রৌদ্রময়ী

@roudromoyee


|| দাওয়াহ || শুদ্ধতা || সাহিত্য ||

রৌদ্রময়ী

21 Oct, 14:39


জাফর ইকবাল স্যারের ফ্যানবেজ মূলত কিশোররা। কিশোরদের জন্য জাফর ইকবালের লেখা সবচেয়ে জনপ্রিয় বইগুলোর একটা 'আমার বন্ধু রাশেদ'।

আমার বন্ধু রাশেদের শেষ দৃশ্যে চোখ বাঁধা অবস্থায় যেমন রাশেদ বুক টান টান করে দাঁড়িয়েছিল গুলি লাগার জন্য সেরকম জুলাইয়ে শত শত রাশেদের মাথায়, পায়ে, ঘাড়ে যখন গুলি লেগেছে জাফর ইকবাল স্যার তখন ব্যাঙের মতো হাইবারনেশানে ছিলেন। শীতনিদ্রায় তার মুখে কথা ফোটেনি।

আমার কাছে এরকম একটা ছবি আসছিলো ফার্স্ট হ্যান্ড ভিক্টিমের কাছ থেকে যে বন্ধুর মাথায় গুলি লেগেছে, আরেক বন্ধুর হাতে ঘিলু লেগে আছে।

আমার কাছে হাজার হাজার ছবি আছে, ভিডিও আছে যেখানে বাচ্চারা বন্ধুর লাশ নিয়ে কান্নাকাটি করছে। ভয়েস রেকর্ডগুলি শুনলে নিজের গায়েই কাঁটা দেয়।

তিনবার থেরাপিস্টের কাছে গিয়ে আমি বলেছি- আমি এই সিচুয়েশনে ঘুমাতে পারছিনা, কাউকে হেল্প করতে পারছিনা।

তখন আমাদের প্রিয় স্যার কী করেছেন?
-চুপ করে থেকেছেন। কথা বলেননি।

দান্তেকে ফ্লোরেন্স থেকে বের করে দেয়া হয়েছিল লেখার জন্য। চোখের পানি ফেলতে ফেলতে দান্তে তার ইনফার্নোতে লিখেছিলেন- নরকের সবচেয়ে অন্ধকার স্থান মূলত তার জন্য যে ভালো আর মন্দের লড়াইয়ের সময় চুপ করে থাকে।

জাফর ইকবাল মূলত সেই লোক যিনি শত শত রাশেদদের মৃত্যুর সময় চুপ করে ছিলেন। আমি তার জন্য কোন মুখে বড়ো করে কথা বলবো যেখানে ছোট ছোট কিশোরদের মৃতদেহ আর হারানো পা, হাত ও চোখ দেখেও তার মুখে কথা ফোটেনি?

তার মুখে কথা ফোটেনি
জান্নাতুন নাঈম প্রীতি

রৌদ্রময়ী

রৌদ্রময়ী

20 Oct, 12:38


সকালবেলা জিলাপি খেতে ইচ্ছে করলো। একসময় জিলাপি খেতাম না আর এখন হুটহাট কতকিছু খেতে ইচ্ছে করে!

গতসপ্তাহে আব্বু এনে দিয়েছেন তাই ফ্রিজ খুলে চেক করলাম আছে কিনা। একটাও অবশিষ্ট নেই। মন খারাপ হলো। আফসোস করে বললাম ইশশ যদি জিলাপি খেতে পারতাম।

এখন আমার যা চাওয়া থাকে তা আল্লাহকে বলার চেষ্টা করি। আমার চাওয়া যদি কল্যাণকর হয় আল্লাহ সেটি আমাকে যেকোনো মাধ্যমে দেওয়ার ব্যবস্থা করেন।

এইযে ময়েশ্চারাইজারের কৌটা খালি হয়ে এসেছে। প্রতিদিন দুআ করার সময়ে আল্লাহকে বলি, 'প্লিজ আল্লাহ আমাকে একটি ময়েশ্চারাইজার কেনার মতন টাকার ব্যবস্থা করে দাও।' আমি বিশ্বাস রাখি আমার টাকার ব্যবস্থা ঠিক হয়ে যাবে।

প্রতিদিন ঘুমানোর সময় আল্লাহকে খুব রিকুয়েষ্ট করে বলি, 'ইয়া আল্লাহ আমি সকালে ঘুমের জন্য উঠতে পারি না। এর ফলে আমার তাড়াহুড়ো করে শেষ ওয়াক্তে কোনোমতে ফরজ আদায় করতে হয়। তুমি আমার ঘুম পরিপূর্ণ করে দাও এবং আমাকে তাড়াতাড়ি ওঠার সক্ষমতা দাও।' আলহামদুলিল্লাহি রব্বিল আলামীন! সেদিন আমি একদম সঠিক সময়ে জেগে যাই।

এভাবে প্রতিটি চাওয়া যখন আল্লাহর কাছে চাইতে শিখবো তখন তিঁনি আমাদের জন্য যথেষ্ট হয়ে যাবেন।

আজকে সারাদিন কেটে গেল ব্যস্ততায়। বিকেলবেলায় পানি নিতে গিয়ে দেখলাম দরজা খোলা। ভেবেছিলাম হয়তো আব্বু এসেছেন তাই খোলা। আমি আর পাত্তা না দিয়ে নিজের রুমে ফিরে এলাম।

কিছু সময় পর আম্মু গেলেন এবং দরজা খোলা দেখে তিনি আমাকে ডেকে জিজ্ঞেস করলেন দরজা আমি খুলেছি কিনা। আমি বললাম দরজা তো খোলা ছিল। আম্মু বললেন, কিন্তু আমি তো দরজা লাগিয়েছিলাম হয়তো ভালো করে না লাগায় খুলে গেছে। কিন্তু সেজন্য তো ধাক্কা দেওয়া প্রয়োজন।

পরে আম্মু খেয়াল করলো টেবিলের একপাশে অনেকগুলো জিলাপির প্যাকেট। সেগুলো নিয়ে সোজা আমার কাছে এলেন। খুশিতে আত্মহারা হয়ে গেলাম আমি। এটাই তো মনে মনে চেয়েছিলাম আর রব ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। পরিশেষে রবের শুকরিয়া আদায় করলাম।

যখন আমরা দয়াময়ের কাছে চাইতে শিখবো, অন্তর থেকে কোনোকিছু চাইবো তখন তিঁনি তার ব্যবস্থা করে দিবেন। আমাদের জীবনের ছোট-বড় যত চাওয়া আছে তা রব ছাড়া কেউই পূর্ণতা দেওয়ার ক্ষমতা রাখেন না।

তাই আমাদের যদি একটি পয়সারও জরুরত হয় আমরা আল্লাহকে বলবো, আল্লাহর কাছে হাত তুলবো। বান্দা যখন তার প্রতিটি বিষয়ে আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল করবে, আল্লাহর কাছে আন্তরিকতার সাথে চাইবো তখন রব বান্দার জন্য যথেষ্ট হয়ে যাবেন। এমন মিরাকলের পর মিরাকল ঘটবে যা বান্দার কল্পনাতেও থাকবে না।

জিলাপির গল্প
জুওয়াইরিয়া কাজিমা

রৌদ্রময়ী

রৌদ্রময়ী

19 Oct, 12:31


ঐ যে একটা হাদিস আছে না, শেষ জামানায় ঈমান ধরে রাখা হাতে জ্ব'লন্ত কয়লা ধরে রাখার মতন হবে?

বেদ্বীন পরিবারে যেসব বোনেরা দ্বীন পালন করেন তারা এই হাদিসটা হাড়ে হাড়ে টের পান। এ ধরনের পরিবারগুলোতে দ্বীন পালনের জন্য লাগে সাহস, আর যে দিনগুলোতে একার সাহসে কুলায় না, সে দিনগুলোতে খুব খুব অভাববোধ হয় সাহস যোগানো কোনো অভিজ্ঞ বোনের।

আশা করছি আমার বা আমাদের অভিজ্ঞতা, পরামর্শ নতুন-পুরাতন বোনদের একটু হলেও সাহায্য করবে। এই দিকনির্দেশনা থাকবে ‘বেদ্বীন পরিবারে দ্বীন পালন’ শিরোনামে।

আজকের প্রথম পর্বের আলাপের বিষয়বস্তু হচ্ছে মানসিকতা বিষয়ক। আলাপ শুরু করি এবার?

