হবে।

কিন্তু অক্টোবর মাসের ১৪ তারিখ আবার আমার হাসবেন্ডের একটা পরীক্ষা ছিল। নভেম্বরে আবার ওর কিছু কাজের জন্য দেশে থাকা জরুরি।

অর্থাৎ উমরাহ করতে হবে ঠিক অক্টোবরের দ্বিতীয়ার্ধের মধ্যেই। এরকম তারিখে যাবে এমন এজেন্সি খোঁজা শুরু হয়ে গেলো।

আমার হাসবেন্ড আবার ভীষণ খুঁতখুঁতে মানুষ; খুব ভালো রিভিউ এবং ব্যবহার না পেলে সে কারো থেকে কোনো সার্ভিস নেয় না। আমি তাকে বেশ কয়েকটা স্বনামধন্য এজেন্সির সন্ধান বের করে দিলাম। কিন্তু আমাদের তো আবার তারিখ বাধাধরা!

অবশেষে সুবিধামত তারিখে পরিচিত এক এজেন্সি পেয়েও গেলাম, যাদের সাথে আমার পরিবারের অধিকাংশ মানুষ হজ্ব বা উমরাহতে গিয়েছে এবং উচ্ছসিত প্রশংসা করেছে। ইস্তিখারা করে আমরা তাদের সাথেই যাওয়ার নিয়ত করে ফেললাম।

আমার হাসবেন্ড সেই পরিচিত এজেন্সির প্রধানের সাথে ফোনে কথা বলে সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝিতে। তিনি আমাদের পরিচয় শুনে চিনে ফেললেন এবং অমায়িক ব্যবহার করলেন।

বললেন, আর এক সপ্তাহের মধ্যে টাকা দিয়ে বুকিং করে ফেলতে। আমরাও টাকা রেডি করতে লাগলাম। সেপ্টেম্বরের ২১ তারিখ তাদের অফিসে যাওয়ার আগে ফোন দেয়া হলো, কিন্তু কেউ ধরলো না। পরেরদিন ও চেষ্টা করে কাউকে পাওয়া গেলো না। তার পরের দিন আবার আমরা ঢাকার থেকে শ্বশুরবাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছিলাম।

শ্বশুরবাড়ি থেকে আবার ঢাকায় ফেরার আগে থেকে আবার আমরা নানা ভাবে যোগাযোগ করার চেষ্টা করি, কিন্তু লাভ হচ্ছিল না। আমরা মূলত জানতে চাচ্ছিলাম কি কি কাগজপত্রের প্রয়োজন, তাহলে আমার শ্বশুর শ্বাশুড়ির কাগজ গুলো সাথে নিয়ে ঢাকায় ফিরতে পারতাম। পরে পরিচিতদের থেকে শুনে নিয়ে পাসপোর্ট ও অন্যান্য জিনিস নিয়ে রওনা হয়ে গেলাম।

ফিরে এসেও উনাদের ফোন দিয়ে পাচ্ছিলাম না। আমাদের তখন আশঙ্কা হয় যে উনাদের সাথে খারাপ কিছু ঘটলো কিনা! এই দুশ্চিন্তার মাঝে উমরাহ বিষয়ে পড়াশোনা বা প্রস্তুতি কোনটাই হচ্ছিল না।

দশদিন টানা চেষ্টার পর এক আত্মীয়কে দিয়ে ফোন করিয়ে শেষ পর্যন্ত খবর নেয়া সম্ভব হয়- উনারা নাকি খুব অসুস্থ ছিলেন। আমাদের উমরাহর কথা জানার পর উনারা একদিন সময় নেন। তিনদিন পর আমরা জানতে পারি যে অক্টোবরের প্যাকেজটি উনারা বাতিল করে দিয়েছেন।

এই কথা শোনার পর আমি একরকম ভেঙেই পড়ি। আমার হাতে তখনও উমরাহ সম্পর্কিত একটা বই ছিল। যদিও আমি জানতাম, এটা আল্লাহর ফয়সালা, তবু অদ্ভুত এক কষ্টে আমি একদম চুপচাপ হয়ে যাই।

আমার হাসব্যান্ড আমার কষ্ট দেখে আবারও নানা জায়গায় খোঁজ নেয়া শুরু করে। আসলে সে নিজেও অক্টোবর বাদ দিয়ে ফেব্রুয়ারির পর যেতে চাচ্ছিল, কিন্তু আমার মুখের দিকে তাকিয়ে নাকি সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে, যেটা আমি পরে জানতে পারি।

এরপর আবারও আমাদের সুবিধামত তারিখের মধ্যে আরেকটি পরিচিত এজেন্সি আল্লাহ মিলিয়ে দেন, আলহামদুলিল্লাহ। পরিচিত এক আপুর হাসবেন্ড এই এজেন্সি পরিচালনা করেন। পরিচিত অনেকের ভালো রিভিউ আগে থেকেই জানতাম।

কিন্তু সমস্যা একটাই যে উনাদের মূল দলটি ট্রানজিট ফ্লাইটের, সেটা আমার শ্বশুরের জন্য কষ্টকর হয়ে যাবে। ডিরেক্ট ফ্লাইট উনারা ব্যবস্থা করে দিতে হয়তো পারবেন, কিন্তু তাতে গাইড থাকবে না।

আমরা আবার দোটানায় পড়ে যাই। এদিকে হাতে সময় নেই। একদিনের ভেতর কনফার্ম করতে হবে। পরিচিত কয়জনের সাথে কথা বলায় পরামর্শ দিলো গাইড ছাড়া না যেতে, যেহেতু আমরা কেউ আগে উমরাহ দূরে থাক, বিদেশেও যাইনি। আবার ট্রানজিট ফ্লাইটে যাওয়ার বিষয়ে সেই আপুকে জিজ্ঞেস করলে বয়স্ক মানুষ থাকায় উনি নিজেই নিরুৎসাহিত করলেন।

রৌদ্রময়ী

16 Nov, 02:13


এমন সময় আরেকটি এজেন্সির ফেসবুক পোস্ট আমার চোখে পড়লো। তাদের আগে থেকে ফলো করতাম, কিন্তু পরিচিত না হওয়ায় কখনো তাদের কথা হাসবেন্ডকে বলিনি।

তাদের প্যাকেজ সবদিক থেকে আমাদের জন্য উপযুক্ত ছিল। আমার হাসবেন্ড দ্রুতই তাদের সাথে কথা বলে সিদ্ধান্ত নিয়ে নেয় আর আমাকে অবাক করে দিয়ে পরদিন দুপুরেই বুকিং মানি নিয়ে রওনা দিয়ে দেয়।

আমার হাসবেন্ড টাকা নিয়ে বের হয়ে যাওয়ার পর আপনজনেরা আমাকে কল দিয়ে বলতে থাকে যে বেশি করে দুআ করতে, কারণ অনেক রকম ভুয়া এজেন্সিও নাকি আজকাল আছে। এরপর থেকে আমার মনেও ভয় কাজ করতে থাকে। আমি আল্লাহকে বেশি করে ডাকতে থাকি।

কিছুক্ষণ পর আমার হাসবেন্ডকে ফোন দিয়ে অবশ্য আমি নিশ্চিন্ত হই। ভুয়া এজেন্সি হলে এক দেখায় চিনতে পারতো। ওর কথা শুনে বুঝলাম ও সন্তুষ্ট, আলহামদুলিল্লাহ। তারা আবার বয়স্ক মানুষ শুনে তাদের প্যাকেজের হোটেলের বদলে কাছের হোটেল চুজ করতে বলে, এতে একটু বাড়তি খরচ হবে যদিও।

হোটেল বাছাই করতে করতে অনেক রাত হয়ে যায়, হাসবেন্ডের ফোনের চার্জও শেষ হয়ে যায়। আবার শুরু হয় ঝুম বৃষ্টি। উনারা পাসপোর্ট স্ক্যান করার পথে কারেন্টও চলে যায়। সব মিলিয়ে আমার হাসবেন্ড সেখানে আটকে যায়। আবার শুরু হয় আমার দুশ্চিন্তা।

হাসবেন্ড যখন উনাদের অফিস থেকে বের হয় তখন বাজে রাত ১১:০০টা। রাস্তায় এক হাঁটু পানি। ওর ভেতরেই অনেকটা পথ হাঁটতে হয়। পরে এজেন্সির লোকেরাই অনেকটা পথ নিজেদের গাড়িতে করে লিফট দেয়। এরপর ও রিক্সা নিয়ে বাসায় ফেরে।

বাসায় ফেরার পর ও বর্ণনা দিচ্ছিল কত কষ্ট হয়েছে আজকে। আমি মনে মনে দুআ করলাম, আল্লাহ যেন নেক উদ্দেশ্যে করা এই কষ্ট কবুল করে নেন। ওকে একটা কথা বললাম, যেটা কিনা আগেও বহুবার বলেছি-

"এ জীবনে আজ পর্যন্ত আমি কোন কিছু যেমনটা ভেবেছি, তেমনটা কখনোই হয়নি। তবে শেষ পর্যন্ত যা হয়, সেটা আমার জন্য সবচেয়ে উত্তম হয়। তাই আমি আল্লাহর পরিকল্পনার উপর ভরসা রাখছি।"

পরদিন থেকে আমরা পুরো দমে উমরাহর প্রস্তুতি নিতে থাকি। কিন্তু আবার ঝামেলার মুখে পড়ি ভিসা নিয়ে। নতুন নিয়ম অনুযায়ী প্রতি যাত্রীর পাসর্পোট, ছবি, ফিঙ্গারপ্রিন্ট একটি এপের মাধ্যমে রেজিস্টার করতে হবে।

আমার ফিঙ্গারপ্রিন্ট দুদিন ধরে অনেক চেষ্টার পর আপডেট করা সম্ভব হয়। কিন্তু বয়সের কারণে আমার শ্বশুর ও শ্বাশুড়ির ফিঙ্গারপ্রিন্ট কোন ভাবেই এপে আপডেট করা যাচ্ছিল না।

টানা চারদিন অসংখ্যবার চেষ্টার পরেও আমার দেবর উনাদের ফিঙ্গারপ্রিন্ট স্ক্যান করতে সক্ষম হচ্ছিল না। তখন আমি হাসবেন্ডকে পরামর্শ দেই স্থানীয় কোন এজেন্সির খোঁজ করতে, হয়তো তারা একটু ইহসান করতে পারবে আমাদের।

বেশ কয়েকটি স্থানীয় এজেন্সির সাথে যোগাযোগ করেও কোনো লাভ হলো না, একেক জন একেক কথা বলে ফোন কেটে দিলো। আমার হাসবেন্ড তখন আমাকে বলল, "আর তুমি কিনা ভাবো দাড়ি-টুপি থাকলেই মানুষ ভালো হয়ে যায়!"

আমার মাথাটা আসলেই হেট হয়ে গেলো। তবু আমি পরিচিত অনেকের কাছে সাহায্যের আশায় নক দিলাম। আরো কিছু এজেন্সির সন্ধান নিলাম। কিছুক্ষণ পর শুনলাম এক এজেন্সির অফিসে গিয়ে ফিঙ্গারপ্রিন্ট স্ক্যান করা গিয়েছে, আলহামদুলিল্লাহ!

যাক, আবার নিশ্চিন্ত হয়ে উমরাহর বই খুলে বসার ফুরসত পাওয়া গেলো। কিন্তু না, কিছুক্ষন পরই হাসবেন্ড কল দিলো ও জানালো- যেই এজেন্সির সাথে কথা পাকা করা হয়েছিল, উনারা একটি বিশেষ কারণে অক্টোবরের ১৬ তারিখে যেতে পারছেন না। উনারা আরো ৬দিন পর যাবেন, যেটা আমাদের পক্ষে আবার সম্ভব না।

আমি কেন জানি এবার কষ্ট পেলাম না, অবাকও হতে পারলাম না। মনটা কেমন এক শূন্যতার মধ্যে ঘুরপাক খেতে থাকলো।

হঠাৎ মনে পড়ল কয়দিন আগে উমরাহয় নিবো বলে একটি আবায়া ছোট করতে দিয়েছিলাম এখানকার এক টেইলর আপাকে। উনি আমাদের উমরাহর নিয়তের কথা শুনে নিজের হজ্জের কিছু অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছিলেন, আর শীঘ্রই আবার উমরাহ করার ইচ্ছার কথা বলেছিলেন। অথচ উনার সংসারের টানাপোড়েন আমার অজানা না।

আমার তখন মনে হলো, হয়তো আল্লাহর ঘরে মেহমান হওয়ার আমন্ত্রণপত্র আসমান হতে আমার নামে এখনো নাযিল হয়নি। এজন্যই সকল সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও আমি যেতে পারছি না।

আমি পড়ন্ত বিকালের আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকলাম আর বললাম, "ইয়া আল্লাহ, যেদিন আমার জন্য সবচেয়ে উত্তম আপনি সেদিনই আমাকে আপনার ঘরের মেহমান করে নিন। নিশ্চয়ই আপনি আমাকে এ বিষয়ে সবরকারী হিসেবে পাবেন।"

চলবে...

উমরাহর প্রস্তুতি
বিনতে আবদুল্লাহ

#বাইতুল্লাহর_মেহমান (পর্ব ১)
রৌদ্রময়ী

রৌদ্রময়ী

15 Nov, 13:01


বিবাহিতা আপুদের বলার মত তেমন কিছু নেই আমার থলেতে, আমি নিজেই নববিবাহিতা, খুব একটা ভাবার মত সময় পাইনি বা আসেনি। তবুও সামান্যকিছু উপলব্ধি করলাম দুই বছরের এই স্বল্প সময়ে। 


স্বামীর আয়ের উপরে সন্তুষ্ট থাকবেন, আপনার জন্য বরাদ্দ রিজিকটুকুই আপনি পাবেন, তাই অসন্তোষ প্রকাশ করে লাভ নেই। দোয়া জারী রাখবেন যেন—আফিয়্যাতের সাথে দারিদ্রমুক্ত রাখেন রাব্ব। এবং সবসময় প্রতি নামাজের পর দোয়া করবেন,  আল্লাহ পাক যেন মৃত্যু পর্যন্ত স্বামীর চক্ষু শীতলকারী বানিয়ে রাখেন। 


শ্বশুরবাড়ীর লোকদেরকে অনেক মেয়েরাই মুহাব্বত করেনা বা করতে পারেনা চাইলেও, সেক্ষেত্রে একজন মু'মিন আর প্রিয়জনের আপনজন হিসেবে সম্মান করা যেতে পারে।  স্বামীর কাছে তাঁর ফ্যামিলি থেকে  দৈনন্দিন পাওয়া কষ্টগুলোকে অভিযোগের সুরে না বলে,  দুঃখী মনে শেয়ার করতে পারেন। এতে করে আপনার প্রতি তাঁর মায়া-মুহাব্বাত, সম্মান আরও বেড়ে যেতে পারে, এবং পাশাপাশি ফ্যামিলিতে ঝামেলা না বাড়িয়ে সুন্দরভাবে ব্যালেন্স করে নিতে সুবিধা হবে। যদিও ব্যক্তি এবং পরিস্থিতি ভেদে ভিন্নরকম হতে পারে। 


যদি স্বামীর সাথে সংসার করে যেতে চান, তবে স্বামীর দোষ-ত্রুটিগুলো, ঝগড়া-মনোমালিন্যের বিষয়গুলো সর্বোচ্চ গোপন রাখবেন। কারণ,  আপনার স্বামীর দোষগুলো মুহাব্বাতে ডুবে গেলে আপনি ভুলে যাবেন, তবে অন্যের কাছে আপনার স্বামী সর্বদা ছোট হয়ে থাকবে। এটা নিশ্চয়ই কোনো স্ত্রীর কাছে ভালো লাগবেনা!  তবে, বেশি সমস্যা হলে সমঝদার, বয়স্ক, ঠান্ডা মেজাজের কারো কাছে শেয়ার করবেন, যেন তিনি আপনাকে সবচেয়ে সুন্দর বুদ্ধিটি দিতে পারে। রাগী, উস্কিয়ে দিবে, সমবয়সী এমন কারো সাথে শেয়ার না করাই উত্তম। 


নিজেদের সমস্যাগুলো দ্রুত নিজেরাই মিটিয়ে ফেলবেন, তৃতীয় পক্ষকে না জানানোর সর্বাত্মক চেষ্টা করবেন। আপনার পার্টনারকে আপনি যতটুকু বুঝবেন, চিনবেন, ছাড় দিবেন ততটুকু দুনিয়ায় আর কেউ করবেনা। মনে রাখবেন, আল্লাহর কাছে সবচেয়ে নিকৃষ্টতর হালাল কাজ হচ্ছে, ‘তালাক।’  তাই প্রিয়জনকে মায়ায় আঁকড়ে রাখবেন জান্নাত পর্যন্ত।  সবসময় দোয়ায় রাখবেন যেন জান্নাতেও আল্লাহ পাক এই মানুষটির সাথে একত্রিত রাখেন। এই সম্পর্কটাই পৃথিবীর সবচেয়ে প্রথম সম্পর্ক,  এবং মৃত্যুর আগে প্রতিটি মানুষের বার্ধক্যের অসহায় সময়ে এই সম্পর্কটাই সবচেয়ে মায়াময় হয়। 


স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক সুন্দর রাখতে,  দুজন দুজনকে সম্মান করবেন, কথার গুরুত্ব দিবেন, সবসময় বুঝাবেন আপনি বেস্ট, স্পেশাল ফিল করাবেন এভাবে যেন তাঁরচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কেউ নেই আপনার জীবনে। গিফট দিবেন, ফুল দিবেন, চিরকুট দিবেন, ভালোবাসা ব্যক্ত করবেন, পছন্দের খাবার রান্না করবেন, কেয়ার করবেন, খাইয়ে দিবেন। দুজন দুজনের ফ্যামিলি এবং রিলেটিভকে সম্মান করবেন। অসম্মানজনক কথাবার্তা বলবেননা। প্রতিটি মানুষ তার পরিবারকে অনেক ভালোবাসে। আপনি ভালোবাসতে না পারলে না বাসুন, মন থেকে সম্মান না আসলে না করুন, তবে অসম্মান যেন না হয়! 


বিশ্বাস করেন, এইসব খুটিনাটি বিষয়গুলো দাম্পত্য জীবনে অনেক বড়বড় সমস্যা সমাধান করে দিবে। ছোট মানুষ আমি, সামান্য অভিজ্ঞতা থেকে যা পেয়েছি, বুঝেছি তাই লিখলাম। সবার মতামতের সাথে মিলবেনা হয়তো, তবুও দুঃসাহস করে লিখে ফেললাম।

দৃঢ় বন্ধন
সাদিয়া আফরিন

রৌদ্রময়ী

রৌদ্রময়ী

14 Nov, 14:10


কাচ্চি রান্না করেছেন কখনো বাসায়? একেবারে আসল জাফরান দুধে ভিজিয়ে, বাসমতি চাল, কয়েক পদের কিশমিশ, বাদাম, বেরেস্তা, ঘি, জায়ফল-জয়িত্রী, গোলাপজল, কেওড়াজল দিয়ে? বেশ রাজকীয় একটা ব্যাপার না? দুআটাও হতে হবে তেমন। একেবারে স্বাদে, গন্ধে, রুপে অতুলনীয় বিরিয়ানির মতোন। তবেই না দুআ কবুলের সম্ভাবনা বাড়বে!


কিন্তু এরকম দুআ করা যায় কীভাবে? এরকম দুআ করতে গেলে কিছু ব্যাপার মাথায় রাখা দরকার। দুআ করার আদব, দুআ কবুলের সময় আর দৃঢ় বিশ্বাস তথা তাওয়াক্কুল। একটু ব্যাখ্যা করি?


প্রথমত দুআ করার আদব। এই আদবটা কেমন? আমি অল্প কথায় বলি নাহয়, মন্তব্যের ঘরে আমাদের রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জবানিতেও পেয়ে যাবেন ইনশাআল্লাহ। প্রথমে আল্লাহ তাআলার প্রশংসা, এরপর দুরুদ, তারপর নিজের গুনাহের জন্য মাফ চেয়ে শেষে গিয়ে আসল কথা পাড়বেন। এখন এই আদব মানলে তো দুআ কবুলের সম্ভাবনা বাড়বেই। কিন্তু আরো বাড়াবো কেমনে?


এসবেরও সেরাটা বেছে নিয়ে। অর্থাৎ আল্লাহ তাআলার প্রশংসা করার জন্য ইসমে আজম, আয়াতুল কুরসি, তবে সূরা ফাতিহা পড়লেও চলবে বা অন্য যেকোনো প্রসংশাসূচক বাক্য তবে মাসনুন দুআ সবসময়ই সেরার সেরা। আর দুরুদ? সেটা কি দুরূদে ইব্রাহিমের ধারে কাছে হয় কোনোটা? হয় না! আর মাফ চাইবোও আমরা ইস্তিগফারের নেতা নেতা দুআ দিয়ে। অর্থাৎ সাইয়্যেদুল ইস্তিগফার তথা ইস্তিগফারের নেতা। তাহলে রবের জন্য সেরা প্রশংসা, তাঁর রাসুলের ﷺ জন্য সেরা দুরুদ আর নিজের জন্য সেরা ইস্তিগফার।


এরপর দুআর ভাষাটাও অবশ্য জরুরি, সেটাও ধার করবেন আমাদের নবীজীর ﷺ থেকে, বা অন্যান্য নবী রাসুল আলাইহিমুস সালাম থেকে। অল্প কথায় বিশাল দুআ করতে তাঁরা ছিলেন সিদ্ধহস্ত! তাছাড়া, অনলাইনে কিছু বোনেরা বিস্তারিত দুআ করেন না? ওগুলোও টুকে রাখতে পারেন ইনশাআল্লাহ।


আর কী বলেন তো? সময় রে বাবা, সময়! দুআ কবুলের সময়গুলো হচ্ছে, শেষ রাতে তাহাজ্জুদের সময়ে, বৃষ্টি চলাকালীন, সফররত বা রোজাদার অবস্থায়, শুক্রবার আসর ও মাগরিবের মধ্যবর্তী সময়ে। তাছাড়াও রোজ পাঁচ ওয়াক্ত আজান দেয় না? সেসব আজান আর ইকামতের মধ্যবর্তী সময়েও দুআ কবুল হয়। কিছু ছুটে গেলে বাকি বোনেরা বলে দিয়েন তো। ওহ আচ্ছা ভুলে গেছি, রমাদান! সেসময়েও দুআ কবুল হয় তো আলহামদুলিল্লাহ।


এখন থেকে বৃষ্টি হলে ভুলেও মোবাইল হাতে নিবেন না, আর আজান দিলেই হাত থেকে সে বস্তু ফেলে দিয়ে দুআয় লেগে যাবেন, কেমন?


আচ্ছা তাহলে সেরা সেরা সেরা দুআ করবেন কীভাবে? ধরেন মিসওয়াক+ অযু করে আসরের নামাজ পড়লেন শুক্রবার আবার আগেরদিন বৃহস্পতিবার/ শনিবার রোজা রাখাতে আজকেও রোজা রাখছেন এরপর দুআ করবেন যেভাবে বললাম। এতে আপনি হবেন রোজাদার, শুক্রবারে আসর মাগরিবের মধ্যবর্তী সময়, অযু, মিসওয়াক, আতর, আরো ইসমে আজম, দুরুদে ইব্রাহিম, সাইয়্যেদুল ইস্তিগফার! আর মনে রবের প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস আর কান্নাকাটি! এত্ত অসাধারণ দুআ পাবেন কোথায় বলেন তো!


আচ্ছা, কিন্তু যখন জরুরি দুআ লাগবে তখন? এত কিছুর সময় না পেলে? যখন গায়রে মাহরাম চলে আসছে, পর্দার খেলাপের সম্ভাবনা তুঙ্গে তখন? সেই আলাপ পাবেন সামনের বৃহস্পতিবার ইনশাআল্লাহ বোনেরা।


কাচ্চির মতো দুআ
জিলফাত ফারহা

#বেদ্বীন_পরিবারে_দ্বীন_পালন
পর্ব ৩
রৌদ্রময়ী

রৌদ্রময়ী

13 Nov, 12:31


মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল— বিগত ১৫/১৬ বছরে যে প্রতিষ্ঠানটাতেই ছিটেফোঁটা ইসলামেরই ছিলো, সেটাই খুব গুরুত্বের সাথে নষ্ট করা হয়েছে।

আর এই নষ্টের কঠিন আঘাত ধর্মপ্রাণ মধ্যবিত্তের প্রিয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান মতিঝিল আইডিয়ালকে ছাড় দেয়নি।

পরিবর্তন যেহেতু একটু একটু করে এসেছে, অনেকেই জানেনা মতিঝিলের একটা শাপলা ফুলকে কিভাবে গোবর মাখানো হয়েছে।

আমি ২০ বছর আগের পরের আইডিয়ালের অবস্থা বলছি।

এই স্কুলের সকাল হতো এসেম্বলির মাধ্যমে। এসেম্বলিতে কুরআন , জাতীয় সংগীত, শপথ পাঠ হতো। শপথে শিক্ষার্থীরা আল্লাহর কাছে শক্তি চাইতো। নতুন শপথে শিক্ষার্থীরা ছয় লাইনের একটা শপথে দুইবার একজন রাজনৈতিক নেতার গুণগান করতো।

স্কুলের ইউনিফর্ম ছিলো মেয়েদের জন্য বড় ওড়না দিয়ে মাথা ঢেকে রাখা, গোল ফ্রক। ছেলেদের টুপি। এই স্কুলে কয়েকবছর আগে হিজাব নিষিদ্ধ করা হয়। মেয়েদের এসেম্বলিতে হিজাব বড় ওড়না ছাড়া ছবি সোশাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়।

এই নিয়ে অভিভাবকদের এবং সোশাল মিডিয়ায় তুমুল সমালোচনা শুরু হলে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়, কেউ চাইলে বড় ওড়না পরবে, না চাইলে পরবেনা এই নিয়ম করা হয়।

আপনি আর কোনো স্কুলের ইউনিফর্ম নিয়ে এমন হস্তক্ষেপ দেখেছেন?

