রৌদ্রময়ী @roudromoyee Channel on Telegram

রৌদ্রময়ী

@roudromoyee


|| দাওয়াহ || শুদ্ধতা || সাহিত্য ||

রৌদ্রময়ী (Bengali)

রৌদ্রময়ী নামক টেলিগ্রাম চ্যানেলটি আপনাকে একটি নতুন পর্বের সাহিত্যিক প্রপ্রারণায় নিয়ে যাবে। এই চ্যানেলে 'দাওয়াহ', 'শুদ্ধতা', এবং 'সাহিত্য' এই তিনটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের উপর চর্চা হবে। বাংলা ভাষার সাহিত্য ও ভাষাবিজ্ঞানে আগ্রহী মানুষদের জন্য এই চ্যানেলটি একটি অত্যন্ত মানুষিক ও জ্ঞানময় স্থান। রৌদ্রময়ী চ্যানেলে পোস্ট করা সকল লেখা, কবিতা, উদ্ধৃতি সমূহ এবং অন্যান্য সাহিত্যিক উপাদান যথাসম্ভব মানসম্মত এবং বুদ্ধিমত্ত উপাদানে ঘরে ঘরে সম্প্রকাশ করা হবে। যদি আপনি হতাশ হন বা দুর্বাধ্যন্দিত মানেন, তাহলে রৌদ্রময়ী চ্যানেলে এসে নতুন আলোর প্রকাশ দেখতে পারেন। সম্প্রতি চ্যানেলে যোগ দেয়া হয়েছে অনেক প্রস্তাবনা, লেখা, এবং অন্যান্য নিয়মিত পোস্ট যা আপনার মন নিয়ে যত্ন করে সাজো করা হচ্ছে। তাহলে আর দেরী না করে যেতে পারেন এই অদ্ভুত ভাষায় বলা গল্পের বুকে জড়িয়ে। তাই ফাঁকা করে দিন নি আপনার মনের এই অভিযানে।

রৌদ্রময়ী

21 Nov, 12:32


আমাদের অনেক সময় ধারণা হতে পারে, ইসলাম প্রাকটিস করা শুরু করেছি দেখে আমার জীবনে "ফান" কমে গেছে।

মিউজিক নেই, নাটক/সিনেমা নেই, বয়ফ্রেন্ড গার্লফ্রেন্ড নেই, ফ্রি মিক্সিং নেই, গায়ে হলুদ/ নাচানাচি নেই — যে কেউ বলে ফেললো, "তোমার তো জীবনে আনন্দই নাই!"

এটা ভীষণ একটা ভুল কথা!

ইসলাম আমাদের জীবন থেকে আনন্দ "ডিলিট" করে না। বরং "এডিট" করে এমন একটা উত্তম ভার্সান উপভোগের সুযোগ দেয় —যেটা সুস্থ, কল্যাণকর এবং চূড়ান্ত সাফল্যের কাছাকাছি!

ইসলাম ক্ষণিকের "আনন্দ(!)" থেকে আমাদের সাবধান করে যেন, বিনোদন করতে গিয়ে আল্টিমেটলি আমরা দুনিয়া এবং আখিরাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হই।

হ্যাঁ যে জিনিসগুলো নাফস এবং শয়তানের গোলামির মাধ্যমে ক্ষণিকের আনন্দ দেয়, সেটা ইসলামে নেই।

ইসলামে প্রশান্তি আছে। ইসলামে সত্য ওয়াদা আছে। সুস্থ ধারার বিনোদন আছে, হালাল মিউজিক বিহীন নাশিদ আছে। প্রতি শুক্রবার ঈদ আছে। প্রকৃতির কাছাকাছি যাওয়া, গাছ লাগানোর আনন্দ আছে। কুরআন পড়ার মাধ্যমে আছে দুনিয়ার সমস্ত আনন্দ, প্রশান্তি এবং ভালোলাগা। ইসলামে কষ্টগুলোর সাথেই স্বস্তি আছে। অবশ্যই কষ্টের সাথেই স্বস্তি আছে ....

ইসলামে আনন্দ গুলো অনেক মিনিংফুল। যে এর মধ্য দিয়ে যায় সেই বুঝে।

আপনার ইসলামের আনন্দ গুলোকে হাইলাইট করুন। অল্পদিনের এই দুনিয়া। পজিটিভ ভাবে গ্রহণ করুন। আল্লাহর রহম করে তো আখিরাতে গিয়ে আর হাতড়ে হাতড়ে আনন্দ খুঁজে বেড়াতে হবে না, তখন চাওয়ার আগেই আনন্দ হাজির হবে ইনশাআল্লাহ।

মিনিংফুল আনন্দ
শারিন সফি অদ্রিতা

রৌদ্রময়ী

রৌদ্রময়ী

21 Nov, 00:02


তাওয়াফ শেষে আমরা মাকামে ইব্রাহিমের পিছে দুই রাকাত সালাত পরে নেই। এই সালাতটিও খুব মনোযোগ দিয়ে পড়তে পারিনা, যদিও এখানে ভিড় বা অন্যান্য সমস্যা ছিল না।

আমি তখন উপলব্ধি করতে পারি কী কারণে আমি ঠিকমত কিছু করতে পারছি না, আর সেটা হলো- আমার শরীর অত্যধিক ক্লান্ত। রওনা দেয়ার আগের দিন থেকে ঘুমের ঘাটতি হচ্ছিল, প্লেনে বা হোটেলেও ঘুম হয়নি। তার উপর এয়ারপোর্টে ভারী লাগেজ ঠেলা আমার জন্য একটু কষ্টকর ছিল।

আসার আগ দিয়ে হোটেলে ভাত, ডাল, সবজি আর গরুর মাংস খেয়েছি, এসব ভারী খাবার হজম করে শক্তি আহরণের মতো পর্যাপ্ত সময় পাইনি। সব মিলিয়ে শরীর এত কাহিল যে আমার মস্তিষ্ককে নিয়ন্ত্রণে রাখতে আমার বেগ পেতে হচ্ছিল।

আমি মনে মনে নিয়ত করি, আরেকবার উমরাহ করলে ঠিকমত বিশ্রাম নিয়েই তওয়াফ করতে আসবো, ইন শা আল্লাহ। যদি ইহরাম অবস্থায় বেশিক্ষণ থাকা লাগে তো তাই থাকবো।

সালাত শেষ করে আমরা সবাই দুআ পড়ে, কিবলামুখী হয়ে দাড়িয়ে, যমযমের পানি খেলাম। এখানে বলে রাখি, কেউ গেলে অবশ্যই 'not cold' লেখা ব্যারেল থেকে পানি নিয়ে খাবেন, নাহলে ঠাণ্ডা লেখে যাবে। মাতাফে না পেলে সাঈ করতে যাওয়ার সময়ও অনেক অপশন পাবেন। একটা ছোট বোতলে কিছুটা ভরে নিলে ভালো হবে, কারণ সাঈর সময় আবার ঠাণ্ডা ছাড়া কোন পানি পাওয়া যায় না।

সাঈর সময় প্রচুর হাঁটতে হয়, আমরা শ্বশুরকে জিজ্ঞেস করলাম এবার হুইলচেয়ার লাগবে কিনা। তিনি নিজ পায়ে হেঁটেই করতে চাইলেন। যেহেতু সাফা-মারওয়া পাহাড় মসজিদের বাইরের অংশ (যদিও বর্তমানে দেখে বুঝার উপায় নেই), আমরা জুতা পরেই সাঈ করার প্রস্তুতি নিলাম।

সাফা পাহাড়ে যাওয়ার পথে কুরআনের একটি আয়াত পড়তে হয়, সকলে পড়ে নিলাম। সাথে আল্লাহর কাছে সহজতার দুআ করলাম:

"আল্লাহুম্মা লা সাহলা, ইল্লা মা জাআলতাহু সাহলা, ওয়া আনতা তাজআলুল হাঝনা, ইযা শি-তা সাহলা।"
(হে আল্লাহ, আপনি যা সহজ করেছেন তা ছাড়া কোনো কিছুই সহজ নয়। আর যখন আপনি ইচ্ছা করেন তখন কঠিনকেও সহজ করে দেন।)