বেদ্বীন পরিবারে টিকে থাকার জন্য তিনটা জিনিস লাগে : দৃঢ় মনোবল, একনিষ্ঠ দুআ, আর চেষ্টা। আর এসব কিছু চালিয়ে যাওয়ার জন্য লাগে মানসিকতার পরিবর্তন।

যখন আপনি বেদ্বীন পরিবারে দ্বীন পালন করা শুরু করবেন, তখন ধরেই নিতে হবে যে বাধা আসবে। এই বাধা হতে পারে মানসিক অত্য-আচার, অর্থাৎ অপমান, গালিগালাজ, চিল্লাচিল্লি, রাগারাগি, মনোমালিন্য অথবা শারীরিক নির্যাতন। এইটা হবেই।

আপনি বেদ্বীন পরিবারে দ্বীন পালন শুরু করবেন আর আপনার উপর কোনো বাধাই আসবে না, তার মানে কোথাও গলদ আছে। হয় আপনি পরিপূর্ণ দ্বীন পালনের চেষ্টা করছেন না, নাহয় আপনার পরিবার পরিপূর্ণ বেদ্বীন না।

হয় মৌখিক, নাহয় শারীরিক, কোনো না কোনো ঝামেলা থাকাটা দ্বীন পালন সঠিক হচ্ছে কি না সেটার মাপকাঠি ধরতে পারেন (উল্লেখ্য, এখানে কিন্তু দ্বীনের নামে উল্টাপাল্টা কিছু করে ধরা খাওয়ার কথা বলছি না। উল্টাপাল্টা বলতে কী বোঝাচ্ছি সেটাও অবশ্য জানি না। তবে কথা হচ্ছে আপনার দ্বীন পালন হতে হবে ঠিকঠাক, দিকভ্রান্ত না আরকি)।

তো এই ঝামেলা হবে কবে থেকে? সাধারণত, যবে থেকে পরিপূর্ণ পর্দা শুরু করবেন। অর্থাৎ বাইরে পরিপূর্ণ পর্দা করে কালো বোরকা, নিকাব, হাতমোজা, পা-মোজা পরে যাবেন তবে থেকে। তখন থেকে অল্প অল্প করে ঝামেলা দানা বাঁধবে।

যখন ঘরের মধ্যে গায়রে মাহরামের সাথে পর্দা করতে চাইবেন তখন জমবে আসল খেলা। এরপর যদি বিয়ের বয়স হয়ে থাকে তাহলে তো আর কথাই নাই। ঘটককে ছবি দিতে চাইবেন না, পাত্রের পুরুষ আত্মীয়ের সামনে যাবেন না, বিয়েতে বেহায়াপনা করবেন না, আর আপনাকে এমনি এমনি ছেড়ে দেবে?

না রে বোন, ছাড়বে না। যদি ছাড়েই, তাহলে দ্বীনদার আর বেদ্বীন পরিবারের পার্থক্য কী থাকবে?

ধরেন আপনি ইয়া-বা খাওয়া শুরু করলেন, তখন আপনার বাবা-মা কী করবে? রাগারাগি / মা'রধরের মাধ্যমে হলেও আপনাকে ফেরানোর চেষ্টা করবে তো, তাই না?

বাস্তবতা হলো আপনার এই দ্বীন পালনও তাদের কাছে সেই মাদকাসক্ত হওয়ার মতোই খারাপ। আল্লাহুম্মাগফিরলী!

এই যে তাদের হাসিখুশি মেয়েটা এখন আর ঘোরাঘুরি করে না, বাড়ি কেউ আসলে সবাইকে মাতিয়ে রাখে না, কারোর সামনে আসে না, বাইরে সাজগোজ করে না, কালো কাপড়ে নিজেকে মুড়ে রাখে, গান শোনে না, পড়াশোনা নিয়ে আকাশছোঁয়া স্বপ্ন দেখে না, বিলাসবহুল জীবন চায় না– এসব কি উদ্ভট বা ভয়াবহ লাগে না শুনতে একজন বেদ্বীন মানুষের কাছে?

মাদকাসক্ত হওয়ার চাইতে কম কিছু হবে তাদের কাছে? তাহলে তারা বাঁচানোর চেষ্টা করবে না আপনাকে?

করবে তো। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো যেটাকে তারা সফলতা ভাবে, সেটা আখিরাতের চোখ দিয়ে দেখলে ব্যর্থতা! চূড়ান্ত ব্যর্থতা!

তাই মানসিকতার ক্ষেত্রে প্রথম পদক্ষেপ হচ্ছে এটা মেনে নেওয়া যে প্রতিকূলতা আসবেই, দ্বিতীয় পদক্ষেপ হলো, বাবা-মায়ের কাজের পেছনে তাদের মনস্তাত্ত্বিক কারণ বোঝা; আর তৃতীয় পদক্ষেপ হলো, এটাকে দ্বীন পালনের অংশ ভেবে সহজভাবে নেওয়া, অর্থাৎ ভেঙে না পড়া।

এখন এই ভেঙে কীভাবে না পড়া যায় সেটা আমরা দ্বিতীয় পর্বে জানবো ইনশাআল্লাহ বোনেরা।

পুনশ্চ : যদি লেখা উপকারী মনে হয়, তাহলে দয়া করে কেউ আমার প্রশংসা করবেন না। প্রশংসা করবেন আমাদের রবের, যিনি আমাকে লেখার এবং আপনাকে পড়ার যাবতীয় তওফিক দান করেছেন। এই যাবতীয় যে কতকিছু, তা লিখতে গেলে সমুদ্রের কালিও ফুরিয়ে যাবে! এজন্য প্রশংসা করবেন আপনার রবের, আর বাকিদের জন্য করবেন দুআ, বারাকাহর দুআ।

বারাকাহর দুআ হচ্ছে : মাশাআল্লাহ, লা ক্বুওয়্যাতা ইল্লা বিল্লাহ। বারাকাল্লাহু ফিক।

বেদ্বীন পরিবারে দ্বীন?
জিলফাত ফারহা

রৌদ্রময়ী

রৌদ্রময়ী

18 Oct, 12:46


পরক্ষণেই মনে পড়লো অনুতপ্ত হতে গিয়েও আবার নামাজে অমনোযোগী হয়ে যাচ্ছে। কথা তো ছিলো নামাজে যে দুআ-দরুদ পড়া হয় তার দিকে মনোযোগ দেওয়ার ; অর্থ বুঝলে অর্থের দিকে৷ মনোযোগকে টেনে হিঁচড়ে নামাজে আনলো নিরহা।

এভাবে নফসের সাথে যুদ্ধ করতে করতে নামাজ শেষ করলো। তাসবিহ পড়তে গিয়ে নিরহার হঠাৎ মনে পড়ছে—আজকে স্যারের সাথে কথা বলার সময় বা স্যারের কথা শোনার সময় মনোযোগ সব স্যারের দিকেই ছিলো৷ যেমন বিনীত হয়ে দাঁড়িয়ে ছিলো স্যারের সামনে, তেমনি ছিলো মনোযোগী।

কিন্তু একটু আগে কী হলো! বিনীত ভঙ্গিতেই দাঁড়িয়ে ছিলো জায়নামাজে। চোখ, মুখ, হাত, পা সবকিছুই রবের আনুগত্য মাথা পেতে নিয়েছে। এক দেখাতেই মনে হবে নামাজ পড়ছে।

কিন্তু মন তো ওর পুরো জগতটাতে ঘুরে এসেছে। পড়ছে একটা, ভাবছে আরেকটা। এই বিনয় কি বাহ্যিক বিনয় হয়ে গেলো না? নামাজের জন্য তো ভেতর-বাহির আগাগোড়াই বিনীত হতে হবে। তাহলে? ডাবলস্ট্যান্ডার্ড হয়ে যাচ্ছে না তো?

নিরহা মনঃস্তাপে ক্লিষ্ট হতে থাকে যখন ভাবে স্যার সম্মানীয় ব্যক্তি, গুরুজন বলে সে স্যারের সামনে অমনোযোগী হয় না, কথা বলার সময় স্পষ্টভাবে, ধীরে ধীরে বলে। পা থেকে মাথা, ভেতর থেকে বাহির —পুরো নিরহাটাই বাধ্যগত, নম্র, ভদ্র হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে স্যারের সামনে।

অথচ...! অথচ যিনি সর্বশক্তিমান, মহা বিশ্বের সৃষ্টিকর্তা যিনি, যিনি মহাপরাক্রমশালী রব—তাঁর সামনে দাঁড়ালে, তাঁর আদেশ পালন করতে গিয়ে শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বিনীত হলেও মনটা নিয়ে বিনীত হতে পারছে না নিরহা।

মন দৌড়ে যাচ্ছে এদিক ওদিক। ঠোঁট নেড়ে দুআ পড়তে পড়তে, রোবটের মতো উঠাবসা করাই হচ্ছে শুধু—নামাজ আসলে কতটুকু হচ্ছে!

আস্তে-ধীরে, তাজবিদসহ শুদ্ধ উচ্চারণে তিলাওয়াত করার কথা থাকলেও সেসব পারছে কই? উল্টো তিলাওয়াতটুকু এমন হয়ে যায় যেন তাড়াতাড়ি পড়ে যাওয়ার প্রতিযোগিতা চলছে, নয়তো পেছন থেকে কেউ ধাওয়া করছে!

সাহাবীদের কাছে নামাজ ছিলো দুনিয়ার সবকিছুর চাইতে মূল্যবান। নামাজরত অবস্থায় পায়ে গেঁথে থাকা তীর বের করে নেওয়া হয়েছে, টের পাননি আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু।

আর আমরা? আমরা একটা মশা কামড়ালেও সেটা তাড়িয়ে দিতে নয়তো মারতে ব্যস্ত হয়ে উঠি। নামাজে আমাদের মনোযোগ এতো মারাত্মক রকমের কম!