অনেক বাবা-মা পরিবার আছেন, বাসায় ধর্মীয় অনুশাসন না মানলেও সন্তানকে মূল্যবোধ শেখাতে আইডিয়ালে দিতেন। সেই মূল্যবোধ আর ধর্মীয় শিক্ষা ধুয়ে মুছে ফেলে দেওয়া হয়েছে।

আগে মেয়েদের ক্লাস টাইমে ছেলেদের প্রবেশ আর ছেলেদের ক্লাস টাইমে মেয়েদের প্রবেশের ব্যাপারে কড়াকড়ি ছিলো। প্রপার ইউনিফর্ম ছাড়া ছাত্রছাত্রীদের স্কুলে প্রবেশ নিষিদ্ধ ছিলো। সেই আইডিয়ালে স্পোর্টস ইউনিফর্ম পরা (জার্সি, ট্রাউজার) মেয়েদের প্রবেশ, ডে পিরিয়ডে নরমাল।

আইডিয়ালের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে গান গাইলে খালি গলায় গাওয়া হতো, সেখানে ডিজে ডেকে ছেলে মেয়ে এক সাথে অনুষ্ঠান করতে পারে।

আপনি বলতেই পারেন, এখন এসব নরমাল। কম্বাইন্ড স্কুলে এগুলো হরহামেশা হয়। আপনাদের মনে করিয়ে দেই, আইডিয়াল কম্বাইন্ড স্কুল না। যাদের কম্বাইন্ডে দেওয়ার ইচ্ছা নেই, তারাই আইডিয়ালে বাচ্চাকে দেয়।

আইডিয়ালে ইসলাম ধর্মের সাথে আরবি ভাষা শিক্ষা বাধ্যতামূলক ছিলো। এখন আরবি ভাষার বইটি একদম বাদ দেওয়া হয়েছে।

ডে শিফটে ছেলেদের ক্লাস নিতে নারী শিক্ষিকা নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। একটি কমন রুমে নারী এবং পুরুষ শিক্ষকদের একসাথে বসার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

আগে সব ছেলেদের জোহরের নামাজ বাধ্যতামূলক থাকলেও মতিঝিল ব্র‍্যাঞ্চে এখন শুধুমাত্র বড় ক্লাসের বাচ্চাদের নামাজে যেতে দেওয়া হয়। বাকি বাচ্চাদের কাজা করতে বাধ্য করা হয়, লুকিয়ে নামাজ পরতে যেয়ে পানিশমেন্ট, বকাঝকার ঘটনাও ঘটে।

এখন বলতে পারেন, এত সমস্যা হলে বাচ্চাকে মাদ্রাসায় দেন, স্কুলে কেন।

কেন স্কুলে নয়? কেনো
মুসলিম প্রধান একটি দেশে ধর্মীয় মূল্যবোধ সম্পন্ন স্কুলটিই নষ্ট করা হলো? এতই নষ্ট যে গভর্নিং বডির মেম্বার কলেজের মেয়ের সাথে প্রেম করার সুযোগ পায়, কলেজের প্রিন্সিপাল সেই সম্পর্ক মদদ দেয়?

মিশনারী স্কুলগুলোতে তো এমন হস্তক্ষেপ দেখা যায় না। সব খড়্গ আমাদের উপরেই কেনো?

মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল এন্ড কলেজ
বিন্তে ইব্রাহীম

রৌদ্রময়ী

রৌদ্রময়ী

12 Nov, 12:32


খেয়াল করলে দেখবেন যে উনার প্রতিটি কাজের বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা আছে। বিজ্ঞানীরা আজ এসব নিয়ে গবেষণা করছেন এবং এসব ম্যানার্স পালনের ফলে মানুষের শারীরিক সুস্থতা যে বজায় থাকে সেটা গবেষকেরা বের করছেন।

তবে মুমিন ব্যক্তি গবেষকদের গবেষণার জন্য বসে থাকেন না, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে ভালোবেসেই এই ম্যানার্সগুলো মেনে চলেন।

টেবিল ম্যানার্স
তাহনিয়া ইসলাম খান

রৌদ্রময়ী_প্রবন্ধ

রৌদ্রময়ী

12 Nov, 12:32


মানুষের প্রতিটা কাজের মাঝেই একটা আর্ট আছে। সেই আর্টের উনিশ-বিশের কারণেই কাজের সৌন্দর্যগুন বাড়ে বা কমে।

ছোটবেলায় টেবিল ম্যানার্স শেখানোর সময় আমাদের বলা হয়েছিল খাবার মাখার সময় আংগুলের এক করা দাগের বাইরে খাবার যেনো না যায়।

প্লেটের একটা নির্দিষ্ট গণ্ডির বাইরে খাবার মাখা যাবে না। খাবার সময় মুখের এবং চামচের কোনো সাউন্ড হবে না। এঁটো হাতে কোনো জিনিস ধরা যাবে না।

পানি খাওয়ার সময় ঢকঢক আওয়াজ করা যাবে না। চা পান করার সময় সুরুত সুরুত করে আওয়াজ করা যাবে না।

প্লেটে হাত ধোয়া যাবে না, দাত খুঁচানো যাবে না, মুখে আঙুল ঢুকানো যাবে না, জিহ্বা বের করে খাওয়া যাবে না, খাওয়ার সময় মুখে খাবার নিয়ে উচ্চস্বরে কথা বলা বা হাসা যাবে না, থু করে মুখ থেকে এখানে সেখানে কিছু ফেলা যাবে না।

ইত্যাদি হাজারটা নিয়ম শিখতে হয়েছিল।আলহামদুলিল্লাহ্‌ নিজের বাচ্চাদেরকেও এসব শেখানোর চেষ্টা করেছি। এসব না মানা মানে আমাদের কাছে ব্যাড ম্যানার্স।

চামচ বা প্লেট ধরার স্টাইল বা খাবার সার্ভ করার ম্যানার্স, কোন প্লেটে কোন খাবার সার্ভ করা, কোন চামচ দিয়ে কী সার্ভ করতে হবে, এমনকি শুধু এক গ্লাস পানি দেওয়ার সময় পানির গ্লাসের নিচে যে ছোট প্লেট বা পিরিচ বা ট্রে তে আনতে হয় এসব খুঁটিনাটি জিনিস আমাদের শেখানো হয়েছিল।

আমাদের ছোটবেলায় দেখেছি এসব ম্যানার্স তখন মধ্যবিত্ত বা উচ্চবিত্তরা ভালোই মেনে চলতো। ক্ষেত্রবিশেষে নিম্নবিত্তরাও মেনে চলতো।

কিন্তু এখন মানুষের অনেক টাকাপয়সা, বড় চাকরি করে, দামি জামাকাপড় গায়ে, রেস্টুরেন্টে গিয়ে খায়, কী মধ্যবিত্ত বা কী উচ্চবিত্ত, কোনো টেবিল ম্যানার্সই জানে না।

কোট টাই গায়ে, চকচকে জুতা পায়ে দেয়া একজন উচ্চপদস্থ কোনো লোক যদি খাওয়ার সময় কাটা ফেলার প্লেটে কাটা না ফেলে টেবিলে কাটা ফেলে, কুলি কুচি করে গলা খাকরে পানি খেয়ে হাতটা খাবার প্লেটে ধুয়ে ফেলে তখন ইচ্ছে হয় কানে ধরে টেবিল ম্যানার্স শিখিয়ে দেই।

আমি যখন স্কুলে বাচ্চাদের পড়াতাম, তখন বেশ কিছুদিন প্লে-গ্রুপের ক্লাস টিচার ছিলাম। দুনিয়াতে বাচ্চাদের মানুষ করা সবচেয়ে কঠিন কাজ।

কী সে নিজের বাচ্চা হোক বা অন্যের বাচ্চা হোক। সেই সময় একটা ছোট্ট বাচ্চা, প্লে-গ্রুপের বাচ্চা আর কত বড় হবে, খুব বেশী হলে ৪ বছর হবে। সে যখন টিফিন টাইমে টিফিন খেতো আমি অবাক হতাম। তার মা'কে স্যালুট দিতে ইচ্ছে করতো।

টিফিনের সময় শান্ত হয়ে বাচ্চাটা ব্যাগ থেকে একটা লাল সাদা চেক ন্যাপকিন টেবিলে বিছাতো। এরপর টিফিন বক্স আর ফ্লাক্সটা সেই ন্যাপকিনের উপর রাখতো। এরপর বক্স খুলে রুটি ছিড়ে আলু ভাজি দিয়ে রুটি মুখে দেওয়ার সময় জোড়ে বলতো 'বিসমিল্লাহ্‌'। বেশিরভাগ দিন সে আলু ভাজি আর রুটি নিয়ে আসতো।

আরেকটা ঘটনা বলি আমাদের ছুটা বুয়ার। সে বাসা থেকে ভাত নিয়ে আসে। তার ভাত তরকারী সে খুব সুন্দর করে গুছিয়ে টিফিন বক্সে আনে। খাওয়ার সময় পানির গ্লাস নিয়ে বসে, কাটা ময়লা সে কখনো ফ্লোরে ফেলে না। তার খাওয়া, বসার স্টাইল সব গুছানো এবং রুচিসম্মত। এটা না দেখলে বুঝানো যাবে না।

এই যে বাচ্চাটা বা বুয়ার কথা বললাম, এরা কিন্তু এসব পরিবার থেকেই শিখে এসেছে। মানুষের এসব আচার আচরণ দেখলে বুঝা যায় তার পরিবার কেমন, তার বেড়ে উঠা কেমন পরিবেশে হয়েছে।

এমনকি ধর্মীয় ভাবেও এসব ম্যানার্স মানার কথা আছে। পানি কিভাবে খেতে হবে, খাবার নেওয়ার সময় কিভাবে খাবার নিতে হবে, খুব গরম খাবার মুখে দেওয়া যাবে না, এমন খুঁটিনাটি জিনিস রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের শিখিয়ে দিয়ে গিয়েছেন।

কিছু মানুষের আচরণ দেখলে মনে হয়, এসব ম্যানার্স না মানাটাই বুঝি খুব বড় ক্রেডিট। জ্বী না, সেটা বড় ডিসক্রেডিট।

এখন আসুন জেনে নেই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিভাবে ম্যানার্স গুলো মেনে চলতেন এবং অন্যদেরকেও সেসব মেনে চলতে বলতেন।

খাবার খাওয়ার আগে জেনে নেওয়া যে, খাবার কোথা থেকে এসেছে এবং সেটা কী ধরনের খাবার।

বিসমিল্লাহ বলে খাওয়া শুরু করা।

ডান হাতে খাওয়া।

পুরো প্লেট ঘাটাঘাটি না করে, প্লেটের সামনে যা আছে সেখান থেকে খাবার নেওয়া।

খাওয়ার পরে হাতের আংগুল চেটে খাওয়া, প্লেট মুছে খাওয়া এবং হাত ধোঁয়া।

যিনি দাওয়াত দিয়ে খাওয়ান, তার জন্য দু'আ করা।

খাবার নিচে পড়ে গেলে সেটা পরিষ্কার করে খেয়ে ফেলা।

খাওয়া শেষে আলহামদুলিল্লাহ বলা।

খাবারের সমালোচনা না করা। ভালো লাগলে খাবে, না ভালো লাগলে খাবে না।

হালাল খাবার খাওয়া, হারাম খাবার না খাওয়া।

পুরো পেট ভরে না খাওয়া, পেটের তিন ভাগের এক ভাগ পানি, এক ভাগ খাবার আর এক ভাগ খালি রাখা।

সোনা ও রূপার থালাবাসন, গ্লাস, চামচ ব্যবহার না করা।

খাওয়ার সময় হেলান না দিয়ে খাওয়া।

প্রচন্ড গরম খাবার না খাওয়া। খাবারে বা যে কোনো পানীয়তে ফুঁ না দেওয়া।

পানি খাওয়ার সময় তিন নিঃশ্বাসে পানি খাওয়া। নিঃশ্বাস গ্লাসে না ফেলা।

বোতলে বা জগে মুখ লাগিয়ে পানি পান না করা।

পানি বা অন্যান্য পানীয় পান করার পর অন্যজনকে দিতে হলে ডান পাশের জনকে আগে দেওয়া।

রৌদ্রময়ী

11 Nov, 16:20


এই প্রজন্মের ছাত্রদের একটা বিষয় আমাকে ব্যক্তিগতভাবে আশাবাদী করে তোলে যে, তারা Right and Wrong এর পার্থক্যটা খুব দ্রুত identify করতে এবং সেই অনুযায়ী প্রতিবাদ করতে শিখে গেছে।

এর সর্বশেষ প্রমাণ গতকাল ফারুকীকে উপদেষ্টা করার পর ওদের প্রতিক্রিয়া।

আপাতদৃষ্টিতে মনে হয় ফারুকী-তিশা নতুন প্রজন্মের কাছে খুব জনপ্রিয়, কিন্তু ওদের আসল রূপটা যে নতুন প্রজন্ম ধরতে পেরেছে তা গতকাল ওদের প্রতিক্রিয়া থেকে বুঝতে পারলাম এবং খুব ভালো লাগল।

হয়তো আজকে ওদের প্রতিবাদে উপদেষ্টারা পরিবর্তন হবে না, তবে পরিবর্তন করার জন্য প্রথম যে পদক্ষেপ— “সত্য-মিথ্যার পার্থক্য নির্ণয় করতে পারা” তা যে ওরা করতে পারছে, এটাই বা কম কী?

এভাবেই একদিন নতুন প্রজন্মের হাত ধরে এদেশ সঠিক পথে এগিয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ।

আমি সবসময়ই আশাবাদী মানুষ, হতাশা থেকে নতুন করে স্বপ্ন দেখতে এবং তা বাস্তবায়ন করার উদ্যোগ নিতে পছন্দ করি, সেটা ব্যক্তিজীবন থেকে রাষ্ট্রীয় জীবন পর্যন্ত সবক্ষেত্রেই।

নতুন প্রজন্মের জন্য অনেক অনেক দুআ, আল্লাহ যেন ওদের হেফাজত করেন।

Banned
হাবিবা মোবাশ্বেরা

রৌদ্রময়ী

রৌদ্রময়ী

11 Nov, 12:31


স্কুল লাইফে আমার এক ক্লাসমেটের আম্মু নিজের মেয়ের সাথে আমাকে এক অসুস্থ রকমের প্রতিযোগিতায় নামিয়ে দিয়েছিলেন৷

প্রতি এক্সামের মার্ক্স দিলে উনি আগে জিজ্ঞেস করতো 'পাপড়ি কত পাইছে?' নিজের মেয়ে একশতম হলেও উনার চিন্তা থাকতো আমি কি উনার মেয়ের আগে না পিছে!

ক্যাডেট কলেজে চান্স পাবার পর উনি আম্মুর ফোন নাম্বার রেখে বলছিলেন যে ছয় বছর পর নাকি উনি আম্মুকে ফোন দিয়ে জিজ্ঞেস করবেন আমি কোথায় চান্স পেয়েছি।

এবং অবিশ্বাস্য হলেও সত্য, উনি আম্মুকে এডমিশন টেস্টের পর ফোন দিয়েছিলেন এটা জানার জন্য যে আমি কোথায় এডমিশন নিচ্ছি!

আমি সত্যিই জানিনা, একজন প্রাপ্তবয়স্ক মহি লা কেন দশ এগারো বছরের এক বালিকার রেজাল্টের পিছনে পড়ে ছিলেন। তবে সত্যি বলতে উনিই একমাত্র গার্জিয়ান নন, আমাদের জেনারেশনের অধিকাংশ ছেলেমেয়েদের এরকম কোনো না কোনো অঘোষিত কম্পিটিটর ছিল, হোক সেটা স্কুলে বা ফ্যামিলির কোনো কাজিনের সাথে৷

এভাবে গোটা দুইটা জেনারেশন নিজেদের কোনো এচিভমেন্ট তো এঞ্জয় করতে পারেনাই তো নাইই, এমনকি অন্যের কোনো এচিভমেন্টও খুশিমনে এক্সেপ্ট করতে পারেনাই।

এভাবে দুইটা জিনিস হয়— এক, আল্লাহ যা দিয়েছেন তাতে সন্তুষ্ট থাকা যায় না। এটা খুব বড় অকৃতজ্ঞতা, এটাই জীবনে বারাকাহ কমানোর জন্য অনেকাংশে দায়ী। আল্লাহ বলেছেন তুমি যদি কৃতজ্ঞ থাকো তাহলে আমি তোমাকে আরো দেব, আর যদি অকৃতজ্ঞ হও তবে আমার শাস্তি ভয়াবহ! আর নিজের জীবন নিয়ে কখনোই সন্তুষ্ট থাকতে না পারার মত শাস্তি আর কী হতে পারে!

কুরআন কিন্তু কখনো সুখের মূলমন্ত্র দেয় না। কুরআনে কত উপদেশ আছে, যাতে আমরা চিন্তাশীল হতে পারি, সফলকাম হতে পারি, কৃতজ্ঞ হতে পারি।

কিন্তু আল্টিমেটলি দুনিয়ায় সুখী হতে পারা যাবে কী করলে সেটা আল্লাহ বলে দেন নাই। এমনকি জান্নাতে গেলেও যে আমরা সুখী হবো সেটা আল্লাহ বলেন নাই, বরং বলছেন আমরা সন্তুষ্ট হবো৷

জীবনে সুখী হবার আসল মূলমন্ত্র হলো সন্তুষ্ট থাকা, যা আমরা এরকম অসুস্থ কম্পিটিশনে হারিয়ে ফেলি। এজন্যই আল্লাহ বলেছেন অপরের রিযিকের সাথে নিজেরটা তুলনা না করতে। অথচ এই কম্প্যারিজনের চক্করে পড়ে আমরা হারিয়েছি শৈশবের কিছু সোনালী দিন।

আরেকটা যেটা হয় সেটা হলো— অহংকারী হয়ে উঠা। আমি অমুকের চেয়ে ভালো পজিশনে আছি এই মনোভাব মানুষকে শয়তানের যতটা কাছে নেয় ততটা আর কিছুতেই হয়না।

'আমি আগুনের তৈরী আর আদম মাটির তৈরী, সুতরাং আমি উত্তম' এটাই ছিল সৃষ্টিজগতের আদিমতম গুনাহ। এর কারণে শয়তান জান্নাত থেকে নয় বরং আল্লাহর রহমত ও ক্ষমা থেকে নির্বাসিত হয়েছিলো৷ তার ইগো তাকে ইভেন ক্ষমাপ্রার্থনা করতেও দেয়নি যদিও সে তখনকার সময়ের সবচেয়ে বড় ইবাদাতকারী ছিল।

সুতরাং আমি 'কারো চেয়ে' উত্তম - এই মনোভাব অনেক বড় ইবাদাতকারীর আমলও বিনষ্ট করে দিতে পারে। এই অহংকার ও ইগোর কারণে মানুষ ক্ষমাপ্রার্থনা ভুলে যায়। নিজের ভুল বুঝতে পারা ভুলে যায়। নিজেকে সংশোধন করা ভুলে যায়। কারণ তার মনে এই ধারণা গেড়ে বসেছে 'আমি তো উত্তমই, আমার ঠিক হবার কিছু নেই।'

যে কারণে এত বড় লেখা ফেঁদে বসলাম। ভাবছিলাম সেই হাদিসটার কথা যেখানে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন— আমাদের মাঝে কেউ প্রকৃত মুমিন হবেনা যতক্ষণ না সে তার ভাইয়ের জন্য তাই পছন্দ করে যা সে নিজের জন্যও পছন্দ করে।

এই একটা হাদিস আমাদের মধ্যেকার অসুস্থ প্রতিযোগিতা আর কম্প্যারিজনের খেলার মূলে কুঠারাঘাত করে। কিন্তু কেন?

মুমিন হবার জন্য আল্লাহ ও তার রাসূলে বিশ্বাস করা, নেক আমল করা জরুরি। তাদের সাথে একই কাতারে চলে আসছে 'নিজের ও ভাইয়ের জন্য একই জিনিস পছন্দ করা'।

আমরা যদি নিজের জন্য অন্য কারো চেয়ে ভালো চাই তাহলে চাওয়াটা কেমন শোনাবে?

'আল্লাহ আমাকে অমুকের চেয়ে বেশি বেতনের চাকরি দাও/ সন্তান দাও/ সম্পদ দাও/ সম্মান দাও....' এভাবে বলে আল্লাহ কাকে কতটুকু দিবেন, দিতে পারেন তা ডিক্টেট করার মত দুঃসাহস আমরা দেখিয়ে ফেলছি না?

কিংবা 'অমুকের ক্ষতি হোক / উন্নতি না হোক/ সমস্যা হোক/ চাওয়া পূরণ না হোক....' এরকম বলার সাথে আল্লাহর রহমত বা উত্তম রিযিক নেমে আসাকে বাধা দিতে চাওয়ার পার্থক্য আছে?

নাই তো। আল্লাহ হচ্ছেন আস সামাদ। অমুখাপেক্ষী। আল্লাহ কোনো সিদ্ধান্ত কারোর ভ্যালিডেশান পাওয়ার জন্য নেন না, কাউকে সন্তুষ্ট করার জন্য নেন না। কারো জন্য খারাপ চাওয়া বা নিজের জন্য 'অন্য কারো থেকে উত্তম চাওয়া'র মাধ্যমে মানুষ এভাবেই আল্লাহর ক্যাপাবিলিটিকে ছোট করে ফেলে— তাহলে সে আর প্রকৃত মুমিন রইলো কই?

বেসিক্যালি আমরা যখন অন্যের জন্য আর নিজের জন্য একই জিনিস চাই তখন ইনহেরেন্টলি স্বীকার করে নেই আল্লাহর কাছে আসলে আমরা সবাই সমান।

এই পৃথিবীতে হয়তো সম্মান সম্পদ বয়স অভিজ্ঞতায় আমরা অনেকের চেয়ে এগিয়ে বা পিছিয়ে আছি। কিন্তু আল্লাহর কাছে আমরা সবাই এক কাতারে— দাসের কাতারে আছি। আবদের কাতারে আছি। ঈমান আমল দিয়ে আগেপিছে যেতে পারি তবে গন্ডি একই।

এই উপলব্ধি যতক্ষণ না আসবে ততক্ষণ আমরা প্রকৃতপক্ষেই মুমিন হতে পারব না। আল্লাহ ও নিজের অবস্থান নিয়ে আমরা ক্লিয়ার হতে পারব না।

রৌদ্রময়ী

11 Nov, 12:31


নিজের জীবনকে এরূপ প্রতিযোগিতায় ফেলে আমরা নিজেরাই নিজেদের ঈমান প্রশ্নের মুখে ফেলে দিচ্ছি। অথচ আমাদের এ নিয়ে কোনো ভয় আছে?

অসুস্থ প্রতিযোগিতা
ডা: সাদিয়া হোসেইন

রৌদ্রময়ী

রৌদ্রময়ী

10 Nov, 12:31


বাড়িতে অনেক আয়োজন। কুমিল্লা থেকে বড় ফুফু নতুন বউ দেখতে আসছেন। বিয়েতে তিনি আসেননি রাগ ছিলেন। নতুন বউয়ের হাতের রান্নাও খেতে চান ফুফু। তিনি দেখতে চান কেমন গুণবতী বিয়ে করে এনেছে তার আদরের ভাইপো।

রাত থেকেই হাত পা ব্যথা করছে রুপুর। মাসের বিশেষ সময় এখন। একটু অসুস্থ বোধ করাটা অস্বাভাবিক কিছু না। কিন্তু শ্বশুর বাড়িতে বোধহয় বারোমাসই গায়ে গতরে জোর থাকা লাগে। অসুস্থতা বা বিশেষ সময় বলতে কিছু নাই। গত চার মাসে সে এমনটাই উপলব্ধি করেছে।

.

দুপুরের রান্না শেষ হওয়ার আগেই বড় ফুফুর আগমন। রান্নার ফাঁকেই তড়িঘড়ি করে মুখটা একটু ধুয়ে নিলো রুপু। চুল খুলে খোপাটা আবার করে নিলো। নিশ্চয়ই সকালের অল্প নাস্তার ফলে মুখটাও একটু ছোট হয়ে গেছে।

বাড়িতে হলে এতক্ষণে মা ঠিকই এটা সেটা হাতে তুলে দিতেন। এখানে সে সুযোগ নেই। নিজ হাতে কিছু নিলেই ডাক পড়ে। নতুন বউ নিজে ধরে এটা সেটা খেয়ে নেয়৷ লজ্জায় মাথা কাটা যায়।

ফুফু নতুন বউ দেখবেন। নতুন বউ আর কই রইলো! কাজের বেটি লাগছে। বোয়াল মাছের মাথা লেবুপাতা দিয়ে ঝোল করা হচ্ছে। তরকারিটা বাগাড় দিতে দিতে, দক্ষ হাতে শরবত বানিয়ে ট্রেতে সাজালো রুপু। এত অল্প দিনে কাজের কায়দাকানুন কীভাবে শিখে ফেললো ভাবতে অবাকই লাগে ওর৷

সবাই ভাবে বউ মানে বউ। এককথায় পারদর্শী। দুই হাতে দশকাজ করার যোগ্যতা আছে যার। কিন্তু মানুষ ভুলে যায়, বিয়ের পর একটা মেয়ে নতুনভাবে জন্ম নেয়। বউ হিসেবে তার নতুন জন্ম হয়৷ সে তৈরি থাকে না সবকিছুর জন্য। তাকে তৈরি করে নিতে হয়। বুঝিয়ে দিতে হয় অনেককিছুই। তার প্রতি সহমর্মি হতে হয়। সহযোগী হতে হয়। সহযোদ্ধা নয় সে। পরিবারের মেয়ে সদস্যরা এসব বুঝে কই! তারা ব্যস্ত ভুল ধরতে।

.

