#৪৭৬৬
৫ তারিখের পর বেশ কিছুদিন আমার শ্বশুরবাড়ির দিকের কোন কোন আত্মীয় স্বজন ও পরিচিতজনদের বাসায় গেলে দেখতে পেতাম ফুলের তোড়া আর মিষ্টির বহর।
এই ফুল আর মিষ্টি কারা এনে দিয়েছিল?? সহজ, তদবিরবাজ সরকারী কর্মকর্তারা। উদ্দেশ্য, প্রমোশন।
হাসিনার বিদায়ের পরপরই প্রশাসনকে ইমিডিয়েটলি স্ট্যাবিলাইজ করার প্রয়োজন পড়ে, সেই প্রয়োজন মেটাতে প্রশাসনে ঢোকানো হয় প্রচুর রিটায়ার্ড আমলাদের, এবং তাদের সিংহভাগ আসে একটা রাজনৈতিক দলের সাথে লবিং করে। রাতারাতি কন্ট্রোলে নেয়া হয় পুলিশ প্রশাসন, দখল করা হয় শীর্ষস্থানীয় সব মিডিয়া। আমরা অবাক হয়ে লক্ষ্য করি, দলবদলের প্রতিযোগিতা চলছে মিড লেভেলে, টপ লেভেলে চলছে উড়ে এসে জুড়ে বসাদের রাজত্ব।
ফলে, প্রতিটা মন্ত্রনালয়ে জমেছে অভিযোগের পাহাড়। সৎ, দেশপ্রেমিক জুনিয়র অফিসারদের কাজ করতে দেয়া হচ্ছে না।
কারা করতে দিচ্ছে না??
সিনিয়র আমলাদের একটা অংশ।
এই সিনিয়র আমলাদের কাদের প্রেসক্রিপশনে বসানো হয়েছে?? খুজলে কোন কোন রাজনৈতিক দলের কয়েকজন নেতার নাম পাওয়া যায় যাদের ইন্ডিয়ান হাইকমিশনের সাথে খুব দহরম মহরম চলছে।
পুলিশ এবং মিডিয়াতেও একই অবস্থা। বাইরে থেকে খোল বদলেছে শুধু, ভেতরটা রয়ে গেছে একই রকম।
এখানেও একটু ভেতরটা ঘাটলেই ঐ কয়েকজন রাজনৈতিক নেতা ও একটা বিশেষ হাইকমিশনের সাথে তাদের যোগাযোগের বিষয়টা সামনে চলে আসে।
ফলে দেখা যাচ্ছে, সরকারের টপ প্রায়োরিটি এজেন্ডা যেগুলো, সেগুলো বাস্তবায়ন করা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে সরকারকে দুর্বল ও ব্যর্থ মনে হচ্ছে। এতে করে সুবিধা হচ্ছে ওল্ড স্কুল পলিটিশিয়ানদের, তারা মনে করছেন দ্রুত নির্বাচন বাগিয়ে নিয়ে ক্ষমতায় চলে গেলেই খেল খতম। বাকিটা নিজেরা নিজেরা সামলে নেয়া যাবে।
সরকারকে এভাবে ব্যর্থ করে তোলার কারিগরদের মধ্যে একদম প্রথমেই যে দুজনের নাম আসে তারা হলেন ১)সিরাজুল ইসলাম সাথী, (মুখ্য সচিব) ও ২) মোখলেস উর রহমান। এর আগে এসবে নেতৃত্ব দিতেন ডিজি এডমিন ও ডিজি পিএমওতে থাকা দুই সচিব৷ যাদের ঐ দায়িত্ব থেকে অপসারন করা হয়েছে।
এখন, পুলিশ প্রশাসন, জনপ্রশাসন, নির্বাচন কমিশন এবং মিডিয়া কোনকিছুই সংস্কার না করে, গনহত্যার বিচার না করে, আওয়ামী লীগের দুর্নীতির বিচার না করে শুধু নির্বাচন দিয়ে দিলেই কি দেশ বদলে যাবে??
