https://ift.tt/VbBMDpc ~~ রব্ব-আব্দ সম্পর্ক ~~
এখন, এই ‘রব্ব’ শব্দ সম্পর্কে আরেকটু বিস্তারিত জানব।
আপনি জানেন, যখন আমি ❛শিক্ষক❜ বলব তখন তার সাথে কার সম্পর্ক থাকবে? ছাত্রদের। যখন বলব—বাবা-মা, এটা বাচ্চাকাচ্চার সাথে সম্পর্কিত। যখন বলব—বস/চাকুরিদাতা। চাকুরিদাতার সাথে সম্পর্ক কর্মচারীদের। এমন কিছু পরিভাষা আছে যাদের সাথে একটা সম্পর্ক থাকবেই। কিন্তু আপনি যখন ‘বুদ্ধিমান’ বলবেন, এর সাথে কারো সম্পর্ক থাকবে, এমন না। যখন বলবেন ‘লম্বা’, তার মানে এই না যে এটা কারো সাথে সম্পর্কিত। তবে যখন চাকুরিদাতা বলবেন তখন সেটা কর্মচারীদের সাথে সম্পর্কিত হয়।
আল্লাহর কিছু নাম এমন রয়েছে যা কারো সাথে সম্পর্ক নির্দেশ করে না। আল্লাহ মহাজ্ঞানী (আল-আলিম)। ‘মহাজ্ঞানী’ কথাটা কারো সাথে সম্পর্ক নির্দেশ করে না। এটা আল্লাহর একটা বর্ণনা যা কারো সাথে সম্পর্কিত নয়। কিন্তু যখন আল্লাহ নিজেকে প্রভু, রব্ব কিংবা এধরণের শব্দে বলেন, এগুলোর সাথে তখন কোনো একটা সম্পর্ক তৈরী করা জরুরী হয়ে পড়ে। আল্লাহ নিজের পরিচয় দিতে গিয়ে এই ধরণের বর্ণনাই প্রথম দিয়েছেন যা আল্লাহর সাথে একটা সম্পর্ক তৈরী করে।
এখন আল্লাহর সাথে আমাদের অনেক ধরণের সম্পর্ক রয়েছে। তিনি আমাদের সৃষ্টিকর্তা। আমরা তাঁর সৃষ্টি। তিনি আমাদের নেয়ামত প্রদান করেন আর আমরা দয়াগ্রহীতা। আল্লাহ হলেন শিক্ষক, আমরা তাঁর ছাত্র। আল্লাহর সাথে এগুলো সবই আমাদের সম্পর্ক।
কিন্তু আল্লাহ বলেন “এই সকল সম্পর্ক পরে, প্রথম যে সম্পর্কটা জানতে হবে, যেই সম্পর্ককে আপনি কখনই ভুলে যাবেন না, যা সারাটা দিন প্রতিটা সময়ই মনে রাখতে হবে”, সেটা হচ্ছে—তিনি আমাদের ‘রব্ব’। তাহলে এক্ষেত্রে আমাদের কী বলা হবে? ‘আব্দ’ (عَبْد), দাস। রব্ব বা মালিকের সাথে আমাদের সম্পর্ক আমাদের দাসে পরিণত করে।
‘রব্ব’ শব্দটা ব্যাখ্যা করেছি। এখন ‘আব্দ’ শব্দটা বুঝতে হবে। কারণ এটাই আমাদের সম্পর্ককে পূর্ণতা দিবে। ‘আব্দ’ (দাস) সম্পর্কে বেশি কিছু বলব না, শুধু একটা কথা বলব।
আল্লাহ নিজের পরিচয়ের অংশটিতে বলেছেন তিনি ‘রব্ব’। এখন এই সম্পর্কের যা বাকি (দাসত্বর অংশ) সেটা ফাতিহায় অগ্রসর হলেই দেখতে পাই, সেটা কী?