মাথায় ঘোমটা টেনে বসার ঘরে ট্রে নিয়ে ঢুকলো রুপু। ফুফুকে সালাম দিলো। পা ছুঁয়ে তাকে সালাম করে নি বলে, ওর শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে কথা তুললেন ভদ্রমহিলা। ওর বাবা-মা আদব কায়দা শিখান নি বলেও ধারণা করেন তিনি।

দুপুরে খাওয়ার পর শোবার ঘরে মুখভার করে বসে থাকে রুপু। ওর স্বামী কারণ জানতে চাইলে সে বলে, বড় ফুফু বলেছেন আমার চেহারা ভালো না, গায়ের রঙটাও উজ্জ্বল না।

তো এজন্য মন খারাপ করে রাখার কী আছে? অবাক হন রুপুর স্বামী।

আমাকে এর আগে কেউ কখনো এমন বলে নি। বলতেই চোখের কোণে জল জমে ওর।

শুনো বউ, চেহারা সুরুত গায়ের রঙ এসব কিছু না। মনের রঙই আসল। যার মন সুন্দর সেই বড় সুন্দর। রুপুর স্বামী জোর দিয়ে বলে।

ভুল কথা বললেন। আপনিও তো বিয়ের আগে প্রায় ২০-২৫ জায়গায় বউ দেখেছেন। গায়ের রঙ আর চেহারা সুরুত ভালো লাগেনি বলে বিয়ে করেন নি। আপনি কি মনের রঙ দেখেছিলেন! ওর প্রতিবাদী কণ্ঠ।

মানুষের মন তো দেখা যায় না, চেহারা সুরুতই দেখে প্রথমে। রুপুর স্বামী জবাব দেয়।

আপনার ফুফু আপনার জন্য তার ভাতিজি পছন্দ করেছিলো, আপনি সেই পরীর মতন সুন্দর মেয়ে রেখে আমাকে কেন বিয়ে করলেন? আপনিও নাকি সে মেয়েকে পছন্দ করতেন। অভিমান ঝরে পড়ে রুপুর কথায়।

হু করতাম। সুন্দর মানুষকে অপছন্দ করার কী আছে! দুনিয়ায় কী সুন্দর মানুষের অভাব আছে। সবাইকে কি আমার বিয়া করা লাগবে! এত আজাইরা জিনিস নিয়ে মন খারাপ করবা না।

রাতে আদাপোয়া পিঠা বানাইও তো। ফুফু এটা পছন্দ করেন। পাশের টেবিল থেকে হাতপাখাটা রুপুর হাতে দিয়ে বললো, নাও বাতাস করো। একটু ঘুমাই। কারেন্ট শালায় যে কত যাওয়া আসা করে!

.

নির্বিকারভাবে পাখা নিয়ে বাতাস করতে থাকে রুপু। আসলে যে মানুষের নিজের মনই সুন্দর না, সে অন্যের মনের সুন্দর কী বুঝবে? বিয়ের পরে কিছু সংসারে গিয়ে মেয়েরা আর মেয়ে থাকে না গাধা হয়ে যায়। মেয়েদের কেউ আর মেয়ে ভাবে না। ভাবে মেশিন। জ্যান্ত রোবট।

অজানা যন্ত্রণায় ছটফট করতে থাকে রুপু। হাতের ব্যথা আগের চেয়ে বেড়েছে। একটু গরম দুধ খেলে আরামবোধ হতো, কিন্তু সে সুযোগ নেই।

ভেবেছিল সে একজন মনের মানুষ পাবে৷ দেখতে শুনতে ভালো, শিক্ষিত, খারাপ অভ্যাস নাই, পান সিগারেটের নেশা নাই, ভালো চাকরিসহ ছেলেটা অপছন্দ করার মতো ছিলো না।

কিন্তু অশ্লীল কথা বলে মজা করা, নজরের হেফাজত না করা, ফানি ভিডিও মুভি দেখে হাহাহিহি করে হাসতে থাকা, বউয়ের হয়ে দুইটা কথা বলতে না পারা— ভদ্র মানুষটাতো রুপুর মনমতো হয়নি। মা-বাবার ভালো মেয়ের জামাই হলো বটে, কিন্তু এই জামাই যে ওর আপন মানুষ হলো না।

আপন মানুষ
সিরাজুম মুনিরা

রৌদ্রময়ী

রৌদ্রময়ী

09 Nov, 12:31


'মেয়ের গায়ের রং কেমন, আপা?'

নাসরিন সুলতানার প্রশ্নে বেশ দৃঢ়ভাবে উত্তর দিলেন আছমা বেগম, 'পুতুলের মতো মেয়ে, আপা। চোখ ফেরানো দায়। গায়ের রং, হাইট, ফিগার সব আপনারা যেমন চাইছেন তেমনই৷ কোনো দিক দিয়ে খুঁত পাবেন না। এজন্যই তো দেখিয়ে দিলাম আপা, যেমন তেমন মেয়ে নয়৷'

সদ্য ডাক্তারি পাশ করা ছেলের জন্য হন্যে হয়ে বউ খুঁজছেন নাসরিন সুলতানা। সেটা জানতে পেরে প্রস্তাবটা এনেছেন আছমা বেগম, মেয়ে উনার এক দূর সম্পর্কের ভাইয়ের মেয়ে। প্রতিবেশী হিসেবে কথাটা পেড়েছেন দু'পক্ষের ভালোর জন্যই।

মেয়ের সৌন্দর্যের দিকটাতে পাশ মার্ক দিতে পারায় খুশি হলেন নাসরিন সুলতানা। এবার বাকি প্রশ্নগুলোর দিকে মনোযোগ দিলেন।

মেয়ের পড়ালেখা কতদূর করেছে, দ্বীনদারীতা কেমন, পরিবার ভালো কিনা ইত্যাদি। সবটা মোটামুটি আশানুরূপ মনে হওয়ায় পাত্রী দেখতে যাওয়ার বিষয়ে কথা-বার্তা সারা হলো।

বোনকে নিয়ে মেয়ে দেখে এলেন নাসরিন সুলতানা। বেশ নম্র ভদ্র মনে হলো। বাড়ি ফিরে দু'বোন বেজায় খুশি। আছমা বেগম যে মেয়ের সৌন্দর্যের বর্ণনা একটু ও বাড়িয়ে বলেননি, সেটা নিয়ে বেশ খুশি মনেই কথা চললো দু'বোনের মধ্যে।

মায়ের পছন্দ করা পাত্রী নাবিলের ও পছন্দ হলো। আসলে মেয়েটা পছন্দ না করার মতো নয় একদমই। খোঁজ খবর নিয়ে রিপোর্ট ভালোই পাওয়া গেল। গোধূলির কনে দেখা আলোয় কবুল বলে একটা পবিত্র বন্ধনে আবদ্ধ হলো নাবিল-ফারিজা।
.

ডিউটি না থাকায় ঘুম থেকে উঠতে বেশ বেলা হলো নাবিলের৷ আড়মোড়া ভাঙতে ভাঙতে রুমের ড্রেসিং টেবিলের দিকে নজর গেল। ড্রেসিং টেবিলের সামনে ছোট একটা টুলে বসে ফেসপ্যাক লাগাচ্ছে ফারিজা।

মেয়েটা অনেক স্বাস্থ্য সচেতন। ওকে শরীরের যত্ন নেওয়ায় এতো মনোযোগী দেখে নাবিল মাঝেমধ্যেই চিন্তায় পড়ে যায় বৃদ্ধ বয়সে ত্বক না কুচকানোর বা ত্বকের সৌন্দর্য ধরে রাখার জন্য কোনো কিছু আবিষ্কার হয়েছে কিনা। নয়তো ফারিজার মতো সৌন্দর্য নিয়ে কনসার্ন মেয়েরা ডিপ্রেশনে পড়ে যাবে ভীষণ।

হঠাৎ মায়ের চিৎকার শুনে এক লাফে খাট থেকে নেমে দৌড়ে গেলো নাবিল।

নাসরিন সুলতানা সিড়ির শেষ ধাপে বসে আছেন কোমড়ে হাত দিয়ে। হাত-পায়ের কিছু কিছু জায়গা ছিলে গেছে। মায়ের মৃদু কন্ঠের আর্তনাদ শুনে সিড়ির দিকে এলো নাবিল।

'কোথায় লেগেছে, মা?' মাকে দেখতে দেখতে ব্যস্ত হয়ে জিজ্ঞেস করলো নাবিল।

'শাড়ির একপাশ পড়েছিলো পায়ের নিচে, ওটাতে লেগে পড়ে গেলাম,' শ্রান্ত কন্ঠ শোনা গেল নাসরিন সুলতানার।

ভাগ্য ভালো বলেই সিড়ির শেষ কয়েক ধাপে পড়েছেন। উপরের দিক থেকে পড়লে খুব সিরিয়াস কিছু হয়ে যেত।

'কেন এতো উপর-নিচ করতে যাও বলো তো,' বলতে বলতে মাকে আগলে ধরে রুমের দিকে নিয়ে যেতে লাগলো নাবিল।

কোমড়ের দিকে ব্যথা হচ্ছে খুব। ছিলে যাওয়া জায়গা গুলোও জ্বলছে। 'সকালে মরিচ শুকাতে দিয়েছিলাম ছাদে। সেগুলোই একটুু নেড়ে দিতে গিয়েছিলাম, বাবা।' মৃদু স্বরে ছেলেকে কৈফিয়ত দিলেন নাসরিন সুলতানা।

'সব মসলা রেডিমেইড এনে দেবো বললেও তুমি শুনো না। এবার হলো তো?'

একটা দ্বীর্ঘশ্বাস গোপন করলো নাবিল। মাকে বুঝতে দেবে না বলে। মা তো জানেনই ছেলে অপারগ! সূর্যের আলোর তেজ থাকতে ফারিজা ছাদে উঠে না। স্কিন নাকি কালো হয়ে যাবে। কাপড় চোপড় হয় নাবিল গিয়ে শুকাতে দিয়ে আসে, নয়তো বেলকনিতে দেয়।

ফাস্ট এইডের উপকরণ বাসায় আছে। নাবিল মাকে চেক আপ করে ওষুধ দিয়ে দিলো, ছিলে যাওয়া জায়গায় অয়েন্টমেন্ট লাগিয়ে দিলো।

এদিকে যে এতোকিছু হয়ে যাচ্ছে, ফারিজার কোনো নড়চড় নেই।

দুপুরের রান্নার সময় হয়ে এসেছে। নিজেদের রুমে গিয়ে ফারিজাকে মুখ ধুয়ে বেরুতে দেখে লাঞ্চ রেডি করতে বললো নাবিল, মা হেল্প করতে পারবে না।

নাসরিন সুলতানার রুমের পাশ দিয়ে হেঁটে কিচেনে যেতে হয়। যাওয়ার সময় উঁকি দিয়ে দেখে গেল ফারিজা।

বিয়ের চার মাস তো পেরুলো, ওর গতিবিধি ভালোভাবেই বুঝে গেছেন নাসরিন সুলতানা। ছেলের বউয়ের এমন গা ছাড়া ভাব নতুন কিছু না। একই ঘরে থেকেও যেন বউ-শাশুড়ির জগত আলাদা।

'এগুলো একটু কেটে দিন তো, মা।'

খাটে আধশোয়া হয়ে বসে থেকেই ফারিজার গতিবিধি লক্ষ করছিলেন নাসরিন সুলতানা। রুমের একপাশ থেকে ছোট টি টেবিলটা টেনে এনে উনার বেডের সামনে রেখেছে। একটা বাটিতে তিনটা পেঁয়াজ, ছুরি আর চপিং বোর্ড এনে কথাটা বললো নাসরিন সুলতানাকে। বলেই চলে গেল ফারিজা।

দুহাতে কোমড় চেপে ধরে আস্তে আস্তে উঠে বসলেন নাসরিন সুলতানা। টেবিলটার সামনে দু'পা ঝুলিয়ে বসে কাটা শুরু করলেন।

এমনিতেই ভাবছিলেন তিনি—তার ছেলের বউ আজকে পেঁয়াজ কাটবে কিনা। সবসময় রান্নার কাজটা নাসরিন সুলতানা করেন, ফারিজা সবকিছু ধুয়ে, কেটে দেয়। এই সমঝোতা তদের মধ্যে আগেই হয়েছিল কারণ রান্না করলে ফারিজার গায়ে চুলার আঁচ লাগবে।

তবে এই কয়েক মাসে কিচেনে নাসরিন সুলতানা থাকতে ফারিজা কখনো পেঁয়াজ কাটেনি। প্রথম দিকেই সুন্দর করে বলে দিয়েছিল শাশুড়িকে যে পেঁয়াজ কাটলে চোখ জ্বালাপোড়া করে, পানি বের হয় তাই ও পেঁয়াজ কাটতে পারে না।

রৌদ্রময়ী

09 Nov, 12:31


কখন একবার নাসরিন সুলতানা বাসায় না থাকায় ডিম ভাজার জন্য পেঁয়াজ কাটতে হয়েছিল ফারিজাকে। নাবিলকে নাকি রিকুয়েষ্ট করেছিলো কেটে দিতে, সে মাথাব্যথা করছে বলে এড়িয়ে গেছে।

অগত্যা চোখের পানিতে ভেসে পেঁয়াজ কেটেছিল ফারিজা কিন্তু সাবান দিয়ে হাত ধুয়েও নাকি ঘ্রাণ যাচ্ছে না। শাশুড়িকে কল দিয়ে জিজ্ঞেস করেছিল সেদিন—আপনারা হাত থেকে পেঁয়াজের গন্ধ কী দিয়ে দূর করেন, মা? আমার হাত থেকে ঘ্রাণ যাচ্ছে না যে!

পেঁয়াজ কাটতে কাটতে নাসরিন সুলতানা ভাবছেন—পাত্রী দেখার সময় সুন্দর পাত্রী খুঁজেছিলেন তারা। ফারিজার সৌন্দর্য দেখে মুগ্ধ হয়েছিলেন, সেখানেই পাশ মার্ক দিয়ে দিয়েছেন।

তারপর যখন ফ্যামিলি স্ট্যাটাস মিললো, মার্ক আরো বাড়িয়ে দিলেন। আছমা বেগমকে জিজ্ঞেস করেছিলেন মেয়ে নামাজ কালাম পড়ে কিনা, পর্দা করে কিনা। ইতিবাচক উত্তর পেয়ে আর দেরি করেননি মেয়েটাকে বউ বানিয়ে আনতে।

কিন্তু চোখের দেখায় পাশ মার্ক দিয়ে দেওয়া মেয়েটার মন মানসিকতা কেমন, উনার পরিবারের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে পারবে কিনা সেটা আর জানা হয়নি।

মেয়ে পর্দা করে বলতে নাসরিন সুলতানা যেটা বুঝেছিলেন—সারা শরীর ঢেকে নিজের সৌন্দর্য প্রকাশ করা থেকে বিরত থাকা, দৃষ্টির হেফাজত করে মনকে কলুষতামুক্ত রাখা, কন্ঠের পর্দা রক্ষার্থে পরপুরুষের সাথে বিনা প্রয়োজনে কথা না বলা; ইসলামী শরীয়তের এসব বিধান মেনে চলে।

কিন্তু মেয়ে যে মনের পর্দাই বড়ো পর্দা মনে করে শালীন পোশাক পড়েই পর্দার বিধান সম্পন্ন করবে তা ভাবেননি তিনি। কন্ঠের পর্দা যে মেয়েটার কাছে ধর্তব্য কোনো বিষয় না যার কারণে গায়রে মাহরাম আত্মিয়ের সাথে বেশ সাবলিলভাবেই কথা বলবে সেটাও ভাবেননি তিনি।

এখন তিনি বুঝছেন, একজনের মুখের কথায় কোনোকিছু যাচাই না করে নিশ্চিত হওয়াটা ভুল ছিল। এই ভুলটা দৃষ্টির অগোচরে র‍য়ে গিয়েছিল সৌন্দর্যকে প্রাধান্য দিতে গিয়ে।

এখন হারে হারে টের পাচ্ছেন তিনি, শো-কেসে সাজানোর জিনিস আনেননি যে পুতুল বা পুতুলের মতো সুন্দর হতে হবে।

তার প্র‍য়োজন ছিল একটা দ্বীনদার মেয়ে, যার ছায়ায় ছেলের সংসারটা বারাকায় ভরপুর থাকতো, ঘরের পরিবেশ থাকতো জান্নাতের লক্ষের দিকে অগ্রগামী।

প্রয়োজন ছিল একটা নম্র-ভদ্র সাংসারিক গুণসম্পন্ন মেয়ে যে শুধু রূপচর্চার বেষ্টনিতে ঘেরা নিজের জগত নিয়ে ব্যস্ত থাকতো না, বরং নিজের জীবনটাকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে নিতো এই সংসারের সাথে।

পেঁয়াজ কাটা শেষ হয়েছে সেই কবেই! একই জায়গায় স্থির বসে থেকে নাসরিন সুলতানা ভেবে চলেছেন—এমন একটা মেয়েকেই ছেলের বউ করার ইচ্ছে পুষেছিলেন সব সময়। কিন্তু কী যেন হয়ে গেল!

পাত্রী দেখার সময় এই গুরুত্বপূর্ণ ভাবনাগুলো তেমন আমলে নেননি। একটু বেশিই যেন হন্যে হয়ে খুজেছেন সুন্দর, লম্বা, শিক্ষিত আর স্যোশাল স্টেটাস মিলে এমন মেয়ে।

টিপিক্যাল বাঙালী মায়েদের মতো বিয়ের আগে রূপ খুঁজে বিয়ের পর গুণ খুঁজতে গিয়ে যখন ব্যর্থ হলেন নাসরিন সুলতানা, এখন বুঝছেন ভালোই—ডোন্ট জাজ আ বুক বাই ইটস কভার।

একটা দীর্ঘশ্বাস বেরুতে চাইলেও ভেতরেই আটকে দিলেন নাসরিন সুলতানা। এই দীর্ঘশ্বাস মুক্ত করে দেওয়া যায় না, বয়ে বেড়াতে হয় আজীবন।

পাত্রী সমাচার
বিনতে ইউনুচ

রৌদ্রময়ী

রৌদ্রময়ী

08 Nov, 12:32


জন্ম, মৃত্যু, বিয়ে এগুলো সবই আল্লাহর হাতে।
আমরা এই বিষয়গুলো নিয়ে কথা উঠলেই উপরের লাইনটা তুলে ধরি।

আচ্ছা প্রতিটি বিষয় নিয়ে আমার মনে হয় আরেকটু বেশি চিন্তা করা দরকার। আমরা যা যা বলছি সেই অনুপাতে কাজের ক্ষেত্রে প্রতিফলন ঘটছে না কেনো? প্রশ্নটা থেকেই গেলো।

মূল বিষয়ে আসা যাক,
মূলত বিয়ে নিয়েই আজকের কিছু লেখা।

কম খরচে বিয়ে?
দ্বীনদারীতা খোঁজ করা?
পর্দারসহিত বিয়ে?
এগুলোতো আলোচিত বিষয় এবং সকলেরই কম বেশ জানা।

তবে বিয়ের জন্য উপযুক্ত মেয়ে, যে কিনা উপযুক্ত, যোগ্য, কিন্তু বিয়ে হচ্ছে না। ঘরে এমন মেয়ে মনে হয় বিয়ের বয়স পার হয়ে ১/২ বছর বেশি থাকাটা সমাজের মানুষগুলোর এত বেশি চুলকানির কারন। এটা খুবই দুঃখজনক।

অথচ সকলেই বিশ্বাস করে বিয়েটাও আল্লাহর হুকুম ছাড়া হয়না। কোনো কাজই তো আল্লাহর হুকুম ছাড়া হয়না। গাছের একটা পাতাও আল্লাহর ইঙ্গিত ছাড়া নড়েনা।

একটা মেয়েকে এভাবে পেরেশানি করে, ইনসাল্ট করে, উপহাস করে, ঠাট্টা করে, আমরা সমাজের মানুষগুলো কি খুব বেশি সুখ পাচ্ছি?

“আর আমি তোমাদেরকে জোড়ায়-জোড়ায় সৃষ্টি করেছি।” (আন-নাবা ৮)

মেয়েটির জন্যেও আল্লাহ নিশ্চয়ই একজন সঙ্গী রেডি করে রেখেছেন। কিন্তু আমরা সমাজের লোকেরা এটা নিয়ে অতিরিক্ত বাড়াবাড়ি করে ফেলি।

মেয়েটি কালো, খাটো, কুৎসিত, মোটা, চিকন,
এজন্য হয়তো ফিরে যাচ্ছে ছেলে পক্ষ।

বয়স ২০ এর উপরে, আর কয় বছর বাপের ঘরে থাকবে? মেয়েকে মনে হয় ঘরে পালা দিয়ে রাখবে! বাচ্চা পালার বয়সও পার হয়ে যাচ্ছে। সংসার করবে আর কবে?

এগুলো হচ্ছে প্রতিনিয়ত একটা নির্লজ্জ সমাজের উদ্ভট কথা। যা একটা মেয়েকে ডিপ্রেশনে নিয়ে যায় এবং মানসিকভাবে অসুস্থ করে তোলে।

এক পর্যায়ে একটা মেয়ে বিয়ের নাম মুখে উচ্চারণ করতেও বোরিং ফিল করে। এবং এটাকে দ্বীন পূর্নতার অর্ধেক মনে না করে সমাজের মানুষের মুখ থেকে রেহাই পাওয়ার পন্থা মনে করে।

একটু চেষ্টা করলে আমরা এই জঘন্য কাজটা পরিহার করে, একটা মেয়েকে স্বস্তি দিতে পারি। এবং তাদেরকে সমাজে মুখ লুকিয়ে চলার চেয়ে স্বাধীনভাবে চলার সুযোগ করে দিতে পারি।

আহারে বিয়ে হয় না
নুরজাহান তনিমা

রৌদ্রময়ী

রৌদ্রময়ী

07 Nov, 12:37


গত পর্বে আমরা কী জেনেছিলাম মনে আছে? কথা ছিল, বেদ্বীন পরিবারে দ্বীন পালনে বাধা আসবে এটাই স্বাভাবিক, এই স্বাভাবিকতা মেনে নিতে হবে। এই স্বাভাবিকতা মানতে আপনার মত দেরি হবে আপনার দ্বীন পালন ততোই কঠিন হবে।

যত ভাববেন, " হায় আল্লাহ, আমার সাথে এমন কেন হচ্ছে! আমি আর পারছি না। আমি আর পারবো না, আমার কেউ নাই। কোনো দ্বীনি সোহবত নাই, কোনো পথপ্রদর্শক নাই, আমি কী করবো! আমাকে কেউই বোঝে না!"— তত পিছিয়ে পড়বেন। তত ছিটকে পড়বেন দ্বীন থেকে। ততই আপনি আসলেই আর পারবেন না। তারপর কিছুদিন গেলে আপনি আগে যেউ লাউ ছিলেন আবার সেই কদুই হয়ে যাবেন।

লাউ থেকে কদু হওয়ার এই সফরে হয়তো পর্দা করবেন বা নামাজ ধরবেন বা অন্যান্য হালাল হারাম টুকটাক পালন করবেন। ব্যস, এতোটুকুই আর করতে পারবেন না। কিন্তু উপরি পাওনা হিসেবে জুটবে খোঁচা। পর্দা করে আবার অমুক কাজ করে, নামাজ পড়ে আবার মায়ের সাথে রাগ দেখায়, এত হাদিস জানে কিন্তু বাবা মায়ের আনুগত্য করা ফরজ সেটা জানে না, যতসব সুবিধাবাদী হুজুরনীসহ আরো আরো বহু তীর্যক কথা।

না আপনি নিজেকে দ্বীনদারের কাতারে রাখতে পারবেন আর না বেদ্বীনদের কাতারে দাঁড়াতে পারবেন। জীবনটা হয়ে যাবে খচ্চরের জীবন।

তাই বাস্তবতা মানুন। ঝামেলা হবেই, মারধর খাওয়াই লাগবে, গাআলি, অপমাআন তো দুধভাত; আর কটু কথা/ খোঁচা? ওসবের সাথে সম্পর্ক আপনার এখন ঘনিষ্ঠজনের মতোন। এসব যতদিন না মানতে পারবেন ততদিন আপনার দ্বীন পালন স্থবির থাকবে। মনের কষ্টে দু'দানা ভাত গেলা মুশকিল হয়ে যাবে, সেখানে অতিরিক্ত দু'রাকাত তাহাজ্জুদ তো হবে বিলাসিতা।

তাই বাস্তবতায় ফিরে আসুন, নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সীরাহ জানুন, ইব্রাহিম আলাইহিস সালামের জীবনী জানুন, নবী-রাসুল আলাইহিমুস সালাম, সাহাবায়ে কেরাম রদিয়াল্লাহু আনহুমাদের জীবনী জানুন, সালাফদের জীবনী জানুন। তাদের ঈমানের নূরে দীপ্ত জীবনী যতদিন অব্দি না জানবেন ততদিন আপনার সামান্য কষ্টও আকাশ সমান হয়ে ধরা দেবে মনে। তাদের জীবনী না জানলে জীবনের মানদন্ড ঠিক করতে পারবেন না, যুহুদ শিখবেন না, বিপদে তাওয়াক্কুল শিখবেন না। শিখতে হবে উম্মাহর শ্রেষ্ঠ সন্তানদের কাছেই। এটার কোনোই বিকল্প নাই।

অনলাইনে দু-চারটা পোস্ট থেকে আপনি দ্বীন শিখতে গেলে বিভ্রান্ত হবেন, বোন। দ্বীন শিখতে হবে তাদের কাছেই যারা এটা পালন করতো জীবন দিয়ে। তাদের উদাহরণ না জানলে আপনি বুঝবেন কী করে ওসব কষ্ট স্বাভাবিক? এসব বিপদ স্বাভাবিক? এসব কিছুই পরীক্ষা? বিশ্বাস মনে গাঁথবে কী করে যে আপনার রব আপনার উপর সাধ্যাতীত বোঝা চাপিয়ে দিচ্ছেন না?

