জুলাই-আন্দোলনে প্রায় একশোজনের মতো মাদরাসার ছাত্র-শিক্ষক মারা গেছেন। সংখ্যাটা এত বেশী কেন? এই প্রশ্নটা করা জরুরি। তুলনা নয়, বুঝার জন্য বলি, আন্দোলনে নিহত হিন্দুর সংখ্যা হয়ত নয়জনের মত। বামপন্থী রাজনীতি করেন এমন নিহতের সংখ্যা হয়তো পাঁচজনও হবে না—অথচ সংখ্যাগত দিক থেকে কওমি মাদরাসা সংশ্লিষ্টদের সংখ্যা এক কোটির চেয়েও কম।
আমার মতে এর প্রধান কারণ দু’টি :
ক) গত পনের বছরে হুজুর শ্রেণীর বিরুদ্ধে যে সম্মিলিত ঘৃ ণা উৎপাদন করা হয়েছে, সেটা অকল্পনীয়। আমার বন্ধু-বান্ধবদের মধ্যে এমন একজনও নেই, যারা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে পুলিশি নির্যাতনের শিকার হয়নি। কাজেই, মাদরাসার ছাত্ররা ছিল পুলিশের সহজ টার্গেট। ঠিক একই কারণে এলিট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে নিহতের সংখ্যা নাই বললেই চলে।
খ) অব্যাহত নির্যাতনের মুখে মাদরাসার ছাত্ররা রাজনীতিতে অংশ নিতে উৎসাহিত হয়েছেন, বাধ্য হয়েছেন। দুই হাজার তেরোতে মাদানীনগর মাদরাসাকে বাঁচাতে এলাকার মানুষরা নেমে এসেছিলেন, ত্রিশজনের মত শহীদ হয়েছেন। কাজেই, এলাকার ছেলেদের বিপদে মাদরাসার ছাত্রদেরকেও মাঠে নামতে হয়েছে।
যাত্রাবাড়ি-সাভারের প্রত্যক্ষদর্শীরা আমাকে বলেছেন, মাদরাসার ছাত্ররা সরাসরি সংঘর্ষে জড়িয়েছেন, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার বদলে শক্তি প্রদর্শন করেছেন, কাজেই হতাহতের সংখ্যাও বৃদ্ধি পেয়েছে।
এখানে কিছু আশংকার জায়গা আছে, সম্ভাবনাও আছে। মসজিদ-মাদরাসাকে রাজনীতির উর্ধ্বে রাখা জরুরি। ইলমচর্চা সমাজের একটা গুরুত্বপূর্ণ সার্ভিস : ইমামতি, ফতোয়া, দরস—এগুলো যে কোন মুসলিম সমাজের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। কাজেই, চিকিৎসার মত ইলমচর্চাকেও ‘রাজনৈতিক’ বানানো যাবে না। কে কীভাবে দেখেন জানি না, মনে রাখবেন, শারীরিক অসুখের চেয়ে মনের অসুখ-মতাদর্শিক অসুখ কোনঅংশেই কম ঝুঁকিপূর্ণ নয়। সেনাবাহিনী যু দ্ধ করে সীমান্তে-সমরাস্ত্রে—আলেম/চিন্তাবিদরা যু দ্ধ করেন মাথায়-মগজে-দর্শনে।
মসজিদ-মাদরাসার বাইরে আলেমরা অবশ্যই রাজনীতি করবেন—বাংলাদেশে ঐতিহ্যপন্থী রাজনীতির বিপুল সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। জামায়াত লিবারেল হবার প্রেক্ষিতে দেশের পনের-বিশ শতাংশ মানুষ এখন ‘রিপ্রেজেন্টেশনহীন’। এদেরকে রিপ্রেজেন্ট করতে আলেমদেরকে এগিয়ে আসতে হবে, পাশাপাশি মাথাতে রাখতে হবে দেশের বাকি আশি শতাংশ আপাতত আলেমদেরকে সমর্থন করবে না।
মুশকিল হল, পনের/বিশ শতাংশ দূরে থাকুক, আলেমরা বড়জোর পাঁচ-সাত শতাংশের বেশী মানুষকে নিয়ন্ত্রণ করেন না। বাকি, তেরো/পনের শতাংশকে আলেমরা যদি মোবিলাইজ না করতে পারেন, তবে দেশে উগ্র পন্থা ছড়িয়ে পড়ার ভালো আশংকা আছে।
- ইফতি ভাই