ইসলামী আকিদাহ @islamiaqidah Channel on Telegram

ইসলামী আকিদাহ

@islamiaqidah


ইসলামী আকিদাহ (Bengali)

ইসলামী আকিদাহ হল একটি টেলিগ্রাম চ্যানেল যেখানে ইসলামের আকিদাহ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য এবং সঠিক ধারাবাহিক শেখানো হয়। এই চ্যানেলে মুসলিম সমাজের জন্য গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রদান করা হয়, যা তাদের ইসলামিক জীবনধারার সাথে সঙ্গীত করে। ইসলামী আকিদাহ চ্যানেলটি মূলত ইসলামের আকিদাহ বিষয়ে সঠিক তথ্য ও ধারাবাহিক শেখানোর জন্য নির্মিত হয়েছে। এখানে ইসলামের বিভিন্ন বিষয়ে তথ্য ও উৎসাহী ভাবে শেয়ার করা হয়, যা মুসলিম সমাজের উন্নতি এবং শান্তি সহ সঠিক আকিদাহ দেখা সমর্থন করে। এই চ্যানেলে রেগুলারলি ইসলামী আকিদাহ সম্পর্কে আলোচনা করা হয়, যা মুসলিম সমাজের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মেয়াদোপায়ে হিসাবে ধরা রাখা হয়। এই চ্যানেলের পরিবার সামুদায়িকভাবে ইসলামের মূল আকিদাহ বিষয়ে জ্ঞান অর্জন করার সুযোগ পেতে। ইসলামী আকিদাহ চ্যানেলটি একটি অসাধারণ সম্প্রদায়িক সম্প্রদায়িক সম্প্রদায়িক স্পর্শ বিশ্বাসীদের সাথে সংযোগ করার জন্য একটি অবশ্যই স্থান। এখানে ইসলামী আকিদাহ সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করুন এবং আপনার আকিদাহ শক্তিশালী করুন।

ইসলামী আকিদাহ

18 Dec, 04:00


সালাফী ৩প্রকার :

এক. সালাফী হাম্বালী। ইমাম আহমাদ বিন হাম্বাল রহ. এর অনুসারী সাল‌াফী। এরা মধ‌্যপন্থার সালাফী। এদের‌কে আসারীও বলা হয়। আশআরী ও মাতু‌রিদী‌দের এরা পথভ্রষ্ট ব‌লে না, যেভা‌বে আশআরী-মাতু‌রিদীরাও এদের‌কে পথভ্রষ্ট ব‌লে না। এরা নিঃসন্দে‌হে আহলুস সুন্নাহ’র অন্তর্ভূক্ত।
দুই. সালাফী খা‌রে‌জি। এরা সালা‌ফিয়া‌তের দা‌বি ক‌রে ঠিক, আকিদা ও মানহা‌জে সালা‌ফের ধা‌রে কা‌ছেও নেই। তাকফীর ও কতল-কিতা‌লের ক্ষে‌ত্রে এরা চরম উগ্রবাদী। আবুবকর বাগদাদী ও দায়েস এর গোত্রভুক্ত। এরা আহলুস সুন্নাহর অন্তর্ভূক্ত নয়।
তিন. সালাফী মাদখালী। ‌শাইখ রাবী আলমাদখালীর অন‌ুসারী এবং সৌদী রাজত‌ন্ত্রের ঘোর সমর্থক এরা। এরা আকিদায় সালা‌ফিয়া‌তের দাবী কর‌লেও শাস‌কের সম্মু‌খে সত‌্যবচ‌নে সালা‌ফের অনুসর‌ণের ধার ধা‌রে না। ‌বরং এরা ম‌নে ক‌রে সর্বাবস্থায় শাস‌কের আনুগত‌্য করা ফরজ। পান থে‌কে চুন খস‌লেও এরা প্রতিপক্ষ আশআরী মাত‌ুরি‌দি‌দের তাকফীর তাদলীল কর‌লেও শাস‌কের ম‌ধ্যে ‘কুফ‌রে বাওয়াহ’ তথা সুস্পষ্ট কুফর দেখ‌লে টু শব্দ ক‌রে না। বাংলা‌দে‌শের বে‌শিরভাগ আহ‌লে হাদীস মতবা‌দের অনুসারী শাইখেরা এর গোত্রভুক্ত।

এই তিনপ্রকা‌রের বাইরে আরেকপ্রকার সালাফী দেখ‌তে পাওয়া যায়। বাহ‌্যত এরা আসারী সালাফী, কিংবা আশআরী মাতু‌রি‌দি; কিন্তু ভেত‌রে ভেত‌রে এরা খা‌রেজী। অর্থাৎ এরা চুপা খা‌রেজী। মনমান‌সিকতা ও আচার-আচরণে কট্টর দা‌য়েশীদের মত। এরা খা‌রি‌জিয়া‌তের বিপদ‌রেখার কা‌ছে অবস্থান ক‌রে। কখ‌নো রেখার ভেত‌রে ঢু‌কে প‌ড়ে, আবার কখ‌নো বাইরে আসে। এদের আচরণ রহস‌্যজনক, যা স্ব‌গোত্রীয়‌দের বিভ্রা‌ন্তির কারণ হয়।

মাওলানা সাইফুদ্দীন গাযী হাফিঃ
১১।১২।২৪

ইসলামী আকিদাহ

21 Nov, 19:05


আসেম বারকাওয়ী (আবু মুহাম্মাদ আল মাকদিসীর) লেখা ‘হাযিহী আকীদাতুনা’ (আমাদের আকিদা) শীর্ষক সংক্ষিপ্ত বইটির পৃষ্ঠায় পৃষ্ঠায় আশআরী-মাতুরীদীদের খণ্ডন রয়েছে। তাফউইযুল মা’নাকে এক বাক্যে বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে। তাবীলকে ‘তাহরীফ’ আখ্যা দিয়ে বাতিল বলা হয়েছে। আহলুর রায় (তথা হানাফী) ও আহলুল কালাম (তথা আশআরী-মাতুরীদীদের) আহলে বিদআহর সারিতে রেখে বলা হয়েছে, (ونبغض أهل الرأي وأصحاب البدع وأصحاب الكلام) ‘আমরা আহলে রাই, আহলে বিদআহ এবং আহলে কালামের প্রতি ঘৃণা ও বিদ্বেষ রাখি’।

আর গণতন্ত্রকে কুফর ফাতাওয়া দিয়ে গণতন্ত্রে অংশগ্রহণকারী, তাদের সহায়তাকারীকে কাফেরদের দীনে প্রবেশকারী কাফের বলা হয়েছে (إلا أن يؤدي به ذلك إلى الدخول في دين الكفار أو نصرته، أو إلى توليهم)। আইন পরিষদ তথা সংসদে সংসদ সদস্য হিসেবে গমনকারীকে একবাক্যে কাফের বলা হয়েছে (نكفر أعيان النواب)। বরং আইন প্রণেতা অন্য কথায় প্রচলিত সংসদ সদস্য নির্বাচনের উদ্দেশ্য ভোটদাতাকেও কাফের বলা হয়েছে। (ولذا نكفر من شرع مع الله وفقاً لدين الديمقراطية - تشريع الشعب للشعب - كما نكفر من اختار أو وكل وأناب عن نفسه مشرعاً)। কারণ গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়া তথা ভোটে অংশগ্রহণ তার কাছে কুফরী কাজ (ونقول: إن المشاركة في الانتخابات التشريعية عمل كفري)। ফলে থানভী, মাদানী, উসমানী থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত এই উপমহাদেশের আলিম-উলামা আর সাধারণ মুসলমানদের কতোজন কাফের-মুরতাদ, ত্বাগূতের দোসর হয়ে যান, আর কয়জনের ঈমান থাকে সেটার হিসাব কঠিন নয়।

সবাইকে নিয়ে সব কথা বলা আমার দায়িত্ব নয়। কিন্তু কওমী মাদরাসার যেসব শিক্ষার্থী বইটি নিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করছে তারা কি জেনেবুঝে করছে? নাকি আকীদা ও আদর্শের ক্ষেত্রে তারা বড়োদের পথ বর্জন করেছে? আর যারা মুখে পুরো উম্মতকে ধারণের কথা বলে এসব সংকীর্ণ মতাদর্শিক ও তাকফীরী বইপত্র এই দেশে প্রচার করছেন, রিকমেন্ড করছেন, তাদের কথা ও কাজের মিল কোথায়? তাদের প্রকৃত চাওয়া কী?

কেউ বলতে পারেন, আকীদার শাখাগত মতপার্থক্য নিয়েই আমরা আল্লাহর দীনের জন্য একসঙ্গে ল ড়া ই করতে চাই। খুবই ভালো কথা। কিন্তু সেজন্য বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ তো নিতে হবে। উম্মাহর শাখাগত মতপার্থক্যগুলোকে উদারতার সঙ্গে দেখে ও সকলকে ধারণ করে এমন অন্তর্ভুক্তিমূলক সাহিত্য প্রচার করতে হবে। কিন্তু শুরুটাই যদি করা হয় শাখাগত বিষয়ে প্রান্তিক অবস্থান নিয়ে, ছোট ছোট বিষয়েও অন্যকে খারিজ করা দিয়ে, উমূমী তাকফীরী ফাতাওয়া ও তাকফীরী মানুষ সামনে এনে, তবে একসঙ্গে কাজের চিন্তা কি আদৌ বাস্তবসম্মত হবে?

🖋️ মিযান হারুন হাফিঃ

ইসলামী আকিদাহ

19 Nov, 02:03


হযরত মাওলানা মানযুর নোমানী এরপর জমিনদার পত্রিকার সেই বিবৃতি উল্লেখ করেছেন। আলোচনা দীর্ঘ হওয়ার আশংকায় সেই বিবৃতি বিস্তারিত উল্লেখ করা থেকে বিরত থাকছি। কিন্তু হযরত মাদানী রহ. যে রুজু করেননি তার একাধিক দলিল বিদ্যমান।

প্রথমত, হযরত মাদানী রহ. যদি ১৯২৫ সালেই তার অবস্থান থেকে রুজু করে থাকেন তাহলে আশ শিহাবুস সাকিবের পরবর্তী এডিশনগুলোতে তিনি সংশোধন করেননি কেন? নজদীদের সম্পর্কে যেসব নেতিবাচক মন্তব্য ছিল সেগুলো বাদ দেননি কেন? নিদেনপক্ষে তার সেই রুজুনামা তো বইটির সাথে সংযুক্ত করে দেয়ার কথা। উলামায়ে দেওবন্দের জীবনি যারা পড়েছেন তারা জানেন উলামায়ে দেওবন্দ ইলমী ক্ষেত্রে শতভাগ আমানতদারিতা বজায় রাখার চেষ্টা করেন। তারা কোনো বিষয়ে রুজু করলে সেই বিষয়টি সংশোধন করে নিতেন এবং সবাইকে জানিয়ে দিতেন। কিন্তু হযরত মাদানী রহ. কেন আশ শিহাবুস সাকিব সংশোধন করলেন না? কথিত সেই রুজুর পরেও হযরত মাদানি ৩২ বছর বেঁচে ছিলেন। এই দীর্ঘ সময়েও তিনি বইটি সংশোধন করেননি। এ থেকে বুঝা যায় তিনি আসলে অবস্থান পরিবর্তন করেননি।

দ্বিতীয়ত, হযরত মাদানী রহ. খাস ছাত্র এবং অন্যতম প্রধান জীবনিকার কাজি মুহাম্মাদ যাহেদ আল হুসাইনী তার লিখিত চেরাগে মুহাম্মদ গ্রন্থে বলেন, কিছু লোক প্রচার করছে হযরত মাদানী শেষদিকে নিজের অবস্থান পরিবর্তন করেছেন। এটি একেবারেই ভুল এবং বিদআতিদের সৃষ্টি। হযরত মাদানী রহ. সারাজীবন সেই অবস্থানেই ছিলেন, আঁকাবিরে দেওবন্দ যে অবস্থানে ছিলেন এবং তারা আল মুহান্নাদে যা বলেছেন। প্রখ্যাত লেখক ও আলেমে দ্বীন মাওলানা রিয়ায আহমদ আশরাফী হযরত মাদানীকে এক পত্র মারফত প্রশ্ন করেন আপনি কি আশ শিহাবুস সাকিবের অবস্থানে অটল আছেন নাকি মত পরিবর্তন করেছেন? হযরত মাদানী জবাবে বলেন, আশ শিহাবুস সাকিব রচনা হয়েছে হুসামুল হারামাইনের জবাবে। সেখানে ওহাবিদের আলোচনা এসেছে প্রাসংগিকভাবে। আমার উদ্দেশ্য ছিল আকাবিরদের মানহাজ যে মধ্যপন্থী ছিল তা দেখানো। তারাই আহলে সুন্নত ওয়াল জামাতের প্রকৃত অনুসারী। এই কিতাবে যে মানহাজ বর্ননা করা হয়েছে এখনো আমার অবস্থান সেটিই এবং আমার আকাবিরদের অবস্থানও তাই[26]। হযরত মাদানী'র এই পত্রটি ১৯৫১/৫২ সালে লেখা। অর্থাৎ কথিত সেই রুজুর ২৫ বছর পর। কিন্তু এখানেও দেখা যাচ্ছে হযরত মাদানী পূর্বের অবস্থানেই অনড় ছিলেন।

তৃতীয়ত, ১৯৫৩ সালে আবুল আ'লা মওদুদী'র সমালোচনা করতে গিয়ে লেখা এক পত্রে হযরত মাদানী বলেন, মওদুদী সাহেবের এসব আলোচনার ফলাফল হচ্ছে খারেজীদের মত মুসলমানদের রক্তপাত। … মুহাম্মাদ বিন আবদুল ওহাব নজদী ও তার অনুসারীরা হিজাযে যেমনটা করেছে। এরপর তিনি আল্লামা শামির বক্তব্য উদ্ধৃত করেন[27]।

চতুর্থত, হযরত মাদানী'র জীবনের শেষদিকে রচনা করেন নকশে হায়াত নামে আত্মজীবনী। এই গ্রন্থ আমাদের দেওবন্দী ঘরানায় খুবই প্রসিদ্ধ এবং হযরত মাদানির জীবন ও চিন্তা সম্পর্কে জানার প্রধানতম উৎস এটি। এই গ্রন্থের বেশ কয়েক স্থানে তিনি মুহাম্মাদ বিন আবদুল ওহাব নজদী'র কঠোর সমালোচনা করেন। এমনকি আলাদা শিরোনাম করে সবিস্তারে তিনি ওহাবিদের সাথে দেওবন্দীদের আকিদার তফাত বর্ননা করেন[28]।

সবগুলো তথ্য প্রমাণ করে হযরত মাদানী রহ. জীবনের শেষ সময় পর্যন্ত আশ শিহাবুস সাকিবে লিখিত অবস্থানে অটল ছিলেন। তিনি নিজের অবস্থান পরিবর্তন করেননি। মাওলানা মানযুর নোমানী রহ. কর্তৃক জমিনদার পত্রিকার কথিত এক রুজুনামা আনায় বিষয়টি নিয়ে ধুম্রজাল সৃষ্টি হলেও হযরত মাওলানা খলীল আহমাদ সাহারানপুরী,হযরত হুসাইন আহমাদ মাদানী ও অন্য কোন আকাবির থেকে রুজু প্রমানিত হয়নি এবং হবার নয়। হযরত মাদানী'র খাস ছাত্র এবং আল্লামা কাশ্মীরির জামাতা আহমদ রেজা বিজনুরি[29]ও হযরত মাদানীর রুজু করার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন[30]।

আল্লামা কাশ্মীরির অবস্থান সম্পর্কে হযরত মাওলানা মানযুরর নোমানী'র বক্তব্য

ফাইযুল বারী'তে উল্লেখিত হযরত কাশ্মীরির একটি বক্তব্যে দেখা যায় তিনি মুহাম্মাদ বিন আবদুল ওহাব নজদী'র কঠোর সমালোচনা করছেন। মাওলানা মানযুর নোমানী এক্ষেত্রে কয়েকটি পয়েন্ট তুলে ধরেন।

১। প্রথমত তিনি দাবী করেন এই অংশটি হযরত কাশ্মীরির বক্তব্য নয়। মানযুর নোমানীর মতে এটি বদরে আলম মিরাঠির নিজের বক্তব্য।
২। মাওলানা মানযুর নোমানী যুক্তি দেন এই বাক্যে যে কঠোরতা আছে তা আনোয়ার শাহ কাশ্মীরির মেজাযের সাথে যায় না।
৩। হযরত মাওলানা মানযুর নোমানীর মতে আল্লামা কাশ্মীরি অবশ্যই কিতাবুত তাওহীদ পড়েছেন এবং এই বই পড়ে তার লেখককে কম ইলমের অধিকারী বা নির্বোধ বলা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। এ অংশে এসে মাওলানা মানযুর নোমানীর লেখা যুক্তির বদলে আবেগ নির্ভর হয়ে উঠে। তিনি মুহাম্মাদ বিন আবদুল ওহাব নজদী'র লেখার এমন মুগ্ধ প্রশংসা শুরু করেন যা থেকে বোঝা যায় তিনি নজদী সাহেবের ভুল সম্পর্কে সচেতন ছিলেন না এবং নিছকই একজন ভক্ত অনুরাগীর দৃষ্টি দিয়ে নজদী সাহেবের বই পড়েছেন।

ইসলামী আকিদাহ

19 Nov, 02:03


প্রথমত মাওলানা মানযুর নোমানী এমন কোনো শক্তিশালী দলিল দিতে পারেননি যা থেকে প্রমাণিত হয় কথাটি আল্লামা কাশ্মীরির নয়। ফাইযুল বারী'র ভূমিকাতেই আল্লামা বদরে আলম মিরাঠী লিখেছেন, এই গ্রন্থের কিছু জায়গায় হযরতুল উস্তাদের কথার সাথে আমার কথাও ঢুকে গেছে। কিন্তু যেখানে এমনটা হয়েছে সেখানে আমি লিখে দিয়েছি কুলতু কিংবা ইয়াকুলু আবদুয যইফ[31]। বদরে আলম মিরাঠী বলেই দিচ্ছেন নিজের কথা আনলে তিনি কীরকম সতর্কতা অবলম্বন করেছেন। তবুও হয়রত মাওলানা মানযুর নোমানী কীভাবে তার উপর দায় চাপিয়েছেন। প্রকৃতপক্ষে এটি আল্লামা কাশ্মিরিরই কথা।

দ্বিতীয়ত,হযরত মাওলানা মানযুর নোমানী'র মতে নজদী সাহেবকে কঠোরভাবে বলা হযরত কাশ্মীরির মেজাযের সাথে যায় না। প্রশ্ন হলো, এখানে মেজাযের সাথে যাওয়া না যাওয়ার আলাপ আসছে কেন? একজন ব্যক্তির হাকীকত যা তা স্পষ্ট করতে সমস্যা কোথায়? মুহাম্মাদ বিন আবদুল ওহাব নজদী ও তার অনুসারীরা খারেজী ছিল। আরব আযমের সকল উলামায়ে কেরাম এই কথা বলেছেন। উলামায়ে দেওবন্দ এই কথার উপর আল মুহান্নাদে সাক্ষর করেছেন। খারেজীরা মাথামোটা হয়, তাদের রুসুখ ও তাফাক্কুহ থাকে না, এটা তো জানা কথাই। সেই একই কথা আল্লামা কাশ্মীরিও বলেছেন। তিনি তো কাউকে অন্যায় গালি দেননি, কিংবা অপবাদ দেননি, শুধু হাকীকত বর্ননা করেছেন। হযরত মাওলানা মানযুর নোমানী কেন ধারনা করলেন হযরত কাশ্মীরির পক্ষে এমন কথা বলা সম্ভব নয়? পুরো ব্যাপারটিই দাঁড়িয়ে আছে আবেগি কথাবার্তার উপর।

তৃতীয়ত, মানযুর নোমানী নিজে নজদী সাহেব দ্বারা প্রভাবিত ছিলেন। কিতাবুত তাওহীদ পড়ে হয়তো তার মনে হয়েছে ইলমের বিশাল ভাণ্ডার পেয়ে গেছেন। কিন্তু তিনি কেন ভাবলেন আল্লামা কাশ্মীরির মত যুগশ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিসও নজদী সাহেবের সাতহী চিন্তার প্রতিনিধিত্ব করা এই বই পড়ে মুগ্ধ হবেন। কাশ্মীরির মত ব্যক্তি যিনি সালাফ খালাফের উল্লেখযোগ্য সকল কাজ পড়ে রেখেছিলেন তিনি যে নজদিকে একবার উল্টেই তার হাকীকত বুঝে ফেলবেন এটা তো স্বাভাবিক। আল্লামা কাশ্মীরিও মাওলানা মানযুর নোমানী'র মত হালকাভাবে বিষয়টা দেখবেন এবং মুগ্ধ হবেন-হযরত মাওলানা মানযুর নোমানী সাহেব এমনটা ভেবে থাকলে এটা নিতান্তই অবাস্তব ও অবান্তর । যদিও হযরত মাওলানা মানযুর নোমানী'র মুগ্ধতা ঠিক কতটুকু বাস্তব আর কতটুকু 'শুধু প্রকাশ' সেই প্রশ্নেরও হয়ত সুযোগ আছে। আল্লামা যারওয়ালী খান এক আলোচনায় বলেছেন, মাওলানা মানযুর নোমানী মুহাম্মাদ বিন আবদুল ওহাব নজদী'র পক্ষে বই লিখেছিলেন তার ছেলে সাজ্জাদ নোমানীকে মদিনা ভার্সিটিতে ভর্তি করানোর সুযোগ পেতে[32]।

সকল দলিল প্রমাণ সামনে রেখে বলতে হয় আগের দুজনের মত আল্লামা কাশ্মীরির ক্ষেত্রেও হযরত মাওলানা মানযুর নোমানী নিজের দাবী প্রমাণে সফল হতে পারেননি।

মাওলানা মানযুর নোমানী'র আলোচনার সারকথা

মাওলানা মানযুর নোমানী তার বইতে দুটি বিষয় দেখাতে চেয়েছেন। প্রথমত, তার মতে নজদীধারার সাথে উলামায়ে দেওবন্দের ইখতেলাফ শাখাগত কয়েকটি বিষয়ে যা বড় ধরণের কোনো ইস্যু নয়। হযরত মাওলানা মাওলানা আহমদ রেজা বিজনুরী তার রচিত আনোয়ারুল বারীতে এই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করে দেখিয়েছেন, নজদীধারার সাথে উলামায়ে দেওবন্দের উসুলগতই অনেক তফাত আছে এবং ইখতেলাফের পরিমাণ নেহায়েত কম নয়। এই বিষয়ে হযরত মাওলানা মানযুর নোমানি যা বলেছেন তা সঠিক নয়। দ্বিতীয়ত, মাওলানা মানযুর নোমানী দেখিয়েছেন দেওবন্দী উলামাদের অনেকে শুরুতে মুহাম্মাদ বিন আবদুল ওহাব নজদী ও নজদীধারা সম্পর্কে নেতিবাচক মন্তব্য করলেও পরে তারা নিজেদের অবস্থান থেকে সরে এসেছেন এবং নজদীধারা সম্পর্কে ইতিবাচক চিন্তা লালন করা শুরু করেন। এই বিষয়টিও সঠিক নয়। হযরত মাওলানা মানযুর নোমানী নিজের দাবীর পক্ষে যেসব বিষয় হাজির করতে চেয়েছেন তার কোনটিই তার দাবীকে সত্যায়িত করেনি।

দারুল উলুম দেওবন্দের ওয়েবসাইটের একটি ফতওয়া

দারুল উলুম দেওবন্দের ওয়েবসাইটে এক প্রশ্নের উতরে দেখা যায় হযরত মাওলানা মানযুর নোমানী'র বইকে সর্বশেষ ও চুড়ান্ত মত হিসেবে উপস্থাপন করতে। এ বিষয়ে কথা হলো দেওবন্দের ওয়েবসাইটে প্রশ্নোত্তর অংশটি দারুল উলূম দেওবন্দের মুখপত্র ব্যক্তিবর্গের দ্বারা সরাসরি পরিচালিত না,বরং ছাত্রদের মশকের প্রশ্নোত্তরও কখনো কখনো এখানে পরিবেশিত হয়। এখানে অনেক বেশি এহতেমাম নেই। এজন্য কখনো কখনো দেখা যায় এক প্রশ্নের কয়েক রকম উত্তর দেয়া আছে। একাধিক উত্তর দেয়া আছে। যেমন ইস্তিওয়ার মাসালায় এখানে দুরকমের উত্তর দেয়াই আছে। ফলে এই সাইটের সকল বক্তব্যকে দেওবন্দের অফিসিয়াল বিবৃতি হিসেবে গ্রহণ করা অনুচিত হবে।

সারকথা:

মুহাম্মাদ বিন আবদুল ওহাব নজদী ও নজদীধারা সম্পর্কে আকাবিরে দেওবন্দের অবস্থান হলো তারা একে খারেজী জামাত মনে করেন, যেমনটা মনে করতেন আল্লামা শামীসহ সমকালীন আলেমরা। আল মুহান্নাদ প্রকাশের পর উলামায়ে দেওবন্দ কখনো নিজেদের অবস্থান থেকে সরে আসেননি। পরেরদিকে একদুজন দ্বাঈ যারা আরবে যাতায়াত করেছেন এবং নানাভাবে সেখানকার রাজনীতি ও শাসকদের সাথে সম্পর্ক গড়ে তুলেছেন তারা হয়তো নজদীধারা সম্পর্কে প্রভাবিত হয়েছেন বা প্রভাবিত হওয়ার