আর সোহবত নাই বলে কান্নাকাটি? ওসব করে লাভ নাই। আপনার যদি আসলেই সোহবত অত্যাবশ্যক হতো আপনার রব আপনাকে কি দিতেন না সেটা? হয়তো আপনি যেটা অত্যাবশ্যকীয় ভাবছেন সেটা কেবলই বিলাসিতা। হতে পারে না? পারে, অবশ্যই পারে। মনে রাখবেন, আপনার রব জানেন, আপনি জানেন না। আপনার রব বোঝেন সবই, আপনি বোঝেন না। নিজেকে এত সবজান্তা ভাবার দরকার নাই, অবলা অসহায় ভাবারও দরকার নাই। আপনার রব আছেন, আপনার রব আছেন, আপনার রব আছেন!!! কথা কানে গেছে? আর কাকে লাগবে আপনার?

কুরআনের কাছে কেন যান না মন খারাপ হলে? যিকির করেন না কেন? দুরুদ পাঠান না কেন আপনার নবীজির ﷺ কাছে? দু রাকাত নামাজ পড়ে কেন দুআ করেন না? কেন? কেন? কেন? কেন মনে হয় কোনো মানুষের সান্ত্বনা পেলেই আপনার কষ্ট হালকা হতো?

আপনার রব কি চাইলেই নিজ কুদরতেই আপনার অন্তরে সান্ত্বনা পৌঁছাতে পারেন না? আপনার রব কি চাইলেই আপনাকে এমন একটা কথা/ আয়াত/ উক্তি দেখাতে পারেন না যা আপনার অন্তর প্রশান্ত করবে? অবশ্যই পারেন! তাহলে কেন রবের কাছেই দুআ করেন না? কেন? করলেও সেই দুআ আরো বেশি করেন না কেন?

দুআই আপনার হাতিয়ার, বোন। দুরুদ আর ইস্তিগফারই আপনার সম্বল। তাহাজ্জুদ আর সালাতুল হাজতই আপনার দুআ কবুলের উছিলা হতে পারে। আর দিনশেষে আপনার রবই, আপনার সব। মনে থাকবে কথাটা?

আগামী পর্বে আমরা জানবো এসব পরিবারে দুআ কতটা কার্যকরী, এবং কখন, কীভাবে, কী উপায়ে দুআ করলে আপনার পথচলাটা আরেকটু মসৃণ হবে ইনশাআল্লাহ।

মন্তব্যের ঘরে এ সংক্রান্ত কিছু লেখা/ ভিডিও দেওয়ার চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ। সদকায়ে জারিয়ার নিয়তে আপনার মতে উপকৃত হবেন এমন বোনদের সাথে বিনিময় করতে পারেন ইনশাআল্লাহ।


আমার রবই আমার সব
জিলফাত ফারহা

রৌদ্রময়ী

রৌদ্রময়ী

06 Nov, 12:31


বাচ্চাদের কথা কী, আমরা বড়রাই তো হজম করতে পারি না এসব। এসব বুলিংয়ের স্বীকার বাচ্চারা সঠিক কাউন্সেলিং না পেলে আল্লাহর প্রতি নেতিবাচক ধারণা পোষণ করতে থাকবে (আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাই)। ভাববে, আল্লাহ তাকে ভালোবাসেন না বলেই এমন করে বানিয়েছেন।

তাই ছোট থেকেই বাচ্চাদের কাউন্সেলিং করা দরকার। যাতে এসব বুলিংয়ের খুব একটা প্রভাব না পড়ে। আর যেসব বাচ্চার ত্রুটি নেই, তাদেরকে আরও বেশি কাউন্সেলিং করা দরকার যাতে অন্য কোন বাচ্চাকে সে বুলিং না করে। অন্যের অনুভূতি বুঝানোর চেষ্টা করতে হবে।

আল্লাহ একজনকে ত্রুটি দিয়ে পরীক্ষা করছেন, অন্যকে ত্রুটিমুক্ত রেখে, এটা বাচ্চাদের বুঝাতে হবে। ইনশাআল্লাহ, এই বাচ্চাগুলো বড় হৃদয়ের অধিকারী হবে।

জন্মদাগ
রেহানা আক্তার

রৌদ্রময়ী

রৌদ্রময়ী

06 Nov, 12:31


এক কন্যার মুখের দুই জায়গায় জন্ম দাগ আছে। একদিন আয়না দেখতে গিয়ে এটা খেয়াল হলো তার। মন খারাপ করে বললো, “আমাকে এটার জন্য সুন্দর লাগে না।”

ও আরও ছোট থাকতে আমার এক আত্মীয় আফসোস করছে এভাবে, “মেয়ে বাচ্চা! বিয়ের সময় সমস্যা হতে পারে।”

কেমন যে লেগেছে! কঠোর প্রতিবাদ করেছি। সমাজের মানুষের যা দৃষ্টিভঙ্গি, কন্যা জীবনভর এনিয়ে আরও অনেক প্রশ্নের সম্মুখীন হবে। আমি সবসময় ওর পাশে থাকবো না প্রতিবাদ করার জন্য। তাই আগে থেকেই প্রতিষেধক দেওয়ার চেষ্টা করি।

আমি ওকে প্রতিনিয়ত কাউন্সেলিং করি। বলেছি, কেউ যদি জিজ্ঞেস করে “তোমার মুখের এটা কী?”
বলবে, “এটা জন্মদাগ। আল্লাহ আমাকে ভালোবেসে এটা দিয়েছেন।” তো, ওকে যেভাবে কাউন্সেলিং করি, সেখান থেকে কিছু পয়েন্টস-

১. আল্লাহ তোমাকে এভাবে বানিয়েছেন। আল্লাহ احسن الخالقين- সর্বোত্তম সৃষ্টিকর্তা। তিনি যাকে যেভাবে বানিয়েছেন সেটাই সুন্দর।

তুমি সূরাহ ত্বীন পড়েছো না- لقد خلقنا الانسان في احسن تقويم- নিশ্চয়ই আমরা মানুষকে সর্বোত্তম আকৃতিতে সৃষ্টি করেছি।

দেখো আল্লাহ বলছেন, সর্বোত্তম, সবচেয়ে সুন্দর। তাহলে তো তুমি সুন্দরই। আর এই যে দাগটা দিয়েছেন, এটারও কোনো না কোনো হিকমাহ আছে। তুমি আমি জানি না।

আল্লাহ তোমার রব্ব। মা তোমাকে যত ভালোবাসি, আল্লাহ তার চেয়ে অনেক অনেক বেশি ভালোবাসেন তোমাকে। মা তোমার ক্ষতি হয় এমন কিছুই ইচ্ছাকৃত করি না ( অনিচ্ছাকৃত তো হয়ই)। তাহলে আল্লাহ যে এতো ভালোবাসেন তোমাকে তিনি কি কোন হিকমাহ ছাড়া তোমাকে দাগটা দিয়েছেন?

নাহ। তিনি তো জানেন, এটার জন্য তোমার মন খারাপ হবে। তারপরও দিয়েছেন। আল্লাহর অনিচ্ছায় তো কিছুই হয় না।

তাহলে নিশ্চয়ই এটা তোমার জন্য কোনো না কোনো ভাবে কল্যাণকর, ভালো। আল্লাহ যা করেন, বান্দার ভালোর জন্যই করেন। এই বিশ্বাস আমাদের রাখতেই হবে।

অনেক সময় দেখো না, কোনো কিছু তুমি চেয়েছো, ওটার জন্য মন খারাপ করে কান্না করেছো, তারপরও মা দেই নি তোমার ক্ষতি হবে ভেবে। কিন্তু তাই বলে কি মা তোমাকে ভালোবাসি না?

আল্লাহ আমাদের অনেক ভালোবাসেন, তিনি তোমার কষ্ট হবে জেনেও দিয়েছেন। নিশ্চয়ই এটার উপকার তোমার কষ্টের চেয়েও বেশি।

২. সুরা হুজুরাতের একটা আয়াত- اِنَّ اَكْرَمَكُمْ عِنْدَ اللّٰهِ اَتْقٰكُمْ
অর্থাৎ নিশ্চয়ই তোমাদের মধ্যে আল্লাহর কাছে সবচেয়ে সম্মানিত সে, যে বেশি তাকওয়াকারী।

তাহলে দেখো, আল্লাহর কাছে সবচেয়ে সম্মানিত হওয়ার, ভালোবাসার হওয়ার জন্য কিন্তু শারীরিক সৌন্দর্যের কথা বলেন নি। বলেন নি যে, যে অনেক সুন্দর সে আল্লাহর কাছে সম্মানিত, আল্লাহ তাকে বেশি ভালোবাসেন।

বরং বলেছেন তাকওয়ার কথা। তাকওয়া মানে জানো তো? আল্লাহর পছন্দ-অপছন্দের ব্যাপারে খুবই সচেতন- সতর্ক থাকা। এমনভাবে চলা, যাতে কোনো ভাবেই আল্লাহর অপছন্দনীয় কাজ না হয়ে যায়। ভুলক্রমে হয়ে গেলে সাথে সাথে তাওবা করা।

৩. সুয়াইরা আল আসাদিয়্যাহ (রা.) এর গল্পটা শুনাই। গল্পটা আছে একটা হাদিসে। মৃগী রোগের কারণে ধৈর্য্যধারণ করে জান্নাতি নারী হয়ে গেছেন।

হাদিসটি: ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি তোমাকে একজন জান্নাতী নারী দেখাব না? আমি বললাম হ্যাঁ; তিনি বললেন, এ কালো মহিলা।

মহিলাটি একদিন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দরবারে এসে বললেন, আমি মৃগী রোগের কারণে বেঁহুশ হয়ে পড়ি এবং কাপড়-চোপড় খুলে ফেলি। আপনি আমার জন্য দো‘আ করেন আমি যাতে ভালো হয়ে যাই।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যদি তুমি চাও ধৈর্য ধারণ কর এবং তার বিনিময়ে তুমি জান্নাতে যাবে। আর যদি চাও আমি তোমার জন্য আল্লাহর কাছে দো‘আ করি তাতে তুমি ভালো হয়ে যাবে।

তখন মহিলাটি বলল, আমি ধৈর্য ধারণ করব। তারপর সে বলল, অসুস্থতার কারণে আমার গায়ের কাপড় সরে সতর খুলে যায়, আপনি আল্লাহর নিকট দো‘আ করেন, আমার সতর যেন খুলে না যায়। তখন আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার জন্য দো‘আ করেন। (বুখারী, হাদিস: ৫৬৫২, মুসলিম, হাদিস: ২৫৭৬)

৪. বিলাল (রা.) এর গল্প শুনাই। হাবশার নিগ্রো মানুষ হয়েও কত সম্মানিত, কত ভালোবাসার মানুষ হয়েছেন তিনি। দুনিয়ায় থেকেই জান্নাতের সুসংবাদপ্রাপ্তদের একজন হয়েছেন। ইসলামের প্রথম মুয়াজ্জিন। কত সম্মানিত তিনি!

৫. হাদিসে বর্ণিত অন্ধ ব্যক্তির গল্প শুনাই। আনাস (রাঃ) বলেন, ‘আমি রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি, ‘আল্লাহ তা‘আলা বলেন, আমি যখন আমার কোনো বান্দার দু’টি প্রিয় বস্ত্তকে বিপদগ্রস্ত করি, আর সে তাতে সবর করে, আমি তাকে এর বিনিময়ে জান্নাত দান করব। প্রিয় বস্ত্তদ্বয় হ’ল তার চক্ষুদ্বয়’। (বুখারী)

অন্ধ ব্যক্তি সবর করার কারণে যদি জান্নাত পায়, সুয়াইরা আল আসাদিয়্যাহ তার অসুস্থতার সবর করে যদি জান্নাত পান, আমাদেরও এমন ছোট-খাটো শারীরিক ত্রুটির জন্য সবর করলে আমরাও ইনশাআল্লাহ প্রতিদান পাব।

.

আমাদের সমাজে কোনো বাচ্চার গায়ের রঙ একটু গাঢ় হলে, উচ্চতায় খাটো হলে, বা বাহ্যিক অন্য কোনো ত্রুটি থাকলে সমাজের মানুষ নানান কথা বলে। হাসি-ঠাট্টা করে। সমবয়সী, সহপাঠীরা বুলিং করে।

রৌদ্রময়ী

25 Oct, 12:39


আমাদের শহীদ নেতাকে গত একবছর জায়োনিস্ট আর্মি যে নামে ডাকতো ‘হেঁটে বেড়ানো মরা মানুষ’!

আমাদের নেতার জীবন থেকে আমরা জানতে পারি কিভাবে মরার আগেই মরে যাওয়া যায়!

তিনি কোনোধরনের ইলেকট্রনিক ডিভাইস ব্যবহার করতেন না! ইসরায়েলের সারভাইলেন্স সম্পর্কে পড়েছিলাম। তেল আবিবে এমন প্রযুক্তি আছে যে ঘরে বসে চাইলে তেল আবিব থেকে গাজায় সিলেক্ট করে করে মানুষ মারা যায়!

সেখানে গত এক বছর তাকে চোখেই দেখলো না! ভাবা যায়! কেমন মগ্ন ছিলেন তিনি জিহাদে!

একজন মানুষ ২৪ ঘন্টা ৩৬৫ দিন, দিনকে দিন ডিভাইস ছাড়া চলার অর্থ কী?

তার রোজনামচা হয় নবী সা. এর মতো। এশার পরেই ঘুমিয়ে যাওয়ায়। এরপর বাকি রাতটুকু সেজদায় পার করায়!

শাহাদাতের পরে তার পকেট থেকে কী পাওয়া গেলো?

দুইটা চুইংগামের প্যাকেট, হয়তো মুখে যেন বাজে গন্ধ না হয় বা ইন্সট্যান্ট এনার্জি পেতে চিবোতেন। দুইটা দোয়ার বই। একটা বইয়ের মলাটে হারামের ছবির সাথে কুদুসের ছবি। হেরেমের ছবিটা দেখে কখনো তার যাওয়ার আকাঙ্ক্ষা ও জাগতো হয়তো! খুব সাধ করে হয়তো বইটাকে বুকের খুব কাছে রাখতেন!

একটা তসবিহ, একটা মিনি টর্চলাইট, একটা নেইলকাটার, কিছু টাকা।
ব্যাস এগুলোই!

যেন এক জীবনে মানুষের এরচেয়ে বেশি কিছু দরকার নেই! যেন রাসূল সা.এর হাদিসের বাস্তবায়ন। জীবন ধারনের জন্য আহার আর ঘুমানোর জন্য বিছানা ছাড়া আর সব কিছুই অতিরিক্ত!

আমার ধারণা সিনওয়ারের হয়তো নির্দিষ্ট কোনো ঘুমানোর বিছানাও ছিলোনা!

এই যুগে এসব শুনলে ঠিক মাথায় ঢুকানো যায়না!
যেন সাহাবীদের মতো। যাদের মরণের পরে রেখে যাওয়া বস্তুগুলো একটা গ্লাস, একটা কলসির মতো গুনে ফেলা যেতো।

এভাবে মরণের জন্য প্রস্তুয় কয়জন মানুষ থাকতে পারে!

তার শাহাদাত হয়েছে মূলত ১৬ অক্টোবর। পুরো একদিন তার লাশ ইসরায়েলি আর্মি দেখতে পারেনি বুবি ট্র‍্যাপে পড়ার ভয়ে।

একদিন পরে দেখে দুনিয়া ধারণা করছে ১৭ অক্টোবর।
এরপর ডিএনএ টেস্ট করে শিউর হয়েছে। তাও সেই ডিএনএ টেস্টের জন্য তার আংগুল কেটে নিয়েছে।লাশের সাথে নিষ্ঠুরতা তাদের নতুন কিছু না!

কে জানে তার দেহকে কী করেছে! কিন্তু তার মতো কালজয়ীদের মনে রাখার জন্য সমাধিফলকের প্রয়োজন হয়না!

যুগে যুগে তারা মায়েদের ঘুম পাড়ানি গল্পের মাঝে বেঁচে থাকবেন। আজকে জাপানের পত্রিকায় সামুরাইয়ের কার্টুনে সিনওয়ারকে একটা ট্রিবিউট দেয়া হয়েছে।

সিনওয়াররা এই যুগের লিজেন্ড জলজ্যান্ত সামুরাই।
বঞ্চিত নির্যাতিত মানুষের হকের জন্য যারা নিজের জীবনকে অকাতরে বিলিয়ে দিতে জানে!

ইসরাইলি আর্মি কিন্ত তাকে মারার জন্য ২০২১ এ তার বাড়িতে বিমানহামলা চালিয়েছিলো। একজন মানুষ ও মারতে পারেনি।

এরপর গত বছর থেকে তো তাকে মারার চেষ্টা চলছিলোই। ২০২৩ এর ৭ নভেম্বর ইয়োভ গ্যালান্ট বললো তাকে নাকি কোন বাংকারে ঘিরে ফেলা হয়েছে।

একই বছর ডিসেম্বরের ৬ তারিখ বললো তার বাড়ি ঘেরাও করে ফেলেছে।

এই বছর সেপ্টেম্বরে এসে তারা বললো আগের আক্রমণে তিনি মারা গেছেন।

কিন্তু জীবন মরনের হিসাব তো তাদের হাতে না।

দুনিয়ার সবচেয়ে সফিস্টিকেটেড সারভাইলেন্স ক্যামেরাকে ফাঁকি দিলেন একটা বছর ধরে। তাকে টার্গেট করার সময়ও আইডিএফ জানতো না কাকে করেছে। আর তারাই এখন ক্রেডিট নিচ্ছে যেন তাকে তারা শিকার করেছে।

অথচ এই শাহাদাত সাত আসমানের উপর থেকে এসেছে তার জন্য উপহার হয়ে। যেই হাত অজস্ত্র তাহাজ্জুদে আল্লাহর কাছে শুধুই শাহাদাতের মরণ চেয়েছে, লড়াই করতে করতে বীরের মতো যেতে চেয়েছে তার দুয়া কি আল্লাহ তায়ালা কবুল না করে পারেন!

একটা গানের লাইন আছেনা, তোমারে না দেখিয়া নবীকে না চিনিয়া এই ঈমান এনেছি তবুও.......!

আমরা হয়তো রাসূল সা. কে তার সাহাবীদেরকে দেখিনি। কিন্ত আমরা এমন কিছু কুদুসবাসীকে দেখছি যারা এভাবে জিন্দা শহীদ হয়ে ঘুরতে পারার মতো ঈমান রাখে....

জীবনে মরণে সফল হতে হলে এভাবেই বুঝি সিনওয়ারের মতো মরার আগেই মরে যেতে হবে।দুনিয়ার ভালোবাসা বা মাহমুদ আব্বাসদের মতো প্রাসাদে থাকার লোভ যাদেরকে গ্রাস করতে পারেনা।

কেউ যথার্থই বলেছে সিনওয়ারের ছিন্নভিন্ন চেয়ার অনেক আরব রাজার সিংহাসনের চেয়েও মহান।

সিনওয়ারের লাঠি মরণকে পরোয়া না করে জীবনের শেষ শক্তি দিয়ে লড়াই করার প্রতীক। দুনিয়াবাসী হয়ে পচে গেলেও তাই সিনওয়াররা কখনো মরেনা। (রাহি.)

একজন সিনওয়ার
সাফওয়ানা জেরিন

রৌদ্রময়ী

রৌদ্রময়ী

24 Oct, 12:31


আজকে সকালে গ্রুপে ডেইলি প্ল্যানার নিয়ে ডিটেইলস একটা লেখা পড়ে খুব ইচ্ছা হল নিজের একটা পছন্দের কাজ আপনাদের সাথে শেয়ার করি।

খুব ভোরে উঠা অভ্যাস আমার। আর বরাবর আমি ভোরের প্রিপারেশন রাতে নিয়ে রাখি। এখন বলতে পারেন ভোরে ঘুম থেকে উঠেই আবার কী কাজ!

রাতে ঘুমাতে আসার আগেই এক সেট কাপড়, তাসবীহ, আতর, খিমার, জায়নামাজ আমার রেডি থাকে।
ভোরে চোখ খোলার সাথেই আমার গোছানো কাপড় গুলো ডাকাডাকি করে ‘এই এই তাড়াতাড়ি তৈরি হয়ে নাও’।

আমার এই প্রিপারেশন কোনো রকম এলার্ম ছাড়াই ভোরে উঠিয়ে দেয়। এই যে ভোর ৫.১০ থেকে রাত ১০.৩০ পর্যন্ত আমি বিভিন্ন কাজে থাকি সেইগুলা এক এক করে লিখে রাখার কাজ রাতে সেরে রাখি।

আপনি চাইলে সকালের চায়ের সাথে লিখতে পারেন, আমি দুই সময়ই করেছি বাট একোমপ্লিসড ফিল করেছি, রাতে লিখে রাখার মধ্যে পেয়েছি।আলহামদুলিল্লাহ।

ডেইলি প্ল্যানার সেট/ লিখার সময় প্রথমে মনে হয় কিসে লিখবো! আমার তো সুন্দর ডায়েরি নাই!

এই নখরা গুলা আমার ছিলো, আমি প্রথম প্ল্যান লিখা শুরু করি বাচ্চাদের ছোট বাংলা খাতা দিয়ে, আস্তে আস্তে স্পাইরাল নোটবুকে চলে আসছি, বাসার সামনেই পেয়ে যাবেন স্পাইরাল নোটবুক।

ডেইলি প্ল্যানার লিখার জন্য আপনার দরকার একটা খাতা/ দুইটা ভিন্ন কালির কলম/ একটা রুলার আর একটা শান্ত মন।

আমি আমার ডেইলি লাইফে পার্ট টাইম টিচিং করি, এক্সেরসাইজ করি, বাগানের দেখাশোনা করি, হাউস মেইডের মনিটরিং করি, আম্মার টেইক কেয়ার করি, নিজের যত্ন নেই।

আমি আমার কাজগুলোই ছোট ছোট করে সাজিয়ে লিখি আর দুইটা কলাম রাখি। দিনের ১২ টায় একটা চেক দেই আর ৮ টায় আরেকবার। ( আলহামদুলিল্লাহ)

ধরে নিলাম আপনি স্টুডেন্ট, আপনার দিনের কাজ আরো গোছানো হবে, আপনি যদি হাউজওয়াইফ হন তাহলে আপনার কাজের ব্যাপ্তি আরো বেশি হবে।

আপনাদের বুঝার সুবিধার জন্য আমার আগামীকাল এর প্ল্যান লিখে ছবি দিলাম। (কমেন্টে)

এইখানে একটা ইনফো শেয়ার করি, কিছুদিন আগে সেল্ফ ডেভেলপমেন্ট এর একটা কোর্সে একটা নতুন আইডিয়া পেলাম। নিজের টু ডু লিস্ট বা ডেইলি প্ল্যানার লিখার সাথে সাথে নিজের ৩/৪ টা নেগেটিভ ট্রেইট বেছে বের করতে হবে। আর লিখতে হবে what not to do!


ট্রাস্ট মি হোয়াট নট টু ডু লিখা শুরু করার পর থেকে আমার নিজের নেগেটিভ ট্রেইটের উপর কন্ট্রোল আসছে। আলহামদুলিল্লাহ।

আমার এতো ডিটেইলস পোস্ট দেখে যদি পাঁচজন আপু ইন্সপায়ার্ড হয়ে দুইজন আপু নিজেকে গুছিয়ে নেয়ার নিয়ত করেন তাহলে খুব ভালো লাগবে।

পোস্ট সংক্রান্ত সব রকম প্রশ্নের উত্তর দেয়ার জন্য আমি সদা তৎপর।

(সিস্টার্স অফ বাংলাদেশ গ্রুপে চলছে সেলফ কেয়ার প্রজেক্ট। আগ্রহী বোনেরা প্রশ্নের উত্তর দিয়ে গ্রুপে জয়েন করুন।)

নট টু ডু
লিজমনি

রৌদ্রময়ী

রৌদ্রময়ী

23 Oct, 13:23


পালিয়ে পালিয়ে কোনো ক্রমে আন্দোলনের সময়টা পার করলাম। বাড়িতে কাউকে জানাইনি আমার এমন দুরবস্থার কথা।

জমানো টাকা পয়সা শেষ করে ধার দেনায় চলছি। প্লাস্টারের ভেতরে চুলকায়। সেই ভারি হাত নিয়ে তো মিছিলে যেতে পারি না। রোজ সংবাদ পাই মৃত্যুর আর আহত বন্ধুদের। ছটফট করি ক্ষোভে, কিছু করতে না পারার আক্ষেপে।

অবশেষে বিপুল ত্যাগের বিনিময়ে আল্লাহপাক বিজয় এনে দিলেন। ন্যায্য অধিকারের সংগ্রামে জয়ী হলো জনতার, ছাত্রদের। হল খুলে দিলো মাসখানিক পর। তারও মাসখানিক পর ক্লাসের কার্যক্রম শুরু হলো আবার। দীর্ঘ বিরতির পর ক্যাম্পাসে নিষ্কলুষ বাতাসে শ্বাস টানা।

আসলেই কি নিষ্কলুষ?

