বাংলা কবিতা @bangla_kobita Channel on Telegram

বাংলা কবিতা

@bangla_kobita


বাংলা কবিতার জন্য নিবেদিত টেলিগ্ৰাম চ‍্যানেল। ভালো কবিতা পড়তে চাইলে চ‍্যানেলটিতে যোগদান করুন।
যোগাযোগ: [email protected]

বাংলা কবিতা (Bengali)

বাংলা কবিতা নামের এই টেলিগ্ৰাম চ‍্যানেলটি বাংলা ভাষার কবিতা উৎসাহিত করতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। চ‍্যানেলটি বাংলা ভাষার সবচেয়ে উত্তম কবিতা সমৃদ্ধ করে এনেছে। যদি আপনি ভালো কবিতা পড়তে এবং সহজেই তা শেয়ার করতে চান, তাহলে এই সত্যিই আপনার জন্যে একটি অবিচ্ছিন্ন উপায়। এখানে আপনি বাংলা ভাষার শ্রেষ্ঠ কবিতা সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পারবেন।
এই টেলিগ্ৰাম চ‍্যানেলে যোগদানের জন্য আপনার অগ্রিমভাবে ধন্যবাদ জানাই। যোগাযোগ করতে [email protected] ইমেইল ঠিকানা ব্যবহার করুন।

বাংলা কবিতা

17 Nov, 06:13


শুকনো পাতা
তারাপদ রায়

শুকনো পাতা হাওয়ায় উড়তে উড়তে
খোলা দরজা দিয়ে ঘরে ঢোকে
লেখার টেবিলের নীচে পায়ের কাছে
ঘুর ঘুর করে ঘোরে শুকনো পাতা
তার আর কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই
তার সঙ্গী সাথীরা সব ছড়িয়ে পড়েছে।

বাঁয়ে ডাইনে চারপাশে
উঠোনে রাস্তায়
শুধু সে একা
ঢুকে পড়েছে ঘরে।

শুকনো পাতা
ঘরের মধ্যে ঘুর ঘুর করে ঘুরছে
একটু উড়ছে একটু গড়াচ্ছে
তার আর কোথাও যাওয়ার নেই।

@bangla_kobita

বাংলা কবিতা

12 Oct, 03:41


দশমী
শঙ্খ ঘোষ

তবে যাই
যাই মণ্ডপের পাশে ফুলতোলা ভোরবেলা যাই
খাল ছেড়ে পায়ে পায়ে উঠে-আসা আলো

যাই উদাসীন দেহে শুরুগুরু বোধনের ধ্বনি
যাই সনাতন বলিদান

কপালে দীঘল ভালো পূজার প্রণাম
যাই মুখটাকা জবা চত্বর অঙ্গন বনময়

যাই ছায়াময় ভিড়ে মহানিশি আরতির ধোঁয়া
দোলে স্মৃতি দোলে দেশ দোলে ধুনুচির অন্ধকার

মঠের কিনার ঘিরে কেঁপেওঠা বনবাসী হাওয়া
যাই পিতৃপুরুষের প্রদীপ-বসানো দুঃখ, আর

ঠাকুমা যেমন ঠিক দশমীর চোখে দেখে জল
যাই পাকা সুপুরির রঙে-ধরা গোধূলির দেশ
আমি যাই

@bangla_kobita

বাংলা কবিতা

09 Oct, 04:11


ভিখারি বানাও কিন্তু তুমি তো তেমন গৌরী নও
শঙ্খ ঘোষ

আমাকে কি নিতে চাও? কত জরি ছড়াও সুন্দরী
দুই হাতে ঝরাও ঝালর

আমাকে কি নেবে তুমি? কখনো দেখিনি আগে চোখে
এত নিরুপম ভালোবাসা

তোমার মেদুর হাসি ধরেছি বিশ্বের পাশাপাশি
আণবী ছটায় জ্বলে ঠোঁট

আমাকে কি নিতে চাও? নেবে কোন্ শূন্য মাঠ থেকে?
হায় তুমি অন্নপূর্ণা আজ।

চাও শুধু সমর্পণ, একে একে সব নাও খুলে
মেদ মজ্জা হৃদয় মগজ

তারও পরে চাও আমি খোলাপথে হাঁটু ভেঙে বসে
হাতে নেব এনামেল বাটি

জড়াও রেশমদড়ি কত জরি ছড়াও সুন্দরী
দিন দিনে চাও পদতলে

ভিখারি বানাও, কিন্তু মনে মনে জানোনি কখনো
তুমি তো তেমন গৌরী নও।

@bangla_kobita

বাংলা কবিতা

13 Aug, 18:51


ভিখারী
ভাস্কর চক্রবর্তী

মুখের চামড়া টান, লোকে বলে—‘গম্ভীর মানুষ, একলা ঘরের কোণে থাকে’—
কিসের গাম্ভীর্য? আহা, দু’তিনটে কবিতা লিখি বলে?
তুমি জানো, আমি শালা ভিখারীর চেয়েও ভিখারী
সিঁড়ির তলায় জুতো ছেড়ে
তোমার নিরালা ঘরে উঠে যাই, নেমে আসি—মাঝখানে তুমি
চায়ের বাজার নিয়ে কথা বলো, কথা বলো এ-বছর কোথায় বা বেশী বৃষ্টিপাত
কোনো কোনো দিন হেসে চোখটা ওপরে তুলে, ‘আরে তুমি? এসো এসো
সেই কবে এসেছো সাতাশে’—
আমি দেখি চেয়ে, বোর্ণভিটা তোমাকে যতো পুষ্টতা দিয়েছে
মুখরা করেছে তারও বেশী—

