━━━━━━ • ✿ • ━━━━━━
একদা হযরত মুসা আলাইহিস্ সালামের অন্তরে এ আকাংখা তীব্র হয়ে উঠলো যে, তাঁর সাথে যিনি জান্নাতে থাকবেন তাঁকে যেন তিনি দেখতে পান। সুতরাং তিনি এ মর্মে আল্লাহ তা'আলার দরবারে প্রার্থনা করে বললেন 'হে খোদা! আমি ঐ ব্যক্তিকে দেখতে চাই, যে আমার সাথে জান্নাতে থাকবে'। আল্লাহ তা'আলা তাঁকে বললেন, হে মূসা! তুমি অমুক জায়গায় চলে যাও। সেখানে এক কসাই আছে সে-ই তোমার সাথে জান্নাতে থাকবে।
মূসা (আঃ) বড়ই আশ্চর্য হলেন। ভাবলেন, কসাই বেচারা এমন কি আমল করে যার বদলে সে আমার সাথে জান্নাতে থাকার সৌভাগ্য লাভ করেছে! তাঁর মনে বিরাট কৌতূহল জাগলো। তাই তিনি কসাইর খোঁজে বাড়ী থেকে বেরিয়ে পড়লেন এবং অনেক তালাশ করে তাঁর দোকানে গিয়ে পৌঁছলেন। তিনি কসাইর নিকট স্বীয় পরিচয় না দিয়ে দিনভর কসাইর যাবতীয় কাজকর্ম গভীর ভাবে পর্যবেক্ষণ করতে লাগলেন।
এভাবে সারাদিন চলে গেল। কিন্তু হযরত মূসা (আঃ) কসাইর মধ্যে এমন কোন অতিরিক্ত আমল দেখলেন না যার কারণে সে এত বড় মর্যাদা লাভ করতে পারে।
সন্ধ্যা হতেই কসাই বেচারা বাড়ীর দিকে রওয়ানা হল। হযরত মূসা (আঃ)ও তাঁর পিছনে পিছনে রওয়ানা হলেন। উদ্দেশ্য হল কসাইর সেই বিশেষ আমল সম্পর্কে অবগত হওয়া। কসাই ঘরে পৌঁছে স্বীয় বিবি ও সন্তান-সন্ততির সাথে কথা বলার পূর্বেই বৃদ্ধ মায়ের সেবা-যত্ম শুরু করে দিল। প্রথমে সে তার হাত মুখ ধুয়ে দিল তারপর চামচ দিয়ে মার মুখে খাবার তুলে দিতে লাগল।
হযরত মূসা (আঃ) কসাইকে জিজ্ঞাসা করলেন, এই বৃদ্ধা কে? কসাই জবাব দিল, ইনি আমার সম্মানিত আম্মাজান।"
এদিকে বৃদ্ধা খানা খাওয়া শেষ করেই হাত উঠিয়ে কায়মনোবাক্যে খোদার দরবারে দোয়া করতে লাগলো, "হে আল্লাহ! আমার এই ছেলেকে তুমি দুনিয়াতে শান্তিতে রেখো এবং আখেরাতে হযরত মূসা (আঃ)-এর সাথে জান্নাতে স্থান দিও।"
হযরত মূসা (আঃ) কসাইকে জিজ্ঞাসা করলেন, তোমার মা তোমার জন্য যে দোয়া করেন, তা কি কবুল হয়? কসাই জবাবে বলল, আমার তো মনে হয় আমার মা আমার জন্য যে দোয়া করেন তার এক অংশ কবুল হয়েছে। কেননা আল্লাহ তা'য়ালা দুনিয়াতে আমাকে সব ধরণের সুখ দিয়েছেন এবং মহাশান্তিতে রেখেছেন। আর দোয়ার দ্বিতীয় অংশ কবুল হয়েছে কি-না জানিনা। কারণ-আমার জানা নেই যে, জান্নাতে হযরত মূসা (আঃ) এর সাথে আমার স্থান হবে কি-না।
হযরত মূসা আলাইহিস সালাম বললেন, হে পূণ্যবান ভাই! খুশি হও এবং সুসংবাদ গ্রহণ কর- আমিই মূসা (আঃ)। আল্লাহ তায়ালা তোমার মায়ের দোয়ার দ্বিতীয় অংশও কবুল করেছেন। জান্নাতে তুমি আমার সাথেই স্থান পাবে।
প্রিয় পাঠকবৃন্দ, উল্লেখিত ঘটনা পাঠ করে এখন থেকেই আমরা এই প্রতিজ্ঞা করে নিতে পারি যে, আমরা সর্বদা পিতা-মাতার সেবা করব। তাদের মুখে হাসি ফুটাব। কখনো তাদেরকে কষ্ট দিব না। তাঁদের প্রতিটি কথা অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলবো। এতে তারা আমাদের প্রতি খুশি হয়ে হয়তো আল্লাহর দরবারে দোয়া করবেন। হতে পারে তাদের এ দোয়াই আমাদের নাজাতের ওসীলা হবে এবং আমরা জান্নাতের উঁচু মাকাম লাভ করতে পারব।
:) যে গল্পে হৃদয় গলে-১