জনমানুষের মাঝে বিদাত-কুফর প্রচারকারী ব্যক্তির তওবা করার সঠিক পদ্ধতি
·
বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম। কেউ যদি বিদাত, আকিদাগত ভ্রান্তি ও কুফর-শির্কে পতিত হয়, তাহলে তাকে শরিয়তের নিয়ম অনুযায়ী তওবা করতে হবে, যে নিয়ম আমাদের আহলুস সুন্নাহর ন্যায়নিষ্ঠ উলামাগণ কুরআন-সুন্নাহ থেকে বর্ণনা করেছেন। আমি এ বিষয়ে বড়ো বড়ো উলামার কয়েকটি বক্তব্য পেশ করব, যেখানে তাঁরা দলিলের আলোকেই তওবা করার পদ্ধতি ব্যক্ত করেছেন।
ইমাম আবু হাতিম আর-রাজি রাহিমাহুল্লাহ (মৃ. ২৭৭ হি.) বলেছেন :
وَلَقَدْ ذُكِرَ لأَبِي عَبْدِ اللهِ أَحْمَدَ بنِ حَنْبَلٍ رَجُلٌ مِنْ أَهْلِ العِلْمِ كَانَتْ لَهُ زلَّةٌ، وَأَنَّهُ تَابَ مِنْ زَلَّتِهِ، فَقَالَ: لَا يَقْبَلُ اللهُ ذلِكَ مِنْهُ حَتَّى يُظْهِرَ التَّوْبَةَ وَالرُّجُوْعَ عَنْ مَقَالَتِهِ، وَلْيُعْلِمَنَّ أَنَّهُ قَالَ مَقَالَتَهُ كَيْتَ وَكَيْتَ، وَأَنَّهُ تَابَ إِلَى اللهِ تَعَالَى مِنْ مَقَالَتِهِ وَرَجَعَ عَنْهُ، فَإِذَا ظَهَرَ ذلِكَ مِنْهُ حِيْنَئِذٍ تُقْبَلُ، ثُمَّ تَلَا أَبُو عَبْدِ اللهِ: ﴿إِلَّا الَّذِينَ تَابُوا وَأَصْلَحُوا وَبَيَّنُوا﴾.
“একবার আবু আব্দুল্লাহ আহমাদ বিন হাম্বালের (মৃ. ২৪১ হি.) কাছে জনৈক আলিমের কথা বলা হলো, যার ভ্রান্তি ছিল, কিন্তু তিনি তওবা করে নিয়েছেন। তখন তিনি বললেন, ‘আল্লাহ তার তওবা কবুল করবেন না, যতক্ষণ না সে প্রকাশ্যে তওবা করছে এবং প্রকাশ্যে তার আগের বক্তব্য থেকে ফিরে আসার কথা জানাচ্ছে। আর সে যেন এটাও জানিয়ে দেয় যে, ইতঃপূর্বে সে এমন এমন কথা বলেছিল, কিন্তু সে পরবর্তীতে ওই কথাবার্তা থেকে মহান আল্লাহর দিকে ফিরে গেছে এবং ওই কথা থেকে প্রত্যাবর্তন করেছে। তার কাছ থেকে যখন এসব বিষয় প্রকাশিত হবে, তখন তার তওবা কবুল হবে।’ এরপর আবু আব্দুল্লাহ (ইমাম আহমাদ) এ আয়াত আবৃত্তি করেন, ‘তবে তাদের কথা ভিন্ন, যারা তওবা করেছে, নিজেদেরকে সংশোধন করেছে এবং সত্যকে সুস্পষ্টভাবে ব্যক্ত করেছে।’ (সুরা বাকারা: ১৬০)” [আব্দুর রহমান বিন আহমাদ ইবনু রজাব, জাইলু তাবাকাতিল হানাবিলা, তাহকিক : আব্দুর রহমান বিন সুলাইমান আল-উসাইমিন (রিয়াদ : মাকতাবাতুল উবাইকান, ১ম প্রকাশ, ১৪২৫ হি./২০০৫ খ্রি.), খ. ১, পৃ. ৩০০]
·
ইমাম মুওয়াফফাকুদ্দিন আবু মুহাম্মাদ ইবনু কুদামা আল-মাকদিসি রাহিমাহুল্লাহ (মৃ. ৬২০ হি.) বলেছেন,
وأمَّا البِدْعةُ، فالتَّوبة منها بالاعْترافِ بها، والرُّجوعِ عنها، واعْتقادِ ضِدِّ ما كان يَعْتَقِدُ منها.