ওদিকে ক্লাসে ঘোষণা দেয়া হলো ইনকোর্স হবে নির্দিষ্ট ব্যবধানেই। মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়লো। বইয়ের সাথে সম্পর্ক নাই কবে থেকে। ইনকোর্সগুলি কিভাবে দিবো?

শোয়েব বাড়ি থেকে এসেছে ক্লাসের আগে আগে। হল পরিদর্শনে আসা প্রক্টরের কাছে সে ইনিয়ে বিনিয়ে দুই রুমমেটের অত্যাচার বর্ণনা করলো।

- আন্দোলনে যাবার অপরাধে আমাদের বিলংগিংস সব কিভাবে ভেঙ্গে ফেলেছে দেখতেই পাচ্ছেন স্যার। আমাদের ডিভাইসগুলোও বাঁচাতে পারিনি স্যার।

মুখচোরা আমি বিস্মিত নয়নে কেবল শোয়েবের গিরগিটির মত রঙ বদলানো মিথ্যাচারগুলো শুনলাম। স্যার আশ্বাস দিয়ে গেলেন, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্য করার চেষ্টা করা হবে।

শোয়েব বীরদর্পে এক্সাম দিলো। ফাইনালেও সে ডিঙ্গিয়ে গেলো আমাকে। আন্দোলনের আঁচ তার গায়ে লাগতে দেয়নি। বাড়ি গিয়ে ঠিকঠাক লেখাপড়া সেরে নিয়েছে। আন্দোলনে সম্পৃক্ততা নেই, তবে তার সুফলটা ভোগ করে দিব্যি নিজেকে গুছিয়ে নিচ্ছে।

আমার ভাঙ্গা হাতটা কনুইয়ের কাছে বাঁকা হয়ে জোড়া লেগেছে। চাকরির বাজারে এটা একটা নেগেটিভ সাইড। ভারী জিনিস তুলতে পারিনা। মেধা তালিকায় পিছিয়ে গিয়ে শিক্ষক পদে নিয়োগলাভ স্বপ্নই রয়ে গেলো।

কোটা না মেধা- যে স্লোগানের মধ্য দিয়ে স্বপ্ন জিততে চেয়েছিলাম, তা অধরা বিহঙ্গের মত ডানা ঝাপটে সরে গেলো দূরে।

জিতেও হেরে গেলাম। রিজকের মালিক আমার জন্য অবশ্যই উত্তম রিজকের সংস্থান রেখেছেন ইনশাআল্লাহ। মন ক্ষুণ্ন হয় কেবল কিছু মানুষের মিথ্যাচারে যখন নিঃস্বার্থ ত্যাগগুলি কলুষিত হয়, তখনই।

মিথ্যা সাফল্য কি ভোগ করা যায়? কাঁটার মতো কি বেঁধে না কখনোই?

গিরগিটি
হোসনে আরা হাসি

রৌদ্রময়ী

রৌদ্রময়ী

23 Oct, 13:23


এসএসসি পরীক্ষার ফরম ফিলআপের সময় স্যার ক্লাসের অনেকের ফরমই নিজ হাতে লিখে দিচ্ছিলেন।

গ্রামের স্কুল। নামেই ম্যাট্রিক দিবে। সত্যি হলো অনেকে নিজের নাম ঠিকানাও পুরোপুরি শুদ্ধ করে লিখতে জানে না। সেই হিসেবে স্যার আমার ফরমটাও টেনে নিলেন।

আমি কম সাহসী মানুষ। একবার মিনমিন করে বলতে চাইলাম- আমারটা আমি নিজ হাতে করি।
স্যার খেঁকিয়ে উঠলেন। জন্মসন লেখার সময় ফট করে যা লিখলেন, আমার তো আক্কেল গুড়ুম। দুবছর বেশি বানিয়ে ফেলেছেন।

ক্ষীণকণ্ঠে বললাম- স্যার, আমারে তো বড় বানায়ে দিলেন। উনি আরেকটা প্রকাণ্ড হংকার ছেড়ে বললেন- এ পর্যন্তই তো দৌড়। চাষার পোলা চাষবাস কইরা খাবি, জজ ব্যারিস্টার হবি নাকি? জন্ম তারিখ দু চার বছর উল্টা পাল্টা হইলে কী আসে যায়!

আমার নিরীহ জিহ্বা চুপ হয়ে যায়। আসলেই তো! বড় বড় পদে বসার মতো, যোগ্যতা কি আমাদের কখনো হবে? না চাষার ছেলে বলে কেউ গ্রাহ্য করবে?

বিষণ্ন মনে ঘরে ফিরে আসি। গরিবের ভাঙ্গা চোরা ঘর। বৃষ্টি হলে পানি চুঁইয়ে পড়ে। ডোয়া ভেঙ্গে গর্ত হয়ে গেছে। বেড়া ক্ষয়ে নড়বড়া হাল।

বই খাতা ফেলে আমি ক্ষেতপানে ছুটি। বাপজানকে হাতি দিতে হয় মাঠে। সন্ধ্যায় ফিরে এলে ক্লান্ত দেহে একটু পড়ালেখা করা। তাও যদি কুপি বাতি জ্বলে তবেই। বিদ্যুতের বিল না দিতে পারায় প্রায়ই আমাদের লাইন কাটাই থাকে।

এভাবে ধুঁকে ধুঁকে স্কুল আর কলেজ জীবন পার করে ফেললাম। আল্লাহর ইচ্ছায় রেজাল্টও ভালো। বাপজানের পক্ষে আর খরচ চালানো সম্ভব না, বলেই দিয়েছেন।

কিন্তু আমার যে অনেক স্বপ্ন। এঁদো গ্রাম থেকে এলাম রাজধানীতে। আম্মার যৎসামান্য গহনা বেচা টাকা দিয়ে ভর্তি হলাম কোচিংয়ে। আল্লাহর রহমত চান্স পেলাম প্রথমবারেই।

এরপর শুরু হলো আরেক জ্বালা। হলে সীট নেই। মেধাবী হক্বদারদের বদলে সীট দখল করে রাখে ছাত্রনেতারা। তাদের চামচামি করতে হবে, দলে নাম লেখাতে হবে। জলে থেকে কুমিরের সাথে বিবাদ করা যাবে না- যারা একটু সিনিয়র, তারা এমন পরামর্শ দিলেন।

গেঁয়ো আলাভোলা আমি এত ঘোরপ্যাঁচ তো বুঝি না। গণরুমে জায়গা পেয়েছি। ইতর প্রাণীদের মতো বাস করতে হয়। তার উপর নেতা নামধারী দানবগুলার অত্যাচার।

কবে কার পাশ দিয়ে চলে গেছি সালাম দেইনি, কবে কোন সমাবেশে হাজিরা দেইনি, বলা মাত্রই কেন দেখা করতে যাইনি- কত অদ্ভুত অভিযোগ। আর সে সবের জন্য কত নির্মম, লাঞ্ছনাকর শাস্তি। সেগুলো মুখে আনা যায় না।

বাপ মা জানলে তখনই কান্নাকাটি শুরু করবেন- পড়া লাগবে না বাপ, মান সম্মান আগে। তুমি চলে আসো বাড়িতে। বাপের লগে ক্ষেতে কাম করো!

দাঁতে দাঁত চেপে দিন পার করি। যে উদ্দেশ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ে পা রাখা, দিন শেষে সেই লেখাপড়ার অবসরটাই কতসময় মেলে না। দুটা টিউশনি করি। আর এসব বড় ভাইদের ফাই ফরমাশ খাটি। নিজের হেঁট মাথা উঁচু করার সাহস হয় না।

থার্ড ইয়ারে উঠে নতুন সীট পেলাম। চারজনের রুমে। রুমমেটগুলি বুঝে গেছে আমি মেরুদণ্ডহীন ছেলে। কাজেই যতটা সম্ভব নিজেদের কার্যসিদ্ধি করে নেয়। এটা ফটোকপি করে আনো, কারোর টিউশনিতে প্রক্সি দিতে হয় কারণ তার গার্লফ্রেন্ডের সাথে ডেট আছে।

বিশ্ববিদ্যালয় হঠাৎ করেই থমথমে হয়ে এলো। রুমমেটদের দুজন সংগঠনের সাথে জড়িত। শুনলাম ন্যায্য অধিকারের আন্দোলনে নেমেছে ছাত্ররা। চাকুরির কোটা অপসারণ করে মেধাভিত্তিক বন্টন ব্যবস্থা বহালের দাবিতে উত্তাল ক্যাম্পাস।

যাবতীয় অনিয়ম, অত্যাচারে কোণঠাসা সাধারণ ছাত্ররাও যোগ দিয়েছে সাথে। শুধু চাকরির ক্ষেত্রেই তো নয়, হলের সামান্য সীট নিয়েও কত বৈষম্যের খেলা।

সাথের ছেলে দুটা সরকারি দলের ছেলে। অবস্থা বেগতিক দেখে রাতারাতি ভোল পাল্টে তাল মেলাচ্ছে ছাত্রদের সাথে।

আমার চতুর্থ রুমমেট পড়ুয়া মানুষ। রুম থেকে বের হয় কম। আমার ডিপার্টমেন্টের ছাত্র। রাতদিন পড়ে, তবে আমাকে ছাড়াতে পারে নি। আন্দোলনের হাওয়া তাকে স্পর্শ করলো না। তবে সে আমাকে উস্কে দিতে দ্বিধা করলো না।

- আরে তুমি কাপুরুষের মতো ঘরে বসে থাকো কেনো? নিশ্চয়ই তুমি কোটার আশায় আছো? ভর্তি কেমনে হইছো? এতদিনে নিজের মান অপমানবোধ কিছুটা তো হয়েছে। গায়ে লাগলো।

বললাম- আমি পরীক্ষা দিয়ে ঢুকেছি, কোনো কোটা ফোটায় না।
- রিয়েলি? তাহলে আন্দোলনে নামছো না কেনো?

আচমকা জানতে চাইলাম- তুমি যাচ্ছ না কেনো? তুমি কি আমাদের চেয়ে আলাদা?
- আর বোলো না। যেতে চাই তো। তবে আম্মা ফোন করে বলছেন বাড়ি থেকে ঘুরে আসতে। কাল যাচ্ছি।

শোয়েব সত্যি সত্যি চলে গেলো।

এর মধ্যে ঘটে গেছে বহু কিছু। মিছিলে গিয়ে পিটুনি খেয়ে হাত ভেঙ্গে গেছে আমার। হাতে পায়ে বেধড়ক লাঠির আঘাত।

আন্দোলনে নামার অপরাধে রুমে রুমে ঢুকে জিনিসপত্র ভাঙ্গা হয়েছে প্রথম কদিন। আমার বহু কষ্টের সঞ্চয়ে কেনা ল্যাপটপ ছিনিয়ে নিয়ে গেছে। নীলক্ষেত থেকে ফটোকপি করে বাইন্ড করা শত শত টাকা দামের রিডিং ম্যাটেরিয়ালস ছিন্ন ভিন্ন করে রেখে গেছে।

স্লিঙে বাঁধা প্লাস্টার সাঁটানো ভারি হাত নিয়ে লুকিয়ে থাকার জায়গা খুঁজে পাচ্ছি না। হল বন্ধ। বন্ধুরাও নিরাপত্তার ঝুঁকিতে আছে। কে কাকে আশ্রয় দেয়।

রৌদ্রময়ী

21 Oct, 14:39


জাফর ইকবাল স্যারের ফ্যানবেজ মূলত কিশোররা। কিশোরদের জন্য জাফর ইকবালের লেখা সবচেয়ে জনপ্রিয় বইগুলোর একটা 'আমার বন্ধু রাশেদ'।

আমার বন্ধু রাশেদের শেষ দৃশ্যে চোখ বাঁধা অবস্থায় যেমন রাশেদ বুক টান টান করে দাঁড়িয়েছিল গুলি লাগার জন্য সেরকম জুলাইয়ে শত শত রাশেদের মাথায়, পায়ে, ঘাড়ে যখন গুলি লেগেছে জাফর ইকবাল স্যার তখন ব্যাঙের মতো হাইবারনেশানে ছিলেন। শীতনিদ্রায় তার মুখে কথা ফোটেনি।

আমার কাছে এরকম একটা ছবি আসছিলো ফার্স্ট হ্যান্ড ভিক্টিমের কাছ থেকে যে বন্ধুর মাথায় গুলি লেগেছে, আরেক বন্ধুর হাতে ঘিলু লেগে আছে।

আমার কাছে হাজার হাজার ছবি আছে, ভিডিও আছে যেখানে বাচ্চারা বন্ধুর লাশ নিয়ে কান্নাকাটি করছে। ভয়েস রেকর্ডগুলি শুনলে নিজের গায়েই কাঁটা দেয়।

তিনবার থেরাপিস্টের কাছে গিয়ে আমি বলেছি- আমি এই সিচুয়েশনে ঘুমাতে পারছিনা, কাউকে হেল্প করতে পারছিনা।

তখন আমাদের প্রিয় স্যার কী করেছেন?
-চুপ করে থেকেছেন। কথা বলেননি।

দান্তেকে ফ্লোরেন্স থেকে বের করে দেয়া হয়েছিল লেখার জন্য। চোখের পানি ফেলতে ফেলতে দান্তে তার ইনফার্নোতে লিখেছিলেন- নরকের সবচেয়ে অন্ধকার স্থান মূলত তার জন্য যে ভালো আর মন্দের লড়াইয়ের সময় চুপ করে থাকে।

জাফর ইকবাল মূলত সেই লোক যিনি শত শত রাশেদদের মৃত্যুর সময় চুপ করে ছিলেন। আমি তার জন্য কোন মুখে বড়ো করে কথা বলবো যেখানে ছোট ছোট কিশোরদের মৃতদেহ আর হারানো পা, হাত ও চোখ দেখেও তার মুখে কথা ফোটেনি?

তার মুখে কথা ফোটেনি
জান্নাতুন নাঈম প্রীতি

রৌদ্রময়ী

রৌদ্রময়ী

20 Oct, 12:38


সকালবেলা জিলাপি খেতে ইচ্ছে করলো। একসময় জিলাপি খেতাম না আর এখন হুটহাট কতকিছু খেতে ইচ্ছে করে!

গতসপ্তাহে আব্বু এনে দিয়েছেন তাই ফ্রিজ খুলে চেক করলাম আছে কিনা। একটাও অবশিষ্ট নেই। মন খারাপ হলো। আফসোস করে বললাম ইশশ যদি জিলাপি খেতে পারতাম।

এখন আমার যা চাওয়া থাকে তা আল্লাহকে বলার চেষ্টা করি। আমার চাওয়া যদি কল্যাণকর হয় আল্লাহ সেটি আমাকে যেকোনো মাধ্যমে দেওয়ার ব্যবস্থা করেন।

এইযে ময়েশ্চারাইজারের কৌটা খালি হয়ে এসেছে। প্রতিদিন দুআ করার সময়ে আল্লাহকে বলি, 'প্লিজ আল্লাহ আমাকে একটি ময়েশ্চারাইজার কেনার মতন টাকার ব্যবস্থা করে দাও।' আমি বিশ্বাস রাখি আমার টাকার ব্যবস্থা ঠিক হয়ে যাবে।

প্রতিদিন ঘুমানোর সময় আল্লাহকে খুব রিকুয়েষ্ট করে বলি, 'ইয়া আল্লাহ আমি সকালে ঘুমের জন্য উঠতে পারি না। এর ফলে আমার তাড়াহুড়ো করে শেষ ওয়াক্তে কোনোমতে ফরজ আদায় করতে হয়। তুমি আমার ঘুম পরিপূর্ণ করে দাও এবং আমাকে তাড়াতাড়ি ওঠার সক্ষমতা দাও।' আলহামদুলিল্লাহি রব্বিল আলামীন! সেদিন আমি একদম সঠিক সময়ে জেগে যাই।

এভাবে প্রতিটি চাওয়া যখন আল্লাহর কাছে চাইতে শিখবো তখন তিঁনি আমাদের জন্য যথেষ্ট হয়ে যাবেন।

আজকে সারাদিন কেটে গেল ব্যস্ততায়। বিকেলবেলায় পানি নিতে গিয়ে দেখলাম দরজা খোলা। ভেবেছিলাম হয়তো আব্বু এসেছেন তাই খোলা। আমি আর পাত্তা না দিয়ে নিজের রুমে ফিরে এলাম।

কিছু সময় পর আম্মু গেলেন এবং দরজা খোলা দেখে তিনি আমাকে ডেকে জিজ্ঞেস করলেন দরজা আমি খুলেছি কিনা। আমি বললাম দরজা তো খোলা ছিল। আম্মু বললেন, কিন্তু আমি তো দরজা লাগিয়েছিলাম হয়তো ভালো করে না লাগায় খুলে গেছে। কিন্তু সেজন্য তো ধাক্কা দেওয়া প্রয়োজন।

পরে আম্মু খেয়াল করলো টেবিলের একপাশে অনেকগুলো জিলাপির প্যাকেট। সেগুলো নিয়ে সোজা আমার কাছে এলেন। খুশিতে আত্মহারা হয়ে গেলাম আমি। এটাই তো মনে মনে চেয়েছিলাম আর রব ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। পরিশেষে রবের শুকরিয়া আদায় করলাম।

যখন আমরা দয়াময়ের কাছে চাইতে শিখবো, অন্তর থেকে কোনোকিছু চাইবো তখন তিঁনি তার ব্যবস্থা করে দিবেন। আমাদের জীবনের ছোট-বড় যত চাওয়া আছে তা রব ছাড়া কেউই পূর্ণতা দেওয়ার ক্ষমতা রাখেন না।

তাই আমাদের যদি একটি পয়সারও জরুরত হয় আমরা আল্লাহকে বলবো, আল্লাহর কাছে হাত তুলবো। বান্দা যখন তার প্রতিটি বিষয়ে আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল করবে, আল্লাহর কাছে আন্তরিকতার সাথে চাইবো তখন রব বান্দার জন্য যথেষ্ট হয়ে যাবেন। এমন মিরাকলের পর মিরাকল ঘটবে যা বান্দার কল্পনাতেও থাকবে না।

জিলাপির গল্প
জুওয়াইরিয়া কাজিমা

রৌদ্রময়ী

রৌদ্রময়ী

19 Oct, 12:31


ঐ যে একটা হাদিস আছে না, শেষ জামানায় ঈমান ধরে রাখা হাতে জ্ব'লন্ত কয়লা ধরে রাখার মতন হবে?

বেদ্বীন পরিবারে যেসব বোনেরা দ্বীন পালন করেন তারা এই হাদিসটা হাড়ে হাড়ে টের পান। এ ধরনের পরিবারগুলোতে দ্বীন পালনের জন্য লাগে সাহস, আর যে দিনগুলোতে একার সাহসে কুলায় না, সে দিনগুলোতে খুব খুব অভাববোধ হয় সাহস যোগানো কোনো অভিজ্ঞ বোনের।

আশা করছি আমার বা আমাদের অভিজ্ঞতা, পরামর্শ নতুন-পুরাতন বোনদের একটু হলেও সাহায্য করবে। এই দিকনির্দেশনা থাকবে ‘বেদ্বীন পরিবারে দ্বীন পালন’ শিরোনামে।

আজকের প্রথম পর্বের আলাপের বিষয়বস্তু হচ্ছে মানসিকতা বিষয়ক। আলাপ শুরু করি এবার?

বেদ্বীন পরিবারে টিকে থাকার জন্য তিনটা জিনিস লাগে : দৃঢ় মনোবল, একনিষ্ঠ দুআ, আর চেষ্টা। আর এসব কিছু চালিয়ে যাওয়ার জন্য লাগে মানসিকতার পরিবর্তন।

যখন আপনি বেদ্বীন পরিবারে দ্বীন পালন করা শুরু করবেন, তখন ধরেই নিতে হবে যে বাধা আসবে। এই বাধা হতে পারে মানসিক অত্য-আচার, অর্থাৎ অপমান, গালিগালাজ, চিল্লাচিল্লি, রাগারাগি, মনোমালিন্য অথবা শারীরিক নির্যাতন। এইটা হবেই।

আপনি বেদ্বীন পরিবারে দ্বীন পালন শুরু করবেন আর আপনার উপর কোনো বাধাই আসবে না, তার মানে কোথাও গলদ আছে। হয় আপনি পরিপূর্ণ দ্বীন পালনের চেষ্টা করছেন না, নাহয় আপনার পরিবার পরিপূর্ণ বেদ্বীন না।

হয় মৌখিক, নাহয় শারীরিক, কোনো না কোনো ঝামেলা থাকাটা দ্বীন পালন সঠিক হচ্ছে কি না সেটার মাপকাঠি ধরতে পারেন (উল্লেখ্য, এখানে কিন্তু দ্বীনের নামে উল্টাপাল্টা কিছু করে ধরা খাওয়ার কথা বলছি না। উল্টাপাল্টা বলতে কী বোঝাচ্ছি সেটাও অবশ্য জানি না। তবে কথা হচ্ছে আপনার দ্বীন পালন হতে হবে ঠিকঠাক, দিকভ্রান্ত না আরকি)।

তো এই ঝামেলা হবে কবে থেকে? সাধারণত, যবে থেকে পরিপূর্ণ পর্দা শুরু করবেন। অর্থাৎ বাইরে পরিপূর্ণ পর্দা করে কালো বোরকা, নিকাব, হাতমোজা, পা-মোজা পরে যাবেন তবে থেকে। তখন থেকে অল্প অল্প করে ঝামেলা দানা বাঁধবে।

যখন ঘরের মধ্যে গায়রে মাহরামের সাথে পর্দা করতে চাইবেন তখন জমবে আসল খেলা। এরপর যদি বিয়ের বয়স হয়ে থাকে তাহলে তো আর কথাই নাই। ঘটককে ছবি দিতে চাইবেন না, পাত্রের পুরুষ আত্মীয়ের সামনে যাবেন না, বিয়েতে বেহায়াপনা করবেন না, আর আপনাকে এমনি এমনি ছেড়ে দেবে?

না রে বোন, ছাড়বে না। যদি ছাড়েই, তাহলে দ্বীনদার আর বেদ্বীন পরিবারের পার্থক্য কী থাকবে?

ধরেন আপনি ইয়া-বা খাওয়া শুরু করলেন, তখন আপনার বাবা-মা কী করবে? রাগারাগি / মা'রধরের মাধ্যমে হলেও আপনাকে ফেরানোর চেষ্টা করবে তো, তাই না?

বাস্তবতা হলো আপনার এই দ্বীন পালনও তাদের কাছে সেই মাদকাসক্ত হওয়ার মতোই খারাপ। আল্লাহুম্মাগফিরলী!

এই যে তাদের হাসিখুশি মেয়েটা এখন আর ঘোরাঘুরি করে না, বাড়ি কেউ আসলে সবাইকে মাতিয়ে রাখে না, কারোর সামনে আসে না, বাইরে সাজগোজ করে না, কালো কাপড়ে নিজেকে মুড়ে রাখে, গান শোনে না, পড়াশোনা নিয়ে আকাশছোঁয়া স্বপ্ন দেখে না, বিলাসবহুল জীবন চায় না– এসব কি উদ্ভট বা ভয়াবহ লাগে না শুনতে একজন বেদ্বীন মানুষের কাছে?

মাদকাসক্ত হওয়ার চাইতে কম কিছু হবে তাদের কাছে? তাহলে তারা বাঁচানোর চেষ্টা করবে না আপনাকে?

করবে তো। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো যেটাকে তারা সফলতা ভাবে, সেটা আখিরাতের চোখ দিয়ে দেখলে ব্যর্থতা! চূড়ান্ত ব্যর্থতা!

তাই মানসিকতার ক্ষেত্রে প্রথম পদক্ষেপ হচ্ছে এটা মেনে নেওয়া যে প্রতিকূলতা আসবেই, দ্বিতীয় পদক্ষেপ হলো, বাবা-মায়ের কাজের পেছনে তাদের মনস্তাত্ত্বিক কারণ বোঝা; আর তৃতীয় পদক্ষেপ হলো, এটাকে দ্বীন পালনের অংশ ভেবে সহজভাবে নেওয়া, অর্থাৎ ভেঙে না পড়া।

এখন এই ভেঙে কীভাবে না পড়া যায় সেটা আমরা দ্বিতীয় পর্বে জানবো ইনশাআল্লাহ বোনেরা।

পুনশ্চ : যদি লেখা উপকারী মনে হয়, তাহলে দয়া করে কেউ আমার প্রশংসা করবেন না। প্রশংসা করবেন আমাদের রবের, যিনি আমাকে লেখার এবং আপনাকে পড়ার যাবতীয় তওফিক দান করেছেন। এই যাবতীয় যে কতকিছু, তা লিখতে গেলে সমুদ্রের কালিও ফুরিয়ে যাবে! এজন্য প্রশংসা করবেন আপনার রবের, আর বাকিদের জন্য করবেন দুআ, বারাকাহর দুআ।

বারাকাহর দুআ হচ্ছে : মাশাআল্লাহ, লা ক্বুওয়্যাতা ইল্লা বিল্লাহ। বারাকাল্লাহু ফিক।

বেদ্বীন পরিবারে দ্বীন?
জিলফাত ফারহা

রৌদ্রময়ী

রৌদ্রময়ী

18 Oct, 12:46


পরক্ষণেই মনে পড়লো অনুতপ্ত হতে গিয়েও আবার নামাজে অমনোযোগী হয়ে যাচ্ছে। কথা তো ছিলো নামাজে যে দুআ-দরুদ পড়া হয় তার দিকে মনোযোগ দেওয়ার ; অর্থ বুঝলে অর্থের দিকে৷ মনোযোগকে টেনে হিঁচড়ে নামাজে আনলো নিরহা।

এভাবে নফসের সাথে যুদ্ধ করতে করতে নামাজ শেষ করলো। তাসবিহ পড়তে গিয়ে নিরহার হঠাৎ মনে পড়ছে—আজকে স্যারের সাথে কথা বলার সময় বা স্যারের কথা শোনার সময় মনোযোগ সব স্যারের দিকেই ছিলো৷ যেমন বিনীত হয়ে দাঁড়িয়ে ছিলো স্যারের সামনে, তেমনি ছিলো মনোযোগী।

কিন্তু একটু আগে কী হলো! বিনীত ভঙ্গিতেই দাঁড়িয়ে ছিলো জায়নামাজে। চোখ, মুখ, হাত, পা সবকিছুই রবের আনুগত্য মাথা পেতে নিয়েছে। এক দেখাতেই মনে হবে নামাজ পড়ছে।

কিন্তু মন তো ওর পুরো জগতটাতে ঘুরে এসেছে। পড়ছে একটা, ভাবছে আরেকটা। এই বিনয় কি বাহ্যিক বিনয় হয়ে গেলো না? নামাজের জন্য তো ভেতর-বাহির আগাগোড়াই বিনীত হতে হবে। তাহলে? ডাবলস্ট্যান্ডার্ড হয়ে যাচ্ছে না তো?

