প্রচলিত শিক্ষা যদি মানুষ তৈরি করতে পারত তবে স্বাধীনতার পরে শিক্ষার হার বৃদ্ধির সাথে সাথে ধর্ষণ, লুটপাট, মাদক, ইভটিজিং, খুন, ঘুষ, সম্পদ দখল থেকে শুরু করে সকল অপকর্ম কমার কথা ছিল। শিক্ষকদের হওয়ার কথা ছিল এ সমাজের সবচেয়ে আদর্শবান মানুষ। কিন্তু আমরা দেখতে পাই এর সম্পূর্ণ ভিন্ন চিত্র। হয়তো আপনারা বলবেন ইউরোপ, আমেরিকাতে শিক্ষার কারণে মানুষ ভালো আছে দুর্নীতিবাজ না। এটা একটা পয়েন্ট। তবে মনে রাখতে হবে ইউরোপ, আমেরিকা, রাশিয়া বা চীনে বাহ্যিকভাবে চোখধাঁধানো বড় বড় বিল্ডিং বা মেশিনারি তৈরি করেছে ঠিকই কিন্তু পৃথিবীতে তাদের দ্বারা সবচেয়ে মানবিক বিপর্যয় ঘটেছে এবং ঘটে চলেছে। বিংশ শতাব্দীতে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ, কোল্ড ওয়ার, ভিয়েতনাম যুদ্ধ, রুয়ান্ডার গণহত্যা, ইন্দোনেশিয়ার গণহত্যা ঘটিয়ে কোটি কোটি মানুষকে কারা মেরেছে?।
একুশ শতকে আফগানিস্তানে রক্তপাত, ইউক্রেনে রক্তপাত, গাজায় হামলা, মিয়ানমারে জাতিগত নিধনযজ্ঞ কারা চালিয়েছে বা চালাচ্ছে তা সবার কাছেই পরিষ্কার। নিজের অর্থনৈতিক স্বার্থের জন্য অন্য মানুষকে পশু মনে করে তারা হত্যা করে, এটাই তাদের আধুনিক বিশ্ব আর আধুনিক শিক্ষার আলটিমেট লক্ষ্য।
এটাতো গেল বাহ্যিক দিক। পশ্চিমারা সভ্যতার কথা বলে সবচেয়ে অসভ্য এবং নোংরামি কর্মকাণ্ডে লিপ্ত রয়েছে। লিভ টুগেদার, মদ্যপান, পরকীয়া, বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক, অবাধ যৌনাচার ইত্যাদির রোগে লিপ্ত হয়ে মানব সভ্যতাকে ধ্বংস করছে তারা। সিংগেল মাদার কনসেন্ট ডেভেলপ করে বিকৃত যৌনতাকে একটা আর্টে পরিণত করা হয়েছে পশ্চিমা সমাজে। ইউরোপের পারিবারিক কাঠামো ভেঙে পড়ায় তরুণ প্রজন্ম বিকৃত যৌনাচারে লিপ্ত হচ্ছে। প্রায় অর্ধেক সন্তানের জন্ম হয় সেখানে কিন্তু তারা তাদের পিতৃপরিচয় জানে না। কতটা জাহেলিয়াতের মধ্যে তারা আছে ভাবাও যায় না। দিন দিন ইউরোপে নেগেটিভ পপুলেশন হচ্ছে, আর মেয়েদেরকে স্বাধীনতার নামে কর্মক্ষেত্রে এক চেটিয়া নামানো হয়েছে। আর তাদেরকে ভোগ্য পণ্য হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে সমাজে। পুরুষের কাপড়ের বিজ্ঞাপনেও নারী ছাড়া চলে না। তাছাড়া নারীরা পুরুষদের সাথে পাল্লা দিয়ে অর্থ উপার্জন করছে কিন্তু এদিকে যে পারিবারিক কাঠামো ভেঙে পড়ছে সেদিকে তাদের কোনো ভ্রূক্ষেপই নাই।