ইসলামী আকিদাহ

19 Nov, 02:03


ভান ধরেছেন, কিন্তু এটি দেওবন্দের অফিসিয়াল অবস্থান নয়।

টীকা

[1] হাশিয়াতুস সাভি, ৫/৭৮।

[2] ইনি ছিলেন মাজারপন্থী।

[3] মুহাম্মাদ বিন আবদুল ওহাবের ভাই সুলাইমান বিন আবদুল ওহাব রচনা করেন আস–সাওয়াইকুল ইলাহিয়্যাহ ফির রাদ্দি আলাল ওয়াহাবিয়্যাহ। এই গ্রন্থে তিনি ভাইয়ের বিভ্রান্তিকর চিন্তাধারা ও মতবাদ খণ্ডন করেন। তবে নজদী ধারার আলেমদের মতে এই বইটি তার রচনা নয়। অন্য কেউ প্রতারণা করে তার নামে চালিয়ে দিয়েছে।

[4] সুনানে নাসাঈর হাশিয়া, কিতাবুয যাকাত, বাবু মুয়াল্লাফাত কুলুবুহুম।

[5] ফাতাওয়া রশিদিয়া, ৬২।

[6] প্রাগুক্ত ২৬৬। মুফতি মাহমুদ হাসান গাংগুহির মতে রশিদ আহমদ গাংগুহি মুহাম্মাদ বিন আবদুল ওহাব নজদী সম্পর্কে বিস্তারিত জানতেন না। দেখুন ফতোয়া মাহমুদিয়া, ৪/১৬৩।

[7] বিস্তারিত জানতে দেখুন আশ শিহাবুস সাকিব, ৬৪।

[8] হযরত খলীল আহমদ সাহারানপুরী ছিলেন হযরত রশীদ আহমাদ গাংগুহী রহ. ছাত্র।

[9] এখানে যারা সত্যায়ন করেছিলেন তারা হলেন, শাইখুল হিন্দ মাহমুদুল হাসান দেওবন্দী, মাওলানা মীর আহমদ হাসান আমরুহী, দারুল দেওবন্দের প্রধান মুফতী মাওলানা আজিজুর রহমান, হাকিমুল উম্মত আশরাফ আলী থানভী, শাহ আব্দুর রহীম রায়পুরী, মাওলানা হাকীম মাসউদ হাসান, মাওলানা কুদরুতুল্লাহ সাহেব, মাওলানা হাবিবুর রহমান দেওবন্দী, মাওলানা মুহাম্মদ আহমাদ বিন কাসিম নানুতাভী মাওলানা গোলাম রসুল দেওবন্দী, মাওলানা মুফতী কিফায়াতুল্লাহ দেহলভী, মাওলানা আশেক ইলাহী মিরাঠি।

[10] আল মুহান্নাদ আলাল মুফান্নাদ, ৬২। মুহাম্মাদ বিন আদম কাউসারীর তাহকিককৃত নুসখা।

[11] প্রাগুক্ত, ১০০।

[12] প্রাগুক্ত, ১০৩।

[13] ফাইযুল বারী, ১/২৯৪।

[14] আশ শিহাবুস সাকিব, ২২১। এ ছাড়াও আশ শিহাবুস সাকিবের আরো বেশ কিছু স্থানে হযরত মাদানী মুহাম্মাদ বিন আবদুল ওহাব নজদী ও নজদীবাদের কঠোর সমালোচনা করেন। দেখুন, পৃ- ৪৪-৪৬, ৫১। একস্থানে তিনি বলেন ওহাবই খবিসরা কি এই কাজকে জায়েয মনে করে? তারা তো একে শিরক, বিদআত ও কুফর মনে করে। দেখুন, ৫৪। অন্যত্র তিনি বলেন, নবীজির বিষয়ে শায়খ গাংগুহী ও তার অনুসারিদের আকিদা ওহাবই খবিসদের মত নয়। পৃ- ৫৪। অন্যত্র তিনি বলেন, ওহাবিরা যখন হারামাইন শরীফাইন নিয়ন্ত্রণ নেয় তখন তারা হাজার হাজার মানুষকে হত্যা করেছে, শাস্তি দিয়েছে। বিস্তারিত জানতে পড়ুন ৫১-৬৬ পৃষ্ঠা।

[15] ফাতাওয়া মাহমুদিয়া, ৩/৪৪।

[16] প্রাগুক্ত, ৩/৪০।

[17] ফাতাওয়া হক্কানিয়া, ১/৩৮০। একই ধরণের ফতোয়া দেয়া হয়েছে জামিয়া বিন্নুরি টাউন থেকেও।

[18] যেমন সাম্প্রতিককালে মাওলানা ইলিয়াস ঘুম্মান, মাওলানা মানযুর মেংগল প্রমুখ মানযুর নোমানির পক্ষ নিয়েছেন।

[19] ফতোয়া বাইয়িনাত, ১/৫২৬।

[20] শেখ মুহাম্মাদ বিন আবদুল ওহাব আওর হিন্দুস্তান কে উলামায়ে হক, ৪০ ।

[21] আল মুহান্নাদ, ২২।

[22] প্রাগুক্ত, ৪৪।

[23] প্রাগুক্ত, ৪৬।

[24] আশ শিহাবুস সাকিব রচনা করা হয় ১৩২৮ হিজরি তথা ১৯১০ খ্রিস্টাব্দে।

[25] মাওলানা মানযুর নোমানি দাবী করেন হযরত মাদানী শুধু নজদী'র বিপক্ষ দল যেমন আহমাদ যাইনি দাহলানসহ অন্যদের বই পড়েছেন ফলে প্রকৃত বিষয় জানতে পারেননি। দেখুন, শেখ মুহাম্মাদ বিন আবদুল ওহাব, ৪৭।

[26] চেরাগে মুহাম্মদ, ১১৮। হযরত মাদানী'র এই পত্রটি মাকতুবাতে শাইখুল ইসলামেও সংকলিত হয়েছে। দেখুন, মাকতুবাত, ২/২৯৮।

[27] মাকতুবাতে শাইখুল ইসলাম, ৩/৭৯।

[28] বিস্তারিত জানতে দেখুন, নকশে হায়াত, ১/১০৬, ২/২৪,

[29] ইনি শাইখুল ইসলাম আল্লামা যাহেদ কাউসারিরও সান্নিধ্য পেয়েছিলেন।

[30] বিস্তারিত জানতে দেখুন, আনোয়ারুল বারী, ১৯/৩০৬।

[31] ফাইযুল বারী, ১/৩২।

[32] এখানে বিষয়টি উল্লেখ করা হলো নিছক একটি মত হিসেবে। এটি আমাদের কাছে গ্রহণযোগ্য মনে হওয়া জরুরী নয়। তবে মাওলানা মানযুর নোমানী'র বইয়ের আরবী ও উর্দু সংস্করণের মাঝে বেশকিছু তফাত দেখা যায়। আরবী সংস্করণে বেশকিছু বিষয় এড়িয়ে গেছেন তিনি। আহলে হাদীস ঘরানার আলেমরা এই বিষয়টি নিয়ে সোচ্চার হয়েছেন। বিস্তারিত জানতে দেখুন, দাওয়াতুল ইমাম মুহাম্মাদ বিন আবদুল ওহাব, ২২১।

ইসলামী আকিদাহ

19 Nov, 02:03


মুহাম্মাদ বিন আবদুল ওহাব সম্পর্কে উলামায়ে দেওবন্দের মূল্যায়ন - হযরত মাওলানা মানযুর নোমানী'র বক্তব্য পর্যালোচনা
---
মুহাম্মাদ বিন আবদুল ওহাব নজদী ছিলেন আরবের নজদ অঞ্চলের একজন ধর্মীয় নেতা ও ওহাবি আন্দোলনের পুরোধা ব্যক্তিত্ব। সমর্থকদের কাছে মুজাদ্দিদ ও সংস্কারক হিসেবে পরিচিত হলেও সমকালীন আলেমদের কাছে তিনি ছিলেন বিতর্কিত। ধর্মীয় নানা বিষয়ে তিনি নতুন তত্ত্ব ও ব্যাখ্যা হাজির করার ফলে এক ধরণের উগ্রতা তৈরি হয়, যা ইতিপুর্বে দেখা যায়নি। তার এই আন্দোলন সশস্ত্র সংগ্রামের পথ নিলে বিষয়টি অন্যায় রক্তপাত ও লুণ্ঠন পর্যন্ত গড়ায়। বাধ্য হয়ে আলেমরা ইবনে আবদুল ওহাব ও তার অনুসারীদের চিন্তাধারা খণ্ডনে কলম ধরেন। মুহাম্মাদ আবদুল ওহাবের মৃত্যুর কিছুদিন পর আল্লামা শামী রহ. রচনা করেন ফতোয়ায়ে শামী। সেখানে তিনি ওহাবী নজদীদেরকে খারেজী বলে আখ্যা দেন। সমকালীন আরেকজন মালেকী আলেম হযরত শায়খ আহমাদ সাভী লেখেন-
ওহাবিরা মনে করে, নিজেরা সত্যের উপর আছে। নিশ্চয় তারা মিথ্যাবাদী। শয়তান আধিপত্য বিস্তার করেছে তাদের উপর, ভুলিয়ে দিয়েছে আল্লাহর স্মরণ। তারা শয়তানের দলভূক্ত। নিশ্চয় শয়তানের দল ক্ষতিগ্রস্ত। আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি, যেন তিনি তাদেরকে উচ্ছেদ করেন[1]।
মক্কায় শাফেয়ী মাযহাবের মুফতী হযরত শায়খ আহমাদ যাইনী দাহলান রচনা করেন, ‘ফিতনাতুল ওয়াহাবিয়্যাহ’ এবং ‘আদ–দুরারুস সানিয়্যাহ ফির রাদ্দি আলাল ওয়াহাবিয়্যাহ’ নামে দুটি গ্রন্থ। ভারতের প্রথম শিক্ষামন্ত্রী হযরত মাওলানা আবুল কালাম আযাদের পিতা হযরত মাওলানা খাইরুদ্দিন[2] রচনা করেন নাজমু রাজমিশ শায়াতীন। আধুনিক যুগে অনেকেই মুহাম্মাদ বিন আবদুল ওহাব ও নজদী ধারার সমালোচনা করেছেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন, সৈয়দ আহমাদ ইউসুফ রিফায়ী, ড. রমযান আল-বুতী , মাহমুদ সাইদ মামদুহ, সানআনী, আবুল হাদি আস-সাইয়াদী, মুস্তফা সাবরী, শায়খ মুহাম্মাদ যাহেদ কাউসারী, হোসাইন আহমাদ মাদানী প্রমুখ[3]।

উপমহাদেশের প্রভাবশালী ইলমি ধারা- উলামায়ে দেওবন্দও নজদী আন্দোলন ও এর প্রতিষ্ঠাতা সম্পর্কে কঠোর মন্তব্য ব্যক্ত করেছেন। উলামায়ে দেওবন্দের এই অবস্থান সম্পর্কেই আলোচনা হবে এই লেখায়।

মুহাম্মাদ বিন আবদুল ওহাব নজদী সম্পর্কে উলামায়ে দেওবন্দের অবস্থান :
দারুল উলুম দেওবন্দ প্রতিষ্ঠা হয় ১৮৬৬ সালে। সে সময় স্বাধীনতা সংগ্রামীদের বিরুদ্ধে ইংরেজদের বিখ্যাত ওহাবী ট্রায়াল চলমান ছিল। সিত্তানা, মহাবনসহ সীমান্ত এলাকাগুলোতে সাইয়েদ আহমদ বেরেলভী রহ. এর অনুসারীগণ ইংরেজদের বিরুদ্ধে লড়াই অব্যাহত রেখেছিলেন। ধর্মীয় ঘরানায়ও সময়টা ছিল উত্তাল। দেওবন্দ প্রতিষ্ঠার প্রায় ৩৫ বছর আগেই হযরত শাহ ইসমাইল শহীদের তাকবিয়াতুল ঈমান কিতাবটি নিয়ে তুমুল বিতর্ক দেখা দেয় এবং ফযলে রসুল বাদায়ুনী, আল্লামা ফযলে হক খাইরাবাদীসহ অনেকেই তাকে তাকফীর করেন। হযরত শাহ ইসমাইল শহীদের ইনতিকালের পরেও আলোচনা থেমে থাকেনি বরং 'ইমকানে নযীর ও উকুয়ে নযীর' ইস্যুতে ফতোয়া পাল্টা ফতোয়া ও পারস্পরিক তাকফীর লেগেই ছিল। এ সময় হযরত শাহ ইসমাইল শহীদের পক্ষে যারা কলম ধরেছেন তাদেরকে আখ্যা দেয়া হয় ওহাবী হিসেবে। দারুল উলুম দেওবন্দের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা হুজ্জাতুল ইসলাম হযরত কাসিম নানুতাবী রহ.-ও এই জটিল পরিস্থিতি থেকে নিরাপদ ছিলেন না। তার কিছু লেখা নিয়েও বিরোধিপক্ষ তুমুল বিতর্কের সূচনা করে, বাধ্য হয়ে কিছুদিন তিনি দেওবন্দ থেকে দূরে সরে ছিলেন।

মূলত এ সময় বেরেলভী ধারার পক্ষ থেকে উলামায়ে দেওবন্দকে ওহাবী বলে গালমন্দ করা হয়, যদিও আকীদা বা ফিকহ কোনোদিক থেকেই উলামায়ে দেওবন্দ মুহাম্মাদ বিন আবদুল ওহাব নজদী'র অনুসারী ছিলেন না। তবে ওহাবী শব্দের নানা ভুল প্রয়োগ সত্ত্বেও দেওবন্দের প্রতিষ্ঠাতা ব্যক্তিবর্গ তথা হযরত মাওলানা কাসেম নানুতাবি,হযরত মাওলানা ইয়াকুব নানুতাবী, হযরত হাজী আবেদ হুসাইন প্রমুখ থেকে আবদুল ওহাব নজদি সম্পর্কে কোনো মূল্যায়ন দেখা যায় না। তবে তাদের কাছাকাছি সময়ের আলেম মুহাদ্দিসে থানা ভবন হযরত মাওলানা শায়েখ মুহাম্মাদ থানভী রহ. থেকে কঠোর বক্তব্য পাওয়া যায়। সুনানে নাসাঈর হাশিয়াতে তিনি নজদীদেরকে খারেজী বলে সম্বোধন করেন এবং হযরত আল্লামা ইবনে আবেদীন শামী রহ.-এর বক্তব্য উদ্ধৃত করেন। এ সময় তিনি নজদী ধারার বেশকিছু নেতিবাচক দিক তুলে ধরেন[4]। ইমামে রব্বানী হযরত মাওলানা রশীদ আহমাদ গাংগুহী রহ. থেকে দুধরনের বক্তব্য পাওয়া যায়। একবার এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মুহাম্মাদ বিন আব্দুল ওয়াহহাবের আকাইদের অবস্থা আমার জানা নেই[5]। অন্যত্র তিনি বলেন, মুহাম্মাদ বিন আব্দুল ওয়াহহাব নজদীর অনুসারীদেরকে ওয়াহাবী বলা হয়। তাদের আকীদা ভালো ছিল। তারা হাম্বলী মাযহাবের অনুসারী। তাদের স্বভাবে কিছুটা রুক্ষতা ছিল, কিন্তু তিনি ও তার অনুসারীরা ভালো। তবে ওদের মধ্যে যারা সীমালংঘন করেছে তাদের মধ্যে ফাসাদ এসে গেছে[6]। অবশ্য শাইখুল ইসলাম হযরত মাওলানা হুসাইন আহমাদ মাদানী রহ. এর একটি বক্তব্য থেকে জানা যায় যে, হযরত রশীদ আহমাদ গাংগুহী রহ.

ইসলামী আকিদাহ

19 Nov, 02:03


শাইখুল ইসলাম হযরত হুসাইন আহমদ মাদানী রহ. ছিলেন নিজের সময়ের সবচেয়ে প্রভাবশালী ব্যক্তিদের অন্যতম। মুহাম্মদ বিন আবদুল ওহাব সম্পর্কে তার মূল্যায়ন ছিল কঠোর। তিনি লিখেছেন, মুহাম্মাদ বিন আব্দুল ওয়াহহাব হিজরী তেরো শতকে নজদে আবির্ভূত হন। তিনি ক্ষতিকর চিন্তাভাবনা এবং ভুল আকিদা-বিশ্বাস পোষণ করতেন, ফলবশত তিনি আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের বিরুদ্ধে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছিলেন। তিনি তার ক্ষতিকর চিন্তা তাদের উপর চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন এবং তাদের সম্পত্তিকে যুদ্ধের লুঠ হিসেবে এবং তাদেরকে হত্যা করাকে বরকত ও করুণার উৎস হিসাবে বিবেচনা করেছিলেন। তিনি বিশেষভাবে হারামের লোকজনের প্রতি এবং হিজাযবাসীদের প্রতিও কঠোর ছিলেন। তিনি সালাফদের প্রজন্ম সম্পর্কে কুৎসা রটিয়েছেন। তার দ্বারা সংঘটিত নৃশংসতার কারণে অসংখ্য লোককে পবিত্র মক্কা ও মদীনা ছেড়ে পালিয়ে যেতে হয়েছিল এবং তাদের অনেককেই তার বাহিনীর হাতে শহীদ হতে হয়েছিল। এক বাক্যে– তিনি ছিলেন অত্যাচারী, বিদ্রোহী এবং রক্তপাতের নেশায় থাকা এক সীমালঙ্ঘনকারী[14]।

মুফতী মাহমুদ হাসান গাংগুহী

হযরত মাওলানামুফতী মাহমুদ হাসান গাংগুহী ছিলেন দারুল উলুম দেওবন্দ এবং মাযাহিরুল উলূম সাহানপুরের প্রধান মুফতী। তিনি মুহাম্মাদ বিন আবদুল ওহাব নজদী সম্পর্কে বলেন, তার জানাশোনা কম ছিল। বুঝবুদ্ধিরও অভাব ছিল। তার থেকে এমন কিছু কথা ও কাজ প্রকাশিত হয়েছে যা অনেক ফেতনার কারণ হয়েছে[15]। অন্যত্র তিনি বলেন,মুাম্মাদ বিন আবদুল ওহাব নজদী সুন্নত অনুসরণের দাবি করেছিলেন, তাই অনেকেই তার সাথে যোগ দেয়। কিন্তু তার অনেক মতই ছিল সুন্নত বিরোধী। ফলে যতই তার আসল রূপ বেরিয়ে আসতে শুরু করে, অনেকেই তার দল ছেড়ে চলে যায়। সঙ্গে এটাও স্পষ্ট হয়ে ওঠে যে, রাজনৈতিক ক্ষমতা দখল করাই তার উদ্দেশ্য ছিল এবং সুন্নত অনুসরণের দাবিটা ছিল কেবল একদল লোককে আকৃষ্ট করে নিজের অনুসারী বানানো[16]।

দারুল উলুম হক্কানিয়ার ফতোয়া

আখুরাখটকে অবস্থিত দারুল উলুম হক্কানিয়াকে বলা হয় দ্বিতীয় দেওবন্দ। এই মাদরাসার পক্ষ থেকে প্রকাশিত একটি অফিশিয়াল ফতোয়ায় বলা হয়, মুহাম্মাদ বিন আব্দুল ওয়াহাব ছিলেন একজন চরমপন্থী ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব। তার আকিদা-চিন্তাধারার আলোকে তার অনুসারীরা মুসলিমদের হুটহাট তাকফীর করে। দেওবন্দের সম্মানিত ‘উলামারা তাঁর আকিদা ও চিন্তাভাবনার সাথে একমত নন, পাশাপাশি তারা তাকে ও তার অনুসারীদের তাকফীরও করেন না। সাধারণ মানুষের জন্য তার বিশ্বাস ও চিন্তাভাবনা এড়িয়ে চলা অত্যন্ত জরুরি[17]।

আলোচনা দীর্ঘ হওয়ার আশংকায় আমরা আর কারো বক্তব্য ও ফতোয়া উদ্ধৃত করছি না। কারণ আমরা মনে করি আল মুহান্নাদই উলামায়ে দেওবন্দের অফিসিয়াল বিবৃতি। এর পর আর কারো বক্তব্য উপস্থাপন না করলেও চলে। প্রশ্ন উঠতে পারে, মুাহাম্মাদ বিন আবদিল ওহাব নজদী সম্পর্কে উলামায়ে দেওবন্দের অবস্থান জানা জরুরী কেন? এর কারণ হলো, উপমহাদেশে বেরেলভি ধারার সাথে উলামায়ে দেওবন্দের যেই বিরোধ সেখানে এটি একটি বড় ইস্যু। বেরেলভিরা শুরু থেকেই উলামায়ে দেওবন্দকে ওহাবী বলে আখ্যা দেয় এবং দাবী করে উলামায়ে দেওবন্দ আকীদা ও ফিকহের ক্ষেত্রে মুহাম্মাদ বিন আদুল ওহাব নজদী'র মত উগ্র ও খারেজী। অথচ বাস্তবতা হলো নজদী ধারার সাথে উলামায়ে দেওবন্দের সামান্যতম কোনো সম্পর্কও নেই। এই ধারার কেউ উলামায়ে দেওবন্দের উস্তাদ বা অনুসরনীয় কিছুই নন। বরং ফিকহ ও আকীদা ইস্যুতে তাদের সাথে উলামায়ে দেওবন্দের অনেক বিরোধ স্পষ্ট। আর বিরোধ হওয়াই স্বাভাবিক। নজদীধারার সাথে আহলে সুন্নত ওয়াল জামাতেরই অসংখ্য মাসআলায় বিরোধ আছে, ফলে এ অঞ্চলে আহলে সুন্নত ওয়াল জামাতের মুখপত্র উলামায়ে দেওবন্দের পক্ষেও সম্ভব নয় সেই বিরোধ এড়িয়ে যাওয়া। এজন্য দেওবন্দী উলামারা তাদের অফিসিয়াল বিবৃতিতে যেমন নজদীধারা সম্পর্কে মতামত ব্যক্ত করেছেন তেমনি তাদের দরস তাদরিস ও লিখনিতেও এই বিষয়টি আলোচনা করেছেন। নজদীধারা সম্পর্কে উলামায়ে দেওবন্দের অবস্থান স্পষ্টই ছিল কিন্তু গত শতাব্দীর শেষদিকে মাওলানা মানযুর নোমানী একটি গ্রন্থ রচনা করেন 'শেখ মুহাম্মাদ বিন আবদুল ওহাব আওর হিন্দুস্তান কে উলামায়ে হক' নামে। এই বইতে তিনি দেখান উলামায়ে দেওবন্দ শুরুতে মুহাম্মাদ বিন আবদুল ওহাব নজদী সম্পর্কে বিভ্রান্তিতে ছিলেন এবং বিরোধিপক্ষের প্রোপাগান্ডা শুনে তার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত দিয়েছেন। পরবর্তীতে তাদের সামনে হাকিকত স্পষ্ট হলে তারা নিজেদের অবস্থান থেকে সরে আসেন এবং মুহাম্মাদ বিন আবদুল ওহাব নজদী সম্পর্কে ইতিবাচক মতামত ব্যক্ত করেন। মাওলানা নোমানী ছিলেন দেওবন্দের খ্যাতিমান ছাত্রদের অন্যতম। তিনি আনোয়ার শাহ কাশ্মীরির ছাত্র। আজীবন দারুল উলুম দেওবন্দের শুরা সদস্য ছিলেন। ফলে তার এই বক্তব্য বেশ গুরুত্বপূর্ন। পরেরদিকের দেওবন্দীদের অনেকেই তার কথা গ্রহণ করে বলতে থাকেন নজদীধারার ব্যাপারে উলামায়ে দেওবন্দের অবস্থান শক্ত নয়। মুহাম্মাদ বিন আবদুল ওহাব নজদী সম্পর্কেও আল মুহান্নাদের কথাই শেষ কথা নয়[18]।

ইসলামী আকিদাহ

19 Nov, 02:03


মুহাম্মাদ বিন আবদুল ওহাব নজদী ও তার অনুসারীদের ফাসিক মনে করতেন[7]।

ইনারা হলেন দেওবন্দী উলামাদের প্রথম সারি, যাদের হাতে এই দারুল উলূম দেওবন্দ গড়ে উঠেছে। পরবর্তী সারিতে ছিলেন তারা যারা প্রথম সারির হাতে শিক্ষাদীক্ষা নিয়েছেন। এই ধাপের গুরুত্বপূর্ন ব্যক্তিত্বদের মধ্যে ছিলন হযরত মাওলানা খলীল আহমাদ সাহারানপুরী[8], হযরত আল্লামা আনোয়ার শাহ কাশমীরি, শাইখুল হিন্দ হযরত মাওলানা মাহমুদ হাসান দেওবন্দী, হাকীমুল উম্মত মুজাদ্দিদে মিল্লাত হযরত মাওলানা শাহ আশরাফ আলী থানভী,শাইখুল ইসলাম হযরত মাওলানা হুসাইন আহমদ মাদানী রহ. প্রমুখ। এই স্তরের আলেমদের থেকে আবদুল ওহাব নজদী সম্পর্কে একাধিক মন্তব্য পাওয়া যায়। ১৯০৬ সালে আহমাদ রেজা খাঁ বেরেলভী উলামায়ে দেওবন্দের কিছু বক্তব্যকে বিকৃত করে হিজাযের আলেমদের কাছ থেকে একটি ফতোয়া অনুমোদন করেন যেখানে উলামায়ে দেওবন্দকে তাকফীর করা হয়। পরের বছর দেওবন্দী আলেমরা হিজাযের আলেমদের সাথে যোগাযোগ করে বেশ কিছু বিষয়ে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করেন। তখন হিজাযের আলেমরা সেই তাকফীর প্রত্যাহার করেন। দেওবন্দী আলেমদের এই বিবৃতি ১৯০৭ সালে প্রকাশিত হয় আল মুহান্নাদ আলাল মুফান্নাদ নামে। এর মুসান্নিফ হিসেবে হযরত মাওলানা খলীল আহমদ সাহারানপুরী রহ.-এর নাম থাকলেও এতে উলামায়ে দেওবন্দের জীবিত প্রভাবশালী অনেক আলেমদের স্বাক্ষর ছিল[9]। এখন পর্যন্ত দেওবন্দের নিয়মতান্ত্রিক ও মাসলাকী আকিদা হিসেবে এই কিতাবের বিষয়বস্তুকে বিবেচনা করা হচ্ছে। একাধিক ভাষায় এর সংস্করণ প্রকাশিত হয়েছে।