নিরহা মনঃস্তাপে ক্লিষ্ট হতে থাকে যখন ভাবে স্যার সম্মানীয় ব্যক্তি, গুরুজন বলে সে স্যারের সামনে অমনোযোগী হয় না, কথা বলার সময় স্পষ্টভাবে, ধীরে ধীরে বলে। পা থেকে মাথা, ভেতর থেকে বাহির —পুরো নিরহাটাই বাধ্যগত, নম্র, ভদ্র হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে স্যারের সামনে।

অথচ...! অথচ যিনি সর্বশক্তিমান, মহা বিশ্বের সৃষ্টিকর্তা যিনি, যিনি মহাপরাক্রমশালী রব—তাঁর সামনে দাঁড়ালে, তাঁর আদেশ পালন করতে গিয়ে শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বিনীত হলেও মনটা নিয়ে বিনীত হতে পারছে না নিরহা।

মন দৌড়ে যাচ্ছে এদিক ওদিক। ঠোঁট নেড়ে দুআ পড়তে পড়তে, রোবটের মতো উঠাবসা করাই হচ্ছে শুধু—নামাজ আসলে কতটুকু হচ্ছে!

আস্তে-ধীরে, তাজবিদসহ শুদ্ধ উচ্চারণে তিলাওয়াত করার কথা থাকলেও সেসব পারছে কই? উল্টো তিলাওয়াতটুকু এমন হয়ে যায় যেন তাড়াতাড়ি পড়ে যাওয়ার প্রতিযোগিতা চলছে, নয়তো পেছন থেকে কেউ ধাওয়া করছে!

সাহাবীদের কাছে নামাজ ছিলো দুনিয়ার সবকিছুর চাইতে মূল্যবান। নামাজরত অবস্থায় পায়ে গেঁথে থাকা তীর বের করে নেওয়া হয়েছে, টের পাননি আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু।

আর আমরা? আমরা একটা মশা কামড়ালেও সেটা তাড়িয়ে দিতে নয়তো মারতে ব্যস্ত হয়ে উঠি। নামাজে আমাদের মনোযোগ এতো মারাত্মক রকমের কম!

একবার মাদ্রাসার হুজুরের 'নামাজ কয় মন?' প্রশ্নের উত্তরে প্রশ্নটা বুঝতে না পেরে নিরহা উত্তর দিয়েছিলো—'পাঁচ মন।' ছোটবেলায় না বুঝেই উত্তর দিয়েছিলো।

কিন্তু এখন বড়ো হয়েও নিরহার মনে হচ্ছে মনটা ঠিক কতদিকে যায় গুণে শেষ করতে পারবে না। সহজে মনে করতে না পারা কথাটাও মনে পড়ে যায় নামাজে দাঁড়ালে।

হ্যাঁ, এখানে শয়তানের ওয়াসওয়াসা বেশি। তার সাথে রীতিমতো যুদ্ধ করতে হয় একাগ্রচিত্তে নামাজ পড়তে। কিন্তু দিনশেষে দেখা যায় প্রতিবার সে-ই শয়তানটাই বিজয়ী হয়ে যাচ্ছে। আর নিরহার ভাগ্যে? শুধু পরাজয়।

বারবার নিজেকে প্রশ্ন করছে নিরহা—কোনো কিছুতে পরাজিত হলে তো তুই নিজেকে নব উদ্যমে তৈরি করিস পরেরবারের জন্য। তাহলে এই পরাজয়কে কেন আমলে নিচ্ছিস না? কেন ভাবছিস না এভাবে হাল ছেড়ে বসে থাকলে বিজয়ী শয়তান তোকে নিজের আয়ত্বে নিয়ে নেবে? তখন যে আর প্রতিযোগিতা করার সক্ষমতাও থাকবে না তোর!

তাসবিহ পড়া শেষ করে দু'হাত তুলে রবের কাছে ফরিয়াদ জানায় নিরহা—নামাজটা ইখলাসের সাথে পড়ার তাওফিক দিন, ইয়া রব। অন্তর প্রশান্ত হওয়ার মতো নামাজ পড়ার তাওফিক দিন। কবুল হওয়ার মতো করে নামাজ পড়ার তাওফিক দিন। আমিন।

নামাজ কয় মন?
বিনতে ইউনুচ

রৌদ্রময়ী

রৌদ্রময়ী

18 Oct, 12:46


রেজিষ্ট্রেশন কার্ডটাতে আরেকবার চোখ বোলালো নিরহা। বান্ধবীদেরকে অসহায় মুখে
বললো, 'তোরা কেউ আমার সাথে যাবি না তাহলে?'

ওরা অসম্মতি প্রকাশ করতেই উঠে দাঁড়ালো নিরহা। নিজের সমস্যা সমাধানের জন্য নিজেকেই দৌড়াতে হবে। ক্লাস কেপ্টেনের কাছ থেকে ছুুটি নিয়ে ক্লাসের বাইরে বারান্দায় এসে দাঁড়ালো।

একা অফিসে যেতে ভয় লাগছে কিন্তু কিছুু করার নেই। কয়েকমাস পরেই এসএসসি পরীক্ষা। আজকে রেজিষ্ট্রেশন কার্ড দিয়েছে। অফিস সহকারী এসে দিয়ে গিয়েছে। বলেছে, ভালোভাবে চেক করে দেখতে। কোথাও সমস্যা থাকলে অফিসে গিয়ে ওর সাথে যোগাযোগ করতে বলেছে।

ক্লাসে সবার রেজিষ্ট্রেশন কার্ড-ই ঠিকটাক আছে। নিরহার কার্ডে মায়ের নামের জায়গায় বাবার নাম এসেছে, বাবার নামের জায়গায় মায়ের নাম। প্রথমে এটা চোখে পড়েনি। পরে খেয়াল করে পড়ে দেখতে গিয়েই দেখে এই অবস্থা। সেই থেকেই অস্থির হয়ে আছে মেয়েটা।

অস্থিরতায় প্রধান শিক্ষক যে পাশে এসে দাঁড়িয়েছে, খেয়াল করেনি নিরহা। খুব স্ট্রিক্ট একজন মানুষ তিনি। স্যারকে দেখামাত্র সালাম দিয়ে ক্লাসে ঢুকে যেতে চাইলে স্যারের গুরুগম্ভীর কন্ঠ শুনে দাঁড়িয়ে গেলো।

'ক্লাস থেকে বেরিয়েছো কেনো?'

ভয়ে হৃদপিণ্ডটা জোরে বিট করছে। নিজেকে সামলানোর চেষ্টায় রত হয়ে স্যারকে উত্তর দিলো নিরহা, 'স্যার, আসলে আমার রেজিষ্ট্রেশন কার্ডে ভুল এসেছে। সেটাই দেখাতে যাচ্ছিলাম সাদেক ভাইয়ার কাছে।'

'আমার সাথে এসো,' বলে স্যার হাঁটা ধরলেন অফিসের দিকে। নিরহাও গেলো পেছন পেছন।

অফিসে ঢুকে স্যার নিজের চেয়ারে বসলেন৷ পরপরই বললেন, 'বলো কী সমস্যা!'

স্যারের টেবিলের এই পাশে চেয়ার আছে, স্যারের বিপরীতে। স্যার বসতে বলেনি, বসা যাবেনা। নিরহা যথাসম্ভব বিনীত হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

স্যারের প্রশ্নের উত্তরে বললো, 'আমার রেজিষ্ট্রেশন কার্ডে মাদার্স নেমের জায়গায় বাবার নাম আর ফাদার্স নেমের জায়গায় মায়ের নাম চলে এসেছে, স্যার।'

স্পষ্ট উচ্চারণ, বিনীত ভঙ্গি। প্রধান শিক্ষকের কক্ষে অবশ্য সবাই এমনভাবেই কথা বলে। স্যারের জন্য এটা নতুন কিছু না।

'বাকি সবকিছু চেক করেছো ভালোভাবে? অল ওকে?'

মাথাটা একটু নাড়লেই এর উত্তর হয়ে যায়। কিন্তু সম্মানী মানুষ যখন মুখ খুলতেই হয়।

'জি, স্যার। চেক করেছি।'

স্যারের রুমের সাথে লাগোয়া রুমটাতে অফিস সহকারীরা বসে।

'সাদিক, এদিকে এসো।'

স্যারের ডাক শোনামাত্র সাদিক এলো৷ 'জি স্যার,' বলে দাঁড়ালো অনুগত ভঙ্গিতে। তার সম্পূর্ণ মনোযোগ স্যারের দিকে।

'এই মেয়েটার রেজিষ্ট্রেশন কার্ডে মা-বাবার নাম ভুল হয়েছে। দরকারী কাজ মনোযোগ সহকারে করবে। মানুষ মাত্রই ভুল, আমি জানি। কিন্তু হান্ড্রেড পার্সেন্ট মনোযোগ দিতে পারলে কাজে ভুলের পরিমাণ কমে আসে। সংশোধনে আবার টাইম দিতে হয় না, মানুষকেও এক্সট্রা প্যারা দিতে হয় না।'

স্যারের গুরুগম্ভীর কন্ঠের কথাগুলো মনোযোগ দিয়ে শুনেছে রুমে উপস্থিত দুজন—নিরহা আর সাদিক। যদিও নিরহার বিষয় না এসব, তবু গুরুজনের কথা মন দিয়ে শুনতে হয়, তাদের সামনে অমনোযোগী হওয়া চলে না।

'দুঃখিত স্যার,' মাথা নিচু করে বললো সাদিক।

সাদিকের দিকে নিরহার রেজিষ্ট্রেশন কার্ডটা বাড়িয়ে দিলেন প্রধান শিক্ষক। সেটা নিয়ে চলে গেলো সাদিক।

স্যার যেতে বলেনি বলে নিরহা দাঁড়িয়ে আছে ; যেহেতু স্যার নিজেই ডেকে এনেছে।
স্যার এবার ওর দিকে ফিরে বললেন, 'তুমি আসতে পারো।'

.

টিফিন পিরিয়ডে স্কুলের নামাজ ঘরে নামাজ পড়তে এসেছে নিরহা, বান্ধবীদের সাথে। অজু করে নামাজে দাঁড়ালো।

'রেজাউল স্যারের হোমওয়ার্ক তো কমপ্লিট করা হয় নাই। শিট! সেকেন্ড পিরিয়ডের পর তো সময় পেয়েছিলাম কিছুক্ষণ। আড্ডা না দিলেই হতো। মনেই ছিলো না হোমওয়ার্কের কথা।'

ভাবনার সাথে সাথে ব্রেইন যেন ডিরেকশন পেয়ে গেলো নামাজ দ্রুত শেষ করার জন্য৷ যদিও হোমওয়ার্কের জন্য নামাজে তাড়াহুড়ো করার কোনো ইচ্ছেই মনের কোনো কোণায় নেই নিরহার।

ব্রেইন যে নির্দেশ দেয়, শরীরের অন্যান্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সেটা পালন করা শুরু করে৷ নামাজে একটু তাড়াহুড়ো হয়ে যাচ্ছে টের পেতেই নিজেকে ধীরস্থির করলো নিরহা।

চার রাকাআত সুন্নত নামাজের শেষ বৈঠকে আছে নিরহা। তাশাহুদটা শেষ হতেই মনে পড়লো—মাফরুহা বলেছিলো ইংলিশের নোটগুলো আনতে। ওর পাশে বসেও মনে ছিলো না। এখান থেকে গিয়ে মাত্র দিয়ে দিতে হবে—ভাবলো নিরহা। তিলাওয়াত চলছে।

ফরজ নামাজের নিয়ত বেধেছে এবার। কক্সবাজার যাওয়ার প্ল্যান চলছে বাসায়। তিনদিনের ট্যুর। কোচিং টিচার কি এক্সামের আগে ছুটি দেবেন? নিশ্চয়ই একগাধা বকা শোনতে হবে। এদিকে ট্যুর মিস দিলে একটা ভালোরকম চান্স মিস হয়ে যাবে।

ভাবতে ভাবতেই নিরহা তিলাওয়াত করছে— ফাওয়াইলুল্লিল মুসল্লি-ন ( সুতরাং দুর্ভোগ সেই সালাত আদায়কারীদের)। আল্লাযি-না হুম আন সলাতিহিম সা- হুন (যারা তাদের সালাত সম্পর্কে উদাসীন)।

ভাবনার ফাঁকে আয়াত দুটোর অর্থ মনে পড়তেই কেঁপে উঠলো নিরহা। এই আয়াত তো ওর-ই জন্য! নিজের উদাসীনতার জন্য অনুতপ্ততা এসে ভর করলো মনে।

রৌদ্রময়ী

17 Oct, 13:03


হোমোরা চায় সবাই হোমো হোক, ট্রান্সরা চায় সবাই ট্রান্স হোক। তসলিমা নাসরিন কখনো আস্তিকতার উপর লেকচার দেবে? এরা চায় আশেপাশের সবাইকে এদের মতই বানিয়ে ফেলতে।

তারা বলে এটা তোমার জীবন, কেন অন্যরা তাদের মতামত তোমার উপর চাপাবে? তারা মনে সন্দেহ ঢোকায়, সৃষ্টিকর্তা এক্সিস্ট করে কী সাইন্টিফিক এভিডেন্স আছে? অথচ ঈমান মানেই আগে বিশ্বাস তারপর অন্য কথা!

মডারেট আপারাও যেমন চায় সবাই তাদের মত মডারেট ইসলাম পালন করুক। মূল কথা হল সবাই সবাইকে নিজের দলে টানতে চায়।

রাসূলের ইসলাম পালনকারীরাও তেমনি চাই সবাই ধার্মিক হোক, অন্য কারও মতবাদ না, রাসূলের ইসলাম শিখুক, পালন করুক। কিছুই না থাকলেও অন্তত ঈমান টা থাকুক। সমস্যা আছে?

আজকাল অনেকেই বলে ইসলামিক স্কুলে বাচ্চা দিয়ে কী লাভ ওই তো ও/এ লেভেলে বাইরেই আসতে হবে।

এখন পুরা দুনিয়ার অবস্থাই খারাপ। জেনারেল স্কুলে দেবেন ম্যাথ, সাইন্স টিচার নাস্তিক হলে সে ক্লাস রুমেই বাচ্চার ভেতর সেই বীজ ঢোকাবে।

বাচ্চা আপনার কাছে একদিন এসে গডের এক্সিস্ট্যান্সের এভিড্যান্স চাইবে। ততদিনে তার ঈমান কিন্তু হারিয়ে গেছে। আপনি কুরআন থেকে আয়াত তুলে সাইন্টিফিক ফ্যাক্টস বললেও তারা বিশ্বাস করবে না, লাভ নাই।

সবাই হোম স্কুলিং করানোর মত যথেষ্ট স্কিলড না।

ইসলামিক স্কুলে টিচারদের কিছু এথিক্স মেনে চলতে হয় এটলিস্ট স্কুল প্রিমিসেস এ। ব্যক্তিগত জীবনে সে নাস্তিক হলেও এখানে সে ক্লাসরুমে তার সংশয়বাদী মতামত দিতে এলাউড না। ইচ্ছা হলেই যে যা খুশি তাই বললে চাকরি চলে যাবে।

তবুও কোনো বিশেষ রাজনৈতিক মতাদর্শের অনুসারী কারো স্কুলে বাচ্চাদের দিতে নিষেধই করি। তারা তাদের মডারেট ইসলাম শেখাবে রাসূলের ইসলাম না।

ইসলামিক স্কুলে দিয়েও এমন আহামরী কিছু হয় না ঘরে বিশেষ করে মা-বাবার প্র‍্যাক্টিস না থাকলে। যার চাক্ষুস প্রমাণ দেখছি। যারা চায় তাদের আল্লাহ তা'লাই হেল্প করেন বিইযনিল্লাহ। যারা চায় না তারা বেরিয়ে যাবেই এমনকি মাদ্রাসায় পড়লেও।

ঈমান ধরে রাখাটাই চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াচ্ছে দিন দিন।

ইসলামি স্কুল
তানজিনা রহমান

রৌদ্রময়ী

রৌদ্রময়ী

16 Oct, 13:23


রবিউল আউয়াল মাস শেষ হতেই সোশ্যাল মিডিয়ার ইসলামিক গ্রুপগুলোতে রমাদানের প্রস্তুতি সংক্রান্ত পোস্টের দেখা মিলতে থাকে। সেসব পোস্ট পড়তে পড়তে, গত রমাদানে করা ভুলগুলো আক্ষেপ হয়ে ফিরে আসে।

মনে মনে প্রতিজ্ঞা করি, এবার কোনোভাবেই রমাদানকে ব্যর্থ হতে দেয়া যাবে না। এবার আগে থেকেই প্রস্তুতি নিবো। ভাবতে ভাবতে রবিউল আউয়াল শেষ হয়ে রবিউস সানীও যাওয়ার পথে।

তারপর শুরু হয় পরিকল্পনা। রমাদানে কী কী করবো, তার বিশাল এক তালিকা। এই পরিকল্পনা করতে করতেই জুমাদাল উলা পার হয়ে যায়। হাতে থাকে মাত্র তিন মাস।

খেয়ে না খেয়ে এবার সব আমল একসাথে করার পালা— তিলাওয়াত, তাফসীর, নফল নামাজ, জিকির-আজকার, কাজা রোজা, আরও কত কী!

দুই মাস পুরোদমে চলে, তারপর ধীরে ধীরে আসে শৈথিল্য। ক্লান্ত শরীরটা বিশ্রাম চায়। ভাবি, "আজকে না হয় থাক, রমাদান আসতে এখনও অনেক বাকি।"

এভাবেই একে একে সব আমল ছুটতে থাকে। বিশ্রামের স্বাদ পেয়ে শরীর আর আগের অবস্থায় ফিরতে চায় না। বরং বাড়তি আমলের কথা শুনলেই যেন ভয় পায়।

দেখতে দেখতে লাইলাতুল বারাআতও চলে যায়। এবার সবার টনক নড়ে। রমাদান তো দোরগোড়ায় এসে গেছে। আবার ঝাঁপিয়ে পড়ে সবাই নতুন উদ্যমে প্রস্তুতি নিতে। তবে এবারের প্রস্তুতি ইবাদতের জন্য নয়, এবার শুরু হয় সাংসারিক প্রস্তুতি।

এ সময় সোশ্যাল মিডিয়া ভরে যায় রমাদানের আগে কীভাবে ঘরের কাজ এগিয়ে রাখতে হবে, সে বিষয়ে নানা পোস্টে। হুজুগে মাতাল হয়ে নারীরাও লেগে পড়ে রান্নাঘর গুছিয়ে নিতে। অন্যের পোস্ট দেখে প্রয়োজন নেই এমন কাজও শুরু করে।

এভাবে গোছগাছ করতে করতে কখন যে রমাদান এসে যায়, টেরও পায় না। শরীরে একরাশ ক্লান্তি নিয়ে ইবাদতেও আর মন বসে না। "আজ একটু কম তিলাওয়াত করি, কাল বেশি করে করবো"—এভাবে প্রতিদিন মনকে প্রবোধ দিলেও সেই "কাল" আর আসে না।

কিছুদিন পরেই শুরু হয় ঈদের কেনাকাটা। ঈদের দিনের জন্য রান্নাবান্না আর ঘর সাজানোর প্রস্তুতি। এত সব ব্যস্ততার মাঝে নীরবে বিদায় নেয় রমাদান। আবার শুরু হয় আফসোস—ইশ! এবারও রমাদানটা মনের মতো হলো না।

এই গল্পটা প্রায় সব প্র্যাক্টিসিং হতে চাওয়া নারীর রমাদানের গল্প। আমরা সবাই চাই আমাদের গল্পটা বদলাতে। কিন্তু সঠিক পদক্ষেপের অভাবে দিন শেষে এই গোলকধাঁধা থেকে বেরিয়ে আসতে পারি না।

কীভাবে আমরা আমাদের গল্পটা বদলাতে পারি, লিখতে পারি মনের মতো রমাদানের গল্প, সে সম্পর্কে ইনশাআল্লাহ ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে কিছু আলোচনা করার চেষ্টা করবো সামনের পর্বগুলোতে।

মনের মতো রমাদান
প্রথম পর্ব
জেরমিন আমাতুল্লাহ

রৌদ্রময়ী

রৌদ্রময়ী

15 Oct, 12:31


এই ফ্ল্যাটবাড়ির নির্মাণশৈলিতে মারাত্মক সমস্যা আছে। মুখোমুখি দুটো বাসার সদর দরজার অবস্থান এমন, দুপাশে দরজা খুললে একদম অন্দর পর্যন্ত নজর চলে যায়।

স্থপতির মাথায় ঘিলু থাকলে দরজাটা ডানে বামে কয়েক ফুট সরিয়ে দিতে পারতো। প্রাইভেসি বলে একটা ব্যাপার আছে।

মারিনা বিনতি মাহাথির সকাল আটটার ক্লাস ধরার জন্য দরজা খুলে প্রায় প্রতিদিনই এমন বিড়ম্বনার শিকার হয়। ওপাশের প্রতিবেশির সদর দরজা খোলা থাকে প্রায় সারাদিনই।

মধ্যবয়সী ভদ্রলোক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। প্রায় সকালেই হাতা কাটা স্যান্ডো গেঞ্জি আর লুঙ্গি পরে আয়েশ করে বসে পত্রিকা পড়েন। তার গৃহিনী তখন সকালের নাশতা নিয়ে তুমুল ব্যস্ত। তার ঘর্মাক্লান্ত কলেবরে ছুটোছুটি টের পায় মারিনা।

মনে মনে প্রচন্ড বিরক্ত লাগে লোকটার ওপর। তার নিজের ছেলে মেয়েরা কেউ স্কুলে, কেউ কলেজে যাবে, তাদের সব কিছু এগিয়ে দেয়া, হিমশিম খান মহিলা। এর মধ্যে উনি আবার হাঁক ছাড়েন- চা টা দিলে না এখনো? আমার নেভি ব্লু ট্রাউজারটা আয়রন করে দাও তো।

রাগে মারিনার গা চিড়বিড় করে ওঠে। তার বাবা কখনো মোটেও এরকম হাত গুটিয়ে বসে থাকেন না। কখনো রান্না করছেন। বাবার হাতের নাসি গোরেং সুপার টেস্টি। রান্না ছাড়াও ঘরের অন্য সব কাজে বাবা সাহায্য করেন।

নিষ্কর্মা পুরুষ মানুষ দেখলে মারিনার পিত্তি জ্বলে যায়। তবুও ভার্সিটির টিচার বলে কথা, তাকে তো অসন্তুষ্ট করা যায় না। প্রতিদিন বেরোবার মুহূর্তে উনি দরজা খুলে সোফায় বসে জুলজুল করে চেয়ে থাকবেন যতক্ষণ দেখা যায়। ওনার আটটায় ক্লাস থাকে না বলে প্রায়ই আরো পরে বের হোন।

মারিনা সালাম দিলে জবাব দিয়ে হেহে মার্কা হাসি দেবেন। সেই কুৎসিত চাউনি বুঝতে পারবে পৃথিবীর যে কোন প্রান্তের রমণী।

ওরা চারজন মালয়েশিয়ান মেয়ে একসাথে এই ফ্ল্যাটটা ভাড়া নিয়েছে। ভার্সিটির এত কাছে এত ছিমছাম বাসাটা খুব ভালো লেগেছিলো।

কিন্তু উটকো পড়শির এই ক্রমবর্ধমান উৎপাতে ভালো লাগাটা বিদায় নেবার পথে। সিনিয়ার টিচার হিসেবে না পারছে স্টুডেন্ট কাউন্সিলর বা ডিপার্টমেন্টে কোন টিচারের কাছে কমপ্লেইন করতে। না পারছে স্যারের ওয়াইফকে কিছু বলতে। এমনকি নিজের রুমমেটদেরও মুখ ফুটে বলতে পারছে না। সেই না পারাটা এত বড় কাল হয়ে দাঁড়াবে কখনো ভাবেনি মারিনা।

সেমিস্টার ফাইনাল এক্সাম খুব দেরি নেই। মারিনা খুব খাটাখাটুনি করছে। লেখাপড়ার জন্য বিদেশ বিরাজ্যে পড়ে থাকা। রেজাল্ট খারাপ করলে হবে? তবে প্রতিনিয়ত এই আকামের মানসিক চাপ পড়ার মনোযোগ অনেকটাই ধ্বংস করে দিয়েছে।

প্রতিবেশি রমিজ স্যারের শ্বশুর অসুস্থ। প্রায়ই তার স্ত্রী ছুটে যান বাবার বাসায়। গত এক সপ্তাহ ধরে তিনি হাসপাতালে বাবার কাছেই আছেন। ছেলেটা হলে চলে গেছে। দুই মেয়ে মায়ের সাথে নানাবাড়ি। ইদানিং স্যারের আচরণে দুঃসাহসিকতা যোগ হয়েছে তাতে।

সেদিন লিফটে স্যারের সাথে অনিচ্ছা সত্ত্বেও ঢুকতে হলো। তিনি স্বাভাবিক ভাবে কুশলাদি জানতে চাইলেন। পড়ালেখা বুঝতে কোন সমস্যা হচ্ছে কিনা খোঁজ নিলেন।

- এনি টাইম চলে আসবে। যা কিছু বুঝবে না বুঝিয়ে দেবো।
- জি আচ্ছা।
- প্রাকটিক্যাল আর ভাইভার নম্বর কিন্তু আমার হাতে বুঝলে?