আমাদের দাঈ নিচ তলায় ভিড় দেখে আমাদের দোতলায় নিয়ে গেলেন। সেখানে মোটামুটি ফাঁকা ছিল, তার থেকে বড় কথা নিচে তলার মত উচু নিচু পথ না, একদম সমতল। আমাদের খুব সুবিধা হলো এতে।

সাফা আর মারওয়াতে পৌঁছে প্রতিবার রাসূল (সা:) কিবলামুখী হয়ে দাড়িয়ে, হাত তুলে তিনবার একটি নির্দিষ্ট দুআ ও সাথে আরেকটি ইচ্ছামত দুআ করতেন। কিন্তু আমাদের সেখানে থামার সময় দেয়া হলো না। কি আর করা, আমি হাঁটতে হাঁটতেই দুআ করে নিলাম।

সাঈর সময় আল্লাহর রহমতে ভালো মতোই দুআ করতে পারলাম। এখানেও কেউ কেউ জোড়ে দুআ করে, কিন্তু তুলনামূলক তাদের সংখ্যা অনেক কম। আর এখানে হারিয়ে যাওয়ার কোনো ভয় নেই তাই কোনোদিকে না তাকিয়ে আমি একমনে দুআ করে যেতে থাকি, আলহামদুলিল্লাহ।

অনেকক্ষণ সময় পাওয়ার পরও মনে হচ্ছিল আরো কিছুক্ষণ সময় পেলে আরো ভালো হতো! যমযমের কারণে কিনা জানিনা, শরীর তখন মনে হচ্ছিল কোনো ক্লান্তি ছাড়া নিজে নিজেই চলছে!

সবাই যখন একটা জায়গায় কিছুক্ষণের জন্য বসে বিশ্রাম নিচ্ছিল, আমি তখন দাড়িয়েই ছিলাম। একমাত্র তখনই পিছন ফিরে একটু তাকানোর সুযোগ পেয়েছিলাম। যতদূর চোখ যায় কেবল মানুষ আর মানুষ। সবাই একই দিকে হাঁটছে। দেখে মনে হলো যেন হাশরের ময়দান...

আমি দুআ করলাম, "হে আল্লাহ, আপনি আজকে যেমন আমার জন্য সব সহজ করে দিয়েছেন, তেমনি হাশরের দিনও সব সহজ করে দিয়েন।"

কাবা দেখার অনুভূতি
বিনতে আবদুল্লাহ

(বাইতুল্লাহর মেহমান, পর্ব: ০৪)
রৌদ্রময়ী

রৌদ্রময়ী

21 Nov, 00:02


বাইতুল্লাহ বা কাবা প্রথম দেখার পর আমার অনুভূতি কেমন ছিল, এটা আমি ঠিক ভাষায় প্রকাশ করতে পারবো না। তবে, আমি যেমনটা ভেবেছিলাম সেরকম আবেগের বন্যা আমার অন্তরে অনুভব করতে পারছি না।

আমি নিজের ঈমান নিয়ে একটু চিন্তায় পড়ে গেলাম। আশেপাশের মানুষ হাউমাউ করে কাঁদছে, আর আমার চোখ কিনা হালকা আর্দ্র। এর কারণ কী?

বাইতুল্লাহর প্রথম দর্শনে দুআ পড়লে তা কবুল হয়, এরকম একটা কথা আমাদের সমাজে প্রচলিত আছে। অনেক রকম দুআও বিভিন্ন বইতে পাওয়া যায়। এগুলো সুন্নাহ কিনা আমি নিশ্চিত জানি না, তবে উমর (রা:) একটি দুআ পড়তেন এটুকু জেনেছি। দুআটা মুখস্ত ছিল না, তাই নিজের মতোই দুআ করেছি।

এরপর আমরা আমাদের দাঈর পিছে পিছে মাতাফ (তাওয়াফের স্থান) এর দিকে এগিয়ে গেলাম। তিনি বেশ ধীরস্থির মানুষ। আমি হজ্ব ক্যাপ পরে অন্ধের মতো হাঁটার পরেও উনাকে অনুসরণ করতে সমস্যা হয়নি।

আমরা আগেই কিছু উমরাহর ভিডিও দেখায় আমাদের জন্য বিষয়গুলো মোটামুটি সহজ। তারপরও থিওরি আর প্র্যাকটিকাল এর মাঝে আসলে বহুত তফাৎ থাকে।

যেমন, ওই সময়ে ভিড়ের কারণে আমি একবারও হাজরে আসওয়াদ দেখতে পারিনি, যেটা তাওয়াফ শুরুর জন্য দেখা দরকার। তবে ডানদিকে সবুজ বাতি থাকায় ইশারা কোথায় করতে হবে বুঝে গিয়েছি।

তাওয়াফের সময় দেখি, ধাক্কাধাক্কির ঠেলায় মুখে ঠিকমত কোন দুআ আসছে না। তাছাড়া প্রচন্ড গরম আর মোটা ক্যাপ থাকায় মাথা যন্ত্রণা আবার শুরু হয়ে গেলো। আর একটু পর পর বিভিন্ন মানুষ আমাদের দলের মধ্যে ঢুকে বের হয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছিল, এতে আমরা বিচ্ছিন্ন হয়ে যাই।

এভাবে ভিড় সামলিয়ে শান্তিমত ইবাদত করা সম্ভব না আমার পক্ষে। বিশেষ করে যখন বার বার গ্রুপের বয়স্ক মহিলাদের দিকে আমাকে খেয়াল রাখতে হচ্ছে। তবে আমার দুআ করায় সবচেয়ে বড় যেই প্রতিবন্ধকতা ছিল তা হলো- আশেপাশের মানুষদের উচ্চস্বরে করা দুআ।

কিছু মানুষ এত জোড়ে দুআ পড়ছিল যে আমি আমার নিজের দুআগুলো বলা শুরু করেও শেষ করতে পারছিলাম না, শেষ করলেও মনোযোগ দিতে পারছিলাম না।

আমাদের ট্রেনিং সেশনের দিন বলা হয়েছিল- সম্মিলিত ভাবে বা একাকী জোড়ে দুআ করা উচিত না। নিজে দুআ করতে গিয়ে বাকিদের দুআ ব্যহত করা কি ঠিক?

আমার ইচ্ছা ছিল শুরুতে আল্লাহর প্রশংসা করে, কুরআনের কিছু দুআ ও মাসনূন যিকর করে, তারপর নিজের দুআ গুলো বাংলায় করা। কিন্তু কয়েক তাওয়াফ শেষ হওয়ার পর দেখি কিছুই পরিকল্পনা মাফিক হচ্ছে না, আরবী দুআ তো পড়তেই পারছি না ঠিকমত।

আর ক্যাপের কারণে ততক্ষণে আমার খারাপ অবস্থা। আমি আর না পেরে ক্যাপ খুলে নেই আর হিজাবের সাথে থাকা এটাচড নিকাব হাত দিয়ে উঁচিয়ে ধরে মুখ খানিকটা আড়াল করে রাখি।

আল্লাহর প্রজ্ঞা কী জিনিস আমি আবার উপলব্ধি করলাম। মুখের সামনে থেকে কাপড় সরাতেই মাথা যন্ত্রণা চলে গেলো ও শরীর হালকা লাগলো, আলহামদুলিল্লাহ।

আল্লাহ ভালো করেই জানেন, এরকম সময়ে একজন নারীর নিকাব পরা অবস্থায় কী কষ্ট হবে, তাই তিনি ইহরামের মধ্যে নিকাব না পড়ার বিশেষ বিধান রেখেছেন। তাছাড়া সেই সময়ে আসলে কেউ কারো চেহারার দিকে তাকানোরও ফুরসৎ পায়না।

আশপাশের মানুষ জোড়ে দুআ করায় অবশ্য একটা সুবিধা হয়েছে- যখনই রুকনে ইয়ামানি এসেছে তখন টের পেয়েছি। রুকনে ইয়ামানি নামক কর্নার থেকে হাজরে আসওয়াদের কর্নার পর্যন্ত একটি নির্দিষ্ট দুআই বার বার পড়তে হয় আর সেটা হলো: 'রাব্বানা আতিনা ফিদ্দুনিয়া হাসানাহ...'। পরে অবশ্য জানতে পেরেছি ইয়ামানি কর্ণারের গিলাফে চিকন করে সোনালী সুতার বর্ডার আছে।