একবার মাদ্রাসার হুজুরের 'নামাজ কয় মন?' প্রশ্নের উত্তরে প্রশ্নটা বুঝতে না পেরে নিরহা উত্তর দিয়েছিলো—'পাঁচ মন।' ছোটবেলায় না বুঝেই উত্তর দিয়েছিলো।

কিন্তু এখন বড়ো হয়েও নিরহার মনে হচ্ছে মনটা ঠিক কতদিকে যায় গুণে শেষ করতে পারবে না। সহজে মনে করতে না পারা কথাটাও মনে পড়ে যায় নামাজে দাঁড়ালে।

হ্যাঁ, এখানে শয়তানের ওয়াসওয়াসা বেশি। তার সাথে রীতিমতো যুদ্ধ করতে হয় একাগ্রচিত্তে নামাজ পড়তে। কিন্তু দিনশেষে দেখা যায় প্রতিবার সে-ই শয়তানটাই বিজয়ী হয়ে যাচ্ছে। আর নিরহার ভাগ্যে? শুধু পরাজয়।

বারবার নিজেকে প্রশ্ন করছে নিরহা—কোনো কিছুতে পরাজিত হলে তো তুই নিজেকে নব উদ্যমে তৈরি করিস পরেরবারের জন্য। তাহলে এই পরাজয়কে কেন আমলে নিচ্ছিস না? কেন ভাবছিস না এভাবে হাল ছেড়ে বসে থাকলে বিজয়ী শয়তান তোকে নিজের আয়ত্বে নিয়ে নেবে? তখন যে আর প্রতিযোগিতা করার সক্ষমতাও থাকবে না তোর!

তাসবিহ পড়া শেষ করে দু'হাত তুলে রবের কাছে ফরিয়াদ জানায় নিরহা—নামাজটা ইখলাসের সাথে পড়ার তাওফিক দিন, ইয়া রব। অন্তর প্রশান্ত হওয়ার মতো নামাজ পড়ার তাওফিক দিন। কবুল হওয়ার মতো করে নামাজ পড়ার তাওফিক দিন। আমিন।

নামাজ কয় মন?
বিনতে ইউনুচ

রৌদ্রময়ী

রৌদ্রময়ী

18 Oct, 12:46


রেজিষ্ট্রেশন কার্ডটাতে আরেকবার চোখ বোলালো নিরহা। বান্ধবীদেরকে অসহায় মুখে
বললো, 'তোরা কেউ আমার সাথে যাবি না তাহলে?'

ওরা অসম্মতি প্রকাশ করতেই উঠে দাঁড়ালো নিরহা। নিজের সমস্যা সমাধানের জন্য নিজেকেই দৌড়াতে হবে। ক্লাস কেপ্টেনের কাছ থেকে ছুুটি নিয়ে ক্লাসের বাইরে বারান্দায় এসে দাঁড়ালো।

একা অফিসে যেতে ভয় লাগছে কিন্তু কিছুু করার নেই। কয়েকমাস পরেই এসএসসি পরীক্ষা। আজকে রেজিষ্ট্রেশন কার্ড দিয়েছে। অফিস সহকারী এসে দিয়ে গিয়েছে। বলেছে, ভালোভাবে চেক করে দেখতে। কোথাও সমস্যা থাকলে অফিসে গিয়ে ওর সাথে যোগাযোগ করতে বলেছে।

ক্লাসে সবার রেজিষ্ট্রেশন কার্ড-ই ঠিকটাক আছে। নিরহার কার্ডে মায়ের নামের জায়গায় বাবার নাম এসেছে, বাবার নামের জায়গায় মায়ের নাম। প্রথমে এটা চোখে পড়েনি। পরে খেয়াল করে পড়ে দেখতে গিয়েই দেখে এই অবস্থা। সেই থেকেই অস্থির হয়ে আছে মেয়েটা।

অস্থিরতায় প্রধান শিক্ষক যে পাশে এসে দাঁড়িয়েছে, খেয়াল করেনি নিরহা। খুব স্ট্রিক্ট একজন মানুষ তিনি। স্যারকে দেখামাত্র সালাম দিয়ে ক্লাসে ঢুকে যেতে চাইলে স্যারের গুরুগম্ভীর কন্ঠ শুনে দাঁড়িয়ে গেলো।

'ক্লাস থেকে বেরিয়েছো কেনো?'

ভয়ে হৃদপিণ্ডটা জোরে বিট করছে। নিজেকে সামলানোর চেষ্টায় রত হয়ে স্যারকে উত্তর দিলো নিরহা, 'স্যার, আসলে আমার রেজিষ্ট্রেশন কার্ডে ভুল এসেছে। সেটাই দেখাতে যাচ্ছিলাম সাদেক ভাইয়ার কাছে।'

'আমার সাথে এসো,' বলে স্যার হাঁটা ধরলেন অফিসের দিকে। নিরহাও গেলো পেছন পেছন।

অফিসে ঢুকে স্যার নিজের চেয়ারে বসলেন৷ পরপরই বললেন, 'বলো কী সমস্যা!'

স্যারের টেবিলের এই পাশে চেয়ার আছে, স্যারের বিপরীতে। স্যার বসতে বলেনি, বসা যাবেনা। নিরহা যথাসম্ভব বিনীত হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

স্যারের প্রশ্নের উত্তরে বললো, 'আমার রেজিষ্ট্রেশন কার্ডে মাদার্স নেমের জায়গায় বাবার নাম আর ফাদার্স নেমের জায়গায় মায়ের নাম চলে এসেছে, স্যার।'

স্পষ্ট উচ্চারণ, বিনীত ভঙ্গি। প্রধান শিক্ষকের কক্ষে অবশ্য সবাই এমনভাবেই কথা বলে। স্যারের জন্য এটা নতুন কিছু না।

'বাকি সবকিছু চেক করেছো ভালোভাবে? অল ওকে?'

মাথাটা একটু নাড়লেই এর উত্তর হয়ে যায়। কিন্তু সম্মানী মানুষ যখন মুখ খুলতেই হয়।

'জি, স্যার। চেক করেছি।'

স্যারের রুমের সাথে লাগোয়া রুমটাতে অফিস সহকারীরা বসে।

'সাদিক, এদিকে এসো।'

স্যারের ডাক শোনামাত্র সাদিক এলো৷ 'জি স্যার,' বলে দাঁড়ালো অনুগত ভঙ্গিতে। তার সম্পূর্ণ মনোযোগ স্যারের দিকে।

'এই মেয়েটার রেজিষ্ট্রেশন কার্ডে মা-বাবার নাম ভুল হয়েছে। দরকারী কাজ মনোযোগ সহকারে করবে। মানুষ মাত্রই ভুল, আমি জানি। কিন্তু হান্ড্রেড পার্সেন্ট মনোযোগ দিতে পারলে কাজে ভুলের পরিমাণ কমে আসে। সংশোধনে আবার টাইম দিতে হয় না, মানুষকেও এক্সট্রা প্যারা দিতে হয় না।'

স্যারের গুরুগম্ভীর কন্ঠের কথাগুলো মনোযোগ দিয়ে শুনেছে রুমে উপস্থিত দুজন—নিরহা আর সাদিক। যদিও নিরহার বিষয় না এসব, তবু গুরুজনের কথা মন দিয়ে শুনতে হয়, তাদের সামনে অমনোযোগী হওয়া চলে না।

'দুঃখিত স্যার,' মাথা নিচু করে বললো সাদিক।

সাদিকের দিকে নিরহার রেজিষ্ট্রেশন কার্ডটা বাড়িয়ে দিলেন প্রধান শিক্ষক। সেটা নিয়ে চলে গেলো সাদিক।

স্যার যেতে বলেনি বলে নিরহা দাঁড়িয়ে আছে ; যেহেতু স্যার নিজেই ডেকে এনেছে।
স্যার এবার ওর দিকে ফিরে বললেন, 'তুমি আসতে পারো।'

.

