ইসলামী আকিদাহ

@islamiaqidah


ইসলামী আকিদাহ

16 Oct, 17:44


আশয়ারি মাতুরিদির সংখ্যা কেনো বাড়তেছে? কেনো মানুষ আশয়ারি মাতুরিদিদের মাধ্যমে ধোঁকায় নিপতিত হচ্ছে?

সালাফি আব্দুল্লাহ ইবনে ইউসুফ জুনাইদি,কিছু কারণ বর্ণনা করেছেন, যার কারণে মানুষ আশয়ারি মাতুরিদি আকিদা গ্রহণ করে থাকে।

জুনাইদি তার কিতাবে লিখেছেন, সংক্ষেপে কিছু কারন উল্লেখ করবো,যার কারণে মানুষ আহলে বিদয়াহ,আশয়ারি মাতুরিদির মাধ্যমে ধোঁকায় নিপতিত হয়।

১/আশয়ারি মাতুরিদি বিদ্বানরা নিজেদেরকে আহলে সুন্নত বলে দাবি করে, এবং তারা হাদিসচর্চা, এলমে রিজালে খুব গুরুত্ব দিয়ে থাকে,যা সালাফদের বৈশিষ্ট্য।

২/শাখাগত মাস'আলায় সুন্নাতের সহযোগিতা এবং সুন্নত থেকে জাল কারীদের প্রতিরোধ করে,এবং সুন্নতের উপর লেখালেখি করে।

৩/তাদের থেকে জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহ,সৎকাজের আদেশ,অসৎ কাজের নিষেধ, ধার্মিকতা এবং সততার প্রসিদ্ধতা বেশি রয়েছে ।

৪/শরিয়তে ইসলামের শত্রুদের বিভিন্ন দলের বিপক্ষে তাদের খণ্ডন থাকা।যেমন আশয়ারিদের "মুতাজিলা,এবং ফালসাফিদের খণ্ডন"।

৫/যুগে যুগে তাদের অনুসারী বেশি থাকা।

এগুলো প্রধাণতম কারন, যেগুলোর মাধ্যমে মানুষ আশয়ারি মাতুরিদিদের ধোকায় নিপতিত হয়।

আল আকিদাতুস সালাফিয়্যাহ ফি কালামে রাব্বিল বারিয়্যাহ,( পৃ. ৪৪৭,৪৪৮)

তিনি ইমাম ইবনে কুদামা রহি. এর আল মুনাজারা টিকায় লিখেছেন,

আশয়ারিদের বিদয়াত খুব জোরেশোরে বৃদ্ধি পাচ্ছে, ইতিহাস এবং বাস্তবতা এগুলোর সত্যায়ন করে। বৃদ্ধি পাওয়াটা বেশি হয়েছে আশয়ারির পরের যুগে, তারা বাড়তেছে এমনকি প্রচুর হয়ে গেছে। তারা এভাবে আজ পর্যন্ত বেড়েই চলেছে।

আল মুনাজারাতু ফিল কোরআন পৃ.৫২

ইসলামী আকিদাহ

12 Oct, 15:15


উল্লেখিত আয়াতাংশের তাফসীর জানার জন্য দেখুন তাফসীরে ইবনে কাসীর খ. ৬ পৃ. ১৪০ ও আদ্দুররুল মানসূর খ. ৫ পৃ. ৮০-৮১ এবং ইমাম ইবনে তাইমিয়া রাহ.-এর কিতাব ‘ইকতিযাউস সিরাতিল মুসতাকীম মুখালাফাতা আসহাবিল জাহীম’ খ. ১ পৃ. ৪২৭-৪৩২)
আরেক হাদীসে এই ঘটনা বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবদ্দশায় একজন মান্নত করল, অমুক জায়গায় সে উট জবাই করবে। সে আল্লাহর রাসূলের নিকট মাসআলা জানতে চাইলে

আল্লাহর রাসূল জিজ্ঞেস করলেন-
هَلْ كَانَ فِيهَا وَثَنٌ مِنْ أَوْثَانِ الْجَاهِلِيّةِ يُعْبَدُ؟
সেখানে কি জাহেলী যুগের কোনো মূর্তি ছিল, যার পূজা করা হত? লোকেরা বলল, না। পুনরায় জিজ্ঞেস করলেন-
هَلْ كَانَ فِيهَا عِيدٌ مِنْ أَعْيَادِهِمْ؟
সেখানে কি অমুসলিমদের কোনো উৎসব হত? লোকেরা বলল, না।

তখন আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন-
أَوْفِ بِنَذْرِكَ، فَإِنّهُ لَا وَفَاءَ لِنَذْرٍ فِي مَعْصِيَةِ اللهِ...
তুমি তোমার মান্নত পুরা কর। (এরপর বললেন, এসব প্রশ্ন এজন্য করা হয়েছে) কারণ, আল্লাহর নাফরমানিতে কোনো মান্নত গ্রহণযোগ্য নয়; এ ধরনের মান্নত পূরণ করা জায়েয নয়। - সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৩৩১৩, অধ্যায় : মা ইয়ু’মারু বিওয়াফাইহী মিনান নাযরি

সাহাবায়ে কেরাম কুরআন-হাদীসের হেদায়েত ও নির্দেশনাসমূহ যথাযথভাবে হৃদয়ঙ্গম করেছিলেন। এজন্য তাঁরা মানুষকে অমুসলিমদের উৎসবে যেতে অত্যন্ত কঠোরভাবে নিষেধ করতেন। হযরত উমর রা. বলেন-
اجْتَنِبُوا أَعْدَاءَ اللهِ فِي عِيدِهِمْ.
তোমরা আল্লাহর শত্রুদের উৎসব থেকে দূরে থাক।- আসসুনানুল কুবরা লিলবাইহাকী, বর্ণনা ১৮৮৬২; ইকতিযাউস সিরাতিল মুসতাকীম, খ. ১ পৃ. ৪৫৬-৪৫৭
অবশেষে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দুটি মৌলিক হেদায়েত স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি।

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
مَنْ تَشَبّهَ بِقَوْمٍ فَهُوَ مِنْهُمْ.
যে যে জাতির সাদৃশ্য গ্রহণ করবে সে তাদেরই বলে গণ্য হবে। -সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৪০৩১
কোনো জাতির উৎসব হচ্ছে সে জাতির শিআর বা নিদর্শন। অতএব বিজাতির নিদর্শনাবলীর ক্ষেত্রে যে তাদের সাদৃশ্য গ্রহণ করে, সে যে হাদীসে উল্লেখিত ধমকির অন্তর্ভুক্ত- এ বিষয়ে কি কোনো সন্দেহ আছে?

আরেক হাদীসে এসেছে-
مَنْ كَثّرَ سَوَادَ قَوْمٍ فَهُوَ مِنْهُمْ وَمَنْ رَضِيَ عَمَلَ قَوْمٍ كَانَ شَرِيكًا لِمَنْ عَمِلَهُ.
যে ব্যক্তি কোনো কওমের দল ভারী করবে সে তাদের মধ্যে গণ্য হবে। আর যে কোনো সম্প্রদায়ের কাজের প্রতি সন্তুষ্টি প্রকাশ করবে সে সে কাজের অংশীদার বলে ধতর্ব্য হবে। - (মুসনাদে আবু ইয়ালা)

আলমাতালিবুল ‘আলিয়া খ. ৪ পৃ. ৩১৫; কিতাবুয যুহদি ওর্য়ারাকাইক, ইবনুল মুবারক পৃ. ৪৪৭, অধ্যায় : বাবু ইসতিমায়িল লাহ্বি; নাসবুর রায়াহ, খ. ৪ পৃ. ৩৪৬-৩৪৭; আদ্দিরায়াহ ফী তাখরীজি আহাদিসিল হিদায়া (দ্র. হিদায়া খ. ৪ পৃ. ৫৬৭, হিন্দুস্তানী সংস্করণ) ফাতহুল বারী, ইবনে হাজার খ. ১৩, পৃষ্ঠা ৩৭-৩৮, হাদীস ৭০৮৫ باب من كره أن يكثر سواد الفتن والظلم; আলমাকাসিদুল হাসানা খ. ৫ পৃ. ১৮১

আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে ঈমানী গায়রত দান করুন। সকল শিরক থেকে রক্ষা করুন এবং বিজাতীয় সকল আচার-অনুষ্ঠান ও পর্ব-উৎসব থেকে দূরে থাকার তাওফীক দান করুন। আমীন।
মাসিক আলকাউসার এর সৌজন্যে

ইসলামী আকিদাহ

12 Oct, 15:15


মনে রাখা উচিত, আল্লাহ তাআলার নিকট শিরক সবচে বড় কবীরা গুনাহ। অন্যান্য গুনাহ তো আল্লাহ যাকে ইচ্ছা মাফ করে দেন, তবে শিরকের ব্যাপারে তিনি ঘোষণা করেছেন, এই গুনাহ তিনি মাফ করবেনই না, যতক্ষণ না শিরককারী ব্যক্তি খাঁটি অন্তরে তওবা করে সব ধরনের শিরক থেকে ফিরে আসে এবং তাওহীদের দ্বীন ইসলাম কবুল করে মনে-প্রাণে শুধু এবং শুধু তাওহীদের উপর অবিচল থাকে।

ইরশাদ হয়েছে-
اِنَّ اللهَ لَا یَغْفِرُ اَنْ یُّشْرَكَ بِهٖ وَ یَغْفِرُ مَا دُوْنَ ذٰلِكَ لِمَنْ یَّشَآءُ وَ مَنْ یُّشْرِكْ بِاللهِ فَقَدْ ضَلَّ ضَلٰلًۢا بَعِیْدًا.
নিশ্চয়ই আল্লাহ তাঁর সঙ্গে শরীক করাকে ক্ষমা করেন না। এর নিচের যে কোনো গুনাহ যার ক্ষেত্রে চান ক্ষমা করে দেন। যে ব্যক্তি আল্লাহর সঙ্গে (কাউকে) শরীক করে, সে (সঠিক পথ থেকে) বহু দূরে সরে যায়। -সূরা নিসা (৪) : ১১৬

আরো ইরশাদ হয়েছে-
اِنَّهٗ مَنْ یُّشْرِكْ بِاللهِ فَقَدْ حَرَّمَ اللهُ عَلَیْهِ الْجَنَّةَ وَ مَاْوٰىهُ النَّارُ وَ مَا لِلظّٰلِمِیْنَ مِنْ اَنْصَار.
নিশ্চয়ই যে ব্যক্তি আল্লাহর সঙ্গে (কাউকে) শরীক করে, আল্লাহ তার জন্য জান্নাত হারাম করে দিয়েছেন। তার ঠিকানা জাহান্নাম। আর জালিমদের কোনো সাহায্যকারী নেই। -সূরা মায়িদা (৫) : ৭২

মোটকথা, দ্বীনে তাওহীদের অনুসারী এবং কালিমায়ে তাওহীদের সাক্ষ্যদানকারী মুমিন-মুসলিমকে সতর্ক থাকতে হবে। এমন যেন না হয় যে, উদারতার নামে স্পষ্ট শিরকী কর্মকা-গুলোকে ভুল ব্যাখ্যা করতে শুরু করল, নিছক উৎসব নাম দিয়ে সেগুলোর পক্ষে সাফাই এবং সেগুলোতে অংশগ্রহণ করতে লাগল। এমনটা করলে এর চেয়ে বড় অকৃতজ্ঞতা ও অবাধ্যতা আল্লাহর সঙ্গে আর কী হতে পারে? এবং ঈমান ও তাওহীদের নিআমত থেকে বঞ্চিত হওয়ার এর চেয়ে বড় কারণ আর কী হতে পারে?

অমুসলিমদের উৎসবে মুসলমানদের অংশগ্রহণের বিধান:

বর্তমানে কিছু মানুষ কেবল অজ্ঞতার কারণে এমন মনে করছে যে, মুসলমানদের জন্য যেন অমুসলিমদের ধর্মীয় উৎসবে অংশগ্রহণ করা বৈধ! এই ভাইদের খুব ভালো করে বোঝা উচিত, এমন ধারণা একেবারে ভুল।
ইসলাম ও ইসলামী শরীয়ত এসব বিষয়ে অত্যন্ত সংবেদনশীল। ইসলাম তার অনুসারীদের জীবনের কোনো অঙ্গনকে ‘ফকির’ ছেড়ে দেয়নি; বরং জীবনের প্রতিটি অধ্যায় ও ক্ষেত্রে তাদেরকে বিধান দান করেছে এবং তাদেরকে আত্মমর্যাদাবোধসম্পন্ন স্বয়ংসম্পূর্ণ একটি জাতি হিসাবে পুরো পৃথিবীর জন্য আদর্শ বানিয়েছে।

মুমিনদের লক্ষ করে ইরশাদ হয়েছে-
یٰۤاَیُّهَا الَّذِیْنَ اٰمَنُوا ادْخُلُوْا فِی السِّلْمِ كَآفَّةً وَّ لَا تَتَّبِعُوْا خُطُوٰتِ الشَّیْطٰنِ اِنَّهٗ لَكُمْ عَدُوّ مُّبِیْنٌ.
হে মুমিনগণ! ইসলামে সম্পূর্ণরূপে প্রবেশ কর এবং শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না। নিশ্চয়ই সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু। -সূরা বাকারা (২) : ২০৮

আর পুরো দুনিয়ার প্রতি ইসলামের ঘোষণা-
اٰمِنُوْا كَمَاۤ اٰمَنَ النَّاسُ.

যেসকল লোক ঈমান এনেছে তোমরাও তাদের মত ঈমান আন। -সূরা বাকারা (২) : ১৩
এবং
فَاِنْ اٰمَنُوْا بِمِثْلِ مَاۤ اٰمَنْتُمْ بِهٖ فَقَدِ اهْتَدَوْا.

