*না পাওয়ার বেদনায় পুড়ে মরে দুনিয়াদার ব্যক্তি-*
بسم الله الرحمن الرحيم
الحمد لله والصلاه والسلام على رسول الله اما بعد
দুনিয়ার জীবনকে যারা প্রধান্য দেয়, দুনিয়া কামাই করতে গিয়ে আল্লাহ পাকের হুকুম যারা নষ্ট করে, রাসূলে কারিম ﷺ এর পবিত্র সুন্নতকে যারা উপেক্ষা করে আখেরাতের উপর দুনিয়ার জিন্দেগীকে যারা প্রাধান্য দেয় তাদের এক বড় শাস্তি হলো , *দুনিয়াতেই তারা জীবনের শেষ দিকে এসে আফসোসের আগুনে পুড়তে থাকে।* না পাওয়ার বেদনায় ভোগতে থাকে।
*ধরেন* তার বয়স এখন ৬০/৭০ হয়ে গেছে। সারাজীবন সে দুনিয়ার পিছনে ছুটেছে, পড়া লেখা জীবন যৌবন সব কিছু সে দুনিয়ার পিছনে কাটিয়েছে। দুনিয়া কামাই করার জন্য, সম্পদ কামাই করার জন্য, বড় পদ কামাই করার জন্য, ক্ষমতা কামাই করার জন্য, নিজের এলাকায় দাপট ওয়ালা হওয়ার জন্য, নিজের আত্মীয় স্বজন এর মধ্যে প্রভাবশালী হওয়ার জন্য, সে তার পুরা জীবন খরচ করেছে।
এই *উদ্দেশ্যেই* সে পড়াশুনা করছে যে, আমি জীবনে অনেক *বড় কিছু হবো, অনেক বড় চাকরী করবো, অনেক বড় অফিসার হবো, লোকে আমাকে সম্মান করবে, আমার খ্যাতি চারদিকে ছড়িয়ে পরবে; এই এক মোহ নিয়ে সে পড়াশুনা করেছে* । এরপর সে চাকরী করেছে। এরপর সে যখন জীবনের শেষ প্রান্তে চলে আসে তখন দেখা যায় যে, তার জীবনে হাজারো না পাওয়ার বেদনা।
এখন সে *দেখে যে, তার (ছেলে/মেয়ে) হতে পারে তার কথা শুনে না।* সে যেমনে চাইছিলো তার ছেলে মেয়েদের গড়ে তুলবে, তার চাওয়া অনুযায়ী সে পারে নাই।
এই এক *কষ্ট যে,* আমি চাইছিলাম আমার সন্তানদের কাছ থেকে যে, আমার সন্তানরা আমার চাইতে বড় হবে; সেটা আমি পারলাম না। এই ভাবনা সেই পিতার জন্য মাতার জন্য অনেক বড় কষ্টের কারন হয়ে দাড়ায়। এটা বহু লোকের বিমারি (অসুখ)যে, নিজের সন্তানের মাধ্যেমে সে সমাজে সম্মানি হতে চায়, হতে পারে সে নিজে জীবনে বেশি কিছু করতে পারে নাই। সে নিজের চেষ্টায় সমাজে সম্মানি হতে পারে নাই।
এখন তার বয়স হইছে, এখন তার সন্তানের মাধ্যেমে সম্মানিত হতে মন চায়, সম্মান পাইতে চায়। খ্যাতি পাইতে চায়, সে এইটা চায় যে, লোকে আমাকে বাহবা দিবে যে, আমার সন্তান এতো বড় বা এতো বড় অফিসার, এতো বড় চাকরী করে।
*মোট কথা হচ্ছে, যে ব্যক্তি তার পুরা জিন্দেগী দুনিয়ার পিছনে খাটায়, আল্লাহ পাকের নাফরমানীর ভিতর লিপ্ত থাকে, আল্লাহ পাকের_ হুকুমকে সে *লঙ্ঘন করে।* এরকম ব্যক্তি দুনিয়াতেই মারাত্মক রকম না পাওয়ার বেদনায় ভুগতে থাকে। একএক জন একএক দিক দিয়ে না পাওয়ার বেদনায় ভুগতে থাকে।