সকাল ন’টায় তবু টেলিফোন দেখলেই বুকের ভেতরে হাঁস ছটফট করে
কচি ছাগলের মতো রোদ নাচে ছাদের কার্নিশে—
সব কি মাটিতে যাবে?
একবার এই জন্ম—ছুটে যাই, তুমি জানো ছুটবোই আমি
যেখানে তোমার ছায়া বসবোই হাঁটু ভাঁজ করে
আমি ইট, আমি কাঠ—চুণ বালি অথবা খড়কে-কাঠি আমি
তুমি জানো, আমি শালা ভিখারীর চেয়েও ভিখারী
বোকার মতন আজও হেসে
তোমার নিরালা ঘরে উঠে যাই, নেমে আসি, লোকে বলে—‘গম্ভীর মানুষ
একলা ঘরের কোণে থাকে’

@bangla_kobita

বাংলা কবিতা

24 Jul, 13:48


যেখানেই যাই
নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী

যেখানেই যাই, †যে- বাড়িতে কড়া নাড়ি,
†কেউ †দেয় না সাড়া,
সব রাস্তাই ফাঁকা, সাত- তাড়াতাড়ি
ঘুমিয়ে পড়েছে পাড়া।

†সেখানেই যাই, ঘুমিয়ে রয়েছে আজ
সবার কাছে ও দূরে,
অথচ আমার কড়া নাড়বারই কাজ
পাড়ায়- পাড়ায় ঘুরে।

@bangla_kobita

বাংলা কবিতা

23 Jul, 04:28


আমাদের সম্পর্ক
শক্তি চট্টোপাধ্যায়

ঈশ্বর থাকেন জলে
তাঁর জন্য বাগানে পুকুর
আমাকে একদিন কাটতে হবে।

আমি একা...
ঈশ্বর থাকুন কাছে, এই চাই--জলেই থাকুন!

জলের শান্তিটি তাঁর চাই, আমি, এমনই বুঝেছি
কাছাকাছি থাকলে শুনি মানুষের সঙ্গে দীর্ঘদিন সম্পর্ক রাখাই দায়

তিনি তো মানুষ নন!
তা ছাড়াও, দূরের বাগানে
থাকলে, শূন্য দূরত্বও
আমাদের সম্পর্ক বাঁচাবে।

@bangla_kobita

বাংলা কবিতা

14 Jul, 06:13


@bangla_kobita

বাংলা কবিতা

04 Jun, 17:54


শুধু ভাঙা নয়
সুভাষ মুখোপাধ্যায়

ভেঙো নাকো, শুধু ভাঙা নয়।
চাষের জন্যে যে জমিটা পেলে ভালো হয়,
সে তো ঠিক
বালি-চিক-চিক
ডাঙা নয়।

দেখ দেখ, এই ছোট্ট সবুজ উঠোনেই—

হামাগুড়ি দেয়,
ব্যথা পেলে কাঁদে,
পড়ে গেলে ঠেলে ওঠে ফের,
ছোট ছোট দুটো মুঠো দিয়ে বাঁধে
সাধআহ্লাদ আমাদের।

হাত ছেড়ে দিলে দেয়ালটা ধ'রে
করে হাঁটি-হাঁটি পা-পা।
ভুলে যেন তাকে
দিও নাকো মাটি চাপা।

ভেঙো নাকো, শুধু ভাঙা নয়।

এখনও আকাশ সূর্যের রঙে
রাঙা নয়।

শিয়রে দাঁড়িয়ে থাবা তুলে আছে
গলিতনখ এ রাত্রি।
তবু যদি দুটি একটি করেও পাপড়ি
খুলে যায়,
কাছে থেকো—
পাছে কোনো মদমত্ত হাতির পায়ে
সেটুকুও হয় থেঁতো।
ক্রমাগত চোখ রাঙিয়ে রাঙিয়ে
যারা হয়ে গেছে অন্ধ
তাদের নাকের কাছে ধ'রে দিও
ফুলের একটু গন্ধ।

ভেঙো না কো, শুধু ভাঙা নয়।

মৃত্যুটা যত বড়ই হোক না—
জীবনের চেয়ে এমন কিছু সে
ঢ্যাঙা নয়।

যার লাগে নাকো মিষ্টি
মানুষের এই সৃষ্টি,
যে বলবে এই পৃথিবীতে আছে
এক রং
শুধু রক্তের—
যত থাক নামডাক তার
যত বড় দল থাকুক অন্ধভক্তের-
টেকে কি না টেকে
একবার ভালো কবিরাজ ডেকে
অচিরে দেখানো দরকার।