টিফিন পিরিয়ডে স্কুলের নামাজ ঘরে নামাজ পড়তে এসেছে নিরহা, বান্ধবীদের সাথে। অজু করে নামাজে দাঁড়ালো।

'রেজাউল স্যারের হোমওয়ার্ক তো কমপ্লিট করা হয় নাই। শিট! সেকেন্ড পিরিয়ডের পর তো সময় পেয়েছিলাম কিছুক্ষণ। আড্ডা না দিলেই হতো। মনেই ছিলো না হোমওয়ার্কের কথা।'

ভাবনার সাথে সাথে ব্রেইন যেন ডিরেকশন পেয়ে গেলো নামাজ দ্রুত শেষ করার জন্য৷ যদিও হোমওয়ার্কের জন্য নামাজে তাড়াহুড়ো করার কোনো ইচ্ছেই মনের কোনো কোণায় নেই নিরহার।

ব্রেইন যে নির্দেশ দেয়, শরীরের অন্যান্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সেটা পালন করা শুরু করে৷ নামাজে একটু তাড়াহুড়ো হয়ে যাচ্ছে টের পেতেই নিজেকে ধীরস্থির করলো নিরহা।

চার রাকাআত সুন্নত নামাজের শেষ বৈঠকে আছে নিরহা। তাশাহুদটা শেষ হতেই মনে পড়লো—মাফরুহা বলেছিলো ইংলিশের নোটগুলো আনতে। ওর পাশে বসেও মনে ছিলো না। এখান থেকে গিয়ে মাত্র দিয়ে দিতে হবে—ভাবলো নিরহা। তিলাওয়াত চলছে।

ফরজ নামাজের নিয়ত বেধেছে এবার। কক্সবাজার যাওয়ার প্ল্যান চলছে বাসায়। তিনদিনের ট্যুর। কোচিং টিচার কি এক্সামের আগে ছুটি দেবেন? নিশ্চয়ই একগাধা বকা শোনতে হবে। এদিকে ট্যুর মিস দিলে একটা ভালোরকম চান্স মিস হয়ে যাবে।

ভাবতে ভাবতেই নিরহা তিলাওয়াত করছে— ফাওয়াইলুল্লিল মুসল্লি-ন ( সুতরাং দুর্ভোগ সেই সালাত আদায়কারীদের)। আল্লাযি-না হুম আন সলাতিহিম সা- হুন (যারা তাদের সালাত সম্পর্কে উদাসীন)।

ভাবনার ফাঁকে আয়াত দুটোর অর্থ মনে পড়তেই কেঁপে উঠলো নিরহা। এই আয়াত তো ওর-ই জন্য! নিজের উদাসীনতার জন্য অনুতপ্ততা এসে ভর করলো মনে।

রৌদ্রময়ী

17 Oct, 13:03


হোমোরা চায় সবাই হোমো হোক, ট্রান্সরা চায় সবাই ট্রান্স হোক। তসলিমা নাসরিন কখনো আস্তিকতার উপর লেকচার দেবে? এরা চায় আশেপাশের সবাইকে এদের মতই বানিয়ে ফেলতে।

তারা বলে এটা তোমার জীবন, কেন অন্যরা তাদের মতামত তোমার উপর চাপাবে? তারা মনে সন্দেহ ঢোকায়, সৃষ্টিকর্তা এক্সিস্ট করে কী সাইন্টিফিক এভিডেন্স আছে? অথচ ঈমান মানেই আগে বিশ্বাস তারপর অন্য কথা!

মডারেট আপারাও যেমন চায় সবাই তাদের মত মডারেট ইসলাম পালন করুক। মূল কথা হল সবাই সবাইকে নিজের দলে টানতে চায়।

রাসূলের ইসলাম পালনকারীরাও তেমনি চাই সবাই ধার্মিক হোক, অন্য কারও মতবাদ না, রাসূলের ইসলাম শিখুক, পালন করুক। কিছুই না থাকলেও অন্তত ঈমান টা থাকুক। সমস্যা আছে?

আজকাল অনেকেই বলে ইসলামিক স্কুলে বাচ্চা দিয়ে কী লাভ ওই তো ও/এ লেভেলে বাইরেই আসতে হবে।

এখন পুরা দুনিয়ার অবস্থাই খারাপ। জেনারেল স্কুলে দেবেন ম্যাথ, সাইন্স টিচার নাস্তিক হলে সে ক্লাস রুমেই বাচ্চার ভেতর সেই বীজ ঢোকাবে।

বাচ্চা আপনার কাছে একদিন এসে গডের এক্সিস্ট্যান্সের এভিড্যান্স চাইবে। ততদিনে তার ঈমান কিন্তু হারিয়ে গেছে। আপনি কুরআন থেকে আয়াত তুলে সাইন্টিফিক ফ্যাক্টস বললেও তারা বিশ্বাস করবে না, লাভ নাই।

সবাই হোম স্কুলিং করানোর মত যথেষ্ট স্কিলড না।

ইসলামিক স্কুলে টিচারদের কিছু এথিক্স মেনে চলতে হয় এটলিস্ট স্কুল প্রিমিসেস এ। ব্যক্তিগত জীবনে সে নাস্তিক হলেও এখানে সে ক্লাসরুমে তার সংশয়বাদী মতামত দিতে এলাউড না। ইচ্ছা হলেই যে যা খুশি তাই বললে চাকরি চলে যাবে।

তবুও কোনো বিশেষ রাজনৈতিক মতাদর্শের অনুসারী কারো স্কুলে বাচ্চাদের দিতে নিষেধই করি। তারা তাদের মডারেট ইসলাম শেখাবে রাসূলের ইসলাম না।

ইসলামিক স্কুলে দিয়েও এমন আহামরী কিছু হয় না ঘরে বিশেষ করে মা-বাবার প্র‍্যাক্টিস না থাকলে। যার চাক্ষুস প্রমাণ দেখছি। যারা চায় তাদের আল্লাহ তা'লাই হেল্প করেন বিইযনিল্লাহ। যারা চায় না তারা বেরিয়ে যাবেই এমনকি মাদ্রাসায় পড়লেও।

ঈমান ধরে রাখাটাই চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াচ্ছে দিন দিন।

ইসলামি স্কুল
তানজিনা রহমান

রৌদ্রময়ী

রৌদ্রময়ী

16 Oct, 13:23


রবিউল আউয়াল মাস শেষ হতেই সোশ্যাল মিডিয়ার ইসলামিক গ্রুপগুলোতে রমাদানের প্রস্তুতি সংক্রান্ত পোস্টের দেখা মিলতে থাকে। সেসব পোস্ট পড়তে পড়তে, গত রমাদানে করা ভুলগুলো আক্ষেপ হয়ে ফিরে আসে।

মনে মনে প্রতিজ্ঞা করি, এবার কোনোভাবেই রমাদানকে ব্যর্থ হতে দেয়া যাবে না। এবার আগে থেকেই প্রস্তুতি নিবো। ভাবতে ভাবতে রবিউল আউয়াল শেষ হয়ে রবিউস সানীও যাওয়ার পথে।

তারপর শুরু হয় পরিকল্পনা। রমাদানে কী কী করবো, তার বিশাল এক তালিকা। এই পরিকল্পনা করতে করতেই জুমাদাল উলা পার হয়ে যায়। হাতে থাকে মাত্র তিন মাস।

খেয়ে না খেয়ে এবার সব আমল একসাথে করার পালা— তিলাওয়াত, তাফসীর, নফল নামাজ, জিকির-আজকার, কাজা রোজা, আরও কত কী!

দুই মাস পুরোদমে চলে, তারপর ধীরে ধীরে আসে শৈথিল্য। ক্লান্ত শরীরটা বিশ্রাম চায়। ভাবি, "আজকে না হয় থাক, রমাদান আসতে এখনও অনেক বাকি।"

এভাবেই একে একে সব আমল ছুটতে থাকে। বিশ্রামের স্বাদ পেয়ে শরীর আর আগের অবস্থায় ফিরতে চায় না। বরং বাড়তি আমলের কথা শুনলেই যেন ভয় পায়।

দেখতে দেখতে লাইলাতুল বারাআতও চলে যায়। এবার সবার টনক নড়ে। রমাদান তো দোরগোড়ায় এসে গেছে। আবার ঝাঁপিয়ে পড়ে সবাই নতুন উদ্যমে প্রস্তুতি নিতে। তবে এবারের প্রস্তুতি ইবাদতের জন্য নয়, এবার শুরু হয় সাংসারিক প্রস্তুতি।

এ সময় সোশ্যাল মিডিয়া ভরে যায় রমাদানের আগে কীভাবে ঘরের কাজ এগিয়ে রাখতে হবে, সে বিষয়ে নানা পোস্টে। হুজুগে মাতাল হয়ে নারীরাও লেগে পড়ে রান্নাঘর গুছিয়ে নিতে। অন্যের পোস্ট দেখে প্রয়োজন নেই এমন কাজও শুরু করে।

এভাবে গোছগাছ করতে করতে কখন যে রমাদান এসে যায়, টেরও পায় না। শরীরে একরাশ ক্লান্তি নিয়ে ইবাদতেও আর মন বসে না। "আজ একটু কম তিলাওয়াত করি, কাল বেশি করে করবো"—এভাবে প্রতিদিন মনকে প্রবোধ দিলেও সেই "কাল" আর আসে না।

কিছুদিন পরেই শুরু হয় ঈদের কেনাকাটা। ঈদের দিনের জন্য রান্নাবান্না আর ঘর সাজানোর প্রস্তুতি। এত সব ব্যস্ততার মাঝে নীরবে বিদায় নেয় রমাদান। আবার শুরু হয় আফসোস—ইশ! এবারও রমাদানটা মনের মতো হলো না।

এই গল্পটা প্রায় সব প্র্যাক্টিসিং হতে চাওয়া নারীর রমাদানের গল্প। আমরা সবাই চাই আমাদের গল্পটা বদলাতে। কিন্তু সঠিক পদক্ষেপের অভাবে দিন শেষে এই গোলকধাঁধা থেকে বেরিয়ে আসতে পারি না।

কীভাবে আমরা আমাদের গল্পটা বদলাতে পারি, লিখতে পারি মনের মতো রমাদানের গল্প, সে সম্পর্কে ইনশাআল্লাহ ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে কিছু আলোচনা করার চেষ্টা করবো সামনের পর্বগুলোতে।