একটি পরিবারে মায়ের ভূমিকা অনেক বেশি। নারীদের গৃহস্থালি কার্যক্রমের অর্থনৈতিক প্রভাবও অনেক বিস্তৃত। একজন নারীকে পরিবার পরিচালনায় অনেক ব্যস্ত সময় পার করতে হয়। একজন নারী একটি পরিবারের জন্য একজন মা, একজন স্ত্রী, একজন ম্যানেজার হিসেবে ভূমিকা রাখে। আসুন, এবার দেখা যাক ৫ জনের একটি পরিবারে একজন নারীকে কী পরিমাণ কাজ করতে হয়। দৈনিক রান্নাবান্না করা, সন্তান লালন-পালন করা, ঘর পরিপাটি রাখা, সন্তানদের লেখাপড়া করানো, পরিবারের বয়োবৃদ্ধদের সেবা যত্ন করা। এ সকল কাজে তাকে অন্তত দিনের ১৫ ঘণ্টা ব্যস্ত সময় পার করতে হয়। এসকল কাজ অত্যধিক কষ্টসাধ্য। এ সকল কাজের জন্য যদি কোনো লোক নিয়োগ দেওয়া হয় তবে মাসে অন্তত ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা বেতন দিতে হবে। কিন্তু তার পরেও মন মতো কাজগুলো করা অসম্ভব। আপনার সন্তানকে অন্য কেউ মমত্ববোধ দিয়ে গঠন করে দেবে না। কিন্তু নারীদের গৃহস্থালি এ কাজগুলোর মর্যাদা সমাজ দেয় না। ফলে নারীরা বাসার বাহিরে কাজ করাকে আত্মসম্মানের অংশ মনে করে। আর এজন্য সামাজিকীকরণ নষ্ট হচ্ছে। ধর্মহীন শিক্ষা মানুষকে ভোগের পণ্য হিসেবে তৈরি করে, মনুষ্যত্ব ও মানবিক মূল্যবোধ সম্পন্ন মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে পারে না। যাইহোক, পশ্চিমারা তাদের শিক্ষাকাঠামো এবং আইনের প্রয়োগ এমন পর্যায়ে নিয়েছে যাতে কেউ ঘুষ খাবে না বা দুর্নীতি করবে না ঠিকই কিন্তু শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য তাদের দিয়ে বাস্তবায়নও হবে না। যদি তাই হতো তাহলে এই পৃথিবীটা সাম্যে ভরে যেত।
এখন দেখার চেষ্টা করব স্বাধীন বাংলাদেশের শিক্ষাকাঠামো কেন এত দুর্বল। এর উত্তর খুঁজতে গেলে আমাদেরকে ভৌগোলিক সমীকরণের দিকে চোখ রাখতে হবে। বাংলাদেশ ভৌগোলিকভাবে এমন একটি অবস্থানে আছে যেখানে তিন দিক আধিপত্যবাদী
ভারত কর্তৃক ঘেরাও করা। ১৯৪৭ সালে দ্বি-জাতিতত্ত্বের ওপর ভিত্তি করে মুসলিম মেজরিটির এ দেশটি মূলত হাজার মাইল দূরের পাকিস্তানের সাথে যুক্ত হয়। তখন থেকেই শুরু হয় ভারতের ষড়যন্ত্র। এখানে একটি প্রশ্ন হলো, বাংলাদেশ যদি পাকিস্তানের সাথে না গিয়ে ১৯৪৭ সালে ভারতের অঙ্গরাজ্য হতো তবে স্বাধীন হওয়া এ দেশের পক্ষে কি আদৌ সম্ভব ছিল?
যেমন পরণতি বরণ করেছে হায়দারাবাদ, জুনাগর, মানভাদর, গোয়া, সিকিম আর কাশ্মির। হায়দারাবাদের আয়তন ছিল ৮২ হাজার বর্গমাইল অর্থাৎ বাংলাদেশের চেয়েও বড়। ব্রিটিশ আমলেও মুসলিম শাসিত এ অঞ্চলটি ছিল স্বাধীন কিন্তু ভারত-পাকিস্তান স্বাধীনতার মাত্র এক বছর পরেই হায়দারাবাদকে ষড়যন্ত্র করে দখল করে নিয়েছে ভারতীয়রা। আজাদির জন্য এ অঞ্চলের মানুষেরা রক্ত দিলেও ভারত নেহেরু ডকট্রিনের অধীনে তাদের স্বাধীনতা কেড়ে নিয়েছিল। তবে বাংলাদেশ সেখানে কীভাবে স্বাধীনতার আশা করত?