ভেঙো নাকো, শুধু ভাঙা নয়।

মন দাও আজ
এর চেয়ে আরও তাজা রঙে এঁকে
দেশ জুড়ে আরও ভালো এক ছবি
টাঙানোয়।

আস্ত একটি জীবনকে ঘরে আনা যাক
—একটুও যার ভাঙা নয়৷

@bangla_kobita

বাংলা কবিতা

16 May, 09:10


রৌদ্রে
বিনয় মজুমদার

পৃথিবীর কাজে ব্যস্ত, ভিজে মুখ দুপুরের ঘামে;
আকাশ রয়েছে ভ'রে নীল রৌদ্রে,
শরীরের দীপ্তি তার ক্লান্ত হয়ে আছে।
ক্লান্ত হয়ে অবসরে—ক্ষণিক বিশ্রামে
চেয়ে থাকে বহু দূরে—বহু দূরে ঘুরে আসে অলস মেঘের কাছে কাছে,
জেগে থাকা অবসরে নয়—
একদিন চুপি চুপি কাছে যদি যেতে পারি
জ্যোৎস্নার নিচে তার ঘুমের সময়!

কোনোদিন বলেনি সে পৃথিবীর সেই মৃদু পুরাতন কথা।
একটি মানুষ আর মানুষের জীবনের— হৃদয়ের অপরূপ পরিপূরকতা
মনে ক'রে কোনোদিন ডাকবে না সে কি কোনো
মানুষকে–নেবে নাকি বেছে?
হয়তো অনেক বার ডেকেছে স্বপ্নের মাঝে,
কেবল ঘুমের ঘোরে ডাকে সে, ডেকেছে।
একদিন চুপি চুপি কাছে যদি যেতে পারি জেগে থাকা অবসরে নয়—
জ্যোৎস্নার নিচে তার ঘুমের সময়!

@bangla_kobita

বাংলা কবিতা

08 May, 08:22


তারপর আরো উনিশ বছর কেটে গেছে।
আমার মেয়েকে যে হস্টেলে দিয়েছি, তার পাশেই গঙ্গা।
এক রবিবার বিকেলে হস্টেলের ধারেই
বটগাছের নীচে সিমেন্ট-বাঁধানো বেদীতে
বসে আছি মেয়ের সঙ্গে।
সে এখন পনেরো পেরিয়ে ষোলোয় পড়েছে।
সেও বর্ষাকাল ভালোবাসে।
আজ সারাদিনের মেঘে ঢাকা ছিল আকাশ,
কিন্তু এখন একটু পরিষ্কার।
সূর্য আস্তে নামছেন, আলো বেরিয়ে আসছে।
মেয়ে বলল, ওই দেখো-
দেখি – ছোট একটা নৌকো,
তরতর করে চলে আসছে স্রোতের সঙ্গে,
তার উপরে একটা পাল লাগানো।
মেয়ে গাইতে শুরু করল –
‘অমল ধবল পালে লেগেছে মন্দ মধুর হাওয়া।
দেখি নাই কভু দেখি নাই এমন তরণী-বাওয়া।।'

ও শেখে-টেখে না, শুধু শুনে শুনে জানে।
কিন্তু ওর গেয়ে চলবার সঙ্গে সঙ্গে সব ভুলে
ওই গান এসে দাঁড়াল আমার পঞ্চাশ বছরের দোরগোড়ায়,
তখন আমার চোখ ভেসে যায় চোখের জলে –
এই গানের কি মানে হল তবে আমার কাছে?
আমাকে এই প্রশ্নের মধ্যে রেখে সূর্য তাঁর অস্তে চললেন।

‘পিছনে ঝরিছে ঝরঝর জল, গুরুগুরু দেয়া ডাকে,
মুখে এসে পড়ে অরুণকিরণ ছিন্ন মেঘের ফাঁকে ।
ওগো কান্ডারী, কে গো তুমি, কার হাসিকান্নার ধন
ভেবে মরে মোর মন।’

@bangla_kobita

বাংলা কবিতা

08 May, 08:22


নিজের রবীন্দ্রনাথ
জয় গোস্বামী

সেটা ছিল বাইশে শ্রাবণ,
একটি স্কুলে গেছি রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে কিছু বলতে।
ছোটরা তাদের উৎসুক চোখ নিয়ে তাকিয়ে রয়েছে,
হঠাৎ মনে হলো, কি বলব –
যা বলব তাই যদি এদের কাছে ভুল প্রমাণিত হয় পরে –
রবীন্দ্রনাথ তো কোন স্কুলপাঠ্য অঙ্ক নন,
যে সবার খাতায় একই উত্তর হবে,
এক-এক জনের রবীন্দ্রনাথ এক-এক রকম ।
বাড়িতেও মেয়ে এক-আধবার জানতে চায়
তার ক্লাসের রবীন্দ্রনাথ নিয়ে –
হাত ছাড়িয়ে পালাই,
কারণ অনেক সময় যে নিজেই বুঝতে পারি নি রবীন্দ্রনাথকে।

