নিয়মিত নিজের মৃত্যুর স্মরণ আত্মহত্যার প্রবনতা কমাতে সহায়তা করতে পারে, ইন শা আল্লাহ। আমি একে বলি 'Mindful Recalling of Death'।
জীবনের কষ্ট- দুঃখ, দুনিয়াবি না পাওয়া গুলোর যন্ত্রণা থেকে মুক্তির জন্য কোনো একদিন আল্লাহ আমার মনে এই মৃত্যু চিন্তা এনে দিয়েছিলেন।
মনে নেই সেই কবেকার কথা। হঠাৎ করে এমনটা মনে হল— আমি যদি এখন মারা যাই, তাহলে পৃথিবীর কিছু তো আর আমার কোনো কাজে আসবে না, আজকে যা পাওয়ার জন্য এতো মরিয়া হচ্ছি, যা চাওয়ার জন্য এতো অপমানিত হচ্ছি, আজকে মরে গেলে এসব কি কাজে আসবে?
না পেলেও বা কী হবে? সকলের ভাগ্যে সব থাকবেই এমন তো আল্লাহর সিস্টেম না, আমার পৃথিবীতে আসার লক্ষ্য তো এটা নয় যে আমি যা চাবো তাই পাবো।
আল্লাহর অশেষ রহমত যে আমি মুক্তি পেলাম, এতো হালকা লাগলো আমার, ঝগড়া, ক্ষোভ, অভিযোগ, অপমান যা কিছু আমাকে ভারাক্রান্ত করে রেখেছিল, আল্লাহ আমাকে তা থেকে মুক্তি দিলেন এই মৃত্যুর চিন্তার মাধ্যমে। আল্লাহু আকবর।
এরপর থেকে আমি নিয়মিত মৃত্যুর চিন্তা করি, প্রতিদিন কোনো একটা সময় নিজেকে প্রশ্ন করি “এখনই মারা গেলে আমার কী হবে?”
কখনো অটোতে বসে, কখনো বাসায়, কোনো সময় ঝগড়া হলে, নিজে ভুল করলে, রোজ চিন্তা করার চেষ্টা করি সচেতন ভাবে।
আল্লাহর রহমতে এটা আমাকে অনেক হেল্প করেছে বিপদে শান্ত থাকতে। ঝগড়া হলে, কেউ কষ্ট দিলে, মিথ্যা বললে ভাবি— এখনই যদি মারা যাই, তাহলে এদের সাথে তো আর কোনো দিন দেখাই হবে না আমার, অযথা এদের কথা, আচরণে এতো কষ্ট পাচ্ছি।
তখন আর ঝগড়ার টপিক গুলো অতোটা গুরুত্বপূর্ণ মনে হয় না, মাফ করে মিলে যাই।
মূল পয়েন্ট ছিল আত্মহত্যার ইচ্ছা দূর করতে মৃত্যু নিয়ে চিন্তা ভাবনা। আচ্ছা, একজন ব্যক্তি কেন আত্মহত্যা করতে চায়?
অধিকাংশ ক্ষেত্রে— দুনিয়াবী কষ্ট, ব্যর্থতা, একাকীত্ব, প্রিয়জনের অভাব, বিরাগ, অভাব, পারিপার্শ্বিক, অর্থনৈতিক চাপ থেকে মানুষের আর বাঁচতে ইচ্ছা করে না, মনে হয় মরে গেলেই বাঁচি।
আনন্দে, ইবাদত করতে করতে, ভাল কাজ করার খুশিতে কারো মরতে ইচ্ছা করে না। মরতে ইচ্ছা হয় কষ্ট, অধিকাংশ ক্ষেত্রে মানুষের উপর রাগ, অভিমান থেকে।
আজ মারা গেলে এসব মানুষের সাথে আর কোনো দিন দেখা হবে? অথচ জীবনের দিনগুলো শেষ হয়ে গেলে আর কোনো দিনই আমরা আসবো না, এখনই সময় আল্লাহকে খুশি করে নিজের ভালোর চিন্তা করা।
জীবন আসলেই দুই দিনের। আজকে আছি, কালকে এ সময়ে দাফন শেষ হয়ে যেতে পারে। যতো সমস্যায় আছি, টাকার অভাব, অসুখ, ঝগড়া, আত্মীয়দের সাথে রাগ, গীবত, মানুষের দোষ ধরা— এসব কিছুই থাকবে না কালকে আর, কী থাকবে তখন?
নামাজ ঠিক ছিল?
খাবার হালাল ছিল?
কুরআন পড়েছি তো?
গান- সিনেমা শুনি নি তো?
রাগ- ঝগড়ার উপর মরি নি তো?
মানুষকে কথা দিয়ে কষ্ট দেই নি তো?
এই সব কয়েকটা জিনিস, এগুলোই যা গুরুত্ব বহন করে।
সব কষ্ট এবং হতাশা একদিকে আর আজ যদি আমার আল্লাহর সাথে মুলাকাত হয়ে যায়, আমার মৃত্যু হয়ে যায়, আমি কি তৈরী আছি আমার রবকে ফেস করার জন্য এই দুশ্চিন্তা আরেক দিকে।
এই চিন্তা করলে দুনিয়ার সব রাগ, অভিযোগ অর্থহীন মনে হয়, নিজেকে অপ্রস্তুত মনে হয়। আবার আমার রবের দয়া, ভালোবাসার কথা চিন্তা করলে আনন্দে তখনই আল্লাহর কাছে চলে যেতে মনে চায়।
মৃত্যু,
আহা, মৃত্যু! আমার প্রিয়,
আমার বেঁচে থাকার প্রেরণা,
মৃত্যু হবে জেনেই বেঁচার আগ্রহ পাই,
সুন্দর মৃত্যুর আকাঙ্খায় ক্ষমা করতে পারি বারবার।
আল্লাহ যা চান, তাই আমার জীবনে আসুক, তিনি যা অপছন্দ করেন, তা জীবন থেকে চলে যাক। একটা জীবন, মৃত্যু হয়ে গেলে শেষ, আর তো কাজ করার, তওবা করার সুযোগ হবে না, এই জীবনে আমি ব্যর্থ হতে চাই না।
মৃত্যুই আমার প্রিয়
খাদিজাতুল কোবরা
রৌদ্রময়ী