একটা প্যারেন্টিং টিপস শেয়ার করি।
বাচ্চাদের তারবিয়াতে যতটা সময় দিবেন তার থেকে বেশি সময় দিবেন দুয়াতে।
আল্লাহ যেন বাচ্চাকে আদব- আখলাক, শান্ত-ভদ্র, অনুগত, গুনধর, সুস্থ-সবল, ঈমান ও তাকওয়া দিয়ে পূর্ণ করে দেন। বাচ্চা যদি কান্না করে, ঘুম-খাবার নিয়ে জ্বালাতন করে, এসব ঠিক করতে তার পেছন যতটা সময় দিবেন তার থেকে বেশি সময় দিবেন দুয়াতে, আল্লাহ যেন তার এসব দূর করে দেন।
জন্মের আগেও দুয়া করবেন, পরেও করবেন, প্রতিদিন করবেন। বাচ্চা পালায় আপনার একমাত্র হেল্পার যদি আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা হয়ে যান তবে আপনার আর পেরেশানি কিসে?
বাচ্চার জন্য ঘুমাতে পারেন না, বা কাচা ঘুম ভেংগে যাচ্ছে, মাথা ব্যথা করছে, মেজাজ চটে যাচ্ছে, আল্লাহর কাছে দুয়া করেন, আল্লাহ যেন কাচা ঘুম থেকে উঠলেও আপনাকে সম্পূর্ণ সুস্থ রাখেন, আল্লাহ যেন মাথা ব্যথা না দেন, আল্লাহ যেন আপনার মাথা ও দিলে সুকুন দেন, বাচ্চার প্রতি যেন অনেক মায়া দেন।
সন্তান মা-বাবার উপর ভয়াবহ কঠিন এক দায়িত্ব। বাবা থেকে মায়ের বেশি, এই দায়িত্ব আমরা একা কোনোদিন সুন্দরভাবে পালন করতে পারব না যদি না আল্লাহ আমাদের সহায়তা করেন।
লা হাওলা ওয়ালা ক্বুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ এই দুয়াটা বেশি বেশি পড়বেন যখন বাচ্চার প্রতি কোনো কারণে অধৈর্য হয়ে পড়েন৷
১০ বছরের আগে বাচ্চার শরীরে আঘাত করা, তাকে খুব তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে বকা দেওয়া এটা তার প্রতি জুলুম, তার হক নষ্ট করার শামিল। হাদিসে বাচ্চাদের শাসন করার কথা এসেছে সর্বপ্রথম নামাজের জন্য৷ যদি ১০ বছর হয়ে যায় তাও নামাজে গাফেল থাকে তবে তখন তাকে প্রহার করা যাবে। আর সেটা কীভাবে? মিসওয়াক দিয়ে হাতে বা পিঠে। তাও প্রথম ২ মাইর নিজের হাতে দিয়ে এরপর ৩য় মাইর বাচ্চাকে দিতে হবে। প্রথম ২ মাইর কেন নিজের হাতে জানেন? এর হিকমা কী?
আমাদের যখন রাগ উঠে, আমরা প্রহার করতে চাই তখন আমাদের হিতাহিতজ্ঞান লোপ পায়। আমরা জোরে আঘাত করি। আর সেই জোরে আঘাতটা যাতে নিজের হাতেই হয় তাই প্রথম ২ আঘাত নিজেকে করতে হবে, এতে রাগও কমবে, ব্যথাটা নিজে পেলে হিতাহিতজ্ঞানও ফিরে আসবে যে বাচ্চার উপর জুলুম যেন না হয়।
আবারও বলি, সন্তান আমাদের কাছে আল্লাহর আমানত। আমরা তাদেরকে কিনে নেই না আল্লাহর থেকে৷ তাদেরকে উত্তম তারবিয়াত দেওয়া, উত্তম আচরণ করা, সমর্থ্য অনুযায়ী তাদের ভরনপোষণ করা আমাদের দায়িত্ব, এইগুলো পাওয়া তাদের হক।
তাই আমরা বাচ্চার জন্মের আগে থেকে তাদের তারবিয়াত শুরু করব, যাতে তারা শয়তানের প্ররোচনায় না পড়ে। অবাধ্য, বেয়াদব, অশান্ত, ঈমানহীন ইত্যাদি না হয়৷
তারা যেন ছোটো থেকেই মা-বাবার বাধ্য থাকে, তাদের জীবনের প্রতিটা গতিপথে যেন মা-বাবার নজর থাকে। কী করছে, কী ভাবছে, কী করবে, কার সাথে মিশবে ইত্যাদি সব কিছুতে সব সময় মা-বাবার তদারকি, সাপোর্ট ও নাসিহা থাকবে। সব সময় কড়া শাসন, রাগ প্রকাশ, লঘু পাপে গুরু দন্ড, তাচ্ছিল্য, নিচু করা এসব যেন না থাকে। বাচ্চাদের সবচেয়ে কাছের বন্ধুটা, আশ্রয়ের জায়গা, শান্তির জায়গাটা যেন মা-বাবা হয় সেটা নিশ্চিত করা মা-বাবার দায়িত্ব।
আমাদের সময়গুলোর হকদার আমাদের সন্তানরা। দৈনন্দিন যত জরুরী কাজকর্ম আছে, সব শেষে যে সময়টুকু থাকে তা শুধুমাত্র তাদেরই প্রাপ্য। তাদের শরীর ও মনের স্পর্শে থাকা খুব জরুরী।
আর এই সমস্ত কিছু আল্লাহ সহজ করে দিবেন যখন আপনি প্রতিনিয়ত আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইবেন। বাচ্চা পালার ক্ষেত্রে সবর চাইবেন না। বরং সাহায্য চাইবেন ও যে সমস্যা সেটা থেকে দ্রুত মুক্তি চাইবেন।
লিখা: যাইনাব আল গাযী।
https://t.me/MaalQurani