ধরা যাক সোনার তরী,
এই একটা সব-গুলিয়ে দেওয়া লেখা আমার জীবনে,
হ্যাঁ, আমার জীবনে –
অন্যের জীবনে তা নাও হতে পারে।
প্রথম এই কবিতাকে আমি কিভাবে পাই?
পাই একটা বর্ষার বিকেলবেলার শেষে,
এক বারান্দায় বসে থাকার সময়,
কবিতাটি আমাকে দেখা দেয় ।
আমার বয়স তখন আট,
১৯৬২ সালের জুলাই মাস ছিল সেটা।
সারাদিন বৃষ্টি হয়ে সন্ধ্যেবেলা ধরে এসেছে,
আকাশ স্লেট-রঙের কালো থেকে একটু উজ্জ্বল,
সূর্য নেই –

আমার মা কবিতাটি পড়ছিল সঞ্চয়িতা থেকে,
উচ্চারণ করে করে।
আমার মায়ের কিন্তু কবিতা-টবিতা পড়ার ঝোঁক
একেবারেই ছিল না,
সারাদিন নানা কাজে ব্যস্ত থাকতে হত তাকে,
গল্পের বই পড়ত, কবিতা কক্ষণো নয়।
তবে সেদিন মা পড়ছিল কেন?
পড়ছিল আমার বাবার কথা মনে করে।

এপ্রিল মাসে বাবার মৃত্যু হয়েছে,
বাবার ছিল ওই কবিতা বলা-গান গাওয়ার স্বভাব।
এক-একটা মানুষ থাকে না, সারাদিন বাড়িতেই থাকে,
ফুলগাছ লাগায়, বই পড়ে, গান গায়, কবিতাও পড়ে –
কিন্তু কিছু করে না, বাবাও সেই রকমই ছিল।
প্রায় কালো হয়ে আসা আকাশের নীচে
গাছপালা যখন সারাদিনের বৃষ্টিতে ভেজা,
তখন সেই কবিতার শেষ লাইনগুলো শুনতে শুনতে
আমার মনে হয়েছিল –
এই কবিতাটি আমার বাবার মৃত্যু নিয়েই লেখা।
‘শ্রাবণ গগন ঘিরে,
ঘন মেঘ ঘুরে ফিরে –
শূন্য নদীর তীরে
রহিনু পড়ি—
যাহা ছিল নিয়ে গেল সোনার তরী’ –
বুকের মধ্যে কি একটা চাপা কষ্টের গুরুভার।

আমাদের ছোট ওই সংসারের মধ্যে
বাবা ছিল একটা আনন্দের উৎস।
সারাদিন ছোট-ছোট গান, মজা, কবিতা, বাগান –
এসব করে অভাবের কথা যেন ভুলিয়ে রাখত।
সেই লোকটা চলে গেছে, আর আসবে না –
এটাই যেন ওই কবিতার সার কথা।
স্নেহ হারানো, শোক পাবার কবিতা হয়েই
ওই সোনার তরী রইল আমার কাছে।

তারপর বয়স বাড়ল,
আস্তে আস্তে বইপত্র ওল্টাতে গিয়ে দেখি –
কি ভয়ানক সব তর্কাতর্কি হয়ে গেছে
ওই কবিতা নিয়ে।
বোকার মতো ওই সোনার তরীকে
আমি শোকের কবিতা ভেবেছি কেন?
না কক্ষনো আমি কাউকে বলি না
আর ওই কবিতা নিয়ে একটি কথাও।
কিন্তু আজও যদি চোখ বন্ধ করে মনে ভাবি
ওই ‘তরুছায়ামসীমাখা’ কথাটি –
তবে আমাদের সেই রানাঘাটের সিদ্ধেশ্বরীতলার
সেই পুকুরপাড়ের বাড়ি আর তার গাছ আর
চূর্ণী নদীর তীরই মনে পড়ে।

আরো আছে,
চূর্ণী নদী বললাম না –
তার ধারে একটা বটগাছের নীচে,
বাবার সঙ্গে দাঁড়িয়ে আছি।
বাবার মুখে একটা গান –
‘অমল ধবল পালে লেগেছে মন্দ মধুর হাওয়া।
দেখি নাই কভু দেখি নাই এমন তরণী-বাওয়া।।’

তরণী কী? না, নৌকো।
নৌকো তো অনেক যায় আমাদের নদী দিয়ে,
যেমন যায় কচুরিপানারা।
অমলও জানি – অমলদা,
সব-পেয়েছির আসরে ড্রিল করায়, ড্রাম বাজায়।
কিন্তু ধবল কাকে বলে?
গানের পর বাবার উত্তর – ধবল হলো সাদা।
ওই যে বালির নৌকোটাকে দেখ, ওর তো পাল আছে,
সাদা পাল, ঐরকমই।
দেখলাম বড়ো একটা নৌকো ধীরে ধীরে ভেসে চলেছে,
একটা ছই রয়েছে,
ওইরকম নৌকো কতই দাঁড়িয়ে থাকে চূর্ণীর তীরে,
নৌকোর কাণা পর্যন্ত জল,
এই নৌকোটায় বড়ো একটা পাল লাগানো।
মনের ভেতরে থেকে গেল সেই নৌকো, আর তার পাল তুলে যাওয়া।
কিন্তু পাল মোটেই অতো কিছু সাদা ছিল না,
কেমন ময়লা-ময়লা, ত্রিপল-রঙের চাদর একটা –
তখন কত বড় আমি, বছর ছয়-সাত বড় জোর।

