আসিফ আদনান, MSAN ও জামায়াত প্রসঙ্গ
..
আসিফ আদনান এবং তার সাথে সংশ্লিষ্ট বাকি সবাইকে একটা প্ল্যাটফর্মের নাম দিয়ে সম্বোধন করতে চাই। Muslim Social Activist Network বা MSAN। আমার আলোচনার মুখ্য বিষয় আসিফ আদনানের ব্যাপারে আমার মূল্যায়ন, MSAN ও জামায়াতে ইসলামী, বাংলাদেশের ইসলামপন্থার ভবিষ্যত, এবং জাতীয় মুসলিম ঐক্য।
প্রথমেই, আসিফ আদনানকে নিয়ে আমার মূল্যায়ন বলি। আমি মনে করি, যদি আরো পাঁচ বছর তিনি নির্বিঘ্নে কথা বলতে পারেন, তাহলে পাঁচ বছরের মধ্যে বাংলাদেশের সবচেয়ে ইনফ্লুয়েনশিয়াল ইয়ুথ আইকন হবেন তিনি। ইয়ুথ আইকন হওয়ার জন্য যেসব গুণ লাগে, সেগুলো তার মধ্যে উপস্থিত। ব্যাকগ্রাউন্ডের কথা বললে আসিফ আদনান ঢাকার এলিট সোসাইটি থেকে উঠে আসা ছেলে, নামিদামি স্কুল-কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন/করছেন। লেখনী শক্তিশালী, বক্তব্যও চমৎকার। বেশভূষা, চলনবলনেও পরিপাটি৷ জেনজির ভাষায় বললে, আসিফ আদনানের Rizz আছে। এজন্য, আত্মপ্রকাশের মাসখানেকের মধ্যেই তার জনপ্রিয়তা বেড়েছে প্রায় কয়েকগুণ। আমার গাট ফিলিং বলে, এটা বাড়তেই থাকবে।
আসিফ আদনানের এক্সপোনেনশিয়াল গ্রোথের ক্ষেত্রে তার নিজেরও অবদান আছে। আত্মপ্রকাশ একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত। তিনি যা যা বলতে চান, তা তিনি সবার সামনে এসে বলছেন, এটাও বেশ ভালো একটা দিক। এটা তার ওপর থেকে ‘গুপ্ত পন্থার’ অভিযোগকে খারিজ করে। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ তিনি করেছেন, তা হলো জুলাই অভ্যুত্থানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন অনলাইনে। অভ্যুত্থানের আগের দিন আসিফ আদনানের অভ্যুত্থানের আহ্বানমূলক পোস্ট শেয়ার হয়েছে পনেরো হাজারেরও বেশি। এছাড়াও আন্দোলনের শুরু থেকেই তিনি আন্দোলনকে বেগবান করার ব্যাপারে সোচ্চার ছিলেন। এই কাজটি তাকে তরুণদের কাছাকাছি এনে দিয়েছে। সেইসাথে অভ্যুত্থানের পরপরই প্রকাশ্যে আসার ফলে সোনায় সোহাগা ব্যাপার হয়েছে।
এখন, এক্স-শিবির এবং জামায়াতের কতিপয় মানুষের রিসেন্টলি কিছু বক্তব্য সামনে আসছে আসিফ আদনানের এই জনপ্রিয়তাকে কেন্দ্র করে। তারা উদ্বেগ প্রকাশ করছেন যে, আসিফের ‘উগ্রপন্থা’য় মানুষের দীক্ষিত হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে। এই দেশের ইসলামপন্থীদের জন্য জম্বি যেই বিপদ ডেকে এনেছিলো, সেই বিপদের আশঙ্কা তারা প্রকাশ করছেন। MSAN এর সাথে যুক্ত বেশ কিছু এক্টিভিস্টের বক্তব্য আমি পেয়েছি, যেখানে তারা ব্যাপারটিকে এড্রেস করে বলেছেন যে, সশস্ত্রপন্থা তারা সমর্থন করেন না, তারা দাওয়াত এবং সামাজিক শক্তি অর্জনের ব্যাপারেই গুরুত্ব দিচ্ছেন। আসিফ আদনান নিজেও বিগত কয়েক বছরে সামাজিক শক্তি অর্জনের কথা বলে আসছেন। সেই কাজের জন্যই খুব সম্ভবত MSAN প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। অন্তত, আমার ধারণা তাই।