তারা যদি সেরকম ঈমান আনে, যেমন তোমরা ঈমান এনেছ, তবে তারা সঠিক পথ পেয়ে যাবে।- সূরা বাকারা (২) : ১৩৭

জীবনের অন্যসব বিষয়ের মত উৎসবের ক্ষেত্রেও মুসলিম উম্মাহকে স্বতন্ত্র বিধি-বিধান দান করা হয়েছে। তাদেরকে ঈদের বিধান দেয়াই হয়েছে এ কথা বলে-
“প্রত্যেক জাতির নিজস্ব উৎসব থাকে। হে মুসলিম জাতি! তোমাদের উৎসব হল ‘ঈদ’।” অর্থাৎ সব জাহেলী উৎসব থেকে অমুখাপেক্ষী করে মুসলিম উম্মাহকে ‘ঈদ’ দান করা হয়েছে। তাই তাদের জন্য এটা বৈধই নয় যে, তারা নিজেরা কোনো জাহেলী উৎসব উদ্যাপন করবে বা তাতে অংশগ্রহণ করবে।
হাদীস শরীফে আছে, মদীনায় আগমনের পর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দেখেন, এখানকার অধিবাসীরা বছরে দু’দিন উৎসব পালন করে।

তখন আল্লাহর রাসূল তাদের বললেন-
إِنّ اللهَ قَدْ أَبْدَلَكُمْ بِهِمَا خَيْرًا مِنْهُمَا: يَوْمَ الْأَضْحَى، وَيَوْمَ الْفِطْرِ.
নিঃসন্দেহে আল্লাহ তাআলা তোমাদেরকে সেসবের পরিবর্তে দুটি উত্তম দিন দান করেছেন- আযহা এবং ফিতর। - সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ১১৩৪

এছাড়া একাধিক হাদীসে বলা হয়েছে-
إِنّ لِكُلِّ قَوْمٍ عِيدًا، وَهَذَا عِيدُنَا.
অর্থাৎ নিশ্চয়ই প্রত্যেক কওমের আপন আপন উৎসব আছে। আমাদের (অর্থাৎ মুসলিম উম্মাহর) উৎসব হচ্ছে ঈদুল ফিতর এবং ঈদুল আযহা। - সহীহ বুখারী, হাদীস ৯৫২; সহীহ মুসলিম, হাদীস ৮৯২

এজন্য কুরআনে কারীমে [সূরা ফুরকান (২৫) : ৭২] আল্লাহর নেক বান্দাদের বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করতে গিয়ে এ কথাও বলা হয়েছে-
وَ الَّذِیْنَ لَا یَشْهَدُوْنَ الزُّوْر.
অর্থাৎ তারা এমন মানুষ, যারা মিথ্যা ধ্যান-ধারণার ভিত্তিতে উদ্যাপিত কাফের-মুশরিকদের উৎসবে অংশগ্রহণ করে না।

ইসলামী আকিদাহ

12 Oct, 15:15


তোমরা যেসকল জিনিসকে (আল্লাহর) শরীক বানিয়েছ, আমি কীভাবেইবা তাদেরকে ভয় করতে পারি, যখন তোমরা ওইসকল জিনিসকে আল্লাহর শরীক বানাতে ভয় করছ না, যাদের বিষয়ে তিনি তোমাদের প্রতি কোনো প্রমাণ অবতীর্ণ করেননি? সুতরাং তোমাদের কাছে যদি কিছু জ্ঞান থাকে, তবে (বল) দুই দলের মধ্যে কোন্ দল নির্ভয়ে থাকার বেশি উপযুক্ত? (প্রকৃতপক্ষে) যারা ঈমান এনেছে এবং নিজেদের ঈমানকে যুলুমের সাথে মিশ্রিত করেনি, নিরাপত্তা ও স্বস্তি তো কেবল তাদেরই অধিকার এবং তারাই সঠিক পথে পৌঁছে গেছে। -সূরা আনআম (৬) : ৮১-৮২

দুআ ও প্রার্থনার একমাত্র হকদার তিনিই, যিনি সবকিছুর খালিক ও মালিক। আর কেবল সে দুআই যথার্থ ও কার্যকর হবে, যা শুধু তাঁরই দরবারে পেশ করা হবে। এর বাইরে সকল প্রার্থনা বেকার ও অর্থহীন। কারণ সেগুলো করা হয়েছে ভুল স্থানে। ইরশাদ হয়েছে-
لَهٗ دَعْوَةُ الْحَقِّ وَ الَّذِیْنَ یَدْعُوْنَ مِنْ دُوْنِهٖ لَا یَسْتَجِیْبُوْنَ لَهُمْ بِشَیْءٍ اِلَّا كَبَاسِطِ كَفَّیْهِ اِلَی الْمَآءِ لِیَبْلُغَ فَاهُ وَ مَا هُوَ بِبَالِغِهٖ وَ مَا دُعَآءُ الْكٰفِرِیْنَ اِلَّا فِیْ ضَلٰلٍ.
তিনিই সেই সত্তা, যার কাছে দুআ করা সঠিক। তারা তাঁকে ছেড়ে যাদেরকে (অর্থাৎ যেই দেব-দেবীদেরকে) ডাকে তারা তাদের দুআর কোনো জবাব দেয় না। তাদের দৃষ্টান্ত সেই ব্যক্তির মত, যে পানির দিকে দু’হাত বাড়িয়ে আশা করে তা আপনিই তার মুখে পৌঁছে যাবে, অথচ তা কখনো নিজে নিজে তার মুখে পৌঁছাতে পারে না। আর (দেব-দেবীদের কাছে) কাফেরদের দুআ করার ফল এছাড়া আর কিছুই নয় যে, তা শুধু বৃথাই যাবে। -সূরা রাআদ (১৩) : ১৪

এককথায়-
ذٰلِكَ بِاَنَّ اللهَ هُوَ الْحَقُّ وَ اَنَّ مَا یَدْعُوْنَ مِنْ دُوْنِهٖ هُوَ الْبَاطِلُ وَ اَنَّ اللهَ هُوَ الْعَلِیُّ الْكَبِیْرُ.
অর্থাৎ, আল্লাহই সত্য। আর তারা তাঁকে ছেড়ে যেসব জিনিসের ইবাদত করে তা সবই মিথ্যা। আর আল্লাহই সেই সত্তা, যার মহিমা সমুচ্চ, মর্যাদা বিপুল। -সূরা হাজ্জ (২২) : ৬২

মোটকথা, তাওহীদের অনুসারী মুমিনের ঘোষণাই এটা-
এক.
اَغَیْرَ اللهِ اَتَّخِذُ وَلِیًّا فَاطِرِ السَّمٰوٰتِ وَ الْاَرْضِ وَ هُوَ یُطْعِمُ وَ لَا یُطْعَم.
আমি কি আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে অভিভাবকরূপে গ্রহণ করব? যিনি আকাশম-লী ও পৃথিবীর ¯্রষ্টা এবং যিনি (সকলকে) খাদ্য দান করেন, কারো থেকে খাদ্য গ্রহণ করেন না? -সূরা আনআম (৬) : ১৪

দুই.
یٰقَوْمِ اِنِّیْ بَرِیْٓء مِّمَّا تُشْرِكُوْنَ، اِنِّیْ وَجَّهْتُ وَجْهِیَ لِلَّذِیْ فَطَرَ السَّمٰوٰتِ وَ الْاَرْضَ حَنِیْفًا وَّ مَاۤ اَنَا مِنَ الْمُشْرِكِیْنَ.
হে আমার কওম! তোমরা যেসকল জিনিসকে (আল্লাহর সঙ্গে) শরীক কর, তাদের সাথে আমার কোনো সম্পর্ক নেই। আমি সম্পূর্ণ একনিষ্ঠভাবে সেই সত্তার দিকে নিজের মুখ ফেরালাম, যিনি আকাশম-লী ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন এবং আমি শিরককারীদের অন্তর্ভুক্ত নই।-সূরা আনআম (৬) : ৭৮-৭৯

তিন.
اِنَّ صَلَاتِیْ وَ نُسُكِیْ وَ مَحْیَایَ وَ مَمَاتِیْ لِلهِ رَبِّ الْعٰلَمِیْنَ لَا شَرِیْكَ لَهٗ وَ بِذٰلِكَ اُمِرْتُ وَ اَنَا اَوَّلُ الْمُسْلِمِیْن ، ...اَغَیْرَ اللهِ اَبْغِیْ رَبًّا وَّ هُوَ رَبُّ كُلِّ شَیْءٍ وَ لَا تَكْسِبُ كُلُّ نَفْسٍ اِلَّا عَلَیْهَا وَ لَا تَزِرُ وَازِرَةٌ وِّزْرَ اُخْرٰی ثُمَّ اِلٰی رَبِّكُمْ مَّرْجِعُكُمْ فَیُنَبِّئُكُمْ بِمَا كُنْتُمْ فِیْهِ تَخْتَلِفُوْن.
নিশ্চয়ই আমার নামায, আমার ইবাদত ও আমার জীবন-মরণ সবই আল্লাহর জন্য, যিনি জগৎসমূহের প্রতিপালক। তাঁর কোনও শরীক নেই। আমাকে এরই হুকুম দেওয়া হয়েছে। এবং আনুগত্য স্বীকারকারীদের মধ্যে আমিই প্রথম।

আমি কি আল্লাহ ছাড়া অন্য কোনও প্রতিপালক সন্ধান করব, অথচ তিনি প্রতিটি জিনিসের মালিক? প্রত্যেক ব্যক্তি যা-কিছু করে, তার লাভ-ক্ষতি অন্য কারও উপর নয়, স্বয়ং তার উপরই বর্তায় এবং কোনও ভার-বহনকারী অন্য কারও ভার বহন করবে না। পরিশেষে তোমাদের প্রতিপালকের কাছেই তোমাদের সকলকে ফিরে যেতে হবে। তোমরা যেসব বিষয়ে মতভেদ করতে, তখন তিনি সে সম্পর্কে তোমাদের অবহিত করবেন।-সূরা আনআম (৬) : ১৬২-১৬৪
তাওহীদের অনুসারী মুমিন সর্বদা এই প্রার্থনা করেÑ
رَبَّنَا لَا تُزِغْ قُلُوْبَنَا بَعْدَ اِذْ هَدَیْتَنَا وَ هَبْ لَنَا مِنْ لَّدُنْكَ رَحْمَة اِنَّكَ اَنْتَ الْوَهَّاب.
হে আমাদের প্রতিপালক! তুমি আমাদেরকে যখন হেদায়েত দান করেছ তারপর আর আমাদের অন্তরে বক্রতা সৃষ্টি করো না এবং একান্তভাবে নিজের পক্ষ থেকে আমাদেরকে রহমত দান কর। নিশ্চয়ই তুমিই মহা দাতা। -সূরা আলে ইমরান (৩) : ৮
رَبِّ اجْعَلْ هٰذَا الْبَلَدَ اٰمِنًا وَّ اجْنُبْنِیْ وَ بَنِیَّ اَنْ نَّعْبُدَ الْاَصْنَامَ.
হে আমার প্রতিপালক! এ নগরকে শান্তিপূর্ণ বানিয়ে দিন এবং আমাকে ও আমার সন্তানদেরকে প্রতিমা পূজা করা হতে রক্ষা করুন। -সূরা ইবরাহীম (১৪) : ৩৫

ইসলামী আকিদাহ

12 Oct, 15:15


যারা আল্লাহর প্রতি ঈমান রাখে না ও যারা আখেরাতে অবিশ্বাসী, আমি তাদের দ্বীন পরিত্যাগ করেছি। আমি আমার বাপ-দাদা ইবরাহীম, ইসহাক ও ইয়াকুবের দ্বীন অনুসরণ করেছি। আমাদের এ অধিকার নেই যে, আল্লাহর সঙ্গে কোনও জিনিসকে শরীক করব। এটা (অর্থাৎ তাওহীদের আকীদা) আমাদের প্রতি ও সমস্ত মানুষের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহেরই অংশ। কিন্তু অধিকাংশ লোক (এ নিআমতের) শোকর আদায় করে না। হে আমার কারা-সংগীদ্বয়! ভিন্ন-ভিন্ন বহু প্রতিপালক শ্রেয়, না সেই এক আল্লাহ, যাঁর ক্ষমতা সর্বব্যাপী? তাঁকে ছেড়ে তোমরা কেবল কতগুলো নামেরই ইবাদত করছ, যে নামগুলো তোমরা ও তোমাদের পিতৃপুরুষরা রেখেছে। আল্লাহ তার পক্ষে কোনও দলীল নাযিল করেননি। হুকুম দানের ক্ষমতা আল্লাহ ছাড়া অন্য কারও নেই। তিনিই এ হুকুম দিয়েছেন যে, তোমরা তাঁর ভিন্ন অন্য কারও ইবাদত করো না। এটাই সরল-সোজা পথ। কিন্তু অধিকাংশ লোক জানে না। -সূরা ইউসুফ (১২) : ৩৭-৪০
মুশরিকদের সকল কাল্পনিক মাবুদের ব্যাপারে

তাওহীদে বিশ্বাসী একজন মুমিন কুরআনের ভাষায় বলে-
اِنْ هِیَ اِلَّاۤ اَسْمَآءٌ سَمَّیْتُمُوْهَاۤ اَنْتُمْ وَ اٰبَآؤُكُمْ مَّاۤ اَنْزَلَ اللهُ بِهَا مِنْ سُلْطٰنٍ اِنْ یَّتَّبِعُوْنَ اِلَّا الظَّنَّ وَ مَا تَهْوَی الْاَنْفُسُ وَ لَقَدْ جَآءَهُمْ مِّنْ رَّبِّهِمُ الْهُدٰی.
(এদের স্বরূপ এর বেশি কিছু নয় যে,) এগুলি কতক নাম মাত্র, যা তোমরা এবং তোমাদের বাপ-দাদাগণ রেখেছ। আল্লাহ এর স্বপক্ষে কোনো প্রমাণ নাযিল করেননি। প্রকৃতপক্ষে তারা (অর্থাৎ কাফেরগণ) কেবল ধারণা এবং মনের খেয়াল-খুশীর অনুসরণ করে। অথচ তাদের প্রতিপালকের পক্ষ হতে তাদের কাছে এসে গেছে পথনির্দেশ। -সূরা নাজ্ম (৫৩) : ২৩
মুশরিকদের খুব ভালোভাবে বোঝা উচিত,
তাদের কাল্পনিক উপাস্যদের কাছে কিছুই নেই যে,
দুনিয়া-আখেরাতে তারা তাদের কোনো সাহায্য করবে।

ইরশাদ হয়েছে-
قُلِ ادْعُوا الَّذِیْنَ زَعَمْتُمْ مِّنْ دُوْنِ الله لَا یَمْلِكُوْنَ مِثْقَالَ ذَرَّةٍ فِی السَّمٰوٰتِ وَ لَا فِی الْاَرْضِ وَ مَا لَهُمْ فِیْهِمَا مِنْ شِرْكٍ وَّ مَا لَهٗ مِنْهُمْ مِّنْ ظَهِیْر.
(হে রাসূল! ওই কাফেরদেরকে) বলে দাও, তোমরা যাদেরকে আল্লাহর পরিবর্তে উপাস্য মনে করতে তাদেরকে ডাক। আকাশম-লী ও পৃথিবীতে তারা অণু পরিমাণ কিছুরও মালিক নয় এবং আকাশম-লী ও পৃথিবীতে (কোনও বিষয়ে আল্লাহর সাথে) তাদের কোনো অংশীদারিত্ব নেই এবং তাদের মধ্যে কেউ তাঁর সাহায্যকারীও নয়। -সূরা সাবা (৩৪) : ২২

অন্যত্র আল্লাহ তাআলার কুদরত ও নিআমতরাজির আলোচনা প্রসঙ্গে বলা হয়েছে-
ذٰلِكُمُ اللهُ رَبُّكُمْ لَهُ الْمُلْكُ وَ الَّذِیْنَ تَدْعُوْنَ مِنْ دُوْنِهٖ مَا یَمْلِكُوْنَ مِنْ قِطْمِیْرٍؕ، اِنْ تَدْعُوْهُمْ لَا یَسْمَعُوْا دُعَآءَكُمْ وَ لَوْ سَمِعُوْا مَا اسْتَجَابُوْا لَكُمْ وَ یَوْمَ الْقِیٰمَةِ یَكْفُرُوْنَ بِشِرْكِكُمْ وَ لَا یُنَبِّئُكَ مِثْلُ خَبِیْرٍ.
তিনি আল্লাহ- তোমাদের প্রতিপালক। সকল রাজত্ব তাঁরই। তাঁকে ছেড়ে যাদেরকে (অর্থাৎ যেসব অলীক প্রভুকে) তোমরা ডাক, তারা খেজুর বীচির আবরণের সমানও কিছুর অধিকার রাখে না। তোমরা তাদেরকে ডাকলে তারা তেমাদের ডাক শুনবেই না আর শুনলেও তোমাদেরকে কোনো সাড়া দিতে পারবে না। কিয়ামতের দিন তারা নিজেরাই তোমাদের শিরককে অস্বীকার করবে। যাবতীয় বিষয় সম্পর্কে অবগত সত্তার মত সঠিক সংবাদ তোমাকে আর কেউ দিতে পারবে না। -সূরা ফাতির (৩৫) : ১৩-১৪

এজন্য রিযিকের প্রার্থনা হোক বা নিরাপত্তার, রহমতের প্রার্থনা হোক বা যুলুম থেকে নিষ্কৃতিরÑ সর্বাবস্থায় সেই একমাত্র মাবুদের নিকটই ফিরে আসতে হবে এবং তাঁর কাছেই সকল আশা-প্রত্যাশা নিবেদন করতে হবে। শান্তি ও নিরাপত্তার একমাত্র মালিক তো তিনিই। এজন্য শুধু তাঁরই ইবাদত করতে হবে। ইরশাদ হয়েছে-
فَلْیَعْبُدُوْا رَبَّ هٰذَا الْبَیْتِ الَّذِیْۤ اَطْعَمَهُمْ مِّنْ جُوْعٍ، وَّ اٰمَنَهُمْ مِّنْ خَوْفٍ.