তিরিশ পেরিয়ে আলাপ হলো একটি মেয়ের সঙ্গে,
সে আসে, কথা বলে, চলে যায়।
পরে দেখছি – যখনি একা হয়ে যাই, তখনি
তারই কোনো না কোনো ছবি মনে পড়ছে।
হয়তো তার একটুকরো হাসি,
কথা বলতে বলতে হঠাৎ থেমে যাওয়া,
কপালের ওপর ঝুঁকে পড়া চুল সরানো-
একি হলো?
আরো কতজনের সঙ্গেই তো কথা বলি,
কারো ক্ষেত্রে তো এমন হয় না।
সবচেয়ে বেশি মনে পড়ে তার তাকিয়ে থাকা-
ভোরে ঘুম ভেঙে মনে পড়ে,
দুপুরে ঝাঁ ঝাঁ রোদে হাঁটতে হাঁটতেও মনে পড়ে,
কেন পড়ে?
আর কোনো চোখ কী আমি দেখি নি কখনো?
বুঝলাম, আমি প্রেমে পড়েছি।

একদিন এক উঁচু বাড়ির সিঁড়ি দিয়ে নেমে আসছি,
সামনে নেমে চলা তার উড়ন্ত আঁচল,
কোথাও কারো বাড়ি থেকে গান বাজছে –
‘দেখি নাই কভু দেখি নাই এমন তরণী-বাওয়া।’
থমকে আছি, পা চলছে না –
শৈশবের সেই পুরোনো গান কী
এক নতুন মানে নিয়ে আজ আমার সামনে দাঁড়াতে এলো?
এই তরুণীই তবে সেই আশ্চর্য নৌকো বেয়ে যাওয়া?
যখন এর পর থেকে ওই গান শুনেছি,
মনে পড়েছে তার চেয়ে থাকা।
কবরখানার মধ্যে দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে বেরিয়ে আসছি দুজনে,
পিছনে রক্তিম সূর্যাস্ত-
একটা জলের বোতল ব্যাগ থেকে বার করে এগিয়ে দেওয়ার সময় তাকিয়ে আছে-
আমাদের সেই দেখাশুনোর ওপর ছেদ পড়তে
কয়েকমাসের বেশি সময় লাগল না,
কিন্তু ওই গানের মধ্যে থেকে গেলো মেয়েটি।

বাংলা কবিতা

04 May, 03:37


সজল বন্দ্যোপাধ্যায়

@bangla_kobita

বাংলা কবিতা

26 Apr, 08:47


ঐ সমস্ত নদী
শক্তি চট্টোপাধ্যায়

ঐ সমস্ত নদী আমায় কাছে ডাকতো যদি
আমি হতাম হিরণ্ময়
আমার নদীর উপর আলো
আমায় মানুষ বাসতো ভালো।

তার বদলে ডাঙা, আমার হাত দুখানি রাঙা
আমি জোর করে হই জয়ী
সারাদিনের পরও
আমি পাই না অবসর…
শুধুই বেঁচে থাকতে হয়।


@bangla_kobita

বাংলা কবিতা

03 Apr, 18:35


অটো চড়ে চাঁদে যাব
অচ্যুত মণ্ডল


একটা কথা বললে বেরিয়ে যাব এ্যাকখুনি

অটো করে চাঁদে চলে যাব।

এত দিন চাঁদে যাইনি কেননা

বুড়িদের চরকা কাটা আমার পছন্দ হয় না

দেশাত্মবোধক জোচ্চুরি বলে মনে হয়।

এখন চাঁদে জল আছে

আমার খুব তেষ্টা পেয়েছে আজ রাত্রে

রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছি তাই

কখন একটা অটো আসবে-অটো চেপে চাঁদে যাব।

সমস্যা গভীর খুব। চাঁদে পৌঁছে অটোওয়ালা কী বলবে?

ভাড়া দেব ফরেন কারেন্সিতে-বেটা ছেলে বুঝতেই পারবে না।

রবীন্দ্র সঙ্গীত করব দু’টো-তাতেও না মানলে

চাঁদের পাথর ছুড়ে মেরে ফেলব ওকে-

চাঁদে তো আর বেকারী স্ট্রীট নেই-

একা একা হারিয়ে যাব চাঁদের হাওয়ায়।

চাঁদের বুড়ি মাছ খায় না কেন,

বিধবা বোধহয় তাই জল জমে বরফ হয়েছে। এক গাড়ি বরফ নিয়ে বিক্রি করতে চাই চাঁদের ওপিঠে

