হ্যাঁ অবশ্যই এটা সত্য যে, কোনো স্বাভাবিক মস্তিষ্কের মা-বাবা নিজেদের ছোট বাচ্চাকে শুধু শুধু মারবে না। বাচ্চারাও হয়তো দুষ্টামি করে মা-বাবাদের মাথা খারাপ করে দেয়।
শুধু শুধু না মারলেও এমন এমন কারণে অনেক পরিবারেই বাচ্চাদের মারা হয়, যেটাকে "ক্রিমিনাল" পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, অথচ সেগুলো বাচ্চা সুলভ আচরণ/দুষ্টামি।
৪-৫ বছরের বাচ্চাদের তো এখনো মস্তিষ্কই গড়ে ওঠেনি পুরোপুরি। ওরা বুঝবে না কোন জিনিসটা ফেলে দিলে ভেঙে যায়, এবং কোন কাজটা করলে মায়ের কষ্ট হয়, কেন "চাই চাই" এর উর্ধ্বে গিয়ে ধৈর্য ধরতে হয় —এগুলো একটা ছোট বাচ্চা কীভাবে বুঝবে? আমরা বড়রাই তো বুঝিনা অনেক সময়।
এবং তার মানে এই না যে বাচ্চাকে একেবারে শাসন না করে মাথায় লাই দিয়ে রাখবো। অবশ্যই এগুলো হ্যান্ডেল করার সুন্নত সম্মত পদ্ধতি আছে, ঠাস ঠাস মেরে দেওয়াটাই সমাধান নয়।
বাচ্চাদের শাসনের ব্যাপারে ইসলামের সুনির্দিষ্ট গাইডলাইন আছে। একেবারে না পারতে যখন মারতে হয় সেই মারটা খুব মৃদু হতে হবে, মারলেও খুব খেয়াল রাখতে হবে যেন এই মার থেকে বাচ্চার কোনো ক্ষতি না হয়, অতিরিক্ত রাগের অবস্থায় যেন ইসলামে মারা যাবে না, মারার পরে বাচ্চার গায়ে যেন দাগ না পরে এটা খেয়াল রাখতে হবে, এত জোরে মারা যাবে না যে যেই ব্যক্তি মারছে, তার বগল দেখা যায় ইত্যাদি ইত্যাদি এই ইসলামিক গাইডলাইনগুলো বেশিরভাগ মানুষ জানেই না। এবং সেইসাথে বাচ্চার মুখে আঘাত করা কিন্তু হারাম। মুখের উপর আঘাত করা একেবারে নিষেধ।
এ সমস্ত বিষয় নিয়ে অবশ্যই মা-বাবাকে সচেতন হতেই হবে। এত বড় আমানত আল্লাহ দিয়েছেন, বিষয়টা ফেলনা নয়। বাচ্চার ডেভেলপমেন্ট এবং প্যারেন্টিং নিয়ে পর্যাপ্ত পড়াশোনায় এবং ইসলামিক জ্ঞান অর্জনের মধ্যে থাকতে হবে আমাদের মা-বাবাদের। আমাদের হাত ধরেই তো উম্মতের পরবর্তী প্রজন্ম বড় হবে।
সবচেয়ে জঘন্য বিষয় হয় যখন কোনো অভিভাবক তার নিজের জীবনের হতাশা এবং রাগগুলো আর কারো ওপর ঝারতে না পেরে ছোট বাচ্চাদের মেরে সেই ঝাল মেটান।
দয়া করে আল্লাহকে ভয় করুন। মাসুম বাচ্চাগুলোর হয়তো এখন নিজেদের কোনো ভয়েস নেই। তারা ছোট, তারা কারো কাছে গিয়ে কোনো অভিযোগ করতে পারছে না হয়তো।
কিন্তু আপনি যদি জিনিসটা জুলুমের পর্যায়ে নিয়ে যান, অবশ্যই আল্লাহর কাছে জবাবদিহিতার ভয় করবেন। অবশ্যই এই বাচ্চার মনে বিরূপ একটা দাগ ফেলার দায়বদ্ধতা আপনার কাছে রয়ে যাবে। আল্লাহ যেন আমাদের বুঝ দেন।
মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করতে করতে জীবনে অনেক মানুষের সাথে পরিচিত হয়েছি, যারা ছোটবেলার ভয়ংকর শাসনের দুঃস্বপ্নগুলো আজও বয়ে বেড়াচ্ছে!
বিশেষ করে অমানবিকভাবে তাদেরকে মারা এবং পেটানোর বিষয়গুলো তারা অনেকেই ভুলতে পারেন না এবং এগুলো (অনেক বেশি খারাপ পর্যায়ের মারার কথা আমি বলছি) সেসমস্ত ভুলতে না পেরে তারা এখনো ট্রমার মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন।
এবং তাদের অনেকেরই মানসিক বিকাশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, ক্ষেত্রবিশেষে তাদের সাথে আল্লাহর সম্পর্কও দুর্বল হয়ে গিয়েছে, যখন মা-বাবা অন্যান্য পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে এই ধরনের অমানবিক আচরণ কেউ পায়, তারা ভাবে, "আমি যদি অল্প কারণেই এতটাই খারাপ হই আমার মা-বাবার কাছে, তাহলে আল্লাহর কাছে কীভাবে ভালো হবো?"।
তাহলে এক্ষেত্রে কী সমাধান?
ধৈর্য ধারণ ও বাচ্চার বিভিন্ন পর্যায় নিয়ে ভালোভাবে জ্ঞান অর্জন করুন এবং সুন্নত পদ্ধতিতে তারবিয়াত করুন।
এবং এ রামাদানে নিজের আত্মনিয়ন্ত্রণের একটা পরিকল্পনা করতে পারেন বাচ্চাদের গায়ে অল্পতেই হাত তোলা থেকে নিজেকে বিরত রাখার মাধ্যমে। যাদের কথায় কথায় বাচ্চাকে কারণ ছাড়া মারার অভ্যাস থাকে, এই রামাদানের চেষ্টা করুন সেটা নিয়ন্ত্রণ করে কমিয়ে আনতে।
শাসন নাকি জুলুম!
শারিন সফি অদ্রিতা
রৌদ্রময়ী