শেষ তিন তাওয়াফ মোটামুটি বাংলায় দুআ করে কাটিয়েছি, কিন্তু যেভাবে চোখের পানি ফেলে কাটানোর দরকার ছিল সেভাবে পারিনি।

মনে অতৃপ্তি থাকায় শেষের দিকে এসে খালি বার বার দুআ করেছি, 'হে আল্লাহ, আমি ঠিকমত আপনার ইবাদত করতে পারিনি, আমাকে ক্ষমা করে দিন। আমাকে সুন্দরমত আরেকটা উমরাহ করার তৌফিক দিন।'

আরেকটা সমস্যার কথা প্রথমে টের না পেলেও পরে বুঝতে পেরেছি, সেটা হলো আমার আসলে খালি পায়ে মাতাফে হাঁটতে কষ্ট হচ্ছিল। এটা অবশ্য আমার বিশেষ সমস্যা। আমার পায়ের নিচের ত্বকে খুব অল্পতেই ফোস্কা পড়ে যায়। এজন্য মোটা মোজা পরেই এসেছিলাম, কিন্তু সেটা যথেষ্ট ছিল না।

আমাদের তাওয়াফ যখন প্রায় শেষ হয়ে এল, তখন আমরা ধীরে ধীরে বৃত্তের বাইরের দিকে যাওয়া শুরু করলাম।

অনেকেই এই জায়গাটায় ভুল করে- শুরুতেই অন্যান্য মানুষকে ডিঙ্গিয়ে সোজাসুজি বৃত্তের ভিতরে অর্থাৎ বাইতুল্লাহর কাছে যেতে চায়, আবার শেষ হলেও সোজাসুজি বের হতে চায়। অথচ নিয়ম হলো ধীরে ধীরে নিজের তাওয়াফের পরিধি ছোট আর বড় করা।

আমরা বাইতুল্লাহর কাছে যাইনি, যাওয়ার চেষ্টাও করিনি। যদিও তাওয়াফ শেষে মুলতাজাম (হাজরে আসওয়াদ থেকে দরজা পর্যন্ত সরু চৌকাঠ) ধরে দুআ করা সুন্নাহ, কিন্তু সুন্নাহ পালন করতে গিয়ে ধাক্কাধাক্কি করে নিজেকে ও মানুষদেরকে কষ্ট দেয়ার তো দরকার নেই।

রৌদ্রময়ী

20 Nov, 14:17


খুব কম মানুষই নিজের জীবনে আল্লাহর পরীক্ষাকে আইডেন্টিফাই করতে পারে। আমরা মনে করি জীবনে বিপদ আসলেই সেটা পরীক্ষা। কিন্তু আসলেই কি তাই?

জীবনে আপাতদৃষ্টিতে কোনো সমস্যা না থাকলেও আমরা পরীক্ষার মাঝে থাকি। আল্লাহ তো বলেছেন যে জীবন মৃত্যুর সৃষ্টিই পরীক্ষা করার জন্য যে কে কত ভালো ভাবে পরীক্ষায় উতরে যেতে পারে।

যখন আমাদের জীবন নিয়ামতে ভরপুর থাকে তখন আমরা ভাবি আল্লাহ আমাকে নিশ্চিতভাবেই অনেক ভালোবাসেন বা আমাকে আমার কাজের জন্য বা ধৈর্যের জন্য পুরস্কৃত করেছেন।

কিন্তু নিয়ামতও একটা পরীক্ষা - এই নিয়ামত পেয়ে আমরা শুকরিয়া আদায় করছি কিনা, বিনয়ী আছি নাকি অহংকারী আছি, মানুষকে সাহায্য করার জন্য তা কাজে লাগাচ্ছি কিনা, নিয়ামত কি বিনষ্ট করছি না যত্ন করে রাখছি? এগুলোও পরীক্ষা।


বেসিক্যালি যখন আমরা একটা নিয়ামত পাই অনেক অনেক দুয়া প্রতীক্ষার পর, এটা গেমসের জাস্ট একটা লেভেল আপ হবার মত। নতুন উপাদান, নতুন লাইফলাইন, নতুন স্ট্রেংথ নিয়ে ভিন্ন সিনারিওতে গেমস যেভাবে চলতে থাকে আর লেভেল আপ হতে থাকে - তেমনি মৃত্যুর আগ পর্যন্ত আমাদের এভাবেই লেভেল চেঞ্জ হতে থাকবে।

তাহলে আল্লাহ আমাদেরকে কি কি বিষয়ে পরীক্ষা করবেন?

- ভয়, অনাহার, প্রাণ ও সম্পদের ক্ষতির মাধ্যমে। ( সূরা বাক্বারাহ, আয়াত ১৫৫)

- উপার্জন ও আমদানী হ্রাস করে ( ঐ)

- আহলে কিতাব ও মুশরিকদের কাছ থেকে কষ্টদায়ক কথা শোনার মাধ্যমে। ( সূরা আলে ইমরান, ১৮৬)

- একজনকে আরেকজনের চেয়ে অধিক মর্যাদা দান করার মাধ্যমে। ( সূরা আল আনআম, ১৬৫)

- কাফিরদের সাথে যুদ্ধের মাধ্যমে ( সূরা মুহাম্মদ, আয়াত ৪)

- জীবনে ভালো মন্দ অবস্থার মাধ্যমে ( সূরা আম্বিয়া, আয়াত ৩৫)

- শ্রবণ ও দৃষ্টিশক্তি দান করার মাধ্যমে ( সূরা দাহর, আয়াত ২)

আমরা কি নিজেদের জীবনে পরীক্ষাগুলো আইডেনটিফাই করতে পারছি?

বিপদই কি পরীক্ষা
ডা:
সাদিয়া হোসেইন

রৌদ্রময়ী

রৌদ্রময়ী

20 Nov, 00:02


পথ ঘাট চেনাতে চেনাতে গাইড ও দাঈ আমাদের নিয়ে যাচ্ছিলেন। আমি যেহেতু কিছু দেখতে পাচ্ছিলাম না, তাই মনোযোগ দিয়ে শোনার বিশেষ চেষ্টাও করলাম না। মনে মনে উমরাহর ধাপ আর দুআ গুলোই আওড়াচ্ছিলাম।

কিছুক্ষণ পর আমরা মসজিদে প্রবেশ করি। জুতা খুলে মসজিদে প্রবেশের দুআ পড়ে নেই। এর পর এক্সিলেটর দিয়ে নেমে কাবার দিকে এগিয়ে যেতে থাকি। টের পাই, আমার হার্টবিট বেড়ে যাচ্ছে।

লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক
বিনতে আবদুল্লাহ

রৌদ্রময়ী

রৌদ্রময়ী

20 Nov, 00:02


"লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক"
(আমি হাজির, হে আল্লাহ, আমি হাজির...)

এই কথাটা জীবনে কত শুনেছি, নিজ মুখে কত গুনগুন করেছি, আমার স্টুডেন্টদের কত শিখিয়েছি... কিন্তু রাসূলের দেশে নেমে এই কথাটা মুখে আনার সাথে সাথে পুরো শরীরের কেমন শিহরণ খেলে গেল! মনে মনে বললাম-

"আসলেই এবার আমি হাজির, হে আল্লাহ! আপনি আমাদের কবুল করে নিন।"

প্লেনের ভেতর নিয়ত করার আগেই নিজের নিকাব খুলে হজ্ব ক্যাপ পরে নিয়েছিলাম, যেহেতু ইহরাম অবস্থায় নিকাব নিষিদ্ধ। অনেকে এটিকে সান ক্যাপ বলেন, বিভিন্ন অনলাইন বা অফলাইন শপে পাবেন। এই ক্যাপের উপর দিকে পাতলা নেটের অংশ থাকে দেখার সুবিধার্থে, আর নিচে কালো কাপড় যাতে চেহারা ঢেকে থাকে।

এখানে বলে রাখি, এই ক্যাপ নিয়ে অনেকের অনেক মত আছে। ক্যাপের বদলে অনেকে হিজাবের উপর ওড়না বড় করে ঝুলিয়ে দিতে বলেন। আমি নিজেও অনেক কনফিউজড ছিলাম, কিন্তু যেহেতু আমাকে আমার শ্বাশুড়ীকে দেখে রাখতে হবে তাই হজ্ব ক্যাপ সুবিধাজনক হবে ভেবেছি। পাতলা ওরনাও সাথে রেখেছিলাম, কিন্তু শেষমেশ হজ্ব ক্যাপই পরেছি।

জেদ্দা এয়ারপোর্টে নামার পর আমরা হ্যান্ডব্যাগ নিয়ে হাটা শুরু করলাম। হাঁটতে হাঁটতে পথ আর ফুরায় না। একটু পর পর একটা arrow চিহ্ন দিয়ে লেখা এদিকে luggage claim। আগেকার দিনে গাধার পিঠে মূলা ঝুলিয়ে হাঁটিয়ে নেয়ার একটা সিস্টেম ছিল, সেটা মনে পড়ে গেলো!