অন্ধকারে তো আর মুখ চেনা যাবে না।

চাঁদের খবর পেয়ে রুমা বলল জামাইবাবু জামাইবাবু

চলো চাঁদে চলে যাই-

আমি বললুম বারান্দায় বালতির ওই জল

নাড়া ঘাঁটা করে চাঁদ খোঁজো

চাঁদে জল আছে।

অরিজিৎ কুণ্ড আধপেটা রুটি খেয়ে ফিরছে

প্রেমিকার সঙ্গে ঝগড়া হয়েছে তারো

দুজনেই উত্তেজিত হলাম মধ্যরাতে

অটো খুঁজছি, চাঁদে যাব, চাঁদে জল আছে।

তোমার চাঁদ, আমার চাঁদ, বৈজ্ঞানিকের চাঁদ, বেশ্যার চাঁদ

ঠাকুমার চাঁদ, শিল্পীর চাঁদ, কবির চাঁদ

কবির ভাগ্নের চাঁদ- ভাঙা চাঁদ, গোটা চাঁদ

মোটা চাঁদ, সরু চাঁদ, বুড়ি চাঁদ যে গেছে বেনো জলে ভেসে

কেউ জানত না যে চাঁদের জল আছে, চাঁদ কাঁদে।

কত বড়ো লোক আমি জানিস

শুধু ঘুমুনোর সময় কথা বলতে পারি না।

জেগে থাকলে চাঁদের সঙ্গে কথা বলি

জানলায় ল্যাপটানো চাঁদ অন্তত: আত্মীয় স্বজনের চেয়ে কালো।

পুরোনো আত্মীয়স্বজন সব ফেলে এসেছি

আচ্ছা চৌমাথারওপরে চাঁদ

রেলিঙে দাঁড়ানো হাত পা

বিবর্ণ মুখের ভঙ্গী আর-

নেই মানুষের স্বপ্ন ফেলে এসো, বিষণ্ণ দাওয়ায়-

কে যেন সাইকেল রাখলো চাঁদের তলায়

আর চাবি দিচ্ছে মেঘ যেন চুরি করে নেবে

চাঁদের বর্তুল মুখে কান্নার করুণ দাগ নেই কেন

কেন শুধু চন্দ্রসভা বর্ষণের ইঙ্গিত দিয়েছে

কে জানতো তখন ওই উচ্ছ্বসিত বুদ্ধ পূর্ণিমায়

চাঁদের ভিতরে জল আছে।

@bangla_kobita

বাংলা কবিতা

21 Mar, 15:25


অলীক
শবরী শর্মা রায়

এত বড়ো পৃথিবী অথচ পালানোর জায়গা নেই
থাকারও নেই
তবু পালাই, থাকিও

আমাদের থাকাটাই পালানো

কাব্যগ্রন্থ: বিশখার ঠোঁটে তিনটে সেলাই

@bangla_kobita

বাংলা কবিতা

03 Mar, 15:54


দেওয়ালের লেখা
বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়

দেওয়ালের লেখাগুলিকে
কারা যেন মুছে দিতে চাইছে।
কারা যেন
বত্রিশ সিংহাসনের প্রচণ্ড স্পর্ধায় চক্ষু লাল ক’রে
নির্দেশ দিচ্ছে: “এবার থামো;
এখন থেকে বিপ্লব আমাদের হুকুম মেনে চলবে”।

একবার সিংহাসনে উঠে বসতে পারলে
তখন দেওয়ালের লেখাগুলি অশ্লীল প্রলাপের মতো মনে হয়।
তখন অপরের পোস্টার ছেঁড়াই শ্রেণী-সংগ্রামের কাজ;
অথবা ডজন খানেক মন্ত্রী জড়ো ক’রে রাস্তায় বক্তৃতা দেওয়া:
“সাবধান! যারা দেয়ালকে কলঙ্কিত করছ! তোমাদের পেছনে
এবার গুণ্ডা লেলিয়ে দেব।”

তারা বত্রিশ সিংহাসনের আশ্চর্য মহিমায়
এখন থেকে বাংলা দেশের তামাম দেওয়ালগুলোকে
নতুন ক’রে চুনকাম ক’রে দেবে, যেন কোথাও কোনো
গুলি খাওয়া মানুষের রক্ত
ছিটেফোঁটাও দাগ না রাখে।

@bangla_kobita

বাংলা কবিতা

25 Feb, 08:49


কষ্ট
শঙ্খ ঘোষ

তুমি বলে গেলে : তোমাতে আমার কোন মন নেই আর।
মৃৎনির্মাণের মতো বসে আছি।
সামনে দিঘির জল সে-রকমই টলটল করে
সে-রকমই হাওয়া বয়ে যায়।
আর কোন চিহ্ন পড়ে নেই
আমারও মনের মধ্যে কোন নীল রেখাপাত নেই। শুধু
তোমার কথাতে কোনো কষ্টের আঘাত পাইনি দেখে
অবিরাম কষ্ট হতে থাকে।

@bangla_kobita

বাংলা কবিতা

14 Feb, 04:30


পাগলী, তোমার সঙ্গে...
জয় গোস্বামী

পাগলী, তোমার সঙ্গে ভয়াবহ জীবন কাটাব
পাগলী, তোমার সঙ্গে ধুলোবালি কাটাব জীবন
এর চোখে ধাঁধা করব, ওর জল করে দেব কাদা
পাগলী, তোমার সঙ্গে ঢেউ খেলতে যাব দু’কদম।

অশান্তি চরমে তুলব, কাকচিল বসবে না বাড়িতে
তুমি ছুঁড়বে থালা বাটি, আমি ভাঙব কাঁচের বাসন
পাগলী, তোমার সঙ্গে বঙ্গভঙ্গ জীবন কাটাব
পাগলী, তোমার সঙ্গে ৪২ কাটাব জীবন।

