.
তিনি গিয়েছিলেন ইহুদিদের মার্কেটে স্বর্ণ কিনতে। সেখানে দোকানী তাঁর সাথে খারাপ আচরণ করে। একপর্যায়ে তাঁর নিকাব অনাবৃত হয়ে যায়। এটা দেখে ইহুদিরা হাসাহাসি করে।
সেই মার্কেটে একজন পুরুষ সাহাবী ছিলেন। একজন মুসলিম নারীকে নিয়ে এমন হাসাহাসি দেখে তিনি রাগে সেই দোকানীকে হত্যা করেন। ইহুদিরা তাঁকে মারধর করে এবং তিনি শাহাদাতবরণ করেন।
এই ঘটনা চারিদিকে ছড়িয়ে পড়লো।
ইহুদি গোত্র বনু কায়নুকা বদর যুদ্ধের সময় চুক্তি ভঙ্গ করেছিলো। তাদের ওপর পূর্বের ক্ষোভ ছিলো। কিন্তু, এবার মুসলিম নারী কেন্দ্রিক যে ঘটনা ঘটলো সেটা আর সহ্য করা হলো না।
অবরোধ করা হলো বনু কায়নুকা।
এভাবে একদিন-দুইদিন না, দুই সপ্তাহ অবরুদ্ধ থাকার পর বনু কায়নুকা আত্মসমর্পণ করলো। তাদেরকে মদীনা ত্যাগ করার নির্দেশ দেয়া হলো।
বনু কায়নুকার সাথে দ্বন্দ্বের পূর্ব-সূত্র ছিলো, তারপরও এখানে অন্যতম কারণ হিশেবে উল্লেখ করা হয় মুসলিম নারীর ইজ্জতহানী।
.
মক্কায় থাকাবস্থায় ইসলামের প্রাথমিক যুগে ইসলাম গ্রহণ করার কারণে এক দম্পতিকে হত্যা করা হয়। একজন নারীকে হত্যা করা হয়। তিনি ছিলেন সুমাইয়া রাদিয়াল্লাহু আনহা, তাঁর স্বামী ইয়াসির রাদিয়াল্লাহু আনহু।
ইসলামের প্রথম শহীদ এই দম্পতি।
কিন্তু, এই ঘটনার পর আপনি দেখবেন না আবু জাহেলকে হুমকি দেয়া হয়েছে বা প্রতিবাদ করা হয়েছে বা আবু জাহেলের গোত্রকে আক্রমণ করা হয়েছে।
একজন দম্পতিকে দিন-দুপুরে হত্যা করার পরও সেটার ‘বিচার’ চাওয়া হয়নি। কোনো ধরনের প্রতিবাদ করা হয়নি।
তারমানে এই না যে মুসলিমরা সেটা মেনে নিয়েছে বা সেটাকে সমর্থন করেছে।
সেই দম্পতির যুবক ছেলে ছিলেন আম্মার ইবনে ইয়াসির রাদিয়াল্লাহু আনহু।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁকে ধৈর্যের উপদেশ দেন। তাঁকে সান্ত্বনা দেন।
যেই যুবক তাঁর মা-বাবা হারিয়েছে, সেই যুবককে তিনি লেলিয়ে দেননি। তিনি আকারে-ইঙ্গিতে বলেননি, তোমার মা-বাবার হত্যাকারীর প্রতিশোধ নিতে পারো।
এমন হলে দেখা যেতো নিজের জীবন বাজি রেখে আম্মার ইবনে ইয়াসির আবু জাহেলকে হত্যা করতেন; অন্তত চেষ্টা করতেন।
তখন মুসলিমরা দুর্বল। এমনটা যদি হতো, তাহলে বনু মাখযূমের সাথে যুদ্ধ ঘোষণা হতো। যেই কয়জন সাহাবী ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন, তাঁদের ওপর চলতো নির্যাতনের স্ট্রিম রোলার!
আম্মার ইবনে ইয়াসির রাদিয়াল্লাহু আনহু মক্কায় যতোদিন ছিলেন, তাঁর চোখের সামনে ঘুরতে দেখেন নিজের মা-বাবার খুনীকে। কিন্তু, তিনি কিছুই করতে পারেননি। এর প্রায় ১৪-১৫ বছর পর আবু জাহেলকে হত্যা করা হয় বদর যুদ্ধে।
মদীনায় যেখানে একজন নারীর ইজ্জতের ওপর আঘাত আসার সাথে সাথে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যুদ্ধ ঘোষণা করেন, মক্কায় থাকাবস্থায় একজন নারীকে হত্যা করা সত্ত্বেও তিনি যুদ্ধের ডাক দেননি, জবাবদিহিতার জন্য আবু জাহেলের কাছে যাননি।
এমন না যে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বা সেই সময় সাহাবীরা সাহসী ছিলেন না। নাউজুবিল্লাহ!
বরং সেই সময় এমনটা করলে সেটার কনসিকুয়েন্স কী হতো সেটা তারা জানতেন।
যার কারণে মা-বাবা হারানো আম্মারকে বলেছিলেন, “সবর করো আম্মার, সবর করো।”
কিন্তু, মদীনার সেই নারীকে বা সেই সাহাবী, যিনি নারীকে বাঁচাতে গিয়ে শহীদ হন তাঁর পরিবারকে গিয়ে বলেননি- ‘সবর করো’।
যেকোনো ঘটনার প্রতিক্রিয়া একইরকম হবে না। সেটার প্রতিক্রিয়া নির্ভর করে আপনি কোন পরিস্থিতিতে আছেন।
আপনি মক্কা বিজয়ের পূর্বের মক্কার সমাজের মতো থাকলে আপনার প্রতিক্রিয়া থাকবে একরকম। মদীনায় থাকলে থাকবে আরেকরকম।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের যুগে তিনটি সমাজ ছিলো। মক্কা বিজয়-পূর্ব মক্কা, আবিসিনিয়া এবং মদীনা।
আমাদের স্বপ্ন মদীনার সমাজ। কিন্তু, বর্তমান বিশ্বের মুসলিমরা কোথাও মক্কার সমাজে, কোথাও আবিসিনিয়ার সমাজে।
এজন্য এক্সটার্নাল ফ্যাক্টর জড়িত এমন যেকোনো ইস্যুতে মুসলিমদের প্রতিক্রিয়া হবে সে কোন সমাজে আছে সেটার ওপর। নামাজ-রোজা মৌলিক সবকিছু সব জায়গায়ই এক থাকবে। কিন্তু, সামাজিক এবং রাজনৈতিক এক্টিভিজম সব সমাজে একরকম থাকবে না।