মনের মতো রমাদান
প্রথম পর্ব
জেরমিন আমাতুল্লাহ

রৌদ্রময়ী

রৌদ্রময়ী

15 Oct, 12:31


হানা তাড়াতাড়ি বললেন- বসো বসো। সরি, আগেই বলা উচিত ছিলো।
- ব্যস্ত হবেন না। আমি ঠিক আতিথ্য পাবার যোগ্যতা রাখি না, সেটা জেনেই এসেছি। করুণভাবে তিনি মারিনার দিকে তাকালেন একবার। তার চোখ জলে ভরে গেলো।
- সরি আন্টি। ইটস নট ইওর ফল্ট। নিজেকে গিল্টি ভাবার কারণ নেই।

সুমনা কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে আস্তে আস্তে বললো- আপনারা নিশ্চয়ই লীগ্যাল একশনে যাবেন, সেরকমটা শুনছি।
- সেটাই তো স্বাভাবিক, তাই না? আমরা ভিনদেশি। মেয়ের সিকিউরিটির ব্যাপারে যথেষ্ট ওরিড।
- জি স্বাভাবিক। তবু আমি একটা অস্বাভাবিক অনুরোধ করতে এসেছিলাম।

সুমনা হঠাৎ উঠে এসে মারিনার দুহাত জড়িয়ে ধরলো।
- আমার বড় মেয়েটার বিয়ে। সব ঠিকঠাক ছিলো। আব্বার অসুস্থতার জন্য আটকে গেছিলো। রেপুটেড ফ্যামিলির ছেলে। এই অবস্থায় ওর বাবার নামে এরকম কিছু চাউর হলে বিয়েটা হয়তো ভেঙ্গে যাবে। তুমি তো একটা মেয়ে মা। আমার মেয়ের দিকটা ভেবে বিষয়টা যদি ওভারলুক করতে!

উত্তেজিত হয়ে ওঠে মারিনা- আপনি একটা মেয়ে হয়ে আমাকে এমন রিকোয়েস্ট করছেন? দিস ইজ এটেম্প টু রেপ কেইস- হালকাভাবে নেবার মতো কোনো বিষয় না। আমার জায়গায় আপনার মেয়ে হলে কী করতেন?

হাউ মাউ করে কেঁদে ফেলেন সুমনা। হাত পা ভেঙ্গে বসে পড়েন সোফায়। মুখ ঢেকে কাঁদছেন।

হানা চুপচাপ দেখছিলেন। মেয়েকে ইশারা করলেন- তুমি নিচে পুল সাইডে যাও তো, আমাদের একটু স্পেস দাও।

মারিনা হন হন করে বেরিয়ে গেলো। হানা ফাইজাহ সুমনাকে হালকা হতে দিলেন। তারপর তার পাশে এসে বসলেন ।
- তোমার কান্না শেষ হলে আমরা ঠাণ্ডা মাথায় কথা বলতে পারি।
- জি। ততক্ষণে শান্ত হয়ে গুছিয়ে বসেছে সুমনা।
- ইউ আর সো বিউটিফুল। ডাজেন্ট হী লাইক ইউ? আমাকে অন্যভাবে নিও না। আমি পেশায় একজন সাইক্রিয়াটিস্ট। তোমার হাজবেন্ডের প্রবলেমটা বুঝতে চাইছি।

রীতিমত জেরা করতে শুরু করলেন হানা ফাইজাহ। পেশাদার সাইক্রিয়াটিস্টের সূক্ষ্ম প্রশ্নের ফাঁদে সুমনা একে একে অনেক কিছুই বলে ফেলেছে নিজের অজান্তেই। যেন সে এখানে একটা সিটিং দিতেই এসেছিলো।

অনেক কথার পর হানা ফাইজাহ সন্তুষ্ট হলেন একসময়। তিনি বললেন- আমি হয়তো তোমার সমবয়সী হবো বা সামান্য ছোট হতে পারি। কিন্তু দেখ, তোমার চেয়ে আমাকে বয়স্ক দেখাচ্ছে বেশি, ঠিক না? অথচ আমরা হ্যাপি কাপল- পরস্পরকে সবসময় এনগেইজড রাখছি।

মারিনা বললো তুমি ঘরে যখন থাকো তখন তোমাকে উদভ্রান্ত দেখায়। এই সৌন্দর্য লাবণ্য যাকে আকর্ষণ করার কথা, তার সামনে তুমি কখনো এভাবে উপস্থাপন করো না।

এখন আসি মেইন পয়েন্টে। তোমার লাইফের সমস্ত সময়টা তুমি সংসারের গোছগাছ আর বাচ্চাদের বড় করার পেছনে ঢেলে দিয়েছো। আর যা বাকি থাকে সেটা তুমি দাও প্যারেন্টস আর রিলেটিভসদের।

দিনের পর দিন তুমি বাচ্চাদের লেখাপড়া দেখ, তাদের সাথে রাত জাগো, তাদের ফুড প্রিপেয়ার করো, তাদের সঙ্গ দাও, পাশের ঘরে ঘুমোও, তোমাদের ভেতরে ইনটিমেসি নেই দিনের পর দিন। তোমার কাছে হয়তো এটার প্রয়োজন ফুরিয়ে গেছে।

বাচ্চা হয়েছে, সংসার হয়েছে, এখন তাদের বড় করবো, এটাই তোমার ভাবনা। সেদিক থেকে তুমি সফল মা। তোমার বাচ্চারা শাইন করেছে।

বাট- তোমার হাজবেন্ডের কিছু চাহিদা আছে, তুমি সেটা ইগনোর করে গেছো। সেটার পরিণতি হয়তো তুমি বোঝনি। তার চরিত্রের দিকে এই যে আজ সবাই আঙ্গুল তুলছে, তার কিছুটা দায় কিন্তু তোমার ওপরেও আসে। বুঝতে পারছো?

সুমনা মাথা নীচু করে বসে রইলো।
- তুমি যাও, হাজবেন্ডের সাথে টাইম স্পেন্ড করো। দেখো তাকে কারেকশন করতে পারো কিনা। আই উইল ট্রাই মাই বেস্ট ফর ইওর ডটারস সেক। বাট এটাই ফার্স্ট, এটাই লাস্ট। আমার মেয়েকে আমি থাকার জায়গা বদলে দিতে পারবো, ডিপার্টমেন্ট বদলাতে পারবো না।

কাজেই মেয়ের সিকিউরিটির জন্য আমাকে কিছু ব্যবস্থা নিতেই হবে। সেটা ডিপার্টমেন্টের সিনিয়রদের ভেতরে সিক্রেট রাখার অনুরোধ করে যাবো, যদি না সেকেন্ড টাইম এমন কিছু ঘটে। তুমি কি ওনাকে মেসেজটা বুঝিয়ে বলতে পারবে?

সুমনার ছলছল চোখ দুটিতে কৃতজ্ঞতা ছুঁয়ে গেলো। ক্ষীণ স্বরে মৌখিক ধন্যবাদ জানিয়ে সে প্রস্থান করলো।

দীর্ঘশ্বাস ফেললেন হানা ফাইজাহ। বড় জটিল সমীকরণ! স্বামীর বেফাঁস কীর্তি জেনেও তার হয়ে কথা বলতে এসেছে, আরেক নারীর জন্য। পরের আত্মজার ইজ্জত ছাপিয়ে নিজের আত্মজার ইজ্জত রক্ষার আবদার। মাঝখানে নিজের কি কোন চাওয়া পাওয়া নেই?

যত উপদেশ তিনি দিলেন সহজে, এই সুমনা মেয়েটা কি তত সহজে আর কোনোদিন স্বামীর আলিঙ্গনে ভালোবাসায় আত্মসমর্পণ করতে পারবে? যখনি মনে হবে এই হাত অবৈধ কামনায় কাউকে ছুঁতে গিয়েছিলো? কে জানে!

জটিল সমীকরণ
হোসনে আরা হাসি

রৌদ্রময়ী

রৌদ্রময়ী

15 Oct, 12:31


পিপ হোলে উঁকি দিয়ে তার চক্ষু স্থির। রমিজ স্যার- হাতে কিছু শিট। খুলবে কি, খুলবে না দোটানায় পড়ে যায় মারিনা। শেষে অল্প একটু ফাঁক করে সালাম জানালো।

- স্যার আপনি?
-হ্যাঁ- এই শিটগুলো রাখো। নেক্সট এক্সামে বসার আগে চোখ বুলাবে।

মারিনা শিটগুলো নিয়ে থ্যাংক ইউ বলে দরজা বন্ধ করতে চাইলে উনি তার একটা পা ঢুকিয়ে দিলেন দরজার ফাঁকে।
- একটু চা খাওয়াবে? ঘরে তোমার ভাবি নেই। নেটফ্লিক্সে মুভি দেখছিলাম। চা ছাড়া ঠিক জমছে না। তুমি চাইলে কমপ্যানি দিতে পারো। একা একা মুভি দেখে মজা নেই।

মারিনার সারা গা শিউরে উঠলো। কী না কী মুভি দেখেছে কে জানে। চোখের দৃষ্টি মোটেও স্বাভাবিক নয়। মারিনা প্রাণপণে বাধা দিয়েও তার অনুপ্রবেশ ঠ্যাকাতে পারলো না। ভয়ে হাত পা ঠাণ্ডা হয়ে এলো। কোনরকমে তোতলাতে তোতলাতে বললো- ও ও ক্কে, আপনার বাসায় যান, চা বানিয়ে দিয়ে যাচ্ছি।
রমিজ স্যার এগিয়ে এসে হাত দুটি ধরলেন।

নেশালো গলায় বললেন- এত ভীতু কেন তুমি। ইটস টুয়েনটি ফার্স্ট সেঞ্চুরি। এত রিজার্ভ হলে চলে? লেটস এনজয়। তোমার রেজাল্টের চিন্তা করতে হবে না। জাস্ট মেক মী হ্যাপী। আইম লোনলি ইউ নো, ভেরি লোনলি!

