ডাক্তারদের দাবী কেন আদায় হয় না জানেন? দাবী গুলো কি কি হওয়া উচিত!
ডাক্তারদের মধ্যে নেতৃত্বের গুণাবলী কম। কিন্তু ডাক্তারদের লিড দিতে চায় এমন গ্রুপের অভাব নেই। অমুক গ্রুপের নেতা, তমুক গ্রুপের কেতা। কেউ কাউকে মানে না। আর এটা একদম সর্বজনীন যে, ডাক্তাররা স্বার্থপর। নিজের স্বার্থ ছাড়া কিছু বুঝে না। আবার ডাক্তাররা নির্বোধও বটে, এটা এজন্য বলছি যে তারা মাঝে মাঝে নিজের স্বার্থও আদায় করতে চায় না।
এবার আসি মূল কথায়, আজ ডাক্তারদের দুইটি গ্রুপের সমাবেশ এবং মশাল মিছিল। সমাবেশ গ্রুপ ১ টায় সমাবেশ করবে, মোটামুটি সবাই প্রস্তুত। কিন্তু ১২.৪৭ এ এসে ঘোষনা দিচ্ছে সমাবেশ স্থগিত। এরকম সমন্বয়হীনতা আর হতে পারে? এটা শুধু আজ না, আগেও হয়েছে। কোনো কাজ করবে, করার আগে ওয়ার্ক আউট করে না। এত সময় কোথায়? আপনারা সমন্বয় করে যদি প্রোগ্রাম স্থগিত করেন, তাহলে সমন্বয় আগে কেন করেন নি?
আচ্ছা, এই যে যারা এসব কাজ করছে তারা কি আদৌ চিকিৎসকদের জন্য করছে নাকি নিজেদের জন্য করছে? তাদের প্রধান দাবি দুইটি আমি যতদূর বুঝেছি, এক. ট্রেইনীদের বেতন বাড়ানো। দুই. বিসিএস বয়সসীমা বাড়ানো। অবশ্যই যৌক্তিক দাবী কিন্তু এই দুইটা এই মুহুর্তে তাদের প্রয়োজন। তারা ট্রেইনী, তারা অনেকে বিসিএস দিবে।
অথচ তারা কি ভেবে দেখেছে কখনও,
- এখন যারা মেডিক্যাল স্টুডেন্ট তাদের কথা?
- এখন যারা বিভিন্ন জায়গায় মেডিক্যাল অফিসারে ২০ হাজার বেতন জব করে তাদের কথা?
- যারা চাকরি না করে পড়াশোনা করে ১১ হাজার টাকার এফসিপিএস ভর্তি পরীক্ষার ফি দিতে অক্ষম তাদের কথা?
- বিএমডিসি তে লাইসেন্স নিতে যে দূর্নীতি, ইমার্জেন্সি ফি দিয়েও কেন ৪৫ দিন অপেক্ষা করতে হবে সে কথা?
না, ভাবে নি। কারণ তারা এখন মেডিক্যাল স্টুডেন্টও না, ইন্টার্ণ ও না, মেডিক্যাল অফিসারও না, বিএমডিসি রেজিষ্ট্রেশনও তাদের নেওয়া শেষ।
অথচ চিকিৎসকদের একটা বড় আন্দোলন প্রয়োজন। সব গুলো মেজর সমস্যা চিহ্নিত করে সমস্যা গুলো সমাধানের জন্য, কোনো গ্রুপ বড় করার জন্য নয়, কেউ নেতা হওয়ার জন্য নয়। এসব ভাওতাবাজি স্বার্থপর আন্দোলন আন্দোলন খেলা বন্ধ করেন। নেতা যারা হতে চাচ্ছেন, তারা নেতা হয়ে কিছু ছিড়তে পারবেন না এটা সিউর। কারণ ডাক্তার নেতা আমরাও আগে দেখেছি, লোকাল পলিটিকাল দের পা ধুয়ে দিতে পারেন, তাদের সাথে সেলফি তুলতে পারেন, এটাই আপনাদের শেষ অর্জন। যাই হোক, মূল পয়েন্টে আসি।
ডাক্তারদের যে দাবীগুলো এখন আসা উচিতঃ