এই পুস্তিকায় এক প্রশ্নের জবাবে হযরত মাওলানা খলীল আহমাদ সাহারানপুরী রহ. বলেন, মুহাম্মাদ বিন আবদুল ওহাব নজদী সম্পর্কে আমরা সেই মত পোষণ করি যা আল্লামা শামী রদ্দুল মুহতারে ব্যক্ত করেছেন। তিনি খারেজীদের পরিচয় দিয়ে বলেছেন আমাদের সময়ে মুহাম্মাদ বিন আবদুল ওহাব নজদী'র অনুসারীরা এমন। তারা নজদ থেকে বের হয়ে হারামাইন শরীফাইনে চড়াও হয়েছে। মাযহাবের দিক থেকে তারা হাম্বলী। কিন্তু তারা ভাবে তারাই একমাত্র মুসলমান। তাদের চিন্তাধারার যারা বিরোধিতা করে তারা মুশরিক। এজন্য তারা আহলুস সুন্নাহ ও তার আলেমদের রক্তকে বৈধ করেছে। এক্ষেত্রে আমাদের অবস্থান পরিষ্কার। ইলম, ফিকহ, হাদিস, তাফসীর, তাসাউফের কোনো সিলসিলাতেই সে কিংবা তার কোনো অনুসারী আমাদের মাশায়েখ বা শিক্ষক নয়[10]।

আগেই বলেছি পুস্তিকাটি হযরত মাওলানা খলীল আহমাদ সাহারানপুরী রহ. কর্তৃক রচিত হলেও একে সত্যায়ন করেছেন সমকালীন দেওবন্দী আকাবিরদের প্রায় সবাই। এই গ্রন্থের শেষে সংযুক্ত সত্যায়নে হযরত শাইখুল হিন্দ মাহমুদ হাসান দেওবন্দী রহ. লিখেছেন, আমি এই বইটি পড়ার সৌভাগ্য অর্জন করেছি। এখানে যা বলা হয়েছে তা আমাদের এবং আমাদের সকল মাশায়েখদের আকিদা-বিশ্বাস, এতে কোনো সন্দেহ নেই[11]। একই কথা বলেছেন মীর আহমাদ হাসান আমরুহীও। দেওবন্দের প্রধান মুফতী হযরত মাওলানা মুফতীনআজিজুর রহমান উসমানী সাহেব লিখেছেন, এইসব মাসায়েলে মাওলানা সাহারানপুরী যে তাহকীক পেশ করেছেন আমাদের কাছে সেটিই হক এবং আমরা ও আমাদের মাশায়েখদের বিশ্বাস এটিই[12]। হাকীমুল উম্মত মুজাদ্দিদে মিল্লাত হযরত মাওলানা শাহ আশরাফ আলী থানভী রহ. লিখেছেন, আমি এই পুস্তিকার ধারাগুলো বিশ্বাস করি। অন্য সত্যায়নকারিদের বক্তব্যও ছিল একই। আলোচনা দীর্ঘ হওয়ার আশংকায় তাদের বক্তব্যগুলো উদ্ধৃত করছি না। কারো আগ্রহ হলে আল মুহান্নাদ আলাল মুফান্নাদ দেখে নিতে পারেন। সবার বক্তব্য থেকে এটি পরিষ্কার যে আল মুহান্নাদের প্রতিটি বক্তব্যে দেওবন্দের আকাবিররা একমত ছিলেন। তারা একে স্বীকৃতি দিয়েছেন। যারা একে সত্যায়ন করেছেন তারা সকলেই ছিলেন দেওবন্দের শীর্ষ ব্যক্তিত্ব। প্রতিষ্ঠাতাদের পরেই ছিল তাদের অবস্থান। তাদের ইলমী আমলী যোগ্যতার কারণে তারা হয়েছে উঠেছেন দেওবন্দী ধারার প্রধান মুখপত্র। এতজন ব্যক্তির সত্যায়নে প্রকাশিত আল মুহান্নাদের বক্তব্যের পর নজদী ধারা সম্পর্কে দেওবন্দীদের আর কোনো বক্তব্য উপস্থাপনেরই প্রয়োজন হয় না। তবু বিষয়টির নাজুকতার কারণে আমরা আরো কয়েকজন প্রভাবশালী দেওবন্দী আলেমকে উদ্ধৃত করছি-

আল্লামা আনোয়ার শাহ কাশমীরি

দেওবন্দী ধারার প্রভাবশালী আলেমদের তালিকা করলে হযরত আল্লামা আনোয়ার শাহ কাশমীরির নাম তাদের শীর্ষে থাকবে। তার প্রখর স্মৃতিশক্তি ও ইলমে হাদীসে গভীর জ্ঞানের কারণে সমকালীন আরব আলেমরাও তার যোগ্যতার স্বীকৃতি দিতে বাধ্য হয়েছেন। কাদিয়ানী বিরোধী আন্দোলনে তিনি অত্যন্ত বলিষ্ঠ ভূমিকা রেখেছিলেন। আবদুল ওহাব নজদী সম্পর্কে তিনি বেশ কঠোর মূল্যায়ন করেছেন। আলোচনার ভাষা থেকে বুঝা যায় আবদুল ওহাব নজদী'র সমস্যা ও বিভ্রান্তি সম্পর্কে তিনি বেশ ভালোভাবেই সচেতন ছিলেন। তিনি বলেছেন, আবদুল ওহাব নজদী ছিলেন কম ইলমের অধিকারী একজন নির্বোধ ব্যক্তি। তাকফীরের ক্ষেত্রে বাড়াবাড়ি করা ছিল তার স্বভাব[13]।

শাইখুল ইসলাম হযরত মাওলানা হুসাইন আহমাদ মাদানী

ইসলামী আকিদাহ

19 Nov, 02:03


মাওলানা মানযুর নোমানীর এই বক্তব্যের সবচেয়ে বড় জবাব হলো এখনো পর্যন্ত দারুল উলুম দেওবন্দ অফিসিয়াল কোনো ঘোষণার মাধ্যমে আল মুহান্নাদের কোনো অবস্থান থেকে ফিরে আসেননি। কিংবা এতে স্বাক্ষর করা আলেমরাও কখনো বলেননি এর কোনো ধারা সম্পর্কে তারা নিজেদের অবস্থান বদলেছেন। ফলে এ ব্যাপারে মাওলানা মানযুর নোমানী'র গ্রহণযোগ্যতা যথেষ্ট প্রশ্নবিদ্ধ । তিনি যা বলেছেন তা একান্তই তার ব্যক্তিগত মত হতে পারে, কিন্তু উলামায়ে দেওবন্দের সর্বসম্মত মত নয়। শহীদে ইসলাম হযরত মাওলানা ইউসুফ লুধিয়ানবী এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, উলামায়ে দেওবন্দের কয়েকটি ধাপ অতিবাহিত হয়েছে।

০১. কাসেম নানুতাবী, রশীদ আহমদ গাঙ্গুহী, ইয়াকুব নানুতুবী ও তাদের সমকালীন উলামা।

০২. পরবর্তী ধাপে রয়েছেন পূর্ববর্তীদের আস্থাভাজন শিষ্য যেমন শাইখুল হিন্দ, খলীল আহমাদ সাহরানপুরী, থানবী প্রমুখ উলামা।

০৩. এরপর উপরিউক্ত আলেমদের শিষ্য কাশ্মিরী, মাদানী ও শাব্বীর আহমদ উসমানী প্রমুখ উলামা

০৪. তারপর উপরিউক্ত উলামার শিষ্য ইউসুফ বানুরী ও মুফতী শফী উসমানী প্রমুখ উলামা।

০৫. এখন পঞ্চধাপ চলমান চতুর্থ উলামার শিষ্যরা বর্তমান।

আল মুহান্নাদ আলাল মুফান্নাদে' দ্বিতীয় ধাপের সকল উলামার সত্যয়ন রয়েছে যা প্রথম ধাপের উলামার প্রতিনিধিত্ব। এবং তৃতীয় ও চতুর্থ ধাপ থেকে এই আকিদার ব্যাপারে ঐকমত্য বর্ণিত। সুতরাং “আল মুহান্নাদ আলাল মুফান্নাদ” বইয়ে অন্তর্ভুক্ত আকিদার ওপর উলামায়ে দেওবন্দের সকল আকাবির একমত। কোনো দেওবন্দী তা অস্বীকার করতে পারবে না এবং যে এই আকিদার বরখেলাপ করবে বা বিকৃতি করবে —তার দেওবন্দী হওয়ার অধিকার নাই[19]।

মানযুর নোমানির বক্তব্য সম্পর্কে এটুকু আলোচনাই যথেষ্ট ছিল কিন্তু তবু অনেকে দ্বিধাদ্বন্ধে থাকতে পারেন ভেবে তার বক্তব্যের কিছু দূর্বল দিক উপস্থাপন করছি-

হযরত সাহারানপুরী সম্পর্কে মাওলানা মানযুর নোমানী'র বক্তব্য

আল মুহান্নাদে হযরত সাহারানপুরী'র বক্তব্য সম্পর্কে মাওলানা মানযুর নোমানী রহ. এক অবান্তর ব্যাখ্যা দিয়েছেন। তিনি লিখেছেন, হযরত মাওলানা খলীল আহমাদ সাহারানপুরী'র উত্তর থেকে বোঝা যায় না তিনি মুহাম্মাদ বিন ইবনু আবদুল ওহাব নজদী'র আকিদা ও নজরিয়াত সম্পর্কে নিজে ব্যক্তিগতভাবে কোনো অনুসন্ধান করেছেন কিনা। কিংবা তার কোনো অনুসারীর বইপত্র পড়েছেন কিনা। বাহ্যিকভাবে মনে হয় তিনি প্রশ্নকারীর দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে উত্তর দিয়েছেন[20]।
প্রথমত, হযরত মাওলানা মানযুর নোমানী যদি এই ধারনাই করেন যে হযরত খলীল আহমাদ সাহারানপুরী কোনো অনুসন্ধান ছাড়াই নজদী সম্পর্কে মতামত দিয়েছেন এবং আকাবিরে দেওবন্দও কিছু না বুঝেই স্বাক্ষর ও সমর্থন দিয়েছেন তাহলে তো আল মুহান্নাদ পুরোটাই প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে যাবে। এক্ষেত্রে ব্যক্তি হযরত সাহারানপুরীকে না বলে সকল আকাবিরদেরকেই এই বিষয়ে অজ্ঞ বলা উচিত। কিন্তু হযরত মাওলানা মানযুর নোমানী এবং এই মাসআলায় তার সমর্থকরা সেই সাহস করবেন?
দ্বিতীয়ত, হযরত মাওলানা খলীল আহমাদ সাহারানপুরী শুধু প্রশ্নকারীর দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে জবাব দিয়েছেন বলে হযরত মাওলানা মানযুর নোমানী'র এই ধারনা শতভাগ ভুল। যদি হযরত মাওলানা খলীল আহমাদ সাহারানপুরী'র কাছে নজদী সম্পর্কে কোনো তথ্য না থাকতো, তাহলে তিনি বলে দিতেন আপনাদের উল্লেখিত তথ্য সঠিক হলে এই ব্যক্তির ব্যাপারে আমাদের অবস্থান এমন। এসব ক্ষেত্রে উত্তর দেয়ার ইলমী উসূল এটাই। কিন্তু আমরা দেখি হযরত মাওলানা খলীল আহমাদ সাহারানপুরী স্পষ্ট লিখেছেন, মুহাম্মাদ বিন আবদুল ওহাব নজদী সম্পর্কে আমাদের অবস্থান তা যা ইবনে আবেদীন শামী লিখেছেন। এই কথা থেকেই স্পষ্ট তারা মুহাম্মাদ বিন আব্দুল ওহাব নজদী'র সমস্যাগুলো সম্পর্কে ভালোভাবে অবগত ছিলেন। এমনকি আল মুহান্নাদের অন্যত্র আরেক প্রশ্নের জবাবে হযরত মাওলানা খলীল আহমাদ সাহারানপুরী বলেন, ওহাবীরা যেমন উম্মতের উলামাদের তাকফীর করেছে, তেমনি বেরেলভীরাও উলামাদের তাকফীর করেছে। তারা যেমন লাঞ্ছিত হয়েছে আল্লাহ এদেরকেও লাঞ্ছিত করুক[21]।

একটু সামনে এগিয়ে হযরত মাওলানা মানযুর নোমানী দাবী করেন আল মুহান্নাদ লেখার পর হযরত মাওলানা খলীল আহমাদ সাহারানপুরী যখন মদিনায় যান তখন তার চিন্তায় পরিবর্তন আসে। তিনি মুহাম্মাদ বিন আবদুল ওহাব নজদী সম্পর্কে নিজের অবস্থান পরিবর্তন করেন। এই দাবীর পক্ষে হযরত মাওলান মানযুর নোমানী, হযরত মাওলানা খলীল আহমাদ সাহারানপুরী'র দুটি চিঠি উপস্থাপন করেন। প্রথমটি লেখা হয়েছিল যমিনদার পত্রিকার সম্পাদক মাওলানা যফর আলী খানের কাছে। দ্বিতীয়টি হযরত মাওলানা রশীদ আহমদ গাংগুহীর নাতী হাফেয মুহাম্মাদ ইয়াকুবের কাছে।

পাঠকের বুঝার সুবিধার্থে দুটি পত্রই এখানে তুলে দিচ্ছি।
১। মাওলানা যফর আলী খানের কাছে লেখা পত্রে হযরত মাওলানা খলীল আহমাদ সাহারানপুরী বলেন, বাসার কাছেই প্রধান বিচারপতি শায়খ আবদুল্লাহ ইবনে বুলাইহিদের বাসা। তাঁর সঙ্গে প্রায় সময় সাক্ষাৎ হয়। সাক্ষাতে বিভিন্ন দ্বীনি মাসাইল নিয়ে আমাদের আলাপচারিতাও হয়েছে। অনেক বড় আলেম। আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের অনুসারী। হাদিসের

ইসলামী আকিদাহ

19 Nov, 02:03


বাহ্যরূপের ওপর আমল করে থাকেন, যেমনটি ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল রহ. এর পদ্ধতি। শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহ. ও শায়খুল ইসলাম ইবনুল কাইয়্যিম রহ. এর কিতাবাদির একান্ত অনুরক্ত। এগুলোই অধিক পাঠ করেন। আমাদের উলামায়ে কেরামও এ দু-জন বুযুর্গকে অনেক বড় মাপের আলেম হিসেবে সম্মান করেন। বিদআত ও কুসংস্কারের প্রতি সীমাহীন ঘৃণাবোধ রয়েছে। তাওহীদ ও রিসালাতকে নিজ ঈমানের শেকড় মনে করেন। মোটকথা, আমি যদ্দূর লক্ষ্য করেছি, তাঁকে আহলে সুন্নাতের আকীদা-বিশ্বাস থেকে সামান্যতম বিচ্যুত-ও পাইনি। নজদের অধিকাংশ অধিবাসী কুরআন শরীফ পড়ুয়া। তাদের মাঝে প্রচুর হাফেযের ছড়াছড়ি। তারা খুবই পাবন্দি সহকারে জামাতের সঙ্গে নামায আদায় করে থাকে। ইদানিং মদীনা মুনাওয়ারায় তীব্র শীতকাল চলছে। কিন্তু নজদের অধিবাসীরা ফজরের নামাযে নিয়মিত যোগদান করে থাকে। মোটকথা, এই জাতির দ্বীনি চিত্র খুবই স্বস্তিদায়ক দেখেছি[22]।

নোট - মাওলানা মানযুর নোমানী'র মতে এই পত্রই নাকি খলীল আহমাদ সাহারানপুরী'র অবস্থান পরিবর্তনের দলিল। সচেতন পাঠক পত্রটি আবার পড়ুন এবং ইনসাফের সাথে বলুন, এই পত্রের কোন বাক্য দ্বারা প্রমানিত হয় হযরত মাওলানা খলীল আহমাদ সাহারানপুরী আল মুহান্নাদের অবস্থান পরিবর্তন করেছেন কিংবা মুহাম্মাদ বিন আবদুল ওহাব নজদী সম্পর্কে আগের মতামত পরিবর্তন করেছেন। নজদী ধারার একজন আলেমের প্রশংসা ও নজদ অঞ্চলের মানুষের আমল আখলাকের প্রশংসাকেই হযরত মাওলানা মানযুর নোমানী বানালেন নজদী সম্পর্কে মতামত পরিবর্তনের দলিল। এর চেয়ে স্থুল কথা আর কী হতে পারে? তাছাড়া মাওলানা মানযুর নোমানী যদি মনে করেন নজদের বাসিন্দা মানেই নজদিধারার লোক তাহলে সেটিও ভুল অনুমান। সেখানে নজদীধারা যেমন ছিল আহলুস সুন্নাহর অনুসারীরাও ছিল।

২। হাফেয মুহাম্মদ ইয়াকুবের কাছে লেখা আরেকটি পত্রে হযরত মাওলানা খলীল আহমাদ সাহারানপুরী বলেন, আমি মনে করি, বর্তমান যুগ বিচারে এই প্রশাসন খুবই দ্বীনদার। তারা সদিচ্ছার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে। যতগুলো বড় বড় কাজ হয়েছে, এর প্রতিটিতে আমি কোনো না কোনো দ্বীনি চেতনা পেয়েছি। তবে ছোট-খাট কিছু বিষয়ে ভুল-চুক হচ্ছে। আমি গভীর দৃষ্টিতে পর্যবেক্ষণ করে যদ্দূর পেয়েছি, এর কারণ হলো, প্রশাসনের কাছে যোগ্য ব্যবস্থাপকের পদে দ্বীনদার লোক নেই। যার ফলে কিছু কিছু প্রাশাসনিক কর্মকাণ্ডে গাফলতি হয়ে যাচ্ছে। সুলতান ইবনে সাউদকে ব্যক্তিগতভাবে অত্যন্ত দ্বীনদার, প্রজ্ঞাবান, সহ্যক্ষম মানসিকতার অধিকারী মনে হয়েছে। কিন্তু একজন ব্যক্তির কাছে যতক্ষণ পর্যন্ত হাত-পা না থাকবে, ততোক্ষণ পর্যন্ত তার পক্ষে কীইবা করা সম্ভব। গোটা হিজাযের নিরাপত্তাব্যবস্থা এতটাই চমৎকার যে, মককা মুকাররমা, মদিনা মুনাওয়ারা, ইয়াম্বূ ও জিদ্দার অভ্যন্তরীণ সড়কে নিয়মিত একটি- দুটি করে উট আসা-যাওয়া করছে; অথচ কারো কোনো অভিযোগ নেই। তাদের বিরুদ্ধে যেই অভিযোগগুলো খুব বেশি চর্চিত হচ্ছে তাহলো গম্বুজ ভাঙার অভিযোগ। স্থানীয় মূর্খ জনগণ শিয়াদের সংস্পর্শে প্রভাবিত হয়ে এই গম্বুজগুলোকে নিজেদের দ্বীন ও ঈমান বানিয়ে রেখেছে। আমার মতে এগুলো ধ্বংসা করা নির্ঘাত আবশ্যক । প্রশাসনও এ বিষয়ে মদিনার স্থানীয় উলামায়ে কেরামের কাছ থেকে ফতোয়া চেয়েছিল। তারা যখন তা ভাঙার পক্ষে ফতোয়া দিয়েছে তখনই তারা তা ভাঙ্গার সাহস করেছে[23]।

নোট- এই পত্রটি পাঠ করেও কি এমন কোনো কথা পাওয়া যায় যা প্রমাণ করে হযরত মাওলানা খলীল আহমাদ সাহারানপুরী নিজের অবস্থান পরিবর্তন করেছেন? মাওলানা মানযুর নোমানী'র চোখে না দেখে নিজের বিবেকের আয়নায় লেখাটি পড়লেই বুঝা যায় এখানে শুধু প্রশাসনের কাজকর্মের প্রশংসা আছে। একটি দলের প্রশাসনিক কাঠামোর প্রশংসা করা মানেই তো তাদের আকিদা মেনে নেয়া নয়। এর দ্বারা হযরত মাওলানা খলীল আহমাদ সাহারানপুরীর মতামত পরিবর্তনের দলিল দেয়া কীভাবে সম্ভব?
অর্থাৎ মাওলানা মানযুর নোমানী যে বলতে চেয়েছেন হযরত খলীল আহমাদ সাহারানপুরী মুহাম্মাদ বিন আবদুল ওহাব নজদী সম্পর্কে তার অবস্থান পরিবর্তন করেছেন তা কোনভাবেই সঠিক নয় । এর পক্ষে তিনি যেসব দলিল দিয়েছেন তার একটিও দলিল হওয়ার যথোপযুক্ত নয়।

হযরত মাদানী'র অবস্থান সম্পর্কে মানযুর নোমানীর বক্তব্য

শাইখুল ইসলাম হযরত হুসাইন আহমাদ মাদানী সম্পর্কে হযরত মাওলানা মানযুর নোমানী'র দাবী হলো তিনি যেহেতু ১৩১৬ থেকে ১৩৩৩ হিজরী পর্যন্ত মদিনায় ছিলেন এবং সে সময় আরবে নজদিদের সম্পর্কে মিথ্যা প্রোপাগান্ডা চালু ছিল তাই তিনি বাস্তবতা বুঝতে পারেননি। অনেক বিষয়ে ভুল জেনেছেন এবং সেগুলোই আশ শিহাবুস সাকিবে[24] উল্লেখ করেছেন[25]। কিন্তু পরে তিনি নিজের ভুল বুঝতে পেরে ১৯২৫ সালে জমিনদার পত্রিকায় এক বিবৃতির মাধ্যমে জানান,মুহাম্মাদ বিন আবদুল ওহাব নজদী সম্পর্কে আমি যা বলেছি তা প্রচলিত কথাবার্তা অনুসারে লিখেছি। তার কোনো কিতাবাদি আমি দেখিনি। তার কিতাবাদি দেখার পর বুঝেছি আমি যা জানতাম তা সঠিক নয়।

ইসলামী আকিদাহ

15 Nov, 13:56


প্রকাশের পর থেকেই এটি নিয়ে আলোচনা ও সমালোচনা শুরু হয়েছে। তবে যৌক্তিক ও দালিলিক কোনো লেখা গোচরীভূত হয়নি। মোটাদাগে যে অভিযোগ আনা হচ্ছে, তা হলো নজদি আকিদা ও তা_ক_ফিরি চিন্তাধারার সন্নিবেশ ঘটানো হয়েছে। 

এসব অভিযোগ আসলে স্থূল। ইলমি মানদণ্ডে মোটেও উত্তীর্ণ হয় না। যারা আলাপ করছেন, তারা রিসালাহ/বইটি পড়ে আপত্তিকর জায়গাগুলো কোট করুন। এরপর কোটকৃত জায়গাগুলোর ইলমি রদ্দ লিখুন। আপনার, আমার, সকলের ফায়দা হবে।

রিসালাহটি আগাগোড়া আমার পড়ার তাওফিক হয়েছে। রিসালায় মোটাদাগে আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআহর স্বীকৃত সব আকিদার টপিকই অত্যন্ত সংক্ষেপে তুলে এনেছেন। যেমন : তাওহিদ, ফেরেশতা, আসমানি কিতাব, নবি-রাসুল, পরকাল, তাকদির, ঈমান, কুফর।

সবই ঠিক আছে। তবে তিনি উক্ত রিসালায় এমনকিছু টপিক নিয়ে আলাপ করেছেন, যা আহলুস সুন্নাহর আকিদা হিসেবে উম্মাহর জুমহুর আলেমদের কাছে স্বীকৃত কিংবা পরিচিত নয়। সবিশেষ তাওহিদ ও কু_ফর অধায়ের আলোচনাগুলোর কথা বলছি। এসব পর্যালোচনাযোগ্য।

শাইখ মা_কদিসি তাঁর রিসালাটি শুরু করেছেন তাওহিদের আলোচনা দিয়ে। তিনি তাইমি-নজদি-সালাফি আকিদার লোক হওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই তাওহিদের কথিত তিনপ্রকার : তাওহিদে রুবুবিয়্যাহ, তাওহিদে, উলুহিয়্যাহ, তাওহিদে আসমা ও সিফাতের আলাপ নিয়ে এসেছেন।

তাওহিদের এই তিন প্রকার সালাফ থেকে প্রমাণিত নয়। সর্বপ্রথম তাওহিদকে রুবুবিয়্যাহ ও উলুহিয়্যাহ- এই দুভাগে ভাগ করেছিলেন শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমিয়া রহ.। এরপর নজদি সালাফি আলেমগণ তাওহিদে আসমা ও সিফাত নামে আরেক প্রকার সংযোজন করেছেন। মাওলানা মওদুদি ও সাইয়িদ কুতুব রহ.-গণ তাওহিদে হাকিমিয়্যাহ বলে আরেকটি প্রকার বৃদ্ধি করেছেন।

তো তাওহিদের প্রকার আসলে তিনটিতে সীমাবদ্ধ থাকেনি; এটা অলরেডি চার প্রকারে গড়িয়েছে। যারা তাওহিদের তিন প্রকার বলে জিগির করেন, তারা চতুর্থ প্রকার কোনটি ধরবেন, সেটা নিয়েই বিভিক্তিতে আছেন!

