কিন্তু সেকেন্ড রিপাবলিক কী?
এর আগে ফ্রান্স (১৮৪৮), স্পেন (১৯৩১) ও অস্ট্রিয়ায় (১৯৪৫) সেকেন্ড রিপাবলিক ঘোষিত হইছিল। একটা রাজনৈতিক ব্যবস্থা বা বন্দোবস্ত যখন অকার্যকর হয়ে পড়ে, তখন গণআন্দোলন বা বিপ্লবের মধ্য দিয়ে সেটা বাতিল হয়ে যায়। নয়া বন্দোবস্ত লাগে। সেই বন্দোবস্তের ঘোষণাই মূলত সেকেন্ড রিপাবলিকের ঘোষণা।
প্রোক্লেমেশন অব রিপাবলিকের কিছু তাৎপর্য ও বৈশিষ্ট্য আছে।
১. প্রোক্লেমেশন থেকেই অভ্যুত্থান বা বিপ্লব-পরবর্তী সরকার বৈধতা পায়। তাই এটি ঘোষণা করে একটা অফিশিয়াল বা অথরিটিসম্পন্ন বডি। তথা বিপ্লবের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসা সরকার বা সরকারপ্রধান বা রেভ্যুলেশনারি বডি।
২. এই ঘোষণার আইনি ও প্রতীকী স্ট্যাটাস থাকাটা জরুরি। তথা এই ঘোষণা কন্সটিটিউশনের পার্ট হয় এবং এর মাধ্যমে কন্সটিটিউশন পুনর্গঠিত হয়। একটা নতুন কন্সটিটিউশনের সূচনা হয়।
৩. এই ঘোষণা হয় ফরমাল, লিখিত ও পাবলিক।
৪. এই ঘোষণা একটা নয়া রাজনৈতিক বন্দোবস্তের সূচনা ঘটায়। পূর্ববর্তী ব্যবস্থার সাথে একটা উল্লেখযোগ্য ছেদ ঘটায়। ফ্রান্স ও স্পেনের ক্ষেত্রে এইটা ছিল মনার্কি থেকে গণতন্ত্রের দিকে যাত্রা। বাঙলাদেশের ক্ষেত্রে ফ্যাশিবাদ বা স্বৈরতান্ত্রিক ব্যবস্থা থেকে গণতন্ত্রের দিকে যাত্রা।
ফ্রান্স ও স্পেনের সেকেন্ড রিপাবলিকের ঘোষণায় এই সবগুলা উপাদানই পাওয়া যায়। আমাদের সেকেন্ড রিপাবলিকের ঘোষণায় কি সেগুলা পাওয়া যাচ্ছে/যাবে? সে প্রশ্নটা থেকে যাচ্ছে।
ঐতিহাসিকভাবে সেকেন্ড রিপাবলিকের কিছু পজেটিভ ও নেগেটিভ অভিজ্ঞতা আছে। যেমন:
১. পূর্ববর্তী রেজিমের পতন
২. সংস্কার ও আধুনিকায়ন-প্রবণতা। ফ্রান্স ও স্পেনের সেকেন্ড রিপাবলিক সেক্যুলারিজম প্রতিষ্ঠার লড়াইও ছিল বটে। এক্ষেত্রে বাঙলাদেশের কনটেক্সট ভিন্ন। বাঙলাদেশে এটি মূলত সেক্যুলারিজমকে রিডিফাইন করার মাধ্যমে একটি রিকনসিলিয়েশনের লড়াই।
৩. বিভিন্ন মতাদর্শিক বর্গের মধ্যে ক্ষমতার লড়াই। ফ্রান্সে এই লড়াইটা হইছিল মনার্কিস্ট, লিবারাল ও সোশালিস্টদের মধ্যে। স্পেনে কনজার্ভেটিভ, অ্যানার্কিস্ট ও কম্যুনিস্টদের মধ্যে।
৪. এক্সটার্নাল প্রেশার ও ইন্টার্নাল কোন্দলের ফলে সেকেন্ড রিপাবলিক খুবই ভঙ্গুর দশায় থাকে এবং ক্ষণস্থায়ী হয়। ফ্রান্সে সেকেন্ড রিপাবলিকের পর সেকেন্ড এম্পায়ার ফিরে আসছিল; স্পেনের সেকেন্ড রিপাবলিকের অবসান ঘটছিল স্বৈরশাসক জেনারেল ফ্রাঙ্কোর উত্থানের মধ্য দিয়া।
৫. সেকেন্ড রিপাবলিকের ঘোষণা পূর্ববর্তী রাজনৈতিক ব্যবস্থাকে নানাভাবে রদ করে। সাংবিধান বাতিল হয়, আগের ভ্যালু-ব্যবস্থা বাতিল হয়, নতুন জাতীয় আকাঙ্ক্ষার জন্ম হয় এবং সে-অনুযায়ী রাষ্ট্র ও সমাজ পুনর্গঠিত হয়।
বাঙলাদেশ একটা ঐতিহাসিক সময়ের সন্ধিক্ষণে দাঁড়ানো। বাঙলাদেশের সেকেন্ড রিপাবলিক কেমন হবে? কী হবে এর ঐতিহাসিক অভিজ্ঞতা? উত্তর দেওয়া কঠিন। যদি এটি সত্যিকারার্থে একটি প্রোক্লেমেশন হয়ে ওঠে, জুলাই অভ্যুত্থানের গণআকাঙ্ক্ষাকে সামগ্রিকভাবে ধারণ করতে পারে এবং জুলাই অভ্যুত্থানের বিভিন্ন পক্ষের মধ্যে একটি সমঝোতামূলক চুক্তি হয়ে উঠতে পারে, তাহলে আমরা সেকেন্ড রিপাবলিকের নেগেটিভ অভিজ্ঞতাগুলা এড়াইতে পারব। সেক্ষেত্রে এই প্রোক্লেমেশনের মাধ্যমেই নতুন বাঙলাদেশের সূচনা হবে। যদি তা না হয়, তাইলে কী হবে বলা মুশকিল।
হোপ ফর দ্য বেস্ট। দেখা হবে, ৩১ ডিসেম্বর।