১. এমবিবিএস এবং বিডিএস কারিকুলাম এ পরিবর্তন এনে এই শিক্ষা ব্যবস্থাকে আরও প্র্যাকটিকাল করতে হবে। সেকেন্ড ইয়ার থেকে হসপিটালে প্লেসমেন্ট থাকবে।
২. এমবিবিএস/বিডিএস থেকে পোস্ট গ্রাজুয়েশন যে কোনো এক্সামে সেগমেন্টাল পাশ যুক্ত করতে হবে। রিটেন ফেল করলে শুধু রিটেন দিবে, ভাইভা ফেল করলে শুধু ভাইভা।
৩. একজন ইন্টার্ণের বেতন ২৫ হাজার করতে হবে।
৪. বিএমডিসি রেজিষ্ট্রেশন আবেদন রেগুলার ৭ দিনের মধ্যেই দিতে হবে। ফি কমিয়ে ১০০০ টাকার মধ্যে করতে হবে।
৫. প্রাইভেট চিকিৎসকদের বেতন কাঠামো ঠিক করে, মেডিক্যাল অফিসারদের মাসিক বেতন সর্বনিম্ন ৬০ হাজার টাকা এবং রেসিডেন্সিয়াল মেডিক্যাল অফিসারের বেতন ১ লক্ষ ৩০ হাজার করতে হবে।
৬. এফিসিপিএস / রেসিডেন্সি / ডিপ্লোমা ভর্তি পরীক্ষার ফি কমিয়ে যথাক্রমে ৫ হাজার / ৩ হাজার / ২ হাজার করতে হবে।
৭. পোস্ট গ্রাজুয়েশনের সকল ট্রেইনীর মাসিক বেতন ৫০ হাজার টাকা করতে হবে।
৮. বিসিএস পরীক্ষার বয়সসীমা ৩৪ বছর করতে হবে।
৯. চিকিৎসক সুরক্ষা আইন এবং হাসপাতাল পুলিশি সিস্টেম গড়ে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
১০. এমবিবিএস এবং বিডিএস চিকিৎসক ছাড়া কেউ ডাক্তার পদবী ব্যবহার করতে পারবে না।
১১. কোনো চিকিৎসক অপারেশনের সময় এসিস্ট হিসেবে ওটি বয়, ওয়ার্ড বয় এবং প্যারা মেডিকস নিলে তার বিএমডিসি রেজিষ্ট্রেশন ৬ মাসের জন্য স্থগিত করতে হবে।
১২. কোনো ফার্মেসি দুই নাম্বার ঔষধ বিক্রি করলে যদি প্রমাণিত হয় তাহলে ৫ লক্ষ টাকা জরিমানা এবং ৫ বছরের জেল দিতে হবে। ( এনেস্থিসিয়ার জন্য রোগী মারা যাওয়া কিছুদিনের আগে ভাইরাল ঘটনা গুলোতে চিকিৎসকদের বদনাম হলেও দায়ী ছিল ফার্মেসি গুলা বেশি লাভের আশায় দুই নাম্বার জানা সত্ত্বেও সেই ঔষধ বিক্রি করা )
১৩. পোস্ট গ্রাজুয়েশন এর WFME Accreditation এর ব্যবস্থা করতে হবে।
দেখেন, দাবীগুলো। কোনোটা অযৌক্তিক কিনা? এগুলা নিয়ে কাজ করলে আই হোপ মেডিক্যাল ফার্স্ট ইয়ার থেকে শুরু করে পোস্ট গ্র্যাজুয়েশন সকল ডাক্তার রাস্তায় নামবে। এই দাবী গুলো সবার। কিন্তু আপনারা শুধু আপনার যেটা প্রয়োজন সেটা নিয়ে মাঠে নামবেন, আমাদের ছোট ভাই বোন মেডিক্যাল স্টুডেন্ট গুলাকে ব্যবহার করবেন। কাজ শেষে ছুড়ে মারবেন, ওদের কোনো দাবী আদায়ে পথে থাকবেন না। এটা তো হতে পারে না।
রাস্তায় নামলে এই সব গুলো দাবী নিয়ে নামেন। আমরা এটা কথা দিতে পারি, যে কেউ এই নিঃস্বার্থ সকল দাবী নিয়ে মাঠে নামলে আন্দোলন করলে সকল ডাক্তার মাঠে নামবে এবং দাবীগুলো ও আদায় হবে ইনশ আল্লাহ।