ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চলমান সংকট সমাধান এবং জুলাই বিপ্লবের স্পিরিটের আলোকে ফ্যাসিবাদমুক্ত ক্যাম্পাস বিনির্মাণের প্রস্তাবনা নিয়ে উপাচার্য মহোদয়ের নিকট আজ ২১ অক্টোবর বিকাল ৩.০০ টায় স্মারকলিপি প্রদান করে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা।
উল্লেখযোগ্য কিছু মৌলিক প্রস্তাবনার সারসংক্ষেপ :
★ পতিত ও পলাতক ফ্যাসিবাদের দোসর ও আইকনদের নামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে যে সকল স্থাপনা, সড়ক, সেন্টার, বৃত্তি-সম্মাননা, চেয়ার ও ফলকের নামকরণ করা হয়েছে, তা অবিলম্বে পরিবর্তন করে জুলাই বিপ্লবের শহীদদের নামে নামকরণ করতে হবে।
★ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে ১৭ জুলাই সন্ত্রাসী ছাত্রলীগ মুক্তকরণ এবং যৌথবাহিনীর নৃশংস হামলার ভয়াবহতা স্মরণ করে ‘১৭ই জুলাই’-কে ‘ক্যাম্পাসে সন্ত্রাস প্রতিরোধ দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করতে হবে।
★চব্বিশের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানকে স্মরণীয় করে রাখতে একটি বিশেষায়িত সেন্টার ও সংগ্রহশালা গড়ে তুলতে হবে। যেখানে অভ্যুত্থান সংশ্লিষ্ট ইতিহাস, গুরুত্বপূর্ণ ছবি, সাহিত্য, ম্যাগাজিন, প্রকাশনা, পত্রিকা ও চিত্রকর্ম ইত্যাদি সংরক্ষিত থাকবে।
★জুলাই গণহত্যা বিষয়ে আন্তর্জাতিক কনফারেন্স আয়োজন করতে হবে এবং পর্যাপ্ত গবেষণার উদ্যোগ গ্রহণ করার মাধ্যমে আওয়ামী ফ্যাসিবাদের নির্মম ও মানবতাবিরোধী কর্মকান্ড দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে তুলে ধরার ব্যবস্থা করতে হবে।
★ক্যাম্পাসে সন্ত্রাস, নৈরাজ্য সৃষ্টি, বিগত ১৬ বছরের নিপীড়ন, সন্ত্রাস ও জুলাই গণহত্যার দায়ে সন্ত্রাসী সংগঠন ছাত্রলীগের রাজনীতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে (আইন করে নিষিদ্ধ করতে হবে।
★বিগত ফ্যাসিবাদী শাসনামলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অভ্যন্তরে প্রকাশিত সকল দুর্নীতির তথ্য শ্বেতপত্র আকারে প্রকাশের উদ্যোগ নিতে হবে।
★চলমান আবাসন সংকট নিরসন করে শতভাগ আবাসিক ক্যাম্পাস বিনির্মাণের জন্য ‘এক শিক্ষার্থী, এক সিট’ নীতি গ্রহণ করে, প্রয়োজনে দ্রুত হল নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। আর্থিক সংকট থাকা সত্ত্বেও যেসকল শিক্ষার্থীকে হলে সিট বরাদ্দ দেয়া সম্ভব হবে না তাদের জন্য সিট ভাড়া বাবদ বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে উপযুক্ত পরিমাণ মাসিক বৃত্তির ব্যবস্থা করতে হবে।
★'হল চালাবে প্রশাসন’ নীতিতে হল পরিচালনা, সিট বন্টনসহ সকল কর্মকান্ড পরিচালনা করবে হল প্রশাসন। প্রশাসনিক কর্মকান্ড পরিচালনায় যাতে কোন রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ না থাকে তা নিশ্চিত করতে হবে।
★নারী শিক্ষার্থীদের বিশেষ নিরাপত্তা ঝুঁকি বিবেচনা করে প্রত্যেককেই প্রথম বর্ষ থেকে আবাসিক সিট বরাদ্দ দিতে হবে। সিট সংকট সমাধানের সাময়িক পদক্ষেপ হিসেবে নারী শিক্ষার্থীদের জন্য ক্যাম্পাসের নিকটবর্তী এলাকায় ছাত্রী হোস্টেল চালুর কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে এবং টেকসই সমাধান হিসেবে নারী শিক্ষার্থীদের জন্য দ্রুত সময়ের মধ্যে দু’টি নতুন হল নির্মাণ করতে হবে।
★পরিচয় শনাক্তকরণ সাপেক্ষে ছাত্রীদের এক হল থেকে অন্য হলে প্রবেশের সুযোগ দিতে হবে। অনাবাসিক ছাত্রীদেরকে পরিচয় শনাক্তকরণ সাপেক্ষে হলে প্রবেশের অনুমতি দিতে হবে।
★ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বেদখল হয়ে যাওয়া জমি পুনরুদ্ধারের উদ্যোগ নিতে হবে। পূর্বাচলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য বরাদ্দ জমির যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।
★গবেষণার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ সংস্থানের জন্য সরকারের কাছে জোরালো আবেদন ও প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়া গবেষণা কাজে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক অর্থ সংস্থানকারী সংস্থা থেকেও অর্থ সংগ্রহের উদ্যোগ নিতে হবে। বিশেষ ‘এন্ডাউমেন্ট ফান্ড’ গঠন করেও অ্যালামনাই সহ অন্যান্য উৎস থেকে অর্থ সংগ্রহ করা যেতে পারে। সংগৃহীত অর্থের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।
★প্রত্যেক বিভাগে মৌলিক গবেষণার উপর কোর্স অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
★১৯৭২-১৯৭৫ পর্যন্ত সকল পত্রিকা, ম্যাগাজিন ও প্রকাশনার অক্ষত কপির ব্যবস্থা করে তা লাইব্রেরিতে সংরক্ষিত রাখতে হবে এবং সকলের জন্য উন্মুক্ত করতে হবে।
উল্লেখিত প্রস্তাবনা ছাড়াও স্মারকলিপিতে ছাত্রশিবিরের পক্ষ থেকে নিম্নোক্ত বিষয়ভিত্তিক সর্বমোট ৬৩ দফা প্রস্তাবনা দেওয়া হয়।
০১. ফ্যাসিবাদের মূলোৎপাটন সংক্রান্ত
০২. আবাসন সংক্রান্ত
০৩. নিরাপত্তা সংক্রান্ত
০৪. গবেষণার মানোন্নয়ন সংক্রান্ত
০৫. টিএসসি সংক্রান্ত
০৬. লাইব্রেরি সংক্রান্ত
০৭. শিক্ষক নিয়োগ সংক্রান্ত
০৮. ধর্মীয় উপাসনালয় সংক্রান্ত
০৯. শরীরচর্চা কেন্দ্র সংক্রান্ত
১০. মেডিক্যাল সেন্টার সংক্রান্ত
১১. বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কার্যক্রম সংক্রান্ত
১২. ডাকসু সংক্রান্ত