বস্তুত তাওহিদ হলো ইসলামের ফাউন্ডেশন। একেবারে মৌলিক বস্তু। এটার অনেক শাখা-প্রশাখা রয়েছে। হিসেব করবার মতো নয়। এজন্য সালাফগণ তাওহিদের ভাগাভাগি করতে যাননি। কিন্তু সালাফি দাবিদাররা ভাগাভাগি করতে গিয়েই সব ল্যাটা লাগিয়েছেন। এই শাখা-প্রশাখা তিন/চারটিতে সীমাবদ্ধ হবার মতো নয় মোটেও। বিস্তারিত আলাদা পোস্ট আকারে লিখব ইনশাআল্লাহ।

সবেচেয়ে সেন্সিটিভ আলাপটা করেছেন তিনি সবার শেষে কু_ফর অধায়ে। যদিও তিনি তা_ক_ফিরের ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বনের দোহাই দিয়েছেন, তবুও এক্ষেত্রে নিজের অনুসৃত বিচ্ছিন্ন মূলনীতির আলোকে উম্মাহর মাঝে তা_ক_ফিরকে ভাতপানি করে ছেড়েছেন।

তিনি কু_ফরে আকবার ও আসগার নামে দুটি শাখা স্বীকার করলেও বহু আসগারকে আকবার হিসেবেও চিহ্নিত করেছেন। কোনো মুসলমান থেকে আমলগত কু_ফর পাওয়া গেলে সেটাকেও ঢালাওভাবে কুফরে আকবার বলার পক্ষে তিনি! এ বিষয়েও আলাদা লেখনীর প্রয়োজন আছে। এক পোস্টে বিস্তারিত সম্ভব নয়।

কু_ফর অধ্যায়ে একেবারে জঘন্য যে বিষয়টি আমার কাছে ধরা পড়েছে সেটা হলো, তিনি জাহালাতের কারণেও তা_ক_ফির করার পক্ষে। মানে কোনো সাধারণ মুসলমান যদি না-জানার কারণে কোনো কু_ফ_রি কিছু করে, তাকেও তিনি কা_ফির হিসেবে গণ্য  করেছেন!

অথচ, এটা উম্মাহর জুমহুর আলেমদের সম্পূর্ণ বিপরীত। উম্মাহর আলেমগণ জাহালাতির কারণে কাউকে তা_ক_ফির করেন না। এই ব্যাপারটা নিয়েও আগামীতে বিস্তারিত লিখব ইনশাআল্লাহ।

শাইখ মা_কদিসি মুরজিয়াতুল আসর আর জাহমিয়্যাতুয জামান নামে যুগের মুরজিয়া ও যুগের জাহমিয়া নামে আরেকটা পরিভাষা ব্যবহার করেছেন। এজন্য সবিশেষ উনার অনুসারীদেরকেও এই পরিভাষা ব্যবহার করতে দেখা যায়! অথচ, এটাও তিনি বলেছেন তা_ক_ফিরের এমন একটা মূলনীতির সাথে ভিন্নমত পোষণ করে, যে মূলনীতির ব্যাখ্যায় আলেমগণ একমত নন!

যাইহোক, আপাতত বইটি সম্পর্কে এটাই ছিল সংক্ষিপ্ত পর্যালোচনা। বিস্তারিত সময় পেলে আলাপ করব ইনশাআল্লাহ।

🖋️ আইনুল হক কাসিমী হাফিঃ

ইসলামী আকিদাহ

15 Nov, 13:56


শাইখ আ_বু মুহাম্মাদ মা_কদিসি (ফাক্কাল্লাহু আসরাহ) এর আকিদার মাত্র ৩৮ পৃষ্ঠার একটি ছোট্ট রিসালাহ রয়েছে <هذه عقيدتنا> নামে। সম্প্রতি এটি <আমাদের আকিদা> নামে প্রকাশিত হয়েছে।

ইসলামী আকিদাহ

04 Nov, 15:14


তাবলিগের মেহনত যিনি সূচনা করেছেন, হজরতজি ইলিয়াস রাহ.। তিনি একজন আলিম। দারুল উলুম দেওবন্দের প্রথম ছাত্র শায়খুল হিন্দ রাহ.-এর ছাত্র।

তাবলিগ নিয়ে তিনি মাশওয়ারা করতেন হাকিমুল উম্মত আশরাফ আলি থানভী রাহ. ও আবদুল কাদির রায়পুরি রাহি.-সহ অন্য আলিমদের সাথে।

ফাজায়েলে আমল লিখলেন শায়খুল হাদিস জাকারিয়া কান্দলবি রাহ.। তিনিও একজন আলিম। দিল্লি মারকাজে থেকে তাবলিগকে আগলে রেখেছিলেন মুফাক্কিরে ইসলাম মাওলানা আবুল হাসান আলি নদবি রাহ.। তিনিও আলিম।

ভাগ্যের কী নির্মম পরিহাস! আপনারা আলিমদের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলেন! তাবলিগকে সৃষ্টিকারী দারুল উলুম দেওবন্দকে ওভারটেক করলেন!

দারুল উলুম দেওবন্দ কেন আপত্তি জানিয়েছিল? মাওলানা সাদ সাহেবের একের পর এক লাগামহীন বক্তব্যের কারণে। তিনি রুজু করার নামে নাটক করলেন। মুসা আ., ইউসুফ আ., বিশ্বনবি সা.-কে নিয়ে তাঁর বক্তব্য একবার তিনি রুজু করেন! রুজু করার পরদিন আবারও একই বক্তব্য দেন! এ যেন আলিমদের সঙ্গে তামাশা!

কী দারুণভাবে শত বছর থেকে বিভিন্ন ঘরানার নানা অভিযোগের ইলমি জবাব দিয়ে আলিমরা তাবলিগকে নিজ সন্তানের মতো আগলে রাখলেন! আপনারা ব্যক্তি সাদের জন্য তাদের ওপর আঘাত করলেন!

এখনও দুআ করি আল্লাহ তাদের বুঝ দান করুন। বাকি এ সংকট দ্রুত শেষ হবে না মনে হচ্ছে। প্রত্যেক বছর এভাবে দরকষাকষি না করে আশাকরি স্থায়ী সমাধানের দিকে যাবেন আমাদের শ্রদ্ধেয় মুরব্বিরা।

আগামীকাল আগত সাথিদের আল্লাহ নিরাপদ রাখুন। জিকিরে-ফিকিরে আমরা আসব। কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা করব না। রাস্তার আদব মেনে চলব। আমরা সবাই শরিক হব ইনশাআল্লাহ।
🖋️ মাওলানা রেজাউল কারীম আবরার হাফিঃ

ইসলামী আকিদাহ

03 Nov, 15:34


আগামী ৫-নভেম্বর, ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মহা-সম্মেলন সফল করুন।

আহ্বানে:
০১. আল্লামা শাহ্ মহিবুল্লাহ বাবুনগরী
০২. আল্লামা খলিল আহমাদ কাসেমী, হাটহাজারী
০৩. আল্লামা আব্দুল হামিদ পীর সাহেব মধুপুর
০৪. আল্লামা আব্দুল রহমান হাফেজ্জী,
০৫. আল্লামা নুরুল ইসলাম, আদিব সাহেব হুজুর
০৬. মাওলানা ওবায়দুল্লাহ ফারুক
০৭. মাওলানা রশিদুর রহমান
০৮. আল্লামা শাইখ জিয়াউদ্দিন
০৯. আল্লামা শায়েখ সাজিদুর রহমান
১০. আল্লামা আব্দুল কুদ্দুস, ফরিদাবাদ
১১. আল্লামা নূরুল ইসলাম ওলিপুরী
১২. মাওলানা মাহফুজুল হক
১৩. মাওলানা আবু তাহের নদভী
১৪. মাওলানা আরশাদ রহমানি
১৫. মাওলানা সালাহউদ্দীন নানুপুরী
১৬. মাওলানা মুস্তাক আহমদ, খুলনা
১৭. অধ্যক্ষ মিজানুর রহমান চৌধুরী পীর সাহেব দেওনা
১৮. মাওলানা আনোয়ারুল করীম, যশোর
১৯. মাওলানা মুফতি মোহাম্মদ আলী
২০. মাওলানা মুফতি মনসুরুল হক
২১. মাওলানা মুফতি দেলাওয়ার হোসাইন
২২. মাওলানা জাফর আহমাদ, ঢালকানগর
২৩. মাওলানা জুনায়েদ আল হাবিব
২৪. মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দি
২৫. মাওলানা বাহাউদ্দীন জাকারিয়া
২৬. মাওলানা আব্দুল আউয়াল
২৭. মাওলানা মুহিউদ্দিন রাব্বানী
২৮. মাওলানা নাজমুল হাসান কাসেমী
২৯. মাওলানা খালেদ সাইফুল্লাহ সা'দী
৩০. মাওলানা মামুনুল হক
৩১. মাওলানা জিয়াউদ্দিন, নেত্রকোনা
৩২. মাওলানা আব্দুল হক
৩৩. মাওলানা ইউনুস, জুমাপাড়া, রংপুর
৩৪. মাওলানা নুরুল হক, বটগ্রাম মাদ্রাসা
৩৫. মাওলানা ওবায়দুর রহমান মাহবুব
৩৬. মাওলানা আব্দুল হালিম
৩৭. মাওলানা আনাস, ভোলা
৩৮. মাওলানা হেলাল উদ্দিন, ফরিদপুর
৩৯. মাওলানা শওকত হোসাইন সরকার
৪০. মাওলানা নেয়ামত উল্লাহ আল ফরিদী
৪১. মাওলানা ইসমাইল নূরপুরী

বার্তা প্রেরক

মাওলানা ফজলুল করীম কাসেমী
মিডিয়া বিভাগ,
উলামা মাশায়েখ বাংলাদেশ।
০৩-১১-২০২৪ ইং

ইসলামী আকিদাহ

16 Oct, 17:44


আশয়ারি মাতুরিদির সংখ্যা কেনো বাড়তেছে? কেনো মানুষ আশয়ারি মাতুরিদিদের মাধ্যমে ধোঁকায় নিপতিত হচ্ছে?

সালাফি আব্দুল্লাহ ইবনে ইউসুফ জুনাইদি,কিছু কারণ বর্ণনা করেছেন, যার কারণে মানুষ আশয়ারি মাতুরিদি আকিদা গ্রহণ করে থাকে।

জুনাইদি তার কিতাবে লিখেছেন, সংক্ষেপে কিছু কারন উল্লেখ করবো,যার কারণে মানুষ আহলে বিদয়াহ,আশয়ারি মাতুরিদির মাধ্যমে ধোঁকায় নিপতিত হয়।

১/আশয়ারি মাতুরিদি বিদ্বানরা নিজেদেরকে আহলে সুন্নত বলে দাবি করে, এবং তারা হাদিসচর্চা, এলমে রিজালে খুব গুরুত্ব দিয়ে থাকে,যা সালাফদের বৈশিষ্ট্য।

২/শাখাগত মাস'আলায় সুন্নাতের সহযোগিতা এবং সুন্নত থেকে জাল কারীদের প্রতিরোধ করে,এবং সুন্নতের উপর লেখালেখি করে।

৩/তাদের থেকে জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহ,সৎকাজের আদেশ,অসৎ কাজের নিষেধ, ধার্মিকতা এবং সততার প্রসিদ্ধতা বেশি রয়েছে ।

৪/শরিয়তে ইসলামের শত্রুদের বিভিন্ন দলের বিপক্ষে তাদের খণ্ডন থাকা।যেমন আশয়ারিদের "মুতাজিলা,এবং ফালসাফিদের খণ্ডন"।

৫/যুগে যুগে তাদের অনুসারী বেশি থাকা।

এগুলো প্রধাণতম কারন, যেগুলোর মাধ্যমে মানুষ আশয়ারি মাতুরিদিদের ধোকায় নিপতিত হয়।

আল আকিদাতুস সালাফিয়্যাহ ফি কালামে রাব্বিল বারিয়্যাহ,( পৃ. ৪৪৭,৪৪৮)

তিনি ইমাম ইবনে কুদামা রহি. এর আল মুনাজারা টিকায় লিখেছেন,

আশয়ারিদের বিদয়াত খুব জোরেশোরে বৃদ্ধি পাচ্ছে, ইতিহাস এবং বাস্তবতা এগুলোর সত্যায়ন করে। বৃদ্ধি পাওয়াটা বেশি হয়েছে আশয়ারির পরের যুগে, তারা বাড়তেছে এমনকি প্রচুর হয়ে গেছে। তারা এভাবে আজ পর্যন্ত বেড়েই চলেছে।

আল মুনাজারাতু ফিল কোরআন পৃ.৫২

ইসলামী আকিদাহ

12 Oct, 15:15


উল্লেখিত আয়াতাংশের তাফসীর জানার জন্য দেখুন তাফসীরে ইবনে কাসীর খ. ৬ পৃ. ১৪০ ও আদ্দুররুল মানসূর খ. ৫ পৃ. ৮০-৮১ এবং ইমাম ইবনে তাইমিয়া রাহ.-এর কিতাব ‘ইকতিযাউস সিরাতিল মুসতাকীম মুখালাফাতা আসহাবিল জাহীম’ খ. ১ পৃ. ৪২৭-৪৩২)
আরেক হাদীসে এই ঘটনা বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবদ্দশায় একজন মান্নত করল, অমুক জায়গায় সে উট জবাই করবে। সে আল্লাহর রাসূলের নিকট মাসআলা জানতে চাইলে

আল্লাহর রাসূল জিজ্ঞেস করলেন-
هَلْ كَانَ فِيهَا وَثَنٌ مِنْ أَوْثَانِ الْجَاهِلِيّةِ يُعْبَدُ؟
সেখানে কি জাহেলী যুগের কোনো মূর্তি ছিল, যার পূজা করা হত? লোকেরা বলল, না। পুনরায় জিজ্ঞেস করলেন-
هَلْ كَانَ فِيهَا عِيدٌ مِنْ أَعْيَادِهِمْ؟
সেখানে কি অমুসলিমদের কোনো উৎসব হত? লোকেরা বলল, না।

তখন আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন-
أَوْفِ بِنَذْرِكَ، فَإِنّهُ لَا وَفَاءَ لِنَذْرٍ فِي مَعْصِيَةِ اللهِ...
তুমি তোমার মান্নত পুরা কর। (এরপর বললেন, এসব প্রশ্ন এজন্য করা হয়েছে) কারণ, আল্লাহর নাফরমানিতে কোনো মান্নত গ্রহণযোগ্য নয়; এ ধরনের মান্নত পূরণ করা জায়েয নয়। - সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৩৩১৩, অধ্যায় : মা ইয়ু’মারু বিওয়াফাইহী মিনান নাযরি

সাহাবায়ে কেরাম কুরআন-হাদীসের হেদায়েত ও নির্দেশনাসমূহ যথাযথভাবে হৃদয়ঙ্গম করেছিলেন। এজন্য তাঁরা মানুষকে অমুসলিমদের উৎসবে যেতে অত্যন্ত কঠোরভাবে নিষেধ করতেন। হযরত উমর রা. বলেন-
اجْتَنِبُوا أَعْدَاءَ اللهِ فِي عِيدِهِمْ.
তোমরা আল্লাহর শত্রুদের উৎসব থেকে দূরে থাক।- আসসুনানুল কুবরা লিলবাইহাকী, বর্ণনা ১৮৮৬২; ইকতিযাউস সিরাতিল মুসতাকীম, খ. ১ পৃ. ৪৫৬-৪৫৭
অবশেষে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দুটি মৌলিক হেদায়েত স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি।

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
مَنْ تَشَبّهَ بِقَوْمٍ فَهُوَ مِنْهُمْ.
যে যে জাতির সাদৃশ্য গ্রহণ করবে সে তাদেরই বলে গণ্য হবে। -সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৪০৩১
কোনো জাতির উৎসব হচ্ছে সে জাতির শিআর বা নিদর্শন। অতএব বিজাতির নিদর্শনাবলীর ক্ষেত্রে যে তাদের সাদৃশ্য গ্রহণ করে, সে যে হাদীসে উল্লেখিত ধমকির অন্তর্ভুক্ত- এ বিষয়ে কি কোনো সন্দেহ আছে?

আরেক হাদীসে এসেছে-
مَنْ كَثّرَ سَوَادَ قَوْمٍ فَهُوَ مِنْهُمْ وَمَنْ رَضِيَ عَمَلَ قَوْمٍ كَانَ شَرِيكًا لِمَنْ عَمِلَهُ.
যে ব্যক্তি কোনো কওমের দল ভারী করবে সে তাদের মধ্যে গণ্য হবে। আর যে কোনো সম্প্রদায়ের কাজের প্রতি সন্তুষ্টি প্রকাশ করবে সে সে কাজের অংশীদার বলে ধতর্ব্য হবে। - (মুসনাদে আবু ইয়ালা)

আলমাতালিবুল ‘আলিয়া খ. ৪ পৃ. ৩১৫; কিতাবুয যুহদি ওর্য়ারাকাইক, ইবনুল মুবারক পৃ. ৪৪৭, অধ্যায় : বাবু ইসতিমায়িল লাহ্বি; নাসবুর রায়াহ, খ. ৪ পৃ. ৩৪৬-৩৪৭; আদ্দিরায়াহ ফী তাখরীজি আহাদিসিল হিদায়া (দ্র. হিদায়া খ. ৪ পৃ. ৫৬৭, হিন্দুস্তানী সংস্করণ) ফাতহুল বারী, ইবনে হাজার খ. ১৩, পৃষ্ঠা ৩৭-৩৮, হাদীস ৭০৮৫ باب من كره أن يكثر سواد الفتن والظلم; আলমাকাসিদুল হাসানা খ. ৫ পৃ. ১৮১

আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে ঈমানী গায়রত দান করুন। সকল শিরক থেকে রক্ষা করুন এবং বিজাতীয় সকল আচার-অনুষ্ঠান ও পর্ব-উৎসব থেকে দূরে থাকার তাওফীক দান করুন। আমীন।
মাসিক আলকাউসার এর সৌজন্যে

ইসলামী আকিদাহ

12 Oct, 15:15


মনে রাখা উচিত, আল্লাহ তাআলার নিকট শিরক সবচে বড় কবীরা গুনাহ। অন্যান্য গুনাহ তো আল্লাহ যাকে ইচ্ছা মাফ করে দেন, তবে শিরকের ব্যাপারে তিনি ঘোষণা করেছেন, এই গুনাহ তিনি মাফ করবেনই না, যতক্ষণ না শিরককারী ব্যক্তি খাঁটি অন্তরে তওবা করে সব ধরনের শিরক থেকে ফিরে আসে এবং তাওহীদের দ্বীন ইসলাম কবুল করে মনে-প্রাণে শুধু এবং শুধু তাওহীদের উপর অবিচল থাকে।

ইরশাদ হয়েছে-
اِنَّ اللهَ لَا یَغْفِرُ اَنْ یُّشْرَكَ بِهٖ وَ یَغْفِرُ مَا دُوْنَ ذٰلِكَ لِمَنْ یَّشَآءُ وَ مَنْ یُّشْرِكْ بِاللهِ فَقَدْ ضَلَّ ضَلٰلًۢا بَعِیْدًا.
নিশ্চয়ই আল্লাহ তাঁর সঙ্গে শরীক করাকে ক্ষমা করেন না। এর নিচের যে কোনো গুনাহ যার ক্ষেত্রে চান ক্ষমা করে দেন। যে ব্যক্তি আল্লাহর সঙ্গে (কাউকে) শরীক করে, সে (সঠিক পথ থেকে) বহু দূরে সরে যায়। -সূরা নিসা (৪) : ১১৬

আরো ইরশাদ হয়েছে-
اِنَّهٗ مَنْ یُّشْرِكْ بِاللهِ فَقَدْ حَرَّمَ اللهُ عَلَیْهِ الْجَنَّةَ وَ مَاْوٰىهُ النَّارُ وَ مَا لِلظّٰلِمِیْنَ مِنْ اَنْصَار.
নিশ্চয়ই যে ব্যক্তি আল্লাহর সঙ্গে (কাউকে) শরীক করে, আল্লাহ তার জন্য জান্নাত হারাম করে দিয়েছেন। তার ঠিকানা জাহান্নাম। আর জালিমদের কোনো সাহায্যকারী নেই। -সূরা মায়িদা (৫) : ৭২

মোটকথা, দ্বীনে তাওহীদের অনুসারী এবং কালিমায়ে তাওহীদের সাক্ষ্যদানকারী মুমিন-মুসলিমকে সতর্ক থাকতে হবে। এমন যেন না হয় যে, উদারতার নামে স্পষ্ট শিরকী কর্মকা-গুলোকে ভুল ব্যাখ্যা করতে শুরু করল, নিছক উৎসব নাম দিয়ে সেগুলোর পক্ষে সাফাই এবং সেগুলোতে অংশগ্রহণ করতে লাগল। এমনটা করলে এর চেয়ে বড় অকৃতজ্ঞতা ও অবাধ্যতা আল্লাহর সঙ্গে আর কী হতে পারে? এবং ঈমান ও তাওহীদের নিআমত থেকে বঞ্চিত হওয়ার এর চেয়ে বড় কারণ আর কী হতে পারে?

অমুসলিমদের উৎসবে মুসলমানদের অংশগ্রহণের বিধান:

বর্তমানে কিছু মানুষ কেবল অজ্ঞতার কারণে এমন মনে করছে যে, মুসলমানদের জন্য যেন অমুসলিমদের ধর্মীয় উৎসবে অংশগ্রহণ করা বৈধ! এই ভাইদের খুব ভালো করে বোঝা উচিত, এমন ধারণা একেবারে ভুল।
ইসলাম ও ইসলামী শরীয়ত এসব বিষয়ে অত্যন্ত সংবেদনশীল। ইসলাম তার অনুসারীদের জীবনের কোনো অঙ্গনকে ‘ফকির’ ছেড়ে দেয়নি; বরং জীবনের প্রতিটি অধ্যায় ও ক্ষেত্রে তাদেরকে বিধান দান করেছে এবং তাদেরকে আত্মমর্যাদাবোধসম্পন্ন স্বয়ংসম্পূর্ণ একটি জাতি হিসাবে পুরো পৃথিবীর জন্য আদর্শ বানিয়েছে।

মুমিনদের লক্ষ করে ইরশাদ হয়েছে-
یٰۤاَیُّهَا الَّذِیْنَ اٰمَنُوا ادْخُلُوْا فِی السِّلْمِ كَآفَّةً وَّ لَا تَتَّبِعُوْا خُطُوٰتِ الشَّیْطٰنِ اِنَّهٗ لَكُمْ عَدُوّ مُّبِیْنٌ.
হে মুমিনগণ! ইসলামে সম্পূর্ণরূপে প্রবেশ কর এবং শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না। নিশ্চয়ই সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু। -সূরা বাকারা (২) : ২০৮

আর পুরো দুনিয়ার প্রতি ইসলামের ঘোষণা-
اٰمِنُوْا كَمَاۤ اٰمَنَ النَّاسُ.

যেসকল লোক ঈমান এনেছে তোমরাও তাদের মত ঈমান আন। -সূরা বাকারা (২) : ১৩
এবং
فَاِنْ اٰمَنُوْا بِمِثْلِ مَاۤ اٰمَنْتُمْ بِهٖ فَقَدِ اهْتَدَوْا.

তারা যদি সেরকম ঈমান আনে, যেমন তোমরা ঈমান এনেছ, তবে তারা সঠিক পথ পেয়ে যাবে।- সূরা বাকারা (২) : ১৩৭

জীবনের অন্যসব বিষয়ের মত উৎসবের ক্ষেত্রেও মুসলিম উম্মাহকে স্বতন্ত্র বিধি-বিধান দান করা হয়েছে। তাদেরকে ঈদের বিধান দেয়াই হয়েছে এ কথা বলে-
“প্রত্যেক জাতির নিজস্ব উৎসব থাকে। হে মুসলিম জাতি! তোমাদের উৎসব হল ‘ঈদ’।” অর্থাৎ সব জাহেলী উৎসব থেকে অমুখাপেক্ষী করে মুসলিম উম্মাহকে ‘ঈদ’ দান করা হয়েছে। তাই তাদের জন্য এটা বৈধই নয় যে, তারা নিজেরা কোনো জাহেলী উৎসব উদ্যাপন করবে বা তাতে অংশগ্রহণ করবে।
হাদীস শরীফে আছে, মদীনায় আগমনের পর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দেখেন, এখানকার অধিবাসীরা বছরে দু’দিন উৎসব পালন করে।

তখন আল্লাহর রাসূল তাদের বললেন-
إِنّ اللهَ قَدْ أَبْدَلَكُمْ بِهِمَا خَيْرًا مِنْهُمَا: يَوْمَ الْأَضْحَى، وَيَوْمَ الْفِطْرِ.
নিঃসন্দেহে আল্লাহ তাআলা তোমাদেরকে সেসবের পরিবর্তে দুটি উত্তম দিন দান করেছেন- আযহা এবং ফিতর। - সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ১১৩৪

এছাড়া একাধিক হাদীসে বলা হয়েছে-
إِنّ لِكُلِّ قَوْمٍ عِيدًا، وَهَذَا عِيدُنَا.
অর্থাৎ নিশ্চয়ই প্রত্যেক কওমের আপন আপন উৎসব আছে। আমাদের (অর্থাৎ মুসলিম উম্মাহর) উৎসব হচ্ছে ঈদুল ফিতর এবং ঈদুল আযহা। - সহীহ বুখারী, হাদীস ৯৫২; সহীহ মুসলিম, হাদীস ৮৯২

এজন্য কুরআনে কারীমে [সূরা ফুরকান (২৫) : ৭২] আল্লাহর নেক বান্দাদের বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করতে গিয়ে এ কথাও বলা হয়েছে-
وَ الَّذِیْنَ لَا یَشْهَدُوْنَ الزُّوْر.
অর্থাৎ তারা এমন মানুষ, যারা মিথ্যা ধ্যান-ধারণার ভিত্তিতে উদ্যাপিত কাফের-মুশরিকদের উৎসবে অংশগ্রহণ করে না।

ইসলামী আকিদাহ

12 Oct, 15:15


একমাত্র মাধ্যম।

কুরআনে কারীমে বারবার উল্লেখিত হয়েছে, প্রত্যেক নবী-রাসূলের দাওয়াত এটাই ছিল যে, তোমরা আল্লাহর ইবাদত কর; তিনি এক, তাঁর কোনো অংশীদার নেই, তিনি ছাড়া কোনো মাবুদ নেই।

ইরশাদ হয়েছে-
وَ مَاۤ اَرْسَلْنَا مِنْ قَبْلِكَ مِنْ رَّسُوْلٍ اِلَّا نُوْحِیْۤ اِلَیْهِ اَنَّهٗ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّاۤ اَنَا فَاعْبُدُوْن.
আমি তোমার পূর্বে এমন কোনো রাসূল পাঠাইনি, যার প্রতি আমি এই ওহী নাযিল করিনি যে, ‘আমি ছাড়া অন্য কোনো মাবুদ নেই। সুতরাং আমারই ইবাদত করা।’ Ñসূরা আম্বিয়া (২১) : ২৫
وَ لَقَدْ بَعَثْنَا فِیْ كُلِّ اُمَّةٍ رَّسُوْلًا اَنِ اعْبُدُوا اللهَ وَ اجْتَنِبُوا الطَّاغُوْتَ، فَمِنْهُمْ مَّنْ هَدَی اللهُ وَ مِنْهُمْ مَّنْ حَقَّتْ عَلَیْهِ الضَّلٰلَةُ.
নিশ্চয়ই আমি প্রত্যেক উম্মতের মাঝে কোনো না কোনো রাসূল পাঠিয়েছি এই পথ নির্দেশ দিয়ে যে, তোমরা আল্লাহর ইবাদত কর এবং তাগূতকে১ পরিহার কর। তারপর তাদের মধ্যে কতক তো এমন ছিল, যাদেরকে আল্লাহ হেদায়েত দান করেছেন আর কতক ছিল এমন, যাদের উপর বিপথগামিতা অবধারিত হয়ে গেছে। সূরা নাহল (১৬) : ৩৬

কুরআনে কারীমের বিভিন্ন সূরায় অনেক নবী-রাসূলের দাওয়াতের বিস্তারিত বর্ণনা আছে। বিশেষত সূরা হূদ (সূরা নং ১১) এবং সূরা শুআরায় (সূরা নং ২৬)

একেকজন রাসূলের নাম নিয়ে নিয়ে তাঁদের দাওয়াতের বর্ণনা বিবৃত হয়েছে। তাঁদের সবার দাওয়াত একই ছিল-
قَالَ یٰقَوْمِ اعْبُدُوا اللهَ مَا لَكُمْ مِّنْ اِلٰهٍ غَیْرُهٗ.
হে আমার কওম! আল্লাহর ইবাদত কর। তিনি ছাড়া তোমাদের অন্য কোনো মাবুদ নেই। -সূরা হূদ (১১) : ৫০, ৬১, ৮৪
اَنْ لَّا تَعْبُدُوْۤا اِلَّا اللهَ.