তারা যেন এই ঘরের মালিকের ইবাদত করে, যিনি তাদেরকে ক্ষুধার্ত অবস্থায় খাদ্য দান করেছেন এবং ভয়-ভীতি থেকে তাদেরকে নিরাপদ রেখেছেন। -সূরা কুরাইশ (১০৬) : ৩-৪)

তাছাড়া শিরকের মাধ্যমে কীভাবে যুলুম-ফাসাদ দূর হয়ে শান্তি ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠিত হবে? শিরক তো নিজেই অনেক বড় যুলুম-
اِنَّ الشِّرْكَ لَظُلْمٌ عَظِیْمٌ.
নিশ্চয়ই শিরক চরম যুলুম। -সূরা লুকমান (৩১) : ১৩
শান্তি ও নিরাপত্তা তো সেই যুলুম থেকে বেঁচে থাকার মধ্যেই। আপন যুগের তাওহীদী মিল্লাতের ইমাম

আল্লাহর রাসূল হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালামের বক্তব্য কুরআন মাজীদে বিবৃত হয়েছে-
وَ كَیْفَ اَخَافُ مَاۤ اَشْرَكْتُمْ وَ لَا تَخَافُوْنَ اَنَّكُمْ اَشْرَكْتُمْ بِاللهِ مَا لَمْ یُنَزِّلْ بِهٖ عَلَیْكُمْ سُلْطٰنًا فَاَیُّ الْفَرِیْقَیْنِ اَحَقُّ بِالْاَمْنِ اِنْ كُنْتُمْ تَعْلَمُوْنَۘ اَلَّذِیْنَ اٰمَنُوْا وَ لَمْ یَلْبِسُوْۤا اِیْمَانَهُمْ بِظُلْمٍ اُولٰٓىِٕكَ لَهُمُ الْاَمْنُ وَ هُمْ مُّهْتَدُوْنَ۠.

ইসলামী আকিদাহ

12 Oct, 15:15


সূরা ইউনুসের শেষে বর্ণিত হয়েছে-
قُلْ یٰۤاَیُّهَا النَّاسُ اِنْ كُنْتُمْ فِیْ شَكٍّ مِّنْ دِیْنِیْ فَلَاۤ اَعْبُدُ الَّذِیْنَ تَعْبُدُوْنَ مِنْ دُوْنِ اللهِ وَ لٰكِنْ اَعْبُدُ اللهَ الَّذِیْ یَتَوَفّٰىكُمْ، وَ اُمِرْتُ اَنْ اَكُوْنَ مِنَ الْمُؤْمِنِیْنَ، وَ اَنْ اَقِمْ وَجْهَكَ لِلدِّیْنِ حَنِیْفًا، وَ لَا تَكُوْنَنَّ مِنَ الْمُشْرِكِیْنَ، وَ لَا تَدْعُ مِنْ دُوْنِ اللهِ مَا لَا یَنْفَعُكَ وَ لَا یَضُرُّكَ، فَاِنْ فَعَلْتَ فَاِنَّكَ اِذًا مِّنَ الظّٰلِمِیْنَ، وَ اِنْ یَّمْسَسْكَ اللهُ بِضُرٍّ فَلَا كَاشِفَ لَهٗۤ اِلَّا هُوَ، وَ اِنْ یُّرِدْكَ بِخَیْرٍ فَلَا رَآدَّ لِفَضْلِهٖ، یُصِیْبُ بِهٖ مَنْ یَّشَآءُ مِنْ عِبَادِهٖ، وَ هُوَ الْغَفُوْرُ الرَّحِیْمُ، قُلْ یٰۤاَیُّهَا النَّاسُ قَدْ جَآءَكُمُ الْحَقُّ مِنْ رَّبِّكُمْ، فَمَنِ اهْتَدٰی فَاِنَّمَا یَهْتَدِیْ لِنَفْسِهٖ، وَ مَنْ ضَلَّ فَاِنَّمَا یَضِلُّ عَلَیْهَا، وَ مَاۤ اَنَا عَلَیْكُمْ بِوَكِیْلٍ.

(হে নবী) তাদেরকে বল, হে মানুষ! তোমরা যদি আমার দ্বীন সম্পর্কে কোনও সন্দেহে থাক, তবে (শুনে রাখ) তোমরা আল্লাহ ছাড়া যাদের ইবাদত কর আমি তাদের ইবাদত করি না; বরং আমি সেই আল্লাহর ইবাদত করি, যিনি তোমাদের প্রাণ সংহার করেন। আর আমাকে হুকুম দেওয়া হয়েছে, আমি যেন মুমিনদের অন্তর্ভুক্ত থাকি। এবং (আমাকে) এই (বলা হয়েছে) যে, তুমি একনিষ্ঠভাবে নিজ চেহারাকে এই দ্বীনের দিকেই কায়েম রাখবে এবং কিছুতেই নিজেকে সেইসকল লোকের অন্তর্ভুক্ত করবে না, যারা আল্লাহর সঙ্গে কাউকে শরীক মানে। আল্লাহকে ছেড়ে এমন কাউকে (অর্থাৎ মনগড়া মাবুদকে) ডাকবে না, যা তোমার কোনও উপকারও করতে পারে না এবং ক্ষতিও করতে পারে না। তারপরও যদি তুমি এরূপ কর (যদিও তোমার পক্ষে তা করা অসম্ভব), তবে তুমি জালেমদের মধ্যে গণ্য হবে। আল্লাহ যদি তোমাকে কোনও কষ্ট দান করেন, তবে তিনি ছাড়া এমন কেউ নেই, যে তা দূর করবে এবং তিনি যদি তোমার কোনও মঙ্গল করার ইচ্ছা করেন, তবে এমন কেউ নেই, যে তার অনুগ্রহ রদ করবে। তিনি নিজ বান্দাদের মধ্যে যাকে ইচ্ছা অনুগ্রহ দান করেন। তিনি অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। (হে নবী!) বলে দাও, হে লোকসকল! তোমাদের কাছে তোমাদের প্রতিপালকের পক্ষ থেকে সত্য এসে গেছে। সুতরাং যে ব্যক্তি হেদায়েতের পথ অবলম্বন করবে, সে তা অবলম্বন করবে নিজেরই মঙ্গলের জন্য আর যে ব্যক্তি পথভ্রষ্টতা অবলম্বন করবে, তার পথভ্রষ্টতার ক্ষতি তার নিজেরই ভোগ করতে হবে। আমি তোমাদের কার্যাবলীর যিম্মাদার নই। -সূরা ইউনুস (১০) : ১০৪-১০৮

কুরআনে কারীম ও হাদীস শরীফে এই বাস্তবতা দিবালোকের ন্যায় স্পষ্ট যে, আসল দ্বীন হল তাওহীদের দ্বীন। প্রথমে সব মানুষ এই দ্বীনের অনুসারীই ছিল। সবাই দ্বীনে তাওহীদের উম্মত ছিল। পরবর্তীতে শয়তানের প্ররোচনায় মানুষ শিরকে লিপ্ত হয়ে পড়ে। তাই আল্লাহ তাআলা নবী-রাসূলগণকে আদেশ করেন, তাঁরা যেন মানুষকে শিরক ছেড়ে তাওহীদের দিকে ফিরে আসার দাওয়াত দেন। এজন্য প্রাচীন দ্বীন হল তাওহীদের দ্বীন। আর প্রাচীন উম্মত হল তাওহীদের উম্মত । দেখুন, সূরা আম্বিয়া (২১) : ৯২, সূরা মুমিনূন (২৩) : ৫২, সূরা ইউনুস (১০) : ১৯।

আর প্রসিদ্ধ হাদীসে কুদসীতে আছে-
وَإِنِّي خَلَقْتُ عِبَادِي حُنَفَاءَ كُلّهُمْ، وَإِنّهُمْ أَتَتْهُمُ الشّيَاطِينُ فَاجْتَالَتْهُمْ عَنْ دِينِهِمْ، وَحَرّمَتْ عَلَيْهِمْ مَا أَحْلَلْتُ لَهُمْ، وَأَمَرَتْهُمْ أَنْ يُشْرِكُوا بِي مَا لَمْ أُنْزِلْ بِهِ سُلْطَانًا.
আমি আমার সকল বান্দাকে সৃষ্টি করেছি দ্বীনে হানীফের (তাওহীদের) উপর। শয়তান এসে তাদেরকে তাদের দ্বীন থেকে সরিয়ে দিয়েছে। আর তাদের জন্য আমি যা হালাল করেছি সে তা হারাম করেছে এবং তাদেরকে আমার সঙ্গে এমন সব জিনিস শরীক করার আদেশ করেছে, যার স্বপক্ষে আমি কোনো প্রমাণ অবতীর্ণ করিনি। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ২৮৬৫
আরব মুশরিক হোক বা অনারব, অতীতের মুশরিক হোক বা বর্তমানের- সবার সব ধরনের শিরকী ধ্যান-ধারণার ব্যাপারে তাওহীদের অনুসারী একজন মুমিনের বক্তব্য সেটাই, যা কুরআন মাজীদে হযরত

ইউসুফ আলাইহিস সালামের যবানীতে বিবৃত হয়েছে-
اِنِّیْ تَرَكْتُ مِلَّةَ قَوْمٍ لَّا یُؤْمِنُوْنَ بِاللهِ وَ هُمْ بِالْاٰخِرَةِ هُمْ كٰفِرُوْنَ، وَ اتَّبَعْتُ مِلَّةَ اٰبَآءِیْۤ اِبْرٰهِیْمَ وَ اِسْحٰقَ وَ یَعْقُوْبَ مَا كَانَ لَنَاۤ اَنْ نُّشْرِكَ بِاللهِ مِنْ شَیْء ذٰلِكَ مِنْ فَضْلِ اللهِ عَلَیْنَا وَ عَلَی النَّاسِ وَ لٰكِنَّ اَكْثَرَ النَّاسِ لَا یَشْكُرُوْنَ، یٰصَاحِبَیِ السِّجْنِ ءَاَرْبَابٌ مُّتَفَرِّقُوْنَ خَیْرٌ اَمِ اللهُ الْوَاحِدُ الْقَهَّارُ، ماَ تَعْبُدُوْنَ مِنْ دُوْنِهٖۤ اِلَّاۤ اَسْمَآءً سَمَّیْتُمُوْهَاۤ اَنْتُمْ وَ اٰبَآؤُكُمْ مَّاۤ اَنْزَلَ اللهُ بِهَا مِنْ سُلْطٰنٍ اِنِ الْحُكْمُ اِلَّا لِله اَمَرَ اَلَّا تَعْبُدُوْۤا اِلَّاۤ اِیَّاه ذٰلِكَ الدِّیْنُ الْقَیِّمُ وَ لٰكِنَّ اَكْثَرَ النَّاسِ لَا یَعْلَمُوْن.

ইসলামী আকিদাহ

12 Oct, 15:15


একমাত্র মাধ্যম।

কুরআনে কারীমে বারবার উল্লেখিত হয়েছে, প্রত্যেক নবী-রাসূলের দাওয়াত এটাই ছিল যে, তোমরা আল্লাহর ইবাদত কর; তিনি এক, তাঁর কোনো অংশীদার নেই, তিনি ছাড়া কোনো মাবুদ নেই।

ইরশাদ হয়েছে-
وَ مَاۤ اَرْسَلْنَا مِنْ قَبْلِكَ مِنْ رَّسُوْلٍ اِلَّا نُوْحِیْۤ اِلَیْهِ اَنَّهٗ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّاۤ اَنَا فَاعْبُدُوْن.
আমি তোমার পূর্বে এমন কোনো রাসূল পাঠাইনি, যার প্রতি আমি এই ওহী নাযিল করিনি যে, ‘আমি ছাড়া অন্য কোনো মাবুদ নেই। সুতরাং আমারই ইবাদত করা।’ Ñসূরা আম্বিয়া (২১) : ২৫
وَ لَقَدْ بَعَثْنَا فِیْ كُلِّ اُمَّةٍ رَّسُوْلًا اَنِ اعْبُدُوا اللهَ وَ اجْتَنِبُوا الطَّاغُوْتَ، فَمِنْهُمْ مَّنْ هَدَی اللهُ وَ مِنْهُمْ مَّنْ حَقَّتْ عَلَیْهِ الضَّلٰلَةُ.
নিশ্চয়ই আমি প্রত্যেক উম্মতের মাঝে কোনো না কোনো রাসূল পাঠিয়েছি এই পথ নির্দেশ দিয়ে যে, তোমরা আল্লাহর ইবাদত কর এবং তাগূতকে১ পরিহার কর। তারপর তাদের মধ্যে কতক তো এমন ছিল, যাদেরকে আল্লাহ হেদায়েত দান করেছেন আর কতক ছিল এমন, যাদের উপর বিপথগামিতা অবধারিত হয়ে গেছে। সূরা নাহল (১৬) : ৩৬

কুরআনে কারীমের বিভিন্ন সূরায় অনেক নবী-রাসূলের দাওয়াতের বিস্তারিত বর্ণনা আছে। বিশেষত সূরা হূদ (সূরা নং ১১) এবং সূরা শুআরায় (সূরা নং ২৬)

একেকজন রাসূলের নাম নিয়ে নিয়ে তাঁদের দাওয়াতের বর্ণনা বিবৃত হয়েছে। তাঁদের সবার দাওয়াত একই ছিল-
قَالَ یٰقَوْمِ اعْبُدُوا اللهَ مَا لَكُمْ مِّنْ اِلٰهٍ غَیْرُهٗ.
হে আমার কওম! আল্লাহর ইবাদত কর। তিনি ছাড়া তোমাদের অন্য কোনো মাবুদ নেই। -সূরা হূদ (১১) : ৫০, ৬১, ৮৪
اَنْ لَّا تَعْبُدُوْۤا اِلَّا اللهَ.

তোমরা আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো ইবাদত করো না। -সূরা হূদ (১১) : ২৬
فَاتَّقُوا اللهَ وَ اَطِیْعُوْنِ.

