MIR @mirsalmansamil Channel on Telegram

MIR

@mirsalmansamil


MIR Telegram Channel (English)

Are you a fan of motivational quotes, inspiring stories, and thought-provoking content? Look no further, because the MIR Telegram channel is here to uplift your spirits and ignite your passion for life. Led by the username mirsalmansamil, this channel is a hub of positivity and motivation that aims to inspire its followers to strive for greatness and overcome all obstacles. With a focus on personal growth, success, and happiness, MIR is the perfect place to start your day on a positive note. Whether you're looking for daily affirmations, success stories, or just some motivation to keep going, this channel has got you covered. Join MIR today and let the power of positivity transform your life!

MIR

27 Jan, 17:01


জন্মদিনে স্মরণ: ম হা না য় ক তিতুমীর
_______
মীর নিসার আলী তিতুমীর ১৭৮২ সালের ২৭ জানুয়ারি চব্বিশ পরগনা জেলার চাঁদপুরে জন্ম গ্রহণ করেন। অল্প বয়েসেই তিতুমীরের শিক্ষা জীবন শুরু হয়। তিনি পুরো কুরআন মুখস্ত করেন। তাছাড়াও আরবী ব্যাকরণ, ফারায়েজ, হাদীস, দর্শন, তর্কশাস্ত্র, তাসাউফ, আরবী-ফারসী কাব্য ও সাহিত্যে বিশেষভাবে দক্ষতা অর্জন করে ছিলেন। একই সাথে উনার বাংলা এবং উর্দু ভাষায় অসাধারণ পাণ্ডিত্য ছিলো। তিতুমীর আরবী, ফারসী, উর্দু এবং বাংলা এই চারটা ভাষায় অনর্গল বক্তৃতা দিতে পারতেন।

কোলকাতায় এসে তিতুমীর মির্জা গোলাম আম্বিয়ার সাক্ষাৎ পান। মির্জা গোলাম আম্বিয়ার সংস্পর্শে যাবার পরে তিতুমীরে জীবনে আমূল পরিবর্তন হয়ে যায়। তিনি মির্জা গোলাম আম্বিয়ার মুরিদ হতে চান। মির্জা আম্বিয়া তিতুমীরকে জকি শাহের কাছে যেতে বলেন।

জকি শাহ মনোযোগ দিয়ে তিতুমীরের কথা শোনেন। শুনে বলেন হজ্জ না করা পর্যন্ত তিতুমীর রুহানি পীরের সন্ধান পাবেন না। এটা শুনে তিতুমীর হজ্জ করতে মক্কা চলে যান এবং রাহবার খুঁজতে থাকেন। হজ্জে গিয়ে তিনি দেখা পান সাইয়েদ আহমেদ বেরলভীর র. এর। সাইয়েদ বেরলভীর সাথে কথা বলেই বুঝতে পারেন ইনিই তার সেই বহু প্রত্যাশিত রাহবার। তিতুমীর সাইয়েদ বেরলভীর কাছে বায়াত গ্রহন করেন । তিতুমীর চার বছর সাইয়েদ বেরলভীর কাছে শিক্ষা গ্রহন করেন। এই সময় তিনি উস্তাদের সাথে মুসলিম বিশ্বের বিভিন্ন শহর ভ্রমন করেন।

ছাত্র নিসার আলীর শিক্ষা, যোগ্যতা এবং তার আদর্শ ও আচরণে অত্যন্ত মুগ্ধ হন উস্তাদ সাইয়েদ আহমদ। সাইয়েদ আহমদ নিসার আলীকে দায়িত্ব দেন বাংলার ধর্মীয় ও সমাজ সংস্কারের এবং বাংলার শোষিত এবং লাঞ্ছিত জনগণের জাগাবার। সাইয়েদ আহমদের এই আন্দোলনের মূল লক্ষ্য ছিল উপমহাদেশকে ইংরেজ মুক্ত করা এবং যাবতীয় কুসংস্কার থেকে ইসলামকে হেফাজত করা।

বাংলাদেশে সাইয়েদ আহমেদের বিখ্যাত ছাত্রদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন মাওলানা আবদুল বারী খাঁ, মাওলানা মুহাম্মদ হােসেন, মাওলানা হাজী শরীয়তুল্লাহ, মাওলানা খোদাদাদ সিদ্দিকী, মাওলানা কারামত আলী জৌনপুরি প্রমুখ।

◼️
বাগ্মিতা, সুগভীর জ্ঞান আর পর্বত সমান ব্যক্তিত্বের জন্য অল্প সময়ের মধ্যেই তিতুমীর আলোড়ন তুলে ফেলেন। পলাশীর পরে রাজ্য, সম্পদ হারিয়ে, দুর্ভিক্ষে পরে মুসলমানদের নেতিয়ে পরা মেরুদন্ড তিতুমীরের আগমনে হঠাৎ করে সোজা হয়ে যায়। তিতুমীর গ্রামের গরীব কৃষকদের একত্রিত করেন এবং তাদের নিয়ে শুরু করেন হিন্দু জমিদার ও ব্রিটিশ নীলকরদের বিরুদ্ধে সুসংগঠিত আন্দোলন।

সমাজের পাশাপাশি তিনি মুসলিম সমাজে শিরক ও বিদআতের অনুশীলন নির্মূল করা এবং মুসলমানদের দৈনন্দিন জীবনে ইসলামের অনুশাসন অনুসরণে উদ্বুদ্ধ করতে থাকেন। সর্বস্তরের জনগণকে ইসলামের দাওয়াত দিতে থাকেন।

এতে নরেচরে বসেন হিন্দু জমিদারেরা। ইতিহাসে ৩ জন জমিদারের নাম পাওয়া যায় যারা তিতুমীরের বিরুদ্ধে প্রথম একত্রিত হয়। তারা হল:
১। কৃষ্ণদেব রায়
২। দেবনাথ রায়
৩। কালী প্রসন্ন মুখোপাধ্যায়।

এই তিনজন একত্রিত হয়ে তীতুমীরের বিরুদ্ধে হুকুম জারি করে—

এক— যারা তিতুমীরের শিষ্যত্ব গ্রহণ করবে, দাড়ি রাখবে, গোঁফ কাটবে তাদের ফি দাড়ির জন্য আড়াই টাকা ও ফি গোঁফের জন্যে পাঁচ সিকা করে খাজনা দিতে হবে।

দুই— মসজিদ তৈরি করতে চাইলে জমিদারকে কাঁচা মসজিদের জন্য পাঁচশো টাকা এবং পাকা মসজিদের জন্য এক হাজার টাকা করে নজরানা দিতে হবে।

তিন— নাম পরিবর্তন করে আরবি নাম রাখলে প্রত্যেক নামের জন্য জমিদারকে ৫০ টাকা খারিজে ফিস দিতে হবে।

চার— গােরু হত্যা করলে তার ডান হাত কেটে দেয়া হবে।

পাঁচ— যে তিতুমীরকে বাড়িতে স্থান দেবে তাকে ভিটে মাটি থেকে উচ্ছেদ করা হবে।

এই হুকুম জারির পর হিন্দু জমিদারেরা মুসলমান প্রজাদের ওপর নতুন মাত্রায় অত্যাচার আর নির্যাতন শুরু করে।

এসব আদেশ না মানার ঘোষণা দিয়ে তিতুমীর তার মুজাহিদ বাহিনীর সদস্য আমান উল্লাহকে পত্র দিয়ে পাঠান। কৃষ্ণদেব আমান উল্লাহকে নির্মম ভাবে হত্যা করে। প্রতিশোধ নিতে তিতুমীরও তার মুজাহিদ বাহিনী নিয়ে এগিয়ে যান এতে কৃষ্ণদেব এবং পুলিশের সম্মিলিত বাহিনীর সাথে তিতুমীরের সংর্ঘষ হয়। তিতুমীরের কাছে তারা পরাজিত হয়।

◼️
১৮৩১ সালের ২৩শে অক্টোবর বাসারাতের নারিকেলবাড়িয়া গ্রামে তিতুমীর বাঁশ এবং কাদা দিয়ে তারা দ্বি-স্তর বিশিষ্ট একটি কেল্লা নির্মাণ করেন।

তীতুমীরের প্রভাব দেখে জমিদাররা আতংকিত হয়ে পরে। কোলকাতায় একটা জরুরী সভা করেন। তাতে যারা উপস্থিত ছিলেন তাদের একটা তালিকা পাওয়া যায়— কলকাতার লাটু বাবু, গোবর ডাঙ্গার জমিদার কালী প্রসন্ন মুখোপাধ্যায়, গোবরা-গোবিন্দপুর দেবনাথ রায়, নূর নগরের জমিদারের ম্যানেজার, টাকীর জমিদার সদর নায়েব, রানাঘাটের জমিদারের ম্যানেজার, পোড়ার জমিদার কৃষ্ণদেব রায়, বসিরহাট থানার দারোগা রাম রায় চক্রবর্তী, যদুর আটি দুর্গাচরণ চক্রবর্তী প্রমুখ।

এছাড়াও তাদের সাহায্য করে তারাগুনিয়ার জমিদার রাম নারায়ণ, কুরগাছির জমিদারের নায়েব নাগরপুর নিবাসী গৌড় প্রসাদ চৌধুরী

MIR

27 Jan, 17:01


এবার সকল জমিদারের সম্মিলিত বাহিনী এবং পুলিশ বাহিনীর সাথে তিতুমীরের মুজাহিদ বাহিনীর যুদ্ধ হয়। উইলিয়াম হান্টার উল্লেখ করেছে, ঐ বিদ্রোহে প্রায় ৮৩ হাজার কৃষকসেনা তিতুমীরের পক্ষে যুদ্ধ করেন। এই যুদ্ধে জমিদার বাহিনী তিতুমীরের মুজাহিদদের কাছে চরমভাবে পরাজিত হয়।

তিতুমীর ঘোষণা করেন যে কোম্পানির রাজত্বের অবসান হয়েছে। বর্তমান চব্বিশ পরগনা, নদীয়া, কুষ্টিয়া, যশোর, এবং ফরিদপুরের বিস্তীর্ণ অঞ্চলকে স্বাধীন ঘোষণা করেন, নাম দেন আমিরাত-ই- বাঙ্গালাহ। তিনি গোবরডাঙ্গা ও অন্যান্য জমিদারের কাছে তাঁর নামে রাজস্ব পাঠাবার পরওয়ানা পাঠিয়ে দেন। ।

স্থানীয় জমিদারদের নিজস্ব বাহিনী এবং ব্রিটিশ বাহিনী তিতুমীরের হাতে বেশ কয়েকবার পরাজয় বরণ করে।

◼️
১৮৩০ খ্রিস্টাব্দে পঞ্চম আইনে, দাদন নিয়ে নীলচাষ না-করা নিষিদ্ধ করা হয়। নীল চাষ নিয়ে ব্রিটিশ এবং জমিদারের অত্যাচার ক্রমে চরমে উঠে।

তিতুমীরের মুজাহিদদেরা ব্রিটিশদের দেওয়া দাদনের কাগজপত্র নষ্ট করে কৃষকদের বাঁচাবার জন্য একের পর এক নীলকুঠি আক্রমণ শুরু করেন। বারঘরিয়ার অভিযান তাদের সফল হয়, হুগলির নীলকুঠির তারা তছনছ করে দেয়। বারঘরিয়া ও হুগলির নীলকুঠির মালিক ছিলেন উইলিয়াম স্টর্ম।

৫ নভেম্বর ১৮৩১ তীতুমীরের মুজাহিদ বাহিনী বারঘরিয়া নীলকুঠি আক্রমণ করে। তারা কুঠির মালিক পিরোঁকে না-পেয়ে তাঁর কুঠি ও বাংলো ধ্বংস করে। বইপত্র যা পায় সব ছিঁড়ে টুকরো টুকরো করে। ১৬ নভেম্বর স্মিথ বারঘরিয়া পৌঁছে শুধু ধ্বংসস্তূপই দেখতে পায়।

স্টর্মের হুগলি কুঠির ম্যানেজার ছিলেন হেনরি ব্লন্ড। মুজাহিদরা হুগলির নীলকুঠি আক্রমণ করে এবং ব্লন্ড ও তাঁর স্ত্রী শিশুপুত্রকে ধরে নিয়ে বাঁশের কেল্লায় তিতুমীরের সামনে হাজির করে। সম্পূর্ণ আত্মসমর্পণ ও তিতুমীরের পক্ষে নীল চাষ না করার প্রতিশ্রতিতে ব্লন্ড সপরিবারে মুক্তি পায়।।

অবশ্য বাঁশের কেল্লা ইংরেজদের দখলে এলে এই বন্ডই তিতুমীরের বিরুদ্ধে প্রতিহিংসামূলক হলফনামা দিয়েছিলো।
এরপর স্মিথ মোল্লাহাটি ও রুদ্রপুর, নীলকুঠির মালিক এন্ড্রুজের সাহায্য নেন। তাঁর কাছে থেকে সাতটি হাতি, আশেপাশের জমিদার ও তাদের লড়াকু লোকজন সংগ্রহ করে তিনি তিতুমীরের বিরুদ্ধে অভিযানে অগ্রসর হন।

বারঘরিয়া কুঠির ম্যানেজার পিঁরো ১৮৩১ খ্রিস্টাব্দের ৯ নভেম্বর তিতুমীরের শক্তিবৃদ্ধি ও নীলকুঠির উপর আক্রমণের ঘটনায় শঙ্কিত হয়ে ব্রিটিশ সরকারের সবিশেষ দৃষ্টি আকর্ষণ করে সংবাদ পাঠান। বারাসতের জয়েন্ট ম্যাজিস্ট্রেট আলেকজান্ডার পত্র পেয়ে বিচলিত হয়ে পড়েন।

১৪ নভেম্বর আলেকজান্ডার সিপাহিসহ সদলবলে নারকেলবেড়িয়ার মাঠে যায়। তিতুমীরকে ভয় দেখানোর জন্যে বন্দুকের ফাঁকা আওয়াজ করে। যুদ্ধ ঘোষণায় সাড়া দিয়ে তিতুমীরের বিদ্রোহী বাহিনী সেই গুলির আওয়াজ গ্রাহ্য না করে সিপাহিদের আক্রমণ করে। সেই যুদ্ধে বসিরহাটের দারোগা, জমাদারসহ বহু সিপাহি বন্দি হয়। আলেকজান্ডার ঘোড়ায় চেপে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়।

◼️
এবার ব্রিটিশ সরকার চরম আক্রমণের জন্য প্রস্তুত হল। ১৮৩১ সালের ১৯ নভেম্বর কর্নেল হার্ডিং-এর নেতৃত্বে ব্রিটিশ সৈন্যরা ভারী অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে তিতুমীর ও তার অনুসারীদের আক্রমণ করে। সৈন্যরা তাদের চারদিক থেকে ঘিরে ফেলে। তিতুমীর ঘোষণা দিলেন,

❝ লড়াইতে হার-জিত আছেই, এতে আমাদের ভয় পেলে চলবে না। শহীদের মর্যদা অনেক। তবে এই লড়াই আমাদের শেষ লড়াই নয়। ❞

মুজাহিদরা সাধারণ তলোয়ার ও হালকা অস্ত্র নিয়ে তিতুমীর ও তার সৈন্যরা ব্রিটিশ সৈন্যদের আধুনিক অস্ত্রের সামনে বেশিক্ষন দাঁড়াতে পারেন নি। ১৯ শে নভেম্বর তিতুমীর ও তার চল্লিশ জন সহচর শহীদ হন। তার বাহিনীর প্রধান গোলাম মাসুমকে ফাঁসি দেওয়া হয়। বাশেঁর কেল্লা গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়।

বিস্তারিত পড়াশোনা:
১। শহীদ তিতুমীর— আবদুল গফুর সিদ্দিকী
২। বাংলার মুসলমানদের ইতিহাস— আব্বাস আলী খান
৩। সাইয়েদ নিসার আলী তিতুমীর— মোশাররফ হোসেন খান
৪। ব্রিটিশ নথিতে তিতুমীর ও তাঁর অনুসারীগণ— ড. মুঈনউদ্দীন আহমদ খান
৫। পূর্ববঙ্গে বৃটিশ বিরোধী আন্দোলন— মো: মনজুর-উল-হক

MIR

17 Jan, 10:07


ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের সামনে ক্যান্টিনের ছাদে বসে জায়গা আছে। আমি আর এক খুবই জ্ঞানী ছোট ভাই মিলে বিভিন্ন সময়ে ক্যাম্পাসের ছাত্র-ছাত্রীদের চলাফেরা কেমন সেটা কোন ছকে ফেলা যায় কিনা সেটা বুঝতে কয়েক সপ্তাহ ওখানে দাঁড়িয়ে গবেষণা করেছিলাম। অবশ্য তাতে সফল হই নাই খুব একটা, শুধু দুইজন মিলে শ-খানিক কাপ চা ধ্বংস করছি। যদি দুনিয়াতে ফিরাসার চর্চা থাকতো আমি শেখার চেষ্টা করতাম। একজন দরবেশ বলেছিলেন, যেখানেই যাও যত কিছু দেখো শেষ পর্যন্ত মানুষের চেয়ে বিস্ময়কর কিছু আর নেই...

MIR

17 Jan, 10:07


রাত ৮ টা বাজে। বার্লিনের আলেকজেন্ডার প্লাটজ স্টেশন থেকে উবানে(পাতাল রেলে) চেপে বসলাম। আজ সারাদিন বেশ ঝক্কি গেছে শরীরের উপর। চোখ আলতো করে বুঝে চিন্তার সাবকন্সাস স্টেজে যাবার চেষ্টা করলাম। অনেক ক্লান্ত থাকলে এটা বেশ আরাম লাগে, হাত-পা কেমন একটা শিথিল হয়ে আসে। মেডিক্যাল সাইন্স মতে ছেলেদের ব্রেন নাকি ক্লিনিকালি ডেড হতে পারে, মানে ব্রেন সব ধরনের এক্টিভিটিস বন্ধ করতে পারে। কিন্তু মেয়েদের ব্রেন ঘুমের সময়ও সচল থাকে। এজন্য মেয়েরা মাল্টিটাস্কিংয়ে ছেলেদের চেয়ে ভাল হয় আর ছেলেরা কোন একটা বিষয়ে এক্সপার্ট হতে পারে মেয়েদের চেয়ে সহজে। প্রায় ৯০ কিলোমিটার বেগে মেট্রো ছুটে চলেছে। আমার সবচেয়ে প্রিয় বাহন ট্রেন। শামসুর রাহমানের ট্রেন নিয়ে একটা চমৎকার কবিতা আছে,

ট্রেন চলেছে ট্রেন চলেছে
রাত-দুপুরে ওই
ট্রেন চলেছে ট্রেন চলেছে
ট্রেনের বাড়ি কই

শামসুর রাহমানের অসাধারণ কল্পনাশক্তি আমার নেই, কোনদিন মনে প্রশ্ন আসে নাই ট্রেনের বাড়ি কোথায়। কিন্তু মাঝে মাঝে মনে প্রশ্ন আসে মানুষ কোথায় যায়। এই যে ট্রেন, বাস, বিমান, লঞ্চ, জাহাজে করে মানুষ যাচ্ছে তো যাচ্ছে; মানুষ কোথায় যায়? কি করে? বাড়িতে একা থাকে নাকি পরিবার সমেত। বসার ঘরটি কেমন। অবসরে কি বই পড়ে। বাড়ির ছোট বাচ্চাদের কি গল্প শোনায়...। আমার রাতের বেলায় হাঁটা-হাঁটি করার একটা বাতিক আছে, যখন মধ্যরাতে হাঁটার সময় বড় কোন আবাসিক ভবনের উপরের দিকের কোন একটা জানালায় লাইট জ্বলানো দেখি, এই প্রশ্নগুলো মাথায় আসে। মানুষের গল্প আমার প্রিয়।

বার্লিন একটা বহুজাতিক শহর। নানান রঙয়ের নানার আকৃতির মানুষ চোখে পড়ে এই শহরে। মেট্রোতে বেশ ভীর, ভাগ্যক্রমে সিট পেয়েছি। আমার সামনে বসে আছে ঘানার একটা ছেলে। একমনে ফোনে কিছু একটা পড়ছে। সম্ভবত অনেক দূর যাবে, একবারও মেট্রোর ডিসপ্লের দিকে তাকাচ্ছে না, এই জগৎ সংসারের কোনকিছুর প্রতিই তার আগ্রহ আছে বলে মনে হল না। ছেলেটার পাশের সিটে বসে আছেন একজন মধ্য বয়েসি ফিলিপিনো মহিলা, তিনি একটু পর পর ডিসপ্লে দেখছেন আর আমার পাশে বসা উনার জার্মান বান্ধুবীকে আপডেট জানাচ্ছেন। সম্ভবত একটু পরেই নেমে যাবেন। এত ভীরের মধ্যেও পাশের রোতে বসে গল্পরত দুই বাচ্চা মেয়ের কথা শোনা যাচ্ছে। Life is too short to learn German, পরিস্কার বুঝতে পারছি না কিছুই, ওরা সম্ভবত সামনে সপ্তাহের ছুটিতে কি করবে সেটা প্লান করছে। তার পাশে বসে আছেন দুইজন তুর্কিশ, একদম চুপচাপ, ভাবলেশহীন মুখ। সামনের দিকে দরজার পাশে দাঁড়িয়ে আছে কয়েকজন ইস্ট ইউরোপীয়, ওদের স্বভাবজাত ভঙ্গিতে, চুপচাপ, মনে হয় দুনিয়ার উপর কোন কারনে তারা বিরক্ত আর আমার বয়েসি কয়েকটা ছেলে-মেয়ে, এরা জাতে আমাদের প্রতিবেশি ভারতীয়, সম্ভবত কোন কানেক্টিং বাস বা ট্রেন ধরবে, খুবই চিন্তিত হয়ে বার বার ট্রেনের ডিসপ্লেতে স্টেশনের নাম দেখছে। হুট করে পরের একটা স্টেশনে আমার পাশের কয়েকজনসহ অনেক মানুষ নেমে গেল, আমার চিন্তাকে ভুল প্রমান করে ঘানার ছেলেটাও নেমে গেল। ট্রেন অনেকটা ফাঁকা এখন। একজন বেশ বয়স্কা বৃদ্ধা জর্মন মহিলা আমার পাশের সিটে বসতে গেলেন কিন্তু ট্রেনের ঝাঁকিতে ব্যালন্স হারিয়ে পরে যেতে নিয়েছিলেন, আমি সাথে সাথে ধরে ফেললাম। সিটে বসে সুন্দর করে হেসে চোখ নাড়িয়ে ধন্যবাদ জানালেন। এত সুন্দর করে হাসলেন, মন ভাল হয়ে গেল। এই বৃদ্ধা কোথায় যাবেন!? আমাদের দেশে হলে সবাই বলতো এত বয়স্কা মানুষকে একা ছেড়েছে, উনার ছেলে-মেয়েদের কি কোন বুদ্ধি নাই! এই দেশে কখনো বাক্যটি শুনবেন না, জার্মানির ৭০%+ বৃদ্ধ একা থাকেন। তিনিও সম্ভবত একাই থাকেন। জার্মানিতে বৃদ্ধ মানুষকে দেখলে বেশ খারাপ লাগে।

আমার বাসা যে বিল্ডিংয়ে তার নয় তলায় এক বৃদ্ধা মহিলা থাকেন, একা একা। ঠিকমত চলতে পারেন না। রোলেটা ওয়াকার দিয়ে চলাফেরা করেন। একদিন বাজার করে ফেরার পথে দেখি উনি গেটের সামনে বসে আছেন, গেটটা বেশ ভারী, রোলেটা থেকে উঠে গেট খুলে ভেতরে ঢুকবেন সেই শক্তি উনার নেই। কতক্ষণ বসে ছিলেন কে জানে। আমি গেট খুলে ধরে রাখলাম, ভেতরে ঢুকলেন।

লিবারেল-সেকুলার রেভ্যুলেশনের আগের জার্মানিতে এই দৃশ্য কল্পনা করাও অসম্ভব ছিল। লিবারেল-সেকুলারিজম এই অবস্থা করেছে। মানুষকে মুক্তি দিয়েছে, দিয়েছে আমরণ একা একা থাকার স্বাধীনতা... আহরে স্বাধীনতা...

দুনিয়া থেকে কয়েকটা বিদ্যা উঠে গেছে। তার মধ্যে একটা হল ফিট রিডিং [পা দেখে পুরো বংশের ইতিহাস সম্পর্কে বলে দেওয়া] আর ফিরাসা [চেহারা এবং আনুষাঙ্গিক দেখে তার সম্পর্কে বলে দেওয়া]। ইমাম মালিক এবং উনার ছাত্র ইমাম শাফেয়ী দুইজনই উস্তাদ ছিলেন এই জ্ঞানে। গুরু-শিষ্য মাঝে মাঝে মদিনার রাস্তায় পাশে বসে তাদের বিদ্যা ঝালাই করতেন। প্রায় সব সময়ই দুইজনের মত মিলে যেত। একবার দুইজন ভিন্নমত দেন, একজন ব্যক্তিকে দেখে ইমাম মালিক বলেন উনি পেশায় কাঠুরিয়া, ইমাম শাফেয়ী বলেন নাহ উনি পেশায় কামার। ইমাম মালিকের একজন ছাত্র কে সঠিক এটা দেখতে দৌড়ে গিয়ে সেই ব্যক্তিকে প্রশ্ন করে আপনার পেশা কি? তিনি বলেন আমি আগে কাঠুরিয়া ছিলাম ইদানীং কামারের দোকান দিয়েছি...।

MIR

13 Jan, 18:30


Later, although the government awarded Farrukh Ahmad the Pride of Performance Award, he refused to accept it from Ayub Khan.

Rafiqul Islam, a former head of the Bangla Academy, remarked that successive governments attempted to win Farrukh Ahmad over, but he remained unwavering in his convictions. Although he was employed at Radio Pakistan, he maintained his independence and refused to bow to bureaucratic pressure. On the contrary, these bureaucrats often visited his modest home in Dhaka to seek his favor. On one occasion, when the government offered to sponsor his Hajj pilgrimage, Farrukh responded,
"I do not perform ablution with water from the drain."

In stark contrast to Farrukh, figures like Sufia Kamal, Syed Shamsul Haque, and Shamsur Rahman publicly supported Pakistan before and during the war for personal advantage. After the war, they aligned themselves with the Awami League government, gaining substantial benefits. Farrukh Ahmad, however, never wavered from his ideals.

As a consequence of his steadfastness, Sheikh Mujibur Rahman's government dismissed him from his position, depriving his family of a livelihood. His son, son-in-law, and relatives were left with no means to earn a living. Farrukh Ahmad was ostracized, and his ability to move freely in public was curtailed. Ultimately, this great Bengali Muslim poet, second only to Kazi Nazrul Islam, died in poverty, starvation, and without medical care.

Farrukh Ahmad succumbed to hunger but never compromised his principles.

In Nazrul's words:
"The lion gives its head, never its mane."

Or, as Farrukh himself wrote:
"Even if the serpent raises its venomous hood,
Even if the agony of humiliation becomes unbearable here,
The distant call of Hera's summit reaches us today—
Friends, open the gates of the tent today;
Raise the sharp arrows at the forehead of savagery—
This struggle… a jihad far greater—
Give me, at least for a moment,
The joy of the crimson blood-petals playing."

This is the true strength of character. Even with a publicly declared stand for Pakistan, Farrukh Ahmad remained untouchable in his literary stature. His detractors, including the Shahbagh movement, never dared to malign him, spread falsehoods about him, or erase his legacy from literature.

MIR

13 Jan, 18:30


একাত্তর নিয়ে আমার স্ট্যান্ড, আমার রাহবার: ফররুখ আহমদ
________
অখন্ড পাকিস্তানের পক্ষে, ভারতীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে যারা দাঁড়িয়েছিলো তাদের পক্ষে। পাকিস্তান আর্মির হত্যাকাণ্ডের বিপক্ষে, পাকিস্তান সরকারের অপশাসনের বিপক্ষে।

এটাই ছিল ১৯৭১ সালে ফররুখ আহমদের অবস্থান। একাত্তর সাল নিয়ে আমার অবস্থান এগজ্যাক্টলি এটাই।

ফররুখ আহমদ ভারত এবং ইজরাইলের আর্থিক, গোয়েন্দা, কূটনৈতিক, এবং সামরিক সাহায্য নিয়ে করা যুদ্ধের ঘোর বিরোধী ছিলেন। তিনি বিশ্বাস করতেন মুসলমান জাতীয়তাবাদে।

কিন্তু একই সাথে ফররুখ ছিলেন তদানীন্তন শাসকের সবচেয়ে কঠোর সমালোচকের একজন। আর কোন কবি-সাহিত্যিক ফররুখের মত কঠিন ভাবে পাকিস্তান সরকারের সমালোচনা করে নাই। তিনি সরকারের সমর্থক রাইটার্স গিল্ডের কোন অনুষ্ঠানে পশ্চিম পাকিস্তানে যাননি কোনদিন (সুফিয়া কামাল, শওকত ওসমান, মুনীর চৌধুরী, নীলিমা ইব্রাহিম, সৈয়দ ওয়ালিউল্লাহসহ সকল রথি-মহারথি এই গিল্ডের আশীর্বাদপুষ্ট ছিলেন)। ফররুখ শাসকগোষ্ঠীকে ব্যঙ্গ করে 'রাজ-রাজড়া নামে একটা নাটক লিখেছিলেন। ১৯৫৮ সালে স্বৈরাচারী সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্রুপাত্মক কবিতা লিখে রোষানলে পরেন। এজন্য তিন বছর উনার বই প্রকাশ নিষিদ্ধ ছিল।

পরে সরকার ফররুখ আহমদকে প্রাইড অব পারফরমেন্স পুরস্কার প্রদান করে তবে ফররুখ আহমদ আইয়ুব খানের কাছ থেকে পুরস্কার গ্রহন করতে অস্বীকার করেন।

বাংলা একাডেমির সাবেক প্রধান রফিকুল ইসলাম বলেছিলো সরকার সব সময় চেস্টা করতো ফররুখ আহমদকে কাছে টানার কিন্তু তাকে কোনদিন এক চুলও নাড়ানো যায়নি। ফররুখ আহমদ রেডিও পাকিস্তানে চাকুরি করতেন কিন্তু কোন আমলাকে তোয়াক্কা করেন নাই; বরং এসব জাদরেল আমলারাই ঢাকা এলে ফারুক আহমেদের ভাঙা বাড়ীতে গিয়ে উনাকে তােয়াজ করে আসতেন। একবার সরকার ফররুখ আহমদকে হজ্জ্বে পাঠানোর প্রস্তাব দেয়, তিনি জবাবে বলেন,

❝ আমি ড্রেনের পানি দিয়ে ওজু করি না ❞

সুফিয়া কামাল, সৈয়দ শামসুল হক, শামসুর রাহমান প্রমুখেরা যুদ্ধের আগে এবং যুদ্ধের সময় পাকিস্তানের পক্ষে কথা বলে সুবিধা নেন৷ আবার যুদ্ধের পরে রীতিমত আওয়ামী লীগ সরকারের সমর্থক বনে যায় এবং সরকারের বিভিন্ন সুবিধা পায়। কিন্তু ফররুখ আহমদ তার আদর্শ থেকে চুল পরিমান বিচ্যুত হননি।

ফলাফল, শেখ মুজিব সরকার উনার চাকুরি কেড়ে নেয়, উনার ছেলে, জামাই এবং অন্যান্য আত্মীয়-স্বজনদের সৎভাবে পরিশ্রম করে বাঁচার রাস্তা একেবারে বন্ধ করে দেয়। রাস্তাঘাটে কবির বেরােবার পথ বন্ধ করে দেয়। আক্ষরিক ভাবেই অর্ধাহারে, অনাহারে এবং বিনা-চিকিৎসায় মারা যান নজরুলের পরে প্রধান বাঙালি মুসলমান কবি ফররুখ আহমদ।

ফররুখ অনাহারে মারা যান, কিন্তু আর্দশের সাথে একচুল কম্প্রোমাইজ করেন নাই।

নজরুলের ভাষায়,

❝ হাঁকে বীর শির দেগা, নেহি দেগা আমামা। ❞

অথবা ফররুখের নিজের কথায়,

❝ যদিও শ্বাপদ তোলে বিষাক্ত ফণ,
যদিও এখানে অসহ্য হলো হীনতার যন্ত্রণা,
তবু বহু দূরে ডাক দিল আজ হেরার শিখর-চূড়া
ডেরার কপাট খোলো আজ, বন্ধুরা ;
পাশবিকতার ললাটে তীক্ষ্ণ তীর উদ্যত করো
এই সংগ্রাম...জেহাদে বৃহত্তরো
প্রগাঢ় রক্ত পাপড়ি খেলার মত
একটি নিমেষ দাও মোরে অন্তত ৷৷ ❞

এটাই হল পার্সোনালিটির শক্তি। পাকিস্তানের পক্ষে প্রাকাশ্য স্ট্যান্ড নেবার পরও, শাহাবাগিরা কোনদিন ফররুখ আহমদের সাথে বেয়াদবি করার সাহস করে নাই, উনার নামে কোন কথা ছড়ায় নাই, এবং সাহিত্য থেকে খারিজ করতে পারে নাই।
____

My Stand on '71, My Guru: Farrukh Ahmad
____
Farrukh Ahmad stood firmly in favor of an undivided Pakistan and aligned himself with those opposing Indian aggression. At the same time, he opposed the massacres committed by the Pakistan Army and the misgovernance of the Pakistani government.