মেঘে মেঘে বেলা বাড়বে, ধনে পুত্রে লক্ষ্মী লোকসান
লোকাসান পুষিয়ে তুমি রাঁধবে মায়া প্রপন্ঞ্চ ব্যন্জ্ঞন
পাগলী, তোমার সঙ্গে দশকর্ম জীবন কাটাব
পাগলী, তোমার সঙ্গে দিবানিদ্রা কাটাব জীবন।

পাগলী, তোমার সঙ্গে ঝোলভাত জীবন কাটাব
পাগলী, তোমার সঙ্গে মাংসরুটি কাটাব জীবন
পাগলী, তোমার সঙ্গে নিরক্ষর জীবন কাটাব
পাগলী, তোমার সঙ্গে চার অক্ষর কাটাব জীবন।

পাগলী, তোমার সঙ্গে বই দেখব প্যারামাউন্ট হলে
মাঝে মাঝে মুখ বদলে একাডেমি রবীন্দ্রসদন
পাগলী, তোমার সঙ্গে নাইট্যশালা জীবন কাটাব
পাগলী, তোমার সঙ্গে কলাকেন্দ্র কাটাব জীবন।

পাগলী, তোমার সঙ্গে বাবুঘাট জীবন কাটাব
পাগলী, তোমার সঙ্গে দেশপ্রিয় কাটাব জীবন
পাগলী, তোমার সঙ্গে সদা সত্য জীবন কাটাব
পাগলী, তোমার সঙ্গে ‘কী মিথ্যুক’ কাটাব জীবন।

এক হাতে উপায় করব, দুহাতে উড়িয়ে দেবে তুমি
রেস খেলব জুয়া ধরব ধারে কাটাব সহস্র রকম
লটারি, তোমার সঙ্গে ধনলক্ষ্মী জীবন কাটাব
লটারি, তোমার সঙ্গে মেঘধন কাটাব জীবন।

দেখতে দেখতে পুজো আসবে, দুনিয়া চিত্‍কার করবে সেল
দোকানে দোকানে খুঁজব রূপসাগরে অরূপরতন
পাগলী, তোমার সঙ্গে পুজোসংখ্যা জীবন কাটাব
পাগলী, তোমার সঙ্গে রিডাকশনে কাটাব জীবন।

পাগলী, তোমার সঙ্গে কাঁচা প্রুফ জীবন কাটাব
পাগলী, তোমার সঙ্গে ফুলপেজ কাটাব জীবন
পাগলী, তোমার সঙ্গে লে আউট জীবন কাটাব
পাগলী, তোমার সঙ্গে লে হালুয়া কাটাব জীবন।

কবিত্ব ফুড়ুত্‍ করবে, পিছু পিছু ছুটব না হা করে
বাড়ি ফিরে লিখে ফেলব বড়ো গল্প উপন্যাসোপম
পাগলী, তোমার সঙ্গে কথাশিল্প জীবন কাটাব
পাগলী, তোমার সঙ্গে বকবকম কাটাব জীবন।

নতুন মেয়ের সঙ্গে দেখা করব লুকিয়ে চুরিয়ে
ধরা পড়ব তোমার হাতে, বাড়ি ফিরে হেনস্তা চরম
পাগলী, তোমার সঙ্গে ভ্যাবাচ্যাকা জীবন কাটাব
পাগলী, তোমার সঙ্গে হেস্তনেস্ত কাটাব জীবন।

পাগলী, তোমার সঙ্গে পাপবিদ্ধ জীবন কাটাব
পাগলী, তোমার সঙ্গে ধর্মমতে কাটাব জীবন
পাগলী, তোমার সঙ্গে পুজা বেদি জীবন কাটাব
পাগলী, তোমার সঙ্গে মধুমালা কাটাব জীবন।

দোঁহে মিলে টিভি দেখব, হাত দেখাতে যাব জ্যোতিষীকে
একুশটা উপোস থাকবে, ছাব্বিশটা ব্রত উদযাপন
পাগলী, তোমার সঙ্গে ভাড়া বাড়ি জীবন কাটাব
পাগলী, তোমার সঙ্গে নিজ ফ্ল্যাট কাটাব জীবন।

পাগলী, তোমার সঙ্গে শ্যাওড়াফুলি জীবন কাটাব
পাগলী, তোমার সঙ্গে শ্যামনগর কাটাব জীবন
পাগলী, তোমার সঙ্গে রেল রোকো জীবন কাটাব
পাগলী, তোমার সঙ্গে লেট স্লিপ কাটাব জীবন।

পাগলী, তোমার সঙ্গে আশাপূর্ণা জীবন কাটাব
আমি কিনব ফুল, তুমি ঘর সাজাবে যাবজ্জীবন
পাগলী, তোমার সঙ্গে জয় জওয়ান জীবন কাটাব
পাগলী, তোমার সঙ্গে জয় কিষান কাটাব জীবন।

সন্ধেবেলা ঝগড়া হবে, হবে দুই বিছানা আলাদা
হপ্তা হপ্তা কথা বন্ধ মধ্যরাতে আচমকা মিলন
পাগলী, তোমার সঙ্গে ব্রক্ষ্মচারী জীবন কাটাব
পাগলী, তোমার সঙ্গে আদম ইভ কাটাব জীবন।