দেখা গেলো যে, সে তার স্ত্রীর জন্য সারা জীবনে বহু কিছু করছে। এখন শেষ জীবনে তার স্ত্রী তাকে ছেড়ে চলে গেছে,শাস্তি অনেকে পায়। এটা ওই ব্যক্তি সর্ম্পকে বলা হইলো, যে তার জীবন যৌবন পুরাটাই সে দুনিয়া কামাই করার পিছনে খাটাছে। এখন সে মোটামোটি ভাবে এই গুলা পাইছে।
আর যে সংখ্যাটা বেশি মানুষের মধ্যে, সেটা হচ্ছে যারা তাদের জীবন যৌবন দুনিয়ার পিছনেই খাটাইছে কিন্তু দুনিয়াও বিশেষ ভাবে পায় নাই। দেখা গেলো যে, পড়াশুনা করছে। এরপরে সে ভালো কোনো চাকরী পায় নাই। বেকারই রয়ে গেছে। আমাদের দেশে এখন _বেকারের সংখ্যা প্রায় ২৬ লক্ষ (২০২৪ সাল)। বহু লোক বেকার। প্রায় ২০ বছর পড়াশুনা করেছে। এখন সে বেকার। এই যে তার এক যন্ত্রনা, সে দুনিয়ার পিছনে ছুটেছিলো যে, জীবনে বড় একটা কিছু হবে, বড় একটা সম্মানের চাকরী করবে। বড় বেতনের চাকরী করবে সেটা সে পায়নি।। সে হায় হুতাস করছে। অনেকে তো আত্মহত্যা করে ফেলে। নাউজুবিল্লাহি তায়ালা মিন জালিক।
দুনিয়ার পিছনে যারা ছুটে, আল্লাহ পাকের হুকুমকে লঙ্ঘন করে, আল্লাহ পাকের হুকুমকে নষ্ট করে, যারা দুনিয়া কামাইর পিছনে ছুটে তারা দুনিয়াতেই এক নগদ শাস্তি পায়, না-পাওয়ার বেদনায় তারা জ্বলতে থাকে, পুড়তে থাকে। *দুনিয়াতেই নগদ শাস্তি।
আর এর *বিপরীতে* _আল্লাহওয়ালাদের জীবনে পেরেশানী নাই।
আল্লাহওয়ালাদের জীবনে _এই পেরেশানী নাই_ বা থাকতেই পারে না যে, আমি *দুনিয়ার এই সাইডটা পাইলাম না, বা ওই সাইডটা পাইলাম না* এই পেরেশানী তাদের নাই। তাদের যে পেরেশানী যে, হায় ! আমার জীবনের পিছনের ৩০ বছর বা ৪০ বছর বা ৫০ বছর বা ৬০ বছর চলে গেলো। `
~আমার আমল তো আরো অনেক সুন্দর করা উচিৎ ছিলো~ ।```
আমি *আল্লাহওয়ালাদের সোহবত আরো বেশি* উঠাইলে আমার আরো বেশি *ফায়দা* হতো । আরো বেশি সিজদা করলে, আরো বেশি ফায়দা হইতো। আরো বেশি নির্জনে সময় কাটাতে পারলে আরো বেশি আত্মিক উন্নতি হতো। আরো বেশি জিকির করতে পারলে, আমার আরো বেশি কল্যান হতো, উপকার হতো।
আল্লাহওয়ালাদের এই আফসোস আছে।আর এই আফসোস তো, অনেক দামি আফসোস। উপকারী আফসোস এবং এই আফসোসকে আল্লাহপাক অনেক কদর করেন, যা বান্দার জন্য অনেক বেশি কল্যাণ কর।
আফসোস *দুইরকম* হয়ে গেল।*এক- আল্লাহ পাকের বন্দেগী করা* (এমন যে, আমি কেনো আরো _বেশি করে ইবাদত করতে পারলাম না।_ এই আফসোস অনেক বেশি মূল্যবান আফসোস। এটাও জবরদস্ত এক ইবাদত।