This was Farrukh Ahmad's position during the events of 1971, and it mirrors my own stance on the matter.

Farrukh Ahmad was staunchly opposed to the war, which was backed by Indian and Israeli financial, intelligence, diplomatic, and military support. He was a firm believer in Muslim nationalism.

However, Farrukh Ahmad was also one of the most vocal critics of the ruling authorities of his time. No other poet or writer criticized the Pakistani government as boldly as he did. He consistently refused to attend Writers' Guild events in West Pakistan, which were sponsored and supported by the government. In contrast, prominent literary figures such as Sufia Kamal, Shawkat Osman, Munir Chowdhury, Nilima Ibrahim, and Syed Waliullah benefited from the Guild's patronage. Farrukh mocked the ruling elite in his play Raj-Rajra. In 1958, his satirical poetry against the authoritarian government brought him under scrutiny, and his books were banned from publication for three years.

MIR

12 Jan, 18:43


১৯৭০ সালের ১২ জানুয়ারী প্রতিষ্ঠিত হয় জাহাঙ্গীরনগর মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়। সম্রাট জাহাঙ্গীরের আমলে ঢাকার নাম ছিল জাহাঙ্গীরনগর। ঢাকার সেই মুসলমান ঐতিহ্যকে স্মরণ করে এই নাম রাখা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের লোগোতে ছিল মুসলমানদের প্রতীক ক্রিসেন্ট পতাকা, কুরআন, মোমবাতি, নৌকা, নদী, এবং সবুজ ফসল। এই লোগো পূর্ব পাকিস্তানের মানুষের বিশ্বাস এবং প্রকৃতিকে চমৎকার ভাবে রিপ্রেজেন্ট করতো।

১৯৭২ সালে বাঙালী জাতীয়তাবাদীরা ক্ষমতা দখলের পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম থেকে মুসলিম শব্দটা কেটে ফেলা হয়। আগের লোগো বাদ দিয়ে নতুন লোগো করা হয়। নতুন লোগতে আছে ৩ টি ভারতের জাতীয় ফুল পদ্ম বা বাংলাদেশের জাতীয় ফুল শাপলা [গ্লোবালি শাপলা খুব একটা পরিচিত না। বাংলাদেশের বাইরে সবাইকে একে পদ্ম হিসেবেই চিহ্নিত করবে।]

তিন সংখ্যার বিশেষত্ব কি জানি না, বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে কোন ব্যাখ্যা পেলাম না। তবে হিন্দুধর্মে ৩ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সংখ্যা। হিন্দু মাইথোলজির মৌলিক বিষয়গুলো ৩ দিয়ে প্রকাশ করা হয়। যেমন:
ত্রিমূর্তি(ব্রহ্মা, বিষ্ণু, মহেশ্বর), ত্রিগুন(সত্ত্ব, রজঃ, তমঃ), ত্রিলোক (স্বর্গলোক, মর্ত্যলোক, পাতাললোক), ত্রিসূল, ত্রিপুন্ড, ত্রিকাল, ত্রিদেবি, ত্রিযাত্রা ইত্যাদি।

তিন শাপলার পাশে আছে আলপনা। আলপনাও হিন্দু ধর্মের অবিচ্ছেদ্য উপাদান। ঠাকুরের বেদিতে আলপনা আঁকা হয়।

লোগোর মুসলামানি উপকরণ ঝেটিয়ে বিদায় করে দেবার মাধ্যমে বাঙালী জাতীয়তাবাদীরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন শুরু করেন।

____
On January 12, 1970, Jahangirnagar Muslim University was established. During Emperor Jahangir’s reign, Dhaka was known as Jahangirnagar. To honor Dhaka's Muslim heritage, the university was named after Jahangirnagar. The university's original logo featured symbols of Muslim identity, including the crescent flag, the Quran, a candle, a boat, a river, and green crops. This logo beautifully represented the faith and nature of East Pakistan.

In 1972, after Bengali nationalists took power, the word "Muslim" was removed from the university's name. The old logo was also replaced with a new one. The new logo features three lotus/lily flowers, (globally, this symbol will be recognized as lotus, the National flower of India).

I am unsure about the significance of the number three, as no explanation is provided on the university's website. However, in Hinduism, the number three is profoundly significant. Core concepts of Hindu mythology are expressed using the number three, such as:

Trimurti (Brahma, Vishnu, Maheshwar)

Triguna (Sattva, Rajas, Tamas)

Triloka (Swargalok, Martyalok, Patalalok)

Trishul, Tripundra, Trikala, Tridevi, and Triyatra, among others.

Beside the three lotus flowers on the logo, there are alpana, a traditional decorative motif. Alpana is an integral part of Hindu culture, drawn on temple altars.

By discarding the Muslim elements of the logo, Bengali nationalists began implementing the ideals of their Liberation War.

MIR

04 Jan, 12:06


আন্দোলনের জনপ্রিয়তায় ভীত হয়ে বাংলা সরকার ১৯২১ সালের ১৯ নভেম্বর একটি প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে খেলাফত আন্দোলন এবং এর কার্যক্রম অবৈধ বলে ঘোষণা করে। সরকারি বাহীনি খেলাফত আন্দোলনের অফিসসমূহে হানা দিয়ে দলিল দস্তাবেজ বাজেয়াপ্ত, সম্পদ লুটপাট, এবং সংগঠনের কর্মকর্তাদের গ্রেফতার করে। ১৯২১ সালের ১০ ডিসেম্বর কলকাতায় মওলানা আজাদ, আকরম খানসহ প্রায় দেড়শ’ নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়।

১৯২৪ সালে মোস্তফা কামাল খেলাফত বিলুপ্ত করে তুরস্ককে প্রজাতন্ত্র হিসেবে ঘোষণা করলে আস্তে আস্তে এই আন্দোলন থেমে যায়। তবে খেলাফত আন্দোলনের প্রভাব থেকে যায়। এই আন্দোলনের মাধ্যমে শহর থেকে শুরু করে মফস্বল, গ্রাম, এমনকি প্রত্যন্ত অঞ্চলে একটি নতুন মুসলাম নেতৃত্বের উদ্ভব ঘটে। এই নতুন নেতৃত্বই পরবর্তীতে মুসলমানদের একটি সমন্বিত আত্মসচেতন রাজনৈতিক পরিচিতি তুলে ধরার ক্ষেত্রে মুখ্য ভূমিকা পালন করে।

MIR

04 Jan, 12:06


বিস্মৃত সোনালী অতীত: খেলাফত আন্দোলন
_______
বাংলাদেশ এবং উপমহাদেশের মুসলমানদের খেলাফতের প্রতি একটা ভালবাসা এবং আবেগ রয়েছে এটা বলা যায়। আবুল মনসুর আহমেদ তার আমার দেখা রাজনীতির পঞ্চাশ বছর বইতে লিখেছেন হিন্দু জমিদাদের অত্যাচারে অষ্টদশ শতকের প্রথম ভাগেও দেশের মানুষ ভাবত দারুল হারব থেকে দারুল ইসলাম খেলাফতের কোন ভূমিতে চলে যাবে। ১৯২০ এর দশকে বৃটেন এবং ইউরোপীয় শক্তিগুলোর হঠকারিতার কারনে যখন খেলাফত বিলুপ্তের অবস্থা তৈরি হয় তখন উপমহাদেশের মুসলমানদের সাথে বাংলার মুসলমানেরাও ফুঁসে উঠে। শুরু হয় খেলাফত আন্দোলন।

১৯১৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসে মুহম্মদ আলী, শওকত আলী, আবুল কালাম আজাদ, ড. এম.এ আনসারী, এবং হযরত মোহানীর নেতৃত্বে বোম্বে শহরে খেলাফত আন্দোলন শুরু হয়। তবে এই আন্দোলনের সূচনা হয় তারও এক বছর আগে, ১৯১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর। এই দিন দিল্লিতে অনুষ্ঠিত নিখিল ভারত মুসলিম লীগের একাদশতম জাতীয় সম্মেলনে সভাপতির ভাষণে আবুল কাসেম ফজলুল হোক উসমানি খেলাফতের ভূখন্ড ভাগবাটোয়ারা করার জন্য বৃটেন এবং মিত্রশক্তিগুলি যে মনোভাব গ্রহণ করেছে তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন।

১৯১৯ সালে প্যারিস শান্তি সম্মেলনে সাইক-পিকো এগ্রিমেন্ট অনুসারে মিত্র শক্তির ভেতরে উসমানি খেলাফত ভাগ করার সিদ্ধান্ত হলে তার প্রতিবাদে কোলকাতায় ৯ ফেব্রুয়ারিতে মওলানা আকরম খাঁ, আবুল কাশেম, মুজিবুর রহমান খান এক জনসভার আয়োজন করেন।

বোম্বেতে খেলাফত আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কমিটি গঠনের পরে বাংলায় খেলাফত আন্দোলন দাবানলের মত ছড়িয়ে পরে। মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদী 'অসহযোগিতা ও আমাদের কর্তব্য' নামে একটি প্রবন্ধ লেখেন। এই প্রবন্ধে তিনি উল্লেখ করেন খেলাফত রক্ষা করা ও স্বরাজ অর্জন করা আমাদের আন্দোলনের দু’টি উদ্দেশ্য এবং এ আন্দোলনকে সমর্থন করা প্রতিটি ভারতীয় নাগরিকের পবিত্র কর্তব্য।

১৯১৯ সালের ১৭ অক্টোবর প্রথম খেলাফত দিবস ঘোষণা করা হয়। খেলাফত দিবস পালনের সময় কলকাতার অধিকাংশ ভারতীয় মালিকানাধীন দোকানপাট বন্ধ থাকে, বিভিন্ন মসজিদে দোয়া করা হয় এবং সারা বাংলায় জনসভা অনুষ্ঠিত হয়। ২৩-২৪ নভেম্বর দিল্লিতে এ.কে ফজলুল হকের সভাপতিত্বে প্রথম নিখিল ভারত খিলাফত সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এই সম্মেলনে খেলাফত সমস্যা ঝুলিয়ে রাখায় প্রস্তাবিত শান্তি সম্মেলনে অংশ না নেওয়া, ব্রিটিশ পণ্য বর্জন করা, এবং সরকারের সঙ্গে অসহযোগিতার নীতি গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ২০ ডিসেম্বর আহসান মঞ্জিলে খেলাফত আন্দোলনের ঢাকা কমিটি গঠিত হয়। কমিটির সভাপতি হন খাজা হাবিবুল্লাহ, বিকল্প সভাপতি সৈয়দ আবদুল হাফিজ এবং সম্পাদক নির্বাচিত হন গোলাম কুদ্দুস। ঢাকা শহরের নাগরিকদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে একটি ‘সদর খিলাফত কমিটি’ গঠিত হয়। খাজা সুলায়মান কাদের কমিটির সভাপতি, মওলানা আবদুল জব্বার আনসারী, হাফেজ আবদুর রাজ্জাক, হাফেজ আবদুল হাকিমকে সহ-সভাপতি এবং মৌলবি সামসুল হুদাকে সম্পাদক করা হয়।

১৯২০ সালের প্রথম দিকে বঙ্গীয় প্রাদেশিক খিলাফত কমিটি গঠিত হয়। মওলানা আবদুর রউফকে কমিটির সভাপতি, মওলানা মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদীকে সহসভাপতি, মওলানা আকরম খাঁকে সাধারণ সম্পাদক এবং মুজিবুর রহমান ও মজিদ বখশকে যুগ্ম সম্পাদক করা হয়। কলকাতার কলুটোলা স্ট্রীটের হিরণবাড়ি লেনে সংগঠনের কার্যালয় স্থাপিত হয়। ২৮-২৯ ফেব্রুয়ারি কলকাতা টাউন হলে প্রথম বঙ্গীয় প্রাদেশিক খিলাফত সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনে নেতৃবৃন্দ খেলাফত সমস্যা সম্পর্কিত দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত অসহযোগ ও বয়কট অব্যাহত রাখার কর্মসূচি পুনর্ব্যক্ত করেন। মার্চ মাসে খেলাফত প্রশ্নে আলোচনার জন্য মওলানা মুহম্মদ আলীর নেতৃত্বে একটি খিলাফত প্রতিনিধি দল ইংল্যান্ড গমন করে। এ দলে আবুল কাশেম ফজলুল হক বাংলা থেকে প্রতিনিধিত্ব করেন।

১৯২০ সালের ১৯ মার্চ বাংলায় দ্বিতীয় খিলাফত দিবস পালিত হয়। এ দিনে কলকাতার জীবনযাত্রা অচল হয়ে পড়ে এবং ঢাকা, চট্টগ্রাম ও ময়মনসিংহে বহুসংখ্যক সভা অনুষ্ঠিত হয়। সবচেয়ে বড় সভাটি অনুষ্ঠিত হয় টাঙ্গাইলে এবং এতে সভাপতিত্ব করেন উদার জাতীয়তাবাদী মুসলিম জমিদার আবদুল হালিম গজনবী।

মওলানা আজাদ, আকরম খাঁ, মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদীর নেতৃত্বে খিলাফত আন্দোলন সারা বাংলায় একটি মুসলিম রাজনৈতিক চেতনাকে বিকশিত করে। বিদেশি পণ্য বর্জন, আদালত ও সরকারি অফিস বয়কট কার্যক্রম জোরদার করার উদ্দেশ্যে স্বেচ্ছাসেবকদের প্রশিক্ষণ দানের জন্য গ্রামবাংলায় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন গড়ে তোলা হয়। এসব স্বেচ্ছাসেবকদের চরকায় সুতা কাটা, দেশিয় দ্রব্যাদি জনপ্রিয় করে তোলা এবং খিলাফত আন্দোলনের অনুদান সংগ্রহের কাজে নিয়োজিত করা হয়। ঢাকার কিছু কিছু এলাকায় মুসলিম জমিদারগণ নিজেদের খলিফার প্রতিনিধি ঘোষণা করে।

MIR

30 Dec, 20:10


১৯৭১ সালে পূর্ব বাংলায় একটা পতাকা ও সংবিধানের জন্ম এবং একটা রাষ্ট্রের মৃত্যু ঘটে। গত ৫২ বছরে বাংলাদেশ একটা পলিটিক্যাল টেরিটোরিই রয়ে গেছে কিন্তু একটা রাষ্ট্র হয়ে উঠতে পারে নাই।

১৯৪৭ সালে ভারত ভেঙ্গে পাকিস্তান হয়েছিলো মুসলমান জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে। পূর্ব বাংলা পাকিস্তান থেকে বের হয়ে যায়। ইসলামি প্রজাতন্ত্র থেকে নাম বদলিয়ে গনপ্রজাতন্ত্রী হয়, সংবিধান থেকে মুসলমান জাতীয়তাবাদের সবকিছু ঝেটিয়ে বাদ দেওয়া হয়।

তাহলে এই নতুন দেশের মূলসূত্র কি? জিজ্ঞেস করুন, কেউ বলতে পারবে না। কেন ২০২৪ সালে এই অঞ্চল একটা স্বাধীন দেশ হিসেবে থাকবে, তার জাস্টিফিকেশন কি ?

আপনার মূলনীতি এবং ভারত প্রজাতন্ত্রের মূলনীতির মধ্যে তো কোন বিরোধ নেই, ইতিহাসের কোন একটা সময়ে এই ভূখণ্ড আলাদা কিছু ছিল না, ভারতের বিভিন্ন অংশের সাথে যুক্ত হয়ে ছিল। আপনারা বাংলায় কথা বলেন, ভারতেরও প্রায় ১৫ কোটি মানুষ বাংলায় কথা বলে। আপনাদের গান এক, নাটক এক, সিনেমায় একই মানুষ অভিনয় করে, একই লেখকের লেখা বই পড়েন, পাঠ্যবই ভর্তি ভারতীয় লেখকের লেখায়, একই ভাবে বৈশাখ পালন করেন। তাহলে মাঝখানে কেন এই কাঁটাতার!?

এই প্রশ্নের উত্তর কারো কাছেই নাই। জোড়াতালি দেওয়া উত্তর পাবেন। হয়ে গেছে একভাবে এবং এখনো আছে এই ধরনের। এবং আমাদের জাতীয় জীবনেও এই জোড়াতালির প্রতিফলন দেখতে পাবেন প্রতিটি পরতে পরতে।

বাংলাদেশের কোন মোরাল কোড নাই, মূল্যবোধ নাই, নিজস্ব সংস্কৃতি নাই। গত ৫২ বছরে একজন বড় কবি, সাহিত্যিক, গায়ক, লেখক, শিল্পী, ভাস্কর বা গবেষকের জন্ম হয় নাই। একটা সুন্দর মসজিদ কিংবা একটা সুন্দর ভবনও কেউ বানাতে পারে নাই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় যান। বাংলাদেশ আমলে যে ভবনগুলো তৈরি হয়েছে সেগুলো দেখুন, আর তার আগের ভবনগুলো দেখুন। কিছু কনক্রিটের জঞ্জাল তৈরি করা হয়েছে। "দেশসেরা" ভাস্কর মৃণাল হকের বানানো ভাস্কর্যগুলো দেখে আসুন তার সংগ্রহশালা থেকে, গুগল করলেও দেখতে পাবেন, সেগুলো যে গার্বেজ এটা বোঝার জন্য আপনার শিল্পবিশারদ হতে হবে না।

বাংলাদেশের এই ৫২ বছরের সাথে পূর্ব পাকিস্তানের ২৩ বছরে তুলনা করেন। মাত্র ২৩ বছরে কি পরিমান শিক্ষাবিদ, কবি, সাহিত্যিক, শিল্পীর জন্ম হয়েছে ঢাকা, চট্রগ্রাম, রাজশাহীতে। ভাবা যায়! ঢাবি লাইব্রেরির রেফারেন্স সেকশনে যান, দেখুন সেই ৫২ বছরে আগে কি কি কেনা হয়েছিলো আর এখন কি আছে। কেন এমনটা হল? টাকা তো আপনাদের কম নাই। আগের চেয়ে ঢের বেশি। তারপরও কেন সংসদ ভবনের মত একটা ভবন বানাতে পারলেন না? দেশসেরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষ পালনের সাজসজ্জা দেখবেন। কিছু ব্যানার আর লাইট টানানো; সব ব্যানারে, লাইটে বড় বড় করে লেখা নগদ। মানে ফকিন্নি মনে করে কয়েকটা বাতি জ্বালালে আর ব্যানার টানালেই সেটা কিছু একটা হয়ে গেল।

টাকা দিয়ে আপনি সৌন্দর্য কিনতে পারবেন না। এটা আত্নস্ত করার বিষয়, আরধনা করার বিষয়। এজন্য প্রথমে একটা কিছুকে সৌন্দর্যের পরমরুপ হিসেবে কল্পনা করতে হবে। এরপর নিজেকে তার কাছে যাবার চেস্টার মাধ্যমে সৌন্দর্যের বিকাশ হয়। প্রায় হাজার বছর আগের ষাট গম্বুজ মসজিদ বা তারো আগের কান্তাজির মন্দির দেখুন, তার দেয়াল, গম্বুজ, খিলানগুলো। খুব বেশি সফিসটিকেটেড উপরকণ বা অনেক ব্যয় করে এগুলো তৈরি করা হয়নি। কিন্তু এখনো আমাদের চোখ ধাঁধিয়ে যায়, কি অসম্ভব সুন্দর!! কারন তাদের কাছে এটা ছিল একটা উপসনা, একটা ইবাদত। বর্তমানে আমাদের মধ্যে সেই আধ্যাত্মিকতা অনুপস্থিত। এবং এভাবে চললে আগামি কয়েক হাজার বছরেও এর ধারের কাছে কোন স্থাপনা বানাতে পারবেন না, কয়েক হাজার গুন বেশি টাকা দিয়েও।

Transcendental metaphysics ছাড়া আপনার জীবন কখনোই অর্থপূর্ণ হবে না, নিজস্বতা তৈরি হবে না।

কোন মননশীলতা নেই, কোন দর্শন নেই, কোন চিন্তাভাবনা নেই। আছে শুধু নকল, পরের ভঙ্গি নকল করে নটের মত কেন চলিস। ঠিক এইভাবে তারা মঙ্গলযাত্রা করেন কারন তারা জানে ওপার বাংলায় কোলকাতার বাবুরাও ঠিক এমন কিছু করতেছে। নাটক বা মঞ্চ নাটকে যান, স্টেজের সাজসজ্জা ঠিক কোলকাতার কপি। ও পারে হচ্ছে মীরাক্কেল তা দেখে তারা বানাচ্ছে হা-সো। এরা বাংলাদেশ আইডল করছে কারন পাশের দেশে ইন্ডিয়ান আইডল হচ্ছে।

গত ৫০ বছরে দেশের সবচেয়ে বড় চলচিত্রকার হলেন তারেক মাসুদ। কিছু দিন আগে তারেক মাসুদ আর মৌসুমী ভৌমিকের একটা কথোপকথন দেখলাম, যশোর রোড গানটা কিভাবে হল তা নিয়ে। তারেক মাসুদের কথা শুনলে মনে হবে না যে পূর্ব বাংলার কেউ কথা বলছে, একেবারে কোলকাতার বাবুদের মত ভঙ্গিমা, সর্বনাম পদ এবং ক্রিয়াপদের ব্যবহার, একই রকম শব্দ চয়ন।

শিল্প বা সিনেমা হল সমাজের প্রতিচ্ছবি। গত ৫২ বছরে একটা সিনেমা দেখাতে পারবেন না যেখানে প্রোটাগোনিস্ট একজন ধার্মিক। একটা সিনেমা (বা উপন্যাসও) পাবেন না যেখানে মসজিদ, তারাবি, শবে বরাত, শবে কদর বা রমজান মাস আছে। কারন ঐ যে, পরিচালক কোলকাতার বাবুদের সিনেমাতে যে এসব দেখে নাই!

MIR

30 Dec, 20:10


ইসলামপন্থীদের অবস্থা আরো খারাপ। সে জানে উপমহাদেশে গান্ধার থেকে আরাকান পর্যন্ত মুসলমানদের মোরাল কোড এক, জাতীয় বীর এক, উস্তাদ এক(একই উস্তাদের কাছে পড়েছে সবাই বা অনুসরণ করে), তারা একই গান শোনে, একই ধরনের স্বপ্ন দেখে, একই ধরনের খাবার খায়, ঘুমানোর আগে মায়েরা একই ধরনের গল্প বলে, কিন্তু সে এটা উচ্চারণ করতে পারে না। ভয় পায়। কারন সুশীল সমাজ বসে আছে বলবে তুই একাত্তরের চেতনার বিরোধী, রাজাকার। ভয়ে জর-সর হয়ে থাকে। তাদের কাছে কুরআন আছে কিন্তু এরপরেও এতবেশি হীনমন্যতায় ভোগে যে কল্পনারও বাইরে। খুঁজে খুঁজে বের করে ২/৪ টা দাড়িওয়ালা ১৯৭১ সালে হিন্দুস্তানে গিয়েছিলো কিনা তাই দিয়ে বই লেখে "আলেম মুক্তিযোদ্ধার খোঁজে"।

দেশের ফকিন্নি যারা কিনা ভারতকে নকল করেছে ইসলামপন্থী গান্ডুরা তাদের নকল করে চোখ বন্ধ করে, নকলেরও নকল। কে হতে চায় কোটিপতি দেখে এরা বানায় ইসলামি তারকা, ক্লোজআপ ১ দেখে ভয়েজ অব রমজান, গনিত অলিম্পিয়াড দেখে ইসলামি অলিম্পিয়াড, লক্ষ টাকার বই পুরস্কার। স্টেজ সাজানো থেকে শুরু করে বিচারকের বসার জায়গা, সবই নগ্নভাবে কপি করা। মানে ফকিন্নি চিন্তা করে আমার কাছেও তো টাকা আছে আমিও করি এগুলো। ভাই, এভাবে নকল করে তো আপনি মহৎ কিছু হতে পারবেন না, বড়জোর একটা হারবোলা হতে পারবেন। হয়ও তাই, কানা ছেলের নাম পদ্মলোচন। দুই দিন পরে তারা নিজেরাই নিজেদের বানানো গারবেজ ত্যাগ করে এবং অপেক্ষা করে এরপর কোনটা নকল করবে।

রাষ্ট্রকে একটা হায়ার বিংয়ের সাথে যুক্ত থাকতে হবে, সেটা ঈশ্বর হোক বা কোন মতাদর্শ হোক। প্রতিটি নাগরিককে সেই সাপেক্ষে নিজের অবস্থান সম্পর্কে জ্ঞাত থাকতে হবে। রাষ্ট্রের মূল্যবোধ দরকার, মূলসূত্র দরকার, একটা স্বপ্ন থাকতে হবে। আপনি এবং আপনার শত্রুও একই স্বপ্ন দেখবে, একই গল্প শুনবে, একই আদর্শ লালন করবে এবং একই নায়কের ভক্ত হবে। তবেই একটা রাষ্ট্র গড়ে উঠবে।

MIR

27 Dec, 18:36


১৭৫৭ সালে মুসলমানদের রাজনৈতিক পরাজয় অর্থনীতি, সামাজ, সাংস্কৃতিক, এবং ধর্মীয় ক্ষেত্রেও বড় ধরনের প্রভাব ফেলে। যদিও পাক-ভারত উপমহাদেশ হিন্দু সংখ্যা গরিষ্ঠ, ইংরেজ ফিরিঙ্গিদের মূল টার্গেট ছিল মুসলমানেরা, কারন মুসলমানেরাই ছিল এই এলাকার শাসক। বৃটিশরা ফিরিঙ্গিদের বিরুদ্ধে যত বিদ্রোহ হয়েছে তার প্রায় সবই করেছে মুসলমানেরা।

বৃটিশরা মুসলমানদের উপর সাংস্কৃতিক এবং ধর্মীয় আগ্রাসন চালাতে দেশে বর্ষা কালের মেঘের মত দলে দলে খৃষ্টান পাদ্রীদের পাঠানো শুরু করে। কয়েকজন মহাপুরুষ বৃটিশ ফিরিঙ্গিদের এই আগ্রাসন রুখে দেন। তার মধ্যে মুনশী মোহাম্মদ মেহেরুল্লাহ অন্যতম। কোলকাতা, যশোর থেকে শুরু করে কুষ্টিয়া, পাবনা, দিনাজপুর হয়ে দার্জিলিং পর্যন্ত এই অঞ্চলের মুসলমানেরা মুনশী মোহাম্মদ মেহেরুল্লাহর প্রভাবের কারনে পাদ্রীদের থেকে রক্ষা পায় এবং বাংলা ফিলিপাইনের মত খৃষ্টান দেশ হয়ে যায়নি।

মুনশী মেহেরুল্লাহর ১৮৬১ সালে ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জ উপজেলায় উনার নানাবাড়ি ঘোপ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। উনার পৈতৃক নিবাস একই এলাকার ছাতিয়ান তলায়।

মুনশী মেহেরুল্লাহ যশোরের মৌলবি মোসহারউদ্দীনের নিকট ধর্মশিক্ষা এবং মৌলবি মোহাম্মদ ইসমাইলের নিকট আরবি, ফারসি, উর্দু ভাষা ও সাহিত্যে শিক্ষা লাভ করেন। এ সময় তিনি কুরআন-হাদিস ও ফারসি সাহিত্যেও বিশেষ জ্ঞান অর্জন করেন। দারিদ্যতার কারণে আর প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষালাভ সম্ভব হয়নি। তিনি কিছুকাল সরকারি চাকরি করার পর দর্জিবিদ্যায় প্রশিক্ষণ নিয়ে যশোরে দর্জির দোকান খুলে স্বাধীন ব্যবসা শুরু করেন।


খৃষ্টান পাদ্রীরা তখন গ্রাম-গঞ্জে, হাট-বাজারে ঘুরে ঘুরে খৃষ্ট ধর্ম প্রচার করত এবং ইসলামের বিরুদ্ধে নানা অপপ্রচার চালাতো। খৃষ্টান পাদ্রীরা মুনশী মেহেরুল্লাহর কাছেও আসতে থাকে। মুনশী মেহেরুল্লাহ খৃষ্টান পাদ্রীদের ক্রমাগত কথায় কিছুটা প্রভাবিত হয়ে যান। পরে তৎকালীন প্রসিদ্ধ আলেম হাফেজ নিয়ামতুল্লাহর 'খ্রীস্টান ধর্মের ভ্রষ্টতা, নামে বইটি তাঁর হাতে এসে পৌঁছল। তাছাড়া প্রথম জীবনে খৃষ্ট ধর্ম প্রচারক ও পরবর্তী জীবনে ইসলাম ধর্ম প্রচারক ইশান চন্দ্র মণ্ডল ওরফে মুনশী মুহম্মদ এহছানউল্লাহর "ইঞ্জিলে হযরত মুহম্মদের খবর আছে" নামক পুস্তক খানিও তিনি পেয়ে যান।

এই দুইটি বই মুনশী মেহেরুল্লাহর জীবনে পরশ পাথর বুলিয়ে দেয়। তিনি ইসলামের একজন অনন্য খাদেমে পরিণত হোন এবং কম্পারেটিভ রিলিজিয়ন নিয়ে আরো পড়াশোনা শুরু করেন। তিনি বাইবেল, গীতা,বেদ, রামায়নসহ হিন্দু এবং খৃষ্টান ধর্মের সকল ধর্মীয় কিতাবের উপর অসামান্য পান্ডিত্ব অর্জন করেন। তিনি প্রথমে ভালভাবে খৃষ্টান পাদ্রীদের ইসলাম সম্পর্কে বোঝানোর চেষ্টা করেন তবে তাতে কাজ হয় না। এবার মুনশী মোহাম্মদ মেহেরুল্লাহ সরাসরি চ্যালেঞ্জ দেন বিতর্কে বসার।

বিতর্কে তিনি পাদ্রিদের শোচনীয় ভাবে পরাজিত করেন। মেধা, বাগ্মিতা, অসাধারন ব্যক্তিত্বের জন্য অল্প সময়েই মুনশী মেহেরুল্লাহ জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন। তিনি বিতর্কের পাশাপাশি ইসলামি জালসা, তাফসিরুল কুরআন মাহফিল করা শুরু করেন। তিনি এসব মাহফিলে ইসলামের অতীত, ঐতিহ্য, রাসুল পাক সা. এর সিরাত, এবং কুরআন সম্পর্কে মুসলমানদের জানান। খৃষ্টধর্মে দীক্ষিত ও বিপথগামী অনেক মুসলমান উনার এই দাওয়াতে পুনরায় ইসলাম ধর্মে ফিরে আসে। শেখ হাবিববর রহমান কর্মবীর মুন্সী মেহেরুল্লাহ” গ্রন্থের ২০ পৃষ্ঠায় লিখেছেন,

❝ ইসলামের দীপ্ত প্রভাবে সে দর্জি মেহেরুল্লাহ বঙ্গ বিখ্যাত বাগ্মী কুলতিলক, অদ্বিতীয় সমাজ সংস্কারক মুন্নী মোহম্মদ মেহেরুল্লাহই পরিণত হইলেন। ❞

তবে শুধু বক্তব্যেই মুনশী মেহেরুল্লাহর কার্যক্রম সীমাবদ্ধ ছিল না। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন জাতি শিক্ষিত না করতে পারলে উন্নতি সম্ভব নয়। তাই তিনি নিজ গ্রামের পাশেই চূড়ামনকাটিতে একটি মাদ্রাসা স্থাপন করার সিদ্ধান্ত নেন। এক প্রভাবশালী হিন্দুর বিরোধিতার ফলে তা করা সম্ভব হয়নি। তবে তিনি দমে যাননি, তার পাশের গ্রাম বর্তমানে ক্যান্টনমেন্টের এ্যায়ারফোর্স এলাকার ভেতর মনোহরপুর নামক স্থানে পীর মাওলানা কারামত আলীর নাম অনুসারে "মাদ্রাসায়ে কারামাতিয়া" স্থাপন করেন। এই মাদ্রাসা স্থাপন করতে গিয়ে মুনশী মেহেরুল্লাহর দারুণ বেগ পেতে হয়। দ্বারে দ্বারে ঘুরে মাত্র ৮৩টি টাকা সংগ্রহ করতে পেরেছিলেন, কিন্তু মাদ্রাসা স্থাপনের জন্য খরচ হয়েছিল দুইশত টাকারও বেশি। বাকী টাকা তিনিই দিয়েছিলেন। প্রতিমাসে এই মাদ্রাসার পিছনে ৪০ টাকা খরচ হত। এ টাকাও আজীবন মুনশী মেহেরুল্লাহই দিতেন।

মাদ্রাসা দেবার পাশাপাশি ছাত্র সংগ্রহের জন্য তিনি নিজেই ছুটে বেড়ান বাড়ি বাড়ি। সাধারণ মানুষকে বুঝাতে চেষ্টা করেন শিক্ষার গুরুত্ব। তা ছাড়া তাদের লজিংয়েরও ব্যবস্থা করে দেন। নিজের বাড়িতেই একাধিক ছেলের থাকার ব্যবস্থা করেন।

