আমি সাধারণত মোটিভেশনাল লেকচার ঝাড়তে পারি না। ছোটবেলায় কোনো যাত্রা বা থিয়েটারও করিনি। তাই নাটকের সংলাপ বলাটাও রপ্ত হয়নি। পড়াশোনা নিয়ে থাকতেই ভালো লাগে। কারণ মনে হয়, পড়াশোনা বাদ দিয়ে শুধু মোটিভেশন বা জ্ঞান শুনে খুব একটা লাভ হয় না। যদিও অনেকেই বলে আমি ভুলভাল পড়াই, ভুলে ভর্তি মক টেস্ট নিই, তবে তাতে আমার খুব একটা কিছু যায় আসে না আজকাল।
যাক গে, আমার আজকের বিষয় হল আগামীকালের পরীক্ষা। যদিও আমি আমার চ্যালা চামুন্ডাদের আজ ফেসবুক করতে বারণ করেছি, তবুও আমি জানি এটা সেই করোনা বিধি মানার মত কেস। তাই সবাই দেখবে, জানবে এবং ভাববে এই নিরাশা নিয়ে আজকের এই পোস্ট। আজ আর কাল কি কি করব আর কি কি করব না - তাই নিয়ে আমার এই বক্তব্য।
প্রথমেই বলে রাখি, আজ পর্যন্ত প্রিলিতে কেউ ফার্স্ট হয়নি। তাই সবজান্তা হবার চেষ্টা করেও না পেরে টেনশন, অনিদ্রা, স্বপ্নদোষ, ক্ষুধামন্দ বা শিথিলতা - এই সবের শিকার হয়ে ডি কে লোধের পেশেন্ট না হওয়াই ভালো। যা পড়েছ, তাই আর একবার পড়ে নিও। ডাউট থাকলে হলে ঢোকার আগে ক্লিয়ার করে নিও। হলের মধ্যে ডাউট ক্লিয়ার করতে গেলে হল থেকে ক্লিয়ার হয়ে যাবার সম্ভবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। টয়লেটে ক্লিয়ারের ব্যপারটা আমি ঠিক জানি না - অনেকেই সেটা করে - তাদের থেকেই এই নিঞ্জা টেকনিকটা জিগ্যেস করা ভালো।
আমার মনে হয়, যদি 150 এর কাছাকাছি attempt করে 120-130 এর মধ্যে স্কোর রাখা যায়, তাহলে ফেরার পথে একটু পার্টি করে আসা যেতেই পারে। অবশ্য পার্টিওয়্যার পরে কেউ পরীক্ষা দেয় না। আর যা পরে দেয়, তাতে পার্টি করা যায় না। পার্টির ডেফিনেশন এবং উপকরণগুলো অবশ্য ব্যক্তিবিশেষে আলাদা। তাই যে যার মত করবেন আর কি।
পরীক্ষার আগে এবং পরে হলের বাইরে প্রচুর সর্বজ্ঞানী বিদ্যাসাগরের দেখা পাওয়া যায়। এদের যত এড়িয়ে যাওয়া যাবে নম্বর ততই বাড়বে। আগে তো নয়ই, পরীক্ষার পরেও এদের খপ্পরে না পড়ে সোজা হনহন করে হেঁটে চলে যেতে হবে। এইসব বিদ্যাসাগরের বদলে যদি কোনো বিদ্যা বালনের দেখা পাওয়া যায় তাহলে অবশ্য অন্য কথা। তখন যার যা ক্যালি, সেইমত কাজ করতে হবে।
আজ রাতে এক ঘন্টার জন্য শেষ দশ বারো বছরের ইংরেজি পার্টটা একটু দেখে নিলে ভালো হয়।