মারিনা আড় চোখে তাকায়। গা ঘিন ঘিন করে আপাত নিরীহ দৃষ্টির লেহনে। মাথার স্কার্ফটা অনর্থক টেনেটুনে নেয় বুকের সামনে।

রমিজ স্যার এক চুল সরান না তার দৃষ্টি, আঠার মতো সেঁটে থাকে। লিফট থামতেই ছুটে বের হতে যায় মারিনা, খপ করে হাত ধরে ফেলেন প্রফেসর।
- আরে আরে করো কি? তুমি জানো এভাবে কত এক্সিডেন্ট হয়! অলওয়েজ লিফট পুরো স্ট্যাবল হলে পরে নামবে।

মারিনা যেন ইলেকট্রিক শক খেয়েছে। লিফট থেকে বেরোনোর পরেও হাত ছাড়ার নাম নাই।
- আমার হাত ছাড়ুন, স্যার। দৃঢ় কণ্ঠে বললো মারিনা।
- ওহ্ সরি, খেযাল ছিলো না। ইউ নো হোয়াট, ইটস টু সফট, আমার কী দোষ বলো।

মারিনা একরকম দৌড়ে নিজের ফ্ল্যাটে গিয়ে ঢোকে। কাঁপছে তার সারা শরীর। হ্যান্ড ওয়াশ দিয়ে দশ বারো বার হাত ধুয়েও তার মনে হতে থাকে সেই কদর্য স্পর্শ ধুয়ে ফেলতে পারেনি।

মারিনার বাকি তিনজন রুমমেট অন্য ডিপার্টমেন্টের ছাত্রী। কেবল তার ভাগ্যেই জুটেছে প্রফেসর রমিজের ক্লাস আর প্রাকটিক্যাল। এই ভয়ংকর দুঃস্বপ্ন থেকে বের হবার পদ্বতি ভাবতে ভাবতে সে কখন যেন ঘুমিয়ে পড়েছিলো।

একে একে ফিরেছে বান্ধবিরা। আয়শা কুয়ালা মারিনার বেস্টি। ওকে অসময়ে শুয়ে থাকতে দেখে কপালে হাত রাখলো।
- হেই, রিনা, হোয়াটস রং? ইটস সালাত টাইম। শুয়ে আছো কেনো?

মারিনা চোখ খুলে আয়শাকে দেখে। তার কোলের ভেতরে মুখ গুঁজে দেয়। আয়শা ভুরু কুঁচকালো, কদিন ধরেই মারিনা বেশ অন্যমনস্ক।
- কিছু কি হয়েছে? আমাদের বলো।
- না, এমনিতেই। দেশের জন্য মন টানছে।
- ওকে। আর মাত্র ওয়ান মান্থ। এক্সাম শেষে তো আমরা ঘুরে আসবো।

দিন যাচ্ছে ব্যস্ততায়। রুটিন হয়ে গেছে। দুই শিফটে এক্সাম চলছে। সেদিন আয়শাদের বিকেলের শিফটে ছিলো। মারিনা সকালের শিফটে এক্সাম শেষ করে এসে রাইস কুকারে ভাত রান্না করে মাত্রই খেয়ে উঠলো। এখন একটু শোবে। কাল রাত জেগে পড়েছে। কলিং বেলের আওয়াজে সে একটু থতমত খেলো। এই অসময়ে কে আসবে?

রৌদ্রময়ী

15 Oct, 12:31


হানা তাড়াতাড়ি বললেন- বসো বসো। সরি, আগেই বলা উচিত ছিলো।
- ব্যস্ত হবেন না। আমি ঠিক আতিথ্য পাবার যোগ্যতা রাখি না, সেটা জেনেই এসেছি। করুণভাবে তিনি মারিনার দিকে তাকালেন একবার। তার চোখ জলে ভরে গেলো।
- সরি আন্টি। ইটস নট ইওর ফল্ট। নিজেকে গিল্টি ভাবার কারণ নেই।

সুমনা কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে আস্তে আস্তে বললো- আপনারা নিশ্চয়ই লীগ্যাল একশনে যাবেন, সেরকমটা শুনছি।
- সেটাই তো স্বাভাবিক, তাই না? আমরা ভিনদেশি। মেয়ের সিকিউরিটির ব্যাপারে যথেষ্ট ওরিড।
- জি স্বাভাবিক। তবু আমি একটা অস্বাভাবিক অনুরোধ করতে এসেছিলাম।

সুমনা হঠাৎ উঠে এসে মারিনার দুহাত জড়িয়ে ধরলো।
- আমার বড় মেয়েটার বিয়ে। সব ঠিকঠাক ছিলো। আব্বার অসুস্থতার জন্য আটকে গেছিলো। রেপুটেড ফ্যামিলির ছেলে। এই অবস্থায় ওর বাবার নামে এরকম কিছু চাউর হলে বিয়েটা হয়তো ভেঙ্গে যাবে। তুমি তো একটা মেয়ে মা। আমার মেয়ের দিকটা ভেবে বিষয়টা যদি ওভারলুক করতে!

উত্তেজিত হয়ে ওঠে মারিনা- আপনি একটা মেয়ে হয়ে আমাকে এমন রিকোয়েস্ট করছেন? দিস ইজ এটেম্প টু রেপ কেইস- হালকাভাবে নেবার মতো কোনো বিষয় না। আমার জায়গায় আপনার মেয়ে হলে কী করতেন?

হাউ মাউ করে কেঁদে ফেলেন সুমনা। হাত পা ভেঙ্গে বসে পড়েন সোফায়। মুখ ঢেকে কাঁদছেন।

হানা চুপচাপ দেখছিলেন। মেয়েকে ইশারা করলেন- তুমি নিচে পুল সাইডে যাও তো, আমাদের একটু স্পেস দাও।

মারিনা হন হন করে বেরিয়ে গেলো। হানা ফাইজাহ সুমনাকে হালকা হতে দিলেন। তারপর তার পাশে এসে বসলেন ।
- তোমার কান্না শেষ হলে আমরা ঠাণ্ডা মাথায় কথা বলতে পারি।
- জি। ততক্ষণে শান্ত হয়ে গুছিয়ে বসেছে সুমনা।
- ইউ আর সো বিউটিফুল। ডাজেন্ট হী লাইক ইউ? আমাকে অন্যভাবে নিও না। আমি পেশায় একজন সাইক্রিয়াটিস্ট। তোমার হাজবেন্ডের প্রবলেমটা বুঝতে চাইছি।

রীতিমত জেরা করতে শুরু করলেন হানা ফাইজাহ। পেশাদার সাইক্রিয়াটিস্টের সূক্ষ্ম প্রশ্নের ফাঁদে সুমনা একে একে অনেক কিছুই বলে ফেলেছে নিজের অজান্তেই। যেন সে এখানে একটা সিটিং দিতেই এসেছিলো।

অনেক কথার পর হানা ফাইজাহ সন্তুষ্ট হলেন একসময়। তিনি বললেন- আমি হয়তো তোমার সমবয়সী হবো বা সামান্য ছোট হতে পারি। কিন্তু দেখ, তোমার চেয়ে আমাকে বয়স্ক দেখাচ্ছে বেশি, ঠিক না? অথচ আমরা হ্যাপি কাপল- পরস্পরকে সবসময় এনগেইজড রাখছি।

মারিনা বললো তুমি ঘরে যখন থাকো তখন তোমাকে উদভ্রান্ত দেখায়। এই সৌন্দর্য লাবণ্য যাকে আকর্ষণ করার কথা, তার সামনে তুমি কখনো এভাবে উপস্থাপন করো না।

এখন আসি মেইন পয়েন্টে। তোমার লাইফের সমস্ত সময়টা তুমি সংসারের গোছগাছ আর বাচ্চাদের বড় করার পেছনে ঢেলে দিয়েছো। আর যা বাকি থাকে সেটা তুমি দাও প্যারেন্টস আর রিলেটিভসদের।

দিনের পর দিন তুমি বাচ্চাদের লেখাপড়া দেখ, তাদের সাথে রাত জাগো, তাদের ফুড প্রিপেয়ার করো, তাদের সঙ্গ দাও, পাশের ঘরে ঘুমোও, তোমাদের ভেতরে ইনটিমেসি নেই দিনের পর দিন। তোমার কাছে হয়তো এটার প্রয়োজন ফুরিয়ে গেছে।

বাচ্চা হয়েছে, সংসার হয়েছে, এখন তাদের বড় করবো, এটাই তোমার ভাবনা। সেদিক থেকে তুমি সফল মা। তোমার বাচ্চারা শাইন করেছে।

বাট- তোমার হাজবেন্ডের কিছু চাহিদা আছে, তুমি সেটা ইগনোর করে গেছো। সেটার পরিণতি হয়তো তুমি বোঝনি। তার চরিত্রের দিকে এই যে আজ সবাই আঙ্গুল তুলছে, তার কিছুটা দায় কিন্তু তোমার ওপরেও আসে। বুঝতে পারছো?

সুমনা মাথা নীচু করে বসে রইলো।
- তুমি যাও, হাজবেন্ডের সাথে টাইম স্পেন্ড করো। দেখো তাকে কারেকশন করতে পারো কিনা। আই উইল ট্রাই মাই বেস্ট ফর ইওর ডটারস সেক। বাট এটাই ফার্স্ট, এটাই লাস্ট। আমার মেয়েকে আমি থাকার জায়গা বদলে দিতে পারবো, ডিপার্টমেন্ট বদলাতে পারবো না।

কাজেই মেয়ের সিকিউরিটির জন্য আমাকে কিছু ব্যবস্থা নিতেই হবে। সেটা ডিপার্টমেন্টের সিনিয়রদের ভেতরে সিক্রেট রাখার অনুরোধ করে যাবো, যদি না সেকেন্ড টাইম এমন কিছু ঘটে। তুমি কি ওনাকে মেসেজটা বুঝিয়ে বলতে পারবে?

সুমনার ছলছল চোখ দুটিতে কৃতজ্ঞতা ছুঁয়ে গেলো। ক্ষীণ স্বরে মৌখিক ধন্যবাদ জানিয়ে সে প্রস্থান করলো।

দীর্ঘশ্বাস ফেললেন হানা ফাইজাহ। বড় জটিল সমীকরণ! স্বামীর বেফাঁস কীর্তি জেনেও তার হয়ে কথা বলতে এসেছে, আরেক নারীর জন্য। পরের আত্মজার ইজ্জত ছাপিয়ে নিজের আত্মজার ইজ্জত রক্ষার আবদার। মাঝখানে নিজের কি কোন চাওয়া পাওয়া নেই?

যত উপদেশ তিনি দিলেন সহজে, এই সুমনা মেয়েটা কি তত সহজে আর কোনোদিন স্বামীর আলিঙ্গনে ভালোবাসায় আত্মসমর্পণ করতে পারবে? যখনি মনে হবে এই হাত অবৈধ কামনায় কাউকে ছুঁতে গিয়েছিলো? কে জানে!

জটিল সমীকরণ
হোসনে আরা হাসি

রৌদ্রময়ী

রৌদ্রময়ী

15 Oct, 12:31


পিপ হোলে উঁকি দিয়ে তার চক্ষু স্থির। রমিজ স্যার- হাতে কিছু শিট। খুলবে কি, খুলবে না দোটানায় পড়ে যায় মারিনা। শেষে অল্প একটু ফাঁক করে সালাম জানালো।

- স্যার আপনি?
-হ্যাঁ- এই শিটগুলো রাখো। নেক্সট এক্সামে বসার আগে চোখ বুলাবে।

মারিনা শিটগুলো নিয়ে থ্যাংক ইউ বলে দরজা বন্ধ করতে চাইলে উনি তার একটা পা ঢুকিয়ে দিলেন দরজার ফাঁকে।
- একটু চা খাওয়াবে? ঘরে তোমার ভাবি নেই। নেটফ্লিক্সে মুভি দেখছিলাম। চা ছাড়া ঠিক জমছে না। তুমি চাইলে কমপ্যানি দিতে পারো। একা একা মুভি দেখে মজা নেই।

মারিনার সারা গা শিউরে উঠলো। কী না কী মুভি দেখেছে কে জানে। চোখের দৃষ্টি মোটেও স্বাভাবিক নয়। মারিনা প্রাণপণে বাধা দিয়েও তার অনুপ্রবেশ ঠ্যাকাতে পারলো না। ভয়ে হাত পা ঠাণ্ডা হয়ে এলো। কোনরকমে তোতলাতে তোতলাতে বললো- ও ও ক্কে, আপনার বাসায় যান, চা বানিয়ে দিয়ে যাচ্ছি।
রমিজ স্যার এগিয়ে এসে হাত দুটি ধরলেন।

নেশালো গলায় বললেন- এত ভীতু কেন তুমি। ইটস টুয়েনটি ফার্স্ট সেঞ্চুরি। এত রিজার্ভ হলে চলে? লেটস এনজয়। তোমার রেজাল্টের চিন্তা করতে হবে না। জাস্ট মেক মী হ্যাপী। আইম লোনলি ইউ নো, ভেরি লোনলি!

মারিনাকে তিনি জড়িয়ে ধরার চেষ্টা করছেন। মারিনার গায়ে হঠাৎ করেই প্রচন্ড শক্তি এসে ভর করলো।
হেল্প, হেল্প মী- প্রচন্ড জোরে চেঁচামেচি করতে শুরু করলো সে।

হাত ছুটিয়ে নিয়েছে- তাকে ধরার চেষ্টা করছে রমিজ সাহেব। ছুটাছুটির ফাঁকে ফাঁকে সদর দরজা খুলতে না পারলেও ধাক্কাধাক্কি করে যাচ্ছে মারিনা। হাতের কাছে যা পাচ্ছে, বই খাতা, চিরুসি গ্লাস ছুঁড়ে মারছে এলোপাতাড়ি।

এতে কাজ হলো। ধ্বস্তাধ্বস্তির শব্দে পাশের দুই তিন ফ্ল্যাট থেকে অনেকেই এসে উঁকি দিতে শুরু করেছে। মারিনাদের ব্যাচের মেয়েরাও ছিলো। পাশের কয়েক বাসায় তাদের আরো ব্যাচমেট ভাড়া থাকে। ঝটকা দিয়ে দরজা খুললো কেউ। মারিনা ছুটে গিয়ে তাদের একজনের গায়ের ওপর ঢলে পড়লো জ্ঞান হারিয়ে।

পরীক্ষার দিনগুলো আর নিজের ফ্ল্যাটে ফিরবার সাহস পায়নি মারিনা। পাশের ফ্ল্যাটে থাকছে। পুরো বিল্ডিংয়ে কানাঘুষা চলছে। প্রত্যক্ষদর্শী যারা ছিলো সুযোগ বুঝে কিছু রঙ চড়াতে ছাড়েনি। এক রকম বিধ্বস্ত অবস্থায় পরীক্ষার দিনগুলো শেষ হলো। এর মধ্যে রমিজ স্যার হুমকি দিয়ে দু চারটা টেক্সট পাঠাতে ভোলেননি।

এগুলো যে প্রমাণ হিসেবে তার বিরুদ্ধে যেতে পারে, তার মাথায় হয়তো সেটা আসেইনি। ছাত্রীর সিজিপিএর কিছুটা নিয়ন্ত্রণ যখন মাস্টারের হাতে থাকে, তখন তার আত্মবিশ্বাসটাও হয়তো বেশি থাকে। কী আর করবে পুঁচকে মেয়েটা।

তবে পুঁচকে মেয়েটা থেমে রইলো না। অনেক ভেবে চিন্তে সে তার বাবা মাকে খবর দিয়ে আনলো। লেখাপড়ার সূচনাতেই মুখ থুবড়ে পড়লে বাকি বছর গুলো সে কিভাবে পাড়ি দিবে? তার নিরাপত্তা দরকার, সাহস দরকার।

হোটেল পারাবাত ইন্টারন্যাশনালের একটা ডাবল বেড রুমে উঠেছেন মাহাথির দম্পতি। তারা লইয়ারের সাথে আলাপ আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এমবেসির মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে বিষয়টা নিয়ে অভিযোগ করা হবে।

একই সঙ্গে স্থানীয় থানায় জিডি করা হবে। তারা যাবতীয় প্রমাণ এবং ডকুমেন্টস একসাথে করে এটা নিয়েই আলাপ আলোচনা করছিলেন। ইন্টারকম থেকে ফোন এলো।

- মিঃ মাহাথির, স্যার!
- স্পিকিং।
- ইউ হ্যাভ এ ভিজিটর। শী ইজ রিকোয়েস্টিং টু মীট ইউ।
- এন্ড হু ইজ শী?
- মিসেস সুমনা।
ভ্রু কোঁচকালেন মাহাথির। নামটা মাথায় ক্লিক করছে কিন্তু ধরতে পারছেন না।
- ওকে, সেন্ড হার প্লিজ।

- কে বাবা?
- এই সুমনাটা আবার কে? চিনিস নাকি?
মারিনা দারুণ বিস্মিত হয়েছে। মুখ শুকিয়ে গেছে কিছুটা।
- রমিজ স্যারের ওয়াইফ বাবা।
- তাই? উনি আবার কী চান?
- মহিলা খুব ভালো বাবা। ওনার সাথে খারাপ ব্যবহার কোরো না।
মিসেস মাহাথির বললেন- তুমি ব্যাটা মানুষ, ছাদে হাওয়া খেয়ে আসো যাও। মেয়েদের কথার ভেতরে তোমার থাকতে হবে না। আমি সামলাতে পারবো।

সুমনার পরনে সবুজ জমিন সোনালি পাড়ের একটা হাফ সিল্কের শাড়ি। চুলগুলো পেঁচিয়ে পাঞ্চ ক্লিপ আটকানো। প্রসাধনি বলতে হালকা লিপ গ্লস মেখেছেন। তাতেই কী চমৎকার দেখাচ্ছে তাকে। বোঝার উপায় নেই তার ভার্সিটি পড়ুয়া ছেলে মেয়ে আছে।

উনি মারিনাকে চেনেন। মারিনা কাজ চালানোর মত বাংলা জানে। তবে তার মা হানা বাংলা জানেন না। মারিনা দুজনকে ইংরেজিতেই পরিচয় করিয়ে দিলো। সালাম বিনিময় হলো।

হানা হাত মেলালেন- নাইস টু মীট ইউ বিউটিফুল লেডি।

রমিজ স্যারের স্ত্রীকে মারিনা যতবার দেখেছে, এলোমেলো চুল, পোশাকে কোনো পারিপাট্য নাই, কেবল তাড়াহুড়া। উনি যে এতটা সুন্দর মারিনা আজ প্রথম উপলব্ধি করলো।

সে ফিসফিস করে মালয় ভাষায় মাকে সেটা বলেও ফেললো- ওনাকে এভাবে প্রথম দেখলাম। উনি এত গুছিয়ে কখনোই থাকেন না। সারাক্ষণ বাচ্চাদের নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। সংসারের সব তার পারফেক্ট হওয়া চাই। ড্রইং রুমটাও একদম ছবির মত সাজানো থাকে। কেবল নিজে থাকেন ওয়াইল্ড ওম্যানদের মতো।

মা মেয়ের গুজ গুজ শুনে প্রবল অস্বস্তিতে পড়েছে সুমনা। প্রবল কুণ্ঠার সাথে সে বললো- অনুমতি দিলে আমি কি বসতে পারি। আমার কিছু বলার ছিলো।

রৌদ্রময়ী

14 Oct, 13:57


“নামাজ পড়ে আবার এইটা করে, এই নামাজ শুদ্ধ হবে?
পর্দা করে আবার ঐটা করে, দরকার কী এমন পর্দার?”

প্রায়ই আমাদের চারপাশ থেকে এ ধরণের আওয়াজ আসে। বিশেষ করে যারা প্রাক্টিসিং তাদের এমন কথা অহরহ শুনতে হয়।

আবার কেউ প্রাক্টিসিং, অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে নিজের হক্বের জন্য লড়াই করছে, তখন তার ধর্মকে টেনে তাকে হেনস্তা করে কাছের মানুষগুলোই। তাদের কাছে ধর্ম মানেই কেবল মাজলুম সেজে সব সহ্য করে যাওয়া।

আমি বুঝিনা, আমাদের সাইকোলজি এমন কেন?
কেউ নামাজ পড়লে আমরা তাকে পীর আউলিয়া ভেবে কেন বসে থাকি?

শরিয়তের ফরজ হুকুম নির্দেশ করে, আপনি মুসলমান কিনা। অর্থাৎ কেউ নামাজ পড়লে আমাদের প্রথম চিন্তা হবে সে অমুসলিম নয়। এরপরে আসবে মানুষ হিসাবে সে কেমন, ভালো খারাপ দুটো মিলিয়ে থাকবে এটাই তো স্বাভাবিক।

এখন কেউ আপনার মতের বিরুদ্ধে গেলে আপনি তাকে নামাজ, পর্দা নিয়ে খোঁটা দিলেন, আদায় হবেনা বলে দিলেন।

অথচ দিনের পর দিন আপনার ইবাদাত আল্লাহর কাছে কতটুক গ্রহণযোগ্যতা পাচ্ছে সেটা কিন্তু আপনি জানেননা।

মানব গুণাবলিতে ত্রুটি থাকবে এটাই স্বাভাবিক। নিজের দোষগুলো কিন্তু আমরা নিজেরা সহজে ফিল করিনা, নিজেকে সাধু ভেবে বসে অন্যের গুজারেশ করি।

কারো ব্যক্তিত্ব নিয়ে চিন্তা করে তার উপর আরোপিত ফরজ হুকুমকে প্রশ্নবিদ্ধ করা অত্যন্ত নিচু দৃষ্টিভঙ্গি।

ধরুণ, মানুষ হিসাবে বেঁচে থাকতে আমরা অক্সিজেন নেই এটা নরমাল। এখন ভালো মানুষও যেমন অক্সিজেন নেয়, খারাপ মানুষও তেমন অক্সিজেন নেয়। খারাপ মানুষের দোষ বর্ণনা করতে গিয়ে কই আমরা তো পিঞ্চ করিনা যে, এহ এমন খারাপ আবার অক্সিজেন নিচ্ছে!

শুনতে হাস্যকর লাগবে তাইনা?

নামাজও অনেকটা তেমন, মুসলমানদের অক্সিজেন। সবাইকে পড়তেই হবে। এরপর সেই নামাজ ধীরে ধীরে তার পরিবর্তন আনবে নাকি ধ্বংস সেটা পরের বিষয়, সম্পূর্ণ আল্লাহর ইচ্ছে এবং বান্দার নিয়তের উপর নির্ভরশীল। যা আমরা জানিনা।

সুতরাং ব্যক্তি যেমনই হোক তার ফরজ ইবাদাতের সাথে গুণাবলি মিক্স করে প্রশ্নবিদ্ধ করে কাউকে অনুৎসাহিত কিংবা আঘাত না করি। তার ইবাদাত কবুল হবে কিনা সেটা তার রব্বের উপরই ছেড়ে দেই।

শুধু ফরজ হুকুম পালন করলেই কেউ অলী হয়ে যায়না। ঈমানের অনেক চড়াই-উৎরাই থাকে, শরিয়তের অনেক বিস্তর শাখা আছে।

বরং আমরা ভালো ধারণা রাখতে পারি যে, তার ফরজ হুকুম তাকে তার ওয়াজিব, সুন্নাহ, নফল পালনেও অন্তর মসৃণ করে তার ঈমানকে বৃদ্ধি করবে, মানব ত্রুটি কমিয়ে আনবে ইন শা আল্লাহ।

নিশ্চয়ই আল্লাহ আমার প্রতিও যেমন ক্ষমাশীল তার প্রতিও তেমন ক্ষমাশীল।

ত্রুটি থাকবেই
আয়রা তেহরিম উষ্মী

রৌদ্রময়ী

রৌদ্রময়ী

13 Oct, 12:31


১. প্রচন্ড রাগে শরীর রীতিমতো কাঁপছে মুনিয়ার! তার সবচেয়ে দুর্বল জায়গায় খোঁচা মেরে কথাটা না বললে হতো না? একটু বোকাসোকা টাইপের দেখে কি মানুষ তাকে যা ইচ্ছা তা-ই বলবে?

