অনুবাদকের কথা
দুনিয়ায় সবচেয়ে বেশি যাঁর জীবনী লেখা হয়েছে, তিনি মহানবি মুহাম্মাদ সাঃ। এমন কোনো সময় নেই, যখন তাঁকে স্মরণ করা হয়নি। এমন কোনো ভাষা নেই, যে ভাষায় তাঁর স্তুতিগাথা রচিত হয়নি। এমন কোনো জনপদ নেই, যেখানে তাঁর জীবনকথা আলোচিত হয়নি। তিনি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ। তিনি সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ রাসুল। তিনি মনুষ্যত্বের পথিকৃৎ। তিনি রিসালাতের আলোকবর্তিকা।
মহানবির মহাজীবনের আখ্যান নিয়ে যুগ যুগ ধরে এই যে এত এত গ্রন্থরচনা, এটি বিশ্বসাহিত্যে তৈরি করেছে নতুন এক ধারা। এ ধারার নাম সিরাতসাহিত্য। পূর্বসূরি মনীষী সিরাত-লেখকদের প্রতি পূর্ণ শ্রদ্ধা রেখেই আমি বলতে চাই, ড. আয়িজ আল কারনির মুলহিমুল আলাম আবহমান সিরাতসাহিত্যে একটি উল্লেখযোগ্য সংযোজন। এতে কাহিনি বর্ণনা মুখ্য নয়, কাহিনি ছেঁকে তার তলা থেকে দার্শনিক তাৎপর্য তুলে আনাও লক্ষ্য নয়—এই গ্রন্থ চিরায়ত রীতিপ্রথাভাঙা এক গভীর আবেগসঞ্জাত কাব্যধর্মী সিরাতগ্রন্থ। এ গ্রন্থ নবিজীবন সম্পর্কে পাঠককে যতটা-না জ্ঞান দেয়, তার চেয়ে ঢের বশি দেয় নিবিড়, গভীর, প্রবহমান, জীবন্ত ও উচ্ছল অনুভূতি।
প্রকাশের পরপরই ব্যতিক্রমী এ সিরাতগ্রন্থটি আরববিশ্বে হইচই ফেলে দিয়েছে। সাহিত্য-সমালোচকেরা বলছেন, মুলহিমুল আলামই আয়িজ আল কারনির শ্রেষ্ঠ রচনা। সংগত কারণেই বাংলাদেশের কালান্তর প্রকাশনী গ্রন্থটির বাংলা করতে দেরি করা ঠিক মনে করেনি। লেখকের তরল আলংকারিক ছন্দোময় কল্লোলিত গদ্যকে সরল কথ্যগদ্যে তরজমা করতে অনুবাদক হিসেবে আমাকে পদে পদে বেগ পেতে হয়েছে। তরজমায় মূলের রসসঞ্চারের ঘাটতি ঘটল কি না, এ নিয়ে আমার চিন্তার অন্ত ছিল না। এ-ই শুধু আশ্বস্ত করতে পারি, সেই চেষ্টায় আমি কোনো কসুর করিনি।
একটি ‘সাহিত্যিক রচনা’ হিসেবে লেখক তাঁর গ্রন্থে অজস্র তথ্য-উপাত্ত বলে গেলেও সেসবের সূত্র উল্লেখ করেননি। আমরা সেটা করেছি, পৃষ্ঠায় পৃষ্ঠায় পাদটীকায় সকল উদ্ধৃতির উৎস জুড়ে দিয়েছি। এমনকি যেখানে তিনি তাঁর গদ্যপ্রবাহে নিজস্ব ধরনে বিশেষ কোনো হাদিসের একটিমাত্র শব্দ উল্লেখ করে সেই হাদিসের দিকে বিজ্ঞ পাঠককে ইশারা করেই বাক্যের স্রোত অন্যদিকে ঘুরিয়ে নিয়ে গিয়েছেন, আমরা সেই হাদিসটিরও সূত্র পাদটীকায় তুলে দিয়েছি। কালান্তরের প্রামাণ্যতার দায় মেটাতেই এটা করতে হয়েছে। এতে লাভ শেষমেশ অনুসন্ধিৎসু পাঠকেরই।
সিরাত রচনায় নতুন মাত্রা যোগ করা এ গ্রন্থটির অনুবাদে আমরা কতটা সফল হয়েছি, কতখানি মূলানুগ ও প্রাণবন্ত হলো কাজটা, সেই বিচারের ভার রইল জ্ঞানী পাঠকের ওপরই। তবে অনুবাদক হিসেবে আমার বড় পাওনাটা আমি পেয়ে গেছি—সে হলো আনন্দ। গ্রন্থটি পড়তে পড়তে, বাংলা করতে করতে বার বার আমার চোখ ভিজে উঠেছে, গভীর আবেগের উচ্ছ্বাসে আমি কেঁপে উঠেছি, নবিজীবনের প্রতি গভীর ভালোবাসায় হৃদয় আমার আর্দ্র হয়েছে। অসামান্য এ গ্রন্থটির সামান্য অনুবাদের কাজে ডুবে থাকা দিনগুলো আমার জীবনের উজ্জ্বল স্মৃতি হয়ে রইল। ব্যতিক্রমী এ গ্রন্থটি তার বিষয়বস্তুর মতোই সম্মান ও সমাদর পাক, এ-ই আমার কামনা।
সাদিক ফারহান
০৮-০৩-১৪৪৬ হিজরি