সুতরাং তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং আমার আনুগত্য কর। -সূরা শুআরা (২৬) : ১০৮, ১২৬, ১৩১, ১৪৪, ১৫০, ১৬৩, ১৭৯

সূরা আনকাবূতে আছে-
وَ اِبْرٰهِیْمَ اِذْ قَالَ لِقَوْمِهِ اعْبُدُوا اللهَ وَ اتَّقُوْهُ، ذٰلِكُمْ خَیْرٌ لَّكُمْ اِنْ كُنْتُمْ تَعْلَمُوْنَ، اِنَّمَا تَعْبُدُوْنَ مِنْ دُوْنِ اللهِ اَوْثَانًا وَّ تَخْلُقُوْنَ اِفْكًا، اِنَّ الَّذِیْنَ تَعْبُدُوْنَ مِنْ دُوْنِ اللهِ لَا یَمْلِكُوْنَ لَكُمْ رِزْقًا فَابْتَغُوْا عِنْدَ اللهِ الرِّزْقَ وَ اعْبُدُوْهُ وَ اشْكُرُوْا لَهٗ، اِلَیْهِ تُرْجَعُوْنَ.
এবং আমি ইবরাহীমকে পাঠালাম, যখন সে তার সম্প্রদায়কে বলেছিল, আল্লাহর ইবাদত কর এবং তাঁকে ভয় কর। এটাই তোমাদের পক্ষে শ্রেয়, যদি তোমরা জ্ঞান রাখ। তোমরা তো আল্লাহর পরিবর্তে কেবল প্রতিমাদেরই পূজা করছ এবং রচনা করছ মিথ্যা। তোমরা আল্লাহ ছাড়া যাদের ইবাদত কর, তারা তোমাদেরকে রিযিক দেওয়ার ক্ষমতা রাখে না। সুতরাং আল্লাহর কাছে রিযিক সন্ধান কর। তাঁর ইবাদত কর এবং তাঁর কৃতজ্ঞতা আদায় কর। তাঁরই কাছে তোমাদের ফিরিয়ে নেওয়া হবে। -সূরা আনকাবূত (২৯) : ১৬-১৭

আর সূরা শুআরায় আছে-
وَ اتْلُ عَلَیْهِمْ نَبَاَ اِبْرٰهِیْمَ، اِذْ قَالَ لِاَبِیْهِ وَ قَوْمِهٖ مَا تَعْبُدُوْنَ، قَالُوْا نَعْبُدُ اَصْنَامًا فَنَظَلُّ لَهَا عٰكِفِیْنَ، قَالَ هَلْ یَسْمَعُوْنَكُمْ اِذْ تَدْعُوْنَ، اَوْ یَنْفَعُوْنَكُمْ اَوْ یَضُرُّوْنَ، قَالُوْا بَلْ وَجَدْنَاۤ اٰبَآءَنَا كَذٰلِكَ یَفْعَلُوْنَ، قَالَ اَفَرَءَیْتُمْ مَّا كُنْتُمْ تَعْبُدُوْنَ، اَنْتُمْ وَ اٰبَآؤُكُمُ الْاَقْدَمُوْنَ، فَاِنَّهُمْ عَدُوّ لِّیْۤ اِلَّا رَبَّ الْعٰلَمِیْنَ، الَّذِیْ خَلَقَنِیْ فَهُوَ یَهْدِیْنِ، وَ الَّذِیْ هُوَ یُطْعِمُنِیْ وَ یَسْقِیْنِ، وَ اِذَا مَرِضْتُ فَهُوَ یَشْفِیْنِ، وَ الَّذِیْ یُمِیْتُنِیْ ثُمَّ یُحْیِیْنِ، وَ الَّذِیْۤ اَطْمَعُ اَنْ یَّغْفِرَ لِیْ خَطِیْٓـَٔتِیْ یَوْمَ الدِّیْنِ.

(হে নবী!) তাদেরকে শোনাও ইবরাহীমের বৃত্তান্ত। যখন সে তার পিতা ও সম্প্রদায়কে বলল, তোমরা কিসের ইবাদত কর। তারা বলল, আমরা প্রতিমাদের পূজা করি এবং তাদেরই সামনে ধরনা দিয়ে থাকি। ইবরাহীম বলল, তোমরা যখন তাদেরকে ডাক, তখন তারা কি তোমাদের কথা শোনে? কিংবা তারা কি তোমাদের কোনো উপকার বা ক্ষতি করতে পারে? তারা বলল, আসল কথা হল, আমরা আমাদের বাপ-দাদাদেরকে এমনই করতে দেখেছি। ইবরাহীম বলল, তোমরা কি কখনও গভীরভাবে লক্ষ করে দেখেছ তোমরা কিসের পূজা করছ? তোমরা এবং তোমাদের বাপ-দাদাগণ? এরা সব আমার শত্রু এক রাব্বুল আলামীন ছাড়া, যিনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন। তারপর তিনিই আমার পথপ্রদর্শন করেন। এবং আমাকে খাওয়ান ও পান করান। এবং আমি যখন পীড়িত হই, আমাকে শেফা দান করেন। এবং যিনি আমার মৃত্যু ঘটাবেন, ফের আমাকে জীবিত করবেন। এবং যাঁর কাছে আমি আশা রাখি, হিসাব-নিকাশের দিন তিনি আমার অপরাধসমূহ ক্ষমা করবেন।-সূরা শুআরা (২৬) : ৬৯-৮২

ইসলামী আকিদাহ

12 Oct, 15:15


এমনটা করা স্পষ্ট হারাম এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে তা কুফর পর্যন্ত পৌঁছে যায়। ইসলাম তার অনুসারীদের উপর এ ধরনের শৈথিল্যকে হারাম করেছে,
আর দ্বীন-ঈমানের ক্ষেত্রে শৈথিল্যকে হারাম করার একমাত্র অধিকার সত্য ধর্ম ইসলামেরই আছে। সেজন্য যাদেরকে আল্লাহ তাআলা এই দ্বীন গ্রহণের তাওফীক দিয়েছেন তাদের জন্য এটা অকৃতজ্ঞতা ও অবাধ্যতার বিষয় যে, তারা চিন্তা-চেতনা, দৃষ্টিভঙ্গি ও ঈমান-আমলের বিষয়ে শৈথিল্যে লিপ্ত হবে।

আর এটাও বাস্তবতা ও ইসলামী শিক্ষা সম্পর্কে অজ্ঞতা ও উদাসীনতার ফল যে, কেউ কেউ এই নাজায়েয কাজের পক্ষে এই বলে সাফাই দেওয়ার চেষ্টা করছে যে, ‘এটা তো ধর্মীয় বিষয় নয়; বরং সংস্কৃতির বিষয়’ এবং ‘ধর্ম যার যার উৎসব সবার’!!

প্রথমত এই কথাই তো ঠিক নয় যে, সংস্কৃতি দ্বীন, দ্বীনের আকীদা-বিশ্বাস, বিধি-বিধান ও চিন্তা-চেতনা থেকে বিচ্ছিন্ন বিষয়। আর একথাও ঠিক নয় যে, কোনো জাতির ধর্মীয় উৎসব অপরাপর সব জাতির জন্যই উৎসব। এটা না সে জাতির ধর্মে গ্রহণযোগ্য হবে, না অন্যান্য জাতির ধর্মে। এটা তো না জেনে বলা সম্পূর্ণ অবাস্তব কথা।

দ্বিতীয়ত এই কথা মুসলিম উম্মাহর ক্ষেত্রে সঠিক হওয়ার কোনো সুযোগই নেই। কারণ এই উম্মত একমাত্র সত্য ধর্মের অনুসারী, যা পূর্ণাঙ্গ দ্বীন এবং যার রয়েছে নিজস্ব আকীদা-বিশ্বাস ও শরীয়ত এবং স্বতন্ত্র সংস্কৃতি। এ দ্বীনের শরীয়তে পানাহার থেকে নিয়ে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে বৈধ-অবৈধের নিজস্ব বিধি-বিধান রয়েছে।

এটা তো একমাত্র দ্বীন, যার যাবতীয় প্রমাণ ও উৎস হুবহু সংরক্ষিত আছে এবং যার প্রথম যুগের মহামনীষীদের আমল ও কর্মপদ্ধতি সূত্রসহ বিদ্যমান রয়েছে। এই ধর্মে ঈদ ও উৎসবের বিষয়টি অনেক নাযুক। এ ধর্মে কঠিনভাবে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, তার অনুসারীরা যেন নিজেদের সংস্কৃতি সংরক্ষণ করে এবং নিজেদের ঈদ-উৎসবের প্রতি গুরুত্বারোপ করে আর বিধর্মীদের সংস্কৃতি ও উৎসব-পার্বণ থেকে দূরে থাকে।
তৃতীয়ত যে উৎসবের নামই হল ‘দুর্গাপূজা’ সেটা ধর্ম ও বিশ্বাস থেকে বিচ্ছিন্ন নিছক উৎসব হয় কীভাবে?
আর ‘পূজা’-ই যদি তাদের ধর্মের অংশ না হয়, তাহলে তাদের ধর্ম আর কোন্ জিনিসের নাম?!

মুসলিম উম্মাহর প্রত্যেক সদস্যের জানা থাকা উচিত, আমাদের ধর্ম -
১. পূর্ণাঙ্গ।
২. জীবনের প্রতিটি অঙ্গনে তার বিধি-বিধান ও দিকনিদের্শনা বিদ্যমান।
৩. এর দাওয়াত সবার জন্য বিস্তৃত। বংশ, বর্ণ, অঞ্চল ও ভাষা নির্বিশেষে সবধরনের মানুষের জন্য এর দাওয়াত সুবিস্তৃত।

যে-ই তা কবুল করবে, সফলতা লাভ করবে এবং আখেরাতে মুক্তি পাবে। আর কবুল না করলে শুধু ক্ষতি আর ক্ষতি। তবে বিধর্মীদের প্রতি সদ্ভাব বজায় রাখার নির্দেশের কারণে ইসলাম কাউকে (আল্লাহ তাআলার নিকট তা একমাত্র সত্য ধর্ম হওয়া সত্ত্বেও) তা গ্রহণে বাধ্য করে না। অবশ্য তা যে একমাত্র সত্য ধর্ম আর অন্যসব যে বাতিল ও মিথ্যা ধর্ম সে সম্পর্কে ওহীর মাধ্যমে সুস্পষ্ট প্রমাণাদি পেশ করে ‘হুজ্জত তাম’ করে দেওয়া হয়েছে এবং অজুহাত দাঁড় করানোর সকল পথ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

৪. চিরস্থায়ী ও চিরকালীন ধর্ম। এই ধর্ম রহিত হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। এই ধর্মের শরীয়ত ও হেদায়েতগ্রন্থ তো নাযিলই হয়েছে সর্বশেষ নবী ও রাসূল হযরত মুহাম্মাদ মুস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর।

৫. এর যাবতীয় শিক্ষা ও বিধি-বিধান এবং সেগুলোর সকল উৎস ও প্রমাণ হুবহু সংরক্ষিত আছে এবং কিয়ামত পর্যন্ত সংরক্ষিত থাকবে। এই দ্বীনের মাঝে সামান্যতম বিকৃতি বা পরিবর্তন ঘটিয়ে কেউ পার পেয়ে যাবে এবং তা দ্বীন হিসাবে চালিয়ে দেবে- এটা সম্ভবই নয়।

দ্বীন ও শরীয়ত সম্পর্কে অবগত এমন যে কারো জানা আছে, এই দ্বীনের মূল ভিত্তি দুটি জিনিসের উপর-
ক. তাওহীদের আকীদা এবং একমাত্র আল্লাহ তাআলার ইবাদত।
খ. আল্লাহপ্রদত্ত শরীয়তের অনুসরণ এবং তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নত ও উত্তম আদর্শের অনুকরণ।

তাওহীদ তখনই সাব্যস্ত হবে, যখন মানুষ সব ধরনের শিরক থেকে বেঁচে থাকবে। শরীয়তের অনুসরণ তখনই বোঝা যাবে, যখন শরীয়ত পরিপন্থী সবধরনের নিয়ম-নীতি ও আইন-কানুন থেকে বেঁচে থাকবে। আর সুন্নাহর অনুসরণ তখনই সাব্যস্ত হবে, যখন সবধরনের বিদআত ও নতুন-পুরাতন জাহেলী রীতি-নীতি ও সংস্কৃতি থেকে বিরত থাকবে।

আল্লাহ তাআলা যত নবী-রাসূল পাঠিয়েছেন সকলের মৌলিক দাওয়াত এটাই ছিল যে, আল্লাহ তাআলার ইবাদত করা, যিনি এক, যার কোনো শরীক নেই। পাশাপাশি সব ধরনের শিরক থেকে বেঁচে থাকা এবং আল্লাহকে ভয় করা। আর রাসূলের আনুগত্য করা, রাসূলের মাধ্যমে প্রদত্ত শরীয়তকে নিজের উপর অত্যাবশ্যকীয় মেনে নেয়া এবং তাঁর উত্তম আদর্শের অনুসরণ করা।

সর্বশেষ নবী ও রাসূল হযরত মুহাম্মাদ মুস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর আল্লাহ তাআলা সর্বশেষ হেদায়েতগ্রন্থ কুরআন মাজীদ নাযিল করেছেন, তাঁকে সর্বশেষ শরীয়ত দান করেছেন এবং তাঁর উম্মতকে সর্বশেষ উম্মত বানিয়েছেন। আর ঘোষণা করেছেন, দ্বীনে তাওহীদ (যা চিরকালীন দ্বীন) আর শরীয়তে মুহাম্মাদী (যা কুরআন নাযিলের সময় থেকে নিয়ে কিয়ামত পর্যন্ত পুরো মানবজাতির জন্য একমাত্র শরীয়ত ও জীবনবিধান) হল এখন মুক্তি ও সফলতার

ইসলামী আকিদাহ

12 Oct, 15:15


সবরের_সাথে_পড়ি!