তোমরা আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো ইবাদত করো না। -সূরা হূদ (১১) : ২৬
فَاتَّقُوا اللهَ وَ اَطِیْعُوْنِ.

সুতরাং তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং আমার আনুগত্য কর। -সূরা শুআরা (২৬) : ১০৮, ১২৬, ১৩১, ১৪৪, ১৫০, ১৬৩, ১৭৯

সূরা আনকাবূতে আছে-
وَ اِبْرٰهِیْمَ اِذْ قَالَ لِقَوْمِهِ اعْبُدُوا اللهَ وَ اتَّقُوْهُ، ذٰلِكُمْ خَیْرٌ لَّكُمْ اِنْ كُنْتُمْ تَعْلَمُوْنَ، اِنَّمَا تَعْبُدُوْنَ مِنْ دُوْنِ اللهِ اَوْثَانًا وَّ تَخْلُقُوْنَ اِفْكًا، اِنَّ الَّذِیْنَ تَعْبُدُوْنَ مِنْ دُوْنِ اللهِ لَا یَمْلِكُوْنَ لَكُمْ رِزْقًا فَابْتَغُوْا عِنْدَ اللهِ الرِّزْقَ وَ اعْبُدُوْهُ وَ اشْكُرُوْا لَهٗ، اِلَیْهِ تُرْجَعُوْنَ.
এবং আমি ইবরাহীমকে পাঠালাম, যখন সে তার সম্প্রদায়কে বলেছিল, আল্লাহর ইবাদত কর এবং তাঁকে ভয় কর। এটাই তোমাদের পক্ষে শ্রেয়, যদি তোমরা জ্ঞান রাখ। তোমরা তো আল্লাহর পরিবর্তে কেবল প্রতিমাদেরই পূজা করছ এবং রচনা করছ মিথ্যা। তোমরা আল্লাহ ছাড়া যাদের ইবাদত কর, তারা তোমাদেরকে রিযিক দেওয়ার ক্ষমতা রাখে না। সুতরাং আল্লাহর কাছে রিযিক সন্ধান কর। তাঁর ইবাদত কর এবং তাঁর কৃতজ্ঞতা আদায় কর। তাঁরই কাছে তোমাদের ফিরিয়ে নেওয়া হবে। -সূরা আনকাবূত (২৯) : ১৬-১৭

আর সূরা শুআরায় আছে-
وَ اتْلُ عَلَیْهِمْ نَبَاَ اِبْرٰهِیْمَ، اِذْ قَالَ لِاَبِیْهِ وَ قَوْمِهٖ مَا تَعْبُدُوْنَ، قَالُوْا نَعْبُدُ اَصْنَامًا فَنَظَلُّ لَهَا عٰكِفِیْنَ، قَالَ هَلْ یَسْمَعُوْنَكُمْ اِذْ تَدْعُوْنَ، اَوْ یَنْفَعُوْنَكُمْ اَوْ یَضُرُّوْنَ، قَالُوْا بَلْ وَجَدْنَاۤ اٰبَآءَنَا كَذٰلِكَ یَفْعَلُوْنَ، قَالَ اَفَرَءَیْتُمْ مَّا كُنْتُمْ تَعْبُدُوْنَ، اَنْتُمْ وَ اٰبَآؤُكُمُ الْاَقْدَمُوْنَ، فَاِنَّهُمْ عَدُوّ لِّیْۤ اِلَّا رَبَّ الْعٰلَمِیْنَ، الَّذِیْ خَلَقَنِیْ فَهُوَ یَهْدِیْنِ، وَ الَّذِیْ هُوَ یُطْعِمُنِیْ وَ یَسْقِیْنِ، وَ اِذَا مَرِضْتُ فَهُوَ یَشْفِیْنِ، وَ الَّذِیْ یُمِیْتُنِیْ ثُمَّ یُحْیِیْنِ، وَ الَّذِیْۤ اَطْمَعُ اَنْ یَّغْفِرَ لِیْ خَطِیْٓـَٔتِیْ یَوْمَ الدِّیْنِ.

(হে নবী!) তাদেরকে শোনাও ইবরাহীমের বৃত্তান্ত। যখন সে তার পিতা ও সম্প্রদায়কে বলল, তোমরা কিসের ইবাদত কর। তারা বলল, আমরা প্রতিমাদের পূজা করি এবং তাদেরই সামনে ধরনা দিয়ে থাকি। ইবরাহীম বলল, তোমরা যখন তাদেরকে ডাক, তখন তারা কি তোমাদের কথা শোনে? কিংবা তারা কি তোমাদের কোনো উপকার বা ক্ষতি করতে পারে? তারা বলল, আসল কথা হল, আমরা আমাদের বাপ-দাদাদেরকে এমনই করতে দেখেছি। ইবরাহীম বলল, তোমরা কি কখনও গভীরভাবে লক্ষ করে দেখেছ তোমরা কিসের পূজা করছ? তোমরা এবং তোমাদের বাপ-দাদাগণ? এরা সব আমার শত্রু এক রাব্বুল আলামীন ছাড়া, যিনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন। তারপর তিনিই আমার পথপ্রদর্শন করেন। এবং আমাকে খাওয়ান ও পান করান। এবং আমি যখন পীড়িত হই, আমাকে শেফা দান করেন। এবং যিনি আমার মৃত্যু ঘটাবেন, ফের আমাকে জীবিত করবেন। এবং যাঁর কাছে আমি আশা রাখি, হিসাব-নিকাশের দিন তিনি আমার অপরাধসমূহ ক্ষমা করবেন।-সূরা শুআরা (২৬) : ৬৯-৮২

ইসলামী আকিদাহ

12 Oct, 15:15


তোমরা যেসকল জিনিসকে (আল্লাহর) শরীক বানিয়েছ, আমি কীভাবেইবা তাদেরকে ভয় করতে পারি, যখন তোমরা ওইসকল জিনিসকে আল্লাহর শরীক বানাতে ভয় করছ না, যাদের বিষয়ে তিনি তোমাদের প্রতি কোনো প্রমাণ অবতীর্ণ করেননি? সুতরাং তোমাদের কাছে যদি কিছু জ্ঞান থাকে, তবে (বল) দুই দলের মধ্যে কোন্ দল নির্ভয়ে থাকার বেশি উপযুক্ত? (প্রকৃতপক্ষে) যারা ঈমান এনেছে এবং নিজেদের ঈমানকে যুলুমের সাথে মিশ্রিত করেনি, নিরাপত্তা ও স্বস্তি তো কেবল তাদেরই অধিকার এবং তারাই সঠিক পথে পৌঁছে গেছে। -সূরা আনআম (৬) : ৮১-৮২

দুআ ও প্রার্থনার একমাত্র হকদার তিনিই, যিনি সবকিছুর খালিক ও মালিক। আর কেবল সে দুআই যথার্থ ও কার্যকর হবে, যা শুধু তাঁরই দরবারে পেশ করা হবে। এর বাইরে সকল প্রার্থনা বেকার ও অর্থহীন। কারণ সেগুলো করা হয়েছে ভুল স্থানে। ইরশাদ হয়েছে-
لَهٗ دَعْوَةُ الْحَقِّ وَ الَّذِیْنَ یَدْعُوْنَ مِنْ دُوْنِهٖ لَا یَسْتَجِیْبُوْنَ لَهُمْ بِشَیْءٍ اِلَّا كَبَاسِطِ كَفَّیْهِ اِلَی الْمَآءِ لِیَبْلُغَ فَاهُ وَ مَا هُوَ بِبَالِغِهٖ وَ مَا دُعَآءُ الْكٰفِرِیْنَ اِلَّا فِیْ ضَلٰلٍ.
তিনিই সেই সত্তা, যার কাছে দুআ করা সঠিক। তারা তাঁকে ছেড়ে যাদেরকে (অর্থাৎ যেই দেব-দেবীদেরকে) ডাকে তারা তাদের দুআর কোনো জবাব দেয় না। তাদের দৃষ্টান্ত সেই ব্যক্তির মত, যে পানির দিকে দু’হাত বাড়িয়ে আশা করে তা আপনিই তার মুখে পৌঁছে যাবে, অথচ তা কখনো নিজে নিজে তার মুখে পৌঁছাতে পারে না। আর (দেব-দেবীদের কাছে) কাফেরদের দুআ করার ফল এছাড়া আর কিছুই নয় যে, তা শুধু বৃথাই যাবে। -সূরা রাআদ (১৩) : ১৪

এককথায়-
ذٰلِكَ بِاَنَّ اللهَ هُوَ الْحَقُّ وَ اَنَّ مَا یَدْعُوْنَ مِنْ دُوْنِهٖ هُوَ الْبَاطِلُ وَ اَنَّ اللهَ هُوَ الْعَلِیُّ الْكَبِیْرُ.
অর্থাৎ, আল্লাহই সত্য। আর তারা তাঁকে ছেড়ে যেসব জিনিসের ইবাদত করে তা সবই মিথ্যা। আর আল্লাহই সেই সত্তা, যার মহিমা সমুচ্চ, মর্যাদা বিপুল। -সূরা হাজ্জ (২২) : ৬২

মোটকথা, তাওহীদের অনুসারী মুমিনের ঘোষণাই এটা-
এক.
اَغَیْرَ اللهِ اَتَّخِذُ وَلِیًّا فَاطِرِ السَّمٰوٰتِ وَ الْاَرْضِ وَ هُوَ یُطْعِمُ وَ لَا یُطْعَم.
আমি কি আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে অভিভাবকরূপে গ্রহণ করব? যিনি আকাশম-লী ও পৃথিবীর ¯্রষ্টা এবং যিনি (সকলকে) খাদ্য দান করেন, কারো থেকে খাদ্য গ্রহণ করেন না? -সূরা আনআম (৬) : ১৪

দুই.
یٰقَوْمِ اِنِّیْ بَرِیْٓء مِّمَّا تُشْرِكُوْنَ، اِنِّیْ وَجَّهْتُ وَجْهِیَ لِلَّذِیْ فَطَرَ السَّمٰوٰتِ وَ الْاَرْضَ حَنِیْفًا وَّ مَاۤ اَنَا مِنَ الْمُشْرِكِیْنَ.
হে আমার কওম! তোমরা যেসকল জিনিসকে (আল্লাহর সঙ্গে) শরীক কর, তাদের সাথে আমার কোনো সম্পর্ক নেই। আমি সম্পূর্ণ একনিষ্ঠভাবে সেই সত্তার দিকে নিজের মুখ ফেরালাম, যিনি আকাশম-লী ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন এবং আমি শিরককারীদের অন্তর্ভুক্ত নই।-সূরা আনআম (৬) : ৭৮-৭৯

তিন.
اِنَّ صَلَاتِیْ وَ نُسُكِیْ وَ مَحْیَایَ وَ مَمَاتِیْ لِلهِ رَبِّ الْعٰلَمِیْنَ لَا شَرِیْكَ لَهٗ وَ بِذٰلِكَ اُمِرْتُ وَ اَنَا اَوَّلُ الْمُسْلِمِیْن ، ...اَغَیْرَ اللهِ اَبْغِیْ رَبًّا وَّ هُوَ رَبُّ كُلِّ شَیْءٍ وَ لَا تَكْسِبُ كُلُّ نَفْسٍ اِلَّا عَلَیْهَا وَ لَا تَزِرُ وَازِرَةٌ وِّزْرَ اُخْرٰی ثُمَّ اِلٰی رَبِّكُمْ مَّرْجِعُكُمْ فَیُنَبِّئُكُمْ بِمَا كُنْتُمْ فِیْهِ تَخْتَلِفُوْن.
নিশ্চয়ই আমার নামায, আমার ইবাদত ও আমার জীবন-মরণ সবই আল্লাহর জন্য, যিনি জগৎসমূহের প্রতিপালক। তাঁর কোনও শরীক নেই। আমাকে এরই হুকুম দেওয়া হয়েছে। এবং আনুগত্য স্বীকারকারীদের মধ্যে আমিই প্রথম।

আমি কি আল্লাহ ছাড়া অন্য কোনও প্রতিপালক সন্ধান করব, অথচ তিনি প্রতিটি জিনিসের মালিক? প্রত্যেক ব্যক্তি যা-কিছু করে, তার লাভ-ক্ষতি অন্য কারও উপর নয়, স্বয়ং তার উপরই বর্তায় এবং কোনও ভার-বহনকারী অন্য কারও ভার বহন করবে না। পরিশেষে তোমাদের প্রতিপালকের কাছেই তোমাদের সকলকে ফিরে যেতে হবে। তোমরা যেসব বিষয়ে মতভেদ করতে, তখন তিনি সে সম্পর্কে তোমাদের অবহিত করবেন।-সূরা আনআম (৬) : ১৬২-১৬৪
তাওহীদের অনুসারী মুমিন সর্বদা এই প্রার্থনা করেÑ
رَبَّنَا لَا تُزِغْ قُلُوْبَنَا بَعْدَ اِذْ هَدَیْتَنَا وَ هَبْ لَنَا مِنْ لَّدُنْكَ رَحْمَة اِنَّكَ اَنْتَ الْوَهَّاب.
হে আমাদের প্রতিপালক! তুমি আমাদেরকে যখন হেদায়েত দান করেছ তারপর আর আমাদের অন্তরে বক্রতা সৃষ্টি করো না এবং একান্তভাবে নিজের পক্ষ থেকে আমাদেরকে রহমত দান কর। নিশ্চয়ই তুমিই মহা দাতা। -সূরা আলে ইমরান (৩) : ৮
رَبِّ اجْعَلْ هٰذَا الْبَلَدَ اٰمِنًا وَّ اجْنُبْنِیْ وَ بَنِیَّ اَنْ نَّعْبُدَ الْاَصْنَامَ.
হে আমার প্রতিপালক! এ নগরকে শান্তিপূর্ণ বানিয়ে দিন এবং আমাকে ও আমার সন্তানদেরকে প্রতিমা পূজা করা হতে রক্ষা করুন। -সূরা ইবরাহীম (১৪) : ৩৫

ইসলামী আকিদাহ

12 Oct, 15:15


এমনটা করা স্পষ্ট হারাম এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে তা কুফর পর্যন্ত পৌঁছে যায়। ইসলাম তার অনুসারীদের উপর এ ধরনের শৈথিল্যকে হারাম করেছে,
আর দ্বীন-ঈমানের ক্ষেত্রে শৈথিল্যকে হারাম করার একমাত্র অধিকার সত্য ধর্ম ইসলামেরই আছে। সেজন্য যাদেরকে আল্লাহ তাআলা এই দ্বীন গ্রহণের তাওফীক দিয়েছেন তাদের জন্য এটা অকৃতজ্ঞতা ও অবাধ্যতার বিষয় যে, তারা চিন্তা-চেতনা, দৃষ্টিভঙ্গি ও ঈমান-আমলের বিষয়ে শৈথিল্যে লিপ্ত হবে।

আর এটাও বাস্তবতা ও ইসলামী শিক্ষা সম্পর্কে অজ্ঞতা ও উদাসীনতার ফল যে, কেউ কেউ এই নাজায়েয কাজের পক্ষে এই বলে সাফাই দেওয়ার চেষ্টা করছে যে, ‘এটা তো ধর্মীয় বিষয় নয়; বরং সংস্কৃতির বিষয়’ এবং ‘ধর্ম যার যার উৎসব সবার’!!

প্রথমত এই কথাই তো ঠিক নয় যে, সংস্কৃতি দ্বীন, দ্বীনের আকীদা-বিশ্বাস, বিধি-বিধান ও চিন্তা-চেতনা থেকে বিচ্ছিন্ন বিষয়। আর একথাও ঠিক নয় যে, কোনো জাতির ধর্মীয় উৎসব অপরাপর সব জাতির জন্যই উৎসব। এটা না সে জাতির ধর্মে গ্রহণযোগ্য হবে, না অন্যান্য জাতির ধর্মে। এটা তো না জেনে বলা সম্পূর্ণ অবাস্তব কথা।

দ্বিতীয়ত এই কথা মুসলিম উম্মাহর ক্ষেত্রে সঠিক হওয়ার কোনো সুযোগই নেই। কারণ এই উম্মত একমাত্র সত্য ধর্মের অনুসারী, যা পূর্ণাঙ্গ দ্বীন এবং যার রয়েছে নিজস্ব আকীদা-বিশ্বাস ও শরীয়ত এবং স্বতন্ত্র সংস্কৃতি। এ দ্বীনের শরীয়তে পানাহার থেকে নিয়ে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে বৈধ-অবৈধের নিজস্ব বিধি-বিধান রয়েছে।

এটা তো একমাত্র দ্বীন, যার যাবতীয় প্রমাণ ও উৎস হুবহু সংরক্ষিত আছে এবং যার প্রথম যুগের মহামনীষীদের আমল ও কর্মপদ্ধতি সূত্রসহ বিদ্যমান রয়েছে। এই ধর্মে ঈদ ও উৎসবের বিষয়টি অনেক নাযুক। এ ধর্মে কঠিনভাবে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, তার অনুসারীরা যেন নিজেদের সংস্কৃতি সংরক্ষণ করে এবং নিজেদের ঈদ-উৎসবের প্রতি গুরুত্বারোপ করে আর বিধর্মীদের সংস্কৃতি ও উৎসব-পার্বণ থেকে দূরে থাকে।
তৃতীয়ত যে উৎসবের নামই হল ‘দুর্গাপূজা’ সেটা ধর্ম ও বিশ্বাস থেকে বিচ্ছিন্ন নিছক উৎসব হয় কীভাবে?
আর ‘পূজা’-ই যদি তাদের ধর্মের অংশ না হয়, তাহলে তাদের ধর্ম আর কোন্ জিনিসের নাম?!

মুসলিম উম্মাহর প্রত্যেক সদস্যের জানা থাকা উচিত, আমাদের ধর্ম -
১. পূর্ণাঙ্গ।
২. জীবনের প্রতিটি অঙ্গনে তার বিধি-বিধান ও দিকনিদের্শনা বিদ্যমান।
৩. এর দাওয়াত সবার জন্য বিস্তৃত। বংশ, বর্ণ, অঞ্চল ও ভাষা নির্বিশেষে সবধরনের মানুষের জন্য এর দাওয়াত সুবিস্তৃত।

যে-ই তা কবুল করবে, সফলতা লাভ করবে এবং আখেরাতে মুক্তি পাবে। আর কবুল না করলে শুধু ক্ষতি আর ক্ষতি। তবে বিধর্মীদের প্রতি সদ্ভাব বজায় রাখার নির্দেশের কারণে ইসলাম কাউকে (আল্লাহ তাআলার নিকট তা একমাত্র সত্য ধর্ম হওয়া সত্ত্বেও) তা গ্রহণে বাধ্য করে না। অবশ্য তা যে একমাত্র সত্য ধর্ম আর অন্যসব যে বাতিল ও মিথ্যা ধর্ম সে সম্পর্কে ওহীর মাধ্যমে সুস্পষ্ট প্রমাণাদি পেশ করে ‘হুজ্জত তাম’ করে দেওয়া হয়েছে এবং অজুহাত দাঁড় করানোর সকল পথ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

৪. চিরস্থায়ী ও চিরকালীন ধর্ম। এই ধর্ম রহিত হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। এই ধর্মের শরীয়ত ও হেদায়েতগ্রন্থ তো নাযিলই হয়েছে সর্বশেষ নবী ও রাসূল হযরত মুহাম্মাদ মুস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর।

৫. এর যাবতীয় শিক্ষা ও বিধি-বিধান এবং সেগুলোর সকল উৎস ও প্রমাণ হুবহু সংরক্ষিত আছে এবং কিয়ামত পর্যন্ত সংরক্ষিত থাকবে। এই দ্বীনের মাঝে সামান্যতম বিকৃতি বা পরিবর্তন ঘটিয়ে কেউ পার পেয়ে যাবে এবং তা দ্বীন হিসাবে চালিয়ে দেবে- এটা সম্ভবই নয়।

দ্বীন ও শরীয়ত সম্পর্কে অবগত এমন যে কারো জানা আছে, এই দ্বীনের মূল ভিত্তি দুটি জিনিসের উপর-
ক. তাওহীদের আকীদা এবং একমাত্র আল্লাহ তাআলার ইবাদত।
খ. আল্লাহপ্রদত্ত শরীয়তের অনুসরণ এবং তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নত ও উত্তম আদর্শের অনুকরণ।

তাওহীদ তখনই সাব্যস্ত হবে, যখন মানুষ সব ধরনের শিরক থেকে বেঁচে থাকবে। শরীয়তের অনুসরণ তখনই বোঝা যাবে, যখন শরীয়ত পরিপন্থী সবধরনের নিয়ম-নীতি ও আইন-কানুন থেকে বেঁচে থাকবে। আর সুন্নাহর অনুসরণ তখনই সাব্যস্ত হবে, যখন সবধরনের বিদআত ও নতুন-পুরাতন জাহেলী রীতি-নীতি ও সংস্কৃতি থেকে বিরত থাকবে।

আল্লাহ তাআলা যত নবী-রাসূল পাঠিয়েছেন সকলের মৌলিক দাওয়াত এটাই ছিল যে, আল্লাহ তাআলার ইবাদত করা, যিনি এক, যার কোনো শরীক নেই। পাশাপাশি সব ধরনের শিরক থেকে বেঁচে থাকা এবং আল্লাহকে ভয় করা। আর রাসূলের আনুগত্য করা, রাসূলের মাধ্যমে প্রদত্ত শরীয়তকে নিজের উপর অত্যাবশ্যকীয় মেনে নেয়া এবং তাঁর উত্তম আদর্শের অনুসরণ করা।

সর্বশেষ নবী ও রাসূল হযরত মুহাম্মাদ মুস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর আল্লাহ তাআলা সর্বশেষ হেদায়েতগ্রন্থ কুরআন মাজীদ নাযিল করেছেন, তাঁকে সর্বশেষ শরীয়ত দান করেছেন এবং তাঁর উম্মতকে সর্বশেষ উম্মত বানিয়েছেন। আর ঘোষণা করেছেন, দ্বীনে তাওহীদ (যা চিরকালীন দ্বীন) আর শরীয়তে মুহাম্মাদী (যা কুরআন নাযিলের সময় থেকে নিয়ে কিয়ামত পর্যন্ত পুরো মানবজাতির জন্য একমাত্র শরীয়ত ও জীবনবিধান) হল এখন মুক্তি ও সফলতার

ইসলামী আকিদাহ

12 Oct, 15:15


সূরা ইউনুসের শেষে বর্ণিত হয়েছে-
قُلْ یٰۤاَیُّهَا النَّاسُ اِنْ كُنْتُمْ فِیْ شَكٍّ مِّنْ دِیْنِیْ فَلَاۤ اَعْبُدُ الَّذِیْنَ تَعْبُدُوْنَ مِنْ دُوْنِ اللهِ وَ لٰكِنْ اَعْبُدُ اللهَ الَّذِیْ یَتَوَفّٰىكُمْ، وَ اُمِرْتُ اَنْ اَكُوْنَ مِنَ الْمُؤْمِنِیْنَ، وَ اَنْ اَقِمْ وَجْهَكَ لِلدِّیْنِ حَنِیْفًا، وَ لَا تَكُوْنَنَّ مِنَ الْمُشْرِكِیْنَ، وَ لَا تَدْعُ مِنْ دُوْنِ اللهِ مَا لَا یَنْفَعُكَ وَ لَا یَضُرُّكَ، فَاِنْ فَعَلْتَ فَاِنَّكَ اِذًا مِّنَ الظّٰلِمِیْنَ، وَ اِنْ یَّمْسَسْكَ اللهُ بِضُرٍّ فَلَا كَاشِفَ لَهٗۤ اِلَّا هُوَ، وَ اِنْ یُّرِدْكَ بِخَیْرٍ فَلَا رَآدَّ لِفَضْلِهٖ، یُصِیْبُ بِهٖ مَنْ یَّشَآءُ مِنْ عِبَادِهٖ، وَ هُوَ الْغَفُوْرُ الرَّحِیْمُ، قُلْ یٰۤاَیُّهَا النَّاسُ قَدْ جَآءَكُمُ الْحَقُّ مِنْ رَّبِّكُمْ، فَمَنِ اهْتَدٰی فَاِنَّمَا یَهْتَدِیْ لِنَفْسِهٖ، وَ مَنْ ضَلَّ فَاِنَّمَا یَضِلُّ عَلَیْهَا، وَ مَاۤ اَنَا عَلَیْكُمْ بِوَكِیْلٍ.

