কথিত মুফতি ইমরান বিন বশিরের মিথ্যাচারের জবাব। পর্বঃ ১
কথিত এই মুফতি ইমরা ইসলাম ত্যাগ করা কারণ হিসেবে যে সব কারণ উপস্থাপন করেছেন তার মধ্যে অন্যতম একটি হলো, রাসুল (সাঃ) কে নিয়ে ব্যাঙ্গ-বিদ্রুপ করায় এক মহিলা কবি ‘আসমা বিনতে মারওয়ান’কে ঘুমন্ত অবস্থায় নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে।
এই অভিযোগের সত্যতা কতটুকু তা দেখে নেয়া যাক।
অভিযোগের উৎস;
আল্লামা ইদরিস কান্ধলভী লিখিত সীরাতুল মুস্তফা সহ আরো কয়েকটি সিরাতে এই ঘটনাটি উল্লেখ রয়েছে যে , আসমা বিনতে মারওয়ান রাসুল (সাঃ) এর বিরুদ্ধে কুৎসামূলক কবিতা রচনা করত এবং রাসুল (সাঃ) কে নানাভাবে কষ্ট দিত। মানুষকে নবী (সাঃ) এর বিরুদ্ধে বিদ্রোহী করে তুলতো। আর এই কারণেই উমায়র (রাঃ) তাকে তরবারি দিয়ে হত্যা করেন। [ সীরাতুল মুস্তফা; খন্ড নংঃ ২; পৃষ্ঠা নংঃ ১৪৪ ]
আসমা বিনতে মারওয়ানকে হত্যা করা সংক্রান্ত যে বর্ণণা রয়েছে তা আসলে মাওযু বা জাল বর্ণণা। এটি বর্ণনা করেছে মুহাম্মাদ ইবন হাজ্জাজ যার ব্যাপারে;
ইমাম বুখারী(র.) বলেছেন, তার হাদিস প্রত্যাখান করা হবে।
ইবন মাঈন(র.) বলেছেন, সে একজন দুষ্টু মিথ্যাবাদী।
দারাকুতনী(র.) বলেছেন,
সে একজন মিথ্যাবাদী। অন্যত্র বলেছেন, সে সিকাহ (নির্ভরযোগ্য) নয়। [ মিযানুল ই’তিদাল ৩/৫০৯ ]
ইবন ‘আদি বলেছেন,
মুহাম্মদ ইবনুল হাজ্জাজ সেই মহিলার সম্পর্কে হাদিস জাল করেছেন যে আল্লাহর রাসুল্ললাহ (সাঃ) কে ব্যাঙ্গ করতো। হাজ্জাজ এর বর্ণণা অনুযায়ী ঐ মহিলার হত্যাকান্ডের পর রাসুল (সাঃ) বলেছিলেন যে, “আপনি যা করেছেন তার বৈধতা এমন কিছু যা কেউ বিতর্ক করতে পারে না। [ ইবনুল জাওযী রচিত আল-মাওদুআত 3/18 ]
এই হাদীসটি শাইখ আল-আলবানী (রহঃ) আদ-দাইফাহ (৬০১৩) গ্রন্থেও উল্লেখ করেছেন; তিনি বলেন,
এটা বানোয়াট (মাওযু‘)। [ https://islamqa.info/en/answers/177694/asma-bint-marwan-did-the-prophet-order-her-killing ]
এই ঘটনাটি ওয়াকিদি আল মাগাযীতে (পৃষ্ঠা ১৭৩) বর্ণনা করেছেন। তার বরাতে আল ক্বাদাঈ (৮৫৮) বর্ণনা করেছেন। ইমাম আহমাদ(র.) ওয়াকিদির ব্যাপারে বলেছেন, যার পুরো নাম ছিল মুহাম্মাদ ইবন উমার ইবন ওয়াকিদি,
সে একজন মিথ্যাবাদী, সে হাদিস পরিবর্তন করে।
ইবন মাঈন(র.) বলেছেন,
সে (ওয়াকিদি) বিশ্বস্ত নয়। অন্যত্র তিনি বলেছেন, তার বর্ণিত হাদিস লিপিবিদ্ধ করা যাবে না।
ইমাম বুখারী(র.) এবং আবু হাতিম(র.) বলেছেন, সে মাতরুক (প্রত্যাখ্যাত)।
আবু হাতিম(র.) এবং নাসাঈ(র.) বলেছেন, সে হাদিস জাল করে।
