নিচের লেখাটা সেপ্টেম্বরের ৫ তারিখের। ৩১শে ডিসেম্বরের আগে আবার লেখাটা প্রাসঙ্গিক মনে হচ্ছে। #১৩ এবং #১৪ বিশেষভাবে দ্রষ্টব্য -
.
এক মাস কেটে গেল। এই এক মাসে অনেক কিছু হলো। আমাদের মনোযোগও বিক্ষিপ্ত হলো। কিছু জানা কথা আবার মনে করিয়ে দেই।
.
১। আওয়ামী জাহিলিয়্যাতের পতন এই কওমের অনেক বড় অর্জন। এটা আল্লাহর পক্ষ থেকে অনেক বড় নিয়ামত। এই নিয়ামতের মূল্যায়ন যদি আমরা না করি, তাহলে পরিণতি ভালো হবে না।
মহান আল্লাহ বলেছেন,
لَئِن شَكَرْتُمْ لَأَزِيدَنَّكُمْ ۖ وَلَئِن كَفَرْتُمْ إِنَّ عَذَابِي لَشَدِيدٌ
যদি তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর তাহলে আমি অবশ্যই তোমাদের জন্য (আমার নি‘য়ামাত) বৃদ্ধি করে দেব, আর যদি তোমরা অকৃতজ্ঞ হও (তবে জেনে রেখ, অকৃতজ্ঞদের জন্য) আমার শাস্তি অবশ্যই কঠিন।
.
২। জুলাই গণহত্যার বিচার বর্তমানে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ। এ ক্ষেত্রে অগ্রগতি কোন দিক থেকেই সন্তোষজনক না। দল হিসেবে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের বিচার শুরু হয়নি। কিন্তু তার আগেই উপদেষ্টা থেকে শুরু করে রাজনৈতিক দলগুলোর নেতারা ক্ষমা, পুনর্বাসন ইত্যাদির কথা বলা শুরু করেছেন। এগুলো আত্মঘাতী কাজকর্ম।
.
৩। র্যাব ভেঙ্গে দেয়া প্রয়োজন, পুলিশ বাহিনীতে যারা সিস্টেমিক খুনের সাথে জড়িত তাদের যথাযথভাবে বিচারের আওতায় আনা জরুরী। জন(গী) দমনের নামে চরম নির্যাতন ও নিপীড়ন চালানো পুলিশ ও র্যাবের অফিসারদের বিচার করা আবশ্যক। কিছুই হয়নি, কোন অগ্রগতিও দেখা যাচ্ছে না। অনেক ক্ষেত্রে গণহত্যার সাথে জড়িত পুলিশরা প্রমোশন পেয়ে বসে আছে।
.
৪। এক মাস কেটে যাবার পরও আন্দোলনে হতাহতের পূর্ণাঙ্গ তালিকা করা হয়নি, এটা বড় ব্যর্থতা। জুলাই আন্দোলনে যুলুমের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে যারা শহীদ হয়েছেন, যারা পঙ্গু হয়েছেন, যারা কুরবানী করেছেন, তালিকা তাদের পরিবারগুলো সম্মাননা ও সহায়তা দেয়া আমাদের সামষ্টিক দায়িত্ব।
.
৫। বিভিন্ন ব্ল্যাক সাইট বা ‘আয়নাঘরে’ যারা গুম হয়েছিল তাদের হদিস বের করা, পরিবারগুলোকে জানানো, জড়িতদের বিচারের আওতায় আনা, এই গুম ও ক্রসফায়ার চক্র ও সিস্টেম নিয়ে শ্বেতপত্র প্রকাশের মতো কাজগুলো একেবারেই আগায়নি।
.
৬। বিভিন্ন বাহিনী, সংস্থা এবং আমলাতন্ত্রের উঁচু উঁচু পদে এখনো আওয়ামী লোকজন রয়ে গেছে। গুম, ক্রসফায়ার, মাফিয়া তন্ত্রের সাথে লোকদের এখনো সরানো হয়নি। এভাবে কোন অর্থবহ সংস্কার হবে না।
.