(হে নবী) তাদেরকে বল, হে মানুষ! তোমরা যদি আমার দ্বীন সম্পর্কে কোনও সন্দেহে থাক, তবে (শুনে রাখ) তোমরা আল্লাহ ছাড়া যাদের ইবাদত কর আমি তাদের ইবাদত করি না; বরং আমি সেই আল্লাহর ইবাদত করি, যিনি তোমাদের প্রাণ সংহার করেন। আর আমাকে হুকুম দেওয়া হয়েছে, আমি যেন মুমিনদের অন্তর্ভুক্ত থাকি। এবং (আমাকে) এই (বলা হয়েছে) যে, তুমি একনিষ্ঠভাবে নিজ চেহারাকে এই দ্বীনের দিকেই কায়েম রাখবে এবং কিছুতেই নিজেকে সেইসকল লোকের অন্তর্ভুক্ত করবে না, যারা আল্লাহর সঙ্গে কাউকে শরীক মানে। আল্লাহকে ছেড়ে এমন কাউকে (অর্থাৎ মনগড়া মাবুদকে) ডাকবে না, যা তোমার কোনও উপকারও করতে পারে না এবং ক্ষতিও করতে পারে না। তারপরও যদি তুমি এরূপ কর (যদিও তোমার পক্ষে তা করা অসম্ভব), তবে তুমি জালেমদের মধ্যে গণ্য হবে। আল্লাহ যদি তোমাকে কোনও কষ্ট দান করেন, তবে তিনি ছাড়া এমন কেউ নেই, যে তা দূর করবে এবং তিনি যদি তোমার কোনও মঙ্গল করার ইচ্ছা করেন, তবে এমন কেউ নেই, যে তার অনুগ্রহ রদ করবে। তিনি নিজ বান্দাদের মধ্যে যাকে ইচ্ছা অনুগ্রহ দান করেন। তিনি অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। (হে নবী!) বলে দাও, হে লোকসকল! তোমাদের কাছে তোমাদের প্রতিপালকের পক্ষ থেকে সত্য এসে গেছে। সুতরাং যে ব্যক্তি হেদায়েতের পথ অবলম্বন করবে, সে তা অবলম্বন করবে নিজেরই মঙ্গলের জন্য আর যে ব্যক্তি পথভ্রষ্টতা অবলম্বন করবে, তার পথভ্রষ্টতার ক্ষতি তার নিজেরই ভোগ করতে হবে। আমি তোমাদের কার্যাবলীর যিম্মাদার নই। -সূরা ইউনুস (১০) : ১০৪-১০৮

কুরআনে কারীম ও হাদীস শরীফে এই বাস্তবতা দিবালোকের ন্যায় স্পষ্ট যে, আসল দ্বীন হল তাওহীদের দ্বীন। প্রথমে সব মানুষ এই দ্বীনের অনুসারীই ছিল। সবাই দ্বীনে তাওহীদের উম্মত ছিল। পরবর্তীতে শয়তানের প্ররোচনায় মানুষ শিরকে লিপ্ত হয়ে পড়ে। তাই আল্লাহ তাআলা নবী-রাসূলগণকে আদেশ করেন, তাঁরা যেন মানুষকে শিরক ছেড়ে তাওহীদের দিকে ফিরে আসার দাওয়াত দেন। এজন্য প্রাচীন দ্বীন হল তাওহীদের দ্বীন। আর প্রাচীন উম্মত হল তাওহীদের উম্মত । দেখুন, সূরা আম্বিয়া (২১) : ৯২, সূরা মুমিনূন (২৩) : ৫২, সূরা ইউনুস (১০) : ১৯।

আর প্রসিদ্ধ হাদীসে কুদসীতে আছে-
وَإِنِّي خَلَقْتُ عِبَادِي حُنَفَاءَ كُلّهُمْ، وَإِنّهُمْ أَتَتْهُمُ الشّيَاطِينُ فَاجْتَالَتْهُمْ عَنْ دِينِهِمْ، وَحَرّمَتْ عَلَيْهِمْ مَا أَحْلَلْتُ لَهُمْ، وَأَمَرَتْهُمْ أَنْ يُشْرِكُوا بِي مَا لَمْ أُنْزِلْ بِهِ سُلْطَانًا.
আমি আমার সকল বান্দাকে সৃষ্টি করেছি দ্বীনে হানীফের (তাওহীদের) উপর। শয়তান এসে তাদেরকে তাদের দ্বীন থেকে সরিয়ে দিয়েছে। আর তাদের জন্য আমি যা হালাল করেছি সে তা হারাম করেছে এবং তাদেরকে আমার সঙ্গে এমন সব জিনিস শরীক করার আদেশ করেছে, যার স্বপক্ষে আমি কোনো প্রমাণ অবতীর্ণ করিনি। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ২৮৬৫
আরব মুশরিক হোক বা অনারব, অতীতের মুশরিক হোক বা বর্তমানের- সবার সব ধরনের শিরকী ধ্যান-ধারণার ব্যাপারে তাওহীদের অনুসারী একজন মুমিনের বক্তব্য সেটাই, যা কুরআন মাজীদে হযরত

ইউসুফ আলাইহিস সালামের যবানীতে বিবৃত হয়েছে-
اِنِّیْ تَرَكْتُ مِلَّةَ قَوْمٍ لَّا یُؤْمِنُوْنَ بِاللهِ وَ هُمْ بِالْاٰخِرَةِ هُمْ كٰفِرُوْنَ، وَ اتَّبَعْتُ مِلَّةَ اٰبَآءِیْۤ اِبْرٰهِیْمَ وَ اِسْحٰقَ وَ یَعْقُوْبَ مَا كَانَ لَنَاۤ اَنْ نُّشْرِكَ بِاللهِ مِنْ شَیْء ذٰلِكَ مِنْ فَضْلِ اللهِ عَلَیْنَا وَ عَلَی النَّاسِ وَ لٰكِنَّ اَكْثَرَ النَّاسِ لَا یَشْكُرُوْنَ، یٰصَاحِبَیِ السِّجْنِ ءَاَرْبَابٌ مُّتَفَرِّقُوْنَ خَیْرٌ اَمِ اللهُ الْوَاحِدُ الْقَهَّارُ، ماَ تَعْبُدُوْنَ مِنْ دُوْنِهٖۤ اِلَّاۤ اَسْمَآءً سَمَّیْتُمُوْهَاۤ اَنْتُمْ وَ اٰبَآؤُكُمْ مَّاۤ اَنْزَلَ اللهُ بِهَا مِنْ سُلْطٰنٍ اِنِ الْحُكْمُ اِلَّا لِله اَمَرَ اَلَّا تَعْبُدُوْۤا اِلَّاۤ اِیَّاه ذٰلِكَ الدِّیْنُ الْقَیِّمُ وَ لٰكِنَّ اَكْثَرَ النَّاسِ لَا یَعْلَمُوْن.

ইসলামী আকিদাহ

12 Oct, 15:15


যারা আল্লাহর প্রতি ঈমান রাখে না ও যারা আখেরাতে অবিশ্বাসী, আমি তাদের দ্বীন পরিত্যাগ করেছি। আমি আমার বাপ-দাদা ইবরাহীম, ইসহাক ও ইয়াকুবের দ্বীন অনুসরণ করেছি। আমাদের এ অধিকার নেই যে, আল্লাহর সঙ্গে কোনও জিনিসকে শরীক করব। এটা (অর্থাৎ তাওহীদের আকীদা) আমাদের প্রতি ও সমস্ত মানুষের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহেরই অংশ। কিন্তু অধিকাংশ লোক (এ নিআমতের) শোকর আদায় করে না। হে আমার কারা-সংগীদ্বয়! ভিন্ন-ভিন্ন বহু প্রতিপালক শ্রেয়, না সেই এক আল্লাহ, যাঁর ক্ষমতা সর্বব্যাপী? তাঁকে ছেড়ে তোমরা কেবল কতগুলো নামেরই ইবাদত করছ, যে নামগুলো তোমরা ও তোমাদের পিতৃপুরুষরা রেখেছে। আল্লাহ তার পক্ষে কোনও দলীল নাযিল করেননি। হুকুম দানের ক্ষমতা আল্লাহ ছাড়া অন্য কারও নেই। তিনিই এ হুকুম দিয়েছেন যে, তোমরা তাঁর ভিন্ন অন্য কারও ইবাদত করো না। এটাই সরল-সোজা পথ। কিন্তু অধিকাংশ লোক জানে না। -সূরা ইউসুফ (১২) : ৩৭-৪০
মুশরিকদের সকল কাল্পনিক মাবুদের ব্যাপারে

তাওহীদে বিশ্বাসী একজন মুমিন কুরআনের ভাষায় বলে-
اِنْ هِیَ اِلَّاۤ اَسْمَآءٌ سَمَّیْتُمُوْهَاۤ اَنْتُمْ وَ اٰبَآؤُكُمْ مَّاۤ اَنْزَلَ اللهُ بِهَا مِنْ سُلْطٰنٍ اِنْ یَّتَّبِعُوْنَ اِلَّا الظَّنَّ وَ مَا تَهْوَی الْاَنْفُسُ وَ لَقَدْ جَآءَهُمْ مِّنْ رَّبِّهِمُ الْهُدٰی.
(এদের স্বরূপ এর বেশি কিছু নয় যে,) এগুলি কতক নাম মাত্র, যা তোমরা এবং তোমাদের বাপ-দাদাগণ রেখেছ। আল্লাহ এর স্বপক্ষে কোনো প্রমাণ নাযিল করেননি। প্রকৃতপক্ষে তারা (অর্থাৎ কাফেরগণ) কেবল ধারণা এবং মনের খেয়াল-খুশীর অনুসরণ করে। অথচ তাদের প্রতিপালকের পক্ষ হতে তাদের কাছে এসে গেছে পথনির্দেশ। -সূরা নাজ্ম (৫৩) : ২৩
মুশরিকদের খুব ভালোভাবে বোঝা উচিত,
তাদের কাল্পনিক উপাস্যদের কাছে কিছুই নেই যে,
দুনিয়া-আখেরাতে তারা তাদের কোনো সাহায্য করবে।

ইরশাদ হয়েছে-
قُلِ ادْعُوا الَّذِیْنَ زَعَمْتُمْ مِّنْ دُوْنِ الله لَا یَمْلِكُوْنَ مِثْقَالَ ذَرَّةٍ فِی السَّمٰوٰتِ وَ لَا فِی الْاَرْضِ وَ مَا لَهُمْ فِیْهِمَا مِنْ شِرْكٍ وَّ مَا لَهٗ مِنْهُمْ مِّنْ ظَهِیْر.
(হে রাসূল! ওই কাফেরদেরকে) বলে দাও, তোমরা যাদেরকে আল্লাহর পরিবর্তে উপাস্য মনে করতে তাদেরকে ডাক। আকাশম-লী ও পৃথিবীতে তারা অণু পরিমাণ কিছুরও মালিক নয় এবং আকাশম-লী ও পৃথিবীতে (কোনও বিষয়ে আল্লাহর সাথে) তাদের কোনো অংশীদারিত্ব নেই এবং তাদের মধ্যে কেউ তাঁর সাহায্যকারীও নয়। -সূরা সাবা (৩৪) : ২২

অন্যত্র আল্লাহ তাআলার কুদরত ও নিআমতরাজির আলোচনা প্রসঙ্গে বলা হয়েছে-
ذٰلِكُمُ اللهُ رَبُّكُمْ لَهُ الْمُلْكُ وَ الَّذِیْنَ تَدْعُوْنَ مِنْ دُوْنِهٖ مَا یَمْلِكُوْنَ مِنْ قِطْمِیْرٍؕ، اِنْ تَدْعُوْهُمْ لَا یَسْمَعُوْا دُعَآءَكُمْ وَ لَوْ سَمِعُوْا مَا اسْتَجَابُوْا لَكُمْ وَ یَوْمَ الْقِیٰمَةِ یَكْفُرُوْنَ بِشِرْكِكُمْ وَ لَا یُنَبِّئُكَ مِثْلُ خَبِیْرٍ.
তিনি আল্লাহ- তোমাদের প্রতিপালক। সকল রাজত্ব তাঁরই। তাঁকে ছেড়ে যাদেরকে (অর্থাৎ যেসব অলীক প্রভুকে) তোমরা ডাক, তারা খেজুর বীচির আবরণের সমানও কিছুর অধিকার রাখে না। তোমরা তাদেরকে ডাকলে তারা তেমাদের ডাক শুনবেই না আর শুনলেও তোমাদেরকে কোনো সাড়া দিতে পারবে না। কিয়ামতের দিন তারা নিজেরাই তোমাদের শিরককে অস্বীকার করবে। যাবতীয় বিষয় সম্পর্কে অবগত সত্তার মত সঠিক সংবাদ তোমাকে আর কেউ দিতে পারবে না। -সূরা ফাতির (৩৫) : ১৩-১৪

এজন্য রিযিকের প্রার্থনা হোক বা নিরাপত্তার, রহমতের প্রার্থনা হোক বা যুলুম থেকে নিষ্কৃতিরÑ সর্বাবস্থায় সেই একমাত্র মাবুদের নিকটই ফিরে আসতে হবে এবং তাঁর কাছেই সকল আশা-প্রত্যাশা নিবেদন করতে হবে। শান্তি ও নিরাপত্তার একমাত্র মালিক তো তিনিই। এজন্য শুধু তাঁরই ইবাদত করতে হবে। ইরশাদ হয়েছে-
فَلْیَعْبُدُوْا رَبَّ هٰذَا الْبَیْتِ الَّذِیْۤ اَطْعَمَهُمْ مِّنْ جُوْعٍ، وَّ اٰمَنَهُمْ مِّنْ خَوْفٍ.

তারা যেন এই ঘরের মালিকের ইবাদত করে, যিনি তাদেরকে ক্ষুধার্ত অবস্থায় খাদ্য দান করেছেন এবং ভয়-ভীতি থেকে তাদেরকে নিরাপদ রেখেছেন। -সূরা কুরাইশ (১০৬) : ৩-৪)

তাছাড়া শিরকের মাধ্যমে কীভাবে যুলুম-ফাসাদ দূর হয়ে শান্তি ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠিত হবে? শিরক তো নিজেই অনেক বড় যুলুম-
اِنَّ الشِّرْكَ لَظُلْمٌ عَظِیْمٌ.
নিশ্চয়ই শিরক চরম যুলুম। -সূরা লুকমান (৩১) : ১৩
শান্তি ও নিরাপত্তা তো সেই যুলুম থেকে বেঁচে থাকার মধ্যেই। আপন যুগের তাওহীদী মিল্লাতের ইমাম

আল্লাহর রাসূল হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালামের বক্তব্য কুরআন মাজীদে বিবৃত হয়েছে-
وَ كَیْفَ اَخَافُ مَاۤ اَشْرَكْتُمْ وَ لَا تَخَافُوْنَ اَنَّكُمْ اَشْرَكْتُمْ بِاللهِ مَا لَمْ یُنَزِّلْ بِهٖ عَلَیْكُمْ سُلْطٰنًا فَاَیُّ الْفَرِیْقَیْنِ اَحَقُّ بِالْاَمْنِ اِنْ كُنْتُمْ تَعْلَمُوْنَۘ اَلَّذِیْنَ اٰمَنُوْا وَ لَمْ یَلْبِسُوْۤا اِیْمَانَهُمْ بِظُلْمٍ اُولٰٓىِٕكَ لَهُمُ الْاَمْنُ وَ هُمْ مُّهْتَدُوْنَ۠.

ইসলামী আকিদাহ

12 Oct, 15:15


সবরের_সাথে_পড়ি!

উদারতা অর্থ আকীদা ও আদর্শের বিসর্জন নয়।
মাওলানা মুহাম্মাদ আব্দুল মালেক (দা:বা)

এক হল মুদারাত তথা উদারতা, যার অর্থ হল, নিজের প্রতিপক্ষের সঙ্গে উত্তম আচরণ ও কোমল ব্যবহার করা এবং তার কোনো হক নষ্ট না করা; বরং তার সবধরনের হক ও অধিকার যথাযথভাবে আদায় করা। উদারতা ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা এবং অনেক বড় ঈমানী বৈশিষ্ট্য।

আরেক হল মুদাহানাত তথা শৈথিল্য প্রদর্শন। অর্থাৎ আকীদা-বিশ্বাস ও আদর্শিক বিষয়গুলোকে হালকা মনে করা। অন্যদের খুশি করতে গিয়ে তাদের ত্রুটি-বিচ্যুতি, ভ্রান্তি ও গোমরাহীগুলোকে সঠিক বা গ্রহণযোগ্য বলা। ইসলামের দৃষ্টিতে এটা নিষিদ্ধ এবং এটা মুনাফেকির অনেক ভয়াবহ প্রকার।

ইসলামী শিক্ষার অভাবে এবং অনেক সময় ঈমানী দুর্বলতার কারণে আজকাল অনেকেই উদারতার নামে শৈথিল্যে লিপ্ত হচ্ছেন। এজন্য জরুরি হল, এই দুইয়ের সঠিক পরিচয় ও বাস্তবতা ব্যাপকভাবে চর্চা করা ।

ইসলাম তার অনুসারীদের নির্দেশ দেয়, তারা যেন সত্যের উপর অবিচল থাকে এবং সত্যকে সত্য আর মিথ্যাকে মিথ্যা বলে অভিহিত করে। পাশাপাশি এই আদেশও করে, তারা যেন প্রতিপক্ষের সঙ্গে উত্তম ও কোমল আচরণ করে; এমনকি ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহর সবচেয়ে বড় বিরোধী বরং শত্রু অমুসলিমদের প্রতিও যেন তারা কোমল ও সৌহার্দপূর্ণ আচরণ করে এবং তাদের যাবতীয় হক ও অধিকার আদায় নিশ্চিত করে।

খুলাফায়ে রাশেদীন, ন্যায়পরায়ণ খলীফা ও বাদশাগণ এবং প্রত্যেক যুগের দ্বীনদার রাষ্ট্রপ্রধানগণ অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে ইসলামের এই হুকুম পালন করেছেন। কোনো কোনো ইতিহাসবিদ অমুসলিমদের সঙ্গে মুসলমানদের ধর্মীয় সৌহার্দপূর্ণ ও উদার আচরণের নির্বাচিত কিছু ঘটনা সংকলন করেছেন; আর তাতেই বড় বড় কয়েক খণ্ডের কিতাব তৈরি হয়ে গেছে।

এই উদারতার বাস্তবতা হল, সকল অমুসলিম আল্লাহ তাআলার বিদ্রোহী হওয়া সত্ত্বেও শুধু আল্লাহর সৃষ্টি মানুষ হওয়ার কারণে আল্লাহ তাআলা তাদের জন্য যেসব হক নির্ধারণ করে দিয়েছেন সেসব হকের প্রতি যথাযথ লক্ষ্য রাখা। এদিকে মুসলমানগণ আল্লাহর ওয়াফাদার বান্দা হওয়ার কারণে তারা এ বিষয়ের আরো বেশি উপযুক্ত যে, তারা পক্ষের-বিপক্ষের সবার সঙ্গে ইনসাফপূর্ণ, উত্তম ও সুন্দর আচরণ করবে। এর একটি বড় হেকমত এটাও যে, উত্তম আচরণের ফলে হতে পারে তাদের অন্তরে সত্য ধর্মের প্রতি ভালবাসা সৃষ্টি হবে। অতপর তা তাদের হেদায়েত ও নাজাতের মাধ্যম হয়ে যাবে। এজন্য সৌহার্দপূর্ণ উদার আচরণ মূলত দ্বীনের প্রতি নীরব দাওয়াত। ইতিহাস সাক্ষী, ইসলামের প্রচার-প্রসার ও ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা আসলে ইনসাফ ও উত্তম আচরণেরই ফল।

আমাদের পূর্বসূরীদের মাঝে উদারতা তো পূর্ণ মাত্রায় ছিল; কিন্তু শৈথিল্য তাঁদের মধ্যে একদম ছিল না। ঈমান-আকীদার বিষয়ে তাঁরা অত্যন্ত মজবুত ছিলেন। চিন্তা-চেতনা ও আদর্শ-ঐতিহ্যের ক্ষেত্রে তাঁরা পাহাড়ের মতো অটল-অবিচল ছিলেন। শুধু শিরক নয়; বরং শিরকের সামান্য মিশ্রণ বা সন্দেহ আছে এমন সব বিষয় থেকে তাঁরা অত্যন্ত সতর্কতার সাথে বেঁচে থাকতেন। বিধর্মীদের বেশ-ভূষা, চাল-চলন এবং তাদের উৎসব-পার্বণ থেকে অনেক দূরে থাকতেন।

কারণ তাঁরা জানতেন, ইসলাম যেভাবে বিরোধীদের সঙ্গে উত্তম আচরণ ও সদ্ভাব বজায় রাখাকে ফরয করেছে, তার চেয়ে আরো গুরুত্বের সঙ্গে ফরয করেছে ঈমান-ইসলাম, আকীদা-বিশ্বাস ও আদর্শ-ঐতিহ্য হেফাযত করাকে। যেভাবে উদারতার ইসলামী বিধান উপেক্ষা করে কোনো অমুসলিমের উপর যুলুম করাকে ইসলাম হারাম করেছে, তার চেয়ে আরো গুরুত্বের সঙ্গে হারাম করেছে সত্য ও বাস্তবতার উপর যুলুম করাকে ।

এজন্য আমাদের অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে বুঝতে হবে, মন্দ পরিবেশ বা ভুল প্রচারণায় প্রভাবিত হয়ে ঈমান-ইসলামের মৌলিক দাবিগুলো খুইয়ে বসা, আকীদা-বিশ্বাস ও আদর্শ-ঐতিহ্যকে বিসর্জন দেয়া এবং সত্যকে সত্য ও মিথ্যাকে মিথ্যা না বলা এগুলো কখনো উদারতা নয়। এগুলো তো পরিষ্কার শৈথিল্য, যা একেবারে হারাম। আর সত্য কথা হল, ইসলামের দৃষ্টিতে এটা মুনাফেকির একটা শাখা।

যেমনটি আগে বলা হয়েছে, মুসলিম দেশে অমুসলিম নাগরিকদের মানুষ হিসাবে প্রাপ্য সব ধরনের অধিকার সুসংরক্ষিত। নিজ নিজ ধর্ম পালন করা এবং আপন আপন গণ্ডিতে শান্তিপূর্ণভাবে নিজ নিজ ধর্মীয় উৎসব পালন করার পূর্ণ অধিকার তাদের রয়েছে। রাষ্ট্রের দায়িত্ব হল, সে নিজে তাতে বাধা দেবে না এবং অন্য কাউকে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির সুযোগ দেবে না। কিন্তু তার অর্থ কখনো এই নয় যে, তাদের ধর্মীয় আচার ও অনুষঙ্গগুলো (যেগুলোর ভিত্তি স্পষ্টত তাদের ধর্মীয় ধ্যান-ধারণা ও বিশ্বাসের উপর) কোনো মুসলমান পালন করা শুরু করবে অথবা আগে বেড়ে তাদের ধর্মীয় আচারানুষ্ঠানে যোগ দিয়ে কিংবা তাদের ধর্মীয় নিদর্শনগুলো নিজের মধ্যে ধারণ করে তাদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করবে।

ইসলামী আকিদাহ

11 Oct, 13:36


প্রিয় দেশবাসী!
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ।

মাননীয় ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ সাহেবের একটি বক্তব্য আব্বাসী সাইবার টিম আমাকে দেখিয়েছে। যে বক্তব্যটি শুনে রীতিমতো আমি আতঙ্কিত, মর্মাহত এবং অনেকটাই বাকরুদ্ধ। সেজন্যই তার বক্তব্যের প্রতিবাদ, বক্তব্যের মাধ্যমে না করে লেখনীর মাধ্যমে করছি। আর আমি এটা ওয়ার্নিং হিসাবেই প্রতিবাদ করছি যেন তিনি সংযত হন এবং ভুল বক্তব্যের কারণে অনুতপ্ত হন।

শুরুতেই বলে নেই, ড. আ ফ ম খালিদ সম্পর্কে আমার তেমন কোনো ধারণা নেই। শুনেছি তিনি একজন স্কলার, প্রফেসর। এবং উনার বেসিক হচ্ছে মাদ্রাসার শিক্ষা। চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্টেজের বিভিন্ন প্রোগ্রামে আমার সাথে তার নাম থাকতো। তবে দেখা যেতো আমি স্টেজে ওঠার আগেই উনার বয়ান শেষ করে চলে যেতেন। হতে পারে সেটা ব্যস্ততার কারণে। তিনি বর্তমানে ধর্ম উপদেষ্টার দায়িত্ব পেয়েছেন।