তিনি ছেলেদের পিতাদেরকে বোঝাতে সক্ষম হয়েছিলেন যে মুসলমানেরা অশিক্ষিত হওয়ার কারণে ধূর্ত মহাজন, বরকন্দাজ, নায়েব, গোমস্তা, জমিদারগণ তাদের সহজে ঠকাতে পারে। যদি শিক্ষার আলো পাওয়া যায় তাহলে মুসলমান জাতি এই অবস্থা থেকে রেহাই পাবে।

MIR

27 Dec, 18:36


ধর্ম প্রচারের উদ্দেশ্যে মুনশী মেহেরুল্লাহর প্রতিষ্ঠা করেন ‘এসলাম ধর্মোত্তেজিকা সভা’। এছাড়াও তিনি লেখালিখি শুরু করেন। কলকাতার সুধাকর, ইসলাম প্রচারক প্রভৃতি পত্রিকায় তিনি নিয়মিত কলাম লিখতেন।

পরবর্তীতে সুধাকর পত্রিকার সম্পাদক শেখ আবদুর রহীম, মিহির পত্রিকার সম্পাদক মুনশী রিয়াজ উদ্দীন মাশহাদী, খান বাহাদুর বদরুদ্দীন হায়দার, খান বাহাদুর নুর মুহম্মদ জাকারিয়া প্রমুখ মিলে কলকাতার জাকারিয়া স্ট্রীটের নাখোদা মসজিদে "নিখিল ভারত ইসলাম প্রচার সমিতি" নামে একটি সমিতি গঠন করেন। সমিতির সদস্যবৃন্দ মুনশী মেহেরুল্লাহর উপর বাংলা ও আসামে ইসলাম প্রচারের দায়িত্ব অর্পণ করেন।

এসবের পাশাপাশি তিনি নিয়মিত বিতর্ক সভা করতে থাকেন। এই সময়ে মুনশী মেহেরুল্লাহর সাথে রেভারেন্ড জন জমির উদ্দিন নামে একজনের বিতর্ক বেশ বিখ্যাত। রেভারেন্ড জন জমির উদ্দিন ছিল কনভার্টেড খৃষ্টান, উনার প্রকৃত নাম ছিল মুন্সী জমির উদ্দিন। পাদ্রিদের প্ররোচনায় পড়ে তিনি খৃষ্টান ধর্ম গ্রহণ করে এলাহাবাদের ডিভিনিটি কলেজের উচ্চতর ডিগ্রি নিয়ে রেভারেন্ড জন জমির উদ্দিন নাম ধারণ করেন এবং ইসলাম ও কোরআনের বিরুদ্ধে লিখতে শুরু করেন। জন জমিরুদ্দিনের ‘আসল কোরান কোথায়?’ নামে এক রচনা বেশ জনপ্রিয় হয়। এই লেখা মুসলমানদের মধ্যে হতাশার সূচনা করে। তখন মুনশী মেহেরুল্লাহ সাপ্তাহিক ‘সুধাকর’ পত্রিকায় ‘ইশায়ী বা খ্রিস্টানী ধোঁকা ভাজন’ নামে এক দীর্ঘ নিবন্ধ প্রকাশ লেখেন। এই নিবন্ধে তিনি জমিরুদ্দিনের সব অভিযোগের জবাব দেন। এরপর তিনি ‘আসল কোরান সর্বত্র’ নামে আরেকটি প্রবন্ধ লেখেন। মুনশী মেহেরুল্লাহর লেখা পড়ে রেভারেন্ড জন জমির উদ্দিনের ভুল ভাঙ্গে, তিনি পুনরায় ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন।

শুধু তাই নয়, মুনশী মেহেরুল্লাহর সাথে জমির উদ্দিনের গভীর বন্ধুত্ব হয়ে যায়। জমির উদ্দিন ইসলাম গ্রহণ নামে একটা পুস্তিকা লেখেন। মুনশী মেহেরুল্লাহ এই পুস্তিকা প্রকাশের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। জমির উদ্দিন মুনশী মেহেরুল্লাহর সর্বাক্ষনিক সঙ্গী হয়ে যায়। তবে মুনশী মেহেরুল্লাহর বুঝতেন শুধু ধর্মীয় পুস্তকই একটা সমাজের জন্য যথেষ্ট না। তিনি মুসলমানদের সাহিত্য চর্চা করতে উদবুদ্ধ করতে থাকেন। ১৮৯৯ সালে পাবনা জেলার বড়ইবাড়ি হাটের জলসায় গিয়ে মুনশী মেহেরুল্লাহর কিশোর ইসমাইল হোসেন সিরাজীর সাথে প্রথম পরিচিত হয়। তিনি সিরাজিকে কাব্য সাধনায় অনুপ্রাণিত করেন। এছাড়া মৌলানা মুহম্মদ আকরাম খাঁ, শেখ ফজলল করীম, শেখ হবিবর রহমান সাহিত্যরত্ন সাহিত্য ক্ষেত্রে আগমন করছিলেন মুনশী মেহেরুল্লাহর অনুপ্রেরণায়। শুধু অনুপ্রেরণা দিয়েই থেমে যাননি, তিনি ইসমাইল হোসেন শিরাজীর ‘অনল প্রবাহ’ ও শেখ ফজলুল করিমের ‘পরিত্রাণ কাব্য’ প্রকাশ করেন।

মুনশী মোহাম্মদ মেহেরুল্লাহর জনপ্রিয়তা ছড়িয়ে পরলে বিভিন্ন শহরের পাদ্রীরা তাকে বিতর্কের জন্য আহবান করেন। তিনি সব সবার আমন্ত্রণ গ্রহন করেন। প্রতিটি বিতর্কে তিনি প্রতিপক্ষকে পরাজিত করে। ১৮৯৯ সালে পিরোজপুরে তাঁর জীবনের অন্যতম আলোচিত বিতর্ক অনুষ্ঠিত হয়। বিপক্ষে ছিলেন পাদরী ঈশানচন্ত্র মণ্ডল, পাদরী স্পার্জন ও পাদরী হাসান আলী। তিন দিনব্যাপী এই তর্কযুদ্ধে তিনি খৃষ্টান মিশনারিদের পরাজিত করেন। ঐতিহাসিক সে বিতর্কের বিবরণ তাঁর ‘খ্রীষ্টান-মুসলমানে তর্কযুদ্ধ’ পুস্তিকায় স্থান পেয়েছে। (মুসলিম বাংলার মনীষা, পৃষ্ঠা ৬৬)

১৮৯০ এর দশক থেকে ১৯০৭ সাল পর্যন্ত পাবনা, বগুড়া, রংপুর, দিনাজপুর, চব্বিশপরগণা, যশোর, বরিশাল, নোয়াখালী, ফরিদপুর, মালদহ, মুর্শিদাবাদ, সিংহল, রাজশাহী, নদীয়া, হুগলী, কোচবিহার, জলপাইগুড়ি ইত্যাদি জেলা শহর ও মফস্বলে বিতর্ক সভা, তাফসির মাহফিল, জালশা করেন। এর মাধ্যমে তিনি সাধারণ মানুষের চোখের মনিতে পরিণত হোন। নোয়াখালীর কবি আবদুর রহিম তাঁর "আখলাকে আহম্মদীয়া" নামক গ্রন্থে মেহেরউল্লার গুণগান গেয়েছেন-

মুন্সী মেহেরুল্লাহ নাম যশোর মোকাম।
জাহান ভরিয়া যাঁর আছে খোশ নাম।
আবেদ জাহেদ তিনি বড় গুণাধার।
হেদায়েতের হাদী জানো দ্বীনের হাতিয়ার।
মুল্লুকে মুল্লুকে ফেরে হেদায়েত লাগিয়া।
হিন্দু খৃস্টান কত লোক ওয়াজ শুনিয়া।।
মুসলমান হইল সবে কলেমা পড়িয়া।
অসার তাদের দ্বীন দিল যে ছাড়িয়া।
তাঁর সাথে আর এক ছিল নেককার
মুনশী শেখ জমিরুদ্দীন জ্ঞানের ভান্ডার।
সে দোনো জাহেদ মদ ফজলে খোদার।
তের শত পাঁচ সাল ছিল বাংলার।
সেই সালের রমজানের ঈদের সময়েতে
এসেছিল নোয়াখালি শহর বিচেতে

বিতর্কে জয়-পরাজয় সব সময় জ্ঞান বা তথ্যের উপর নির্ভর করে না, বিতর্কে উপস্থিত বুদ্ধি গুরুত্বপূর্ণ। মুনশী মোহাম্মদ মেহেরুল্লাহর উপস্থিত বুদ্ধি ছিল অসামান্য। এর কয়েকটা নমুনা উল্লেখ করা যায়:

এক-

এক সভায় ইংরেজ পাদ্রী হেয় করে বলেছিল, তোমাদের দেশের মানুষ, লম্বা-খাটো,কালো-শ্যামলা এমন কেন? আমাদের দেশে সবাই সাদা এবং লম্বা। এর উত্তরে মুনশী বলেন, "শুওর কা বাচ্ছা এক কিছিম হ্যায়- টাটটু ক্যা বাচ্ছা হ্যারেক রকম হ্যায়"।

MIR

27 Dec, 18:36


❝ তিনি এসেছিলেন অকল্যাণের অবসান ঘটাতে, কাজেই তাঁর বাক্যেও এমন ছিল, যা মুসলমান সমাজের জড়তা ভেঙেছে, তাদের চেতনা ফিরিয়েছে, বাংলার আত্মবিস্মৃত মুসলমানের আত্মোপলব্ধি করতে শিখেছে, তাদের মধ্যে নব নব প্রতিভার উন্মেষ সাধিত হয়েছে, এককথায়, সমাজ জেগেছে। ❞
(মুনশী মেহেরউল্লাহ: জীবন ও কর্ম, পৃষ্ঠা ১৩১)


বিতর্ক সভায় তিনি ছিলেন তেজস্বী কিন্তু ব্যক্তিগত জীবনে অত্যন্ত সদালাপি ও বিনম্র। তিনি সাদামাটা জীবনযাপন করতেন, সাধারণ খাবার খেতেন, অতিথিদের সমাদর করতেন, সাধারণ জামা-কাপড় পরিধান করতেন কিন্তু দান করতেন হাত খুলে। তিনি ব্যক্তিগত খরচে ছিলেন সাবধানী আর দান, মানুষকে সাহায্য করার ক্ষেত্রে ছিলেন উদার। মুনশী শেখ জমিরুদ্দীন "মেহের চরিত” গ্রন্থের ১৭ পৃষ্ঠায় লিখেছেন,

❝ অপব্যয় কাহাকে বলে তিনি তাহা জানিতেন না। সামান্য পোষাক পরিধান করিতে তিনি বড়ই ভাল বাসিতেন এবং সামান্য আহার করিতেন। দুঃখীর আর্তনাদ তিনি কখনও সহ্য করিতে পারিতেন না। কেহ কখনও তাঁহার নিকটে কোন বিষয়ে প্রার্থী হইয়া বিফল মনোরথ হয় নাই। ❞

জামায়াতে ইমামতীর জন্য তিনি নিজে কখনো এগিয়ে যেতেন না। যদি মনের ভেতর কোন অহংকার এসে যায়, এই ভয়ে। তিনি সব সময় চিন্তা করতেন কিভাবে সমাজের মানুষের মঙ্গল হবে? কিভাবে তারা ইহকালীন ও পরকালীন মুক্তি পাবে?

মোহাম্মাদ আছির উদ্দীন প্রধান এ প্রসংগে বলেন,

❝ সমাজ ও ধর্মোন্নতির মঙ্গল ও সুনাম কামনায় সতত সচেষ্ট থাকিয়া ভাষণ একাগ্রতার দুরুহ দুরুহ বিপদ মস্তকে বহন করিয়া বঙ্গীয় ইসলাম বর্গকে সর্বাঙ্গীন রূপে গৌরবান্বিত করিতে বিশেষ যত্নশীল ছিলেন; শিক্ষা ব্যবস্থা, বাণিজ্য, শিল্প ইত্যাদি শিক্ষা করা আমাদের কতদূর যে প্রয়োজনীয় এবং এ দ্বারা কিরূপ মঙ্গল সাধিত হইতে পারে তাহা সভাস্থলে উপস্থিত সভ্যমন্ডলীকে মর্মে মর্মে বিশেষ রূপে বুঝাইয়া দিয়া তাহার পদানুসরণে দুর্লভ যশ প্রভাব আলোকিত হইতে অশেষ উৎসাহ প্রদান করিতেন। যখন তিনি মুসলমান সমাজের দুর্দশার বিষয় ক্ষোভোদ্দীপক ভাষায় অতিশয় অনুতাপের সহিত ব্যক্ত করিতেন, তখন সভার মধ্যে যেন শোক মহামারী মূর্তিতে সকলের হৃদয়ই অভিভূত হইয়া পড়িত এবং যাহাতে এরূপ পাপ রাক্ষসের কবলে পতিত হইতে না হয় তদ্বিষয়ে বিশেষ সাবধানতাসহ পদক্ষেপ করিতেন। ❞

মুনশী মেহেরুল্লাহ পরের দুঃখের কতটা কাতর ছিলেন তার কিছু নমুনা জীবনীকারকেরা উল্লেখ করেন,

এক-
এক অন্ধ ভিখারী কোন এক পথের ধারে সন্ধ্যার পর বাতি জ্বালিয়ে ভিক্ষা করছিলেন কিন্তু কোন দুষ্ট ছেলে এই বাতিটি চুরি করে নিয়ে যায়, ভিখারী এ খবর জানতো না। টের পেল তখনই, যখন পথিক তাঁর শরীরের ওপর চড়াও হলো। ভিখারী ব্যথায় কাঁকিয়ে উঠলো। এমন সময় মুন্সী মেহেরউল্লা ঐ পথ দিয়ে চলছিলেন। এহেন দুঃখজনক ঘটনার তিনি নিজেই কেঁদে ফেললেন। তৎক্ষণাত তিনি একটি বাতি সংগ্রহ করে আনলেন। কিন্তু সলিতা পাবেন কোথায়? অগত্যা কোন পথ না পেয়ে নিজের লুঙ্গির খানিকটা ছিড়ে সলিতা তৈরী করলেন এবং অন্ধের সামনে আলো জ্বেলে অন্ধকার তাড়ালেন।

দুই-
একদিন নিজ গ্রাম ছাতিয়ানতলার একটি বালক কূপের ভেতর পড়ে যায়। এ দৃশ্য দেখে মানব দরদী মুন্সী সাহেব তাকে বাঁচানোর জন্য কূপের ভেতর ঝাঁপিয়ে পড়েন। অতিকষ্টে বালকটি উদ্ধার করেন এবং অন্যের সাহায্যে নিজেও উদ্ধার পান।


১৯০৭ সালে উত্তরবঙ্গে এক দিনে তিনটি সভা করে তিনি জ্বরে আক্রান্ত হন। জ্বর ক্রমে নিউমোনিয়ায় রূপান্তরিত হয়। এ রোগেই ৭ জুন মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল মাত্র ৪৫ বছর। বৈবাহিক জীবনে মুনশী মেহেরুল্লাহর দুই স্ত্রীর কোল আলো করে জন্ম হয়েছিলো তিন ছেলে ও তিন মেয়ে।

মুন্সী মহম্মদ মেহেরউল্লার মৃত্যুতে সারা বাংলায় শোকের ছায়া নেমে আসে। সৈয়দ ইসমাইল হোসেন সিরাজী তার 'শোকোচ্ছাস' কবিতায় লিখেছিলেন-

যাঁর সাধনায় প্রতিভা প্রভায় নতুন জীবন ঊষা
উদিল গগনে মধুর লগনে পরিয়া কুসুম ভূষা
গেল যে রতন হায় কি কখন মিলিবে সমাজে আর?
মধ্যাহ্ন তপন হইল মগন, বিশ্ব অন্ধকার"

শেখ ফজল করীম 'সোলতান' পত্রিকায় লিখেছিলেন-

"তোমারি বিপুল স্নেহ আকুল আহবানে
হতভাগ্য এই কবি লভি নব বল
অবতীর্ণ হয়েছিল সাহিত্য সংসারে
আজ তুমি দেখিছ না হায় তার বুকে
কি ভীষণ চিতানল জ্বলে ধিকি ধিকি।"

বিস্তারিত পড়াশোনা

১। শেখ হাবিববর রহমান, কর্মবীর মুন্সী মেহেরুল্লাহ
২। মোহাম্মদ আলী চৌধুরী, মুসলিম বাংলার মনীষা
৩। নাসির হেলাল, মুনশী মেহেরউল্লাহ: জীবন ও কর্ম
৪। মুনশী শেখ জমিরুদ্দীন, মেহের চরিত
৫। মোশাররফ হোসেন খান, মুনশী মোহাম্মদ মেহেরুল্লাহ

MIR

27 Dec, 18:36


দুই-
এক বির্তক সভায় মুসলমান, খৃষ্টান, এবং হিন্দু: এই তিন ধর্মের প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলো। সভা মঞ্চের পাশেই ছিল একটা তুলশি গাছ। হিন্দু ঠাকুর মঞ্চে উঠার সময় তুলশি গাছের সামনে মাথা ঠুকে উঠে। এটা দেখে খৃষ্টান পাদ্রী মঞ্চে যাবার সময় তুলশির কয়েকটা পাতা ছিড়ে মুখে এবং কপালে ঘসে। কেন এটা করলেন জিজ্ঞেস করলে পাদ্রী উত্তর দেয়, হিন্দুদের দেবতার ক্ষমতা কেমন সেটা দেখলাম।
বির্তকের দ্বিতীয় দিন দেখা যায় মুনশী মেহেরুল্লাহও মঞ্চে উঠার আগে একটা গাছের সামনে গিয়ে দোয়া-কালাম পরে সালাম দিয়ে মঞ্চে উঠছে। এটা দেখে উপস্থিত মুসলমানদের চোখ ছানাবড়া হয়ে যায়, কারন মুসলমানদের মধ্যে তো এমন কিছু নাই। পাদ্রী আজ সেই গাছেরও পাতা ছিড়ে মুখে, কপালে ঘসে। মুসলমানদের বেশি অপমান করতে পাদ্রী কিছু পাতা নিয়ে তার নিতম্বতেও ঘসে। কিছুক্ষণ পরেই পাদ্রী লাফাতে শুরু করে। কেন লাফাচ্ছেন জিজ্ঞাসা করলে উত্তর দেয়, মুসলমানদের দেবতার এত পাওয়ার! (মুনশী মেহেরুল্লাহ পাদ্রীকে শিক্ষা দেবার জন্য একটা ছুতরা গাছ রেখে দিয়েছিলেন)।

তিন-
এক সভায় পাদ্রীগণ তাদের নবী যীশু খ্রীস্টকে বড় বলে দাবী করলো। কারণ স্বরূপ বলা হলো তাদের নবী আসমানে উঠে গেছেন এবং মুসলমানদের নবী জমিনে (কবরে) আছেন।সভাস্থলে থম থমে ভাব, মুনশী মেহেরুল্লাহ কি উত্তর দিবেন? উত্তর দিলেন, 'পাদ্রী ভাই এর কথায় ঠিক, নইলে উনাদের নবী উপরে উঠবেন কেন?' এবং তিনি সভার শ্রোতাদেরকে লক্ষ্য করে বললেন, 'আচ্ছা ভাই সকল, আপনারা এক সের ও পাঁচ সের নিশ্চয় চেনেন?'
সবাই হাত উঁচু করে সম্মতি জানালো। তিনি একটা দাড়িপাল্লা আনতে বললেন, পাল্লা আনার পর এক সের এক পাশে এবং পাঁচ সেরটি অন্য পাশে রাখা হলো। যা হবার তাইই হলো। একসের যে পাশে সে পাশ ওপরে উঠে গেলো। আর যে পাশে পাঁচসের ছিলো সেটা স্বাভাবিক ভাবেই নীচে থাকলো। তখন তিনি জিজ্ঞেস করলেন, 'আচ্ছা বলুন এক সের বড় না পাঁচ সের? মুসলমানেরা উল্লাসে চিৎকার দিয়ে বললো, পাঁচ সের। পাদ্রীরা আর টু শব্দটি করলো না।


পাদ্রীদের পাশাপাশি হিন্দু পুরোহিতদের সাথেও মুনশী মেহেরুল্লাহ বির্তক করেন। তিনি হিন্দু সমাজ বিধবা মহিলাদের সাথে যে অমানবিক আচরণ করে তার বিরুদ্ধে লেখেন। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন,

❝ আমি বিবিধ উপায়ে বিধবা হৃদয়ের বিষোদোক্তি সমূহ যত দূর অবগত হইতে পারিয়াছি, সরল সহজ এবং সাধারণ ভাষায় প্রকাশ করিতে যথাশক্তি প্রয়োগ পাইলাম। এমন কি স্থান বিশেষে সাধারণ মেয়েলী ভাষা ব্যবহার করিতেও লজ্জা বোধ করি নাই। ❞

এছাড়া তুলনামূলক ধর্মতত্ত্ব নিয়ে তিনি কয়েকটি প্রামাণ্য বই লেখেন। তার লিখিত বইগুলো হল:

১। খ্রীস্টীয় ধর্মের অসারতা (১৮৮৬)
২। মেহেরুল এসলাম বা এসলাম রবি (১৮৯০)
৩। রদ্দে খ্রীস্টান ও দলিলোল এসলাম (১৮৯৭)
৪। বিধবা গঞ্জনা ও বিষাদ ভান্ডার (১৮৯৮)
৫। হিন্দু ধর্ম রহস্য ও দেবলীলা (১৮৯৮)
৬। পান্দনামা (১৯০৮)
৭। সাহেব মুসলমান (অনুবাদ, ১৯০৯)
৮। খ্রীস্টান মুসলমান তর্কযুদ্ধ (১৯০৮)
৯। বাবু ঈশানচন্দ্র মণ্ডল এবং চার্লস ফ্রেঞ্চের এসলাম গ্রহণ

এই গ্রন্থগুলোর মধ্যে হিন্দু ধর্ম রহস্য ও দেবলীলা বইটি লিখেছিলেন মুসলমান বিদ্বেষী উগ্র হিন্দুদের জবাব দিতে। বঙ্কিম চন্দ্রের 'মৃনালীনী', 'কৃষ্ণকান্তের উইল', 'রাজসিংহ' ও 'কবিতা পুস্তক', ঈশ্বর গুপ্তের 'কবিতা সংগ্রহ' দামোদর মুখোপাধ্যায়ের 'প্রতাপসিংহ' যজ্ঞেশ্বর মুখোপাধ্যায়ের বঙ্গানুবাদিত 'রাজস্থান' দীন বন্ধু মিত্রের 'জামাই বারিক' ইত্যাদি গ্রন্থে ইসলাম এবং মুসলমানদের নোংরাভাবে আক্রমণ করা হয়। এর প্রতিবাদে মুন্সী মেহেরউল্লা তাঁর 'হিন্দু ধর্ম রহস্য ও দেবলীলা' বইটি লেখেন। বইটিতে তিনি মহাভারত, পদ্ম পুরাণ ও ব্রক্ষ্ম কৈবর্ত পুরাণ থেকে হিন্দু দেবদেবীদের নীতিহীন কাজ-কর্মের উদাহরণ দিয়েছেন।

মুনশী মেহেরুল্লাহর রচিত বইগুলো খুবই জনপ্রিয় হয়েছিল কারন তিনি খুব জোরালো ভাষায় ইসলামের পক্ষাবলম্বন করে বিরোধীদের কুৎসা ও অপপ্রচার খন্ডন করেন। এর পাশাপাশি তিনি কবিতাও লিখেছেন। উনার লিখিত কবিতাগুলো বেশ শ্রুতি মধুর। যেমন:

গাওরে মোসলেমগণ নবীগুণ গাওরে
পরাণ ভরিয়া সবে ছল্লে আলা গাওরে
আপনা কালামে নবীর সালামে তাকিদ করেন বারী
কালেবেতে জান কহিতে জবান যে তক থাকে গো-জারী
যে বেশে যে ভেসে যে দেশেতে যাওরে
গাও গাও গাও সবে ছল্লে আলা গাওরে।

বহুমুখী এবং কার্যকর কর্মকান্ডের কারনে মুসলমান সমাজে তিনি গ্রহনযোগ্যতা পেয়ে যান। ফুরফুরার পীর আবু বকর সিদ্দিকীসহ দেশের আলেম সমাজের স্নেহধন্য হোন। মৌলানা আকরাম খাঁ বলেছিলেন,

❝ কর্মজীবনের প্রারম্ভে স্ব-সমাজের দৈন্য দুর্দশার যে তীব্র অনুভূতি আমার মন ও মস্তিষ্ককে বিচলিত করিয়া তুলিয়াছিল, আপনাদের এই যশোহরেরই একজন ক্ষণজন্মা মুসলমান কর্মবীরের (মুন্সী মেহেরুল্লাহর) সাধনার আদর্শ তাহার মূলে অনেকটা প্রেরণা যোগাইয়া দিয়াছিল। ❞

কথাসাহিত্যিক শাহেদ আলী মুনশী মেহেরুল্লাহর প্রভাব সম্পর্কে সমকালীন একজন কবিকে উদ্ধৃত করেছেন,

MIR

25 Dec, 18:05


জিন্নাহ-নামা
---------------------
০১. কায়েদে আজম/ কাজী নজরুল ইসলাম,

মুসলিম লীগের আন্দোলন যেরূপ গদাই-লস্করী চালে চলছিল, তাতে আমি আমার অন্তরে কোন বিপুল সম্ভাবনার আশার আলোক দেখতে পাইনি। হঠাৎ লীগ নেতা কায়েদে আজম যেদিন পাকিস্তানের কথা তুলে হুংকার দিয়ে উঠলেন -“আমরা ব্রিটিশ ও হিন্দু ফ্রন্টে ভারতের পূর্ণ স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ করব” সেদিন আমি উল্লাসে চীৎকার করে বলেছিলাম –হাঁ, এতোদিনে একজন ‘সিপাহসালার’ সেনাপতি এলেন। আমার তেজের তলোয়ার তখন ঝলমল করে উঠলো।

— শাহেদ আলী সংকলিত, ১৯৮৯

০২. জিন্নাহ/ প্রফেসর আব্দুর রাজ্জাক

...মিঃ ল্যাস্কি, আই ডু নট উইশ টু বি ম্যানশনড উইথ মিঃ নেহেরু। আই অ্যাম এ মেম্বার অব মুসলিম লীগ এন্ড এ ফলোয়ার অব মিঃ জিন্নাহ।

...মিঃ জিন্নাহ ত বেঙ্গল আপনেদের দিয়া দিছিলেন, আপনেগো চিত্তে সুখ অইলো না বেঙ্গল পার্টিশন করলেন।

...লর্ড রীডিং এর মৃত্যুর পর তার পুত্র তার একটা বায়োগ্রাফি প্রকাশ করেন। তিনি যতদিন ইন্ডিয়াতে ছিলেন প্রতি সপ্তাহে তার পুত্রের কাছে একটা কইর‍্যা চিঠি লিখতেন। ভারতের যেসকল ডিগনিটরির লগে তার দেখা অইত, তাগো সম্পর্কে লর্ড রীডিং তার প্রাইমারি ধারনাটা প্রকাশ করতেন। মিঃ গান্ধীর লগে যখন রীডিং এর দেখা অইছে, লর্ড রীডিং তার সম্পর্কে লিখছেন, এই লোকের সঙ্গে আমাগো ব্যবসা জমবে ভালা। একইভাবে যত ইন্ডিয়ান লিডারের লগে দেখা অইছে সকলকে একটা ক্যাটেগরিতে ফেলছেন কিন্তু মিঃ জিন্নাহর সঙ্গে তার দেখা হওনের পরের চিঠিতে এক্কেরে সুর পাল্টাইয়া গেল। এই লোক এক্কেরে বেয়ারা। উই উইল হ্যাভ ট্রাবল ইন হ্যান্ডলিং মিঃ জিন্নাহ। আমি বললাম, আপনি সব সময় মিঃ জিন্নাহকে বেশি বেশি নাম্বার দিচ্ছেন। জিন্নাহ্ সাহেব ওবস্টিনেট ছিলেন সত্য, কিন্তু আপনি তার প্রতি দুর্বল। স্যার হাসলেন, আমি ত আর বানাইয়া বলবার লাগছি না।

— যদ্যপি আমার গুরু/ আহমেদ ছফা, পৃ: ৮৫, ৮৩, ৮৮-৮৯

০৩. ❝ এর আগে কখনোই জনাব জিন্নাহ জনমুখী মানুষ ছিলেন না। তিনি সাধারণ জনগণকে অবিশ্বাস করতেন। রাজনৈতিক ক্ষমতা থেকে তাদের বাদ দিতে তিনি সর্বদা উচ্চ ভোটাধিকারের পক্ষে ছিলেন।

মিঃ জিন্নাহ ধর্মপ্রাণ, ধার্মিক বা প্র‍্যাকটিসিং মুসলিম হিসেবে পরিচিত ছিলেন না। এমএলএ হিসাবে শপথ গ্রহণ করার সময় পবিত্র কোরানকে চুম্বন ব্যতীত কুরআনের বিষয়বস্তু বা নীতিগুলি নিয়ে মাথা ঘামাতেন বলে মনে হয় না। তিনি ধর্মীয় কারণে কোন মসজিদে যেতেন কিনা সন্দেহ আছে। জনাব জিন্নাহকে কখনোই কোন মুসলমান জনসমাবেশের দেখা যায়নি, হোক সেটা ধর্মীয় বা রাজনৈতিক।

আজ, একজন মিস্টার জিন্নাহর মধ্যে একটি আমূল পরিবর্তন দেখতে পাচ্ছি। তিনি হয়ে উঠেছেন গণমানুষের নেতা। তিনি আর তাদের উপরে নেই, তাদের মধ্যে রয়েছেন। সাধারণ মুসলমানও তাকে নিজেদের ঊর্ধ্বে তুলে ধরে কায়েদে আযম বলে ডাকে। তিনি শুধু ইসলামে বিশ্বাসীই হননি, ইসলামের জন্য প্রাণ দিতেও প্রস্তুত। তিনি ইসলাম সম্পর্কে গভীর জ্ঞান রাখেন। তিনি খুৎবা শুনতে মসজিদে যান এবং ঈদের জামাতে শরীক হয়ে আনন্দ পান। আজ, মুসলমানেরা তাকে তাদের একান্তই কাছের নেতা হিসেবে সম্মান করে। আল্লাহু আকবর এবং কায়দে-আজম জিন্দাবাদ শ্লোগান ছাড়া বোম্বেতে কোনো মুসলিম সভা শুরু বা শেষ হয় না। ❞

— ভীমরাও রামজি আম্বেদকর, ভারতীয় সংবিধানের মুখ্য রচয়িতা

০৪. কায়েদে আযম জিন্দাবাদ / মোতাহের হোসেন চৌধুরী

সত্যি, কায়েদে আযমের কাছে আমাদের ঋণের অন্ত নেই। আমরা মুসলমানরা কিছুতেই তাকে ভুলতে পারবাে না। আমরা যে আজ নিঃশংক জীবন যাপন করছি, সে তাে তার জন্যই। নইলে হিন্দুর ভয়ে আমাদের সংকুচিত থাকতে হত, আর সংকোচন দুমড়ে নষ্ট করে দিত আমাদের আভ্যন্তর শক্তিকে। আমরা হতােদ্যম হয়ে পড়তুম। কোনাে প্রকারে জীবনধারণ করতে সক্ষম হলেও, আমাদের সেই আনন্দবিহীন জীবনে লাগতাে না সার্থকতার ছোঁয়া। তাই কায়েদে আযমের গুণকীর্তনে পঞ্চমুখ হতেই হয়। ওটা মােটেই বাড়াবাড়ি নয়।

— মোতাহের হোসেন চৌধুরী রচনাবলী (প্রথম খন্ড), বাংলা একাডেমী, পৃ: ৫১২

০৫. উনিশ'শ ছয় থেকে ছত্রিশ/অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী

...১৯১৪-তে এল বিশ্ব মহাযুদ্ধ। কংগ্রেস ও লীগ উভয় প্রতিষ্ঠানই এ সময়ে বৃটিশকে সাহায্য করতে এগিয়ে গিয়েছিলেন।

১৯১৫-র ডিসেম্বর মাসে বোম্বাইয়ে কংগ্রেসের বাৎসরিক অধিবেশন হওয়ার কথা। জিন্নাহ মুসলিম লীগকেও একই সময়ে সে জায়গায় বাৎসরিক অধিবেশনের জন্য আহ্বান জানালেন। ডিসেম্বর মাসে সেখানে লীগেরও অধিবেশন বসেছিল। এ প্রচেষ্টা ঐক্য সম্পর্কে জিন্নাহর আন্তরিকতারই নিদর্শন।

...মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ এ সময় থেকেই লীগের ভূমিকা সম্পর্কে ক্রমশই অধিকতর সচেতন হয়ে উঠছিলেন। তিনি লক্ষ করছিলেন যে, কংগ্রেস ক্রমশই হিন্দু-স্বার্থ সম্পর্কে সচেতন হয়ে উঠছে। এ সচেতনতাই মুসলিম স্বার্থসচেতনতার প্রয়োজনের দিকে তাঁর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল।

MIR

25 Dec, 18:05


নেমে পড়লেন দুর্জয় বিশ্বাস নিয়ে। একজন বৃদ্ধ, জরাগ্রস্ত, স্বাস্থ্যহীন মানুষ স্বভাবতঃই শান্তি চায়, বিশ্রাম চায়, নিশ্চিন্ত অবসর চায়; কিন্তু মহান কর্তব্য অসমাপ্ত দেখে মােহাম্মদ আলী জিন্নাহ কায়েদে আজমের গুরুভার দায়িত্ব এই বয়স এবং শরীরের এই অবস্থায় স্বেচ্ছায় গ্রহণ করলেন। এরূপ সাহসের দৃষ্টান্ত ইতিহাসে আর মেলে কই?

