ঐ যে একটা হাদিস আছে না, শেষ জামানায় ঈমান ধরে রাখা হাতে জ্ব'লন্ত কয়লা ধরে রাখার মতন হবে?
বেদ্বীন পরিবারে যেসব বোনেরা দ্বীন পালন করেন তারা এই হাদিসটা হাড়ে হাড়ে টের পান। এ ধরনের পরিবারগুলোতে দ্বীন পালনের জন্য লাগে সাহস, আর যে দিনগুলোতে একার সাহসে কুলায় না, সে দিনগুলোতে খুব খুব অভাববোধ হয় সাহস যোগানো কোনো অভিজ্ঞ বোনের।
আশা করছি আমার বা আমাদের অভিজ্ঞতা, পরামর্শ নতুন-পুরাতন বোনদের একটু হলেও সাহায্য করবে। এই দিকনির্দেশনা থাকবে ‘বেদ্বীন পরিবারে দ্বীন পালন’ শিরোনামে।
আজকের প্রথম পর্বের আলাপের বিষয়বস্তু হচ্ছে মানসিকতা বিষয়ক। আলাপ শুরু করি এবার?
বেদ্বীন পরিবারে টিকে থাকার জন্য তিনটা জিনিস লাগে : দৃঢ় মনোবল, একনিষ্ঠ দুআ, আর চেষ্টা। আর এসব কিছু চালিয়ে যাওয়ার জন্য লাগে মানসিকতার পরিবর্তন।
যখন আপনি বেদ্বীন পরিবারে দ্বীন পালন করা শুরু করবেন, তখন ধরেই নিতে হবে যে বাধা আসবে। এই বাধা হতে পারে মানসিক অত্য-আচার, অর্থাৎ অপমান, গালিগালাজ, চিল্লাচিল্লি, রাগারাগি, মনোমালিন্য অথবা শারীরিক নির্যাতন। এইটা হবেই।
আপনি বেদ্বীন পরিবারে দ্বীন পালন শুরু করবেন আর আপনার উপর কোনো বাধাই আসবে না, তার মানে কোথাও গলদ আছে। হয় আপনি পরিপূর্ণ দ্বীন পালনের চেষ্টা করছেন না, নাহয় আপনার পরিবার পরিপূর্ণ বেদ্বীন না।
হয় মৌখিক, নাহয় শারীরিক, কোনো না কোনো ঝামেলা থাকাটা দ্বীন পালন সঠিক হচ্ছে কি না সেটার মাপকাঠি ধরতে পারেন (উল্লেখ্য, এখানে কিন্তু দ্বীনের নামে উল্টাপাল্টা কিছু করে ধরা খাওয়ার কথা বলছি না। উল্টাপাল্টা বলতে কী বোঝাচ্ছি সেটাও অবশ্য জানি না। তবে কথা হচ্ছে আপনার দ্বীন পালন হতে হবে ঠিকঠাক, দিকভ্রান্ত না আরকি)।
তো এই ঝামেলা হবে কবে থেকে? সাধারণত, যবে থেকে পরিপূর্ণ পর্দা শুরু করবেন। অর্থাৎ বাইরে পরিপূর্ণ পর্দা করে কালো বোরকা, নিকাব, হাতমোজা, পা-মোজা পরে যাবেন তবে থেকে। তখন থেকে অল্প অল্প করে ঝামেলা দানা বাঁধবে।
যখন ঘরের মধ্যে গায়রে মাহরামের সাথে পর্দা করতে চাইবেন তখন জমবে আসল খেলা। এরপর যদি বিয়ের বয়স হয়ে থাকে তাহলে তো আর কথাই নাই। ঘটককে ছবি দিতে চাইবেন না, পাত্রের পুরুষ আত্মীয়ের সামনে যাবেন না, বিয়েতে বেহায়াপনা করবেন না, আর আপনাকে এমনি এমনি ছেড়ে দেবে?
না রে বোন, ছাড়বে না। যদি ছাড়েই, তাহলে দ্বীনদার আর বেদ্বীন পরিবারের পার্থক্য কী থাকবে?
ধরেন আপনি ইয়া-বা খাওয়া শুরু করলেন, তখন আপনার বাবা-মা কী করবে? রাগারাগি / মা'রধরের মাধ্যমে হলেও আপনাকে ফেরানোর চেষ্টা করবে তো, তাই না?
বাস্তবতা হলো আপনার এই দ্বীন পালনও তাদের কাছে সেই মাদকাসক্ত হওয়ার মতোই খারাপ। আল্লাহুম্মাগফিরলী!
এই যে তাদের হাসিখুশি মেয়েটা এখন আর ঘোরাঘুরি করে না, বাড়ি কেউ আসলে সবাইকে মাতিয়ে রাখে না, কারোর সামনে আসে না, বাইরে সাজগোজ করে না, কালো কাপড়ে নিজেকে মুড়ে রাখে, গান শোনে না, পড়াশোনা নিয়ে আকাশছোঁয়া স্বপ্ন দেখে না, বিলাসবহুল জীবন চায় না– এসব কি উদ্ভট বা ভয়াবহ লাগে না শুনতে একজন বেদ্বীন মানুষের কাছে?
মাদকাসক্ত হওয়ার চাইতে কম কিছু হবে তাদের কাছে? তাহলে তারা বাঁচানোর চেষ্টা করবে না আপনাকে?
করবে তো। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো যেটাকে তারা সফলতা ভাবে, সেটা আখিরাতের চোখ দিয়ে দেখলে ব্যর্থতা! চূড়ান্ত ব্যর্থতা!
তাই মানসিকতার ক্ষেত্রে প্রথম পদক্ষেপ হচ্ছে এটা মেনে নেওয়া যে প্রতিকূলতা আসবেই, দ্বিতীয় পদক্ষেপ হলো, বাবা-মায়ের কাজের পেছনে তাদের মনস্তাত্ত্বিক কারণ বোঝা; আর তৃতীয় পদক্ষেপ হলো, এটাকে দ্বীন পালনের অংশ ভেবে সহজভাবে নেওয়া, অর্থাৎ ভেঙে না পড়া।
এখন এই ভেঙে কীভাবে না পড়া যায় সেটা আমরা দ্বিতীয় পর্বে জানবো ইনশাআল্লাহ বোনেরা।
পুনশ্চ : যদি লেখা উপকারী মনে হয়, তাহলে দয়া করে কেউ আমার প্রশংসা করবেন না। প্রশংসা করবেন আমাদের রবের, যিনি আমাকে লেখার এবং আপনাকে পড়ার যাবতীয় তওফিক দান করেছেন। এই যাবতীয় যে কতকিছু, তা লিখতে গেলে সমুদ্রের কালিও ফুরিয়ে যাবে! এজন্য প্রশংসা করবেন আপনার রবের, আর বাকিদের জন্য করবেন দুআ, বারাকাহর দুআ।
বারাকাহর দুআ হচ্ছে : মাশাআল্লাহ, লা ক্বুওয়্যাতা ইল্লা বিল্লাহ। বারাকাল্লাহু ফিক।
বেদ্বীন পরিবারে দ্বীন?
জিলফাত ফারহা
রৌদ্রময়ী