৭। আওয়ামী জাহিলিয়্যাতের অন্যতম স্তম্ভ হিসেবে কাজ করা ব্যবসায়ীদের বিচার ও জবাদিহিতার আওতায় আনা হয়নি। বরং তারা নানাভাবে নতুন সরকার, এবং বিরোধী দলগুলর ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠছে। এদের বিচার হওয়া জরুরী।
.
৮। আওয়ামী আমলে ভারতের সাথে দেশের স্বার্থবিরোধী কী কী চুক্তি হয়েছে, আওয়ামী শাসনের সাথে ডার৩-ইয় ইনভলভমেন্ট, এদেশে ডার৩-ইয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর তৎপরতার বিবরণ জনগণের সামনে প্রকাশ করা দরকার।
.
৯। আওয়ামী জাহিলিয়াতকে সমর্থন করে যাওয়া, এর পক্ষে আদর্শিক বয়ান তৈরি করা গণশত্রু বুদ্ধিজীবি ও সেলিব্রিটিদের চিহ্নিত করা, সামাজিকভাবে বয়কট এবং শাস্তির মুখোমুখি করা অত্যন্ত জরুরী। আমরা সেটা তো করিইনি, বরং উল্টো পথে হাটছি।
.
১০। সাংস্কৃতিক জমিদার গোষ্ঠী কিছুদিনের জন্য গা ঢাকা দিলেও নানা চেহারায় আবারও ফিরে আসবে। এর বিভিন্ন ইঙ্গিত আমরা এরই মধ্যে দেখতে পাচ্ছি। এ ব্যাপারে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে হবে।
.
১১। এনজিও এবং তাদের পশ্চিমা ব্যাকাররা আমাদের সমাজ, সংস্কৃতি ও ঈমান বিরোধী নানা এজেন্ডা নিয়ে সচল হয়েছে। এর মধ্যে র্যাডিকাল ফেমিনিস্ট দাবি থেকে শুরু করে এলজিটিভি, নানা এজেন্ডা আছে। এই যমীনের মানুষ এধরনের কোন চক্রান্ত মেনে নেবো না। বরং এধরণের এজেন্ডা জোর করে বাস্তবায়নের চেষ্টার ফলাফল অত্যন্ত নেতিবাচক হবে।
.
১২। জুলাই আন্দোলনের ইতিহাস সংরক্ষণের জন্য জনউদ্যোগ প্রয়োজন। ইতিহাস সংরক্ষণ করা না হলে ইতিহাস বিকৃতি হবেই।
.
১৩। ছাত্রনেতাদের অবদান দেশ স্বীকার করে। মাস্টারমাইন্ড বা অন্যান্য বিষয় নিয়ে যেসব বিতর্ক হয়েছে, সেসবের পরও মানুষ এখনো ছাত্রনেতাদের সাফল্য ও কল্যাণ চায়। তাদের উচিৎ ডীপ স্টেইট, সাংস্কৃতিক জমিদার, প্রথম আলো-ডেইলি স্টার ব্লকের সুশীল সমাজের অনুগামী হবার বদলে দেশের মানুষের আকাঙ্ক্ষাগুলো বোঝা এবং তাদের স্বার্থের প্রতিনিধিত্ব করা। এই মানুষেরাই আন্দোলনকে সফল করেছে, এই মানুষ থেকে বিচ্ছিন্ন হলে তারা ক্ষতিগ্রস্থ হবেন।
.
১৪। হাসিনা বিরোধী আন্দোলনের ওপর ৭২ এর সংবিধান স্টাইলে বিভিন্ন ন্যারেটিভ চাপিয়ে প্রবণতার ব্যাপারে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে।
.
আল্লাহ এই যমীন ও কওমের জন্য উত্তম ফায়সালা করুন। আমাদের ইসলাহ করে দিন, আমাদের অকৃতজ্ঞ কওম হওয়া থেকে রক্ষা করুন। আল্লাহ তাঁর যমীনে তাঁর দ্বীনকে বিজয়ী করার রাস্তা প্রশস্ত করে দিন।