দীর্ঘ পথ হাঁটার পর যখন শেষ পর্যন্ত আমরা আমাদের লাগেজের কাউন্টারে পৌঁছালাম তখন শুনতে পেলাম যে আমাদের লাগেজ পেতে অনেক দেরি হবে। আমরা অপেক্ষা করতে থাকলাম।

সালাতের জায়গা মনে হয় অনেক দূরে ছিল, অনেক পুরুষ সেখানেই জায়নামাজ বিছিয়ে মাগরিব আর ইশা পড়ে নিলো। আমরা বাকিরা হোটেলে পড়ার আশায় বসে রইলাম।

অবশেষে লাগেজ হাতে পেলাম দুই ঘণ্টা পর। ক্ষুধায় সবার অবস্থা খারাপ। প্লেনে দেয়া কিছু শুকনা খাবার ব্যাগে রেখেছিলাম সেটা সবাই ভাগ করে খেলাম। বুঝলাম, ব্যাগে সবসময় খেজুর, চকলেট টাইপ খাবার রাখতে হবে। আমাদের গাইড জানালেন, এত দেরি নাকি কোনোদিন হয়নি। কী আর করা, এটাই আমাদের ভাগ্য ছিল।

"কদারুল্লাহু ওয়া মা শা ফা'আলা"
(এটা আল্লাহর ফয়সালা, আর তিনি যা ইচ্ছা করেন।)

লাগেজ সব নিয়ে বাসে উঠতে উঠতে গেলো আরো আধ ঘণ্টা। বাসে সময় লাগলো দেড় ঘণ্টা। হোটেলে গিয়ে পৌঁছুলাম রাত ১১টার দিকে।

আমাদের এজেন্সির প্ল্যান ছিল কিছুটা সময় বিশ্রাম নিয়ে, শেষ রাতে উমরাহ সম্পন্ন করে, একবারে ফজর পড়ে হোটেলে ফেরার। কিন্তু লাগেজ পেতে দেরি হওয়ায় বিশ্রামের টাইম একদম কমে গেলো সবার। গাইড বার বার বলে দিয়েছে যেন ফ্রেশ হয়ে রাতের খাবার খেয়েই আমরা প্রস্তুত হয়ে যাই। কিন্তু বিপত্তি ঘটলো যখন আমার শ্বশুড় হাত মুখ ধুয়ে খাবার না খেয়েই ঘুমিয়ে গেলেন।

আমার শ্বশুড় হাই প্রেশারের রোগী, একটু ঘুমের ব্যাঘাত হলেই অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাই ভয়ে আমরা কেউ তাকে ডাকতে পারলাম না। আমরা বাকি তিনজন খেয়ে নিলাম। হাসবেন্ডকে বললাম গাইডকে রিকুয়েস্ট করতে, যেন একটু পরে রওনা দেয়া হয়। কিন্তু ও লবিতে গিয়ে দেখে গ্রুপের প্রায় সবাই ইতিমধ্যে রেডি। কেউ দেরি করার পক্ষে ছিল না।

আর উপায় না দেখে আরেকটি প্রস্তাব দেয়া হলো- আমরা পরে আলাদা উমরাহ করবো। গাইড এতে নমনীয় হলেন। তবু উনি আমার হ্যাসবেন্ডকে অভয় দিয়ে বললেন, "ওখানে গেলে আল্লাহর বিশেষ রহমতে সবাই পেরে যায়, আপনার আব্বাও পারবেন। আপনি খালি একবার উনাকে ডাক দিয়ে জিজ্ঞেস করুন উনি এখন যেতে রাজি আছেন কিনা।"

এরপর আমার শ্বশুরকে ডাক দিলে তিনি ঘুম থেকে উঠে একবারেই রাজি হয়ে যান। এতক্ষণ উনার জন্য চিন্তা করায় খেয়াল করিনি আমার নিজের শরীরও ভালো না, মাথাটা যেন ছিঁড়ে পড়ে যাবে। কোনো রকমে একটু গরম পানি করে কফি বানিয়ে
বিসমিল্লাহ বলে দুই চুমুক খেলাম। আল্লাহর অশেষ রহমতে শরীর অনেকটাই চাঙ্গা হয়ে গেল। বাকি কফি সবাইকে একটু করে খাইয়ে আমরা রওনা দিলাম উমরাহর উদ্দেশ্যে। হোটেল থেকে বের হওয়ার পর মাথার উপর সুবিশাল ক্লক টাওয়ারের দিকে তাকিয়ে দেখলাম, সময় দেখাচ্ছে ১:০০।

আমাদের গ্রুপে কয়জন বয়স্ক ব্যক্তি আছেন, যারা এতটাই সাধাসিধে যে তাদের সাথে কোনো ফোন পর্যন্ত নেই! অবশ্য আমাদের সাথে ফোন থেকেও লাভ ছিল না, যেহেতু তখনও সৌদি সিম কেনা হয়নি। তাই গাইড বারবার আমাদের রিকুয়েস্ট করলেন যেন আমরা এক সাথে সবাই থাকি। গ্রুপের পুরুষরা নারীদের ঘিরে থাকার চেষ্টা করবে, যেন কেউ বিচ্ছিন্ন না হয়ে যায়।

হজ্ব ক্যাপের কারণে আমি পথ ঘাট কিছুই দেখছিলাম না, একরকম অন্ধের মতোই হাঁটছিলাম। বানানোর ত্রুটি কিনা জানি না, চোখ বরাবর নেটের অংশটা ক্যাপের খুবই কম ছিল, আর রাতের বেলা হওয়ায় দেখতে আরো কষ্ট হচ্ছিল। একটু নামিয়েও পরতে পারছিলাম না যেহেতু ইহরাম অবস্থায় কপাল ঢাকা যাবেনা। জীবনে এই প্রথম স্বাভাবিক দৃষ্টিশক্তির কদর উপলব্ধি করতে পারলাম ও আল্লাহর কাছে শুকরিয়া জানালাম।

রৌদ্রময়ী

19 Nov, 12:20


লং খিমার পরে বের হয়েছিলাম। সবসময় প্লেইন বোরকায় দেখে তাই চোখ চেনা চেনা লাগছে কিন্তু আবার খিমার পরা। দ্বিধান্বিত হয়েই মেঘের ফ্রেন্ড বলল, "আসসালামু আলাইকুম, মেঘের আম্মু আন্টি না?"। হেসে বললাম, হ্যা।

বাসার আশেপাশে সব দোকানদার, দারোয়ান, প্রতিবেশী ভাইরা ঐ বোরকা দেখে চিনে, চোখ দেখে চিনে।

প্রসঙ্গ এটা নয় যে চেনা জরুরী কি জরুরী না।

এমনকি সৌন্দর্য প্রকাশ হওয়া না হওয়ার আলোচনা নয়, ভিন্ন কিছু কথা বলতে চাইছি।

.

সর্বোচ্চ পর্দা করেও আসলে কতটুকু সৌন্দর্য নিজের গোপন করা যায়?