কিন্তু অদ্যাবধি আসিফ আদনানকে সশস্ত্রপন্থাকে খারিজ করার কোনো বক্তব্য দিতে আমার চোখে পড়েনি। আসিফ আদনান ‘আমরা শরীয়াহ চাই’, ‘সামাজিক শক্তি অর্জন করতে চাই’ যতটা স্পষ্টভাবে বলেন, ‘সশস্ত্রপন্থাকে আমি বা আমরা একোমোডেট করবো না’ এটা ততটা স্পষ্ট সরে বলতে তাকে শোনা যায়নি। কিন্তু, এটা বাস্তব যে আসিফ আদনানের পরিবর্তন লক্ষণীয়। পূর্ববর্তীতে তাকে যতটা সশস্ত্রপন্থার ব্যাপারে কথা বলতে দেখা যেত, গত দুয়েক বছরে সেটা তেমন দেখা যায়নি। এছাড়া প্রচলিত সিস্টেমের সংস্কারে বিভিন্ন প্রস্তাবনা, প্রচলিত রাজনৈতিক ব্যবস্থায় মানুষজনের করণীয় নিয়ে তাকে কথা বলতে দেখা গেছে - যা আশাব্যঞ্জক। কিছুদিন আগে সিলেটে আরএসএস নিয়ে বক্তব্যের মাধ্যমে আসিফ আদনান বলেছেন, আরএসএসের পলিটিকাল উইং আছে, যারা ক্ষমতায়ও আছে। আসিফ আদনান কী বলতে চাইছেন তা MSAN এর অন্যান্য কয়েকজন এক্টিভিস্টের আলাপ থেকে কিছুটা ধারণা পাওয়া যায়। ডা. মেহেদী হাসান, ডা. শামসুল আরেফিন শক্তি প্রমুখের বক্তব্যে আমরা দেখতে পাচ্ছি, তারা জামায়াতের সঙ্গে প্যারালালি কাজ করার আশা ব্যক্ত করেছেন। অর্থাৎ, MSAN সামাজিক শক্তি অর্জনের কাজ করবে, সেইসাথে মুসলিম প্রচলিত রাজনৈতিক দলগুলোর কাজে তারা নৈতিক সমর্থন দেবেন এমনটা আভাস পাওয়া গেছে।
তবে, এই ধরণের বক্তব্য আসিফ আদনানের কাছ থেকে আসা জরুরী। সশস্ত্র পন্থার ব্যাপারে আসিফ আদনানকে স্পষ্ট ভাষায় বক্তব্য দিতে হবে, তথাকথিত কিতালপন্থীদেরকে নিয়ন্ত্রণে তাকে কাজ করতে হবে। এছাড়া আসিফ আদনানের প্রচলিত রাজনৈতিক দলগুলো – বিশেষ করে জামায়াতে ইসলামী নিয়ে অবস্থান কী, সেটা তাকে স্পষ্ট করতে হবে। ইতোপূর্বে জামায়াতে ইসলামীকে ‘মডারেট’ ট্যাগিং করার মাধ্যমে প্রচলিত ইসলামী রাজনীতিকে সম্পূর্ণ খারিজ করে দেয়ার যে প্রবণতা, সেটি থেকে তারা বেরিয়ে এসেছেন কীনা সেটা জানা ও বোঝা জরুরী। নাহলে ঐক্যের কথা বলা কেবলই অরণ্যে রোদন। এছাড়াও MSAN যদি প্যারালালি কাজ করার রূপরেখায় বিশ্বাস করে, তবে সংগঠনটি ইসলামী ঐক্যের ব্যাপারে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে বলে আমার বিশ্বাস। খেলাফত মজলিস জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে জোটবদ্ধ হবে এমনটা শোনা যাচ্ছে। MSAN এর উদ্যোগে, বাকি ইসলামী গণতান্ত্রিক দলগুলোর ঐক্যের আহ্বান করা ও একসঙ্গে বসে আগামী নির্বাচনকে টার্গেটে রেখে একটা ইসলামী