৩। অনেকে একটা কথা বলেন, ‘২০১৩ সালে আলিমদের সাথে যখন অমুকতমুক হয়েছে তখন আপনারা কোথায় ছিলেন? এখন আলিমদের ডাকছেন কেনো?’ – আলিমদের যদি আহলুল ইলম এর বদলে একটা নির্দিষ্ট সামাজিক শ্রেনী হিসেবে দেখা হয় তাহলে এই কথাটা ঠিক আছে।
.
অমুক দলের লোকদের যখন মেরেছে তখন আপনি কী করেছেন? ছাত্রদের যখন মেরেছে তখন চাকরিজীবিরা কী করেছে? তখন অমুক যেহেতু তমুক করে নাই তাই এখন আর এটা আশা করবেন না...ইত্যাদি
.
কিন্তু ঐ যে বললাম, আলিমদের ওপর বিশেষ দায়িত্ব আছে, যা কুরআন-সুন্নাহর দলীল এবং আহলুসসুন্নাহ-র ইমাম-দের দৃষ্টান্ত থেকে প্রমাণিত। তাই এই কথা এভাবে বলা যায় না।
.
তবে যদি আমরা আলিমদের ছাত্র, জনতা, পেশাজীবি, শ্রমিক ইত্যাদির মতো একটা নির্দিষ্ট শ্রেনী হিসেবে ধরেই নেই, তাহলে তাদেরকে ওরকম একটা শ্রেনী হিসেবেই ট্রিট করতে হবে। যে সম্মান আর মর্যাদা আহলুল ইলমের প্রাপ্য সেটার প্রশ্ন আর আসবে না।
.
৪। অনেকে বলেন, আলিমগণ মাযুর। তারা অপারগ। নানা কারণে তারা হক বলতে পারেন না। এ ব্যাপারে দুটো কথা বলা যায়। প্রথমত, নিঃসন্দেহে অনেক আলিমদের মাযুর, তবে সবাই না।
.
দ্বিতীয়ত, যদি তারা মাযুর হন, অপারগ হন, তাহলে নিশ্চিতভাবেই তাঁরা সমাজের নেতৃত্ব দিতেও অপারগ। যিনি হক কথা বলতে পারছেন না, ইমাম-খতীব, কিংবা বড় বড় জামাত বা সংগঠনের নেতা হওয়া সত্ত্বেও- তার কাছে থেকে আর্থসামাজিক কিংবা রাজনৈতিক ইস্যুতে দিকনির্দেশনা চাওয়ার অর্থ হয় না। এটা তার প্রতি ইনসাফও হবে না। যে মাযুর সে তো মাযুর-ই।
.
.
বাস্তবতা হল, যারা এসব যুক্তি দেয় তারা না বুঝে আসলে আহলুল ইলমের অবস্থানকে সমাজে আরও দুর্বল করে। মানুষ অনেক দলীল, অনেক জটিল বিশ্লেষণ বোঝে না। তবে তারা ফিতরাতিভাবে বোঝে ইসলাম তাওহীদ, আদল ও ইনসাফের দ্বীন। ইসলাম যুলুমের সাফাই গাওয়ার শিক্ষা দেয় না, যুলুমের বিরুদ্ধে দাড়ানোর শিক্ষা দেয়।
.
তাই ইসলামের পোশাকে কেউ যখন বিপরীতটা করে তখন মানুষ সহজাতভাবেই বোঝে, এখানে কোন সমস্যা আছে।
.
আলিমগণের অনেক সীমাবদ্ধতা আছে। অনেক প্রতিকূলতা আছে। আমি জানি। তবে এগুলো থাকা সত্ত্বেও তাদের ওপর হক বলার দায়িত্ব আছে। ইলম আর মর্যাদা সাথে করে দায়িত্ব নিয়ে আসে। আলিমগণ রাস্তায় নেমে যাবেন, কিছু একটা করবেন – আমি এমন বলি না। এটা অনেক ক্ষেত্রে তাদের দায়িত্বও না।
.
তবে হক ও বাতিল মানুষের সামনে স্পষ্ট করা তাদের দায়িত্ব। আর একান্তই যদি কিছুই বলার সামর্থ্য না থাকে, তাহলে সে ক্ষেত্রে কমসেকম তারা চুপ থাকবেন। যালিমের পক্ষে সাফাই গাইবেন, যালিম আর মাযলুমকে এক কাতারে এনে নাসীহাহ করবেন – এটা হতে পারে না।
.
যালিম ও যুলুমের বিরুদ্ধে বলা তাদের দায়িত্ব। ইমান ও কুফর, তাওহীদ ও শিরক, যালিম ও মাযলুম এর পার্থক্য মানুষকে বুঝিয়ে দেয়া তাদের দায়িত্ব। কোনভাবেই, কোন দৃষ্টিকোন থেকেই, কোন দলীলের আলোকেই, এখানে তাদের অবস্থানকে সাধারণ মানুষের সাথে তুলনা করা যায় না। এই সহজ সত্যটা আমাদের বোঝা উচিৎ।
.
আমি জানি, এই লেখার কারণে অনেকে আমাকে অনেক কিছু বলবেন। নানা ট্যাগ দেবেন, নানা তত্ত্ব বানাবেন, তির্যক মন্তব্যও হয়তো করবেন। আলেমবিদ্বেষী-ও বলবেন কেউ কেউ। কিন্তু এতে আমি যা বললাম, সেটা ভুল প্রমাণিত হবে না।
.
রেটোরিকাল কোপিং মেকানিসম আর ট্যাগবাজি নিয়ে তর্ক করা যায়, কিন্তু বাস্তবতা তাতে আড়াল হয় না। আর আস্থার যে সংকট তৈরি হচ্ছে এবং হবে, সুরাহা হবে না সেটারও।
.
সেই সাথে এটাও বলি সত্যিকারের আহলুল ইলম, যারা নবীদের ওয়ারিশ হবার দায়িত্ব পালন করেছেন এবং করেন তারা আমাদের মাথার তাজ। তবে আলিম বলে পরিচিত সবাই কুরআনে বর্ণিত আহলুল ইলম হিসেবে গণ্য হবেন কি না, তা নিয়ে আমাদের ভাবার প্রয়োজন আছে।
-ভাইয়া আসিফ আদনান