নারীর আপাদমস্তক দেখে শ্রদ্ধায় মাথা নুইয়ে আসে, চরম লম্পট পুরুষটাও থতমত খেয়ে যায় এরকম সৌন্দর্যের পোশাকও নারী পরে। এরকম নারী ব্যক্তিত্ব দেখলে মনে হয় পর্দা ইজ মোর দেন এ ফুল কভার ক্লোথ।

মনে হয় এখানে হাঁটা চলা, কথা বলা, অঙ্গভঙ্গি, শিক্ষা, পারিবারিক পরিচিতি সমস্ত কিছুুর একটা কম্বিনেশন আছে। এবং অবশ্যই নারী হিসেবে কোথায় যাচ্ছি কী করছি, কাদের সাথে কথা বলছি সেসব পরিস্থিতিতেও পর্দার ধরন গড়ন উপস্হাপনের কিছু বিষয় আছে।

যেমন গায়ে হাত দিয়ে ঠেলে গাড়িতে তুলবে এরকম বাস কনট্রাকটরও আছে আবার আপনাকে আরামে উঠতে জায়গা করে দিবে, নামার সময় বাকিদের বলবে মহিলা নামবে জায়গা দেন, এরকমও আছে।

সৌন্দর্য সেই একই নারীদেরই, আপাদমস্তক পুরো আবৃত, অর্ধ আবৃত, হয়তো স্বল্প বসনা, প্রচন্ড ভদ্র সুশীল নারী পুরুষদেরও কেমন অশ্লীল, অভক্তি, রুচিসম্মত নয়, খ্যাত, আঁতেল, ফ্যাশন সেন্স নেই কত কী মাথায় আসে।

যেমন, আপনি সহসা কাউকে জাজ করেন না, কিন্তু বোরকা হিজাব করা একজন নারী পায়ে তার নুপুর রিনিঝিনি সুর তুলছে, মুখে মেকআপ, আর ঠোঁটে ভারী লিপস্টিক! আপনমনে বিড়বিড় করে ননজাজমেন্টাল আপনার মনেও দুটো খারাপ কথা আসবে।

প্রশ্ন আসতে পারে মানুষ কী বলল তাতে কি আসে যায়? পর্দা কি মানুষের জন্য?
অবশ্যই না।

যার যার সাধ্যমত অশ্লীলতা থেকে দূরে থাকতে হবে। তখন মানুষ সমালোচনা করলেই বা কী আসে যায়। যদি এটা মাথায় থাকে যে অন্তরের খবর নিয়ত আল্লাহ জানেন। 

.

আপাদমস্তক পর্দা আবৃত নারীটাকে যখন দেখলাম চোখে পড়ার মত স্পর্শকাতর জায়গাগুলো ঢাকার পরেও স্থুলকায় শারীরিক গড়নের কারণে বক্ষদেশের উচ্চতা লুকাতে পারে নি। রাস্তাঘাটে প্রতিনিয়ত দেখা এ দৃশ্য ভীষণ ভাবায়?

সিরিয়াসলি ভাবায়?
তাহলে কি আপাদমস্তক কালো পর্দার পোশাক পরার পরও তার পর্দা হয়নি?

বক্ষদেশ ঢাকা তো পর্দা বা শরীর আবৃত করার ফরজ পালনের ক্ষেত্রে একজন মুসলিম নারীর জন্য অবশ্য কর্তব্য। তাহলে ভদ্রমহিলা কি সে শর্ত পূরণ করতে পেরেছে?


চোখ দুটোও ঠিকমতো দেখা যায় না কিন্তু স্হুুলকায় শরীরে মাথা থেকে ছেড়ে দেওয়া খিমার তার আকৃতি শরীরের আকর্ষণীয় জায়গার রুপ লুকাতে পারছে না।
সরাসরি কিছু দেখা যাচ্ছে না কিন্তু সহসাই বোঝা যাচ্ছে।

পর্দার সবক শিখতে শিখতে কোথায় যেন নারী শরীর বলতে বুক, কোমর, হিপ, ঠোঁট, চোখ এ কয়টা জায়গাই মনে হয়। এজন্যই পুরুষ নয় নারীদেরও চোখ একজন নারী শরীরের এ কয়টা জায়গায় পড়ে।

.

যদি আমরা পর্দা শেখার আগে আখলাক শিখতাম, রাস্তায় কিভাবে কোন এঙ্গেলে তাকিয়ে হাঁটতে হয়, কথা বলার সময় কিভাবে তাকাতে হয়,  রাস্তায় অচেনা পুরুষ দেখলে চোখ নামিয়ে নেওয়া আর নারী দেখলে সালাম দেওয়া। এটা না করে ঠোঁট বুকের দিকে কেন তাকাতে হবে মানুষ দেখলেই, এসব যদি শিখতাম তাহলে হয়তো পোশাক বিতর্ক একটা সঠিক দিক নির্দেশনা পেত।

একজন মুসলিম মানুষ দেখলেই সালাম দিবে। আর আমরা আগে দেখি নারী হলে বুকে কাপড় আছে কি নাই, পেছনের দিক বোঝা যায় কি না। ব্রেইন অটো কানেক্ট হয়ে যায় এ ভাবনাগুলোতে কেমন যেন!

মানুষ ভালো কিন্তু পোশাকের পর্দা যে করে না।
ভাইরে সালোয়ার কামিজ তো পরছে, না ফতুয়া বা শার্ট পরছে? বলেন তো আপনি তার পোশাকহীন শরীরকে দেখতে পাচ্ছেন আপনার শার্লক হোমস চোখ দিয়ে?

যদি তাই দেখতে পান তাহলে নেকাব বা মাস্কের নিচে আমি বা আমরা যারা আছি সবাইকে একদম মাপমত দেখার এলেমও আপনার আছে!

সালোয়ার কামিজ পরে মানে বেপর্দা।

জিন্স শার্ট হিজাব সহ পরে মানে ল্যাংটা মাথায় ঘোমটা।

রঙিন বোরকা পরে মানে পর্দা একটা ফ্যাশন।

আপাদমস্তক পরিপূর্ণ পর্দা করে তো তার আচরণ হতে হবে ফেরেস্তার মত। আর লবন বেশি হলে স্বাদ নষ্ট হত এই মন্তব্যের স্টাইলে বলতেই পারেন, কালোই পইরো, জাস্ট হিজাব এরকম দিও না, কেমন যেন পর্দা কমপ্লিট হয় না, এই কোম্পানির মোজা পইরো না, ঐ দেশের হিজাব পইরো না।

মিলায়ে দেখেন এটা মুসলিম সমাজের চিত্র কি না?

বিদ্র: মুসলিম ভাববে সঠিকটা জানার ও মানার জন্য। কাউকে ছোট করার জন্যও না, কোনো মানুষের বা আল্লাহর বিধানের ভুল ধরার জন্যও না। চিন্তাশীল মানুষকে আল্লাহ পছন্দ করেন।

যে দৃশ্য ভীষণ ভাবায়
কাজী দিশা

রৌদ্রময়ী

রৌদ্রময়ী

18 Nov, 14:33


বড় ভাই বোনের জামাকাপড় ছোট ভাইবোনরা পরার যে বিষয়টা এটা আমার জোস লাগে।

এটায় একটা আত্মিক ব্যাপার থাকে।

আমরা পাঁচ ভাই বোন, ভাইয়ার ছোটকালের একটা দুইটা খেলনা অক্ষত অবস্থায় আমরা পেয়েছিলাম।

আমি সারাজীবন আমার বড় বোনের জামা, কামিজ পরেছি।

আমার বড় বাচ্চা তার কাজিনের কিছু জামা পরেছে। আমার মেয়ে তার ভাই এর ইউনিসেক্স প্যান্টগুলো পরে, যেগুলো ছেলেমেয়ে আলাদা নাই৷

আর ওরা এটায় মজাও পায়।

তবে এর মানে এই না যে ছোট ভাই বোনরা সবকিছু বড়দের পুরনো গুলোই পরে যাবে, তাদের কেও নতুন দিতে হবে।

আমি বোনের কাপড় পরতাম আবার আম্মু নতুন জামাও দিতেন। বরং নতুনই বেশি পরতাম, আপুরগুলো ছিল পাশাপাশি। আপুর সুন্দর জামা পেয়ে নিজেকে ধন্য মনে হত৷

ভাইবোনদের ভেতর আবেগ থাকা জরুরি। কারণ বড় হওয়ার পর মেয়েরা শশুরবাড়ি যাওয়ার পর আগের মতো থাকে না সবকিছু।

ভাই বিয়ের পর নিজের ফ্যামিলি গড়তে, রিযিকের জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়ে৷

এটাই স্বাভাবিক, এটাই নিয়ম।

তখন পুরনো আবেগ আর স্মৃতি গুলোই সম্পর্ক কে গ্লু এর মত ধরে রাখে৷ যাদের শৈশব যত রঙ্গিন, যত আনন্দ আর আবেগে মাখা তাদের বড়কালের সম্পর্ক ততটাই মজবুত। সাথে দ্বীনের বুঝ থাকলে, আর্থিক অবস্থা ভালো থাকলে সোনায় সোহাগা৷