দুনিয়ায় সবচেয়ে বেশি যাঁর জীবনী লেখা হয়েছে, তিনি মহানবি মুহাম্মাদ সাঃ। এমন কোনো সময় নেই, যখন তাঁকে স্মরণ করা হয়নি। এমন কোনো ভাষা নেই, যে ভাষায় তাঁর স্তুতিগাথা রচিত হয়নি। এমন কোনো জনপদ নেই, যেখানে তাঁর জীবনকথা আলোচিত হয়নি। তিনি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ। তিনি সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ রাসুল। তিনি মনুষ্যত্বের পথিকৃৎ। তিনি রিসালাতের আলোকবর্তিকা।
মহানবির মহাজীবনের আখ্যান নিয়ে যুগ যুগ ধরে এই যে এত এত গ্রন্থরচনা, এটি বিশ্বসাহিত্যে তৈরি করেছে নতুন এক ধারা। এ ধারার নাম সিরাতসাহিত্য। পূর্বসূরি মনীষী সিরাত-লেখকদের প্রতি পূর্ণ শ্রদ্ধা রেখেই আমি বলতে চাই, ড. আয়িজ আল কারনির মুলহিমুল আলাম আবহমান সিরাতসাহিত্যে একটি উল্লেখযোগ্য সংযোজন। এতে কাহিনি বর্ণনা মুখ্য নয়, কাহিনি ছেঁকে তার তলা থেকে দার্শনিক তাৎপর্য তুলে আনাও লক্ষ্য নয়—এই গ্রন্থ চিরায়ত রীতিপ্রথাভাঙা এক গভীর আবেগসঞ্জাত কাব্যধর্মী সিরাতগ্রন্থ। এ গ্রন্থ নবিজীবন সম্পর্কে পাঠককে যতটা-না জ্ঞান দেয়, তার চেয়ে ঢের বশি দেয় নিবিড়, গভীর, প্রবহমান, জীবন্ত ও উচ্ছল অনুভূতি।
প্রকাশের পরপরই ব্যতিক্রমী এ সিরাতগ্রন্থটি আরববিশ্বে হইচই ফেলে দিয়েছে। সাহিত্য-সমালোচকেরা বলছেন, মুলহিমুল আলামই আয়িজ আল কারনির শ্রেষ্ঠ রচনা। সংগত কারণেই বাংলাদেশের কালান্তর প্রকাশনী গ্রন্থটির বাংলা করতে দেরি করা ঠিক মনে করেনি। লেখকের তরল আলংকারিক ছন্দোময় কল্লোলিত গদ্যকে সরল কথ্যগদ্যে তরজমা করতে অনুবাদক হিসেবে আমাকে পদে পদে বেগ পেতে হয়েছে। তরজমায় মূলের রসসঞ্চারের ঘাটতি ঘটল কি না, এ নিয়ে আমার চিন্তার অন্ত ছিল না। এ-ই শুধু আশ্বস্ত করতে পারি, সেই চেষ্টায় আমি কোনো কসুর করিনি।
একটি ‘সাহিত্যিক রচনা’ হিসেবে লেখক তাঁর গ্রন্থে অজস্র তথ্য-উপাত্ত বলে গেলেও সেসবের সূত্র উল্লেখ করেননি। আমরা সেটা করেছি, পৃষ্ঠায় পৃষ্ঠায় পাদটীকায় সকল উদ্ধৃতির উৎস জুড়ে দিয়েছি। এমনকি যেখানে তিনি তাঁর গদ্যপ্রবাহে নিজস্ব ধরনে বিশেষ কোনো হাদিসের একটিমাত্র শব্দ উল্লেখ করে সেই হাদিসের দিকে বিজ্ঞ পাঠককে ইশারা করেই বাক্যের স্রোত অন্যদিকে ঘুরিয়ে নিয়ে গিয়েছেন, আমরা সেই হাদিসটিরও সূত্র পাদটীকায় তুলে দিয়েছি। কালান্তরের প্রামাণ্যতার দায় মেটাতেই এটা করতে হয়েছে। এতে লাভ শেষমেশ অনুসন্ধিৎসু পাঠকেরই।
সিরাত রচনায় নতুন মাত্রা যোগ করা এ গ্রন্থটির অনুবাদে আমরা কতটা সফল হয়েছি, কতখানি মূলানুগ ও প্রাণবন্ত হলো কাজটা, সেই বিচারের ভার রইল জ্ঞানী পাঠকের ওপরই। তবে অনুবাদক হিসেবে আমার বড় পাওনাটা আমি পেয়ে গেছি—সে হলো আনন্দ। গ্রন্থটি পড়তে পড়তে, বাংলা করতে করতে বার বার আমার চোখ ভিজে উঠেছে, গভীর আবেগের উচ্ছ্বাসে আমি কেঁপে উঠেছি, নবিজীবনের প্রতি গভীর ভালোবাসায় হৃদয় আমার আর্দ্র হয়েছে। অসামান্য এ গ্রন্থটির সামান্য অনুবাদের কাজে ডুবে থাকা দিনগুলো আমার জীবনের উজ্জ্বল স্মৃতি হয়ে রইল। ব্যতিক্রমী এ গ্রন্থটি তার বিষয়বস্তুর মতোই সম্মান ও সমাদর পাক, এ-ই আমার কামনা।
সাদিক ফারহান
০৮-০৩-১৪৪৬ হিজরি