পাগলী, তোমার সঙ্গে রামরাজ্য জীবন কাটাব
পাগলী, তোমার সঙ্গে প্রজাতন্ত্রী কাটাব জীবন
পাগলী, তোমার সঙ্গে ছাল চামড়া জীবন কাটাব
পাগলী, তোমার সঙ্গে দাঁতে দাঁত কাটাব জীবন।

এর গায়ে কনুই মারব রাস্তা করব ওকে ধাক্কা দিয়ে
এটা ভাঙলে ওটা গড়ব, ঢেউ খেলব দু দশ কদম
পাগলী, তোমার সঙ্গে ধুলোঝড় জীবন কাটাব
পাগলী, তোমার সঙ্গে ‘ভোর ভয়োঁ’ কাটাব জীবন।

@bangla_kobita

বাংলা কবিতা

14 Feb, 03:31


তোমার চোখ এত লাল কেন?
নির্মলেন্দু গুণ

আমি বলছি না ভালোবাসতেই হবে, আমি চাই
কেউ একজন আমার জন্য অপেক্ষা করুক,
শুধু ঘরের ভিতর থেকে দরোজা খুলে দেবার জন্য।
বাইরে থেকে দরোজা খুলতে খুলতে আমি এখন ক্লান্ত।

আমি বলছি না ভালোবাসতেই হবে, আমি চাই
কেউ আমাকে খেতে দিক।আমি হাতপাখা নিয়ে
কাউকে আমার পাশে বসে থাকতে বলছি না,
আমি জানি, এই ইলেক্ট্রিকের যুগ
নারীকে মুক্তি দিয়েছে স্বামী-সেবার দায় থেকে।

আমি চাই কেউ একজন আমাকে জিজ্ঞেস করুক:
আমার জল লাগবে কিনা, নুন লাগবে কিনা।
পাটশাক ভাজার সঙ্গে আরও একটা
তেলে ভাজা শুকনো মরিচ লাগবে কি না।
এঁটো বাসন গেঞ্জি-রুমাল আমি নিজেই ধুতে পারি।

আমি বলছি না ভালোবাসতেই হবে, আমি চাই
কেউ একজন ভিতর থেকে আমার ঘরের দরোজা
খুলে দিক।কেউ আমাকে কিছু খেতে বলুক।
কাম-বাসনার সঙ্গী না হোক, কেউ অন্তত আমাকে
জিজ্ঞেস করুক: 'তোমার চোখ এত লাল কেন?'

@bangla_kobita

বাংলা কবিতা

14 Feb, 02:31


এক অসুখে দুজন অন্ধ
শক্তি চট্টোপাধ্যায়

আজ বাতাসের সঙ্গে ওঠে, সমুদ্র, তোর আমিষ গন্ধ
দীর্ঘ দাঁতের করাত ও ঢেউ নীল দিগন্ত সমান করে
বালিতে আধকোমর বন্ধ
এই আনন্দময় কবরে
আজ বাতাসের সঙ্গে ওঠে, সমুদ্র, তোর আমিষ গন্ধ |
হাত দুখানি জড়ায় গলা, সাঁড়াশি সেই সোনার অধিক
উজ্জ্বলতায় প্রখর কিন্তু উষ্ণ এবং রোমাঞ্চকর
আলিঙ্গনের মধেযে আমার হৃদয় কি পায় পুচ্ছে শিকড়
আঁকড়ে ধরে মাটির মতন চিবুক থেকে নখ অবধি ?
সঙ্গে আছেই
রুপোর গুঁড়ো, উড়ন্ত নুন, হল্লা হাওয়ার মধ্যে, কাছে
সঙ্গে আছে
হয়নি পাগল
এই বাতাসে পাল্লা আগল
বন্ধ ক’রে
সঙ্গে আছে …
এক অসুখে দুজন অন্ধ !
আজ বাতাসের সঙ্গে ওঠে, সমুদ্র, তোর আমিষ গন্ধ ।

@bangla_kobita

বাংলা কবিতা

14 Feb, 01:30


জন্ম হয় না মৃত্যু হয় না
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

আমার ভালোবাসার কোনো জন্ম হয় না
মৃত্যু হয় না –
কেননা আমি অন্যরকম ভালোবাসার হীরের গয়না
শরীরে নিয়ে জন্মেছিলাম।
আমার কেউ নাম রাখেনি, তিনটে-চারটে ছদ্মনামে
আমার ভ্রমণ মর্ত্যধামে,
আগুন দেখে আলো ভেবেছি, আলোয় আমার
হাত পুড়ে যায়
অন্ধকারে মানুষ দেখা সহজ ভেবে ঘূর্ণিমায়ায়
অন্ধকারে মিশে থেকেছি
কেউ আমাকে শিরোপা দেয়, কেউ দু’চোখে হাজার ছি ছি
তবুও আমার জন্ম-কবচ, ভালোবাসাকে ভেলোবেসেছি
আমার কোনো ভয় হয় না,
আমার ভালোবাসার কোন জন্ম হয় না, মৃত্যু হয় না।।

@bangla_kobita