জিনিস, কাপড় যা লাগবে না তা জমিয়ে রাখা আমার ভীষণ অপছন্দ। নিয়ম করে প্রতি ৪-৫ মাসে ডিক্লাটার করি আমি।

অতিরিক্ত বা প্রয়োজন শেষ হলে ডিক্লাটার অবশ্যই করব আমরা৷

তবুও কেউ আমাকে জিজ্ঞেস করে— বলব, কিছু দামি, দাগহীন সুন্দর জামা বা শীতের কোটটা আমি রেখে দিয়েছি, আমার বাচ্চাদের ছোটরা পরবে বলে।

আমাদের পুরনো জামা
নুসরাত জাহান

রৌদ্রময়ী

রৌদ্রময়ী

18 Nov, 00:02


প্লেনের সিটের সাথে থাকা মনিটরে আমরা ফ্লাইটের লাইভ গতিবিধি দেখতে পারছিলাম। সফরের দুআর পাশাপাশি নতুন শহরে প্রবেশের দুআ পড়তে বলে দিয়েছিল আমার বোন। সব শহরে সম্ভব না হলেও নতুন দেশে ঢুকলে আমি পড়ে নিচ্ছিলাম। ফাঁকে ফাঁকে উমরাহ বিষয়ক পড়াশোনা আর কিছু প্রাসঙ্গিক দুআ মুখস্ত করছিলাম আমরা।

ব্যস্ততার কারণে নতুন কোন দুআর লিস্ট তৈরি করতে আর পারিনি। রামাদান উপলক্ষে তৈরি করা দুআর লিস্টের ছবি তুলে নিয়েছিলাম। আরো কিছু পেইজের দুআ লিস্টও ফোনে সেইভ করে নিয়েছিলাম। হ্যান্ডব্যাগে দুটো দুআর বই ও নিয়েছিলাম। যেহেতু সফরে দুআ কবুল হয় তাই সেগুলো প্লেনে পড়ছিলাম, আবার উমরাহর সময়কার জন্য রিভিশন দিচ্ছিলাম।

দেখতে দেখতেই মীকাতের কাছে পৌঁছে যাই আমরা। নিয়ত করে ফেলি উমরাহর আর তালবিয়াহ্ পাঠ করতে থাকি। কিছুক্ষণের মধ্যেই জেদ্দা বিমানবন্দরে অবতরণের ঘোষণা আসে।

প্লেনের জানালা দিয়ে দূরের পাহাড়গুলো যখন দেখছিলাম, তখনও বিশ্বাস হচ্ছিল না যে আমরা সত্যি সত্যিই এসে গিয়েছি রাসূলের দেশে, সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।

বাইতুল্লাহর পথে
বিনতে আবদুল্লাহ

রৌদ্রময়ী

রৌদ্রময়ী

18 Nov, 00:02


দ্বিতীয় বারের মত এজেন্সি পরিবর্তনের সময়ে আসলে নতুন এজেন্সি পাওয়ার থেকেও বেশি চিন্তার বিষয় ছিল- বুকিং মানি ফেরত পাওয়া।

হাসবেন্ড সেদিন বিকালে বাসায় ফেরার পর পরিকল্পনা করতে থাকে কি করে টাকা তুলে আনবে, কাকে সাথে নিয়ে যাবে ইত্যাদি। ওই মুহূর্তে আসলে উমরাহর আশা একরকম বাদই দিয়েছিলাম। তারপরও পরিচিত সেই আপুকে নক দিলাম, যদি উনার এজেন্সির সাথে যাওয়ার এখনো সুযোগ থাকে...

এদিকে হাসবেন্ড এর পেরেশানি দেখে বললাম, টাকা তুলতে না গিয়ে আগে এজেন্সিকে বলো অনলাইনে ব্যাঙ্ক ট্রান্সফার করতে, সেটাই বেশি সুবিধাজনক। রাতে এজেন্সিতে ফোন দিয়ে সেও একই কথা জানালো। উনারা একবারেই রাজি হয়ে গেলেন আর ব্যাংক একাউন্ট দেয়ার কিছুক্ষণের মাঝেই টাকা ফেরত পাঠিয়ে দিলেন, আলহামদুলিল্লাহ।

একটা চিন্তা শেষ হলো। কিন্তু সেই আপুর হাসবেন্ডের এজেন্সির পক্ষ থেকে কোন সিদ্ধান্ত আমরা জানতে পারছিলাম না, উনারা ব্যস্ত থাকায়। মন বলছিলো, হয়তো এখানেই আমাদের রিযিক আছে। কিন্তু না! রাত ১২টায় আপু তাদের অপারগতার কথা জানিয়ে দিলেন।

আমরা উমরাহ নিয়ে আর কোন কথা বললাম না নিজেদের মাঝে, এত কিছুর পর দুজনেই খুব ক্লান্ত হয়ে গিয়েছিলাম। আমি শুয়ে ঘুমের প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। কিন্তু আমার হাসবেন্ড আবার ইন্টারনেট ঘেঁটে আরেকটি নতুন এজেন্সির ব্যাপারে খোঁজ নিচ্ছিল।

আমি হেসে বললাম, ‘এত পরিচিত এজেন্সি থাকার পরেও যখন লাভ হলোনা, তখন একেবারে অপরিচিত এজেন্সি দেখে এই শেষ মুহূর্তে কি লাভ হবে?’ ও তখন ওদের সম্পর্কে দেয়া রিভিউ গুলো দেখালো। দেখে আমারও ভালই মনে হলো। কিন্তু এসব রিভিউ কতটা সত্য?

হঠাৎ একটা রিভিউ দেখে ও লাফিয়ে উঠলো! ওর ডিপার্টমেন্টের বড় ভাই, পরিচিত। সাথে সাথে তাকে ওই এজেন্সির ব্যাপারে জিজ্ঞেস করে উনাকে মেসেজ দিলো। আমিও বসে না থেকে এজেন্সির ওয়াটসএপ নাম্বারে মেসেজ দিয়ে জানতে চাইলাম অক্টোবরের ১৬ এর প্যাকেজে সিট ফাঁকা আছে কিনা। দুই পক্ষ থেকেই পজিটিভ রিপ্লাই আসলো, আলহামদুলিল্লাহ। ব্যস, আমরা দ্রুতই ডিসিশন নিয়ে নিলাম- এদের সাথেই যাবো, ইন শা আল্লাহ। রাত তখন ১:৩০।

পরদিন সকালে এজেন্সির সাথে ফোনে কথা বলে সব কিছু কনফার্ম করে ফেলা হয়। বুকিং মানি অনলাইনেই ট্রান্সফার করে দেই আমরা। প্রস্তুতির জন্য আমাদের হাতে থাকে মাত্র ছয়দিন।

এর পরের দিনগুলো খুব দ্রুত ব্যস্ততার সাথে পার হয়ে যায়। বিভিন্ন জনের কাছ থেকে শুনে নিয়ে প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো জড়ো করতে থাকি। একটা জিনিস খেয়াল করি, উমরাহর বিষয়ে যত জনের কাছে পরামর্শ চাই, সকলে খুব খুশির সাথে এগিয়ে আসেন।

গোছগাছের পাশাপাশি একটু একটু করে উমরাহর পড়াশোনাও করতে থাকি আমরা। বই পড়ি ও কিছু লেকচার শুনি। এছাড়া কিছু স্টেপ বাই স্টেপ ভিডিও দেখে আরো কনফিডেন্স পাই।

কিছুদিন পর শ্বশুড়-শাশুড়ি চলে আসেন আমাদের বাসায়, এক এক করে বিভিন্ন আত্মীয়রাও দেখা করতে আসেন। এতসবের ভেতর আমার হাসবেন্ডের সেই পরীক্ষার প্রস্তুতি নেয়াটাই কষ্টকর হয়ে যায়। পরীক্ষায় ভালো করার আশা ও ছেড়েই দিয়েছিল। তবু পরীক্ষা দেয়ার পর দেখা যায় ভালই রেজাল্ট করেছে, আলহামদুলিল্লাহ।