ইবন ‘আদি(র.) বলেছেন,তার বর্ণিত হাদিস অদ্ভুত এবং সমস্যাযুক্ত।
ইবন মাদিনি(র.) বলেছেন, ওয়াকিদি হাদিস জাল করে। [ মিযানুল ই’তিদাল ৩/৬৬৩ ]
ইমাম দারা কুতনী, ইমাম ইবন যুরাইক আল মাকদিসি, ইমাম আবু নুআইম আল আসবাহানী প্রমুখ মুহাদ্দিস ওয়াকিদিকে দুর্বল রাবী বলে উল্লেখ করেছেন। ইমাম দারাকুতনি (রহ) তার ‘al-Ḍuʿafāʾ wa-l-matrūkūn’ গ্রন্থে বলেছেন, তাকে নিয়ে ইখতেলাফ আছে, সে হাদিসের ক্ষেত্রে অত্যন্ত দূর্বল। [ https://hadithtransmitters.hawramani.com/%D9%85%D8%AD%D9%85%D8%AF-%D8%A8%D9%86-%D8%B9%D9%85%D8%B1-%D8%A7%D9%84%D9%88%D8%A7%D9%82%D8%AF%D9%8A/ ]
ইমাম ইবন যুরাইক আল মাকদিসি ‘Man takallama fī-hi al-Dāraquṭnī fī Kitāb al-sunan’ গ্রন্থে বলেন,
ওয়াকিদি এবং ইসহাক ইবনে হাজম হাদিসের ক্ষেত্রে যঈফ। [ https://hadithtransmitters.hawramani.com/%D9%85%D8%AD%D9%85%D8%AF-%D8%A8%D9%86-%D8%B9%D9%85%D8%B1-%D8%A7%D9%84%D9%88%D8%A7%D9%82%D8%AF%D9%8A/ ]
ইমাম আবু নুআইম আল আসবাহানী ‘al-Ḍuʿafā’ গ্রন্থে ইমাম বুখারীর বরাত দিয়ে বলেন, হাদিসের ক্ষেত্রে ওয়াকিদি পরিত্যাজ্য বা গ্রহণযোগ্য নয়। [ https://hadithtransmitters.hawramani.com/%D9%85%D8%AD%D9%85%D8%AF-%D8%A8%D9%86-%D8%B9%D9%85%D8%B1-%D8%A7%D9%84%D9%88%D8%A7%D9%82%D8%AF%D9%8A/ ]
নাজম আবদ আল-রহমান খালাফ তার ‘মুজাম আল-জারহ ওয়া-ল-তা’দিল লি-রিজাল আল-সুনান আল-কুবরা’ গ্রন্থে বলেন,
ওয়াকিদির কথা গ্রহণযোগ্য নয়, সে হাদিসের ক্ষেত্রে শক্তিশালী নয়, তার কথা দলিল নয়, তার কথা তোমরা অনুসরণ করিও না। [ https://hadithtransmitters.hawramani.com/%D9%85%D8%AD%D9%85%D8%AF-%D8%A8%D9%86-%D8%B9%D9%85%D8%B1-%D8%A7%D9%84%D9%88%D8%A7%D9%82%D8%AF%D9%8A/ ]
সীরাত গ্রন্থে মিথ্যা ঘটনার উল্লেখ থাকার কারণ
স্কলারগণ রাসুল (সাঃ) সম্পর্কিত সমস্ত ঘটনা লিপিবদ্ধ করে রাখেন যাতে করে তা হারিয়ে না যায়। এই কারণে স্কলারগণ যা যা শুনেন তা উল্লেখ করে রাখেন এবং পরবর্তীতে স্কলারগণ সেই ঘটনাগুলো তাহকিক করেন বা সত্য মিথ্যা যাচাই করেন। এভাবে আমরা কোন কোন ঘটনা মিথ্যা, বানোয়াট এবং কোন কোন ঘটনা সত্য তা নির্ধারত করতে পারি। কিন্তু যদি সমস্ত কথা উল্লেখ না থাকতো তবে সত্য মিথ্যা নির্ধারণ করা অসম্ভব হয়ে পড়তো। নাস্তিকরা যে সীরাত গ্রন্থ থেকে আসমা বিনতে মারওয়ানকে হত্যার অভিযোগের রেফারেন্স নিয়ে থাকে সেই সীরাত গন্থেই বলা হয়েছে যে,