মারিনাকে তিনি জড়িয়ে ধরার চেষ্টা করছেন। মারিনার গায়ে হঠাৎ করেই প্রচন্ড শক্তি এসে ভর করলো।
হেল্প, হেল্প মী- প্রচন্ড জোরে চেঁচামেচি করতে শুরু করলো সে।

হাত ছুটিয়ে নিয়েছে- তাকে ধরার চেষ্টা করছে রমিজ সাহেব। ছুটাছুটির ফাঁকে ফাঁকে সদর দরজা খুলতে না পারলেও ধাক্কাধাক্কি করে যাচ্ছে মারিনা। হাতের কাছে যা পাচ্ছে, বই খাতা, চিরুসি গ্লাস ছুঁড়ে মারছে এলোপাতাড়ি।

এতে কাজ হলো। ধ্বস্তাধ্বস্তির শব্দে পাশের দুই তিন ফ্ল্যাট থেকে অনেকেই এসে উঁকি দিতে শুরু করেছে। মারিনাদের ব্যাচের মেয়েরাও ছিলো। পাশের কয়েক বাসায় তাদের আরো ব্যাচমেট ভাড়া থাকে। ঝটকা দিয়ে দরজা খুললো কেউ। মারিনা ছুটে গিয়ে তাদের একজনের গায়ের ওপর ঢলে পড়লো জ্ঞান হারিয়ে।

পরীক্ষার দিনগুলো আর নিজের ফ্ল্যাটে ফিরবার সাহস পায়নি মারিনা। পাশের ফ্ল্যাটে থাকছে। পুরো বিল্ডিংয়ে কানাঘুষা চলছে। প্রত্যক্ষদর্শী যারা ছিলো সুযোগ বুঝে কিছু রঙ চড়াতে ছাড়েনি। এক রকম বিধ্বস্ত অবস্থায় পরীক্ষার দিনগুলো শেষ হলো। এর মধ্যে রমিজ স্যার হুমকি দিয়ে দু চারটা টেক্সট পাঠাতে ভোলেননি।

এগুলো যে প্রমাণ হিসেবে তার বিরুদ্ধে যেতে পারে, তার মাথায় হয়তো সেটা আসেইনি। ছাত্রীর সিজিপিএর কিছুটা নিয়ন্ত্রণ যখন মাস্টারের হাতে থাকে, তখন তার আত্মবিশ্বাসটাও হয়তো বেশি থাকে। কী আর করবে পুঁচকে মেয়েটা।

তবে পুঁচকে মেয়েটা থেমে রইলো না। অনেক ভেবে চিন্তে সে তার বাবা মাকে খবর দিয়ে আনলো। লেখাপড়ার সূচনাতেই মুখ থুবড়ে পড়লে বাকি বছর গুলো সে কিভাবে পাড়ি দিবে? তার নিরাপত্তা দরকার, সাহস দরকার।

হোটেল পারাবাত ইন্টারন্যাশনালের একটা ডাবল বেড রুমে উঠেছেন মাহাথির দম্পতি। তারা লইয়ারের সাথে আলাপ আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এমবেসির মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে বিষয়টা নিয়ে অভিযোগ করা হবে।

একই সঙ্গে স্থানীয় থানায় জিডি করা হবে। তারা যাবতীয় প্রমাণ এবং ডকুমেন্টস একসাথে করে এটা নিয়েই আলাপ আলোচনা করছিলেন। ইন্টারকম থেকে ফোন এলো।

- মিঃ মাহাথির, স্যার!
- স্পিকিং।
- ইউ হ্যাভ এ ভিজিটর। শী ইজ রিকোয়েস্টিং টু মীট ইউ।
- এন্ড হু ইজ শী?
- মিসেস সুমনা।
ভ্রু কোঁচকালেন মাহাথির। নামটা মাথায় ক্লিক করছে কিন্তু ধরতে পারছেন না।
- ওকে, সেন্ড হার প্লিজ।

- কে বাবা?
- এই সুমনাটা আবার কে? চিনিস নাকি?
মারিনা দারুণ বিস্মিত হয়েছে। মুখ শুকিয়ে গেছে কিছুটা।
- রমিজ স্যারের ওয়াইফ বাবা।
- তাই? উনি আবার কী চান?
- মহিলা খুব ভালো বাবা। ওনার সাথে খারাপ ব্যবহার কোরো না।
মিসেস মাহাথির বললেন- তুমি ব্যাটা মানুষ, ছাদে হাওয়া খেয়ে আসো যাও। মেয়েদের কথার ভেতরে তোমার থাকতে হবে না। আমি সামলাতে পারবো।

সুমনার পরনে সবুজ জমিন সোনালি পাড়ের একটা হাফ সিল্কের শাড়ি। চুলগুলো পেঁচিয়ে পাঞ্চ ক্লিপ আটকানো। প্রসাধনি বলতে হালকা লিপ গ্লস মেখেছেন। তাতেই কী চমৎকার দেখাচ্ছে তাকে। বোঝার উপায় নেই তার ভার্সিটি পড়ুয়া ছেলে মেয়ে আছে।

উনি মারিনাকে চেনেন। মারিনা কাজ চালানোর মত বাংলা জানে। তবে তার মা হানা বাংলা জানেন না। মারিনা দুজনকে ইংরেজিতেই পরিচয় করিয়ে দিলো। সালাম বিনিময় হলো।

হানা হাত মেলালেন- নাইস টু মীট ইউ বিউটিফুল লেডি।

রমিজ স্যারের স্ত্রীকে মারিনা যতবার দেখেছে, এলোমেলো চুল, পোশাকে কোনো পারিপাট্য নাই, কেবল তাড়াহুড়া। উনি যে এতটা সুন্দর মারিনা আজ প্রথম উপলব্ধি করলো।

সে ফিসফিস করে মালয় ভাষায় মাকে সেটা বলেও ফেললো- ওনাকে এভাবে প্রথম দেখলাম। উনি এত গুছিয়ে কখনোই থাকেন না। সারাক্ষণ বাচ্চাদের নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। সংসারের সব তার পারফেক্ট হওয়া চাই। ড্রইং রুমটাও একদম ছবির মত সাজানো থাকে। কেবল নিজে থাকেন ওয়াইল্ড ওম্যানদের মতো।

মা মেয়ের গুজ গুজ শুনে প্রবল অস্বস্তিতে পড়েছে সুমনা। প্রবল কুণ্ঠার সাথে সে বললো- অনুমতি দিলে আমি কি বসতে পারি। আমার কিছু বলার ছিলো।

রৌদ্রময়ী

15 Oct, 12:31


এই ফ্ল্যাটবাড়ির নির্মাণশৈলিতে মারাত্মক সমস্যা আছে। মুখোমুখি দুটো বাসার সদর দরজার অবস্থান এমন, দুপাশে দরজা খুললে একদম অন্দর পর্যন্ত নজর চলে যায়।

স্থপতির মাথায় ঘিলু থাকলে দরজাটা ডানে বামে কয়েক ফুট সরিয়ে দিতে পারতো। প্রাইভেসি বলে একটা ব্যাপার আছে।

মারিনা বিনতি মাহাথির সকাল আটটার ক্লাস ধরার জন্য দরজা খুলে প্রায় প্রতিদিনই এমন বিড়ম্বনার শিকার হয়। ওপাশের প্রতিবেশির সদর দরজা খোলা থাকে প্রায় সারাদিনই।

মধ্যবয়সী ভদ্রলোক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। প্রায় সকালেই হাতা কাটা স্যান্ডো গেঞ্জি আর লুঙ্গি পরে আয়েশ করে বসে পত্রিকা পড়েন। তার গৃহিনী তখন সকালের নাশতা নিয়ে তুমুল ব্যস্ত। তার ঘর্মাক্লান্ত কলেবরে ছুটোছুটি টের পায় মারিনা।

মনে মনে প্রচন্ড বিরক্ত লাগে লোকটার ওপর। তার নিজের ছেলে মেয়েরা কেউ স্কুলে, কেউ কলেজে যাবে, তাদের সব কিছু এগিয়ে দেয়া, হিমশিম খান মহিলা। এর মধ্যে উনি আবার হাঁক ছাড়েন- চা টা দিলে না এখনো? আমার নেভি ব্লু ট্রাউজারটা আয়রন করে দাও তো।