গতকাল তিনি সিদ্ধেশ্বরী মন্দিরে গিয়েছিলেন। সেখানে কি বক্তব্য দিয়েছে সেটা আমি অবগত না। তবে আজকে গুলশান বনানীতে সার্বজনীন পূজা ফাউন্ডেশন কর্তৃক আয়োজিত পূজা মণ্ডপে উপস্থিত হয়ে দীর্ঘক্ষণ খিস্তিখেউড় করেছেন, বিভিন্ন পলিটিক্যাল বক্তব্য দিয়েছেন, আমার সেগুলো নিয়ে তেমন কোনো মন্তব্য নেই। কিন্তু তার কয়েকটি কথা আমাকে মর্মাহত করেছে এবং আমার হৃদয়ে গভীর ক্ষত সৃষ্টি করেছে। যেখানে বর্তমানে interim government এর বলা যায় সকল সদস্যই দ্বীন সম্পর্কে অজ্ঞ, সেখানে ধর্ম উপদেষ্টার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে একজন আলেম ও ইসলামিক স্কলারকে; জাতি অনেকটা আশান্বিত হয়েছিল। কিন্তু তার বক্তব্যে তিনি হিন্দু প্রীতি ও পৌত্তলিকতার মতো জগন্যতম শিরকি কাজের প্রতি যে পরিমাণ শিথিলতা প্রদর্শন করেছেন তা আমাকে হতবাক করেছে। তার কিছু কথা মোটেও মেনে নেওয়া যায় না।

(১) হিন্দুদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেছেন, আমরা একই পরিবারের সন্তান।

কোরআন সুন্নাহ, আকাঈদ ও দ্বীনের ন্যূনতম জ্ঞান যার আছে; এমনকি সাধারণ কোন মুসলিমের পক্ষে আদৌ এ কথাটি বলা সম্ভব?
হ্যাঁ, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি দেখানোর জন্য এটা বলতে পারতো যে, আমরা একই দেশের নাগরিক। একই পরিবারের সন্তান বলা যাবে না। কারণ, কুরআনুল কারীমে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন,
সূরা তাওবা ২৮ নং আয়াত,
انما المشركون نجس
শিরকের গুনাহের কারণে তাদেরকে আল্লাহ তায়ালা নাজাস (নাপাক) বলেছেন ‌। যেকোনো কাফের মুশরিক মুসলিম সদস্য হতে পারে না ।

(২) তারপরে তিনি আরও একটি জঘন্য কথা বলেছেন যে, আমাদের দুর্গাপূজা। তিনি বলতে পারতেন হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজা। এই জঘন্যতম শিরকি কাজটিকে তিনি শীতলতার সাথে উল্লেখ করলেন কেন? এটার ব্যাখ্যা তাকে জাতির উদ্দেশ্যে দিতে হবে।

(৩) তৃতীয় যে বিষয়টি, হিন্দু সম্প্রদায় তার গলায় ধর্মীয় নিদর্শন একটি সম্মাননা কাপড় (উথুলি) পড়িয়েছে এবং সেই কাপড়টি পরে তিনি অত্যন্ত আনন্দ প্রকাশ করেছেন। এবং এই পরিধান করাটাকে তিনি কোন দোষনীয় মনে করেন নি বরং বৈধতা দিয়েছে। এখন তো ড. আ ফ ম খালিদ এর ঈমান নিয়েই আমার প্রশ্ন চলে আসে।

ড. আ ফ ম খালিদ বা তার অনুসারীদের উদ্দেশ্যে আকাঈদের গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় উল্লেখ করছিঃ-
আকাঈদের গুরুত্বপূর্ণ দুইটি পরিভাষা হলো:
(১) শেয়ারে মিল্লাত
(২) শেয়ারে ক্বওম
শেয়ারে মিল্লাত; অর্থাৎ, ইসলাম ব্যতীত অন্য যেকোনো ধর্মের ধর্মীয় কোন অনুষঙ্গ কিংবা নিদর্শনকে গ্রহণ করা, স্বীকৃতি দেওয়া , সমর্থন করাও সুস্পষ্ট কুফর।

আরেকটি হচ্ছে শেয়ারে কওম। তা হলো, কোনো জাতির সাংস্কৃতিক অনুষঙ্গ। সেটাও গ্রহণ করার কোনো সুযোগ নাই। কারণ আবু দাঊদ শরীফের সহিহ হাদিসে এসেছে,
من تشبه بقوم فهو منهم
কোনো ব্যক্তি যে জাতির অনুসরণ করল বা সাদৃশ্যতা অবলম্বন করল, সে ব্যক্তি সে জাতির অন্তর্ভুক্ত বলে গণ্য হবে।
এর থেকে সুস্পষ্ট যে, শেয়ারে কওম; অন্য ধর্মের সাংস্কৃতিক কোন বিষয়ও মুসলমানদের গ্রহণ করা বৈধ বা জায়েজ নয়।

একটি উদাহরণ দিচ্ছি খ্রিস্টানদের ক্রুশ; এটা শেয়ারে মিল্লাত। সেজন্যই কোন অখ্রিস্টান যদি খ্রিস্টান হয়, ক্রুশকে সিজদা করলে বা গলায় ধারণ করলেই তাকে খ্রিস্টান হিসেবে মেনে নেওয়া হয়। অপরদিকে, খ্রিস্টানদের শেয়ারে কওমের অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে যেকোনো ধর্মীয় অনুষ্ঠানে কেক কেটে মোমবাতি জ্বালিয়ে হাত তালির মাধ্যমে উৎসব করা। এটা করার দ্বারা মানুষের ঈমান নষ্ট হয় না, গুনাহ হয়।

এখন ড. আ ফ ম খালিদ সাহেব যে, হিন্দু সম্প্রদায়ের উথুলি পড়লেন; এটা শেয়ারে কওমের অন্তর্ভুক্ত নাকি শেয়ারে মিল্লাতের অন্তর্ভুক্ত ?
যদি তর্কের খাতিরে মেনে নেই এটি শেয়ারে কওমের অন্তর্ভুক্ত তবুও তো তার এ কাজটি জায়েজ হয়নি। যদিও সকল দিক বিবেচনা করলে বুঝা যায়, এটা শেয়ারে মিল্লাতের অন্তর্ভুক্ত। কারণ উথুলীতে দূর্গার ছবি ছিল। আর উথুলীতে দূর্গার ছবি সংযোজন করে গলায় পরিধান করা সম্মানের সাথে সম্পর্ক রাখে। পৌত্তলিক বা হিন্দুরা কল্পিত মূর্তি তৈরি করে, সেগুলোকেই সেজদা করে; এটা যেমন শিরক, ঠিক তেমনি কল্পিত দেবদেবীর চিত্র অঙ্কন করে তারা সম্মান প্রদর্শন

ইসলামী আকিদাহ

11 Oct, 13:36


করে, এটাও শির্ক। এবং তারই অংশ হিসেবে উথুলীতে তারা দুর্গার ছবি সংযোজন করেছে। সেটা হিন্দুদের ধর্মীয় অনুষঙ্গের সাথে সম্পর্ক রাখে।

অতএব উথুলীকে সাদরে গ্রহণ করে, তার পক্ষে সাফাই গাওয়ার পরে ড. আ ফ ম খালিদ বড় ধরনের অন্যায় ও গর্হিত অপরাধ করেছে।
আমরা তাকে বলবো, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠার নামে, এভাবে নিজের আকিদা থেকে সরে যাওয়াটা খুবই দুর্ভাগ্যের বিষয়। যে কাজগুলো হয়ে গেছে; তার কাছে অনুরোধ করব আল্লাহ তায়ালার কাছে তওবায়ে নাসুহা করুন এবং প্রকাশ্যে জাতির কাছে ক্ষমা চান এবং পাশাপাশি এসকল বিষয়ে যেন আগামীতে সংযত হন।

আরেকটি কথা সুস্পষ্ট ভাষায় বলে দিতে চাই, ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকার সুদীর্ঘ ১৬ বছরে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় সকল প্রকার কাফের-মুশরিক, রাম-বাম, বেইমানদেরকে পৃষ্ঠপোষকতা দিত। হাসিনা ও তার সরকারের প্রতি দেশের মানুষের ক্ষোভের অন্যতম কারণ এটি। পাশাপাশি সে ভারতের সাথে মাত্রাতিরিক্ত প্রীতি ও ভালোবাসার সম্পর্ক স্থাপন করতে চাইতো। এটাও ছিল হাসিনার প্রতি দেশের মানুষের ক্ষোভের আরেকটি কারণ।
ড. আ ফ ম খালিদও যেভাবে ভারত প্রীতির কথা বললেন এবং লজ্জাজনক ভাবে ভারতের সহযোগিতা কামনা করলেন, সেটা আমরা কখনো আশা করিনি। আল্লাহ তাকে হেদায়েত দান করুন।
🖋️ ডঃ এনায়েতুল্লাহ আব্বাসী হাফিঃ

ইসলামী আকিদাহ

11 Oct, 02:59


অমুসলিমদের খাবার বা হাদিয়া গ্রহণ ও প্রদান সম্পর্কে জরুরী মাসআলা

১. সাধারণ অবস্থায় বা বিশেষ কোনো কারণে, যেমন প্রতিবেশী হওয়া, সন্তান জন্ম লাভ করা, পরীক্ষায় পাস করা, ভালো চাকরি পাওয়া, বিবাহ উপলক্ষে এ জাতীয় কারণে অমুসলিমদের পক্ষ থেকে পাঠানো খাবার বা হাদিয়া গ্রহণ করা কিংবা তাদের দাওয়াত গ্রহণ করা জায়েয।

তবে শর্ত হচ্ছে, নিজের দীন-ধর্মের কোন ক্ষতি না হতে হবে এবং তা হারাম ও অপবিত্র বস্তু হতে পারবে না, যেমন তাদের জবাইকৃত পশুর গোশত ও মদ অথবা খাবারে কোন নাপাকি বা মুসলমানদের জন্য হারাম এমন কোন জিনিস মিশ্রিত থাকা।

২. প্রতিবেশী বা আত্মীয়তার কারণে কিংবা ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট করার জন্য অথবা বৈধ কোন প্রয়োজনে অমুসলিমদেরকে হাদিয়া প্রদান বা দাওয়াত দেওয়া জায়েয।

৩. অমুসলিমদের ধর্মীয় অনুষ্ঠান ও উৎসব উপলক্ষে যদি কোন খাবার বা হাদিয়া আসে, আর তা যদি
দেবদেবি বা মুর্তির নামে উৎসর্গ করা হয়, যেমন প্রসাদ বা মিষ্টান্ন কিংবা ফলমুল, এমনকি পানি হোক না কেন, তা হারাম। সেই খাবার খাওয়া বা হাদিয়া গ্রহণ করা বৈধ নয়। এভাবে কোনো মুর্খ মুসলিম যদি তা ওলি-আউলিয়াদের নামে করে, তাও হারাম।

বলাবাহুল্য, উৎসর্গকৃত বস্তু প্রাণী হতে হবে না, বরং যে কোন কিছু হলেই হবে। কাজেই প্রসাদ বা প্রাণী জাতীয় বস্তু হারাম, তবে মিষ্টান্ন বা ফলমূল হারাম নয়- এ ধরনের কথায় বিভ্রান্ত হবেন না।

৪. কারো নামে উৎসর্গকৃত নয় এমন হালাল ও পবিত্র খাবার বা হাদিয়া যদি অমুসলিমদের ধর্মীয় অনুষ্ঠান ও উৎসব উপলক্ষে আসে অথবা বিধর্মী কোন মালিক তার কাছে চাকরিরত মুসলিমদের যদি এই উপলক্ষে কিছু দেয়, তা গ্রহণ করা নিরাপদ নয়। হযরত আলী রাযি. ও ওমর বিন আব্দুল আজিজ রহ. তা গ্রহণ করতেন না। বর্তমানে এর উপরই আমল করা উচিত।

তবে কারো কারো মতে তা গ্রহণ করার সুযোগ আছে। শর্ত হচ্ছে, নিজের দীন-ধর্মের ক্ষতি না হতে হবে এবং প্রায় প্রতি উৎসবে তা হতে পারবে না, বরং প্রয়োজনে বা ঠেকায় পড়ে যদি দুই একবার গ্রহণ করতে হয়, তাহলে বৈধ। যেখানে ফিকহের কিতাবে মুশরিক-
বিধর্মীদের সাথে প্রয়োজনে দুই একবার ছাড়া একসাথে খানা খেতে নিষেধ করা হয়েছে, সেখানে তাদের প্রায় প্রতি উৎসবে তাদের কাছ থেকে কিছু খাওয়া কীভাবে বৈধ হতে পারে? তাছাড়া এটা তো ঈমানী গায়রতেরও প্রশ্ন!

কাজেই তাদের কাছ থেকে প্রায় প্রতি পূজায় নারকেলের নাড়ু আর খইভাজা বা অন্য কিছু খাওয়া জায়েয নয়।

৫. কারো নামে উৎসর্গকৃত নয় এমন হালাল ও পবিত্র খাবার বা হাদিয়া যদি অমুসলিমদের ধর্মীয় অনুষ্ঠান ও উৎসব উপলক্ষে তারা এটা মনে করে দেয় যে, পরস্পরে আনন্দ ভাগাভাগি করা বা মুসলমানরাও আমাদের এই উৎসবে অংশীদার অথবা এটা তাদের উপর আমাদের অনুগ্রহ, তখন উক্ত খাবার বা হাদিয়া গ্রহণ করা নাজায়েয।

৬. কোন মুসলিমের জন্য অমুসলিমদের ধর্মীয় অনুষ্ঠান ও উৎসব উপলক্ষে তাদেরকে কিছু দেয়া হারাম। সুতরাং পূজার জন্য টাকা বা অন্য কিছু দেওয়া জায়েয নয়।

৭. অমুসলিমদের ধর্মীয় অনুষ্ঠান ও উৎসব উপলক্ষে তাদের মতো উক্ত অনুষ্ঠান ও উৎসবকে সম্মান মনে করে তাদেরকে কিছু দেয়া কুফরী। ইমাম আবু হাফস কাবীর রাহ. বলেন, কেউ যদি ৫০ বছর ইবাদত করেছে, এরপর কোন মুশরিককে তার উৎসবের দিনকে সম্মান করে একটা ডিম হাদিয়া দিল, তাহলে সে কাফের হয়ে যাবে এবং তার সমস্ত আমল বরবাদ হয়ে যাবে।

৮. অমুসলিমদের ধর্মীয় অনুষ্ঠান ও উৎসব উপলক্ষে যদি এক মুসলিম অন্য মুসলিমকে কিছু দেয়, আর এতে যদি অমুসলিমদের মতো উক্ত অনুষ্ঠান ও উৎসবের সম্মান মনে করে দেয়, তাহলে কুফরী হবে।

দেখুন, মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা হা. ২৪৮৫৬, ২৪৮৫৭, ৩৩৩৮৯; আত-তারিখুল কাবীর, ইমাম বুখারী হা. ১৩১৯; আস-সুনানুল কুবরা, বায়হাকী ১৮৮৬৫; আল-খারাজ, ইমাম আবু ইউসুফ পৃ. ৯৯; আস-সিয়ারুল কাবীর, ইমাম মুহাম্মাদ ১/১৪৬; আল-মাবসূত, সারাখসী ২৪/৫০; আল-মুহিতুল বুরহানি ৫/৩৬২; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৭/৩৪৮; ফাতাওয়া বায্যাযিয়্যা ১২/১৮৬; ফাতাওয়া শামী ১০/৪৮৫-৮৬, যাকারিয়া; ফাতাওয়া আলমগীরী ৫/৩৪৭; ইমদাদুল ফাতাওয়া ৮/৫৬৩, ৯/৪২৯-৩০; ফাতাওয়া মাহমুদিয়া ১৮/১৭৫ ; আহসানুল ফাতাওয়া ৮/১৬২; ফাতাওয়া কাসেমিয়া ২৪/২৪৮ ও মাআরিফুল কুরআন, মুফতি শফী ১/৪২৪।

‘‘ঈমান-আকীদা’’ বইয়ের প্রথম খণ্ড থেকে
🖋️শায়খ সাঈদ আহমাদ হাফিঃ

ইসলামী আকিদাহ

04 Sep, 00:13


রাষ্ট্রকে ধর্ম থেকে আলাদা করা হল, ধর্মনিরপেক্ষতাবাদীদের মূল কনসেপ্ট।

এই চিন্তা মুলত আল্লাহ তাআলার সঙ্গে শিরকের একটি প্রকার। কেননা এটি বস্তুবাদী জীবনে দ্বীনের কর্তৃত্বকে স্বিকার করে না এবং দ্বীনের কর্তৃত্বকে রীতি-নীতি ও ইবাদতের মধ্যে সীমাবদ্ধ মনে করে, যা মানুষ একাকীত্বে বা ইবাদতখানায় চর্চা করে। কেমন জানি 'ইলাহ' তিনি শুধুমাত্র ইবাদত ও রীতি-নীতির ক্ষেত্রে 'ইলাহ', আর জাগতিক বিষয়ের জন্য আরেকজন 'ইলাহ' রয়েছে।

মাজাল্লাতু বুহুসিল ইসলামিয়াতে রয়েছে,
আর যে ব্যক্তি মনে করে ধর্ম রাস্ট্র থেকে আলাদা, এবং ধর্মের স্থান হল, কেবল মসজিদ, মাদরাসা। আর রাষ্ট্রতো যা ইচ্ছে তা-ই করতে পারবে। এবং যা ইচ্ছে তা-ই বিধান হিসেবে প্রনয়ন করবে। এটা আল্লাহ তাআলা ও তার রাসূলের উপর অনেক বড় একটি অপবাদ ও মিথ্যাচার। এবং নিকৃষ্টতর গলত, বরং এটি কুফর ও মারাত্মক গোমরাহি। আল্লামা যাহেদ কাউসারী রহ. ও মুস্তফা সাবরী রহ.ও তাদের কিতাবে এমনটি উল্লেখ করেছেন।
ومن زعم فصل الدين عن الدولة، وأن الدين محله المساجد والبيوت، وأن للدولة أن تفعل مايشاء وتحكم بماتشاء فقد أعظم علي الله الفرية، وكذب علي الله ورسوله، وغلط أقبح الغلط، بل هذا كفر وضلال بعيد، عياذا بالله من ذلك
) المجلة البحوث الإسلامية، العدد الخامس والأربعون، الشق الثاني ضرورة البشر إلي الشريعة)

وقال الشيخ مصطفي صبري في موقف العقل والعلم والعالم من رب العالمين وعباده المرسلين والشيخ زاهد الكوثري الحنفي في مقالات الكوثري هكذا.

সেকুলারিজমের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে শাইখুল ইসলাম আল্লামা তাকী উসমানী হাফি. তাকমিলাতে এরকম বলেছেন,
مكانة السياسة في الدين: قد شتهر عن النصاري أنهم يفرقون بين الدين والسياسة بقولهم المعروف: "دع مالقصير لقيصر، ومالله لله"، فكأن الدين لا علاقة له بالسياسة، والسياسة لاربط لها بالدين، وإن هذه النظرية الباطلة قدتدرجت إلي أبشع صورها في العصور الأخيرة بإسم "العلمانية" أو "سيكولر إزم" التي أخرجت الدين من سائر شؤون الحياة حتي قضت عليه بتاتا.
وإن هذه النظرية في الحقيقة نوع من أنواع الإشراك بالله...
( تكملة فتح الملهم كتاب الإمارة ١٥٣/٣)
🖋️মাওলানা নূরুল আজিম বিন কাশেম

ইসলামী আকিদাহ

29 Aug, 02:46


খি*লা-ফত এবং রা-শি-দাহ

দুটি আলাদা শব্দ,
উভয়টি একসাথে করলে
খিলাফতে রাশিদাহ।

খিলাফতে রাশিদাহ এবং খিলাফত
উভয়টিই স্বীকার করতে হবে, অস্বীকারের সুযোগ নেই।

খিলাফতে রাশিদাহ এর গুরুত্ব অনস্বীকার্য,
তাই বলে খিলাফতে রাশিদাহ এর গুরুত্ব বলতে গিয়ে খিলাফত কে প্রশ্নবিদ্ধ করা যাবেনা।

খি*লা*ফ*ত কে মানব রচিত বলা কুরআন মাজীদ সম্পর্কে অজ্ঞতাই প্রমাণ করে, খিলাফত কে মানব রচিত বলা মানে মানব রচিত "রাজনীতি" প্রমোট করে "ইসলামী রাজনীতি" কে প্রশ্নবিদ্ধ করা।

আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলোঃ
কারো খিলাফতের সময়কাল কে প্রশ্নবিদ্ধ করা মানে "খিলাফত" কে প্রশ্নবিদ্ধ করা নয়।

الله أعلم بالصواب

🖋️মাওলানা আরিফ বিন হাবিব হাফিঃ

ইসলামী আকিদাহ

28 Aug, 02:56


যুগে যুগে ইসলামি শরিয়াহ ও খিলাফত কায়েম করাই ছিল উলামায়ে দেওবন্দের অভীষ্ট লক্ষ্য। দেওবন্দি শিক্ষাব্যবস্থা, দাওয়াত ও তাবলীগ, তাসাওউফ ও আত্মশুদ্ধি- এগুলোর মাধ্যমে মূল উদ্দেশ্য হলো, দেশের জনগণকে সঙ্গে নিয়ে ইসলামি শরিয়াহ কায়েমের পথ প্রশস্ত করা।
.
হযরত শাইখুল হিন্দ মাওলানা মাহমুদ হাসান দেওবন্দি রহ.। দারুল উলূম দেওবন্দের প্রথম ছাত্র। তিনি তাঁর জীবনের শ্রেষ্ঠাংশকে খিলাফাহ কায়েমের জন্যেই উৎসর্গ করেছিলেন। তাঁর রেশমি রুমাল আন্দোলনের কথা কে না জানে! একটা পরাধীন, ইংরেজশোষিত রাষ্ট্রে বসেও তিনি খেলাফত আন্দোলনের ডাক দিয়ে গোটা ভারতবর্ষে তোলপাড় সৃষ্টি করেছিলেন। এই আন্দোলনের জন্যে তিনি দেওবন্দের তৎকালীন মুহতামিমদের সাথে দ্বিমত করতেও দ্বিধা করেননি। এমনকি এর জন্যে শেষ জীবনে জেল খেটেছেন। মাল্টায় সশ্রম কারাদণ্ড ভোগ করেছেন। তবুও খিলাফাহর দাবি থেকে এক পা পিছু হটেননি।
.
আপনারা শুনলে অবাক হবেন যে, খোদ দারুল উলূম দেওবন্দ প্রতিষ্ঠিতই হয়েছে সেই শরিয়াহ ও খিলাফাহ কায়েমের উদ্দেশ্যে। 'হুজ্জাতুল ইসলাম মাওলানা কাসিম নানুতুভি রহ. কখনই প্রথাগত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে দারুল উলূম দেওবন্দ প্রতিষ্ঠা করেননি; বরং ১৮৫৭ সালের স্বশস্ত্র বিপ্লব ব্যর্থ হওয়ার পর তিনি দারুল উলূম দেওবন্দ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন এমন জনবল গড়ে তোলার উদ্দেশ্য নিয়ে, যারা সেই বিপ্লবের ব্যর্থতাকে ঢেকে নতুন করে শরিয়াহ কায়েমের পথ তৈরি করবে।'
এ কথা মানাযির আহসান গিলানি রহ. তাঁর আত্মজীবনী ‘ইহাতায়ে দারুল উলূম...’ এর মাঝে হযরত শাইখুল হিন্দ রহ. এর বরাতে তুলে ধরেছেন। (পৃষ্ঠা : ১৫৫)
এই বৈশিষ্ট্যের কারণেই দারুল উলূম দেওবন্দ বিশ্বের যেকোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে স্বতন্ত্র ও শ্রেষ্ঠ। আযহার, মদিনা ইউনিভার্সিটি, আলিগড় ইউনিভার্সিটি, নদওয়া- এগুলো সব হলো স্রেফ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান; কিন্তু দারুল উলূম দেওবন্দ হলো একটি বিপ্লব। একটি সংগ্রামী কাফেলা।
.
হযরত হাফেজ্জি রহ. এর আগে বাংলাদেশের উলামায়ে দেওবন্দ কখনই প্রচলিত রাজনীতিতে জড়াননি। তিনিই প্রথম বাংলাদেশি আলেম, যিনি প্রথাগত রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হয়েছেন। কিন্তু তাঁর দলটির নাম কী দিয়েছিলেন, জানেন? খেলাফত আন্দোলন। বাংলাদেশের ইতিহাসের অন্যতম নিষ্কলুষ এই পীর ‘খেলাফত আন্দোলন’ নামকরণের মাধ্যমে দেশবাসীকে এ বার্তাই দিয়েছেন যে, আমাদের অভীষ্ট লক্ষ্য সেই খিলাফত কায়েম করা, যার জন্যে আমাদের গোটা জীবনের দাওয়াত ও তালীম, তাযকিয়া ও তাসাওউফ উৎসর্গ।
.
সমকালের আরেকটি দেওবন্দি রাজনৈতিক দল ছিল, নিযামে ইসলাম পার্টি। যার অর্থই হলো, ইসলামি শাসনব্যবস্থা। জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের প্রতিষ্ঠাতা হযরত মাওলানা শাব্বীর আহমদ উসমানি রহ. ইসলামি শাসনব্যবস্থা কায়েমের জন্যে এতোটাই উদ্দীপ্ত ছিলেন যে, সেই স্বপ্ন পূরণের জন্যে তিনি জীবনের সর্বস্ব উজাড় করে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠায় ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। এর জন্যে তিনি মাতৃভূমি ত্যাগ করেছেন। দারুল উলূম দেওবন্দের শিক্ষকতাও ত্যাগ করেছেন। পাকিস্তানে ইসলামি সংবিধান প্রতিষ্ঠার প্রশ্নে তৎকালীন ক্ষমতাসীনদের সাথে আমৃত্যু তুমুল দ্বন্দ্ব করে গেছেন। তারপরও শরিয়াহ কায়েমের দাবি থেকে এক চুল নড়েননি।
.
মহান আল্লাহ উলামায়ে দেওবন্দকে যেমন দ্বীনের প্রকৃত সমঝ ও বিশুদ্ধ চেতনা দান করেছেন, তদ্রূপ ইকামাতে দ্বীনের জন্যে যুগচাহিদার প্রেক্ষিতে সব ধরনের হিকমত তথা প্রজ্ঞা অবলম্বনের দূরদর্শিতাও দিয়েছেন। এ কারণেই তাঁদের মিশন বিশ্বের কোথাও মুখ থুবড়ে পড়েনি। এই মিশন বিশ্বের একেক দেশে একেক পদ্ধতিতে নিয়মিত প্রবহমান থাকার মাধ্যমে ক্রমশ বিন্দু থেকে সিন্ধুই হয়েছে।
এই বৈশিষ্ট্যই দেওবন্দি আন্দোলনকে সমকালের অন্য সকল ইসলামি আন্দোলন থেকে বিশিষ্ট করেছে।
* এই যে আমরা আজ মাদরাসায় পড়ছি, পড়াচ্ছি। এগুলোর দ্বারা উদ্দেশ্যই হলো, আমাদের পরবর্তী প্রজন্মকে ইকামতে দ্বীনের জন্যে তৈরি করা।
* এই যে আমরা দাওয়াত ও তাবলীগের মেহনত করছি। এরও উদ্দেশ্য, জনগণকে শতভাগ শরিয়াহর অধীনে নিয়ে আসা।
* এই যে আমরা আজ রাজপথে রাজনৈতিক কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করেছি, মিটিং-মিছিল করছি। এগুলোরও উদ্দেশ্য হলো, দেশের প্রচলিত শাসনকাঠামোর মাঝে কোনো ধরনের শরিয়াহবিরোধী আইন-নীতিমালা ও শিক্ষাব্যবস্থা ঢুকতে না দেওয়া এবং বিদ্যমান অসঙ্গতিগুলোকে দূর করার মতো শক্তি ও গণসমর্থন অর্জন করার মাধ্যমে আগামীর শারঈ সোনালি শাসনব্যবস্থার পথ সুগম করা।
.
এভাবে আমরা যখন আমাদের সকল সামর্থ্য ইকামতে দ্বীনের জন্যে নিবেদন করব, ইনশাআল্লাহ -আমরা স্বপ্ন দেখি- আমাদের এই মাটিতেও একদিন খিলাফত প্রতিষ্ঠিত হবে। খিলাফাহ আলা মিনহাজিন নবুওয়াহ। যার জন্যে আমাদের জীবন, যৌবন, শক্তি-বীর্য, সহায়-সম্পদ সবকিছু কুরবান।
🖋️আব্দুল্লাহ আল ফারুক হাফিঃ