إِيَّاكَ نَعْبُدُ ﴾আমরা কেবলই আপনার দাসত্ব করি।﴿
আমরা হচ্ছি ‘আব্দ’ (দাস)। আমরা ইতিমধ্যেই আপনার দাস হয়ে গিয়েছি। আপনাকে ‘রব্ব’ হিসেবে স্বীকার করে নিলাম।
আমার শিক্ষক ড. আব্দুস সামী আমাকে প্রশ্ন করতেন। একবার আমরা আরবী পড়ছিলাম তার কাছে, তিনি বললেন,
—“নোমান! আমাকে পুরো কুরআনের সারমর্ম বল।”
আমি বললাম, “আমি বুঝতে পারছি না আপনি কী বোঝাতে চাচ্ছেন”
তিনি বললেন, “আচ্ছা, আমাকে এমন একটা বাক্য বল যা পুরো কুরআনের সারাংশ”
আমি বললাম, “আচ্ছা, আচ্ছা, এবার মনে হয় পারব। আল্লাহকে ❛রব্ব❜ হিসেবে মেনে নেয়া আর নিজেদেরকে ❛আব্দ❜ হিসেবে স্বীকার করা” এটাই।
তিনি বললেন, “হ্যাঁ, তুমি পেরেছ। আমি তোমাকে কিছু শেখাতে পেরেছি।”
এটাই সেই কথা। আল্লাহকে রব্ব হিসেবে মেনে নাও, নিজেকে আব্দ (দাস) হিসেবে স্বীকার করে নাও।
এখন, দাস কথাটার মানে কী? দাস এমন যার নিজের কোনো পছন্দ থাকতে পারে না। চূড়ান্ত কথা হচ্ছে, একজন দাস সে যে নিজে নিজের কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। তাদের জন্য সিদ্ধান্ত নিয়ে দেয়া হয়। একটা উদাহারণ দিচ্ছি।
আমাদেরতো এখন দাসপ্রথা নেই, কিন্তু মনে করুন আছে। ভাবুন আপনাদের একজন আসলেন আর বললেন, “এই নো’মান, তুমি আমার গোলাম।” আমি বললাম, “ঠিক আছে, সেটাই।” তাহলে এখন থেকে আপনি আমার প্রভু আর আমি আপনার দাস।
আমি এখানে ১০ মিনিট ধরে নীরবে বসে আছি। তো, আপনি কী চাচ্ছেন? কফি কিংবা অন্যকিছু? একজন দাসের ইচ্ছার স্বাধীনতা নেই। দাস সেটাই করতে পারে যা তার প্রভু চায়। তাই, যতক্ষণ তার প্রভু তাকে কিছু না বলছে, তার কিছু করার নেই। যদি লোকটি শুধু বলত, “আমার দাস!” আর আমি বলতাম, “জ্বী, আচ্ছা”। এরপর তিনি আমাকে কিছুই বলছেন না। যদি তিনি আমাকে কিছু করতে না বলেন, তাহলে আমার জন্য যা বাকি থাকে তা হচ্ছে নিজের ইচ্ছে মতো কাজ করা, যতক্ষণ না তিনি আমাকে কিছু করতে বলছেন।
একজন দাস আর কর্মচারীর মাঝে পার্থক্য কী?
একজন কর্মচারী শুধু নির্দিষ্ট সময়ের জন্য নিযুক্ত। তারপর মুক্ত। কিন্তু একজন দাস কতক্ষণ দাস? যখন আপনি ঘুমান তখনও দাস। যখন সজাগ তখনও দাস। সাপ্তাহিক ছুটির দিনে আপনি দাস। সপ্তাহের বাকি দিনগুলোতেও দাস। সকালেও আপনি দাস। রাতেও দাস। মাসজিদে আপনি দাস। মাসজিদের বাহিরেও দাস। এমন কোনো সময় নেই যখন আপনি দাস নন।
দ্বিতীয়ত,
আপনি তখনই কেবল দাস হতে পারবেন যখন জানবেন মালিক আপনার কাছে কী চান। যদি আপনি না জানেন তিনি কী চান, আপনি যা ইচ্ছে তাই করতে পারেন। আর আপনি যদি আপনার ইচ্ছে মতো যা খুশি তাই করা শুরু করেন, সংজ্ঞানুযায়ী আপনি মুক্ত, দাস নন।
তাই, দাসত্ব বলে কিছু নেই যতক্ষণ না প্রভু কিছু করতে বলেন, যতক্ষণ মালিক কোনো নির্দেশনা না দেন।
এখন, আল্লাহ নিজেকে প্রভু বলছেন। যার মানে আমি দাস। এটা আমাকে ভাবাচ্ছে যে,
“আচ্ছা…