রাগে মারিনার গা চিড়বিড় করে ওঠে। তার বাবা কখনো মোটেও এরকম হাত গুটিয়ে বসে থাকেন না। কখনো রান্না করছেন। বাবার হাতের নাসি গোরেং সুপার টেস্টি। রান্না ছাড়াও ঘরের অন্য সব কাজে বাবা সাহায্য করেন।

নিষ্কর্মা পুরুষ মানুষ দেখলে মারিনার পিত্তি জ্বলে যায়। তবুও ভার্সিটির টিচার বলে কথা, তাকে তো অসন্তুষ্ট করা যায় না। প্রতিদিন বেরোবার মুহূর্তে উনি দরজা খুলে সোফায় বসে জুলজুল করে চেয়ে থাকবেন যতক্ষণ দেখা যায়। ওনার আটটায় ক্লাস থাকে না বলে প্রায়ই আরো পরে বের হোন।

মারিনা সালাম দিলে জবাব দিয়ে হেহে মার্কা হাসি দেবেন। সেই কুৎসিত চাউনি বুঝতে পারবে পৃথিবীর যে কোন প্রান্তের রমণী।

ওরা চারজন মালয়েশিয়ান মেয়ে একসাথে এই ফ্ল্যাটটা ভাড়া নিয়েছে। ভার্সিটির এত কাছে এত ছিমছাম বাসাটা খুব ভালো লেগেছিলো।

কিন্তু উটকো পড়শির এই ক্রমবর্ধমান উৎপাতে ভালো লাগাটা বিদায় নেবার পথে। সিনিয়ার টিচার হিসেবে না পারছে স্টুডেন্ট কাউন্সিলর বা ডিপার্টমেন্টে কোন টিচারের কাছে কমপ্লেইন করতে। না পারছে স্যারের ওয়াইফকে কিছু বলতে। এমনকি নিজের রুমমেটদেরও মুখ ফুটে বলতে পারছে না। সেই না পারাটা এত বড় কাল হয়ে দাঁড়াবে কখনো ভাবেনি মারিনা।

সেমিস্টার ফাইনাল এক্সাম খুব দেরি নেই। মারিনা খুব খাটাখাটুনি করছে। লেখাপড়ার জন্য বিদেশ বিরাজ্যে পড়ে থাকা। রেজাল্ট খারাপ করলে হবে? তবে প্রতিনিয়ত এই আকামের মানসিক চাপ পড়ার মনোযোগ অনেকটাই ধ্বংস করে দিয়েছে।

প্রতিবেশি রমিজ স্যারের শ্বশুর অসুস্থ। প্রায়ই তার স্ত্রী ছুটে যান বাবার বাসায়। গত এক সপ্তাহ ধরে তিনি হাসপাতালে বাবার কাছেই আছেন। ছেলেটা হলে চলে গেছে। দুই মেয়ে মায়ের সাথে নানাবাড়ি। ইদানিং স্যারের আচরণে দুঃসাহসিকতা যোগ হয়েছে তাতে।

সেদিন লিফটে স্যারের সাথে অনিচ্ছা সত্ত্বেও ঢুকতে হলো। তিনি স্বাভাবিক ভাবে কুশলাদি জানতে চাইলেন। পড়ালেখা বুঝতে কোন সমস্যা হচ্ছে কিনা খোঁজ নিলেন।

- এনি টাইম চলে আসবে। যা কিছু বুঝবে না বুঝিয়ে দেবো।
- জি আচ্ছা।
- প্রাকটিক্যাল আর ভাইভার নম্বর কিন্তু আমার হাতে বুঝলে?

মারিনা আড় চোখে তাকায়। গা ঘিন ঘিন করে আপাত নিরীহ দৃষ্টির লেহনে। মাথার স্কার্ফটা অনর্থক টেনেটুনে নেয় বুকের সামনে।

রমিজ স্যার এক চুল সরান না তার দৃষ্টি, আঠার মতো সেঁটে থাকে। লিফট থামতেই ছুটে বের হতে যায় মারিনা, খপ করে হাত ধরে ফেলেন প্রফেসর।
- আরে আরে করো কি? তুমি জানো এভাবে কত এক্সিডেন্ট হয়! অলওয়েজ লিফট পুরো স্ট্যাবল হলে পরে নামবে।

মারিনা যেন ইলেকট্রিক শক খেয়েছে। লিফট থেকে বেরোনোর পরেও হাত ছাড়ার নাম নাই।
- আমার হাত ছাড়ুন, স্যার। দৃঢ় কণ্ঠে বললো মারিনা।
- ওহ্ সরি, খেযাল ছিলো না। ইউ নো হোয়াট, ইটস টু সফট, আমার কী দোষ বলো।

মারিনা একরকম দৌড়ে নিজের ফ্ল্যাটে গিয়ে ঢোকে। কাঁপছে তার সারা শরীর। হ্যান্ড ওয়াশ দিয়ে দশ বারো বার হাত ধুয়েও তার মনে হতে থাকে সেই কদর্য স্পর্শ ধুয়ে ফেলতে পারেনি।

মারিনার বাকি তিনজন রুমমেট অন্য ডিপার্টমেন্টের ছাত্রী। কেবল তার ভাগ্যেই জুটেছে প্রফেসর রমিজের ক্লাস আর প্রাকটিক্যাল। এই ভয়ংকর দুঃস্বপ্ন থেকে বের হবার পদ্বতি ভাবতে ভাবতে সে কখন যেন ঘুমিয়ে পড়েছিলো।

একে একে ফিরেছে বান্ধবিরা। আয়শা কুয়ালা মারিনার বেস্টি। ওকে অসময়ে শুয়ে থাকতে দেখে কপালে হাত রাখলো।
- হেই, রিনা, হোয়াটস রং? ইটস সালাত টাইম। শুয়ে আছো কেনো?

মারিনা চোখ খুলে আয়শাকে দেখে। তার কোলের ভেতরে মুখ গুঁজে দেয়। আয়শা ভুরু কুঁচকালো, কদিন ধরেই মারিনা বেশ অন্যমনস্ক।
- কিছু কি হয়েছে? আমাদের বলো।
- না, এমনিতেই। দেশের জন্য মন টানছে।
- ওকে। আর মাত্র ওয়ান মান্থ। এক্সাম শেষে তো আমরা ঘুরে আসবো।

দিন যাচ্ছে ব্যস্ততায়। রুটিন হয়ে গেছে। দুই শিফটে এক্সাম চলছে। সেদিন আয়শাদের বিকেলের শিফটে ছিলো। মারিনা সকালের শিফটে এক্সাম শেষ করে এসে রাইস কুকারে ভাত রান্না করে মাত্রই খেয়ে উঠলো। এখন একটু শোবে। কাল রাত জেগে পড়েছে। কলিং বেলের আওয়াজে সে একটু থতমত খেলো। এই অসময়ে কে আসবে?

রৌদ্রময়ী

14 Oct, 13:57


“নামাজ পড়ে আবার এইটা করে, এই নামাজ শুদ্ধ হবে?
পর্দা করে আবার ঐটা করে, দরকার কী এমন পর্দার?”

প্রায়ই আমাদের চারপাশ থেকে এ ধরণের আওয়াজ আসে। বিশেষ করে যারা প্রাক্টিসিং তাদের এমন কথা অহরহ শুনতে হয়।

আবার কেউ প্রাক্টিসিং, অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে নিজের হক্বের জন্য লড়াই করছে, তখন তার ধর্মকে টেনে তাকে হেনস্তা করে কাছের মানুষগুলোই। তাদের কাছে ধর্ম মানেই কেবল মাজলুম সেজে সব সহ্য করে যাওয়া।

আমি বুঝিনা, আমাদের সাইকোলজি এমন কেন?
কেউ নামাজ পড়লে আমরা তাকে পীর আউলিয়া ভেবে কেন বসে থাকি?

শরিয়তের ফরজ হুকুম নির্দেশ করে, আপনি মুসলমান কিনা। অর্থাৎ কেউ নামাজ পড়লে আমাদের প্রথম চিন্তা হবে সে অমুসলিম নয়। এরপরে আসবে মানুষ হিসাবে সে কেমন, ভালো খারাপ দুটো মিলিয়ে থাকবে এটাই তো স্বাভাবিক।

এখন কেউ আপনার মতের বিরুদ্ধে গেলে আপনি তাকে নামাজ, পর্দা নিয়ে খোঁটা দিলেন, আদায় হবেনা বলে দিলেন।

অথচ দিনের পর দিন আপনার ইবাদাত আল্লাহর কাছে কতটুক গ্রহণযোগ্যতা পাচ্ছে সেটা কিন্তু আপনি জানেননা।

মানব গুণাবলিতে ত্রুটি থাকবে এটাই স্বাভাবিক। নিজের দোষগুলো কিন্তু আমরা নিজেরা সহজে ফিল করিনা, নিজেকে সাধু ভেবে বসে অন্যের গুজারেশ করি।

কারো ব্যক্তিত্ব নিয়ে চিন্তা করে তার উপর আরোপিত ফরজ হুকুমকে প্রশ্নবিদ্ধ করা অত্যন্ত নিচু দৃষ্টিভঙ্গি।

ধরুণ, মানুষ হিসাবে বেঁচে থাকতে আমরা অক্সিজেন নেই এটা নরমাল। এখন ভালো মানুষও যেমন অক্সিজেন নেয়, খারাপ মানুষও তেমন অক্সিজেন নেয়। খারাপ মানুষের দোষ বর্ণনা করতে গিয়ে কই আমরা তো পিঞ্চ করিনা যে, এহ এমন খারাপ আবার অক্সিজেন নিচ্ছে!

