"বউমাপা দাঁড়িপাল্লা"
বিয়ের বয়েস হয়ে গেছে ছেলের মনে ভয়! যাকে বিয়ে করতে যাচ্ছি সে আমাকে ভালোবাসবে তো? চারপাশে যা দেখছি, তাতে তো বিয়ে করতে এক প্রকার ভয়ই করছে। কথা প্রসঙ্গে বিষয়টা নিয়ে মসজিদের ইমাম সাহেবের কাছে পরামর্শ চাইল। হুযুর সব শুনে বললেন,
-সবার দাম্পত্যজীবনই যে অসুখী হয় এমনটা তো নয়, তুমি ভাল থাকলে তোমার জীবনসঙ্গিনীও ভাল থাকবে তবে তোমাকে আমি একটা মানদণ্ড দিতে পারি।
-কিসের মানদণ্ড?
-যেটা দ্বারা তুমি তোমার স্ত্রীকে মাপতে পারবে।
-কোন বিষয়ে মাপবো?
-সে তোমাকে ভালবাসে কি না।
-জ্বি বলুন তাহলে তো ভালোই হয়। দু'জনের ভুলগুলো ধরা পড়লে শোধরানো সহজ হবে।
-তাহলে শোন। বিয়ের পর খেয়াল করবে; যদি তোমার স্ত্রী চৌদ্দটা কাজ করে, তাহলে ধরে নিবে সে তোমাকে ভালবাসে।
১) যদি তোমার অবর্তমানে সে তোমার কথা আলোচনা করতে, তোমার সম্পর্কে শুনতে আগ্রহবোধ করে, অথবা তোমার মুখ থেকে তোমার জীবনের গল্প শুনতে ভালবাসে এবং তুমি যাদেরকে ভালবাসো, সেও যদি তাদেরকে ভালবাসে, তাহলে তুমি চোখ বুজে ধরে নিতে পারো, তুমি একজন স্বামী সোহাগিনী (উরুবান) স্ত্রী পেয়েছ।
২) তুমি তার মতের বিপরীত কাজ করলে, তার সাথে কোনও বিষয়ে একমত না হলেও, যদি সে রাগ না করে, গাল ফুলিয়ে না থাকে, তাহলে ধরে নিবে তুমি একজন ভাগ্যবান স্বামী।
৩) তোমার হাসি-কান্না, সুখ-দুঃখে সেও যদি সমব্যথী-সতীর্থ হয়, তাহলে বোঝা যাবে সে একজন স্বামীপরায়ণা স্ত্রী।
৪) যদি দেখো সে নিত্য নতুন বিষয় নিয়ে তোমার সাথে কথা বলে বিষয় খুঁজে না পেলে, বানিয়ে বানিয়ে হলেও ছুতো ধরে তোমার সাথে কথা বলার উপায় খোঁজে, তাহলে সে একজন স্বামী-অন্তপ্রাণ স্ত্রী।
৫) যখনই কোনো নতুন কাজ শুরু করে বা গুরুত্বপূর্ণ কোনো সিদ্ধান্ত নেয়, তোমার সাথে পরামর্শ করে তাহলে তুমি নিশ্চিন্ত থাকতে পারো, তুমি একজন পতিব্রতা স্ত্রী পেয়েছ।
৬) যত কমদামিই হোক, তুমি তাকে কোনো উপহার দিলে সে দু'হাতে সে উপহার বড় মনে গ্রহণ করে, পরম উৎফুল্ল হয় তাহলে তুমি শুধু আদর্শ স্ত্রীই পাওনি, একজন বুদ্ধিমতী স্ত্রীও পেয়েছো।
৭) যদি সে সর্বদা তোমাকে ভারমুক্ত রাখতে সচেষ্ট থাকে, আগ বাড়িয়ে তোমার টুকিটাকি কাজগুলো করে দেয়, তাহলে তোমার ইহজীবন টা জান্নাতেই কাটবে চোখ বুজেই এটা মেনে নিতে পারো।
৮) তোমার অনুপস্থিতি যদি তাকে উৎকণ্ঠিত করে রাখে, বারবার ফোন করে, মেসেজ পাঠিয়ে তোমার খোঁজ-খবর করে, তাহলে ধরে নাও, তুমি একজন ফিরিশতাকে পেয়ে গেছ।
৯) তুমি পছন্দ করো এমন কাজ যদি সে আগ বাড়িয়ে করে এবং তুমি পছন্দ করো না, এমন কাজ যদি সযত্নে পরিহার করে চলে, তাহলে তুমি নির্ভার থাক তুমি সুখী একটা জীবন কাটাতে যাচ্ছ।
১০) তোমার স্বভাবের বিশেষ দোষ-ত্রুটি-খুঁত যদি তাকে বিরক্ত না করে, রাগিয়ে না দেয়, তাহলে তুমি সর্বকালের সেরা একজন বন্ধু পেয়ে গেছ।
১১) যদি সে তোমার জন্যে যে কোনও ধরনের কষ্ট স্বীকার করতে এক পায়ে প্রস্তুত থাকে, তাহলে সুখময় একটা জীবনই তোমার সামনে অপেক্ষা করছে।
১২) যদি সে তোমার চিন্তার জগতে আগ্রহভরে অংশগ্রহণ করে, যেসব বিষয়ে তোমার মনোযোগ সেও যদি তাতে আগ্রহী হয়, তোমার শখের বিষয়গুলোর প্রতি সেও যত্নবান হয়, যদি তোমার কল্পনাজগতের সাথেও সে একাত্ম হয়, তাহলে তোমার চেয়ে সুখী ইহজগতে আর কেউ হতে পারে না।
১৩) যদি সে তোমার জন্যে ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র কাজও লাজ-সংকোচ ছাড়া করতে পারে, নির্দ্বিধায় করে ফেলে, তাহলে তোমার উচিত আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করা।
১৪) যদি সে তোমাকে আল্লাহর নৈকট্য অর্জনে, ইবাদত-বন্দেগীতে, পাপমুক্ত জীবন-যাপনে সহযোগিতা করে, উৎসাহ যোগায়, তাহলে তুমি এমন কিছু পেয়ে গেছো, যা তোমাকে দুনিয়াতেও জান্নাতী সুখের সন্ধান দিবে, আখিরাতেও জান্নাতী জীবন লাভের নিশ্চয়তা দিবে।
বইঃ দুজন দুজনার, পৃষ্ঠাঃ ৪৭-৪৯।
লেখকঃ আতিক উল্লাহ