— মোহাম্মদ ওয়াজেদ আলী রচনাবলী (দ্বিতীয় খন্ড), পৃ: ১৭৬

০৮.
❝ অল্প কিছু ব্যক্তি ইতিহাসের গতিপথকে উল্লেখযোগ্যভাবে পরিবর্তন করে। খুবই কম মানুষ বিশ্বের মানচিত্র পরিবর্তন করে। এমন মানুষ পাওয়া খুবই দুস্কর যাকে একটি জাতি-রাষ্ট্র তৈরির কৃতিত্ব দেওয়া যায়। মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ তিনটিই করেছিলেন। ❞

- স্ট্যানলি উলপার্ট,
অধ্যাপক এবং ইতিহাসবেত্তা, ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র।

আজ কায়েদে আজম মুহাম্মদ আলী জিন্নাহর ১৪৫তম জন্ম বার্ষীকি।।

MIR

25 Dec, 18:05


...গোল টেবিল বৈঠকে মুসলিমদের প্রতিনিধি হিসেবে জিন্নাহ ছিলেন আর তার চেয়েও অনেক বেশি স্পষ্ট করেছিলেন কবি মোহাম্মদ ইকবাল। ইকবালের রাজনৈতিক চেতনা এ সময়ে ছিলো অত্যন্ত পরিচ্ছন্ন। লাহোর প্রস্তাব লীগ সম্মেলনের সভাপতি হিসেবে ইকবাল ভারত বিভাগের কথা বলেছিলেন। তা না হলে গৃহ যুদ্ধ ছিলো তার মতে অবশ্যম্ভাবী।

আর গোল টেবিল বৈঠকসমূহে যোগ দিয়ে মুহাম্মদ আলী জিন্নাহও এ সত্যটা এ সময় স্পষ্ট করে উপলব্ধি করেছিলেন। পরবর্তীকালে এ প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, "জীবনের মতো আমি আঘাত পেলাম গোলটেবিল বৈঠকের অধিবেশনগুলোতে। হিন্দু মনোভাব, মানসিকতা ও দৃষ্টিভঙ্গি সম্পর্কে ভীতির পটভূমিতে বুঝলাম ঐক্যের কোনো সম্ভাবনাই নাই।"

—শতাব্দী পরিক্রমা, বিএনআর

০৬. কায়েদে আজম/ ইব্রাহিম খাঁ

মিলিত ভারতের যে স্বপন নওরোজী, গোখেল, ব্যানার্জীর চিত্তকে উতলা করে তুলেছিল, পশারীর মতো তরুণ নেতা মুহম্মদ আলী জিন্নাও সে স্বপন আসমুদ্র হিমাচলের দুয়ারে দুয়ারে ফেরী করে ফিরছিলেন। রাজনীতি ক্ষেত্রে হিন্দু-মুসলমানের একটা সঙ্গত সম্মানজনক আপোষের চেষ্টায় তিনি সম্পূর্ণরূপে নিজেকে বিলিয়ে দিয়েছিলেন। হিন্দু সমাজ হতে বাহবা পেলেন তিনি প্রচুর; মিলনদূত বলে মনস্বিনী সরোজিনী নাইডু তাঁকে অভিনন্দন জানালেন, কিন্তু কার্যত তাঁরা কেউ তাঁর প্রস্তাব গ্রাহ্য করলেন না।

মুহম্মদ আলী জিন্নাহ ফিরে দাঁড়ালেন ভাবতে লাগলেন, ইজ্জতের সঙ্গে, আদর্শের সঙ্গে, প্রতিষ্ঠার সঙ্গে এ দেশে মুসলমানদের বাঁচবার তবে আর কি পথ আছে?

পাকিস্তান আইডিয়ার অঙ্কুর তখন পাতা মেলে দাঁড়িয়েছে। সে দিকে মুহম্মদ আলী জিন্নাহর নজর পড়ল।

কিন্তু সামনে যে পর্বত প্রমাণ বাধা? ইংরেজ প্রভু পাকিস্তান আইডিয়াকে হেসে উড়িয়ে দেয়, হিন্দু পাকিস্তানের নামে ক্ষেপে ওঠে স্বয়ং মুসলমানের মধ্যে বহু দল কোনো দল পাকিস্তানের নাম শুনে শিউরে ওঠে, পাছে হিন্দুরা বিরূপ হয়, জুলুম করে। কোনো দল হিন্দুর সাথে মিলে মারমুখো হয়ে ওঠে; কোনো দল বা প্রকাশ্যে পাকিস্তান চায়, কিন্তু মনের গোপন কোণে পোষণ করে অবিশ্বাস, ভাবে যাক, অন্তত পাকিস্তানের ভয় দেখিয়ে শেষ পর্যন্ত হিন্দুর সাথে একটা সুবিধাজনক আপোষ করে নেওয়া যাবে।

জিন্নাহ ভেবে ভেবে নিজ পথ বেছে নিলেন- স্থির করলেন- পাকিস্তানের জন্য তিনি লড়বেন। কারণ, তিনি নিঃসন্দেহভাবে অনুভব করলেন- এ পথ ছাড়া এদেশের মুসলমানদের বাঁচবার আর কোনো পথ নেই।

জিন্নাহ চরিত্রের এক পরম বৈশিষ্ট্য কর্তব্য ঠিক করার আগে তিনি বিশেষভাবে ভাবতেন তারপর ঠিক করতেন তাঁর পথ। তারপর সর্বস্ব পণ করে সে পথে চলতেন পথের বাধাবিঘ্ন যত বড়ই হোক, তিনি পরোয়া করতেন না।

এ ক্ষেত্রেও তাই হলো। তিনি মরণ-পণ করে পাকিস্তান অর্জনের পথে অগ্রসর হলেন। তিনি প্রথম আত্মনিয়োগ করলেন বিচ্ছিন্ন মুসলমান সমাজকে একীভূত করতে। উল্কার মতো তিনি দেশের কেন্দ্রে কেন্দ্রে ছুটে বেড়ালেন, বক্তৃতা করলেন। মুসলমানেরা তাঁর পতাকাতলে সংঘবদ্ধ হলো। তিনি হলেন আমাদের কায়েদে আজম- আমাদের মহানসংগঠক।

তারপর চলল অবিরাম সংগ্রাম। ইংরেজের বিরোধিতা, হিন্দুর বিরোধিতা স্ব সমাজের অবিশ্বাসের বিরোধিতার সঙ্গে সংগ্রাম।

কায়েদে আজম তাঁর অজেয় ঈমানের জোরে সমস্ত বাধা বিঘ্নই অতিক্রম করে চললেন।

বহুকাল পরে ভারত উপমহাদেশের মুসলমানেরা পেল এমন একজন নেতা যিনি তাদের একত্র করতে পারেন, যিনি তাদের চিত্তে আজাদ রাষ্ট্রের মহান স্বপ্ন জাগাতে পারেন, যিনি সুদক্ষ সেনাপতির মতো তাদেরে পরিচালনা করতে পারেন।

কায়েদে আজম উদাত্ত কণ্ঠে ঘোষণা করলেন:

বন্ধুগণ, আপনাদের সম্বল হোক ঐক্য, ঈমান, নিয়মানুবর্তিতা তারপর চলুন আমার সাথে সামনে আপনাদের আজাদীর মনজিলে।

তাই হলো। মুসলমানেরা কায়েদে আজমের পতাকা তলে সমবেত হয়ে তাঁরই নির্দেশে পথে বের হলেন। কাফেলা চললো। কত মরু, কত পর্বত, কত ঝড়, কত দুশমন সামনে পড়ল; কিন্তু আমাদের মহান সেনাপতি সব জয় করে চললেন।

একটি বল্লম না ছুঁড়ে, একটি তলোয়ার না খুলে, একটি বন্দুক না ছুড়ে, শুধু ঈমান, ঐক্য আর নিয়মানুবর্তিতার জোরে পাকিস্তানের মতো একটি বিশাল রাজ্যের সৃষ্টি-এর নজীর কোনো দেশের, কোনো জাতির, কোনো যুগের ইতিহাসে নাই।

কায়েদে আজম মুহম্মদ আলী জিন্নাহ ইতিহাসের বে-নজীর নেতা। তাঁর আদর্শে তাঁর প্রতিষ্ঠিত পাকিস্তানও দুনিয়ার ইতিহাসে সর্ববিষয়ে বে-নজীর হয়ে উঠুক, এ কামনা করি।

মাহে নও, ডিসেম্বর: ১৯৫১

০৭. জিন্নাহ-চরিত্রের বৈশিষ্ট্য / মোহাম্মদ ওয়াজেদ আলী
__________
বৃদ্ধ বয়সে আজন্ম পােষিত আদর্শকে এভাবে পরিত্যাগ করতে চির নবীনের অভিসারী একটা প্রবল মনের প্রয়ােজন হয়। তা তার ছিল। কিন্তু তাঁর অপূর্বত্ব এইটুকুতেই সীমাবদ্ধ নয়। মােহাম্মদ আলী জিন্নাহ তরুণ বয়স থেকেই দেশ, জাতি ও সমাজের মুক্তির জন্যে সাধনা করেছিলেন। সারাটি জীবন এই সাধনায় কেটে গেলাে, এলাে বার্ধক্য। জরা এসে জাপটে ধরলাে তাঁর দেহকে। কিন্তু তিনি যখন অন্তরে উপলব্ধি করলেন যে, তাঁর জীবনের মহাব্রত এক নতুন কঠোরতায় সমাবৃত হয়ে তখনাে তার জন্যে অপেক্ষা করছে, তিনি দেহের জরাকে শিখায়িত মন দিয়ে জয় করেন। দুর্ধর্ষ সংগ্রামে

MIR

25 Dec, 04:11


ক্রিসমাস ডে নিয়ে সৈয়দ মুজতবা আলীর কনফিউশান
____
২৫ তারিখ কিভাবে ক্রিসমাস হল এই ব্যাপারে পরিস্কার ধারনা না থাকলে ভুল বোঝার সম্ভাবনা শতভাগ। এমনকি সৈয়দ মুজতবা আলীর মত মানুষও কনফিউজড ছিলেন। তিনি দেশ-বিদেশে বইতে ২৫ ডিসেম্বর নিয়ে খোঁচা দিয়েছেন ইসলাম এবং খৃষ্টিয়ানিটি দুইটা ধর্মকেই। কারন জিসাস ক্রাইস্ট আ. এর জন্মের ব্যাপারে বাইবেলের গসপেল অব লুকের বর্ণনা—
❝ জিসাস জন্মের সময় একদল মেষ পালক তাদের ভেড়ার পাল নিয়ে বেথেলহামের পাশেই ছিল। একজন দেবদূত তাদের কাছে গিয়ে জিসাসের জন্মের সুখবর দেন। ❞ [২:৯:৮]

কুরআনের সূরা মরিয়মের ২২-২৭ নম্বর আয়াত থেকে ঈসা মসিহ আ. এর জন্ম সম্পর্কে বলা হয়েছে, মারিয়াম আ. মরুভূমিতে গিয়ে একটি খেজুর গাছের নিচে ছায়ায় ঈসা আ: জন্ম দেন।

মুজতবা আলীর যুক্তি হল ডিসেম্বরে ফিলিস্তিনে বরফ পরা ঠান্ডায় সব ঘাস ধূসর হয়ে তুষারের নিচে চাপা পরে। এই শীতে কোন রাখাল ভেড়া নিয়ে মাঠে থাকে না। কিংবা এই ভয়াবহ শীতে কিভাবে একটা শিশুর জন্ম হয় খেজুর গাছের তলায়? বইতে তিনি নিজেই নিজের সাথে কথা বলছেন এই ভাবে—

❝...মা মেরি ও যিশুর যে গল্প বললে সে হল বাইবেলি কিচ্ছা। মুসলমান-শাস্ত্রে আছে, বিবি মরিয়ম খেজুরগাছের তলায় ইসা-মসিহকে প্রসব করেছিলেন।

বিবেকবুদ্ধি- সে কী কথা! ডিসেম্বরের শীতে মা মেরি গাছ তলায়?

বেয়াড়া মন- কেন বাপু, তোমার বাইবেলেই তো রয়েছে, প্রভু জন্মগ্রহন করলে পর দেবদূতরা সেই সুসামাচার মাঠের মাঝখানে গিয়ে রাখাল ছেলেদের জানালেন। গয়লার ছেলে যদি শীতের রাতে মাঠে কাটাতে পারে, তবে ছুতারের বউই পারবে না কেন। শুনি? তার ওপর গর্ভযন্ত্রণা-সর্বাঙ্গে তখন গলগল করে ঘাম ছোটে!!

ধর্ম নিয়ে তর্কাতর্কি আমি আদপেই পছন্দ করিনে। দু-জনকে দুই ধমক দিয়ে চোখ বন্ধ করলুম ❞ [পৃ: ৪৯]

অস্বীকার করার কোন সুযোগ নেই মুজতবা আলীর যুক্তি অকাট্য। বরফ পরা শীতে এ দুটোই অসম্ভব। তবে মজার ব্যাপার হল বাইবেল বা কুরআনে জিসাস ক্রাইস্টের জন্ম কি মাস বা কোন তারিখে হয়েছে সে ব্যাপারে কোন উল্লেখ নেই। তাহলে কিভাবে ২৫ ডিসেম্বর ক্রিসমাস ডে শুরু হল?


খৃষ্ঠধর্মের ইতিহাসে অনান্য ধর্মের মত বেশ কিছু বড় বড় মোড় আছে। ঈসা আ. এর পরে সেন্ট পল খৃষ্ঠধর্মের সবচেয়ে প্রভাবশালি ব্যক্তি। সেন্ট পল খৃষ্ঠধর্মে বেশ কিছু সংস্কার আনেন। খৃষ্ঠধর্মের একাধিক ধারা চালু হয়। যেমন জেমস ধারা, বারনাবাস ধারা, পলিন ধারা ইত্যাদি। সেন্ট পলের মূল কথা ছিল, জিসাস এসেছেন পূর্বের সব আইন বন্ধ করতে।

তখনো ট্রিনিটির ধারনা ছিল না খৃষ্ঠধর্মে। পলিন খৃষ্টিয়ানিটিতে ট্রিনিটি ধরনাটি দ্বিতীয় শতাব্দীর শেষের দশকে চালু হয়। সেন্ট আগস্টিন এবং সেন্ট টেরটোলিয়ান ট্রিনিটি ধারনা প্রতিষ্ঠার পেছনে সবচেয়ে প্রভাবশালি ব্যক্তিত্ব হিসেবে ধরা হয়। ক্রমেই পলিন খৃষ্টিয়ানিটি সবচেয়ে প্রভাবশালী ধারায় পরিণত হয়। সম্রাট কন্টাসটাইন রোমান সাম্রাজ্যের সংহতি রক্ষার্থে খৃষ্ঠধর্ম গ্রহণ করেন। কন্টাসটাইন ৩৩০ সালে তুরস্কের নাইসির শহরে খৃষ্ঠধর্মের সব ধারার ধর্ম গুরুদের নিয়ে একটি সম্মেলনের আয়োজন করেন এবং তাদের দ্বায়িত্ব দেন খৃষ্টিয়ানিটির একটি একক ধারা নির্ধারন করতে। এই সম্মেলন ঐতিহাসিক নাইসির সম্মেলন নামে পরিচিত।

এই সম্মেলনের বেশিরভাগ ধর্মগুরু পলিন খৃষ্টিয়ানিটিকে খৃষ্ঠধর্মের বিশুদ্ধতম রুপ হিসেবে মত দেন। তবে সবাই নয়। সেন্ট আরিয়াস এর প্রবল বিরোধিতা করেন। আরিয়াসের বিরোধিতা প্রবল মতের সামনে টেকে না। সম্মেলন সংখ্যা গরিষ্ঠায় পলিন খৃষ্টিয়ানিটিকে খৃষ্ঠধর্মের একক রুপ হিসেবে গ্রহন করে।

সম্রাট কন্টাসটাইন অন্য সব ধারার যাবতীয় লিটারেচারকে নষ্ট করার আদেশ দেন। আরিয়াস নাইসির থেকে পালিয়ে সিরিয়ার দিকে চলে যান। তাকে আর পাওয়া যায়নি। এবং ট্রিনিটি খৃষ্ঠ ধর্ম বিশ্বাসের একটি মৌলিক উপাদানে পরিনিত হয়।

[ নোট: আরিয়াস ট্রিনিটি মতবাদে বিশ্বাসি ছিলেন না। ৭ম শতাব্দীতে ব্রাজেন্টাইন ইতিহাসবেত্তা এবং থিয়োলজিয়ান সাপতায়াজ ভি “ইসলামকে” অভিহিত করেছিলেন “আরিয়াস খৃষ্ঠিনিয়াটি” এর পরবর্তি রুপ হিসেবে- Continuation of Arious Christianity ]।


ইউরোপের প্যাগানদের খৃষ্টধর্মের অধীনে একত্রিত করতে কন্টাসটাইনের একটা উৎসবের দরকার ছিলো।

প্রাচীন কালে পুরো ইউরোপে প্যাগানদের মধ্যে ডিসেম্বরের শেষের দিকে বেশ কয়েকটা উৎসব প্রচলিত ছিল। উত্তর গোলার্ধে ২২ ডিসেম্বর সবচেয়ে ছোট দিন এবং বড় রাত। তারা ভাবতো, সূর্য দেবতার অসুখ হয়েছে। তারা পুজা করতো যেন সূর্য আবার সুস্থ হয় উঠে তারাতারি। সবুজ গাছের ডাল ছিল সেই উৎসবের একটা প্রধান অনুষঙ্গ। সবুজ ডাল মনে করিয়ে দিতো, আবার সূর্য আলো দেবে, তুষার কেটে সুবুজে ভরে যাবে। [ক্রিসমার্স ট্রি এই উৎসব থেকেই নেওয়া।]

MIR

25 Dec, 04:11


স্ক্যান্ডেনেভিয়ান দেশগুলোতে এই সময়ে শীতকালে খাবার জন্য প্রচুর প্রাণী জবেহ করে মাংস সংরক্ষণ করা হতো। বছরের এই সময়ে তারা তাজা মাংস পেতো। এই সময়েই ওয়াইন এবং বিয়ার ফ্রাগমেন্ট হয়ে খাবার উপযোগী হতো। জার্মান প্যাগানরা তাদের প্রাচীন দেবতা ওডেনের উপাসনা করে উৎসব করতো এই সময়েই।

তবে এ সময়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উৎসব ছিল রোমে। ১৭ থেকে ২৫ ডিসেম্বর, এক সপ্তাহব্যাপী এই উৎসবের নাম ছিল সাটুরনালিয়া[Saturnalia]। এটা ছিল রোমের সবচেয়ে বড় উৎসব। প্যাগান রোমানদের কৃষি দেবতা স্যাটানের সম্মানে ছিল এই উৎসব।

সম্রাট কন্টাসটাইনের থিংক ট্যাংক সবদিক বিবেচনা করে সাটুরনালিয়ার শেষ দিনকে জিসাসের জন্মদিন হিসেবে ঘোষণা করে। প্রথমে চার্চ একে স্বীকৃতি দেয়নি। কয়েক বছর পরে পোপ জুলিয়াস ২৫ ডিসেম্বরকে জিসাসের জন্ম তারিখ বলে ঘোষণা করে।

ট্রিনিটি অর্থ ঈশ্বরের তিনটি রুপ। পিতা, পুত্র এবং পবিত্র আত্না। তাদের ন্যারেটিভ হল পবিত্র আত্নার স্পর্শে ডিসেম্বরের ২৫ তারিখে জিসাস ক্রাইস্ট আ. কুমারি মা মেরির গর্ভে জন্ম গ্রহন করেন। জিসাস হলেন ঈশ্বরের পুত্র এবং তিনিই হলেন ঈশ্বর।

এই তথ্যগুলো গোপন কিছু না। সব তথ্য অন্তজালে আছে। ক্যাথলিক চার্চের সবচেয়ে বড় ধর্মগুরু, ঈশ্বরের ছায়া (shadow of God) পোপ ষোড়শ বেনেডিক্ট তার 'Jesus of Nazareth' বইতে উল্লেখ করেছেন, ২৫ ডিসেম্বর যে জিসাস জন্ম নিয়েছেন এ ব্যাপারে কোন প্রমান নেই।

তাহলে প্রশ্ন তারপরেও কেন খৃষ্টানরা এই দিন উদযাপন করে!? উত্তর হল, ইসলাম ধর্মে বিদাত বলে একটা তত্ত্ব আছে। সহজ করে বললে এই তত্ত্ব অনুসারে মুসলমানরা কুরআন বা হাদিসে উল্লেখ নেই এমন কোন আচারকে কখনো, কোনভাবেই ধর্মীয় আচার হিসেবে পালন করতে পারবে না। এটা ইসলামে বেশ কঠিন ভাবে মানা হয়। তবে খৃষ্টান ধর্মে এমন কিছু নেই। যদি কোন একটা অনুষ্ঠান শুরু হয়ে যায় এবং সেটা ভাল হয় তাহলে খৃষ্টান ধর্মতত্ত্ব অনুসারে সেই উৎসব পালনে কোন সমস্যা নেই। তাই তারা ক্রিসমাস ডে বা বড়দিন পালন করে।

প্রশ্ন হল তাই বলে সব খৃষ্টানই এটা মেনে নিল? উত্তর হল না। ইংল্যান্ড এবং আমেরিকার পিউরিটান খৃষ্টানেরা প্রবলভাবে ক্রিসমাসের বিরোধী ছিল। আমেরিকার ম্যাসাচুসেটস শহর ১৬২৬ সালে ক্রিসমাস পালন নিষিদ্ধ করেছিলো।

আরেকটা বিষয় উল্লেখ্য শুধুমাত্র ওয়েস্টার্ন খৃষ্টানেরা ২৫ ডিসেম্বর ক্রিসমাস ডে পালন করে ইস্টার্ন খৃষ্টানেরা (অর্থোডক্স, আরমেনিয়ান, ওরিয়েন্টাল এবং কাপটিক খ্রিষ্টানেরা) পালন করে জানুয়ারি ৬ এবং ৭ ।

MIR

17 Dec, 18:08


১৯৭১ সালে বাংলাদেশের জনসংখ্যার ঘনত্ব ছিল প্রতি বর্গকিলোমিটারে ৪৫১ জন। ২০২৩ সালে গাজার জনসংখ্যার ঘনত্ব ছিল প্রতি বর্গকিলোমিটার ৬,১০০ জন।

গাজার আয়তন প্রায় ৩৬৫ বর্গকিলোমিটার। বাংলাদেশের আয়তন ১, ৪৭, ৫৭০ বর্গকিলোমিটার।

গাজায় গত ৪০০ দিনের যুদ্ধে ১ লক্ষ ৫৭ হাজার ভবন ধ্বংস হয় এবং ৫০ হাজার মানুষ শহীদ হয়। বাংলাদেশে ২৬৬ দিনের যুদ্ধে ৩০ লক্ষ মানুষ শহীদ হয়েছে।

৫০ হাজার শহীদ হতে বাংলাদেশের চেয়ে ১৩.৫ গুন বেশি ঘণ বসতিপূর্ণ, ৩২৭ গুন ছোট গাজায় অত্যাধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত দখলদার বাহিনী কি পরিমান বোমা বর্ষন হয়েছে তা আমরা প্রত্যক্ষ করছি।

তাহলে একবার ভাবুন গাজার চেয়ে ৩২৭ গুন বড় এবং জনবসতিহীন এলাকায় মান্ধাতার আমলের বোমা কি পরিমান মারা লাগছে ২৬৬ দিনে ৩০ লক্ষ মারতে! পূর্ব বাংলার কত কোটি কোটি ভবন ধ্বংস হয়েছে কে জানে....

MIR

17 Dec, 10:42


একাত্তরের যুদ্ধ কি ইসলামের বিরুদ্ধে ছিলো?
______
১৯৭১ সালে মুক্তিযোদ্ধাদের দল ক্ষমতায় বসেই—

এক— দেশের নাম ইসলামি প্রজাতন্ত্র থেকে গনপ্রজাতন্ত্রী করা হয়।

দুই— সংবিধানের চার মূলনীতির দুইটা করা হয় সমাজতন্ত্র এবং ধর্মনিরপেক্ষতা।

তিন— ইসলামি রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হয়।

চার— রেডিও, টেলিভিশনে সালাম, কুরআন তেলওয়াত এবং আযান দেওয়া বন্ধ করা হয়।

পাঁচ— ইসলামি একাডেমি বন্ধ করে দেওয়া হয়।

ছয়— ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোগো থেলে কুরআনের প্রতীক এবং রব্বি জিদনি ইলমা লেখা মুছে ফেলা হয়।

সাত— রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের লোগো থেকে কুরআনের আয়াত, ❝ প্রত্যেক জ্ঞানীর উপরে আছেন একজন মহাজ্ঞানী ❞ মুছে ফেলা হয়।

আট— জাহাঙ্গীরনগর মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মুসলিম শব্দটা কেটে দেওয়া হয়।

নয়— ঢাবিতে উগ্র হিন্দুত্ববাদী মুসলমান বিদ্বেষী সূর্যসেনের নামে হল নামকরণ করা হয়।

দশ— আল্লামা ইকবাল এবং কায়েদের আজম মুহাম্মদ আলী জিন্নাহর নামের হল পরিবর্তন করা হয়।

এগারো— এমনকি কবি 'কাজী নজরুল ইসলাম কলেজ' নাম থেকে ইসলাম শব্দ কেটে দেওয়া হয়, নতুন নাম করা হয় 'কাজী নজরুল কলেজ'।

বারো— ১৯৭০ সালের নির্বাচনে জেতার পর আওয়ামী লীগ প্রনীত সংবিধানের খসড়াতে প্রস্তাবিত রাষ্ট্রীয় মূলনীতি

১। কুরআন-সুন্নাহ বিরোধী আইন পাশ করা যাবে না।
২। কুরআন ও ইসলামিয়াত শিক্ষা দেয়ার ব্যবস্থা থাকবে।
৩। মুসলমানদের মধ্যে ইসলামি নৈতিকতা উন্নয়নের পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

৭২ সালে ক্ষমতায় বসে তারা চোখ উল্টে ফেলে। এই মূলনীতি বেমালুম ভুলে যায়।

তেরো- যুদ্ধে শুধু ভারত না মুসলমানদের চিহ্নিত শত্রু ইজরাইল থেকে অর্থ, অস্ত্র এবং প্রশিক্ষণ নেয়।
___
যুদ্ধের আগে দেশের সব ইসলামি দল বলেছিলো, মুজিব হিন্দুস্তানের কাছ থেকে টাকা নিয়ে ইসলাম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। একাধিক বার মুজিব কড়াভাবে এর জবাব দিয়ে দিয়ে বলেন,

❝ কোরআন ও সুন্নাহের নির্দেশিত ইসলামী নীতির পরিপন্থী কোনো আইনই এ দেশে পাস হতে বা চাপিয়ে দেওয়া যেতে পারে না। সর্বস্তরে ধর্মীয় শিক্ষা সম্প্রসারণের জন্য পর্যাপ্ত বিধিব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। ❞
[শেখ মুজিবুর রহমান, মুজিবরের রচনা সংগ্রহ, বাংলাদেশ কালচারাল ফোরাম, ঢাকা, ২০১০, ১৬২]

তবে ক্ষমতায় বসে মুজিব তার আসল রঙ দেখিয়ে দেয়।

MIR

17 Dec, 01:36


মোদির স্ট্যাটাসের দলিল যেটা মুক্তিযুদ্ধু জাদুঘরে সংরক্ষিত আছে।
মহাবীর বাঙালির বিজয়ের দলিল কোথায়?
#vijoydiwas

MIR

16 Dec, 11:01


বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধ: ভারতের প্রাপ্তি
_____

মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের হিসাবনুসারে একাত্তরের যুদ্ধে ১ হাজার ৯৮৪ জন ভারতীয় মারা যায়। এর মধ্যে রয়েছেন ভারতীয় সেনাবাহিনীর ১ হাজার ৭৬৯, নৌবাহিনীর ২০৪ এবং বিমানবাহিনীর ১১ জন। এই সংখ্যা ধরেই তাদেরকে ৫ লক্ষ রুপি করে সম্মাননা দেয় সরকার।

গবেষক এ এস এম সামছুল আরেফিন তাঁর ‘মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে ব্যক্তির অবস্থান’ বইয়ে উল্লেখ করেন ভারত সেই সময় বিভিন্ন রাষ্ট্র এবং আন্তর্জাতিক সংস্থা থেকে ১৬ কোটি ৮১ লক্ষ ৩ হাজার ৭শত ২৭ ডলার সাহায্য পায়।

এছাড়া বিজয়ের পর ভারত পূর্ব পাকিস্তানের শরনার্থী গ্রহনসহ অন্যান্য সকল প্রকার খরচের জন্য পাকিস্তান থেকে ৫৪৩ কোটি ৫১ লাখ ১৪ হাজার ২৯৪ রুপি ক্ষতিপূরণ আদায় করে।

স্বাধীনতার পর ভারতীয় বাহিনী ১৯৭২ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত বাংলাদেশে অবস্থান করে। এই সময়ে কি পরিমাণ লুটপাট তাঁরা করে তা বর্ণনাতীত। তাদের লুটপাট মুক্তিযোদ্ধা ও সাধারণ মানুষদেরকে হতবাক করে দেয়। ২১শে জানুয়ারি ১৯৭২ সালে ব্রিটেনের বিখ্যাত গার্ডিয়ান পত্রিকায় সাংবাদিক মার্টিন ঊলাকট (Martin Woollacott) Indians ‘loot whole factory ‘শিরোনামে লেখায় লিখেন ;

❝ Systematic Indian army looting of mills, factories and offices in Khulna area has angered and enraged Bangladesh civil officials here. The looting took place in the first few days after the Indian troops arrived in the city on December 17 ❞
(Martin Woollacott, Indians ‘loot whole factory, The Guardian, Jan 22, 1972).