শুনতে হাস্যকর লাগবে তাইনা?

নামাজও অনেকটা তেমন, মুসলমানদের অক্সিজেন। সবাইকে পড়তেই হবে। এরপর সেই নামাজ ধীরে ধীরে তার পরিবর্তন আনবে নাকি ধ্বংস সেটা পরের বিষয়, সম্পূর্ণ আল্লাহর ইচ্ছে এবং বান্দার নিয়তের উপর নির্ভরশীল। যা আমরা জানিনা।

সুতরাং ব্যক্তি যেমনই হোক তার ফরজ ইবাদাতের সাথে গুণাবলি মিক্স করে প্রশ্নবিদ্ধ করে কাউকে অনুৎসাহিত কিংবা আঘাত না করি। তার ইবাদাত কবুল হবে কিনা সেটা তার রব্বের উপরই ছেড়ে দেই।

শুধু ফরজ হুকুম পালন করলেই কেউ অলী হয়ে যায়না। ঈমানের অনেক চড়াই-উৎরাই থাকে, শরিয়তের অনেক বিস্তর শাখা আছে।

বরং আমরা ভালো ধারণা রাখতে পারি যে, তার ফরজ হুকুম তাকে তার ওয়াজিব, সুন্নাহ, নফল পালনেও অন্তর মসৃণ করে তার ঈমানকে বৃদ্ধি করবে, মানব ত্রুটি কমিয়ে আনবে ইন শা আল্লাহ।

নিশ্চয়ই আল্লাহ আমার প্রতিও যেমন ক্ষমাশীল তার প্রতিও তেমন ক্ষমাশীল।

ত্রুটি থাকবেই
আয়রা তেহরিম উষ্মী

রৌদ্রময়ী

রৌদ্রময়ী

13 Oct, 12:31


পাশে শুয়ে থাকা শরীর ভেঙে যাওয়া বাবার দিকে তাকালো মুয়াজ। মাটির ৬ হাত নিচে তখন তাকে যেতে হবে, এই দাঁতভাঙ্গা জবাব কি তখন সত্যিকার অর্থে তার কাজে আসবে?

ইসলামের দাওয়াত যতোটুকু দেওয়ার ছিল, ইতোমধ্যে দিয়ে দিয়েছে! এরপরেও এই কমেন্ট চালাচালি করলে এটা তার ইগোকে প্রশ্রয় দেওয়া ছাড়া আর কিছু না। কোন দরকার নাই এই ইগো-ফিডিং! বরং এর বিনিময়ে জান্নাতের একটা ঘর চেয়ে নিব আল্লাহর কাছে।

অনলাইনে তর্কাতর্কি চালিয়ে গেলে আরো কয়েকজন মানুষ এসে এই চেইনে যোগ দিবে। আগুনে ঘি ঢালবে। সম্পর্কগুলো নষ্ট হবে। এই অশান্তির বিনিময়ে জান্নাতের একটা বাড়ির অফার ছেড়ে দিবে কেন?

আল্লাহর কাছে জান্নাতে একটা বাড়ির আবদার করা যাবে—এই চিন্তাটা কী পরিমান প্রশান্তি অন্তরে এনে দিলো সেটা মুয়াজ ছাড়া আর কেউ বুঝবেনা!

মুয়াজ তাহাজ্জুদের জন্য উঠে গেল! এখন যে দুয়া কবুল হওয়ার সময়! দ্বিতীয় রাকাতে সেজদারত অবস্থায় সে শুনতে পেল তার বাবার মনিটর থেকে বিপ বিপ সাউন্ড হচ্ছে। নাইট শিফটের নার্সরা, কর্তব্যরতরা একে একে বাবার রুমে ঢুকছে, তাদের পায়ের শব্দ মুয়াজের কানে আসছে!

“ইয়া জুল জালালি ওয়াল ইকরাম, আপনার কাছেই নিজেকে সঁপে দিলাম, আমার বাবাকে আপনার হাওলায় দিয়ে দিলাম, আপনি আপনার বান্দাকে সবচেয়ে বেশি ভালবাসেন, আপনি ছাড়া আমাদের অভিভাবক আর কেউ নেই ইয়া রব্বানা! ...”

৪.
মরিয়ম চৌধুরী নড়তে পারছেন না। একটু আগেই ছেলে মুয়াজের ফোন এসেছিল। ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। মরিয়মের স্বামী আকরাম হোসেন আর এই দুনিয়াতে নেই।‌ স্বামীর মালিকের কাছে চলে গেছেন। শুরু থেকেই তো তিনি আল্লাহরই সম্পত্তি, মালিকানাধীন। আল্লাহর কাছেই ফিরে যাওয়ার কথা।

সবই তো জানি। তবে পায়ের নিচ থেকে মাটিটা যখন সরে যায়, ধাক্কাটা সামলাতেও কিছুটা বেগ পেতে হয়। “চোখে পানি আসবে, অন্তর দুঃখে ভরে যাবে, তবু ঠোঁট এমন কিছু উচ্চারণ করবে না, যাতে রব অসন্তুষ্ট হয়!”

মনে পড়ে গেল প্রিয় রসূল ﷺ এর কথা গুলো! তিনি এই কথাগুলোই বলেছিলেন তার শিশুপুত্র ইব্রাহিমের মৃত্যুতে। আল্লাহর এত প্রিয় মানুষটাকেও যখন এই পরীক্ষার মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে, মরিয়ম কি চিন্তা করে ভেবে রেখেছিল যে মরিয়মকে পরীক্ষা দিতে হবে না?

২৭ বছরের সংসার একসাথে! কত হাসি-কান্না উত্থান-পত্তন... কত স্মৃতি! বাকি সংসারটা যেনো জান্নাতে গিয়ে কন্টিনিউ হয়! আমিন।

“আল্লাহ আপনি মানুষটাকে জান্নাতে আমার স্বামী হিসেবে কবুল করেন! তার ভুলত্রুটি, গুনাহ সব ক্ষমা করে দিন!”

আল্লাহর প্রকৃত বান্দাদের জন্য মৃত্যু মানেই চিরবিদায় নয়। চোখ ধাঁধানো রাজকীয় প্রাসাদ এবং অকল্পনীয় মনোরম ঝর্ণার ধারে গিয়ে জান্নাতে আবার প্রিয় মানুষগুলোর সাথে দেখা হয়ে যাওয়ার আশা আছে! জান্নাতের লাল-নীল বাগানে প্রতিটা চোখের পানির ফোঁটার প্রতিদান পাওয়া যাবে ইন শা আল্লাহ! _________

আল্লাহর দ্বীনকে অন্তরে, আমলে, জীবনে পরিপূর্ণ ভাবে ধারন করতে না পারলে, আপনি কখনই বুঝবেন না যে, দ্বীন জীবনকে কীভাবে সহজ করে দেয়! জীবনের কঠিন মুহূর্তগুলোকে অর্থবহ করে দেয়, দুঃখের পাহাড় ডিঙানোর শক্তি যোগায়!

“আলহামদুলিল্লাহ আল্লাহ আছেন, আমাকে শুনছেন, আমি তাঁর বাধ্য বান্দী! আমি তাঁর তত্ত্বাবধানে!”— এটা একটা ভীষণ মানসিক শক্তির জায়গা! আল্লাহর প্রতি সুধারণা রাখা, তাকওয়া, তাওয়াক্কুল, মুমিনের দুয়া - এগুলোর সমন্বয় প্রচন্ড শক্তিশালী এবং ইন্ধন যোগানকারী!

আমি মুসলিম। আমি বিশ্বাসী বান্দা‌। তার মানে এই না আমার জন্য দুঃখের পাহাড়গুলো অদৃশ্য হয়ে যাবে। বরং আমি আল্লাহর বান্দী, তাই আমার জন্য প্রত্যেকটা পাহাড় ডিঙানো সহজ এবং অর্থবহ হয়ে উঠবে।

এভাবেই বান্দা বলে:
حَسْبُنَا اللَّهُ وَنِعْمَ الْوَكِيلُ،
হাসবুনাল্লাহু ওয়া নিমাল ওয়াকিল

“আমাদের জন্য আল্লাহই যথেষ্ট, এবং তিনি কতই না চমৎকার কামিয়াবী দানকারী।”
(আলে-ইমরান: ১৭৩)

হাসবুনাল্লাহ
শারিন সফি অদ্রিতা

রৌদ্রময়ী