উদারতা অর্থ আকীদা ও আদর্শের বিসর্জন নয়।
মাওলানা মুহাম্মাদ আব্দুল মালেক (দা:বা)

এক হল মুদারাত তথা উদারতা, যার অর্থ হল, নিজের প্রতিপক্ষের সঙ্গে উত্তম আচরণ ও কোমল ব্যবহার করা এবং তার কোনো হক নষ্ট না করা; বরং তার সবধরনের হক ও অধিকার যথাযথভাবে আদায় করা। উদারতা ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা এবং অনেক বড় ঈমানী বৈশিষ্ট্য।

আরেক হল মুদাহানাত তথা শৈথিল্য প্রদর্শন। অর্থাৎ আকীদা-বিশ্বাস ও আদর্শিক বিষয়গুলোকে হালকা মনে করা। অন্যদের খুশি করতে গিয়ে তাদের ত্রুটি-বিচ্যুতি, ভ্রান্তি ও গোমরাহীগুলোকে সঠিক বা গ্রহণযোগ্য বলা। ইসলামের দৃষ্টিতে এটা নিষিদ্ধ এবং এটা মুনাফেকির অনেক ভয়াবহ প্রকার।

ইসলামী শিক্ষার অভাবে এবং অনেক সময় ঈমানী দুর্বলতার কারণে আজকাল অনেকেই উদারতার নামে শৈথিল্যে লিপ্ত হচ্ছেন। এজন্য জরুরি হল, এই দুইয়ের সঠিক পরিচয় ও বাস্তবতা ব্যাপকভাবে চর্চা করা ।

ইসলাম তার অনুসারীদের নির্দেশ দেয়, তারা যেন সত্যের উপর অবিচল থাকে এবং সত্যকে সত্য আর মিথ্যাকে মিথ্যা বলে অভিহিত করে। পাশাপাশি এই আদেশও করে, তারা যেন প্রতিপক্ষের সঙ্গে উত্তম ও কোমল আচরণ করে; এমনকি ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহর সবচেয়ে বড় বিরোধী বরং শত্রু অমুসলিমদের প্রতিও যেন তারা কোমল ও সৌহার্দপূর্ণ আচরণ করে এবং তাদের যাবতীয় হক ও অধিকার আদায় নিশ্চিত করে।

খুলাফায়ে রাশেদীন, ন্যায়পরায়ণ খলীফা ও বাদশাগণ এবং প্রত্যেক যুগের দ্বীনদার রাষ্ট্রপ্রধানগণ অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে ইসলামের এই হুকুম পালন করেছেন। কোনো কোনো ইতিহাসবিদ অমুসলিমদের সঙ্গে মুসলমানদের ধর্মীয় সৌহার্দপূর্ণ ও উদার আচরণের নির্বাচিত কিছু ঘটনা সংকলন করেছেন; আর তাতেই বড় বড় কয়েক খণ্ডের কিতাব তৈরি হয়ে গেছে।

এই উদারতার বাস্তবতা হল, সকল অমুসলিম আল্লাহ তাআলার বিদ্রোহী হওয়া সত্ত্বেও শুধু আল্লাহর সৃষ্টি মানুষ হওয়ার কারণে আল্লাহ তাআলা তাদের জন্য যেসব হক নির্ধারণ করে দিয়েছেন সেসব হকের প্রতি যথাযথ লক্ষ্য রাখা। এদিকে মুসলমানগণ আল্লাহর ওয়াফাদার বান্দা হওয়ার কারণে তারা এ বিষয়ের আরো বেশি উপযুক্ত যে, তারা পক্ষের-বিপক্ষের সবার সঙ্গে ইনসাফপূর্ণ, উত্তম ও সুন্দর আচরণ করবে। এর একটি বড় হেকমত এটাও যে, উত্তম আচরণের ফলে হতে পারে তাদের অন্তরে সত্য ধর্মের প্রতি ভালবাসা সৃষ্টি হবে। অতপর তা তাদের হেদায়েত ও নাজাতের মাধ্যম হয়ে যাবে। এজন্য সৌহার্দপূর্ণ উদার আচরণ মূলত দ্বীনের প্রতি নীরব দাওয়াত। ইতিহাস সাক্ষী, ইসলামের প্রচার-প্রসার ও ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা আসলে ইনসাফ ও উত্তম আচরণেরই ফল।

আমাদের পূর্বসূরীদের মাঝে উদারতা তো পূর্ণ মাত্রায় ছিল; কিন্তু শৈথিল্য তাঁদের মধ্যে একদম ছিল না। ঈমান-আকীদার বিষয়ে তাঁরা অত্যন্ত মজবুত ছিলেন। চিন্তা-চেতনা ও আদর্শ-ঐতিহ্যের ক্ষেত্রে তাঁরা পাহাড়ের মতো অটল-অবিচল ছিলেন। শুধু শিরক নয়; বরং শিরকের সামান্য মিশ্রণ বা সন্দেহ আছে এমন সব বিষয় থেকে তাঁরা অত্যন্ত সতর্কতার সাথে বেঁচে থাকতেন। বিধর্মীদের বেশ-ভূষা, চাল-চলন এবং তাদের উৎসব-পার্বণ থেকে অনেক দূরে থাকতেন।

কারণ তাঁরা জানতেন, ইসলাম যেভাবে বিরোধীদের সঙ্গে উত্তম আচরণ ও সদ্ভাব বজায় রাখাকে ফরয করেছে, তার চেয়ে আরো গুরুত্বের সঙ্গে ফরয করেছে ঈমান-ইসলাম, আকীদা-বিশ্বাস ও আদর্শ-ঐতিহ্য হেফাযত করাকে। যেভাবে উদারতার ইসলামী বিধান উপেক্ষা করে কোনো অমুসলিমের উপর যুলুম করাকে ইসলাম হারাম করেছে, তার চেয়ে আরো গুরুত্বের সঙ্গে হারাম করেছে সত্য ও বাস্তবতার উপর যুলুম করাকে ।

এজন্য আমাদের অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে বুঝতে হবে, মন্দ পরিবেশ বা ভুল প্রচারণায় প্রভাবিত হয়ে ঈমান-ইসলামের মৌলিক দাবিগুলো খুইয়ে বসা, আকীদা-বিশ্বাস ও আদর্শ-ঐতিহ্যকে বিসর্জন দেয়া এবং সত্যকে সত্য ও মিথ্যাকে মিথ্যা না বলা এগুলো কখনো উদারতা নয়। এগুলো তো পরিষ্কার শৈথিল্য, যা একেবারে হারাম। আর সত্য কথা হল, ইসলামের দৃষ্টিতে এটা মুনাফেকির একটা শাখা।

যেমনটি আগে বলা হয়েছে, মুসলিম দেশে অমুসলিম নাগরিকদের মানুষ হিসাবে প্রাপ্য সব ধরনের অধিকার সুসংরক্ষিত। নিজ নিজ ধর্ম পালন করা এবং আপন আপন গণ্ডিতে শান্তিপূর্ণভাবে নিজ নিজ ধর্মীয় উৎসব পালন করার পূর্ণ অধিকার তাদের রয়েছে। রাষ্ট্রের দায়িত্ব হল, সে নিজে তাতে বাধা দেবে না এবং অন্য কাউকে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির সুযোগ দেবে না। কিন্তু তার অর্থ কখনো এই নয় যে, তাদের ধর্মীয় আচার ও অনুষঙ্গগুলো (যেগুলোর ভিত্তি স্পষ্টত তাদের ধর্মীয় ধ্যান-ধারণা ও বিশ্বাসের উপর) কোনো মুসলমান পালন করা শুরু করবে অথবা আগে বেড়ে তাদের ধর্মীয় আচারানুষ্ঠানে যোগ দিয়ে কিংবা তাদের ধর্মীয় নিদর্শনগুলো নিজের মধ্যে ধারণ করে তাদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করবে।

ইসলামী আকিদাহ

11 Oct, 13:36


করে, এটাও শির্ক। এবং তারই অংশ হিসেবে উথুলীতে তারা দুর্গার ছবি সংযোজন করেছে। সেটা হিন্দুদের ধর্মীয় অনুষঙ্গের সাথে সম্পর্ক রাখে।

অতএব উথুলীকে সাদরে গ্রহণ করে, তার পক্ষে সাফাই গাওয়ার পরে ড. আ ফ ম খালিদ বড় ধরনের অন্যায় ও গর্হিত অপরাধ করেছে।
আমরা তাকে বলবো, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠার নামে, এভাবে নিজের আকিদা থেকে সরে যাওয়াটা খুবই দুর্ভাগ্যের বিষয়। যে কাজগুলো হয়ে গেছে; তার কাছে অনুরোধ করব আল্লাহ তায়ালার কাছে তওবায়ে নাসুহা করুন এবং প্রকাশ্যে জাতির কাছে ক্ষমা চান এবং পাশাপাশি এসকল বিষয়ে যেন আগামীতে সংযত হন।

আরেকটি কথা সুস্পষ্ট ভাষায় বলে দিতে চাই, ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকার সুদীর্ঘ ১৬ বছরে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় সকল প্রকার কাফের-মুশরিক, রাম-বাম, বেইমানদেরকে পৃষ্ঠপোষকতা দিত। হাসিনা ও তার সরকারের প্রতি দেশের মানুষের ক্ষোভের অন্যতম কারণ এটি। পাশাপাশি সে ভারতের সাথে মাত্রাতিরিক্ত প্রীতি ও ভালোবাসার সম্পর্ক স্থাপন করতে চাইতো। এটাও ছিল হাসিনার প্রতি দেশের মানুষের ক্ষোভের আরেকটি কারণ।
ড. আ ফ ম খালিদও যেভাবে ভারত প্রীতির কথা বললেন এবং লজ্জাজনক ভাবে ভারতের সহযোগিতা কামনা করলেন, সেটা আমরা কখনো আশা করিনি। আল্লাহ তাকে হেদায়েত দান করুন।
🖋️ ডঃ এনায়েতুল্লাহ আব্বাসী হাফিঃ

ইসলামী আকিদাহ

11 Oct, 13:36


প্রিয় দেশবাসী!
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ।

মাননীয় ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ সাহেবের একটি বক্তব্য আব্বাসী সাইবার টিম আমাকে দেখিয়েছে। যে বক্তব্যটি শুনে রীতিমতো আমি আতঙ্কিত, মর্মাহত এবং অনেকটাই বাকরুদ্ধ। সেজন্যই তার বক্তব্যের প্রতিবাদ, বক্তব্যের মাধ্যমে না করে লেখনীর মাধ্যমে করছি। আর আমি এটা ওয়ার্নিং হিসাবেই প্রতিবাদ করছি যেন তিনি সংযত হন এবং ভুল বক্তব্যের কারণে অনুতপ্ত হন।

শুরুতেই বলে নেই, ড. আ ফ ম খালিদ সম্পর্কে আমার তেমন কোনো ধারণা নেই। শুনেছি তিনি একজন স্কলার, প্রফেসর। এবং উনার বেসিক হচ্ছে মাদ্রাসার শিক্ষা। চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্টেজের বিভিন্ন প্রোগ্রামে আমার সাথে তার নাম থাকতো। তবে দেখা যেতো আমি স্টেজে ওঠার আগেই উনার বয়ান শেষ করে চলে যেতেন। হতে পারে সেটা ব্যস্ততার কারণে। তিনি বর্তমানে ধর্ম উপদেষ্টার দায়িত্ব পেয়েছেন।

গতকাল তিনি সিদ্ধেশ্বরী মন্দিরে গিয়েছিলেন। সেখানে কি বক্তব্য দিয়েছে সেটা আমি অবগত না। তবে আজকে গুলশান বনানীতে সার্বজনীন পূজা ফাউন্ডেশন কর্তৃক আয়োজিত পূজা মণ্ডপে উপস্থিত হয়ে দীর্ঘক্ষণ খিস্তিখেউড় করেছেন, বিভিন্ন পলিটিক্যাল বক্তব্য দিয়েছেন, আমার সেগুলো নিয়ে তেমন কোনো মন্তব্য নেই। কিন্তু তার কয়েকটি কথা আমাকে মর্মাহত করেছে এবং আমার হৃদয়ে গভীর ক্ষত সৃষ্টি করেছে। যেখানে বর্তমানে interim government এর বলা যায় সকল সদস্যই দ্বীন সম্পর্কে অজ্ঞ, সেখানে ধর্ম উপদেষ্টার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে একজন আলেম ও ইসলামিক স্কলারকে; জাতি অনেকটা আশান্বিত হয়েছিল। কিন্তু তার বক্তব্যে তিনি হিন্দু প্রীতি ও পৌত্তলিকতার মতো জগন্যতম শিরকি কাজের প্রতি যে পরিমাণ শিথিলতা প্রদর্শন করেছেন তা আমাকে হতবাক করেছে। তার কিছু কথা মোটেও মেনে নেওয়া যায় না।

(১) হিন্দুদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেছেন, আমরা একই পরিবারের সন্তান।

কোরআন সুন্নাহ, আকাঈদ ও দ্বীনের ন্যূনতম জ্ঞান যার আছে; এমনকি সাধারণ কোন মুসলিমের পক্ষে আদৌ এ কথাটি বলা সম্ভব?
হ্যাঁ, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি দেখানোর জন্য এটা বলতে পারতো যে, আমরা একই দেশের নাগরিক। একই পরিবারের সন্তান বলা যাবে না। কারণ, কুরআনুল কারীমে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন,
সূরা তাওবা ২৮ নং আয়াত,
انما المشركون نجس
শিরকের গুনাহের কারণে তাদেরকে আল্লাহ তায়ালা নাজাস (নাপাক) বলেছেন ‌। যেকোনো কাফের মুশরিক মুসলিম সদস্য হতে পারে না ।

(২) তারপরে তিনি আরও একটি জঘন্য কথা বলেছেন যে, আমাদের দুর্গাপূজা। তিনি বলতে পারতেন হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজা। এই জঘন্যতম শিরকি কাজটিকে তিনি শীতলতার সাথে উল্লেখ করলেন কেন? এটার ব্যাখ্যা তাকে জাতির উদ্দেশ্যে দিতে হবে।

(৩) তৃতীয় যে বিষয়টি, হিন্দু সম্প্রদায় তার গলায় ধর্মীয় নিদর্শন একটি সম্মাননা কাপড় (উথুলি) পড়িয়েছে এবং সেই কাপড়টি পরে তিনি অত্যন্ত আনন্দ প্রকাশ করেছেন। এবং এই পরিধান করাটাকে তিনি কোন দোষনীয় মনে করেন নি বরং বৈধতা দিয়েছে। এখন তো ড. আ ফ ম খালিদ এর ঈমান নিয়েই আমার প্রশ্ন চলে আসে।

ড. আ ফ ম খালিদ বা তার অনুসারীদের উদ্দেশ্যে আকাঈদের গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় উল্লেখ করছিঃ-
আকাঈদের গুরুত্বপূর্ণ দুইটি পরিভাষা হলো:
(১) শেয়ারে মিল্লাত
(২) শেয়ারে ক্বওম
শেয়ারে মিল্লাত; অর্থাৎ, ইসলাম ব্যতীত অন্য যেকোনো ধর্মের ধর্মীয় কোন অনুষঙ্গ কিংবা নিদর্শনকে গ্রহণ করা, স্বীকৃতি দেওয়া , সমর্থন করাও সুস্পষ্ট কুফর।

আরেকটি হচ্ছে শেয়ারে কওম। তা হলো, কোনো জাতির সাংস্কৃতিক অনুষঙ্গ। সেটাও গ্রহণ করার কোনো সুযোগ নাই। কারণ আবু দাঊদ শরীফের সহিহ হাদিসে এসেছে,
من تشبه بقوم فهو منهم
কোনো ব্যক্তি যে জাতির অনুসরণ করল বা সাদৃশ্যতা অবলম্বন করল, সে ব্যক্তি সে জাতির অন্তর্ভুক্ত বলে গণ্য হবে।
এর থেকে সুস্পষ্ট যে, শেয়ারে কওম; অন্য ধর্মের সাংস্কৃতিক কোন বিষয়ও মুসলমানদের গ্রহণ করা বৈধ বা জায়েজ নয়।