ইসলামী আকিদাহ

12 Jul, 09:15


শা/তি/ম/কে ক/ত/ল করার পর কাজটা আইনসিদ্ধ ছিল নাকি বেআইনি, এমন তর্কে জড়ানো আমাদের মত সাধারণ মুসলমানের কাজ নয়; এটা রাষ্ট্র ও আদালতের কাজ। নবীজির প্রতি ধৃষ্টতাপ্রদর্শনকারী এক জাহান্নামিকে তার উপযুক্ত পাওনা বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে এটা সকল মুসলমানের জন্য আনন্দের, সুখের। প্রিয় হাবিবের উম্মত হিসেবে আমাদের উচিত আনন্দিত হওয়া শুকরিয়া আদায় করা। আমরা আনন্দিত হয়েছি এবং রব্বে কারিমের শুকরিয়া আদায় করছি। যে দুজন মুসলিম ভাই এই মহান দায়িত্ব পালন করেছেন আমরা তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। আল্লাহ তাআলা তাদের নবীজির শাফায়াত ও দিদার দ্বারা সুখী করুন।

তবে যদি প্রশ্ন তোলা হয়, এভাবে প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করে একজন মাত্র শা/তি/ম/কে হত্যা করে হাজারও মুসলমানকে উ/গ্র/বা/দী হি/ন্দু/গোষ্ঠীর রোষানলের মুখে ঠেলে দেওয়া ও সংখ্যালঘু মুসলিমসম্প্রদায়ের জীবনকে ভীতিকর ভবিষ্যতের দিকে ঠেলে দেওয়া কি উচিত কাজ হলো?
প্রশ্নের উত্তর দেবার আগে আমরা জানতে চাইবো, যে রাষ্ট্র ও রাষ্ট্রের সরকারদলীয় জনগণ প্রতিনিয়ত মুসলিমনির্যাতনের মহড়া চালাচ্ছে, মুসলিম নিধনের মাধ্যমে নিজেদের ‘নির্যাতনপারদর্শিতা’র পরীক্ষা – নীরিক্ষা করছে, গণধর্ষণের মাধ্যমে মুসলিম নারীর গর্ভে হিন্দু জন্ম দেওয়ার ‘আজন্ম’ সাধ পুরণ করছে এই একটি মাত্র ঘটনা সেই নির্যাতনের ইতিহাসে কতটা বর্ধন করতে সক্ষম? নির্যাতনের আর কী কী উপায় আছে যা এই ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় সামনে আসতে পারে? যে দেশে বিশ্ববিখ্যাত ইসলামি বিদ্যাপীঠ দারুল উলুম দেওবন্দের মসজিদের আওয়াজকে সীমিত করে দেওয়া হয়, শত শত মসজিদে মাইকে আজান নিষিদ্ধ করা হয়, লাভ জি/হা/দ বন্ধের নামে মুসলিম যুবকের জীবন কেড়ে নেওয়া হয় সে দেশে মুসলিম নির্যাতন কোন স্তরে উন্নীত হয়েছে তা কি অননুমেয়? শাতিম হত্যার ঘটনা সেখানে কী কী সমস্যা নতুন করে সৃষ্টি করতে পারে বলে মনে হয়? সুতরাং এই কাজের মাধ্যমে সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীকে নতুন কোনো বিপদে ঠেলে দেওয়া হলো এটা গ্রহণযোগ্য ‘অভিযোগ’ নয়।

কথায় আছে, দেয়ালে পীঠ ঠেকে গেলে বেড়ালও বাঘ হয়ে যায়? কেন? আত্মরক্ষার জন্য। কিন্তু এই শেষ চেষ্টাটাও যদি সে না করে তাহলে সে ‘বাগদাদি মুসলিম’ হয়ে যায়। তাতাররা যখন বাগদাদ আক্রমণ করে তখন ‘কোমরভাঙা’ মুসলমিগোষ্ঠী এতটা ভীতবিহ্বল হয়ে পড়েছিল যে, বাঁচার শেষ চেষ্টা করার সাহসও তাদের অবশিষ্ট ছিল না। ফলে, তাতারি শিশুর হাতে মুসলিম দামড়া যুবক ‘অসহায়’ আত্মসমর্পণ করেছে এবং নিকৃষ্ট ও নির্লজ্জ মৃত্যুকে বরণ করেছে। ভা/র/তে/র চলমান অবস্থাও তেমন। দেয়ালে পীঠ ঠেকে গেছে অনেক আগেই। প্রতিনিয়ত মরণআঘাতের শিকার হয়েও কোনো এক অজানা কারণে তারা নিশ্চুপ মার খেয়ে যাচ্ছে। তারা ভেবেছে এভাবে মার খাওয়াটাই আমাদের নিয়তি। ফলে, বীর্যবান মুসলিম তরুণ পাশের বাড়ির ‘শ্রীরামের গোলাম’ শিশুটিকে ভয় পাচ্ছে যমের মত। লাল গেরুয়াবাহিনী দেখলেই মৃত্যুর কালো ছায়া দেখতে পাচ্ছে চোখের সামনে। এমন পরিস্থিতিতে শা/তি/ম হত্যার এই ঘটনা ‘মুসলিম রেনেসাঁ’র ভুমিকা পালন করতে পারে বলে। দেয়ালে পীঠ চেপে ধরে মৃত্যুর প্রহরগোণা অপদার্থ মুসলিম যুবকের মনেও মুহূর্তখানিকের জন্য জ্বলে উঠতে পারে ‘ইসলামি চেতনা’। মুসলিম হ্যাঁয় হাম ওতান হ্যায় সারা জাহাঁ হামারা। বারুদের মত জ্বলে ওঠা এই আগুনে পুড়ে যেতে পারে ‘রা/ম/রা/জ্য’ প্রতিষ্ঠার যাবতীয় ষড়যন্ত্র। সুতরাং এমন পরিস্থিতিতেও যারা অতি সুশীল মনোভাব নিয়ে প্রশ্ন তোলেন, এভাবে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দেওয়া কি ঠিক হলো, আমরা মনে করি তারা এতদিন ঘুমে ছিলেন। তাদের খবর ছিল না। শাতিম হত্যার ঘটনাটির একটি বিশেষ দিক হলো, তাদের ঘুম ভেঙেছে। তারা নড়েচড়ে বসেছেন।

আগেই বলেছি, আইনসিদ্ধ নাকি বেআইনি হয়েছে এই হিসেবটা আমাদের জন্য নয়। এটা রাষ্ট্রপক্ষ ও আইন – আদালতের কাজ। আমাদের কাজ আনন্দিত হওয়া এবং যারা করেছে তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা। এই কাজে যাতে আমরা কুণ্ঠিত, শংকিত ও দ্বিধান্বিত না হই। নির্দ্বিধায় তাদের সমর্থন জানাই এবং আনন্দ প্রকাশ করি। এতটুকু নেহাত কম নয়। উম্মাহর ‘ঘুমন্ত শার্দুল’দের বুকে সুষুপ্ত ইমানি চেতনাকে জাগ্রত করতে এটুকুর অনেক ভুমিকা আছে।

খুব স্পষ্ট করে বলতে চাই, শা/তি/ম হত্যার দায় ও দায়িত্ব রাষ্ট্রের; সাধারণ জনগনের নয়। তাই এই দায়িত্ব হাতে তুলে নিতে আমরা কাউকে উৎসাহিত করি না। কেউ করে ফেললে আমরা আনন্দিত হই এবং তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি; রাষ্ট্রের দায়িত্বহীনতাকে এর পেছনের অনুঘটক করে করি। রাষ্ট্র যদি সচেতন হতো এবং শা/তি/মে/র যথাযোগ্য বিচারের ব্যবস্থা করত তাহলে সাধারণ মানুষের ভেতর এমন প্রতিক্রিয়া প্রকাশ পেতো না। এবং কারও ধর্মানুভূতিতে আঘাত করা নিকৃষ্টতম অপরাধ; যার শাস্তি একমাত্র মৃত্যুদণ্ড হওয়া উচিত।
🖋️ মাওলানা নুরুজ্জামান নাহিদ হাফিঃ

ইসলামী আকিদাহ

28 Jun, 23:08


মুতাযিলা বা দেহবাদীদের অনুসারী কিংবা অন্য কোন ভ্রান্ত দলের লোকেরা কখনো "আকীদাতুত তাহাবী"র উপর একমত বা সন্তুষ্ট হতে পারবে না। চাই তিনি সেই যুগের হোক, কিংবা এই যুগের সালাফী দাবিদার হোক।

ইমাম তাজুদ্দীন সুবকী রাহ. (মৃ. ৭৭১ হি.) বলেছেন,
وهذه المذاهب الأربعة - ولله الحمد - في العقائد واحدة، إلا من لحق منها بأهل الاعتزال والتجسيم. وإلا فجمهورها على الحق يقرون عقيدة أبي جعفر الطحاوي، التي تلقاها العلماء سلفا وخلفا بالقبول.
'আল্লাহর শোকর! চার মাযহাবের আকীদা এক ও অভিন্ন। তবে যারা মুতাযিলা বা দেহবাদীদের অনুসারী হয়েছে এরা ছাড়া। অন্যথায় (চার মাযহাবের) অধিকাংশ অনুসারী হকপন্থী এবং 'আকীদাতুত তাহাবী'র আকীদা পোষণকারী, যে কিতাবকে পূর্ববর্তী ও পরবর্তী উলামায়ে কেরাম ব্যাপকভাবে গ্রহণ করেছেন। (মুঈদুন নিআম, পৃষ্ঠা ২২)
🖋️ মাওলানা সাঈদ আহমাদ হাফিঃ

ইসলামী আকিদাহ

15 Jun, 23:32


করাও মুসলমানদের জন্যে বৈধ নয়।

যে সমস্ত লোকেরা মনে করে ভিন্নধর্মাবলম্বীদের সাথে এইধরনের ঐক্য শরীয়তে জায়েয আছে তারা মূলত আল্লাহকে ধোঁকা দেয়। পুরো শরীয়তে এমন কোনো দৃষ্টান্ত নেই যে, কাফেরদের কোনো শিরকী আকিদার প্রতি মুসলমানদের ছাড় দেওয়া বা কাফেরদের মৌন আকর্ষনের জন্যে কোনো ইসলামের শিয়ারকে বাদ দিয়ে দেওয় হয়।
আমরা আল্লাহর কাছে এমন কর্ম থেকে পানাহ চাই।

=========

তথ্যসূত্র :
ইমদাদুল আহকাম ৪/১৯১-১৯৩,
আল্লামা যফর আহমদ উসমানী দা.বা.
মাকতাবাতু দারুল উলুম করাচি,প্রকাশকাল ২০১৮।

ইসলামী আকিদাহ

15 Jun, 23:32


উপমহাদেশে গরু জবাই করা অবশ্যই ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ ‘শিয়ার’ তার কয়েকটি কারণ নিম্নে উল্লেখ করা হলো—

১. উপমহাদেশে মুসলমানদের আগমনের পূর্বে হিন্দুরা গরুকে অনেক সম্মান ও ইজ্জত করতো এবং নিজেদের প্রভু মনে করতো। এখনো তারা এই আকিদা লালন করে। এই শিরকী আকিদার কারণে যতদিন এই উপমহাদেশে তাদের ক্ষমতা ছিলো, কারো সাহস ছিলোনা গরু জবাই করবে। যখন মুসলমানরা উপমহাদেশের ক্ষমতা অর্জন করলো তখন হিন্দুদের অন্যসকল শিরকী আকিদার পাশাপাশি গরুর প্রতি তাদের যে আকিদা তাও মিটিয়ে দিতে উদ্দত হলো। তারা গরু জবাই করতে লাগলো যাতে এই কথা স্পষ্ট হয়ে যায় যে, গরু শুধুই চার পা বিশিষ্ট একটি প্রাণী। কোনো দেব-দেবী নয়।

উপমহাদেশে গরু জবাই যেহেতু মুসলমানদের আসার মাধ্যমেই শুরু হয়েছে এবং তা জবাই করা মুসলিমদের একটি প্রমান বহন করে তাই গরু জবাই ইসলামের শিয়ারের অন্তর্ভুক্ত।

২. কালিমায়ে তাওহিদ ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ’ সর্বসম্মতিক্রমে ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ শিয়ার। কিন্তু হিন্দুরা সত্য গোপন ও মুসলমানদের ধোঁকা দেওয়া জন্য তা প্রায় তা বলতো। উপমহাদেশে পরিবেশ এমন ছিলো, হিন্দুরা মুসলমানদের সাথে হাঙ্গামা আর দাঙ্গা-ফাসাদ করার সময় ‘আল্লাহু আকবার’ এবং ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু'র স্লোগান দিতো। কিন্তু কোনো অবস্থাতেই গরু জবাই করতোনা। এর দ্বারা এই কথাই প্রমাণ হয়, উপমহাদেশে গরু জবাই করা ও তার গোস্ত খাওয়া মুসলিমদের একটি পরিচয়। তাই কোনো হিন্দু সঠিক অর্থে মুসলিম হয়েছে কি না তা যাচাই করার জন্যে তাকে গরুর গোস্ত খেতে দেওয়া হতো।

৩. কুফফারদের থেকে জিযিয়া কর আদায় করা ইসলামের বিজয়ের একটি বড় নিদর্শন। কিন্তু দেখা গেলো, মুসলমানরা উপমহাদেশের ক্ষমতা অর্জন করার পর হিন্দুরা কর দেওয়ার অপমানকে অতটা গুরুত্ব দিতোনা। কিন্তু গরু জবাই করাকে তারা কোনোভাবেই মেনে নিতোনা। গরু জবাইয়ের কারণে মুসলিমদের খুন করতেও হিন্দুরা কুন্ঠাবোধ করতোনা। মুসলমানরা তাদের জীবনের বিনিময়েও গরু জবাই ছেড়ে দেয়নি। এবং তা উপমহাদেশে বাকি রেখেছে।

উপমহাদেশে গরু জবাই কাফেরদের থেকে কর আদায়ের চেয়েও বড় নিদর্শন হয়ে প্রতিভাত হয়। তাই এই কথা নিঃসন্দেহে বলা যায়, গরু কুরবানি করা ইসলামের একটি বড় ‘শিয়ার’।

৪. কুরআন শরীফে আল্লাহ তায়া ইরশাদ করেন,
وَالْبُدْنَ جَعَلْنَاهَا لَكُم مِّن شَعَائِرِ اللَّهِ
আমি ‘বুদনা’কে তোমাদের জন্যে আল্লাহর একটি শিয়ার নির্ধারণ করলাম।-সুরা হাজ্জ আয়াত ৩৬

‘বুদনা’ শব্দটি আরবীতে উট ও গরু উভয়ের জন্যে ব্যবহৃত হয়। আরবী ভাষার নির্ভরযোগ্য অভিধান ফিরুযাবাদি রহ. রচিত ‘আল কামুসুল মুহিতে’ বুদনা শব্দের অর্থ এভাবে এসেছে

والبَدَنَةُ، محَرَّكةً، من الإِبِلِ والبَقَرِ: كالأُضْحِيَةِ من الغَنَمِ، تُهْدَى إلى مكةَ، للذَكَرِ والأنْثَى

‘বুদনা’ এটি ‘বাদানাহ’ শব্দের বহুবচন। যা উঠ এবং গরু উভয়কে বুঝায়।-আল কামুসুল মুহিত পৃ.১১৭৯।

সুতরাং যেভাবে উঠ জবাই করা ইসলামের একটি শিয়ার তেমনিভাবে গরু জবাই করাও ইসলামের একটি শিয়ার।...

সুতরাং এই কথা প্রমাণিত হলো যে, গরু জবাই করা ইসলামের একটি শিয়ার। এখন হিন্দুরা মুসলমানদের এই শিয়ার থেকে জোরজবরদস্তি করে হোক বা ভালো ব্যবহার করে কৌশলে যেভাবেই হোক, যদি বিরত রাখতে চায়, তখন মুসলমানদের জন্য এই শিয়ারকে সাধ্যমতো সমাজে ঠিকিয়ে রাখা ওয়াজিব হয়ে যায়। আর এমন মূহুর্তে যে হিন্দুদের সাথে একত্বতা পোষণ করবে তার ইমানের ব্যাপারে সংশয় আছে। যেমনভাবে উপমহাদেশে হিন্দুরা জোরজবরদস্তি করে বা কৌশলে যদি মুসলমানদেরকে আজান দেওয়া থেকে বিরত রাখে তখন তা ছেড়ে দেওয়া কোনোভাবেই মুসলিমদের জন্যে বৈধ হবেনা তেমনিভাবে হিন্দুদের ভালো ব্যবহার বা জোরাজোরি কোনো কারণেই গরু জবাই কম করা বা গরু জবাই করা ছেড়ে দেওয়া বৈধ হবেনা। প্রত্যেক মুসলমানের জন্যে আবশ্যক হলো নিজের সাধ্যনুযায়ী গরু জবাইয়ের মুসলমানদের এই শিয়ার বাকি রাখা।...

যদি আমরা বিষয়টিকে এই দৃষ্টিকোণ থেকে দেখি যে, গরু জবাই করার দ্বারা হিন্দুদের একটি শিরকি বিশ্বাসের খণ্ডন ও মুসলিমদের বিজয়ের চিহ্ন প্রকাশ হয় তখন অন্যান্য পশু থেকে গরু জবাই করা উত্তম এটা স্পষ্টভাবেই বুঝে আসে।... বিশেষ করে যে অঞ্চলগুলোতে হিন্দু-মুসলিম একসাথে বসবাস করে এবং মুসলিমদের গরু জবাই করার মত ক্ষমতা আছে সেখানে অন্যান্য পশু থেকে গরু জবাই করাকে প্রাধান্য দেওয়া উচিত।

বর্তমানে কিছু লোককে দেখা যায় এই কথা বলতে, ‘আমাদের সাথে হিন্দুদের একটি ঐক্য আছে। এবং এই ঐক্য আমাদের ধরে রাখার প্রয়োজন আছে। তাই আমাদের উচিত হলো গরু জবাই না করা।’

এই কথার জবাবে এতটুকুই বলবো, ইসলামের দৃষ্টিতে সেই ঐক্যই বৈধ নয় যেখানে কাফেরদের কোনো শিরকী আকিদার প্রতি ছাড় দেওয়া লাগে। গরুর প্রতি সম্মান এটি হিন্দুদের একটি বড় শিরকী বিশ্বাস। এতে মুসলমানদের কোনো অংশগ্রহণ কোনোভাবেই বৈধ নয়। হিন্দু বা অন্যকোনো ধর্মের লোকদের সাথে তাদের ধর্মীয় বিষয়ে একমত হওয়া ছাড়া যে ঐক্য সম্ভব না, সে সমস্ত বিষয়ে ছাড় দিয়ে কাফেরদের সাথে ঐক্যের চিন্তা

ইসলামী আকিদাহ

12 May, 17:15


উদাহরণ-২
عَنْ عَمْرِو بْنِ شُعَيْبٍ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ جَدِّهِ،
আমর ইবনু শু’আইব (রহঃ) হতে পর্যায়ক্রমে তার পিতা ও তার দাদা থেকে বর্ণিতঃ:

قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ

‏ لاَ تَنْتِفُوا الشَّيْبَ
তোমরা পাকা চুল-দাঁড়ি উপড়ে ফেলো না।

مَا مِنْ مُسْلِمٍ يَشِيبُ شَيْبَةً فِي الإِسْلاَمِ.‏
قَالَ عَنْ سُفْيَانَ ‏"‏ إِلاَّ كَانَتْ لَهُ نُورًا يَوْمَ الْقِيَامَةِ ‏"‏ ‏
কেননা কোন মুসলিম ইসলামের মধ্যে থেকে চুল পাকালে (সুফিয়ানের বর্ণনায় রয়েছে) এটা তার জন্য ক্বিয়ামাতের দিন উজ্জ্বল নূর হবে।

.‏ وَقَالَ فِي حَدِيثِ يَحْيَى ‏"‏ إِلاَّ كَتَبَ اللَّهُ لَهُ بِهَا حَسَنَةً وَحَطَّ عَنْهُ بِهَا خَطِيئَةً ‏"‏ ‏.‏
(ইয়াহইয়ার বর্ণনায় রয়েছে) আল্লাহ তার প্রতিটি পাকা চুলের পরিবর্তে তাকে একটি নেকী দান করবেন এবং একটি গুনাহ মিটিয়ে দিবেন।
সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং ৪২০২
أَوَّلُ كِتَابِ التَّرَجُّلِ | بَابٌ : فِي نَتْفِ الشَّيْبِ

বারো
নামাজ কি নূরের তৈরী?
قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏ "‏ الطُّهُورُ شَطْرُ الإِيمَانِ
আবূ মালিক আল আশ’আরী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন:পবিত্রতা হল ঈমানের অর্ধেক অংশ।

وَالْحَمْدُ لِلَّهِ تَمْلأُ الْمِيزَانَ ‏
আলহাম্‌দু লিল্লা-হ’ মিযানের পরিমাপকে পরিপূর্ণ করে দিবে।

وَسُبْحَانَ اللَّهِ وَالْحَمْدُ لِلَّهِ تَمْلآنِ - أَوْ تَمْلأُ - مَا بَيْنَ السَّمَوَاتِ وَالأَرْضِ
এবং “সুবহানাল্লা-হ ওয়াল হাম্‌দুলিল্লা-হ” আসমান ও জমিনের মধ্যবর্তী স্থানকে পরিপূর্ণ করে দিবে।

وَالصَّلاَةُ نُورٌ
‘সলাত’ হচ্ছে একটি উজ্জ্বল জ্যোতি।

وَالصَّدَقَةُ بُرْهَانٌ
সদাকাহ্’ হচ্ছে দলীল।

وَالصَّبْرُ ضِيَاءٌ
ধৈর্য’ হচ্ছে জ্যোতির্ময়।

وَالْقُرْآنُ حُجَّةٌ لَكَ أَوْ عَلَيْكَ
আর ‘আল কুরআন’ হবে তোমার পক্ষে অথবা বিপক্ষে প্রমাণ স্বরূপ।

كُلُّ النَّاسِ يَغْدُو فَبَائِعٌ نَفْسَهُ فَمُعْتِقُهَا أَوْ مُوبِقُهَا ‏
বস্তুতঃ সকল মানুষই প্রত্যেক ভোরে নিজেকে ‘আমালের বিনিময়ে বিক্রি করে। তার ‘আমাল দ্বারা সে নিজেকে (আল্লাহর ‘আযাব থেকে) মুক্ত করে অথবা সে তার নিজের ধ্বংস সাধন করে।
সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ৪২২
كِتَابٌ : الطَّهَارَةُ | بَابٌ : فَضْلُ الْوُضُوءِ

তেরো
সময় কি নুরের তৈরী?
عَن أَبِى سَعِيدٍ الْخُدْرِىِّ أَنَّ النَّبِىَّ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم قَالَ مَنْ قَرَأَ سُورَةَ الْكَهْفِ فِى يَوْمِ الْجُمُعَةِ أَضَاءَ لَهُ مِنَ النُّورِ مَا بَيْنَ الْجُمُعَتَيْنِ
আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:
নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, “যে ব্যক্তি জুমআর দিন সূরা কাহ্‌ফ পাঠ করবে তার জন্য দুই জুমআর মধ্যবর্তীকাল জ্যোত হবে।
সহিহুল জামে ৬৪৭০(আলবানি রহঃ)

যেমন আল্লাহ রাব্বুল আলামীন নূর, কিন্তু নূরের তৈরী নয়। কুরআনে কারীম নূর কিন্তু নূরের তৈরী নয়। হেদায়াত নূর কিন্তু নূরের তৈরী নয়। চাঁদ নূর কিন্তু নূরের তৈরী নয়। নামাজ নুর কিন্ত নুরের তৈরী নয়। ইত্যাদি।ঠিক তেমনি রাসূল সাঃ অবশ্যই নূর কিন্তু নূরের তৈরী নয়।

🖋️মুফতি আরিফ বিন হাবিব হাফিঃ