পরীক্ষার একদিন পরই ছিল আমাদের ফ্লাইট। খুব দ্রুত সময়ে আমরা লাগেজ গুছিয়ে ফেলি। পরদিন সকালে উঠে সকলে এক এক করে গোসল করে শেষ প্রস্তুতি নিয়ে নেই। আমার হাসবেন্ডের প্ল্যান ছিল এয়ারপোর্টে আগে ভাগে পৌঁছে ব্রেকফাস্ট করা। তাই সকালে তেমন কিছু না খেয়েই আমরা জলদি বের হয়ে যাই এবং অল্প সময়েই পৌঁছে যাই।

আমরা জলদি পৌঁছালেও গ্রুপের বাকি মেম্বারদের কারণে আমরা বাইরের ওয়েটিং লাউঞ্জে অপেক্ষা করতে থাকি। আমরা চাইলে সবার আগে ইমিগ্রেশন সম্পন্ন করে ফ্রি হয়ে ব্রেকফাস্ট করতে পারতাম, কিন্তু আমাদের জানা ছিল না বোর্ডিং পাস নিতে এত সময় লাগবে।

গ্রুপের সবাই আসার পর আমরা ইমিগ্রেশনের লাইনে দাঁড়াই এবং নানা কারণে আমরা সবার পিছনে পড়ে যাই। আমাদের সব ফর্মালিটি শেষ করতে এতটাই দেরি হয় যে ব্রেকফাস্ট তো দূরে থাক, ফ্লাইটের আগে আমাদের কোন কিছুই চেক না করে সোজা প্লেইনে উঠে যেতে বলা হয়। আর প্লেইন এ বসার একটু পরই প্লেন ছেড়ে দেয়!

ঘড়িতে তখন বাজে ২টা। ব্রেকফাস্ট না করে আমাদের তখন সবারই কাহিল অবস্থা, তবে সবচেয়ে কাহিল ছিল আমার হাসবেন্ড। কারণ ওর অনেক শখ ছিল বাবা মাকে এয়ারপোর্টে নিয়ে ব্রেকফাস্ট করাবে, এর জন্য ও অনেক দৌড় ঝাপও করেছিল। আমি ওকে বুঝালাম, ‘হয়তো ইবাদতের থেকে দুনিয়াবি কিছু নিয়ে বেশি আকাঙ্ক্ষা করা আল্লাহর পছন্দনীয় না। নিশ্চয়ই এতে আমাদের জন্য কল্যাণ আছে।’

আমার হাসবেন্ড সব শুনে একমত হলো। হ্যান্ডব্যাগ এ থাকা সামান্য ফল দিয়ে আমরা ক্ষুধা নিবারণ করলাম। কতক্ষন পর সৌদি এয়ারলাইনের পক্ষ থেকে খাবার পরিবেশন করা হলো, আমরা তৃপ্তি ভরে খেলাম। আমার শ্বশুড় আবার ইহরামের কাপড় না পরেই বের হয়েছিল। তবে প্লেনেই ইহরাম পড়ার চমৎকার ব্যবস্থা ছিল বলে রক্ষা, আলহামদুলিল্লাহ।

রৌদ্রময়ী

16 Nov, 12:31


নিয়মিত নিজের মৃত্যুর স্মরণ আত্মহত্যার প্রবনতা কমাতে সহায়তা করতে পারে, ইন শা আল্লাহ। আমি একে বলি 'Mindful Recalling of Death'।

জীবনের কষ্ট- দুঃখ, দুনিয়াবি না পাওয়া গুলোর যন্ত্রণা থেকে মুক্তির জন্য কোনো একদিন আল্লাহ আমার মনে এই মৃত্যু চিন্তা এনে দিয়েছিলেন।


মনে নেই সেই কবেকার কথা। হঠাৎ করে এমনটা মনে হল— আমি যদি এখন মারা যাই, তাহলে পৃথিবীর কিছু তো আর আমার কোনো কাজে আসবে না, আজকে যা পাওয়ার জন্য এতো মরিয়া হচ্ছি, যা চাওয়ার জন্য এতো অপমানিত হচ্ছি, আজকে মরে গেলে এসব কি কাজে আসবে?

না পেলেও বা কী হবে? সকলের ভাগ্যে সব থাকবেই এমন তো আল্লাহর সিস্টেম না, আমার পৃথিবীতে আসার লক্ষ্য তো এটা নয় যে আমি যা চাবো তাই পাবো।

আল্লাহর অশেষ রহমত যে আমি মুক্তি পেলাম, এতো হালকা লাগলো আমার, ঝগড়া, ক্ষোভ, অভিযোগ, অপমান যা কিছু আমাকে ভারাক্রান্ত করে রেখেছিল, আল্লাহ আমাকে তা থেকে মুক্তি দিলেন এই মৃত্যুর চিন্তার মাধ্যমে। আল্লাহু আকবর।


এরপর থেকে আমি নিয়মিত মৃত্যুর চিন্তা করি, প্রতিদিন কোনো একটা সময় নিজেকে প্রশ্ন করি “এখনই মারা গেলে আমার কী হবে?”

কখনো অটোতে বসে, কখনো বাসায়, কোনো সময় ঝগড়া হলে, নিজে ভুল করলে, রোজ চিন্তা করার চেষ্টা করি সচেতন ভাবে।


আল্লাহর রহমতে এটা আমাকে অনেক হেল্প করেছে বিপদে শান্ত থাকতে। ঝগড়া হলে, কেউ কষ্ট দিলে, মিথ্যা বললে ভাবি— এখনই যদি মারা যাই, তাহলে এদের সাথে তো আর কোনো দিন দেখাই হবে না আমার, অযথা এদের কথা, আচরণে এতো কষ্ট পাচ্ছি।

তখন আর ঝগড়ার টপিক গুলো অতোটা গুরুত্বপূর্ণ মনে হয় না, মাফ করে মিলে যাই।


মূল পয়েন্ট ছিল আত্মহত্যার ইচ্ছা দূর করতে মৃত্যু নিয়ে চিন্তা ভাবনা। আচ্ছা, একজন ব্যক্তি কেন আত্মহত্যা করতে চায়?

অধিকাংশ ক্ষেত্রে— দুনিয়াবী কষ্ট, ব্যর্থতা, একাকীত্ব, প্রিয়জনের অভাব, বিরাগ, অভাব, পারিপার্শ্বিক, অর্থনৈতিক চাপ থেকে মানুষের আর বাঁচতে ইচ্ছা করে না, মনে হয় মরে গেলেই বাঁচি।

আনন্দে, ইবাদত করতে করতে, ভাল কাজ করার খুশিতে কারো মরতে ইচ্ছা করে না। মরতে ইচ্ছা হয় কষ্ট, অধিকাংশ ক্ষেত্রে মানুষের উপর রাগ, অভিমান থেকে।

আজ মারা গেলে এসব মানুষের সাথে আর কোনো দিন দেখা হবে? অথচ জীবনের দিনগুলো শেষ হয়ে গেলে আর কোনো দিনই আমরা আসবো না, এখনই সময় আল্লাহকে খুশি করে নিজের ভালোর চিন্তা করা।


জীবন আসলেই দুই দিনের। আজকে আছি, কালকে এ সময়ে দাফন শেষ হয়ে যেতে পারে। যতো সমস্যায় আছি, টাকার অভাব, অসুখ, ঝগড়া, আত্মীয়দের সাথে রাগ, গীবত, মানুষের দোষ ধরা— এসব কিছুই থাকবে না কালকে আর, কী থাকবে তখন?