একটি উদাহরণ দিচ্ছি খ্রিস্টানদের ক্রুশ; এটা শেয়ারে মিল্লাত। সেজন্যই কোন অখ্রিস্টান যদি খ্রিস্টান হয়, ক্রুশকে সিজদা করলে বা গলায় ধারণ করলেই তাকে খ্রিস্টান হিসেবে মেনে নেওয়া হয়। অপরদিকে, খ্রিস্টানদের শেয়ারে কওমের অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে যেকোনো ধর্মীয় অনুষ্ঠানে কেক কেটে মোমবাতি জ্বালিয়ে হাত তালির মাধ্যমে উৎসব করা। এটা করার দ্বারা মানুষের ঈমান নষ্ট হয় না, গুনাহ হয়।

এখন ড. আ ফ ম খালিদ সাহেব যে, হিন্দু সম্প্রদায়ের উথুলি পড়লেন; এটা শেয়ারে কওমের অন্তর্ভুক্ত নাকি শেয়ারে মিল্লাতের অন্তর্ভুক্ত ?
যদি তর্কের খাতিরে মেনে নেই এটি শেয়ারে কওমের অন্তর্ভুক্ত তবুও তো তার এ কাজটি জায়েজ হয়নি। যদিও সকল দিক বিবেচনা করলে বুঝা যায়, এটা শেয়ারে মিল্লাতের অন্তর্ভুক্ত। কারণ উথুলীতে দূর্গার ছবি ছিল। আর উথুলীতে দূর্গার ছবি সংযোজন করে গলায় পরিধান করা সম্মানের সাথে সম্পর্ক রাখে। পৌত্তলিক বা হিন্দুরা কল্পিত মূর্তি তৈরি করে, সেগুলোকেই সেজদা করে; এটা যেমন শিরক, ঠিক তেমনি কল্পিত দেবদেবীর চিত্র অঙ্কন করে তারা সম্মান প্রদর্শন

ইসলামী আকিদাহ

11 Oct, 02:59


অমুসলিমদের খাবার বা হাদিয়া গ্রহণ ও প্রদান সম্পর্কে জরুরী মাসআলা

১. সাধারণ অবস্থায় বা বিশেষ কোনো কারণে, যেমন প্রতিবেশী হওয়া, সন্তান জন্ম লাভ করা, পরীক্ষায় পাস করা, ভালো চাকরি পাওয়া, বিবাহ উপলক্ষে এ জাতীয় কারণে অমুসলিমদের পক্ষ থেকে পাঠানো খাবার বা হাদিয়া গ্রহণ করা কিংবা তাদের দাওয়াত গ্রহণ করা জায়েয।

তবে শর্ত হচ্ছে, নিজের দীন-ধর্মের কোন ক্ষতি না হতে হবে এবং তা হারাম ও অপবিত্র বস্তু হতে পারবে না, যেমন তাদের জবাইকৃত পশুর গোশত ও মদ অথবা খাবারে কোন নাপাকি বা মুসলমানদের জন্য হারাম এমন কোন জিনিস মিশ্রিত থাকা।

২. প্রতিবেশী বা আত্মীয়তার কারণে কিংবা ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট করার জন্য অথবা বৈধ কোন প্রয়োজনে অমুসলিমদেরকে হাদিয়া প্রদান বা দাওয়াত দেওয়া জায়েয।

৩. অমুসলিমদের ধর্মীয় অনুষ্ঠান ও উৎসব উপলক্ষে যদি কোন খাবার বা হাদিয়া আসে, আর তা যদি
দেবদেবি বা মুর্তির নামে উৎসর্গ করা হয়, যেমন প্রসাদ বা মিষ্টান্ন কিংবা ফলমুল, এমনকি পানি হোক না কেন, তা হারাম। সেই খাবার খাওয়া বা হাদিয়া গ্রহণ করা বৈধ নয়। এভাবে কোনো মুর্খ মুসলিম যদি তা ওলি-আউলিয়াদের নামে করে, তাও হারাম।

বলাবাহুল্য, উৎসর্গকৃত বস্তু প্রাণী হতে হবে না, বরং যে কোন কিছু হলেই হবে। কাজেই প্রসাদ বা প্রাণী জাতীয় বস্তু হারাম, তবে মিষ্টান্ন বা ফলমূল হারাম নয়- এ ধরনের কথায় বিভ্রান্ত হবেন না।

৪. কারো নামে উৎসর্গকৃত নয় এমন হালাল ও পবিত্র খাবার বা হাদিয়া যদি অমুসলিমদের ধর্মীয় অনুষ্ঠান ও উৎসব উপলক্ষে আসে অথবা বিধর্মী কোন মালিক তার কাছে চাকরিরত মুসলিমদের যদি এই উপলক্ষে কিছু দেয়, তা গ্রহণ করা নিরাপদ নয়। হযরত আলী রাযি. ও ওমর বিন আব্দুল আজিজ রহ. তা গ্রহণ করতেন না। বর্তমানে এর উপরই আমল করা উচিত।

তবে কারো কারো মতে তা গ্রহণ করার সুযোগ আছে। শর্ত হচ্ছে, নিজের দীন-ধর্মের ক্ষতি না হতে হবে এবং প্রায় প্রতি উৎসবে তা হতে পারবে না, বরং প্রয়োজনে বা ঠেকায় পড়ে যদি দুই একবার গ্রহণ করতে হয়, তাহলে বৈধ। যেখানে ফিকহের কিতাবে মুশরিক-
বিধর্মীদের সাথে প্রয়োজনে দুই একবার ছাড়া একসাথে খানা খেতে নিষেধ করা হয়েছে, সেখানে তাদের প্রায় প্রতি উৎসবে তাদের কাছ থেকে কিছু খাওয়া কীভাবে বৈধ হতে পারে? তাছাড়া এটা তো ঈমানী গায়রতেরও প্রশ্ন!

কাজেই তাদের কাছ থেকে প্রায় প্রতি পূজায় নারকেলের নাড়ু আর খইভাজা বা অন্য কিছু খাওয়া জায়েয নয়।

৫. কারো নামে উৎসর্গকৃত নয় এমন হালাল ও পবিত্র খাবার বা হাদিয়া যদি অমুসলিমদের ধর্মীয় অনুষ্ঠান ও উৎসব উপলক্ষে তারা এটা মনে করে দেয় যে, পরস্পরে আনন্দ ভাগাভাগি করা বা মুসলমানরাও আমাদের এই উৎসবে অংশীদার অথবা এটা তাদের উপর আমাদের অনুগ্রহ, তখন উক্ত খাবার বা হাদিয়া গ্রহণ করা নাজায়েয।

৬. কোন মুসলিমের জন্য অমুসলিমদের ধর্মীয় অনুষ্ঠান ও উৎসব উপলক্ষে তাদেরকে কিছু দেয়া হারাম। সুতরাং পূজার জন্য টাকা বা অন্য কিছু দেওয়া জায়েয নয়।

৭. অমুসলিমদের ধর্মীয় অনুষ্ঠান ও উৎসব উপলক্ষে তাদের মতো উক্ত অনুষ্ঠান ও উৎসবকে সম্মান মনে করে তাদেরকে কিছু দেয়া কুফরী। ইমাম আবু হাফস কাবীর রাহ. বলেন, কেউ যদি ৫০ বছর ইবাদত করেছে, এরপর কোন মুশরিককে তার উৎসবের দিনকে সম্মান করে একটা ডিম হাদিয়া দিল, তাহলে সে কাফের হয়ে যাবে এবং তার সমস্ত আমল বরবাদ হয়ে যাবে।

৮. অমুসলিমদের ধর্মীয় অনুষ্ঠান ও উৎসব উপলক্ষে যদি এক মুসলিম অন্য মুসলিমকে কিছু দেয়, আর এতে যদি অমুসলিমদের মতো উক্ত অনুষ্ঠান ও উৎসবের সম্মান মনে করে দেয়, তাহলে কুফরী হবে।

দেখুন, মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা হা. ২৪৮৫৬, ২৪৮৫৭, ৩৩৩৮৯; আত-তারিখুল কাবীর, ইমাম বুখারী হা. ১৩১৯; আস-সুনানুল কুবরা, বায়হাকী ১৮৮৬৫; আল-খারাজ, ইমাম আবু ইউসুফ পৃ. ৯৯; আস-সিয়ারুল কাবীর, ইমাম মুহাম্মাদ ১/১৪৬; আল-মাবসূত, সারাখসী ২৪/৫০; আল-মুহিতুল বুরহানি ৫/৩৬২; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৭/৩৪৮; ফাতাওয়া বায্যাযিয়্যা ১২/১৮৬; ফাতাওয়া শামী ১০/৪৮৫-৮৬, যাকারিয়া; ফাতাওয়া আলমগীরী ৫/৩৪৭; ইমদাদুল ফাতাওয়া ৮/৫৬৩, ৯/৪২৯-৩০; ফাতাওয়া মাহমুদিয়া ১৮/১৭৫ ; আহসানুল ফাতাওয়া ৮/১৬২; ফাতাওয়া কাসেমিয়া ২৪/২৪৮ ও মাআরিফুল কুরআন, মুফতি শফী ১/৪২৪।

‘‘ঈমান-আকীদা’’ বইয়ের প্রথম খণ্ড থেকে
🖋️শায়খ সাঈদ আহমাদ হাফিঃ

ইসলামী আকিদাহ

04 Sep, 00:13


রাষ্ট্রকে ধর্ম থেকে আলাদা করা হল, ধর্মনিরপেক্ষতাবাদীদের মূল কনসেপ্ট।

এই চিন্তা মুলত আল্লাহ তাআলার সঙ্গে শিরকের একটি প্রকার। কেননা এটি বস্তুবাদী জীবনে দ্বীনের কর্তৃত্বকে স্বিকার করে না এবং দ্বীনের কর্তৃত্বকে রীতি-নীতি ও ইবাদতের মধ্যে সীমাবদ্ধ মনে করে, যা মানুষ একাকীত্বে বা ইবাদতখানায় চর্চা করে। কেমন জানি 'ইলাহ' তিনি শুধুমাত্র ইবাদত ও রীতি-নীতির ক্ষেত্রে 'ইলাহ', আর জাগতিক বিষয়ের জন্য আরেকজন 'ইলাহ' রয়েছে।

মাজাল্লাতু বুহুসিল ইসলামিয়াতে রয়েছে,
আর যে ব্যক্তি মনে করে ধর্ম রাস্ট্র থেকে আলাদা, এবং ধর্মের স্থান হল, কেবল মসজিদ, মাদরাসা। আর রাষ্ট্রতো যা ইচ্ছে তা-ই করতে পারবে। এবং যা ইচ্ছে তা-ই বিধান হিসেবে প্রনয়ন করবে। এটা আল্লাহ তাআলা ও তার রাসূলের উপর অনেক বড় একটি অপবাদ ও মিথ্যাচার। এবং নিকৃষ্টতর গলত, বরং এটি কুফর ও মারাত্মক গোমরাহি। আল্লামা যাহেদ কাউসারী রহ. ও মুস্তফা সাবরী রহ.ও তাদের কিতাবে এমনটি উল্লেখ করেছেন।
ومن زعم فصل الدين عن الدولة، وأن الدين محله المساجد والبيوت، وأن للدولة أن تفعل مايشاء وتحكم بماتشاء فقد أعظم علي الله الفرية، وكذب علي الله ورسوله، وغلط أقبح الغلط، بل هذا كفر وضلال بعيد، عياذا بالله من ذلك
) المجلة البحوث الإسلامية، العدد الخامس والأربعون، الشق الثاني ضرورة البشر إلي الشريعة)

وقال الشيخ مصطفي صبري في موقف العقل والعلم والعالم من رب العالمين وعباده المرسلين والشيخ زاهد الكوثري الحنفي في مقالات الكوثري هكذا.

সেকুলারিজমের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে শাইখুল ইসলাম আল্লামা তাকী উসমানী হাফি. তাকমিলাতে এরকম বলেছেন,
مكانة السياسة في الدين: قد شتهر عن النصاري أنهم يفرقون بين الدين والسياسة بقولهم المعروف: "دع مالقصير لقيصر، ومالله لله"، فكأن الدين لا علاقة له بالسياسة، والسياسة لاربط لها بالدين، وإن هذه النظرية الباطلة قدتدرجت إلي أبشع صورها في العصور الأخيرة بإسم "العلمانية" أو "سيكولر إزم" التي أخرجت الدين من سائر شؤون الحياة حتي قضت عليه بتاتا.
وإن هذه النظرية في الحقيقة نوع من أنواع الإشراك بالله...
( تكملة فتح الملهم كتاب الإمارة ١٥٣/٣)
🖋️মাওলানা নূরুল আজিম বিন কাশেম

ইসলামী আকিদাহ

29 Aug, 02:46


খি*লা-ফত এবং রা-শি-দাহ

দুটি আলাদা শব্দ,
উভয়টি একসাথে করলে
খিলাফতে রাশিদাহ।

খিলাফতে রাশিদাহ এবং খিলাফত
উভয়টিই স্বীকার করতে হবে, অস্বীকারের সুযোগ নেই।

খিলাফতে রাশিদাহ এর গুরুত্ব অনস্বীকার্য,
তাই বলে খিলাফতে রাশিদাহ এর গুরুত্ব বলতে গিয়ে খিলাফত কে প্রশ্নবিদ্ধ করা যাবেনা।

খি*লা*ফ*ত কে মানব রচিত বলা কুরআন মাজীদ সম্পর্কে অজ্ঞতাই প্রমাণ করে, খিলাফত কে মানব রচিত বলা মানে মানব রচিত "রাজনীতি" প্রমোট করে "ইসলামী রাজনীতি" কে প্রশ্নবিদ্ধ করা।

আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলোঃ
কারো খিলাফতের সময়কাল কে প্রশ্নবিদ্ধ করা মানে "খিলাফত" কে প্রশ্নবিদ্ধ করা নয়।

