আপনি কি মশারি টানান?
দেশের কোনো এক ক্যান্টনমেন্ট এলাকা। পাশের মহল্লাতে এক তাবলীগী জামাত অবস্থান করছে। এলাকার এক সাথি জামাতের এক সাথিকে নিয়ে দেখা করতে গেলেন এক সামরিক কর্তার কাছে। অফিসারের মেজাজ কোনো কারণে চড়া ছিল।
দাওয়াতি কাজে আসা লোক দুটি অফিসারের বাসার রুমের দুয়ারে দাঁড়িয়ে সালাম দিতেই অফিসার তেলেবেগুনে জ্বলে উঠলেন।
‘এই মিয়া, কি চাও, হ্যাঁ? খালি আল্লাহ-খোদা, আল্লাহ-খোদা! কাওরে ডরাই না, যাও।’
ধমক শুনে দুজন দরজা থেকে সরে গেলেন।
কিন্তু পরমুহূর্তে জামাতের সাথিটি রুমের দরজায় ফিরে এসে বললেন, ‘স্যার, একটা কথা জিজ্ঞেস করি?’
‘আবার কী কথা? ’
‘স্যার কি রাতে মশারি টানিয়ে ঘুমান?’
‘হ্যাঁ, ঘুমাই, তো?’
‘না, স্যার, তেমন কিছু না। আপনি আসলে মশাকে ভয় পান। আমি যাই। আসসালামু আলাইকুম। ’
কথা বলেই লোকটা চলে গেল।
কিন্তু অফিসারের মাথায় কথাটা আটকে গেল। আরে শালা, সারাদিন বলে বেড়াই, কাওরে ডরাই না। কাউকে ভয় পাই না। অথচ এমন কোনো জিনিস নেই, যাকে ভয় পাই না। মশা, মাছি, সাপ, বিচ্ছু, তেলাপোকা, ইঁদুর থেকে শুরু করে বউ, বাচ্চাসহ কাকে না ভয় করি? এমনকি নিজের অধীনে থাকা সাধারণ সৈনিকটাকেও ভয় পাই।
সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতে অফিসার সকালে জামাতের সাথিকে নিয়ে আসা স্থানীয় লোকটিকে খবর দিলেন। লোকটি এল।
অফিসার বললেন, ‘তোমার সাথে যে সকালে আসছিল, সে এখন কোথায়? ’
লোকটি প্রমোদ গুণে বলল, ‘স্যার, সাধারণ অশিক্ষিত মানুষ। না বুঝে একটা কথা বলে ফেলেছে। মাফ করে দেন।’
‘আরে মিয়া, সে যা বলেছে ভালোই বলেছে। তার সাথে আমি দেখা করতে চাই।’
‘স্যার, উনি তো জামাতের সাথি। উপশহর মসজিদে আছেন।’
সন্ধ্যার পর অফিসার মসজিদে গেলেন। লোকটির সাথে দেখা করে বললেন, ‘আপনার কথা আমাকে খুব টাচ করেছে।’
লোকটি বললেন, ‘আসলে স্যার, আমরা যদি সঠিকভাবে আল্লাহর ভয় অর্জন করতে পারি, তাহলে সমস্ত সৃষ্টির ভয় অন্তর থেকে বের হয়ে যাবে, ইন শা আল্লাহ। আর আল্লাহকে ভয় না করলে, সমস্ত সৃষ্টিই আমার জন্য ভয়ের কারণ হয়ে দাঁড়াবে।’
অফিসার তার কথায় মাথা নেড়ে সায় দিলেন।
পালটে গেল একটি জীবন। শুধরে গেল একটি অন্তর, বদলে গেল একটি পথ।
বইঃ গল্প কল্প চিন্তা
পৃষ্ঠাঃ ৩৪
লেখকঃ আহমাদ ইউসুফ শরীফ হাফি.