‘বাইনারি-ইনক্লুসিভ’ প্রসঙ্গে
আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠছে উপসাগরীয় রাষ্ট্র কাতার। পশ্চিমা দেশগুলোর সাথেও তাদের ভালো সম্পর্ক, যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় ঘাটিগুলোর একটি কাতারে। তাদের ভালো সম্পর্ক আছে ইসলামি দলগুলোর সাথেও। আরব বিশ্বে ইখওয়ানপন্থী আলেমদের সংগঠনের প্রধান পৃষ্ঠপোষকও কাতার। মধ্যপ্রাচ্যের সবচেয়ে পেশাদার ও নিরপেক্ষ গণমাধ্যম আল জাজিরাও এগিয়ে যাচ্ছে কাতারের হাত ধরে।
বছরখানিক আগে কাতার ফিফা ফুটবল বিশ্বকাপের আয়োজন করেছিল। সর্বোপরি আফগান-ফিলিস্তিন সংকটে বিশেষ ভূমিকা রাখার প্রেক্ষিতে কাতারের গুরুত্ব এখন সবার কাছেই সমাদৃত। অবশ্য জনসংখ্যা, সামরিক শক্তি ও আয়তনের বিচারে কাতারের কখনোই আঞ্চলিক শক্তি হয়ে উঠার মতো সামর্থ্য নেই। সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও কাতারের অভিজ্ঞতা থেকে উপকৃত হবার মতো অনেক কিছুই আছে।
আমাদের সমাজে অনেকে মনে করেন, ‘বাইনারি’ ভাঙতে হবে। মৌলবাদ-মডারেটদের মধ্যে মেলবন্ধন ঘটাতে হবে, উভয় পক্ষের সমালোচনা করে নিজেকে মধ্যপন্থী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। আমার ব্যক্তিগত মূল্যায়ন হচ্ছে, বাস্তব জীবনে কার্যত মধ্যপন্থা বলে কিছু নেই। সবাই নিজের ডান দিককে মনে করে মৌলবাদী, বামদিককে মনে করে শিথিলপন্থী, আর নিজে মধ্যপন্থী। বাস্তবতা হচ্ছে, আপনার দুইপাশের দুইজনও নিজেদেরকে মধ্যপন্থীই মনে করে।
আমার কথা হচ্ছে, ‘বাইনারি’র সমালোচনা করা যেতে পারে, এর সাময়িক ও সীমিত গুরুত্ব আছে, তবে দুই বাইনারি মিলিয়ে মিথস্ক্রিয়ায় তৃতীয় পক্ষ/ শক্তি বানানোর কোন উপযোগিতা নেই। কোন মহাপুরুষ অলৌকিক দক্ষতায় এমন কাজে সক্ষম হলেও এখন জনে জনে নন-বাইনারি-ক্রিটিকাল হয়ে উঠার চেষ্টা করছেন। দিনশেষে এতে লাভবান হচ্ছে ক্ষমতাসীন-সুশীল গোষ্ঠীগুলোই, ধরেন, হুজুরের সমালোচনা করা যতটা সহজ, জাতীয় নেতাকে নিয়ে ততটা সহজে সমালোচনা করতে পারবেন? পারবেন না। সমীকরণে হুজুরের সমালোচনটাই প্রধান হয়ে উঠবে।
ইসলামপন্থী/হুজুরদের ইলমি/কৌশলগত সমালোচনা করাই যেতে পারে, তবে যারা একেই নিজেদের ব্রত বানিয়ে নেন, তারা দিনশেষে নিজেদেরকে ভুল যুদ্ধে জড়িয়ে ফেলেন, নিজেদেরকে দাড় করিয়ে দেন নিজেদের জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে। আবার যারা সেকুলারদের সংশোধন/খণ্ডনে মনোনিবেশ করেন, তারাও একপর্যায়ে ইসলামি ব্যাখ্যা দান করতে শুরু করেন। এর খুব ভালো দৃষ্টান্ত হচ্ছে ফরহাদ মজহার। সেকুলারদের সমালোচনায় তার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকলেও একসময় এসে দেখা যাচ্ছে তিনি ইসলামের নতুন ব্যাখ্যা কায়েম করতে চাচ্ছেন।
কাতারের দিকে দেখেন, বাইনারি/ননবাইনারি/ এনটি-থিসিসে না গিয়েও প্রকল্প আকারে এর উপযোগিতা অনেক বেশী। ইসলামপন্থীদের ‘মোডারেট’ বানানোর চেষ্টাগুলো ব্যর্থ হবে, সেকুলাররাও কখনোই ‘ইসলামপন্থী’ হবে না, তাই তাদেরকে ‘ইসলামি’ বানানোর প্রচেষ্টার অর্থ পিনাকী ভট্টাচার্যকে কমেন্ট সেকশনে ইসলামের দাওয়াত দানের মতই। যোগাযোগ, কূটনীতি, বোঝাপড়া অনেকবেশী জরুরী।
সেকুলারদের ইসলামপন্থীদের অনুষ্ঠানে দাওয়াত দেন, প্রতিষ্ঠানে রাত কাটানোর আমন্ত্রণ জানান। ভয় কাটাতে সাহায্য করেন। সেকুলার প্রতিষ্ঠান-ব্যক্তিত্বের সাথে বসেন, একসাথে চা খান, তাদের বই কিনেন, আড্ডা মারেন। তবে মূল কথাটা আগের মতই রইল, ইসলামপন্থী ও সেকুলারদের ‘উদার’ বানিয়ে তৃতীয় শক্তি গঠনের প্রচেষ্টাটা অর্থহীন, কখনো বিপদজনক।