সে সময় খুলনার ডিসি ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা ও পরবর্তীতে বাংলাদেশ সরকারের ক্যাবিনেট সচিব ডক্টর কামাল সিদ্দিকী। তিনি সে সময় ভারতীয় বাহিনীর এই লুটপাটের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীকে চিঠি লিখে বলেন; কেবল খুলনা থেকে প্রায় ৩০০ মিলিয়ন টাকার পরিমাণ লুটপাট করে ভারতীয় সেনাবাহিনী। কামাল সিদ্দিকী পরবর্তীতে লন্ডন ইউনিভার্সিটিতে করা তার পিএইচডি থিসিসে বাংলাদেশের দরিদ্রতার কারণ হিসেবে বিষয়টি উল্লেখ করেছেন।

ভারতীয় সৈন্যরা পাকিস্তানীদের ফেলে যাওয়া সকল অস্ত্র এবং ৮৭ টি ট্যাংক নিয়ে যায় যার মূল্য ৭৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। কামাল সিদ্দিকি আরো উল্লেখ করেন ভারতীয় সৈন্যদের লুটপাটের মধ্যে অস্ত্র ছাড়াও ছিল মজুদকৃত খাদ্য শস্য, কাঁচা পাট, সুতা, গাড়ি, জাহাজ,শিল্প প্রতিষ্ঠানের মেশিন ও যন্ত্রাংশ এবং অন্যান্য খাদ্য দ্রব্য। কামাল সিদ্দিকীর মতে সব মিলিয়ে কম করে ধরলেও এই লুটপাটের পরিমাণ কেবল খুলনা জেলাতে ছিল তৎকালীন হিসেবে ২.২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। সারা বাংলাদেশের ১৯টি জেলা থেকে লুটাপাটের পরিমাণ কেমন হতে পারে সেটা অনুমান অসম্ভব নয়।

এই লুটপাটের বাহিরেও ছিল চোরাচালান ও কালোবাজারের মাধ্যমে বাংলাদেশের সম্পদের পাচার। কামাল সিদ্দিকী তার থিসিসে দেখিয়েছেন কিভাবে বৈদেশিক সাহায্য, আমদানি-রপ্তানিতে, টাকার অবমূল্যায়ন করে ভারত বাংলাদেশকে লুট করে। লুটপাট ভারতীয় সেনাবাহিনী করলেও চোরাচালান ও কালোবাজারিতে যুক্ত ছিল ভারতীয় ব্যবসায়ী শ্রেণী এবং তাঁরা বাংলাদেশেরও কিছু দালাল জুটিয়ে নিয়েছিল।

বাংলাদেশে ভারতীয় আরদালীদের লুন্ঠনের ব্যাপারে আজিজুল করিম ‘হোয়াই সাচ এন্টি-ইন্ডিয়ান ফিলিংস এমং বাংলাদেশী?’ শিরোনামে এক নিবন্ধে ১৯৭৪ সালের ডিসেম্বরে প্রকাশিত ভারতীয় মাসিক ‘অনিক’-এর রিপোর্টের উদ্ধৃতি দিয়ে লিখেছেন, ❝ ভারতীয় সৈন্যদের লুণ্ঠিত মালামালের মূল্য ছিল প্রায় ১শ’ কোটি মার্কিন ডলার। ❞

জয়নাল আবেদীনের ‘র এন্ড বাংলাদেশ’ শিরোনামে লেখা একটি বইয়েও বাংলাদেশে ভারতীয় আরদালীদের লুন্ঠনের বর্ণনা দেয়া হয়েছে। বইটিতে তিনি লিখেছেন—

❝পাকিস্তানি সৈন্যদের আত্মসমর্পণের পর ভারতীয় সৈন্যদের ব্যাপক লুটতরাজ দেখতে পেয়ে ভারতের প্রকৃত চেহারা আমার কাছে নগ্নভাবে ফুটে উঠে। ভারতীয় সৈন্যরা যা কিছু দেখতে পেতো তার উপর হুমড়ি খেয়ে পড়তো এবং সেগুলো ভারতে বহন করে নিয়ে যেতো। লুটতরাজ সহজতর করার জন্য তারা আমাদের শহর, শিল্প স্থাপনা, বন্দর, সেনানিবাস, বাণিজ্যিক কেন্দ্র এমনকি আবাসিক এলাকায় কারফিউ জারি করে। তারা সিলিং ফ্যান থেকে শুরু করে সামরিক সাজসরঞ্জাম, তৈজষপত্র ও পানির ট্যাপ পর্যন্ত উঠিয়ে নিয়ে যায়। লুণ্ঠিত মালামাল ভারতে পরিবহনের জন্য হাজার হাজার সামরিক যান ব্যবহার করা হয়।❞

সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় তাঁর পুর্ব পশ্চিম উপন্যাসে লিখলেন,

❝ ঢাকায় এতসব বিদেশী জিনিস পাওয়া যায়, এসব তো আগে দেখেনি ভারতীয়রা । রেফ্রিজারেটর, টিভি, টু-ইন-ওয়ান, কার্পেট, টিনের খাবার-এইসব ভর্তি হতে লাগলো ভারতীয় সৈন্যদের ট্রাকে। ❞

৯ম সেক্টর কমান্ডার প্রধান মেজর এম এ জলিল অরক্ষিত স্বাধীনতাই পরাধীনতা বইতে উল্লেখ করেন ভারতীয় বাহিনী খুলনা শহর থেকে সবকিছু লুট করে নিয়ে যায়। যশোহর সেনানিবাসের প্রত্যেকটি অফিস এবং কোয়ার্টার তন্ন তন্ন করে লুট করেছে। বাথরুমের মিরর এবং অন্যান্য ফিটিংসগুলো পর্যন্ত খুলে নিয়ে যায়৷ ভারতীয় বাহিনীর এই লুটপাটে

MIR

16 Dec, 11:01


বাধা দেওয়ায় মেজর জলিলকে আটক করে জেলে ভরে আওয়ামী লীগ সরকার।

ভারত ও ভারতীয়দের এসমস্ত কর্মকাণ্ডের কারণে অল্প সময়ের মধ্যেই বাংলাদেশকে দেখতে হয় একটি ভয়ানক দুর্ভিক্ষ যেখানে ৫-১০ লক্ষ মানুষ নিহত হয়।

MIR

15 Dec, 14:56


ইহুদি জেনারেল জে. আর জ্যাকব: বাংলাদেশের 'সামরিক জনক'
__________
যদি প্রশ্ন করা হয় ৭১ সালের পাকিস্তান বনাম ভারত এবং বাঙালি মিলিশিয়া সরাসরি যুদ্ধ তথা মুক্তিযুদ্ধের রণাঙ্গনের শ্রেষ্ঠতম বীর কে? উত্তর ইহুদি জেনারেল, ইজরাইলের জাতীয় বীর জেনারেল জ্যাকব ফারজ রাফায়েল।

জাতিসংঘ এবং চীনের প্রবল চাপের মুখে ভারতীয় সেনাবাহিনীর উর্দ্ধতন কর্মকর্তারা পাকিস্তানের বিরুদ্ধে এই যুদ্ধে অংশগ্রহণের বিরোধী ছিল। সিনিয়রদের কমান্ডের বাইরে গিয়ে এবং সব ধরনের চাপের উর্দ্ধে উঠে জেনারেল জ্যাকব সশস্ত্র যুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশকে স্বাধীন করে দেন। ভারতের প্রতিরক্ষা ওয়েবসাইট জ্যাকবের এই সফলতা উল্লেখ করেছে এই বলে যে, একাত্তরের সম্মুখ যুদ্ধের একক কৃতিত্ব জেনারেল জ্যাকবের, জগজিৎ সিং আরোরো বা স্যাম মানকেশের তেমন কোন ভূমিকা ছিল না।

দুঃসাহসিক অভিযান পরিচালনা করে জেনারেল জ্যাকবের সেনারা পাকিস্তানিদের ঢাকা থেকে হটাতে সফল হয় এবং দখলের পর সে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সকল যোগাযোগ মাধ্যম ধ্বংস করে দেয়। এছাড়া জেনারেল নিয়াজিকে ভুল তথ্য দিয়ে, ব্লাকমেইল করে দ্রুততম সময়ে আত্নসমর্পণে বাধ্য করে। বাংলাদেশ সরকার ২০১২ সালে জেনারেল জেআর জ্যাকবকে বিশেষ সম্মাননা প্রদান করে।

ভারতীয় সাংবাদিক কুলদীপ নায়ার তার বই ‘Beyond the Lines'-এর ২১৮ নম্বর পাতায় উল্লেখ করেছেন, একাত্তরের ১৫ ডিসেম্বরই পাকিস্তান সেনাবাহিনী ভারতীয় বাহিনীর কাছে অস্ত্রসমর্পণের জন্য প্রস্তুত ছিল এবং সেভাবে প্রক্রিয়া শুরু হয়। কিন্তু তারপরেও আত্নসমর্পণ হয় ২৪ ঘণ্টা পরে এবং নজিরবিহীনভাবে খোলা মাঠে। কেন এই বিলম্ব? এ প্রশ্নের জবাবে জেনারেল জ্যাকব নায়ারকে বলেছিলো,

❝ New Delhi wanted to humiliate Islamabad by showing that MUSLIM COUNTRY had laid down arms before a JEW ❞

জেনারেল জ্যাকবকে সম্মাননা দিয়ে ইজরাইলের সরকার জেনারেল জ্যাকবের সামরিক পোশাকটি বিশেষ মর্যাদায় ইজরাইলের জাতীয় সামরিক জাদুঘর 'Latrum'-এ সংরক্ষণ করে রেখেছে।

প্রশ্ন হল একজন ভারতীয় জেনারেলের পোশাক ইজরাইলের জাদুঘরে কেন? কারন সব ইহুদি বাই ডিফল্ট ইজরাইলের নাগরিক। ইজরাইল পৃথিবীর বৃহত্তম এবং সবচেয়ে শক্তিশালী মুসলমান দেশ ভাঙ্গায় অবিশ্বাস্য সফল হওয়ার জন্য জ্যাকবকে এই সম্মাননা জানায় ইজরাইল।

ইজরাইল সরকার তাকে কয়েকবার সম্মানিত করে। তার মৃত্যুর পরে, ২০১৯ সালের এপ্রিল মাসে ইজরাইল দখলকৃত পূর্ব জেরুজালেমের স্কোপাস পাহাড়ের অ্যামিউনিশন হিলে অবস্থিত ইহুদিদের জাতীয় বীরদের সম্মানে বানানো ওয়াল অব অনারে জ্যাকবের নাম খোচিত করে। এই পাহাড়ে মাত্র ৩৬০ জন জাতীয় বীরের নাম খোদাই করা আছে।

বিস্তারিত:

১। Kuldeep Nayar, Beyond The Lines: An Autobiography, ‎Roli Books

২। The Economic Times, Israel honours 1971 war hero Lt Gen JFR Jacob with a plaque on Ammunition Hill Wall of Honour, Apr 30, 2019

৩। India Today, Who was Lt Gen JFR Jacob? Here's all you need to know about the 1971 Indo-Pak war hero, Jan 13, 2016

৪। The Hindu, Israel to honour late Lt. Gen. JFR Jacob, April 20, 2019

MIR

15 Dec, 04:46


শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস: পাকিস্তানপন্থী ঢাবি শিক্ষিকদের হত্যাকারী কে?
_____
❝.... এ সময়ে রোজই রাত্রে গোলাগুলির শব্দ শুনি। কিছু কিছু মুক্তি বাহিনীর সদস্য ট্রেনিং নিয়ে ঢাকায় এসে গেছে। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নিউমার্কেট যেতে মোড়ে যে পেট্রোল পাম্পটা ছিল ওখানে আমাদের একটা সংবাদ আদান-প্রদানের কেন্দ্র ছিল। একদিন একটা ছেলে বললো - "মুনীর স্যারকে বলবেন - উনি যদি এখনও চলে না যান, ওঁকে আমরা মুখ বেঁধে নিয়ে যাবো।" মুনীরকে বল্লাম। হেসে বললো - আপনি যাননি কেন? ❞

— নীলিমা ইব্রাহিম / বিন্দু-বিসর্গ ॥ [ ইতি খান - ফেব্রুয়ারি, ১৯৯১ । পৃ: ১৩৫ ]

১৪ ডিসেম্বরের মর্মান্তিক রাতে মুনীর চৌধুরী নিহত হোন। মুনীর চৌধুরীর ভাই কাইয়ুম চৌধুরি পাকিস্তানে পালিয়ে যান।
____

১২ ডিসেম্বরের মধ্যেই যুদ্ধের ফায়সালা হয়ে যায়। পাকিস্তান পরাজয় মেনে নেয়৷ পাকিস্তান সেনাবাহিনী ক্যান্টিনমেন্টের মধ্যে ঢুকে পরে। শুরু হয় ভারত-পাকিস্তান দুই পক্ষের জেনারেলদের মধ্যে আত্নসমর্পণের শর্ত নিয়ে দর কষাকষি। ঢাকা ভারতীয় সেনাবাহিনী এবং ছাত্রলীগের বিশেষ এলিট ফোর্স মুজিব বাহীনির অধীনে। পাকিস্তানপন্থীরা পালাতে ব্যস্ত।

ঠিক সেই সময়ে গত নয় মাসে মুক্তিযোদ্ধাদের দেশের শত্রু, ভারতের এজেন্ট বলে পেপার-পত্রিকায় লেখা-লিখি, রেডিওতে নিয়মিত বক্তব্য দেওয়া এবং পাকিস্তান সরকারের অনুগত থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চালু রাখা অধ্যাপকদের নির্মম ভাবে হত্যা করা হয়।

মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিকাশ কেন্দ্র প্রকাশিত 'একাত্তরের ঘাতক ও দালালেরা কে কোথায়?' বইতে উল্লেখ আছে অধ্যাপক মুনীর চৌধুরী নেতৃত্বে ঢাবির ৫৫ জন অধ্যাপক, বুদ্ধিজীবী, কবি একটি বিবৃতিতে পাকিস্তানের ঐক্যের পক্ষে তাদের দৃঢ় অবস্থান ব্যক্ত করেন। এদের বেশিরভাগই ১৪ ডিসেম্বর মারা যায়।

এই বুদ্ধিজীবীদের সবাই ছিল কঠোর আওয়ামী বিরোধী। ১৪ ডিসেম্বরে নিহত শহীদুল্লাহ কায়সারের যুদ্ধের আগে আওয়ামী লীগকে সমালোচনা করে লেখা একটা থেকে নমুনা পাওয়া যায় তারা কতটা আওয়ামী বিরোধী ছিলেন—

❝ আওয়ামী লীগ প্রগতির পক্ষে থাকছে না, থাকবে না। আওয়ামী লীগ থাকবে প্রতিক্রিয়ার পক্ষে। সেই প্রতিক্রিয়ার পক্ষে থাকতে গেলে জনপ্রিয়তা হারাতে হবে, কাজেই এমন শ্লোগান নাও যাতে সেই প্রতিক্রিয়াশীল চেহারাটা ঢাকা দেওয়া যায়। স্বায়ত্ত্বশাসন, জয় বাংলা হল এ জাতীয় শ্লোগান। এসব শ্লোগান গালভরা শ্লোগান, লোক মাতানো শ্লোগান। অথচ এর দ্বারা জনগণের কাছে কোন নির্দিষ্ট ওয়াদা বা প্রতিশ্রুতিও দিতে হচ্ছে না। কাজেই বিপুল ভোটাধিক্যে জয়লাভ করে তারপর বাঙ্গালী পুলিশ দিয়ে যখন বাঙ্গালী শ্রমিক বা কৃষকদের ঠ্যাঙ্গানো হবে তখন তা জয় বাংলার নামেই করা যাবে, যখন বাঙ্গালী মুনাফাখোর-কালোবাজারীকে পৃষ্ঠপোষকতা করা হবে তখন তা জয় বাংলার নামেই করা হবে। কেননা জয় বাংলা কিম্বা ছয় দফার কোথাও এসব করতে মানা নেই। জয় বাংলা কিম্বা ছয় দফার কোথাও জনগণের কথা নেই, রুটি-রুজি কিম্বা জমির কথা নেই। কাজেই জয় বাংলার নামে যা খুশি করা যাবে। ❞

—শহীদুল্লাহ কায়সার। দৈনিক সংবাদ, ০৫ ডিসেম্বর, ১৯৭০
____
কোলকাতা সরকারের ১৮ দফা নির্দেশনামার ১ম দফা ছিলো কাজে যোগ না দেওয়া, অসহযোগ। যারা পাকিস্তান বিরোধী ছিলো তারা যুদ্ধের শুরুতেই এই নির্দেশমত ঢাবি থেকে পালিয়ে যায়, যুদ্ধে যোগ দেয়। যারা ১৪ ডিসেম্বর নিহত হোন তারা এই প্রথম দফাই অমান্য করে।

যেহেতু বিজয়ীরা নিজেদের ইচ্ছামত ইতিহাস লেখে। বাঙালির বুদ্ধিজীবীরাও লিখেছে এই কাজ পাকিস্তান সেনাবাহিনীর এবং সমর্থকেরা করেছে। তবে এই বায়ানটা যে বিদঘুটে তা একটু চিন্তা করলেই বোঝা যায়।
___
গত ৫০ বছরে বুদ্ধিজীবীদের হত্যাকাণ্ড নিয়ে কোন রকম তদন্ত হয়নি। চলচিত্রকার জহির রায়হান নিজ উদ্যোগে এই হত্যাকাণ্ডের তদন্ত শুরু করেন। এরপরই জহির রায়হান হাওয়ায় মিলিয়ে যান। তার খোঁজ আর পাওয়া যায়নি। পরিবার মামলা করলে পুলিশ জহির রায়হানের নিখোঁজ হবার ঘটনায় তদন্ত শুরু করে। কৌতুহল উদ্দীপক ব্যাপার হল যে পুলিশ অফিসার জহির রায়হানের নিখোঁজ তদন্ত করছিলেন তিনি কয়েক দিন পর অজ্ঞাত কারনে চাকুরি হারান এবং হারিয়ে যান। বাংলাদেশের ইতিহাসের প্রথম এবং দ্বিতীয় গুম। জহির রায়হানের পরিবারের সদস্যরা এটা নিয়ে কথা বললে তাদেরও মুখ বন্ধ করে দেয় মুজিব সরকার।
______
জহির রায়হানের মৃত্যু নিয়ে সত্যজিৎ রায়ের সাথে শাহরিয়ার কবিরের কথা হয়। ১৯৯২ সালের পহেলা মে-এর সাপ্তাহিক বিচিত্রায় সত্যজিত রায়ের সাক্ষাৎকার প্রকাশিত হয়।

সেখানে শাহরিয়ার কবির উল্লেখ করেন বুদ্ধিজীবী হত্যার সাথে জহির রায়হানের গুম হবার সম্পর্ক রয়েছে—

‘সত্যজিত রায় : জহিরের ব্যাপারটা কিছু জেনেছো?

শাহরিয়ার কবির : তাকে সরিয়ে ফেলার পেছনে ষড়যন্ত্র রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। আমরা ব্যক্তিগতভাবে তদন্ত করে যা বুঝতে পেরেছি তাতে বলা যায় ৩০ জানুয়ারি দুর্ঘটনায় তিনি হয়তো মারা যাননি। তারপরও দীর্ঘদিন তাকে বাঁচিয়ে রাখা হয়েছিল বলে অনেকে মনে করেন।

MIR

15 Dec, 04:46


সত্যজিত রায় : স্ট্রেঞ্জ ! জহিরকে বাঁচিয়েরাখার পেছনে কারণ কি?
শাহরিয়ার কবির : সেটাই ষড়যন্ত্রের মূলসূত্র বলে ধরছি। কারণ ছিল না। যতদুর জানি,

বুদ্ধিজীবিদের হত্যার তদন্ত করতে গিয়ে তিনি এমন কিছু তথ্য সংগ্রহ করেছিলেন যা অনেক রথী মহারথীর জন্যই বিপজ্জনক ছিল, সেজন্য তাকে সরিয়ে ফেলার প্রয়োজন ছিল’
______

বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা কাদের সিদ্দিকী বীর উত্তম কয়েকবার বুদ্ধিজীবী দিবস নিয়ে বিরক্তি প্রকাশ করেন।
______
এই হত্যাকাণ্ডগুলো কারা করেছে তার একটা ধারনা পাওয়া যায় বীর প্রতীক কর্নেল সফিক উল্লাহ লিখিত ❝ একাত্তরের রণাঙ্গণ: গেরিলাযুদ্ধ ও হেমায়েত বাহিনী ❞ বইয়ে। এই বইয়ে কর্নেল সফিক উল্লাহ কিছু তথ্য দিয়েছেন। যেমন ২২০ পাতায় তিনি উল্লেখ করেছেন, তিনি যুদ্ধের শেষ ভাগে মুজিবনগর সরকার থেকে একটা গোপন চিঠি পান। চিঠিতে মুজিবনগড় সরকার তার সেক্টরভুক্ত এলাকার অধিবাসী ৮০ জন বাঙালির তালিকা দেয়। এবং তাদেরকে সবাইকে হত্যার নির্দেশ দেওয়া হয়৷

❝...মুক্তিযুদ্ধ তখন প্রচন্ডতার উত্যুঙ্গ শিখরে। ৮ নং সেক্টর 'ই' কোম্পানি সদর তখন হাকিমপুর। আজাদ পত্রিকাখ্যাত মওলানা আকরম খাঁ-র বাসস্থান হাকিমপুর। বেনাপোল-সাতক্ষীরার মাঝামাঝি ভাদিয়ালি-কাকডাঙ্গা আমার অপারেশন এলাকা। পশ্চিমবঙ্গের চব্বিশ পরগণার ঐতিহাসিক হাকিমপুরে বসে সিল গালা মারা খাম খুলে ডাক দেখছি। অকস্মাৎ একি দেখি। এ যে বাঙালি হত্যার তালিকা। প্রবাসী সরকারের তৎকালীন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পত্র। প্যাডের কোণায় বাংলাদেশ ম্যাপের মনোগ্রাম। আমার কোম্পানি এলাকার আশি জনের হত্যাপর্ব তালিকা। অবাক করা ব্যাপার তালিকা শেষে কারুরই স্বাক্ষর নাই।

তালিকার দু’চারজনকে চিনি। বাংলাদেশের গভীর অভ্যন্তরে সশরীরে ব্যক্তিগতভাবে তদন্ত করে কারো বিরুদ্ধেই বাংলাদেশ বিরোধী, মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী কোন সুনির্দিষ্ট চার্জ পাওয়া যায় নি। ভিন্নতর রাজনৈতিক দলের হলেই দালাল হবে, এমন কোন কথা নেই। পরে জেনেছি এমন তালিকা অনেকের কাছে গেছে। কিন্তু কে এর হোতা তার নিদর্শন মিলেনি। ❞

২৬৬ পাতায় উল্লেখ করেন আরো একটা বিস্ফোরক তথ্য। এতে উনার ঘনিষ্ঠ যশোর মুজিব বাহীনির নেতা রফিককে উদ্ধৃত করেন,

❝...যশোর কেশবপুর থানার ধানদিয়া গ্রামের মুজিব বাহিনীর নেতা রফিকের প্রতি নির্দেশ ছিলো বাংলাদেশের ভিতরে গিয়ে মুজিব বিরোধী, আওয়ামী লীগ বিরোধী, মুজিব বাহিনী বিরোধী, ভারত বিরোধীকে নির্বিচারে খুন করবে। প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বাংলাদেশের মানচিত্র খচিত প্যাডে দালাল হত্যার লিখিত তালিকা পূর্বেই পান কাপ্তান সফিক। সে হত্যা তালিকার নিচে কারও স্বাক্ষর নেই। ❞

যারা এই বইয়ের ব্যাপারে আগ্রহী তাদের জন্য—

— কর্নেল (অব:) মোহাম্মদ সফিক উল্লাহ, (বীর প্রতীক), একাত্তরের রণাঙ্গণ: গেরিলাযুদ্ধ ও হেমায়েত বাহিনী, আহমদ পাবলিশিং হাউস

MIR

02 Dec, 23:55


উপমহাদেশের গত ১২০০ বছরের ইতিহাসে মুসলমান সালতানাতগুলোর সাথে হিন্দু রাজাদের যুদ্ধে জেতার রেকর্ড একেবারেই নগন্য, যদিও এই এলাকায় ৮০ ভাগের বেশি মানুষ হিন্দু। এর বড় কারন হিন্দু মেটাফিজিক্স। হিন্দু মেটা ফিজিক্স বিশ্বাস করে ইনকারনেশন বা পূর্ণজন্ম তত্ত্বে। একবার জন্ম নেবেন, মারা যাবেন, আবার জন্ম নেবেন। এভাবে সাতবার মানুষ হিসেবে জন্ম নিতে পারবেন।

একজন হিন্দুর মেটাফিজিক্যাল জার্নি হল জীবাত্নার চক্র থেকে মুক্ত হয়ে পরম আত্নার সাথে মিলিত হওয়া। যুদ্ধে মৃত্যু হলে জন্ম-পূর্নজন্মের চক্রে হিন্দুর কোন লাভ নাই।

এখানে পাপ-পূর্ণ দেখা হয় কর্মফল তত্ত্ব দিয়ে। যদি এই জন্মে একটা খারাপ কাজ করেন তাহলে পরের জন্মে সমপরিমাণ শাস্তি পাবেন। অর্থাৎ, পুরস্কার এবং তিরস্কারের পরিমানটা কমপোনেনশিয়াল।

এজন্য তাদের যুদ্ধে যাবার কোন মোটিভেশন নাই। এবং এমনকি যুদ্ধ মরা যাওয়াকে মাহাত্ম্য দেবার মত কোন শব্দও হিন্দু মেটাফিজিক্সে নাই।

এছাড়া হিন্দু মেটাফিজিক্স অনুসারে যুদ্ধ করবে শুধুমাত্র ক্ষত্রিয়রা। আর যুদ্ধে মানুষ মারা যাবেই। এটাকে অনেকটা স্বাভাবিক ঘটনা হিসেবে গন্য করা হয়। অন্যবর্ণের হিন্দুদের যুদ্ধে যাওয়ার তেমন মোটিভেশানও নাই।

অন্যদিকে মুসলমানদের যুদ্ধে যাবার মোটিভেশন সর্বোচ্চ। আপনি যদি যুদ্ধে মারা যান, আপনার মর্যাদা একদম অন্য লেভেলে৷ আপনাকে বলা হবে শহীদ মানে সাক্ষী। আপনি আল্লাহর সাক্ষী! অর্থাৎ সর্ব শক্তিমান আল্লাহর কাছে আপনার ভিভিআইপি স্ট্যাটাস। একজন পরহেজগার মুসলমানেরও সাধারণ মৃত্যু হলে অনেকগুলো স্টেশন পার করতে হবে: কবর, প্রশ্ন-উত্তর, ইল্লিন-সিজ্জিল, হাশর, পুলসিরাত এরপর জান্নাত: বিশাল ঝক্কি। তবে শহীদ হলে মৃত্যুর পর সরাসরি বেহেশত, মাঝখানে কোন স্টেশন নাই। এজন্য সালমান মুক্তাদিরের মত প্রিভিলিজড মিডিলক্লাস সেকুলারও বলে আন্দোলনে মরে গেলে গেলাম৷ মরে গেলে শহীদ হব আর শহীদের মর্যাদা সবচেয়ে বেশি।

MIR

01 Dec, 20:51


ডেইলি স্টার নিয়ে কাজ করার সময় আমি খেয়াল করেছি ২১ আগস্ট নিয়ে ডেইলি স্টার সিরিজ রিপোর্ট করেছে একের পর এক। রিপোর্টের শিরোনাম দেখে এবং পড়ে মনে হবে এটা ডেইলি স্টারের কোন অনুসন্ধানী রিপোর্ট, একটার পর আরেকটা ঘটনা আনকভার করতেছে। লিটারেচারে একে বলে প্যারালালিজম। কিন্তু আসলে এগুলো ছিল আওয়ামী পুলিশের প্রেসনোট/রিপোর্ট।

এই রিপোর্টের পাশাপাশি একই সময়ে তারা এডিটোরিয়াল লিখছে খালেদা জিয়া তার দুর্নীতিবাজ পুত্রকে নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হয়েছে, তারেক ভায়লেন্ট রাজনীতির প্রতিনিধি ইত্যাদি। এবং ক্যারিক্যাচার করা হয়েছে তারেককে উগ্রভাবে এর্টাক করে। একই শব্দ, একই কার্টুন তারা বার বার ব্যবহার করেছে।

অর্থাৎ, সাউন্ড বাইটস, ক্যারিকেচার, ছবি, এডিটোরিয়াল দিয়ে সম্মিলিত ভাবে কনটেক্স তৈরি করা হয়েছে। ডেইলি স্টার(এবং প্রথম আলো) যারা অন্ততঃ মাঝে মধ্যে পড়েন তারা সবাই প্রক্সিমিটি বায়াসের মধ্যে ঢুকে গেছেন।

সব মিলিয়ে ফলাফল, কোন কিছু প্রমান ছাড়া স্রেফ আওয়ামী প্রপাগনিস্ট পুলিশের বানানো রিপোর্ট দিয়েই তারেক রহমানকে একটা ভিসাস, দুর্ণীতিবাজ, উগ্র ব্যক্তি হিসেবে সমাজে দাঁড় করিয়ে ফেলা হয়েছে।

এখন যতই খালাস পাক, আরবান মিডিলক্লাস বাঙালির মন থেকে তারেকের এই নেতিবাচক ইমেজ সহজেই দূর করা যাবে না। আমি বাজি রাখতে পারি যারা প্রথম আলো/ডেইলি স্টার মাঝেমধ্যে পড়ে তারা এই রায় বিশ্বাস করে না, তারা বলবে এটা রাজনৈতিক, যদিও এই সরকারের সময়ে সুপ্রিম কোর্ট অতীতের যেকোন সময়ের চেয়ে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত এবং স্বাধীন। এরপরেও তাদের হাসিনার জ্বী হুজুর আদালতের রায়ের প্রতিই আস্থা বেশি।

[]কমেন্টে জিয়া পরিবারের ডেইলি স্টারের ইয়োলো জার্নালিজমের থ্রেড দিলাম।

[]কিভাবে_জনমতকে_বিভ্রান্ত_করতে_হয়

MIR

28 Nov, 15:07


হাজী শরীয়াতুল্লাহ: প্রথম পাঞ্জেরি

হাজী শরীয়াতুল্লাহকে বুঝতে হলে তার সমকালকে বোঝা গুরুত্বপূর্ণ। হাজী শরীয়তুল্লাহ অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষভাগে জন্মগ্রহণ করেন। পলাশী পরবর্তী সময়ে ইস্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানির জুলুমের স্ট্রিম রোলার চলে মুসলমানদের উপর। একে একে মুসলমান জমিদার, মিডিলক্লাসকে সরিয়ে হিন্দুদের বসানো হয়। কর্নওয়ালিসের চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের বদৌলতে জমিদারেরা ভূমির উপর একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ পায়। এছাড়াও ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কর্মকর্তাদের গোমস্তাদের ছিল সারা দেশের হাট-বাজার ও নদী-বন্দরের ওপর একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ।


যেসব কর গরীব প্রজাদের কাছ থেকে আদায় করতো তা ছিলো অবিশ্বাস্য। যৌথভাবে পরিচালিত হিংস্রতা ও অত্যাচার মানুষজনকে ক্রীতদাসদের পর্যায়ে উপনীত করে। উইলিয়াম হান্টার বলেছিলেন, 

কোম্পানি শাসনের পূর্বে  বাংলার মুসলমানদের মধ্যে অভাবগ্রস্থ লোকের সন্ধান পাওয়া দুরুহ ছিল। আর কোম্পানি শাসনের পরে বাংলায় স্বচ্ছল মুসলমান পাওয়া দুষ্কর হয়ে যায়। 

সে সময়ের হিন্দু জমিদারদেরে আরোপ করা করের কিছু নমুনা:
১. গরুর গাড়ি করে মাল পাঠালে ধুলো উড়তো, তাই গাড়ির মালিককে যে কর দিতে হোত তার নাম ‘ধুলট’।
২. প্রজা নিজেদের জায়গায় গাছ লাগালেও তাকে একটি কর দিতে হোত, তার নাম ‘চৌথ’।
৩. গরীব প্রজারা আখের গুড় তৈরী করলে যে কর লাগতো তা ‘ইক্ষুগাছ কর’।
৪. কোন প্রজার গরু মোষ মরে গেলে ভাগাড়ে সেই মৃত পশু ফেলার পর যে কর লাগতো তা হোল ‘ভাগাড়ে কর’।
৫. নৌকোয় মাল উঠালে বা নামালে সে করের নাম ছিল ‘কয়ালী’।
৬. ঘাটে নৌকা ভিড়ালে একটি কর লাগতো তার নাম ‘খোটাগাড়ৌ কর’।
৭. জমিদারের সঙ্গে দেখা করতে হলে একরকমের কর দিয়ে সম্মান জানাতে হোত, তার নাম ‘নাজরানা’।
৮. জমিদার কোনও কারণে হাজতে গেলে তাঁকে ছাড়িয়ে আনতে প্রজাদের একটি কর দিতে হোত, তার নাম ‘গারদ সেলামি’ ইত্যাদি।
৯. মুসলমান দাড়ি রাখলে কর দিতে হত।
১০. কোন মুসলমান গোঁফ খাঁটো করলেও কর দিতে হত।
১০. যেকনো প্রকারের মসজিদ নির্মাণের আগে মসজিদের আকারের বিচারে নূন্যতম পাঁচ শত থেকে এক হাজার টাকা হার কর দিতে হত।
১১. মুসলমান নাম রাখলে নামের জন্য কর দিতে হত।
১২. মুসলমানদেরও বাধ্যতামূলক ভাবে কালি পূজায় চাঁদা দিতে হতো।
এছাড়া জমিদারের বাড়ির সামনে দিয়ে ছাতি মাথায় দিয়ে কিংবা জুতা/স্যান্ডেল পরে হাঁটার অনুমতি ছিল না।

এই ভয়াবহ সামাজিক পরিবর্তন খোদ তৎকালীন ইংরেজ পুলিশ কমিশনারের বার্ষিক রিপোর্টে ‘ঘৃণ্য বিপ্লব oathsome revolution' হিসেবে আখ্যাত হয়েছে।

সরকারী চাকরি পাওয়ার সকল রাস্তা বন্ধ হয়ে যায় মুসলমানদের জন্যে। চাকরির বিজ্ঞাপনে তখন স্পষ্ট উল্লেখ থাকতো কেবল হিন্দু প্রার্থীদেরই আবেদন গ্রহণযোগ্য। কোলকাতার 'দূরবীন' নামে একটি ফারসী পত্রিকা ছিলো। আঠারো শো উনসত্তর সালের জুলাই মাসে চাকরির ক্ষেত্রে মুসলমানদের দুর্দশার কথা বর্ণনা করতে গিয়ে 'দূরবীন' পত্রিকাটি লিখেছিলো:

❝ উচ্চস্তরের বা নিম্নস্তরের সমস্ত চাকরি ক্রমান্বয়ে মুসলমানদের হাত থেকে ছিনিয়ে নিয়ে অন্যান্য সম্প্রদায়ের মধ্যে, বিশেষ করে হিন্দুদের মধ্যে বিতরণ করা হচ্ছে। সরকার সকল শ্রেণীর কর্মচারীকে সমান দৃষ্টিতে দেখতে বাধ্য, তথাপি এমন সময় এসেছে যখন মুসলমানদের নাম আর সরকারী চাকুরিয়াদের তালিকায় প্রকাশিত হচ্ছে না, কেবল তারাই চাকরির জায়গায় অপাংক্তেয় সাব্যস্ত হয়েছে। সম্প্রতি সুন্দরবন কমিশনার অফিসে কতিপয় চাকরিতে লোক নিয়োগের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়, কিন্তু অফিসারটি সরকারী গেজেটে কর্মখালির যে বিজ্ঞাপন প্রকাশ করেন তাতে বলা হয় যে, শূন্য পদগুলিতে কেবলমাত্র হিন্দুদের নিয়োগ করা হবে। ❞