পরীক্ষার ঠিক আগে ইতিহাসটা ভালো করে দেখতে হবে। ইতিহাস যার, প্রিলি তার। বিশেষ করে স্বাধীনতার ইতিহাস না রপ্ত হলে আবার সেই পরাধীনই থেকে যেতে হবে। আজকে বিকেলে 2020 এবং 2021 সাল থেকে কারেন্ট অ্যাফেয়ারস একটু কষ্ট করে দেখে নিতে হবে। রিসেন্ট ঘটনা, খেলার খবর ( খেলা হবে বাদ দিয়ে) এসব দেখে যেতে হবে। ভূগোলে সেনসাস, পাহাড়, পাস, নদী আর তার পাশের শহর, জলপ্রপাত, কৃষি বা খনিজে প্রথম দ্বিতীয় এইসব ফালতু জিনিস, ন্যাশানাল পার্ক বা শিল্পাঞ্চল গুলো দেখে নিতে হবে এখনি।
সংবিধান বা ইকো নিয়ে বলার বিশেষ কিছু নেই আমার। ওগুলো আমি খুব একটা ভালো জানি না। ইনফ্যাক্ট অম্বেদকর বা অমর্ত্য সেন ছাড়া এগুলো কেউই খুব একটা বোঝেন বলে আমার মনে হয় না। অংক খুব একটা আসে না, প্রিলিতে অংক দেওয়া হয় পরীক্ষার্থী পাগল কিনা বোঝার জন্য। তাই পাগলামির কোনো লক্ষণ না দেখা দিলে এটা নিয়ে চিন্তার কোনো কারন নেই।
আজ এবং কাল, প্রচুর জল খাওয়া, ফল এবং টক দই খাওয়া খুব দরকার। হেবি কার্বস বা মশলাদার খাবার আজ কাল না খাওয়াই ভালো। আমাদের শরীরের এক বিশাল অংশে আছে আমাদের পেট। এই পেটের জন্যই সবকিছু। পেট ঠান্ডা তো সব ঠান্ডা। তাই খাওয়া এবং ঘুম আজকে সঠিক ভাবে করতে হবে। নাহলে আভ্যন্তরীন বিদ্রোহে কাল সরকার পড়ে যেতে পারে।
সবকিছু ভুলে যাওয়া, টেনশন, হালকা মাথা ঘোরা, সবসময় ঘুম পাওয়া, কাউকে ভালো না লাগা - এগুলো খুব কমন সিম্পটম। এগুলো নিয়ে চিন্তা বেশি চিন্তা করলে শীঘ্রপতন হতে পারে। তাই এসব জিনিস ধুঁয়া মে উড়াকে ( মানে ধুপের, সিগারেটের নয় - এমনি নরমাল ফুঁ ও দেওয়া যেতে পারে ) এগিয়ে যেতে হবে। তবে শুন্য থেকে একশো বাষট্টি করা, ইলেকট্রিক হ্যারিকেনের আলোতে পড়ার বা কোম্পানির করামচারীকে আদিদাসের জুতো গিফট করার ক্ষমতা যদি আপনার থাকে, তাহলে একেবারে সাদা খাতা জমা দিয়ে আসবেন, ওরাই ঠিক উত্তরগুলো আপনার হয়ে ভরে দেবে।
পরীক্ষাহলে যা নিয়ে যেতে হবে সেগুলো এক জায়গায় রাতে রেখে দিলে ভালো হয়। ঘড়ি, কালিভর্তি পেন, পেনসিল, রবার, জলের বোতল ( ঢোকার আগে কিনেও নেওয়া যেতে পারে ), মাস্ক, স্যানিটাইজার, অ্যাডমিট কার্ড আর একটা পরিচয় পত্র। মেয়েদের অনেক সময় লিপস্টিক আর চিরুনি নিতে দেখেছি, তবে পরীক্ষার হলে সেগুলোর ঠিক কি কাজ, সেটা আমি বলতে পারব না। অনেকের মাথা ধরে, বমি পায় - এগুলোর জন্য ওষুধ ক্যারি করতে হবে - যাতে স্ট্রেচারে নয়, পরীক্ষার পর পায়ে হেঁটেই বাড়ি যাওয়া যায়। পরীক্ষার হলে বা হল থেকে বেরিয়ে সেলফি তোলার জন্য মোবাইল নিলে সেটা কোথায় রাখবেন সেটা একান্তই আপনার ব্যক্তিগত ব্যাপার।