الله أعلم بالصواب

🖋️মাওলানা আরিফ বিন হাবিব হাফিঃ

ইসলামী আকিদাহ

28 Aug, 02:56


যুগে যুগে ইসলামি শরিয়াহ ও খিলাফত কায়েম করাই ছিল উলামায়ে দেওবন্দের অভীষ্ট লক্ষ্য। দেওবন্দি শিক্ষাব্যবস্থা, দাওয়াত ও তাবলীগ, তাসাওউফ ও আত্মশুদ্ধি- এগুলোর মাধ্যমে মূল উদ্দেশ্য হলো, দেশের জনগণকে সঙ্গে নিয়ে ইসলামি শরিয়াহ কায়েমের পথ প্রশস্ত করা।
.
হযরত শাইখুল হিন্দ মাওলানা মাহমুদ হাসান দেওবন্দি রহ.। দারুল উলূম দেওবন্দের প্রথম ছাত্র। তিনি তাঁর জীবনের শ্রেষ্ঠাংশকে খিলাফাহ কায়েমের জন্যেই উৎসর্গ করেছিলেন। তাঁর রেশমি রুমাল আন্দোলনের কথা কে না জানে! একটা পরাধীন, ইংরেজশোষিত রাষ্ট্রে বসেও তিনি খেলাফত আন্দোলনের ডাক দিয়ে গোটা ভারতবর্ষে তোলপাড় সৃষ্টি করেছিলেন। এই আন্দোলনের জন্যে তিনি দেওবন্দের তৎকালীন মুহতামিমদের সাথে দ্বিমত করতেও দ্বিধা করেননি। এমনকি এর জন্যে শেষ জীবনে জেল খেটেছেন। মাল্টায় সশ্রম কারাদণ্ড ভোগ করেছেন। তবুও খিলাফাহর দাবি থেকে এক পা পিছু হটেননি।
.
আপনারা শুনলে অবাক হবেন যে, খোদ দারুল উলূম দেওবন্দ প্রতিষ্ঠিতই হয়েছে সেই শরিয়াহ ও খিলাফাহ কায়েমের উদ্দেশ্যে। 'হুজ্জাতুল ইসলাম মাওলানা কাসিম নানুতুভি রহ. কখনই প্রথাগত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে দারুল উলূম দেওবন্দ প্রতিষ্ঠা করেননি; বরং ১৮৫৭ সালের স্বশস্ত্র বিপ্লব ব্যর্থ হওয়ার পর তিনি দারুল উলূম দেওবন্দ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন এমন জনবল গড়ে তোলার উদ্দেশ্য নিয়ে, যারা সেই বিপ্লবের ব্যর্থতাকে ঢেকে নতুন করে শরিয়াহ কায়েমের পথ তৈরি করবে।'
এ কথা মানাযির আহসান গিলানি রহ. তাঁর আত্মজীবনী ‘ইহাতায়ে দারুল উলূম...’ এর মাঝে হযরত শাইখুল হিন্দ রহ. এর বরাতে তুলে ধরেছেন। (পৃষ্ঠা : ১৫৫)
এই বৈশিষ্ট্যের কারণেই দারুল উলূম দেওবন্দ বিশ্বের যেকোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে স্বতন্ত্র ও শ্রেষ্ঠ। আযহার, মদিনা ইউনিভার্সিটি, আলিগড় ইউনিভার্সিটি, নদওয়া- এগুলো সব হলো স্রেফ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান; কিন্তু দারুল উলূম দেওবন্দ হলো একটি বিপ্লব। একটি সংগ্রামী কাফেলা।
.
হযরত হাফেজ্জি রহ. এর আগে বাংলাদেশের উলামায়ে দেওবন্দ কখনই প্রচলিত রাজনীতিতে জড়াননি। তিনিই প্রথম বাংলাদেশি আলেম, যিনি প্রথাগত রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হয়েছেন। কিন্তু তাঁর দলটির নাম কী দিয়েছিলেন, জানেন? খেলাফত আন্দোলন। বাংলাদেশের ইতিহাসের অন্যতম নিষ্কলুষ এই পীর ‘খেলাফত আন্দোলন’ নামকরণের মাধ্যমে দেশবাসীকে এ বার্তাই দিয়েছেন যে, আমাদের অভীষ্ট লক্ষ্য সেই খিলাফত কায়েম করা, যার জন্যে আমাদের গোটা জীবনের দাওয়াত ও তালীম, তাযকিয়া ও তাসাওউফ উৎসর্গ।
.
সমকালের আরেকটি দেওবন্দি রাজনৈতিক দল ছিল, নিযামে ইসলাম পার্টি। যার অর্থই হলো, ইসলামি শাসনব্যবস্থা। জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের প্রতিষ্ঠাতা হযরত মাওলানা শাব্বীর আহমদ উসমানি রহ. ইসলামি শাসনব্যবস্থা কায়েমের জন্যে এতোটাই উদ্দীপ্ত ছিলেন যে, সেই স্বপ্ন পূরণের জন্যে তিনি জীবনের সর্বস্ব উজাড় করে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠায় ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। এর জন্যে তিনি মাতৃভূমি ত্যাগ করেছেন। দারুল উলূম দেওবন্দের শিক্ষকতাও ত্যাগ করেছেন। পাকিস্তানে ইসলামি সংবিধান প্রতিষ্ঠার প্রশ্নে তৎকালীন ক্ষমতাসীনদের সাথে আমৃত্যু তুমুল দ্বন্দ্ব করে গেছেন। তারপরও শরিয়াহ কায়েমের দাবি থেকে এক চুল নড়েননি।
.
মহান আল্লাহ উলামায়ে দেওবন্দকে যেমন দ্বীনের প্রকৃত সমঝ ও বিশুদ্ধ চেতনা দান করেছেন, তদ্রূপ ইকামাতে দ্বীনের জন্যে যুগচাহিদার প্রেক্ষিতে সব ধরনের হিকমত তথা প্রজ্ঞা অবলম্বনের দূরদর্শিতাও দিয়েছেন। এ কারণেই তাঁদের মিশন বিশ্বের কোথাও মুখ থুবড়ে পড়েনি। এই মিশন বিশ্বের একেক দেশে একেক পদ্ধতিতে নিয়মিত প্রবহমান থাকার মাধ্যমে ক্রমশ বিন্দু থেকে সিন্ধুই হয়েছে।
এই বৈশিষ্ট্যই দেওবন্দি আন্দোলনকে সমকালের অন্য সকল ইসলামি আন্দোলন থেকে বিশিষ্ট করেছে।
* এই যে আমরা আজ মাদরাসায় পড়ছি, পড়াচ্ছি। এগুলোর দ্বারা উদ্দেশ্যই হলো, আমাদের পরবর্তী প্রজন্মকে ইকামতে দ্বীনের জন্যে তৈরি করা।
* এই যে আমরা দাওয়াত ও তাবলীগের মেহনত করছি। এরও উদ্দেশ্য, জনগণকে শতভাগ শরিয়াহর অধীনে নিয়ে আসা।
* এই যে আমরা আজ রাজপথে রাজনৈতিক কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করেছি, মিটিং-মিছিল করছি। এগুলোরও উদ্দেশ্য হলো, দেশের প্রচলিত শাসনকাঠামোর মাঝে কোনো ধরনের শরিয়াহবিরোধী আইন-নীতিমালা ও শিক্ষাব্যবস্থা ঢুকতে না দেওয়া এবং বিদ্যমান অসঙ্গতিগুলোকে দূর করার মতো শক্তি ও গণসমর্থন অর্জন করার মাধ্যমে আগামীর শারঈ সোনালি শাসনব্যবস্থার পথ সুগম করা।
.
এভাবে আমরা যখন আমাদের সকল সামর্থ্য ইকামতে দ্বীনের জন্যে নিবেদন করব, ইনশাআল্লাহ -আমরা স্বপ্ন দেখি- আমাদের এই মাটিতেও একদিন খিলাফত প্রতিষ্ঠিত হবে। খিলাফাহ আলা মিনহাজিন নবুওয়াহ। যার জন্যে আমাদের জীবন, যৌবন, শক্তি-বীর্য, সহায়-সম্পদ সবকিছু কুরবান।
🖋️আব্দুল্লাহ আল ফারুক হাফিঃ

ইসলামী আকিদাহ

12 Jul, 09:15


শা/তি/ম/কে ক/ত/ল করার পর কাজটা আইনসিদ্ধ ছিল নাকি বেআইনি, এমন তর্কে জড়ানো আমাদের মত সাধারণ মুসলমানের কাজ নয়; এটা রাষ্ট্র ও আদালতের কাজ। নবীজির প্রতি ধৃষ্টতাপ্রদর্শনকারী এক জাহান্নামিকে তার উপযুক্ত পাওনা বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে এটা সকল মুসলমানের জন্য আনন্দের, সুখের। প্রিয় হাবিবের উম্মত হিসেবে আমাদের উচিত আনন্দিত হওয়া শুকরিয়া আদায় করা। আমরা আনন্দিত হয়েছি এবং রব্বে কারিমের শুকরিয়া আদায় করছি। যে দুজন মুসলিম ভাই এই মহান দায়িত্ব পালন করেছেন আমরা তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। আল্লাহ তাআলা তাদের নবীজির শাফায়াত ও দিদার দ্বারা সুখী করুন।

তবে যদি প্রশ্ন তোলা হয়, এভাবে প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করে একজন মাত্র শা/তি/ম/কে হত্যা করে হাজারও মুসলমানকে উ/গ্র/বা/দী হি/ন্দু/গোষ্ঠীর রোষানলের মুখে ঠেলে দেওয়া ও সংখ্যালঘু মুসলিমসম্প্রদায়ের জীবনকে ভীতিকর ভবিষ্যতের দিকে ঠেলে দেওয়া কি উচিত কাজ হলো?
প্রশ্নের উত্তর দেবার আগে আমরা জানতে চাইবো, যে রাষ্ট্র ও রাষ্ট্রের সরকারদলীয় জনগণ প্রতিনিয়ত মুসলিমনির্যাতনের মহড়া চালাচ্ছে, মুসলিম নিধনের মাধ্যমে নিজেদের ‘নির্যাতনপারদর্শিতা’র পরীক্ষা – নীরিক্ষা করছে, গণধর্ষণের মাধ্যমে মুসলিম নারীর গর্ভে হিন্দু জন্ম দেওয়ার ‘আজন্ম’ সাধ পুরণ করছে এই একটি মাত্র ঘটনা সেই নির্যাতনের ইতিহাসে কতটা বর্ধন করতে সক্ষম? নির্যাতনের আর কী কী উপায় আছে যা এই ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় সামনে আসতে পারে? যে দেশে বিশ্ববিখ্যাত ইসলামি বিদ্যাপীঠ দারুল উলুম দেওবন্দের মসজিদের আওয়াজকে সীমিত করে দেওয়া হয়, শত শত মসজিদে মাইকে আজান নিষিদ্ধ করা হয়, লাভ জি/হা/দ বন্ধের নামে মুসলিম যুবকের জীবন কেড়ে নেওয়া হয় সে দেশে মুসলিম নির্যাতন কোন স্তরে উন্নীত হয়েছে তা কি অননুমেয়? শাতিম হত্যার ঘটনা সেখানে কী কী সমস্যা নতুন করে সৃষ্টি করতে পারে বলে মনে হয়? সুতরাং এই কাজের মাধ্যমে সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীকে নতুন কোনো বিপদে ঠেলে দেওয়া হলো এটা গ্রহণযোগ্য ‘অভিযোগ’ নয়।

কথায় আছে, দেয়ালে পীঠ ঠেকে গেলে বেড়ালও বাঘ হয়ে যায়? কেন? আত্মরক্ষার জন্য। কিন্তু এই শেষ চেষ্টাটাও যদি সে না করে তাহলে সে ‘বাগদাদি মুসলিম’ হয়ে যায়। তাতাররা যখন বাগদাদ আক্রমণ করে তখন ‘কোমরভাঙা’ মুসলমিগোষ্ঠী এতটা ভীতবিহ্বল হয়ে পড়েছিল যে, বাঁচার শেষ চেষ্টা করার সাহসও তাদের অবশিষ্ট ছিল না। ফলে, তাতারি শিশুর হাতে মুসলিম দামড়া যুবক ‘অসহায়’ আত্মসমর্পণ করেছে এবং নিকৃষ্ট ও নির্লজ্জ মৃত্যুকে বরণ করেছে। ভা/র/তে/র চলমান অবস্থাও তেমন। দেয়ালে পীঠ ঠেকে গেছে অনেক আগেই। প্রতিনিয়ত মরণআঘাতের শিকার হয়েও কোনো এক অজানা কারণে তারা নিশ্চুপ মার খেয়ে যাচ্ছে। তারা ভেবেছে এভাবে মার খাওয়াটাই আমাদের নিয়তি। ফলে, বীর্যবান মুসলিম তরুণ পাশের বাড়ির ‘শ্রীরামের গোলাম’ শিশুটিকে ভয় পাচ্ছে যমের মত। লাল গেরুয়াবাহিনী দেখলেই মৃত্যুর কালো ছায়া দেখতে পাচ্ছে চোখের সামনে। এমন পরিস্থিতিতে শা/তি/ম হত্যার এই ঘটনা ‘মুসলিম রেনেসাঁ’র ভুমিকা পালন করতে পারে বলে। দেয়ালে পীঠ চেপে ধরে মৃত্যুর প্রহরগোণা অপদার্থ মুসলিম যুবকের মনেও মুহূর্তখানিকের জন্য জ্বলে উঠতে পারে ‘ইসলামি চেতনা’। মুসলিম হ্যাঁয় হাম ওতান হ্যায় সারা জাহাঁ হামারা। বারুদের মত জ্বলে ওঠা এই আগুনে পুড়ে যেতে পারে ‘রা/ম/রা/জ্য’ প্রতিষ্ঠার যাবতীয় ষড়যন্ত্র। সুতরাং এমন পরিস্থিতিতেও যারা অতি সুশীল মনোভাব নিয়ে প্রশ্ন তোলেন, এভাবে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দেওয়া কি ঠিক হলো, আমরা মনে করি তারা এতদিন ঘুমে ছিলেন। তাদের খবর ছিল না। শাতিম হত্যার ঘটনাটির একটি বিশেষ দিক হলো, তাদের ঘুম ভেঙেছে। তারা নড়েচড়ে বসেছেন।

আগেই বলেছি, আইনসিদ্ধ নাকি বেআইনি হয়েছে এই হিসেবটা আমাদের জন্য নয়। এটা রাষ্ট্রপক্ষ ও আইন – আদালতের কাজ। আমাদের কাজ আনন্দিত হওয়া এবং যারা করেছে তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা। এই কাজে যাতে আমরা কুণ্ঠিত, শংকিত ও দ্বিধান্বিত না হই। নির্দ্বিধায় তাদের সমর্থন জানাই এবং আনন্দ প্রকাশ করি। এতটুকু নেহাত কম নয়। উম্মাহর ‘ঘুমন্ত শার্দুল’দের বুকে সুষুপ্ত ইমানি চেতনাকে জাগ্রত করতে এটুকুর অনেক ভুমিকা আছে।

খুব স্পষ্ট করে বলতে চাই, শা/তি/ম হত্যার দায় ও দায়িত্ব রাষ্ট্রের; সাধারণ জনগনের নয়। তাই এই দায়িত্ব হাতে তুলে নিতে আমরা কাউকে উৎসাহিত করি না। কেউ করে ফেললে আমরা আনন্দিত হই এবং তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি; রাষ্ট্রের দায়িত্বহীনতাকে এর পেছনের অনুঘটক করে করি। রাষ্ট্র যদি সচেতন হতো এবং শা/তি/মে/র যথাযোগ্য বিচারের ব্যবস্থা করত তাহলে সাধারণ মানুষের ভেতর এমন প্রতিক্রিয়া প্রকাশ পেতো না। এবং কারও ধর্মানুভূতিতে আঘাত করা নিকৃষ্টতম অপরাধ; যার শাস্তি একমাত্র মৃত্যুদণ্ড হওয়া উচিত।
🖋️ মাওলানা নুরুজ্জামান নাহিদ হাফিঃ

ইসলামী আকিদাহ

28 Jun, 23:08


মুতাযিলা বা দেহবাদীদের অনুসারী কিংবা অন্য কোন ভ্রান্ত দলের লোকেরা কখনো "আকীদাতুত তাহাবী"র উপর একমত বা সন্তুষ্ট হতে পারবে না। চাই তিনি সেই যুগের হোক, কিংবা এই যুগের সালাফী দাবিদার হোক।