ঠিক এই সময়ে জন্ম গ্রহন করেন শরীয়াতুল্লাহ। তিনি ১৭৮১ সালে বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির ফরিদপুর জেলার চর শামাইল গ্রামে জন্ম গ্রহন করেন। মাত্র আট বছর বয়সে তাঁর পিতা আবদুল জলিল মারা যান। এরপর তিনি তাঁর চাচার কাছে মানুষ হোন। চাচার বাড়িতে চার বছর থাকার পর মাত্র ১২ বছর বয়সে তিনি কোলকাতায় পারি জমান। শুরু হয় শরীয়াতুল্লাহর মুসাফির জীবন।

কোলকাতার বিখ্যাত আলেম মাওলানা বাসারত আলীর কাছে লেখাপড়া করতে থাকেন শরীয়তুল্লাহ। বাসারাত আলীর কাছে কিছুদিন পড়ার পরে কিশোর শরীয়াতুল্লাহ আরবি-ফারসি আরো গভীরভাবে অধ্যায়নের জন্য হুগলীর ফুরফুরায় যান। হুগলিতে কিছুকাল থাকার পর তিনি চলে যান মুর্শিদাবাদে আরেক চাচা আশিক মিয়ার কাছে এবং মুর্শিদাবাদের স্থানীয় মাদ্রাসায় ভর্তি হোন। এক বছর পরে চাচা আশিক মিয়ার সাথে মাদারীপুর নিজ গ্রামে বেড়াতে যাবার উদ্দেশ্যে রওনা হন। যাত্রাপথে নৌকা ঝড়ের কবল। নৌকাডুবে তাঁর চাচা-চাচী মারা যান। শরীয়তুল্লাহ কোনো রকমে বেঁচে যান। মনভাঙা হয়ে তিনি মাদারীপুর না গিয়ে পুনরায় কলকাতা ফিরে আসেন।


মওলানা বাসারত আলী তার প্রিয় ছাত্রের মর্মান্তিক ঘটনা শুনে ব্যাথিত হোন। তিনি ১৭৯৯ সালে হজ্জব্রত পালনের উদ্দেশ্য মক্কায় যাবার সিদ্ধান্ত নেন এবং সাথে নেন তার প্রিয় ছাত্র শরীয়াতুল্লাহকে। মক্কাযাত্রা ছিল শরীয়াতুল্লাহর জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার একটা। প্রায় ২০ বছর তিনি মক্কায় অবস্থান করেন। তিনি মক্কার

MIR

28 Nov, 15:07


বিভিন্ন আলেমের কাছে শিক্ষা গ্রহণ করেন। এরমধ্যে শরীয়াতুল্লাহ সবচেয়ে বেশি সময় ছিলেন মওলানা তাহের চোম্বল রহ. এর কাছে। মক্কায় শরীয়াতুল্লাহর আরবি, ফারসি এবং ধর্মীয় বিষয়ে বিশেষ পাণ্ডিত্যের খ্যাতি ছড়িয়ে পরে। হাজী শরীয়াতুল্লাহকে মক্কার ছোট আবু হানিফা বলা হত।

হাজী শরীয়তুল্লাহ দীর্ঘকাল আরবে অবস্থান করে হজ্বব্রত পালন শেষে ১৮১৮ সালে বাংলায় ফিরে আসেন। তখন বাংলার মুসলমানদের অর্থনৈতিক অবস্থার পাশাপাশি ধর্মীয়, সামাজিক এবং সাংস্কৃতিকভাবে করুণ।  সার্বিক অবস্থা দেখে হাজী শরীয়তুল্লাহ ব্যথিত হোন। তিনি মানুষকে বোঝাতে থাকেন তবে খুব একটা সারা পান না। তিনি আবার ফেরত যান মক্কায়। যাত্রাপথে হাজী শরীয়াতুল্লাহ প্রথমে কিছুদিন বাগদাদ, কুফায় হয়ে জেরুজালেমে যান। জেরুজালেমে গিয়ে রাসুলুল্লাহ সা. সহ বিভিন্ন নবী রাসূলগনের স্মৃতি বিজড়িত মসজিদুল আল আকসাতে কিছুদিন অবস্থান করেন। জেরুজালেম থেকে মিসর হয়ে হাজী শরীয়াতুল্লাহ মক্কা যান। বায়তুল্লাহর সামনে দাঁড়িয়ে শরীয়তুল্লাহ স্বদেশের মুসলমানদের বিপর্যয়ের কথা স্মরণ করে তাদের মুক্তি ও হিদায়েতের জন্যে বিশেষভাবে দোয়া করেন। এরপরেও হাজী শরীয়াতুল্লাহ মন শান্ত হচ্ছিলো না। তিনি রাসুলুল্লাহ সা. এর শহর মদিনায় যান।

তিনি মদীনায় গিয়ে নবীজীর (সা) কবর মুবারক যিয়ারত করেন। মদিনায় অবস্থানকালে তিনি একে একে তিনবার প্রাণ-প্রিয় রাসূলুল্লাহকে (সা.) স্বপ্নে দেখেন। রাসূল (সা.) প্রতিবারই তাঁকে দেশে ফিরে ইসলাম প্রচারের নির্দেশ দেন। এই আশ্চর্যজনক স্বপ্নের কথা হাজী শরীয়তুল্লাহ খুলে বলেন তাঁর মক্কার উস্তাদ মওলানা তাহের আলীকে। মাওলানা তাহের আলী সকল কথা শুনে হাজী শরীয়তুল্লাহকে একজন সৌভাগ্যবান ব্যক্তি বলে অভিহিত করেন। তারপর তাঁকে  পরামর্শ দেন রাসুল পাক সা. এর আদেশ মোতাবেক, স্বদেশে ফিরে ইসলাম প্রচারের কাজে আত্মনিয়োগ করতে।

এই সময়ে হাজী শরীয়াতুল্লাহর সাথে দেখা হয় আমাদের উপমহাদেশের আর দুই নেতা শাহ ওয়ালিউল্লাহ দেহলবি রহ. এবং সৈয়দ আহমদ বেরলভী রহ. এর সাথে। তাদের পরামর্শ হাজী শরীয়াতুল্লাহকে অনুপ্রাণিত করে। পূর্ণ মনোবল নিয়ে প্রায় দুই বছর পরে হাজী শরীয়তুল্লাহ আবার ফিরে আসেন বাংলায়।


বাংলার মজলুম মুসলমানদেরকে জুলুমের কালো গুহা থেকে টেনে তুলবার জন্যে তিনি সংকল্পবদ্ধ হলেন কঠিনভাবে। শুরু করলেন একটা জিহাদ। হাজী শরীয়তুল্লাহর এই সংগ্রামের নাম, এই আন্দোলনের নাম- 'ফরায়েজী আন্দোলন।' ফরজ' থেকে 'ফরায়েজী'। ফরায়েজ শব্দটি বহুবচন। ফরিজাহ শব্দে অর্থ দাঁড়ায় আল্লাহর নির্দেশিত অবশ্য কর্তব্যসমূহ। যারা এই কর্তব্যসমূহ পালনে অংগীকারাবদ্ধ তাদেরকেই 'ফরায়েজী' বলা হয়।

হাজী শরীয়তুল্লাহ সকল আরাম আয়েশ ত্যাগ করে গ্রাম থেকে গ্রামে, শহর থেকে শহরে ঘুরে বেড়াতে লাগলেম মজলুম মুসলমানদের জাগাতে। যারা ইসলামের ফরজসমূহ পালন করতে রাজি তারাই কেবল ফরায়েজী আন্দোলনের সদস্য হতে পারতো।

হাজী শরীয়তুল্লাহ ছিলেন উন্নত চরিত্রের অতুলনীয় মানবীয় গুণ ও বৈশিষ্ট্য মন্ডিত মানুষ। প্রাথমিকভাবে তার চরিত্রেই মুগ্ধ হয়েছিলো হাজার হাজার মুসলমান। খুব অল্প সময়ের মধ্যে তিনি বিপুল সংখ্যক মুসলমানকে এই আন্দোলনে অংশ নেন
ইংরেজ সিভিলিয়ন জেমস টেলর তার 'A Sketch of the Topography and Statistics of Dacca' তে লিখেছেন,

❝ ১৮২৮ সালের পর থেকে ফরায়েজী আন্দোলন ব্যাপকভাবে সম্প্রসারিত হচ্ছে। ❞

ড. জেমস ওয়াইজ তাঁর 'মোহামেডানস অব ইস্টার্ণ বেঙ্গল' বইয়ে হাজী শরীয়তুল্লাহর চরিত্র সম্পর্কে লেখেন,

❝ তাঁর নির্দেশ ও আদর্শ চরিত্র দেশবাসীদের ভক্তি-শ্রদ্ধা আকর্ষণ করে। দুর্যোগের দিনে সৎ পরামর্শ ও ব্যথা-বেদনায় সান্ত্বনা প্রদানকারী পিতার মতোই দেশের জনগণ তাঁকে ভালোবাসতো। ❞

তবে হাজী শরীয়াতুল্লাহ বুঝতেন রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ভাবে গোলামি করে ধর্ম পালন সম্ভব না। তাই ফরায়েজী আন্দোলনের দুই দফা কর্মসূচি ছিল


এক- ধর্মীয় জ্ঞান এবং অনূভুতি সৃষ্টি করা।

সে সময়ের মুসলমান সমাজ প্রবর্তিত পীর পূজা, কবর পূজা, মনসা পূজা, শীতলা পূজা ইত্যাদি নানা ধরনের অনৈসলামিক কর্মকাণ্ড দ্বারা আচ্ছাদিত ছিল। মুসলমানদের জীবন ব্যবস্থা থেকে শিরক, বিদাত, কুসংস্কার দূর করে কুরআন ও সুন্নাহ মতে জীবন যাপনে উদ্ধুদ্ধ করা। হাজী শরীয়তুল্লাহ তাঁর সদস্য এবং সাধারণ মুসলমানকে ধর্মের সাথে কর্মের মিল রাখার জন্যে কঠোরভাবে নির্দেশ দেন। এই সময়ে হিন্দু জমিদারেরা গরু কুরবানি দেওয়া নিষিদ্ধ করেছিল। তবে হিন্দুদের রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে হাজী শরীয়তুল্লাহ নিজেই গরু কুরবানী দেন। এবং বাকীদের উৎসাহিত করেন গরু কোরবানি দিতে।

দুই- মুসলমানদের মধ্যে রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক সক্ষমতা তৈরি :

তিনিই প্রথম রাজনৈতিক প্রজ্ঞা থেকে অনুভব করেছিলেন যে, থেকে ইংরেজ এবং হিন্দু জমিদারদের অবসান ছাড়া দেশের মুসলমান, দলিত, নিন্ম বর্ণের হিন্দুদের মুক্তি অসম্ভব। এজন্য তিনি দরিদ্র কৃষক, তাতি শোষক শ্রেণীকে মহাজন,জমিদার নীলকর বণিকদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান। নীলকর ও অত্যাচারী জমিদারদের বিরুদ্ধে প্রচার চালাতেন।

MIR

28 Nov, 15:07


হাজী শরীয়তুল্লাহর আন্দোলন সম্পর্কে জেমস টেইলার বলেন,

❝ কুরআনকে অক্ষরে অক্ষরে পালন করাই ছিলো ফরায়েজী আন্দোলনের উদ্দেশ্য। কুরআন যেসব অনুষ্ঠানাদি সমর্থন করে না তা সবই ছিলো বর্জনীয়। মহররমের অনুষ্ঠান পালনই শুধু নিষিদ্ধ ছিলো না, এ অনুষ্ঠানের ক্রিয়াকলাপ দেখাও ছিলো তাদের জন্যে নিষিদ্ধ। ❞

জেমস ওয়াইজ তাঁর 'মোহামেডানস অব ইস্টার্ণ বেঙ্গল' বইয়ে লেখেন,

❝ হিন্দুদের বহু ঈশ্বরবাদ নীতির সাথে দীর্ঘদিনের সম্পর্কের ফলে মুসলমানদের মধ্যে যেসব কুসংস্কার ও দুর্নীতি দেখা দিয়েছিল তার বিরুদ্ধে কথা বলার প্রথম সোচ্চার প্রচারক হিসেবে তাঁর [হাজী শরীয়তুল্লাহ] আবির্ভাব বৈশিষ্ট্যপূর্ণ। কিন্তু বাংলার চেতনাহীন ও উদাসীন চাষী সমাজের মধ্যে তিনি উৎসাহ-উদ্দীপনা জাগ্রত করার ব্যাপারে যে সাফল্য অর্জন করেন, তা আরও বেশী চমকপ্রদ।

এ উদ্দেশ্যে সাধনের জন্যে একজন অকপট ও সহানুভূতিসম্পন্ন প্রচারকেরই প্রয়োজন ছিল। আর মানুষের মনে প্রভাব বিস্তারের অধিকতর ক্ষমতা শরীয়তুল্লাহর চেয়ে অপর কারুর মধ্যে কখনও দেখা যায়নি। ❞
অন্যদিকে জেমস ওয়াইজের মতে,

❝ শিরক ও বিদআত থেকে স্থানীয় মুসলমানদের রক্ষা করার ক্ষেত্রে হাজী শরীয়তুল্লাহই পূর্ববঙ্গের ইসলামের প্রথম সংস্কারক ও প্রচারক। ❞

শুধু দিক ধর্মীয় নয় হাজী শরীয়াতুল্লাহ সূর্যাস্ত চিরস্থায়ী বন্দোবস্তসহ সকল কালো আইনের সমালোচনা করেন। জমিদার, জোতদার, গোমস্তা, পত্তনিদারদের অযাচিত কর এবং অত্যাচারের বিরুদ্ধে তিনি জিহাদ ঘোষণা করেন। তিনি ঘোষণা করেন, যারা ফসল ফলাবে তারাই ভোগ করবে। চাষিরাই জমির প্রকৃত মালিক। জমির ফসল চাষিদেরই প্রাপ্য। তাতে জমিদারের কোনো অধিকার নেই।

হাজী শরীয়তুল্লাহর এ আন্দোলন বাংলার মুসলমানদের মধ্যে একটা বিরাট পরিবর্তন নিয়ে আসে। মুসলমান সমাজ এইসব কুসংস্কার থেকে সরে আসতে শুরু করে, রাজনৈতিকভাবে সচেতন হয়, এবং সঠিকভাবে ইসলাম পালন করা শুরু করে।

উগ্র হিন্দু সমাজ হাজী শরীয়াতুল্লাহর বিরুদ্ধে নানান অপ প্রচার শুরু করে। জমিদারেরা হাজী শরীয়াতুল্লাহর অনুসারীদের উপর জুলুম চালাতে শুরু করে। ১৮৩৭ সালের ২২ এপ্রিল সমাচার দর্পন পত্রিকায় একটা পত্র ছাপে। পত্রটি ছিলো এ রকম:

❝ ইদানীং জিলা ফরিদপুরের অন্তঃপাতি শিবচর থানার সরহদ্দে বাহাদুরপুর গ্রামে সরিতুল্লা নামক একজন বাদশাহী লওনেচ্ছুক হইয়া ন্যূনাধিক বার হাজার জোলা ও মুসলমান দলবদ্ধ করিয়া নতুন এক সরা জারি করিয়া নিজ মতাবলম্বী লোকদিগের মুখে দাড়ি, কাছা খোলা, কটি দেশে ধর্মের রুজ্জভৈল করিয়া তৎচতুর্দিগস্থ হিন্দুদিগের বাটি চড়াও হইয়া দেবদেবী পূজার প্রতি অশেষ প্রকার আঘাত জন্মাইতেছে- এই জিলা ঢাকার অন্তঃপাতি মতলবগঞ্জ থানার রাজনগর নিবাসী দেওয়ান মৃত্যুঞ্জয় রায়ের স্থাপিত দ্বাদশ শিবলিঙ্গ ভাঙ্গিয়া নদীতে বিসর্জন দিয়াছে এবং ঐ থানার সরহদ্দে পোড়াগাছা গ্রামে একজন ভদ্রলোকের বাটিতে রাত্রিযোগে চড়াও হইয়া সর্বস্ব হরণ করিয়া তাহার গৃহে অগ্নি দিয়া অবশিষ্ট যেটুকু ছিল ভস্ম রাশি করিলে একজন যবন মৃত হইয়া ঢাকায় দাওরায় অর্পিত হইয়াছে।

.....আর শ্রুত হওয়া গেল, সরিতুল্লাহ দলভুক্ত দুষ্ট যবনেরা ঐ ফরিদপুরের অন্তঃপাতি পাটকান্দা গ্রামের বাবু তারিনী চরণ মজুমদারের প্রতি নানা প্রকার দৌরাত্ম্য অর্থাৎ তাহার বাটিতে দেবদেবী পূজায় আঘাত জন্মাইয়া গোহত্যা ইত্যাদি কুকর্ম উপস্থিত করিলে মজুমদার বাবু যবনদিগের সহিত সম্মুখ যুদ্ধ অনুচিত বোধ করিয়া- ঐ সকল দৌরাত্ম্য ফরিদপুরের ম্যাজিস্ট্রেট সাহেবের হুজরে জ্ঞাপন করিলে ঐ সাহেব বিচারপূর্বক কয়েকজন যবনকে কারাগারে বদ্ধ করিয়াছেন এবং এ বিষয়ে বিলক্ষণ অনুসন্ধান করিতেছেন। হে সম্পাদক মহাশয়, দুষ্ট যবনেরা মফঃস্বলে এ সকল অত্যাচার ও দৌরাত্ম্যে ক্ষান্ত না হইয়া বরং বিচার গৃহে আক্রমণ করিতে প্রবৃত্ত হইল। শ্রুত হওয়া গেল, ফরিদপুরের ম্যাজিস্ট্রেট সাহেবের হুজরে যে সকল আমলা ও মোক্তার-কারেরা নিযুক্ত আছে, তাহারা সকলেই সরিতুল্লা যবনের মতাবলম্বী- তাহাদের রীতি এই যদি কাহার নামে মিথ্যা অভিযোগ করিতে হয়, তবে কেহ ফরিয়াদী কেহ বা সাক্ষী হইয়া মোকদ্দমা উপস্থিত করে সুতরাং ১২০০০ লোক দলবদ্ধ। ইহাতে ফরিয়াদীর সাক্ষীর ত্রুটি কি আছে... আমি বোধ করি, সরিতুল্লা যবন যে প্রকার দলবদ্ধ হইয়া উত্তর উত্তর প্রবল হইতেছে অল্পদিনের মধ্যে হিন্দু ধর্ম লোপ পাইয়া অকালে প্রলয় হইবেক। সরিতুল্লার চোটপাটের শত অংশের এক অংশ তিতুমীর করিয়াছিল না।
ইতি সন ১২৪৩ সাল, তারিখ ২৪শে চৈত্র। ❞

তবে শত অত্যাচার, অপপ্রচার, জুলুমের পরেও ফরায়েজি আন্দোলনের জনপ্রিয়তা দিনে দিনে বাড়তে থাকে। এই অবস্থায় হাজী শরীয়াতুল্লাহ ১৮৪০ সালে ৫৯ বছর বয়েসে বৃহত্তর ফরিদপুর জেলার বর্তমানে মাদারীপুর জেলার শিবচর উপজেলার বাহাদুরপুর গ্রামে মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর মৃতদেহ জন্মস্থান চর শামাইলে সমাহিত করা হয়। আড়িয়াল খা নদীর ভাঙ্গনের ফলে হাজী শরীয়ত উল্লাহর কবর নদীর গর্ভে বিলীন হয়ে যায়। তাঁর ইন্তেকালে আন্দোলন থেমে যায়নি। তাঁর পুত্র মুহাম্মদ মহসিন উদ্দিন দুদু মিয়ার নেতৃত্বে বাংলার বিভিন্ন জনপদে সংস্কার আন্দোলনের কর্মকাণ্ড বিস্তৃত হয়।

MIR

28 Nov, 15:07


হাজী শরীয়তুল্লাহ'র নামানুসারে বাংলাদেশের শরীয়তপুর জেলার নামকরণ করা হয়েছে। সে সময়ের পুথি সাহিত্যে শরীয়াতুল্লাহর উল্লেখ পাওয়া যায়:

মহরমে এমাম হাছেন হোছেনের।
হায় হায় জারি ছিল মশরেকগণের।
পাঁচ পীরের নামেতে মোকাম উঠাইয়া
উপবাস করিত সে সকলে মিলিয়া।

কলাগাছ গাড়িত বাড়ীর চারিধার।
সেসব বেদাত এসে হইল মেছমার।
হাজি শরীয়তুল্লা হেথা তশরিফ আনিয়া।
দীন জারি করিলেন বাঙ্গালা জুড়িয়া।


বিস্তারিত পড়াশোনা:
১। মোশাররফ হোসেন খান, হাজী শরীয়াতুল্লাহ, বাংলাদেশ ইসলামি সেন্টার
২। Shiping Hua , Islam and Democratization in Asia, Cambria Press
৩। Muin-ud-Din Ahmad Khan, History of the Fara’idi Movement,
৪। ড. স্বপন বসু, গণ অসন্তোষ ও উনিশ শতকের বাঙালী সমাজ, সূচীপত্র 
৫। বাংলাপিডিয়া, হাজী শরীয়তুল্লাহ

MIR

22 Nov, 17:07


যখন শেখ মজিদের শত শত কোটি টাকা খরচ করে নির্মান করা সুন্দর সুন্দর মূর্তি জয় বাংলা করা হচ্ছিলো তখন কেউ বলে নাই, ভাই! এমন নয়নাভিরাম মূর্তি না ভেঙ্গে তিতুমীর বা জিয়াউর রহমানের আরো বড়, আরো সুন্দর মূর্তি তৈরি করো। সেইম গোজ টু ৩২ নম্বর, লীগ অফিসসেস, নেমস এটসেটরা।

কেন বলে নাই? কেন আমরা শ্লোগান দিয়েছি আওয়ামী লীগের আস্তানা, ভে-ঙে দাও গু-রি-য়ে দাও। কারন আমাদের এতটুকু পলিটিক্যাল মাচুউরিটি হয়েছে এটা বুঝতে যে গুলিস্তানের লীগ অফিস যতই সুন্দর হোক, জুলুমের কেন্দ্রকে না গুড়িয়ে দিয়ে নতুন পলিটিক্যাল সেটেলমেন্টের কথা ভাবা একটা স্কুল বয় চিন্তা।

তবে আমাদের কালচারাল সচেতনতা এখনো সেভাবে গড়ে উঠে নাই। আওয়ামী লীগ সরাসরি মারছে বুঝেছি, কিন্তু প্রথম আলো-ডেইলি স্টার যে আমাদের আওয়ামী লীগের চেয়ে বড়, ভয়ংকর, মনস্টারাস জালেম সেটা অনুধাবন করতে পারি নাই। এর একটা নমুনা, যেদিন খুনী হাসিনা গায়ের জোরে, বেআইনি ভাবে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বাড়ির সামনে বালুর ট্রাক বসিয়ে বাড়ি অবরুদ্ধ করে রাখলো, বাড়ি থেকে বের হতে দিল না, কনস্টেবল লেবেলের পুলিশেরা উনার সাথে বেয়াদবি এবং অপমানজনক আচরন করলো সেদিন ডেইলি স্টার রিপোর্ট করছে, খালেদা বলেছে গোপালগঞ্জ থাকবে না। শুয়ো-রের বাচ্চারা এখানে উল্টো বেগম জিয়াকে অপরাধী হিসেবে চিত্রিত করেছে, পুরা ন্যারেটিভটা বদলে দিছে।

আপনি বলতেছেন ডেইলি স্টারের চেয়ে ভাল পত্রিকা বানাবেন। শুরুতেই গলদ, ডেইলি স্টার, এবং প্রথম আলোকে ভাবতেছেন পত্রিকা; না রে ভাই। এরা শুধু পত্রিকা না, পত্রিকা হল আইসবার্গ। এরা একটা টোটাল কালচার মাফিয়াযন্ত্র। বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার ঢেলে বিভিন্ন শক্তি এদের তৈরি করেছে তাদের রঙ পলিটিকাল স্বার্থে। এরা নিজেদের বড় করেছে সরাসরি চাঁদাবাজি এবং ব্লাকমেইলের মাধ্যমে।

রাইট রিজনে আপনাকে কেউ এত টাকা দেবে না। আপনি এভাবে চাঁদাবাজিও করতে পারবেন না। আর যদি টাকা পান বা ব্লাকমেইল শিখে যান, তাহলে আরেকটি মনস্টার তৈরি হবে। আমাদের সাধারণ জনগনের কোন লাভ নাই।

কাওরান বাজারের দুই না-ৎ-সির চাঁদাবাজি, ব্লাকমেইলের টাকায় গড়া মাফিয়া সম্রাজ্যকে অটুট রেখে নতুন কালচারাল সেটেলমেন্ট কথা ভাববেন?! ভাবতেই পারেন। সেটা একেবারেই কাঁচা, আনক্রিটিকাল চিন্তা।

এখানে একটা কান্ড আছে খেয়াল করবেন। যারা শিক্ষিত তারাই এর বিরোধিতা করতেছে কিন্তু যারা সমাজের প্রলেতারিয়েত তারা পক্ষে অথবা চুপ। গতকাল প্রথম আলো অফিসের সামনে কয়েকশো লোক হয়েছিলো, তার মধ্যে দাড়িওয়ালা সাধারণ মানুষ অনেক। উনি এই হয়তো পলিটিক্যাল-কালচারাল হেজিমনির এই গভীর আলাপ বোঝেন না। কিন্তু একটা জিনিশ উনার মাথায় আছে, যখন মাদ্রাসার ছোট ছোট বাচ্চাদের, মসজিদের ইমাম-মুয়াজ্জিন, দাড়িওয়ালা মানুষদের রাতের আঁধারে লাইট অফ করে নির্মমভাবে হত্যা করা হচ্ছিলো তখন এই পত্রিকা বলেছিলো ওরা জ-ঙ্গি, ওরা সন্ত্রাসী। উনার হিসাব হল যদি এই পত্রিকা টিকে থাকে, আবার দাড়িওয়ালাদের জ-ঙ্গি বলবে, হ-ত্যা করবে। প্লেইন এন্ড সিম্পল। একে বলে দ্য উইজডম অব প্রলেতারিয়াত। নেলসন মেন্ডেলা বলেছিলো,

❝ গরীবের রাজনৈতিক জ্ঞান মাটি থেকে আসে। ❞

MIR

17 Nov, 14:13


বাঙলাদেশ ওভাররেটেড মিডিয়োকারদের দেশ। সবচেয়ে ওভাররেটেড মিডিয়োকার পলিটিশিয়ান সম্ভবত ময়লানা ভাসানী। এই মুরুব্বি ছিল কনফিউজড। সে কমিউনিস্ট আবার মওলানা, মানে হালাল উপায়ে জবেহকৃত শুয়োরের মাংসের মত ব্যাপারটা।

এই ময়লানা ১৯৫৭ সালে বলতেছে পাকিস্তানকে সালাম আলাইকুম। অথচ ১৯৫৭ সালে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন আমাদের জাতীয় নেতা হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী।

তার কথিত কাগমারি সম্মেলন উপলক্ষে অনেকগুলো গেট বানায়। প্রথম গেটের নাম ছিল হযরত মোহাম্মদ সা. গেট আর শেষ গেটের নাম ছিল কায়েদে আজম মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ গেট। মানে... প্রশ্ন হল সে থাকতো কুঁরে ঘরে এই রকম বিশাল সম্মেলন করার পয়সা কোথায় পেল?

উত্তর হল ওপার বাংলার দাদারা। বাংলাতে কমিউনিস্ট পার্টি সূচনা করেছিল এক্স জমিদারদের সন্তানেরা। ১৯৫৪ সালে ভাসানি সেই ক্লাবে যোগ দেয়। জমিদারদের কাচা পয়সা। ১৯৫৭ সালেই আবুল মনসুর আহমেদেরা এই ব্যাপারে প্রশ্ন তুলেছিলো। হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীকে বিপদে ফেলতে কলিকাতার জমিদারেরা ভাসানিকে ফাইন্যান্স করে। তবে এরপর ভাসানির উপর মস্কো থেকে পিকিংয়ের বাতাস বওয়া শুরু করে। আইয়ুব খানের সাথে খাতির জমায়া পাকিস্তান-চীন সম্পর্ক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কিন্তু কিছুদিনের মধ্যে আবার ঘরের ছেলে কলিকাতায় ফেরে। ১৯৬৭ সালের ২৭ জুন রবীন্দ্রনাথের সমালোচকদের ব্যাপারে ময়লানা বলেছিলো,

❝ ইসলাম সত্য ও সুন্দরের জন্ম ঘোষনা করেছে। এই সত্য ও সুন্দরের পতাকাকে তুলে ধরেছেন রবীন্দ্রনাথ।

তাই, যারা ইসলামের নামে রবীন্দ্রনাথের উপর আক্রমণ চালাচ্ছেন তারা আসলে ইসলামের সত্য ও সুন্দরের নীতিতে বিশ্বাসী নন। ❞

পরদিন দৈনিক পাকিস্তান পত্রিকায় এটা ছাপে। ভারতের ইশারায় ১৯৬৯ সালের কথিত গনঅভূত্থানের নামে মাস্তানি করে সেনাবাহিনীতে থাকা ভারতের গুপ্তচরদের রক্ষা করে। এবং ১৯৭০ সালের ইলেকশনে ভারতের ইশারায় বসে যায়। যদি ভাসানি ইলেকশনে যেত তাহলে ৭০ টা সিটে ফলাফল অন্যরকম হয়ে যেত এবং সম্ভবত যুদ্ধ, হত্যাযজ্ঞ, সম্পদক্ষয়ের ভেতর দিয়ে যাওয়া লাগতো না। ভারতের হাতে পূর্ব বাংলাকে তুলে দিয়ে ময়লানা আমার করে ফারাক্কা মার্চ...

কিন্তু যেহেতু মজিবের সাথে ময়লানার ঝামেলা তাই অনেকে একে মাথায় উঠায়...এই নাকি প্রকৃত জাতির পিতা.... লুঙ্গির আবার সাইড পকেট তাও চেইন সিস্টেম!