অবশ্যই না।
বরঞ্চ, পুরনো যে ফ্যাসিস্ট কাঠামো তা অক্ষত থেকে যাবে, অক্ষত থাকবে ইন্ডিয়ান হেজিমনি। ক্ষমতায় থাকা নামগুলো বদলাবে শুধু, কিন্তু বাংলাদেশ রয়ে যাবে ইন্ডিয়ার সেই অঘোষিত কলোনিই।
এবং এটাই বাংলাদেশকে পুনর্দখলের ভারতীয় স্ট্র্যাটেজি।
এই স্ট্র্যাটেজির মাধ্যমে তারা বড় রাজনৈতিক দলগুলোতে নিজেদের পছন্দের মানুষদেরকে গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়ে এসেছে, ঐ নেতাদেরকে দিয়েই মিডিয়া-পুলিশ-সিভিল এডমিনে নিয়ে এসেছে এমন অফিসারদেরকে, যাদের প্রায়োরিটি বাংলাদেশ না, অন্য কিছু।
প্রশ্ন উঠতে পারে, তিন ছাত্র উপদেষ্টা এবং প্রধান উপদেষ্টা কি করছেন তাহলে??
তারা যেদিন জয়েন করেন সেদিনই আমি বলেছিলাম, প্রায় অসম্ভব একটা কাজ তারা হাতে নিয়েছেন। তাদের যে জব রেস্পন্সিবিলিটি, সেটার ওপর কোন ইন্টার্নশিপ, কোন ট্রেইনিং তারা পান নাই, নাই তাদের কোন এক্সপেরিয়েন্স। শুধু মেধা আর দেশপ্রেম নিয়ে সামনে এগিয়ে যেতে চাচ্ছেন তারা। এটা বলার সুযোগ নেই যে তারা তাদের ব্যক্তিস্বার্থ ও সামষ্টিক স্বার্থে কিছু করে না, বরঞ্চ সেটা অবশ্যই এক্সিস্ট করে, করাটাই স্বাভাবিক, কিন্তু এখন পর্যন্ত দেশের স্বার্থের বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপ তাদের নিতে দেখা যায় নি এবং সাহসের সাথে তারা ইন্ডিয়ান প্লটকে মোকাবিলা করে এসেছে।
আসিফ বা নাহিদরা যে পদক্ষেপগুলো নিচ্ছে, সেগুলোকে বারবার বাধাগ্রস্ত করছে এই আমলাতান্ত্রিক স্বৈরাচার ও তাদের সহায়তাকারী ইন্ডিয়ান কোলাবোরেটর পলিটিক্যাল ফোর্স।
ছাত্র উপদেষ্টাদের দক্ষতা, পরিপক্কতা ও অভিজ্ঞতার অভাব তাদের ভোগাচ্ছে, কিন্তু এরচেয়ে বেশি ভোগাচ্ছে, প্রশাসনে তাদের একান্ত নিজের বলে কেউ নাই। তাদের সততার যে অভাব নাই, এইটা দেশের মানুষ জানে। বিশেষভাবে তরুণদের একচেটিয়া সাপোর্ট এখনো আসিফ-নাহিদের প্রতি আছে এবং একই ভাবে তা আছে ড. ইউনুসের প্রতিও। কিছু বিতর্কিত কাজ না করলে আসিফ নজরুল স্যারও হয়তো এই সাপোর্ট পেতেন।
এই ব্যাপক জনসমর্থনের কারনে এরা এখন হয়ে উঠেছে ইন্ডিয়ান দালালদের গলার কাটা। তাই ইন্ডিয়ান দালালরা আমলাতান্ত্রিক ফ্যাসিজমের মাধ্যমে আটকে দিচ্ছে ওদের ফাইল, আটকে দিচ্ছে ওদের দেয়া প্রমোশন। এই একই অবস্থা চলছে ফাওজুল কবির খান, ফরিদা আখতার, জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান সহ বেশ কজন উপদেষ্টার মন্ত্রনালয় সমুহে। সম্প্রতি জনপ্রশাসন, সংবিধান ও পুলিশ প্রশাসন সংস্কারের কিছু উদ্যোগ নেয়ার ফলে এখন বাংলাদেশে ইন্ডিয়ান হেজিমনির বিরুদ্ধে মুখোমুখি অবস্থানে দাঁড়িয়ে আছে মাহফুজ, আসিফ এবং নাহিদ। আধিপত্যবাদীদের দোসরেরা সরকারের ভেতরে থেকে সরকারকে অচল যেমন করছে তেমনি চেষ্টায় আছে বাংলাদেশের ওপর ইন্ডিয়ান হেজিমনি অটুট রেখে দেয়ার।