টপটপ অশ্রু ফোঁটায় ডায়ারির অক্ষরগুলো ঝাপসা হয়ে যাচ্ছে। কামড়ে ধরে রাখা নিচের ঠোঁট কেঁপে কেঁপে উঠছে। মাথায় ঘুরছে সুরা নূর এর ২২ নাম্বার আয়াত, “তোমরা কি পছন্দ করো না যে আল্লাহ তোমাদেরকে ক্ষমা করে দিবেন?... তোমরা কি পছন্দ করো না যে আল্লাহ তোমাদেরকে ক্ষমা করে দিবেন? আল্লাহ ক্ষমাশীল এবং অতীব দয়ালু!” “কী মুনিয়া? তুমি কি চাওনা আল্লাহ তোমাকে ক্ষমা করে দেক?” ভাঙ্গা টেপ রেকর্ডের মত কথাগুলো মাথায় রিপ্লে হতে থাকে।

ডায়ারির পাতায় খসখস করে লেখা শুরু হল, “হে আল্লাহ! আমার প্রিয় রব! আপনি এবং আপনার ফেরেশতারা সাক্ষী! আপনার যেই বান্দা আজকে আমার অন্তরটাকে দুমড়ে মুচড়ে দিল, আমি তাকে ক্ষমা করে দিলাম। শুধুমাত্র এই আশায় যে কিয়ামতের দিন যখন আপনার ছায়া ব্যতীত কোনো আশ্রয়স্থল থাকবে না, সেদিন আপনি আমাকে ক্ষমা করে দিবেন।” লেখা শেষ করে কলম নামিয়ে রাখল মুনিয়া।

এরকম প্রশান্তি তার শেষ কবে লেগেছিলো,‌ ঠিক মনে করতে পারছে না।

২.
আকরাম হোসেনের খুব অস্থির লাগছে। রাগ উঠলে তার মাথা ঠিক থাকে না। আপন মেয়ে মুনিয়ার সাথে এত চিল্লাপাল্লা করল! বড়দের কথার মধ্যে বেয়াদবের মত নাক গলাতে এসেছিল! মেজাজটাই চড়ে গেল! তাই বলে নিজের মেয়েকে এভাবে গালিগালাজ করা ঠিক হয়নি। অস্থিরতা থেকে হঠাৎ করে আকরামের বুকে ভীষণ চাপ লাগলো।

এমনিতেই হৃদরোগের হিস্ট্রি আছে। বেশি চাপ নিতে পারেন না। কিছু বোঝার আগেই মাথা ঘুরিয়ে ধপাস করে মেঝেতে পড়ে গেলেন আকরাম হোসেন। এরপরে আর কিছুই মনে নেই।

আকরাম হোসেনকে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। হালকা হুঁশ ফিরছে! তার মনে হচ্ছে কেউ ধারালো করাত দিয়ে বুকটা চিরে দিয়েছে। প্রচণ্ড ব্যথা, সারা শরীর অবশ, মাথাটা ভারী হয়ে আছে।

জীবনে রোগবালাই অনেক হয়েছে, কিন্তু এত দুর্বল এবং প্রচন্ড যন্ত্রণা কখনো হয়নি! তাকে চোখ পিটপিট করতে দেখে পাশ থেকে মুনিয়া বলল,“ আব্বু! আসসালামু আলাইকুম, লা বা'সা তহুরুন ইনশাআল্লাহ, আব্বু!”

কী ব্যপার? মুনিয়াটা কাঁদছে নাকি? আহারে মেয়েটা আমার এত সহজ-সরল! আকরাম সাহেব আর কিছু শুনতে পারছেন না।

তার মাথায় ঘুরছে- “লা বা'সা তহুরুন ইনশাআল্লাহ” অর্থাৎ, “কোনো ক্ষতি নেই! আল্লাহ যদি চান এই রোগটি পবিত্রকারী।” এই প্রচন্ড কষ্ট-শারীরিক যন্ত্রণার মাধ্যমে গুনাহগুলো হয়তো ঝরে যাচ্ছে! আহা কত কত গুনাহ! দুনিয়াতেই এই গুনাহের বিহিত হয়ে যাক। এই ভারী বোঝা আখিরাত পর্যন্ত নিয়ে যাওয়ার সামর্থ্য নেই! বুকের ব্যথাটা বাড়ছে!

“মিস্টার হোসেন, আমাকে শুনতে পাচ্ছেন?” ডাক্তারের কথাগুলো মনে হচ্ছে অনেক দূর থেকে আসছে, অনেক অনেক দূর! অস্থিরতার মধ্যেও এক পশলা বৃষ্টির মতো শান্তি যে, “গুনাহ গুলো ঝরে যাচ্ছে ... কোনো ক্ষতি নেই আকরাম ... কোনো ভয় নেই ...”

৩.
রাত বাজে ৩ টা ৫০। বাবার বেডের পাশেই বসা বড় ছেলে মুয়াজ। এরকম ক্রিটিকাল অবস্থায় বাবাকে রেখে বাসায় ফেরেনি। মা এবং বোনকে পাঠিয়ে দিয়ে সে চলে এসেছে।

বাবা তো তার বন্ধুর মতোই। রাগটা একটু বেশি। যতই বকুক, দিনশেষে বাবা তো বাবাই! অনেক ঘুমানোর চেষ্টা করলো মুয়াজ। ঘুম যেন তার সাথে আড়ি! আনমনে স্মার্ট ফোনটা হাতে নিয়ে স্ক্রোলিং শুরু করল।

নিউজ ফিডে একটা কমেন্ট দেখে চোখ আটকে গেল। খুব মডার্ন এক বন্ধু ইসলামকে কটাক্ষ করে কিছু কথা লিখেছিল। ইতিমধ্যে সেই কথার জবাব খুব সুন্দর ভাবে মুয়াজ দিয়েছে।

মুয়াজ এটাও বলেছে, আরো আলোচনা করতে চাইলে যেন তাকে ফোন দেয় অথবা সামনাসামনি কথা বলে। ইসলামের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের কথা ফেসবুকে কমেন্ট চালাচালির জন্য না‌। এটা নিয়ে সুষ্ঠুভাবে আলোচনা করাটা সময়ে দাবি!

মুয়াজের শেষ কমেন্টের উত্তরে সেই বন্ধু আজকে খুব বাজেভাবে খোঁচা দিয়ে আরেকটা কমেন্ট করেছে! সেটা দেখে মুয়াজের খুব বিরক্ত লাগলো!

সুবহান আল্লাহ! আসলেই এদের অন্তর যেন অন্ধ। এত সুন্দর ভাবে যুক্তি, বিশ্বাস, বিনয় দিয়ে বুঝানোর পরও কীভাবে একটা মানুষ অজ্ঞতাকে কামড়ে বসে থাকতে পারে!

মুয়াজের মাথায় দাঁতভাঙ্গা একটা জবাব চলে আসলো। প্রতিউত্তরের কমেন্ট বক্সে টাইপ করতে করতে টের পাচ্ছে যে, উত্তেজনায় তার হার্টবিট বেড়ে যাচ্ছে। এই উত্তর দেখে অপর সাইডের চেহারার অবস্থাটা যা হবে না! নিজের কথায় নিজেই প্যাঁচ খেয়ে যাবে।

হঠাৎ কী মনে করে মুয়াজ টাইপিং থেকে একটু বিরতি নিল। বুড়ো আঙুল দিয়ে একটানে পুরো উত্তরটা মুছে দিল। তাঁর সবচেয়ে প্রিয় ব্যক্তি, রসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “ন্যায় এর স্বপক্ষে থেকেও যে ব্যক্তি তর্ক পরিহার করে, তার জন্য জান্নাতের মধ্যস্থলে এক গৃহ নির্মাণ করা হয়। আর যে ব্যক্তি তার চরিত্রকে সুন্দর করে তার জন্য জান্নাতের উপরিভাগে গৃহ নির্মাণ করা হয়।”
(আবু দাউদ, ইবনে মাযাহ, বায়হাকী)

রৌদ্রময়ী

13 Oct, 12:31


পাশে শুয়ে থাকা শরীর ভেঙে যাওয়া বাবার দিকে তাকালো মুয়াজ। মাটির ৬ হাত নিচে তখন তাকে যেতে হবে, এই দাঁতভাঙ্গা জবাব কি তখন সত্যিকার অর্থে তার কাজে আসবে?

ইসলামের দাওয়াত যতোটুকু দেওয়ার ছিল, ইতোমধ্যে দিয়ে দিয়েছে! এরপরেও এই কমেন্ট চালাচালি করলে এটা তার ইগোকে প্রশ্রয় দেওয়া ছাড়া আর কিছু না। কোন দরকার নাই এই ইগো-ফিডিং! বরং এর বিনিময়ে জান্নাতের একটা ঘর চেয়ে নিব আল্লাহর কাছে।

অনলাইনে তর্কাতর্কি চালিয়ে গেলে আরো কয়েকজন মানুষ এসে এই চেইনে যোগ দিবে। আগুনে ঘি ঢালবে। সম্পর্কগুলো নষ্ট হবে। এই অশান্তির বিনিময়ে জান্নাতের একটা বাড়ির অফার ছেড়ে দিবে কেন?

আল্লাহর কাছে জান্নাতে একটা বাড়ির আবদার করা যাবে—এই চিন্তাটা কী পরিমান প্রশান্তি অন্তরে এনে দিলো সেটা মুয়াজ ছাড়া আর কেউ বুঝবেনা!

মুয়াজ তাহাজ্জুদের জন্য উঠে গেল! এখন যে দুয়া কবুল হওয়ার সময়! দ্বিতীয় রাকাতে সেজদারত অবস্থায় সে শুনতে পেল তার বাবার মনিটর থেকে বিপ বিপ সাউন্ড হচ্ছে। নাইট শিফটের নার্সরা, কর্তব্যরতরা একে একে বাবার রুমে ঢুকছে, তাদের পায়ের শব্দ মুয়াজের কানে আসছে!

“ইয়া জুল জালালি ওয়াল ইকরাম, আপনার কাছেই নিজেকে সঁপে দিলাম, আমার বাবাকে আপনার হাওলায় দিয়ে দিলাম, আপনি আপনার বান্দাকে সবচেয়ে বেশি ভালবাসেন, আপনি ছাড়া আমাদের অভিভাবক আর কেউ নেই ইয়া রব্বানা! ...”

৪.
মরিয়ম চৌধুরী নড়তে পারছেন না। একটু আগেই ছেলে মুয়াজের ফোন এসেছিল। ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। মরিয়মের স্বামী আকরাম হোসেন আর এই দুনিয়াতে নেই।‌ স্বামীর মালিকের কাছে চলে গেছেন। শুরু থেকেই তো তিনি আল্লাহরই সম্পত্তি, মালিকানাধীন। আল্লাহর কাছেই ফিরে যাওয়ার কথা।

সবই তো জানি। তবে পায়ের নিচ থেকে মাটিটা যখন সরে যায়, ধাক্কাটা সামলাতেও কিছুটা বেগ পেতে হয়। “চোখে পানি আসবে, অন্তর দুঃখে ভরে যাবে, তবু ঠোঁট এমন কিছু উচ্চারণ করবে না, যাতে রব অসন্তুষ্ট হয়!”

মনে পড়ে গেল প্রিয় রসূল ﷺ এর কথা গুলো! তিনি এই কথাগুলোই বলেছিলেন তার শিশুপুত্র ইব্রাহিমের মৃত্যুতে। আল্লাহর এত প্রিয় মানুষটাকেও যখন এই পরীক্ষার মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে, মরিয়ম কি চিন্তা করে ভেবে রেখেছিল যে মরিয়মকে পরীক্ষা দিতে হবে না?

২৭ বছরের সংসার একসাথে! কত হাসি-কান্না উত্থান-পত্তন... কত স্মৃতি! বাকি সংসারটা যেনো জান্নাতে গিয়ে কন্টিনিউ হয়! আমিন।

“আল্লাহ আপনি মানুষটাকে জান্নাতে আমার স্বামী হিসেবে কবুল করেন! তার ভুলত্রুটি, গুনাহ সব ক্ষমা করে দিন!”

আল্লাহর প্রকৃত বান্দাদের জন্য মৃত্যু মানেই চিরবিদায় নয়। চোখ ধাঁধানো রাজকীয় প্রাসাদ এবং অকল্পনীয় মনোরম ঝর্ণার ধারে গিয়ে জান্নাতে আবার প্রিয় মানুষগুলোর সাথে দেখা হয়ে যাওয়ার আশা আছে! জান্নাতের লাল-নীল বাগানে প্রতিটা চোখের পানির ফোঁটার প্রতিদান পাওয়া যাবে ইন শা আল্লাহ! _________

আল্লাহর দ্বীনকে অন্তরে, আমলে, জীবনে পরিপূর্ণ ভাবে ধারন করতে না পারলে, আপনি কখনই বুঝবেন না যে, দ্বীন জীবনকে কীভাবে সহজ করে দেয়! জীবনের কঠিন মুহূর্তগুলোকে অর্থবহ করে দেয়, দুঃখের পাহাড় ডিঙানোর শক্তি যোগায়!

“আলহামদুলিল্লাহ আল্লাহ আছেন, আমাকে শুনছেন, আমি তাঁর বাধ্য বান্দী! আমি তাঁর তত্ত্বাবধানে!”— এটা একটা ভীষণ মানসিক শক্তির জায়গা! আল্লাহর প্রতি সুধারণা রাখা, তাকওয়া, তাওয়াক্কুল, মুমিনের দুয়া - এগুলোর সমন্বয় প্রচন্ড শক্তিশালী এবং ইন্ধন যোগানকারী!

আমি মুসলিম। আমি বিশ্বাসী বান্দা‌। তার মানে এই না আমার জন্য দুঃখের পাহাড়গুলো অদৃশ্য হয়ে যাবে। বরং আমি আল্লাহর বান্দী, তাই আমার জন্য প্রত্যেকটা পাহাড় ডিঙানো সহজ এবং অর্থবহ হয়ে উঠবে।

এভাবেই বান্দা বলে:
حَسْبُنَا اللَّهُ وَنِعْمَ الْوَكِيلُ،
হাসবুনাল্লাহু ওয়া নিমাল ওয়াকিল

“আমাদের জন্য আল্লাহই যথেষ্ট, এবং তিনি কতই না চমৎকার কামিয়াবী দানকারী।”
(আলে-ইমরান: ১৭৩)

হাসবুনাল্লাহ
শারিন সফি অদ্রিতা

রৌদ্রময়ী

রৌদ্রময়ী

12 Oct, 13:01


মানুষের প্রতি মানুষের বিশ্বাস এ বিষয়টা একটা বাড়ির মত। একটা সময় কিছু না থাকা জায়গায় একটা বাড়ি বানানোর স্বপ্ন বা পরিকল্পনা মনে জাগে। তারপর নকশা হয়। উপকরণ একে একে আসতে শুরু করে। ভিত্তি করা হয়। ইটের ওপর ইট রেখে তৈরি হতে থাকে বাড়ি। একসময় বাড়ি বানানোর কাজ সম্পন্ন হয়।

শুরু হয় সৌন্দর্য বর্ধনের পালা। সেটাও অনেক আনন্দে শেষ হয়। বেশ বছর এক দুই চোখ বন্ধ করে স্বপ্নের বাড়িতে থাকা। তারপর হঠাৎ ঘুম থেকে উঠে দেখলেন পানির কলটা ভেঙে গেল নয়তো হ্যান্ড শাওয়ারটা নষ্ট, কমোডের ফ্লাস কাজ করছে না নয়তো বেসিনে পানি জমে থাকে।

ব্যাস শুরু হয়ে গেল বাড়ির ভেতরে মেরামত করে থাকা পর্ব। এর এক বছর যেতে না যেতেই খেয়াল করলেন না এবার আর বাইরে রঙ না করলে হচ্ছে না।

বাড়ি কিন্তু দিব্যি টিকে থাকবে ত্রিশ, চল্লিশ, পঞ্চাশ, শতবছর কিংবা তারও বেশি। ঐ যে যেমন ভিত্তি করেছে সেরকমই হবে স্হায়িত্বকাল।

মানুষে মানুষে সম্পর্কের বিষয়টাও তেমনি। শুরুটা যত সুন্দরই হোক কটা বছর না যেতেই অসামনঞ্জস্য অসংগতি জীবনের নানা ধাপে নানা রুপে আসে। এ যেন সম্পর্কের এক অবধারিত নিয়তি। কম বেশি সব সম্পর্কে ঘটবেই!

বাবা-মা ও সন্তান হোক, ভাই-বোন হোক, স্বামী-স্ত্রী হোক যেকোন দুজন মানুষের মধ্যে সম্পর্ক শুরুর আগের একটা কল্পনা আছে, স্বপ্ন আছে, গল্প আছে, আকাঙ্ক্ষা আছে।

দেখুন না, বিয়ের পরে একটা মেয়ে কল্পনায় মা হয় প্রথমে। মা হওয়ার একটা অদম্য ইচ্ছা তার মনে তীব্র আকাঙ্ক্ষা তৈরি করে। সেই ধারাবাহিকতা থেকে ঐ বাড়ি বানানো, মেইনটেইনের মত করে সন্তান জন্মদান লালন-পালন কত কী! আমৃত্যু বয়ে চলা সম্পর্ক।

আর বিশ্বাস?

ঐ বাড়ির ভেতরকার মেরামত কাজ, ওয়ালের রং করার মত সম্পর্কেও কিছু মেরামতের জায়গা বের হয়।

আব্বা, বাবা, মানিক, জাদু, মা, সোনা, কলিজা, ময়না ডাকা সন্তানের প্রতি মায়ের কথার টোন চেন্জ হয়। সেদিনের ঐ স্বপ্ন দেখা মেয়েটাই কিন্তু আজকের বিরক্ত, ক্লান্ত, পরিশ্রান্ত, দুশ্চিন্তাগ্রস্ত, রাগান্বিত মা!

বুকে লেপ্টে থাকা সন্তান কথা বুঝতে চায় না। ৭/৮/৯ বছরের সময়ে মাঝে মধ্যে অনেক কথা লুকায়, মা বকবে বা শুনবে না, মা- বাবার প্রতি আস্হা কমে। মায়েরও আত্মবিশ্বাস ডগমগায় প্রতিক্ষণে। এই বুঝি কথা শুনবে না, অন্যদের আচরণে প্ররোচিত হবে।

দেখেন না, ঐ স্বপ্নের বাড়িটার মত মা-বাবা, সন্তান উভয়েই নিজ নিজ জায়গা থেকে দ্বিধা শংকায় ভুগছে। আবার সম্পর্ক মেরামতের চেষ্টাও করছে, নিজেকে আস্বস্ত করার জায়গা খুঁজছে যে তারা একে অপরের কমফোর্ট জোন।

তবে, বিশ্বাস বিষয়টাকে গ্রান্টেড নেওয়া যাবে না। বিশ্বাস অর্জন করতে হবে আর ধরে রাখার চেষ্টা করতে হবে। ঐ বাড়ি বানানো ও সবসময় মেরামত করে যাওয়ার মত করে।

আপনি জানেন আপনার আপনজনেরা, আপনার পার্টনার, অভিভাবকরা আপনাকে বিশ্বাস করে। এটা তাদের মনের অবস্থা আপনার প্রতি।

আর আপনি সবসময় সতর্ক থাকেন যে অবিশ্বাসী হওয়ার মত কোনো আচরণ, কোনো কার্যক্রম আপনার দ্বারা যেন না হয়। এটা আপনার মনের অবস্থা আপনার পার্টনার, অভিভাবকদের জন্য।

উভয়েই আপনারা যেটা করছেন সেটা সম্পর্কের প্রতি মায়া, দরদ, সম্পর্ক আঁকড়ে বেঁচে থাকার চেষ্টা।

স্বপ্নের বাড়ি
কাজী দিশা

রৌদ্রময়ী

রৌদ্রময়ী

11 Oct, 12:40


প্রিয় ভাবীজি সমীপে,

আপনি আসার পর আমাদের পরিবারটা কমপ্লিট হয়েছে। আপনার বাবা-মা আপনাকে যে তারবিয়্যাহ দিয়েছেন তার সবটা থেকে আমরা- আমার পরিবার উপকৃত হয়েছে।

একথাটি ভাবলেই কৃতজ্ঞতায় আপনার আব্বুজি -আম্মির প্রতি আমাদের দুআ আসে। তারা আমাদের কতটা আপন, কতটা কাছের তা অনুভব করি। তারা না থাকলে তো আপনাকে পেতাম না। আজীবন এ আত্মীয়তা রক্ষার চেষ্টা করে যাব ইনশাআল্লাহ।

ভাবীজি, আপনার উষ্ণ অভ্যর্থনা, হাসিমাখা মুখ, কত মজার রান্না, কত রান্নার প্রচেষ্টা, কত উপহারে সিক্ত আমরা। সবসময় আপনার প্রচেষ্টাগুলোর এপ্রিশিয়েট করা হয়না কিন্তু আজ বলে দিচ্ছি— আমরা পরিবারের প্রত্যেকটি সদস্য আপনার উপর সন্তুষ্ট, পরিতৃপ্ত, উদ্দীপিত, গর্বিত আপনাকে পেয়ে।

জানি, ভালো-মন্দে মানুষ। আপনার যে দু-একটি গুণ খারাপ লাগে সেগুলিতেও আল্লাহ যেন আমাদের পরিবারের জন্য উত্তম কিছু রাখেন। জানেন তো- ভিন্ন কিছুকে গ্রহণ করতে আমরা ভয় পাই। আমাদের আশেপাশে ইয়েস বলা লোকজন দিয়ে ভরিয়ে রাখতে চাই। কিন্তু না বলা মানুষ আমাদের জীবনকে কত প্রডাক্টিভ করে, কী নতুন মাত্রা এনে দেয় তা চিন্তা করিনা।

ভাবীজি, আমাদের অপছন্দের জন্য আপনি কষ্ট পাবেন না। আমাদের মানবীয় দূর্বলতা ভেবে মাফ করে দেবেন। আমরা আপনার গোটাটাকেই ভালোবাসতে চাই, সন্মান করতে চাই। আপনি আল্লাহকে সামনে রেখে যে আচরণই করবেন আমরা সেটাতে আমাদের খায়ের আছে বলেই মনে করব।

এই তো সেবার আমার প্রেগন্যান্সিতে কী আদর করে খাওয়াতে আসলেন, কত ফোনে খোঁজ নিলেন। এগুলোর শুকরিয়া আদায় করেছি কি প্রপারলি? আজ বলছি যাজাকিল্লাহু খয়রান কাসীরা ভাবীজি।

আরও অগণিত ঋণ জমে যাবে আজীবনের জন্য ভাবীজি। নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রত্যেকবার আমাদেরকে জন্ম দিচ্ছেন, আমাদেরকে বলছি এজন্য যে— ওই যে মু'আজ আর আব্দুল মুয়িজ সোনাটা ওটাতো বাবার মতই দেখতে হয়েছে।

বাবাকে হয়ত একসময় হারিয়ে ফেলব কিন্তু এই বাবাটা সেই অভাব পূরণ করবে। যায়নাবের মত সোনা মেয়েটা একদম ছোটাপার মত। ওর চোখের দিকে তাকালে সূদুর অতীতের আপাকে খুঁজে পাই। দিনের পর দিন কষ্ট করে এই যে ভালোবাসা উপহার দিচ্ছেন এর ঋণ কি শোধ হবার মত?

উলটা এ সময়ে আপনার সঠিক যত্ন নিতে পারি নাই। মনের কত কী মারপ্যাচ সামাজিক আচারতায়। কিন্তু আল্লাহর কাছে কি জবাব দেব?

ভাবীজি, আমার বংশের সন্তানদের এত্ত সুন্দর তারবিয়্যাহ দেবার জন্য আপনাকে আল্লাহ উত্তম প্রতিদান দিন। আমার মাহরামদেরকে আপনি উত্তম ভাবে গড়ে তুলছেন। ঈমান ও আখলাকে তাদেরকে দুআ-র উপযোগী করে তুলছেন।

ফুপির জন্য ওরা দুআ করবে ভাবলেই অন্তরটা নির্ভার হয়। আমার বাবা-মায়ের জন্য ওদের নেক হাত উঠবে, বাবা-মায়ের কবরের আজাব দূর হবে আপনার ওয়াসীলায়। ভাবীজি, আমাদের সংকীর্ণতা আপনি ক্ষমা করবেন।

ভাবীজি আমাদের মাঝের পার্থক্যগুলো আপনিও আপনার জন্য কল্যাণকর মনে করে মেনে নিয়েন। যদি পারেন আপনার প্রজ্ঞা, সহনশীলতার গুণে আমাদেরকে পরিবর্তনের চেষ্টা করতে পারেন। যদি জুলুমের শিকার হন, কখনো আমাদের এই হালতে ছেড়ে দেবেন না যে আল্লাহ আমাদেরকে এজন্য পাকড়াও করবেন।

জানেন ভাবীজি ননদ হওয়া অনেক পরীক্ষার। একদিকে বাবা-মায়ের ইমোশন অন্যদিকে আপনার প্রতি আদল ( ন্যায়বিচার) মেইনটেইন করতে যেয়ে কখনো আদল ভুলে ইমোশন চলে আসে। মানুষ হিসেবে এ কমজোরিতা আশা করি বুঝবেন।

তবে আমরা আমাদের দিক থেকে চেষ্টা করব নিজের ইমোশনকে প্রশ্রয় না দেবার। মা-বাবারাও সমস্ত কথা বলার জায়গা মেয়ের মাঝে পান, এ দু পরীক্ষা সামলাতে বড় কষ্ট হয় ভাবীজি। জানি আপনি জীবন বুঝেন, মানুষ বুঝেন, এ প্রজ্ঞা আপনার আছে। আল্লাহর কাছে আরও দুআ করি আল্লাহ আমাদের সাথে আপনার সময়গুলি সুন্দর করুন।

আমাদের নতুন অতিথি আব্দুল্লাহ্-র আগমনে এই সুন্দর চিঠিটা পাঠালাম। আশাকরি আপনার সুন্দর সলাতের দুআতে সিক্ত হব, আমার ভুলগুলো মাফ করবেন।

আপনার বোন

ভাবীজি সমীপে
দিল আফরোজ শোভা

রৌদ্রময়ী