MIR

08 Nov, 16:13


৭ নভেম্বরের পরে মুক্তিযুদ্ধের সংবিধান, এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ভিত্তিতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় চরিত্র গঠিত হয়েছিলো তা নাটকীয় ভাবে ১৮০ ডিগ্রি বদলে যায়। যেমন:

১। মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনা ধর্ম নিরপেক্ষতা বাদ দিয়ে সংবিধানের প্রস্তাবনাতে— ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’(পরম দয়ালু, দয়াময় আল্লাহর নামে) সংযোজন করেন।

২। সংবিধানের ৮(১) এবং ৮ (১ক) অনুচ্ছেদে ‘সর্বশক্তিমান আল্লাহর উপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস’ বাক্যটি যোগ করেন।

৩। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার আরেক মূলনীতি সমাজতন্ত্র পরিবর্তন করে 'অর্থনৈতিক ও সামাজিক সুবিচার' করেন।

৪। ইসলামি রাজনীতির উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করেন।

৫। একদলীয় বাকশাল বিলুপ্ত করেন।

৬। বাঙালি জাতীয়তাবাদের পরিবর্তে বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ প্রর্বতিত হয় যেটা মূলত মুসলমান জাতীয়তাবাদের কপি-পেস্ট।

৭। মুক্তিযুদ্ধের অর্থ, অস্ত্রসহ সব ধরনের সাহায্য প্রদানকারী ভারতের সাথে সম্পর্ক একেবারে সীমিত করা হয়।

৮। বাংলাদেশ নাস্তিক কমিউনিস্ট দেশের বলয় থেকে বের হয়ে মুসলমান বিশ্বের সাথে যুক্ত হয়। এটা করতে সংবিধানে একটা ধারা অন্তর্ভুক্ত করা হয়—

❝ রাষ্ট্র ইসলামী সংহতির ভিত্তিতে মুসলিম দেশসমূহের মধ্যে ভ্রাতৃত্ব সম্পর্ক সংহত, সংরক্ষণ এবং জোরদার করিতে সচেষ্ট হইবেন। ❞ [২৫(২) অনুচ্ছেদ]

শুধু তাত্ত্বিকভাবেই না, প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান দেশকে সামগ্রিক ভাবে ধর্মনিরপেক্ষতা তথা নাস্তিকতা এবং সমাজতান্ত্রিক ফ্যাবরিক থেকে বের করে মুসলমান প্রধান পরিচয়কে সামনে নিয়ে আসেন। এজন্য—

১। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিপোরীতে বেতার ও টেলিভিশনে নামাজের সময় আজান প্রচার শুরু করেন।

২। বিভিন্ন ধর্মীয় দিবস উপলক্ষে, বিশেষ করে ঈদে মিলাদুন্নবী, শবে বরাত, শবে কদর এবং আশুরা পালন বেশ ঘটা করেই শুরু করেন।

৩। শবে বরাত, শবে কদর উপলক্ষে জাতির উদ্দেশে 'বাণী' দেওয়া চালু করেন।

৪। বিভিন্ন সেনানিবাসে কেরাত প্রতিযোগিতা চালু করেন৷

৫। পাকিস্তান আমলে দেশে ইসলামিক একাডেমি' প্রতিষ্ঠা করা হয়। ১৯৭২ সালে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সরকার এটা বন্ধ করে দেয়। ১৯৭৫ সালে একে ইসলামিক ফাউন্ডেশন' নামে চালু করা হয় তবে কার্যক্রম এবং বাজেট ছিল খুবই সীমিত। জিয়াউর রহমান ইসলামি ফাউন্ডেশনকে কার্যকর করেন।

৬। স্বতন্ত্র একটি ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয় তৈরি করেন।

৭। মাদ্রাসা শিক্ষার প্রসারে সহায়তা করেন। ১৯৭৫ সালে দেশে ছিল ১,৮৩০টি আর ছাত্র ২,৯১,১৯১ জন। তিন বছরের মধ্যে, ১৯৭৮ সালে মাদ্রাসার সংখ্যা বেড়ে হয় ২,৩৮৬ এবং ছাত্রসংখ্যা হয় ৪,৪১,২০০ জন।

৮। মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী শেখ মুজিবের মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সরকারের হাতে নির্যাতিত শাহ আজিজুর রহমান, মশিউর রহমান, খান এ সবুরেরা প্রধানমন্ত্রী/মন্ত্রী হোন।

MIR

07 Nov, 14:06


সাত নভেম্বর বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের গত ৫৩ বছরের ইতিহাসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিন। যদি জেনারেল জিয়া দক্ষভাবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না নিতেন তাহলে পূর্ব বাংলা লাইব্রেরিয়ার মত একটা গৃহ-যুদ্ধের মধ্যে পরে যেত এবং চূড়ান্তভাবে ভারতের পরিকল্পনা অনুযায়ী অখন্ড ভারতের অংশ হয়ে যেত।

৭১ সালে দেশভাগের পর দেশে চরমতম অস্থিরতা তৈরি হয়েছিলো। প্রথমে ভারতীয় বাহিনীর লুটপাট এবং আওয়ামী লীগের লুটপাটে দুর্ভিক্ষ, সব রাজনৈতিক দল এবং সংবাদপত্র বন্ধ, মজিবের নিজেকে আমরণ প্রেসিডেন্ট/সম্রাট ঘোষণা করা, জাসদ, ভাসানী ন্যাপের হাজার হাজার নেতা-কর্মীদের হত্যাসহ সব মিলিয়ে একেবারে...। ভারত এবং ইজরাইলের অস্ত্র-টাকা নিয়ে গন্ডগোল করার শাস্তি বাঙালি পেয়ে যায় ইমিডিয়েটলি।

১৯৭৫ সালে নভেম্বরে দেশে বিবাদমান পক্ষ ছিল চারটা।

এক— জেনারেল খালেদ মোশাররফের নেতৃত্বে সেনাবাহিনীর একাংশ, আওয়ামী লীগ/বাকশাল এবং রক্ষীবাহিনী।

দুই— সিরাজুল আলম খান এবং কর্ণেল তাহেরে জাসদ এবং তাদের সশস্ত্র গণবাহিনী।

তিন— মোশতাকের নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ এবং সেনাবাহিনীর একানংশ।

চার- এই তিন দলের বাইরে সেনাবাহিনীর পেশাদার, অরাজনৈতিক অংশ এবং জনতা।

উপরের তিন দল ক্ষমতার দখল করতে লড়ছিলো। সেনাপ্রধান জেনারেল জিয়া যদিও চতুর্থ দল তথা ক্ষমতার লড়াইয়ের বাইরে ছিলেন তবে ক্যারিশমাটিক ব্যক্তিত্বের জন্য তার সেনাবাহিনী এবং জনগণের মাঝে বিপুল জনপ্রিয়তা ছিল।

১৫ আগস্টের পাল্টা অভ্যুত্থান হিসেবে খালেদ বিদ্রোহ করে করে৷ মোশতাক পাল্টা সরকারের ভয়ে আওয়ামী লীগের বড় চার নেতাকে জেলের ভেতরে হত্যা করে। খালেদের শক্তি বৃদ্ধি হয় ক্ষমতা দখল করে এবং জিয়াকে বন্দী করে। এই অবস্থাতে সেনাবাহিনীর অরাজনৈতিক অংশ এবং জনতা সক্রিয় হয়। জিয়াকে জেল থেকে ধরে এনে ক্ষমতার কেন্দ্রে বসিয়ে দেয়। জিয়া দক্ষভাবে বিবাদমান পক্ষকে নিয়ন্ত্রণে আনে। সিপাহি-জনতার এই বিদ্রোহে তাহের, সিরাজের সমর্থন ছিল।

এই চারটা পক্ষই অস্ত্র, জনবলে যথেষ্ট শক্তিশালী ছিল এবং তাদের বৈদেশিক বন্ধুও ছিল (চতুর্থ দল বাদে)। যদি জিয়া পরিস্থিতি শান্ত না করতে পারতেন তাহলে এই চার দল দীর্ঘ মেয়াদি গৃহযুদ্ধে জরিয়ে যেত এবং পূর্ব পরিকল্পনা অনুসারে ভারত দেশ দখল করে নিতো।

MIR

07 Nov, 08:35


বিবলিক্যাল এবং ইসলামি লিটারেচার অনুসারে ইবলিশ অবাধ্য হবার পরে আল্লাহ তাকে তওবা করার সুযোগ দিয়েছিলেন। কিন্তু ইবলিশ তওবা করে নাই উল্টো অহংকার করে।

মওলানা আবুল কালাম আজাদ সাহেব বলেছিলেন শয়তানের বৈশিষ্ট্য হল সে কখনোই অনুতপ্ত হয় না, মানুষ শয়তান বা জ্বীন শয়তান। আওয়ামী লীগের কারো কথায় মনে হয় না এদের মধ্যে বিন্দুমাত্র অনুতাপ আছে...

আর ইস্কন। গনহ-ত্যা কারীদের পতনের পর থেকে এরা নিঃলজ্জ, বেহায়ার মত একের পর এক সমাবেশ করতেছে। মাস খানিক আগে সম্পূর্ণ মিথ্যা বলে শাহাবাগ আটকে রেখেছিলো সারাদিন। কোথায় হামলা হয়েছে জিজ্ঞেস করলে তারা সাংবাদিকদের উপর চড়াও হয়। এই রকম জালিয়াতি ধরা পরার পরেও এদের নূনতম লজ্জা নাই।

ওই যে কথা আগের টাই শয়তান কখনো অনুতপ্ত হয় না।

আওয়ামী লীগের পরে দেশে ভারতের সফট পাওয়ার ইস্কন। আমাদের বিপ্লবীদের নিরাপত্তার জন্য হলেও গনহ-ত্যার সহযোগী উগ্রবা-দী ইস্কনকে জয় বাংলা করতে হবে।

MIR

02 Nov, 10:18


জয় শ্রীরাম কোন ধর্মীয় শ্লোগান না, একটা পলিটিক্যাল শ্লোগান। এটা ভারতের উগ্রবাদী সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসীদের শ্লোগান।

খোদ ভারতে এই শ্লোগান বিতর্কিত। ২০২১ সালের ২২ জানুয়ারি ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালে নেতাজি জয়ন্তী পালনের অনুষ্ঠানে উপস্থিত একাংশ জয় শ্রীরাম শ্লোগান দিলে ক্ষুব্ধ, বিরক্ত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভাষণ না দিয়েই পোডিয়াম ত্যাগ করেন। ২০২২ সালের ২৯ ডিসেম্বর হাওড়া স্টেশনে সেমি হাই স্পিড ট্রেন ‘বন্দে ভারত’ এক্সপ্রেসের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে বিজেপি কর্মীরা জয় শ্রীরাম স্লোগান দেয় এতে অনুষ্ঠানের মঞ্চেই আর উঠেন নাই মমতা।

২০১৯ সালের ৬ জুলাই যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে এক বক্তৃতায় অমর্ত্য সেন জয় শ্রীরাম শ্লোগানের বিরোধিতা করে বলেছিলো,

❝ বঙ্গ সংস্কৃতিতে কোনও কালেই স্লোগানের কোনও জায়গা ছিল না। লোককে প্রহার করতে হলে এখন এ সব বলা হচ্ছে। ❞ [তথ্যসূত্র কমেন্টে]।

তবে কাজ হচ্ছে না, কোলকাতাসহ সারা ভারত দাপিয়ে বেড়াচ্ছে জয় শ্রীরাম। জয় শ্রীরাম শ্লোগান দিয়ে বাবরি মসজিদকে শহীদ করা হয়েছে। এই শ্লোগান দিয়ে কাস্মীর, হায়দারাবাদ, এবং গুজরাটে হাজার হাজার মুসলমানকে জ-বা-ই করা হচ্ছে। এই শ্লোগান দিয়ে গরু সন্ত্রাস চালানো হচ্ছে। এই শ্লোগান দিয়ে NRC, CAA করে মুসলমানদের সম্পদ কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। এই শ্লোগান দিয়ে আসামের মুসলমানদের সব সহায় সম্বল কেড়ে নিয়ে কনসানট্রেশন ক্যাম্পে পশুর মত আটকে হয়েছে।

জয় শ্রীরাম শ্লোগান দিয়েই সংসদে কথিত অখন্ড ভারতের মানচিত্র সাটিয়েছে। জয় শ্রীরাম শ্লোগান দিয়েই আমিত শাহ নিয়মিত হুমকি দিচ্ছে তারা বাংলাদেশকে এনেক্স করে নেবে। নেহেরু ডকট্রিন অনুসারে ২০৪৭ সালের মধ্যে ভারত পূর্ব বাংলাকে এনেক্স করবে।

এবং বাংলাদেশের কমপক্ষে ১০ থেকে ১৫ ভাগ মানুষ অখন্ড ভারতের অংশ হতে চায়। একাত্তর টিভির মোজা বাবু, গোবিন্দ প্রমানিকেরা তো প্রকাশ্যে বলা শুরু করেছিলো ভারতের অংশ হতে। বাংলাদেশ জিন্দাবাদ, বা তুমি কে, আমি কে ধরনের শিশুতোষ শ্লোগান দিয়ে এমন প্রবল উ-গ্র-বা-দী জয় শ্রীরামকে মোকাবেলা করা সম্ভব না।

তাহলে উপায় কি? এই জানোয়ারকে আমরা রুখবো কি দিয়ে? ইকবাল আশার কথা বলে গেছেন,

ফেরাউন হো তুম
তো মুসা ভি জরুর আয়েগা

হিস্টোরি রিপিটস ইটসেল্ফ। ১০০ বছর আগে যে শ্লোগান দিয়ে আমাদের পূর্ব পুরুষেরা এই জানোয়ারদের রুখে দিয়েছিলো সেখানেই ফেরত যেতে হবে। যে শ্লোগানকে আমরা খারিজ করে দিছি...

MIR

01 Nov, 09:11


পর্ব- ১: সামাজিক অবস্থা

সম্ভবত আমেরিকার স্লেভ মাস্টারদের পরেই বাংলার হিন্দু জমিদাররা ছিলো ইতিহাসের নৃশংসতম শাসক গোষ্ঠী।

যেসব কর গরীব প্রজাদের কাছ থেকে আদায় করতো তা ছিলো অবিশ্বাস্য। ভারচুয়ালি সাধারণ মানুষ ছিল জমিদারদের দাস। যেমন—

১. গরুর গাড়ি করে মাল পাঠালে ধুলো উড়তো, তাই গাড়ির মালিককে যে কর দিতে হোত তার নাম ‘ধুলট’।

২. প্রজা নিজেদের জায়গায় গাছ লাগালেও তাকে একটি কর দিতে হোত, তার নাম ‘চৌথ’।

৩. গরীব প্রজারা আখের গুড় তৈরী করলে যে কর লাগতো তা ‘ইক্ষুগাছ কর’।

৪. হতভাগ্য প্রজাদের গরু মোষ মরে গেলে ভাগাড়ে সেই মৃত পশু ফেলার পর যে কর লাগতো তা হোল ‘ভাগাড়ে কর’।

৫. নৌকোয় মাল উঠালে বা নামালে সে করের নাম ছিল ‘কয়ালী’ ।

৬. ঘাটে নৌকা ভিড়ালে একটি কর লাগতো তার নাম ‘খোটাগাড়ৌ কর’।

৭. জমিদারের সঙ্গে দেখা করতে হলে একরকমের কর দিয়ে সম্মান জানাতে হোত, তার নাম ‘নাজরানা’।

৮. জমিদার কোনও কারণে হাজতে গেলে তাঁকে ছাড়িয়ে আনতে প্রজাদের একটি কর দিতে হোত, তার নাম ‘গারদ সেলামি’ ইত্যাদি।

৯. মুসলমান দাড়ি রাখলে কর দিতে হত আবার গোঁফ খাঁটো করলেও কর।

১০. যেকনো প্রকারের মসজিদ নির্মাণের আগে মসজিদের আকারের বিচারে নূন্যতম পাঁচ শত থেকে এক হাজার টাকা হার কর দিতে হত। কাঁচা মসজিদের জন্যে পাঁচশ’ টাকা এবং প্রতি পাকা মসজিদের জন্যে এক হাজার টাকা কর দিতে হত।

১১. মুসলমান নাম রাখলে নামের জন্য ৫০ টাকা কর দিতে হত।

১২. মুসলমানদেরও বাধ্যতামূলক ভাবে কালি পূজায় চাঁদা দিতে হতো।

১৩. জমিদারের বাড়ির সামনে ছাতা মাথায় দিয়ে হাঁটা নিষিদ্ধ।

১৪. জমিদারের বাড়ির সামনে জুতা/স্যান্ডেল পায়ে দিয়ে হাঁটা নিষিদ্ধ।

১৫. জমিদার বাড়িতে হিন্দুদের জন্য বসার জায়গা ছিল কিন্তু মুসলমানদের বসার অনুমতি ছিল না।

১৬. গরু কুরবানি দেওয়া নিষিদ্ধ ছিল, গরু কুরবানি দিলে ডান হাত কেটে নেওয়া হত

১৭. কঠোরভবে সতীদাহ প্রথা মেনে চলা হত। কোন হিন্দু নারীর স্বামী মারা গেলে তাকেও স্বামীর সাথে চিতার আগুনে পুড়িয়ে হ-ত্যা করা হত।

১৮. উগ্র বর্ণবাদ। মুসলমান বর্ণ হিন্দুর বাড়ির প্রবেশ দূরে থাক, মুসলমানদের ছায়া কোন বর্ণ হিন্দুর বাড়ির সীমানার মধ্যে পরলে বাড়ি অপবিত্র হয়ে গেছে মনে করতো। কোন মুসলমান হিন্দুর বাড়ির কাছাকাছি গেলেই তার উপর অত্যাচার চালানো হত।

১৯। রাজা হুকুম ছাড়া প্রজাদের বাড়িতে ঘর তোলা, পুকুর কাটা নিষিদ্ধ ছিল। মোটা অংকের কর দিলে তবেই অনুমতি মিলতো।

১৭৫৭ সালে বাংলার স্বাধীনতার সূর্য অস্ত যাবার পরে ইংরেজদের মোসাহেবি করে ধীরে ধীরে হিন্দুরা মুসলমানদের জমিদারি দখল করে। ১৯৫০ সাল পর্যন্ত জমিদারদের এই অনাচার জারি ছিলো।

১৯৪৭ সালে কায়েদে আজম মুহাম্মদ আলী জিন্নাহর নেতৃত্বে মুসলিম লীগ সরকার গঠন করে। কায়েদে আজমের অন্যতম প্রধান এজেন্ডা ছিল জমিদার তন্ত্রের অবসান।

১৯৫০ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি পূর্ববঙ্গ পরিষদে জমিদারি উচ্ছেদ ও প্রজাস্বত্ব বিল পাশ হয়। পরদিন এ খবর ছাপিয়ে দৈনিক আজাদ শিরোনামে লেখে—

❝ পূর্ববঙ্গের সাড়ে ৪ কোটী অধিবাসীর বুকের উপর হইতে জমিদারী প্রথার জগদ্দল পাথর অপসারিত;

দেশের শোষিত ও নিগৃহীত জনসাধারণের অর্থ-নৈতিক মুক্তির সূচনা; বৃহস্পতিবার পূর্ববঙ্গ পরিষদে জমিদারি উচ্ছেদ ও প্রজাস্বত্ব বিল গৃহীত;

মুসলিম লীগ ও কায়েদে আজমের বহু আকাঙ্ক্ষিত স্বপ্নসাধ বাস্তবে রূপায়িত। ❞

এই গৃহীত বিলটিই ১৯৫১ সালের ১৬ মে গভর্নর খাজা নাজিমুদ্দিন এক সরকারি আদেশে অ্যাক্টে পরিণত করেন।

২০০ বছর পরে বাংলার মুসলমানেরা আবার জমির মালিক হয়। ২০০ বছর পরে বাংলার মুসলমানেরা কোলকাতার হিন্দু জমিদারের প্রজা থেকে আজাদ নাগরিক হোন।

সূত্র:
১। স্বপন বসু, গণ অসন্তোষ ও উনিশ শতকের বাঙালী
২। আব্দুল গফুর, শহীদ তিতুমীর
৩। আব্বাস আলী খান, বাংলার মুসলমানদের ইতিহাস
৪। আব্দুল মান্নান, আমাদের জাতিসত্তার বিকাশধারা
৫। দৈনিক আজাদ, ১৬ মে ১৯৫১

MIR

30 Oct, 15:30


শুধুমাত্র অ্যামেরিকার ১৫০ টিরও বেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের নামের অংশ খৃষ্টান। যেমন:
Florida Christian University (FCU), Southern Christian University, Christian Brothers University (CBU), Abilene Christian University (ACU) ইত্যাদি, ইত্যাদি।

এজন্য অ্যামেরিকার সেকুলারদের কোন সমস্যা হয়নি। কিন্তু পূর্ব বাংলায় একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে মুসলিম থাকায় সেকুলাদের জাত চলে যায়…

বাংলাদেশের সেকুলারেরা এই রকম উ-গ্র-বা-দী কেন এই প্রশ্নের মীমাংসা করাটা বেশ গুরুত্বপূর্ণ।

MIR

29 Oct, 07:55


যা গত ১৫ বছর বলার সাহস পায়নি:

হাসিনা কি মুজিবের অসমাপ্ত আত্মজীবনী বিকৃত করেছিলো?
____
অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে মুজিব মুহাম্মদ আলী জিন্নাহকে সম্মোধন করেছেন জিন্নাহ সাহেব বলে।

১৯৬৪ সালে দৈনিক ইত্তেফাক হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী নিয়ে একটা স্মারক গ্রন্থ প্রকাশ করে, নাম গনতন্ত্রের মানসপুত্র হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী। সেই বইতে শেখ মুজিব একটা প্রবন্ধ লেখে "নেতাকে যেমন দেখিয়াছি" নামে, সেই প্রবন্ধে, বইয়ের ৩০৪ নম্বর পৃষ্ঠার প্রথম দুই লাইনে মুহাম্মদ আলী জিন্নাহকে তিন বার কায়েদে আজম বলে অভিহিত করেছেন।

অর্থাৎ একই সময়ে ব্যক্তিগত ডায়েরিতে লিখতেছেন জিন্নাহ সাহেব আর পাবলিকলি বলেছেন কায়েদে আজম। গোপনে এক রকম আর প্রকাশ্যে আরেক রকম: এমন দুমুখো ব্যক্তিকে আপনার ভাষায় কি বলে? বাংলা ভাষায় সম্ভবত বলে টাউট।

তবে আমার ধারনা ডায়েরিতেও কায়েদে আজমই ছিল। শেখ হাসিনা সেটা জয় বাংলা করেছে। [মূল পান্ডুলিপি দেখে এটা ভ্যারিফাই করার উপায় অবশ্য আছে]

কোন ধরনের বিকৃত রুচির হলে কোন মেয়ে তার দুর্ঘটনায় মরে যাওয়া বাপের ডায়েরিও বিকৃত করতে পারে।

অসমাপ্ত আত্মজীবনী আমি ৩ বার পড়েছি। এটা একটা ঘটনা মাত্র। আমার আরো ৪/৫ টা খটকা আছে কিন্তু তার কোন প্রমান আমার হাতে নাই।

MIR

27 Oct, 18:10


বাংলাদেশ জামাতে ইসলাম এবং ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশ সংসদে সংখ্যানুপাতিক আসনের প্রস্তাব দিয়েছে। পদ্ধতি বা তরিকা হিসেবে সংখ্যানুপাতিক আসন ব্যবস্থার বেশ কিছু ভাল দিক আছে। 

সংখ্যানুপাতিক ভোট ব্যবস্থায় প্রতিটি দল যত শতাংশ ভোট পায়, তাদের জন্য তত শতাংশ আসন বরাদ্দ করা হয়। উদাহরণস্বরূপ, যদি একটি দল মোট ভোটের ৩০% পায়, তবে তাদের প্রায় ৩০% আসন দেওয়া হয়। এই পদ্ধতির মাধ্যমে প্রতিটি ভোটারের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত হয়। অল্প ভোটের ব্যবধানে কোন এক দলের বিপুল ক্ষমতার পাবার সম্ভাবনা থাকে না।  ছোট দলগুলোও তাদের জনপ্রিয়তার অনুপাতে প্রতিনিধিত্ব পেতে পারে। গণতন্ত্রে ইনসাফ প্রতিষ্ঠার মাধ্যম হিসেবে সংখ্যানুপাতিক ভোট ব্যবস্থা খুবই কার্যকর। 

ওলেন্দাজ গনিতজ্ঞ এবং রাজনীতিবিদ মার্সেলাস জ্যাকবাস বাকমা প্রথম সংখ্যানুপাতিক ব্যবস্থার ধারনা দেন। পরবর্তীতে ব্রিটিশ সমাজবিজ্ঞানী থমাস হেয়ার এই তত্ত্বকে বিবৃত করেন।

টমাস হেয়ার ১৮৫৭ সালে প্রথম তার বই “The Machinery of Representation”-এ এই পদ্ধতির একটি বিশদ রূপ দেন। তিনি প্রস্তাব করেন যে প্রত্যেক ভোটারের মতামত যথাযথভাবে প্রতিফলিত হওয়া উচিত এবং সংখ্যানুপাতিক ভিত্তিতে আসন বণ্টন করা উচিত। পরবর্তীতে, জন স্টুয়ার্ট মিল এই ধারণাকে সমর্থন করেন এবং এর প্রচারণায় ভূমিকা রাখেন।

কিন্তু আমাদের মাথায় রাখতে হবে পশ্চিমের সমাজবিজ্ঞানীরা পশ্চিমের সমস্যা সমাধানের জন্য বছরের পর বছর গবেষণা করে একটা তত্ত্ব আবিস্কার করেন। সমাজবিজ্ঞানের যেকোন তত্ত্বকে প্রভাবিত করে সে দেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য, ধর্ম, ভাষা, সামাজিক অবস্থা ইত্যাদি। ইউরোপের সমাজ এবং বাংলাদেশের সমাজ এক না। সমাজের এই প্রভাবক শক্তিগুলোকে বিবেচনায় না নিয়ে সরাসরি ইউরোপীয় তত্ত্ব বাংলাদেশে কপি-পেস্ট করলে কতটা কাজ করবে সেটা তর্কাতীত নয়। 

ইতিপূর্বে বাংলাদেশের নির্বাচন কালীন সরকারের সমস্যা নিরসনে জামাতের সাবেক প্রধান অধ্যাপক গোলাম আজম খুবই নিবির গবেষণা করে একটা চমৎকার বন্দোবস্তের প্রস্তাব দেন— তত্ত্বাবধায়ক সরকার। তিনি ইউরোপ-আমেরিকা কি করে তার দিকে না তাকিয়ে দেশের সমাজকে গুরুত্ব দিয়েছিলেন। তাই তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা কাজ করেছে। কিন্তু এবার জামাতের প্রস্তাব একেবারে হুবহু পশ্চিমা পদ্ধতির কপি-পেস্ট। এই পদ্ধতির কিছু বড় চ্যালেঞ্জ আছে যেটা বাংলাদেশ মোকাবেলা করতে পারবে কিনা প্রশ্নবিদ্ধ। 

প্রথমত, যে সমস্যা সমাধানের জন্য জামাত এই প্রস্তাব দিয়েছে, অর্থাৎ কেউ যেন ফ্যাসিস্ট না হতে পারে, এই ব্যবস্থা সেই সমস্যা সমাধান না করে উল্টো সেই সমস্যাকে বাড়িয়ে দিতে পারে। এই ব্যবস্থা দলীয় প্রধানদের একটা নিরঙ্কুশ ক্ষমতা দিয়ে দিচ্ছে। দলীয় প্রধান শুধু তার পছন্দের লোককে মনোনয়ন দেবেন। রাজনৈতিক ব্যক্তিরাও দেখবেন তাদের জনগনের কাছে কোন দায় নাই, দায় আছে দলের প্রধানের কাছে। তারাও জনগণকে রেখে দলের প্রধানকে তোষামদে ব্যস্ত হয়ে যাবে। সংসদ পরিণত হয়ে পারে জনবিচ্ছিন্ন, ধনী, দলীয় প্রধানদের তোষামোদকারী লোকদের একটা ক্লাব। অর্থাৎ এই ব্যবস্থা প্রতিটি রাজনৈতিক দলকেই চরিত্রগত দিক দিয়ে ফ্যাসিস্ট করে তুলতে পারে।

দ্বিতীয়, এই ব্যবস্থার একটা সমস্যা হল দুর্বল সরকার। বাংলাদেশে যে কয়েকটি সুষ্ঠ নির্বাচন হয়েছে ১৯৯১, ১৯৯৬, এবং ২০০১; এই তিনটি নির্বাচনের কোনটাতেই কোন দল ৫০ ভাগের বেশি ভোট পায়নি। অর্থাৎ মোটামুটি বেশিরভাগ সময়ই কোয়ালিশন সরকার করতে হবে। বাংলাদেশে কোয়ালিশন সরকার কতটা কাজ করতে পারবে এটা প্রশ্নবিদ্ধ, যেকোন সময় ছোটদল গোলপোস্ট পরিবর্তন করে সরকারকে ফেলে দিতে পারবে। সরকারের মধ্যে অস্থিরতা কাজ করবে এবং সরকারের মেয়াদ পূর্ণ করা হবে একটা চ্যালেঞ্জ। আমাদের প্রতিবেশী নেপাল সংখ্যানুপাতিক ভোট ব্যবস্থা প্রর্বতন করেছে, গত ২০ বছরে কোন সরকার মেয়াদ পূর্ণ করতে পারেনি। বাংলাদেশের সামাজিক এবং রাজনৈতিক অবস্থার সাথে বেলজিয়াম বা জার্মানির রাজনৈতিক অবস্থার চেয়ে নেপালের রাজনৈতিক অবস্থার সাদৃশ্য অনেক বেশি।

তাহলে প্রশ্ন হল আমরা কি করতে পারি। আমরা কি সেই আগের পদ্ধতিতেই থাকবো যেখানে ভোটারদের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত হয় না। অল্প ভোটের ব্যবধানে একটা দল বিশাল ক্ষমতা পেয়ে যেতে পারে এবং একজন মুজিব বা শেখ হাসিনার জম্ম দিতে পারে?

আমার মনে হয় এই জটিলতার একটা সমাধান আছে, বিএনপি এবং জামাতের প্রস্তাবের সমন্বয়ের মাধ্যমে।  বিএনপি তাদের ৩১ দফা রাষ্ট্র সংস্কার প্রস্তাবে দ্বি-কক্ষ বিশিষ্ট সংসদের প্রস্তাব দিয়েছে।  সংসদের নিম্নকক্ষ বিদ্যমান ব্যবস্থায় থাকুক আর উচ্চকক্ষ হোক ১০০ সদস্যের সংখ্যানুপাতিক সংসদ। দুই সংসদের ক্ষমতার একটা ভাগাভাগি থাকবে। ভোটের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করন, সরকারের স্থিতিশীলতা, এবং দলীয় বা সরকারি ফ্যাসিজম বন্ধে এই ব্যবস্থা নিয়ে বাংলাদেশের রাজনৈতিক দল এবং সমাজবিজ্ঞানীরা ভাবতে পারেন।

MIR

26 Oct, 08:10


আওয়ামী লীগের ৭২ সালের সংবিধানের ঝামেলা কোথায়?

১৯৭০ সালের ইলেকশনে জেতার পর আওয়ামী লীগ ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে সংবিধান প্রনয়ণ কমিটি গঠন করে। সেই কমিটি সংবিধানের একটা খসড়া প্রস্তাব করে৷ সেই খসড়ার প্রথম লাইন ছিল,

In the name of Allah, the Beneficent, the Merciful

খসড়াতে সংবিধানে নির্দেশনামূলক মূলনীতি বা DIRECTIVE PRINCIPLES প্রস্তাব করা হয় ৩ টি:

1. No law shall be repugnant to the injunctions of Islam as laid down in the Holy Quoran and Sunnah. [ ইসলামের বিধানের বিরোধী কোন আইন করা যাবে না। ]

2. Facilities shall be provided for the teaching of the Holy Quoran and Islamiat to the Muslims of Pakistan. [পাকিস্তানের মুসলমানদের জন্য পবিত্র কুরআন ও ইসলামিয়াত শিক্ষা প্রদানের সুবিধা নিশ্চিত করা হবে।]

3. Observance of Islamic moral standards should be promoted amongst the Muslims of Pakistan. [পাকিস্তানের মুসলমানদের মধ্যে ইসলামী নৈতিক মান বজায় রাখার চর্চা উৎসাহিত করতে হবে]।

এটা আওয়ামী সরকার প্রকাশিত স্বাধীনতা যুদ্ধের দলিল পত্রের দ্বিতীয় খন্ডের ৭৯৪-৭৯৫ পাতায় আছে।

১৯৭০ সালে পূর্ব বাংলার জনগণ আওয়ামী লীগকে ম্যানডেট দিয়েছিলো উপরক্ত সংবিধান করতে৷ এর জনগণের সাথে বিশ্বাসঘাতকা করে ১৯৭২ সালে এক সংবিধান করে যেখানে আল্লাহর নামে শুরু উঠিয়ে দিয়ে, উপরক্ত মূলনীতি সরিয়ে মূলনীতি করা হয়
১। সমাজতন্ত্র।
২। ধর্মনিরপেক্ষতা।

১৯৭২ সালের সংবিধান সরাসরি জনগণের সাথে বেইমানির একটা নির্লজ্জ দলিল। এই গার্বেজ ডাস্টবিনে ফেলে দেওয়া উচিত।

MIR

24 Oct, 18:38


সিস্টেম হিসেবে সংখ্যানুপাতিক আসন ব্যবস্থার কিছু ভাল দিক আছে। তবে কিছু ঝামেলাও আছে। প্রথমত এর ফলে সংসদ এলিটদের ক্লাবে পরিনত হবে। জনবিচ্ছিন্ন, দলীয় প্রধানদের তোষামোদকারী লোকদের দিয়ে ভরে যাবে সংসদ।

আবার একই সাথে এটাও সত্য বিদ্যমান পদ্ধতিতে ভোটারদের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত হয় না। অল্প ভোটের ব্যবধানে একটা দল বিশাল ক্ষমতা পেয়ে যায়। জামাত, ইশা আন্দোলন সংখ্যানুপাতিক পায় আর বিএনপির আপত্তি।

আমার মনে হয় এই জটিলতার একটা সমাধান আছে। বিএনপি দ্বি-কক্ষ বিশিষ্ট সংসদের প্রস্তাব দিয়েছে। রাষ্ট্রপতি পদ বিলুপ্ত করে দ্বি-কক্ষ বিশিষ্ট সংসদ করা হোক। সংসদের নিম্নকক্ষ বিদ্যমান ব্যবস্থায় থাকুক আর উচ্চকক্ষ হোক ১০০ সদস্যের সংখ্যানুপাতিক সংসদ। দুই সংসদের ক্ষমতার একটা ভারসাম্য থাকবে।

MIR

20 Oct, 17:58


একটা স্ট্যাটাস দেবার জন্য আমার বুয়েট পড়ুয়া বন্ধু তানজিলকে হিন্দুত্ববাদী ছাত্রলীগ ধরে সারা রাত নির্যাতন চালায়। হুবহু আবরারের মত। শুধুমাত্র আল্লাহ ওর হায়াত রেখেছিলো এই যা। সকালবেলা পুলিশ এসে উঠিয়ে নিয়ে যায়। হাসপাতালে ছিল অনেক দিন।

ওর স্ট্যাটাস ছিল:

বিশ্ববিদ্যালয়ের হল গুলোর একটা কালচার আছে জুনিয়রদের সিনিয়রদের সালাম দিতেই হবে না হলে...। তানজিল একটা জুনিয়রকে সালাম দিলে ছেলেটা ভয় পেয়ে যায়, এবং ওকে বলে ভাইয়া আমি আপনার জুনিয়র। তখন তানজিল লেখে ইতিহাসের শ্রেষ্ঠতম মানুষ রাসুল পাক সা. কে কেউ আগে সালাম দিতে পারতো না। আর আমরা এমন অবস্থা তৈরি করেছি জুনিয়রদের সালাম দিলে তারা আতংকিত হয়।

#একট_স্ট্যাটাসের_মূল্য

MIR

20 Oct, 17:58


সাবেক অধিনায়ক আশরাফুল বলেন,

❝ এতোদিন খেলার কারণে আসতে পারিনি। আজ খেলা না থাকায় তরুণদের এই আন্দলনের সঙ্গে যোগ দিতে এখানে এসেছি। ক্রিকেটারা এই আন্দলনের সঙ্গে আছে। ❞