নামাজ ঠিক ছিল?
খাবার হালাল ছিল?
কুরআন পড়েছি তো?
গান- সিনেমা শুনি নি তো?
রাগ- ঝগড়ার উপর মরি নি তো?
মানুষকে কথা দিয়ে কষ্ট দেই নি তো?
এই সব কয়েকটা জিনিস, এগুলোই যা গুরুত্ব বহন করে।

সব কষ্ট এবং হতাশা একদিকে আর আজ যদি আমার আল্লাহর সাথে মুলাকাত হয়ে যায়, আমার মৃত্যু হয়ে যায়, আমি কি তৈরী আছি আমার রবকে ফেস করার জন্য এই দুশ্চিন্তা আরেক দিকে।

এই চিন্তা করলে দুনিয়ার সব রাগ, অভিযোগ অর্থহীন মনে হয়, নিজেকে অপ্রস্তুত মনে হয়। আবার আমার রবের দয়া, ভালোবাসার কথা চিন্তা করলে আনন্দে তখনই আল্লাহর কাছে চলে যেতে মনে চায়।

মৃত্যু,
আহা, মৃত্যু! আমার প্রিয়,
আমার বেঁচে থাকার প্রেরণা,
মৃত্যু হবে জেনেই বেঁচার আগ্রহ পাই,
সুন্দর মৃত্যুর আকাঙ্খায় ক্ষমা করতে পারি বারবার।


আল্লাহ যা চান, তাই আমার জীবনে আসুক, তিনি যা অপছন্দ করেন, তা জীবন থেকে চলে যাক। একটা জীবন, মৃত্যু হয়ে গেলে শেষ, আর তো কাজ করার, তওবা করার সুযোগ হবে না, এই জীবনে আমি ব্যর্থ হতে চাই না।

মৃত্যুই আমার প্রিয়
খাদিজাতুল কোবরা

রৌদ্রময়ী

রৌদ্রময়ী

16 Nov, 02:13


এমন সময় আরেকটি এজেন্সির ফেসবুক পোস্ট আমার চোখে পড়লো। তাদের আগে থেকে ফলো করতাম, কিন্তু পরিচিত না হওয়ায় কখনো তাদের কথা হাসবেন্ডকে বলিনি।

তাদের প্যাকেজ সবদিক থেকে আমাদের জন্য উপযুক্ত ছিল। আমার হাসবেন্ড দ্রুতই তাদের সাথে কথা বলে সিদ্ধান্ত নিয়ে নেয় আর আমাকে অবাক করে দিয়ে পরদিন দুপুরেই বুকিং মানি নিয়ে রওনা দিয়ে দেয়।

আমার হাসবেন্ড টাকা নিয়ে বের হয়ে যাওয়ার পর আপনজনেরা আমাকে কল দিয়ে বলতে থাকে যে বেশি করে দুআ করতে, কারণ অনেক রকম ভুয়া এজেন্সিও নাকি আজকাল আছে। এরপর থেকে আমার মনেও ভয় কাজ করতে থাকে। আমি আল্লাহকে বেশি করে ডাকতে থাকি।

কিছুক্ষণ পর আমার হাসবেন্ডকে ফোন দিয়ে অবশ্য আমি নিশ্চিন্ত হই। ভুয়া এজেন্সি হলে এক দেখায় চিনতে পারতো। ওর কথা শুনে বুঝলাম ও সন্তুষ্ট, আলহামদুলিল্লাহ। তারা আবার বয়স্ক মানুষ শুনে তাদের প্যাকেজের হোটেলের বদলে কাছের হোটেল চুজ করতে বলে, এতে একটু বাড়তি খরচ হবে যদিও।

হোটেল বাছাই করতে করতে অনেক রাত হয়ে যায়, হাসবেন্ডের ফোনের চার্জও শেষ হয়ে যায়। আবার শুরু হয় ঝুম বৃষ্টি। উনারা পাসপোর্ট স্ক্যান করার পথে কারেন্টও চলে যায়। সব মিলিয়ে আমার হাসবেন্ড সেখানে আটকে যায়। আবার শুরু হয় আমার দুশ্চিন্তা।

হাসবেন্ড যখন উনাদের অফিস থেকে বের হয় তখন বাজে রাত ১১:০০টা। রাস্তায় এক হাঁটু পানি। ওর ভেতরেই অনেকটা পথ হাঁটতে হয়। পরে এজেন্সির লোকেরাই অনেকটা পথ নিজেদের গাড়িতে করে লিফট দেয়। এরপর ও রিক্সা নিয়ে বাসায় ফেরে।

বাসায় ফেরার পর ও বর্ণনা দিচ্ছিল কত কষ্ট হয়েছে আজকে। আমি মনে মনে দুআ করলাম, আল্লাহ যেন নেক উদ্দেশ্যে করা এই কষ্ট কবুল করে নেন। ওকে একটা কথা বললাম, যেটা কিনা আগেও বহুবার বলেছি-

"এ জীবনে আজ পর্যন্ত আমি কোন কিছু যেমনটা ভেবেছি, তেমনটা কখনোই হয়নি। তবে শেষ পর্যন্ত যা হয়, সেটা আমার জন্য সবচেয়ে উত্তম হয়। তাই আমি আল্লাহর পরিকল্পনার উপর ভরসা রাখছি।"

পরদিন থেকে আমরা পুরো দমে উমরাহর প্রস্তুতি নিতে থাকি। কিন্তু আবার ঝামেলার মুখে পড়ি ভিসা নিয়ে। নতুন নিয়ম অনুযায়ী প্রতি যাত্রীর পাসর্পোট, ছবি, ফিঙ্গারপ্রিন্ট একটি এপের মাধ্যমে রেজিস্টার করতে হবে।

আমার ফিঙ্গারপ্রিন্ট দুদিন ধরে অনেক চেষ্টার পর আপডেট করা সম্ভব হয়। কিন্তু বয়সের কারণে আমার শ্বশুর ও শ্বাশুড়ির ফিঙ্গারপ্রিন্ট কোন ভাবেই এপে আপডেট করা যাচ্ছিল না।

টানা চারদিন অসংখ্যবার চেষ্টার পরেও আমার দেবর উনাদের ফিঙ্গারপ্রিন্ট স্ক্যান করতে সক্ষম হচ্ছিল না। তখন আমি হাসবেন্ডকে পরামর্শ দেই স্থানীয় কোন এজেন্সির খোঁজ করতে, হয়তো তারা একটু ইহসান করতে পারবে আমাদের।

বেশ কয়েকটি স্থানীয় এজেন্সির সাথে যোগাযোগ করেও কোনো লাভ হলো না, একেক জন একেক কথা বলে ফোন কেটে দিলো। আমার হাসবেন্ড তখন আমাকে বলল, "আর তুমি কিনা ভাবো দাড়ি-টুপি থাকলেই মানুষ ভালো হয়ে যায়!"

আমার মাথাটা আসলেই হেট হয়ে গেলো। তবু আমি পরিচিত অনেকের কাছে সাহায্যের আশায় নক দিলাম। আরো কিছু এজেন্সির সন্ধান নিলাম। কিছুক্ষণ পর শুনলাম এক এজেন্সির অফিসে গিয়ে ফিঙ্গারপ্রিন্ট স্ক্যান করা গিয়েছে, আলহামদুলিল্লাহ!

যাক, আবার নিশ্চিন্ত হয়ে উমরাহর বই খুলে বসার ফুরসত পাওয়া গেলো। কিন্তু না, কিছুক্ষন পরই হাসবেন্ড কল দিলো ও জানালো- যেই এজেন্সির সাথে কথা পাকা করা হয়েছিল, উনারা একটি বিশেষ কারণে অক্টোবরের ১৬ তারিখে যেতে পারছেন না। উনারা আরো ৬দিন পর যাবেন, যেটা আমাদের পক্ষে আবার সম্ভব না।

আমি কেন জানি এবার কষ্ট পেলাম না, অবাকও হতে পারলাম না। মনটা কেমন এক শূন্যতার মধ্যে ঘুরপাক খেতে থাকলো।

হঠাৎ মনে পড়ল কয়দিন আগে উমরাহয় নিবো বলে একটি আবায়া ছোট করতে দিয়েছিলাম এখানকার এক টেইলর আপাকে। উনি আমাদের উমরাহর নিয়তের কথা শুনে নিজের হজ্জের কিছু অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছিলেন, আর শীঘ্রই আবার উমরাহ করার ইচ্ছার কথা বলেছিলেন। অথচ উনার সংসারের টানাপোড়েন আমার অজানা না।

আমার তখন মনে হলো, হয়তো আল্লাহর ঘরে মেহমান হওয়ার আমন্ত্রণপত্র আসমান হতে আমার নামে এখনো নাযিল হয়নি। এজন্যই সকল সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও আমি যেতে পারছি না।

আমি পড়ন্ত বিকালের আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকলাম আর বললাম, "ইয়া আল্লাহ, যেদিন আমার জন্য সবচেয়ে উত্তম আপনি সেদিনই আমাকে আপনার ঘরের মেহমান করে নিন। নিশ্চয়ই আপনি আমাকে এ বিষয়ে সবরকারী হিসেবে পাবেন।"

চলবে...

উমরাহর প্রস্তুতি
বিনতে আবদুল্লাহ

#বাইতুল্লাহর_মেহমান (পর্ব ১)
রৌদ্রময়ী