Focused #144
হতে চাই 'মুস্তাজাবুদ দাওয়া'!
====================
মুস্তাজাবুদ দাওয়া (مستجاب الدعوة) অর্থ হলো সেই দোয়া, যা আল্লাহ তাআলা কবুল করেন। ইসলামিক পরিভাষায়, কিছু সময়, পরিস্থিতি বা ব্যক্তিদের জন্য দোয়া বিশেষভাবে আল্লাহর নিকট কবুল হয়।
কিছু সময় ও অবস্থা যেখানে দোয়া মুস্তাজাব হওয়ার সম্ভাবনা বেশি বলে ইসলামি শিক্ষায় উল্লেখ রয়েছে:
1. তাহাজ্জুদের সময়: রাতের শেষ অংশে আল্লাহর নৈকট্য লাভের জন্য করা দোয়া।
2. জুমার দিন: বিশেষ করে আসরের পরের সময়ে দোয়া।
3. আযান ও ইকামতের মধ্যবর্তী সময়।
4. রোযাদারের ইফতারের পূর্ব মুহূর্ত।
5. দীনের জন্য কষ্টের মুহূর্তে দোয়া।
কিছু ব্যক্তি আছেন যাদের দোয়া বিশেষভাবে কবুল হয় বলে হাদিসে উল্লেখ রয়েছে:
1. মা-বাবার দোয়া।
2. মযলুমের দোয়া।
3. নিরীহ মুসাফিরের দোয়া।
মুস্তাজাবুদ দাওয়ার মর্যাদা অর্জনের জন্য কিছু নির্দিষ্ট আমল ও দিকনির্দেশনা কুরআন ও হাদিস থেকে নেওয়া হয়েছে, যা নিম্নে রেফারেন্সসহ উল্লেখ করা হলো:
১. সৎকাজ ও আল্লাহর আনুগত্যে অটল থাকা:
আল্লাহ তাআলা বলেন:
>> “আর তোমরা যে কল্যাণই কর, আল্লাহ তা জানেন।” (সূরা আল-বাকারা, ২:১৯৭)
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, “আল্লাহ্ তাঁর বান্দার দোয়া কবুল করেন, যতক্ষণ না সে তাড়াহুড়ো করে (অর্থাৎ দোয়া কবুলের জন্য অস্থিরতা প্রকাশ না করা)।” (সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ২৭৩৫)
২. নিয়মিত ইবাদত করা:
পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আপনার জন্য ফরজ করা হয়েছে, কোনো রকম অজুহাত ছাড়াই নামাজ আদায় করতে হবে নিয়মিত। এ ছাড়া এশরাকের নামাজ ও তাহাজ্জুদ সালাত আদায়েরও অভ্যাস করতে হবে।
কুরআনে মহান আল্লাহ তা'আলা বলেন:
>> “আর আপনি রাতের কিছু অংশে তাহাজ্জুদ পড়ুন, এটি আপনার জন্য অতিরিক্ত ইবাদত। আশা করা যায়, আপনার রব আপনাকে প্রশংসিত অবস্থানে অধিষ্ঠিত করবেন।” (সূরা আল-ইসরা, ১৭:৭৯)
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, "রাতের শেষ তৃতীয়াংশে আল্লাহ দুনিয়ার আকাশে অবতরণ করেন এবং বলেন, কে আমাকে ডাকবে, আমি তার ডাকে সাড়া দেব; কে আমার কাছে কিছু প্রার্থনা করবে, আমি তাকে তা দেব।” (সহিহ বুখারি, হাদিস নং ১১৪৫)
৩. অহংকার ও রিয়ার থেকে মুক্ত থাকা:
হাদিসে বলা হয়েছে, “যে ব্যক্তি নিজেকে অন্যদের থেকে উত্তম ভাবে, তার মধ্যে কণামাত্র অহংকার থাকলে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে না।” (সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ৯১)
৪. দু'আর মধ্যে দৃঢ় বিশ্বাস রাখা:
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “তোমরা আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করো দৃঢ় বিশ্বাসের সাথে যে তিনি কবুল করবেনই।” (তিরমিজি, হাদিস নং ৩৪৭৯)
৫. হালাল রিযিক উপার্জন করা:
হাদিসে রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “হালাল রিজিক উপার্জন করা হলো প্রত্যেক মুমিনের জন্য একটি ফরজ কাজ।” (সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ১০১৫)
আরও বলা হয়েছে: “হারাম থেকে বেঁচে থাকার চেষ্টা করা দোয়া কবুলে অন্যতম শর্ত।” (মুসলিম, হাদিস নং ১০১৫)
৬. অন্যদের সাথে ভাল আচরণ করা ও তাদের হক আদায় করা:
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “মুসলিম হলো সে ব্যক্তি যার হাত ও জিহ্বা থেকে অন্য মুসলমান নিরাপদ থাকে।” (সহিহ বুখারি, হাদিস নং ১০)
মায়ের সাথে উত্তম আচরণের মাধ্যমেও মায়ের দোয়া পাওয়া যায়।একদা মু‘আবিয়াহ বিন জাহিমাহ আস-সুলামী রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর খেদমতে এসে জিজ্ঞাসা করলেন,
‘হে আল্লাহর রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আমি যুদ্ধে যেতে চাই। আর এ ব্যাপারে আপনার পরামর্শ কামনা করছি। উত্তরে তিনি বলেন, তোমার মা জীবিত আছেন কি? সে বলল, হ্যাঁ। তিনি বললেন, তাহলে তাঁর খিদমতে লেগে থাক। কেননা জান্নাত তাঁর দু‘পায়ের নিচে
(নাসাঈ, হা/৩১০৪; সনদ হাসান)।
৭. মাযলুম ও মুসাফিরের দোয়া প্রার্থনা করা:
হাদিসে বলা হয়েছে, “মাযলুমের (অত্যাচারিত ব্যক্তির) দোয়া ও মুসাফিরের দোয়া কখনো ফিরিয়ে দেওয়া হয় না।” (তিরমিজি, হাদিস নং ১৯০৫)
এই রেফারেন্সগুলো ইসলামের বিভিন্ন বিশ্বাসযোগ্য সূত্র থেকে নেওয়া হয়েছে, যা আল্লাহর নৈকট্য লাভে এবং দোয়া কবুলের জন্য প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা প্রদান করে।
তাই আসুন, আমরা মহান আল্লাহর পছন্দের কাজগুলো বেশি বেশি করার মাধ্যমে 'মুস্তাজাবুদ দাওয়া' এর মতো মর্যাদাবান হওয়ার চেষ্টা করি। নিশ্চয়ই মহান রব আমাদের চেষ্টা করা দেখেন।