আমাদের প্রিয় ধার্মিক কৃকেটার মোহাম্মদ আশরাফুল।

MIR

20 Oct, 17:58


শনিবার সন্ধ্যায় স্ত্রী ইশিতাকে নিয়ে শাহবাগে আসেন ক্রিকেটার শাহরিয়ার নাফিস। পাঁচ দিন ধরে চলমান এই আন্দোলনের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে খুলনা রয়েল বেঙ্গলসের অধিনায়ক নাফিস বলেন,

❝ শাহবাগে তরুণদের এই আন্দোলনে আসতে পেরে ভালো লাগছে।এমন একটি প্রতিবাদে সবারই অংশগ্রহণ করা উচিৎ। ❞

আমাদের প্রিয় ইসলামি একটিভিস্ট ক্রিকেটার শাহরিয়ার নাফিজ

MIR

20 Oct, 17:57


অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম, সাবেক অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা ও মোহাম্মদ আশরাফুল, নাসির হোসেন, ইলিয়াস সানি, আব্দুর রাজ্জাক, সোহাগ গাজী, এনামুল হক বিজয় ও মোমিনুল হক রোববার বেলা দেড়টায় শাহবাগের সমাবেশে উপস্থিত হলে করতালি দিয়ে ও জাতীয় পতাকা নাড়িয়ে তাদের স্বাগত জানায় জনতা।

সাবেক অধিনায়ক আশরাফুল বলেন, “এতোদিন খেলার কারণে আসতে পারিনি। আজ খেলা না থাকায় তরুণদের এই আন্দলনের সঙ্গে যোগ দিতে এখানে এসেছি। ক্রিকেটারা এই আন্দলনের সঙ্গে আছে।”

এর আগে শনিবার সন্ধ্যায় স্ত্রী ইশিতাকে নিয়ে শাহবাগে আসেন ক্রিকেটার শাহরিয়ার নাফিস। পাঁচ দিন ধরে চলমান এই আন্দোলনের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে খুলনা রয়েল বেঙ্গলসের অধিনায়ক নাফিস বলেন, “শাহবাগে তরুণদের এই আন্দোলনে আসতে পেরে ভালো লাগছে।এমন একটি প্রতিবাদে সবারই অংশগ্রহণ করা উচিৎ।”

এ ছাড়া দুরন্ত রাজশাহীর মালিক মুশফিকুর রহমান মোহনের নেতৃত্বে ক্রিকেট দলের তুষার, হান্নান, নাঈমুর রহমান জুনিয়র, মুনির প্রমুখ শাহবাগের আন্দোলনে যোগ দেন।

বিসিবি এডহক কমিটির সদস্য আহমেদ সাজ্জাদুল আলম ববি, জালাল ইউনুস, মাহাবুবুল আনাম, আফজালুর রহমান সিনহা, লোকমান হোসেন ভূইয়া এবং ইসমাইল হায়দার মল্লিকও ছিলেন এই দলে। আন্দোলনে শরিক হয়ে একাত্মতা প্রকাশ করেন জাতীয় দলের প্রধান নির্বাচক আকরাম খান এবং নির্বাচক হাবিবুল বাশারও। জাতীয় দলের সাবেক ক্রিকেটাররাও বাদ পড়েনি।

২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারী মাসের ১০ তারিখ এই খবর ছাপে। লিংক কমেন্টে।

অর্থাৎ, শাহবাগে গিয়ে বিচার চাই না জ-বা-ই কর, জ-বা-ই কর, শ্লোগান দিয়ে এই খুনী মাফিয়াজম প্রতিষ্ঠার পেছনে বড় ভূমিকা রেখেছে পুরো ক্রিকেট ইন্ডাস্ট্রি।

এই পুরো সিস্টেমকে জবাবদিহিতার মধ্যে না আনা হলে আড়াই হাজার শহীদ এবং ৩৫ হাজার আহতদের রক্ত ভেজা আন্দোলন নিয়ে এরা তুচ্ছতাচ্ছিল্য আরো করবে। এদেরকে জবাবদিহিতার সামনে আনতে হবে।

আমাদের ভুলে গেলে চলবে না খেলাধুলা বিনোদনের একটা অংশ মাত্র। বিনোদনকারীরা যদি হয় গনহ-ত্যা-র সহায়তাকারী তাদের কোন দরকার সমাজে নেই।

MIR

20 Oct, 12:37


মোকাবেলা: জামাতের নারী নীতি

সকল ইসলামি দল, ইসলামপন্থীদের এই প্রশ্নের মোকাবেলা করতেই হবে— তারা নারী স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না।

গতদিন জামাতের আমীর বলছেন তারা ক্ষমতায় গেলে মেয়েদের সোশ্যাল ডেভেলপমেন্টে অংশ গ্রহনের মাত্রা বাড়াতে ব্যবস্থা গ্রহন করবেন। জামাত মেয়েদেরকে ঘরে বন্দী রাখায় বিশ্বাসী না ইত্যাদি ইত্যাদি।

i will bet my last penny, আরবান মিডিলক্লাস শফিক সাহেবের এই বক্তব্য বিশ্বাস করে নাই। এটা জামাত, বা ইশা আরো ১০০ বার বললেও বিশ্বাস করবে না। কারন এই কথা জামাতের চরিত্রের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ না।

উইমেন এম্পাওয়ারমেন্ট নিয়ে মোটাদাগে জামাতসহ সকল ইসলামপন্থীদের মধ্যে একটা হীনমন্যতা, ইনফেরিয়োরিটি কমপ্লেক্স আছে। এই হীনমন্যতা ঢাকতে তারা ইসলামে নারীর অধিকার, ইসলামই নারীকে বেশি অধিকার দিয়েছে ধরনের লিটারেচার প্রডিউসড করেছে দিস্তা দিস্তা কাগজ নষ্ট করে।

জামাত, শিবির, বা ইসলামপন্থীদের একাংশ ফেমিনিস্ট লিটারেচারের অংশবিশেষ কবুল করে নিয়েছে। নারীদের অংশ গ্রহন, কমিটিতে নারী রাখা জাতীয় কথা ফেমিনিস্ট টোনেই বলে। তবে তাতে কোন লাভ হয় নাই, দিনশেষে তারা জামাতই থেকে গেছে৷

তাদেরকে বার বার একই প্রশ্ন করা হচ্ছে যাই উত্তর দেন না কেন মিডিল ক্লাসের উত্তরের প্রতিক্রিয়া হল খুব বিশ্বাস করলাম!

আমার মনে হয় জামাত বা ইসলামপন্থীদের হীনমন্যতা পরিত্যাগ করে সত্য মোকাবেলা করা হিম্মত থাকা উচিত।

এখানে জামাত বা ইসলামপন্থীদের অনটোলজিক্যাল রিয়েলিটি কি যেটা তারা উচ্চারণ করতে পারে না— হ্যাঁ, আমাদের নারী অধিকার এবং ওয়েস্টার্ন ফেমিনিজমের নারী অধিকার এক না।

ওয়েস্টার্ন ফেমিনিজমের নারী অধিকার বয়ানের বৃহৎ অংশ দাঁড়িয়ে আছে হার্ম প্রিন্সিপালের উপর। মেয়েদের চলাফেরা, পোশাককে আপনি থিওলজিক্যাল, ফিলোসফিক্যাল বা মোরাল ফ্রেইমওয়ার্ক থেকে প্রশ্ন করতে পারবেন না। আপনাকে দেখতে হবে লিগ্যাল ফ্রেইমওয়ার্ক দিয়ে৷

আর ইসলামপন্থীদের অধিকারের সব ধরনের বয়ান প্রতিষ্ঠিত থিওলজিক্যাল এবং মোরাল ফ্রেইমওয়ার্কের উপর। অর্থাৎ ইনহেরেন্টলি জামাত এবং ফেমিনিস্টদের অধিকারের ন্যারেটিভ আলাদা, এদের ডিপ স্ট্রাকচার ভিন্ন।

এজন্য যে কান্ডটা হয়েছে তা হল একজনের কাছে যেটা অধিকার আরেক জনের কাছে সেটা অপরেশন। একজনের কাছে যেটা সম্মানের আরেক জনের কাছে সেটা অপমান।

এখানে আমি বলতে পারি, আপনি কোন তরিকা নেবেন সেটা একান্তই আপনার ব্যক্তিগত ব্যাপার।

তাত্ত্বিক কথা বাদ দিয়ে আমরা যদি ট্যানজেবল উদাহরণ নিয়ে ভাবি।

মিউ ইউনিভার্স, মিস বাংলাদেশ জাতীয় অনুষ্ঠান উইমেন এম্পায়ারমেন্টের একটা এপেক্স হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বাংলাদেশের সব বিখ্যাত নারীবাদীরা মিস বাংলাদেশ প্রোগ্রামে হিসেবে জাজ থাকেন। তারা একে নারীমুক্তির একটা স্মারক হিসেবে উল্লেখ করেন।

অন্যদিকে ইসলামপন্থীদের চোখে মেয়েদের বুক, বাহু, নিতম্ব, কোমর, ঠোঁট ফিতা দিয়ে মেপে মেপে নম্বর দিয়ে প্রথম, দ্বিতীয় করা একটা ফিলথি, ডিজগাস্টিং প্র‍্যাকটিস, এর মাধ্যমে নারীদের অসম্মান করা হচ্ছে।

এখন আমার কাছে নারী অধিকার মানে কি?

এক- গার্মেন্টসের মেয়েরা বিগত দিনের ক্রীতদাসের চেয়েও বেশি কাজ করে কিন্তু বেতন পায় ক্রীতদাসদের চেয়েও কম। আমি আবার বলি, গার্মেন্টস কর্মীরা একমাত্র আমেরিকার ক্রীতদাস ছাড়া, ইতিহাসের বাকী দুনিয়ার দাসদের চেয়েও কঠোর পরিশ্রম করে।

দুই- মেয়েরা কাজ পায় না। তাই ইট ভাঙ্গা, ইট টুকরিতে করে বিল্ডিংয়ের উপরে উঠানোর মত ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করতে হয়। এর পেছনে আছে মুদ্রাস্ফীতির ভয়ংকর জাল।

তিন- ঢাকা শহরের গন পরিবহন ব্যবস্থার অরাজকতা ভয়ঙ্কর পর্যায়ের। ঢাকায় মেয়েদের চলাচল করা একটা ভয়াবহ দুঃস্বপ্ন।

চার- চা বাগানের নারী শ্রমিকেরা দিনরাত পশুর মত পরিশ্রম করে অথচ তিনবেলা ডাল-ভাত খাবার মত মজুরিও পায়না।

পাঁচ- মাঝে-মাঝেই বিভিন্ন সমাবেশে মেয়েরা পুরুষ পুলিশ কর্তৃক নির্যাতনের শিকার হয়।

ছয়- মেয়েরা পিতার সম্পত্তির প্রাপ্য অংশ থেকে বঞ্চিত হয়। এটা একটা সামাজিক নিয়ম হয়ে গেছে।

সাত- কিছু বিদ্যালয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মেয়েদেরকে নম্বরের ফাঁদে ফেলে নিপীড়ন করে।

আট- ঢাকা শহরের কিছু স্কুলে পোশাক নীতিমালার নামে প্রকাশ্যে মেয়েদের ফুল হাতা জামা কেটে ফেলা হয়।

নয়- এই ব্যাপারটা আমি প্রত্যক্ষভাবে জানিনা, তবে শুনি অনেকের কাছে, অফিস পাড়ায়, পুলিশ, এমনকি সামরিক বাহিনীতেও মেয়েরা নানান ভাবে হয়রানির মুখে পড়ে।

আমার কাছে নারী অধিকার মানে এই সমস্যাগুলোর সমাধান।

ইসলামপন্থীরা নারী অধিকার মোকাবেলায় এমন ম্যাসড আপ এবং কনফিউজড হয়ে আছে যে তারা এই ব্যাপারগুলো ভুলে গেছে। তারা আছে দিস্তা কাগজ নষ্ট আর আমরাও নারী অধিকারে বিশ্বাস করি ধরনের হীনমন্যতায়।

MIR

18 Oct, 12:02


জিয়াউর রহমানের ২৭ মার্চের ঘোষণা আমার কাছে এই অঞ্চলের গত ১০০ বছরের ইতিহাসের আন-সলভড মিস্ট্রির একটা।

জিয়াউর রহমানের ৪৫ বছরের জীবনের একাত্তরের ৯ মাসের সাথে বাকী জীবন মেলে না।

ভারত পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বহু বাঙ্গালী অফিসারের পেছনে কাড়ি কাড়ি টাকা ঢেলেছে। আগরতলায় নিয়ে মিটিং করেছে। জিয়াউর রহমান ভারতে গিয়ে কোন মিটিং করেছেন কিংবা ভারতের টাকা নিয়েছেন এমন কোন বর্ণনা পাওয়া যায় না। ১৯৬৫ সালের যুদ্ধে জিয়াউর রহমানের ছোট্ট ইউনিট ভারতের একটা গোটা বৃগেডকে জাহান্নামে পাঠিয়ে দেয়।

সেই ব্যক্তি সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা প্রতিষ্ঠার যুদ্ধে যোগ দিয়েছিলো!?

এবং ক্ষমতা পেয়েই জিয়া মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সমাজতন্ত্র এবং ধর্মনিরপেক্ষতা প্রতিস্থাপন করেন আল্লাহর উপর পূর্ণ আস্তা এবং বিশ্বাস দিয়ে। জিয়া মুক্তিযুদ্ধের বন্ধু ভারত-সোভিয়েত ইউনিয়নের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী সউদি আরব, আমেরিকান ব্লকে যোগ দেন।

শুধু তাই না, যে বাঙালি জাতীয়তাবাদের নামে যুদ্ধ হয়েছে সেটাকে ছুড়ে ফেলে দিয়ে তিনি করেন বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ। ঢাবির প্রফেসর আমেনা মহসিনসহ বামপন্থী সব বুদ্ধিজীবীই বলেন, বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ মূলত পাকিস্তানি মুসলমান জাতীয়তাবাদের কপি-পেস্ট।

শেষে খটকা সেই আগের টাই, ১৯৩৬ থেকে ১৯৭১ এবং ১৯৭২ থেকে ১৯৮১ পুরা জীবনটা একটা ফাইন লাইনে ব্যাখ্যা করা যায়। কিন্তু যুদ্ধের নয় মাস তিনি একেবারেই ভিন্ন মানুষ।

তিনি এই প্রশ্নের উত্তর দিয়ে যান নাই অথবা সময় পান নাই and most probably it will remain an unsolved mystery...

বিএনপি জিয়ার একাত্তরের ভূমিকা নিয়ে হৈচৈ করার চেষ্টা করে। এটা একেবারেই লস্ট ব্যাটেল। জিয়ার মূল ভূমিকা ৭ নভেম্বর। সিপাহি-জনতার বিপ্লবের সফল না হলে ভারত পূর্ব বাংলাকে হায়দারাবাদ, সিকিমের মত গিলে ফেলতো [যে উদ্দেশ্যে তারা একাত্তরে সাহায্য করেছিলো]।

MIR

17 Oct, 11:34


তাজুদ্দিন, ভাসানী, ওসমানি, জিয়া প্রমুখকে একাত্তর প্রসঙ্গে মুজিবের পাশাপাশি রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে।

এটা অত্যন্ত উঁচু লেভেলের স্টুপিডিটি। এই বয়ান ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে চলে যাবে। ১০০ না ১ লক্ষ তাজুদ্দিকে এক করে গিট্টু দিলেও সেটা একাত্তরের মুজিবের নকের সমান হবে না। কোন আম বাগানে কে কি বলছিলো তাতে কিছু যায় আসে না।

ইনফ্যাক্ট সব নেতা, জেনারেলদের এক পাল্লায় এবং অন্য পাল্লায় মুজিবকে রাখলেও, মুজিব উইল ওভার পাওয়ার দেম।

একাত্তরের যুদ্ধে মুজিব একটা এস্ট্রোনোমিকাল ফিগার। এবং একাত্তরের যুদ্ধ= মুজিববাদ।

MIR

16 Oct, 11:46


খুনী হাসিনা সংবিধানে একটা ধারা যুক্ত করেছিলো জাতির জনক বিষয়ে৷ তবে আমার আগ্রহ হল শুধু বাংলাদেশ বা পূর্ব বাংলা না; পূর্ব বাংলা, পশ্চিম বাংলা, আসাম, বিহার, উড়িষ্যা, করাচী এই সব জায়গাতে যে বাঙ্গালী আছে, এই পুরো বাঙ্গালী জাতির পিতা কে!?

এটা নিয়ে কেউ আলোচনা করেছেন কিনা আমি জানি না। তবে আমার ইতিহাস জ্ঞান বলে তিনি সম্ভবত সুলতান শামসুদ্দিন ইলিয়াস শাহ। বঙ্গ, বাঙ্গালা, বাঙ্গালী এই শব্দের প্রথম ব্যবহার শুরু হয় উনার আমলেই। চর্যাপদের ভাষা বির্তকিত বিষয়, অহমিয়া, উড়িয়া ভাষা বিজ্ঞানীরা দাবি করে এটা অহমিয়া ভাষা, উড়িয়া ভাষা। প্রথম প্রকৃত এবং তর্কাতীত বাংলা সাহিত্যও রচিত হয়েছে শামসুদ্দিন ইলিয়াস শাহের সময়ে৷

শামসুদ্দিন ইলিয়াস শাহ প্রথম পুরো বাংলা একত্রিত করেন৷ তার রাজত্বকালেই বাঙ্গালীরা একটি জাতি হিসেবে আত্নপ্রকাশ করে। এ সময় হতেই বাংলার সকল অঞ্চলের অধিবাসী বাঙ্গালী বলে পরিচিত হয় এবং বাংলার বাইরের দেশগুলোও তাদের কে বাঙ্গালী বলে অভিহিত করে।

MIR

13 Oct, 10:25


ফেমিনিজমের জন্ম ইউরোপে কেন হল?
__
কোন একটা সোশ্যাল থিওরি হুট করে মাটি ফুঁরে বের হয় না। সমাজের কোন একটা বিশেষ পরিস্থিতিতে, সমাজের প্রয়োজনে তত্ত্বের জন্ম নেয়।

যেমন, উনবিংশ শতাব্দীতে ইউরোপের কল-কারখানার শ্রমিকদের সাথে অমানবিক নির্যাতনের কারনে কমিউনিজমের উত্থান হয়েছিলো। প্রটেস্ট্যান্টনিজমের জন্মের পেছনে অনুঘটক কৃষকদের উপর চার্চের অত্যাচার।

ফেমিনিজমের জন্ম চীনে কেন হল না? জাপান, ইরান, ফিলিস্তিন, মিশর, বা ইন্দোনেশিয়াতে কেন হল না?

নারীবাদের জন্ম পশ্চিমে হয়েছে কারনে গত কয়েক হাজার বছর ধরে নারীদের প্রশ্নে পশ্চিম একবারে ম্যাসড আপ ছিল। যদি তাদের সাহিত্য, রুপকথা একটু খেয়াল করা যায় দেখা যাবে এরা কনফিজড ছিল নারী আসলে কি? উইচ, শয়তানের ব্রোকার, Originator of the Original sin, সাবহিউম্যান, আত্না নাই, you name it! তারা লক্ষ লক্ষ মেয়েকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করেছে উইচ সন্দেহ করে।

এশিয়া বা মুসলমানদের মধ্যে এই সমস্যার একটাও ছিল না।

ভাবতে পারেন এটা হয়তো ইউরোপের অশিক্ষিত লোকেরা বলতো। নাহ ভুল, এরিস্টটলের মত এতবড় কুতুব বলেছিলো মেয়েদের দাঁতের সংখ্যা ছেলেদের দাঁত থেকে একটা কম। প্রায় ৯০০ বছর ধরে ইউরোপের মানুষ এটা বিশ্বাস করেছে। একবারও কেউ নিজের মেয়ে বা স্ত্রীর দাঁত গুনে সেটা চেক করে দেখার প্রয়োজন মনে করে নাই। ইউরোপের অহংকার গ্রিক সভ্যতার মানুষ বিশ্বাস করতো মেয়েদের আত্না বলে কিছু নাই।

এই হাজার বছরের কনফিউশনের ফলাফল হিসেবে তারা নতুন তত্ত্ব সামনে আনে ফেমিনিজম। সমতার একটা অদ্ভুত ব্যাখ্যা সামনে নিয়ে আসে। এটাও আরো বেশি কনফিউজিং।

এরপর দুই বিশ্বযুদ্ধ করে যখন ইউরোপের সব ছেলে মরে সাফ হয়ে যায়, এই দুই মহাযুদ্ধ এবং যুদ্ধের সাইড ইফেক্টে (স্পানিশ ইনফ্লুয়েঞ্জা) প্রায় ৩০ কোটি মানুষ মারা যায় যার বেশির ভাগই ছেলে। গ্রামের পর গ্রাম,শহরের পর শহর পুরুষ শূন্য হয়ে যায়। মেয়েদের কাজে নামতে হয়। ফেমিনিজম জেঁকে বসে।

এই উদ্ভট সমতার ধারনা দুনিয়ার কোথাও ছিল না। এই সমতার ধারনা নিজেরা গলদ ঘরন করেছে। সারা দুনিয়াকে এই সমতার বায়ান চাপিয়ে করার চেষ্টা করছে। এই তত্ত্ব গিলতে বাধ্য হচ্ছে। তবে গিললেও তা হজম করতে পারছে না...

MIR

10 Oct, 14:58


ধর্ম যার যার, খরচ মুসলমানের
_____
পশ্চিম বাংলার হিন্দুর সংখ্যা ১০ কোটি। ২০২৩ সালে পশ্চিম বাংলায় দুর্গাপূজা মণ্ডপের সংখ্যা ছিল ৪০ হাজার।

বাংলাদেশে হিন্দু সংখ্যা ১ কোটি ৩০ লক্ষ। ২০২৩ সালে দেশে দুর্গা পূজা মণ্ডপ করা হয় ৩২ হাজার ২০০ টি।

বাংলাদেশে পূজায় মণ্ডপ প্রতি সরকারি বরাদ্দ রাখা হয় ৫০০ কেজি চাল। চালের দাম গড়ে ৫০(৫০০*৬০) টাকা ধরলে ৩২,২০০ পুজা মন্ডপে সরকারি বরাদ্দ ছিল (২৬০০০*৩২২০০= ৮৩৭,২০০,০০০) ৮৩ কোটি ৭২ লক্ষ টাকা।

এছাড়া ম্যাজিট্রেট, ডিসি, এসপি, এমপি, জেলা পরিষদ, মেয়র, মন্ত্রী, এবং প্রধানমন্ত্রীর তরফ থেকে আছে আলাদা অনুদান। অনুদানের পরিমান এলাকাভেদে ভিন্ন হয়। এর কোন নির্দিষ্ট হিসাব নেই। অনলাইনে খোঁজা করে বিচ্ছিন্ন তথ্য পেলাম। যেমন গেল বছর ২০২৩ সালে:

১। শেখ হাসিনা পূজা উপলক্ষে বাংলাদেশ হিন্দু কল্যাণ ট্রাস্টক অনুদান দেয় ৩ কোটি টাকা।

২। মাগুরা জেলার শ্রীপুর উপজেলার ১৫১ টি মন্দিরে নগদ ১৯ হাজার ৭৫০ টাকা করে মোট ২৯ লাখ ৮২ হাজার ২৫০ টাকার অনুদান দেওয়া হয়।

৩। রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন ৭৯ টি পূজা মন্ডপকে ২০ হাজার টাকা করে অনুদান প্রদান করে।

আবার এমন রিপোর্ট দেখলাম অনেক—

১। যশোরের কিশোরপুর উপজেলার মন্দির সমূহকে সরকারের বিশেষ অনুদানের চেক প্রদান।

২। রাজশাহী ২ আসনের সংসদ সদস্য ফজলা হোসেন বাদশা ৭৬ টা মন্ডপে বিশেষ অনুদানের চেক প্রদান করেছে।

৩। রাঙামাটি জেলা পরিষদ ৪৩টি পূজা মন্ডপে অনুদান প্রদান করেছে।

৪। সালথায় বিভিন্ন পূজা মন্ডব পরিদর্শন ও আর্থিক অনুদান দিলেন মেজর আতমা হালিম।

কিন্তু কত টাকার চেক সেটা উল্লেখ নেই কোন রিপোর্টেই।

এজন্য একদম নির্দিষ্ট করে সারাদেশে কত টাকা দেওয়া হয়েছে সে ব্যাপারে তথ্য নেই৷ তবে একদম লোয়েস্ট এস্টিমেট করলেও চাল এবং অনুদান মিলিয়ে কয়েকশো কোটি টাকার কম হবে না কোন ভাবেই।

___
অন্যদিকে মুসলমানদের উৎসব ঈদে সরকারের একমাত্র খরচ হল জাতীয় ঈদগ্রাহ সাজানো। প্রতি বছর দুই ঈদে সরকার জাতীয় ঈদগাহ সাজাতে প্রায় ৭০ লক্ষ টাকা খরচ করে।

২০২৩ সালে রমজান মাসে মুসলমানদের ইফতারের প্রধান অন্যতম অনুষঙ্গ খেজুরে অস্বাভাবিক শুল্ক ধরা হয়েছে। এ বছর মাঝারি মানের ১ কেজি খেজুরের শুল্ক ধার্য করা হয়েছে ২.৫ ডলার, ভাল খেজুরে ৪ ডলার। ডলার থেকে টাকা করলে ১২০ টাকা রেট বিবেচনায় সেটা ৩০০ এবং ৪৮০ টাকা।

এই শুল্ক দেওয়া হয়েছে রমজানকে টার্গেট করে। রোজার মাসে ইফতারে সব মুসলমানই খেজুর রাখার চেষ্টা করে তাই এই পকেট কাটার ব্যবস্থা।

আর বাংলাদেশের কোন যবন সন্তান যদি হজ্জ করতে চায় গুনতে হবে ৬ লক্ষ টাকা। বাংলাদেশ থেকে প্রায় দ্বিগুণ দূরত্বে অবস্থিত ইন্দোনেশিয়া থেকে হজ্জ করতে খরচ হবে ২ লক্ষ টাকা। বেশি লাগার একটা বড় কারণ হচ্ছে এই হাসিনা হজ্জের উদ্দেশ্যে গেলে অতিরিক্ত বিমান ভাড়া ধার্য করেছে। সউদি আরব যেতে সাধারণ অবস্থায় বিমান ভাড়া ৫০/৬০ হাজার টাকা। কিন্তু এবারের হজ্জের বিমান ভাড়া ১,৯৬,০০০/

অর্থাৎ শুধু বিমানভাড়া বাবদই প্রতি যাত্রী থেকে হাসিনা পকেট কাটছে এক লক্ষ পঞ্চাশ হাজার টাকা। এছাড়া অনান্য ফিও মাত্রাতিরিক্ত।

MIR

06 Oct, 10:17


রাসূল পাকের পতাকা ভার্সেস দায়েশের পতাকা

কুরাইশদের পতাকা ছিল সাদা-কালো এবং কালো রঙের। রাসূল পাক সা. দুই ধরনের পতাকা ব্যবহার করতেন:
১। সম্পূর্ণ সাদা৷
২। সম্পূর্ণ কালো।

এই পতাকায় কোন লেখা ছিল না। একদম এক রঙা পতাকা।

ছোট সাদা পতাকাকে বলা আল উকাব বা বাচ্চা ঈগল। আর বড় সাদা পতাকার নাম ছিল আল রায়াত আল উকাব বা ঈগলের পতাকা।

কালো পতাকা তৈরি করা হয়েছিলো আমাদের আম্মাজয়ান আয়েশা সিদ্দিকা রা. এর মাথার নেকাব দিয়ে। বড় কালো পতাকার নাম ছিল আল রায়াত আল সাওদা।

হযরত উমর ইবনুল আস রা. এক রঙা লাল রঙের পতাকা ব্যবহার করতেন।

খোলাফায়ে রাশেদা পরবর্তী উমাইয়া খেলাফত শুধুমাত্র সাদা পতাকা ব্যবহার করতো। আর আব্বাসী খেলাফত গ্রহন করে কালো পাতাকা।

আব্বাসিদের পরে উসমানি খেলাফত চাঁদ-তারা সম্বলিত পতাকা গ্রহন করে। ১৯২০ সালে উসমানি খেলাফতের পতন হয়। তবে চাঁদ-তারা মুসলমানেরা প্রতীক হিসেবে গ্রহন করেছে। এখন তুরস্ক, পাকিস্তান, মালেশিয়া, আলজেরিয়াসহ ২১ টা মুসলমান দেশের পতাকায় চাঁদ-তারা আছে।

আমাদের স্থানীয় বাংলা সালতানাতের পতাকাতেও চাঁদ-তারা ছিল।

সউদি আরবের পতাকাতে কালেমা আছে। এছাড়া বিভিন্ন মুসলমান বডির পতাকায় কালেমা আছে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একটা পতাকাতে কালেমা আছে।

কালেমার পতাকা নিয়ে বির্তক শুরু হয় দা-য়ে-শ জাতীয় কিছু উগ্রবাদী গোষ্ঠী থেকে। এই গ্রুপ কালো-সাদা পতাকার উপর একটা নির্দষ্ট ফ্রন্টে কালেমা লেখা শুরু করে। মুসলমান বিশ্বে বিশ্বাস করা হয় এই উগ্রবাদী দলগুলো পশ্চিমের স্পন্সর করা। তারা কাজ করে মুসলমান দেশগুলোতে পশ্চিমের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে। ফিলিস্তিনের গা-জা-তে এই উগ্রবাদী দল কার্যক্রম শুরু করতে চেয়েছিলো হা-মা-স তাদেরকে গাজা থেকে খুবই কঠোর হস্তে বের করে দেয় এবং কোন রকম স্পেস দেয়নি। আফ-গানি-স্তানে তা-লেব সরকারও এদেরকে আফগান থেকে বের করে দেয়।

বাংলাদেশের ভারতের স্পন্সরে তৈরি হওয়া উগ্র দল জেএমবির পতাকাও একই। জেএমবি ২০০৬ সালে ৬৩ জেলায় বো-মা ফাঁটিয়ে মুসলমানপন্থী জোট সরকারকে বিপদে ফেলে হিন্দুত্ববাদী আওয়ামী সরকারকে ক্ষমতায় আনে।

হিন্দুত্ববাদী মাফিয়ার পতনের পরে ভারতের মিডিয়া সারা বিশ্বে প্রচার চালাচ্ছে বাংলাদেশে উ-গ্র-বাদী দলের উত্থান হয়েছে। ঠিক সেই সময়ে বাংলাদেশে কলেজের বাচ্চা ছাত্রদের হাতে জেএমবির পতাকা দিয়ে, মুখে মুখোশ লাগিয়ে মিছিল করালো। একজন সাংবাদিক রিপোর্ট করেছে ঢাবিতে কয়েকজন এসে কলেজের ছাত্রদের হাতে পতাকা তুলে দেয়, পরিচয় জিজ্ঞেস করলেই তারা পালায়। আবার ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরাও অনেক জায়গায় প্রকাশ্যে এই কালো পতাকার পক্ষে প্রচারণা চালাচ্ছে।

এদের উদ্দেশ্য বাংলাদেশে উগ্র আছে বলে প্রচার চালিয়ে আন্তর্জাতিক মহলের চাপ সৃষ্টি করা। ঢাকার মিডিলক্লাসকে জুলাই বিপ্লবের ডিস-এসোসিয়েট করা। আর মিডিলক্লাসের সমর্থন চলে গেলে কোন সরকারই টিকতে পারবে না। এই সরকারকে সরিয়ে আবার ভারতের হিন্দুত্ববাদী জেনারেলকে সরকারে বসানো। যেমনটা তারা ২০০৬ সালে করেছিলো।

বাংলাদেশের মূল ধারার আলেম সমাজ সব সময়ই এইসব উগ্র গ্রুপের ব্যাপারে সচেতন। আল্লামা দেলোয়ার হোসেন সাঈদি বলেছিলেন, এদেরকে দেখলে সরাসরি আইনের হাতে তুলে দেবেন। হেফাজতে ইসলামের একটা সমাবেশে এই পতাকা দেখা গেলে, হেফাজতের আমির, আল্লামা মুহিবুল্লাহ বাবুনগরী কঠোরভাবে এটা ব্যবহার করতে নিষেধ করেছেন। গতদিন চরমোনাইয়ের পীর সাহেবের র‍্যালিতে কয়েকজন এই পতাকা নিয়ে গেলে চরমোনাইয়ের নেতা-কর্মীরা তাদেরকে ধরে পুলিশের হাতে সোপর্দ করে।

[[তাদের ইসলামের প্রতি দরদ নিয়ে আমার কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু তাদের রাজনৈতিক জ্ঞান একেভারেই নাই। অল্প- কয়েকজন তাদেরকে কেউ ব্যবহার করতেছে]

বিস্তারিত পড়াশোনা:

১। Nicolle, David (1993). Armies of the Muslim Conquest. Osprey Publishing

২। Hinds, Martin (1996). Studies in Early Islamic History

৩। Nour, “L’Histoire du croissant,” p. 66/295.

৪। Ibn Khaldun, Muqaddimah, pp. 214–15.