“পক্ষান্তরে বিদাতের তওবা হবে— তা স্বীকার করে নেওয়া, তা থেকে ফিরে আসা এবং যেই বিদাতি আকিদা আগে পোষণ করত তার বিপরীত আকিদা পোষণ করার মাধ্যমে।” [আবু মুহাম্মাদ আব্দুল্লাহ বিন আহমাদ ইবনু কুদামা আল-মাকদিসি, আল-মুগনি, তাহকিক : আব্দুল্লাহ আত-তুর্কি ও আব্দুল ফাত্তাহ মুহাম্মাদ আল-হুল্উ (রিয়াদ : দারু আলামিল কুতুব, ৩য় প্রকাশ, ১৪১৭ হি./১৯৯৭ খ্রি.), খ. ১৪, পৃ. ১৯৪]
ইমাম ইবনুল কাইয়্যিম আল-জাওজিয়্যা রাহিমাহুল্লাহ (মৃত: ৭৫১ হি.) বলেছেন :
من توبة الداعي إلى البدعة أن يبين أن ما كان يدعو إليه بدعة وضلالة، وأن الهدى في ضده؛ كما شرط تعالى في توبة أهل الكتاب الذين كان ذنبهم كتمان ما أنزل الله من البينات والهدى ليضلوا الناس بذلك: أن يصلحوا العمل في نفوسهم، ويبينوا للناس ما كانوا يكتمونهم إياه، فقال: ﴿إن الذين يكتمون ما أنزلنا من البينات والهدى من بعد ما بيناه للناس في الكتاب أولئك يلعنهم الله ويلعنهم اللاعنون (١٥٩) إلا الذين تابوا وأصلحوا وبينوا فأولئك أتوب عليهم وأنا التواب الرحيم (١٦٠)﴾ [البقرة: ١٥٩، ١٦٠].
“বিদাতের প্রতি আহ্বানকারী ব্যক্তির তওবার অন্তর্গত বিষয় হলো— তিনি যেই বিষয়ের দাওয়াত দিতেন, তা যে বিদাত ও ভ্রষ্টতা ছিল এবং এর বিপরীত বিষয়েই যে হেদায়েত রয়েছে, সেটা স্পষ্টরূপে ব্যক্ত করা। যেমন কিতাবধারীদের তওবার ক্ষেত্রে আল্লাহ শর্তারোপ করেছিলেন। যেই কিতাবধারীদের অপরাধ ছিল— আল্লাহর নাজিলকৃত দলিলপ্রমাণ ও হেদায়েতকে গোপন করা, যাতে করে তারা এর মাধ্যমে লোকদেরকে পথভ্রষ্ট করতে পারে। এদের ক্ষেত্রে আল্লাহ শর্ত দিয়েছিলেন, তারা নিজেদের মধ্যকার আমলকে সংশোধন করবে এবং মানুষদের থেকে যা গোপন করত, তা জনগণের কাছে প্রকাশ করে দেবে। আল্লাহ বলেছেন, ‘নিশ্চয় আমরা যেসব সুস্পষ্ট নিদর্শন ও হেদায়েত নাজিল করেছি, সেসবকে যারা গোপন করে, মানুষের জন্য কিতাবে তা স্পষ্টভাবে ব্যক্ত করার পরে, তাদেরকে আল্লাহ লানত করেন (রহমত থেকে বিতাড়িত করেন) এবং লানতকারীগণও তাদেরকে লানত করেন । তবে তাদের কথা ভিন্ন, যারা তওবা করেছে, নিজেদেরকে সংশোধন করেছে এবং সত্যকে সুস্পষ্টভাবে ব্যক্ত করেছে। এজন্য এদের তওবা আমি কবুল করব। আর আমি অধিক তওবা কবুলকারী, পরম দয়ালু।’ (সুরা বাকারা: ১৫৯-১৬০)” [মুহাম্মাদ বিন আবু বাকার ইবনুল কাইয়্যিম আল-জাওজিয়্যা, উদ্দাতুস সাবিরিন ওয়া জাখিরাতুশ শাকিরিন, তাহকিক : ইসমায়িল বিন গাজি (রিয়াদ : দারু আতাআতিল ইলম, ৪র্থ প্রকাশ, ১৪৪০ হি./২০১৯ খ্রি.), পৃ. ১২৩]