স্বপ্ন
আমি বরাবরই অদ্ভুত সব স্বপ্ন দেখি। স্বপ্নগুলোর কোনো অর্থ থাকে না। একদিন দেখি, আমি আর শাহরুখ খান ট্রেনে করে কোথায় একটা যাচ্ছি। জানলা দিয়ে বাইরে তাকালে বোঝাই যাচ্ছিল যে, আদতে সেটা ট্রেনই। কিন্তু যখন ভেতরে চারিদিকে চোখ ঘোরালাম, দেখি আমি একটা ক্লাসরুমে বসে আছি। ভেতরে অনেকগুলো বেঞ্চ। সামনে বড়সড় একটা ব্ল্যাকবোর্ড দেয়ালের সাথে সাঁটা। টিচারের টেবিল আর চেয়ার ফাঁকা পড়ে আছে। ক্লাসরুমও ফাঁকা। যখনই ক্লাসরুম ফাঁকা কেন ভাবছি, দেখি দু তিনটে ছেলে এসে ঢুকেছে। চিনতে পারিনি তাদের। কিছুক্ষণের মধ্যে পরিচিত কয়েকজনের মুখ দেখতে পেলাম, যারা বসে ছিল সামনের বেঞ্চগুলোতে। এখানেও একটা অদ্ভুত ব্যাপার দেখলাম। যাদের কখনই একসাথে থাকার কথা না, তারা একসাথে বসে আছে। গল্পও করছে। আমার দিকে তাকিয়ে হাত নাড়ছে। বিনিময়ে আমিও হাত নাড়ছি। কিন্তু আমার পাশে যে শাহরুখ খান বসে আছে, সেদিকে তাদের ভ্রূক্ষেপ নেই। শাহরুখ খানের সাথে বাংলায় কথা বলেছি না হিন্দিতে, তা মনে পড়ছে না।
আরেকদিন দেখি, আমি একটা জঙ্গলের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। সাথে একটা মেয়ে। মেয়েটাকে আমি মনে মনে ভালোবাসতাম একসময়। মেয়েটা আমার পাশাপাশিই হাঁটছিল। দিনের বেলার জঙ্গল ছিল ওটা। চারিদিকে কীসব পাখি-টাখির কিচিরমিচির আর বুনো জন্তুর ডাক শোনা যাচ্ছিল। বাঘের গর্জনও শুনেছিলাম কিনা, মনে পড়ে না। আমি কেন যেন একটা কারণে ঘাবড়ে গেছিলাম। সে আমার কাঁধে হাত রেখে বলেছিল, "ভয় নেই। আমি আছি।" আমার পুরুষত্বে একটুও আঘাত লাগেনি তখন। মেয়ে হয়ে আমাকে ভরসা দিচ্ছে। এটা কোনো কথা? জেগে থাকলে হয়তো লাগতে পারতো। জানি না। স্বপ্নের আরও অনেক কিছু মনে নেই। একাংশ মনে আছে, যেখানে সে আর আমি নদীর ধারে ডাঙায় রাখা একটা ভাঙা নৌকোর ওপরে বসেছিলাম। বসে গল্প করছিলাম কিছু একটা নিয়ে। তখন সূর্যাস্তের সময় ছিল। সূর্যাস্তের সময় চারিদিকটা কেমন মায়াময় হয়ে পড়ে এটা যারা ঠিকঠাক সূর্যাস্ত দেখেছে, তারা বলতে পারে। সূর্য অস্ত যাওয়ার সময় পশ্চিমকাশ বিভিন্ন রঙে রঙাচঙা হয়ে ওঠে। মেয়েটার মুখেও কেমন একটা রঙ দেখতে পেয়েছিলাম আমি। মনে হচ্ছিল, চুমু খাই ওর গালে। কিন্তু বাস্তবে যেমন ঐ কাজটি করার সাহস হতো না, স্বপ্নেও হয়নি। তবে ঘুম ভেঙে মনটা ভালো হয়ে গেছিল। রোজ রোজ তো আর অমন স্বপ্ন আসে না।
আরেকটা স্বপ্ন আমি ফ্রিকুয়েন্টলি দেখি। মানে, ঐ একই ধরনের স্বপ্ন। দেখি কী, আমি এক্সামের আগের রাতে বই খুলে বসে আছি কিন্তু কোনো পড়াই শেষ হয়নি। সব বাকি। পাগলের মত করে পৃষ্ঠা ওল্টাচ্ছি আর এটা ওটা দেখছি। প্ল্যান করছি, কী কী আসতে পারে আর কী কী বাদ যেতে পারে। প্ল্যান করে খুশি হয়ে পড়ি। স্ট্র্যাটেজি অনুযায়ী, সারারাত এটা ওটা পড়ি। কিন্তু ভোর পাঁচটা হতেই এত প্রবলভাবে ঘুম আমাকে পেয়ে বসে যে, আমি টেবিলেই মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়ি। আটটার দিকে মা জাগিয়ে দেয় এসে। দেখি পড়া অর্ধেকই শেষ হয়নি। আর দেরিও হয়ে গেছে। পরীক্ষার হল বাড়ি থেকে অনেক দূরে। তাড়াহুড়ো করে বের হই কিন্তু প্রবেশপত্র নিতে ভুলে যাই। ফের ফিরে আসি। আবার প্রবেশপত্র নিয়ে বের হই। আরও দেরি হয়ে যায়। এর মধ্যে রাস্তায়ও থাকে জ্যাম। ষোলকলা হয় পূর্ণ! এক্সাম হলে গিয়ে পৌঁছই এক্সাম শুরুর আধঘন্টা পরে। গিয়ে আরও অবাক হয়ে যাই। আমার প্রাইমারি স্কুল, হাই স্কুল, কলেজ, ইউনিভার্সিটির সব ক্লাসমেট-বন্ধুবান্ধবরা একই জায়গায় পরীক্ষা দিতে এসেছে। কেন কে জানে। এর মধ্যে আমি আবার আমার সীট খুঁজে পাই না। হল জুড়ে ঘুরে বেড়াচ্ছি দেখে স্যার ডেকে পাঠায়। বলে, "তুমি খালি গায়ে পরীক্ষা দিতে এসেছ কেন?" তখন খেয়াল হয়, তাড়াহুড়ো করে শার্টটাও গায়ে দিইনি। শুধু প্যান্ট পরে এসেছি। ভাগ্যক্রমে, ব্যাগেই একটা শার্ট ছিল। সেটাই গায়ে দিই।
আজ সকালে যে স্বপ্নটা দেখে ঘুম ভেঙেছে সেটা বলছি। দেখি, আমি শুয়ে আছি। তখনই প্রচন্ড জোরে কী একটা ভাঙার শব্দ হয়। মাথা তুলে দেখি আমার পায়ের কাছে উইলিয়াম বুচার বসে আছে আর ভাঙা দরজার কপাট হাতে দাঁড়িয়ে আছে স্বয়ং হোমল্যান্ডার। উইলিয়াম বুচার তখন আমার দিকে তাকিয়ে হেসে হেসে বলছে, "Oi, mate! Still sleeping, eh?"
©® Max Rab