ইমাম তাজুদ্দীন সুবকী রাহ. (মৃ. ৭৭১ হি.) বলেছেন,
وهذه المذاهب الأربعة - ولله الحمد - في العقائد واحدة، إلا من لحق منها بأهل الاعتزال والتجسيم. وإلا فجمهورها على الحق يقرون عقيدة أبي جعفر الطحاوي، التي تلقاها العلماء سلفا وخلفا بالقبول.
'আল্লাহর শোকর! চার মাযহাবের আকীদা এক ও অভিন্ন। তবে যারা মুতাযিলা বা দেহবাদীদের অনুসারী হয়েছে এরা ছাড়া। অন্যথায় (চার মাযহাবের) অধিকাংশ অনুসারী হকপন্থী এবং 'আকীদাতুত তাহাবী'র আকীদা পোষণকারী, যে কিতাবকে পূর্ববর্তী ও পরবর্তী উলামায়ে কেরাম ব্যাপকভাবে গ্রহণ করেছেন। (মুঈদুন নিআম, পৃষ্ঠা ২২)
🖋️ মাওলানা সাঈদ আহমাদ হাফিঃ

ইসলামী আকিদাহ

15 Jun, 23:32


করাও মুসলমানদের জন্যে বৈধ নয়।

যে সমস্ত লোকেরা মনে করে ভিন্নধর্মাবলম্বীদের সাথে এইধরনের ঐক্য শরীয়তে জায়েয আছে তারা মূলত আল্লাহকে ধোঁকা দেয়। পুরো শরীয়তে এমন কোনো দৃষ্টান্ত নেই যে, কাফেরদের কোনো শিরকী আকিদার প্রতি মুসলমানদের ছাড় দেওয়া বা কাফেরদের মৌন আকর্ষনের জন্যে কোনো ইসলামের শিয়ারকে বাদ দিয়ে দেওয় হয়।
আমরা আল্লাহর কাছে এমন কর্ম থেকে পানাহ চাই।

=========

তথ্যসূত্র :
ইমদাদুল আহকাম ৪/১৯১-১৯৩,
আল্লামা যফর আহমদ উসমানী দা.বা.
মাকতাবাতু দারুল উলুম করাচি,প্রকাশকাল ২০১৮।

ইসলামী আকিদাহ

15 Jun, 23:32


উপমহাদেশে গরু জবাই করা অবশ্যই ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ ‘শিয়ার’ তার কয়েকটি কারণ নিম্নে উল্লেখ করা হলো—

১. উপমহাদেশে মুসলমানদের আগমনের পূর্বে হিন্দুরা গরুকে অনেক সম্মান ও ইজ্জত করতো এবং নিজেদের প্রভু মনে করতো। এখনো তারা এই আকিদা লালন করে। এই শিরকী আকিদার কারণে যতদিন এই উপমহাদেশে তাদের ক্ষমতা ছিলো, কারো সাহস ছিলোনা গরু জবাই করবে। যখন মুসলমানরা উপমহাদেশের ক্ষমতা অর্জন করলো তখন হিন্দুদের অন্যসকল শিরকী আকিদার পাশাপাশি গরুর প্রতি তাদের যে আকিদা তাও মিটিয়ে দিতে উদ্দত হলো। তারা গরু জবাই করতে লাগলো যাতে এই কথা স্পষ্ট হয়ে যায় যে, গরু শুধুই চার পা বিশিষ্ট একটি প্রাণী। কোনো দেব-দেবী নয়।

উপমহাদেশে গরু জবাই যেহেতু মুসলমানদের আসার মাধ্যমেই শুরু হয়েছে এবং তা জবাই করা মুসলিমদের একটি প্রমান বহন করে তাই গরু জবাই ইসলামের শিয়ারের অন্তর্ভুক্ত।

২. কালিমায়ে তাওহিদ ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ’ সর্বসম্মতিক্রমে ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ শিয়ার। কিন্তু হিন্দুরা সত্য গোপন ও মুসলমানদের ধোঁকা দেওয়া জন্য তা প্রায় তা বলতো। উপমহাদেশে পরিবেশ এমন ছিলো, হিন্দুরা মুসলমানদের সাথে হাঙ্গামা আর দাঙ্গা-ফাসাদ করার সময় ‘আল্লাহু আকবার’ এবং ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু'র স্লোগান দিতো। কিন্তু কোনো অবস্থাতেই গরু জবাই করতোনা। এর দ্বারা এই কথাই প্রমাণ হয়, উপমহাদেশে গরু জবাই করা ও তার গোস্ত খাওয়া মুসলিমদের একটি পরিচয়। তাই কোনো হিন্দু সঠিক অর্থে মুসলিম হয়েছে কি না তা যাচাই করার জন্যে তাকে গরুর গোস্ত খেতে দেওয়া হতো।

৩. কুফফারদের থেকে জিযিয়া কর আদায় করা ইসলামের বিজয়ের একটি বড় নিদর্শন। কিন্তু দেখা গেলো, মুসলমানরা উপমহাদেশের ক্ষমতা অর্জন করার পর হিন্দুরা কর দেওয়ার অপমানকে অতটা গুরুত্ব দিতোনা। কিন্তু গরু জবাই করাকে তারা কোনোভাবেই মেনে নিতোনা। গরু জবাইয়ের কারণে মুসলিমদের খুন করতেও হিন্দুরা কুন্ঠাবোধ করতোনা। মুসলমানরা তাদের জীবনের বিনিময়েও গরু জবাই ছেড়ে দেয়নি। এবং তা উপমহাদেশে বাকি রেখেছে।

উপমহাদেশে গরু জবাই কাফেরদের থেকে কর আদায়ের চেয়েও বড় নিদর্শন হয়ে প্রতিভাত হয়। তাই এই কথা নিঃসন্দেহে বলা যায়, গরু কুরবানি করা ইসলামের একটি বড় ‘শিয়ার’।

৪. কুরআন শরীফে আল্লাহ তায়া ইরশাদ করেন,
وَالْبُدْنَ جَعَلْنَاهَا لَكُم مِّن شَعَائِرِ اللَّهِ
আমি ‘বুদনা’কে তোমাদের জন্যে আল্লাহর একটি শিয়ার নির্ধারণ করলাম।-সুরা হাজ্জ আয়াত ৩৬

‘বুদনা’ শব্দটি আরবীতে উট ও গরু উভয়ের জন্যে ব্যবহৃত হয়। আরবী ভাষার নির্ভরযোগ্য অভিধান ফিরুযাবাদি রহ. রচিত ‘আল কামুসুল মুহিতে’ বুদনা শব্দের অর্থ এভাবে এসেছে

والبَدَنَةُ، محَرَّكةً، من الإِبِلِ والبَقَرِ: كالأُضْحِيَةِ من الغَنَمِ، تُهْدَى إلى مكةَ، للذَكَرِ والأنْثَى

‘বুদনা’ এটি ‘বাদানাহ’ শব্দের বহুবচন। যা উঠ এবং গরু উভয়কে বুঝায়।-আল কামুসুল মুহিত পৃ.১১৭৯।

সুতরাং যেভাবে উঠ জবাই করা ইসলামের একটি শিয়ার তেমনিভাবে গরু জবাই করাও ইসলামের একটি শিয়ার।...

সুতরাং এই কথা প্রমাণিত হলো যে, গরু জবাই করা ইসলামের একটি শিয়ার। এখন হিন্দুরা মুসলমানদের এই শিয়ার থেকে জোরজবরদস্তি করে হোক বা ভালো ব্যবহার করে কৌশলে যেভাবেই হোক, যদি বিরত রাখতে চায়, তখন মুসলমানদের জন্য এই শিয়ারকে সাধ্যমতো সমাজে ঠিকিয়ে রাখা ওয়াজিব হয়ে যায়। আর এমন মূহুর্তে যে হিন্দুদের সাথে একত্বতা পোষণ করবে তার ইমানের ব্যাপারে সংশয় আছে। যেমনভাবে উপমহাদেশে হিন্দুরা জোরজবরদস্তি করে বা কৌশলে যদি মুসলমানদেরকে আজান দেওয়া থেকে বিরত রাখে তখন তা ছেড়ে দেওয়া কোনোভাবেই মুসলিমদের জন্যে বৈধ হবেনা তেমনিভাবে হিন্দুদের ভালো ব্যবহার বা জোরাজোরি কোনো কারণেই গরু জবাই কম করা বা গরু জবাই করা ছেড়ে দেওয়া বৈধ হবেনা। প্রত্যেক মুসলমানের জন্যে আবশ্যক হলো নিজের সাধ্যনুযায়ী গরু জবাইয়ের মুসলমানদের এই শিয়ার বাকি রাখা।...

যদি আমরা বিষয়টিকে এই দৃষ্টিকোণ থেকে দেখি যে, গরু জবাই করার দ্বারা হিন্দুদের একটি শিরকি বিশ্বাসের খণ্ডন ও মুসলিমদের বিজয়ের চিহ্ন প্রকাশ হয় তখন অন্যান্য পশু থেকে গরু জবাই করা উত্তম এটা স্পষ্টভাবেই বুঝে আসে।... বিশেষ করে যে অঞ্চলগুলোতে হিন্দু-মুসলিম একসাথে বসবাস করে এবং মুসলিমদের গরু জবাই করার মত ক্ষমতা আছে সেখানে অন্যান্য পশু থেকে গরু জবাই করাকে প্রাধান্য দেওয়া উচিত।

বর্তমানে কিছু লোককে দেখা যায় এই কথা বলতে, ‘আমাদের সাথে হিন্দুদের একটি ঐক্য আছে। এবং এই ঐক্য আমাদের ধরে রাখার প্রয়োজন আছে। তাই আমাদের উচিত হলো গরু জবাই না করা।’

এই কথার জবাবে এতটুকুই বলবো, ইসলামের দৃষ্টিতে সেই ঐক্যই বৈধ নয় যেখানে কাফেরদের কোনো শিরকী আকিদার প্রতি ছাড় দেওয়া লাগে। গরুর প্রতি সম্মান এটি হিন্দুদের একটি বড় শিরকী বিশ্বাস। এতে মুসলমানদের কোনো অংশগ্রহণ কোনোভাবেই বৈধ নয়। হিন্দু বা অন্যকোনো ধর্মের লোকদের সাথে তাদের ধর্মীয় বিষয়ে একমত হওয়া ছাড়া যে ঐক্য সম্ভব না, সে সমস্ত বিষয়ে ছাড় দিয়ে কাফেরদের সাথে ঐক্যের চিন্তা

ইসলামী আকিদাহ

12 May, 17:15


উদাহরণ-২
عَنْ عَمْرِو بْنِ شُعَيْبٍ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ جَدِّهِ،
আমর ইবনু শু’আইব (রহঃ) হতে পর্যায়ক্রমে তার পিতা ও তার দাদা থেকে বর্ণিতঃ:

قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ

‏ لاَ تَنْتِفُوا الشَّيْبَ
তোমরা পাকা চুল-দাঁড়ি উপড়ে ফেলো না।

مَا مِنْ مُسْلِمٍ يَشِيبُ شَيْبَةً فِي الإِسْلاَمِ.‏
قَالَ عَنْ سُفْيَانَ ‏"‏ إِلاَّ كَانَتْ لَهُ نُورًا يَوْمَ الْقِيَامَةِ ‏"‏ ‏
কেননা কোন মুসলিম ইসলামের মধ্যে থেকে চুল পাকালে (সুফিয়ানের বর্ণনায় রয়েছে) এটা তার জন্য ক্বিয়ামাতের দিন উজ্জ্বল নূর হবে।

.‏ وَقَالَ فِي حَدِيثِ يَحْيَى ‏"‏ إِلاَّ كَتَبَ اللَّهُ لَهُ بِهَا حَسَنَةً وَحَطَّ عَنْهُ بِهَا خَطِيئَةً ‏"‏ ‏.‏
(ইয়াহইয়ার বর্ণনায় রয়েছে) আল্লাহ তার প্রতিটি পাকা চুলের পরিবর্তে তাকে একটি নেকী দান করবেন এবং একটি গুনাহ মিটিয়ে দিবেন।
সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং ৪২০২
أَوَّلُ كِتَابِ التَّرَجُّلِ | بَابٌ : فِي نَتْفِ الشَّيْبِ

বারো
নামাজ কি নূরের তৈরী?
قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏ "‏ الطُّهُورُ شَطْرُ الإِيمَانِ
আবূ মালিক আল আশ’আরী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন:পবিত্রতা হল ঈমানের অর্ধেক অংশ।

وَالْحَمْدُ لِلَّهِ تَمْلأُ الْمِيزَانَ ‏
আলহাম্‌দু লিল্লা-হ’ মিযানের পরিমাপকে পরিপূর্ণ করে দিবে।

وَسُبْحَانَ اللَّهِ وَالْحَمْدُ لِلَّهِ تَمْلآنِ - أَوْ تَمْلأُ - مَا بَيْنَ السَّمَوَاتِ وَالأَرْضِ
এবং “সুবহানাল্লা-হ ওয়াল হাম্‌দুলিল্লা-হ” আসমান ও জমিনের মধ্যবর্তী স্থানকে পরিপূর্ণ করে দিবে।

وَالصَّلاَةُ نُورٌ
‘সলাত’ হচ্ছে একটি উজ্জ্বল জ্যোতি।

وَالصَّدَقَةُ بُرْهَانٌ
সদাকাহ্’ হচ্ছে দলীল।

وَالصَّبْرُ ضِيَاءٌ
ধৈর্য’ হচ্ছে জ্যোতির্ময়।

وَالْقُرْآنُ حُجَّةٌ لَكَ أَوْ عَلَيْكَ
আর ‘আল কুরআন’ হবে তোমার পক্ষে অথবা বিপক্ষে প্রমাণ স্বরূপ।

كُلُّ النَّاسِ يَغْدُو فَبَائِعٌ نَفْسَهُ فَمُعْتِقُهَا أَوْ مُوبِقُهَا ‏
বস্তুতঃ সকল মানুষই প্রত্যেক ভোরে নিজেকে ‘আমালের বিনিময়ে বিক্রি করে। তার ‘আমাল দ্বারা সে নিজেকে (আল্লাহর ‘আযাব থেকে) মুক্ত করে অথবা সে তার নিজের ধ্বংস সাধন করে।
সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ৪২২
كِتَابٌ : الطَّهَارَةُ | بَابٌ : فَضْلُ الْوُضُوءِ

তেরো
সময় কি নুরের তৈরী?
عَن أَبِى سَعِيدٍ الْخُدْرِىِّ أَنَّ النَّبِىَّ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم قَالَ مَنْ قَرَأَ سُورَةَ الْكَهْفِ فِى يَوْمِ الْجُمُعَةِ أَضَاءَ لَهُ مِنَ النُّورِ مَا بَيْنَ الْجُمُعَتَيْنِ
আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:
নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, “যে ব্যক্তি জুমআর দিন সূরা কাহ্‌ফ পাঠ করবে তার জন্য দুই জুমআর মধ্যবর্তীকাল জ্যোত হবে।
সহিহুল জামে ৬৪৭০(আলবানি রহঃ)

যেমন আল্লাহ রাব্বুল আলামীন নূর, কিন্তু নূরের তৈরী নয়। কুরআনে কারীম নূর কিন্তু নূরের তৈরী নয়। হেদায়াত নূর কিন্তু নূরের তৈরী নয়। চাঁদ নূর কিন্তু নূরের তৈরী নয়। নামাজ নুর কিন্ত নুরের তৈরী নয়। ইত্যাদি।ঠিক তেমনি রাসূল সাঃ অবশ্যই নূর কিন্তু নূরের তৈরী নয়।

🖋️মুফতি আরিফ বিন হাবিব হাফিঃ